মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৪০-১৯০৮ ইং)-এর কলম থেকে ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়াকে পত্র প্রদান –
কাদিয়ানী সাহেব ১৮৯৮ সালের দিকে কোনো এক প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারত সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ রাণী আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া বরাবর নিজেকে কিংবা নিজের প্রতিষ্ঠিত “জামাত” সম্পর্কে পত্রে লিখেছেন,
اس خودکشتہ پودہ کی نسبت نہایت حزم اور احتیاط اور تحقیق اور توجہ سے کام لے اور اپنے ماتحت حکام کو اشارہ فرمائے کہ وہ بھی اس خاندان کے ثابت شدہ وفاداری اور اخلاص کا لحاظ رکھ کر مجھے اور میرے جماعت کو ایک خاص عنایت اور مہربانی کی نظر سے دیکھے ۔ ہمارے خاندان نے سرکار انگریزی کی راہ میں اپنے خون بہانے اور جان دینے سے فرق نہیں کیا اور نہ اب فرق ہے۔ لہذا ہمارا حق ہے کہ ہم خدمت گزشتہ کے لحاظ سے سرکار دولتمدار کی پوری عنایت اور خصوصیت توجہ کی درخواست کریں تا ہر یک شخص بیوجہ ہمارے آبروریزی کے لیے دلیری نہ کر سکے اب کسی قدر اپنی جماعت کے نام ذیل میں لکھتا ہوں۔
- “নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার এবং আমার জামাতের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করে। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে। অতএব, আমাদের অতীতের পরিষেবার প্রেক্ষিতে সরকারের পূর্ণ অনুগ্রহ এবং বিশেষ মনোযোগের অনুরোধ করার অধিকার রয়েছে, যাতে আমাদের সুনামের জন্য কেউই (কোনো বিরুদ্ধবাদী আমাদের বিরুদ্ধে ইন্ধনদানে) দুঃসাহসী হয়ে উঠতে না পারে। এখন আমি নিচে আমার জামাতের নাম লিখছি।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেয়া হল
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কোনো রাখঢাক ছাড়াই লিখলেন خود کاشتہ پودا (খোদ কাস্তা পুদা) অর্থাৎ ‘নিজেদের হাতে রোপিত চারাগাছ’। আমি মির্যার উপরের কথার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত ‘হান্ড্রেট এলিগেশন’ নামীয় একটি লিখায় দেখলাম, তারা লিখেছে,
মির্যা সাহেব তার ‘খোদ কাস্তা পুদা’ বলে “আহমদীয়া কমিউনিটি” বা “তার নিজের” সম্পর্কে উদ্দেশ্য নেননি, বরং তিনি তার পরিবার পরিজনকেই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। মির্যা সাহেব বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, তার পরিবার পরিজন ব্রিটিশ সরকারের একান্ত খায়েরখাঁ বা কল্যাণকামী।
কিন্তু তাদের উক্ত ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়, বরং সত্য গোপন করার নিকৃষ্ট প্রয়াস। কেননা, মির্যা পত্রটি লিখেছিলেন মূলত তার প্রতিষ্ঠিত “আহমদীয়া কমিউনিটি” বা “কাদিয়ানী মতের অনুসারী” দলটির প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ হতে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থন চেয়ে। একজন উর্দূ ভাষী উপরের আংশিক উদ্ধৃতিটির আরও উপর থেকে পড়ে দেখলেই বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি এজন্যই মির্যা গোলাম আহমদ এর ৩ খন্ডে প্রকাশিত উর্দূ রচনা “মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত” এর ৩ নম্বর খন্ড থেকে ২১ এবং ২২ নম্বর পৃষ্ঠা দুটি এখানে তুলে ধরছি। যাতে কেউই আমার লিখাটিকে ভিত্তিহীন বা পক্ষপাতমূলক আখ্যা দিতে না পারে।
কী প্রমাণিত হল?
উত্তর, আহমদীয়া বা কাদিয়ানী কমিউনিটি স্বঘোষিত ভাবেই “ব্রিটিশ সৃষ্ট” একটি ফেইক মুসলিম কমিউনিটি। যাদের ধর্মবিশ্বাস কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী মনগড়া ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। ইসলামের অথেনটিক শিক্ষা ও চরিত্রের বিপরীতে সম্পূর্ণ নতুন একটি শিক্ষা ও চরিত্র। যাদের বিশ্বাস হচ্ছে, নবুওয়তের দ্বার বন্ধ হয়নি, ফলে মির্যা গোলাম কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল (নাউযুবিল্লাহ)। যারা তাকে স্বীকার করবেনা কিংবা যারা তার নামও শুনেনি প্রত্যেকে পাক্কা কাফের ও জাহান্নামী।
- নবুওয়ত দাবী করার ডজন খানেক ডকুমেন্টারি প্রমাণ এখানে ক্লিক
প্রশ্ন হতে পারে যে, কেউ কি নিজকে বা নিজের দলকে এভাবে প্রকাশ্যে “ব্রিটিশ সরকারের রোপিত চারাগাছ” বলে লিখতে পারে?
উত্তরে বলব, মির্যা কাদিয়ানীর নিকট তা অবশ্যই সম্ভব ছিল। কারণ সে ব্রিটিশ সরকারের দৃশ্যমান অপরাজেয় শক্তি ও দাপট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়। ফলে তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে উঠেছিল যে, ব্রিটিশ সরকারের এ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও দাপট আজীবনের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, কখনো তার পতন হবেনা। কাজেই তার এধরনের লিখনী ভবিষ্যতেও কোনো বিপদের কারণ হবেনা।
বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা কাদিয়ানীর পরদাদা মির্যা গুল মুহাম্মদ এবং দাদা মির্যা আতা মুহাম্মদ তারপর পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজা শিখদের দ্বারা পাঞ্জাবে অনেক নিপীড়নের সম্মুখীন হয়, জমিজমা হারায়। কিন্তু পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিং এর রাজত্বের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার তার পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজাকে তাদের হারানো ৫ টি গ্রামের পূর্ণ জমিদারী পুনরায় উদ্ধার করে দেয়।
জাগতিক এ স্বার্থসিদ্ধির শোকরগুজার হিসেবে তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন বংশপরম্পরায় ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুগত ও জীবন উৎসর্গকারী। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মির্যা গোলাম মর্তুজা ৫০টি সশস্ত্র ঘোড় সওয়ার পাঠিয়েছিলো। যারা সে সময় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে জীবন-মরণ যুদ্ধ করেছিলো। মির্যা কাদিয়ানী এ ইতিহাস নিজেই তার রচনা ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ পুস্তকে লিখে গেছেন। তার রচনাসমগ্র রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ৪-৬ দেখুন।
কিন্তু আফসোস! মির্যা কাদিয়ানীর বর্তমান অধিকাংশ অনুসারীই মির্যা গোলাম আহমদের পরিবারের দেশের আযাদী আন্দোলনের সাথে গাদ্দারী ইতিহাস জানেনা। যাদের ইতিহাসটাই “গাদ্দারী” ইতিহাস, তারা কিভাবে তাদের সেই বিদেশী প্রভুদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, কিভাবে নিজ মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বের পক্ষে দাঁড়াতে পারে তা অন্তত আমার হিসেবে মিলেনা।



লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী