Home কাদিয়ানী মতবাদ খণ্ডন মির্যা কাদিয়ানীর ‘মসীহ’ দাবীর অসারতা

মির্যা কাদিয়ানীর ‘মসীহ’ দাবীর অসারতা

0

কাদিয়ানীদের সাথে বিতর্ক করার আগে তাদের বই গুলো তো নিশ্চয়ই পড়া থাকতে হবে, সে সাথে তাদের জ্ঞানের দৌঁড়ও মাপা থাকতে হবে।

খাতাম কিবা খাতিম এ জাতীয় পুরনো ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে একদম জায়গামতো হাত ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের প্রশ্ন করতে হবে। স্যোসাল মিডিয়া ছাড়া কোনো কাদিয়ানীর সাথে আমার পক্ষে সাধারণত বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ থাকেনা। বর্তমানে নানা কারণে স্যোসাল মিডিয়া থেকে অনেকটাই দূরে থাকছি। বেশ কিছুদিন আগের একটি তর্কবিতর্ক আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। যাতে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত’ টপিকে বিতর্ক আলোচনায় আমি আমার স্পেশাল নিয়মটা সবাইকে জানিয়ে রাখতে পারি।

একবার ওদেরই একজন মিশনারীকে তর্কের এক পর্যায়ে বললাম, আপনি আমাকে একটু ক্লিয়ারেন্স দিন তো, আপনারা কি ইন-জেনারেল নবুওয়তের ধারা অব্যাহত রয়েছে মানেন, নাকি রাসূল (সা.) এর ফরমান মুতাবেক শেষ যামানায় একজন নবী (ঈসা) এর পুনঃআগমন হবে, শুধু এটাই মানেন? যদি ইন-জেনারেল (সাধারণভাবে) নবুওয়তের ধারা অব্যাহত রয়েছে মানেন তাহলে আপনি আমার কথার উত্তর দিন যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পর নবী আসার ধারা কেন চিরতরে বন্ধ বলা হল? এ যে দেখুন, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতে পরিষ্কার করে লিখা আছে যে, একমাত্র গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেই নাকি “নবী” নাম পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। (হাকিকাতুল ওহী ৩৩০, বাংলা সংস্করণ ১৯৯৯ ইং)। তাহলে ইন-জেনারেল নবুওয়তের ধারা অব্যাহত থাকল কোথায়? গোলাম আহমদের পর তো সেটা বন্ধ হয়ে গেল!

আর যদি মনে করেন যে, আপনারা-ও রাসূল (সা.) এর সেই ভবিষ্যৎবাণী মুতাবেক মুসলমানদের ন্যায় শুধুই একজন নবী (ঈসা) এর পুনঃ আগমনে বিশ্বাসী, যা সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ হাদীসের বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, তাহলে আপনার প্রতি আমার মাত্র একটি প্রশ্ন থাকলো। তা হল, সেই আগত নবী (ঈসা) সম্পর্কে রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎবাণীগুলোতে যা যা উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর সাথে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে আপনি কি কখনো মিলিয়ে দেখেছেন? আমার বিশ্বাস যে, আপনি মিলিয়ে দেখেননি অথবা আপনি আগে কখনো এভাবে বিষয়টিকে নিয়ে ভাবেননি!

আমি অথেনটিক বর্ণনাগুলো থেকে মাত্র কয়েকটি সম্পূর্ণ বর্ণনা আপনার সামনে তুলে ধরছি, মেহেরবানী করে আমাকে গোলাম আহমদের সাথে মিলিয়ে দেখাবেন। তবে কোনো মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। ব্যাখ্যা যদি দিতেই হয় তাহলে অন্তত গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জন্মেরও পূর্বেকার মাননীয় যুগ ইমামগণ থেকে (ব্যাখ্যা) দিতে হবে।

বলাবাহুল্য, রাসূল (সা.) এর কোনো কোনো ভবিষ্যৎবাণী শপথ বাক্য সহকারেও উল্লেখ আছে। ফলে সেটিতে উল্লিখিত “ইবনে মরিয়ম” (মরিয়ম পুত্র) হতে রূপক কোনো অর্থ উদ্দেশ্য হতে পারেনা আর সেখানে আগত “নবী” সম্পর্কে পরিষ্কার বলা আছে যে, তিনি ইবনে মরিয়ম তথা মরিয়মের পুত্র, যিনি কেয়ামতের পূর্বে যথাসময়ে নাযিল হবেন। মানে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন না, বরং বনী ইসরাইলের জন্য প্রেরিত পুরনো একজন নবী, যার পুনঃআগমন শুধুই ‘উম্মতি’ হিসেবে । আল্লাহ তার শাসনামলে ইসলামকে অপরাপর সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর বিজয় দান করবেন। আর তাঁর নির্দেশে যুদ্ধকর (জিজিয়া) স্থগিত করা হবে। অর্থাৎ সে সময়টিতে জিজিয়ার অপশন বাতিল করে দেয়া হবে। ধর্মযুদ্ধ চলমান থাকার একপর্যায়ে ইসলাম বিরোধীরা হয়ত যুদ্ধে নিহত হবে নয়তো বা আত্মসমর্পণ করে পর্যায়ক্রমে ইসলাম গ্রহণ করবে। ফলে একটি সময়ের ব্যবধানে ঐ ধর্মযুদ্ধটাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ নবী (ঈসা) এর জীবদ্দশাতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এ-সংক্রান্ত সবগুলো সহীহ হাদীসকে একসাথ করে দেখলে সে সময়কার পুরো ঘটনার পটভূমি এটাই দাঁড়াবে।

আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি উক্ত ভবিষ্যৎবাণী অনুসারী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে শতভাগ তো দূরের কথা, ২ পার্সেন্টও প্রমাণ করতে পারবেন না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যার চোখ দিয়ে ইসলাম দেখছেন এবং যার শিক্ষামতে পবিত্র কুরআনের নামে ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলতে বসে আছেন, সেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই তার আরেকটি রচনায় লিখে গেছে,

اب ثبوت اس بات کا کہ وہ مسیح موعود جس کے آنے کا قران کریم میں وعدہ دیا گیا ہے یہ عاجز ہی ہے ان تمام دلائل اور علامت اور قرائن سے جو ذیل میں لکھتا ہوں ہر ایک طالب حق پر بخوبی کھل جائے گا۔

অর্থাৎ এখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, পবিত্র কুরআনে যেই মসীহ মওউদের আসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সে এই অধমই। (ইযালায়ে আওহাম, রূহানী খাযায়েন ৩/৪৬৮)।

এখন কথা হল, আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী ধর্মমত অনুসারে পবিত্র কুরআন দ্বারাই যেখানে ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলতে এতকাল ধরে মগজের সর্বশক্তি ব্যয় করে আসছেন, সেই ঈসা দুনিয়াতে আবার আসার প্রতিশ্রুতি একই কুরআনে কিভাবে থাকতে পারে?

এখন হয়ত বলবেন যে, কুরআনে যে ঈসার আগমনের প্রতিশ্রুতি থাকার কথা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখে গেছে তা হতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই উদ্দেশ্য। যদি তাই হয় তাহলে আপনি দয়া করে আমাকে পবিত্র কুরআন থেকে আগত ঈসা (আ.) এর প্রতিশ্রুতিটা সর্বপ্রথম আয়াতের অনুবাদ দ্বারা বুঝিয়ে দিন। তারপর সেই আয়াতের সাথে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সম্পর্ক কী এবং কিভাবে, তা পরিষ্কার করে দিন। দয়া করে এ কষ্টটুকু করুন। যাতে আমিও সত্যিকারের আগত প্রতিশ্রুত সেই ঈসা (আ.)-কে চিনতে পারি এবং গোমরাহ হওয়া থেকে বাঁচতে পারি।

আমার চ্যালেঞ্জ রইল, কোনো কাদিয়ানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করলেও গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে রাসূল (সা.) এর ফরমান মুতাবেক ‘প্রতিশ্রুত ঈসা’ (মসীহ) প্রমাণ করতে পারবেনা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
তারিখ- ০৭/১১/২০২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here