Home সমসাময়িক কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব?

কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব?

0

কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব তা নির্ভর করবে এন্টি কাদিয়ানী মুভমেন্ট কাদিয়ানীদের মুকাবিলায় কতটুকু শক্তিশালী তার উপর। কাদিয়ানীরা একতা, সাহসিকতা, কাঠামোগত, একাডেমিক এবং কর্মতৎপরতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যতটা অগ্রগামী, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি অগ্রগামী থাকা জরুরি এন্টি কাদিয়ানী মুভমেন্টের জন্য।

কাদিয়ানীদের রয়েছে শিশু, যুবক, বয়স্ক এবং মহিলা কর্মী বাহিনী। এদের প্রত্যেকের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থাও থাকে। শিশু কর্মীদের বলা হয় আতফাল, যুবকদের কর্মী বাহিনীকে খুদ্দাম আর চল্লিশ বছরের বেশি বয়স্কদের বলা হয় আনসার। মহিলা কর্মীদের বলা হয় লাজনা।

এদের প্রত্যেকের কার্যক্রমগুলো স্ব স্ব অবস্থান থেকে পৃথকভাবে পরিচালিত হয়। প্রত্যেককে নিজ নিজ কার্যক্রমের উপর রিপোর্ট জমা দিতে হয়। প্রত্যেকটি কর্মী সদস্যের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক কার্যক্রমের উপর মূল্যায়নধর্মী আলাদা ম্যাগাজিন, বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। যারা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখতে পারেন তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বিশেষ সম্মাননা সহ পুরষ্কৃত করা হয়।

এদের ভি টিম হিসেবে যত শাখাপ্রশাখাই থাকুক না কেন, প্রত্যেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে অভিন্ন নির্দেশনার মধ্য দিয়েই পরিচালিত হয় এবং সুনির্দিষ্ট টার্গেটেই এগিয়ে যায়।

এদের পুরো সত্তাটাই নির্দিষ্ট একটি কাঠামোর উপর দন্ডায়মান। হাইকমান্ড থেকে যখন যা নির্দেশ আসে তারা তা সুশৃঙ্খলভাবেই তা আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেকটি কাজের জন্য পৃথকভাবে যোগ্য ও অভিজ্ঞ দায়িত্বশীল রয়েছেন। তারা হোম ওয়ার্ক ছাড়া কোনো কাজ করেন না। ফলে তাদের কর্মপদ্ধতি থাকে নিখুঁত। অবশ্যই তাদের কাজ গুলো প্রফেশনালি কর্মীদের মাধ্যমেও আঞ্জাম দেয়া হয়। তাদের প্রতিটি বিভাগ প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দ্বারা যেমন পরিচালিত, তেমনি সবাই হাইকমান্ডের নিকট জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত।

তাদের নিজেস্ব অভিজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা আইটি সেক্টর পরিচালিত। তাদের রয়েছে একাধিক একাডেমিক ওয়েবসাইট। যেখানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো সহ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার সো-কল্ড খলীফাদের রচিত বইগুলোর পিডিএফ পাওয়া যায়। তাদের ওয়েব সাইট গুলোতে আরবি, উর্দু এবং বাংলা সহ সব ধরনের বই, ম্যাগাজিন, বুলেটিন, লিফলেট আপলোড থাকে। তারা তাদের বিরোধীদের সমালোচনার উপর খন্ডনমূলক আর্টিকেলও রেখে দিয়েছে।

এ তো গত ১৫ ই নভেম্বর ২০২৫ এর ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খতমে নবুওয়ত সম্মেলনের বক্তাদের বক্তব্যগুলোর উপর তারা তাদের পালটা জবাবি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যা স্যোসাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। তারা কতটা পূর্ব থেকে সুপরিকল্পিত প্লানিং নিয়ে অগ্রসরমান তা তাদের কাজের ধরণ দেখেই বুঝা যায়।

কাজেই কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করানোর সক্ষমতা তাদের বিরোধী পক্ষের কতটুকু আছে বা নেই তা পুরোপুরি নির্ভর করছে বিরোধী পক্ষের কার্যক্রমের টোটাল কাঠামোটা কী রকম! কাদিয়ানীদের সমপর্যায়ের? নাকি তার চেয়েও কম কিংবা বেশি?

খতমে নবুওয়ত এর ব্যানারে যারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে,

১। সারা দেশে কাদিয়ানী আস্তানাগুলোতে কি আপনাদের পদচারণা রয়েছে? কাদিয়ানী মতবাদ যারা গ্রহণ করেছেন তারাও তো ইতিপূর্বে আমাদেরই ভাই বোন ছিলেন। তারা কিজন্য ভুল পথে গেলেন? তারা কি বুঝেশুনে কাদিয়ানী হন নাকি টাকা পয়সার লোভে বা আবেগে কাদিয়ানী হন? কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে, তাই নয় কি? একটু ভেবে দেখেছেন?

২। কাদিয়ানীদের দাওয়াতি কর্মপন্থা কী? তারা সাধারণ মানুষকে কেমন বয়ান দ্বারা বুঝায় বা দাওয়াত দেয়? আপনারা কি সে বয়ানগুলো নোট করেছেন? সেসব বয়ানের বিপরীতে আপনারা কি আরও শক্তিশালী কোনো বয়ান তৈরি করতে পেরেছেন? আপনারা কি সেই শক্তিশালী বয়ানের উপর তারবিয়ত তথা প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করেছেন? কিছু দাঈ তৈরি করে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় দাওয়াতি কাজের কোনো উদ্যোগ নিতে পেরেছেন?

৩। কাদিয়ানীদের মত আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনো দক্ষ, যোগ্য, প্রশিক্ষিত, সাহসী এবং কর্মঠ কোনো লিডারশীপ কি আছেন যার সিদ্ধান্তকে সবাই সুপ্রিম সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন? অন্যথা আপনাদের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক কার্যক্রমগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে? দাঈদের কার্যক্রম গুলো কয়টা শাখায় বিভক্ত? তাদের কার্যক্রমের উপর মনিটরিং সেলে কতজন দায়িত্বশীল রয়েছেন? আইটি সেকশনে কাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ওয়েবসাইট, ইউটিউব, স্যোসাল মিডিয়ায় কী কী আপডেট রয়েছে?

৪। বাংলাদেশে কাদিয়ানীরা জাতীয় দৈনিক গুলোতে সম্পূর্ণ পৃষ্ঠা ব্যাপী ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে থাকে। খতমে নবুওয়তের হাইকমান্ড থেকে সেটির প্রতিউত্তরে আমরা কেন কোনো আপডেট দেখিনা। জাতীয় দৈনিক গুলোতে কি খতমে নবুওয়তের হাইকমান্ড থেকে পাঠানো কোনো ডকুমেন্ট প্রকাশ করতে অনিহা প্রকাশ করেছিল?

এভাবে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করার আছে। আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরামের উচিত, কাদিয়ানীদের মুকাবিলায় যদি সম্ভব হয় যুৎসই উদ্যোগ গ্রহণ করুন। কাঠামোগত ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজের ময়দানে সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখুন। অন্যথা শুধুশুধু লোকদেখানো কাজ করে কোনো লাভ নেই। ২০০৩ সালে বেগম জিয়ার আমলে কাদিয়ানীদের কিছু বইপুস্তক সে সময় সরকার নিষিদ্ধ করা মাত্রই সারা দুনিয়া থেকে সরকারের উপর অনবরত চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রায় ১৫শ নিন্দাসূচক ফ্যাক্স এসে জমা হয়েছিল বেগম জিয়া বরাবর। বিশ্বব্যাপী কাদিয়ানীদের হাত কতটা লম্বা তা বোধহয় বেগম জিয়া সে সময় কিছুটা টের পেয়েছিলেন। তারপর থেকে বেগম জিয়া একদম সাইজ হয়ে যান। কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে ভুলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তার সরকার। সুতরাং এখন বুঝতেই পারছেন যে, তাহলে এ মুহূর্তে আমাদের আসল করণীয় কাজটা কী? হ্যাঁ, ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.), আব্দুস সালাম চাটগামী (রহ.) দুজন মহান ব্যক্তিত্ব খুবই চমৎকার বলে গেছেন। সেটি হচ্ছে, কাদিয়ানীদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে ধরে ধরে বুঝাতে থাকা। তাদেরকে মোহাব্বত করে দ্বীনের পথে ডাকা। জবরদস্তি না করা। মাদ্রাসা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের তারবিয়ত দিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পাঠিয়ে দেয়া। আর এ কাজের জন্য যত টাকা পয়সা দরকার তা সবাই মিলে আঞ্জাম দেয়া।

রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান দায়িত্বশীল যারা তাদের কাছে যাওয়া। সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী প্রত্যেককে বুঝানো এবং কাদিয়ানীরা কেন ভুল পথে আছে তা তাদের সামনে তুলে ধরা। এ জন্য যত টাকার বইপুস্তক কেনা দরকার তা কিনে লাইব্রেরী আকারে বন্দোবস্তো করা। তাহলে মাত্র দশ বছরও লাগবেনা, এরই মধ্যে প্রায় সব কাদিয়ানীই ভুল বুঝতে পেরে ইসলামে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার দরকারও পড়বেনা।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here