Home মসীহ ঈসা কুরআন শরীফের এক জায়গায় ‘মরিয়ম’ শব্দের সর্বনাম পদ পুংলিঙ্গ বাচক হল কেন?

কুরআন শরীফের এক জায়গায় ‘মরিয়ম’ শব্দের সর্বনাম পদ পুংলিঙ্গ বাচক হল কেন?

0
কুরআন শরীফের এক জায়গায় ‘মরিয়ম’ শব্দের সর্বনাম পদ পুংলিঙ্গ বাচক হল কেন?
  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কুরআন শরীফের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যার অন্তরালে নিজের “বিবি মরিয়ম” দাবী কিভাবে হালাল করার চেষ্টা করেছিল জেনে নিন!!

পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাহরীম এর মধ্যে আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন :

وَ مَرۡیَمَ ابۡنَتَ عِمۡرٰنَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ صَدَّقَتۡ بِکَلِمٰتِ رَبِّہَا وَ کُتُبِہٖ وَ کَانَتۡ مِنَ الۡقٰنِتِیۡنَ

উচ্চারণ : ওয়া মারইয়ামাবনাতা ‘ইমরা-নাল্লাতীআহসানাত ফারজাহা-ফানাফাখনা-ফীহি মিররূহিনাওয়া সাদ্দাকাত বিকালিমা-তি রাব্বিহা-ওয়া কুতুবিহী ওয়া কা-নাত মিনাল কা-নিতীন।

অর্থাৎ (আল্লাহ আরো উদাহরণ পেশ করেন) ইমরান কন্যা মরিয়মের, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম। আর সে তার রবের বাণীসমূহ ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যতা স্বীকার করেছিল এবং সে ছিল অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (আত-তাহরীম/৬৬:১২)।

আয়াতের ‘ফানাফাখনা-ফীহি‘-তে “মরিয়ম” শব্দের জন্য পুং লিঙ্গ বাচক সর্বনাম উল্লেখ করার ব্যাখ্যায় মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, এই থেকে উদ্দেশ্য হল, সমস্ত মুমিন “মরিয়মী” গুণ অর্জনকারী হিসেবে রূপক অর্থে তারা সবাই ‘বিবি মরিয়ম’-ও। ফলে আয়াত (৩:৩৬) অনুসারে “বিবি মরিয়ম” এর ন্যায় তারা প্রত্যেকে শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে! মির্যার উক্ত মনগড়া ব্যাখ্যার জবাবে বলা হবে যে,

আলোচ্য আয়াতে সর্বনামপদ পুং লিঙ্গ নেয়ার আগে তো “আল্লাতী” (الَّتِیۡۤ) স্ত্রীবাচক ইসমে মওছূল-ও নেয়া হয়েছে। এখানে কী বলবেন?

সূরা আত তাহরীম /৬৬ঃ১২

সেযাইহোক আয়াতটিতে সর্বনামপদ পুং লিঙ্গ নেয়ার কারণ হচ্ছে, “মরিয়ম” শব্দটি শব্দগত (লফজী) দিক থেকে পুং লিঙ্গ যদিও বা বিধানগত (মা’নবী) দিক থেকে সেটি স্ত্রী লিঙ্গ। অনুরূপ কোনো একটি শব্দ পবিত্র কুরআনের মধ্যে শব্দগত পুং লিঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও বিধানগত (মা’নবী) স্ত্রী লিঙ্গ হওয়াতে সেটি স্ত্রীবাচক ক্রিয়াপদ দ্বারাও ব্যবহৃত হওয়া প্রমাণিত। যেমন – লাং তামাচ্ছাহুন না-রু ইল্লা আইয়্যামাম মা’দূদা-ত (সূরা আলে ইমরান ২৪)। এখানে “আইয়্যাম” শব্দটি শব্দগত পুং লিঙ্গ কিন্তু বিধানগত স্ত্রী লিঙ্গ (যেমনিভাবে মরিয়ম শব্দটি শব্দগত পুং লিঙ্গ কিন্তু বিধানগত স্ত্রী লিঙ্গ।) তাই এই থেকে এমন কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করা যাবেনা যে, সমস্ত মুমিন ‘মরিয়মী’ গুণ অর্জনকারী বলেই তারাও শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে! পরন্তু এইধরণের ব্যাখ্যা শুধুই তাহরীফ (বিকৃতি) নয়, রীতিমত হাস্যকর-ও।

এবার তাহলে প্রশ্ন হতে পারে যে, মরিয়ম (আ:)-কে তাঁর জন্মমুহূর্তে শয়তান কেন স্পর্শ করতে পারেনি। উত্তরে বলা হবে, হযরত মরিয়ম (আ:)-এর মাতার বিশেষ দোয়ার কারণেই আল্লাহতায়ালা তাঁকে এবং তাঁর সন্তানকে শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য, ইন্নী ও’ঈযুহা বিকা ওয়া যুররিয়্যাতাহা মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম (০৩:৩৬)। অর্থাৎ আমি তোমার নিকট তাঁর এবং তাঁর সন্তানের ব্যাপারে শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি।

এবার বাকি থাকল, মরিয়ম আর তার সন্তান ব্যতীত অন্যান্য নবীগণও শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়েছেন কিনা? উত্তর হল, জ্বী হ্যাঁ। কেননা পবিত্র কুরআনের ভাষ্য (২১:১০১) অনুসারে নবীগণের প্রত্যেকের জন্য পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত। তাই তাঁরা আল্লাহর বিশেষ হেফাজতের চাদরে আবৃত। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। তাই শয়তানের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় যে, সেই অনুগ্রহের চাদর ভেদ করে অভ্যন্তরে ঢুকবে এবং তাঁদের স্পর্শ করে আল্লাহ’র উপর জয়লাভ করবে! সুতরাং রাসূল (সা:) সহ আরো যারা শয়তানের স্পর্শতা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তারা কথিত “মরিয়মী” গুণেগুনান্বিত হয়ে নয়, বরং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের চাদরে আবৃত থাকার মু’জিজার কারণেই। অধিকন্তু “মরিয়ম” শব্দটি কুরআনের প্রায় সকল জায়গায় স্ত্রীবাচক শব্দেও এসেছে। যেমন “ইয়া মারইয়ামুক্বনুতী লি-রাব্বিকে ওয়াসজুদী ওয়ারক্বা’ঈ মা’আর রাকি’ঈন” (সূরা আলে ইমরান ৪৩)। এখানে “যের যুক্ত কাফ [কে]” স্ত্রী বাচক সর্বনাম পদ হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ মরিয়ম (আ:) সম্পর্কে বলেছেন, “ওয়াসত্বফাকে আ’লা নিসা-ইল আ’লামীন” অর্থাৎ তিনি [আল্লাহ] তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত নারীর উপর মনোনীত করেছেন। তাই এবার কাদিয়ানীদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনাদের এসমস্ত অপব্যাখ্যা মতে মির্যা সহ যারাই “মরিয়ম” হবে তারা কি দুনিয়ার নারীদের উপর মনোনীত হওয়ার সেই শ্রেষ্ঠত্বও লাভ করবে?

মজার ব্যাপার হল, সূরা মরিয়ম এর ৫৫ নং আয়াতে ইসমাইল (আ:) সম্পর্কে এসেছে “ওয়া কা-না ইন্দা রাব্বিহি মারদ্বিয়্যাহ” অর্থাৎ সে ছিল তাঁর প্রভুর নিকট সন্তোষপ্রাপ্ত। তো এর মানে কি অন্য নবীগণ আল্লাহর নিকট সন্তোষপ্রাপ্ত ছিলেন না? নতুবা কুরআনে “মারদ্বিয়্যা” শব্দটি শুধুমাত্র ইসমাইল (আ:)-এর জন্য বিশেষভাবে কিজন্য ব্যবহৃত হল? ভাবিয়ে তুলে কিনা??

অতএব মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে “বিবি মরিয়ম” দাবী করার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কুরআনের আয়াতকে যেভাবে ইচ্ছেমত বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে গেছে অনুরূপ গত চৌদ্দশত বছর থেকে আর কোনো বরেণ্য তাফসীরকারক থেকে প্রমাণিত নয় বলে তার কৃত ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক কথাবার্তা সর্বান্তকরণে পরিত্যাজ্য। যেজন্য মির্যা আর মির্যায়ী উম্মত ভন্ড, মুরতাদ এবং জিন্দিক বলেই প্রমাণিত। আশাকরি জবাব পেয়েছেন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here