মক্কার মুশরিকরা রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনে আবি কাবশাহ‘ কেন বলত? এর জবাব আমি আরবী ভাষার একটি ওয়েব সাইট থেকে বাংলায় অনুবাদ করে পাঠকদের উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরছি। (আরবী):
كان المشركون يطلقون على النبي صلى الله عليه وسلم (ابن أبي كبشة)، فمن أبو كبشة ؟ قيل: هو جد النبي صلى الله عليه وسلم من قبل أمه، وهو والد أمه آمنة واسمه وهب بن عبد مناف بن زهرة. وقيل: هو جد النبي صلى الله عيبه وسلم من قبل جدة أبيه، وهو والد سلمى الأنصارية الخزرجية والدة عبد المطلب، وهو ابن عمرو بن زيد بن لبيد الخزرجي. وقيل: هو الحارث بن عبد العزي السعدي زوج حليمة التي أرضعت النبي صلى الله تعالى عليه وسلم في صغره وقيل: هو “جزء بن غالب بن عامر بن الحارث بن غبشان الخزاعي”، أو “وجز بن غالب”، وهو من خزاعة ثم من بني غبشان، أحد أجداد النبي من قبل أمهاته سبب تسمية قريش النبي صلى الله عليه وسلم بأبي كبشة كان مشركو قريش يسمون النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابن أبي كبشة حين دعا إلى الله وخالف أديانهم، تشبيهاً لأبي كبشة (وجز بن غالب)، الذي خالف قريشاً في عبادة الأوثان فعبد الشعر (والشعرى هو النجم المضيء الذي يخرج في شدة الحر)، فنسبوه إليه للاشتراك في مطلق المخالفة وقيل: إن قريشاً كانت تنسب النبي صلى الله عليه وسلم إلى جد غامض غير معروف تحقيراً له؛ لأن العرب كانت إذا حقرت إنساناً نسبته إلى جدٍ غامض غير معروف في الناس. والله أعلم
(বাংলা) অনুবাদ : মুশরিকরা নবী করীম (সা:)-কে ‘ইবনে আবি কাবশাহ’ বলত! তো কে সেই ‘আবু কাবশাহ’? জবাবে বলা হয় যে, কারো মতে “আবি কাবশাহ” ছিলেন নবী করীম (সা:)-এর আম্মা বিবি আমেনার বংশের দিক থেকে উনার নানা। যিনি নবী করীম (সা:)-এর আম্মা বিবি আমেনার পিতা জনাব ওয়াহাব ইবনু আব্দে মানাফ ইবনু যোহরাহ। কারো মতে, নবী করীম (সা:)-এর বাবার দাদীর বংশের দিক থেকে নবী করীম (সা:)-এর একজন পর-দাদা, যিনি আব্দুল মুত্তালিবের আম্মা জনাবা সালমা আল আনসারিয়্যাহ আল খাজরাজিয়্যাহ’র পিতা ছিলেন। তার নাম ছিল, ইবনু আমর ইবনু যায়েদ ইবনু লাবিদ আল খাজরাজী। কারো মতে, তিনি নবী করীম (সা:)-এর দুধমাতা জনাবা হালিমা’র স্বামী জনাব হারেছ ইবনু আব্দুল উজ্জা আস-সা’দিয়্যি। কারো মতে, তিনি নবী করীম (সা)-এর মাতার দিক থেকে কোনো এক দাদা ছিলেন, যার নাম, জুয ইবনু গালিব ইবনু হারিছ ইবনু গাবশান আল-খাজায়ী। অথবা জুয ইবনু গালিব যিনি বনু খাজা’আ গোত্রের এমনকি বনু গাবশান গোত্রেরও (পূর্বপুরুষ ছিলেন)। রাসূল (সা:)-কে ইবনে আবি কাবশাহ নামে নামকরণ করার কারণ এই যে, আবি কাবশাহ নামের রাসূলের পূর্বপুরুষ (পরদাদা/নানা) লোকটি কোরাইশ মুশরিকদের মূর্তিপূজার যেমন বিরোধিতা করত ঠিক তেমনি রাসূল (সা:)ও যখন মুশরিকদের আল্লাহ’র দিকে ডাকতেন এবং তাদের পৌত্তলিক ধর্মগুলোর বিরোধিতা করতেন তখন তারা তাঁকে অনুরূপ বিরোধিতার কারণে সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে ‘ইবনে আবি কাবশাহ’ (অর্থাৎ আবি কাবশাহ’র বংশধর) বলতো। [উল্লেখ্য, ‘ইবনু‘—এর আরেক অর্থ ‘বংশধর‘। যেমন, সমস্ত মানুষকে ‘বনী আদম’ তথা আদমের বংশধর বলা হয় – অনুবাদক]। কেউ কেউ বলেন, কোরাইশ মুশরিকরা একজন অপ্রসিদ্ধ ও রহস্যময় ব্যক্তির দাদা’র প্রতি সম্বোধন করে নবী করীম (সা:)-কে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে ‘ইবনু আবি কাবশাহ’ বলতো। কেননা, কোরাইশরা যখন কাউকে অপমান করতে চাইত তখন এভাবেই তাকে সম্বোধন করতো। (আল্লাহু আ’লাম।) অনুবাদ শেষ হল।
উল্লিখিত লিখাটি দ্বারা আমাদের কী ম্যাসেজ দেয়া উদ্দেশ্য?
এই বিষয়ে লিখাটি এখানে অনুবাদ করার উদ্দেশ্য হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবীকে অযৌক্তিক নয় সাব্যস্ত করার জন্য রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ বিষয়টি টেনে আনার চেষ্টা করে এবং যুক্তি দেয় যে, মির্যা কাদিয়ানী ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবী অযৌক্তিক হলে তবে রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়ার কী যুক্তি?
এর জবাব হল, প্রথমত, রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়া এটি উনার নিজের কোনো দাবী ছিল না। তিনি কখনো নিজেকে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়ার দাবী করেননি! বরং মক্কার উগ্র মুশরিকরাই উনাকে এইরকম শব্দচয়নে সম্বোধন করত! তাও ভালো উদ্দেশ্যে নয়, বরং কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যেই। অপর দিকে মির্যা কাদিয়ানী ইবনে মরিয়ম হওয়ার দাবী নিজেই করেছিল এবং সে এই দাবীর ভিত্তিতে নিজেকে হযরত ঈসা (আ:) অপেক্ষায় মর্যাদায় বড় দাবী করত। (দেখুন হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১১৯)।
দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আবু কাবশাহ নামক ব্যক্তিটি কোরাইশদের কোনো একজন পূর্বপুরুষ ও মূর্তি পূজা-বিরোধী, যার সাথে রাসূল (সা:)-এর বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ তথা আবু কাবশাহ’র বংশধর বা আবু কাবশাহ’র উত্তরসূরী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা কোনোভাবেই অযৌক্তিক ছিলনা। অপর দিকে মির্যা কাদিয়ানীর ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবী সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক ছিল। কেননা তার মায়ের নাম ছিল, চেরাগ বিবি! আর তার পূর্ব পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিটির নাম ছিল মোঘল বরলাস। তিনি সম্রাট তৈমুরলং এর বংশধর। (দেখুন, আহমদ রচিত (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১)। সে হিসেবে তার ‘ইবনে তৈমুর লং’ হওয়াই যৌক্তিক ছিল!
শেষকথা, দীর্ঘ আলোচনা হতে বুঝা গেল, রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ এর উপর অনুমান করে মির্যার ‘ইবনে মরিয়ম’ দাবীকে কোনোভাবেই যুক্তির মানদণ্ডে উঠানো যায় না। তাই তাদের ওই সমস্ত যুক্তি পুরোপুরি বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত!
অনুবাদক ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম. এ