Home আকীদা ‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ সম্পর্কে – পর্ব ২

‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ সম্পর্কে – পর্ব ২

0
‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ সম্পর্কে – পর্ব ২

অত্র বিষয়ে আর্টিকেল নং ১

অত্র বিষয়ে আর্টিকেল নং ৩

‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ এর সঠিক তাৎপর্য ও কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন :

সূরা আলে ইমরান এর যে আয়াতটির অপব্যাখ্যা দিয়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে চায় সেটির সঠিক তাৎপর্য নিয়ে আজকে ২ নং আর্টিকেল নিয়ে লিখতে বসছি। এই পর্যায় অত্র আর্টিকেলে যে কয়টি পয়েন্ট নিয়ে লিখব,

  • ১. আয়াতটির من قبله الرسل এর الرسل শব্দের অনুবাদ স্বয়ং কাদিয়ানীদেরই কোনো কোনো লিটারেচারে ‘বহু রাসূল‘ মর্মে গ্রহণ করা!
  • ২. আয়াতটির الرسل এর মর্মার্থে ‘শর্ত প্রযোজ্য‘-এর রীতি না মানলে যে সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং যে সমস্ত প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব হবেনা!

হেকিম নূরউদ্দিন এর বই থেকে : আমরা মুসলিম উম্মাহা উক্ত আয়াতটির যেরূপ অর্থ গ্রহণ করে থাকি হুবহু সেই অর্থই গ্রহণ করেছেন কাদিয়ানী খলীফা হেকিম নূরুউদ্দীনও। তার উর্দূ গ্রন্থ থেকে বাংলায় অনুবাদটি এইরূপ, (অর্থ) ‘মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে।’ (কুরআন ০৩:১৪৪)। বলাবাহুল্য, হেকিম নূরউদ্দীন ‘আর-রসুল’ (الرسل) হতে ‘বহু রাসূল’ (بہت رسول) অর্থ নিয়েছেন। (দেখুন, ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা ২৮; রচনা ১৮৮৭-৮৮ইং দ্রষ্টব্য)। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, তিনিও আয়াতটির الرسل এর শুরুতে যুক্ত ال-কে ‘আহদে খারেজি’ হিসেবেই মনে করতেন। ফলে আয়াতটির الرسل এর অর্থে শর্ত প্রযোজ্য হবার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। স্ক্রিনশট :-

ফছলুল খিতাব

বইটি মির্যা কাদিয়ানীর তত্ত্বাবধানে লিখা : এখানে বলে রাখতে চাই, হেকিম সাহেব বইটি জম্মুর মহারাজার রাজপুত্রকে চিকিৎসা দেয়ার উদ্দেশ্যে পুঞ্চে অবস্থানকালে খ্রিস্টানদের রদ করতে লিখেছিলেন। বইটি লিখার সময় তিনি সকল বিষয়ে মির্যা কাদিয়ানীর পরামর্শ চাইতেন। একথা লিখা আছে ‘হযরত মৌলভী নূরউদ্দীন (রা.) খলীফাতুল মসীহ আউয়াল’ নামীয় পুস্তকের ৭৪-৭৫ পৃষ্ঠায়।

ইস্তিগরাকি অর্থেও শর্ত প্রযোজ্য বিধানযোগ্য : কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাসহ তার বেশিরভাগ অনুসারী, قد خلت من قبله الرسل -এর মধ্যকার الرسل -এর ال-কে ইস্তিগরাকি (ব্যাপক অন্তর্ভুক্তকারী) ধরে অর্থ করে থাকেন ‘সমস্ত রাসূল’ বা ‘সব রাসূল’। অথচ তাদের এই অনুবাদ নানা শক্তিশালী কারীনার বিরুদ্ধে যাওয়ায় সুস্পষ্ট ভুল। পরন্তু তাদের এই ধরণের কনসেপ্ট উসূলে ফিকহ শাস্ত্রের স্বতসিদ্ধ উসূল তথা নিয়ম-নীতির পুরোপুরি বিরোধী। বরং তাদের নিয়ম-নীতি পরিপন্থী এই ধরনের উদ্দেশ্যমূলক অর্থ ও ব্যাখ্যা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে। এই সম্পর্কে একটু পরেই লিখা হবে, ইনশাআল্লাহ। তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, তাদের এই মনগড়া অর্থ হেকিম নূরউদ্দিনের উল্লিখিত অনুবাদ এমনকি একখানা উসূলেরও সম্পূর্ণ বিরোধী। তা এই যে,

হেকিম নূরউদ্দিন সাহেব কৃত ‘তাসদীকে বারাহীনে আহমদীয়া’ পুস্তকটির ১০৪ নং পৃষ্ঠায় চমৎকার একটি উসূল (নীতিমালা) উল্লেখ আছে এভাবে যে, الف و لام اگرچہ عموم اور استغراق کے معنی بھی دیتا ہے مگر خصوصیت کے معنی بھی دیتا ہے- ہر دو معنی اپنے اپنے موقع پر لے جاتے ہیں অর্থাৎ ‘আলিফ লাম যদিও আম এবং ইস্তিগরাকের অর্থও প্রদান করে কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য অর্থও প্রদান করে থাকে। উভয় অর্থ যথোপযুক্ত স্থানে গ্রহণ করা হবে।’ (তাসদীক বারাহীনে আহমদীয়া – ১০৪; অনলাইন এডিশন)। এখন তাহলে আপনাদেরই দাবী অনুসারে الرسل-এর আলিফ লাম ‘ইস্তিগরাকি’ হলেও সেখানে এখন শর্ত প্রযোজ্য এর বিধান প্রয়োগের সুযোগ থাকল না কিভাবে? স্ক্রিনশট –

তাছদীকে বারাহীনে আহমদিয়া

মির্যা বশির উদ্দিন এর রচনা থেকে : মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব তার পিতা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কথিত একখানা ইলহামের ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নরূপ, (উর্দূ) آسمان سے کئ تخت اترے پر تيرا تخت (رسول ص پاک کے بعد) سب سے اوپر بچھایا گیا অর্থাৎ ‘আকাশ থেকে কয়েকটি সিংহাসন নাযিল হয়েছে। কিন্তু তোমার সিংহাসনটি (রাসূলেপাকের পর) সবার উপরে পাতা হয়েছে।’ (আল-ফজল, তারিখ ১৯ই আগস্ট ১৯৬১ ইং রাবওয়া হতে প্রকাশিত)। মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ ‘সবার উপরে‘ শব্দটিতে ইস্তিগরাকের অর্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখানে ‘তাখছীছ’ এর বিধান প্রয়োগ করলেন কিভাবে যদি না শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম না থাকবে? তিনি কিন্তু বিশেষভাবে একজনকে ‘সবার উপরে’ অর্থের ব্যাপকতার বাহিরে রেখেছেন। তিনি এর মধ্য দিয়ে যেন বুঝাতে চাইলেন, ইস্তিগরাকি অর্থেও শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম বিধানযোগ্য। এটি স্ক্রিনশট সহ ৩ নং আর্টিকেল থেকে দেখে নিন!

এবার আলোচনা করা হবে যে, আলিফ লাম-কে ইস্তিগরাকি ধরে অনুবাদ করার ফলে কাদিয়ানী সম্প্রদায় কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হবে?

কে জানি প্রশ্ন করেছিল যে, পুরো আয়াতখানা পড়ে দেখুন, শেষে উল্লেখ আছে, أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ এতে বোঝা যাচ্ছে, এখানে ‘খালাত’ অর্থ মৃত্যু বা হত্যা। এ দুই অর্থের সাথেই শব্দটি নির্দিষ্ট। উত্তরে বলতে চাই যে, এই আয়াতের قد خلت ফে’লকে প্রকৃত অর্থ থেকে বের করে রূপক অর্থে তথা ‘মৃত্যু’ অর্থে গ্রহণ করলে তখন শব্দটির নিজেস্ব গুণাগুণ তথা ইশতিরাক্ব (অর্থের দ্বৈততা) আর অবশিষ্ট থাকেনা। তাছাড়া আয়াতটির أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ এর মৃত্যু আর হত্যা উভয়টাই শুধুমাত্র রাসূল (সা.)-এর উদ্দেশ্যেই ছিল বলে ‘খাস’ এর হুকুমে নিহিত। যার ফলে এগুলোকে ‘আম’ অর্থে ধরে নতুন কোনো ব্যাখ্যার পিছু নেয়া সুস্পষ্ট দুষ্টুমি ও নীতিবিরুদ্ধ বৈ কিছুই না।

যে প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই :

১। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৪৪ এর من قبله الرسل এর الرسل এর মর্মার্থে শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম মেনে অর্থ ও ব্যাখ্যায় যাওয়া আবশ্যক। যেহেতু পবিত্র কুরআনের অপরাপর আয়াত সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে বহু রাসূল এখনো জীবিত। যেমন, সূরা নিসা আয়াত নং ৫৪, আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬, সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩, সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১০, সূরা যুখরুফ আয়াত নং ৬১ ইত্যাদি আয়াত সমূহের সুস্পষ্ট ইংগিত দ্বারা হযরত ঈসা রাসূলুল্লাহ (আ.) জীবিত প্রমাণিত। সূরা মরিয়াম আয়াত নং ১৯ দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আ.) রাসূল নামে আখ্যায়িত। সূরা হাজ্জ আয়াত নং ৭৫ দ্বারা আরও বহু ফেরেশতা রাসূল নামে আখ্যায়িত। এই সম্পর্কে আর্টিকেল নং ৩ দেখা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, قد خلت من قبله الرسل শীর্ষক আয়াতে ‘সমস্ত রাসূল’ গত হইয়া গিয়াছে বলে ‘সমস্ত রাসূল’-ই মৃত্যুবরণ করেছেন- এই উদ্দেশ্য হলে তখন কি উল্লিখিত রাসূলগণকেও মৃত বলা হল না? অথচ এদের সকলেই এখনো জীবিত!

২। সূরা মায়েদা আয়াত নং ৩ (حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ) “তোমাদের উপর মৃত, রক্ত এবং শুয়োরের মাংস হারাম করা হয়েছে”- দ্বারা সমস্ত ‘মৃত জন্তু’-এর মধ্যে মৃত মাছও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল কিনা? এখন কাদিয়ানীরা যদি এই সমস্ত ক্ষেত্রে হাদীসের বর্ণনাগুলোর আলোকে আয়াতের এই সমস্ত অর্থে শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম না মানেন তাহলে তাদের পক্ষে মৃত মাছ খাওয়াও বৈধ হয় কিভাবে? কেননা ‘সমস্ত মৃত’ বলতে ‘মৃত মাছ’-ও তার মধ্যে শামিল। এবার শর্ত প্রযোজ্য-এর নিয়ম লঙ্ঘন করে মৃত মাছ খাওয়া হালাল করুন! উল্লেখ্য, যারা মনে করেন যে, কুরআন দ্বারা যে কথা সাব্যস্ত হবে সেটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য হাদীসে যাওয়ার দরকার নেই, তারা এই জিজ্ঞাসার কী সমাধান দেবেন!

৩। সূরা আল ফাতির আয়াত নং ২৮ (إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ) “নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমগণই তাঁকে ভয় করে”- দ্বারাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তাঁকে প্রকৃতপক্ষে ভয় করেন আলেমগণই। কিন্তু আমরা সচরাচর দেখি যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় কথায় কথায় আলেম উলামাকে ‘আকাশের নিচে নিকৃষ্ট জীব’ বলে কটুক্তি করে থাকে। অথচ আয়াতটিতে আলেমদের সম্পর্কে আল্লাহতালার উক্ত প্রশংসা বাণী الْعُلَمَاءُ (আল-উলামা) বহুবচনাত্মক শব্দেই এসেছে। ফলে সমস্ত আলেমই উক্ত শব্দে শামিল হওয়াতে একজন আলেম সম্পর্কেও কটুক্তি করার কোনো সুযোগ থাকেনি কাদিয়ানীদের জন্য, যে পর্যন্ত না শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম তারা মানবে! এখন এর সুরাহা কিভাবে করবেন?

৪। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৮১ (سَنَکۡتُبُ مَا قَالُوۡا وَ قَتۡلَہُمُ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ) “অচিরেই আমি তারা যা বলেছে তা এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিষয় লিখে রাখব”- দ্বারাও বাহ্যত সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, বনী ইসরাঈলি সমস্ত নবী তাদের হাতে হত্যা হয়েছেন। কারণ আয়াতে শব্দটি বহুবচনে الْأَنبِيَاءَ (আন আম্বিয়া) এসেছে। এখন এক্ষেত্রেও শর্ত প্রযোজ্য নিয়ম না মানার অর্থই হল, ইয়াকুব, ইউসুফ, শু’আইব, আইয়ুব, মূসা এবং ঈসা (عليهم السلام) সহ সমস্ত ইসরাঈলী নবীকে হত্যা করা হয়েছিল বলেই বিশ্বাস করতে হবে। এখন এর কিভাবে সমাধান করবেন?

৫। সূরা আল-হুজুরাত আয়াত নং ১৩ (يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ) “হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি”- দ্বারাও বাহ্যত সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, সমস্ত মানুষের ন্যায় হযরত আদম, হাওয়া এবং ঈসাও একই নর এবং নারী হতে সৃষ্ট। আসলে কি তাই? নিশ্চয়ই না। বরং এখানে শর্ত প্রযোজ্য এর নিয়ম মেনে বিশ্বাস করতে হবে যে, এঁদের তিনজনই কুরআনের উক্ত ঘোষণার (مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ) তথা একজন নর এবং নারী থেকে সৃষ্টির প্রচলিত নিয়মের অন্তর্ভুক্তির বাহিরে। এখন কাদিয়ানীরা কি শর্ত প্রযোজ্য এর নিয়ম লঙ্ঘন করে এখানেও সমস্ত মানুষকে একই নর নারী থেকে সৃষ্ট বলবে?

৬। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৮৫ (كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ) অর্থাৎ ‘প্রতিটি নফসকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে’ দ্বারা সকল নফস বা সত্তা মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবেই। অথচ এখানেও ‘শর্ত প্রযোজ্য‘-এর নিয়ম বিধানযোগ্য। অন্যথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালাকেও মরণশীল বিশ্বাস করতে হয়, যেহেতু সূরা আল মায়েদার আয়াত নং ১১৬ (تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ)-এর মধ্যে আল্লাহ’র জন্যও ‘নফস‘ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এখন কাদিয়ানীরা কি আল্লাহকেও মরণশীল বলবে? নাউযুবিল্লাহ।

৭। তর্কের খাতিরে মানলাম যে, আয়াতটির الرسل হতে ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছে’ এ অর্থই সঠিক; এমতাবস্থায় আপনারা সূরা মায়েদার ৭৫ নং আয়াতের ‘الرسل’ হতেও কি ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছে’—এমন অর্থ নেবেন? যদি এমন অর্থ নেন তখন কি মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়ত ও রেসালতেরও অস্বীকার করা হল না? কেননা যদি বলা হয় যে, মসীহ ইবনে মরিয়মের পূর্বেই সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করিয়াছেন, তখন মসীহ (আ:)-এর পর আগমনকারী মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-কে আপনারা একজন রাসূল হিসেবে কিভাবে স্বীকার করলেন?

বলে রাখা দরকার যে, আয়াতটির মধ্যে قبل শব্দটি মুদাফ (مضاف)। আর ব্যাকরণের একটি নিয়ম হল, মুদাফ-এর অর্থ নেয়ার ক্ষেত্রে ‘র’ কিংবা ‘এর’ ধরণের ষষ্ঠী বিভক্তি উল্লেখ থাকতে পারবেনা। কাজেই কাদিয়ানী নেতা জনাব আব্দুল আউয়াল সাহেব কর্তৃক গৃহীত অনুবাদ – তাঁর পূর্বেকার সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে‘ – ব্যাকরণ বিরুদ্ধ ও পরিত্যাজ্য। অথচ এক্ষেত্রে ব্যাকরণসিদ্ধ অনুবাদ হল – তাঁর পূর্বে। শব্দের শেষাংশে ‘র’ বিভক্তি থাকবেনা। যেমন, يد الله على الجماعة ; فوق كل ذى علم عليم ; رسول الله اسوتنا ; এখানে যথাক্রমে يد; فوق এবং رسول শব্দগুলো নিজ নিজ বাক্যে মুদাফ (مضاف) হওয়ায় অনুবাদের ক্ষেত্রে এগুলোতে “” বা “এর” ধরণের ষষ্ঠী বিভক্তি উল্লেখ ছাড়া অনুবাদ হবে এভাবে – আল্লাহর সাহায্য জামাতের উপর; প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী আছে; আল্লাহর রাসূল আমাদের আদর্শ। অনুরূপ من قبله الرسل এর من قبله -তে অনুবাদ করতে হবে ‘তার পূর্বে‘। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

ঈসা (আ.) জীবিত ও ইজমা প্রতিষ্ঠা : উক্ত আয়াত দ্বারা ঈসা (আ:) বেঁচে নেই, মৃত্যুবরণ করিয়াছেন মর্মে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে, এমন ধারণা যাদের, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক বরেণ্য স্কলার ও যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ঈসা (আ.)-এর সশরীরে আকাশে জীবিত থাকা মর্মে (انه رفعه بدنه حيا) ‘আন্নাহু রাফা’আহু বি-বাদানিহি হাইয়ান’ অর্থাৎ আল্লাহতালা নিশ্চয়ই তাঁকে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন, কেন লিখে গেলেন? (রেফারেন্স, ইবনে হাজার রচিত ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক, খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৬২)। তেমনিভাবে শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) তিনিও বা কেন লিখলেন যে (واجمعت الامة على ان الله عز و جل رفع عيسى اليه الى السماء) ‘ওয়াজমা’আতুল উম্মাতু আ’লা আন্নাল্লাহা আ’জ্জা ওয়া জাল্লা রাফা’আ ঈসা ইলাইহি ইলাস-সামায়ি’ অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীয়া এইমর্মে সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহতালা ঈসা (আ:)-কে নিজের নিকট আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন? (রেফারেন্স, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যা’ ৪/৪৫৭)। কিতাবটি ডাউনলোড করুন

.

এরা দুইজনও স্বীকৃত মুজাদ্দিদ : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী আর শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ তারা দুইজনই মির্যা কাদিয়ানীর নিকটেও মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। (দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীর শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ [উর্দূ] খন্ড ১ পৃষ্ঠা নং ১৪২-৪৫; প্রথমপ্রকাশ ১৯০১ইং, কাদিয়ান থেকে)। স্ক্রিনশট –

কাদিয়ানীদের স্বীকৃত কিতাব ‘আছলে মুছাফফা‘ (উর্দূ)। রচনাকাল ১৯০১ ইং

মুজাদ্দিদ সম্পর্কে মির্যার দৃষ্টিভঙ্গি : মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন, মুজাদ্দিদগণ দ্বীনের মধ্যে কোনোরূপ বেশকম করেননা বরং হারানো দ্বীন পুন: প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪) স্ক্রিনশট দেখুন। এখন এর সুরাহা কিভাবে করবেন?

.

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article ওয়াহদাতুল উজূদ এর সঠিক ব্যাখ্যা
Next article ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here