কাদিয়ানীবন্ধুদের তথাকথিত “মুসলেহ মওউদ” কোনোভাবেই মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নন! কিন্তু কেন? জানতে সম্পূর্ণ লিখাটি পড়ুন!
- কাদিয়ানীবন্ধুদের তথাকথিত “মুসলেহ মওউদ” (বা মির্যা কাদিয়ানীর প্রতিশ্রুত পুত্র) মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নন, বরং মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের রচনাবলীর আলোকে “মুসলেহ মওউদ” মূলত মুহাম্মদী বেগমের গর্ভ থেকেই হওয়ার ছিল! মির্যা সাহেবের রচনাবলী থেকে বিষয়টি এখানে প্রমাণ করছি! আশাকরি বিষয়টি নিয়ে নিজেরাও একটু ভেবে দেখবেন!
প্রথমে কয়েকটি ধারণা :
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের নিচের কয়েকটি কথা ভালো মত মনে রাখতে হবে। যেমন, মির্যা সাহেবের সাথে তার প্রথমা স্ত্রী হুরমত বিবির বিয়ে হয় ১৮৫২ বা ৫৩ সালে । দ্বিতীয়া স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিয়ে হয় ১৮৮৪ সালে দিল্লিতে। তার গর্ভে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর জন্ম হয় ১৮৮৯ সালে। তবে তার এক বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৮৮ সালে নুসরাতের গর্ভে বশির উদ্দিন নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় যিনি বশিরে আউয়াল নামে পরিচিত। তিনি ঐ বছরই মারা যান । মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহের প্রথম ভবিষ্যৎবাণীটি ১৮৮৮ সালের দিকে ছিল। (রেফারেন্স, মির্যাপুত্র রচিত সীরাতে মাহদী খ-২; পৃষ্ঠা ৪৪৩-৪৪ রেওয়ায়েত নং ৪৭০, নতুন ও অনলাইন এডিশন)।
তাহলে “মুসলেহ মওউদ” কে? এ সম্পর্কে আমার তাহকিক ও গবেষণা :
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর নেতৃত্বাধীন “কাদিয়ানী” গ্রুপের মতানুসারে মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণীকৃত সেই কথিত মুসলেহ মওউদ হচ্ছেন তাদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ আহমদ (১৮৮৯-১৯৬৫ইং)। অপ্রিয় হলেও সত্য হল, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ ই উক্ত “মুসলেহ মওউদ” ছিলেন এটি একেবারেই অসত্য। কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় গ্রুপ “লাহোরি মুভমেন্ট” এরও একই বক্তব্য যে, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সেই মুসলেহ মওউদ নন, মির্যা কাদিয়ানী যার ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে গেছেন!
এখন প্রশ্ন হল, ১. তাহলে তথাকথিত সেই মুসলেহ মওউদ কে? ২. তার আদৌ জন্ম হয়েছে কিনা? ৩. অথবা কেয়ামতের পূর্বে তার কখনো জন্ম হওয়ার সুযোগ আর আছে কিনা? ৪. যদি আর কোনো সুযোগ না থাকে তবে কেন থাকবেনা? আজকের প্রবন্ধে এ কয়টি প্রশ্নের উত্তর দেব, ইনশাআল্লাহ।
- উল্লেখ্য, কথিত মুসলেহ মওউদ এর কনসেপশনটি মির্যা কাদিয়ানীর একটি বানোয়াট ধারণা, তার সাথে ইসলামের বিন্দুবিসর্গ সম্পর্কও নেই।
প্রশ্ন নং ১ এর উত্তর হল, তথাকথিত সেই মুসলেহ মওউদ অন্য আর যেই হবে হোক কিন্তু তিনি যে কোনোভাবেই মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নন, এটি দ্বিপ্রহরের সূর্যের মত পরিষ্কার। হ্যাঁ, মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের ১৮৯৬ সালে রচিত ‘দ্বমীমায়ে রেসালায়ে আঞ্জামে আথহাম’ (উর্দু) এর ৫৩ নং পৃষ্ঠার উক্তি অনুসারে দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কথিত মুসলেহ মওউদ স্বীয় আসমানী বিবি মরহুমা মুহাম্মদী বেগমের গর্ভ হতেই জন্ম হওয়ার ছিল। এ সম্পর্কে মির্যা সাহেবের ভাষ্যটি নিম্নরূপ : اس پیشگوئی کی تصدیق کے لئے جناب رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے بھی پہلے سے ایک پیشگوئی فرمائی ہے کہ یتزوج و یولد لہ یعنی وہ مسیح موعود بیوی کرے گا اور نیز وہ صاحب اولاد ہو گا۔ اب ظاہر ہے کہ تز و ج اور اولاد کا ذکر کرنا عام طور پر مقصود نہیں۔کیونکہ عام طور پر ہر یک شادی کرتا ہے اور اولاد بھی ہوتی ہے اس میں کچھ خوبی نہیں بلکہ وہ خاص تزوج ہے جو بطور نشان ہوگا اور اولاد سے مراد وہ خاص اولاد ہیں جس کی نسبت اس عاجز کی پیشگوئی موجود ہے گویا اس جاگہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ السلام ان سیاہ دل منکروں کو ان کے شبہات کا جواب دے رہے ہیں اور فرما رہے ہیں کہ یہ باتیں ضرور پوری ہوگی۔
অর্থাৎ এই ভবিষ্যৎবাণীর সত্যতার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরু থেকেই একটি ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে গেছেন যে, তিনি (আগত মসীহ) বিয়ে করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে অর্থাৎ মসীহ মওউদ বিয়ে করবেন এমনকি তাঁর সন্তানও হবে। এখন প্রকাশ থাকে যে, বিয়ে করা এবং সন্তান হওয়া সংক্রান্ত আলোচনা সাধারণ কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কেননা সাধারণভাবে প্রত্যেকেই বিয়ে করে এবং সন্তানও হয়ে থাকে। এতে স্বতন্ত্র কোনো সৌন্দর্য বা বৈশিষ্ট্য থাকেনা। বরং এই (ভবিষ্যৎবাণী)-তে বিশেষ ধরনের বিয়েই উদ্দেশ্য যা নিদর্শনস্বরূপ এবং বিশেষ ধরনের সন্তান হওয়া উদ্দেশ্য যার ব্যাপারে এই অধমের ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে। এই স্থানে (ঐ ভবিষ্যৎবাণীর মাধ্যমে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম অস্বীকারকারী কৃষ্ণ হৃদয়ের ব্যক্তিদের সংশয়পূর্ণ জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে যেন বলতে চেয়েছেন যে, এই কথাগুলো অবশ্যই পূর্ণ হবে। (দ্বমীমায়ে রেসালায়ে আঞ্জামে আথহাম ৫৩, মির্যার ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত ‘রূহানী খাযায়েন’ ১১/৩৩৭)।
মির্যা সাহেবের উল্লিখিত বক্তব্যের সারমর্ম এই যে,
১- হাদীসে মসীহ মওউদ এসে বিয়ে করা এবং তাঁর সন্তান হওয়ার কথা এসেছে। আর এটি রাসূল (সা:) কর্তৃক সত্যায়িত একটি ভবিষ্যৎবাণী।
২- প্রকাশ থাকে যে, বিয়ে করা এবং সন্তান হওয়া সংক্রান্ত আলোচনা সাধারণ কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কেননা সাধারণভাবে প্রত্যেকেই বিয়ে করে এবং সন্তানও হয়ে থাকে। এতে স্বতন্ত্র কোনো সৌন্দর্য বা বৈশিষ্ট্য থাকেনা।
৩- এই (ভবিষ্যৎবাণী)-তে বিশেষ ধরনের বিয়েই উদ্দেশ্য যা নিদর্শনস্বরূপ এবং বিশেষ ধরনের সন্তান হওয়া উদ্দেশ্য যার ব্যাপারে এই অধমের ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে।
এবার মির্যা সাহেব যে হাদীসটির খন্ডিত অংশ দুটো উদ্ধৃত করে তথাকথিত “মুসলেহ মওউদ” নামের বিশেষ ধরনের সন্তানের ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে গেছেন সে হাদীসের সম্পূর্ণ পাঠটি অনুবাদসহ দেখুন! হাদীসে এসেছে : ينزل عيسى ابن مريم إلى الأرض، فيتزوج ويولد له، ويمكث خمسا وأربعين سنة، ثم يموت، فيدفن معي في قبري، فأقوم أنا وعيسى ابن مريم في قبر واحد بين أبي بكر وعمر অর্থাৎ (সঠিক অনুবাদ) ঈসা ইবনে মরিয়ম পৃথিবীতে নাযিল হবেন। অতপর তিনি বিয়ে করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে। তিনি পয়তাল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অতপর মৃত্যুবরণ করবেন। তারপর তিনি আমার সাথে আমার কবরে দাফন হবেন। অতপর আমি এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম আবুবকর এবং উমরের মাঝে একই কবরে অবস্থান করবো। (সূত্র মেশকাত শরীফ, হাদীসের মান : দুর্বল)।
- প্রাসঙ্গিক একটি কথা বলে রাখতে চাই যে, হাদীসটি সূত্রের বিচারে এতটা শক্তিশালী যে, এটি ভিন্ন ভিন্ন ৩টি সনদে বর্ণিত হয়েছে। ‘আল-মু’জামুল কাবীর‘ কিতাবের খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ১৫৯ এর মধ্যে একই অর্থবোধক আরেকটি হাদীস ভিন্ন আরেক সনদে পাওয়া যায়।
হাদীসটির “ঈসা ইবনে মরিয়ম আমার কবরের মধ্যে” দাফন হবে, এ কথার সঠিক তাৎপর্য নিয়ে কাদিয়ানীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধূম্রজাল সৃষ্টি করলেও বিশিষ্ট যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) সেটির প্রকৃত অর্থ فى مقبرتى অর্থাৎ “আমার গোরস্থানে” এটাই বুঝিয়ে গেছেন। দেখুন, মেরকাত শরহে মেশকাত, কিতাবুল ফিতান ১০/১৬৬। ফলে এই সংক্রান্ত তাবৎ তাবীল আর রূপকের কাসুন্দি বরাবরের মতই প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যাজ্য!
একই ধরনের অপরাপর হাদীসগুলো দ্বারাও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তেমনি একটি হাদীস সনদসহ এইরকম : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﺍﻟﺘَّﺮْﻣِﺬِﻱُّ ﺛَﻨَﺎ ﺑَﻜْﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏِ ﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦُ ﻧَﺎﻓِﻊٍ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻎُ ﻋَﻦْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦ ﺍﻟﻀَّﺤَّﺎﻙِ ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﻳُﻮﺳُﻒَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺳَﻼﻡٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ : ﻳُﺪْﻓَﻦُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒَﻴْﻪِ ، ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ﻗَﺒْﺮُﻩُ ﺭَﺍﺑِﻌَﺎً
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) বলেছেন, ঈসা (আ:)-কে রাসূল এবং তাঁর দুই সাহাবী (আবুবকর, উমর)’র সাথে (একই কবরস্থানে) দাফন করা হবে। ফলে (সেখানে) তাঁর কবরটি চতুর্থতম কবর হবে।’ এই হাদীস উপরে উল্লিখিত হাদীসটির বিশ্লেষণকারী এবং ‘রাওজা শরীফ খুঁড়ে তার অভ্যন্তরে দাফন করার কথা বুঝাল কিনা’ সেই সংশয়টুকুরও তিরোহিতকারী। কেননা এই হাদীসে সুস্পষ্টই ‘ক্বাবরুহু রাবি’আন’ (ঈসার কবরটি সেখানে চতুর্থতম কবর) বলেই উল্লেখ রয়েছে।
ইমাম তিরমিযী (রহ:) এটি স্বীয় “আল-জামে” গ্রন্থে আগের ২টি সনদের বাহিরে ভিন্ন আরেক সনদেও উল্লেখ করে বলেছেন, এর সনদ হাসান এবং গরীব তথা সনদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্ণনাকারী অনূর্ধ্ব একজন।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন Click
অবশেষে প্রমাণিত হল, উপরের দীর্ঘ বক্তব্যের আলোকে প্রমাণ করতে পারলাম যে, মির্যার কথিত মুসলেহ মওউদ এর জন্ম তারই প্রতিশ্রুত ও আসমানী বিবি মুহাম্মদী বেগমের গর্ভ থেকেই হওয়ার ছিল। তিনি বিষয়টিকে হাদীস দ্বারা উদ্ধৃত করে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, اس پیشگوئی کی تصدیق کے لئے جناب رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے بھی پہلے سے ایک پیشگوئی فرمائی ہے کہ یتزوج و یولد لہ یعنی وہ مسیح موعود بیوی کرے گا اور نیز وہ صاحب اولاد ہو گا۔ অর্থাৎ এই ভবিষ্যৎবাণীর সত্যতার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরু থেকেই একটি ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে গেছেন যে, তিনি (আগত মসীহ) বিয়ে করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে অর্থাৎ মসীহ মওউদ বিয়ে করবেন এমনকি তাঁর সন্তানও হবে।
- এবার হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব থেকে এধরণের আর কোনো ইংগিত তার অন্য আর কোনো রচনা হতেও বুঝা যায় কিনা?
উত্তরে বলা হবে যে, হ্যাঁ অবশ্যই। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ১০ই জুলাই ১৮৮৮ সালে আপনা একখানা ইশতিহার এর পরিশিষ্ট তুলে ধরে মুহাম্মদী বেগমের পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে খোদ লিখেছেন : ایک عرصہ سے یہ لوگ جو میرے کنبے سے اور میرے اقارب ہیں کیا مرد اور کیا عورت مجہے میرے الہامی دعاوی میں مکار اور دکاندار خیال کرتے ہیں ۔۔۔۔۔۔اگر ان میں کچھ نور ایمان اور کانقشنس ہوتا اس رشتہ کی درخواست کی کچھ ضرورت نہیں تہی۔ سب ضرورتوں کو خدا تعالی نے پورا کردیا تہا۔ اولاد بہی عطا کئی اور ان میں سے وہ لڑکا بہی جو دین کا چراغ ہوگا۔ بلکہ ایک اور لڑکا ہونے کا قرب مدت تک وعدہ دیا جسکا نام محمود احمد ہوگا۔ اور اپنے کاموں میں اولوا کالعزم نکلے گا۔ پس یہ رشتہ جسکی درخواست کی گئی ہے محض بطور نشان کے ہے تا خدا تعالی اس کنبہ کے منکرین کو اعجوبہ قدرت دکہلا دے۔ ۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔خاکسار غلام احمد از قادیان ضلع گورداسپور ۔ پانزدہم جولائی 1888 عیسائی۔
অর্থাৎ (আলোচনাটি মুহাম্মদী বেগমের পিতা আহমদ বেগ এর পরিবার সংক্রান্ত—অনুবাদক) দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমার গোষ্ঠী এবং নিকটাত্মীয়গণের যারাই পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে আমার ইলহাম আর দাবিসমূহকে প্রতারণা এবং কারসাজি মনে করত……..। যদি তাদের মধ্যে সামান্যতম ঈমানের জ্যোতি এবং কানেকশন থাকত তাহলে(ও) তাদের সাথে আত্মীয়তার প্রস্তাব করার কোনোই প্রয়োজন ছিল না। সকল প্রয়োজনীয়তা খোদাতায়ালা পূরণ করে দিয়েছেন। তিনি সন্তানও দান করেছেন এবং তাদের মধ্য থেকে এমন সন্তানও দান করেছেন যে দ্বীনের বাতি হবে। (তবে) নিকটতম সময়ে আরেকটি সন্তানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যার নাম মাহমুদ আহমদ হবে। যে আপনা মিশনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চরিত্রের স্বাক্ষর রাখবে। সুতরাং এই (গোষ্ঠীর সাথে অর্থাৎ মুহাম্মদী বেগমের পরিবারের সাথে—অনুবাদক) আত্মীয়তার প্রস্তাব করা হয়েছে শুধুমাত্র (সেই) নিদর্শনটির জন্য। যাতে খোদাতালা এই গোষ্ঠীটির (আত্মীয়তার সম্পর্ক) অস্বীকারকারীদের স্বর্গীয় শক্তির বিরল এক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করতে পারেন। নিবেদক, অধম গোলাম আহমদ গুরুদাসপুর উপজেলার কাদিয়ান থেকে। ১৫-জুলাই-১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে। (সূত্র: মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/১৬০-৬২; নতুন ও অনলাইন এডিশন)।
মির্যা সাহেবের উল্লিখিত বক্তব্যের সারমর্ম এই যে,
১- যদি তাদের মধ্যে (অর্থাৎ মুহাম্মদী বেগমের পরিবারের মধ্যে) সামান্যতম ঈমানের জ্যোতি এবং কানেকশন থাকত তাহলে(ও) তাদের সাথে আত্মীয়তার প্রস্তাব করার কোনোই প্রয়োজন ছিল না। ১০ ই জুলাই ১৮৮৮ সালে মির্যা সাহেব তৃতীয় বিয়ের প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তা যখন তুলে ধরছেন তখন নুসরাত জাহানের সাথে তার সংঘটিত বিয়ের বয়স ৪ বছর গত হতে চলল!
২- মির্যা সাহেব নুসরাত জাহান এর গর্ভ থেকে কতেক সন্তানপ্রাপ্তির কথাও জানান দেন। ততদিনে তার দুই সন্তানই জন্মেছিল, বশিরে আউয়াল এবং আছমত বিবি (সীরাতে মাহদী রেওয়ায়েত নং ৪৭০ দ্রষ্টব্য)। তিনি এখানে বশিরে আউয়াল সম্পর্কেই ‘দ্বীনের বাতি’ বলে আখ্যা দেন। যদিও তিনি সেই বছরেই মারা যান।
৩- মির্যা সাহেব এখানে দ্বিতীয় আরেকটি সন্তানের আগমনী সংবাদও উল্লেখ করেন। যার নাম রাখেন মাহমুদ আহমদ। তিনি তাকেই “মুসলেহ মওউদ” হিসেবে সম্বোধন করেন। কিন্তু এই মাহমুদ আহমদ এর সংবাদ দেয়ার পরপরই মির্যা মুহাম্মদী বেগমের পরিবারের সাথে আত্মীয়তার প্রসঙ্গটিও টেনে আনেন। যার ফলে নুসরাত জাহানের গর্ভে জন্ম নেয়া বশির উদ্দিন মাহমুদকে কথিত “মুসলেহ মওউদ” মনে করার আর কোনো সুযোগই থাকেনা। এই যে দেখুন মির্যা সাহেব কীভাবে কথাটি শেষ করে মুহাম্মদী বেগমের পরিবারের সাথে তার আত্মীয়তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য টেনে আনলেন! তিনি বলেন پس یہ رشتہ جسکی درخواست کی گئی ہے محض بطور نشان کے ہے تا خدا تعالی اس کنبہ کے منکرین کو اعجوبہ قدرت دکہلا دے۔ অর্থাৎ সুতরাং এই (গোষ্ঠীর সাথে অর্থাৎ মুহাম্মদী বেগমের পরিবারের সাথে—অনুবাদক) আত্মীয়তার প্রস্তাব করা হয়েছে শুধুমাত্র (সেই) নিদর্শনটির জন্য। যাতে খোদাতালা এই গোষ্ঠীটির (আত্মীয়তার সম্পর্ক) অস্বীকারকারীদের স্বর্গীয় শক্তির বিরল এক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করতে পারেন।
জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই এবার ভাবিয়ে তুলবে।
- হয়ত আরও জানতে চাইবেন যে, আর কোথাও মুহাম্মদী বেগম সম্পর্কিত এ ধরনের কোনো কথার প্রমাণ আরও আছে কিনা?
উত্তরে বলব, জ্বী হ্যাঁ আছে। এই যে দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার তথাকথিত একটি ইলহাম يا آدم اسكن انت و زوجك الجنة . يا مريم اسكن انت و زوجك الجنة . يا احمد اسكن انت و زوجك الجنة এর তাৎপর্য উল্লেখ করে লিখেছেন, “বারাহীনে আহমদিয়া পুস্তকেও আজ থেকে (অর্থাৎ ১৯০০ সাল থেকে) ১৭ বছর পূর্বে ঐ ভবিষ্যৎবাণীর দিকেই ইংগিত রয়েছে যার রহস্য বর্তমানে আমার নিকট পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেটি হল এই ইলহাম যা বারাহীনে আহমদিয়ার ৪৯৬ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। এই ইলহামের মধ্যে ৩টি স্থানে زوج (সহধর্মিণী) শব্দ উল্লেখ আছে। আর ৩টি নাম (অর্থাৎ আদম, মরিয়ম এবং আহমদ) এই অধমেরই রাখা হয়েছে।………… এবং (বর্তমানে) তৃতীয় زوجہ (সহধর্মিণী) এর অপেক্ষায়। তার সাথে আহমদ নামকে শামিল করা হয়েছে। আর এই “আহমদ” শব্দটি ঐ কথার প্রতিই ইংগিত যে, ঐ সময় হামদ এবং প্রশংসা হবে। এটি একটি গুপ্ত ভবিষ্যৎবাণী।” (দ্বমীমায়ে রেসালায়ে আঞ্জামে আথহাম ৫৪, রূহানী খাযায়েন ১১/৩৩৮)।
উপরের বক্তব্যটিতে মির্যা সাহেব দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, এই ইলহাম যা বারাহীনে আহমদিয়ার ৪৯৬ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। এই ইলহামের মধ্যে ৩টি স্থানে زوج (সহধর্মিণী) শব্দ উল্লেখ আছে। আর ৩টি নাম (অর্থাৎ আদম, মরিয়ম এবং আহমদ) এই অধমেরই রাখা হয়েছে।………… এবং (বর্তমানে) তৃতীয় زوجہ (সহধর্মিণী) এর অপেক্ষায়। মির্যা সাহেব কিন্তু তৃতীয় সহধর্মিণীর সাথে বিয়ের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তখনও যখন ১৯০০ সাল প্রায় শেষের দিকে গড়িয়ে গেছে। তা এজন্যই যে, মির্যা সাহেবের কথিত মুসলেহ মওউদ তার এই তৃতীয় সহধর্মিণীর গর্ভ থেকেই হবেন বলেই তিনি ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে রেখেছেন। আর তার সেই ভবিষ্যৎবাণীটি ১৮৯৬ সালে রচিত ‘দ্বমীমায়ে রেসালায়ে আঞ্জামে আথহাম’ (উর্দু) এর ৫৩ নং পৃষ্ঠায় কিভাবে বর্ণিত আছে তা উপরে নিশ্চয়ই পড়েছেন। প্রয়োজনে আবার পড়ে দেখুন। আমি আবারও বলছি, মির্যা সাহেব রাসূল (সা:)-এর হাদীসের উদ্ধৃতিতে মুহাম্মদী বেগমের সাথে তার বিয়ের প্রয়োজনীয়তাকে আশ্রয় করে ‘দ্বমীমায়ে রেসালায়ে আঞ্জামে আথহাম’ নামক পুস্তকে “মুসলেহ মওউদ” সংক্রান্ত ভবিষ্যৎবাণীটির পুনরাবৃত্তি যখন করছিলেন তখন মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর বয়স ৮ বছর চলছে । সুতরাং এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদকে কথিত মুসলেহ মওউদ হিসেবে কাদিয়ানী লাহোরি মুভমেন্টও কেন স্বীকার করেননা!
- মুহাম্মদী বেগম কে ছিলেন? তার সাথে মির্যা কাদিয়ানীর কী এমন ঘটেছিল? সম্পূর্ণ ঘটনা মির্যায়ী রচনা হতে তুলে ধরছি :
মুহাম্মদী বেগম :
মুহাম্মদী বেগম ছিলেন মির্যা কাদিয়ানীর এক নিকট আত্মীয়া এবং তার পুত্র ফজলে আহমদ এর চাচাত শালি হিসেবে মির্যার ঝিয়ারিও বলা যায় (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২২১)। পিতা আহমদ বেগ। স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সুলতান মুহাম্মদ। মির্যার দাবী, খোদাতায়ালা নাকি তাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ হবেই হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যদি মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ কোনো কারণে অন্য কারো সাথে হয়েও যায়, খোদাতায়ালা তাঁকে বিধবা করে হলেও মির্যাকে ফিরিয়ে দেবেন। খোদাতায়ালার এই কথায় কোনো পরিবর্তন হবেনা। কিন্তু পরের ইতিহাস সবার জানা। মির্যা সাহেব ২৬-০৫-১৯০৮ ইং কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওদিকে মুহাম্মদী বেগম তখনো স্বামীর সংসারেই ছিলেন, এমনকি মির্যার মৃত্যুর পরেও আরো প্রায় ৪০ বছর স্বামীর সংসার করেন। স্বামী সুলতান মুহাম্মদের মৃত্যু হয় ১৯৪৯ সালে আর মুহাম্মদী বেগম ১৯ শে নভেম্বর ১৯৬৬ সালে লাহোরে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের আমৃত্যু সংসার-জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মির্যা কাদিয়ানীকে মিথ্যাবাদী প্রমাণে যথেষ্ট ছিল।
- মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে না হওয়ায় তাদের পরবর্তী রচনাবলীতে অপব্যাখ্যা আর স্ববিরোধ বক্তব্যের তুফান ঘটানোর দৃষ্টান্ত :
কাদিয়ানীদের উর্দূ ভাষার দৈনিক পত্রিকা ‘আল-ফজল’ ০২-০৮-১৯২৪ ইং এর ২২ নং পাতায় মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের উদ্ধৃতিতে লিখা আছে ‘হযরতের সাথে ওই মেয়েটির বিবাহ হওয়া মর্মে আল্লাহতায়ালার কোনোই ওয়াদা ছিলনা।’
এবার তাদের উর্দূ ভাষার আরেকটি দৈনিক পত্রিকা ‘আল-হিকাম’ ৩০-০৬-১৯০৫ ইং এর মধ্যে কী লিখা আছে দেখুন : “ইলহামে ইলাহীর শব্দটি হল, ছা-ইয়াকফীকা হুমুল্লাহু ওয়া ইউরাদ্দূ-হা ইলাইকা অর্থাৎ খোদা তোমার ঐ সমস্ত বিরুদ্ধবাদীদের মুকাবিলা করবেন এবং দ্বিতীয় কোথাও যার বিয়ে হয়ে গেছে খোদা তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে এনে দেবেন।”
এবার তাদের ‘মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত’ পুস্তকে কী লিখা আছে দেখুন: ‘খোদাতায়ালা বলেছেন আমি এ মহিলাকে তার বিবাহের পর তার (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীর) নিকট ফিরিয়ে আনব।’ সূত্র : মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ২/৪৩ নতুন এডিশন।
এই তো গেল তাদের পিতা-পুত্রের স্ববিরোধ কথাবার্তার একটি প্রমাণ। এবার মির্যাকে বাঁচাতে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কাদিয়ানী নেতারা সেটির কেমন উদ্ভট তাবীল (ব্যাখ্যা) দাঁড় করল নিচে দেখুন!
“ভবিষ্যৎবাণীতে উল্লিখিত কুমারী ও বিধবা উভয় অংশই তাঁর সহধর্মীনি হযরত নুসরত জাহান বেগম এর মধ্যমেই পূর্ণ হবার ছিল এবং সেভাবেই হয়েছে। অর্থাৎ তিনি কুমারী অবস্থায় তাঁর স্ত্রী হয়ে আসবেন এবং স্বামীর মৃত্যুতে বিধবা অবস্থায় রয়ে যাবেন।”
এই তাবীলটি তাদের অন্যতম প্রধান মুরুব্বী জালালুদ্দীন শামস সাহেবেরও। সংক্ষেপে।
পরিশেষে অবশিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর হল, মির্যা সাহেবের সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে না হওয়ায় সেই কথিত মুসলেহ মওউদ এর আদৌ জন্ম হয়নি বলেই মানতে হবে। একই কারণে কেয়ামতের পূর্বে তার কখনো জন্ম হওয়ারও সুযোগ নেই। অতএব, যাদের বিবেক রয়েছে তারা বিবেক দিয়ে চিন্তা করবে, এই প্রত্যাশায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ওয়াস-সালাম।
লিখক ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।
তারিখ ২২.০২.২০২১ইং