Home মসীহ ঈসা যদি মূসা ও ঈসা জীবিত থাকত

যদি মূসা ও ঈসা জীবিত থাকত

0
যদি মূসা ও ঈসা জীবিত থাকত

যদি মূসা এবং ঈসা জীবিত থাকত :

প্রশ্নকর্তা : ‘ইবনে কাসীর’-এর মধ্যে উল্লেখ আছে ‘কোনো কোনো হাদীসে রয়েছে, যদি হযরত মূসা ও হযরত ঈসা (ইহ-জগতে) জীবিত থাকতেন তবে তাঁদেরও আমার আনুগত্য ছাড়া কোনো উপায় থাকত না।’ ফলে কাদিয়ানী সম্প্রদায় এই রেওয়ায়েত দিয়ে হযরত ঈসা (আ:)-কে মৃত বলে আখ্যা দেয়। এখন এর কী উত্তর?

উত্তরদাতা : প্রথমত, উক্ত বর্ণনা সম্পূর্ণ একটি সনদবিহীন। ফলে এটি আকীদাগত তো বটে; কোনো ফাজায়েল বর্ণনাতেও অথেনটিক (প্রমাণযোগ্য) নয়। যেজন্য এ সম্পর্কে কথা বলাও সময় নষ্ট। আর তর্কের খাতিরে এটি অথেনটিক মেনে নিলেও এর দ্বারা ঈসা (আ.) মৃত সাব্যস্ত হবেন না। তার কারণ, এর দ্বারা ‘ইহ-জগতে’ নবীগণের কেউই আর জীবিত নেই, বুঝানো উদ্দেশ্য। কেননা ‘আনুগত্যের’ সম্পর্ক শুধুই ইহজগতের সাথে। অধিকন্তু রাসূল (সা.)-এর অন্য একটি হাদীসে আছে, নবীগণের সবাই যার যার কবরে জীবিত ও সালাত পড়েন। হাদীসটি সহীহ (পড়ুন)। সুতরাং এতেও প্রমাণিত হল যে, ইবনে কাসীরের বর্ণনাটি দ্বারা শুধুই ‘ইহ-জগতে’ জীবিত নেই, বলে বুঝানো উদ্দেশ্য। অন্যথা সমস্ত নবী ইহজাগতিক জীবনের বাহিরে যার যার অবস্থানে প্রত্যেকে জীবিত। এ ক্ষেত্রে শুধু ঈসা (আ.) একটুখানি ব্যতিক্রম, তিনিও জীবিত, কবরে নয়, বরং আকাশে। অন্যান্য হাদীসে এর প্রমাণ বিদ্যমান।

  • উল্লেখ্য, ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বর্ণনাটি সূরা আম্বিয়া আয়াত নং ৩৪ এর তাফসীর অংশে এনেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর এর মূল কিতাব অনলাইন থেকে)।

দ্বিতীয়ত, ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) একই পৃষ্ঠায় আরো তিনখানা হাদীস উল্লেখ করেছেন কিন্তু সেগুলোর একটিতেও ‘ঈসা’ (আ:)-এর নামের উল্লেখ নেই। কাদিয়ানীরা এই হাদীসগুলোর প্রেক্ষাপট সুকৌশলে এড়িয়ে যান। পক্ষান্তরে ইবনে কাসীর (রহ:)-এর ব্যক্তিগত অভিমতও কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা উদ্ধৃত করেন না। অথচ ইবনে কাসীর কর্তৃক সনদ (সূত্র) বিহীন রেওয়ায়েতটির সংগ্রহ অথেনটিক মনে করে নয়, বরং লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে মর্মে-ই ছিল। আফসোস! নির্বোধ কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা ব্যাপারটি জেনে-বুঝেই নিজ অনুসারীদের প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করে চলছে। পবিত্র কুরআনেও অন্যদের কথাকে সংগ্রহ রূপে তুলে ধরার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন আল্লাহতালা মুশরিকদের একটি বক্তব্য তুলে ধরেছেন এইভাবে : ‘যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য করো, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ (মুমিনূন/২৩:৩৪)। এখন আপনি কি এটিকে অথেনটিক (প্রমাণ) ধরে বলতে চাইবেন যে, যেহেতু নবীগণও মানুষ ছিলেন সেহেতু আমরা তাদের আনুগত্য করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না? অবশ্যই চাইবেন না। শায়খ আ’লাভী (রহ:) তাফসীরে ইবনে কাসীরের বর্ণনাটির ‘ঈসা’ শব্দের বৃদ্ধি সম্পর্কে লিখেছেন, ولم يعزه لأحد، ولم أجده في أيٍّ من كتب الحديث التي بين يدي، وسألت عنه الألباني يرحمه الله هاتفيَّاً، فقال: إن زيادة ((عيسى)) منكرة لا أصل لها. অর্থাৎ তিনি (ইবনে কাসীর) একে কারো দিকে নেসবত করেননি। আর আমি ‘ঈসা’ সম্বলিত এমন কোনো রেওয়ায়েত আমার সামনে থাকা হাদীসের কোনো কিতাবেই (খুঁজে) পাইনি। (তাই) আমি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করেছিলাম। তিনি প্রতিউত্তরে বলেছেন, ان زيادة عيسى منكرة لا اصل لها অর্থ উক্ত বর্ণনায় ‘ঈসা’ শব্দের বৃদ্ধিকরণ মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য, আর এর কোনো ভিত্তিও নেই।

  • রেফারেন্স, তাখরীজু আহাদীস ওয়া আছার কিতাব ফী যিলালিল কুরআন (تخريج احاديث و آثار كتاب فى ظلال القرآن), শায়খ আ’লাভী বিন আব্দিল কাদের আস-সাক্বাফ (علوي بن عبد القادر السَّقَّاف)। ‘তাখরীজু আহাদীস‘ কিতাবটি দেখা যেতে পারে।

আর এতে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য তিনি (ইবনে কাসীর) ঈসা (আ:) সম্পর্কে নিজেস্ব অভিমতও লিখে দিয়েছেন। হযরত ইবনে কাসীর (রহ:)-এর নিজেস্ব অভিমত বাদ দিয়ে ‘ঈসা’ সম্বলিত ঐ রেওয়ায়েতের সংগ্রহকে তাঁর নিজের অভিমতরূপে উপস্থিত করা নিতান্তই হীনরুচির পরিচায়ক ও তাকওয়ার খেলাফ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ইবনে কাসীরের নিজেস্ব অভিমত এই যে, তিনি তাঁর উক্ত গ্রন্থে সূরা নিসার ১৫৮-৫৯ নং আয়াতের তাফসীরে আরো বেশকিছু হাদীস উল্লেখপূর্বক শিরোনাম উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ذكر الأحاديث الواردة في نزول عيسى بن مريم إلي الأرض من السماء في آخر الزمان قبل يوم القيامة অর্থাৎ ‘কেয়ামতের পূর্বে শেষ যুগে আকাশ থেকে পৃথিবীতে ঈসা ইবনে মরিয়ম এর অবতরণ করা বিষয়ক হাদীসগুলোর আলোচনা।’ সুতরাং কাদিয়ানীরা ইবনে কাসীরের নামে ‘ঈসা’ সম্বলিত যে অংশ উদ্ধৃত করে থাকে তা যে ইবনে কাসীরেরও কোনো অভিমত নয় তা প্রমাণ করার জন্য তাঁর এই উদ্ধৃত অংশই যথেষ্ট। স্ক্রিনশট :-

তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নিসা, আয়াত ১৫৫-১৫৯

হাদীসের ঐ কথার প্রেক্ষাপট :

রাসূল (সা:)-এর ঐ কথার প্রেক্ষাপট এই যে, রাসূল (সা:) একদা হযরত উমর (রা:)-এর হাতে তাওরাতের একটি পৃষ্ঠা দেখতে পান। তখন তিনি (সা:) তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন : وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تُعْجِبُنَا أَفْتَرَى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ فَقَالَ: «أَمُتَهَوِّكُونَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى؟ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا اتِّبَاعِي» . رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَيْهَقِيّ فِي كتاب شعب الايمان

অর্থাৎ হযরত জাবের (রা:)-এর সূত্রে নবী করীম (সা:) থেকে বর্ণিত আছে , একদা যখন উমর (রা:) তাঁর (রাসূল) নিকট এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের কাছ থেকে এমন বহু কথা শুনি যা আমাদের অবাক করে দেয়। এখন আমরা তার কোনো কোনোটি লিপিবদ্ধ করাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? তিনি বললেন, তোমরা কি ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মতই দিশেহারা? আমি তোমাদের নিকট খাঁটি ও স্বচ্ছ জিনিস (দ্বীন) নিয়ে এসেছি। (আজকে) যদি মূসাও বেঁচে থাকতেন, তবে আমার অনুসরণ করা ব্যতীত তাঁর কোনো উপায় ছিল না।

  • সূত্র, ইমাম আহমদ এটি মসনাদে আহমদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, ইমাম আল-বায়হাকী স্বীয় গ্রন্থের শু’আবুল ঈমান পর্বে এটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের মান : শায়খ আলবানী (রহ:) হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন।

এখানে গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, রাসূলের (সা:) ঐ কথায় ঈসা (আ:) এর নাম উল্লেখ থাকার কোনো কারণ নেই। যেহেতু তাওরাত কিতাব ঈসা (আ:)-এর উপর নাযিল হয়নি। অতএব, ঐ সূত্রহীন মুনকার রেওয়ায়েতটি দ্বারা ঈসা (আঃ)-কে মৃত দাবী করা সম্পূর্ণ বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here