Home ইমাম মাহদী সূরা আত তাকভীরের মধ্যে কি ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্ব লক্ষণ রয়েছে?

সূরা আত তাকভীরের মধ্যে কি ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্ব লক্ষণ রয়েছে?

0
সূরা আত তাকভীরের মধ্যে কি ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্ব লক্ষণ রয়েছে?

প্রশ্নকর্তা : সূরা আত তাকভীর এর আয়াত নং ১ হতে ১১ -তে কী আছে? কাদিয়ানীদের দাবী, আয়াতগুলো নাকি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের যুগ লক্ষণ ও আলামত সম্পর্কিত? জানতে চাই!

উত্তরদাতা : আমরা মুসলমানগণ বিশ্বাস করি যে, কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে ইমাম মাহদী জন্ম নেবেন। তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে পবিত্র মক্কায় হজ্জের সময়। তিনি প্রথম বয়াত নেবেন মক্কায় রুকন ও মাক্বামে ইবরাহিমের মধ্যবর্তী জায়গায়। এভাবে আরো বেশকিছু পরিচিতি পাওয়া যায়। আর এগুলো শুধুমাত্র পবিত্র হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত।

কিন্তু অনলাইনে জনৈক কাদিয়ানী মুরিদ (আব্দুল মাবুদ, চট্টগ্রাম) দাবী করে বললেন যে, সূরা আত তাকভীরের মধ্যে নাকি হযরত ইমাম মাহদীর আগমনী লক্ষণ ও ভবিষৎবাণী এসেছে! যেগুলোর প্রতিটি লক্ষণই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদ (মৃত : ১৯০৮ইং)’র মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে গেছে। নিচে তার অভিব্যক্তিগুলো পড়ে দেখুন –

  • “নূরুন্নবী ভাই (আমাকে লক্ষ্য করে) আপনাকে আগেও বলেছি, যুগের মাহদী (তথা মির্যা কাদিয়ানী)কে না মানার কারণে আপনি ঈমানহারা, আপনার অন্তরচক্ষু অন্ধ। আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চান। আল্লাহ আপনার অন্তরচক্ষু খুলে দেবেন। আপনাকে একটি প্রশ্ন করি, সূরা আত তাকভীর এর আলোকে মাহদীর আসার আলামতকাল গত হয়ে গেছে (আরো) ১৩০ বৎসর আগে। (তাই) আপনি যদি বলেন মাহদী আসে নাই, তাহলে তো আপনি কুরআনকেই মিথ্যাবাদী বানালেন। আপনি অমুকে কী তাফসীর করছে, তমুকে কী তাফসীর করছে; ইহা না দেইখা নিজে কুরআনকে গবেষণামূলক পড়েন । কুরআন নিজেই আপনাকে পথ দেখাবে….।”

এবার সূরা আত তাকভীরে এমন কী আছে তা দেখা যাক,

প্রিয় পাঠক! আমি এখানে সূরাটির ১ থেকে ১১ নং আয়াতগুলো অনুবাদসহ তুলে ধরছি। আমার নিকট দীর্ঘ পড়াশোনা দ্বারা মনে হয়েছে যে, পুরো সূরাটির বিষয়বস্তু কেয়ামত সংঘটিত হওয়া মুহূর্তের ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কিত। সংক্ষেপে দুচারটে বলছি। আয়াতের প্রথমেই এসেছে, ইযাশ শামছু কু’ভিরাত (আরবী : إذا الشمس كورت)….এখানে “তাকভীর” (تكوير) এর এক অর্থ – জ্যোতিহীন হওয়া। হযরত হাসান বছরী (রহ.) এই তাফসীর করেছেন। এর অপর অর্থ নিক্ষেপ করাও হয়ে থাকে। হযরত রবী ইবনে খায়সাম (রহ.) এই তাফসীর করেছেন। আয়াতের তাৎপর্য এই যে, সূর্যকে সমুদ্রে দুমড়ে মুষড়ে নিক্ষেপ করা হবে এবং সূর্যের উত্তাপে সারা সমুদ্র অগ্নিতে পরিণত হবে। দুই তাফসীরই সঠিক। কেননা, এটা সম্ভবপর যে, প্রথমে সূর্যকে জ্যোতিহীন করে দেয়া হবে, অত:পর সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে (তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন দ্রষ্টব্য)। এখন আমার প্রশ্ন হল, সূর্য জ্যোতিহীন হওয়া এবং সমুদ্রে দুমড়ে মুষড়ে নিক্ষেপ করা এসব কিভাবে ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্বলক্ষণ হতে পারে? তখন তো পুরোদস্তুর কেয়ামতের মহাপ্রলয় ঘটতে থাকবে। প্রাণীকুল নাস্তনাবুদ হতে থাকবে। তো এগুলো ইমাম মাহদীর লক্ষণ হলে ইমাম মাহদী ওই সময় এসে কী করবেন? জনমানবশূন্য আর ধ্বংসাবশেষ দুনিয়াতে ইমাম মাহদীর কাজ কী? জ্ঞানীদের একথা গুলো ভাবিয়ে তুলবে কিনা? সহীহ বুখারীতেও আবু হোরায়রা (রা.) এর রেওয়ায়েতক্রমে রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন চন্দ্র সূর্য সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হবে। যাইহোক, হাদীস শরীফের আলোকে এভাবে যতই ঘেঁটে দেখতে চাইবেন ততই সূরা আত তাকভীরের প্রকৃত বিষয় আপনার সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তাই একেবারে নিশ্চিত হয়েই বলতে পারি, সূরাটির আলোচ্য বিষয়ের সাথে ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্বলক্ষণ কিংবা মির্যা কাদিয়ানীর অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়ার সাথে বিন্দুবিসর্গ সম্পর্কও নেই। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি রূপকের কাসুন্দি করে কিবা গাঁজাখুরি ব্যাখ্যা দিয়ে মির্যা কাদিয়ানীকে সূরা আত তাকভীরের আয়াতগুলোতে খোঁজে পাওয়ার দাবী করে সেটি ভিন্নকথা।

  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়ত ও রেসালতের দাবী করার ডকুমেন্ট তারই লেখিত পুস্তক হতে Click in here

প্রিয় পাঠক! লেখার কলেবর সংক্ষেপ রাখতে এতটুকুতেই চলমান আলোচনার ইতি টানছি। আলোচ্য আয়াতগুলো অনুবাদসহ তুলে দিলাম।

إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
01

যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে,

وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
02

যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,

وَإِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ
03

যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে,

وَإِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ
04

যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে;

وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
05

যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে,

وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ
06

যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,

وَإِذَا النُّفُوسُ زُوِّجَتْ
07

যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে,

وَإِذَا الْمَوْؤُودَةُ سُئِلَتْ
08

যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,

بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ
09

কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?

وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
10

যখন আমলনামা খোলা হবে,

وَإِذَا السَّمَاء كُشِطَتْ
11

যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে। (আয়াতগুলোর বিশ্লেষণ পড়ুন)।

শেষকথা, তারা কিভাবে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানায় তা এবার ভালোভাবেই বুঝে নিন! বিচারের ভার আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।

লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here