ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.)-এর উস্তাদ ও শ্বশুর বিখ্যাত রিজাল শাস্ত্রবিদ ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থকার হাফেয জামালুদ্দীন আবুল হাজ্জাজ মিযযী রহ.-এর রচনা থেকে , قال الإمام الشافعي رحمه الله : (الناس عيال على أبي حنيفة في الفقه) (1) অর্থাৎ ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, ফিকহের ক্ষেত্রে সমগ্র মানুষ আবু হানীফা-এর পরিবারভুক্ত {সনদের তাহকীক নিম্নরূপ}। (১) প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য :
উল্লিখিত সনদের তাহকীক : (১) আবু নাঈম-ছিকাহ, (২) মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আলী ইবনে আছেম ইবনে যাদান (জন্ম-মৃত্যু ২৮৫-৩৮১)-সত্যবাদী ও ছিকাহ,(৩) হামজাহ ইবনে আলী ইবনে আব্বাস ইবনে রবী ইবনে আব্দ রব আল মিছরী (মৃত্যু ৩০৭ হিজরী)–মাজহূলুল হাল, (৪) রবী ইবনু সোলায়মান আল মুরাদী-ছিকাহ। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, যথাক্রমে ১৭/৪৫৪, ১৬/৪০১,……….১২/৫৮৯)। বলে রাখা জরুরি, হামজা ইবনে আলী‘র ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি করার সুযোগ থাকে। কেননা তার সম্পর্কে কেউ কেউ مجهول الحال [অবস্থা জানা যায় না] বলেছেন বলেও উল্লেখ আছে।
তবে তার বর্ণিত রেওয়ায়েতটির উপর বেশ কিছু কারণে বিশুদ্ধতার হুকুম লাগানোরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তার কারণ ‘ঐ রাবীর অবস্থা একেবারেই যে জানা যায় না, ব্যাপারটা মোটেও এমন না’। যেহেতু তার মৃত্যু-সন ৩০৭ হিজরী বলে জানা যায় এমনকি তার কাছ থেকে চার-চার জন ছিকাহ রাবী হাদীস বর্ণনা করার তথ্যও বিদ্যমান। আর এমন একজন ইমামও পাওয়া যায়না যিনি তার ব্যাপারে ‘জরাহ’ বা আপত্তি তুলেছেন। বড়জোর এটুকুই বলেছেন ‘তার অবস্থা জানা যায় না’। আমরা এ কথাগুলোর প্রমাণ পাই বিখ্যাত ইমাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনু ইবরাহীম আল-মুক্বরী (২৮৫-৩৮১ হিজরী) রচিত ‘মু’জামু লি-ইবনিল মুক্বরী’ (معجم ابن المقرئ) কিতাব থেকে। এ সম্পর্কে লিখা আছে, وروى عنه أربعة من الثقات وقد أسند حديثاً إلى الرسول وهو حديث صحيح كما في معجم ابن المقرئ لكن لم يوثقه أحد بتوثيق صريح سوى أن ابن يونس المقرئ قال كتبت عنه অর্থাৎ “তার কাছ থেকে চার চার জন ছিকাহ রাবী বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.)-এর প্রতি হাদীসের সনদ সহকারে। আর হাদীসগুলোও সহীহ হাদীস। এরূপই معجم ابن المقرئ কিতাবে উল্লেখ আছে। তবে কেউ তাকে (حمزة بن على بن العباس بن الربيع بن عبد رب المصرى) তাওছীক্ব (ছিকাহ)’র বিষয়টা ক্লিয়ার করেননি। যদিও বা মুহাম্মদ ইবনে ইউনুস ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মুক্বরী আল বাগদাদী (মৃত. ৩২৯) তাকে ছিকাহ আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন, كتبت عنه তথা আমি তার কাছ থেকে [হাদীস] লিখেছি।” উল্লেখ্য, এই সনদে উক্ত রাবীর নামের শেষে بصرى থাকলেও এর সঠিক হবে مصرى, এটির প্রমাণ হচ্ছে ঐ একই সনদে রেওয়ায়েতটি “মু’জামু লি-ইবনিল মুক্বরী” গ্রন্থেও এসেছে এবং সেখানে مصرى শব্দেই এসেছে, আর এটাই সঠিক। তাছাড়া রিজালশাস্ত্রের কিতাবে উক্ত রাবী ‘মিশরী’ (مصرى) শব্দেই পরিচিত, ‘বসরী’ (بصرى) শব্দে নয়। বিস্তারিত জানতে (তথ্যসূত্র)(দেখুন, রাবী নং ৩৫৩)। সুতরাং অন্তত এটুকু ভরসা-ও যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে উক্ত রাবী সম্পর্কে যাদের কিছুটা আপত্তির সুযোগ ছিল সেটাও এখন পুরোপুরি তিরোহিত হয়ে গেল। আল্লাহু আ’লাম। তাছাড়া ‘তারীখে বাগদাদ’ (১৫/৪৭৪) গ্রন্থে একই বর্ণনার সনদটিকে ‘মুহাক্কিক শায়খ বিশার আ’উদ মা’রূফ’ اسناده صحيح (অর্থাৎ এর সূত্র সহীহ) বলেছেন। [প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেয়া হল]। উল্লেখ্য, মু’আম্মাল বিন ইসমাইল নামীয় রাবী সম্পর্কে স্বয়ং ইমাম বুখারী এবং শায়খ আলবানীর কাছ থেকে জরাহ থাকার পরেও তার বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বারা গয়ের মুকাল্লিদবন্ধুরা বুকে হাত বাঁধার দলিল দিয়ে থাকেন! (মু’আম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কে এখান থেকে জানুন)।
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ