দেওবন্দী বেরলবি আহলে হাদীস কিবা সালাফি যেই মাসলাকের কথাই উল্লেখ করেন না কেন, কেউই এখন আর ধোয়া তুলসীপাতা থাকেনি। হিংসা বিদ্বেষ কিবা নির্বুদ্ধিতার কারণেই হোক, একে অন্যের পায়জামা খুলে গলায় পরানোর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। আপনি স্যোসাল মিডিয়ার দিকে একটু দৃষ্টি বুলালেই আমার কথাগুলোর প্রমাণ পেয়ে যাবেন। এদের সব ঘরানাই নিজেদের পূর্ববর্তী মুরুব্বীদের নাম ভেঙ্গে চলার চেষ্টা করে ঠিক কিন্তু বর্তমানের কোনো পক্ষই এখন আর নিজেদের পূর্ববর্তী মুরুব্বীদের নকশ ও নমুনার উপর পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত নেই।
পূর্ববর্তী সালাফদের কিতাব পত্র মুতালা’আ করার প্রচলনও এদের প্রায় সবার কাছ থেকে আস্তে আস্তে বিদায় নিতে শুরু করেছে। আমাকেও অনেকে দেওবন্দী ঘরানার ভাবেন। অনেকে আহলে হাদীসও মনে করেন। আসলে আমি সার্বিকভাবে চিন্তা করে দেখেছি, ইসলামের নামে এই সমস্ত দলাদলি প্রান্তিকতা ছাড়া আর কিছুই না।
আমরা দ্বীনের অসংখ্য শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই চিন্তা করে রাখি যে, ব্যক্তি যদি নিজ ঘরানার বাহিরে হয় তাহলে হবেনা। আর যদি পছন্দের কেউ হন তাহলে চোখবন্ধ করেই সব মেনে নেব। এগুলো শুধুমাত্র নানা দলাদলির কারণেই। এই দলাদলিটা এত জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, কুরআন হাদীসের পরোয়া পর্যন্ত করা হচ্ছেনা। যে যেই ঘরানার সে সেই ঘরানার বুজুর্গ ব্যক্তিকে বিনা বিচারে রাহবার মেনে নিয়ে থাকে। পছন্দের মানুষের কথাকে ওহীর সমপর্যায় ধরে নিয়ে থাকি। এগুলোকে ধর্মীয় পরিভাষায় ‘তায়াচ্ছুফ’ (পক্ষপাতদুষ্ট) বলা হয়। কম বেশি প্রায় সব পক্ষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত। বুঝতেছিনা, কাকে ছেড়ে কাকে নিয়ে বলব। আজকের এই লিখাটি কীজন্য লিখতে বাধ্য হলাম তা পরে বলব।
কাদিয়ানীরা কাফের এবং ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, একথা আমরা সবাই মানি। মির্যা কাদিয়ানী নবী রাসূল দাবী করেছে, নিজেকে খোদা হবার দাবীও করেছে; এগুলো সব প্রমাণিত সত্য কথা। আমাদের সব ঘরানার মুসলিম উম্মাহা তাদের উক্ত কুফুরির ভিত্তিতে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে এক ও অভিন্ন। কিন্তু আমরা এতই নির্বোধ যে, নিজেরাই যখন নিজেদের পায়জামা উন্মোচনে ব্যতিব্যস্ত, তখন সুযোগ পেয়ে বসে ঈমানচোরের দল ‘কাদিয়ানী জামাত’।
কিছু উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। আল ইমদাদ (الامداد), একটি সাময়িকী, সফর ১৩৩৬ হিজরী সংখ্যা নং ৮, জিলদ ৩ পৃ-৩৫। সেখানে দেওবন্দীদের মুরুব্বি মওলানা আশরাফ আলী থানভি সাহেবের জনৈক মুরিদের একটি স্বপ্নের কারগুজারি বর্ণিত হয়েছে। মুরিদ তো মুরিদই। কিন্তু এটা কোন টাইপের মুরিদ সেটাই বুঝলাম না। মুরিদ নাকি একবার তার পীর সাহেবকে স্বপ্নে দেখলেন। বহুত লম্বা কেচ্ছা। এত সময় নাই রে ভাই, শর্টকাট বলছি। স্বপ্নে পীর সাহেবের দর্শন পেলেন। মুখ দিয়ে কলেমা জারি হল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসূলুল্লাহ।‘ নাউযুবিল্লাহ। মুরিদ নিজেই ঘটনা বর্ণনা দিচ্ছেন আর বলছেন, আমি নিজেও বুঝতেছি যে, এটা ভুল করছি কিন্তু জবান আমার নিয়ন্ত্রণে ছিলনা। তাই খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হলাম আর কান্নাকাটি করলাম। ঘটনা একটু লম্বা। আমি সারকথা বললাম। এতে বেরলবি ভাইদের ঈমানি দণ্ড দাঁড়িয়ে গেল। কারণ এই সুযোগ বারবার আসেনা। দেওবন্দীদের পায়জামা আজই খুইল্লা ফালাইতে হইবে। দেওবন্দীরা আশরাফ আলীর নামে কলেমা বানাইয়া ফেললো! হায় হায়, কাফের কাফের!!
আপনি স্যোসাল মিডিয়া, গুগল সার্চ করে দেখুন। দেওবন্দীদের নামে এধরণের আরও অসংখ্য অভিযোগ পাইবেন। অথচ ঘটনা ঘটলো কী আর কুস্তিগির পায়জামা উন্মোচনকারীরা ঘটা করে প্রচার করলো কী!
সাধারণ মানুষের কী দরকার, এসবে কান দেবার! খেয়ে দেয়ে বুঝি আর কাজকাম নেই তারগো! অথচ দেওবন্দী মুরুব্বী থানভী সাহেব মুরীদের উক্ত স্বপ্নের তাবীরও (ব্যাখ্যা) দিয়েছেন, যা ‘আল ইমদাদ’ (মাহে জমাদিউস সানী ১৩৩৬ হিজরী, পৃ-১৯) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়ে এসেছে। যাইহোক, এই নেন দেওবন্দীদের সেই কথিত কলেমা। কুস্তিগিরগণ যেটার আগামাথা বাদ দিয়েই দেওবন্দীদের পায়জামা খুলতেই বা-জমাত কোমরে গিট বাইন্ধা দৌড় দিয়েছে। (স্ক্রিনশট)।

আরে থামুন, বেরলবিরা দেওবন্দীদের পায়জামা খুলে শিরোপা জয় করে যখনি বাসায় গিয়ে পৌঁছলো তখনি হঠাৎ করে কী এক কাণ্ড ঘটে গেল, দেখে কারো পরনে পায়জামা নেই। সবাই তালা বাবা আর ছালা বাবার যোগ্য শিষ্যের ন্যায় ল্যাংটা বাবা হয়ে গেল। কী ঘটলো! জ্বী হ্যাঁ, দেওবন্দীরাই সেই ঘটনা ঘটালেন! তারাও কম কিসের, পায়জামা যখন কুরবানি দিয়েছি, ইজ্জত যখন খুইয়ে ফেলেছি তাহলে আর বসে থাকি কেমনে! কুরআনি আইন বাস্তবায়ন করতে নামলেন, পায়জামার বদলে এবার তারাও পায়জামা চায়। যেই চিন্তা সেই কাজ! বেরলবি কলেমা আবিষ্কার করে ছাড়লেন! বাপরে বাপ, কী গবেষণা! ফলে বেরলবিরা বাসায় গিয়ে নিচের দিকে তাকাতে না তাকাতেই দেওবন্দীরা তাদের পায়জামা খুলে দমাদম বিশ্বকাপ জিতিয়ে ফেললেন।
হযরত গাউসে আলী শাহ কালান্দার কাদেরী রচিত ‘তাযকিরায়ে গাউসিয়া‘ বইয়ের ৩২৪ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। লিখা আছে, প্রখ্যাত পীর হযরত আবুবকর শিবলী (রহ.)-এর দুইজন মুরিদ তাঁর নিকট এসে বাইয়েত গ্রহণ করলেন। তিনি তাদের মধ্যে একজনকে বললেন, পড় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিবলী রাসূলুল্লাহ‘। আমি বলি, এধরণের গল্প পুরাই বানোয়াট। বিশিষ্ট বুজুর্গ হযরত শিবলী (রহ.) কখনো এধরণের কথা তার মুরিদকে বলতে পারেন না। কাজেই ঘটনা যাইহোক, অবশেষে দেওবন্দীরা বেরলবিদের তথাকথিত কলেমা আবিষ্কার করে ফেললেন। (স্ক্রিনশট)।
আসলে দুইটাই নষ্টামি। এদের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডের দরুণ সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। আলেম সমাজের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা আর ভরসা এদের এসব কারণেই বিদায় নিচ্ছে।
কুস্তিগিরদের পায়জামা উন্মোচন প্রতিযোগিতা স্টেডিয়ামের গেলারি থেকে উপভোগ করতেছিলেন আহলে হাদীস নামক সহীহ ডিলাররা। যখনি দুইপক্ষের কুস্তি শেষে শিরোপা জয়ীদের কারোরই পায়জামা নেই দেখলেন, তখনি বড়সড় একটা হাততালি হয়ে গেল। যা দেখে শিরোপা জয়ীরা আর সহ্য করতে পারলেন না। আহলে হাদীসদের পায়জামাও খুইল্লা নেবেন, এমনি প্রতিজ্ঞা তাদের। যেই চিন্তা সেই কাজ! কিছুদিন পরে একই ভাগ্য বরণ করলেন এরাও। এখন কথা হল, অবশেষে কার কী লাভ হল?
কাদিয়ানী শীয়া আহলে কুরআন তথা হাদীস অস্বীকারকারীদেরই আমরা সুযোগ করে দিলাম কিনা? এদের পক্ষে এবার সুযোগ তৈরি হয়ে গেল কিনা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারীদের রদ করে সাধারণদের কাছে টানার!?
অথচ শিরোপা জয়ীদের কেউই কারো ক্ষেত্রে ইনসাফ করেননি, পুরোপুরি ঘটনা খোলাসা করে তাহকিকের সাথে আসল সত্যটা তুলে ধরেনি। যদি পুরো বিষয়টি সব পক্ষই আমানতের সাথে দেখত তাহলে প্রমাণ হত যে, এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য কোনো পক্ষই দায়ী নন। বড়জোর এটি ব্যক্তি বিশেষের সাথে সম্পর্কিত। দেওবন্দী বেরলবি আহলে হাদীস কোনো পক্ষের সাথেই কলেমার উদ্ভট ঘটনাটি সম্পর্কিত নয়, বরং সব পক্ষই বিশ্বাস করেন যে, সমস্ত মুসলমানের কলেমা যা, সেটাই তাদের কলেমা; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
পরিশেষে বলব, এই সমস্ত কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন। উম্মাহার এই চরম দুর্দিনে প্রকৃত দাঈ সুলভ আচরন করুন। যুব সমাজকে ইরতিদাদের দিকে ঝুঁকতে প্রত্যক্ষ কিবা পরোক্ষভাবেও কোনো ভুমিকা রাখবেন না। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিন।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী