Home নবী দাবী মির্যা কাদিয়ানী মূলত ‘হাকিকি নবী’ দাবীই করেছিল

মির্যা কাদিয়ানী মূলত ‘হাকিকি নবী’ দাবীই করেছিল

0

মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর কথা সঠিক হলে তবে আব্দুল আউয়াল খান সাহেব মিথ্যাবাদী! বিস্তারিত জানতে পড়ুন,

কুরআন থেকে প্রমাণ করুন “ঈসা” আলাইহিস সালাম “জীবিত” – কাদিয়ানী আমীর জনাব আব্দুল আউয়াল খান সাহেবের এমন চ্যালেঞ্জ এর প্রতিউত্তরে

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ ইং বকশিবাজার কাদিয়ানী আস্তানায় তাদের বার্ষিক সম্মেলন (জলসা) সম্পন্ন হয়। উক্ত জলসায় এদেশীয় কাদিয়ানী প্রধান, আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী সাহেব কাদিয়ানী মতবাদের উপর পর্দা ফেলতে সেই পুরনো ভাঙ্গা ঢোল এবারও বাজিয়েছেন। তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সেই পুরনো ডায়লগের পুনঃবৃত্তি করেছেন। এ সম্পর্কে একটু পরেই আসছি।

আব্দুল আউয়াল সাহেব তার বক্তৃতায় অজপাড়াগাঁ থেকে আগত উপস্থিত সহজ-সরল মানুষগুলোকে এবারও বোকা বানাতে চেয়েছেন। গত জলসায় পঞ্চগড়ে একই কায়দায় আগতদের মধ্য থেকে ২৭ জনকে “কাদিয়ানী মতবাদে” প্রবেশ করেছিলেন বলে আমরা জানতে পারি। কিন্তু জলসা শেষে মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই ১০ জন “কাদিয়ানী মতবাদ” থেকে ফিরে আসেন এবং তওবাহ করেন। প্রত্যেকেই তওবাহ করার সময় মির্যা কাদিয়ানীর উপর শত সহস্র লানত বর্ষণ করেন। আর বাকি থাকলো ১৭ জন। এদের মধ্য থেকে আর কতজন ফিরে আসছেন তার সুনিশ্চিত কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। আসলে, মিথ্যার পতন অনিবার্য, সেটিকে শঠতাপূর্ণ বাকপটুতা দিয়ে যতই খাওয়ানো হোক না কেন।

যাইহোক, আগত সাধারণ মানুষ গুলোর বিবেকের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই আব্দুল আউয়াল সাহেব হরহামেশাই এ ধরনের ভঙ্গি করে থাকেন। সেই ভঙ্গি গুলোর কয়েকটি এ রকম,

(ভঙ্গি নম্বর ১) মির্যা গোলাম আহমদ তিনি কখনোই “নবী” দাবী করেননি। তিনি “উম্মতিনবী” দাবী করেছেন।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীকে তার পরবর্তী অনুসারীরা তথাকথিত “উম্মতিনবী” বলে প্রচার করে থাকে মূলত তার “নবী” দাবীর বদনাম ঢাকতে ও মুসলিম উম্মাহার ক্ষোভের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই। তারা কখনো বা মির্যার ‘নবী’ দাবীটিকে “মুহাদ্দাস” অর্থেও উদ্দেশ্য নেয়ার কথা বলে। এককথায় মির্যার “নবী” দাবীকে “হালাল” করতে তারা সর্বদা অযথা বিতর্কে জড়িয়ে থাকে। অথচ তারাও জানেনা যে, তারা মির্যাকে কথিত “ছায়ানবী” বা “উম্মতিনবী” বা “বুরুযীনবী” শব্দগুলোর বক্রব্যাখ্যার আড়ালে রক্ষা করতে চাওয়া কতটা আত্মঘাতী! তারা মির্যার “নবী” দাবীকে হালাল করতে এবং সেটিকে “উম্মতি” শব্দে বিশেষিত করতে সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতকে রেফার করার সময় ভুলে যায় যে, তাদের মির্যা কাদিয়ানী নিজেও “উম্মতিনবী” দাবীর সমর্থনে সূরা নিসা থেকে কখনো কোনো আয়াত উদ্ধৃত করেনি।

আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে,

جب حضرت مسیح موعود نبی ثابت ہوگئے، ایسے ہی نبی جیسے دوسرے انبیاء علیہم السلام تو پھر ان کے بھی وہی حقوق ہیں جو دوسرے انبیاء کے ہیں

“হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা সাহেব) যখন একজন নবী বলে সাব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তেমনি একজন নবী; যেমন অন্যান্য নবীগণ, তখন তো উনার-ও অনুরূপ অধিকার থাকবে যেভাবে অন্যান্য নবীগণের রয়েছে।”

(কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল পৃ-১০ কলাম ৩, তারিখ ৩০-১২-১৯১৬ ইং দ্রষ্টব্য)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

মির্যাপুত্রের ভাষ্যমতে বুঝা গেল যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণের মতই একজন নবী। তাহলে কি কাদিয়ানী নেতা আব্দুল আউয়াল মির্যাকে শুধুমাত্র কথিত “উম্মতিনবী” আখ্যা দিয়ে মিথ্যাচার করল না? জ্বী, অবশ্যই সে মিথ্যাচার করেছে। কিন্তু তার নির্বোধ কাল্টদের বুঝানোর সাধ্য কার!

প্রমাণসহ দেখুন, Click

(ভঙ্গি নম্বর ২) মির্যা কাদিয়ানী নিজ দাবীতে সত্য ছিল না মিথ্যা ছিল, ইস্তিখারাহ করুন।

উল্লেখ্য, ইসলামের কোনো মীমাংসিত বিষয়ে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ। যেমন, আপন ভাই বোনে বিবাহ হারাম, এটি ইসলামে একটি মীমাংসিত ও চূড়ান্ত বিধান। এখন কেউ যদি এখানে হারাম বা হালাল নিয়ে কনফিউজড হয় তদ্দ্বারা সে কুফুরীতে চলে যাবে। মির্যা কাদিয়ানী “নবী” দাবী করায় তার ব্যাপারেও সত্য বা মিথ্যা হওয়া নিয়ে ইস্তিখারাহ করাও একই কথা। যেহেতু ঐ অবস্থায় এমন ব্যক্তির অন্তরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের “খাতামুন নাবিয়্যীন” এর প্রতি যে ঈমান থাকাটা ফরজ ছিল, সেই ঈমান আর বহাল থাকেনা।

(ভঙ্গি নম্বর ৩) ঈসা নবীউল্লাহ (আল্লাহর নবী ঈসা) আবার আসবেন, মুসলিম শরীফের হাদীসে আগত ঈসাকে আল্লাহর নবী তিন তিন বার “নবী” শব্দে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ আগত ঈসা “নবী” হিসেবেই আসবেন। (নাউযুবিল্লাহ)।

উল্লেখ্য, মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসে আগত সেই ঈসা হতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে বুঝায়নি। বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাইলের জন্য পূর্বে প্রেরিত হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালামের আবার আগমন করার ভবিষ্যৎবাণী দিয়েছেন। সে একই হাদীসে আগত ঈসা কোথায় এবং কিভাবে নাযিল হবেন, তিনি এসে কী কী কাজ গুলো করবেন, তিনি ইয়াজুজ-মাজুজ এর আক্রমণের সময় কোথায় এবং কিভাবে আত্মরক্ষা করবেন, ইয়াজুজ-মাজুজ এর ধ্বংস কিভাবে হবে ইত্যাদি পুরো ঘটনাটি প্রায় আড়াইশ শব্দের অধিক দীর্ঘ হাদীসটিতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তারা হাদীসটির পুরো বিষয়গুলো চোখবুঁজে এড়িয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে “ঈসা নাবিউল্লাহ” অতি ক্ষুদ্র একটুকরো আরবী উঠে নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যায় চলে যায়।

আবার আগের কথায় ফিরছি, গত ১৬ ই ফেব্রুয়ারিতে বকশিবাজারে কাদিয়ানী প্রধান আব্দুল আউয়াল সাহেব বললেন,

কোনো মিছিল মিটিংয়ের দরকার নেই, কাফের ঘোষণা দেয়ারও দরকার নেই। সংসদে আইন পাস করে কাদিয়ানীদের “অমুসলিম” রায় দেয়ার-ও দরকার নেই। শুধু পবিত্র কুরআন থেকে ঈসা আলাইহিস সালামকে “জীবিত” প্রমাণ করে দিন। (বক্তব্যের মুটামুটি সারাংশ)।

কাদিয়ানীদের নিকট এ লিখাটির কোনো উত্তর কেয়ামত পর্যন্ত দেয়া সম্ভব নয়, পড়ুন- Click

এখন তার উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব,

আমি তার উক্ত চ্যালেঞ্জের সরল উত্তর ইতিপূর্বেও বহুবার বিভিন্ন ভাবে দিয়ে আসছি। আজকে আবারও দিতে চাই।

তবে তার আগে আমি তার উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণপূর্বক তাকে পালটা কয়েকটি প্রশ্ন করব, যেগুলোর উত্তর তাকে এবং তার সম্প্রদায়কে পবিত্র কুরআন থেকেই দিতে হবে। (যেহেতু সে নিজেও তার উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ এর উত্তর পবিত্র “কুরআন” থেকেই দিতে বলেছেন, দ্বিতীয় কোনো ফান্ডামেন্টাল সোর্সের কথা তিনি উল্লেখ করেননি-লিখক)।

আসুন! আপনারাও এগুলো কুরআন থেকে প্রমাণ করুন,

(নম্বর ১) শেষ যামানায় একজন রূপক ঈসা আসবেন, যিনি মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে আলাদা দল তৈরি করবেন, একথা কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে “রূপক ঈসা” মানেন বলেও প্রচার করে থাকেন।

(নম্বর ২) আগত তথাকথিত “রূপক ঈসা” আর “ইমাম মাহদী” দু’জনই একই ব্যক্তি হবেন, এ কথাটিও কুরআন থেকেই প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীরা আগত ঈসা আর হযরত ইমাম মাহদী – দু’জনকে আলাদা ব্যক্তি মনে করেনা, তারা একই ব্যক্তির দু’টি আলাদা উপাধি বলে থাকেন। আর সে হিসেবে মির্যা কাদিয়ানীকে তারা রূপক ঈসা এবং ইমাম মাহদী দুটি এক সঙ্গে মানেন।

(নম্বর ৩) কথিত রূপক ঈসার উপর ঈমান না আনার কারণে সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীয়া অমুসলিম, জাহান্নামী; এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর মতে যারা তার দাওয়াত (দর্শন ও দাবী দাওয়া) কবুল করেনি তারা মুসলমান নয়। (তাযকিরাহ পৃ-৫১৯)। কাদিয়ানী জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন লিখেছেন, যে সকল মুসলমান মির্যা কাদিয়ানীর নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ (বয়াত) না হবে তারা যদি তার নামও না শুনে থাকে তবুও তারা কাফের এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে বাহিরে। (আয়নায়ে সাদাকাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)। নাউযুবিল্লাহ।

(নম্বর ৪) কথিত রূপক ঈসাটাই যে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিয়ান গ্রামের চেরাগ বিবির সর্বকনিষ্ঠ পুত্র মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮), এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, বাহায়ী জামাতের অনুসারীরা-ও বিশ্বাস করে যে, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা হুসাইন আলী নূরী (বাহাউল্লাহ নামে পরিচিত) একজন “রূপক ঈসা” ছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, বাহাউল্লাহ ইরানী “মসীহ মওউদ” দাবী করেই বসে থাকেনি, বরং সে নবুওয়ত এবং রেসালতের দাবীও করেছিল। তার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল যে, আল্লাহ তার প্রতি ওহী নাযিল করেছেন। বাহাউল্লাহ ইরানী মসীহ মওউদ দাবী করার পর আরও প্রায় চল্লিশ বছর বেঁচেছিল।

(নম্বর ৫) হযরত ঈসা (আ.) এর কবর ভারতের কাশ্মীরে খান ইয়ার মহল্লাতে, এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের আরও একটি অকাট্য বিশ্বাস হচ্ছে, ঈসা (আ.) শামের গ্যালীল জনপদ হয়ে সেই সুদূর জেরুজালেম থেকে কাশ্মীর পালিয়ে আসেন। সেখানেই জীবনযাপন করেন এবং ১২০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর তিনি সেখানেই দাফন হন। (নাউযুবিল্লাহ)।

(উক্ত ৫টি প্রশ্নের উত্তর কুরআন থেকে দিতে হবে)।

যদি কুরআন থেকে এগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারেন এবং সাক্ষ্য হিসেবে মাননীয় দুই একজন পূর্ববর্তী যুগ ইমামের উক্তিও পেশ করতে পারে (তাদের মূল কিতাবের স্ক্রিনশট সহকারে) তাহলে আমিই সবার আগে মির্যা কাদিয়ানীকে সাপোর্ট করব। ওয়াল্লাহি।

আর যদি সঠিকভাবে উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, আপনি এবং আপনারা ভন্ড, প্রতারক ও নিঃসন্দেহে যিন্দিক। তাই আহবান থাকবে, আল্লাহকে ভয় করুন। দুনিয়ার সামান্য লোভ লালসায় পড়ে আখেরাতকে বরবাদ করবেন না। অন্ততপক্ষে সাধারণ মানুষের ঈমান নিয়ে আর তামাশা করবেন না। আমার কাজ, সাহস করে সত্যটা তুলে ধরা। আল্লাহর নিকট আপনাদের সোপর্দ করছি। ওয়াল্লাহুল মুস্তা’আন ওয়াল মুহতাদী।

উল্লেখ্য, ‘যিন্দিক‘ এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যে মনেপ্রাণে কুফুরী লালন করে-ও নিজেকে বাহ্যিকভাবে মুসলমান পরিচয় দেয়—বলে থাকে যে, আমি মুসলমান। অথচ এমন ব্যক্তি জঘন্য কাফের এবং যিন্দিক। আর ইসলামে যিন্দিকের শাস্তি আর মুরতাদের শাস্তি একই।

এবার পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ করা হবে যে, হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) এর পুনঃ আগমন সত্য। এর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ইংগিত রয়েছে। রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎবাণীতে পরিষ্কার করে এসেছে যে, তিনি যথাসময় আসবেন, তিনি মরিয়মের পুত্র ঈসা, তিনি একজন ন্যায়বিচারক ও সুশাসক হবেন। তিনি শামে অবতরণ করবেন। তিনি দু’জন ফেরেশতার দুই ডানায় দুই হাত রেখেই নাযিল হবেন। তার অবতরণ স্থল হবে সিরিয়ারই ভূখণ্ডে ও পূর্বপ্রাণে (উমাইয়াহ মসজিদের শ্বেত মিনারার পাশে)। মুসনাদে বাজ্জার গ্রন্থের একটি সহীহ হাদীসে এসেছে তিনি আকাশ থেকে নাযিল হবেন।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ দেখতে ক্লিক করুন- Click

সহীহ মুসলিম শরীফে আরও এসেছে, ঈসা (আ.) যখন আসবেন তখন মুসলমানদের আমীর (অন্য হাদীসে এ আমীরকে ‘ইমাম মাহদী‘ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, দেখুন المنار المنيف لابن القيم পৃষ্ঠা নং ৯৪, সনদের মান- জায়্যিদ তথা ভালো) তাঁকে সালাতের ইমামতি করতে বলবেন কিন্তু তিনি ‘ইমাম মাহদী’কেই সালাত পড়াতে সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেবেন। ইত্যাদি। এ থেকেও প্রমাণিত হল যে, তারা ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তিই হবেন। (প্রামাণ্য স্ক্রিনশট এই যে)

কুরআন থেকে (প্রাসঙ্গিক কিছু প্রমাণ) –

১। সূরা যুখরুফঃ ৬১

আল্লাহতালা বলেন

وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ

অর্থ- নিশ্চয়ই সে (মরিয়ম পুত্র ঈসা) হবে (মূলত) কেয়ামতের একটি নিদর্শন (হে নবী, তুমি বলো), তোমরা সে (কেয়ামতের) ব্যাপারে কখনো সন্দেহ পোষণ করো না। তোমরা আমারই আনুগত্য করো, এটাই সরল পথ। আয়াতটিতে সে হবে ভবিষ্যতের দিকে ইংগিত। বাকিটা বুঝে নিন! (অনুবাদ-হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ, আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স)।

আয়াতটির নিশ্চয়ই সে (إِنَّهُ) এ কথাটির ইংগিত কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে কতিপয় ব্যাখ্যাকরক বলেছেন পবিত্র কুরআন। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) সহ অধিকাংশ তাফসীরকারকের সর্বসম্মত মত হচ্ছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম। তার কারণ আয়াতটির উপরে উল্লিখিত একটানা ৩টি আয়াত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। কাজেই এ আয়াত তারই প্রসঙ্গক্রমে। তিনি আরো লিখেছেন

بَلْ اَلصَّحِيْحُ أَنَّهُ عَائِدٌ عَلَى عِيْسَى (عَلَيْهِ السَّلَامُ) فَإِنَّ السِّيَاقَ فِيْ ذِكْرِهِ ثُمَّ الْمُرَادُ بِذَلِكَ نُزُوْلُهُ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، كَمَا قَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: (وَإِنْ مِّنْ أَهِلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ) أَيْ: قَبْلَ مَوْتِ عِيْسَى عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلَامُ ثُمَّ (وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا

অর্থ- বরং বিশুদ্ধ মত হচ্ছে নিশ্চয়ই সে (إِنَّهُ) এ কথাটির ইংগিত হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য, তিনি কেয়ামত দিবসের পূর্বে অবতরণ করবেন। আহলে কিতাবীগণ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করবেন। পবিত্র কুরআন (০৩:৫৯) দ্রষ্টব্য। – ইবনে কাসীর।

২। সূরা নিসাঃ ১৫৯

আল্লাহতালা বলেন,

وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا

অর্থ- আহলে কিতাবদের (ইহুদী-খ্রিস্টানদের) মাঝে এমন একজনও থাকবে না, যে ব্যক্তি তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর (তিরোধান সম্পর্কে আল্লাহতালার এই কথার) উপর ঈমান আনবে না, কেয়ামতের দিন সে তো নিজেই এদের উপর সাক্ষী হবে।

আয়াতটিতেও ঈমান আনবে কথাটি ভবিষ্যতের দিকে ইংগিত। এখন ঈসা (আ.) কুরআন নাযিলের আগেই মারা গেলে আহলে কিতাবীরা তাঁর মৃত্যুর আগে আগে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে-কথাটির মানে কী?

৩। সূরা আলে ইমরানঃ ৮১

আল্লাহতালা বলেন,

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ

অর্থ- আল্লাহ যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কিতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম, অতপর তোমাদের কাছে যখন (একজন) রাসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রক্ষিত (আগের) কিতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) উপর ঈমান আনবে এবং সাহায্য করবে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করছো এবং আমার এ প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব পালন করছো? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা অঙ্গীকার করছি; তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম। এখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

(ইবনে আব্বাস, আলী প্রমুখও একই কথা বলেছেন, তাফসীরে তাবারী দ্রষ্টব্য)।

একই কথা মির্যা কাদিয়ানীও স্বীকার করে লিখে গেছেন (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৮, পৃষ্ঠা নং ৬৭৫)।

রূহের জগতে সমস্ত নবী রাসূল থেকে গৃহিত অঙ্গীকার, তাঁকে পাওয়া মাত্রই সবাই তাঁকে সাহায্য করতে হবে। আর এই অঙ্গীকার সকল নবী রাসূলের পক্ষ হতে পূর্ণ হওয়া তখনি সম্ভব, যখন শেষযুগে ঈসা (আ.) আসবেন এবং তিনি সকলের পক্ষ হতে তাঁর রেসালতের সত্যায়ন করবেন এবং তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনের সাহায্য করবেন।

কাদিয়ানীদের নিকট প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কাছ থেকেও কি ঐ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল? অন্যথা প্রকৃত ঈসা আসার পরিবর্তে তথাকথিত “রূপক ঈসা” আসার যুক্তিকতা কী?

৪। আলে ইমরানঃ ৪৬

আল্লাহতালা বলেন,

وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ

অর্থ- সে দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) কথা বলবে এবং সে হবে নেককারদের একজন।

আয়াতটিতে পরিণত বয়স বুঝাতে আরবী শব্দ কাহাল এসেছে। আরবী অভিধানগ্রন্থ ‘লিসানুল আরব’ (لسان العرب) এর মধ্যে লিখা আছে, “কাহাল” (كَهْلًا) বা পরিণত বয়স বলতে ৩৪ বছর থেকে ৫১ বছরের মাঝামাঝি বয়সীদের বুঝানো হয়।

আমরা জানি, ঈসা (আ.)-কে যখন সশরীরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তিনি মাত্র ৩৩ বছরের যুবক

(তবকাতে ইবনে সা’আদ ১/৩৬, ইবনে আব্বাস রা. থেকে)।

সুতরাং এই আয়াত পরিষ্কার ইংগিত করছে যে, তাঁর (আ.) ফিরে আসার বিশ্বাস অকাট্য সত্য। অন্যথা কাহাল (প্রৌঢ়) বা পরিণত বয়সে মানুষের সাথে তাঁর কথা বলা কখনো সম্ভব হবেনা। অথচ কুরআন বলছে ইয়ুকাল্লিমুন নাস (وَيُكَلِّمُ النَّاسَ) অর্থাৎ তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন । ভবিষ্যৎকালের দিকে ইংগিত। এ জন্যই এইধরণের নসকে ইশারাতুন নস বলে।

আপাতত কয়েকটা দিলাম।

ওয়াসসালাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here