Home Blog Page 13

মৃত ব্যক্তিকে দাফনকালে ‘মিনহা খালাক্বনাকুম’ পড়ার বিধান কী?

জানাযাকে কবর দেয়ার সময় ‘মিনহা খালাক্বনাকুম…’ আয়াতটিকে ৩ ভাগ করে পড়া এবং তিন মুষ্টি করে মাটি দেয়ার শরয়ী বিধান সম্পর্কে,

প্রশ্ন, উল্লিখিত পদ্ধতি নাকি ভিত্তিহীন ও বিদয়াত? জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, এ সম্পর্কে নাকি কোনো হাদীস পাওয়া যায় না!

উত্তর, আলোচ্য বিষয়ে বলা হয় যে, উপরে উল্লিখিত জিজ্ঞাসায় ‘কোনো হাদীসই পাওয়া যায় না’ একথা সঠিক নয়। তবে ইনসাফের দৃষ্টিতে বলা যেতে পারে যে, এ সংক্রান্ত কোনো বর্ণনাই সূত্রের বিচারে সহীহ নয়, বড়জোর দুর্বল।

বলাবাহুল্য, কখনো কখনো কোনো হাদীসের প্রতি সহীহ হওয়ার হুকুম লাগানো হয় যখন তা আয়েম্মায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীন কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করেন। যদিও তার কোনো সহীহ সনদ না থেকে থাকে।

হাফেয সাখাবী (রহ.) ফাতহুল মুগীছ (فتح المغيث بشرح ألفية الحديث) গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন,

إذا تلقت الأمة الضعيف بالقبول يعمل به على الصحيح حتى أنه ينزل منزلة المتواتر في أنه ينسخ المقطوع به ولهذا قال الشافعي رحمه الله في حديث لا وصية لوارث إنه لا يثبته أهل الحديث ولكن العامة تلقته بالقبول وعملوا به حتى جعلوه ناسخا لآية الوصية له

অর্থাৎ উম্মত যখন কোনো জঈফ হাদীসকে কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তখন তার উপর আমল করা হবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী। এমনকি তা মুতাওয়াতের এর পর্যায়ে পৌছে যায়। ফলে তা অটাক্যভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয়কেও রহিত করে দেয়। এজন্যই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) “ওয়ারিসের জন্য কোনো ওসিয়ত নেই” এই হাদীসের ব্যপারে বলেছেন, মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসটি সহীহ সনদে মেনে নেননি। তবে উম্মত তা গ্রহণ করেছেন এবং তার উপর আমল করেছেন। এমনকি কুরআনের ওসিয়তের আয়াতকে পর্যন্ত তা রহিত করে দিয়েছে “। (হাফেয সাখাবী, ফাতহুল মুগীছ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা নং ৩১২)।

মূলত সেই উসূল বা নীতির প্রেক্ষিতে আরব বিশ্বের বিখ্যাত মুফতিয়ে আজম, শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ (রহ.) লিখেছেন, মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামিয়ে মাটি দেয়া মুহূর্তে পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বহা আয়াত নং ৫৫ এর ‘মিনহা খালাক্বনাকুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ তিন ভাগ করে পড়া এবং সে সাথে ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’ (مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى) পড়া সুন্নাহ। (মাজমু ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতে শায়খ বিন বাজ খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ১৯৬)।

সুতরাং বুঝা গেল, উম্মাহার মাঝে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা আমলটিকে যারা বিদয়াত বলছেন তারা স্বল্প জ্ঞান, সংকীর্ণ গবেষণা ও চিন্তার চরম দুর্বলতা থেকেই বলছেন। অন্যথা যেখানে সালাফী শায়খ বিন বাজ (রহ.) থেকেও এর পক্ষে ফতুয়া বিদ্যমান, সেখানে নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মধ্যে কোনো উপকারিতা আছে বলে মনে হয় না।

  • এবার সম্পর্কিত আরও যা উল্লেখ করতে যাচ্ছি তা হল,

উল্লিখিত মাসয়ালাটি বর্তমানে যে বা যারা বিদয়াত বলে জনমনে সংশয় তৈরি করার চেষ্টা করছে তাদের বিপরীতে নির্ভরযোগ্য ইমামগণের রচনায় কী উল্লেখ আছে দেখুন! (১) ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) তাফসীরে ইবনে কাসীর গ্রন্থে লিখেছে,

وفي الحديث الذي في السنن أن رسول الله صلى الله عليه وسلم حضر جنازة ، فلما دفن الميت أخذ قبضة من التراب فألقاها في القبر ثم قال ( منها خلقناكم ) ثم أخذ أخرى وقال : ( وفيها نعيدكم ) . ثم أخذ أخرى وقال : ( ومنها نخرجكم تارة أخرى )

অর্থাৎ সুনান গ্রন্থগুলোর হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসূল (সা.) অবশ্যই জানাযায় হাজির হতেন অত:পর মাইয়্যেতকে দাফন করতে মুষ্টিময় মাটি নিতেন। এরপর তিনি যখনি কবরে মাটি ঢালতেন তখন পড়তেন منها خلقناكم এরপর আবার মাটি নিতেন এবং পড়তেন وفيها نعيدكم এরপর তিনি আবার মাটি নিতেন এবং পড়তেন ومنها نخرجكم تارة أخرى {তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা ত্বহা ৫৫ দ্রষ্টব্য }।

(২) সালাফী শায়খ বিন বাজ (রহ.) লিখেছেন,

س: ما حكم قول: مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى. [طه:٥٥] عند الدفن؟ ج: هذا سنة، ويقول معه: بسم الله والله أكبر. (مجموع فتاوى ومقالات الشيخ ابن باز ١٣/ ١٩٦)

অর্থাৎ প্রশ্ন, দাফনের সময় ‘মিনহা খালাক্বনাকুম’…পড়ার শরয়ী বিধান কী?

উত্তর, এটি সুন্নাহ, আর সে সাথে বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার পড়বে।

(৩) এবার বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত একটি মারফূ হাদীস উল্লেখ করছি।

لما وضعت أم كلثوم بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم في القبر قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : منها خلقناكم وفيها نعيدكم ومنها نخرجكم تارة أخرى

অর্থাৎ, রাসূল (সা.)-এর কন্যা উম্মে কুলছুমকে যখন কবরে রাখলেন তখন রাসূল (সা.) ‘মিনহা খালাক্বনাকুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ পড়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬৫১৭)।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) হাদীসটি স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে যে সনদে এনেছেন সেটি জঈফ (দুর্বল) বলে উল্লেখ রয়েছে। তথাপি হানাফী, শাফেয়ী এবং মালেকি মাযহাবের ফাকিহগণ হাদীসটির কন্টেন্টকে আমলে নিয়েছেন এবং আমল ও ফাজায়েল সংক্রান্ত বিষয়ে সূত্রে কিছুটা দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও সেটিকে শর্তমতে ন্যূনতম মুস্তাহাব হবার দলিল হিসেবেই বেছে নিয়েছেন।

আমরা এই সংক্রান্ত অপরাপর আরও বহু দলিল প্রমাণ পেশ করতে পারব। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) স্বীয় ‘মুসনাদে শাফেয়ী’ গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এইরূপ,

وعن جعفر بن محمد عن أبيه , { أن رسول الله صلى الله عليه وسلم حثى على الميت ثلاث حثيات بيديه جميعا }

অর্থাৎ নিশ্চয়ই রাসূল (সা.) মৃত ব্যক্তিকে উভয় হাতে তিন মুষ্টি করে মাটি দিয়েছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও একই আমল প্রমাণিত। হাদীসের ভাষ্য হল,

وروي عن ابن عباس , أنه لما دفن زيد بن ثابت حثى في قبره ثلاثا

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রা.) যায়েদ বিন সাবেতকে দাফন করতে যখন আসলেন তিনি তখন তাঁর কবরের উপর তিন মুষ্টি করে মাটি ঢেলেছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদীস নং ৬৪৭৯)।

কাজেই এই বিষয়ে উম্মাহার সর্বজন বরেণ্য ফকিহগণের ফতুয়া থাকায় বর্তমান এই ফেতনার যুগে ঐ মীমাংসিত ফিকহের বিপরীতে নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করা প্রকারান্তরে ফেতনা করারই নামান্তর।

এবার শারেহে মুসলিম ইমাম নববী (রহ.) এর রচিত ‘আল-মাজমু’ শরহুল মুহাজ্জাব’ (المجموع شرح المهذب) থেকে উদ্ধৃত করছি, তিনি লিখেছেন,

يستحب لكل من على القبر أن يحثي عليه ثلاث حثيات تراب بيديه جميعا بعد الفراغ من سد اللحد, وهذا الذي ذكرته من الحثي باليدين جميعا نص عليه الشافعي في الأم, واتفق الأصحاب عليه

অর্থাৎ কবরের উপর প্রত্যেকের জন্য এটি বাঞ্ছনীয় যে কবর সমাপ্ত করার পরে উভয় হাতে তিন মুঠো মাটি ঢেলে দেওয়া। আর উভয় হাতে মাটি ঢেলে দেয়ার পুরো যে ব্যাপারটা আমি উল্লেখ করলাম তা ইমাম শাফেয়ী (রহ.) স্বীয় “আল-উম্ম” (الام) কিতাবে প্রমাণ করেছেন। তাঁর এই প্রমাণের উপর সমস্ত হাদীসবিশারদ একমত পোষণ করেছেন।

(৪) ইমাম ইবনুল কুদামাহ আল হাম্বলী (রহ.) স্বীয় আল-মুগনী (المغنى) কিতাবে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সম্পর্কে লিখেছেন,

أنه حضر جنازة , فلما ألقي عليها التراب , قام إلى القبر , فحثى عليه ثلاث حثيات

অর্থাৎ “তিনি (আহমদ ইবনে হাম্বল) একদা একটি জানাযায় হাজির হন, যখন মাটি দেয়ার সময় হল তিনি কবরের নিকটে দাঁড়ান এবং তিন মুষ্টি করে কবরে মাটি দেন।”

এভাবে আরও বহু দলিল প্রমাণ পেশ করা যাবে। সুতরাং সালফে সালেহীনের আমল দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, আলোচ্য বিষয়ে নস বা দলিল প্রমাণ অবশ্যই মজুদ রয়েছে। নইলে সালাফদের ঐ সমস্ত কাজকেও কি বিদয়াত বলবেন? লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!

প্রমাণ্য স্ক্রিনশট

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

মির্যা কাদিয়ানী ঈসা (আ.)-এর কথিত কবরস্থান নিয়ে নিজেও কনফিউজড

সিজোফ্রেনিয়া রোগী মির্যা কাদিয়ানী ঈসা (আ.)-এর তথাকথিত কবর নিয়ে নিজেও পুরো কনফিউজড! সাধারণদের বুঝার সুবিধার্থে তার বইয়ের নির্দিষ্ট উর্দূ অংশটির বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ তুলে ধরা হল,

اور پھر تبت کی طرف رخ کر لیا ہو اور کیا تعجب کہ حضرت مسیح کی قبر کشمیر یا اس کے نواح میں ہو۔ یہودیوں کے ملکوں سے انکا نکلنا اس بات کی طرف اشارہ تہا کہ ۔۔۔۔

(উচ্চারণ) অওর পের তিব্বত কি তরফ রুখ কর লিয়া হো অওর কেয়া তা’জ্জব কেহ হযরত মসীহ কি কবর কাশ্মীর ইয়া উসকে নাওয়াহ মে হো….! অর্থাৎ অত:পর (ঈসা) তিব্বতের দিকে চলে গেলেন। কি যে আশ্চর্যের ব্যাপার যে, হযরত মসীহ’র কবর কাশ্মীর অথবা তার আশপাশে (তিব্বতে) অবস্থিত। ইহুদী রাষ্ট্রসমূহ হতে তাঁর বেরিয়ে যাওয়া এ দিকেই ইংগিত করে যে…..! (রূহানী খাযায়েন খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা নং৩০২)।

কী বুঝলা সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মুরিদরা?

কে জানি প্রশ্ন করল যে, উপরের লাইনের ‘তিব্বতের’ সাথে নিচের লাইনের কবরের স্থানের সম্পর্ক কোথায়? উত্তরে বলব, এটা বুঝার জন্যই তো আগের লাইন ভালো করে পড়তে হবে যেখানে মির্যার বয়ানে ঈসা (আ.) তিব্বতের দিকে চলে গিয়েছিল—কথাটি উল্লেখ রয়েছে। আর পরের লাইনে “অথবা ঈসার কবর কাশ্মীরের আশপাশে” বলতে ঐ তিব্বতকে বুঝানো না হলে তবে কী বুঝাতে পারে বলে আপনি মনে করেন? (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)

উল্লেখ্য, তিব্বত গণচীনের একটি স্বশাসিত অঞ্চল। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এ অঞ্চলটি তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে ভারত শাসিত অঞ্চল লাদাখের দূরত্ব মোটর গাড়ী দিয়ে ৪২২ কিলোমিটার, পায়ে হেঁটে চললে চারদিনের পথ। এর পূর্বে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, দক্ষিণে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য, ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর। তিব্বতী সংস্কৃতি দ্বারা লাদাখ প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত বলে এই অঞ্চলকে ক্ষুদ্র তিব্বত বলা হয়ে থাকে। মির্যা কাদিয়ানীর দাবী, ঈসা (আ.) জেরুজালেম থেকে পালিয়ে কাশ্মীর হয়ে তিব্বতে চলে যান। তার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ বইয়ের ভাষ্যমতে, ঈসা (আ.) সেখানে বৌদ্ধভিক্ষুদের সাহচর্যে এসে তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর এ সমস্ত বাণী শতভাগ মনগড়া এবং ঐতিহাসিকভাবেও অপ্রমাণিত।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

ঈসা (আ.) খোঁজে খোঁজে সমস্ত ক্রুশ আর শুয়োর কিভাবে নিধন করবেন?

কাদিয়ানী ললিপপ || ঈসা (আ.) এর পক্ষে আবার এসে সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে খ্রিস্টানদের ক্রুশগুলো ভাঙ্গা এবং জঙ্গল থেকে সমস্ত শুয়োর খোঁজে খোঁজে হত্যা করা কীভাবে সম্ভব?

আজকে কাদিয়ানীদের আরেকটা ললিপপ নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলব। সেটি হচ্ছে, তাদের বই-পুস্তকে ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমনের বিশ্বাসকে অহেতুক সাব্যস্ত করতে এবং আগত ঈসা সম্পর্কিত বর্ণনার কথাগুলোকে রূপক অর্থে উদ্দেশ্য নিতে প্রায় একটা যুক্তি দেয়া হয়। তা হল, ঈসা (আ.) এর পক্ষে আবার এসে সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে খ্রিস্টানদের ক্রুশগুলো ভাঙ্গা এবং জঙ্গল থেকে সমস্ত শুয়োর খোঁজে খোঁজে হত্যা করা কীভাবে সম্ভব? আর এই সব কাজের জন্য তাঁর আসার দরকারটাও বা কী? ললিপপ দেখেন! কিভাবে মগজধোলাই দেয়া হল! একটি সত্যকে মাটিচাপা দিতে কত চাতুর্যপূর্ণ গাল-গল্প রচনা করল! সিজোফ্রেনিয়া রোগী মির্যা কাদিয়ানীর রচনাবলীর প্রায় চ্যাপ্টারে এই ডায়লগ দেখতে পাবেন। অনলাইনে তার অন্ধভক্ত কাল্টদেরও বিভিন্ন পোস্ট-কমেন্টে একই ললিপপ কপচাতে দেখবেন। এবার আসুন, আজকে তাদের এই ললিপপটারও হাকীকত উন্মোচন করব, ইনশাআল্লাহ। সর্বপ্রথম সম্পর্কিত পুরো হাদীসটি নিচে পেশ করছি, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে,

وَالَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ، لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا، فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الخِنْزِيرَ، وَيَضَعَ الجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ المَالُ حتَّى لا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ، حتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَما فِيهَا. ثُمَّ يقولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَاقْرَؤُوا إنْ شِئْتُمْ: {وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا} [النساء: ১৫৯].

অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়ামের পুত্র ঈসা (আ.) একজন শাসক ও ন্যায় বিচারক হয়ে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুয়োর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্‌দা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারো, কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দ্বীন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। [সহীহ বুখারী (ইফা.) অধ্যায় ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আ.) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদীস নং ৩২০৫, ঈসা ইবন মারিয়াম (আ.) এর অবতরণের বর্ণনা]।

প্রথম কথা হল, ক্রুশ ভাঙ্গা আর শুয়োর হত্যা সম্পর্কিত হাদীসে শব্দ দুটির আরবী হল فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الخِنْزِيرَ অর্থাৎ তিনি ক্রুশ ভাঙ্গবেন এবং শুয়োর হত্যা করবেন। দেখুন, সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া অধ্যায়। পাঠকবৃন্দ খুব খেয়াল করুন, হাদীসে ‘ক্রুশ’ (الصَّلِيبَ) আর ‘শুয়োর’ (الخِنْزِيرَ) শব্দ দুটি একবচনে এসেছে। ফলে ঈসা (আ.)-এর জন্য সিজোফ্রেনিয়া পাড়ার অসুস্থ কাল্টদের ঐ ললিপপ পুরোদমে মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে সাব্যস্ত হল। উল্লেখ্য, হাদীসে উল্লিখিত الصَّلِيبَ বা ছলীব এর বহুবচন হচ্ছে صلب (ছুলুব) অথবা صلبان (ছুলবান)। الصَّلِيبَ বা ছলীব অর্থ, ক্রুশ, ক্রস। আর الخِنْزِيرَ (খিঞ্জির) এর বহুবচন হচ্ছে, الخنازير বা আল খানাজীর। الخِنْزِيرَ (খিঞ্জির) অর্থ শুয়োর।

এখন প্রশ্ন রইল, তাহলে ভবিষ্যৎবাণী কীরূপে পূর্ণ হবে?

এর উত্তর হল, যেহেতু হাদীসে উক্ত শব্দদুটি একবচনেই এসেছে, সেহেতু ঈসা (আ.) দুনিয়ায় আবার যখন আসবেন তখন তাঁর সম্পর্কে খ্রিস্টান জাতি ইতিপূর্বে যে ভ্রান্ত ক্রুশীয় মতবাদ রটিয়েছিল তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র ২/১টা ক্রুশ ভঙ্গ করার মাধ্যমে সেই মতবাদের অবসান ঘটাবেন। অনুরূপ খ্রিস্টান জাতির মধ্যকার প্রচলিত শুয়োর বেচা-বিক্রি ও পোষণের উপর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে নিজ হাতে ২/১টা শুয়োর হত্যা করবেন। বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে এ কথাই লিখে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন,

أي يبطل دين النصرانية بأن يكسر الصليب حقيقة ويبطل ما تزعمه النصارى من تعظيمه ويستفاد منه تحريم اقتناء الخنزير وتحريم أكله وأنه نجس لان الشئ المنتفع به لا يشرع اتلافه وقد تقدم ذكر شئ من ذلك في أواخر البيوع

অর্থ- “তিনি প্রকৃতপক্ষে একটি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলার মাধ্যমে খ্রিস্টীয় ধর্মমত এবং ক্রুশীয় ধারণা ও মর্যাদার পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। আর তিনি শুয়োর পোষা এবং খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেবেন। কেননা শুয়োর একটি অপবিত্র প্রাণী। অধিকন্তু উপকারী বস্তু বিনষ্ট করা শরীয়তসম্মত নয়। বেচাবিক্রি অধ্যায়ের শেষের দিকে এতদ-সংক্রান্ত আলোচনা উল্লেখ করা হল।”

দেখুন, ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, খণ্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৫৬, ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)।

আর এ কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে আক্ষরিক অর্থেই ঘটবে। এটিকে কোনোভাবেই রূপক অর্থে উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। তার কারণ, সহীহ বুখারীর উক্ত হাদীসটি শুরুই হয়েছে وَالَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ (সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ) শপথ বাক্য সহকারে। আর শপথ বাক্য সহ যে সমস্ত হাদীসে কোনো ভবিষ্যৎবাণী থাকে সেটি কখনো রূপক অর্থে উদ্দেশ্য হয়না। অন্যথা শপথ করে লাভ কী হল? একথা খোদ সিজোফ্রেনিয়া রোগী মির্যা কাদিয়ানীরও।

দেখুন, তার রচনা ‘হামামাতুল বুশরা‘ (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ২৭, পুনঃ প্রকাশ নভেম্বর ২০১১ ইং।

এরপরেও যদি আপনার কাছে ললিপপ মজা লাগে তাহলে যত ইচ্ছে খেতে থাকুন!

দ্বিতীয় কথা হল, হাদীসে বর্ণিত শব্দগুলো فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الخِنْزِيرَ (অর্থাৎ তিনি ক্রুশ ভাঙ্গবেন এবং শুয়োর হত্যা করবেন) থেকেও পরিষ্কার ইংগিত পাওয়া যায় যে, ঈসা (আ.) এসে রাষ্ট্র প্রধানের পদমর্যাদায় আসীন হবেন। কারণ রাষ্ট্র প্রধান ছাড়া এই কাজগুলো সাধারণ মানুষদের পক্ষে অসম্ভব। ফাতহুল বারী-তে আসছে, وَيَضَعَ الحربَ {ওয়া ইয়াদ্বাউল হারবা} অর্থাৎ তিনি যুদ্ধ রহিত করবেন। সহীহ বুখারীর একই বর্ণনায় রয়েছে وَيَضَعَ الجِزْيَةَ {ওয়া ইয়াদ্বাউল জিজিয়াতা} অর্থাৎ তিনি জিজিয়া (রাষ্ট্রীয়-ট্যাক্স) মওকুফ করবেন।

খুব গভীরভাবে চিন্তা করুন তো, শপথ বাক্য সহকারে বর্ণিত হাদীসের এই কথাগুলো যদি আক্ষরিক অর্থেই পূর্ণতা পেতে হয় তাহলে ঈসা (আ.) সম্পর্কে একই হাদীসে উল্লিখিত حكما عدلا (অর্থ ন্যায়পরায়ণ শাসক) বলতে কথিত রূপক কোনো রূহানী সত্তা উদ্দেশ্য হতে পারে কিভাবে?

আসলে যারা ইসলামকে মির্যায়ী চশমার ফাঁক দিয়ে দেখতে অভ্যস্ত কিংবা মির্যায়ী সিলেবাসের বাহিরে ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেন না, তারা মূলধারার ইসলামী শিক্ষাদীক্ষা হতে পুরোপুরি অন্ধকারেই থাকবেন, থাকাটাই স্বাভাবিক।

শেষকথা হল, এত সহজ করে বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার পরেও যেসব কাল্ট সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মতই আচরণ করতে চান তাদেরকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি। আল্লাহই উত্তম ফয়সালকারী।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

বিতিরের সালাতে উলটো তাকবীরের শরয়ী হুকুম

বিতিরের নামাজে তৃতীয় রাকাতে উল্টো নিয়ত বাঁধার সমর্থনে সহীহ হাদীস আছে কি না?

জবাব : আপনি প্রশ্ন করেছেন, তৃতীয় রাকাতে যে উল্টো নিয়ত বাঁধা হয় তা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? জবাবে বলব, জ্বী হ্যাঁ, এর সমর্থনে মোটামুটি নিচের হাদীস গুলো দেখা যেতে পারে! শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪; ইমাম আবু জা’ফর আত-ত্বহাবী (রহ.)। কিতাবটি মোট ১৬ খন্ডে প্রকাশিত। ইমাম বুখারীর দাদা উস্তাদ ইবনে আবী শায়বা সংকলিত ‘মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা’ ২/৩০৭। জুযউ রাফয়িল ইয়াদাইন ৬৮; ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ঈসমাইল আল- বুখারী (রহ.)। আস-সুনানুল কুবরা ২/২১১; ইমাম বায়হাকী (রহ.)। ইমাম আবু বাকর আহমদ ইবনে হুসাইন আল-বায়হাকী (রহ.)। এখন আপনি হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, এখানে তো সিয়াহ সিত্তা’র কোনো কিতাবই দেখতে পাচ্ছিনা! জবাবে বলব, সনদের বিশুদ্ধতার ভিত্তিতেই হাদীস গ্রহণযোগ্যতা পায়, সিয়াহ সিত্তা’র ভিত্তিতে নয়। কারণ, সমস্ত সহীহ হাদীস কিন্তু সিয়াহ সিত্তা’র ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। ইমাম বুখারী (রহ.) থেকে উদ্ধৃত আছে, তিনি বলেছেন “আমি প্রায় ১ লক্ষ সহীহ হাদীস থেকে মাত্র হাজার সাতেক (মোট হাদীস সংখ্যা ৭,৩৭৫) হাদীস সহীহ বুখারীর মধ্যে এনেছি।” উল্লেখ্য, ইমাম বুখারী তিনি তাঁর বুখারী শরীফে শুধুমাত্র সে সমস্ত হাদীসই সংকলন করেছেন সহীহ হাদীসের মাঝে যেগুলো তার নির্ধারিত শর্তে উন্নীত হয়েছে। অতএব বুঝা গেল, অসংখ্য সহীহ হাদীস সেই সিয়াহ সিত্তা’র বাহিরেও নানা কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।

মূলকথায় ফিরে এলাম, এখানে প্রশ্নটি যেরকম ঠিক সেরকমই আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব, ইনশা-আল্লাহ। তাই প্রশ্নকারী ভাইটি যেহেতু জানতে চাচ্ছেন, তৃতীয় রাকাতে উল্টো নিয়ত (এখানে ‘উল্টো নিয়ত’ শব্দের বদলে ‘রাফউল ইয়াদাইন’ অর্থাৎ দুইহাত উঠানো, লিখা উচিত ছিল – লিখক) বলে হাত বাঁধার দলিল আছে কিনা, সেহেতু তার আগে তার এই বিষয়ের জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন যে, কুনূত এটি কত প্রকার ও কী কী? রাসূল (সা.) কোন প্রকারের কুনূত কিভাবে পড়তেন এবং কোনটি সব সময় পড়তেন আর কোনটি সারা জীবনে মাত্র একবার পড়েছিলেন? তবেই পরবর্তী আলোচনা বুঝতে তার পক্ষে সহজ হবে। যাইহোক, প্রশ্নকারীর অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, কুনূত দুই প্রকার। যথা – কুনূতে নাজেলা আর অপরটি দোয়ায়ে কুনূত বা বিতিরের কুনূত। সংক্ষেপে নিচে উল্লেখ করছি। কুনূতে নাজেলা সেই কুনূত যেটি রাসূল (সা.) সারা জীবনে একবার পড়েছিলেন এবং ফজরের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে রূকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় পড়েছিলেন। তারপর বিতিরের কুনূত। এটিকে দোয়ায়ে কুনূতও বলা হয়। আলোচ্য প্রশ্নমতে উত্তরে আসার আগে আমাদের যেই বিষয়টি পরিষ্কার করা জুরুরি সেটি হল, দোয়ায়ে কুনূত রুকুর আগে, না পরে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে, এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে ইজতিহাদগত মতের ভিন্নতা রয়েছে। হানাফী মাযহবের ফকিহগণ বলেছেন, রুকুর আগে পড়তে হবে। এর দলিল হল, সহীহ বুখারী (১/১৩৬) ‘বাবুল কুনূত কাবলার রুকু ওয়া বা’দাহ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আছে, আসিম আহওয়াল (রহ.) হতে বর্ণিত আছে, سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، عَنِ الْقُنُوتِ؟ فَقَالَ: قَدْ كَانَ الْقُنُوتُ، قُلْتُ: قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قُلْتُ: فَإِنَّ فُلَانًا أَخْبَرَنِي عَنْكَ، أَنَّكَ قُلْتَ : بَعْدَ الرُّكُوعِ، فَقَالَ: كَذَبَ، إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا অর্থাৎ আমি আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কুনূত আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকুর আগে, না পরে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, জনৈক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেন? তিনি বললেন, সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী করীম (সা.) শুধু এক মাস কুনূত (কুনূতে নাজেলা) পড়েছেন। (অনুবাদ শেষ হল)।

তবে রুকুর পরে কুনূতের কথাও হাদীসে আছে। হানাফী ফকিহগণ উভয় বর্ণনার মাঝে সমন্বয় এভাবে করেন যে, কুনূতে নাযেলা রুকুর পরে ও বিশেষ বিশেষ অবস্থায় পড়া হবে। আর বিতিরের কুনূত রুকুর আগে ও সব সময় পড়া হবে। কেননা, আনাস (রা.) থেকেই অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমৃত্যু কুনূত পড়েছেন। (দেখুন, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৩৯) এই বর্ণনায় বিতিরের কুনূতই উদ্দেশ্য। কারণ ফজরের কুনূত সর্বদা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এবার কুনূতের আগে উল্টো তাকবীর অর্থাৎ রাফউল ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন) সম্পর্কে বলব। এই পর্যায় তৃতীয় রাকাতে কুনূত পড়ার দলিল তো পেলেন। এবার কুনূতের আগে উল্টো তাকবির (অর্থাৎ রাফউল ইয়াদাইন) করার প্রমাণ আছে কিনা দেখা যাক। হ্যাঁ, এ সম্পর্কে ত্বাহাবী শরীফের ভাষ্যমতে বুঝা যায়, যারা উপরোক্ত হাদীস সমূহের ভিত্তিতে রুকুর আগে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের নিকট কিরাত এবং কুনূতের মাঝে (উল্টো) তাকবীর বলা সুন্নাত। এই তাকবীরের সাথে রাফউল ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন) আছে। যেমন ইমাম ত্বাহাবী (রহ.) লিখেছেন وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها অর্থাৎ যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা বা ঐক্যমত্য রয়েছে যে, এই তাকবীরের সাথে রাফউল ইয়াদাইনও করতে হবে।’ (ত্বাহাবী শরীফ ১/৩৩২)। আরব বিশ্বের প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল উসাইমিন (রহ.)-এর ফতুয়া এই যে, তিনি লিখেছেন, وكذلك صح عن أمير المؤمنين عمر بن الخطاب رضي الله عنه رفع اليدين فِي قنوت الوتر ، وهو أحد الخلفاء الراشدين الذين أمرنا باتباعهم অর্থাৎ তেমনিভাবে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা.) সম্পর্কে বিশুদ্ধসূত্রে উল্লেখ আছে, বিতিরের কুনূতের মধ্যে তিনি রাফউল ইয়াদাইন (উল্টো নিয়ত) করতেন। অধিকন্তু তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের অন্যতম ছিলেন যাদের আনুগত্য করার ব্যাপারে আমরা আদিষ্ট। (দেখুন, মাজমুউল ফাতাওয়া ১৪/১৩৬)। এরপর সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে কিছু দলিল উল্লেখ করব। কেননা, সাহাবায়ে কেরামের আমল নিশ্চয় নবী করীম (সা.)-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত আমল। নিচে দলিলসহ উল্লেখ করছি।

(১) আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক (রহ.), আসওয়াদ (রহ.) এবং ইবনে মাসউদ (রা:)-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لا يَقْنُتُ إلا فِي الْوِتْرِ وَ كَانَ يَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ يُكَبِّرُ إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَتِهِ حِينَ يَقْنُتُ অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) শুধু বিতির নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় [উল্টো] তাকবীর দিতেন। (শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭)।

(২) ইমাম বুখারী (রহ.) তিনিও তাঁর রচিত একটি কিতাব ‘জুযউ রাফয়িল ইয়াদাইন’ এর ৬৮ নং পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করেছেন عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت অর্থাৎ আবু উছমান বলেছেন ‘উমর (রা.) কুনূতের মধ্যে রাফউল ইয়াদাইন [অর্থাৎ উল্টো তাকবীর] করতেন। তারপর ইমাম বুখারী (রহ.) তার উল্লিখিত হাদীসটির সনদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেন هذه الأحاديث صحيحة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم و أصحابه অর্থাৎ এই হাদীসগুলো রাসূল (সা.) আর তাঁর সাহাবীদের পক্ষ হতে সহীহ তথা বিশুদ্ধ।

(৩) ইমাম বায়হাকী (রহ.) উল্লেখ করেছেন إن عدداً من الصحابة رضي الله عنهم رفعوا أيديهم في القنوت অর্থাৎ নিশ্চয় সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই কুনূতের মধ্যে রাফউল ইয়াদাইন [অর্থাৎ উল্টো তাকবীর] করতেন।’ (দেখুন, আস-সুনানুল কুবরা ২/২১১; ইমাম বায়হাকী রহ: সংকলিত হাদীসের অন্যতম কিতাব)।

রাফউল ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন)’র পর হাত কী করবে? এর জবাবে বলা হয়েছে যে, এর তিনটি পদ্ধতি হতে পারে। যথা – (১) দোয়ার মতো হাত উঠিয়ে রাখবে (২) রাফউল ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন) করার পর কওমার মত হাত ছেড়ে দিবে (৩) রাফউল ইয়াদাইনের পর দাঁড়ানো অবস্থার মত দুই হাত বেঁধে নিবে। প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ফকিহগণের নিকট পছন্দনীয় নয়। কেননা, যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম কিন্তু নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। সুতরাং দোয়ায়ে কুনূতের সময়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। এজন্যই ইবনে উমর (রা.) এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন। তিনি বলেন : أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة ما فعله رسول الله ﷺ غير شهر ثم تركه أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله ﷺهذا قط فرفع يديه حيال منكبيه অর্থাৎ দেখ! তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাঁড়াও, আল্লাহর কসম! এটা বিদআত। নবী (সা.) তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ! তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়, আল্লাহর কসম; এটিও বিদআত। নবী (সা.) তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন। (আল-মু’জামুল কাবীর লিত-তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)। উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী করীম (সা.) কুনূতের জন্য যদিও রাফউল ইয়াদাইন [অর্থাৎ উল্টো তাকবীর] করতেন কিন্তু দোয়ার মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত; তো রুকুর আগের অবস্থা যেহেতু দাঁড়ানো অবস্থা, আর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধা সুন্নত, তাই এ সময়ও হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাজেলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয়; তাই এটিও (কুনূতে নাজেলা) হাত না বেঁধে বরং ছেড়ে দেয়া অবস্থাতেই পড়া হবে। সংক্ষেপে এইটুকু লিখলাম। নতুবা আরো অনেক দলিল দেয়া যেত। আল্লাহ আমাদের মুহাম্মদে আরাবীর আনীত সহীহ দ্বীন বুঝার তাওফিক দিন। আমীন।

লিখক ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

সম্মিলিত মুনাজাতের শরয়ী হুকুম

সম্মিলিত মুনাজাত, পর্যালোচনা ও সমাধান :

ফরজ সালাতের পরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) সম্মিলিত মুনাজাত করেছিলেন মর্মে কোনো হাদীস বা রেওয়ায়েত সহীহ সনদে পাওয়া যায়না, একথা সঠিক। কিন্তু তিন শর্তে এধরণের সম্মিলিত মুনাজাত বড়জোর জায়েজ হতে পারে। তবে যেহেতু সুন্নাত নয় সেহেতু মাঝেমধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মুনাজাত ছেড়ে দেয়া উত্তম। যাতে অন্যরা এটিকে জরুরি মনে না করে।

• তিনটি শর্ত হল :
১. ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে জরুরী মনে করা যাবেনা।
২. সম্মিলিত মুনাজাতকে নামাযের অংশ মনে করা যাবেনা।
৩. সম্মিলিত মুনাজাত ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না, এরূপ আকিদা রাখা যাবেনা।

  • সতর্কতা : ফরজ সালাতের পর মুনাজাতের শরয়ী বিধান থাকা প্রমাণ করতে কেউ কেউ ‘মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ’ {مصنف ابن أبى شيبة} থেকে একখানা হাদীস পেশ করে থাকেন। আসলে ইনসাফের দৃষ্টিতে তাকালে হাদীসটির কোনোই গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত নয়। কেননা হাদীসের মতনে مضطرب বা বিশৃঙ্খল সৃষ্টি হয়ে আছে। কারণ ইমাম ইবনে হাযম (রহ.) সংকলিত ‘আল মুহাল্লা‘ কিতাবে বর্ণনাটিতে ورفع يديه ودعا অংশটুকু নেই। এতদ্ব্যতীত ইমাম ইবনে আবী শাইবাহ (রহ.)-এর সংকলন ‘মুসান্নাফ‘ কিতাবে বর্ণনাটি বর্ণিত হয়েছে সনদ (সূত্র) বিহীন। ফলে বর্ণনার কথাটি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর মুখনিঃসৃত হওয়া সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়না। অন্তত জঈফ বা দুর্বল পর্যায়ের হলেও কোনোমতে ফাজায়েল বা আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেত। এবার বর্ণনাটির মতন সহ অর্থ পড়ুন, হযরত আসওয়াদ আল আ’মেরী {الأسود العامري} (রা.) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, صليت مع النبي صلي الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انحرف ورفع يديه و دعا অর্থাৎ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাম ফেরানোর পর পাশ ফেরালেন এবং দুই হাত তুলে দোয়া করলেন। (তিরমিজি শরীফের আরবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযী খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ১৬৮, শায়খ আল্লামা আবদুর রহমান মুবারকপুরী (১৮৬৫-১৯৩৫ খ্রি.)।

তবে হ্যাঁ, সাধারণভাবে সম্মিলিত মুনাজাতকেও যারা নাজায়েজ বা বিদয়াত বলতে চান তারা নিঃসন্দেহে ভুলের মধ্যে রয়েছেন। কারণ, একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারাই সাধারণভাবে সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজ, প্রমাণিত। আর এটি এখন আমাদের আহলে হাদীসবন্ধুরাও কার্যত মেনে নিয়েছেন। কেননা আমরা দেখেছি, ১৬ ই অক্টোবর ২০২১ ইং মুতাবেক সাভারের বাইপাইলে জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর দশম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনটির নতুন সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদক ড. শহীদুল্লাহ খান মাদানী মনোনীত হন। অনুষ্ঠানে তখন সবাইকে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতেও দেখা গিয়েছে। (দৈনিক ইনকিলাব, ১৭-১০-২০২১)। এবার তাহলে একজন সাহাবীর একটা ঘটনা বলি, শুনুন!

(১) আল্লাহর প্রিয় একজন সাহাবী ছিলেন, নাম আ’লা বিন হাযরামী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি একজন ‘মুস্তাজাবুদ দাওয়া’ সাহাবী ছিলেন। একবারের ঘটনা,  তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা বাহরাইনের জিহাদ থেকে মদীনা ফেরার পথে একস্থানে যাত্রাবিরতি করলেন। ইত্যবসরে তাঁদের একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল, তাঁদের উটগুলো তাদের রসদপত্রসহ হঠাৎ কোথাও পালিয়ে গেল। তখন গভীর রাত। তাদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিলনা।  ফজরের সময় হল। মুয়াজ্জিন আজান দিল। সবাই জামাতে সালাত আদায় করলো। সালাত শেষে নবীজী (সা.)-এর প্রিয় সাহাবী হযরত আ’লা বিন হাযরামী উপস্থিত সাথীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত শুরু করলেন। আল্লাহর সমীপে কাকুতি মিনতি সহকারে এমন মুনাজাত করলেন সূর্য উদিত হয়ে গেল, সূর্যের কিরণ এসে গায়ে পড়ল, তাদের সম্মিলিত মুনাজাতটি এত দীর্ঘ ছিল। সাহাবীদের সম্মিলিত মুনাজাতের এই ঘটনাটি ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বিশুদ্ধ সনদে তার সংকলন ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ এর ষষ্ঠ খণ্ডের ৩২৮-৩২৯ নং পৃষ্ঠায় এনেছেন। হাদীসটির আরবী সংক্ষেপে – فلمَّا قَضَى الصَّلاة جَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَجَثَا النَّاس، وَنَصِبَ فِي الدُّعاء وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَفَعَلَ النَّاس مِثْلَهُ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ

(২) সম্মিলিত মুনাজাতের প্রচলিত আমলের জায়েজের পক্ষে একদম টাটকা বিশুদ্ধ সনদে আরেকটি বর্ণনা এরকম, নবীজী (সা.)-এর আরেকজন সাহাবী ছিলেন, হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, (আরবী) لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ  অর্থাৎ “যখনি কোনো দল একত্র হয়, তারপর তাদের কেউ দোয়া করে, আর কেউ আমীন বলে, তখন আল্লাহতালা তাদের সে দোয়া কবুল করেন”। (রেফারেন্স, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮)। তাহকীক, ইমাম নূরুদ্দীন আল-হায়ছামী (রহ.) বলেন, (আরবী) وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ অর্থ- উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহ’র রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং ১৭৩৪৭)।

আপাদত এ পর্যন্ত। শেষ কথা হল, এ সমস্ত সাধারণ বিষয়ে মুসলমানদের ঝগড়াঝাটি করা এখন মোটেও সমুচিত নয়। এখন উম্মাহার সামনে অনেক বড় বড় বিপর্যয়। এখন আমল নিয়ে যতটা চিন্তার বিষয় তার চেয়ে কোটিগুণ বেশি ঈমান টিকিয়ে রাখার বিষয়। কাজেই আসুন, ঈমান আকীদার সংগ্রামে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, ছোটোখাটো বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে সময় নষ্ট না করি।

লিখক, প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ইলিয়াসি তাবলীগ

ইলিয়াসি তাবলীগ

(১) আহ! মানুষ কতটা দলান্ধ আর ব্যক্তি-অন্ধ হলে দ্বীনের এই আজীমুশশান খেদমতকে ইলিয়াসি তাবলীগ বলে কটাক্ষ করতে পারে! আল্লাহ এ সব ভাইদের হিদায়াত দিন। আমার ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ চটকদার বাচনভঙ্গিতে আরও বলে থাকেন—তাবলীগ মানি কিন্তু ইলিয়াসি তাবলীগ মানিনা। আমি সেসব ভাইদের ঐ একই বাচনভঙ্গিতে যদি পালটা প্রশ্ন করি, মনে করুন কেউ বলল, আমরা আল্লাহর ইসলাম মানি, মোল্লার ইসলাম মানিনা! আমরা নবীর হাদীস মানি, বুখারী মুসলিমের হাদীস মানিনা! আমরা নবীর সালাত মানি, শায়খদের লেখিত কিতাবের সালাত মানিনা। এইবার আহেন, জবাব দেন! জবাব দিতে না পারলে হুদামিছা এই সমস্ত ভাঙ্গা টেপ রেকর্ড বাজানো বন্ধ রাখুন! মওলানা ইলিয়াস সাহেব তো তাবলীগের খেদমতকে সহজসাধ্য করতে গবেষণাধর্মী একটা তারতীব (ডিসিপ্লিন) দিলেন মাত্র, যেমনিভাবে আজানের আওয়াজকে আরও বেশি উচ্চতায় পৌঁছাতে আমরা মাইকের প্রচলন করি।

(২) ইজতিমাহ-কে বিদয়াত বলা হঠাৎ থেমে গেল কেন? আমি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েও রীতিমতো টাস্কি খাইলাম….। তাবলীগ জামাতের “বিশ্ব ইজতিমাহ“-কে (বিশ্ব সম্মেলন) বিদয়াত বলতেন যারা তাদেরকেও আমরা একটি সময়ের ব্যবধানে “ইজতিমাহ” করতে দেখেছি। যদিও তা বেরেলী-রেজভী মাসলাকের ভাইদের ক্ষেত্রে “সুন্নী ইজতিমাহ” নামে (রাজধানীর এয়ারপোর্টে সিভিল এভিয়েশনের প্রায় একশ’ একর খোলা ময়দানে- ০৬ মার্চ ২০১৯ ইং) আর আহলে হাদীস মাসলাকের ভাইদের ক্ষেত্রে “তাবলীগী ইজতিমাহ” নামে ছিল (রাজধানীর সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২৭-২৮ জানুয়ারী ২০২২ ইং)! আমাদের আহলে হাদীস ভাইয়েরা খুব চালাক, উনারা ইদানীং “ইজতিমাহ” (আরবী) শব্দ হঠাৎ বাদ দিয়ে সেটির প্রতিশব্দ কনফারেন্স বা Conference (ইংলিশ) শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন! হায়রে আমাগো মুমিন মুসলমান ভাই-বেরাদার! কেউ নাচায় আর কেউ নাচি..! যত দোষ নন্দ ঘোষ।

অপ্রিয় হলেও সত্য, এগুলো প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুনা। এইসব কারণে আজ সারা দেশে মুসলমান নিজেরা নিজেদের সাথে মারামারি, দাঙ্গাহাঙ্গামা আর তর্কবিতর্কে লিপ্ত, আর ঐ দিকে কাদিয়ানী খ্রিস্টান মিশনারীরা ময়দান ফাঁকা পেয়ে সহজ সরল মানুষগুলোর ঈমানের বারোটা বাজাচ্ছে! আসুন! দ্বীনের জন্য, উম্মাহার কল্যাণের জন্য সহযোগী হই, অন্তত বিরোধিতা না করি। সব পক্ষকে কথাগুলো মনে রাখতে হবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

বিনিময় নিয়ে ধর্মকর্ম

বিনিয়ম নিয়ে ধর্ম-কর্ম

না না, ট্রেডিশনাল কোনো কথা লিখতে বসিনি। একটু সমালোচনার ঢঙ্গে আবার একটু বিজ্ঞান আর যুক্তি যুক্ত সহকারে লিখব, যেখানে কুরআন সুন্নাহ থেকেও রসদ থাকবে, ইনশাআল্লাহ। যারা ইতিপূর্বে সজল রোশনদের খপ্পরে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন লিখাটি তাদের জন্য। অনেক লম্বা লিখা পাঠকদের ধৈর্য্য কুলায়না। তাই যথাসাধ্য সংক্ষেপ করে লিখব, তবু দীর্ঘ হয়ে গেলে আমি দায়ী নই। কারণ পাঠকদের তাগিদেই কিন্তু লিখতে বসেছি!

কথায় আছে, যত দোষ হুজুরের! হুজুর এত খায় কেন? হুজুর এত সাজগোছ করে কেন? হুজুরের বৌ অত সুন্দরী কেন? হুজুরের ঘর পাকা কেন? হুজুরের জামাটা এত দামী কেন? হুজুর এত দৌড়াচ্ছে কেন? হুজুর মানুষ, এত টাকা দিয়ে করবেটা কী? হুজুর ইংলিশ বলে কেন? হুজুর এত হাদিয়া নেয় কেন? হুজুর হেলিকপ্টার চড়ে কেন?….এই কেন কেন….তালিকাটা যে কবে শেষ পর্যন্ত পৌছবে আমার জানা নেই! সত্য বলতে এগুলো এক ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ। যাদের মন অতিব সংকীর্ণ এগুলো তাদের কথা। কসম করে কেউ বলতে পারবেনা, উপরের কোনো একটি “কেন?” এর ভেতর হুজুরের দোষ ধরার কোনো সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে অপর একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মত আইনী কোনো ধারা আছে কিনা, সেটাও প্রশ্ন রাখবে। চলি মূল কথায়,

সজল রোশনদের খপ্পরে পড়েছেন অনেক যুবক। তারা হয়ত ভেবেছেন, সজল রোশন আমেরিকা বসে বসে যেগুলো ইউটিউবে আপলোড দিচ্ছেন তা তার নিজের আবিষ্কার। আসলে সজল রোশন সহ আরও যতজনের নাম বলিনা কেন প্রায় প্রত্যেকে ইসলামী ইতিহাস এবং কুরআনের তাফসির আর উসূলে হাদীস বিষয়ে পুরোদস্তুর অজ্ঞ ও নেহাত মূর্খ তো বটে, সে সাথে চরম মিথ্যাবাদীও। আমি তার অনেকগুলো ক্লিপ দেখেছি। তার আলোচনার সাথে আমি আমার সুদীর্ঘ ১৬ বছরের একাডেমিক শিক্ষা-দীক্ষার কোনো রকম মিল খোঁজে পাই না। তারা হাদীসকে পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহের মুখোমুখি দাঁড় করে যে কায়দায় হাদীসের উপর আঙুল উঠায়, সেই একই কায়দায় কুরআনের আয়াতকেও অপরাপর আয়াতের মুখোমুখি দাঁড় করে নাস্তিক আর খ্রিস্টান মিশনারীরাও কুরআনকে বাতিল করার জোর চেষ্টা চালায়। কাজেই সজল রোশনদের উদ্দেশ্যমূলক এ সমস্ত ভুজুংভাজুং যুক্তি থেকে যারা সবক নিচ্ছেন তাদের উচিত, ইসলামের মূলধারার শিক্ষা-দীক্ষায় ফিরে এসে ইসলামকে আহলে সুন্নাহর স্কলারদের নির্দেশিত পন্থায় বুঝতে পড়াশোনা শুরু করা। বিশেষ করে কুরআনের প্রসিদ্ধ তাফসীর আর উসূলে হাদীস নিয়ে। তবেই সজল রোশনদের যাদুবিদ্যার মুখোশ উন্মোচন করতে দেরি হবেনা।

পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটির কেমন বিকৃত উপস্থাপন দ্বারা দরাকে সরা বানিয়ে সজল রোশনরা সাধারণদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে, দেখুন। প্রথমে আয়াতের আরবী অংশ সহ সঠিক অনুবাদ, আল্লাহতালা বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَ الرُّہۡبَانِ لَیَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَ الۡفِضَّۃَ وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ অর্থ, হে মুমিনগণ! নিশ্চয় অনেক পন্ডিত-পুরোহিত মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় উপায়ে ভক্ষণ করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। [১] আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও (কুরআন/৯:৩৪)। [২]

সংক্ষিপ্ত তাফসীর,

[১] أحبَار শব্দটি حِبْر এর বহুবচন। এটা এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে কথাকে খুব সুন্দর করে পেশ করার দক্ষতা রাখে। আর সুন্দর ও নকশাদার পোশাককেও ثَوبٌ مُحَبِّر বলা হয়ে থাকে। এখানে উদ্দেশ্য ইয়াহুদী উলামা। رُهبَان শব্দটি رَاهِب এর বহুবচন যার উৎপত্তি رهبنة শব্দ থেকে। এ থেকে উদ্দেশ্য নাসারা উলামা। কারো কারো নিকটে এ থেকে উদ্দেশ্য হল, নাসারাদের সুফীগণ। উলামার জন্য তাদের নিকট বিশেষ শব্দ قسّيسين রয়েছে। এই উভয় শ্রেণীর ধর্মধ্বজীরা এক তো আল্লাহর কালামকে বিকৃত ও পরিবর্তিত করে লোকদেরকে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক ফতোয়া ও বিধান দিত এবং এইভাবে তাদেরকে আল্লাহর পথ হতে বাধা প্রদান করত। আর দ্বিতীয়তঃ এই পন্থায় তারা তাদের নিকট হতে অর্থ উপার্জন করত; যা তাদের জন্য হারাম ও বাতিল ছিল।

[২] আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন যে, এটা যাকাত ফরয হওয়ার পূর্বের আদেশ। যাকাতের হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পর যাকাত দ্বারা আল্লাহ তাআলা মাল-ধনকে পবিত্র করার মাধ্যম বানিয়েছেন। এই জন্য উলামাগণ বলেন, যে মাল থেকে যাকাত বের করা হবে সে মাল (আয়াতে নিন্দনীয়) ‘জমা করে রাখা’ মাল নয়। আর যে মাল থেকে যাকাত বের করা হবে না, সে মালই হবে ‘জমা করে রাখা’ ধনভান্ডার; যার জন্য রয়েছে এই কুরআনী ধমক।

  • প্রশ্ন হল, আয়াতের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে হাদীস অস্বীকারকারী মিশনারী সদস্য সজল রোশনরা যেগুলো বললেন অর্থাৎ ইমামতি, মুয়াজ্জিনি, মক্তব-মাদরাসায় পড়িয়ে, ওয়াজ করে বিনিময় গ্রহণ হারাম বা কুরআনী শিক্ষার পরিপন্থী ইত্যাদি; এসবের সাথে পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াতের الۡاَحۡبَارِ وَ الرُّہۡبَانِ শব্দদ্বয়ের সম্পর্ক কোথায়? (পোস্টের লিংক) এটা তো এক জায়গার পানি আরেক জায়গায় ঢালা হল! কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে কি সজল রোশনদের এ সমস্ত তেলেসমাতি ধরতে পারা সম্ভব!?

পাঠকবৃন্দ! কুরআনের উপর একাডেমিক শিক্ষা যার নেই তার পক্ষেই সম্ভব এরকম কিছু আয়াত কালেক্ট করে নিজের মতকে আয়াতের উপর চাপিয়ে দেয়া। কোনো ঘটনার যেমন প্রেক্ষাপট থাকে তেমনি আয়াতগুলোর সাথেও নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট আর শর্ত যুক্ত রয়েছে। যেজন্য সজল রোশনদের দৃষ্টিতে আয়াতগুলো মুক্ত অর্থে ধর্ম-কর্ম-এর বিনিময় গ্রহণকে নিন্দা করার নির্দেশ দিলেও বিশেষজ্ঞ মুফাসসিরগণের দৃষ্টিতে এগুলো ভিন্ন রকম তাৎপর্য ও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর মাযহাবের মুফতাবিহি কওল সহ প্রায় সকল মুজতাহিদ ইমামের মতে, ইসলামি খিলাফত যখন কায়েম থাকবেনা তখন স্থানীয় মুসল্লিদের উপরই দায়িত্ব বর্তাবে সালাতের ইমামতের জন্য বেতনভুক্ত একজন নিয়মিত ইমাম নিয়োগ দেয়া। নইলে ফরজ সালাতের জামাতের শৃঙ্খলা অটুট থাকবেনা।

দেখুন, হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার, ইবনে আবেদীন আশ-শামী (আরবী) ৬/৩৩৯,

قال في الهداية: وبعض مشايخنا رحمهم الله تعالى استحسنوا الاستئجار على تعليم القرآن اليوم لظهور التواني في الأمور الدينية، ففي الامتناع تضييع حفظ القرآن، وعليه الفتوى اه‍. وقد اقتصر على استثناء تعليم القرآن أيضا في متن الكنز و مواهب الرحمن وكثير من الكتب، وزاد في مختصر الوقاية ومتن الاصلاح تعليم الفقه، وزاد في متن المجمع الإمامة، ومثله في متن الملتقى ودرر البحار، وزاد بعضهم: الأذان والإقامة والوعظ، وذكر المصنف

সারকথা হল, ইসলামী শরীয়াহ’র বিশেষজ্ঞগণ কতেক ধর্মকর্মে বিনিময় বা اجرة নেয়া বৈধ বলেছেন কেবল ঐ সব ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে, যা ضروريات دين তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। যেমন, দ্বীন শিখানো (মক্তব-মাদরাসা), ইমামতি, মুয়াজ্জিনি, ওয়াজ-মাহফীল। এছাড়া আর কোনো ধরণের ধর্মকর্মে বিনিময়ে বা اجرة গ্রহণ বৈধ নয়। এ হচ্ছে, সঠিক ও মীমাসিংত মাসয়ালা।

এখন প্রশ্ন হল, সজল রোশনরা আরো যেসব আয়াত দ্বারা মুক্তভাবে ভুজুংভাজুং ব্যাখ্যা দিয়ে হারাম হারাম কইয়া মুখে ফেনা তুলছে, সে সমস্ত আয়াত কি ঐ ইসলামী শরীয়াহ’র বিশেষজ্ঞ ইমামদের সময় পবিত্র কুরআনে ছিলনা? নাকি ইমামগণ আয়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বলবেন? আমি সজল রোশনদের অনুরোধ করছি, আপনারা আমেরিকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন রেখে মসজিদগুলোর ইমামতি গ্রহণে সূরা-ক্বেরাত শুদ্ধ করে ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষালাভ করে এগিয়ে আসুন অথবা আপনাদের ফলোয়ারদের এগিয়ে আসতে বলুন। তবেই এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকবেনা, হুজুররাও আর নিজের খেয়েদেয়ে অন্যের বকুনি শুনতে হবেনা। আপনাদের জন্য শুধু শুধু ধর্মব্যবসায়ী বলে হুজুরদের মানহানি করা ও পেছনে লেগে মজা করারও প্রয়োজন পড়বেনা।

শেষ কথা হল, একাডেমিক শিক্ষা না থাকলে অবস্থা এমনি হয়। আল্লাহ এদের ধোকা থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

হাইকোর্টের রায়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত বই বাজেয়াপ্ত

0

বিচারপতি সুলতান হোসেন খান এবং বিচারপতি এ.এম মাহমুদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ ১৯৮৫ সালের ৮ই আগস্ট সর্বসম্মত রায়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত ‘ইসলামে নবুয়ত‘ নামক বইটি বাজেয়াপ্ত করে। (৪৫ ডিএলআর, ১৯৯৩)। সংবিধানের ১৯৭২ আর্টিকেলের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে ও ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৯৯(ক) অনুসারে ০৮ই-আগস্ট-১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে উক্ত রায়ের মাধ্যমে যে বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয় সেটি কাদিয়ানী মতাবলম্বী জনাব মুহম্মদ আমীর কর্তৃক বাংলাদেশ আনজুমান-ই-আহমদীয়া’র পক্ষে রচিত ছিল। উক্ত রায়ে বিজ্ঞ আদালত ৪১ নং আর্টিকেলে বলেন,

  • “আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচারের অধিকার দেশের আইন, জনশৃঙ্খলা এবং নীতি নৈতিকতার অধীন (অর্থাৎ এতে কোনো প্রকারের ধোকা, প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবেনা)। বইটিতে (ইসলামে নবুয়ত) এমন বিষয় রয়েছে যা ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বিদ্বেষপূর্ণভাবে মুসলমানদের বেশিরভাগ ধর্মীয় বিশ্বাসকে ক্ষুব্ধ করার উদ্দেশ্যেই ছিল। তাই সরকারের জন্য বইটি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ ন্যায়সঙ্গত ছিল।” (অনলাইন থেকে হাইকোর্টের নিজেস্ব ওয়েবসাইট থেকে আর্টিকেল নং ৪১ দ্রষ্টব্য)।
  • উল্লেখ্য, সুলতান হোসেন খান ছিলেন একজন বাংলাদেশী বিচারক। তিনি ১৯৯০ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতি দমন ব্যুরো ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে রূপান্তর হলে কমিশনের চেয়ারম্যান হন তিনি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। তিনি ৫ই জুলাই ২০১৫ সালে ঢাকায় স্কয়ার হসপিটালে ইন্তেকাল করেন।

Constitution of Bangladesh, 1972 Article 102

Forfeiture of book—Defect in the order is no ground for exercise of writ jurisdiction—For enforcers ment of fundamental right and for cancellation of order, the Court should look to the equity and good conscience in passing the impugned order (forfeiting the book in question). When the book contains materials justifying the government’s action, the impugned order cannot be struck down on the ground that it does not mention the facts in support of the action. ……. (5 & 7).

Code of Criminal procedure (V of 1898) Section 99A

Forfeiture of book—Government is not required to issue notice–The provision may be invoked when the writing and publishing of a book constituted a penal offence. The order of forfeiture is a preventive action requiring no notice to the author or the publisher to give them opportunity of being heard. ….. (8)

Constitution of Bangladesh, 1972 Article 102

The right to hear is a personal right–the writ petitioner being not the author or publisher of the forfeited book is not entitled to prior notice asking him to show cause against the impugned order…… (8)

Article 41

Right to profess religious–The right of the Ahmadiyya community to preach their religious beliefs is subject to law, public order and morality. The book having contained matters which are deliberately and maliciously intended to outrage the religious beliefs of the bulk of the Muslims, the Government was justified in forfeiting the book….. (11, 12, & 15)

ASM Wahidul Momin Chowdhury, Advocate —For the Petitioner.

MM Hoque, Deputy Attorney General—For the Respondent.

Judgment : Sultan Hossain khan J : This application under article 102 of the constitution as revived is directed an order dated 8.8.85 forfeiting the book in Bengali, styled “Islam-i-Nabuat” written by Moulvi Muhammed Ameer, Bangladesh Anjuman-e-Ahmadiyya, Dhaka, under section 99A of the Code of Criminal Procedure.The petitioner has alleged that the book was first written and published circulated in this country and that the forfeited book is its 10th edition. It have been stated that the views expressed in the book have not outraged the religious feeling of the Muslims of Bangladesh and has not created any ill-feeling or hatred between communities. In the petition it has been stated. “The book itself is a researchical one on religious thoughts and beliefs, i.e. a systematic investigation towards the development of Quaranic knowledge” It has been Stated that the petitioner has faith and belief in the spiritual writings as contained in the book and there is nothing in it which would create hatred or ill feeling between classes of citizens of Bangladesh and it has not outraged the religious faith or belief of any class of citizens by insulting their religious beliefs and faith. The petitioner has submitted that every citizen has a right to follow, practice and preach his own thoughts on religious beliefs and faith within the bounds of low, public order and morality and as such the order of forfeiture of the book must be held to have been made and passed illegally and without lawful authority, and should be set aside and cancelled. It has been stated, the theme in the book is purely a religious one and is based on the petitioner’s religious faiths and beliefs and that the writings in the book are expression of religious beliefs of Ahmadiyya sect of the Muslim Community ; the book cannot be said to have been written and published to promote a feeling of hatred and ill feeling between different classes of citizens of Bangladesh, or has not deliberately and maliciously intended to outrage the religious feelings of the Muslims of Bangladesh by insulting their religious beliefs. The petitioner has asserted that tolerance towards other religious faiths and belief is a fundamental basis of Islam and hence the writings and expression in the book in support of the religious beliefs of the Ahmadiyya sect of the Muslim cannot be said to be offensive as contemplated under section 99A CrPC and that the impugned order is illegal and was made and issued without any lawful authority and is of no legal effect. ((DLR [Dhaka law Reports], 45:185-86 by Justice Sultan Hossain khan and AM Mahmudur Rahman Vs Bangladesh Anjuman-e- Ahmadiyya, represented by its Secretary, Umoor-e Ama…..petitioner [Write Petition No. 407 of 1985)).

Screenshot, (Pdf)

তথ্যসংগ্রহকারী ও লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

মাহদী কাদ’আ গ্রাম থেকে বের হওয়া

একটি ভ্রান্তি নিরসন ও তাথ্যিক আলোচনা

আমার আহমদী তথা কাদিয়ানীবন্ধুরা এতই সরল যে, মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করতে উদারতার কোনো ক্রুটি করেন না। মিস্টার নরেদ্র মোদিও যদি ভুলক্রমে মির্যা কাদিয়ানীর নামের সাথে ‘ইমাম মাহদী’ বলে ফেলে তাদের জন্য প্রমাণ হিসেবে সেটিও মজবুত দলিল হয়ে যায়। আসলে একটা গোষ্ঠী অথেনটিক দলিল-প্রমাণের দিক থেকে কতটা দেউলিয়া হলে তাদের মানসিক অবস্থা এমন হতে পারে তা ভাবতেও অবাক হই! অথচ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। (১২টি সহীহ হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদীর পরিচয়)। চলুন, প্রসঙ্গে যাই…! কয়েকদিন আগের কথা। এক কাদিয়ানী কাল্ট একটা আরবী টেক্সট (يخرج المهدي من قرية يقال لها كدعه) পাঠিয়ে বললেন, এ দেখেন! হাদীস বলছে, মাহদী এমন একটি গ্রাম থেকে বেরুবে যেটির নাম হবে কাদ’আ। এর মানে কাদিয়ান নামক গ্রাম থেকে ইমাম মাহদী আবির্ভূত হবেন।

আমি কিছুক্ষণ মনে মনে হাসলাম। চিন্তা করলাম, কিভাবে বুঝাই যে এটা জাল হাদীস। শীয়া পণ্ডিত শেখ আলী হামযা আত-তূসি (১৩৮২-১৪৬২ খ্রিস্টাব্দ) (علي حمزة بن علي بن ملک بن الحسن الزمجي الهاشمي الطوسي المروزي) এর রচনা ‘জাওয়াহেরুল আসরার‘ (جواهر الأسرار) ছাড়া এইরূপ শব্দচয়নে কোথাও পাওয়া যায় না। তিনি কিতাবটির ৫৮ নং পৃষ্ঠায় উক্ত কথাটি উল্লেখ করে একই পৃষ্ঠার শেষ লাইনের আগের লাইনে ফার্সী ভাষায় সে মাহদীর পরিচয় হিসেবে লিখেছেন, (ফার্সী) نام او محمد بن حسن عسکری باشد তার অর্থ হল, “সেই মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসকারী।” স্ক্রিনশট দেখুন,

আমার আফসোস লাগে এই সরলমনা মানুষগুলোর জন্য। আহা! কত নিকৃষ্ট প্রতারণার জালে এরা বাক্সবন্দি। এই বেচারাগুলোর এ করুণ অবস্থা শুধুই ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার অভাবেই নয়, গোঁড়ামির কারণেও বলতে হয়। এরা একদিকে ঈমানের সদাই করে নিঃস্ব, আরেকদিকে কথিত ওসীয়্যতের ধাঁধায় পড়ে বেহেশতি টিকেট ইত্যাদির জাঁতাকলে নিষ্পেষিত। এখানে সাধারণ কাদিয়ানী মানুষগুলাকে আমি কয়েকটি প্রশ্ন শিখিয়ে দিতে চাই, আপনারা দয়া করে আপনাদের নেতাদের প্রশ্ন করুন যে, শীয়া পণ্ডিত আত-তূসীর রচনায় উল্লিখিত কথাটি গ্রহণযোগ্য হলে একই ব্যক্তির একই কিতাবের একই পৃষ্ঠার অপরাপর কথাগুলো কিজন্য আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি? আত-তূসীর ‘জাওয়াহেরুল আসরার’-এর কথামতে কিছুক্ষণের জন্য মানলাম যে, ইমাম মাহদীর গ্রামের নাম ‘কাদ’আ‘ (কাদিয়ান), কিন্তু একই পৃষ্ঠায় তো মাহদীর নাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসকারী-ও লিখা আছে! এখন আমরা একই ব্যক্তির বক্তব্যের কিছু অংশ গ্রহণ করলে আর কিছু অংশ বর্জন কেন করি? এটি কি সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ হয়ে গেল না?

দ্বিতীয় প্রশ্নটি করবেন, হাদীস হিসেবে প্রমাণের জন্য মতনের আগে তার সনদ (ধারাবাহিক সূত্র) থাকতে হয়। হাদীসের সবগুলো সংকলনেই সনদ উল্লেখ রয়েছে, যাতে মতনে উল্লিখিত কথাটি ভেরিফাই করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, এটি প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা.)-এর বাণী হবার গ্যারান্টি কতখানি? নতুবা যার তার কথাকে হাদীস বলে চালিয়ে দেয়া এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ থেকেই যাবে। কিন্তু শীয়া পণ্ডিত আত-তূসী রচিত কিতাবের উক্ত কথাটির কোনো সনদ নেই। তার মানে ভিত্তিহীন কথা। এখন এধরণের কোনো সনদ বিহীন আন-ভেরিফাইড কথা প্রতিপক্ষের কেউ হাদীস হিসেবে পেশ করলে তখন কি কাদিয়ানী নেতারা সেটি মেনে নেবে?

তৃতীয় প্রশ্ন হল, ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ.)-এর একটি রচনাতেও (العرف الوردي في أخبار المهدي) এধরণের কাছাকাছি একটি বর্ণনা এসেছে। ইমাম আবু যুর’আ (রহ.) সহ বহু মুহাদ্দিস বলেছেন, বর্ণনাটির অন্যতম রাবী আব্দুল ওহাব বিন আল-জাহহাক একজন মিথ্যাবাদী, সে হাদীস জাল করত। দেখুন, মীযানুল ই’তিদাল ২/৬৭৯; রাবী নং ৫৩১৬; ইমাম যাহাবী (রহ.)। এবার বর্ণনার কথাটি খেয়াল করুন, (يخرج المهدي من قرية باليمن يقال لها كرعة) এখানে পরিষ্কার করে গ্রামের নাম ‘কার’আ‘ (كَرِعَةٌ) বলা হয়েছে এবং দেশের নাম ইয়েমেন (اليمن) বলেও উল্লেখ রয়েছে। বর্ণনার অনুবাদ, “মাহদী ইয়েমেন এর কার’আ নামক গ্রাম থেকে বেরুবেন” (পৃষ্ঠা নং ৫৬ দ্রষ্টব্য)। এখন এই ‘ইয়েমেন’ শব্দের বর্ণনার কী হবে?

চতুর্থ প্রশ্ন হল, ইমাম তাবারানী’র রচনাতেও (معجم ابن المقري) শব্দটি কার’আ (كَرِعَةٌ)। মানে শব্দটি ‘কাদ’আ’ হওয়াটা সুনিশ্চিত নয়। তারপর আরেকটি শব্দ এসেছে, ইয়েমেন। তার মানে বুঝানো হয়েছে যে, (يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ مِنْ قَرْيَةٍ بِالْيَمِينِ يُقَالُ لَهَا: كَرِعَةٌ، وَعَلَى رَأْسِهِ عِمَامَةٌ فِيهَا مُنَادٍ يُنَادِي: أَلا إِنَّ هَذَا الْمَهْدِيُّ فَاتَّبِعُوهُ”) মাহদী ইয়েমেনের কার’আ নামক গ্রাম/পল্লী থেকে আবির্ভূত হবেন। সকল মুহাদ্দিস বলেছেন, সনদের বিচারে এটিও অগ্রহণযোগ্য। (পৃষ্ঠা ৮৫)। এই বর্ণনায় সনদ উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু সনদের বিচারে বর্ণনাটি সহীহ নয়। এখন এই ইয়েমেন বা কার’আ যুক্ত বর্ণনার কী হবে?

পঞ্চম প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের রচিত ‘হাকীকাতুল মাহদী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, “মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ সম্বন্ধে আমার ও আমার জামাতের বিশ্বাস এই যে, মাহদীর আগমন সংক্রান্ত এ ধরণের হাদীসসমূহ কোনো মতেই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার মতে এই গুলোর উপর তিন ধরণের আপত্তি আছে।” দেখুন, হাকীকাতুল মাহদী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ০৭; অনুবাদক সালেহ আহমদ, মুরব্বী সিলসিলাহ্ আলীয়া আহমদীয়া। প্রকাশকাল, অক্টোবর ২০০১ ইং। এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কথা অনুসারে মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ কোনো মতেই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে তখন ‘কার’আ’ বা ‘কাদ’আ’ শব্দযুক্ত বর্ণনা যার কোনো সনদও নেই, কিভাবে দলিল হতে পারে? (স্যোসাল মিডিয়া – ফেইসবুক থেকে)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

পণ্ডিত লেখরামের মৃত্যু নিয়ে আল্লাহতালার নামে মির্যার মিথ্যাচার

আল্লাহতালাকে নিয়ে মিথ্যাচার!

আর্য সমাজের জনপ্রিয় ধর্মগুরু ও পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ২০-০২-১৮৯৩ ইং ভবিষ্যৎবাণী করেছিল এভাবে যে,

اگر اس شخص پر چھ برس کے عرصہ میںؔ آج کی تاریخ سے کوئی ایسا عذاب نازل نہ ہوا جو معمولی تکلیفوں سے نرالا اور خارق عادت اور اپنے اندر الٰہی ہیبت رکھتا ہو تو سمجھو کہ میں خدا تعالیٰ کی طرف سے نہیں

অর্থাৎ এই ব্যক্তির উপর আজকের এই তারিখ থেকে আগামী ছয় বছরের মধ্যে যদি এমন কোনো আজাব নাযিল না হয়, যেটি সাধারণ যে কোনো শাস্তির উর্ধ্বে ও নজিরবিহীন (রহস্যময়) হবে আর তার অভ্যন্তরে ইলাহি ভীতি সঞ্চার করবে, তাহলে জেনে রেখো আমি খোদার পক্ষ হতে প্রেরিত নই। (রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫০-৫১)।

কিন্তু লেখরামের মৃত্যু হয় মির্যার এক দুর্বৃত্ত মুরিদের ছুরিকাঘাতে।

এবার দেখা যাক, মির্যা সাহেব দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে লেখরামের মৃত্যুকে তারই কথিত ভবিষ্যৎবাণী মুতাবেক সম্পন্ন হয়েছে বলে কিভাবে দাবী করেছিল এবং কিরকম ব্যাখ্যার পেছনে দৌঁড়ঝাপ করে গেল?

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন, (অনুবাদ) ‘স্মরণ রাখা চাই যে, লেখরাম সম্পর্কিত আমার কৃত ভবিষ্যৎবাণী বিশেষ ধরনের একটি ভবিষ্যৎবাণীই ছিল। সেখানে খোদাতালা এটাই প্রকাশ করেছেন যে, সে (লেখরাম) হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমেই মারা যাবে।’ (রূহানী খাযায়েন ১৯/১২২)।

পাঠকবৃন্দ! একটু নিরপেক্ষভাবে মির্যা সাহেবের আগের বক্তব্য আর এই বক্তব্য দুটি মিলিয়ে চিন্তা করুন তো! লেখরাম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমেই মারা গেলে তখন সেটি খারেক্বে আদত বা নজিরবিহীন আর সাধারণ যে কোনো শাস্তির উর্ধ্বে বলে বিবেচিত হল কিভাবে? মির্যা সাহেব আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত একজন ‘নবী রাসূল’ দাবী করা সত্ত্বেও এত চাতুর্যপূর্ণ মিথ্যা কিভাবে বলতে পারলেন? এটি সাধারণদের সাথে সুস্পষ্ট ধোকাবাজি নয় কি? (স্ক্রিনশট দেখুন) :-

মির্যা কাদিয়ানীর লিখায় পণ্ডিত লেখরামের মৃত্যু নিয়ে তারই ভবিষ্যৎবাণীর মধ্যে ‘খারেক্বে আদাত’-এর শর্তযুক্ত ছিল কিনা সেটি পাঠকবৃন্দ একটু আগেই দেখে এসেছেন। এবার ‘খারেক্বে আদত’ বলতে কী বুঝায় তা জেনে নিন! মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ‘খারেক্বে আদত’ (خارق عادت) এর সংজ্ঞায় লিখেছেন,

ظاہر ہے کہ جس امر کی کوئی نظیر نہ پائی جائے اسی کو دوسرے لفظوں میں خارق عادت بھی کہتے ہیں.

অর্থাৎ প্রকাশ থাকে যে, যে ঘটনা নজিরবিহীন তাকে অন্য শব্দে খারেক্বে আদতও বলা হয়। (সুরমা চশমায়ে আরিয়া, রূহানী খাযায়েন ২/৬৭)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেন,

خارق عادت اسی کو تو کہتے ہیں کہ اس کی نظیر دنیا میں نہ پائی جائے

অর্থ, খারেক্বে আদত বলা হয় যার কোনো দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/২০৪)।

এরপরেও মির্যা সাহেবের ভেল্কিবাজি বুঝতে যাদের কষ্ট হচ্ছে তাদের বিবেক জাগ্রত হোক, এই দোয়া করছি। আর যারা ব্রেইন ওয়াশ তাদের মু’আমালা আল্লাহর নিকট সোপর্দ করে গেলাম।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী