Home Blog Page 2

যার নেক নিয়ত পূর্ণ করতেই মির্যা কাদিয়ানী দুনিয়ায় আসলেন

0

মির্যা কাদিয়ানীর স্বীকারোক্তি :- বৃটিশ রাণী ভিক্টোরিয়ার নেক নিয়ত ও আকাঙ্খা থেকেই মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দুনিয়ায় আগমন,

“হে মহামহিম ভারত সম্রাজ্ঞী! আপনার মহিমা এবং সুনাম মুবারক হোক! খোদার দৃষ্টি (তথা করুণা) সে দেশের উপরই রয়েছে, যে দেশের উপর রয়েছে আপনার দৃষ্টি, খোদার রহমত (তথা সাহায্য) সে জনতার উপরই রয়েছে যে জনতার উপর রয়েছে আপনার হাত (তথা হুকুমত)। আপনার পবিত্র নিয়ত (তথা আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই আল্লাহ আমাকে (রূপক ‘মসীহ’ বানিয়ে) প্রেরণ করেছেন।”

রেফারেন্স : সেতারায়ে কায়সারিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৫/১২০, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী

পরিশেষ : কাদিয়ানীরা বলে, মির্যা গোলাম আহমদ যুগের আকাঙ্খা পূর্ণ করতেই নাকি দুনিয়ায় এসেছিলেন। অথচ মির্যা গোলাম আহমদ লিখেছেন, তিনি রাণী ভিক্টোরিয়ার নেক নিয়ত ও আকাঙ্খা পূর্ণ করতেই দুনিয়ায় এসেছেন!

আমাদের প্রশ্ন, আমরা তাহলে কার কথা সত্য মেনে নেব?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থে নবীজীর ছায়া ও নূর এর তাৎপর্য সম্পর্কে

0

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থে ‘নবী করীম (সা.)-এর ছায়া থাকা এবং তিনি আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্ট – মর্মে দলীলবিহীন ও মনগড়া যত সব আকীদার উল্লেখ রয়েছে সেসব আকীদা থেকে আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি! কারণ আমি ‘আকীদা’ এর ক্ষেত্রে শুধুই কুরআন এবং সহীহ হাদীস অত:পর মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদারই একনিষ্ঠ অনুসারী। এর বিপরীতে কোনো ব্যক্তি কী বলল তা আমার নিকট কোনো গুরুত্ব রাখেনা। হোক সে ব্যক্তি মর্যাদা ও সম্মানে অনেক বড় জ্ঞানী, কুতুবে জামান কিংবা মুজাদ্দিদে দাওরান!

মূল আলাপে আসা যাক,

মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহিমাহুল্লাহ। একজন সমসাময়িক বিজ্ঞ স্কলার ও ফকীহ। আধ্যাত্মিক ধারার একজন বিখ্যাত পীর সাহেব। উনার অন্যতম রচনা ‘এমদাদুস সুলুক’। রচনাটি আধ্যাত্মিক কনসেপ্ট এর উপরই রচিত। এর মূল ভাষা ফার্সী, সেটিকে উর্দূতে ভাষান্তর করেছেন মওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

আমি এখানে বইটির উর্দূ এডিশন এর ২০১ এবং ২০২ নং পৃষ্ঠা থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি। পাঠকবৃন্দ খুব ভালো করে উর্দূর সাথে আমার অনুবাদটি মিলিয়ে নেবেন। এখানে যে বিষয়টির আলোকপাত করতে চাচ্ছি সেটি হচ্ছে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের একটি আকীদা, যা তিনি সম্পূর্ণ মনগড়া ব্যাখ্যার আলোকে চিত্রিত করে গেছেন। তিনি লিখেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছায়া ছিলনা, তিনি আরও লিখেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনি আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হন এবং তাঁর নূর দ্বারা মুমিনগণ সৃষ্টি হন। অথচ তিনি এর সমর্থনে কোনো দলীল প্রমাণ উল্লেখ করেননি, কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকে কিছুই উদ্ধৃত করেননি। যদিও বা একজন কুতুবে জামান খ্যাত, দারুলউলুম দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় একজন মান্যবর আলেম এবং ফকীহ থেকে এধরণের দলীল বিহীন ও মনগড়া আকীদা কেউই আশা করেনা, করতে পারেনা।

আমি একজন হানাফী মাযহাবের ফলোয়ার ও মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদার অনুসারী। সে হিসেবে আমি মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের উক্ত আকীদার সমর্থন না হানাফী মাযহাবের স্বীকৃত কোনো কিতাবে পেয়েছি, আর না মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদার কোনো কিতাবে পেয়েছি, কোথাও পাইনি। বরং নির্ভরযোগ্য অসংখ্য হাদীসের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হিসেবেই দেখতে পাই। অথচ একথা কারোরই অজানা নয় যে, কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীতে শুধুমাত্র দুর্বল রেওয়ায়েত কিংবা উম্মাহার প্রধান প্রধান ইমামগণের নিজেস্ব মত দ্বারা আকীদার কোনো বিষয় কখনোই সাব্যস্ত হয়না।

এবার রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের কিতাব থেকে হুবহু অনুবাদ তুলে ধরছি। যাতে উম্মাহ তাঁর মত একজন বিশিষ্ট ফকীহ ও আল্লামার নিজেস্ব মত ও বক্তব্য দ্বারা বিভ্রান্ত না হন। মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী লিখেছেন,

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ এখানে

(এমদাদুস সুলুক পৃ-২০১ থেকে শুরু) আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ভাষায় বলেন, ((قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে নিজের নফসের তাযকিয়া ও পরিশুদ্ধি করেছে। (সূরা আ’লা আয়াত ১৪)।

অর্থাৎ মোজাহাদার তরবারি দ্বারা নফসের কামনা বাসনার কদার্যতা কেটে ফেলেছে। উল্লেখ্য সায়ের ও পরিভ্রমনের কারণে মানুষের নফস আলোকিত হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা আপন হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে বলেছেন, ((قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ)) অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়েদা আয়াত ১৫)। এখানে ‘নূর’ দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর পবিত্র সত্তা উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ((يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذْنِهِۦ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا)) অর্থাৎ হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে একজন সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, ভয়প্রদর্শনকারী, আল্লাহর দিকে তারই নির্দেশে আহ্বানকারী এবং সিরাজাম মুনীরা তথা আলোকবর্তিকা প্রদীপ স্বরূপ বানিয়ে প্রেরণ করেছি (সূরা আহযাব আয়াত ৪৬)।

‘মুনীর’ অর্থ আলোকদাতা। যিনি অন্যকে আলো প্রদান করেন। যদি অন্যকে আলোকিত করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব হতো, তাহলে এ যোগ্যতা ও কামাল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভেতরে পাওয়া যেত না। কারণ তিনি তো আদম সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আপন সত্তাকে এত পুতঃপবিত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন যে, নির্মল নূরে পরিণত হয়েছিলেন। পরন্তু আল্লাহতালাও তাঁকে ‘নূর’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রসিদ্ধ মতে সাব্যস্ত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না। অথচ দেহ বলতেই তার ছায়া থাকে। কেবল নূরেরই কোনো ছায়া থাকে না। যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নূর বা আলোকবর্তিকা ছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও নূরে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাদের কারামতের বর্ণনা দ্বারা কিতাব ভরপুর। এমনকি সেগুলো এত প্রসিদ্ধ যে, বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ((وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُ)) অর্থাৎ যারা আমার হাবীবের প্রতি ঈমান এনেছে তাদের নূর তাদের সামনে এবং ডানে ছুটাছুটি করতে থাকবে। (সূরা তাহরীম আয়াত ৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ((يَوْمَ تَرَى ٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَٰنِهِم)) অর্থ- স্মরণ কর সেদিনটি যেদিন মুমিন পুরুষ ও নারীদের দেখবে, তাদের নূর ছুটছে তাদের সামনে ও ডানে। (সূরা হাদীদ আয়াত ১২)।

(তারপর ‘এমদাদুস সুলুক‘ পৃ-২০২ থেকে শুরু) আল্লাহতালা আরো বলেছেন, ((يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ)) অর্থ- ঐ দিনকে স্মরণ কর, যেদিন মুমিনদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ছুটবে। মুনাফিকরা বলবে, একটু থামো! আমরাও তোমাদের আলো থেকে কিছু জ্যোতি নেব। (সূরা হাদীদ আয়াত ১৩)।

আলোচ্য আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ দ্বারা ঈমান ও নূর উভয়টি সাধিত হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তায়ালা আপন নূর দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন সকল মুমিনকে।”

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়াও করেছেন, “আমার পরওয়ারদিগার! আমার কান, চোখ ও কলবকে নূর বানিয়ে দিন, বরং আমাকেই নূর বানিয়ে দিন।” যদি মানুষের নফস আলোকিত হওয়া অসম্ভব হতো, তাহলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়া কখনোই করতেন না। কেননা উলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে অসম্ভব কাজের দোয়া করাও নিষেধ। হযরত আবুল হাসান নূরী (রহ.)-কে ‘নূরী’ বলার কারণ হচ্ছে, বহুবার তার থেকে নূর দেখা গিয়েছিল। এভাবে অসংখ্য আউলিয়া, সাধারণ ও শহীদের কবর থেকে নূর উঠতে দেখা যায়।

এটি মূলত তাঁদের পবিত্র আত্তারই ‘নুর’। কেননা যখন নফসের কাজ উচ্চাঙ্গের হয়ে যায়, তখন তার নূর সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর তা শরীরের মেজাজ ও স্বভাবে পরিণত হয়। এরপর যদি নফ্স শরীর থেকে আলাদাও হয়ে যায়, তবুও সে শরীর নূরের অনুরূপ উৎস ও কেন্দ্রস্থল থেকে যায়, যেমন ছিল জীবদ্দশায় নফস বাকি থাকা অবস্থায়।

(সম্পূর্ণ দুই পৃষ্ঠার অনুবাদ সমাপ্ত হল)

রেফারেন্সঃ এমদাদুস সুলুক (امداد السلوك ), ২০১-২০২, মূল লিখক মওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, উর্দূ অনুবাদ মওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

শেষকথাঃ উপরে তার দীর্ঘ আলোচনা হতে আমি যা বুঝলাম তার আলোকে বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব রাসূল (সা.)-কে ‘রূপকার্থেই নূর’ বলেছেন। নইলে তিনি একই লাইনের শেষাংশে ‘মুমিনগণ তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি’ – একথার কোনো অর্থই থাকেনা। তিনি এ ক্ষেত্রে দলীল বিহীন আরেকটি কথা লিখেছেন যে, “প্রসিদ্ধ মতে সাব্যস্ত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না।” তাঁর উপস্থাপনার ধরণ থেকে দুটি বিষয়ের যে কোনো একটি খুবই পরিষ্কার। তা হচ্ছে,

১. ছায়া ছিল না – এটি তাঁর আকীদা ছিলনা। বড়জোর তিনি ‘প্রচলিত আকীদা’ অনুসারেই এটি উদ্ধৃত করেছিলেন মাত্র। যেহেতু তিনি কোনো নস তথা গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই এটি লিখেছেন এমনকি কথার শুরুতেই ‘প্রসিদ্ধ মতে’- শব্দে শর্ত আরোপ করেছেন।

২. ছায়া ছিল না, এটি তাঁর নিজেস্ব আকীদা, আর একথাই বাস্তব বলে বুঝা যায়। যেহেতু তিনি রাসূল (সা.)-কে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আলোকে ‘নূর’ সাব্যস্ত করার ধারাবাহিকতায় ঐ কথাটুকু টেনে এনেছেন। আর শেষে লিখেছেন, “অথচ দেহ বলতেই তার ছায়া থাকে। কেবল নূরেরই কোনো ছায়া থাকে না।”

তিনি এটুকু বলেই কথা শেষ করেননি। বরং তিনি একই লাইনের শেষাংশে আরও লিখেছেন,

“যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নূর বা আলোকবর্তিকা ছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও নূরে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।”

বলাবাহুল্য যে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব তাঁর ঐ কথা দ্বারা সাধারণদের মনে একটা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেলেন। সেটি হচ্ছে, তাহলে কি একই যুক্তিতে রাসূল (সা.)-এর সকল অনুসারীর-ও ছায়া থাকেনা বলেই সাব্যস্ত হল না? অবশ্যই সাব্যস্ত হচ্ছে। নতুবা “তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও ‘নূরে’ পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন”- তার এ কথার কী অর্থ?

আসলে মওলানা গাঙ্গুহী সাহেবের উপরিউক্ত কথাবার্তাগুলো শতভাগ আধ্যাত্মিক ও রূপকার্থেই ধর্তব্য ; নইলে তাঁর উক্ত কথাবার্তায় যে পরিমাণে অসঙ্গতি বিদ্যমান, তা বলাইবাহুল্য।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ অ্যাডমিন ফিকহ মিডিয়া

তারিখ ১৫/০৫/২৪

ইস্তিসকা কী? হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া

0

ইস্তিসকার সালাত কিংবা দোয়া, কোনটি হানাফী মাযহাবের মুফতাবিহি মত? ইস্তিসকা অর্থ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা। হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া সাহেবাইন এবং জামহূরের মতের উপর, তথা ইস্তিসতার সময় দুই রাকাত সালাতের শরয়ী হুকুম হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য ৬টি গ্রন্থের অন্যতম ‘আল মাবসূত’ থেকে,

“সালাতুল ইস্তিসকার অধ্যায়। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ. বলেন, আমি (ইমামে আ’যমকে) জিজ্ঞেস করলাম : ইস্তিসকার সালাত বলতে কিছু কি আছে? তিনি উত্তরে বললেন, ইস্তিসকার মধ্যে কোনো সালাত (প্রমাণিত) নয়। বড়জোর তাতে ‘দোয়া’ রয়েছে। আমি (তারপর) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি (ইস্তিসকার) সালাতের জন্য (মানুষকে) একত্রিত হবার এবং ইমাম স্বশব্দে ক্বিরাত পড়ার মত (রায়) দেননা? তিনি প্রতিউত্তরে বলেন, না; আমি এ ব্যাপারে এ রূপ মত দিইনা। তার কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি (ইস্তিসকার) জন্য বের হন এবং দোয়া করেন। (আরও কারণ এ যে) হযরত উমর রা. (একদা ইস্তিসকার জন্য) মিম্বারে আরোহন করেন এবং দোয়া করেন এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। অধিকন্তু আমাদের নিকট ‘ইস্তিসকার সালাত’ সংক্রান্ত একটি ‘শায’[1] হাদীস ব্যতীত এমন কোনো হাদীস পৌঁছেনি যেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। (ইমাম মুহাম্মদ আরও লিখেন) তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, (ইস্তিসকার সময়) ইমাম বা গোত্রের যে কেউই নিজ (শরীরের) চাদর উল্টিয়ে (আকাশের দিকে মেলে ধরে) ‘দোয়া’ করা কি মুস্তাহাব হবে? তিনি উত্তরে বললেন, (সহীহ হাদীস পাওয়া না যাওয়ায়) এ ধরণের কাজ মুস্তাহাব হবেনা। (ইমাম মুহাম্মদ বলেন, উপরের দীর্ঘ) মতটি ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর।

ইমাম শাফেয়ীর বিশিষ্ট উস্তাদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান বলেন, আমার মতে ইমাম ইস্তিসকার সালাত পড়বে, এবং ঈদের সালাতের মতই পড়বে। খোতবার পূর্বেই সালাত আরম্ভ করবে। তবে তাতে ঈদের সালাতের মত কোনো তাকবীর বলবেনা। কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে ইস্তিসকা সংক্রান্ত সংবাদ এসে পৌঁছেছে, এমন সংবাদও এসে পৌঁছেছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. ইস্তিসকার সালাত পড়তে নির্দেশও দিয়েছেন।”

– আল মাবসূত খ-১ পৃ-২৩৬, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ.

শেষকথা, উক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে মুফতাবিহি কওল বা চূড়ান্ত ফাতাওয়া হিসেবে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমামদ্বয় ‘সাহেবাঈন’ এর মতটি-ই ধর্তব্য। আরও সহজ করে বললে, ফিকহে হানাফীর চূড়ান্ত মত হিসেবে এখানে ইমাম মুহাম্মদ এবং ইমাম আবূ ইউসুফ (عليهما الرحمة) এর মতের উপরই ফাতাওয়া। সুতরাং আর কোনো বিতর্ক রইল না। আল্লাহু আ’লাম।

টিকা : [1] শায :  হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহ. শায হাদীসের সংজ্ঞায় বলেন ((مخالفة المقبول لمن هو أولى منه)) অর্থ-মাকবুল রাবীর তার চেয়ে উত্তম রাবীর বিরোধিতা করা শায”। (আন নুযহা-النزهة পৃ-৯৮)। এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহীহ ও হাসান হাদীসের রাবী। আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সিকাহ রাবী। অর্থাৎ মাকবুল রাবী একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সিকাহ রাবীর বিরোধিতা করলে তার হাদীসকে শাস্ত্রীয় ভাষায় শায বলে। আর শায হাদীস দলীলযোগ্য নয়। ইমামে আ’যম রহ. এর বিচার বিশ্লেষণে ইস্তিসকার মধ্যে ‘সালাত’ সংক্রান্ত কোনো হাদীস বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে পৌঁছেনি, আর যে-ও একটা হাদীস পৌঁছেছিল সেটি তাঁর বিবেচনায় ‘শায’ পর্যায়ের ছিল। তাই তিনি ঐ বর্ণনার উপর নির্ভর করেননি।

লিখক ও অনুবাদক – মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

নতুন নতুন “নবী” এর কনসেপ্ট কাদিয়ানীদের বই-পুস্তকে

0

নতুন নতুন “নবী” এর কনসেপ্ট কাদিয়ানীদের বই-পুস্তকে,

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ লিখেছেন, “যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরে রাখা হয় আর আমাকে বলতে বলা হয় যে, তুমি বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোনো নবী আসতে পারেনা! তাহলে আমি অবশ্যই বলব যে, তুমি মিথ্যাবাদী ও মহা মিথ্যুক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবী আসতে পারে, অবশ্যই আসতে পারে।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৭, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা বশির একই গ্রন্থের আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখেছেন, “তারা মনে করছে যে, আল্লাহতালার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে, তাই তিনি (এখন) কাউকে কিছুই দেন না। তেমনিভাবে এও বলে যে, কোনো কেউ দুনিয়াবিরাগী এবং খোদাভীরুতায় ও তাকওয়া আর পরহেজগারীতে কতেক নবী অপেক্ষায় যতই অগ্রে পৌঁছে যায় না কেন, সে যত বেশিই খোদার মা’রেফত (দর্শন) লাভ করেনা কেন; কিন্তু খোদা তাকে কখনোই নবী বানাবেন না। তাদের এইরূপ মনে করার কারণ হচ্ছে খোদাতালার মর্যাদা বুঝতে না পারা। অন্যথা নবী শুধুই একজন কেন! আমি তো বলি, হাজার হাজার নবী হবেন।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৪, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর উপর সমস্ত সাহাবীর ইজমা হবার কাদিয়ানী দাবীর ভিত্তি কী?

0

ঈসা (আ.) সম্পর্কে ইসলামের প্রথম দুই খলীফার দৃষ্টিভঙ্গি ও সংশয় নিরসন,

সাধারণ কাদিয়ানীবন্ধুদের সম্পর্কে যখনি আলাপে যাই তখনি দুইচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আহা! এরা কতই না প্রতারণার শিকার! হায়, যদি ওরা বুঝতো!! সাধারণ কাদিয়ানীবন্ধুদের দুর্বলতা হচ্ছে, পড়াশোনা ছেড়ে তাদের মু’আল্লিম কিবা মুরুব্বী সিলসিলার কাল্টদের যাইচ্ছেতাই অপব্যাখ্যাগুলো তোতাপাখির মত গিলতে থাকা, তাহকিক না করা। ফলে তারা তাদের সূক্ষ্ম জালিয়াতিগুলোও বুঝতে পারে না। যেমন, প্রত্যেক কাদিয়ানীই হযরত উমর (রা.) সম্পর্কে বয়ান দিয়ে থাকে যে, তিনি বলেছিলেন, ‘যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাকে আমার এই তলোবারি দ্বারা হত্যা করব।’ কিন্তু হযরত উমরের একই বক্তব্যের পরের অংশটুকু কোনো কাদিয়ানী বলেনা। কেননা, তারা তাদের মুরুব্বী সিলসিলার কাল্টদের কাছ থেকেও এটুকুই শুনে আসছে। অথচ হযরত উমরের ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর (রা.) যে আয়াতটি তেলাওয়াত করেছিলেন তা হতে কাদিয়ানীরা ঈসা (আ.) বিষয়ে যে কনসেপ্ট দাঁড় করে সেটি হযরত উমরের একই বক্তব্যের পরের অংশটি দ্বারা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যায়। মূলত তারা তাদের অপব্যাখ্যামূলক উক্ত জালিয়াতি টিকানোর উদ্দেশ্যেই উমর (রা.)-এর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি পেশ করার সাহস রাখেনা।

এবার হযরত উমর (রা.)-এর একই বক্তব্যের পরের অংশটি দেখুন, তিনি আরও বলেছিলেন, ((و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى ابن مريم عليه السلام)) এর মানে হল, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে যেমনিভাবে ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” (আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/২৪; ইমাম শাহরাস্তানী)। মির্যা কাদিয়ানী হযরত উমরের বক্তব্যের শেষের অংশটি নিজেও তার বইতে লিখে গেছেন। এজন্য মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ এর খণ্ড নং ১৫ এবং পৃষ্ঠা নং ৫৮১ দেখা যেতে পারে। আফসোস! এত নিকৃষ্ট জালিয়াতি করার চরিত্র যাদের তাদের অনুসারীরা তোতাপাখির মত নির্বিঘ্নে সব বিশ্বাস করে থাকে, তাহকিক করার প্রয়োজনও বোধ করছেনা।

বলাবাহুল্য, হযরত উমর (রা.)-এর উক্ত সম্পূর্ণ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত আবুবকর (রা.) সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতটি উপস্থিত সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, ((من كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات و من كان يعبد اله محمد فانه حى لا يموت و قرأ هذه الاية و ما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ)) এর অর্থ হল, “যে মুহাম্মদ (সা.)-এর ইবাদত করে থাকে (সে যেন জেনে নেয়) মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভুর ইবাদত করে থাকে (তার জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। (তারপর) আবুবকর এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, ((وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ)) অর্থ-মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র তাহার পূর্বে রাসূলগণই গত হইয়া গিয়াছেন”। মজার ব্যাপার হল, হযরত আবুবকর (রা.)-এর উক্ত আয়াত পেশ করার ভেতরে প্রচ্ছন্ন একটি উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হচ্ছে, মুহাম্মদ (সা.) কোনো প্রভূ বা খোদা ছিলেন না যে, তাঁর মৃত্যু হতে পারেনা। তিনি শুধুই একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বেও গত হয়ে যাওয়া প্রত্যেকেই ছিলেন রাসূল। তিনিও সেসব রাসূলের মতই গত হয়ে গিয়েছেন। কাজেই তাঁর মৃত্যুতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। হযরত আবুবকর (রা.) মূলত এ ম্যাসেজটাই দিতে চেয়েছিলেন। এখন হযরত আবুবকর (রা.)-এর উক্ত আয়াতে কারীমাহ’র তেলাওয়াত হতে ঈসা (আ.)-কেও ‘মৃত’ সাব্যস্ত করতে হলে নিচের প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর থাকেনা।

১. হযরত উমর (রা.)-এর যে বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর (রা.) و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটির দীর্ঘ আলোকপাত করলেন তিনি উমরের বক্তব্যের শেষের অংশের উপর কিজন্য দ্বিমত করলেন না? তিনি তো পরিষ্কার বলে দিতে পারতেন যে, হে উমর! ঈসা নবীও মরে গেছেন! তাই তোমার এ কথাও ঠিক না। কিন্তু আবুবকর (রা.) তো এভাবে তখন বলেননি!

বলে রাখা দরকার, উল্লিখিত প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে না পেরে হয়ত ওরা বলতে পারে, “ঈসা নবীকেও সমস্ত নবীর মতই আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।” কিন্তু ওরা জানে না যে, ঈসা নবীর মত অন্য সমস্ত নবীর ‘রাফা’ (উঠিয়ে নেওয়া) হযরত জিবরাইল ফেতেশতার মাধ্যমে হয়নি, বরং আজরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে হয়েছিল। সুতরাং সব ধরণের ‘রাফা’ মুক্ত অর্থে উদ্দেশ্য হবেনা। সাধারণ কাদিয়ানীদের গোলকধাঁধাটা-ই এখানে। যথা- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন ((لَمَّا اِجْتَمَعَ الْيَهُوْدُ عَلَى عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ لِيَقْتُلُوْهُ وَ أَتَاهُ جِبْرَائِيْلُ … فاَوْحَى اللهُ اِلَى جِبْرَائِيْلَ اَنِ ارْفَعْ اِلَيَّ عَبْدِيْ)) “যখন ইহুদীরা ঈসা (আ.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে সমবেত হলো তখন জিবরাইল (আ.) তাঁর নিকট আগমন করেন…আল্লাহতালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা (ঈসা)-কে আমার নিকট উঠিয়ে নিয়ে এসো।” (তারীখে দামেস্ক ৪৭/৪৭২; তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯, সনদ সহীহ – তাহকীক শায়খ আলবানী রহ.)।

তারপর বাকি থাকল, كما رفع (কামা রুফি’আ) অর্থ ‘যেমনিভাবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে’- এখানে হযরত উমর “কামা” শব্দে রাসূল (সা.)-কে ঈসার সাথে ‘মৃত্যুবরণ না করা’-এর দিক থেকে তাশবীহ (তুলনা) করেছেন, এটুকু পরিষ্কার। আর ঈসা (আ.)-এর মতই রাসূল (সা.)-কেও ‘আকাশে’ উঠিয়ে নেয়ার তাশবীহ’র কারণ, হযরত উমর (রা.) যখন রাসূলের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পান তখন তিনি নিকটে ছিলেন না। অন্যথা তিনি রাসূল (সা.)-এর মৃত্যু শোকে যতই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হন না কেন, তিনি রাসূল (সা.) সম্পর্কেও ‘আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে’ বলে উক্তি করতেন না। কারণ ঐ মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর শরীর মোবারক আয়েশা (রা.)-এর হুজরাতে-ই বিদ্যমান ছিল! সংক্ষেপে।

২. যদি و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন’ বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে তিনি আয়াতটিতে قد خلت ধরণের ‘মুশতারিক’ (ব্যপকার্থবোধক) শব্দ রাখতেন না। তিনি মওত বা قد ماتت ধরণের খাস তথা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ-ই রাখতেন। এখন তাঁর এ ‘মুশতারিক’ শব্দ নেয়ার হিকমত কী? জেনে রাখা জরুরি যে, উক্ত আয়াতটির ‘গত হইয়া গিয়াছে’ বলতে রূপক অর্থে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে এবং সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে (উভয় পদ্ধতিতে) ইহজগত থেকে স্থানান্তরিত হওয়া-ই বুঝানো উদ্দেশ্য। এটাই আল্লাহ’র উক্ত ‘মুশতারিক’ শব্দ গ্রহণের হিকমত বা রহস্য।

৩. রাসূল (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ দ্বিতীয় কেউই ভালো বুঝার দাবী করতে পারেনা। তিনিই কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁরপর কুরআনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। ফলে সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, যদি و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন’ বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে রাসূল এবং তাঁর সকল সাহাবী কিভাবে হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমনে বিশ্বাস রাখতে পারেন?

৪. এখন হয়ত কোনো কাদিয়ানী কাল্ট বলতে পারে যে, আয়াতটির পুরাতন কোনো অর্থ বা ব্যাখ্যা সে মানবেনা। সে মির্যা কাদিয়ানী আর তার খলীফাদের কৃত অর্থই মানবে। তার জন্য তাদের প্রথম খলীফা হেকিম নূরুউদ্দীনের কৃত অনুবাদটি এখানে তুলে ধরা হল। হেকিম নূরউদ্দীনের বইতে আয়াতটির অর্থ উর্দূতে উল্লেখ আছে এভাবে যে, ((اور محمد تو ایک رسول ہے پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے پھر کیا اگر وہ مر جائے یا قتل کیا جاوے تو پھر جاؤ گے الٹے پاؤں پر (فصل الخطاب لمقدمة اہل الکتاب))) অর্থ-মুহাম্মদ তো একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে ‘বহু রাসূল’ হইয়েছিল। যদি তিনি মারা যান অথবা হত্যা হইয়া যান, তাহলে কি তোমরা পেছনে (বাপ-দাদার ধর্মে) ফিরিয়া যাইবে? (ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা ২৮; রচনাকাল ১৮৮৭-৮৮ইং দ্রষ্টব্য)। প্রিয় কাদিয়ানীবন্ধু! হেকিম নূরউদ্দীন থেকে و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটির অর্থ- (پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے-উচ্চারণ : পহেলে উস চে বহুত রাসূল হো চুকে) তথা “তাহার পূর্বে ‘বহু রাসূল’ হইয়াছিলো”। এবার পারলে এ অর্থ হতে ‘ঈসা (আ.)-কে মৃত’ সাব্যস্ত করে দেখান!

৫. তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার তাওয়াতূর স্তরীয় আকীদা কেমন তা পেশ করা হল, ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) সূরা যুখরুফ-এর ৬১ নং আয়াতের বিশ্লেষণে মুসলমানদের ধারাবাহিক (ইজমায়ী) আকীদা সম্পর্কে লিখেছেন ((وقد تواترت الأحاديث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، أنه أخبر بنزول عيسى عليه السلام قبل يوم القيامة إماما عادلا، وحَكَما مقسطا)) অর্থাৎ রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত তাওয়াতূর স্তরীয় হাদীসসমূহ সংবাদ দিচ্ছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম কিয়ামতের আগে একজন ন্যায়পরায়ণ ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসকরূপে অবতরণ করবেন। ইবনে কাসীর, ১২/৩২৩, সূরা যুখরুফ ৬১ দ্রষ্টব্য। এখন প্রশ্ন হল, উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ধারাবাহিক আকীদা পরিপন্থী و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতের সেই অর্থ কিভাবে সঠিক হতে পারে যেটি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ধারাবাহিক আকীদার বিরুদ্ধে!?

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
অ্যাডমিন- রদ্দে কাদিয়ানী (গুগল অ্যাপ)

তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

0

তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

ভূমিকা ছাড়াই শুরু করছি,

হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.)-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনের বিপরীতে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ (রহ.)-এর একক চেইনে নিচের ১১ রাকা’আতের “মতন”-এর ক্ষেত্রে কী কী ইজতিরাব (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি হয়েছে তার সামান্য নিম্নরূপ,

৬টি চেইন :

১. ইমাম মালেক বিন আনাস, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ)। মুয়াত্তা মালিক, ১/১১৫
২. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আল আনসারী, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (يَقْرَآنِ بِالْمِئِينَ)। মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ, হা/৭৬৭১
৩. ইসমাঈল ইবনে জা’ফর, প্রতি রাকা’আতে ২০০ আয়াত পড়া (يَقْرَءُونَ فِي الرَّكْعَةِ بِالْمِائَتَيْنِ)। আহাদীসু ইসমাঈল ইবনে জা’ফর, হা/৪৪০
৪. ইসমাঈল ইবনে উমাইয়্যাহ, প্রতি রাকা’আতে ১০০ আয়াত পড়া (فكانا يقومان بمائة في ركعة)। ফাওয়াইদু আবী বাকার লিন-নিশাপুরী, হা/১৬
৫. উসামা বিন যায়েদ, প্রতি রাকা’আতে কত আয়াত পড়েছিল তার পরিমাণ উল্লেখ নেই। ফাওয়াইদু আবী বাকার লিন-নিশাপুরী, হা/১৩৫
৬. আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (نَقْرَأُ فِيهَا بِالْمِئِينَ)। আল হাভি লিল ফাতাওয়া ১/৪১৬, সুয়ূতি

এবার শাস্ত্রীয় নীতিমালার ভিত্তিতে মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফের সব গুলো চেইন-এর উপর কী হুকুম আসতেছে লক্ষ্য করুন,

হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.)-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনেরই ৩টি চেইনে ২০ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, অপরদিকে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসূফের ৮টি চেইনের মধ্য হতে ১টিতে (বিতির সহ) ২১ রাকা’আত, আরেকটিতে (বিতির সহ) ১৩ রাকা’আত আর অন্য ৬টিতে ১১ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, সে সাথে ১১ রাকা’আতের ভিন্ন ভিন্ন ৪টির মতনেই ‘প্রতি রাকা’আতে কত আয়াত করে পড়া হত’ সে হিসেবেও ইজতিরাব বা গণ্ডগোল রয়েছে, তাছাড়া ৮টি চেইনের মধ্যে ৩টি চেইনেই রাকা’আত সংখ্যায় রয়েছে যথাক্রমে ২১, ১৩, ১১ পরস্পর বিরোধী কথা। যার জন্য চারো মাযহাবের সকল ইমামই ‘মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ’ সূত্রের সবগুলো চেইনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মুহাদ্দিসগণের নীতিমালায় এধরণের হাদীসের সনদে রাবীগণ ‘সিকাহ’ (বিশ্বস্ত) হলেও কিন্তু মতনের ক্ষেত্রে ‘ইজতিরাব’ থাকায় এর হুকুম শাজ ও প্রত্যাখ্যাত। উল্লেখ্য, হাদীস সহীহ হতে হলে মতন ‘শাজ’ মুক্ত থাকা আবশ্যক। আর এ ধরনের বর্ণনার মতনের উপর ফকীহগণ নির্ভর করেন না।

সায়েব বিন ইয়াজিদ-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনেরই ৩টি চেইনে ২০ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, অপরদিকে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসূফের ৮টি চেইনের মধ্য হতে ১টিতে (বিতির সহ) ২১ রাকা’আত, আরেকটিতে (বিতির সহ) ১৩ রাকা’আত আর অন্য ৬টিতে ১১ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, উক্ত ৬টি চেইনের সবগুলোর মূল-ই হচ্ছে মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ, ইমাম ইবনে আব্দিল বার আল-মালেকী (রহ.) বলেছেন, উক্ত রাবী থেকে ‘এগার’ (احدى عشرة) শব্দটি সঠিক নয়, বরং অপরাপর অসংখ্য শাওয়াহেদ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ‘একুশ’ শব্দটাই সহীহ। (আল ইসতিযকার ৫:১৫৪-৪৬)। যাইহোক, দ্বিতীয় কোনো শাহেদ (প্রমাণ) মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফের ১১ রাকা’আতকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনা। আল্লাহু আ’লাম।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

কাদিয়ানী জামাতের সাম্প্রতিক চেপে রাখা নীল ইতিহাস

0

1 ব্রিটিশ অভিবাসী লর্ড নাজির নামক কাদিয়ানী মুরুব্বীর বলাৎকারের নিউজ Zaitoon FM ((Click))

2 ব্রিটিশ অভিবাসী ও পার্লামেন্ট মেম্বার ইমরান আহমদ খান কাদিয়ানীর বলাৎকারের নিউজ Zaitoon FM ((Click))

3 মিস্টার সাইয়েদ নাসের আহমেদ ওরফে সেণ্ডি শাহ (চেয়ারম্যান- mta চ্যানেল ও কাদিয়ানী কেন্দ্রীয় মুরুব্বী) এর বলাৎকারের রিপোর্ট Zaitoon FM ((Click))

4 কাদিয়ানী মুরুব্বী ও মিশনারী সদস্য জনাব মুবিন আহমদ কর্তৃক একাধিক বলাৎকার মামলার ডকুমেন্টারি রিপোর্ট। একই সাথে তার উক্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতকে মোটা অংকের ঘুষ প্রদান করতে চেয়ে মান-ইজ্জত শেষ করেন মির্যা মাসরূর আহমদ। (প্রামাণ্য নথিপত্র সহ Click)

5 কাদিয়ানী মুরুব্বী কর্তৃক আরেক নাবালিকার সাথে বলাৎকারের মর্মান্তিক রিপোর্ট ((Click))

6 কাদিয়ানীদের সো-কল্ড তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের-এর পুত্র মির্যা লোকমানের মেয়ে ‘নিদা আন নাসের’ নিজ পিতার হাতে ধর্ষণের শিকার। শুধু তাই না, আরও নিকৃষ্ট ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ভিকটিম নিজেই। এ মামলায় কাদিয়ানী খলিফা মির্যা মাসরূর আহমদ-ও জড়িয়ে গেছেন। ব্রিটিশ প্রভাবশালী ‘ডেইলি মেইল‘ (dailymail) পত্রিকায় ছবি সহ কাদিয়ানী খলিফা মির্যা মাসরূর আহমদ কিভাবে শিরোনাম হলেন দেখুন! ((Click))

নিদা আন নাসের এর টুইট ভিডিও ১ ((Click))

টুইট ভিডিও ২ ((Click))

টুইট ভিডিও ৩ ((Click))

এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। আমরা চাচ্ছিনা, এধরণের নোংরামি চর্চা হোক। কাদিয়ানীরা মুসলমানদের চারিত্রিক দুর্বলতাগুলো নিয়ে খুব বাজে ভাবে হইহট্টগোল করে থাকে। আমরা দাবী করিনা যে, কেউই শতভাগ দোষ-ত্রুটিমুক্ত! মানুষ হিসেবে সব পক্ষেরই দুর্বলতা আছে, থাকবেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নবুওয়তের দাবীদার মির্যা কাদিয়ানীর ‘ব্যক্তিসত্তা’-কে এড়িয়ে অমুক-তমুকের সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে জল ঘোলা করার কী মানে? কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, ধূর্ত কাদিয়ানীরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হরহামেশা সে কাজটা-ই করে থাকে। তাই এখানে উদাহরণ স্বরূপ তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কিছু নীল চরিত্র তুলে ধরা হল।  

7 আহমদী-কাদিয়ানীবন্ধুরা! আপনাদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনারা তো খুব গর্ব করে বলেন যে, আপনাদের বাহিরে কেউই সত্যের উপর নেই, আপনারাই একমাত্র সত্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত জামাত। আপনারা দুনিয়ার অন্য সবার থেকে ব্যতিক্রম। আপনারা একই খলীফার অধীনে, মোবারক ও পবিত্র জামাতের সদস্য আপনারা। বিপরীতে দুনিয়ার সমস্ত অ-কাদিয়ানী মুসলমান পথভ্রষ্ট, জাহান্নামী। তাদের আলেমগণও নাকি  নিকৃষ্ট জীব (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে এখন উপরে অভিযুক্ত কাদিয়ানী শীর্ষ মুরুব্বীদের নিকৃষ্টতর চরিত্রহীন ঘটনার কী উত্তর দেবেন। এর বেশিরভাগই কিন্তু BBC নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত। 

অপ্রিয় হলেও সত্য, আপনারা নিজেদের খুব সাধু এবং পবিত্র প্রমাণ করতে আলেম উলামার দোষচর্চায়ও লিপ্ত থাকেন। কোনো আলেমের বিচ্ছিন্ন কোনো দোষ-ত্রুটি পাওয়া মাত্রই যারপরনাই হইহট্টগোল শুরু করে দেন। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, কাঁচের ঘরে বসবাস যার, তার জন্য অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়া বড্ড বিপদ!

এখন হয়ত বলবেন, ঐসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা স্বাভাবিক আর কি! অতসব হিসেবে নিলে কি চলবে? 

প্রতিউত্তরে আমার জিজ্ঞাসা, তাহলে আপনাদের অতসব গর্ব কিসের? কেন অবাস্তব যতসব আত্ম-অহংকারে ফেটে পড়ছেন! ইলাহী জামাত, ইলাহী জামাত!! কেন নিজেদের অত সাধু সাজছেন? কেন মুসলমানদের দোষচর্চায় সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকেন? আপনারা মির্যা গোলাম আহমদ আর তার কথিত ‘মুসলেহ মওউদ’ মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের রঙিন জীবন-চরিত্র কতকাল চেপে রাখবেন? ১৯৫৬ সালে আব্দুল গাফফার জম্বাহ এর নেতৃত্বে কাদিয়ানীদের নতুন ৩ নম্বর উপদল “Jamaat Ahmadiyya Islah Pasand (Hadhrat Abdul Ghaffar Janbah)” কিজন্য সৃষ্টি হল, সে ইতিহাস কি ভুলে গেলেন? মির্যা বশির উদ্দীন ইতালী নৃত্যশিল্পী মিস রূপাকে কাদিয়ানে ভাড়ায় এনে কী ঘটনা ঘটিয়েছেন তা কি দুনিয়া ভুলে গেছে? ১৯২৭ সালে মির্যা বশির উদ্দিন তারই পি.এস মিয়া জাহিদের বোন “মুসাম্মাৎ ছকিনা” নামের একজন বিবাহিতা নারীর-ও ইজ্জত লুটে নেন। তখন তার এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুরো কাদিয়ানজুড়ে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠেছিল। কী! এ ঘটনাও অস্বীকার করবেন?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মনে মনে নিজেকে ‘স্ত্রীলোক’ কল্পনা করতেন (তার মানে সে নিজেও একজন সমকামী ছিল-লিখক), যাকে আধুনিক কনসেপ্ট অনুসারে ‘ট্রান্স জেন্ডার’ বলা হয়; তারই ঘনিষ্ট শিষ্য আব্দুর রহমান মিশরীর সাক্ষ্যমতে একজন ব্যভিচারী (জেনাকার) সাব্যস্ত। এর একটিও কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না। মির্যা বশির উদ্দীন নিজ কন্যা আমাতুর রশীদকে ধর্ষণ করার ঘটনাও অস্বীকার করতে পারবেন না। হেকিম নূরউদ্দীনের পুত্র মিয়া আব্দুল ওহাবকে ‘জেহলম’ নদীর তীরে বলাৎকার করার নিকৃষ্ট সেই কার্যকলাপও অস্বীকার করতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবের কন্যা আমাতুল হাইকে বিবাহ করেছিলেন। ঐ সংসারে একজন পুত্র সন্তান জন্ম হয়। সম্ভবত তার নাম ছিল মির্যা খলিল আহমদ। আর দুইটি কন্যা সন্তান হয়। আমাতুর রশীদ আর আমাতুল কাইয়ুম। আমাতুর রশীদ ছিলেন বোনদের মধ্যে বড়। অত্যন্ত নির্লজ্জের ব্যাপার যে, মির্যা বশির উদ্দিন আপন কন্যা আমাতুর রশীদকে ধর্ষণ করেন। আমাতুর রশীদ তখনও পূর্ণ সাবালিকা হননি। নিজ স্ত্রী আমাতুল হাই এবং মির্যা বশির উদ্দিনের গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন বি.কম তারা হাতে নাতে ধর্ষণ অবস্থায় পাকড়াও করেছিলেন। উক্ত ঘটনার পর গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন চলে যান এবং তিনি ‘আহমদীয়ত’ ছেড়ে দেন। কয়েকদিন পরেই মির্যা বশিরের স্ত্রী আমাতুল হাই এর রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ বেরিয়ে আসে। তাকে যারা দেখেছেন সবাই তার চেহারা নীল বর্ণের দেখেছিলেন। তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নিজের উক্ত কুকর্ম ঢাকার জন্যই স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন। বলতে পারেন আমি এগুলো বানিয়ে বলছি। তাহলে নিচের রেফারেন্স গুলো পারলে অস্বীকার করুন![1 markajomar] 

রেফারেন্স : ১. শহরে ছদূম পৃ-৯৮, মির্যা শফিক।

২. দৈনিক আল-ফজল তাং ১৮/০৩/১৯৩৪ ইং।

৩. ইসলামী কুরবানী, ট্রাক্ট নং ৩৪, পৃষ্ঠা ১২, কাজী ইয়ার মুহাম্মদ খান। 

৪. দৈনিক আল ফজল, তাং ৩১-আগস্ট ১৯৩৮ ইং।

[1] Click

সে যাইহোক, আপনারা কাদিয়ানী হয়েছেন তাতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আপনারা আত্মপরিচয় গোপন রেখে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিতে পারবেন না। নবী দাবীদার মুলহিদ মির্যা গোলাম আহমদের অনুসারী হয়ে নিজেদের ‘মুসলমান’ পরিচয় দিতে পারবেন না। যেহেতু আত্ম-পরিচয় গোপন করে মানুষকে ইসলামের নামে ‘কাদিয়ানীধর্মে’ কনভার্ট করা এবং খতমে নবুওয়তের আকীদাকে অস্বীকার করে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দেয়া, এগুলো সুস্পষ্ট ধোকা এবং রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ। আল্লাহ আমাদেরকে সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

তাফসীরুল কুরআন থেকে ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমন সংক্রান্ত সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ

0

মুফাসসীরগণ সম্পর্কে মির্যা গোলাম আহমদ লিখেন, আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনকে এমন সব ইমাম আর আকাবীরগণের মাধ্যমেও (সংরক্ষণ করেন) যাদেরকে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে কুরআনের সঠিক বুঝ দান করা হয়েছে, তারা কুরআন শরীফের অস্পষ্ট জায়গাগুলো নবীজির হাদীসসমূহ দ্বারা তাফসীর করে খোদার পবিত্র বাণীকে এবং পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগে অর্থগত বিকৃতি হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।” (আইয়ামুছ ছুলহি, রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)। কাজেই এখন আর কোনো কাদিয়ানী মতাবলম্বীর পক্ষে কুরআনের সঠিক তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য ‘তাফসীর’ গ্রন্থসমূহের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করার সুযোগ থাকেনি।

তাফসীরুল কুরআন থেকে দলিল-প্রমাণ,

1 তাফসীরুল ওয়াসীত-শায়খ মুহাম্মদ সাইয়েদ আত-তানত্বাভী (الوسيط لطنطاوي), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وجمهور العلماء على أن الله تعالى رفع عيسى إليه بجسده وروحه لا بروحه فقط)) অর্থাৎ সর্বসম্মত ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের মতে, নিশ্চয়ই আল্লাহতালা ঈসা (আ.)-কে শুধুই রূহ সহকারে নহে, বরং শরীর এবং রূহ উভয় সহকারে তাঁর নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন।

2 তাফসীরে ইবনে কাসীর-ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (ابن كثير), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قال ابن أبي حاتم : حدثنا أحمد بن سنان، حدثنا أبو معاوية، عن الأعمش، عن المنهال بن عمرو، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس قال : لما أراد الله أن يرفع عيسى إلى السماء، خرج على أصحابه – وفي البيت اثنا عشر رجلا من الحواريين ……. فألقي عليه شبه عيسى ورفع عيسى من روزنة في البيت إلى السماء. وهذا إسناد صحيح إلى ابن عباس)) অর্থাৎ ইবনে আব্বাস থেকে, তিনি বলেন, আল্লাহ যখন ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন, তখন তিনি আপনা সাথীদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তখন তাঁর বাড়ীতে বারোজন হাওয়ারী ছিলেন……..ইত্যবসরে জনৈক ইহুদীকে ঈসার সাদৃশ করে দেয়া হয় এবং ঈসাকে বাড়ীর বাতায়ন পথে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। ইবনে আব্বাস পর্যন্ত এর সনদ তথা সূত্র সহীহ।

3 তাফসীরে কুরতুবী-ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবী (القرطبى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((بل رفعه الله إليه ابتداء كلام مستأنف؛ أي إلى السماء)) অর্থাৎ বরং আল্লাহ তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।

ইমাম কুরতুবী (রহ.) আরও উল্লেখ করেন, ((وروي عن مجاهد أنه قال : ما من أحد من أهل الكتاب إلا يؤمن بعيسى قبل موته ؛ فقيل له : إن غرق أو احترق أو أكله السبع يؤمن بعيسى؟ فقال : نعم ! وقيل : إن الهاءين جميعا لعيسى عليه السلام ؛ والمعنى ليؤمنن به من كان حيا حين نزوله يوم القيامة ؛ قال قتادة وابن زيد وغيرهما واختاره الطبري)) অর্থাৎ মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈসার মৃত্যুর আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। প্রশ্ন করা হল, যদি সে ডুবে যায় বা জ্বালিয়ে দেয়া হয় অথবা চতুষ্পদ জন্তু খেয়ে ফেলে তখনও কি বিশ্বাস স্থাপন করবে? তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ। বলা হয়েছে যে, আয়াতে উল্লিখিত উভয় সর্বনাম পদ ঈসা (আ.)-এর প্রতিই প্রত্যাবর্তনকারী। এখন এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রত্যেক ঐ আহলে কিতাবী অবশ্যই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, যিনি কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে তাঁর অবতরণকালে জীবিত থাকবে। ইমাম ক্বতাদাহ, ইবনু যায়েদ উভয়ই এরূপ বলেছেন। ইমাম তাবারী (রহ.) এ মতটি গ্রহণ করেছেন।

4 তাফসীরে তাবারী-ইমাম আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত তাবারী (الطبرى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قال أبو جعفر: أما قوله جل ثناؤه : “بل رفعه الله إليه”، فإنه يعني: بل رفع الله المسيح إليه. يقول: لم يقتلوه ولم يصلبوه، ولكن الله رفعه إليه فطهَّره من الذين كفروا)) অর্থাৎ আল্লাহতালার ফরমান : بل رفعه الله إليه এর তাৎপর্য হল, বরং আল্লাহ মসীহ-কে তাঁর নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইহুদীরা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না তাঁকে শূলে চড়িয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। (এভাবেই) তিনি তাঁকে কাফিরদের থেকে রক্ষা করেছেন।

5 তাফসীরে মুইয়াসসার-ইমাম শায়খ সা’ঈদ ইবনে আহমদ আল কিন্দী (التفسير الميسر), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وإنه لا يبقى أحدٌ من أهل الكتاب بعد نزول عيسى آخر الزمان إلا آمن به قبل موته عليه السلام)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই শেষ যামানায় হযরত ঈসার অবতরণের পর যত আহলে কিতাবী (জীবিত) থাকবে, তারা প্রত্যেকে তাঁর মৃত্যুর আগে আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।

6 তাফসীরে বাগাভী-ইমাম আবূ মুহাম্মদ হুসাইন ইবনে মাসউদ আল-বাগাভী (البغوى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قوله تعالى : ( وإن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل موته) أي : وما من أهل الكتاب إلا ليؤمنن بعيسى عليه السلام، هذا قول أكثر المفسرين وأهل العلم)) অর্থাৎ আল্লাহতালার বাণী : وإن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل موته এর তাৎপর্য হল, আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। এ বক্তব্য অধিকাংশ তাফসীরকারক এবং বিশেষজ্ঞগণের।

7 তাফসীরে সা’দী-শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আস-সা’দী (السعدى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((أن الضمير في قوله: { قَبْلَ مَوْتِهِ } راجع إلى عيسى عليه السلام، فيكون المعنى: وما من أحد من أهل الكتاب إلا ليؤمنن بالمسيح عليه السلام قبل موت المسيح، وذلك يكون عند اقتراب الساعة وظهور علاماتها الكبار. فإنه تكاثرت الأحاديث الصحيحة في نزوله عليه السلام في آخر هذه الأمة)) অর্থাৎ আল্লাহর বাণী : قَبْلَ مَوْتِهِ এর মধ্যকার ‘হি’ সর্বনাম পদটি ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতিই ফিরেছে। ফলে এর তাৎপর্য হল, আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে মসীহ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর আগে আগেই তাঁর প্রতি অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করবে। আর এ ঘটনা ঘটবে কেয়ামতের নিকটবর্তী সময় এবং কেয়ামতের বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হতে থাকলে। এ উম্মতের শেষভাগে ঈসার অবতরকালে এটি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি বহু সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

8 তাফসীরে ইবনে কাসীর-ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (ابن كثير), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وأولى هذه الأقوال بالصحة القول الأول، وهو أنه لا يبقى أحد من أهل الكتاب بعد نزول عيسى، عليه السلام، إلا آمن به قبل موته، أي قبل موت عيسى، عليه السلام، ولا شك أن هذا الذي قاله ابن جرير، رحمه [الله] هو الصحيح)) অর্থাৎ এ বক্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সঠিক হল প্রথম উক্তি। সেটি এই যে, ঈসা (আ.)-এর অবতরণের পর আহলে কিতাবীদের মধ্য হতে যারাই অবশিষ্ট থাকবে প্রত্যেকে ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেই। আর নিঃসন্দেহে এটাই বিশুদ্ধ মত, ইবনে জারীর আত তাবারীও এমনটাই বলেছেন।

9 তাফসীরে কুরতুবী-ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবী (القرطبى), সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১৭ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((فلما توفيتني كنت أنت الرقيب عليهم قيل : هذا يدل على أن الله عز وجل توفاه قبل أن يرفعه; وليس بشيء; لأن الأخبار تظاهرت برفعه، وأنه في السماء حي، وأنه ينزل ويقتل الدجال)) অর্থাৎ আল্লাহর বাণী : فلما توفيتني كنت أنت الرقيب عليهم এর তাৎপর্য এই যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই আল্লাহতালা তাঁকে উঠিয়ে নেয়ার আগে নিদ্রা দিয়েছেন আর এটা কিছুই না। কেননা হাদীসসমূহ তাঁর উঠিয়ে নেয়ার বিষয়কে সাব্যস্ত করেছে যে, তিনি আকাশে জীবিত। তিনি নিশ্চয়ই নাযিল হবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

10 তাফসীরে বাহরুল উলূম/সামরকন্দী-ইমাম আবুল লাইস আস-সামরকন্দী (بحر العلوم أو تفسير السمرقندي), সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১৭ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((مَّا دُمْتُ فِيهِمْ} يعني ما دمت مقيماً في الدنيا بين أظهرهم {فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي} يعني رفعتني إلى السماء {كُنتُ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ} يعني الحفيظ والشاهد عليهم)) অর্থাৎ আল্লাহর বাণী : “যতক্ষণ আমি তাদের মধ্যে ছিলাম” তথা যতক্ষণ আমি তাদের মাঝে এই পৃথিবীতে অবস্থান করছিলাম, “অত:পর যখন আপনি আমাকে তাওয়াফা করলেন” তথা আপনি আমাকে আকাশে উঠিয়ে নিলেন। আপনিই তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক অর্থাৎ তাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং প্রত্যক্ষদর্শী।

শেষকথা– ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর পুনঃ আগমন সম্পর্কে ইসলামের গত চৌদ্দশত বছর ধরে মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মত বিশ্বাস সেটাই, যা সর্বকালে কুরআনের প্রধান প্রধান তাফসীরকারকগণ নিজ নিজ তাফসীরগ্রন্থে বিশুদ্ধ সনদে রেখে গেছেন। এর বিপরীতে সকল বিশ্বাস ও ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যাত ও বাতিল।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইবনুল কাইয়ুম রহ. এর ‘মত’ পরিবর্তন ও জান্নাত জাহান্নাম কখনো ধ্বংস হবেনা

0

জান্নাত এবং জাহান্নাম কখনো ধ্বংস হবেনা, এটাই ছিল শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ আর তাঁর শিষ্য শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (عليهما الرحمة) দু’জনের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আকীদা।

আজকে শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) (৬৯১-৭৫১ হিজরী)-এর চূড়ান্ত ও সর্বশেষ ‘রায়’ (আকীদা) নিয়ে লিখছি। অত:পর শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)-এর রায় নিয়ে লিখব, ইনশাআল্লাহ। শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির বিভিন্ন দিক উল্লেখপূর্বক এক পর্যায়ে লিখেছেন ((وهاتان الداران لا تفنيان)) অর্থাৎ এবং এ দুই আবাসস্থল ধ্বংস হবেনা। (আল ওয়াবিলুছ ছায়্যিব পৃষ্ঠা নং ৪২, মুহাক্কিক আব্দুর রহমান ইবনে হাসান ইবনে কায়িদ।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

বলে রাখা জরুরি যে, এঁদের ব্যাপারে একটি মত প্রচলিত আছে যে, এঁনারা জান্নাত এবং জাহান্নাম সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ’র সর্বসম্মত আকীদার বিপরীতে আকীদা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, উনারা দুজনই পরবর্তীতে রুজূ করেছেন। বিশেষতঃ শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) স্বীয় রচনা حادي الأرواح ; الصواعق المرسلة এবং شفاء العليل প্রভৃতি কিতাবগুলোয় ঐধরণের আকীদা ব্যক্ত করার প্রমাণ থাকলেও তিনি পরবর্তীতে আগের অবস্থান থেকে ফিরে আসেন এবং আহলুস সুন্নাহ’র সর্বসম্মত আকীদার প্রতিই রুজূ করেন। এর প্রমাণ হিসেবে তার অপরাপর রচনা الوابل الصيب; طريق الهجرتين দেখা যেতে পারে।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম এ

একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ বর্ণনার তাহকিক

0

দারাকুতনীর একটি জাল বর্ণনার আলোকে ১৮৯৪ এবং ‘৯৫ সালে একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের ঘটনা দিয়ে মির্যা গোলাম আহমদ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সেটিকে ঢাক-ডোল পিটিয়ে তার ইমাম মাহদী দাবীর সত্যতার প্রমাণ হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে। তার অনুসারীরা এ যুগে এসেও বহু মানুষকে এধরণের একটি মিথ্যা দিয়ে অনবরত পথভ্রষ্ট করেই চলছে। এ নির্বোধরা জানেনা যে, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত (২০০১ সাল) একই রমযান মাসে চন্দ্রসূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়ে আসছে কমকরে হলেও ১০৯ বার। ফলে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এধরণের “গ্রহণের” ঘটনা একদমই সাধারণ ও প্রাকৃতিক, ফলে কারো পক্ষে এধরনের কোনো ঘটনাকে পুঁজি করে নিজেকে “ইমাম মাহদী” প্রমাণ করার কোনো সুযোগ-ই থাকেনি।

আসি মূল আলাপে, প্রথমকথা হচ্ছে, দারাকুতনীর ঐ বর্ণনাটি ‘হাদীস’ হিসেবে প্রমাণিত নয়। বরং এর সনদের (বর্ণনাসূত্রে) মধ্যে দুইজন মিথ্যুক এবং মুনকার পর্যায়ের রাবী (বর্ণনাকারী) থাকার কারণে বর্ণনার কথাগুলো ইমাম বাকের (রহ.)-এর কিনা তাও নিশ্চিত নয়। যদি কথাগুলো ইমাম বাকের-এর বলেও নিশ্চিত হওয়া যেত তাহলেও কথাগুলোর একটু হলেও গুরুত্ব থাকত। অতএব, বর্ণনাটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল।

প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! অত্র বিষয়টি আমি প্রশ্নোত্তর আকারে নিচে তুলে ধরছি, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারে। তার আগে বর্ণনাটির সনদ বা ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র উল্লেখ করছি। যথা- এটি বর্ণনা করেছেন গ্রন্থকার ইমাম দারাকুতনী (রহ.), তিনি আবু সাঈদ থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু নওফল থেকে, তিনি উবায়েদ ইবনু ইয়া’ঈশ থেকে, তিনি ইউনুস ইবনু বুকাইর থেকে, তিনি আমর ইবনু শিম্মির থেকে, তিনি জাবের ইবনু ইয়াজিদ থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনু আলী (জন্ম-মৃত. ৫৭-১১৪ হিজরী) থেকে।

উল্লেখ্য, মুহাম্মদ ইবনু আলী হচ্ছেন হযরত হোসাইন ইবনু আলী (রহ.)-এর নাতী, যিনি ইমাম বাকের হিসেবেই পরিচিত।

প্রশ্নর্কতা : এটি ইমাম বাকেরের বক্তব্য হওয়াটাও কিজন্য নিশ্চিত নয়?

উত্তরদাতা : ঐ যে দুই মিথ্যুকের কারণে। উপরেই সনদ উল্লেখ করে দিয়েছি! সেখানে ইমাম বাকেরের নামে যে দুই ব্যক্তি চন্দ্রসূর্যগ্রহণের কথাটি মাহদীয়তের নির্দশন বলে চালিয়ে দিয়েছে তাদের নামও উল্লেখ আছে। দেখুন! ইমাম বুখারী, ইবনু হিব্বান, ইয়াহইয়া ইবনু মঈন সহ হাদীসশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞগণ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, এই দুই ব্যক্তি মিথ্যুক এবং মুনকার রাবী। এদের সূত্রে বর্ণিত কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এদের বর্ণিত কথাটি এই জন্যই ইমাম বাকেরের কথাও কিনা নিশ্চিত নয়।

প্রশ্নকর্তা : ইমাম বুখারী (রহ.)ও উক্ত সনদের রাবীদের সমালোচনা করেছেন কি?

উত্তরদাতা : জ্বী, সমালোচনা করেছেন। ইমাম যাহাবী সংকলিত ‘তালখীছুল মুস্তাদরিক’ (১/২৪৬) থেকে হুবহু আরবী ইবারত তুলে ধরছি। যেমন-((قال يحيى بن معين : ليس بشيئ و قال الجورجانى : زائغ كذاب. و قال ابن حبان : رافضى يشتم الصحابة و يروى الموضوعات عن الثقات. و قال البخارى : منكر الحديث. و قال يحيى : لا يكتب حديثه و قال السليمان : كان عمرو يضع للروافض و قال ابو حاتم : منكر الحديث جدا ضعيف الحديث الخ و قال الحاكم ابو عبدالله : كان كثير الموضوعات عن جابر))

এখানে নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন যে, ইমাম বুখারী (রহ.)ও সনদে উল্লিখিত ‘আমর ইবনে শিম্মির’-কে ‘মুনকার’ রাবী বলেছেন (قال البخارى : منكر الحديث)। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তো বলেছেনই। যেমন, সকল মুহাদ্দিস বলেছেন, তার বর্ণিত রেওয়ায়েত গুরুত্বহীন, সে কপট প্রকৃতির ও মিথ্যাবাদী, সে একজন রাফেজি (শীয়া মতাদর্শী) এবং সাহাবীদের গালি দিত; সে বিশ্বস্থ রাবীদের নামে জাল হাদীস তৈরী করত, সে একজন মুনকার রাবী, তার কোনো হাদীসই লিখাযোগ্য নয়, সে রাফেজিদের জন্য হাদীস জাল করত, সে হাদীসের জগতে খুবই দুর্বল। ইমাম হাকেম (রহ.) বলেছেন, সে জাবের ইবনু ইয়াজিদের কাছ থেকে বহু জাল হাদীস বর্ণনাকারী। উপরে যে সব কথা লিখলাম তা মূলত আরবী ইবারতটিরই অনুবাদ।

একই রাবী ‘আমর ইবনে শিম্মির‘ (عَمْرو بْنُ شِمِّرٍ) (মৃত. ১৫৭ হিজরী) সম্পর্কে ‘জারহু ওয়াত-তা’দীল’ বিষয়ক কিতাবগুলোতে এভাবেও লিখা আছে যে, তার পূর্ণ নাম আবূ আব্দিল্লাহ আমর ইবনে শিম্মির আল জা’ফী আল কূফী। তিনি হাদীসের জগতে মাতরূক (متروك الحديث) তথা পরিত্যাজ্য। তার সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের রায় হচ্ছে, ইমাম আবূ আহমদ আল হাকিম বলেন ليس بالقوي عندهم অর্থাৎ সে মুহাদ্দিসগণের নিকট শক্তিশালী রাবী নন। ইমাম আবূ আহমদ ইবনু আদী আল জুরজানী বলেন عامة ما يرويه غير محفوظ তার রেওয়ায়েত সমূহ অসংরক্ষিত ও ব্যাপক। ইমাম আবূবকর আল বায়হাক্বী বলেন لا يحتج به তার বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম আবূ হাতিম আর রাযী বলেন منكر الحديث جدا ضعيف الحديث لا يشتغل به تركوه সে চরম পর্যায়ের মুনকার, দুর্বল, তার বর্ণনার পেছনে ব্যস্ত হওয়া যাবেনা, মুহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন। ইমাম আবূ হাতিম ইবনু হিব্বান আলবাস্তী বলেন, رافضي يشتم الصحابة ويروي الموضوعات عن الثقات সে একজন রাফেযী, সাহাবায়ে কেরামদের গালি দিত, বিশ্বস্ত রাবীর নামে জাল হাদীস বর্ণনা করত। ইমাম আবূ যুর’আ আর রাযী বলেন, متروك الحديث، ضعيف الحديث সে একজন মাতরূক রাবী, হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ আল হাকিম আন নিশাপুরী বলেন, كان كثير الموضوعات عن جابر الجعفي জাবের আল জা’ফী এর সূত্রে তার নিকট অসংখ্য বানোয়াট হাদীস ছিল। ইমাম আবূ না’ঈম আল ইস্পাহানী বলেন, يروي عن جابر الجعفي بالموضوعات المناكير সে জাবের আল জা’ফী এর কাছ থেকে বহু বানোয়াট এবং মুনকার বিষয় বর্ণনা করত। ইমাম আহমদ ইবনে শোয়াইব আন নাসাঈ বলেন, متروك الحديث، ومرة: ليس بثقة ولا يكتب حديثه সে ছিল একজন মুনকার, বিশ্বস্থ ছিলনা, তার হাদীস লিখার উপযোগী নয়। ইমাম আহমদ ইবনে আলী আস সুলাইমানী বলেন, كان يضع للروافض সে রাফেযী (শীয়া-ইমামীয়া) সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে জাল হাদীস রচনাকারী ছিল। ইমাম ইব্রাহিম ইবনে ইয়াকুব আল জুরজানী বলেন, زائغ كذاب সে কপট ও মহা মিথ্যাবাদী। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, كذاب خبيث سباب شتام للصحب الكرام সে ছিল মহা মিথ্যুক, খবিস, সাহাবায়ে কেরামগণকে গালমন্দকারী। ইমাম দারাকুতনী বলেন, متروك الحديث، وذكره في السنن ضعيف সে হাদীসের জগতে মুহাদ্দিসগণের বিচার-বিশ্লেষণে মাতরূক বা পরিত্যাজ্য। সুনান গ্রন্থে তাকে তিনি দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম যাহাবী বলেন, متروك الحديث সে হাদীসে মাতরূক রাবী। ইমাম আমর ইবনু আলী আল পাল্লাস (عمرو بن علي الفلاس) বলেন, منكر الحديث حدث بأحاديث منكرة সে মুনকার রাবী, সে বহু মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী। ইমাম বুখারী বলেন, منكر الحديث সে হাদীসের জগতে মুনকার বা পরিত্যাজ্য। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সা’আদ কাতিব আল ওয়াক্বিদি বলেন, كان ضعيفا جدا متروك الحديث সে খুবই দুর্বল, মাতিরূক বা পরিত্যাজ্য রাবী। ইমাম ইয়াহইয়া বিন মা’ঈন বলেন, ليس بشيء، ومرة: ضعيف لا يكتب حديثه، ومرة: ليس ثقة সে গুরুত্বহীন ব্যক্তি, দুর্বল, তার বর্ণনাকৃত হাদীস লিখা যাবেনা, সে অনির্ভরযোগ্য। ইমাম ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান আল ফাসভী (يعقوب بن سفيان الفسوي) বলেন, ضعفه তাকে দুর্বল আখ্যা দেয়া হয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ আল মাজরূহীন-ইবনু হিব্বান, আদ-দ্ব’আফা-আবূ না’ঈম, আল কামিল ফী দু’আফাঈর রিজাল-ইবনু আদী, আল জারহু ওয়াত তা’দীল-আবূ হাতিম আর রাযী, আদ-দ্বু’আফা ওয়াল মাতরূকীন-ইবনু জাওযী, আত তাবকাতুল কোবরা-ইবনু সা’আদ, আদ-দ্বু’আফা ওয়াল মাতরূকূন-ইমাম নাসাঈ, ইবনু জুরাইক্ব, আস সুনানুল কোবরা, কবুলুল আখবার ওয়া মা’রিফাতির রিজাল, তারীখুল কাবীর-ইমাম বুখারী)।

এবার দ্বিতীয় রাবী সম্পর্কে কী লিখা আছে শুনুন। আসমাউর রিজাল শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব ইমাম ইবনু আদী (২৭৭-৩৬৫ হিজরী) রচিত ‘আল কামেল ফী দ্বু’আফাঈর রিজাল’ (খ-২/পৃ-১১৩) থেকে হুবহু আরবী ইবারত তুলে ধরছি। জাবের ইবনে ইয়াজিদ আল জা’ফী (মৃত. ১২৮ হি.) সম্পর্কে : যেমন-((عن ابى حنيفة قال : ما رأيت احدا اكذب من جابر الجعفى)) অর্থাৎ ইমামে আযম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, আমি জাবের ইবনে ইয়াজিদ আল জা’ফি এর চাইতে বড় মিথ্যাবাদী দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম লাইছ ইবনু আবি সুলাইম (রহ.) বলেছেন, فانه كذاب অর্থাৎ নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি মহা মিথ্যাবাদী। ইমাম মিজ্জি (রহ.)-এর ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থে (রাবী নং ৮৭৯) উল্লেখ আছে, ইসমাঈল ইবনে আবী খালিদ বলেন, ((فما مضت الأيام والليالي حتى اتهم بالكذب)) দিবারাত্রি অতিবাহিত না হতেই সে মিথ্যাচারিতার দোষে অভিযুক্ত হয়ে যায়। একই গ্রন্থে আরও লিখা আছে, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে ম’ঈন বলেন, ((لم يدع جابرا ممن رآه إلا زائدة ، وكان جابر كذابا)) যেই জাবেরকে দেখেছে সেই তাকে একজন অতিরঞ্জনকারী হিসেবে পেয়েছে, আর জাবের ছিল এখন কাজ্জাব (মহা মিথ্যুক)। ইমাম নাসাঈ বলেন, ((ليس بثقة ولا يكتب حديثه)) সে বিশ্বস্থ নয়, তার হাদীস লিখা যাবেনা। উল্লেখ্য, জাবের আল জা’ফী বড় মাপের একজন শীয়া পণ্ডিত, সে পুনঃজন্ম মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। কেউ তাকে তাওসীক্ব করলেও বেশিরভাগ মুহাদ্দিস-ই তাকে ‘জরাহ’ করেছেন।

এবার তাহলে নিজের বিবেককেই প্রশ্ন করুন, যে বর্ণনার মধ্যে দুইজন রাবীই মিথ্যাবাদী এবং জাল হাদীস তৈরীকারী হিসেবে অভিযুক্ত ও মুনকার, সে বর্ণনার কথাগুলো ইমাম বাকের-এরই ছিল বলে কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়?

প্রশ্নকর্তা : তা বুঝলাম, কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইমাম মাহদী দাবীকালে এই ধরণের ঘটনা ঘটলো কেন? এটা চিন্তার বিষয় নয় কি?

উত্তরদাতা : চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটা নিয়ে আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই। যেহেতু এটি আল্লাহর অন্যান্য প্রাকৃতিক সাধারণ নিয়মগুলোর মতই! হ্যাঁ, যদি এটি ওরকম না হত এবং এই ধরণের ঘটনা আগেও অসংখ্যবার না ঘটত তাহলে তা চিন্তাশীলদের অবশ্যই ভাবিয়ে তুলত! যেজন্য এতে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যই বাকি থাকেনি।

প্রশ্নকর্তা : আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, চন্দ্রসূর্যগ্রহণের এই অলৌকিক ঘটনাটি বিশেষ কোনো নিদর্শন নয়, ইতিপূর্বেও সময় সময় এটি প্রকাশিত হয়েছিল? কী প্রমাণ আছে?

উত্তরদাতা : জ্বী, এর আগেও এটি সাধারণ নিয়মেই বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। আর এটি আমার নিজের কোনো বক্তব্য নয়। এর পক্ষে ইতিহাস সাক্ষী। ঢাকা বকশিবাজার থেকে প্রকাশিত কাদিয়ানীদের ‘পাক্ষিক আহমদী’ (পৃ-২৪, তাং ১৫-এপ্রিল-২০১৫ইং) পড়ে দেখুন, সেখানেও এ ব্যাপারটি স্বীকার করে লিখা হয়েছে যে, ‘হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগের প্রফেসর জি. এম. বল্লভ ও আমি (মির্যায়ী লিখক) যে হিসাব কষেছি তাতে দেখা গেছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত একই রমযান মাসে চন্দ্রসূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়েছে মোট ১০৯ বার। এর মধ্যে তিনবার দুটি গ্রহণই নির্ধারিত তারিখে অর্থাৎ ১৩ ও ২৮ রমযানে কাদিয়ান থেকে দৃশ্যমান ছিল।’

বলে রাখা জরুরী, কাদিয়ানী লিখক এখানে ’কাদিয়ান থেকে দৃশ্যমান ছিল’ দাবী করলেও আমেরিকা মহাকাশ গবেষণা বিভাগ ‘নাসা’ তার এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ নাসা-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১৮৯৪ সালের ৬ই এপ্রিলে সংঘটিত গ্রহণের মানচিত্রে (বেগুনি রঙ্গের একটি অঙ্কিত রেখা দ্বারা) উক্ত গ্রহণের কক্ষপথ দেখিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, সেটি বাংলাদেশ আর বেঙ্গালুরু-এর উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চলে যায়। এই গ্রহণ এশিয়ার নানা দেশসহ ভারতেরও কয়েকটি স্থান থেকে দৃশ্যমান হলেও কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাঞ্জাব থেকে দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন হল, ‘কাদিয়ান’ কি ভারতের পাঞ্জাবের বাহিরে না ভেতরে? মজার বিষয় হল, নাসা-এর বিজ্ঞানীদের ওয়েবসাইটটিতে পরিষ্কার করে এও লিখা আছে, এই ধরণের চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনা আজ অব্ধি প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক বার ঘটেছিল। আপনি কি এরপরেও এটিকে প্রাকৃতিক সাধারণ নিয়মগুলোর মতই মানতে অস্বীকার করবেন?

প্রশ্নকর্তা : আপনি আর কোনো মাহদী দাবীদারের সময়ও এই ধরণের (চন্দ্রসূর্যগ্রহণের) ঘটনা ঘটেছিল বলে প্রমাণ করতে পারবেন?

উত্তরদাতা : জ্বী, পারব। আপনি কি মরক্কো বংশোদ্ভূত সালেহ বিন তারিফ-এর নাম শুনেছেন? তিনি নিজেকে ৭৪৪ সালে নবী দাবী করেন। তিনি ৭৯১ সাল পর্যন্ত মরক্কোর ‘বারঘৌতা বারবার’ রাজ্যের একজন শাসক ছিলেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদীও দাবী করেছিলেন। তিনি যে বছর ইমাম মাহদী দাবী করেন তার পরের বছর অর্থাৎ ১২৬ হিজরী মুতাবিক ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে একই রমাযানের ১৩ এবং ২৮ তারিখে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনাও ঘটেছিল। আর এই ঘটনা তার সময় চারবার ঘটেছিল যথাক্রমে ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৮৭ এবং ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। তার প্রতিষ্ঠিত ঐ জামাতের নাম ছিল ‘সালেহুল মুমিনীন’। তার মৃত্যুর পরেও তার এই জামাত প্রায় সাড়ে তিন’শ বছর পর্যন্ত আফ্রিকায় খুব দাপটের সাথে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। পরবর্তীতে ১০ম শতকের শেষের দিকে আল মুরাবিত রাজ-বংশের মুসলিম বীর সিপাহসালার ইউসুফ বিন তাসফিন এর নেতৃত্বে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে সালেহ বিন তারিফের রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে ঐ মিথ্যা দলটিরও বিলুপ্তি ঘটে।

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ তো ১৮৯৪ সালের দিকে শুধু ইমাম মাহদী দাবীদারই ছিলেন, তিনি নবী দাবী করেননি? অথচ সালেহ বিন তারিফ তো নবী দাবীও করেছিল?

উত্তরদাতা : ‘বাবী জামাত’ এর প্রতিষ্ঠাতা ইরানের আলী মুহাম্মদ বাব সাহেবও ইমাম মাহদী দাবী করেছিলে (১৮৪৪ সাল)। তার আমলেও (১৮৫১ সাল) একই রমাযানে চন্দ্রসূর্য গ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল। আর তিনিও শুধুই ইমাম মাহদী দাবী করেছিলেন। এখন সেও কি একই ঘটনার দরুন ইমাম মাহদী সাব্যস্ত হবেন? উল্লেখ্য, বর্তমানেও তার বহু অনুসারী (প্রায় ৪ মিলিয়ন, উইকিপিডিয়া) পৃথিবীতে রয়েছে। প্রায় ২১৮টি রাষ্ট্রে তার অনুসারীদের অবস্থান রয়েছে। যাইহোক, মির্যা গোলাম আহমদের জন্য একটি দুঃসংবাদ আছে, বলব?

: বলুন!

: মির্যা গোলাম আহমদ ঐ চন্দ্রসূর্যগ্রহণ সংক্রান্ত বর্ণনাটির মর্মার্থ বুঝাতে গিয়ে নিজ কিতাবে লিখে গেছেন, ‘বরং হাদীসের উদ্দেশ্য হল, কোনো নবুওয়ত বা রেসালত দাবীদারের সময়টিতে কখনো এই দুইটি গ্রহণ একত্রিত হবেনা।’ (রূহানী খাযায়েন ২২/২০৩)। মির্যা গোলাম আহমদ এই কথা বলে মূলত সে সমস্ত মাহদী দাবীদারের বিরুদ্ধে আঙ্গুল উঠাতে চাচ্ছেন যারা মাহদী দাবীর সময় নবুওয়ত ও রেসালতের দাবী করেনি, যদিও চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনাও ঘটেছিল! হায়! মানুষ কতটা ধূর্ত হলে এইরূপ উদ্ভট ব্যাখ্যাও দিয়ে যেতে পারে! যাইহোক, এখন আমার প্রশ্ন হল, মির্যা গোলাম আহমদ ১৮৯৪ বা ১৮৯৫ সালে চন্দ্র সূর্যগ্রণের সময়ও পরিষ্কার করে নবুওয়ত বা রেসালতের দাবী করেননি, যা আপনিও জানেন; বরং তিনি ১৮৯৭ সালের দিকেও নবুওয়ত দাবিদারের প্রতি লানত (অভিশাপ) বর্ষণ করেছেন। (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ২/২৯৭-২৯৮ ও ২/২)।

এমতাবস্থায় ঐ দুই মিথ্যুকের সূত্রে বর্ণনাটি যদি সহীহও হত তবু মির্যা গোলাম আহমদকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করার কোনো উপায় থাকেনা। অধিকন্তু মির্যা গোলাম আহমদের উক্ত ব্যাখ্যা অনুসারে ‘সালেহ বিন তারিফ’-ই ইমাম মাহদী সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। কারণ সে একই সময় ইমাম মাহদী এবং নবী দুটোরই দাবীদার ছিল! আশা করি, উক্ত রেওয়ায়েতটির অসারতা এবার আপনার নিকটও পরিষ্কার হয়ে গেল!

আচ্ছা! আপনি কি জানেন আপনাদের মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব পরিষ্কার ভাষায় লিখে গেছেন যে, তার একনিষ্ঠ অনুসারীরা যে কোনো মতভেদপূর্ণ বিষয়ের সমাধান যেন তার কাছ থেকেই নেয়! (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৭/৬৪)। অন্তত এ দিক থেকেও আপনাদের জন্য বৈধ হবেনা ঐ দুই মিথ্যুকের বর্ণিত রেওয়ায়েতকে মাহদীয়তের কথিত নিদর্শন মনে করা। কারণ মির্যা সাহেব এও লিখে গেছেন ‘ইমাম বুখারীর কৃত শর্তের বিপরীত যে হাদীস সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।’ (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৭/১১৯-২০)। পক্ষান্তরে ইমাম বুখারী উক্ত বর্ণনার সনদ (সূত্র) সম্পর্কে পরিষ্কার বলেছেন, এটি মুনকার রেওয়ায়েত। আপনি ইমাম বুখারীর সংকল ‘তারীখু কাবীর’ (৬/৩৪৪, ক্রমিক নং ২৫৮৩) কিতাব থেকেও দেখতে পারেন। তিনি সনদ সহ পরিষ্কার লিখে দিয়েছেন এভাবে যে, ((عَمْرو بْنُ شِمِّرٍ : روى بعضهم عَنْ عَمْرو بْن أَبِي عَبْد اللَّه، الجعفِي، عَنْ جَابِر، منكر الْحَدِيث)) অর্থাৎ “আমর ইবনে শিম্মির সম্পর্কে : কতিপয় ব্যক্তি আমর ইবনে আবী আব্দিল্লাহ, (আমর ইবনে শিম্মির) আল জা’ফী ও জাবির (ইবনে ইয়াজিদ আল জা’ফী) থেকে বর্ণনা করেছে। সে (আমর ইবনে শিম্মির) একজন মুনকার রাবী।” মনে রাখতে হবে, অগ্রহণযোগ্য হাদীস গুলোর একটি প্রকারকে ‘মুনকার হাদীস’ বলে। কিন্তু কাদিয়ানীদের নিকট এ প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর নেই। সংক্ষেপে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক