Home Blog Page 2

কাদিয়ানীর নবুওয়ত একটি ব্রিটিশ পরিকল্পনা,

কাদিয়ানীর লেখিত বিভিন্ন বই পুস্তক থেকে হুবহু অনুবাদ সহ তার উত্থানের ঐতিহাসিক বিবরণ,

উনিশ শতকে যখন ব্রিটিশ শক্তি ভারত দখল করে নেয়, তখন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইমাম হযরত শাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী ফতোয়া দিয়েছিলেন, ভারত দারুল হরব এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ ফরজ। যার ফলশ্রুতিতে পুরো ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের লেলিহান শিখা জ্বলে ওঠে। এ জাতির আলেমসমাজ এবং স্বদেশের মুজাহিদগণ জীবন মুঠোয় নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রতিটি মোড়ে প্রতিটি রণক্ষেত্রে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী ভল্লুকদের সাহসিকতার সঙ্গে তারা রুখে দাঁড়ান। এটা সত্য, ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুসলমান মুজাহিদগণ হেরে গেছেন। এ কারণে তারাই সাম্রাজ্যবাদী অমানবিক পৈশাচিক নির্যাতনের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। তবে তাঁদের জিহাদি প্রেরণা কমে যায়নি কখনো। ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে অহর্নিশ।

ইংরেজদের বাজদৃষ্টি মুজাহিদগণের আত্মায় পোষিত এই অগ্নিবিপ্লবের কথা সচেতনভাবেই জানতো।  মুসলমান বিপ্লবীদের হৃদয় মৃত্তিকায় চাপাপড়া জিহাদের লেলিহানের কথা তারা জানত। এও জানত, যেকোনো সময় তা অগ্নিলাভার রূপ নিতে পারে এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাজানো মঞ্চকে খাক করে দিতে পারে। এ ভয় থেকেই তারা ‘দলাদলি সৃষ্টি করো এবং শাসন করো’- এর ফর্মুলা জন্ম দেয়। মুসলিম জাতির জিহাদি জোশ, বিশ্বাসিক শক্তি, ঈমানি পূর্ণতা, কুরআন  ও সুন্নতের প্রতি আকুল ভালবাসাকে চিরতরে ধ্বংস করে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদকে চির প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদে একজন ‘সরকারী নবী’ সৃষ্টির প্রকল্প হাতে নেয়। বিষয়টি পরে ব্রিটিশ কমিশনের একটি প্রতিবেদন থেকে প্রতিভাত হয়ে ওঠে।

১৮৬৯ সালে স্যার উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে ইংরেজগোষ্ঠী ভারতবর্ষে একটি কমিশন দল প্রেরণ করেন। ইংরেজদের সম্পর্কে মুসলমানদের মনোভাব যাচাই এবং ভবিষ্যতে মুসলমানদের কিভাবে শেষ করে দেয়া যায়, তার একটা বাস্তব পরিকল্পনা তৈরিই ছিল এই কমিশনের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে তারা এক বছর ধরে এখানে থেকে মুসলমানদের বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ১৮৭০ সালে লন্ডনের ভয়েন্ট হাউজে একটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। তাতে কমিশনের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও বিশেষভাবে ভারতবর্ষে নিযুক্ত মিশনারী পাদ্রিগণও অংশগ্রহণ করেন। উভয় দল ভিন্ন ভিন্নভাবে রিপোর্ট পেশ করেন। এ রিপোর্টটি পরে ‘দি এরাইভল অফ ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার ইন ইন্ডিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। স্যার উইলিয়াম হান্টার তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, “মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস হলো, কোনো বিদেশি শাসনের অধীনে বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। তাই বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ করা অত্যাবশ্যক। জিহাদের এই মর্মবাণীর প্রতি তাদের অন্তরে রয়েছে উত্তাল আকুলতা। তারা জিহাদের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। তাদের এই মনোভাব যে কোনো সময় তাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে।”

এ দিকে পাদ্রী সম্প্রদায় তাদের রিপোর্টে বলছে,

  • Report of missionary fathers.
  • majority of the population of the country blindly follow their press their Spritual leaders at this stage. we succeed in finding out would be ready to daclare himself a Zilli Nabi (apostolic prophet). then the large number of people will relly round him. but for this puopose, it is very difficult to persuade someone from the Muslim masses. if this problems solved, the prophethood of such a pesson can flourish under the patronage of the government. we have already over powered the native government mainly persuing policy of seeking help from the traitors. that is a deffitary point of view, now when we have sway over every nook of the country and there is peace and order everywhere, we ought to undertake measure which might create internal unrest among the country. [Extact from the printed report India office library, London]
  • “রাষ্ট্রের অধিবাসীদের অধিকাংশই ধর্মীয় নেতাদের অন্ধ অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে যদি আমরা এমন কাউকে খুঁজে বের করতে পারি, যে এই কাজের জন্য প্রস্তুত হবে; নিজেকে ‘ছায়ানবী‘ হিসেবে ঘোষণা করবে। তাহলে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী তার পাশে জড়ো হবে। কিন্তু এই লক্ষ্য সাধনের জন্য সাধারণ মুসলমানদের কাউকে উৎসাহিত করা কঠিন। যদি এই সমস্যা সমাধান হয়, তাহলে এই ব্যক্তির নবুওয়াতের বিষয়টিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এগিয়ে নেয়া যায়। আমরা ইতিপূর্বে গাদ্দারদের সহযোগিতায় ভারতের শাসকদের প্রজা বানিয়েছি। কিন্তু সে ছিল ভিন্ন বিষয়। তখন সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে গাদ্দারদের প্রয়োজন ছিল। এখন যখন রাষ্ট্রের সকল প্রান্তে আমাদের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বহমান; তখন আমাদের এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।” [প্রিন্টেড রিপোর্ট, ইন্ডিয়া অফিস লাইবেরি, লন্ডন ]

এই রিপোর্টের আলোকে আমরা ব্রিটিশ পরিকল্পনাটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। মূলত এই পরিকল্পনার অধীনেই ব্রিটিশ প্রশাসন শীয়াদের মধ্য থেকে মির্যা হুসাইন আলী নূরীকে (যিনি বাহাউল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ) আর সুন্নীদের মধ্য থেকে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে স্বপ্রণীত নবুয়তের স্টেজে দাঁড় করিয়ে দেয়। মির্যা কাদিয়ানীর তৎপরতাগুলো সামান্য খুঁটিয়ে দেখলেই আমরা সহজে এই বিশ্বাসে উপনীত হতে পারব যে, কাদিয়ানীর নবুওয়াত ব্রিটিশদের তৈরি, তাদের হাতেই লালিত হয়েছে এবং বেড়ে উঠেছে তাদেরই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। আর এ কথা স্বয়ং কাদিয়ানীও তার বিভিন্ন রচনায় স্বীকার করেছে। যেমন, লক্ষ করুন!

বৃটিশ রাণী ভিক্টোরিয়াকে এক চিঠিতে লিখেছেন,

“হে মহামহিম ভারত সম্রাজ্ঞী! আপনার মহিমা এবং সুনাম মুবারক হোক! খোদার দৃষ্টি (তথা করুণা) সে দেশের উপরই রয়েছে, যে দেশের উপর রয়েছে আপনার দৃষ্টি, খোদার রহমত (তথা সাহায্য) সে জনতার উপরই রয়েছে যে জনতার উপর রয়েছে আপনার হাত (তথা হুকুমত)। আপনার পবিত্র নিয়ত (আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই আল্লাহ আমাকে (রূপক ‘মসীহ’ বানিয়ে) প্রেরণ করেছেন।” (সেতারায়ে কায়সারিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৫/১২০, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।

কাদিয়ানী তার এ লিখায় অকপটে বলেই দিয়েছে যে, আল্লাহ নাকি তাকে বৃটিশ রাণীর পবিত্র নিয়ত (আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন।” প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য।

পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে এক আর্জিতে লিখেছেন,

“নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার দলের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করেন। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)।

আরেকটি রচনায় লিখেছেন,

“আমার (ধর্ম)মত এটাই যা আমি প্রতিবার প্রকাশ করে থাকি তা হল, ইসলামের দুটি অংশ। একটি হল খোদাতালার আনুগত্য করা আর দ্বিতীয়টি হল, এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং জালেমদের হাত থেকে আপনা ছায়ার নিচে আশ্রয় দিয়েছে। সেটি হল ব্রিটিশ সরকার।” (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)।

আরেক জায়গায় লিখেছেন,

“আমার জীবনের অধিকাংশই এই ইংরেজ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আর সহযোগিতার মধ্যেই অতিবাহিত হয়েছে। আমি জিহাদ নিষিদ্ধ করে ইংরেজ সরকারের আনুগত্যের উপর এই পরিমাণ কিতাব (পুস্তক) রচনা করেছি এবং (এত অধিক পরিমাণ) প্রচারপত্র প্রকাশ করেছি যদি ঐ পত্রাবলী এবং পুস্তকগুলি একত্রিত করা হয় তাহলে তা দ্বারা ৫০টি আলমারি ভর্তি হয়ে যাবে। আমি এই সমস্ত কিতাব তামাম আরব, মিশর, সিরিয়া, কাবুল এবং রোম (ইউরোপ-ইতালি) দেশেও পৌঁছে দিয়েছি। আমার সদাসর্বদা প্রচেষ্টা এটাই থাকে যে, মুসলমানরা যেন এই (ইংরেজ) সরকারের প্রকৃত খয়েরখাঁ হয়ে যায় এবং খুনি মাহদী এবং খুনি মসীহ সংক্রান্ত ভিত্তিহীন বর্ণনাসমূহ এবং জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী সমস্ত মাসয়ালা তাদের অন্তরসমূহ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় যেগুলো আহাম্মকদের অন্তরসমূহ খারাপ করে দিয়েছে।” (রূহানী খাযায়েন ১৫/১৫৫-৫৬)।

তিনি অন্য একটি রচনায় লিখেছেন,

“আমি বিশ বছর পর্যন্ত ইংরেজ সরকারের প্রতি আনুগত্যের শিক্ষাই দিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার মুরিদদের মাঝে এই হিদায়াতই (নির্দেশনা) জারি রেখেছি। তাহলে কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, আমি এই সমস্ত হিদায়াতের বিপরীতে কোনো প্রকারের সরকার-দ্রোহী অভিসন্ধির শিক্ষা দিচ্ছি! অথচ আমি জানি যে, আল্লাহতালা স্বীয় খাস অনুগ্রহে এই সরকারকেই আমার এবং আমার জামাতের আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন। এই সরকারের ছায়াতলে আমাদের জন্য যে নিরাপত্তা অর্জিত সেটি না মক্কা শরীফে রয়েছে আর না মদীনায় আর না রোম সম্রাটের কনস্টানটিনোপলের সিংহাসনেও।” (রূহানী খাযায়েন ১৫/১৫৬)।

আরেকটি রচনায় লিখেছেন,

“আমি ইংরেজ সরকারের যে সেবা করেছি তা হলো, এ দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে প্রায় পঞ্চাশ হাজার বই পুস্তক এবং প্রচারপত্র ছাপিয়ে বিতরণ করেছি। এ সব রচনায় আমি বলেছি, ইংরেজ সরকার আমাদের মুসলমানদের কল্যাণকামী বন্ধু। তাই ইংরেজ সরকারের নিষ্ঠাপূর্ণ আনুগত্য প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ।” (সেতারায়ে কায়সারিয়া-৪, রূহানী খাযায়েন ১৫/১১৪, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।

সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, কাদিয়ানীর কথিত নবুওয়ত ব্রিটিশ সরকারেরই একটি পরিকল্পিত প্রজেক্ট। ব্রিটিশরাই নিজেদের ক্ষমতা টিকানোর উদ্দেশ্যে তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দাঁড় করিয়েছিল। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের পক্ষেও কখনো সম্ভব নয় যে, দখলদার বিদেশীদের দখলদারিত্বের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করা, পঞ্চাশটি আলমারি ভর্তি লিখনী দিয়ে সাহায্য করা। কাজেই তার মাহদী, মসীহ কিংবা ‘ছায়ানবী’ ইত্যাদি দাবীসমূহ বাতুলতা আর ভেল্কিবাজি ছাড়া আর কিছুই না।

মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়ত দাবী প্রকৃত অর্থেই, রূপক বা ভিন্ন অর্থে ছিলনা

মির্যায়ী রচনাবলী থেকে তথ্যপ্রমাণ সহ নিম্নরূপ,

নবী ও রাসূল দাবী

আমার দাবী, আমি নবী এবং রাসূল। (দৈনিক আল হাকাম ৫ই মার্চ ১৯০৭ইং, মালফুযাত ১০/১২৭ পুরাতন এডিশন, ৫/৪৪৭ নতুন এডিশন)।

শোনো! প্রত্যেক আহমদী এ বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, সেই পবিত্র, মহৎ ও ধর্মভীরু ব্যক্তিত্ব যাকে অনেকে মির্যা কাদিয়ানী বলে থাকে, তিনি আল্লাহর মনোনীত একজন নবী। (নবুওয়ত ও খেলাফত ১৭, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বকশিবাজার ঢাকা)।

আল্লাহর আদেশ মোতাবেক আমি একজন নবী। আমি এই দাবী অস্বীকার করলে আমার পাপ হবে। (আখবারে আ’ম ২৬ মে ১৯০৮ ইং, নবুওয়ত ও খেলাফত ৭৬)।

তিনিই সত্য খোদা যিনি কাদিয়ানে তার রাসূল প্রেরণ করেছেন। (দাফেউল বালা ১২, রূহানী খাযায়েন ১৮/২৩১ মির্যায়ী রচনাসমগ্র যা ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত)।

আমি একজন রাসূলও এবং নবীও অর্থাৎ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং খোদার পক্ষ থেকে আমি গায়েবের সংবাদ প্রাপ্তও। (একটি ভুল সংশোধন, রূহানী খাযায়েন ১৮/২১১)।

যারা একজন সম্মানিত রাসূলকে গ্রহণ করল না, তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। ভাগ্যবান সে যে আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি খোদার সকল পথের শেষ পথ। আমি তার সকল নূরের শেষ নূর। দুর্ভাগা সে যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করল। কারণ, আমি ছাড়া সব অন্ধকার। (কিশতিয়ে নূহ, রূহানী খাযায়েন ১৯/৬১)।

আমি সে খোদার নামে কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫০৩)।

এতে কি সন্দেহ যে, আমার ভবিষ্যৎবাণীগুলোর পর দুনিয়াতে ভূমিকম্প ও অন্যান্য আপদ-বিপদ একের পর এক শুরু হওয়া আমার সত্যতার একটি নিদর্শন। মনে করা উচিত, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার করলে তখন অন্য অপরাধীদেরও পাকড়াও করা হয়। (হাকীকাতুল ওহী উর্দূ ১৬১)।

খোদাতালা কাদিয়ানে এই ধ্বংসাত্মক মহামারী থেকে রক্ষা করবেন। কেননা এটা তাঁর রাসূলের রাজধানী। (দাফেউল বালা ১০)।

তিনি (অর্থাৎ গোলাম আহমদ) নবী। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই সকল শব্দে নবী বলেছেন, যে সকল শব্দ দ্বারা কুরআন ও হাদীসে পূর্ববর্তী নবীদের আখ্যায়িত করা হয়েছে। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ৭০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (মৃত. ৭ই নভেম্বর ১৯৬৫ ইং) লিখেছেন,

  • اگر میرے گردن کے دونوں طرف تلوار بھی رکھ دی جائے اور مجھے کہا جائے کہ تو یہ کہو کہ آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی بعد کوئی نبی نہیں آئےگا تو میں اس سے کہوں گا کہ تو جھوٹا ہے اور کذاب ہے آپ کے بعد نبی آسکتے ہیں اور ضرور آسکتے ہیں

অর্থ-“যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরে রাখা হয় আর আমাকে বলতে বলা হয় যে, তুমি বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোনো নবী আসতে পারেনা! তাহলে আমি অবশ্যই বলব যে, তুমি মিথ্যাবাদী ও মহা মিথ্যুক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবী আসতে পারে, অবশ্যই আসতে পারে।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৭, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা বশির উদ্দীন একই গ্রন্থের আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখেছেন,

  • اور (انہیں) یہ سمجھ لیا جائے کہ خدا کے خزانے ختم ہوگی اس لئے کسی کو کچھ نہیں دے سکتا اسی طرح یہ کہتے ہیں کہ خواہ کتنا ہی زہد اور اتقاء میں بڑھ جائے پرہیزگاری اور تقوی میں کئی نبیوں سے اگے گزر جائے معرفت الہی کتنی ہی حاصل کر لے لیکن خدا اس کو کبھی نبی نہیں بنائے گا اور کبھی نہیں بنائے گا ان کا یہ سمجھنا خدا تعالی کی قدر کو ہی نہ سمجھنے کی وجہ سے ہیں ورنہ ایک نبی کیا میں تو کہتا ہوں ہزاروں نبی ہوں گے

অর্থ-“তারা মনে করছে যে, আল্লাহতালার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে, তাই তিনি (এখন) কাউকে কিছুই দেন না। তেমনিভাবে এও বলে যে, কোনো কেউ দুনিয়াবিরাগী এবং খোদাভীরুতায় ও তাকওয়া আর পরহেজগারীতে কতেক নবী অপেক্ষায় যতই অগ্রে পৌঁছে যায় না কেন, সে যত বেশিই খোদার মা’রেফত (দর্শন) লাভ করেনা কেন; কিন্তু খোদা তাকে কখনোই নবী বানাবেন না। তাদের এইরূপ মনে করার কারণ হচ্ছে খোদাতালার মর্যাদা বুঝতে না পারা। অন্যথা নবী শুধুই একজন কেন! আমি তো বলি, হাজার হাজার নবী হবেন।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৪, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

কাদিয়ানীদের তথাকথিত দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তাঁর পিতার “নবী” দাবীর বিষয়টিকে মূল্যায়ন করে লিখেছেন,

جب حضرت مسیح موعود نبی ثابت ہوگئے، ایسے ہی نبی جیسے دوسرے انبیاء علیہم السلام تو پھر ان کے بھی وہی حقوق ہیں جو دوسرے انبیاء کے ہیں-

অর্থাৎ হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা সাহেব) যখন একজন নবী বলে সাব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তেমনি একজন নবী; যেমন অন্যান্য নবীগণ, তখন তো উনার-ও অনুরূপ অধিকার থাকবে যেভাবে অন্যান্য নবীগণের রয়েছে। (কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল পৃ-১০ কলাম ৩, তারিখ ৩০-১২-১৯১৬ ইং)।

  • মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের এ কথা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানী প্রকৃতপক্ষেই একজন “নবী” দাবীদার ছিল। অতএব, তার অনুসারীদের বিভিন্ন রচনা কিবা বক্তৃতায় সেটিকে “উম্মতি-বুরুজী-জিল্লি” শব্দে ব্যাখ্যা দিতে চাওয়া সুস্পষ্ট একটা ধোকা ও প্রতারণা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং প্রশ্নবাণে আত্মরক্ষার হীন-কৌশল ছাড়া আর কিছুই না।

সুতরাং এতে কী সন্দেহ যে, প্রতিশ্রুত মসীহ কুরআন কারীমের অর্থ বিচারেও নবী এবং অভিধানের অর্থ বিচারেও নবী। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ১১৬, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

অতএব ইসলামি শরীয়ত নবী শব্দের যে ব্যাখ্যা দেয় সে ব্যাখ্যা হিসেবে হযরত মির্যা সাহেব কিছুতেই রূপক নবী নন, বরং প্রকৃত অর্থেই নবী। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১৭৪, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

নবী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরাও মির্যা গোলাম আহমদকে পূর্ববর্তী নবীগণের মতোই নবী মনে করি। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ২৯২, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

১৯০১ সাল পর্যন্ত মির্যা সাহেবের ধারণা ছিল যে, আমার নবুওয়ত অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত, যেন তিনি ছায়ানবী। কিন্তু ১৯০১ সালে আল্লাহর ওহী তাকে মনোযোগী করে যে, তার নবুওয়ত অপূর্ণাঙ্গ কিংবা খণ্ডিত নয়, বরং তার নবুওয়ত ঠিক সেই রকম যেমন ছিল পূর্ববর্তী সকল নবীর। এই ওহীর পর তার আকীদা পরিবর্তন হয়ে যায়। পরে তিনি আর নিজের নবুওয়তকে অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত বলেননি। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১২০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

১৯০১ সালের পূর্বের যেসব উদ্ধৃতিতে তিনি নবী হওয়াকে অস্বীকার করেছেন, এখন তা রহিত হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করা এখন ভুল। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১২১, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

পূর্বেও তাকে নবী নামে ডাকা হতো। কিন্তু তিনি তার ব্যাখ্যা করতেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা যখন বারবার ইলহামের মাধ্যমে তাকে নবী বলে ডাকছিলেন, তখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে, আসলে তিনি নবীই, অন্য কিছু নন। যেমনটি পূর্বে মনে করতেন। নবী শব্দটি যা তার ইলহামে ব্যবহৃত হত তা একেবারেই দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট, ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ১২৪, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

  • লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
  • কাদিয়ানী মতবাদ বিশেষজ্ঞ

কওমী মাদরাসার চাঁদা ও চামড়া কালেকশনে সিস্টেমেটিক সংস্কার সময়ের দাবী

বর্তমানে ক্বওমী মাদরাসাগুলো জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় চলার যে পদ্ধতিটা দেখা যাচ্ছে এটা মূলত আমাদের আকাবিরদের তরীকার বিপরীত। দেওবন্দে কালেকশনের জন্য আলাদা মুহাসসিল আছে। এটা উস্তাদ ছাত্রের কাজ নয়।

আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে উস্তাদ ছাত্ররা এটা আঞ্জাম দেয়। কোরবানির সময় ছাত্রদের দিয়ে চামড়া কালেকশন করার বিষয়টা সব সময় আমাদের বিবেকে বাঁধে, আমাদেরকে পীড়া দেয়। একই বাড়ির সামনে ছাত্র-উস্তাদ দাঁড়িয়ে আছেন চামড়ার জন্য, ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে আছে গোশতের জন্য। বাড়িওয়ালা ভিক্ষুকদেরও ধমকাচ্ছে, ছাত্র-শিক্ষকদেরও ধমকাচ্ছে। বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার ঘটনাও তো আমাদের সামনেই ঘটেছে। এমন দৃশ্যগুলো আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এছাড়াও আরও কত লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তা তো আমরা নিজ চোখেই দেখেছি। আবার অল্প সময়ে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় হওয়াতে কমিটির লোকেরা এটা কোনোভাবেই বন্ধ করতে সম্মত হয় না। তাছাড়া রমজান মাসে কালেকশনের জন্য শিক্ষকদের বাধ্য করাও আমাদের মাদরাসাগুলোতে বিচিত্র নয়। সে কালেকশন করতে গিয়ে তাদের মান-মর্যাদা ঠিক থাকবে কিনা তা দেখার যেন কেউ নেই।

হযরত থানবী (রহ.) এর বক্তব্য ছিল, কোনো ছাত্র তো নয়; কোনো শিক্ষকও কালেকশন করতে যাবে না। এমনকি যদি এর জন্য মাদরাসার সংখ্যা কমে যায়, তাও দীনের জন্য ভালো। তাই আমরা আমাদের এখানে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেন ছাত্র-শিক্ষক সকলেরই ইজ্জত সুরক্ষিত থাকে। কালেকশনের জন্য তারা মানুষের বাড়ি-বাড়ি যাবে না। চামড়ার কালেকশন করবে না। এমনিভাবে উস্তাদরাও রমজানে যাকাত কালেকশনের জন্য রশিদ বই নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে না।

হ্যাঁ, নিজের ইজ্জত রক্ষা করে যতটুকু করা যায় তা করবে। পারলে করবে, না পারলে না করবে। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থনৈতিক বিষয়টা আমরা সামনে রেখে তা’লীম গ্রহণে আসলাফ ও আকাবিরের যে চেতনা ও পদ্ধতি ছিল তা আবার ফিরিয়ে আনার চিন্তা করেছি। অর্থাৎ ইলম হাসিলের পথে ছাত্র তার সাধ্যমত খরচ করবে। যেমন সালাফের যামানায় ইলম হাসিলের যাবতীয় খরচ শিক্ষার্থী নিজে বহন করত। কারও কারও জীবনীতে পাওয়া যায়, বাবার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পদের পুরোটাই ইলমের পথে ব্যয় করে দিয়েছেন।

তাই আমাদের চিন্তা হল প্রতিষ্ঠান নয়; শিক্ষার্থী নিজেই নিজের খরচ বহন করবে। সাধারণত আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ম হল, নির্ধারিত নম্বর পেলে মাসিক প্রদেয় মওকুফ হয়ে যায়। কিন্তু এই ফিকির সামনে রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, মাসিক প্রদেয় ফ্রি হওয়ার সম্পর্ক থাকবে সামর্থ্যের সাথে, নম্বরের সাথে নয়। নম্বর বিবেচ্য হবে কেবল ভর্তির ক্ষেত্রে। নম্বর পেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে, না হয় না।

এর অর্থ এই নয় যে, এখানে কেবল ধনীরাই সুযোগ পাবে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য অবারিত সুযোগ থাকবে। তবে প্রত্যেকেই সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে; স্বচ্ছলতা নেই বলে সে কিছুই দিবে না- এমন যেন না হয়। যে যতটুকু পারে ততটুকুই দিবে, বাকিটুকু প্রতিষ্ঠান বহন করবে। খরচ করতে অভ্যস্ত হওয়া ইলমের জন্য যেমন দরকার তেমনি দরকার নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য। এই অভ্যাস না থাকলে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। একজন লোক যত বড়ই হোক যদি অন্যকে দেওয়ার অভ্যাস তার মাঝে গড়ে না উঠে, কেবল গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে কোনদিন তার মানসিকতা বড় হয় না। তার প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা জন্মায় না। মানুষ তাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে না। তাই সমাজে সে কোনো প্রভাবও রাখতে পারেনা, সে গলে যায় অর্থবিত্তের সামনে। এজন্য কেবল যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়, যোগ্যতার ব্যবহারের জন্য এই ব্যক্তিত্বকেও ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

  • আল্লামা আবুল বাশার সাইফুল ইসলাম হাফিজাহুল্লাহ।
  • শাইখুল হাদীস : জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া৷
  • মুহাম্মাদপুর, ঢাকা৷

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম এ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

জাওনিয়া রাজকুমারীর সাথে বাসর হবার আগেই তালাক্ব দিয়ে দেয়ার কারণ

প্রশ্নঃ নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রী ‘জাওনিয়া’কে বাসরের আগেই তালাক প্রদান করার কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ আল্লামা খায়রুদ্দীন আয যিরিকলী আদ দামেস্কী (মৃত.১৩৯৬ হি.) এর সংকলন ‘আল আ’লাম’ (الأعلام للزِّرِكْلي) এর মধ্যে লিখা আছে, ((أسماء بنت النعمان بن أبي الجون الكندي: من شهيرات نساء العرب شرفا وجمالا. يرتفع نسبها إلى آكل المرار ملك كندة. كان مقام أهلها بنجد، وقدمت مع أبيها على النبي صلّى الله عليه وسلم وهو في المدينة، فعرضها أبوها على النبي صلّى الله عليه وسلم فارتضاها وأمهرها، ولم يتزوج بها لصلف كانت موصوفة به، فأقامت في المدينة إلى أن توفيت في خلافة عثمان)) অর্থাৎ তিনি আসমা বিনতে নুমান ইবনে আবী জাওন আল কিন্দী (মৃত. ৩০ হি.)। একজন অভিজাত ও সুন্দরী আরব রমনী। তিনি কিন্দী বংশীয় রাজকুমারী ছিলেন। নজদের বাসিন্দা। তিনি নবী করীম (সা.)-এর নিকট স্বীয় পিতার সাথে মদীনায় আসেন। অত:পর তার পিতা তাকে নবী করীম (সা.)-এর নিকট সমর্পণ করলে তিনি তাকে গ্রহণ করেন এবং মোহর প্রদান করেন। কিন্তু তিনি তার অহংকারী স্বভাবের কারণে তার সাথে সহবাস করেননি (পরবর্তীতে তালাক্ব দিয়ে দেন-অনুবাদক)। তিনি মদীনায় বসবাস করেন এবং উসমান (রা.)-এর খিলাফত যুগ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

এবার বিস্তারিতঃ

জাওনিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ এ সম্পর্কিত রেওয়ায়েত গুলোর মতন বা মূলপাঠ’কে মুযতারিব তথা উলোটপালোট বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) নিজেও এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর মতনকে ‘মুযতারিব’ আখ্যা দিয়েছেন (ফাতহুল বারী ৯/৩৫৮)। যেমন তিনি লিখেছেন ((وإن كانت القصة متعددة ولا مانع من ذلك فلعل هذه المرأة هي الكلابية التي وقع فيها الاضطراب)) অর্থাৎ গল্পটি যদিও একাধিক এবং তাতে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু এই মহিলাটি-ই গল্পের নায়িকা, যার গল্পে ইযতিরাব বা উলোটপালোট রয়েছে।

উসূলে হাদীসের একটি নিয়ম হচ্ছে, সনদ বা সূত্র সহীহ হলেও যখন ‘মতন’ মুযতারিব হিসেবে সাব্যস্ত হবে তখন আর ঐ মতনের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবেনা। জাওনিয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণটিও অনুরূপ। একটু পরেই এ সম্পর্কে লিখব, ইনশাআল্লাহ।

সম্পূর্ণ লিখাটির উপসংহার যদি ছোট্ট পরিসরে বলতে চাই তাহলে বলব, নবী করীম (সা.)-এর সাথে বিয়ে হওয়ার পরে ‘জাওনিয়া’ নামক ঐ রাজকুমারী সংসার করার প্রস্তাবে অমত পোষণ করেন। যার ফলে রাসূল (সা.) তাকে বিদায় করে দেন। এটা বুঝা যায় এক রেওয়ায়েত অনুসারে।

আরেক রেওয়ায়েত অনুসারে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আসলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন নিজেকে রাজকুমারী ভেবে। সে তখন রাসূল (সা.)-এর প্রতি অপ্রীতিকর উক্তিও করে বসে। কিন্তু তাকে পরবর্তীতে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, সে নাকি তখন রাসূল (সা.)-কে চিনতে পারেনি। আসল কথা হচ্ছে, রেওয়ায়েতগুলোর মতনে অসঙ্গতি খুব বেশি। ফলে মতনগুলোকে “মুযতারিব” (উলোটপালোট) আখ্যা দিয়ে এর উপর স্কলারগণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের আনাড়ি কতিপয় এন্টি-ইসলাম নাস্তিকদের এগুলো বুঝানোই অসম্ভব!

জাওনিয়ার পরিচয়ঃ

জাওনিয়া’র পরিচয় হিসেবে উঠে এসেছে যে, তিনি নুমান ইবনে জাওন আশ শারাহীল এর কন্যা। কেউ বলেছেন, নুমান ইবনে আসওয়াদ আল হারিছের কন্যা। কেউ বলেছেন, তিনি বনু হারিস গোত্রের নুমানের কন্যা আসমা, আবার কারো কারো মতে, তিনি বনু সুলাইম গোত্রের মেয়ে। যাইহোক, সহীহ বুখারীর বর্ণনায় তার নাম উমায়মাহ উল্লেখ থাকলেও অন্যান্য বর্ণনায় তাঁর বিভিন্ন নাম উল্লেখ থাকা প্রমাণিত। ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকী (রহ.) বলেছেন, ((أجمعوا أن رسول الله تزوجها واختلفوا في قصة فراقها)) অর্থাৎ সবাই একমত যে, রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেছেন। তবে তার বিচ্ছেদ সংক্রান্ত ঘটনায় ঐতিহাসিকগণ মতবিরোধ করেছেন।

হুসাইন ইবনু ওয়ালীদ নিশাপুরী (রহ.) … সাহল ইবনু সা’দ ও আবূ উসায়দ (রা.) থেকে বর্ননা করেন। তারা বলেন যে, ((تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أُمَيْمَةَ بِنْتَ شَرَاحِيلَ ، فَلَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَيْهِ بَسَطَ يَدَهُ إِلَيْهَا ، فَكَأَنَّهَا كَرِهَتْ ذَلِكَ ، فَأَمَرَ أَبَا أُسَيْدٍ أَنْ يُجَهِّزَهَا وَيَكْسُوَهَا ثَوْبَيْنِ رَازِقِيَّيْنِ)) অর্থাৎ নবী করীম (সা.) উমায়মাহ বিনত শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত প্রসারিত করেন। সে এটি অপছন্দ করল। এরপর তিনি আবূ উসায়দকে নির্দেশ দিলেন, তার জিনিস গুটিয়ে এবং দু-খানা কাতান বস্ত্র পরিয়ে তাকে তার পরিবারে পৌঁছে দিতে। (বুখারী-৫২৫৬ আন্তর্জাতিক নম্বর)।

তবক্বাতে ইবনে সা’দ (৮/১৪৫) গ্রন্থে একটি বর্ণনায় এসেছে, জাওনিয়া ছিলেন আরবের এক সুন্দরী ও অভিজাত রমনী। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেন। তিনি আরও বলেছেন ((فلما رآها نساء النبي صلى الله عليه وسلم حسدنها ، فقلن لها : إن أردت أن تحظي عنده فتعوذي بالله منه إذا دخل عليك . فلما دخل وألقى الستر مد يده إليها ، فقالت : أعوذ بالله منك . فقال: أمن عائذ الله ! الحقي بأهلك)) অর্থাৎ যখন নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীরা তাকে দেখলেন তখন তারা তার সৌন্দর্যের কারণে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হন। স্ত্রীরা জাওনিয়াকে শিখিয়ে দিলেন যে, যদি তুমি তার সাথে মজা করতে চাও, তাহলে তিনি তোমার কাছে প্রবেশ করলে তার কাছ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে অর্থাৎ তাঁকে বলবে ‘আউযুবিল্লাহহি মিনকা’। তারপর তিনি যখন প্রবেশ করে পর্দা সরিয়ে তার দিকে হাত প্রসারিত করলেন তখন তিনি বললেন, আউযুবিল্লাহহি মিনকা। অত:পর তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর আশ্রয়ে নিরাপদ থেকো। তুমি তোমার পরিবারের সাথে গিয়ে মিলিত হয়ে যাও (অর্থাৎ নবী করীম সা. তাকে বিয়ে থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন)।

জাওনিয়ার সাথে নবী করীম (সা.)-এর সাক্ষাৎ ও দু পক্ষের আলাপচারিতা,

সহীহ বুখারীর ৫২৫৫ নং হাদীস হতে বুঝা যায় যে, নবী করীম (সা.) হযরত আবূ উসায়েদ (রা.)-এর কাছ থেকে জাওনিয়া সম্পর্কে প্রথম সংবাদ পান। কিন্তু জাওনিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তিনি তার সাথে বাসর করা থেকে বিরত থাকেন। হাদীসটির বাংলা অনুবাদ এই,

আবূ উসায়দ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমরা নবী করীম (সা.) এর সাথে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌঁছলাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নবী করীম (সা.) বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (বাগানের ভেতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নুমান ইবনে শারাহীলের কন্যা উমায়মাহ’র খেজুর বাগানস্থিত ঘরে তাকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নবী করীম (সা.) যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোনো রাজকুমারী কি কোনো বাজারি (অ-রাজকুমার) মানুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে?

বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সা.) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। (বুখারী-৫২৫৫)।

যারা আরবী ভাষার অলংকার সম্পর্কে ভালো দখল রাখেন এবং বাগধারা বুঝেন তাদের নিকট এটা পরিষ্কার যে, হাদীসটির এই শেষাংশ যেন ডেকে ডেকে বলছে যে, জাওনিয়ার সাথে নবী করীম (সা.)-এর বিবাহ আগ থেকেই সম্পন্ন ছিল, যা অন্যান্য বিশুদ্ধ বর্ণনামতেও প্রমাণিত। অন্যথা তিনি আবূ উসায়দকে কেন নির্দেশ দিলেন যে, যেন তিনি জাওনিয়াকে দু’খানা কাতান কাপড় প্রদান করেন!? ফলে বলা যেতে পারে যে, জাওনিয়াকে উদ্দেশ্য করে ‘তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর’-কথাটি নবী করীম (সা.) বাসর অর্থেই বুঝিয়েছেন। ইমাম বুখারী (রহ.) হাদীসটির অধ্যায় দাঁড় করেছেন এইরূপ, ((بَاب مَنْ طَلَّقَ وَهَلْ يُوَاجِهُ الرَّجُلُ امْرَأَتَه“ بِالطَّلاَقِ)) অর্থাৎ তালাক্ব দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে তালাক্ব দেবে? সুতরাং এতেও বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ে পূর্ব থেকেই সম্পন্ন ছিল, কিন্তু জাওনিয়া সংসার করতে অসম্মতি প্রকাশ করায় নবী করীম (সা.) তার সম্মুখেই তাকে বিবাহ-বন্ধন থেকে অব্যহতি (তালাক্ব) দিয়ে দেন।

বলে রাখা দরকার, সহীহ বুখারীর হাদীস নং ৫২৫৪ দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, জাওনিয়া নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে শামিল ছিলেন। কারণ ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে ইমাম আওযা’ঈ এর সনদে ইমাম যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ((سَأَلْتُ الزُّهْرِي أَي أَزْوَاجِ النَّبِي صلى الله عليه وسلم اسْتَعَاذَتْ مِنْهُ ؟)) অর্থাৎ আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (সা.)-এর কোন স্ত্রী তাঁর কাছ থেকে ‘ইয়াজ’ (অব্যাহতি) চেয়েছিলেন? এর উত্তরে হযরত উরওয়াহ স্বীয় খালা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ((قَالَ : أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ ، عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها : أَنَّ ابْنَةَ الْجَوْنِ لَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَدَنَا مِنْهَا قَالَتْ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ . فَقَالَ لَهَا : لَقَدْ عُذْتِ بِعَظِيمٍ ، الْحَقِى بِأَهْلِكِ)) “তিনি বলেছেন, জাওন কন্যাকে নবী করীম (সা.)-এর নিকট যখন আনা হল এবং তিনি যখন তার নিকটবর্তী হলেন তখন সে বলল, আউযুবিল্লাহি মিনকা অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য আপনার কাছ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।”

প্রতিউত্তরে নবী করীম (সা.) তাকে সাফ জানিয়ে দিলেন যে, লাক্বাদ উ’যতি বি’আজিম অর্থাৎ তুমি মহান সত্তার নামে অব্যাহতি কামনা করলে। কাজেই তুমি তোমার পরিবারের সাথে (এখুনি) গিয়ে মিলিত হয়ে যাও (অর্থাৎ আমি তোমাকে অব্যাহতি দিয়ে দিলাম)। নাস্তিকরা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে এক পাশে রেখে মাঝখান থেকে খণ্ডিত অংশ উঠিয়ে নেয় এবং নবী করীম (সা.)-এর প্রতি মানহানিকর প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়। নাস্তিকদের প্রোপাগাণ্ডার মূল ইস্যুটি হচ্ছে, নবী করীম (সা.) পর নারীর দিকে হাত বাড়িয়েছেন কিজন্য? জাওনিয়া মূলত সেজন্যই উনাকে السوقة তথা বাজারি (অ-রাজকুমার) পুরুষ আখ্যা দিয়েছিলেন! নাউযুবিল্লাহ।

কিন্তু নাস্তিকদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, সহীহ বুখারীতে (হাদীস-৫২৩৫ ইফা) হযরত সাহাল ইবনে সা’আদ এর অন্য আরেকটি বর্ণনায় পরিষ্কার এসেছে যে, ((أَتَدْرِينَ مَنْ هَذَا ؟ قَالَتْ : لاَ . قَالُوا هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ لِيَخْطُبَكِ . قَالَتْ : كُنْتُ أَنَا أَشْقَى مِنْ ذَلِكَ)) অর্থাৎ জাওনিয়াকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কি জানো যে, তুমি কাকে ‘বাজারি’ বললে? তখন জাওনিয়া উত্তরে বলেন, না আমি জানতাম না। তখন লোকেরা বলল, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, তোমাকে প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। জাওনিয়া তখন (বিনয়ের সাথে) বলেছিল, আমি তো উনার থেকে বঞ্চিতা। সুতরাং বুঝা গেল, জাওনিয়া তখন নবী করীম (সা.)-কে চিনতেন না। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলেন যে, তিনি স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন, তখন খুবই অনুতপ্ত হন। একই হাদীসের শুরুতে সুস্পষ্ট লিখা আছে, আবূ উসায়দ আস সা’দী নবী করীম (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম আরবের একজন রাজকুমারীর নাম প্রস্তাব করেন। নবী করীম (সা.) আবূ উসায়দকে নির্দেশ দেন, যাতে তিনি ঐ রাজকুমারীর নিকট দূত প্রেরণ করেন।

উল্লেখ্য, ফাতহুল বারী (৯/৩৫৮) গ্রন্থে লিখা আছে, ভাষাবিদ ইবনুল মুনির বলেছেন ((والسوقة عندهم من ليس بملك كائنا من كان)) “আরবের সাহিত্য পরিভাষায় ‘আসসূক্বাতু’ (السوقة) বলতে বুঝায় এমন ব্যক্তিকে যে রাজকুমার নন।” পক্ষান্তরে নুমান ইবনে জাওন আশ শারাহীল এর কন্যা জাওনিয়া ছিলেন নজদ অঞ্চলের বনু হারিস গোত্রীয় একজন অভিজাত রাজকুমারী। ফলে সে রাজকুমারের সাথেই সংসার করার মনোবাসনা লালন করত এবং অহংকারী ছিল। যে কারণে নবী করীম (সা.) তার সাথে বাসর না করেই তাকে তালাক্ব দিয়ে দেন । কিন্তু ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো অনেক বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ। যেজন্য নির্দিষ্ট কোনো বর্ণনার উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে প্রধান প্রধান স্কলারগণ (ইমামগণ) প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে আসছেন। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের বঙ্গীয় এন্টি-ইসলাম ছুপা নাস্তিকদের বুঝানোর সাধ্য কার?

যেসব বর্ণনা হতে জাওনিয়াকে রাসূল (সা.)-এর স্ত্রী বলেই বুঝা যাচ্ছে আমি এখন সেসব বর্ণনার আলোকেই জাওনিয়ার ‘আউযুবিল্লাহি মিনকা’ কথাটির উত্তর দেব, ইনশাআল্লাহ। পাঠকবৃন্দ! বর্ণনাগুলোর মতনে যথেষ্ট ইযতিরাব রয়েছে, যা আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি।

জ্ঞানীদের নিকট পরিষ্কার আছে যে, বিবাহিত স্ত্রী তার স্বামীকে যখন বলবে যে, আমি আল্লাহর জন্য তোমার কাছ থেকে অব্যাহতি বা ‘ফানাহ’ চাচ্ছি, তখন এ জাতীয় শব্দ রূপকার্থে ‘তালাক্ব’-কেই বুঝায়। অর্থাৎ সে যেন স্বামীর কাছ থেকে তালাক্ব চাচ্ছে! যাইহোক, আগেই বলে আসছি যে, বর্ণনাগুলোর সনদ সহীহ হলেও মতনে ইযতিরাব (উলোটপালোট) রয়েছে। ফলে এ জাতীয় ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আইনসিদ্ধ হবেনা। যার দরুন ইসলামের ইতিহাসে প্রধান প্রধান স্কলারগণ সর্বসম্মতিক্রমে জাওনিয়াকে নবী করীম (সা.)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে শুমার করেননি।

আমি আমার দীর্ঘ স্টাডি এবং গবেষণা থেকে যতটুকু বুঝেছি এবং প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছি, ততটুকুই লিখার চেষ্টা করেছি। এখানে যদি কোনো ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তজ্জন্য আমি অধম একাই দায়ী থাকবো। আমি অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। – লিখক

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ, তাং ১৭-০৬-২০২৪ ইং যোগাযোগ-

কাদিয়ানী মতবাদের পোস্টমর্টেম

প্রশ্নোত্তরে কাদিয়ানী মতবাদের অসারতা সহজ সরল ভাবে নিচে বুঝিয়ে দেয়া হল,

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

ঈসা এবং মাহদী কি একই ব্যক্তি হবেন, নাকি ভিন্ন ব্যক্তি হবেন?

এর উত্তর হচ্ছে, যদি কুরআন থেকে প্রমাণিত হয় হযরত ঈসা (আ.) মারা গিয়েছেন, তার মানে হচ্ছে সেই বনী ইসরাইলী ঈসা (আ.) আর কখনো পৃথিবীতে আসবেন না। কুরআন থেকে প্রমাণিত যে, বনী ইসরাঈলী ঈসা মারা গেছেন। তাই তাঁর দ্বিতীয়বার আগমনের কোনো সুযোগ নাই (কাদিয়ানীদের বক্তব্য)।

সরল উত্তরঃ

পবিত্র কুরআনের নামে এগুলো কাদিয়ানীদের জঘন্য মিথ্যাচার। কারণ ইসলামের গত চৌদ্দশত বছরেও এধরণের দাবী কোনো বরেণ্য যুগ ইমাম, ফকীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস কেউই করেননি। সুতরাং এধরণের দাবী ও মতবাদ সম্পূর্ণ বাতিল ও বিদয়াতি মতবাদ। সত্যের সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই। বরং অসংখ্য আয়াতে ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমনী ইংগিত থাকা প্রমাণিত, উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ইজমাও এর উপর বিদ্যমান যে, মরিয়ম পুত্র হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনঃআগমন অকাট্য সত্য এবং এ বিশ্বাস ইসলামে তাওয়াতূর স্তরীয় বিশ্বাস।

এখন কাদিয়ানীদের মতে, কুরআন দ্বারা বনী ইসরাঈলী ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন বলে প্রমাণিত হলে, তখন পবিত্র কুরআন থেকে এ কথাও প্রমাণ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, কুরআনে ঈসা (আ.)-এর আসার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হতে কাদিয়ানের চেরাগ বিবির পুত্র মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য। কেননা মির্যা গোলাম আহমদ নিজেই তার আরেক রচনায় স্বীকার করে লিখেছেন,

اب ثبوت اس بات کا کہ وہ مسیح موعود جس کے آنے کا قران کریم میں وعدہ دیا گیا ہے یہ عاجز ہی ہے

অর্থ-“এখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, পবিত্র কুরআনে যেই মসীহ মওউদের আসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সে এই অধমই।” (রূহানী খাযায়েন ৩/৪৬৮)।

স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি রচনার সমষ্টি ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন, যার বাংলা অর্থ- আধ্যাত্মিক ভাণ্ডার।

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

হযরত রসূল করীম (সা.) ঈসা (আ.) এর অবতরণের কথা বলেছেন। এর মানে হল, শেষ যুগে যিনি আগমন করবেন তিনি ঈসা (আ.)-এর সদৃশ হবেন। এর সমাধান তিনি নিজেই বলে গেছেন। হাদিসে উল্লেখ আছে,

((لاَ يَزْدَادُ الأَمْرُ إِلاَّ شِدَّةً وَلاَ الدُّنْيَا إِلاَّ إِدْبَارًا وَلاَ النَّاسُ إِلاَّ شُحًّا وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ إِلاَّ عَلَى شِرَارِ النَّاسِ وَلاَ الْمَهْدِيُّ إِلاَّ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ))

অর্থাৎ, দিনে দিনে বিপদাপদ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। দুনিয়াতে অভাব অনটন ও দুর্ভিক্ষ বাড়তেই থাকবে। কৃপণতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নিকৃষ্ট লোকদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে। মাহদী ঈসা ইবনে মরিয়ম ব্যতিরেকে অপর কেউ নন। (ইবনে মাজাহ, বাবু শিদ্দাতিয্যামান, হাদীস নং-৪০৩৯)। অতএব, যিনি ঈসা তিনিই মাহদী।

সরল উত্তরঃ

বর্ণনাটি সহীহ নয়। সর্বসম্মত ইমামগণের মতে এর সনদ বা সূত্র খুবই দুর্বল ও মুনকার (মেরকাত শরহে মেশকাত, কিতাবুল ফিতান ১০/১০১, মোল্লা আলী ক্বারী)। ইমাম মিজ্জি (রহ.) এর সনদে উল্লিখিত ‘মুহাম্মদ বিন খালিদ আল জানাদী’ (محمد ابن خالد الجندى) নামক বর্ণনাকারী সম্পর্কে লিখেছেন, সে অপরিচিত এবং মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য। দেখুন, তাহযীবুল কামাল : খণ্ড নং ২৫ পৃষ্ঠা নং ১৪৬; রাবী নং ৫১৮১)। ইমাম শাওক্বানী (রহ.) বলেন, ইমাম সাগানী আল হিন্দী-الصغانى (মৃত. ৬৫০ হি.) ‘তাযকিরাতুল মওযূ’আত’ কিতাবে (১/২২৩) লিখেছেন, এ হাদীস জাল তথা বানোয়াট (আল ফাওয়ায়েদুল মাজমু’আহ-الفوائد المجموعة ১/৫১০)।

মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও তার রচনায় স্বীকার করে লিখে গেছেন যে, এর সনদ খুবই দুর্বল, ফলে এর উপর নির্ভর করা যাবেনা। দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ১৬১। তাছাড়া যুগ ইমামগণ বর্ণনাটির “ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা”-((وَلَا الْمَهْدِىْ اِلَّا عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ)) উপবাক্যটির অর্থ করেছেন ((مَعْنَاهُ وَ لَا مَهْدِىٌّ كَامِلُ اَوْ مَعْصُوْمُ اِلَّا عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ)) ‘তখন ঈসা ইবনে মরিয়ম ব্যতীত নিষ্পাপ বা পরিপূর্ণ সুপথপ্রাপ্ত আর কেউ নন1।’ এ অনুবাদ করেছেন, ইমাম কুরতুবি, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম এবং ইবনে কাসীর প্রমুখ। দেখুন, আল আহাদীসুয য’ঈফাহ ১/৮৯, শায়খ আলবানী।

মজার ব্যাপার হল, মির্যা গোলাম কাদিয়ানী তার রচনার এক জায়গায় লিখেছেন, ((آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم بھی مہدی تہے)) অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.)ও ‘মাহদী’ ছিলেন। দেখুন, রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৪, পৃষ্ঠা নং ৩৯৪। সুতরাং বুঝা গেল, আক্ষরিক অর্থে শুধু ঈসা (আ.) কেন, বরং যে কোনো সুপথপ্রাপ্ত পুরুষকেও ‘মাহদী’ শব্দে সম্বোধন করা যেতে পারে। তাতে সবাইকে একই ব্যক্তি বুঝাবেনা। যাইহোক, সর্বশেষ কথা হচ্ছে, বর্ণনাটি ‘সহীহ’ মানলেও কাদিয়ানীদের যে শিক্ষা ও মতবাদ সে ধরনের কোনো কিছুই এর দ্বারা ইংগিতেও প্রমাণিত হয় না।

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ((يُوْشِكُ مَنْ عَاشَ مِنْكُمَ اَنْ يَلْقَى عِيْسَى بْنَ مَرْيَمَ إِمَامًا مَهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدَلًا فَيَكْسِرُ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا))

অর্থঃ “তোমাদের মধ্যে তখন যারা জীবিত থাকবে তারা ঈসা ইবনে মরিয়মকে ইমাম মাহদী হিসেবে পাবে যিনি শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। এরপর তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া বা যুদ্ধকর বন্ধ করবেন আর তখন অস্ত্রযুদ্ধ রহিত হবে।” (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, হাদীস নং ৯০৬৮, প্রকাশনা: দারূল আহহীয়াউত্তুরাস আল আরাবী, বৈরুত, লেবানন)।

সরল উত্তরঃ

হাদীসটি সহীহ, তবে এটিও কাদিয়ানীদের শিক্ষা ও মতবাদকে ইংগিতেও সমর্থন করেনা। কেননা, হাদীসটিতে পরিষ্কার শব্দে وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এসে ‘যুদ্ধকর’ রহিত করবেন, উল্লেখ আছে। জ্ঞানীদের জানা আছে যে, যুদ্ধকর রহিত করার এ সক্ষমতা বেসামরিক কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নেই। বরং এ ধরনের সক্ষমতা শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী প্রশাসনিক ব্যক্তির-ই রয়েছে। কাজেই এ হাদীসটিও অকাট্য ইংগিত দিচ্ছে যে, আগমনকারী ঈসা হতে প্রকৃত ঈসা ইবনে মরিয়মই উদ্দেশ্য, যিনি আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন এবং যথাসময়ে উম্মাহার নেতৃত্বে থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করবেন এবং রাসূল (সা.)-এর ফরমান অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে “যুদ্ধকর” স্থগিত করবেন।

বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা গোলাম আহমদ সারা জীবনে মেম্বার চেয়ারম্যান হতে পারা তো দূরের কথা, তিনি কোনোদিন সর্বনিম্ন “গ্রাম সরকার” বা চকিদার-ও ছিলেন না। সুতরাং এ হাদীস জীবন গেলেও তার সাথে খাপ খাবেনা।

এবার হাদীসটির সঠিক অনুবাদ জেনে নিইঃ

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

((يُوْشِكُ مَنْ عَاشَ مِنْكُمَ اَنْ يَلْقَى عِيْسَى بْنَ مَرْيَمَ إِمَامًا مَهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدَلًا فَيَكْسِرُ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا))

অনুবাদঃ “তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অবশ্যই অচিরেই মরিয়ম পুত্র ঈসার সাথে মিলিত হবে, যিনি একজন ন্যায়বিচারক এবং সুপথপ্রাপ্ত নেতা হবেন, তিনি ক্রুশ চূর্ণ করবেন, শুয়োর হত্যা করবেন, যুদ্ধকর রহিত করবেন, এবং ধর্মযুদ্ধ তার সমস্ত যুদ্ধ-সরাঞ্জাম ভারমুক্ত করবে।”

এখানে হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে বিশেষণমূলক (মুরাক্কাবে তাওসীফী) যৌগিক উপবাক্য ((إِمَامًا مَهْدِيًّا)) অর্থ- “একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম”। কাদিয়ানীরা এর ব্যকরণ-বিরুদ্ধ অনুবাদ তো করেই, তার উপর অপব্যাখ্যা দিয়ে বলে যে, এতে নাকি এটাই বুঝানো উদ্দেশ্য যে, ঈসা আর ইমাম মাহদী দু’জন মূলত একই। নাউযুবিল্লাহ। মূর্খতারও একটা সীমা থাকা দরকার। আফসোস! এ নির্বোধরা এতই বেপরোয়া যে, একই ধরণের আরো যত বিশেষণমূলক হাদীস রয়েছে তারা সেগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে একদমই চিন্তা করেনা।

যেমন, হযরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন ((ﻭَإجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا)) অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি তাকে “একজন সুপথপ্রাপ্ত হিদায়াতকারী” বানিয়ে দিন (বুখারী কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার)।

তারপর হযরত মু’আবিয়া (রা.) সম্পর্কেও বলা হয়েছে যে, ((اَللَّهُمَّ إجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا وَ إهْدِ بِهِ)) অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি তাঁকে “একজন সুপথপ্রাপ্ত হিদায়াতকারী” বানিয়ে দিন আর তার মাধ্যমে [মানুষকে] হিদায়াত দান করুন। (তিরমিযী কিতাবুল মানাকিব)।

তদ্রুপ হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আরেকটি হাদীসে এসেছে ((إِمَامًا عَادِلاً وَ قَاضِيًاً)) “তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ ও বিচারক ইমাম…”। দেখুন, ইমাম আবু বকর আশ-শাফেয়ী (মৃত ৩৫৪ হিজরী) সংকলিত, আল ফাওয়ায়িদুশ শাহীর বিল গাইলানিয়াত : হাদীস নং ৭৯৩ ও ৮২৪।

এখন প্রশ্ন হল, তবে কি রাসূল (সা.) জারির ইবনে আব্দুল্লাহ আর হযরত মু’আবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁদের দু’জনকেও প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী বুঝালেন?

হাদীসটিকে অপরাপর সহীহ হাদীসগুলোর সাথে মিলিয়ে পড়ার পর পাঠকের নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, হাদীসটিতে ঈসা (আ.)-কে শুধু আক্ষরিক অর্থেই ‘মাহদী’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। যার দরুন হযরত ফাতেমা (রা.)-এর বংশ থেকে আসন্ন শেষ যুগের প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদীর ধারণা বাতিল হয়ে যাবেনা। কারণ, আক্ষরিক অর্থে আবুবকর, উমর, উসমান এবং আলীকেও রাসূল (সা.) একত্রে ‘আল-মাহদিয়্যীন’ ((فعليكم بسُنَّتي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ)) বলেছেন। দেখুন, তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম হা/২৬৭৬, সনদ সহীহ। আর সে হিসেবে তথা আক্ষরিক অর্থে শুধু ঈসা (আ.) নয়, বরং সকল নবী-ই ছিলেন ‘মাহদী’ তথা সুপথপ্রাপ্ত। আশাকরি, উত্তর পেয়েছেন।

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ

অর্থ “তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন ইবনে মরিয়ম তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হবেন এবং (তিনি) তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের ইমাম হবেন (কাদিয়ানী অনুবাদ)।” (বুখারী-৩৪৪৯, মুসলিম, কিতাবুল ঈমান-২৮৩)।

সরল উত্তরঃ

কাদিয়ানীদের অনুবাদে নিকৃষ্ট তাহরিফ (বিকৃতি) রয়েছে। অথচ সঠিক অনুবাদ হচ্ছে,

“তোমাদের অবস্থা তখন কেমন (আনন্দের) হবে, যখন ইবনে মরিয়ম তোমাদের মধ্যে নাযিল হবেন আর তোমাদের ইমাম (মাহদী) তোমাদেরই মধ্য থেকে হবেন (ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার আসকালানী রহ.)।” (বুখারী-৩৪৪৯, মুসলিম, কিতাবুল ঈমান-২৮৩)।

সরল উত্তরঃ

এ হাদীসটি বরং কাদিয়ানীদের শিক্ষা ও মতবাদেরই সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রথমতঃ তার কারণ, হাদীসটিতে “ইবনু মরিয়ম” বলা হয়েছে। যার অর্থ- মরিয়মের পুত্র। কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদের মায়ের নাম ছিল চেরাগ বিবি। সুতরাং মিললো না।

দ্বিতীয়তঃ এ হাদীসের ((ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ)) উপবাক্যটি পরিষ্কার বলছে যে, ইমাম মাহদী এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম দু’জনই শেষযুগে পৃথিবীতে সমসাময়িক হবেন। সহীহে বুখারীর উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারী গ্রন্থে বিভিন্ন হাদীসবিদগণের উদ্ধৃতির পরিপ্রেক্ষিতে জোরালো যে মতটিকে সুস্পষ্ট করে গেছেন তা হচ্ছে, হাদীসটির ((وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ)) “আর তোমাদের ইমাম তোমাদেরই মধ্য হতে হবেন” এর দ্বারা ইমাম মাহদীকেই বুঝানো উদ্দেশ্য। (ফাতহুল বারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া হাদীস নং ৩৪৪৯)।

ইবনে মাজাহ’র দাজ্জাল সম্পর্কিত আবূ উমামাহ’র দীর্ঘ হাদীসে এসেছে,

((كُلُّهُمْ أَىْ الْمُسْلِمُوْنَ بِبِيْتِ الْمُقَدَّسِ وَ اِمَامُهُمْ رَجُلٌ صَالِحٌ قَدْ تَقَدَّمَ لِيُصَلِّى بِهِمْ, اِذْ نَزَلَ عِيْسَى فَرَجَعَ الْاَمامُ يَنْكُصُ لِيَتَقَدَّمَ عِيْسَى, فَيَقِفُ عِيْسَى بَيْنَ كَتِفَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ: تَقَدَّمْ فَاِنَّهَا لَكَ اُقِمَتْ))

অর্থ- “মুসলমানগণ বায়তুল মুকাদ্দাসে (সালাতের জন্য অপেক্ষা রত) থাকবে। তখন তাদের ইমাম থাকবেন জনৈক নেককার ব্যক্তি। তিনি তাদের সালাত পড়ানোর জন্য সামনে অগ্রসর হবেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ (তারা দেখতে পাবে) ঈসা অবতরণ করছেন। ফলে ইমাম সাহেব পেছনে সরে আসবেন যাতে ঈসা সামনে অগ্রসর হন। হযরত ঈসা তাঁর কাঁধের মাঝখান বরাবর এসে দাঁড়াবেন, তারপর (ইমামকে) বলবেন ‘আপনিই অগ্রসর হোন, ইক্বামত আপনার জন্যই দেয়া হয়েছে’। ইমাম আবুল হাসান আল খাস’ঈ আল আবিদী ‘মানাকিবে শাফেয়ী’ গ্রন্থে বলেন, মুতাওয়াতির ভাবে বহু হাদীস বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ঈসা (আ.) এই উম্মতের (ইমাম) মাহদীর পেছনেই সালাত আদায় করবেন। তিনি এটি ইবনে মাজাহ’র হাদীসে আনাস থেকে বর্ণিত [মুনকার রেওয়ায়েত] ((وَلَا مَهْدِيّ إِلَّا عِيسَى)) “ঈসা ব্যতীত আর কোনো মাহদী নেই” (কাদিয়ানী অনুবাদ)-এরই রদ করার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম আবূ ঝার আল হারাভী বলেন, ইমাম আল যাওযাকী কোনো কোনো মুতাকাদ্দিমীনের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ((وَإِمَامكُمْ مِنْكُمْ)) “তখন তোমাদের ইমাম তোমাদেরই মধ্য থেকে হবেন” এ কথার অর্থ হচ্ছে, তিনি (ঈসা) পবিত্র কুরআন দিয়েই রাষ্ট্রপরিচালনা করবেন, ইঞ্জিল কিতাব দিয়ে নয়। ইমাম ইবনে তীন বলেন, ((وَإِمَامكُمْ مِنْكُمْ)) এর অর্থ ((أَنَّ الشَّرِيعَةَ الْمُحَمَّدِيَّةَ مُتَّصِلَةٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامِ وَ أَنَّ كُلَّ قَرْنٍ طَائِفَةٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي الخ)) “নিশ্চয়ই শরীয়তে মুহাম্মদীয়া কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং প্রতি শতাব্দীতে আহলে ইলমগণ থেকে একটি দল (তার সেবায়) বিদ্যমান থাকবে”। ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী। (অনুবাদ সমাপ্ত হল)।

এখন হয়ত কাদিয়ানীবন্ধু বলবে যে, আগত ঈসা একজন “রূপক ঈসা”। কাজেই, হাদীসটির “ইবনু মরিয়ম” বলতেও “রূপক মরিয়ম পুত্র” উদ্দেশ্য! কিন্তু কাদিয়ানীবন্ধুরা হয়ত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইগুলো খেয়াল করে পড়লে জানার কথা যে, তিনি নিজেই তার একটি রচনায় লিখেছেন,

“রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর ভিত্তিতে কসম খেয়ে যা বলেছেন তার ব্যতিক্রম কীভাবে হতে পারে? এই ক্ষেত্রে এই কসমটি সাব্যস্ত করছে প্রদত্ত সংবাদটি বাহ্যিক অর্থেই পূর্ণ হবে এর রূপক অর্থ করা যাবেনা আর কোনো ব্যতিক্রমও হবেনা। আর যদি তাই হয় তাহলে কসম খেয়ে কী লাভ? অতএব অনুসন্ধিৎসু ও গবেষকের ন্যায় চিন্তা করে দেখ।” দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ২৭।

কি বুঝলেন?…. কসমটি সাব্যস্ত করছে প্রদত্ত সংবাদটি বাহ্যিক অর্থেই পূর্ণ হবে এর “রূপক” অর্থ করা যাবেনা!

এখন যিনি নিজেই “রূপক” অর্থ করা যাবেনা বলছেন তাকেই আপনারা কসম সম্বলিত হাদীসের আলোকে আপনারা “রূপক” মসীহ বলে চিৎকার করতেছেন! এটা কি নিজের আক্বল ও বিবেকের সাথে ঠাট্টা মশকরা করা নয়?

এ দেখুন, কসম বা শপথ বাক্য সহকারে বর্ণিত সহীহ বুখারীর হাদীসটি অর্থ সহ,

সহীহ বুখারী (ইফা), অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আ.) (كتاب أحاديث الأنبياء), হাদীস নম্বরঃ ৩২০৫, ((حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏’‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلاً، فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ، وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ، حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‏’.‏ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ‏(‏وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا‏)‏‏.‏))

অনুবাদঃ ‘ইসহাক (রহ.) … আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়মপুত্র ঈসা (আ.) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুয়োর মেরে ফেলবেন এবং তিনি জিজিয়া (রাষ্ট্রীয় কর) পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোতে বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর [ঈসা (আ.) এর] মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩২০৫; ঈসা ইবনে মরিয়ম নাযিল হওয়া শীর্ষক পরিচ্ছেদ)।

হাদীসটির শুরুতেই কসম বা শপথ বাক্যটি আরেকবার দেখুন,

“রাসূল (সা.) বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়মপুত্র ঈসা (আ.) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন।”

এখন এর কী উত্তর?

(লিখাটির উপর কারো কোনো মন্তব্য থাকলে তা মন্তব্যের জায়গায় লিখুন)

  1. আহাদীসুয যু’ঈফাহ শায়খ আলবানী রহ. খ ১ পৃ ৮৯, আল কওলুল মুখতাসার, ইবনু হাজার আল হাইতামী পৃ-৩২ ↩︎

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
Principal NurunNabi
তাং ১৫/০৬/২৪

যার নেক নিয়ত পূর্ণ করতেই মির্যা কাদিয়ানী দুনিয়ায় আসলেন

প্রশ্ন : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে তার দুনিয়ায় আগমন কার আকাঙ্খা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে ছিল?

উত্তর : তদানীন্তন সময়কার প্রতাপশালী ব্রিটিশ নারী ভিক্টোরিয়ার আকাঙ্খা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যেই ছিল তার দুনিয়ায় আগমন। এ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর ভাষায় নিচে খেয়াল করুন, তিনি লিখেছেন-

“হে মহামহিম ভারত সম্রাজ্ঞী! আপনার মহিমা এবং সুনাম মুবারক হোক! খোদার দৃষ্টি (তথা করুণা) সে দেশের উপরই রয়েছে, যে দেশের উপর রয়েছে আপনার দৃষ্টি, খোদার রহমত (তথা সাহায্য) সে জনতার উপরই রয়েছে যে জনতার উপর রয়েছে আপনার হাত (তথা হুকুমত)। আপনার পবিত্র নিয়ত (তথা আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই আল্লাহ আমাকে (রূপক ‘মসীহ’ বানিয়ে) প্রেরণ করেছেন।”

রেফারেন্স : সেতারায়ে কায়সারিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৫/১২০, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী

পরিশেষ : কাদিয়ানীরা বলে, মির্যা গোলাম আহমদ যুগের আকাঙ্খা পূর্ণ করতেই নাকি দুনিয়ায় এসেছিলেন। অথচ মির্যা গোলাম আহমদ লিখেছেন, তিনি রাণী ভিক্টোরিয়ার নেক নিয়ত ও আকাঙ্খা পূর্ণ করতেই দুনিয়ায় এসেছেন!

আমাদের প্রশ্ন, আমরা তাহলে কার কথা সত্য মেনে নেব?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থে নবীজীর ছায়া ও নূর এর তাৎপর্য সম্পর্কে

0

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থের একটি ভুল সংশোধন ও সতর্কতা প্রসঙ্গে,

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থে ‘নবী করীম (সা.)-এর ছায়া থাকা এবং তিনি আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্ট – মর্মে দলীলবিহীন ও মনগড়া যত সব আকীদার উল্লেখ রয়েছে সেসব আকীদা থেকে আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি! কারণ আমি ‘আকীদা’ এর ক্ষেত্রে শুধুই কুরআন এবং সহীহ হাদীস অত:পর মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদারই একনিষ্ঠ অনুসারী। এর বিপরীতে কোনো ব্যক্তি কী বলল তা আমার নিকট কোনো গুরুত্ব রাখেনা। হোক সে ব্যক্তি মর্যাদা ও সম্মানে অনেক বড় জ্ঞানী, কুতুবে জামান কিংবা মুজাদ্দিদে দাওরান!

মূল আলাপে আসা যাক,

মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহিমাহুল্লাহ। একজন সমসাময়িক বিজ্ঞ স্কলার ও ফকীহ। আধ্যাত্মিক ধারার একজন বিখ্যাত পীর সাহেব। উনার অন্যতম রচনা ‘এমদাদুস সুলুক’। রচনাটি আধ্যাত্মিক কনসেপ্ট এর উপরই রচিত। এর মূল ভাষা ফার্সী, সেটিকে উর্দূতে ভাষান্তর করেছেন মওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

আমি এখানে বইটির উর্দূ এডিশন এর ২০১ এবং ২০২ নং পৃষ্ঠা থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি। পাঠকবৃন্দ খুব ভালো করে উর্দূর সাথে আমার অনুবাদটি মিলিয়ে নেবেন। এখানে যে বিষয়টির আলোকপাত করতে চাচ্ছি সেটি হচ্ছে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের একটি আকীদা, যা তিনি সম্পূর্ণ মনগড়া ব্যাখ্যার আলোকে চিত্রিত করে গেছেন। তিনি লিখেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছায়া ছিলনা, তিনি আরও লিখেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনি আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হন এবং তাঁর নূর দ্বারা মুমিনগণ সৃষ্টি হন। অথচ তিনি এর সমর্থনে কোনো দলীল প্রমাণ উল্লেখ করেননি, কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকে কিছুই উদ্ধৃত করেননি। যদিও বা একজন কুতুবে জামান খ্যাত, দারুলউলুম দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় একজন মান্যবর আলেম এবং ফকীহ থেকে এধরণের দলীল বিহীন ও মনগড়া আকীদা কেউই আশা করেনা, করতে পারেনা।

আমি একজন হানাফী মাযহাবের ফলোয়ার ও মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদার অনুসারী। সে হিসেবে আমি মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের উক্ত আকীদার সমর্থন না হানাফী মাযহাবের স্বীকৃত কোনো কিতাবে পেয়েছি, আর না মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদার কোনো কিতাবে পেয়েছি, কোথাও পাইনি। বরং নির্ভরযোগ্য অসংখ্য হাদীসের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হিসেবেই দেখতে পাই। অথচ একথা কারোরই অজানা নয় যে, কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীতে শুধুমাত্র দুর্বল রেওয়ায়েত কিংবা উম্মাহার প্রধান প্রধান ইমামগণের নিজেস্ব মত দ্বারা আকীদার কোনো বিষয় কখনোই সাব্যস্ত হয়না।

এবার রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের কিতাব থেকে হুবহু অনুবাদ তুলে ধরছি। যাতে উম্মাহ তাঁর মত একজন বিশিষ্ট ফকীহ ও আল্লামার নিজেস্ব মত ও বক্তব্য দ্বারা বিভ্রান্ত না হন। মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী লিখেছেন,

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ এখানে

(এমদাদুস সুলুক পৃ-২০১ থেকে শুরু) আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ভাষায় বলেন, ((قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে নিজের নফসের তাযকিয়া ও পরিশুদ্ধি করেছে। (সূরা আ’লা আয়াত ১৪)।

অর্থাৎ মোজাহাদার তরবারি দ্বারা নফসের কামনা বাসনার কদার্যতা কেটে ফেলেছে। উল্লেখ্য সায়ের ও পরিভ্রমনের কারণে মানুষের নফস আলোকিত হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা আপন হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে বলেছেন, ((قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ)) অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়েদা আয়াত ১৫)। এখানে ‘নূর’ দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর পবিত্র সত্তা উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ((يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذْنِهِۦ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا)) অর্থাৎ হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে একজন সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, ভয়প্রদর্শনকারী, আল্লাহর দিকে তারই নির্দেশে আহ্বানকারী এবং সিরাজাম মুনীরা তথা আলোকবর্তিকা প্রদীপ স্বরূপ বানিয়ে প্রেরণ করেছি (সূরা আহযাব আয়াত ৪৬)।

‘মুনীর’ অর্থ আলোকদাতা। যিনি অন্যকে আলো প্রদান করেন। যদি অন্যকে আলোকিত করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব হতো, তাহলে এ যোগ্যতা ও কামাল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভেতরে পাওয়া যেত না। কারণ তিনি তো আদম সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আপন সত্তাকে এত পুতঃপবিত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন যে, নির্মল নূরে পরিণত হয়েছিলেন। পরন্তু আল্লাহতালাও তাঁকে ‘নূর’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রসিদ্ধ মতে সাব্যস্ত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না। অথচ দেহ বলতেই তার ছায়া থাকে। কেবল নূরেরই কোনো ছায়া থাকে না। যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নূর বা আলোকবর্তিকা ছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও নূরে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাদের কারামতের বর্ণনা দ্বারা কিতাব ভরপুর। এমনকি সেগুলো এত প্রসিদ্ধ যে, বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ((وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُ)) অর্থাৎ যারা আমার হাবীবের প্রতি ঈমান এনেছে তাদের নূর তাদের সামনে এবং ডানে ছুটাছুটি করতে থাকবে। (সূরা তাহরীম আয়াত ৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ((يَوْمَ تَرَى ٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَٰنِهِم)) অর্থ- স্মরণ কর সেদিনটি যেদিন মুমিন পুরুষ ও নারীদের দেখবে, তাদের নূর ছুটছে তাদের সামনে ও ডানে। (সূরা হাদীদ আয়াত ১২)।

(তারপর ‘এমদাদুস সুলুক‘ পৃ-২০২ থেকে শুরু) আল্লাহতালা আরো বলেছেন, ((يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ)) অর্থ- ঐ দিনকে স্মরণ কর, যেদিন মুমিনদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ছুটবে। মুনাফিকরা বলবে, একটু থামো! আমরাও তোমাদের আলো থেকে কিছু জ্যোতি নেব। (সূরা হাদীদ আয়াত ১৩)।

আলোচ্য আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ দ্বারা ঈমান ও নূর উভয়টি সাধিত হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তায়ালা আপন নূর দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন সকল মুমিনকে।”

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়াও করেছেন, “আমার পরওয়ারদিগার! আমার কান, চোখ ও কলবকে নূর বানিয়ে দিন, বরং আমাকেই নূর বানিয়ে দিন।” যদি মানুষের নফস আলোকিত হওয়া অসম্ভব হতো, তাহলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়া কখনোই করতেন না। কেননা উলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে অসম্ভব কাজের দোয়া করাও নিষেধ। হযরত আবুল হাসান নূরী (রহ.)-কে ‘নূরী’ বলার কারণ হচ্ছে, বহুবার তার থেকে নূর দেখা গিয়েছিল। এভাবে অসংখ্য আউলিয়া, সাধারণ ও শহীদের কবর থেকে নূর উঠতে দেখা যায়।

এটি মূলত তাঁদের পবিত্র আত্তারই ‘নুর’। কেননা যখন নফসের কাজ উচ্চাঙ্গের হয়ে যায়, তখন তার নূর সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর তা শরীরের মেজাজ ও স্বভাবে পরিণত হয়। এরপর যদি নফ্স শরীর থেকে আলাদাও হয়ে যায়, তবুও সে শরীর নূরের অনুরূপ উৎস ও কেন্দ্রস্থল থেকে যায়, যেমন ছিল জীবদ্দশায় নফস বাকি থাকা অবস্থায়।

(সম্পূর্ণ দুই পৃষ্ঠার অনুবাদ সমাপ্ত হল)

রেফারেন্সঃ এমদাদুস সুলুক (امداد السلوك ), ২০১-২০২, মূল লিখক মওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, উর্দূ অনুবাদ মওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

শেষকথাঃ উপরে তার দীর্ঘ আলোচনা হতে আমি যা বুঝলাম তার আলোকে বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব রাসূল (সা.)-কে ‘রূপকার্থেই নূর’ বলেছেন। নইলে তিনি একই লাইনের শেষাংশে ‘মুমিনগণ তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি’ – একথার কোনো অর্থই থাকেনা। তিনি এ ক্ষেত্রে দলীল বিহীন আরেকটি কথা লিখেছেন যে, “প্রসিদ্ধ মতে সাব্যস্ত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না।” তাঁর উপস্থাপনার ধরণ থেকে দুটি বিষয়ের যে কোনো একটি খুবই পরিষ্কার। তা হচ্ছে,

১. ছায়া ছিল না – এটি তাঁর আকীদা ছিলনা। বড়জোর তিনি ‘প্রচলিত আকীদা’ অনুসারেই এটি উদ্ধৃত করেছিলেন মাত্র। যেহেতু তিনি কোনো নস তথা গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই এটি লিখেছেন এমনকি কথার শুরুতেই ‘প্রসিদ্ধ মতে’- শব্দে শর্ত আরোপ করেছেন।

২. ছায়া ছিল না, এটি তাঁর নিজেস্ব আকীদা, আর একথাই বাস্তব বলে বুঝা যায়। যেহেতু তিনি রাসূল (সা.)-কে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আলোকে ‘নূর’ সাব্যস্ত করার ধারাবাহিকতায় ঐ কথাটুকু টেনে এনেছেন। আর শেষে লিখেছেন, “অথচ দেহ বলতেই তার ছায়া থাকে। কেবল নূরেরই কোনো ছায়া থাকে না।”

তিনি এটুকু বলেই কথা শেষ করেননি। বরং তিনি একই লাইনের শেষাংশে আরও লিখেছেন,

“যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নূর বা আলোকবর্তিকা ছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও নূরে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।”

বলাবাহুল্য যে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব তাঁর ঐ কথা দ্বারা সাধারণদের মনে একটা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেলেন। সেটি হচ্ছে, তাহলে কি একই যুক্তিতে রাসূল (সা.)-এর সকল অনুসারীর-ও ছায়া থাকেনা বলেই সাব্যস্ত হল না? অবশ্যই সাব্যস্ত হচ্ছে। নতুবা “তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও ‘নূরে’ পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন”- তার এ কথার কী অর্থ?

আসলে মওলানা গাঙ্গুহী সাহেবের উপরিউক্ত কথাবার্তাগুলো শতভাগ আধ্যাত্মিক ও রূপকার্থেই ধর্তব্য ; নইলে তাঁর উক্ত কথাবার্তায় যে পরিমাণে অসঙ্গতি বিদ্যমান, তা বলাইবাহুল্য।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ অ্যাডমিন ফিকহ মিডিয়া

তারিখ ১৫/০৫/২৪

ইস্তিসকা কী? হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া

0

ইস্তিসকার সালাত কিংবা দোয়া, কোনটি হানাফী মাযহাবের মুফতাবিহি মত? ইস্তিসকা অর্থ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা। হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া সাহেবাইন এবং জামহূরের মতের উপর, তথা ইস্তিসতার সময় দুই রাকাত সালাতের শরয়ী হুকুম হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য ৬টি গ্রন্থের অন্যতম ‘আল মাবসূত’ থেকে,

“সালাতুল ইস্তিসকার অধ্যায়। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ. বলেন, আমি (ইমামে আ’যমকে) জিজ্ঞেস করলাম : ইস্তিসকার সালাত বলতে কিছু কি আছে? তিনি উত্তরে বললেন, ইস্তিসকার মধ্যে কোনো সালাত (প্রমাণিত) নয়। বড়জোর তাতে ‘দোয়া’ রয়েছে। আমি (তারপর) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি (ইস্তিসকার) সালাতের জন্য (মানুষকে) একত্রিত হবার এবং ইমাম স্বশব্দে ক্বিরাত পড়ার মত (রায়) দেননা? তিনি প্রতিউত্তরে বলেন, না; আমি এ ব্যাপারে এ রূপ মত দিইনা। তার কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি (ইস্তিসকার) জন্য বের হন এবং দোয়া করেন। (আরও কারণ এ যে) হযরত উমর রা. (একদা ইস্তিসকার জন্য) মিম্বারে আরোহন করেন এবং দোয়া করেন এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। অধিকন্তু আমাদের নিকট ‘ইস্তিসকার সালাত’ সংক্রান্ত একটি ‘শায’[1] হাদীস ব্যতীত এমন কোনো হাদীস পৌঁছেনি যেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। (ইমাম মুহাম্মদ আরও লিখেন) তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, (ইস্তিসকার সময়) ইমাম বা গোত্রের যে কেউই নিজ (শরীরের) চাদর উল্টিয়ে (আকাশের দিকে মেলে ধরে) ‘দোয়া’ করা কি মুস্তাহাব হবে? তিনি উত্তরে বললেন, (সহীহ হাদীস পাওয়া না যাওয়ায়) এ ধরণের কাজ মুস্তাহাব হবেনা। (ইমাম মুহাম্মদ বলেন, উপরের দীর্ঘ) মতটি ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর।

ইমাম শাফেয়ীর বিশিষ্ট উস্তাদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান বলেন, আমার মতে ইমাম ইস্তিসকার সালাত পড়বে, এবং ঈদের সালাতের মতই পড়বে। খোতবার পূর্বেই সালাত আরম্ভ করবে। তবে তাতে ঈদের সালাতের মত কোনো তাকবীর বলবেনা। কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে ইস্তিসকা সংক্রান্ত সংবাদ এসে পৌঁছেছে, এমন সংবাদও এসে পৌঁছেছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. ইস্তিসকার সালাত পড়তে নির্দেশও দিয়েছেন।”

– আল মাবসূত খ-১ পৃ-২৩৬, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ.

শেষকথা, উক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে মুফতাবিহি কওল বা চূড়ান্ত ফাতাওয়া হিসেবে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমামদ্বয় ‘সাহেবাঈন’ এর মতটি-ই ধর্তব্য। আরও সহজ করে বললে, ফিকহে হানাফীর চূড়ান্ত মত হিসেবে এখানে ইমাম মুহাম্মদ এবং ইমাম আবূ ইউসুফ (عليهما الرحمة) এর মতের উপরই ফাতাওয়া। সুতরাং আর কোনো বিতর্ক রইল না। আল্লাহু আ’লাম।

টিকা : [1] শায :  হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহ. শায হাদীসের সংজ্ঞায় বলেন ((مخالفة المقبول لمن هو أولى منه)) অর্থ-মাকবুল রাবীর তার চেয়ে উত্তম রাবীর বিরোধিতা করা শায”। (আন নুযহা-النزهة পৃ-৯৮)। এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহীহ ও হাসান হাদীসের রাবী। আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সিকাহ রাবী। অর্থাৎ মাকবুল রাবী একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সিকাহ রাবীর বিরোধিতা করলে তার হাদীসকে শাস্ত্রীয় ভাষায় শায বলে। আর শায হাদীস দলীলযোগ্য নয়। ইমামে আ’যম রহ. এর বিচার বিশ্লেষণে ইস্তিসকার মধ্যে ‘সালাত’ সংক্রান্ত কোনো হাদীস বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে পৌঁছেনি, আর যে-ও একটা হাদীস পৌঁছেছিল সেটি তাঁর বিবেচনায় ‘শায’ পর্যায়ের ছিল। তাই তিনি ঐ বর্ণনার উপর নির্ভর করেননি।

লিখক ও অনুবাদক – মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

নতুন নতুন “নবী” এর কনসেপ্ট কাদিয়ানীদের বই-পুস্তকে

0

নতুন নতুন “নবী” এর কনসেপ্ট কাদিয়ানীদের বই-পুস্তকে,

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ লিখেছেন, “যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরে রাখা হয় আর আমাকে বলতে বলা হয় যে, তুমি বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোনো নবী আসতে পারেনা! তাহলে আমি অবশ্যই বলব যে, তুমি মিথ্যাবাদী ও মহা মিথ্যুক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবী আসতে পারে, অবশ্যই আসতে পারে।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৭, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা বশির একই গ্রন্থের আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখেছেন, “তারা মনে করছে যে, আল্লাহতালার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে, তাই তিনি (এখন) কাউকে কিছুই দেন না। তেমনিভাবে এও বলে যে, কোনো কেউ দুনিয়াবিরাগী এবং খোদাভীরুতায় ও তাকওয়া আর পরহেজগারীতে কতেক নবী অপেক্ষায় যতই অগ্রে পৌঁছে যায় না কেন, সে যত বেশিই খোদার মা’রেফত (দর্শন) লাভ করেনা কেন; কিন্তু খোদা তাকে কখনোই নবী বানাবেন না। তাদের এইরূপ মনে করার কারণ হচ্ছে খোদাতালার মর্যাদা বুঝতে না পারা। অন্যথা নবী শুধুই একজন কেন! আমি তো বলি, হাজার হাজার নবী হবেন।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৪, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর উপর সমস্ত সাহাবীর ইজমা হবার কাদিয়ানী দাবীর ভিত্তি কী?

0

ঈসা (আ.) সম্পর্কে ইসলামের প্রথম দুই খলীফার দৃষ্টিভঙ্গি ও সংশয় নিরসন,

সাধারণ কাদিয়ানীবন্ধুদের সম্পর্কে যখনি আলাপে যাই তখনি দুইচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আহা! এরা কতই না প্রতারণার শিকার! হায়, যদি ওরা বুঝতো!! সাধারণ কাদিয়ানীবন্ধুদের দুর্বলতা হচ্ছে, পড়াশোনা ছেড়ে তাদের মু’আল্লিম কিবা মুরুব্বী সিলসিলার কাল্টদের যাইচ্ছেতাই অপব্যাখ্যাগুলো তোতাপাখির মত গিলতে থাকা, তাহকিক না করা। ফলে তারা তাদের সূক্ষ্ম জালিয়াতিগুলোও বুঝতে পারে না। যেমন, প্রত্যেক কাদিয়ানীই হযরত উমর (রা.) সম্পর্কে বয়ান দিয়ে থাকে যে, তিনি বলেছিলেন, ‘যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাকে আমার এই তলোবারি দ্বারা হত্যা করব।’ কিন্তু হযরত উমরের একই বক্তব্যের পরের অংশটুকু কোনো কাদিয়ানী বলেনা। কেননা, তারা তাদের মুরুব্বী সিলসিলার কাল্টদের কাছ থেকেও এটুকুই শুনে আসছে। অথচ হযরত উমরের ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর (রা.) যে আয়াতটি তেলাওয়াত করেছিলেন তা হতে কাদিয়ানীরা ঈসা (আ.) বিষয়ে যে কনসেপ্ট দাঁড় করে সেটি হযরত উমরের একই বক্তব্যের পরের অংশটি দ্বারা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যায়। মূলত তারা তাদের অপব্যাখ্যামূলক উক্ত জালিয়াতি টিকানোর উদ্দেশ্যেই উমর (রা.)-এর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি পেশ করার সাহস রাখেনা।

এবার হযরত উমর (রা.)-এর একই বক্তব্যের পরের অংশটি দেখুন, তিনি আরও বলেছিলেন, ((و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى ابن مريم عليه السلام)) এর মানে হল, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে যেমনিভাবে ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” (আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/২৪; ইমাম শাহরাস্তানী)। মির্যা কাদিয়ানী হযরত উমরের বক্তব্যের শেষের অংশটি নিজেও তার বইতে লিখে গেছেন। এজন্য মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ এর খণ্ড নং ১৫ এবং পৃষ্ঠা নং ৫৮১ দেখা যেতে পারে। আফসোস! এত নিকৃষ্ট জালিয়াতি করার চরিত্র যাদের তাদের অনুসারীরা তোতাপাখির মত নির্বিঘ্নে সব বিশ্বাস করে থাকে, তাহকিক করার প্রয়োজনও বোধ করছেনা।

বলাবাহুল্য, হযরত উমর (রা.)-এর উক্ত সম্পূর্ণ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত আবুবকর (রা.) সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতটি উপস্থিত সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, ((من كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات و من كان يعبد اله محمد فانه حى لا يموت و قرأ هذه الاية و ما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ)) এর অর্থ হল, “যে মুহাম্মদ (সা.)-এর ইবাদত করে থাকে (সে যেন জেনে নেয়) মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভুর ইবাদত করে থাকে (তার জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। (তারপর) আবুবকর এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, ((وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ)) অর্থ-মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র তাহার পূর্বে রাসূলগণই গত হইয়া গিয়াছেন”। মজার ব্যাপার হল, হযরত আবুবকর (রা.)-এর উক্ত আয়াত পেশ করার ভেতরে প্রচ্ছন্ন একটি উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হচ্ছে, মুহাম্মদ (সা.) কোনো প্রভূ বা খোদা ছিলেন না যে, তাঁর মৃত্যু হতে পারেনা। তিনি শুধুই একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বেও গত হয়ে যাওয়া প্রত্যেকেই ছিলেন রাসূল। তিনিও সেসব রাসূলের মতই গত হয়ে গিয়েছেন। কাজেই তাঁর মৃত্যুতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। হযরত আবুবকর (রা.) মূলত এ ম্যাসেজটাই দিতে চেয়েছিলেন। এখন হযরত আবুবকর (রা.)-এর উক্ত আয়াতে কারীমাহ’র তেলাওয়াত হতে ঈসা (আ.)-কেও ‘মৃত’ সাব্যস্ত করতে হলে নিচের প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর থাকেনা।

১. হযরত উমর (রা.)-এর যে বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর (রা.) و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটির দীর্ঘ আলোকপাত করলেন তিনি উমরের বক্তব্যের শেষের অংশের উপর কিজন্য দ্বিমত করলেন না? তিনি তো পরিষ্কার বলে দিতে পারতেন যে, হে উমর! ঈসা নবীও মরে গেছেন! তাই তোমার এ কথাও ঠিক না। কিন্তু আবুবকর (রা.) তো এভাবে তখন বলেননি!

বলে রাখা দরকার, উল্লিখিত প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে না পেরে হয়ত ওরা বলতে পারে, “ঈসা নবীকেও সমস্ত নবীর মতই আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।” কিন্তু ওরা জানে না যে, ঈসা নবীর মত অন্য সমস্ত নবীর ‘রাফা’ (উঠিয়ে নেওয়া) হযরত জিবরাইল ফেতেশতার মাধ্যমে হয়নি, বরং আজরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে হয়েছিল। সুতরাং সব ধরণের ‘রাফা’ মুক্ত অর্থে উদ্দেশ্য হবেনা। সাধারণ কাদিয়ানীদের গোলকধাঁধাটা-ই এখানে। যথা- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন ((لَمَّا اِجْتَمَعَ الْيَهُوْدُ عَلَى عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ لِيَقْتُلُوْهُ وَ أَتَاهُ جِبْرَائِيْلُ … فاَوْحَى اللهُ اِلَى جِبْرَائِيْلَ اَنِ ارْفَعْ اِلَيَّ عَبْدِيْ)) “যখন ইহুদীরা ঈসা (আ.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে সমবেত হলো তখন জিবরাইল (আ.) তাঁর নিকট আগমন করেন…আল্লাহতালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা (ঈসা)-কে আমার নিকট উঠিয়ে নিয়ে এসো।” (তারীখে দামেস্ক ৪৭/৪৭২; তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯, সনদ সহীহ – তাহকীক শায়খ আলবানী রহ.)।

তারপর বাকি থাকল, كما رفع (কামা রুফি’আ) অর্থ ‘যেমনিভাবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে’- এখানে হযরত উমর “কামা” শব্দে রাসূল (সা.)-কে ঈসার সাথে ‘মৃত্যুবরণ না করা’-এর দিক থেকে তাশবীহ (তুলনা) করেছেন, এটুকু পরিষ্কার। আর ঈসা (আ.)-এর মতই রাসূল (সা.)-কেও ‘আকাশে’ উঠিয়ে নেয়ার তাশবীহ’র কারণ, হযরত উমর (রা.) যখন রাসূলের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পান তখন তিনি নিকটে ছিলেন না। অন্যথা তিনি রাসূল (সা.)-এর মৃত্যু শোকে যতই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হন না কেন, তিনি রাসূল (সা.) সম্পর্কেও ‘আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে’ বলে উক্তি করতেন না। কারণ ঐ মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর শরীর মোবারক আয়েশা (রা.)-এর হুজরাতে-ই বিদ্যমান ছিল! সংক্ষেপে।

২. যদি و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন’ বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে তিনি আয়াতটিতে قد خلت ধরণের ‘মুশতারিক’ (ব্যপকার্থবোধক) শব্দ রাখতেন না। তিনি মওত বা قد ماتت ধরণের খাস তথা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ-ই রাখতেন। এখন তাঁর এ ‘মুশতারিক’ শব্দ নেয়ার হিকমত কী? জেনে রাখা জরুরি যে, উক্ত আয়াতটির ‘গত হইয়া গিয়াছে’ বলতে রূপক অর্থে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে এবং সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে (উভয় পদ্ধতিতে) ইহজগত থেকে স্থানান্তরিত হওয়া-ই বুঝানো উদ্দেশ্য। এটাই আল্লাহ’র উক্ত ‘মুশতারিক’ শব্দ গ্রহণের হিকমত বা রহস্য।

৩. রাসূল (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ দ্বিতীয় কেউই ভালো বুঝার দাবী করতে পারেনা। তিনিই কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁরপর কুরআনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। ফলে সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, যদি و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন’ বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে রাসূল এবং তাঁর সকল সাহাবী কিভাবে হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমনে বিশ্বাস রাখতে পারেন?

৪. এখন হয়ত কোনো কাদিয়ানী কাল্ট বলতে পারে যে, আয়াতটির পুরাতন কোনো অর্থ বা ব্যাখ্যা সে মানবেনা। সে মির্যা কাদিয়ানী আর তার খলীফাদের কৃত অর্থই মানবে। তার জন্য তাদের প্রথম খলীফা হেকিম নূরুউদ্দীনের কৃত অনুবাদটি এখানে তুলে ধরা হল। হেকিম নূরউদ্দীনের বইতে আয়াতটির অর্থ উর্দূতে উল্লেখ আছে এভাবে যে, ((اور محمد تو ایک رسول ہے پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے پھر کیا اگر وہ مر جائے یا قتل کیا جاوے تو پھر جاؤ گے الٹے پاؤں پر (فصل الخطاب لمقدمة اہل الکتاب))) অর্থ-মুহাম্মদ তো একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে ‘বহু রাসূল’ হইয়েছিল। যদি তিনি মারা যান অথবা হত্যা হইয়া যান, তাহলে কি তোমরা পেছনে (বাপ-দাদার ধর্মে) ফিরিয়া যাইবে? (ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা ২৮; রচনাকাল ১৮৮৭-৮৮ইং দ্রষ্টব্য)। প্রিয় কাদিয়ানীবন্ধু! হেকিম নূরউদ্দীন থেকে و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটির অর্থ- (پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے-উচ্চারণ : পহেলে উস চে বহুত রাসূল হো চুকে) তথা “তাহার পূর্বে ‘বহু রাসূল’ হইয়াছিলো”। এবার পারলে এ অর্থ হতে ‘ঈসা (আ.)-কে মৃত’ সাব্যস্ত করে দেখান!

৫. তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার তাওয়াতূর স্তরীয় আকীদা কেমন তা পেশ করা হল, ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) সূরা যুখরুফ-এর ৬১ নং আয়াতের বিশ্লেষণে মুসলমানদের ধারাবাহিক (ইজমায়ী) আকীদা সম্পর্কে লিখেছেন ((وقد تواترت الأحاديث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، أنه أخبر بنزول عيسى عليه السلام قبل يوم القيامة إماما عادلا، وحَكَما مقسطا)) অর্থাৎ রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত তাওয়াতূর স্তরীয় হাদীসসমূহ সংবাদ দিচ্ছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম কিয়ামতের আগে একজন ন্যায়পরায়ণ ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসকরূপে অবতরণ করবেন। ইবনে কাসীর, ১২/৩২৩, সূরা যুখরুফ ৬১ দ্রষ্টব্য। এখন প্রশ্ন হল, উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ধারাবাহিক আকীদা পরিপন্থী و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতের সেই অর্থ কিভাবে সঠিক হতে পারে যেটি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ধারাবাহিক আকীদার বিরুদ্ধে!?

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
অ্যাডমিন- রদ্দে কাদিয়ানী (গুগল অ্যাপ)