Home Blog Page 3

সোলাইমান নবী (আ.) এর স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যাটি কেমন?

প্রশ্ন : হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যাটি নিয়ে আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি। আপনি কি আমাকে এর বিহিত একটা সমাধান দিতে পারবেন?

উত্তর : হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে সহীহ গ্রন্থের হাদীস সমূহে নানা অংক উল্লেখ রয়েছে। যেমন এক জায়গায় উল্লেখ আছে, হযরত সোলাইমান (আ.) বলেছিলেন,

لأَطُوفَنَّ اللَّيلَةَ بِمِائَةِ امرَأَةٍ

অর্থাৎ “আজ রাতে আমি নিশ্চয়ই একশত স্ত্রীর নিকট পরিভ্রমণ (সহবাস) করব।” আপনি যদি সহীহ গ্রন্থগুলো সহ হাদীসের অপরাপর সোর্সগুলোও দেখেন তবে দেখবেন যে, সেখানে হযরত সোলাইমান (আ.) কোনো এক রাত্রিতে নিজ স্ত্রীদের মধ্য থেকে ৬০, ৭০, ৯০, ৯৯ বা ১০০ জন স্ত্রীর নিকট গমনের ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ আছে। (বুখারী হা/২৮১৯, ৩৪২৪, ৫২৪২, ৬৬৩৯, ৭৪৬৯; মুসলিম হা/১৬৫৪; মিশকাত হা/৫৭২০)।

ইমাম বুখারী ঐতিহাসিক অসঙ্গতিপূর্ণ বিবরণগুলো তাহলে কিজন্য গ্রন্থবদ্ধ করলেন?

উত্তরে বলা হবে যে, ইমাম বুখারী (রহ.) বিভিন্ন সনদে ঐতিহাসিক বিবরণটি নিজ সহীহ গ্রন্থে শুধুমাত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এনেছেন, স্ত্রীদের সংখ্যা জানান দেয়ার জন্য আনেননি। কারণ এধরণের ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখের মধ্যে সাধারণদের তেমন কোনো উপকারিতা থাকেনা।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারী গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন যে, বর্ণনাগুলোতে সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা মূখ্য নয়, বরং ইন-জেনারেল ঘটনার অবতারণা করাই উদ্দেশ্য।

শারেহে মুসলিম ইমাম নববী (রহ.) আরও সুন্দর কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,

ولا نرى داعياً إلى استقصاء نسائه وحصرها إذ لا يَنْبَنِي على ذلك أمر ديني أو دنيوي

অর্থাৎ আমরা তার স্ত্রীদের (প্রকৃত সংখ্যার) তদন্ত এবং (নির্দিষ্ট সংখ্যায়) সীমাবদ্ধ করার কোনো কারণ দেখি না, কারণ এটি কোনো ধর্মীয় বা পার্থিব বিষয়ের উপর ভিত্তি রাখে না।

যারা ইতিহাসের ছাত্র তাদের জানা থাকার কথা যে, সাধারণত ঐতিহাসিক যে কোনো ঘটনার বর্ণনাকারীদের জন্য সেটিকে স্পেসিফিকভাবে (প্রকৃত সংখ্যা) তুলে ধরা সম্ভব হয়না, মতভেদ হয়ে থাকে। কারণ হচ্ছে, ঘটনাগুলো একাধিক চেইনে বর্ণিত থাকে, ফলে চেইনগুলোর প্রথমদিকের কোনো রাবী যদি ভুল করেন তাহলে পুরো ব্যাপারটাই উলোটপালোট হয়ে যেতে বাধ্য।

উল্লেখ্য, হযরত সোলাইমান (আ.) এর মৃত্যু আনুমানিক ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। এতে সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁর (আ.) যুগের মাঝখানে প্রায় দেড় হাজার বছরের ব্যবধান। যার ফলে সাহাবায়ে কেরামগণ উক্ত ঘটনার প্রকৃত সনদ বা চেইনের শেষাংশের রাবী হওয়ায় তাঁদের কাউকে উক্ত ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা ঠিক হবেনা। কাজেই ইমাম বুখারী (রহ.) কর্তৃক সহীহ গ্রন্থে এ সকল মতভেদপূর্ণ সংখ্যা উল্লেখ করা নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ নেই। বলাবাহুল্য, ইমাম বুখারী (রহ.) নিজ গবেষণার বিচারে ৯০ জনের হাদীসটিকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। সে যাইহোক, ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে ইস্রাঈলী সোর্স কিতাবুল মুকাদ্দাসের ভাষ্য হচ্ছে,

أن سليمان “كَانَتْ لَهُ سَبْعُ مِئَةٍ مِنَ ٱلنِّسَاءِ ٱلسَّيِّدَاتِ، وَثَلَاثُ مِئَةٍ مِنَ ٱلسَّرَارِيّ

“সোলাইমান (আ.) এর সাতশত স্ত্রী ও তিনশত উপপত্নী ছিল।” এরই উদ্ধৃতি টেনেছেন প্রখ্যাত মুফাসসির ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) তাঁর ঐতিহাসিক রচনা ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যেও। বিখ্যাত ইসলামী ডিবেটার ও দাঈ ডক্টর আহমেদ দীদাত (রহ.) তার একটি লেকচারেও সোলাইমান (আ.) এর স্ত্রীর সংখ্যা কত, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে ইস্রাঈলীদের সোর্স থেকে অনুরূপ তথ্য দিয়েছেন।

বলে রাখতে চাই যে, আসলে যারা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক রেওয়ায়েতগুলোর উপর আঙ্গুল উঁচিয়ে সাহাবীদের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করতে চাচ্ছেন তাদের বুঝা উচিত যে, ধরুন আজকের এ দিনে কোনো ডাকাতদলের হাতে আপনার গ্রামে এক সাথে ১৫/২০ জন মানুষ খুন হল। এমতাবস্থায় আগামী একশত বছর পরেও কি এ হিসেব একই থাকবে নাকি বদলেও যেতে পারে? অবশ্যই বদলে যেতে পারে। কেননা ঘটনার বর্ণনাকারীদের দুর্বলতা হেতু সময়ের ব্যবধানে হিসেব বদলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তার অর্থ এই নয় যে, এ জন্য মূল ঘটনাটিই ভিত্তিহীন হয়ে যাবে। হযরত সোলাইমান (আ.) এর স্ত্রীগণের প্রকৃত হিসেবটিকেও একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। যেহেতু এখানে স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানান দেয়া মূখ্য নয়, বরং ঘটনাটির মাধ্যমে নবীদের শক্তি ও ক্ষমতার বিশেষত্ব বর্ণনা দেয়াই মূখ্য। একই রাতে এত জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করার শক্তি ও সামর্থ্য কেবল নবীরই থাকতে পারে। উল্লেখ্য, একজন নবী দুনিয়ার জীবনেই জান্নাতি ৪০ জন শক্তিশালী পুরুষের সমপরিমাণ শক্তি একাই প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তাছাড়া স্ত্রীদের সংখ্যা বর্ণনার বাহ্যিক এই ভিন্নতা জামহূর উসূলবিদগণের দৃষ্টিতে পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়। কারণ ছোট সংখ্যা উল্লেখের দ্বারা বড় সংখ্যা নাকচ হয়ে যাবেনা।

ঐতিহাসিক ঘটনার বৃত্তান্তে ইন-জেনারেল উপস্থাপনা এবং স্পেসিফিক সংখ্যা বর্ণনায় বিভিন্নরকম হওয়ার দৃষ্টান্ত স্বয়ং পবিত্র কুরআনেও বিদ্যমান। যেমন, সূরা কাহাফ এর ২২ নং আয়াতের মধ্যে আসহাবে কাহাফের (গুহাবাসীদের) ঐতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করতে গিয়ে আল্লাহ তালা বলছেন, “অচিরেই তারা বলবে, ‘তারা ছিল তিনজন; তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর।’ কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল পাঁচজন; তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর।’ ওরা অজানা বিষয়ে অনুমান (তীর) চালায়। আর কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল সাতজন; তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর।’ বল, ‘তাদের সংখ্যা আমার প্রতিপালকই ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে।’ সুতরাং সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং তাদের কাউকেও তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করো না।” (কাহাফ)।

খেয়াল করুন, আল্লাহ চাইলে সঠিক সংখ্যাটি বলে দিতে পারতেন, কিন্তু বলেননি। কেননা এটি নিছক একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। এখানে ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণই মূখ্য, স্পেসিফিক সংখ্যা বলে দেয়াতে উম্মাহ’র কোনো উপকারিতা নেই।

দীর্ঘ আলোচনার সামারী হচ্ছে, এ সকল ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হ’ল,

إذَا حَدَّثَكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فلَا تُصَدِّقُوهُمْ وَلَا تُكَذِّبُوهُمْ ، وَقُولُوا: آمَنَّا بِاللهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ ، فَإِنْ كَانَ حَقًّا لَمْ تُكَذِّبُوهُمْ ، وَإِنْ كَانَ بَاطِلًا لَمْ تُصَدِّقُوهُمْ

অর্থাৎ আহলে কিতাবী তথা ইসরাঈলীরা তোমাদেরকে যখন কোনো কথা বর্ণনা করবে তখন তাদের কথাকে সত্যায়ন করবেনা এবং মিথ্যাও বলবেনা। তোমরা বরং বলবে, আমরা আল্লাহ এবং তাঁর কিতাব সমূহ এবং সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। কেননা যদি তা সত্য হয়ে থাকে তাহলে তোমরা তাকে মিথ্যা বলতে পারো না, আর যদি বাতিল (মিথ্যা) হয়ে থাকে তাহলে তোমরা তা সত্যায়ন করতে পারো না। (মুসনাদে আহমদ)।

এতে বুঝা গেল, ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ ইসলামের আকায়েদ ও মৌলনীতির বিরোধী না হলে তার ব্যাপারে সত্য বা মিথ্যা কোনো মন্তব্য করা যাবেনা। (আবুদাউদ হা/৩৬৪৪; আহমাদ হা/১৭২৬৪; সহীহাহ হা/২৮০০)। যেজন্য, ইমাম বুখারী (রহ.) এর উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাটিই যেহেতু ওহী নয়, বড়জোর ইসরাঈলীদের বিভিন্ন চেইন থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, সাহাবায়ে কেরামগণও কোনোদিন প্রশ্ন তুলেননি; রাসূল (সা.) থেকেও এগুলোর সত্য বা মিথ্যা হওয়ার স্পেসিফিক কোনো দৃঢ় ফরমান নেই, সেহেতু উম্মাহ’র দায়িত্ব হচ্ছে, এ ব্যাপার গুলোকে ঐতিহাসিক জায়গা থেকে মূল্যায়ন করা, সত্য বা মিথ্যা কোনটাই মন্তব্য না করা। পবিত্র কুরআনের শিক্ষামতে, এ ধরনের প্রেক্ষিতে (Situation) নিশ্চিত জ্ঞান ব্যতীত যারা বিতর্ক করতে চায় তাদের কারও সাথে তর্কে না জড়ানো (কাহাফ ২২)। আল্লাহ আমাদেরকে হাদীস অস্বীকারকারী নির্বোধবন্ধুদের বাড়াবাড়ি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী – শিক্ষাবিদ ও গবেষক

পশ্চিমাদের নিকট কাদিয়ানীরা এত জামাই আদুরে কেন?

পশ্চিমাদের নিকট কাদিয়ানীরা এত জামাই আদুরে কেন? রহস্য কী??

উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞগণ বলে গেছেন যে,

এর সব চেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে, পশ্চিমাদের স্বার্থে সব সময় নিঃশর্তভাবে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এ গোষ্ঠীটি। সম্প্রতি পাক সরকারের কারাগারে বন্দী থাকা অসংখ্য কাদিয়ানীর বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে, যা প্রমাণিত। দেশটির অন্যতম শক্তিশালী দৈনিক জঙ্গ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত নিউজ প্রায় প্রতিবারই করা হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীরা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সরকারি জরুরি নথিপত্র শত্রুদেশে পাচারে সক্রিয়। তারা যে সমস্ত অমুসলিম শত্রু দেশগুলোর পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে লিপ্ত তন্মধ্যে ভারত, ইংল্যান্ড এবং ইঙ্গ-মার্কিন ও ইজরায়েল অন্যতম।

দ্বিতীয় যে কারণটি সেটি পশ্চিমাদের নিকট খুব বেশি একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মুসলমানদের জন্য খুবই ভাবনার বিষয়। সেটি হচ্ছে,

কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে পশ্চিমা মিডিয়া দুনিয়ার সামনে “মুসলমান” হিসেবে হাইলাইট করে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত মুসলমানদের মুকাবিলায় একটি নকল বা ফেইক মুসলমান হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া। যাতে অজ্ঞাতসারে অমুসলিম সম্প্রদায় তাদেরকে মুসলিম ভেবে প্রতারিত হয় এবং ইসলামে প্রবেশ করতে গিয়ে কাদিয়ানী হয়ে যায়। ফলে যে লাউ সেই কদুই যেন রয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, জার্মান, মেক্সিকো এবং আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে বেদনাদায়ক সেই দুর্ঘটনাই ঘটছে। ইন্না-লিল্লাহ। বিবিসি তেমনি একটা নিউজ করেছে যেখানে মেক্সিকোর এক খ্রিস্টান পরিবার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ইসলাম ভেবে কাদিয়ানী ধর্মমত গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে প্রতারিত হয়েছে। নিচের লিংক থেকে ভিডিওটি দেখুন!

Click

এবার হয়ত কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, কাদিয়ানীরা যে পশ্চিমাদের দ্বারা পরিচালিত তার কী এভিডেন্স আছে? এর উত্তরে আমি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী সেকেন্ড খলিফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর একটি বক্তব্য তাদেরই উর্দূ ভাষার একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে এখানে তুলে ধরছি। মির্যা বশির উদ্দীন বলেন, “শত্রু আমাদের উপর যখন আক্রমণ করে তখন স্বর্গীয় সমর্থন ছাড়াও মহান আল্লাহ আমাদের সুরক্ষার জন্য মানুষের মধ্য থেকে একজন রক্ষাকারী দাঁড় করে দিয়ে থাকেন। সেটি সবসময় একই হয়ে থাকে অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার। এমতাবস্থায় আমরা এই সরকারের কৃতজ্ঞতা (শোকরগুজার) স্বীকার না করে কিভাবে থাকতে পারি!! এই সরকারের সাথেই আমাদের সমস্ত উপকারিতা একাকার হয়ে গেছে। এই সরকারের পতন আমাদেরই পতন, এই সরকারের উন্নতি আমাদেরই উন্নতি। এ সরকারের হুকুমত (আধিপত্য) যেখানে যেখানেই সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য (সে সবখানে) তাবলীগের (সদস্য সংগ্রহের) একেকটি ময়দান সুগম (উন্মুক্ত) হচ্ছে। সুতরাং কোনো বিরুদ্ধবাদীর আপত্তি আমাদেরকে এ সরকারের অনুগত হওয়া থেকে বিচ্যুত করতে পারবেনা।” (দৈনিক আল ফজল, তারিখ-১৯/১০/১৯১৫ ইং, মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ-এর বক্তব্যের উদ্ধৃতাংশ)।

শেষকথা হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহ যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমাদের এ ভন্ডামির স্বরূপ উন্মোচন করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ঈমান আমল তো বটে, নিজ দেশের ভিটেমাটি কিংবা আত্মপরিচয়টুকুও নিরাপদ থাকবে না। সংক্ষেপে।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে কাদিয়ানীরা লজ্জিত কেন?

0

কাদিয়ানী সম্প্রদায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এতটা লজ্জিত কেন?

কাদিয়ানীদের অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হল। তিনি দেশ ছেড়েও পালিয়েছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, একে একে তাদের অন্যান্য প্রায় সকলেই এখন নিয়মিত কট খাচ্ছেন। কাদিয়ানীদের অন্যতম সহযোগী জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, রাশেদখান মেনন আর এখন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক-ও। ডক্টর কামাল হোসেন এবং তার কন্যা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিষ্টার সারা হোসেন-ও কাদিয়ানীদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস সহ কাদিয়ানীদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া অসংখ্য কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীর চেহারাগুলোও কারো অচেনা নয়। গাদানিক প্রধান শাহরিয়ার কবির, সুলতানা কামাল, খুশি কবিরদের কথা আর না হয় না-ই বললাম। খুবই আশ্চর্য ব্যাপার, আল্লাহর রাসূলের খতমে নবুওয়তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহকারী কাদিয়ানীদের সহযোগীরা হঠাৎ যেন বাতাসে মিশে গেছে!

কাদিয়ানীরা স্বৈরাচারী আ’লীগ সরকারের প্রভাব এবং ক্ষমতা খাটিয়ে বহু ফায়দা নেয়। সেই ইতিহাস আজ আর কারো অজানা নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ১৫ বছর ধরে “মসজিদ” নাম দিয়ে যে পরিমাণে “কাদিয়ানী উপাসনালয়” তারা নির্মাণ করেছে, কল্পনারই বাহিরে। গাজীপুরে (রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন গাজীপুর মহিলা কলেজের পূর্ব পাশ হয়ে সাফা টাওয়ারের দক্ষিণে) ইতিমধ্যে তারা ৫ কাঠা জমির উপর মসজিদ নামে তাদের বিশালাকৃতির ৫ তলা কমপ্লেক্স ও মিশনারী হেড কোয়ার্টার করার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু এ খবর কয়জনই বা রাখে! তাদের প্রতি আ’লীগ সরকার নাগরিক অধিকারের নামে এত অন্ধ ছিল, স্থানীয় মুসলমানদের কোনো যৌক্তিক দাবী কিংবা প্রতিবাদের সামান্যতমই তোয়াক্কা করেনি। বরং স্থানীয় মুসলমানদের নির্বিচারে গুলিতে আহত এবং নিহত করা হয়। গত ২০২৩ সালের ৫ ই মার্চ এবং ২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চগড়ের (সদর) আহমদনগরের স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ও কাদিয়ানীদের পক্ষে সেই সময়কার স্বৈরাচারী প্রশাসনিক মনোভাব আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের চিত্রগুলো ইন্টারনেটে আজো ভাসছে।

এদেশের কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীরা কি জানে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিজেদের বাহিরে কোনো মুসলমানকেই “মুসলমান” মানেনা! বরং পরিষ্কার করে কাদিয়ানী লিটারেচার গুলোতে অ-কাদিয়ানী মুসলমানদের “অমুসলিম” এবং “কাট্টা কাফের” বলে লিখে রাখা হয়েছে, এমনকি মুসলমানদের নাবালক শিশুদের জানাযাতেও অংশগ্রহণ করতে কড়া নিষেধ করা হয়েছে। আর কারণ হিসেবে তাদেরই দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (মৃত. ১৯৬৪ ইং) লিখেছে,

“আমাদের জন্য ফরজ হচ্ছে, আমরা যেন গয়ের আহমদীদেরকে (অ-কাদিয়ানীদেরকে) মুসলমান মনে না করি এবং তাদের পেছনে সালাত না পড়ি। কেননা আমাদের দৃষ্টিতে তারা খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী। এটি ধর্মীয় মু’আমালা, এতে কিছু করার মত কারো কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই।” (আনওয়ারে খিলাফাত ৯৩ নতুন এডিশন, আনওয়ারুল উলূম ৩/১৪৮, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

উক্ত উদ্ধৃতিটির প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেখুন

উল্লেখ্য, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ ছিল ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পুত্র ও তার জামাতের দ্বিতীয় খলীফা এবং কথিত ‘মুসলেহ মওউদ’ উপাধিপ্রাপ্ত। নিচে তার একটি ছবিও প্রদর্শন করা হল।

স্বৈরাচারী আ’লীগ দুঃশাসনের পতন হবার আগে কাদিয়ানী ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল খান সাহেব নিজেকে শেখ পরিবারের অন্যতম হিতাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় বলেও পরিচয় দিতেন এবং জায়গামত মুসলমানদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আমাদের নিকট রেকর্ড রয়েছে। আজ আর সেই আত্মীয়ের আত্মীয়রা দেশ-ছাড়া। আখের আস্তে আস্তে ঝুঁকতে শুরু করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল স্যার সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়জন উর্ধতন ব্যক্তিবর্গের দিকে। আফসোস! ক্ষমতা পালাবদলের সাথে সাথেই এদের ডিগবাজীও শুরু। কিন্তু নতুন জেনারেশনের কি এদের নিয়ে কোনো খোঁজখবর আছে??

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কাদিয়ানীদের বর্তমান ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল খান সাহেবও ইতিপূর্বে “জাসদ” এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আ’লীগ দুঃশাসনকে আজীবনের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করার মনোবাসনা থেকেই তাদের পেয়ারে হুজুর (কাদিয়ানী পঞ্চম খলীফা) মির্যা মাসরূর আহমেদকে দিয়েও ইংল্যান্ডের টিলফোর্ড শহরে অনেক দোয়া করিয়েছেন, যার তথ্য প্রমাণ আমাদের নিকট রয়েছে।

এ পর্যায় জনৈক কাদিয়ানী মিশনারীকে উদ্দেশ্য করে মুসলমান যুবকের প্রশ্নোত্তর নিচে তুলে ধরছি,

আপনাদের শিক্ষার আলোকে নবুওয়তের ধারণাটা কেমন?
যিল্লি নবী হতে পারে, এ ছাড়া আর কোনো ধরনের নবী হবেনা।
যিল্লি নবী হতে পারে কি পারেনা, এ টপিকে পরে আসছি। আগে “যিল্লি নবী” বলতে কী বুঝায় আর “যিল্লি” শব্দটা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোন কথায় উল্লেখ আছে দেখান!

…..কোনো উত্তর নেই।

যেহেতু “যিল্লি নবী” এর কোনো কনসেপশনই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোনো কথায় উল্লেখ নেই, সেহেতু এর ধারণাটাই বাতিল। সুতরাং কাদিয়ানীদের “যিল্লি নবী” এর তাবৎ শিক্ষাটাই ভ্রান্ত ও প্রত্যাখ্যাত। ফলে এ শিক্ষাকে ব্যাজ করে যে বা যারা নিজেদের মুসলমান দাবী করবে তারা ভন্ড এবং ইসলামের অবমাননাকারী বলেই সাব্যস্ত হবে।
সূরা নিসার ৭০ নং (মুসলমানদের হিসেবে ৬৯ নং) আয়াত অনুযায়ী আনুগত্যরূপে নবী হতে পারে বলে উল্লেখ আছে!
যদি তাই হবে তাহলে তো মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই উক্ত আয়াত নিজ দাবীর পক্ষে সবার আগে উল্লেখ করে যেতেন! অথচ আমরা তার রচনায় এমন কোনো আয়াতই উল্লেখ করেছেন, এমনটা দেখিনা!

….. কোনো উত্তর নেই।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত অর্থে শেষনবী নন, তার পরেও নবী আছে। নইলে ঈসা আলাইহিস সালাম পুনরায় আসতে পারেন না।
ঈসা আলাইহিস সালামের পুনরায় আসার কারণে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “শেষনবী” হবার বিশ্বাসে কোনো ধাক্কা লাগবে না। কারণ, ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি পুনরায় আসার পর নবুওয়ত দ্বিতীয়বার অর্পিত হবেনা। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বেই জেরুজালেমে অবস্থানকালে যেই নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেই নবুওয়তের ক্রমধারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে চিরতরে খতম বা শেষ হয়ে গেছে। এ জন্যই পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব, আয়াত নম্বর ৪০ বলছে, ((و لكن رسول الله و خاتم النبيين)) অর্থাৎ কিন্তু তিনি (মুহাম্মদ) আল্লাহর একজন রাসূল এবং নবীগণের ক্রমধারা সমাপ্তকারী।

পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারা, আয়াত নম্বর ৪ উক্ত বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তালা বলছেন, ((وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ)) অর্থাৎ “আর (প্রকৃত মুমিন তো তারাই) যারা ঈমান আনে সেসব বিষয়ে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে।” খুব খেয়াল করুন, উল্লিখিত আয়াতে শুধুমাত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আর তাঁর পূর্বে গত হয়ে যাওয়া নবী রাসূলগণের প্রতিই নাযিলকৃত বিষয়ের উপর ঈমান আনার কথা রয়েছে। এতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, নতুন করে আর কারো প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে কিছুই নাযিল হবেনা। যেজন্য নতুন করে কেউ এখন নবুওয়তের দাবী করা কুফুরী এবং এমন ব্যক্তি ও তার মান্যকারী সবাই ভন্ড এবং অমুসলিম হিসেবেই সাব্যস্ত। মূলত একই কারণে নবুওয়তের দাবীকারী ভারতের পাঞ্জাবের অধিবাসী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার অনুসারী সমস্ত আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় অমুসলিম। যারা তাদের অমুসলিম মানতে নারাজ, বা তাদের পক্ষে বুঝেশুনেই সাফাই গেয়ে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের উপর তাকফীরী ফাতাওয়া আরোপিত হবে।

…. কোনো উত্তর নেই।

চলবে

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ঈমান কি বাড়ে কমে? আমল কি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত?

0

ঈমান কি বাড়ে কমে?

ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ)-এর সময় খারিজিদের খুব উৎপাত ছিল। তারা কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদের কাফের মনে করতো এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করা এবং তাদের জান মালকে হালাল মনে করত। কারণ, তাদের মতে ঈমান আমলের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আমল পরিত্যাগ করা মানে ঈমান পরিত্যাগ করা। এজন্য আমল যে ঈমানের মূল বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমল ত্যাগের কারণে যে কেউ কাফের হয় না, তাকে হত্যা করা তার মাল ছিনিয়ে নেয়া যে বৈধ নয়, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া ওলামায়ে কেরামের উপর আবশ্যক হয়ে পড়ে। সে দায়িত্ব‌ই পালন করেছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি ফাতাওয়া দিলেন, ঈমান আর আ’মল সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আ’মল দ্বারা ঈমানে শক্তি বৃদ্ধি হয়, তবে সেটি ঈমানের অংশবিশেষ নয়। তিনি এ ফাতাওয়ার সমর্থনে দলিল এবং যুক্তি দুটোই পেশ করেন।

ঈমান শব্দের মূল অর্থ হলো বিশ্বাস করা, সত্যায়ন করা। খারেজিদের নিকট ঈমানের মূল রুকন বা ভিত্তি তিনটি। যথা-

১. ঈমানের বিষয়গুলোকে অন্তরে বিশ্বাস করা,
২. মুখে স্বীকার করা,
৩. শরীয়ত মোতাবেক আমল করা।

তাদের নিকট এগুলোর একটি বাদ গেলেও ঈমান থাকবে না, তাই কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কাফের, যেহেতু সে আমল পরিত্যাগ করেছে আর আমল ঈমানের তিন রুকনের এক রুকন। উল্লেখ্য, প্রসিদ্ধ মাযহাব চতুষ্টয়ের তিনটি-ই আ’মলকে ঈমানের বাহিরের জিনিস বলে মত দিয়েছে।

বলাবাহুল্য, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কতিপয় বিশেষজ্ঞ ঐ তিনটির সমষ্টিকে ঈমানের মূল রুকন বা ভিত্তি বললেও তাঁরা আমল পরিত্যাগকারীকে খারেজীদের মত ‘কাফের’ বলেন না। কিন্তু এটা তাঁদের এক ধরনের স্ববিরোধিতা বৈ নয়।

কারণ, বাকি দুই রুকনের মধ্যে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি হলেও ঈমান বাতিল হয়, যেমন- কেউ বলল, আমি ফেরেশতায় বিশ্বাস করি না, তবে ঈমানের বাকি সব বিশ্বাস করি। এখানে ফেরেশতার প্রতি বিশ্বাসের কমতি হওয়ায় তার পুরো ঈমানই বাতিল হয়ে যাবে। তদ্রূপ কেউ বলল, আমি যাবুরকে আসমানী কিতাব হিসেবে স্বীকার করি না, কিন্তু ইসলামের বাকি সব মান্য করি। এ ব্যক্তি বাকি সব মানা সত্তেও কাফের বলে গণ্য হবে। তদ্রুপ কেউ যদি বলে, আমি পুরো কোরআন মানি তবে অমুক আয়াত মানি না। এই ব্যক্তি ও কাফের বলে গণ্য হবে। তদ্রূপ বাড়তি করলেও কাফের হবে। যেমন কেউ নিশ্চিতভাবে বলল শ্রীকৃষ্ণ নবী ছিল। অথচ এর স্বপক্ষে কোরআন হাদিসের কোন দলিল নেই। অথবা বলল বর্তমানে ও নবী আসা সম্ভব, তাহলে সে কাফের হবে। সুতরাং বুঝা গেল ঈমানের এই মৌলিক দুটি রুকনে বাড়তি কমতির কোনো সুযোগ নেই।

যেহেতু ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোতে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাড়তি কিংবা কমতির সুযোগ নেই এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ঈমান বাড়েও না কমেও না। এ মাসআলাটিকে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল আলিমু ওয়াল মুতাআল্লিম”-এ অত্যন্ত সুন্দর ও চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আগ্রহীরা সেখানে দেখে নিতে পারেন।

যাইহোক, তাহলে মুহাদ্দিসদের কথা অনুযায়ী তৃতীয় রুকনে তথা আমলের ক্ষেত্রেও সামান্য পরিমাণ ছুটে গেলে পুরো ঈমান বাতিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারেজীদের মতো সেটা তারা বলছেন না, সুতরাং এটা প্রকৃতপক্ষে ঈমানের রুকন নয়। হ্যাঁ, যদি এটাকে ঈমানের পূর্ণতাদানকারী রুকন বলি, ঈমানের অস্তিত্ব আনয়নকারী রুকন না বলে তাহলে অসুবিধা নেই।যেমন- হাসান নামক ব্যক্তির মাথার সুন্দর চুল না থাকলেও ব্যক্তি হাসান অস্তিত্বে থাকে। তদ্রুপ তার নাক, কান, চোখ, হাত ও পা না থাকলেও ব্যক্তি হাসান আছে বলে গণ্য হবে। কিন্তু এগুলো থাকলে ব্যক্তির দৈহিক সৌন্দর্যও গঠন পূর্ণতা লাভ করে।

তদ্রুপ ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস এবং মৌখিক স্বীকৃতি থাকা অবস্থায় ব্যক্তি আমল পরিত্যাগ করলেও তার ঈমান বিদ্যমান থাকে কিন্তু ঈমানের সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস বিদ্যমান থাকে না। আর যখনি ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর কোন একটিতে অবিশ্বাস করার মাধ্যমে কমতি সাব্যস্ত হবে, তখনি কুফর আবশ্যক হবে।

সুতরাং আমরা বুঝলাম ইমাম আবু হানিফা রহ. ঈমান বাড়েও না কমেও না বলে বুঝিয়ে থাকেন ঈমানের বিষয়বস্তুতে কমতি বাড়তি হয় না। আর কোরআন হাদিসের যত জায়গায় ঈমান বাড়া এবং কমার কথা বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ঈমানের সৌন্দর্য বাড়া, নূর বৃদ্ধি পাওয়া, ঈমানের বিষয়বস্তুতে বাড়তি কমতি উদ্দেশ্য নয়।

কারণ শত শত আমল থাকা সত্ত্বেও ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর কোন একটিতে সামান্য পরিমাণ অবিশ্বাস করলে সে কাফের বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি থাকাবস্থায় সকল আমল বর্জন করলেও সে কাফের বলে গণ্য হবে না।

আবার কোন হালালকে হারাম মনে করলে কিংবা হারামকে হালাল মনে করলে সাথে সাথে কাফের হয়ে যাবে। অকাট্য দলিলে প্রমাণিত কোন গুনাহে লিপ্ত হ‌ওয়াকে হালাল মনে করলেও কাফের হয়ে যায়।‌ এসকল বিষয়ে মুহাদ্দিসদের সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুতাকাল্লিমদের কোন বিরোধ নেই।

সুতরাং বোঝা গেল ঈমান হলো অন্তরের বিষয় আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ঈমান আনার কারণে আমল আবশ্যক হয়, আমলের কারণে ইমান আবশ্যক হয় না।

আমল যে মূল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয় এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফার বহু দলিল রয়েছে। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে আমরা সেগুলো আলোচনা করব।

লিখক, অ্যাডমিন ফিকহ মিডিয়া

ফতুল্লায় বিগত ১০ বছরেও কেউ কাদিয়ানী হয়েছে বলে আমি শুনিনি

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কাদিয়ানী মতবাদ সাধারণদের কী পরিমাণে কাছে টানতে পারছে?

উত্তর : এ সম্পর্কে বলতে গেলে, অতিব সামান্য। তাও সকালে কাদিয়ানী তো বিকেলে যে লাউ সেই কদু। অর্থাৎ যখনি কেউ বুঝতে পারে যে, কাদিয়ানীদের ফাঁদে পড়েছে, তখনি আর দেরি না করে তওবাহ করে এবং ইসলামে ফিরে আসে। আমৃত্যু কাদিয়ানীদের ধোকা আর প্রতারণার ব্যাপারে খুব বেশি সতর্ক হন।

এখানে একজন কাদিয়ানী অনুসারী জনৈক মিশনারী (মুবাল্লিগ) এর একটি মন্তব্য তুলে ধরছি। নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা স্থানীয় জনাব মজিবুর রহমান শেখ। যিনি একজন কাদিয়ানী-আহমদীয়া ধর্মের অনুসারী। জনাব মজিবুর রহমান শেখ গত ২৮ বছর ধরে একজন কনভার্টেট কাদিয়ানী মুবাল্লিগ (ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ ঢাকা)।

সম্প্রতি তিনি স্যোসাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেনঃ “আমার জানামতে আহমদীয়া মুসলিম জামাত ফতুল্লাহ গত ১০ বছরে একজনও বয়াত করেনি।” তিনি তার ঐ মন্তব্যে কাদিয়ানীদের চাপাবাজীর মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। স্যোসাল মিডিয়ায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট নিজের অবিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে শুরু করেছেন। তিনি কোনো এক কারণে কাদিয়ানী জামাতের প্রতি ভীষণ বিরক্ত। সম্ভবতঃ কাদিয়ানী জামাতের অনুসারী ও নিজেদের মধ্যকার যে কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। যার ফলে তিনি জুলুম বা নিপীড়নের শিকার হন। যার জন্য বকশিবাজারস্থ তাদের কেন্দ্রে তিনি বিচার চেয়েও বিচার পাননি। অথচ বিচারের আশায় তিনি প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত ঢাকার বকশিবাজারে তাদের হেড কোয়ার্টার বা কেন্দ্রের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। নিচে তারই মন্তব্য গুলোর স্ক্রিনশট তুলে ধরছি, যাতে কাদিয়ানী জামাতের লোকদের মুখে মধু এবং অন্তরে বিষ থাকার বিষয়টি আরও খুব চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

জনাব মজিবুর রহমান শেখ সাহেবের এফ.বি একাউন্ট এর লিংক – মজিবুর রহমান শেখ

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

তোমরা তা কামড়ে ধরো, হাদীসের এ খণ্ডিতাংশের কী তাৎপর্য ও একটি আপত্তির উত্তর,

ইমাম বুখারীর ‘আল আদাবুল মুফরাদ’ হাদীস নং ৯৬৩ হতে, (সনদ সহ) নিম্নরূপ,

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ الْمُؤَذِّنُ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا عَوْفٌ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عُتَيِّ بْنِ ضَمْرَةَ قَالَ‏:‏ رَأَيْتُ عِنْدَ أُبَيٍّ رَجُلاً تَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ، فَأَعَضَّهُ أُبَيٌّ وَلَمْ يُكْنِهِ، فَنَظَرَ إِلَيْهِ أَصْحَابُهُ، قَالَ‏:‏ كَأَنَّكُمْ أَنْكَرْتُمُوهُ‏؟‏ فَقَالَ‏:‏ إِنِّي لاَ أَهَابُ فِي هَذَا أَحَدًا أَبَدًا، إِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ‏:‏ مَنْ تَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَعِضُّوهُ وَلا تَكْنُوهُ‏.‏

وفي رواية: إذا الرجل تعزى بعزاء الجاهلية، فأعضوه بهن أبيه، ولا تكنوا .

অর্থ- আমি উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর নিকট এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যে নিজেকে (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের গুণে গুণান্বিত করলে, উবাই তাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতে বলেন। তিনি তা ইংগিতে বলেননি (অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন)। তাই তার সঙ্গীরা তার দিকে তাকাল। তিনি বললেন, ‘মনে হচ্ছে তোমরা এ কথা অপছন্দ করলে!’ তারপর তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কখনোই কাউকে শঙ্কা প্রকাশ করব না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে নিজেকে (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের গুণে গুণান্বিত করে, সে যেন তা শক্তভাবে কামড় দেয় এবং তোমরা (এ কথা) অস্পষ্ট করে বলবেনা। (আল আদাবুল মুফরাত)।

মুসনাদে আহমদ এবং নাসাঈ এর আস-সুনানুল কোবরা গ্রন্থে অন্য বর্ণনায় আ’উফ ইবনে আবী জামীলাহ আল আ’রাবীর সূত্রে হাসান বছরী থেকে একটু পরিবর্তিত মতনে বর্ণিত আছে, “যে নিজেকে (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের গুণে গুণান্বিত করে, সে যেন তার পিতার প্রজননতন্ত্র কামড় দেয় (অর্থাৎ নিজেকে পুর্বপুরুষের বংশীয় গরিমা থেকে সমূলে উপড়ে ফেলে) এবং তোমরা (এ কথা) অস্পষ্ট করে বলবেনা।”

সনদের তাহকিকঃ হাদীসটির সনদে উ’তাই ইবনু দ্বমরাহ (মৃত. ১৪৭ হি.) সম্পর্কে ইমাম আলী ইবনুল মদনী (রহ.) বলেছেন, ((مجهول، سمع من أبى كعب، لا نحفظها إلا من طريق الحسن، و حديثه يشبه حديث أهل الصدق وإن كان لا يعرف)) অর্থাৎ “সে অপরিচিত। সে উবাই ইবনু কা’ব থেকে শ্রবণ করেছে। তবে আমরা সেগুলো হাসান বছরীর সূত্রে ছাড়া সুরক্ষিত পাই না। আর তার বর্ণিত হাদীসগুলো সত্যবাদীদের হাদীসের ন্যায়, যদিও সে অপরিচিত।” (শরহে মেশকাত, ইমাম ত্বীবী ৯/১৬৭ দ্রষ্টব্য)। হ্যাঁ, ইমামগণের বেশিরভাগই তাকে তাওসীক্ব করেছেন। শায়খ আলবানী বলেছেন, এর সনদ সহীহ। যাইহোক, হাসান বছরীর সূত্রে আরেক সনদে হাদীসটির “মতন” এইরূপ, ((من سمعتموه يدعو بدعوى الجاهلية فأعضوه بهن أبيه ولا تكنوا)) অর্থাৎ, তোমাদের যে ব্যক্তি জাহিলিয়াত যুগের কৃষ্টি-কালচারের দিকে আহবান করবে সে যেন তার পিতার প্রজননতন্ত্র কামড় দেয় (অর্থাৎ নিজেকে পুর্বপুরুষের বংশীয় গরিমা থেকে সমূলে উপড়ে ফেলে) এবং তোমরা (এ কথা) অস্পষ্ট করে বলবেনা।”

বিশ্লেষণঃ মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) হাদীসটির মর্মবাণী বুঝিয়ে দিয়েছেন এভাবে যে,

مَعْناهُ مَنِ انتَسَبَ وانْتَمَى إلى الجاهِليَّةِ بإحْياءِ سُنَّةِ أهْلِها، وابْتِداعِ سُنَّتِهِم في الشَّتْمِ واللَّعْنِ والتَّعْييرِ، ومُواجَهَتِكُم بالفَحْشاءِ والتَّكبُّرِ، فاذْكُروا له قَبائِحَهُ أو قَبائِحَ أبيهِ من عِبادةِ الأصْنامِ، والزِّنا، وشُربِ الخَمْرِ، ونَحوِ ذلك ممَّا كان يُعيَّرُ به مِن لُؤمٍ ورَذالةٍ صَريحًا لا كِنايةً؛ كي يَرتَدِعَ عن التَّعرُّضِ لأعْراضِ النَّاسِ. اهـ. من مرقاة المفاتيح.

এর অর্থ হল, এমন কেউ যিনি (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের যুগের লোকদের কৃষ্টি-কালচারকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং অভিশাপ করা, গালমন্দ, অন্যকে তিরস্কার, অশ্লীলতা ও অহংকার প্রদর্শনের নিয়ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করে…. তাহলে তোমরা সেই ব্যক্তিকে মদ্যপান, জেনা-ব্যভিচার এবং মূর্তিপূজা ইত্যাদি বিষয়ে পূর্বপুরুষের কুৎসিত কার্যকলাপগুলো স্মরণ করিয়ে দাও। (মেরকাত শরহে মেশকাত, মোল্লা ক্বারী)।

উল্লেখ্য, আরবী ভাষায় أَعِضُّو (তোমরা কামড়ে ধরো), এক ধরনের ভাষা অলংকার; যেটি বাগধারারই অংশ। এর তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা বংশীয় গৌরব সমূলে উপড়ে ফেলো। ইসলামে বংশীয় গৌরব নিন্দনীয়, পূর্বপুরুষদের নিয়ে অহংকার করা আরও জঘন্য। পূর্বপুরুষদের নিয়ে অহংকারীদের সতর্ক করতেই এভাবে বলা হয়ে থাকে।

সহীহ মুসলিম গ্রন্থে এ ধরনের আরও একটি আরবীয় বাগধারা رغم انف (রাগিমা আনফু অর্থাৎ নাক ধূলোয় ধূসরিত হয়ে যাক) উল্লেখ রয়েছে, যার রূপক অর্থ- ‘সে ক্ষতিগ্রস্ত’। হাদীসটি এই যে,

رغم أنف، ثم رغم أنف، ثم رغم أنف من أدرك أبويه عند الكبر أحدُهما أو كلاهما فلم يدخل الجنة

অর্থাৎ সে ক্ষতিগ্রস্ত অত:পর সে ক্ষতিগ্রস্ত অত:পর সে ক্ষতিগ্রস্ত যে তার পিতামাতা দুজনকেই বা কোনো একজনকে বৃদ্ধ বয়সে জীবিত পেল তবু সে (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেনি। – মুসলিম।

অবশ্যই এন্টি ইসলাম নাস্তিক(!)দের নিকট আরবী শব্দগুচ্ছ গুলোয় আপত্তি থাকা অস্বাভাবিক নয়। যেহেতু তারা জাহিলিয়াত যুগ সম্পর্কে যেমন অজ্ঞ, ঠিক তেমনি আরবী ভাষার অলংকার বা বাগধারায়ও গণ্ডমূর্খ।

যাইহোক, এ জাতীয় শব্দগুচ্ছ যে আরবী ভাষায় প্রচলিত বাগধারারই অংশ তা অনুধাবন করতে হলে হুদায়বিয়ার সন্ধি মুহূর্তে কোরাইশের পক্ষ হতে আগত বার্তাবাহককে উদ্দেশ্য করে হযরত আবূবকর (রা.)-এর ঐতিহাসিক উক্তিটি মনে রাখতে হবে। তিনি কোরাইশের পক্ষ থেকে আসা বার্তাবাহককে বলেছিলেন أمضض بظر اللات (আমদ্বিদ বাঝারাল লাত) অর্থাৎ তুমি লাত এর প্রজননতন্ত্র কামড় দাও অর্থাৎ গায়রুল্লার প্রভাব প্রতিপত্তিকে এবার বিদায় জানাও।

রাসূল (সা.) অত্যাধিক লাজুক বলেই শুধুমাত্র أَعِضُّو (তোমরা কামড়ে ধরো) এটুকু বলে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষিতদের জন্য বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে দিতে বর্ণনাকারীদের কোনো একজন এটিকে পূর্ণবাক্যে فَأَعِضُّوهُ بِهنِ أبِيهِ রেওয়ায়েত করে দিয়েছেন, উসূলে হাদীসের পরিভাষায় এধরণের অতিরঞ্জনকে ذيادة بالراوى (যিয়াদাত বির-রাবী) বলা হয়। সুতরাং যারা ভাষাবিদ ও পড়াশোনা জানা ব্যক্তি, তাদের নিকট এখন পুরো বিষয়টি পরিষ্কার, আলহামদুলিল্লাহ।

শেষকথা– রাসূল (সা.)-এর أَعِضُّو সংক্ষিপ্ত উক্তির দীর্ঘ বাক্যে প্রকাশ হচ্ছে فأعضوه بهن أبيه (ফা-আ’ইদ্দূহু বিহানি আবীহি)। আর সেটি আরবীয় ভাষা অলংকার। তাই একে গালি বা অশ্লীলতা বলা মূর্খতা। যদি এটি গালি বা অশ্লীলতা হত, তাহলে আরবীয় নাস্তিক বা ইসলাম বিদ্বেষীরাই সবার আগে আপত্তি তুলতো। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

হযরত ফাতিমা (রা.)-এর প্রতি প্রথম দুই খলীফা কি অন্যায় করেছিলেন?

প্রশ্ন : ইসলামের প্রথম দুই খলীফা হযরত ফাতেমার সাথে কি অবিচার করেছিলেন?

উত্তর : শীয়া রাফেজি সম্প্রদায়ের সোর্সগুলোয় এ ধরনের কিছু গল্প অবশ্যই বর্ণিত আছে। আহলুস সুন্নাহ’র বিশুদ্ধ কোনো হাদীস গ্রন্থে এ ধরনের কোনো গল্পের উল্লেখ নেই। তবে বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের বাহিরে কিছু কিছু পুস্তকে এ সম্পর্কে উল্লেখ থাকলেও তার সনদ প্রমাণিত নয়। আবার কোনো কোনোটির বিবরণও একেক রকম।

দুই খলীফার প্রতি জঘন্য অপবাদ :

সব চেয়ে জঘন্য অপবাদটি হচ্ছে, ‘হযরত উমর (রা.) হযরত ফাতিমার পেটে আঘাত করেন, ফলে ফাতিমার গর্ভপাত ঘটে। পেট থেকে মুহসিনের প্রসব হয়ে যায়।’ নাউযুবিল্লাহ। এ জাতীয় বিভিন্ন গল্প কাহিনী শীয়াদের বইপুস্তক গুলোয় ভুরি ভুরি পাওয়া যায়। সত্যি বলতে, এধরণের ইতিহাস সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং অবাস্তব। সত্যের সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই।

তার কারণ, বর্ণনাগুলোর সিংহভাগই ভিত্তিহীন ও সনদ বিহীন। কিছু কিছু বর্ণনার সনদে ইনক্বিতাহ বা বিচ্ছিন্নতা বিদ্যমান, আবার কিছু কিছু সনদের রাবী বা বর্ণনাকারী জিন্দিক ও অবিশ্বস্ত হিসেবে অভিযুক্ত। আবার কোনো কোনো বর্ণনার মান শাজ পর্যায়ের।

আমি বর্ণনাগুলোর অনুবাদ সহ একটু পরেই উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ। তার আগে উক্ত দুই খলীফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) এর সাথে প্রাসঙ্গিক ঘটনাটির পটভূমি উল্লেখ করছি।

১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাসূল (সা.) এর ইন্তেকাল হয়ে গেলে সাহাবীরা সকলে তাদের পরবর্তী অভিভাবক বা প্রতিনিধি কে হবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। রাসূল (সা.)-এর দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সাহাবীগণ সাকিফা বনু সাইদাহ (سقيفة بنى ساعدة) এর মহল্লায় একত্রিত হন এবং আবূবকর (রা.)-এর নিকট দলে দলে খিলাফতের বয়’আত নিতে শুরু করেন। কিন্তু কয়েকজন সাহাবী তখনো বয়’আত নেননি, তারা বয়’আত নিতে দেরি করেন। তাদের মধ্যে হযরত আব্বাস, হযরত ফজল ইবনে আব্বাস, হযরত আলী, হযরত যোবায়ের ইবনুল আ’ওয়াম, হযরত মিক্বদাদ প্রমুখ অন্যতম। হতে পারে তারা রাসূল (সা.)-এর দাফন কার্য থেকে তখনও পুরোপুরি অবসর হতে পারেননি। তাই বয়’আত নিতে দেরি হচ্ছিল। হযরত আবুবকর (রা.) তাদেরকে অনুপস্থিত দেখে খবর নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন এবং বেশকয়জন সাহাবীকে সহ হযরত উমর (রা.)-কে তাদের নিকট প্রেরণ করেন।

হযরত উমর (রা.) খবর নিয়ে জানতে পারলেন যে, তারা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর বাড়ীতে অবস্থান করছেন। হযরত উমর (রা.) সহ সাহাবীগণ ফাতিমার বাড়ী গিয়ে পৌঁছেন। তাদেরকে খলীফা নির্বাচন সম্পর্কে অবিহিত করলেন। অত:পর বাড়ীর ভেতরে যারা অবস্থান করছিলেন তারা সবাই বের হয়ে আসেন এবং আবূবকর (রা.)-এর হাতে বয়’আতে প্রবেশ করেন। এ ছিল আসল ঘটনা। ঘটনাটি এভাবেই বিশুদ্ধ সূত্রে মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাক লিল হাকিম গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।

হযরত উমর (রা.) কি ফাতিমা (রা.) এর পেটে আঘাত করেছিলেন?

উত্তরে বলা হয় যে, এ ধরনের কোনো ইতিহাস প্রমাণিত নয়, বরং এ কথাটি প্রথম যে ব্যক্তিটি বলেছিল তার নাম ইবরাহীম আন নাজ্জাম আল মু’তাজিলি। তার দাবী হচ্ছে, ((إن عمر ضرب بطن فاطمة يوم البيعة، حتى ألقت المحسن من بطنها)) “নিশ্চয়ই উমর বয়’আতের দিন ফাতিমার পেটে আঘাত করেন, ফলে তাঁর পেট থেকে মুহসিনের গর্ভপাত হয়ে যায়।” – টাটকা জাল ও ভিত্তিহীন।

রেফারেন্স- আল ওয়াফী বিল ওয়াফিয়াত ৬/১৭, সালাহ উদ্দীন আছ-ছফদী আদ দিমাস্কী আশ-শাফেয়ী (মৃত. ৬৯৬ হি.)।

সম্পর্কিত তথ্যঃ উপরের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ সনদ বিহীন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে এটি শীয়া দর্শনে প্রভাবিত ইবরাহীম আন নাজ্জামের নিজেস্ব উক্তি হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়। নিচে ইবরাহীম আন নাজ্জাম এর বৃত্তান্ত উল্লেখ করছি,

ইমাম যাহাবী তাঁর ‘সিয়ার’ গ্রন্থে তার সম্পর্কে লিখেছেন ((كَانَ النَّظَّامُ عَلَى دِيْنِ البَرَاهِمَةِ المُنْكِرِيْنَ لِلنُبُوَّةِ وَالبَعْثِ وَيُخْفِي ذَلِكَ)) অর্থাৎ ইবরাহীম আন নাজ্জাম এমন একজন, যে পুনরুত্থান এবং নবুওয়তের অস্বীকারকারী ব্রাহ্মণ্য মতবাদের অনুসারী ছিল, অথচ সে তা গোপন রাখত। – (সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ১০/৫৪২)।

ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) ‘লিসানুল মীযান’ গ্রন্থে তার পুরো নাম এভাবে উল্লেখ করেছেন, ((إبراهيم بن سيار بن هانئ النظام أبو إسحاق البصري)) অর্থাৎ ‘ইবরাহীম ইবনে সাইয়ার ইবনে হানী আন নাজ্জাম আবূ ইসহাক্ব আল বছরী।’ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) তার সম্পর্কে আরও লিখেছেন, ((من رؤوس المعتزلة متهم بالزندقة وكان شاعرا أديبا بليغا وله كتب كثيرة في الاعتزال والفلسفة ذكرها النديم. قال ابن قتيبة في “اختلاف الحديث” له: كان شاطرا من الشطار مشهورا بالفسق. ثم ذكر من مفرداته: أنه كان يزعم أن الله يحدث الدنيا وما فيها في كل حين من غير أن يفنيها , وجوز أن يجتمع المسلمون على الخطأ)) অর্থাৎ ‘সে ছিল মু’তাজিলি সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা। জিন্দিক বা ধর্মত্যাগী হিসেবেও অভিযুক্ত। তবে সে একজন কবি এবং সাহিত্যিক। তার বহু রচনা ছিল মু’তাজিলি মতবাদ এবং ফিলোসোফি দর্শনের উপর, শায়খ নাদীম তার লিখায় এ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ইমাম ইবনু ক্বদামাহ তার ‘ইখতিলাফুল হাদীস’ গ্রন্থে তার সম্পর্কে লিখেছেন, সে একজন ধূর্ত এবং অন্যায় ও অনৈতিকতার জন্য ছিল বিখ্যাত। ইবনু কুদামা ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘সে দাবী করত যে, সমগ্র পৃথিবী এবং এর মধ্যে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, এর কিছুই বিনাশ হবেনা। সে আরও বলত, মুসলিমদের জন্য ভুলের উপর ঐক্যমত হওয়া বৈধ।’

ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) তার মৃত্যু সন লিখেছেন ((مات في خلافة المعتصم سنة بضع وعشرين ومئتين وهو سكران)) অর্থাৎ সে খলীফা মু’তাসিম এর শাসনামলে বছরা শহরে ২২০ হিজরীতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায়। (লিসানুল মীযান ১/২৯৫)।

বিশুদ্ধ সনদে এতদ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক বর্ণনাটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সহ আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণের কিতাবে যেভাবে উল্লেখ আছে,

হাদীসের আরবী ইবারত ও অনুবাদঃ

أسلم القرشي مولى عمر بن الخطاب رضي الله عنه، قال: حين بُويع لأبي بكر بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم، كان علي والزبير يدخلان على فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فيشاورونها ويرتجعون في أمرهم ، فلما بلغ ذلك عمر بن الخطاب خرج حتى دخل على فاطمة فقال: يا بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم ! والله ما من أحد أحب إلينا من أبيك، وما من أحد أحب إلينا بعد أبيك منك، وايم الله ما ذاك بمانعي إن اجتمع هؤلاء النفر عندك إن أمرتهم أن يحرق عليهم البيت. قال: فلما خرج عمر جاؤوها فقالت: تعلمون أن عمر قد جاءني، وقد حلف بالله لئن عدتم ليحرقن عليكم البيت، وايم الله ليمضين لما حلف عليه، فانصرِفوا راشدين، فَرُوا رأيَكم ولا ترجعوا إلّيَّ ، فانصرفوا عنها ، فلم يرجعوا إليها حتى بايعوا لأبي بكر.

অর্থাৎ হযরত উমর ইবনু খাত্তাব (রা.) এর একজন কৃতদাস আসলাম আল কারশী, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ’র রসূলের ইন্তেকালের পর আবু বকর (রা.)-এর নিকট বয়’আত নেয়া হচ্ছিল, তখন যোবায়ের এবং আলী দু’জনই আল্লাহ’র রসূলের কন্যা ফাতিমার বাড়ী যান এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে থাকেন এবং কাজে বেপরোয়া ছিলেন। যখন এ সংবাদটি উমর ইবনু খাত্তাব (রা.)-এর নিকট পৌঁছল, তখন তিনি ফাতিমা (রা.)-এর নিকট যাওয়ার জন্য বের হন। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ’র রসূলের কন্যা! খোদার কসম, আমাদের কাছে আপনার পিতার চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই এবং আপনার পিতার পর আমাদের কাছে আপনার চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই। খোদার কসম, যদি এ দলটি আপনার নিকট সংঘবদ্ধ থাকে তাহলে তা আমাকে তাদের ঘর পুড়িয়ে দিতে রুখবেনা, যদি আপনি নির্দেশ দিন।

বর্ণনাকারী বলেন, যখন উমর চলে গেলেন, তখন তারা ফাতিমার নিকট আসলেন। ফাতিমা বললেন, তোমরা জানো যে, উমর আমার নিকট এসেছিলেন এবং তিনি আল্লাহর শপথ করেছিলেন যে, আপনারা যদি বয়’আত থেকে বিরত থাকেন তাহলে তিনি আপনাদের ঘর জ্বালিয়ে দেবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, তারা যা করার শপথ করেছেন তা তারা পূরণ করবে। সুতরাং আপনারা মনস্থির করুন আর আমার কাছে ফিরে আসবেন না। তারপর তারা তাঁর নিকট চলে গেলেন এবং আবু বকরের নিকট বয়’আত না করা পর্যন্ত ফিরে যাননি।

রেফারেন্সঃ মুসনাদে আহমদ, ফাজায়েলুস সাহাবা অধ্যায় ১/৩৬৪, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৭/৪৩২, আল মুযাক্কার ওয়াত তাযকীর ১/৯১ ইবনু আবী আছিম, ইমাম বাজ্জারের সূত্রে আল ইস্তঈ’আব ৩/৯৭৫ ইবনু আব্দিল বার, তারীখে বাগদাদ ৬/৭৫ খতীবে বাগদাদ। প্রত্যেকের অভিন্ন সনদটি এইরূপ- محمد بن بشر ثنا عبيد الله بن عمر عن زيد بن أسلم عن أبيه به. শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) বলেছেন, وهذا إسناد صحيح এ সনদটি সহীহ

এবার ব্যতিক্রমী ও দুর্বল বর্ণনাগুলো নিম্নরূপ যেগুলোর মতন বা মূলপাঠ সূত্রের বিচারে অপ্রমাণিত,

. يقول البَلَاذُري (أحمد بن يحيى بن جابر البَلَاذُري البغدادي)ـ بعد لحادثة السقيفة المريرة ـ : إنّ أبا بكر أرسل إلى علي يريد البيعة، فلم يبايع، فجاء عمر و معه فتيلة، فتلقته فاطمة على الباب، فقالت فاطمة : يا ابن الخطاب أتراك محرقاً عليَّ بابي؟ قال : نعم، و ذلك أقوى فيما جاء به أبوك وجاء علي فبايع وقال : كنت عزمت أن لا أخرج من منزلي حتى أجمع يعني أحفظ القرآن

অর্থ- আহমদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে জাবের আল বালাজুরী আল-বাগদাদী বলেন, সাক্বীফায় সংঘটিত ঘটনার পর :- নিশ্চয়ই আবূবকর (রা.) বয়’আত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে আলীর নিকট দূত প্রেরণ করেন। যেহেতু সে বয়’আত নেয়নি। ফলে উমর (রা.) একটি প্রদীপ সাথে নিয়ে (ফাতিমার বাড়ীর উদ্দেশ্যে) যাত্রা করেন। ফাতিমা তার সাথে বাড়ীর দরজায় দেখা করেন। তখন ফাতিমা জিজ্ঞেস করলেন, হে উমর! আপনি কি আমার দরজায় আগুল দিতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এটি আপনার পিতা যা নিয়ে এসেছেন তার চেয়েও ভারি। অত:পর হযরত আলী (রা.) বেরিয়ে আসেন এবং বয়’আত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমি (মূলত) গৃহ থেকে বের না হবারই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যতক্ষণ না আমি কুরআন হিফয সম্পন্ন করছি। – আনসাবুল আশরাফ ২/১২, আল বালাজুরী। – দুর্বল

সম্পর্কিত তথ্যঃ ইমাম বালাজুরী (২৭০ হি.) এটি ‘আনসাবুল আশরাফ’ ২/১২-তে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনার সনদের অভ্যন্তরীণ ক্রুটি হচ্ছে, সূত্র বিচ্ছিন্নতা। বর্ণনাকারীদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত নয়। কেননা, এর সনদ হচ্ছে المدائني عن مسلمة بن محارب عن سليمان التيمي وعن ابن عون প্রথমতঃ এখানে মাসলামাহ বিন মাহারিব আয যিয়াদী আল কুফী সম্পর্কে রিজালশাস্ত্রের কিতাবগুলোয় জরাহ বা তা’দীল কোনো কথারই উল্লেখ নেই। তবে ইবনু হিব্বান তাকে সিকাহ’র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দ্বিতীয়তঃ সুলাইমান ইবনু তুরখান আত তাঈমী (سليمان ابن طرخان التيمي) এর মৃত্যু সন ১৪৩ হিজরী। কিন্তু সনদে উপরের দু’জনের মধ্যখানে ইনক্বিতা বা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। অধিকন্তু মাসলামাহ বিন মাহারিব শুধুই হিজাজের রাবীগণ থেকে এবং উমর বিন আব্দুল আযীয থেকেই বর্ণনা করতেন (-আস সিক্বাত, ইবনু হিব্বান)। আর আব্দুল্লাহ ইবনু আ’ওন আল বছরী (وعبد الله بن عون أبو عون البصري) এর মৃত্যু সন বিশুদ্ধ মতে ১৫০ হিজরী। সুলাইমান এবং আব্দুল্লাহ কেউই ঘটনাটি সুনিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি, যদিও দু’জনই বিশ্বস্ত ছিলেন। ইমাম ইয়াহইয়া বিন সা’ঈদ আল কাত্তান বলেন, সুলাইমান ইবনু তুরখানের মুরসাল সন্দেহযুক্ত ও গুরুত্বহীন। আর তার শায়খ আল মাদাইনী যার পূর্ণ নাম-أبو الحسن علي بن محمد بن عبد الله الإخباري ; মৃত্যু সন ২২৪ হিজরী, তিনি হাদীস বর্ণনায় শক্তিশালী নন (ইবনু আদীর আল কামিল ৫/২১৩ দেখুন)। তবে লিসানুল মীযান গ্রন্থে ইবনু মা’ঈন থেকে তার তাওসীক্ব উল্লেখ আছে। ইমাম যাহাবীও তার বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। যাইহোক, সর্বসাকুল্যে কথা হচ্ছে, বিশুদ্ধ বর্ণনার বিপরীতে ইমাম বালাজুরীর মুনকাতি সনদের এ বর্ণনার অতিরিক্ত অন্যান্য ঘটনা নির্ভরযোগ্য সনদে উত্তীর্ণ নয় বলে গ্রহণযোগ্য নয়।

এ ধরনের আরও কিছু দুর্বল বর্ণনা শব্দের কিছু পরিবর্তন সহ উল্লেখ রয়েছে, যেমন-

তারীখে তাবারী ৩/২০২।

‘আল ই’কদুল ফারীদ, ইবনু আব্দি রাব্বিহি আল উন্দুলুসী ৫/৩১। সংক্ষেপে।

সম্পূর্ণ লিখাটির সোর্স শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) এর Islamqa.info এ সাইট থেকে সংগৃহীত

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানীর নবুওয়ত একটি ব্রিটিশ পরিকল্পনা,

কাদিয়ানীর লেখিত বিভিন্ন বই পুস্তক থেকে হুবহু অনুবাদ সহ তার উত্থানের ঐতিহাসিক বিবরণ,

উনিশ শতকে যখন ব্রিটিশ শক্তি ভারত দখল করে নেয়, তখন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইমাম হযরত শাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী ফতোয়া দিয়েছিলেন, ভারত দারুল হরব এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ ফরজ। যার ফলশ্রুতিতে পুরো ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের লেলিহান শিখা জ্বলে ওঠে। এ জাতির আলেমসমাজ এবং স্বদেশের মুজাহিদগণ জীবন মুঠোয় নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রতিটি মোড়ে প্রতিটি রণক্ষেত্রে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী ভল্লুকদের সাহসিকতার সঙ্গে তারা রুখে দাঁড়ান। এটা সত্য, ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুসলমান মুজাহিদগণ হেরে গেছেন। এ কারণে তারাই সাম্রাজ্যবাদী অমানবিক পৈশাচিক নির্যাতনের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। তবে তাঁদের জিহাদি প্রেরণা কমে যায়নি কখনো। ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে অহর্নিশ।

ইংরেজদের বাজদৃষ্টি মুজাহিদগণের আত্মায় পোষিত এই অগ্নিবিপ্লবের কথা সচেতনভাবেই জানতো।  মুসলমান বিপ্লবীদের হৃদয় মৃত্তিকায় চাপাপড়া জিহাদের লেলিহানের কথা তারা জানত। এও জানত, যেকোনো সময় তা অগ্নিলাভার রূপ নিতে পারে এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাজানো মঞ্চকে খাক করে দিতে পারে। এ ভয় থেকেই তারা ‘দলাদলি সৃষ্টি করো এবং শাসন করো’- এর ফর্মুলা জন্ম দেয়। মুসলিম জাতির জিহাদি জোশ, বিশ্বাসিক শক্তি, ঈমানি পূর্ণতা, কুরআন  ও সুন্নতের প্রতি আকুল ভালবাসাকে চিরতরে ধ্বংস করে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদকে চির প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদে একজন ‘সরকারী নবী’ সৃষ্টির প্রকল্প হাতে নেয়। বিষয়টি পরে ব্রিটিশ কমিশনের একটি প্রতিবেদন থেকে প্রতিভাত হয়ে ওঠে।

১৮৬৯ সালে স্যার উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে ইংরেজগোষ্ঠী ভারতবর্ষে একটি কমিশন দল প্রেরণ করেন। ইংরেজদের সম্পর্কে মুসলমানদের মনোভাব যাচাই এবং ভবিষ্যতে মুসলমানদের কিভাবে শেষ করে দেয়া যায়, তার একটা বাস্তব পরিকল্পনা তৈরিই ছিল এই কমিশনের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে তারা এক বছর ধরে এখানে থেকে মুসলমানদের বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ১৮৭০ সালে লন্ডনের ভয়েন্ট হাউজে একটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। তাতে কমিশনের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও বিশেষভাবে ভারতবর্ষে নিযুক্ত মিশনারী পাদ্রিগণও অংশগ্রহণ করেন। উভয় দল ভিন্ন ভিন্নভাবে রিপোর্ট পেশ করেন। এ রিপোর্টটি পরে ‘দি এরাইভল অফ ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার ইন ইন্ডিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। স্যার উইলিয়াম হান্টার তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, “মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস হলো, কোনো বিদেশি শাসনের অধীনে বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। তাই বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ করা অত্যাবশ্যক। জিহাদের এই মর্মবাণীর প্রতি তাদের অন্তরে রয়েছে উত্তাল আকুলতা। তারা জিহাদের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। তাদের এই মনোভাব যে কোনো সময় তাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে।”

এ দিকে পাদ্রী সম্প্রদায় তাদের রিপোর্টে বলছে,

  • Report of missionary fathers.
  • majority of the population of the country blindly follow their press their Spritual leaders at this stage. we succeed in finding out would be ready to daclare himself a Zilli Nabi (apostolic prophet). then the large number of people will relly round him. but for this puopose, it is very difficult to persuade someone from the Muslim masses. if this problems solved, the prophethood of such a pesson can flourish under the patronage of the government. we have already over powered the native government mainly persuing policy of seeking help from the traitors. that is a deffitary point of view, now when we have sway over every nook of the country and there is peace and order everywhere, we ought to undertake measure which might create internal unrest among the country. [Extact from the printed report India office library, London]
  • “রাষ্ট্রের অধিবাসীদের অধিকাংশই ধর্মীয় নেতাদের অন্ধ অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে যদি আমরা এমন কাউকে খুঁজে বের করতে পারি, যে এই কাজের জন্য প্রস্তুত হবে; নিজেকে ‘ছায়ানবী‘ হিসেবে ঘোষণা করবে। তাহলে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী তার পাশে জড়ো হবে। কিন্তু এই লক্ষ্য সাধনের জন্য সাধারণ মুসলমানদের কাউকে উৎসাহিত করা কঠিন। যদি এই সমস্যা সমাধান হয়, তাহলে এই ব্যক্তির নবুওয়াতের বিষয়টিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এগিয়ে নেয়া যায়। আমরা ইতিপূর্বে গাদ্দারদের সহযোগিতায় ভারতের শাসকদের প্রজা বানিয়েছি। কিন্তু সে ছিল ভিন্ন বিষয়। তখন সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে গাদ্দারদের প্রয়োজন ছিল। এখন যখন রাষ্ট্রের সকল প্রান্তে আমাদের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বহমান; তখন আমাদের এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।” [প্রিন্টেড রিপোর্ট, ইন্ডিয়া অফিস লাইবেরি, লন্ডন ]

এই রিপোর্টের আলোকে আমরা ব্রিটিশ পরিকল্পনাটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। মূলত এই পরিকল্পনার অধীনেই ব্রিটিশ প্রশাসন শীয়াদের মধ্য থেকে মির্যা হুসাইন আলী নূরীকে (যিনি বাহাউল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ) আর সুন্নীদের মধ্য থেকে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে স্বপ্রণীত নবুয়তের স্টেজে দাঁড় করিয়ে দেয়। মির্যা কাদিয়ানীর তৎপরতাগুলো সামান্য খুঁটিয়ে দেখলেই আমরা সহজে এই বিশ্বাসে উপনীত হতে পারব যে, কাদিয়ানীর নবুওয়াত ব্রিটিশদের তৈরি, তাদের হাতেই লালিত হয়েছে এবং বেড়ে উঠেছে তাদেরই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। আর এ কথা স্বয়ং কাদিয়ানীও তার বিভিন্ন রচনায় স্বীকার করেছে। যেমন, লক্ষ করুন!

বৃটিশ রাণী ভিক্টোরিয়াকে এক চিঠিতে লিখেছেন,

“হে মহামহিম ভারত সম্রাজ্ঞী! আপনার মহিমা এবং সুনাম মুবারক হোক! খোদার দৃষ্টি (তথা করুণা) সে দেশের উপরই রয়েছে, যে দেশের উপর রয়েছে আপনার দৃষ্টি, খোদার রহমত (তথা সাহায্য) সে জনতার উপরই রয়েছে যে জনতার উপর রয়েছে আপনার হাত (তথা হুকুমত)। আপনার পবিত্র নিয়ত (আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই আল্লাহ আমাকে (রূপক ‘মসীহ’ বানিয়ে) প্রেরণ করেছেন।” (সেতারায়ে কায়সারিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৫/১২০, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।

কাদিয়ানী তার এ লিখায় অকপটে বলেই দিয়েছে যে, আল্লাহ নাকি তাকে বৃটিশ রাণীর পবিত্র নিয়ত (আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন।” প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য।

পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে এক আর্জিতে লিখেছেন,

“নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার দলের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করেন। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)।

আরেকটি রচনায় লিখেছেন,

“আমার (ধর্ম)মত এটাই যা আমি প্রতিবার প্রকাশ করে থাকি তা হল, ইসলামের দুটি অংশ। একটি হল খোদাতালার আনুগত্য করা আর দ্বিতীয়টি হল, এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং জালেমদের হাত থেকে আপনা ছায়ার নিচে আশ্রয় দিয়েছে। সেটি হল ব্রিটিশ সরকার।” (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)।

আরেক জায়গায় লিখেছেন,

“আমার জীবনের অধিকাংশই এই ইংরেজ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আর সহযোগিতার মধ্যেই অতিবাহিত হয়েছে। আমি জিহাদ নিষিদ্ধ করে ইংরেজ সরকারের আনুগত্যের উপর এই পরিমাণ কিতাব (পুস্তক) রচনা করেছি এবং (এত অধিক পরিমাণ) প্রচারপত্র প্রকাশ করেছি যদি ঐ পত্রাবলী এবং পুস্তকগুলি একত্রিত করা হয় তাহলে তা দ্বারা ৫০টি আলমারি ভর্তি হয়ে যাবে। আমি এই সমস্ত কিতাব তামাম আরব, মিশর, সিরিয়া, কাবুল এবং রোম (ইউরোপ-ইতালি) দেশেও পৌঁছে দিয়েছি। আমার সদাসর্বদা প্রচেষ্টা এটাই থাকে যে, মুসলমানরা যেন এই (ইংরেজ) সরকারের প্রকৃত খয়েরখাঁ হয়ে যায় এবং খুনি মাহদী এবং খুনি মসীহ সংক্রান্ত ভিত্তিহীন বর্ণনাসমূহ এবং জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী সমস্ত মাসয়ালা তাদের অন্তরসমূহ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় যেগুলো আহাম্মকদের অন্তরসমূহ খারাপ করে দিয়েছে।” (রূহানী খাযায়েন ১৫/১৫৫-৫৬)।

তিনি অন্য একটি রচনায় লিখেছেন,

“আমি বিশ বছর পর্যন্ত ইংরেজ সরকারের প্রতি আনুগত্যের শিক্ষাই দিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার মুরিদদের মাঝে এই হিদায়াতই (নির্দেশনা) জারি রেখেছি। তাহলে কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, আমি এই সমস্ত হিদায়াতের বিপরীতে কোনো প্রকারের সরকার-দ্রোহী অভিসন্ধির শিক্ষা দিচ্ছি! অথচ আমি জানি যে, আল্লাহতালা স্বীয় খাস অনুগ্রহে এই সরকারকেই আমার এবং আমার জামাতের আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন। এই সরকারের ছায়াতলে আমাদের জন্য যে নিরাপত্তা অর্জিত সেটি না মক্কা শরীফে রয়েছে আর না মদীনায় আর না রোম সম্রাটের কনস্টানটিনোপলের সিংহাসনেও।” (রূহানী খাযায়েন ১৫/১৫৬)।

আরেকটি রচনায় লিখেছেন,

“আমি ইংরেজ সরকারের যে সেবা করেছি তা হলো, এ দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে প্রায় পঞ্চাশ হাজার বই পুস্তক এবং প্রচারপত্র ছাপিয়ে বিতরণ করেছি। এ সব রচনায় আমি বলেছি, ইংরেজ সরকার আমাদের মুসলমানদের কল্যাণকামী বন্ধু। তাই ইংরেজ সরকারের নিষ্ঠাপূর্ণ আনুগত্য প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ।” (সেতারায়ে কায়সারিয়া-৪, রূহানী খাযায়েন ১৫/১১৪, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।

সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, কাদিয়ানীর কথিত নবুওয়ত ব্রিটিশ সরকারেরই একটি পরিকল্পিত প্রজেক্ট। ব্রিটিশরাই নিজেদের ক্ষমতা টিকানোর উদ্দেশ্যে তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দাঁড় করিয়েছিল। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের পক্ষেও কখনো সম্ভব নয় যে, দখলদার বিদেশীদের দখলদারিত্বের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করা, পঞ্চাশটি আলমারি ভর্তি লিখনী দিয়ে সাহায্য করা। কাজেই তার মাহদী, মসীহ কিংবা ‘ছায়ানবী’ ইত্যাদি দাবীসমূহ বাতুলতা আর ভেল্কিবাজি ছাড়া আর কিছুই না।

মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়ত দাবী প্রকৃত অর্থেই, রূপক বা ভিন্ন অর্থে ছিলনা

মির্যায়ী রচনাবলী থেকে তথ্যপ্রমাণ সহ নিম্নরূপ,

নবী ও রাসূল দাবী

আমার দাবী, আমি নবী এবং রাসূল। (দৈনিক আল হাকাম ৫ই মার্চ ১৯০৭ইং, মালফুযাত ১০/১২৭ পুরাতন এডিশন, ৫/৪৪৭ নতুন এডিশন)।

শোনো! প্রত্যেক আহমদী এ বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, সেই পবিত্র, মহৎ ও ধর্মভীরু ব্যক্তিত্ব যাকে অনেকে মির্যা কাদিয়ানী বলে থাকে, তিনি আল্লাহর মনোনীত একজন নবী। (নবুওয়ত ও খেলাফত ১৭, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বকশিবাজার ঢাকা)।

আল্লাহর আদেশ মোতাবেক আমি একজন নবী। আমি এই দাবী অস্বীকার করলে আমার পাপ হবে। (আখবারে আ’ম ২৬ মে ১৯০৮ ইং, নবুওয়ত ও খেলাফত ৭৬)।

তিনিই সত্য খোদা যিনি কাদিয়ানে তার রাসূল প্রেরণ করেছেন। (দাফেউল বালা ১২, রূহানী খাযায়েন ১৮/২৩১ মির্যায়ী রচনাসমগ্র যা ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত)।

আমি একজন রাসূলও এবং নবীও অর্থাৎ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং খোদার পক্ষ থেকে আমি গায়েবের সংবাদ প্রাপ্তও। (একটি ভুল সংশোধন, রূহানী খাযায়েন ১৮/২১১)।

যারা একজন সম্মানিত রাসূলকে গ্রহণ করল না, তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। ভাগ্যবান সে যে আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি খোদার সকল পথের শেষ পথ। আমি তার সকল নূরের শেষ নূর। দুর্ভাগা সে যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করল। কারণ, আমি ছাড়া সব অন্ধকার। (কিশতিয়ে নূহ, রূহানী খাযায়েন ১৯/৬১)।

আমি সে খোদার নামে কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫০৩)।

এতে কি সন্দেহ যে, আমার ভবিষ্যৎবাণীগুলোর পর দুনিয়াতে ভূমিকম্প ও অন্যান্য আপদ-বিপদ একের পর এক শুরু হওয়া আমার সত্যতার একটি নিদর্শন। মনে করা উচিত, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার করলে তখন অন্য অপরাধীদেরও পাকড়াও করা হয়। (হাকীকাতুল ওহী উর্দূ ১৬১)।

খোদাতালা কাদিয়ানে এই ধ্বংসাত্মক মহামারী থেকে রক্ষা করবেন। কেননা এটা তাঁর রাসূলের রাজধানী। (দাফেউল বালা ১০)।

তিনি (অর্থাৎ গোলাম আহমদ) নবী। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই সকল শব্দে নবী বলেছেন, যে সকল শব্দ দ্বারা কুরআন ও হাদীসে পূর্ববর্তী নবীদের আখ্যায়িত করা হয়েছে। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ৭০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (মৃত. ৭ই নভেম্বর ১৯৬৫ ইং) লিখেছেন,

  • اگر میرے گردن کے دونوں طرف تلوار بھی رکھ دی جائے اور مجھے کہا جائے کہ تو یہ کہو کہ آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی بعد کوئی نبی نہیں آئےگا تو میں اس سے کہوں گا کہ تو جھوٹا ہے اور کذاب ہے آپ کے بعد نبی آسکتے ہیں اور ضرور آسکتے ہیں

অর্থ-“যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরে রাখা হয় আর আমাকে বলতে বলা হয় যে, তুমি বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোনো নবী আসতে পারেনা! তাহলে আমি অবশ্যই বলব যে, তুমি মিথ্যাবাদী ও মহা মিথ্যুক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবী আসতে পারে, অবশ্যই আসতে পারে।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৭, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা বশির উদ্দীন একই গ্রন্থের আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখেছেন,

  • اور (انہیں) یہ سمجھ لیا جائے کہ خدا کے خزانے ختم ہوگی اس لئے کسی کو کچھ نہیں دے سکتا اسی طرح یہ کہتے ہیں کہ خواہ کتنا ہی زہد اور اتقاء میں بڑھ جائے پرہیزگاری اور تقوی میں کئی نبیوں سے اگے گزر جائے معرفت الہی کتنی ہی حاصل کر لے لیکن خدا اس کو کبھی نبی نہیں بنائے گا اور کبھی نہیں بنائے گا ان کا یہ سمجھنا خدا تعالی کی قدر کو ہی نہ سمجھنے کی وجہ سے ہیں ورنہ ایک نبی کیا میں تو کہتا ہوں ہزاروں نبی ہوں گے

অর্থ-“তারা মনে করছে যে, আল্লাহতালার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে, তাই তিনি (এখন) কাউকে কিছুই দেন না। তেমনিভাবে এও বলে যে, কোনো কেউ দুনিয়াবিরাগী এবং খোদাভীরুতায় ও তাকওয়া আর পরহেজগারীতে কতেক নবী অপেক্ষায় যতই অগ্রে পৌঁছে যায় না কেন, সে যত বেশিই খোদার মা’রেফত (দর্শন) লাভ করেনা কেন; কিন্তু খোদা তাকে কখনোই নবী বানাবেন না। তাদের এইরূপ মনে করার কারণ হচ্ছে খোদাতালার মর্যাদা বুঝতে না পারা। অন্যথা নবী শুধুই একজন কেন! আমি তো বলি, হাজার হাজার নবী হবেন।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৪, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

কাদিয়ানীদের তথাকথিত দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তাঁর পিতার “নবী” দাবীর বিষয়টিকে মূল্যায়ন করে লিখেছেন,

جب حضرت مسیح موعود نبی ثابت ہوگئے، ایسے ہی نبی جیسے دوسرے انبیاء علیہم السلام تو پھر ان کے بھی وہی حقوق ہیں جو دوسرے انبیاء کے ہیں-

অর্থাৎ হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা সাহেব) যখন একজন নবী বলে সাব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তেমনি একজন নবী; যেমন অন্যান্য নবীগণ, তখন তো উনার-ও অনুরূপ অধিকার থাকবে যেভাবে অন্যান্য নবীগণের রয়েছে। (কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল পৃ-১০ কলাম ৩, তারিখ ৩০-১২-১৯১৬ ইং)।

  • মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের এ কথা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানী প্রকৃতপক্ষেই একজন “নবী” দাবীদার ছিল। অতএব, তার অনুসারীদের বিভিন্ন রচনা কিবা বক্তৃতায় সেটিকে “উম্মতি-বুরুজী-জিল্লি” শব্দে ব্যাখ্যা দিতে চাওয়া সুস্পষ্ট একটা ধোকা ও প্রতারণা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং প্রশ্নবাণে আত্মরক্ষার হীন-কৌশল ছাড়া আর কিছুই না।

সুতরাং এতে কী সন্দেহ যে, প্রতিশ্রুত মসীহ কুরআন কারীমের অর্থ বিচারেও নবী এবং অভিধানের অর্থ বিচারেও নবী। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ১১৬, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

অতএব ইসলামি শরীয়ত নবী শব্দের যে ব্যাখ্যা দেয় সে ব্যাখ্যা হিসেবে হযরত মির্যা সাহেব কিছুতেই রূপক নবী নন, বরং প্রকৃত অর্থেই নবী। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১৭৪, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

নবী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরাও মির্যা গোলাম আহমদকে পূর্ববর্তী নবীগণের মতোই নবী মনে করি। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ২৯২, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

১৯০১ সাল পর্যন্ত মির্যা সাহেবের ধারণা ছিল যে, আমার নবুওয়ত অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত, যেন তিনি ছায়ানবী। কিন্তু ১৯০১ সালে আল্লাহর ওহী তাকে মনোযোগী করে যে, তার নবুওয়ত অপূর্ণাঙ্গ কিংবা খণ্ডিত নয়, বরং তার নবুওয়ত ঠিক সেই রকম যেমন ছিল পূর্ববর্তী সকল নবীর। এই ওহীর পর তার আকীদা পরিবর্তন হয়ে যায়। পরে তিনি আর নিজের নবুওয়তকে অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত বলেননি। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১২০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

১৯০১ সালের পূর্বের যেসব উদ্ধৃতিতে তিনি নবী হওয়াকে অস্বীকার করেছেন, এখন তা রহিত হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করা এখন ভুল। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১২১, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

পূর্বেও তাকে নবী নামে ডাকা হতো। কিন্তু তিনি তার ব্যাখ্যা করতেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা যখন বারবার ইলহামের মাধ্যমে তাকে নবী বলে ডাকছিলেন, তখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে, আসলে তিনি নবীই, অন্য কিছু নন। যেমনটি পূর্বে মনে করতেন। নবী শব্দটি যা তার ইলহামে ব্যবহৃত হত তা একেবারেই দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট, ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ১২৪, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

  • লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
  • কাদিয়ানী মতবাদ বিশেষজ্ঞ

কওমী মাদরাসার চাঁদা ও চামড়া কালেকশনে সিস্টেমেটিক সংস্কার সময়ের দাবী

বর্তমানে ক্বওমী মাদরাসাগুলো জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় চলার যে পদ্ধতিটা দেখা যাচ্ছে এটা মূলত আমাদের আকাবিরদের তরীকার বিপরীত। দেওবন্দে কালেকশনের জন্য আলাদা মুহাসসিল আছে। এটা উস্তাদ ছাত্রের কাজ নয়।

আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে উস্তাদ ছাত্ররা এটা আঞ্জাম দেয়। কোরবানির সময় ছাত্রদের দিয়ে চামড়া কালেকশন করার বিষয়টা সব সময় আমাদের বিবেকে বাঁধে, আমাদেরকে পীড়া দেয়। একই বাড়ির সামনে ছাত্র-উস্তাদ দাঁড়িয়ে আছেন চামড়ার জন্য, ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে আছে গোশতের জন্য। বাড়িওয়ালা ভিক্ষুকদেরও ধমকাচ্ছে, ছাত্র-শিক্ষকদেরও ধমকাচ্ছে। বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার ঘটনাও তো আমাদের সামনেই ঘটেছে। এমন দৃশ্যগুলো আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এছাড়াও আরও কত লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তা তো আমরা নিজ চোখেই দেখেছি। আবার অল্প সময়ে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় হওয়াতে কমিটির লোকেরা এটা কোনোভাবেই বন্ধ করতে সম্মত হয় না। তাছাড়া রমজান মাসে কালেকশনের জন্য শিক্ষকদের বাধ্য করাও আমাদের মাদরাসাগুলোতে বিচিত্র নয়। সে কালেকশন করতে গিয়ে তাদের মান-মর্যাদা ঠিক থাকবে কিনা তা দেখার যেন কেউ নেই।

হযরত থানবী (রহ.) এর বক্তব্য ছিল, কোনো ছাত্র তো নয়; কোনো শিক্ষকও কালেকশন করতে যাবে না। এমনকি যদি এর জন্য মাদরাসার সংখ্যা কমে যায়, তাও দীনের জন্য ভালো। তাই আমরা আমাদের এখানে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেন ছাত্র-শিক্ষক সকলেরই ইজ্জত সুরক্ষিত থাকে। কালেকশনের জন্য তারা মানুষের বাড়ি-বাড়ি যাবে না। চামড়ার কালেকশন করবে না। এমনিভাবে উস্তাদরাও রমজানে যাকাত কালেকশনের জন্য রশিদ বই নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে না।

হ্যাঁ, নিজের ইজ্জত রক্ষা করে যতটুকু করা যায় তা করবে। পারলে করবে, না পারলে না করবে। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থনৈতিক বিষয়টা আমরা সামনে রেখে তা’লীম গ্রহণে আসলাফ ও আকাবিরের যে চেতনা ও পদ্ধতি ছিল তা আবার ফিরিয়ে আনার চিন্তা করেছি। অর্থাৎ ইলম হাসিলের পথে ছাত্র তার সাধ্যমত খরচ করবে। যেমন সালাফের যামানায় ইলম হাসিলের যাবতীয় খরচ শিক্ষার্থী নিজে বহন করত। কারও কারও জীবনীতে পাওয়া যায়, বাবার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পদের পুরোটাই ইলমের পথে ব্যয় করে দিয়েছেন।

তাই আমাদের চিন্তা হল প্রতিষ্ঠান নয়; শিক্ষার্থী নিজেই নিজের খরচ বহন করবে। সাধারণত আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ম হল, নির্ধারিত নম্বর পেলে মাসিক প্রদেয় মওকুফ হয়ে যায়। কিন্তু এই ফিকির সামনে রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, মাসিক প্রদেয় ফ্রি হওয়ার সম্পর্ক থাকবে সামর্থ্যের সাথে, নম্বরের সাথে নয়। নম্বর বিবেচ্য হবে কেবল ভর্তির ক্ষেত্রে। নম্বর পেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে, না হয় না।

এর অর্থ এই নয় যে, এখানে কেবল ধনীরাই সুযোগ পাবে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য অবারিত সুযোগ থাকবে। তবে প্রত্যেকেই সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে; স্বচ্ছলতা নেই বলে সে কিছুই দিবে না- এমন যেন না হয়। যে যতটুকু পারে ততটুকুই দিবে, বাকিটুকু প্রতিষ্ঠান বহন করবে। খরচ করতে অভ্যস্ত হওয়া ইলমের জন্য যেমন দরকার তেমনি দরকার নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য। এই অভ্যাস না থাকলে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। একজন লোক যত বড়ই হোক যদি অন্যকে দেওয়ার অভ্যাস তার মাঝে গড়ে না উঠে, কেবল গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে কোনদিন তার মানসিকতা বড় হয় না। তার প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা জন্মায় না। মানুষ তাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে না। তাই সমাজে সে কোনো প্রভাবও রাখতে পারেনা, সে গলে যায় অর্থবিত্তের সামনে। এজন্য কেবল যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়, যোগ্যতার ব্যবহারের জন্য এই ব্যক্তিত্বকেও ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

  • আল্লামা আবুল বাশার সাইফুল ইসলাম হাফিজাহুল্লাহ।
  • শাইখুল হাদীস : জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া৷
  • মুহাম্মাদপুর, ঢাকা৷

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম এ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক