ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, (আরবী) ومن زعم أنه لا يرى التقليد ولا يقلد دينه أحدًا فهو قول فاسق عند اللَّه ورسول – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – إنما يريد بذلك إبطال الأثر تطيل العلم والسنة والتفرد بالرأي والكلام والبدعة والخلاف
অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ ধারনা রাখবে যে, তাকলিদ বলতে কোনো কিছুই সে দেখতে পায় না এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে কারোরই তাকলিদ করা যায় না, তার এ কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর দৃষ্টিতে একটি ফাসেকি (পাপপূর্ণ) কথা। (বস্তুতঃ) এ ব্যক্তি তার এই কথা দ্বারা আছার সমূহকে (সাহাবী এবং তাবেয়ীগণের ফতুয়া ও কর্ম)-কে বাতিল করতে চায় এবং ইলম ও সুন্নাহকে সংকীর্ণ করতে চায়। সে (প্রকৃতপক্ষে) মতামত এবং বক্তব্যে স্বতন্ত্রতা ও বিদয়াত এবং মতবিরোধ তৈরি করতে চায়।
কিতাব– তাবক্বাতুল হানাবিলাহ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৩১, লিখক- ইমাম আবুল হোসাইন মুহাম্মদ বিন আবী ই’য়ালা আল ফাররাহ আল-বাগদাদী আল-হাম্বালী (محمد بن أبي يعلى الفراء البغدادي الحنبلي أبو الحسين), তাহকীক- শায়খ মুহাম্মদ হামেদ আল-ফাক্বী (محمد حامد الفقي)৷ প্রকাশনায়- মাত্ববা’আতুস সুন্নাতুল মুহাম্মদীয়াহ, কায়রো মিশর। মোট দুই খণ্ডে প্রকাশিত।
প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –
স্ক্যানকপি
আসুন, এবার তাকলিদ-কে শিরিক, ব্যক্তিপূজা ইত্যাদি বলে বলে মুখে যতপারি ফেনা তুলি, কোমরে গিট বেঁধে মাযহাবের বিরোধিতায় মাঠ গরম করতে থাকি, “সহীহ সহীহ” ভাব নিয়ে বিশেষতঃ ফিকহে হানাফীর বিরুদ্ধে জনমনে সংশয় আর বিদ্বেষ তৈরি করতে ইচ্ছেমতো অপপ্রচার করি…..!!! হে আল্লাহ! তুমি পরকালে আমাদের প্রত্যেকের কলিজায় জবাবদিহিতার ভয় ঢুকিয়ে দাও!
১৯৮৯ সাল। বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। করমর্দন করছেন একে অন্যের সাথে। নীচের ছবিতে পাশেই ওআইসিভুক্ত মিশর, মরোক্কোসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রীগণ। ওআইসির ওই ঐতিহাসিক সভায় আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের সর্বসম্মতিক্রমে অমুসলিম ঘোষণা করে। ঘোষণাপত্রে তখন বাংলাদেশের পক্ষে দস্তখত করেন ধর্মমন্ত্রী ও সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী জনাব এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। (কয়েকটি ছবি) :
ছবি:
উল্লেখ্য, তার-ও পূর্বে ১৯৮৫ সালে ডিসেম্বর মাসের ২২ হতে ২৮ তারিখ মোট ছয় দিনব্যাপী সৌদিআরবের জেদ্দায় ওআইসির অঙ্গসংগঠন ‘ইসলামী ফেকাহ একাডেমী’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে-ও বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়া হয়। (সূত্র:ইসলামী ফেকাহ একাডেমীর ২য় সম্মেলনের উপর প্রকাশিত পত্রিকা: সংখ্যা ২, প্রথম খণ্ড ১৪০৭ হিজরী মুতাবেক ১৯৮৬ ইং)।
তার-ও পূর্বে ১৯৭৪ সালের ১০ই এপ্রিল মুতাবেক ১৩৯৪ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে রাবেতার সদর দফতর মক্কা মুকাররমায় ১৪৪টি ইসলামী সংগঠনের এক আন্তর্জাতিক মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানেও সভার সর্বসম্মতিক্রমে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। (সূত্র: আন-নদওয়া সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ জাতীয় দৈনিক, তারিখ ১৪ই এপ্রিল ১৯৭৪ইং)।
এছাড়া তার-ও পূর্বে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আফগান সরকার, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের সন্নিকটে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মরিসাশ এর প্রধান বিচারপতি, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক সরকার, ১৯৩৫ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ শাসনামলে ভাওয়ালপুরের জেলা জজ মুহাম্মদ আকবর সাহেব একটি মামলার রায়ে (মামলাটি ‘মুকাদ্দামায়ে ভাওয়ালপুর’ নামে পরিচিত। এটি দায়ের করা হয় ১৯২৬ সালে আর রায় প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে), ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া সরকার, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মিশর সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সৌদী সরকার, ১৯৭৪ইং সংযুক্তআরব আমিরাত সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাহরাইন সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কাতার সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের জাতীয় এসেম্বলি সর্বসম্মতিক্রমে ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী জনাব মুসা তিহাম, ১৯৯০-এর দশকে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া সরকারের প্রধান ইয়াহইয়া আবু বকর প্রত্যেকে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। আমাদের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ে ১৯৮৫ সালের ৮ই আগস্ট হাইকোর্টের মাননীয় বিজ্ঞ দুই বিচারপতি কাদিয়ানীদের একটি প্রকাশনা ‘ইসলামে নবুওয়ত’ বাজেয়াপ্ত করে (৪৫ ডি.এল.আর, ১৯৯৩)। তারই চার বছর ব্যবধানে ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের সভার সর্বসম্মতিক্রমে অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মীমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে উক্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। অতি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সরকার দেশটির একজন মুসলিম নারী পার্লামেন্ট সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংসদে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার পক্ষে বিল পাস করেন। যদিও ইতিপূর্বেই ‘ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল অফ সিঙ্গাপুর‘ (MUIS) ১৯৭৯ সালে একটি ফাতাওয়া (ডিগ্রি) জারি করে আহমদী তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশটিতে কাদিয়ানীদের সাথে মূলধারার মুসলমানদের বিবাহ-শাদী ও কাবিন রেজিঃ হাজ্জ-ভিসা, মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
আফ্রিকার স্বাধীন মুসলিম দেশ “মালি” এর গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের অন্যতম অংশ ‘HAUT COUNSEL ISLAMIQUE DU MALI CONFERENCE NATIONAL DES OULEMAS (মালির ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল, স্কলারদের জাতীয় সম্মেলন)’। উলামা কাউন্সিলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটির প্রধান (গ্র্যাণ্ড মুফতি) ডক্টর সাইয়েদ মুহাম্মদ। ৮ ই আগস্ট ২০২২ ইং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সাথে উলামা কাউন্সিলের প্রধানের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উলামা কাউন্সিলের পক্ষ হতে দেশটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বরাবর লেখিত সুপারিশনামা হস্তান্তর করা হয়। যেখানে আরবী ভাষায় প্রায় ১-৯টি পয়েন্টে কাদিয়ানীদের অমুসলিম হবার প্রধান প্রধান কারণগুলো প্রমাণসহ তুলে ধরা হয়। উক্ত সুপারিশনামায় المجلس الاعلى الاسلامى فى مالى বা HAUT COUNSEL ISLAMIQUE DU MALI-এর প্রধান ডক্টর সাইয়েদ মুহাম্মদ এবং সেক্রেটারি ডক্টর ইব্রাহিম মুস্তফা জাবি (ভিডিও) উভয় স্বাক্ষর করেন (কিছু ডকুমেন্ট)।
২০২৩ইং শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, অনুসন্ধানী পাঠ’ এর ২৪ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে: “আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আধুনিক মানুষ এবং বানর গোত্রের নানা প্রাণী (যেমন শিম্পাঞ্জি, গরিলা) একটি সাধারণ প্রাইমেট জাতীয় প্রজাতি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাং ওটাং ও গিবনের মতন এপ জাতীয় প্রাণীরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অন্যদিকে বানর তৈরী হয়েছে। আর একটি ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে নানা পর্যায়ে। তোমাদের মনে রাখতে হবে, বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি। বরং মানুষ, শিম্পাঞ্জিসহ এপ-রা আর বানরের বিভিন্ন প্রজাতি একই ধরণের প্রাইমেট প্রজাতির প্রাণী থেকে বিকশিত হয়েছে”। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, অনুসন্ধানী পাঠ, ষষ্ঠ শ্রেণি, পৃষ্ঠা-২৪।
সুতরাং জানা গেল যে, বানর, গরিলা, শিম্পাঞ্জি আর মানুষ মূলত ভাইবোন! আরো সহজ করে বললে, বানর, গরিলা, শিম্পাঞ্জি এবং মানুষ হলো একই আব্বার সন্তান। মানে সহোদর আর কি! বানর নামক প্রাণীটি হলো মানুষ নামক প্রাণীটির সহোদর, আব্বা নয়। সহোদরকে আব্বা পরিচয় দেয়া মহা অন্যায়। এতো বড় মহা অন্যায় করা কিছুতেই উচিত হয়নি। কিন্তু মানুষকে, গরিলা আর বান্দরের সহোদর যারা প্রমাণ করছেন, বিবর্তনবাদের আজগুবি থিউরী কপচে আদি মানব আদম [آدم](আলাইহিস সালাম) ও হওয়া [حواء](আলাইহাস সালাম) বলে কুরআনের চিরন্তন সত্য বাণীকে অস্বীকার করিয়ে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের যারা ভ্রষ্ট ও নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারা করছেন তাদের অন্যায়টা কত বড় তাও ভাবা দরকার। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি)
সিয়াহ সিত্তার ইমামগণ কে কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ? শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর কিতাব থেকে,
আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর উপর আনীত ২০টি অভিযোগ ও তার জবাব Click
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, ইমাম বুখারী এবং ইমাম আবু দাউদ তারা উভয়ই ফিকহের ক্ষেত্রে ইজতিহাদকারী ইমাম ছিলেন। ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম ইবনে খুযায়মাহ, ইমাম আবু ইয়া’লা; ইমাম বাজ্জার প্রমুখ ইমামগণের মাযহাব ছিল ‘আহলে হাদীস‘[১]। তারা নির্দিষ্ট কোনো আলেমের অনুসারী ছিলেন না। আবার তারা মুজতাহিদে মুত্বলাকও (প্রসিদ্ধ চার ইমামের মত স্বতন্ত্র মুজতাহিদ) ছিলেন না। বরং তারা ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ, ইমাম ইসহাক, ইমাম আবু উবাইদ প্রমুখ হাদীসশাস্ত্রবিদদের মতামতের (ফিকহের) দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে এঁদের মধ্যে কতিপয় ইমাম, বিশেষত ইমাম আবু দাউদ (রহ.) প্রমুখ তাঁরা আহমদ বিন হাম্বলের (ফিকহের) দিকে এবং কেউ কেউ আহলে হিজাজের তথা ইমাম মালেকের (ফিকহের) দিকে, কেউ কেউ আহলে ইরাকের তথা হানাফী এবং সুফিয়ান আস-সওরীর (ফিকহের) দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।[২]
[১] ‘আহলে হাদীস’ও একটি ‘মাযহাব’ (فهم على مذهب أهل الحديث)। আরও সহজ করে বললে, এটি হাদীসবিশারদদের কর্ম ও যোগ্যতার বিশেষণমূলক একটি ‘উপাধি’ মাত্র। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) নিজেই একথা লিখেছেন। এঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এঁরা নির্দিষ্ট কারো তাকলীদ করতেন না, তবে শাফেয়ী, হাম্বলী ইত্যাদী মাযহাবের ইমামগণের মতামত স্ব স্ব ইজতিহাদ মাফিক (من أهل الاجتهاد) অনুসরণ করতেন। বুঝা গেল, ইবনে তাইমিয়া’র “আহলে হাদীস” এর তাৎপর্য আর প্রচলিত “আহলে হাদীস”-এর তাৎপর্য সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থিত! দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশের কোনো কোনো ঠেলা-ওয়ালা, রিক্সা চালক ও দিনমজুর ভাইয়েরা যাদের হয়ত আলিফ বা তা ছা জ্ঞানও নেই; তারাও নাকি ‘আহলে হাদীস’! অথচ শায়খ ইবনে তাইমিয়ার ‘আহলে হাদীস’ এর তাৎপর্যমতে ‘আহলে হাদীস’-এর জন্য ইজতিহাদের যোগ্যতা পূর্ব-শর্ত!
[২] الحمد لله رب العالمين. أما البخاري؛ وأبو داود فإمامان في الفقه من أهل الاجتهاد. وأما مسلم؛ والترمذي؛ والنسائي؛ وابن ماجه؛ وابن خزيمة؛ وأبو يعلى؛ والبزار؛ ونحوهم؛ فهم على مذهب أهل الحديث ليسوا مقلدين لواحد بعينه من العلماء ولا هم من الأئمة المجتهدين على الإطلاق بل هم يميلون إلى قول أئمة الحديث كالشافعي؛ وأحمد؛ وإسحاق وأبي عبيد؛ وأمثالهم. ومنهم من له اختصاص ببعض الأئمة كاختصاص أبي داود ونحوه بأحمد بن حنبل وهم إلى مذاهب أهل الحجاز – كمالك وأمثاله – أميل منهم إلى مذاهب أهل العراق – كأبي حنيفة والثوري
রেফারেন্স : مجموع فتاوى ابن تيمية (মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ), খণ্ড নং ২০ পৃষ্ঠা নং ২৫
সংযুক্ত প্রামাণ্য স্ক্রিনশট :-
মাজমু ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ
ফেইসবুকে লিখাটির উপর একজন আহলে হাদীস দাবীদার ভাইয়ের কয়েক ডজন মন্তব্য ও সেগুলোর যথাযথ সদুত্তর সহ দেখে নেয়ার অনুরোধ!
মাজলুম ইমাম, হযরত আবু হানীফা (রহ.)-এর সুমহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী’র রচনা থেকে,
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) যখনি কারো আলোচনা করতেন উত্তম ও প্রীতির সাথে করতেন। রাবী হযরত রাশীদ বলেন, এটাই প্রকৃত ধার্মিকদের নীতি। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ও ফকীহ ইমাম সুফিয়ান আস-সওরী (রহ.) বলেন, আবু হানীফা (রহ.) ছিলেন সেই সময়কার সব চেয়ে বেশি সালাত আদায়কারী ব্যক্তি, সততায় সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বীরত্বে সর্বোত্তম। রাবী শারিকের সূত্রে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু হানীফা (রহ.) সুদীর্ঘ নীরবতা পালনকারী ছিলেন, সর্বদা চিন্তাশীল, দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন এবং মানুষের সাথে খুব কম কথা বলতেন।[১]
[১] لا يذكر احدا الا بخير. فقال الرشيد : هذه أخلاق الصالحين. فقال سفيان : مه! كان أبو حنيفة اكثر الناس صلاة و اعظمهم امانة و احسنهم مروءة. و روى عن شريك قال : كان ابو حنيفة طويل الصمت ، دائم الفكر ، كبير العقل ، قليل محادثة للناس. كذا فى المناقب للذهبى
রেফারেন্স : مناقب الامام ابى حنيفة و صحابيه (মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা ওয়া সাহাবাইহি), পৃষ্ঠা ১৭; তাহকীক, শায়খ মুহাম্মদ যাহেদ আল কাউসারী (রহ.)।
আমার মন্তব্য, বর্তমান স্যোসাল মিডিয়ায় আবু হানীফা (রহ.)-এর ফিকহের কতিপয় অনুসারী ও মুকাল্লিদ দাবীদারদের উচিত, ভিন্নমতের পেছনে উগ্রতার সাথে লেগে না থেকে বরং ইমামে আজমের সুমহান গুণে গুণান্বিত হয়ে ভিন্নমতকে সুন্দর পদ্ধতিতে ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে রদ করে আদিম ও সহজ সরল পথে ফিরে আনা।
হানাফী মাযহাবে ইজতিহাদের উসূল বা মূলনীতি সম্পর্কে,
সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআন। তাতেও পরিষ্কার সমাধান পাওয়া না গেলে দ্বিতীয়তে বিশ্বস্ত রাবীর সূত্র পরম্পরায় প্রাপ্ত রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ, তাতেও পরিষ্কার সমাধান পাওয়া না গেলে তৃতীয়তে আছারে সাহাবা তথা কোনো সাহাবীর মতামত, তাতেও পরিষ্কার সমাধান পাওয়া না গেলে চতুর্থতে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখয়ী, শা’বী, হাসান বসরী এবং আতা (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখের অবিকল ইজতিহাদের নমুনায় ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা। [১]
[১] হানাফী মাযহাবের ইজতিহাদের উক্ত মূলনীতি ইমাম যাহাবী (রহ.)-এর কিতাব থেকে নিম্নরূপ, يقول : آخذ بكتاب الله فما لم اجذ فبسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم و الآثار الصحاح الذى فشذ فى ايدى الثقات عن الثقات فإن لم اجد فبقول اصحابه آخذ بقول من شئت و اما اذا انتهى الامر إلى ابراهيم و الشعبى و الحسن و عطاء فاجتهد كما اجتهدوا. كذا فى المناقب الذهبى
রেফারেন্স : مناقب الإمام أبي حنيفة وصاحبيه للذهبى (ইমাম যাহাবী কৃত মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা ওয়া সাহিবাইহি), পৃষ্ঠা নং ৩৪, তাহকীক, শায়খ মুহাম্মদ যাহেদ আল কাওসারী।
আহলে হাদীস ও সালাফি নামধারীদের উৎপত্তি ইতিহাস এবং আমাদের করণীয়
• ‘ওহাবী’ শব্দ থেকে ‘আহলে হাদীস’ নামমঞ্জুর যেভাবে? আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া‘র ভাষ্যমতে ‘আহলে হাদীস নামক এই দলটি আঠারো শতকের মধ্যভাগে সৈয়দ নজির হোসেন এবং সিদ্দিক হাসান খানের শিক্ষা থেকে উত্তর ভারতে উত্থিত হয়েছিল।’ এর আগে এধরণের মতবাদের কোনো অস্তিত্বই ছিলনা। নামধারী আহলে হাদীস মতবাদের ফাউণ্ডার ব্যক্তিত্ব শীয়া থেকে কনভার্টেট মিয়া নজির হোসেন দেহলভী সাহেবের অনুরোধেই এবং একখানা দরখাস্তের মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ ইং তদানিন্তন ব্রিটিশ-ভারত সরকারের উচ্চমহল থেকে পূর্বনাম ‘ওহাবী‘ বাদ দিয়ে নতুন নাম ‘আহলে হাদীস‘ নাম মঞ্জুর করেন (প্রামাণ্য স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। আধুনিক অনেক আহলে হাদীস ভাই-বেরাদর ব্রিটিশদের এই সহানুভূতি স্বীকার করতে নারাজ। অথচ এটি এমন একটি সত্য ইতিহাস যা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। আহলে হাদীস শীর্ষ আলেম, মওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহ.) রচিত ‘রাসায়েলে সানায়িয়্যাহ‘ (পৃষ্ঠা নং ১০২) কিতাব হতেও এই ইতিহাস পরিষ্কার।
রাসায়েলে সানায়িয়্যাহ
নতুন এ দলটির মূল টার্গেট ছিল, নানা চটকদার স্লোগানের আড়ালে সাধারণ মানুষের মনে মাযহাব সম্পর্কে সংশয় তৈরি করে দেয়া। মাযহাবকে শির্ক/শিরিক, ব্যক্তিপূজা, বাপ-দাদারধর্ম ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করা। অথচ মাযহাব শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘চলার পথ’। পরিভাষায়, ইখতিলাফি মাসয়ালায় নির্ভরযোগ্য কোনো মুজতাহিদের গবেষণালব্ধ ফিকহের (মতের) অনুসরণকে মাযহাব বলে। সিয়াহ সিত্তাহ-র ইমামগণসহ পূর্বেকার বড় বড় ইমামগণও মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এ সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য, শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ শায়খ ছালেহ বিন আল ফাউযান (হাফিঃ) লিখেছেন, و ها هم الأئمة من المحدثين الكبار كانوا مذهبيين، فشيخ الاسلام ابن تيمية وابن القيم كانا حنبليين، والإمام النووي وابن حجر شافعيين، والإمام الطحاوي كان حنفيا وابن عبدالبر كان مالكيا অর্থাৎ বড় বড় হাদীস বিশারদ ইমামগণ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম দুইজনই হাম্বলি মাযহাবের, ইমাম নববী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী দুইজনই শাফেয়ী মাযহাবের, ইমাম আবু জা’ফর আত ত্বহাবী ছিলেন হানাফী মাযহাবের, ইমাম ইবনে আব্দুল বার ছিলেন মালেকী মাযহাবের। (ই’য়ানাতুল মুস্তাফীদ বি-শারহে কিতাবুত তওহীদ, খণ্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১২)। এখন মাযহাব মানা শির্ক হলে ঐ সমস্ত বড় বড় ইমামগণও কি মুশরিক ছিল বলবেন? এ পর্যায় আহলে হাদীস নামধারণকারীদের উদ্দেশ্যে শুধু একটা প্রশ্ন করছি, ‘আহলে হাদীস’ শব্দটি তো হাদীস গবেষকদের একটি উপাধি মাত্র। এখন আপনারাও কি প্রত্যেকে হাদীস গবেষক? নইলে আপনাদের জন্য “আহলে হাদীস” পরিচয় ব্যবহার করা সুস্পষ্ট কপিরাইট আইন লঙ্ঘন নয় কি?
• নামধারীআহলে হাদীস কিংবা সালাফি দলটির উৎপত্তি ইতিহাস : ‘মুজাহেরে হক্ব’ কিতাবের স্বনামধন্য লেখক মাওলানা কুতুব উদ্দীন (রহ.) তাঁর ‘তুহফাতুল আরব ওয়াল আজম’ (تحفة العرب والعظم) বইতে উল্লিখিত দলটির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গেছেন। যার সারসংক্ষেপ এখানে পেশ করা হল, (তিনি লিখেছেন) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বীর সেনানী সাইয়েদ আহমদ শহীদ, মওলানা ইসমাইল শহীদ ও মওলানা আব্দুল হাই যখন পাঞ্জাবে আগমন করেন তার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে মাযহাবের (ফিকহ) বিরোধিতাকারী নতুন একটি দলের আত্মপ্রকাশ হয়। যারা হযরত সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর গঠিত ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতাকামী দলের নীতি আদর্শের বাহিরে ও বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল। এদের মুখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক বেনারসী (মৃত ১২৭৫ হিজরী)। তার এ ধরণের অসংখ্য ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডের কারণে সাইয়েদ আহমদ শহীদ পূর্বেই (১২৪৬ হিজরীতে) তাকে নিজ দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। তখনি গোটা ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষকরে সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর শিষ্য ও অনুসারীগণ মক্কা মদীনার সেসময়কার মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফতুয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন সম্মানিত মুফতীগণ সর্বসম্মতিক্রমে মৌলভী আব্দুল হক আর তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারী বিচ্ছিন্ন ফেরকা বলে রায় প্রদান করেন। মুফতীগণ একই ফতুয়ায় আব্দুল হককে রাষ্ট্রিয়ভাবে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশও করেন। আরব-জাহানের মুফতীগণের এই ফতুয়া ১২৫৪ হিজরীতে ‘তাম্বীহুদ্দাল্লীন ওয়া হিদায়াতুস সালেহীন’ (পৃষ্ঠা নং ৩) নামে প্রকাশ করা হয়। কিতাবটির রচয়িতা মওলানা আব্দুল খালেক যিনি সৈয়দ নজির হুসাইন দেহলভীর উস্তাদ এবং শ্বশুর। ‘বর সগীর পাক ওয়া হিন্দ কে ছন্দ তারিখি হাক্বায়েক‘ (পৃষ্ঠা ১১৫) এর উদ্ধৃতিতে স্ক্রিনশট নিচে প্রদত্ত হল। ডাক্তার আল্লামা খালেদ মাহমুদ লিখেছেন, یہ صحیح ہے کہ ہندوستان میں ترکِ تقلید کے عنوان سے جس شخص نے پہلے زبان کھولی وہ عبدالحق بنارسی تھا۔ অর্থাৎ একথা সত্য যে, ভারতবর্ষে মাযহাব বা তাকলীদ উপেক্ষা করার জন্য যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মুখ খুলেছিল সে ছিল আব্দুলহক বেনারসী (আসারুল হাদীস খণ্ড ২ পৃষ্ঠা নং ৩৭৫)। (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)।
بحوالہ برصغیرپاک وہندکے چندتاریخی حقائق صفحة ١١٥আসারুল হাদীস
এই ফতুয়াজারির পরপরই আব্দুল হক বেনারসী আত্মগোপনে চলে যায়। উপরোক্ত বিবরণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, আব্দুল হক বেনারসীর হাত ধরেই ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে বর্তমানের এই ‘আহলে হাদীস’ নামক নতুন দলটির জন্ম। এরা সময় সময় নাম পরিবর্তন করে। কখনো সালাফী, কখনো মুহাম্মদী।
• সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকে ইসলামী রাষ্ট্রের উপর প্রাধান্য দেয়া : ভারত উপমহাদেশে এই দলের প্রধান মুখপাত্র সৈয়দ নজির হোসেন-এর অন্যতম শিষ্য মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লিখেছেন, “আহলে হাদীস দলটি ব্রিটিশ সরকারের কল্যাণ প্রত্যাশী, চুক্তি রক্ষাকারী ও অনুগত হওয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ প্রমাণ হচ্ছে, তারা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থাকাকে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে থাকার চাইতে উত্তম মনে করে।” (দেখুন, আল-হায়াত বা’দাল মামাত, পৃষ্ঠা নং ৯৩)। এই থেকেও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এই নতুন দলটি উপমহাদেশীয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গোপনে ব্রিটিশদেরই পক্ষাবলম্বী ছিল। আল্লাহু আ’লাম।
• আহলে হাদীসদের কিছু মতবাদ : নতুন এই দলটির উৎপত্তি ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এবার তাদের কিছু বইপুস্তক থেকে প্রধান প্রধান কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি,
১। (কলেমা সম্পর্কে) : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ উচ্চারণ করলে বা লিখলে শিরিকী অর্থ প্রকাশ পায়। (আকীদার মানদণ্ডে ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমাহ তাইয়্যিবাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, পৃষ্ঠা নং ৬৯, লিখক-আব্দুল্লাহ আল ফারূক)।
২। (মাযহাব মানা সম্পর্কে) : ঠিক এই কাফিরদের মতই বর্তমানে যারা মাযহাবের অনুসারী তারা চার মাযহাবের যে কোনো একটির অনুসরণ করে তাদের বাপ দাদাদের মাযহাব অনুযায়ী। অর্থাৎ বাবা যদি হানাফী হয় তাহলে ছেলেও হানাফী হয় এবং বাবা যদি শাফেয়ী হয় তাহলে ছেলেও শাফিয়ী হয়। যে কারণে এইভাবে মাযহাবের অনুসরণ করা শিরকও কুফর। (আমাদের মাযহাব কি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত? পৃষ্ঠা নং ২২, লিখক-মুহাম্মদ ইকবাল বিন ফাখরুল)।
৩। (মাযহাব অনুসারীদের হত্যা করা সম্পর্কে) : যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট এক ইমামের তাকলীদকে ওয়াজিব করে নিবে তাকে তাওবাহ করানো হবে, অন্যথায় হত্যা করতে হবে। (অধ্যাপক ডক্টর রঈসুদ্দীন সম্পাদিত ‘চার মাযহাবের নির্দিষ্ট কোনো এক মাযহাবের অনুসরণ করতে মুসলিম কি বাধ্য?’ পৃষ্ঠা নং ৪৩; শায়েখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত ‘মুসলিম কি চার মাযহাবের কোন একটির অনুসরণে বাধ্য?’ পৃষ্ঠা নং ৩২)।
৪। (মাযহাবের অনুসারীরা নাকি জাহান্নামী) : হানাফী মাযহাবের আলেম/ওলামাগণের ইজমা [ঐক্যবদ্ধতা] মান্য করা বিদয়াত। হানাফী মাযহাব পালনকারী জনগণ বিদআতী কাজ করে চলেছেন বলে তাদের পরিণাম জাহান্নাম। (ফিকহে ইসলাম বনাম দ্বীন ইসলাম পৃষ্ঠা নং ১৭৯, লেখক-ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমদ)।
৫। (তাবলীগ নিয়ে অপপ্রচার) : তাবলীগ জামাত শিরক জনিত আকীদার জালে আবদ্ধ এক ফেরকা। (সহীহ আকীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব-লিখক মুরাদ বিন আমজাদ)। উল্লেখ্য, এই মুরাদ বিন আমজাদ আহলে হাদীসের শায়খ ছিল। বর্তমানে সে ঈসায়ী মিশনারীদের এজেন্ট এবং হাদীস অস্বীকারকারী দলের সক্রিয় সদস্য।
৬। (শির্ক কালাম সম্পর্কে) : সাপ বিচ্ছু ইত্যাদি বিষাক্ত প্রাণীর কাটাস্থানে শির্ক/শিরিকি শব্দ দিয়ে কোনো অমুসলিম বা মুসলিম ঝাড়ফুঁক করার দ্বারাও কোনো সমস্যা নেই। (করাচী থেকে প্রকাশিত আহলে হাদীস দলের প্রধান মুখপাত্র পাক্ষিক ‘সহীফায়ে আহলে হাদীস’, জমাদিউস সানী, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ)।
৭। (নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে) : নামায ত্যাগকারী ব্যক্তি মুরতাদ তথা ইসলামত্যাগী। এমন ব্যক্তি নাকি আত্মীয় স্বজনের উত্তরাধিকারী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এমন ব্যক্তির জন্য নাকি মক্কা মদীনার সীমানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমন ব্যক্তির যবেহকৃত পশুর গোশত ভক্ষণকরাও নাকি হারাম। মৃত্যুর পর নাকি তার জানাযাও পড়া যাবে না। এমন ব্যক্তির জন্য নাকি মুসলিম মহিলা বিবাহ করাও হারাম। (জামাআতে সালাত ত্যাগকারীর পরিণাম, পৃষ্ঠা নং ২৭, ২৮, ২৯, ৩০; লিখক-খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান, আত-তাওহীদ প্রকাশনী)।
৮। (রমজানে রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে) : রমযান মাসে কারীগণের রাত জেগে কুরআন পাঠ করা নাবীর শিক্ষা ছিল না। (‘মৃত ব্যক্তির নিকট কুরআন পাঠের সওয়াব পৌঁছে কি?’ লেখক-খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান-৩৯)।
৯। (পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা সম্পর্কে) : অজু তথা পবিত্রতা ছাড়াই কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা জায়েজ। (শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ-এর ভিডিও হতে সংগৃহীত, এছাড়াও ‘দলীলুত ত্বালিব আ’লা আরযাহিল মাত্বালিব’, লিখক-নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান, পৃষ্ঠা নং ৫২)।
১০। (অমুসলিমদের যবেহ সম্পর্কে) : অমুসলিমদের যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া হালাল। (উরফুল জাদী পৃষ্ঠা নং ১০, লিখক, সাইয়েদ নূরুল হাসান আল কুনুজী [নওয়াব নূরুল হাসান খান ভূপালী নামে পরিচিত])।
১১। (হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পায়খানা সম্পর্কে) : প্রতিটি হালাল প্রাণীর প্রস্রাব এবং পায়খানা পবিত্র। কাপড়ে লাগলেও তা নিয়ে নামায পড়া জায়েজ। এমনকি ঔষধ হিসেবেও সেবনকরা বৈধ। (ফাতওয়ায়ে সাত্তারিয়াহ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা নং ৫৩, শায়খ আলী মুহাম্মদ সা’দী)।
১২। (মহিলা মুয়াজ্জিন হওয়া) : মহিলাও মুয়াজ্জিন হতে পারে। (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা নং ২৩)। এছাড়া আরও বহু নতুন নতুন এমন সব বিষাক্ত মতবাদ নিয়ে তারা সামনের দিকে এগুচ্ছে যার ফলে একদম খুব সহজেই মুসলিম উম্মাহাকে বেঈমান বানানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ দ্বীনি ভাই-বোন তাদের সম্পর্কে ভালো মত জানা না থাকায় তাদের কথিত ‘সহীহ আকীদা’ এর চটকদার স্লোগানে দুর্বল হয়ে পড়ে। যা খুবই বেদনাদায়ক।
• তাকলীদ প্রসঙ্গ : তাকলীদ অর্থ অনুকরণ-অনুসরণ। কুরআনুল কারীম থেকে দলিল, আল্লাহতালা ইরশাদ করছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহতালার আনুগত্য করো এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্তদের আনুগত্য করো। (সূরা নিসা: ৫৯)। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আববাস (রা.) আয়াতটির أُولِي الْأَمْرِ হতে يعنى أهل الفقه والدين তথা ফোকাহায়ে কেরাম এবং দ্বীনের ধারকবাহকগণ উদ্দেশ্য। আবার কেউ কেউ أُولِي الْأَمْرِ এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম ও শাসকশ্রেণীও বলেছেন। বরেণ্য মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (রহ.) কৃত রচনা ‘ইকদুল জীদ’ (عقد الجيد) কিতাবে যে কোনো নির্দিষ্ট একজন মুজতাহিদের তাকলীদ করা জরুরী বলে উল্লেখ রয়েছে। কেননা মুজতাহিদগণের উসূল (নীতিমালা) ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। (হানাফী মাযহাবের মূলনীতি সম্পর্কে জানুন)।
• মাযহাব সম্পর্কে যারা ডিপ্রেশনের শিকার তাদের জন্য আরব-বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার ও বরেণ্য হাদীসবিদ শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল উসাইমিন (রহ.)-এর নির্দেশনা : (ক) তিনি (রহ.) লিখেছেন, أن يكون المقلد عاميا لا يستطيع معرفة الحكم بنفسه، ففرضه التقليد، لقوله تعالي ( فاسألوا أهل الذكر إن كنتم لا تعلمون) অর্থাৎ যেসব সাধারণ মানুষ সরাসরি শরীয়তের বিধি-বিধান জানতে সক্ষম নন তাদের জন্য তাকলীদ করা ফরজ। কেননা আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন, (অর্থ) তোমরা যদি না জানো তাহলে আহলে ইলমদের জিজ্ঞাসা কর। (মাজমু’ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল [مجموع فتاوى ورسائل], খণ্ড ১১ পৃষ্ঠা নং ৮২)। (খ) শায়খ উসাইমিন (রহ.) যার যার অঞ্চল/দেশের আলেমগণের অনুসরণের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আরও লিখেছেন, لا يسوغ لك هذا، لأن فرضك أنت هو التقليد وأحق من تقلد علماؤك، لو قلدت من كان خارج بلادك أدى ذلك إلى الفوضى في أمر ليس عليه دليل شرعي… فالعامي يجب عليه أن يقلد علماء بلده الذين يثق بهم অর্থাৎ (জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে) এটা তোমার জন্য পছন্দ হবে না। তাই তোমার কর্তব্য হল তাকলীদ করা। আর তোমার তাকলীদের সবচে বড় হকদার হলেন তোমার (অঞ্চল/দেশের) আলেমগণ। যদি তুমি তা না করে বাহিরের দেশের আলেমদের তাকলীদ কর তবে তা লাগামহীনতা আর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। সুতরাং সাধারণ মানুষের কর্তব্য নিজ দেশের আলেমদের অনুসরণ করা। (সিলসিলাতু লিক্বাইল বাবিল মাফতূহ [سلسلة لقاء الباب المفتوح] খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা নং ৩২)। (গ) শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)ও প্রায় একই কথা লিখেছেন। তিনি লিখেন, وتقليد العاجز عن الاستدلال للعالم يجوز عند الجمهور অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে অক্ষম জনসাধারণের জন্য আলেমের [ফকিহগণের] অনুসরণ জায়েজ। (মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা নং ২৬২)। এভাবে আরও বহু প্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে। (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)
مجموع فتاوى ورسائل
• আহলে হাদীসদের চটকদার স্লোগানের আড়ালে থাকা কিছু ভণ্ডামী : এদের প্রায় প্রতিটি লিখক, বক্তা বা ডিবেটার কথায় কথায় সহীহ হাদীস আর সহীহ আকীদার বয়ানের ফুলঝুরিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। তাদের বক্তব্য, মাযহাবের কারণেই নাকি ইসলামে চার চারটা ভাগের জন্ম হয়ে গেছে। অথচ এই নির্বোধদের যদি ‘ফিকহি ইখতিলাফ’ বিষয়ে উসূল জানা থাকত বা একাডেমিক পড়াশোনাটাও থাকত, তাহলেও এধরণের পাতলা অভিযোগ কপচানোর দুঃসাহস কোনোদিন হত না। অথচ ‘মাযহাব’ এসেছে মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সমাধান যদি কুরআন সুন্নাহ কিবা ইজমায় পাওয়া না যায় শুধুমাত্র তখনি মীমাংসায় পৌঁছার জন্য মাযহাব বা ফিকহ। মাযহাব কখনোই কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার বিপরীত বস্তু নয়, বরং সমাধানের চতুর্থ স্তরীয় অথেনটিক সোর্স মাত্র। সহীহ বুখারীতে এসেছে, মুজতাহিদের ইজতিহাদে ভুল হলেও মুজতাহিদ (গবেষক) একটি সওয়াব পান। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪)। তা সত্ত্বেও এই ফেতনাবাজদের বলতে শুনা যায়, কুরআন সুন্নাহ থাকতে মাযহাব কেন? এর উত্তরে আমি তাদেরকে পালটা প্রশ্ন করেছিলাম যে, তাহলে তো প্রশ্ন আসবে—চোখ থাকতে চশমা কেন? আজ থেকে তোমাদের শায়খদের বল, তারা যেন চশমার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলে! এবার দেখুন, ওনাদের সহীহ’র মোড়কে একেকটা বিষয়ে কতটা ভিন্ন ভিন্ন মত!
২–বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে, (ক) ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ হবার পক্ষে কোনো সহীহ দলীল নেই। (আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৬)। (খ) সূরা ফাতিহা কুরআনের অংশ। (অধ্যাপক হাফিজ আইনুল বারী রচিত, আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা পৃষ্ঠা নং ১০৫)।
৩–বিসমিল্লাহ জোরে পড়া, (ক) গালিব সাহেবের মতে, ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বা আস্তে পড়ার কোনো ভিত্তি নেই। (আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৬)। (খ) জোরে আস্তে উভয়ভাবে পড়া সহীহ সনদে বর্ণিত। (আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ২৮)
৪–রুকু সম্পর্কে, (ক) সালাতে রুকু পেলে রাকাআত পাওয়া যায়। (আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৩৩)। (খ) সালাতে শুধু রুকু পেলে উক্ত রাকাত পায়নি, ধরা হবে। (আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সাঃ পৃষ্ঠা নং ৯৬)।
৫–সালাম সম্পর্কে, (ক) ডান দিকে ফিরে ‘ওয়াবারাকাতুহু’ বলতে হবে (আকরামুজ্জামান সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৬২)। (খ) উভয় দিকেই ওয়াবারাকাতুহু বলতে হবে। (ইবনে ফজলের ‘সহীহ নামায ও দুআ শিক্ষা’ পৃষ্ঠা নং ১০৩)।
৬–জনাযায় ফাতিহা পড়া সম্পর্কে, (ক) আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, জানাযায় ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (ছালাতুর রাসূল পৃষ্ঠা নং ২১৩) (খ) শায়খ আলবানী বলেন, সুন্নত। (সিফাতু সালাতিন্নবী পৃষ্ঠা নং ১১১)। উল্লেখ্য, সঠিক মাসয়ালা হচ্ছে, এটি বড়জোর জায়েজ, যেহেতু ইবনে আব্বাসের বিচ্ছিন্ন একটি আমলে পাওয়া গেছে কিন্তু সুন্নাতে রাসূল হিসেবে প্রমাণিত নয়।
৭- রুকু থেকে উঠে হাত বাঁধা, (ক) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন এবং শায়খ ইবনে বাজ বলেন, রুকুর থেকে উঠে হাত বাঁধা সুন্নাত (ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম পৃষ্ঠা নং ২৭৩)। (খ) শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, বিদয়াত। (আসলু সিফাতিস সালাহ খণ্ড ২ পৃষ্ঠা নং ৭০০)।
এখন প্রশ্ন হল, সব ক্ষেত্রেই নিয়ম যদি একই হবে, ফিকহি মাসয়ালাতেও সুন্নাহ পালনে নানা বৈচিত্রময় নিয়ম বা একাধিক পদ্ধতির অবকাশ নাই থাকবে তবে কেন আহলে হাদীস নামক শায়খ ও তাদের অনুকরণীয় বিশিষ্টজনদের মধ্যেও একই বিষয়ে ভিন্ন মত সৃষ্টি হল? মাযহাবের ইমামগণের ফিকহি মতভিন্নতার দরুন ইসলাম বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হলে তবে কি উল্লিখিত শায়খদের মতভিন্নতার দরুন ইসলামে ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি হল? আসলে যাদের মাযহাব সম্পর্কে একাডেমিক জ্ঞান নেই, ইজতিহাদের উসূল (নীতিমালা) সম্পর্কেও অন্ধকারে, ফলে সার্ক্ষণিক কথিত ‘সহীহ’ ডিপ্রেশনের শিকার, তাদের এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশের গবেষক কোনো আলেমের সান্নিধ্যে থেকে এসব বিষয়ে কিছুদিন একাডেমিক পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করা।
• আহলে হাদীস ছদ্মনামী এই নতুন দল সম্পর্কে রাষ্ট্র ব্যক্তিবর্গের মূল্যায়ন :
১. ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার শিরোনাম, ‘সালাফি মতাদর্শী ব্যক্তিদের নিয়ে উত্থান জেএমবির।’ নিউজে উল্লেখ করা হয় যে, আহলে হাদিস ধারাটি আগে ‘ওহাবি’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে এরা ‘সালাফি’ হিসেবে পরিচিত। ধারাটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হলেও মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সালাফি ধারার ‘জিহাদি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠার ধারণা পান বা আগ্রহী হন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শায়খ আবদুর রহমান। (দৈনিক প্রথম আলো ০৩-১১-২১৬ইং)।
২. রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি আমাদের দেশের উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশই আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের।’ (দৈনিক ইনকিলাব, ১১-১২-২০১৯ ইং)।
• আহলে হাদীস নামক দলটির ফেতনার মুকাবিলায় আমাদের করণীয় :
১. সাধারণ যুবক যুবতীদের কোনো দোষ নেই। তারা এটিকে সরল মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে, এটুকুই। তাদের যুক্তিযুক্তভাবে মাযহাবের সংজ্ঞা ও তার সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে বুঝানো হলে তারা এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
২. এরা বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আমাদের করণীয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সাথে সংলাপে বসা। দালিলিকভাবে তাদের ভ্রান্ত মতবাদের খণ্ডন করে বুঝিয়ে দেয়া যে, হানাফী ফিকহের আলোকে প্রচলিত আমল-ও সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এর বিপরীতে নতুন কোনো নিয়ম চালু করার ফলে সমাজে/এলাকায় কোনো গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।
৩. প্রতিটি মসজিদের ইমাম-খতিবদের নিয়ে আহলে হাদীস/সালাফি নামধারীদের ফেতনার রদে তারবিয়তের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় বড় জামে মসজিদের কমিটিকেই এর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে কোনোভাবে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা মনোভাব সৃষ্টি হয় এমন কোনো কার্যকলাপ করা যাবেনা। একমাত্র ঐক্য ও সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনাই উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ শায়খ ছালেহ বিন আল ফাউযান (হাফিঃ) এর কিতাব থেকে এই তথ্যটি পড়ে কিছুক্ষণ বেহুশ ছিলাম! বেহুশ ছিলাম বলতে, চিন্তা করতেছিলাম এই উঁচু মাক্বামের বিখ্যাত ইমামগণও[১] যদি মাযহাবি হতে পারেন তাহলে আমাদের কি হল যে, আমাদের মত সাধারণ মানুষগুলো মাযহাবের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গিয়ে জনে জনে আহলে হাদীস তথা হাদীসবিশারদ ও মুজতাহিদ সাজতে বসেছি!
[১] সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ শায়খ ছালেহ বিন আল ফাউযান (হাফিঃ) লিখেছেন, و ها هم الأئمة من المحدثين الكبار كانوا مذهبيين، فشيخ الاسلام ابن تيمية وابن القيم كانا حنبليين، والإمام النووي وابن حجر شافعيين، والإمام الطحاوي كان حنفيا وابن عبدالبر كان مالكيا অর্থাৎ বড় বড় হাদীস বিশারদ ইমামগণ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম দুইজনই হাম্বলি মাযহাবের, ইমাম নববী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী দুইজনই শাফেয়ী মাযহাবের, ইমাম আবু জা’ফর আত ত্বহাবী ছিলেন হানাফী মাযহাবের, ইমাম ইবনে আব্দুল বার ছিলেন মালেকী মাযহাবের।
কিতাব– اعانة المستفيد بشرح كتاب التوحيد (ই’য়ানাতুল মুস্তাফীদ বি-শারহে কিতাবুত তওহীদ)। খণ্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১২। লিখক, শায়খ ছালেহ বিন আল ফাউযান (হাফিজাহুল্লাহ)। মূল- কিতাবুত তওহীদ, লিখক, শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.)।
উত্তর : প্রশ্নোল্লিখিত জিজ্ঞাসার উত্তরে বলতে পারি যে, পবিত্র কুরআন থেকে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কোনো সমাধান পাওয়া যায়না। তবে সহীহ হাদীস, আছারে সাহাবায়ে কেরাম, ইজমায়ে উম্মত এবং বরেণ্য ইমামগণের ফতুয়া হচ্ছে, অজু ছাড়া পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নয়। বরং পবিত্র কুরআনকে অজু বা পবিত্রতার সাথে স্পর্শ করাই তার হক্ব এবং শিষ্টাচার ও আদব। যাতে দুনিয়ার এই কুরআন নামক কিতাব পৃথিবীর অন্য সব কিতাব অপেক্ষা ব্যতিক্রমী মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ সম্পর্কে আধুনিক মুহাদ্দিসগণের মধ্যে শায়খ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ.) কী লিখে গেছেন দেখা যাক। তিনি লিখেছেন, (আরবী) لا يجوز للمسلم مس المصحف وهو على غير وضوء عند جمهور أهل العلم وهو الذي عليه الأئمة الأربعة অর্থাৎ সমস্ত আহলে ইলম তথা আয়েম্মায়ে কেরামের মতে কুরআন অজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। আর এর উপরই চার মাযহাবের ইমামগণের ঐক্যমত। (মাজমু’ ফাতাওয়ায়ে ইবনে বাজ খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৩৮৩)। এখান থেকে দেখুন (ক্লিক)! একজন নগন্য মুসলমান হিসেবে তার প্রত্যাশাও ঠিক তেমনি। তবে মুনাফিক হলে কথা ভিন্ন।
প্রকৃতি থেকেও আমরা এর দৃষ্টান্ত পাই। মনে করুন, মাহফীলে বক্তাদের জন্য স্টেজে আপনারা যে চেয়ারটি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন সেটি কিন্তু আশপাশের অন্যগুলো থেকে মানে ও গুণে ব্যতিক্রমই থাকে। এটা কী জন্য? বলবেন যে, বক্তাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করার জন্য। যদি তাই হয়, তাহলে আপনি কুরআনকেও দুনিয়ার সাধারণ কিতাবের ন্যায় ভাবতে পারলেন কিভাবে? ঐ বক্তাদের চেয়ারটা যদি ব্যতিক্রমী হতে পারে তাহলে পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রে কিজন্য এমন বে-ইনসাফ? অথচ পবিত্র কুরআন নিজেই নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছে যে, (আল্লাহতালার বাণী) رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفاً مُطَهَّرَةً অর্থাৎ আল্লাহ’র পক্ষ থেকে (প্রেরিত) রাসূল; যিনি পুতঃপবিত্র সহীফা তেলাওয়াত করেন। (সূরা বায়্যিনাহ ২)। অন্যত্র এসেছে, (আল্লাহতালার বাণী) فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ অর্থাৎ সমুচ্চ এবং পুতঃপবিত্র যা রয়েছে সম্মানিত সহীফায়। (আবাসা-১৩-১৪)। নিশ্চিত করে বলতে পারি, পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই হযরত ওমর (রা.) যখন কাফের থাকা অবস্থায় বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন ফাতেমা বিনতে খাত্তাব (রা.) উত্তরে বলেছিলেন, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পাকপবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না। (মুসনাদুল বাজ্জার-১/৪০১, মুস্তাদরাকে হাকেম-৪/৬৬, সুনানে দারা কুতনী-১/১২১, তাবাকাতুল কুবরা লি-ইবনে সাদ-৩/২৬৭, সুনানুল কোবরা লিল-বায়হাকী-১/৮৭)।
ইসলামের প্রাচীন ও সহজ সরল শিক্ষার দিকে ফিরে গেলেও আমরা একই শিক্ষা পাচ্ছি। এবার চলুন, মতভেদপূর্ণ বিষয়টির সমাধানের জন্য আমরা একটি সহীহ হাদীসের দিকে ফিরে যাই। হাদীসে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেন, রাসূল (সা.) আমর বিন হাযমের প্রতি (ইয়েমেনবাসীর জন্য) এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না। (মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬)। হাদীসটির সনদকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সহ আগেকার প্রায় সব হাদীস বিশারদ এবং আধুনিক মুহাদ্দিসগণের মধ্যে শায়খ আলবানী (রহ.)ও সহীহ বলেছেন। বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম নূরুদ্দীন আল হাইসামী (রহ.) হাদীসটির সনদ সম্পর্কে লিখেছেন, رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون অর্থাৎ (পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না, মর্মে) হাদীসটি ইমাম তাবারানী (রহ.) স্বীয় রচনা কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আর তার সকল বর্ণনাকারী সিক্বাহ তথা গ্রহণযোগ্য। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২)। ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)-এর লেকচারেও ঐ তথ্যগুলো উঠে এসেছে এবং তিনি বলেছেন যে, উম্মতে মুসলিমার ইজমা রয়েছে যে, অজু ছাড়া পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ নেই। তিনি ইমাম ইবনে কুদামাহ (রহ.) এর রচিত ‘আল-মুগনী’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রায় ১২/১৩জন সাহাবী থেকে পরিষ্কার মত আছে যে, অজু বা পবিত্রতা ছাড়া কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা জায়েজ নেই। আর তাঁদের উক্ত মতের বিপরীতে কোনো সাহাবীই ভিন্ন মত পোষণ করেননি। (ভিডিও লিংক এখানে, ক্লিক করুন)।
সহীহ মুসলিম কিতাবের আরবী ব্যাখ্যাকারক ইমাম নববী (রহ.), মালেকি মাযহাবের বিখ্যাত ফকিহ ও ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রহ.), হাম্বলী মাযহাবের অপর আরেক বিখ্যাত ইমাম শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) সহ অনেকেই সুস্পষ্ট করে লিখে গেছেন যে, অজু ছাড়া পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ নেই। ইমাম নববী (রহ.) সাহাবায়ে কেরামের ইজমা উল্লেখ করে লিখেছেন, إنه قول علي وسعد بن أبي وقاص وابن عمر رضي الله عنهم، ولم يعرف لهم مخالف من الصحابة অর্থাৎ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ, কথাটি হযরত আলী (রা.), সা’আদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রা.) এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) সকলের। তাদের মতের বিপরীতে কোনো মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নেই। (শরহুল মুহাজ্জাব ২/৮০)। এরপর ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রহ.) উম্মাহার ইজমা উল্লেখ করে লিখেছেন, أجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا طاهر অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর সকল ফক্বীহ ও তাঁদের অনুসারীগণ একমত এবং এর উপরই সকলে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন যে, কুরআনে কারীম পবিত্র হওয়া ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। (আল ইস্তিযকার খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা নং ৮)। এবার শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) কী লিখলেন দেখা যাক। তিনি লিখেছেন, وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف অর্থাৎ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ, কথাটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) এবং অন্যান্যরা। কোনো সাহাবী থেকে এর বিপরীত মত বর্ণিত নেই। (মাজমু’ ফাতাওয়া খণ্ড ২১ পৃষ্ঠা নং২৬৬)। ‘ফিকহুল হাফেয আহমদ ইবনে সিদ্দিক আল গুমারী’ কিতাবের স্ক্রিনশট থেকে,
কিতাব-
কথা এ পর্যন্ত শেষ। পাঠকের উদ্দেশ্যে বলব, আপনি পবিত্র কুরআনের বিশেষ ও ব্যতিক্রমী সম্মান ও মর্যাদা স্বীকার করেন কিনা? যদি করে থাকেন তাহলে দুনিয়ার সাধারণ বইপুস্তকের ন্যায় পবিত্র কুরআনকেও আপনি যেভাবে এবং যে অবস্থায় খুশি স্পর্শ করার সাহস কিভাবে করেন? অন্তত নিজের বিচারবোধ বিসর্জন না দিয়ে থাকলে আপনি পবিত্র কুরআনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার ঘোর বিরোধী হতে পারেন না। তবে হ্যাঁ, যে সব বক্তা এর জন্য দলিল প্রমাণ শুধুই পবিত্র কুরআনেই খোঁজে, আর কুরআনে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার বাহানায় কুরআনের হক্বের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনা, তারা কি তাদের ইহকালীন অন্যান্য সমস্ত সমস্যার সমাধানগুলোও শুধুই কুরআন থেকে নেয়? হাদীস, ইজমা, ফিকহ ইত্যাদি এ সমস্ত অথেনটিক সোর্স কি তাহলে কোনো কাজেরই নয়? হায় আল্লাহ, এ কোন শেষ যামানায় তুমি আমাদের পাঠালে! এই কেমন ফেতনা আর ফেতনা!! আল্লাহ! তুমি আমাদের রক্ষা কর।
উত্তর, প্রশ্নে উল্লিখিত আমলটি কোনো কোনো মুসলিম সমাজে এখনো দেখা যায়। তারা রাসূল (সা.)-এর নামের প্রতি অত্যাধিক সম্মান প্রদর্শন হেতু এটি করে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশই জীবনেও চিন্তা করে দেখেন না যে, উনাদের ঐ আমলের কোনো বিশুদ্ধ দলিল কুরআন বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কিনা? আজকে এখানে ভারতবর্ষের প্রখ্যাত বুযূর্গ ও বহু গ্রন্থপ্রণেতা আ’লা হযরত আহমদ রেজাখাঁ বেরেলী (রহ.) এর রচনা থেকে উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর পেশ করব, ইনশাআল্লাহ। আযান ও ইকামতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানোর শরয়ী হুকুম নিয়ে মাসলাকে বেরেলীর প্রধান, মওলানা আহমদ রেজাখাঁ বেরেলী (রহ.) লিখেছেন, ‘প্রথমত আযানের সময়ে (রাসূলুল্লাহ সা.-এর নাম শুনে) আঙ্গুলে চুমো দেয়া কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয়। আর এ ব্যাপারে লোকেরা যা কিছুই বর্ণনা করে থাকে তা বিশেষজ্ঞদের নিকট প্রমাণিত নয়। এছাড়া আল্লামা শামী (রহ.) এইরূপ কিছু রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করার পর লিখেন, ইমাম জাররাহী (إِسْماعيلُ بْنُ مُحَمَّد الجَرّاحيّ) এই ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন অতঃপর বলেছেন, এগুলোর মধ্য হতে কোনো হাদীসই মারফূ পর্যায়ে বিশুদ্ধতার স্তরে পৌঁছেনি’। (রদ্দুল মুহতার খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২৬৭, আযান অধ্যায়)। কিন্তু ইকামতের সময় (আঙ্গুলে চুমো দেয়ার) তো কোনো ভাঙাচুরা হাদীসও নেই। তাই ইকামতের সময় (রাসূলূল্লাহ সা.-এর নাম শুনে) আঙ্গুলে চুমো দেয়া আযানের সময়ে দেয়ার চেয়েও বড় বিদয়াত এবং ভিত্তিহীন আমল। এ কারণেই ফকিহগণ এটিকে একেবারেই পরিত্যাগ করেছেন।’ (ফাতাওয়ায়ে রিজভিয়্যাহ খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা নং ৬৩৪)। {উর্দূ থেকে বাংলা অনুবাদ সমাপ্ত হল}। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –
টিকা– জাররাহী বলতে ইমাম ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ আল জাররাহী আল-আজলুনী (রহ.) উদ্দেশ্য। উনার পূর্ণ নাম, ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল হাদী ইবনে আব্দুল গণী আল জাররাহী (إسماعيل العجلوني هو إسماعيل بن محمد بن عبد الهادي بن عبد الغني الشهير بالجراحي)। তিনি ফিকহে শাফেয়ীর একজন ফকিহও। ইরাক বংশোদ্ভূত। জন্ম ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দ। উসমানীয়া খেলাফত যুগেকার, শামে বসবাস করতেন। তিনি অনেক বড়মাপের একজন হাদীস বিশারদও।