Home Blog Page 29

মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীর ১৫টি রেফারেন্স

কাদিয়ানীরা মুসলমানদের ব্যাপারে কেমন ধারণা রাখে? এখানে ক্লিক করুন।

এক নজরে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের “নবী রাসূল” দাবীর রেফারেন্স তার এবং তার পুত্র আর আহমদী জামাতের নেতাদের কতেক বইপুস্তক থেকে :

১. নবুওয়তি প্রাসাদের সর্বশেষ ইট দাবী। যেমন, মির্যা সাহেব লিখেছেন, ‘নেয়ামতপ্রাপ্তদের প্রাসাদের একখানা ইটের জায়গা শূন্য ছিল। আল্লাহ ইচ্ছা করলেন যে, তিনি ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ করতে সর্বশেষ ইটের জায়গাটি পরিপূর্ণ করে প্রাসাদটি সম্পন্ন করবেন। আর আমিই হলাম সেই শূন্য জায়গার অবশিষ্ট ইট।’ (অনুবাদ শেষ হল)। দেখুন, খোতবায়ে ইলহামিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৬/১৭৭-৭৮ ; উল্লেখ্য মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি হল ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন।

২. শেষনবীর দ্বিতীয় প্রকাশ ও প্রতিবিম্ব নবী দাবী। রূহানী খাযায়েন ১৮/২১২।

এক গলতি কা ইযালা বা একটি ভুল সংশোধন, পৃ-৫; মির্যা কাদিয়ানী, রচনাকাল ১৯০১ ইং

৩. শরীয়তি নবী হওয়ার দাবী। রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৩২; ১৭/৪৩৫-৩৬।

‘খোদার পক্ষ হতে নতুন শরীয়ত নিয়ে প্রেরিত হওয়া সাহেবে শরীয়ত নবীরই একমাত্র বৈশিষ্ট্য হল, তাঁঁর দাবী যে অস্বীকার করবে তাকে কাফের আখ্যা দেয়া!’ (অনুবাদ শেষ হল)। এবার নিচের স্ক্রিনশট থেকে দেখে নিন, মির্যা সাহেবকে অস্বীকারকারীকে কাফের, জাহান্নামী ইত্যাদী আখ্যা দেয়া হল কিনা?
মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর রচনা ‘আনওয়ারুল উলূম, ৬/১৫১; মূল গ্রন্থ: আয়নায়ে সাদাকাত। এখানে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন, যারা মির্যা সাহেবকে কাফের বলেন শুধু তারা কাফের নন, বরং মির্যা সাহেবকে তো কাফের বলেন না কিন্তু তার দাবী মানেনা, এমন ব্যক্তিকেও তিনি (মির্যা) কাফের আখ্যা দিয়েছেন।

৪. মুহাম্মদী ধারাবাহিকতায় শেষনবী দাবী। রূহানী খাযায়েন ২০/৬৯-৭০; ১৯/৬১।

৫. সুস্পষ্টভাবে নবী এবং রাসূল হওয়ার দাবী। মালফূজাত ৫/৪৪৭; নতুন এডিশন অনলাইন ভার্সন।

৬. হযরত মূসা (আ:)-এর মত একজন রাসূল দাবী। মালফূজাত ৫/২৭; নতুন এডিশন।

৭. মির্যা কাদিয়ানী সাহেব একজন নবী। মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর রচনাবলীর সমষ্টি আনওয়ারুল উলূম ৩/১৪৮, ৬/১৫১; অনলাইন এডিশন।

৮. তিনি আরও লিখেছেন যে, নবুওয়তের মাসয়ালার জট মির্যা কাদিয়ানীর উপর ১৯০১ সালের পরেই খুলেছে। তার মানে, তিনি ইতিপূর্বে যেসব শব্দের (উম্মতি/বুরুজী) আশ্রয় নিয়ে নবী দাবী করেছিলেন সেটি এখন (১৯০১ সালের পর থেকে) রহিত, সেসব দ্বারা এখন আর কেউ দলিল দিতে পারবেনা। এতে সাব্যস্ত হল যে, তিনি ১৯০১ সালের পর থেকে আপনা নবী দাবী সংক্রান্ত বিশ্বাসের ভেতর পরিবর্তন এনেছেন। স্ক্রিনশট

আনওয়ারুল উলূম খ-২ পৃ-৪৪৩-৪৫; লিখক মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ

৯. মির্যা কাদিয়ানী একজন নবী। মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর রচনাবলীর সমষ্টি আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; অনলাইন এডিশন।

আনওয়ারুল উলূম খ-২ পৃ-৫৪৪; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন নিজেই লিখেছেন যে, মসীহ মওউদ (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) মুহাদ্দাস নন, বরং একজন নবীই।
আমি এক দিক থেকে নবী এবং আরেক দিক থেকে উম্মতি, বললেন মির্যা কাদিয়ানী। মালফুযাত ৫/৩৫৩ লিখক মির্যা কাদিয়ানী।

১০. মির্যা কাদিয়ানীর “রাসূল” হওয়ার দাবী। আল্লাহতালা নাকি কাদিয়ানে তাঁর রাসূল পাঠিয়েছেন। দাফেউল বালা (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১২।

১১. নবী এবং রাসূল হওয়ার দাবী। দেখুন, একটি ভুল সংশোধন (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৫,৮,১০।

১২. রাসূল হওয়ার দাবী। আল ওসীয়্যত (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ২০।

১৩. আল্লাহতালা নাকি মির্যাকেই “নবী” নামে খাস করেছেন। হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৩৩০।

১৪. মুহাম্মদী ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী এই অধম (মির্যা কাদিয়ানী) । তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৮২।

১৫. আল্লাহ তায়ালার নাকি ওয়াদা ছিল উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে একজন “রাসূল” পাঠানোর। যে কিনা মাহদী ও মসীহ হবে। দেখুন, ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুতে ইসলামের জীবন, লিখক শাহ মুস্তাফিজুর রহমান পৃষ্ঠা নং ৩৭ (১১তম পুনঃমুদ্রণ, জানুয়ারী ২০১৮ ইং)। স্ক্রিনশট এই যে,

কাদিয়ানীদের প্রকাশিত ‘উম্মতিনবী‘ বইয়ের ৯ নং পৃষ্ঠাটি থেকে দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীকে একই সাথে নবী এবং উম্মতী দুটোই বলে মেনে নেয়া হয়েছে। স্ক্রিনশট এই যে,

কাদিয়ানীদের ‘ভারতের কাদিয়ান’ থেকে উর্দূ ভাষায় প্রকাশিত অফিসিয়াল দৈনিক পত্রিকা ‘আল ফজল‘ তাং ২৬-০৬-১৯২২ইং পাতা নং ৬ এর ভাষ্যটি কেমন জেনে নিন! মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর উদ্ধৃতি টেনে লিখা হয়েছে যে,

“আমরা যেহেতু হযরত মির্যা সাহেবকে ‘নবী‘ মেনে থাকি আর গয়ের আহমদীরা (অ-কাদিয়ানীরা) তাঁকে ‘নবী’ মানেনা, সেজন্য কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী যে কোনো একজন নবীর অস্বীকারকারীও কাফের হওয়ায় গয়ের আহমদীরা কাফের।” (সম্পূর্ণ বক্তব্যটি কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফার বয়ান থেকেই উদ্ধৃত করা হয়েছে)।

আল ফজল ২৬-০৬-১৯২২ইং

এখন প্রশ্ন হল, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবের তো কথিত তৃতীয় শ্রেণীর নবী (জিল্লি, বুরুজি) দাবী ছিল। আর মির্যা বশির আহমদ এম.এ সাহেবের বক্তব্য অনুসারে, ‘খোদা আপনা বাণীতে (কুরআনে) কখনোই জিল্লি, বুরুজি শব্দ ব্যবহার করেননি।’ (কালিমাতুল ফছল ২৮)।

এমতাবস্থায় মির্যা গোলাম আহমদকে অস্বীকার করলে সেটি কুরআনের শিক্ষার বিরুদ্ধে গেল কিভাবে? কুরআনে উল্লিখিত কোনো নবী কি তৃতীয় শ্রেণীর (কথিত বুরুজি জিল্লি) নবী? অবশ্যই না। সুতরাং সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানীর কথিত বুরুজি আর জিল্লি শব্দের আশ্রয় নিয়ে নবী দাবীটা শুধুই একটি প্রতারণাই ছিল। মূলত সে মুক্ত অর্থেই একজন নবী দাবীদার ছিল। যা তার কথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য হতেও সুস্পষ্ট। নতুবা উপরের প্রশ্নটির কী জবাব?

আমার চ্যালেঞ্জ :

  • উপরের রেফারেন্স গুলোর একটিও কোনো কাদিয়ানী স্থানীয় জনপ্রশাসনের উপস্থিতিতে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে আমি তাকে নগদে ১ লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দেব; আর প্রমাণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে তাকে অবশ্যই তাওবা পড়ে ইসলাম কবুল করতে হবে এবং প্রকাশ্যে কাদিয়ানীয়ত ছাড়ার ঘোষণা দিতে হবে। যোগাযোগ 01629941773 (ইমু & ওয়ার্ডশপ)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

আদম (আ:) কি প্রথম মানুষ নন? কাদিয়ানী মতবাদের খন্ডন

হযরত আদম (আ:) কি একই সাথে প্রথম নবী এবং প্রথম মানুষ নন? কাদিয়ানীদের একটি ইসলাম পরিপন্থী কুফুরী আকীদার দাঁতভাঙা জবাব :

কাদিয়ানীদের বইগুলো অসম্ভব রকমের স্ববিরোধ কথাবার্তায় ভরা! এদের মু’আল্লিমদের যদি প্রশ্ন করেন যে, হযরত আদম (আ:)-ই আমাদের আদি-পিতা ছিলেন, তোমরা কি এটা মানো? তারা জবাবে বলবে, না আমরা এটা মানিনা! তারা তাদের মতের পক্ষে অনেক যুক্তি এবং পবিত্র কুরআন থেকে আয়াত উল্লেখ করে অপব্যাখ্যাও দিতে চাইবে!

কিন্তু এই যে একখানা বইয়ের স্ক্রিনশট দেখতে পাচ্ছেন, এটিও কিন্তু তাদেরই বই। মির্যা কাদিয়ানীর ১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বরে লাহোরে একটি জনসমাবেশে তারই একটি লেকচারের বঙ্গানুবাদ। এই বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় দেখুন পরিষ্কারভাবে আগের মতবাদেরই বিপরীতে লিখা আছে, ‘পূর্ববর্তী সকল সভ্যতার পর যে আদম (আ:) আগমন করেন, যিনি আমাদের সবার আদি পিতা, পৃথিবীতে তাঁর আগমনের যুগ থেকে বর্তমান মানব সভ্যতা সূচিত হয়েছে। আর এই (সমস্ত) সভ্যতার পূর্ণ চক্রের আয়ু সাত হাজার বছর পর্যন্ত প্রসারিত।’ এতে পরিষ্কার বুঝায় যাচ্ছে, মানব সভ্যতার পূর্ণ চক্রের আয়ু সাত হাজার বছর বলিয়া মির্যা সাহেব বুঝাতে চাচ্ছেন যে, মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও তাঁর যুগ থেকেই মানবসভ্যতা সূচিত হয়। আর সাত হাজার বছর পরপরই উক্ত সভ্যতার পরিসমাপ্তি ঘটবে তথা কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কিয়েক্টাবস্থা! গায়েবের সংবাদও তিনি দিয়ে দিচ্ছেন!!

অপ্রিয় হলেও সত্য তাদের বইগুলো পড়লে যে কেউই এভাবে অসংখ্য স্ববিরোধ কথাবার্তার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবেন। স্ক্রিনশট :-

যাইহোক, এবার সামনে চলুন!

কাদিয়ানীধর্ম এর অনুসারীরা ডারউইন এর বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কুরআনের সাথে মিশিয়ে বলতে চায় প্রথম মানব আদমের পূর্বেও বহু বন্য মানুষ ছিল । নাউযুবিল্লাহ। এর মানে এদের বিশ্বাস হল, হযরত আদম (আ:) প্রথম মানব ছিলেন না, বরং তাঁর পূর্বেও মানব গোষ্ঠী ছিল! তাই এদের উদ্দেশ্যে এখানে আমি কিছু দলিল ও যুক্তি-নির্ভর প্রশ্ন উত্থাপন করছি। আমি তাদের বিবেকের নিকট প্রশ্নগুলোর উত্তর চাইব! তাই প্রথমেই একটি আয়াত দিয়েই শুরু করছি,

আল্লাহতালা ইরশাদ করেন :

إن مثل عيسى عند الله كمثل آدم خلقه من تراب ثم قال له كن فيكون অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আল্লাহ’র নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তিনি তাঁকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন তারপর তাঁকে বলেছিলেন, হয়ে যাও! সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন (সূরা আল ইমরান – ৫৯)।

সম্পর্কিত আলোচনা : মহান আল্লাহ পিতা বিহীন ঈসা (আ:)-কে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন যেভাবে প্রথম মানব আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন। আদমের সাথে ঈসার দৃষ্টান্ত এটাই। উক্ত আয়াতে আবার বলা হল, আদমকে মাটি দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হয়ে যাও বলতেই পূর্ণাঙ্গ রক্তে মাংসে পরিণত হয়ে গেছে, এই আয়াতে ইহা একেবারেই সুস্পষ্ট। অতএব, আদমের পূর্বে কোনো মানুষ ছিল না বলেই অকাট্যরূপে প্রমাণিত। ডারউইনের ভ্রান্ত মতবাদকে বিজ্ঞান আখ্যা দিয়ে মহাগ্রন্থে আল কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করে ব্যতিক্রম কিছু সাব্যস্ত করার আর কোনো সুযোগই থাকেনি।

হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, হযরত আদম (আ:)ই যদি প্রথম মানুষ হন তাহলে তখন তো আর কোনো মানুষই জগতে ছিলো না। এমতাবস্থায় তিনি কাদের জন্য নবী হয়ে আসলেন কিংবা কোন সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হলেন? এতেই বুঝা যায়, মূলত যিনি প্রথম আদম তিনি নবুওয়তের অধিকারী হযরত আদম নন, বরং ভিন্ন একজন। (কাদিয়ানীদের দাবী ও যুক্তি শেষ হল)।

  • তাদের উক্ত দাবী এবং যুক্তির জবাব একদম শেষেই দেয়া হবে। তার আগে তাদেরই উক্ত দাবী এবং যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের উদ্দেশ্যে পালটা কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

১। পবিত্র কুরআনে কয়জন আদম এর উল্লেখ আছে? কয়েকজন আদমের নাকি শুধুই একজন আদমের? এর জবাব আগে দিন! যদি বলেন, কয়েকজন আদমের কথাই উল্লেখ আছে। তাহলে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ উল্লেখ করুন।

২। এই প্রশ্নটি বুঝার সুবিধার্থে প্রথমে হাদীসটি পড়ুন। সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া পর্বের অধ্যায় নং ৫০ এবং হাদীস নং ৩১০০ দেখুন, হাদীসের আরবী عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ

অর্থ, আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো ব্যাক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের একাংশ আদম (আ.)-এর প্রথম ছেলের (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন করেছে।” এবার প্রশ্নটি এই,

এই হাদীসটিও কাদিয়ানী মতবাদের অসারতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয় কি? কেননা, আদম যদি কয়েকজনই হত তাহলে অন্তত এই হাদীসে সেদিকে ইংগিত নেই কেন? যেজন্য এখানে আদম (আ.)-এর সন্তান ‘কাবিল‘ এর যে ব্যাপারটি আলোচিত হল, এর পরিপ্রেক্ষিতে কাদিয়ানীদের প্রতি যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হল, তবে কি তাদের (কাদিয়ানীদের) কনসেপ্ট অনুসারে আরও যত আদম ছিলেন তাদের সন্তানদের মধ্য হতে কেউই কখনো খুন-খারাবি করেনি? যদি করে থাকে তাদের আলোচনা কোথায়?

৩। আর যদি বলেন, শুধুই একজন আদমের কথাই উল্লেখ আছে, তাহলে আমার নিচের এই প্রশ্নটির কী জবাব?

আমার প্রশ্নটি হল :

আল্লাহতালা সূরা আল বাক্বারা এর ৩০ নং আয়াতে আদম (আ:) সম্পর্কে ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বলেছিলেন, “ইন্নী জা’ইলুন ফিল আরদ্বি খলীফা” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি (খলীফা) মনোনীত করব। এখানে আদমকে ভবিষ্যতের একজন “খলীফা” তথা আল্লাহর প্রতিনিধি বা একজন নবী হওয়ার সংবাদ দেয়া হয়েছে। তারপর একই সূরার ৩৫ নং আয়াতে আদম হাওয়া দুইজনের ব্যাপারে এসেছে, “উসকুন আন্তা ওয়া ঝাউজুকাল জান্নাতা” অর্থাৎ তুমি এবং তোমার স্ত্রী দুইজনই জান্নাতে অবস্থান কর।

উপরের দুইটি আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট হল যে, আদম এবং হাওয়া দুইজনই পৃথিবীতে আসার আগে জান্নাতে ছিলেন এবং আদম (আ:) পরবর্তীতে নবুওয়তের অধিকারী হয়েছেন। বর্তমান দুনিয়ার সমস্ত মানুষ তারই বংশধর, ফলে তাদেরকে বলা হয় বনি-আদম বা আদমের সন্তান-সন্ততি।

একই সূরার ৩৬ নং আয়াতে এসেছে, “ওয়া কুলনাহবিতূ বা’দ্বুকুম লি-বা’দ্বিন আদ্বু-উ ওয়ালাকুম ফিল আরদ্বি মুস্তাতাক্বাররুন ওয়া মাতা-‘উন ইলা-হীন।” অর্থাৎ আমি তাদের বললাম, তোমরা একজন আরেকজনের দুশমন হিসেবে এখান থেকে নেমে পড়ো, তোমাদের (পরবর্তী) বাসস্থান (হচ্ছে) পৃথিবী, সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্যে জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ থাকবে।”

সহীহ মুসলিম শরীফ এর ৮৫৪ নং হাদীসে উল্লেখ আছে, আদম (আ:)-কে জুমাবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে জুমাবারেই জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সূরা আ’রাফ এর ২৭ নং আয়াতটিও এর পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহতালা বলেন, “ইয়া বানী আদামা লা ইউফতিনান্নাকুমুশ শায়ত্ব-না কামা আখরাজা আবাওয়াইকুম মিনাল জান্নাতি।” অর্থাৎ হে আদম সন্তান! শয়তান তোমাদেরকে যেন ফেতনায় ফেলে না দেয় যেমনিভাবে তোমাদের আদি মাতা-পিতাকে সে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, আদি মাতা-পিতা আদম হাওয়াকে ফাঁদে ফেলতে শয়তানের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার প্রয়োজন ছিলনা। কেননা আল্লাহতালা শয়তানকে অনেক দূর থেকে মানুষকে প্ররোচিত করার সক্ষমতা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আ’রাফ এর ২০ নং আয়াত “ফা ওয়াসওয়াসা লাহুমা” অর্থাৎ সে তাদের দুইজনকে প্ররোচিত করেছিল, পরিষ্কার উল্লেখ আছে। অতএব শয়তান তাদের দুইজনকে জান্নাতের বাহির থেকেই প্ররোচিত করেছিল, ভেতরে প্রবেশ করতে হয়নি; বুঝা গেল।

এই দীর্ঘ আলোচনার পরের অংশ দ্বারা বুঝা গেল, জান্নাত (আকাশ) থেকে যাঁকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হল তিনি একই সাথে পৃথিবীর প্রথম মানুষও। অন্যথা তাঁর সাথে আদি-মাতা হযরত হাওয়া (حواء) এর কী সম্পর্ক?

কিংবা আল্লাহতালা আদম-হাওয়া এবং শয়তান তিনোজনকে “ইহবিতূ” (ا) বহুবচনে কিজন্য বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও’ যদি এই আদমের আগেও মানব মণ্ডলীর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকত?

আরো প্রশ্ন আসে, এই আদমের আগেই যদি মানব গোষ্ঠী পৃথিবীতে বিদ্যমান থাকত তাহলে আল্লাহতালা কিজন্য “ওয়া লাকুম ফিল আরদ্বি মুস্তাকাররুন” অর্থাৎ এখান থেকে নেমে পড়ো, তোমাদের (পরবর্তী) বাসস্থান (হচ্ছে) পৃথিবী, সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্যে জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ থাকবে”-এভাবে বললেন? এতে কি প্রমাণিত হয়না যে, এই আদমই প্রথম মানুষ যিনি পৃথিবীতে আদি-মাতা হাওয়া সহ জান্নাত থেকে নেমে আসার পরবর্তী সময়ে নবুওয়তের অধিকারী হয়েছিলেন!? অন্যথা পবিত্র কুরআন থেকেই আপনাদের তথাকথিত প্রথম মানুষটির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে যিনি উক্ত আয়াতে উল্লিখিত আদম (আ:) ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ!

এবার তাদের বালখিল্য টাইপের উক্ত প্রশ্নের উত্তর :

  • তাদের প্রশ্ন ছিল, হযরত আদম (আ:)ই যদি প্রথম মানুষ হন তাহলে তখন তো আর কোনো মানুষই জগতে ছিলো না। এমতাবস্থায় তিনি কাদের জন্য নবী হয়ে আসলেন কিংবা কোন সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হলেন?

জবাব হল, আচ্ছা প্রশ্নকারী কি আমাকে একথা প্রমাণ করে দিতে পারবেন যে, হযরত আদম (আ:)-কে যখন জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হচ্ছিল তিনি তখনই নবুওয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন? নাকি আদম (আ:) পৃথিবীতে নেমে আসার পরবর্তীতে যথাসময়ে নবুওয়ত লাভ করেছিলেন? প্রশ্নকারীদের প্রতি কেয়ামত পর্যন্ত আমার চ্যালেঞ্জ থাকল, তারা কখনো প্রমাণ করতে পারবেনা যে, হযরত আদম (আ:) যখন পৃথিবীতে নেমে আসেন তাঁকে আল্লাহতালা তখনই নবুওয়ত দান করেছিলেন! বরং আমাদের বিশ্বাস হল, আল্লাহতালা আদম (আ:)-কে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়ার পরবর্তীতে যথাসময়ে নবুওয়ত দান করেছিলেন। অতএব কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লিখিত প্রশ্ন পুরোই অসার সাব্যস্ত হল।

শেষকথা হল, কাদিয়ানীরা মূলত এইধরনের আরো বহু ইসলামপরিপন্থী মতাদর্শ পোষণ করার কারণে তারা ইসলাম থেকে খারিজ এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এদের সমুদয় ঈমান বিধ্বংসী কুফুরী আকীদা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মুসলমান এর সংজ্ঞা কী? কাদিয়ানীদের প্রশ্নের উত্তর

মুসলমান – এর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে

কাদিয়ানিদের একটি কুতর্ক হল, বলুন! মুসলমানের সংজ্ঞা কী? কাদিয়ানীদের মধ্যে যারা বিশেষকরে আওয়ামীলীগ, বিএনপি কিংবা জাসদ বাসদ ইত্যাদির রাজনীতির সাথে যুক্ত আজকের এই লিখাটি তাদের জন্য। তাদের বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা, তাদের তথাকথিত মসীহ মির্যা কাদিয়ানী এবং মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন এই দুই ব্যক্তির ফতুয়ামতে তারা তাদের পছন্দের রাজনৈতিক অ-কাদিয়ানী নেতৃবৃন্দকেও “কাফের” বিশ্বাস করেন কিনা?

মূল আলোচনা

কাদিয়ানীদের কথিত দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন এর রচিত “আয়নায়ে সাদাকাত” এর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে, کل مسلمان جو حضرت مسیح موعود کی بیعت میں شامل نہیں ہوئے خواہ انہوں نے حضرت مسیح موعود کا نام بہی نہیں سنا وہ کافر اور دائرہ اسلام سے خارج ہیں (উচ্চারণ) কুল মুসলমান জু হযরত মসীহ মওউদ কি বাইয়েত মে শামেল নিহি হোয়ে খাহ উন হোঁ নে হযরত মসীহ মওউদ কা নাম বিহি নিহি চুনা উয়োহ কাফের আওর দায়েরায়ে ইসলাম চে খারেজ হেঁ। (বাংলা অনুবাদ) যে সমস্ত মুসলমান মসীহ মওউদের (মির্যা কাদিয়ানী) বাইয়েতের মধ্যে শামিল হয়নি, তারা যদিও বা হযরত মসীহ মওউদের নাম পর্যন্ত শুনেনি এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলামের গন্ডি থেকে বহিষ্কৃত। (আরো দেখুন, মির্যা বশির উদ্দিন এর রচনাবলীর সমষ্টি ২৬ খন্ডে প্রকাশিত ‘আনওয়ারুল উলূম’ এর ৬ নং খন্ডের ১১০ নং পৃষ্ঠা, অনলাইন এডিশন [উর্দু])।

স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য

স্ক্রিনশট :আনওয়ারুল উলূম (উর্দু) অনলাইন এডিশন।

কাদিয়ানীদের বইতে যেভাবে “মুসলমান” এর সংজ্ঞা এলো!

উপরে তারা “কাফের” এর সংজ্ঞা দিলেন। এবার এর বিপরীতে “মুসলমান” এর সংজ্ঞা কী দাঁড়ায় দেখুন, যারা মির্যা কাদিয়ানীর বাইয়েতের মধ্যে শামিল হবে তথা কাদিয়ানী মতবাদে দীক্ষিত হবে শুধুমাত্র তারাই মুসলমান এবং তারাই ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকবে। এককথায়, যারা কাদিয়ানী নয় তারা মুসলমান নয়।

মুসলমান এর সংজ্ঞা কী? এইরকম প্রশ্ন তুলার কারণ!

এইরকম প্রশ্ন তুলা তাদের মূলত একটি অপকৌশল! এতে শ্রোতার দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়াও উদ্দেশ্য থাকে এমনকি আলোচনার টপিক পরিবর্তন করার অসৎ উদ্দেশ্যও বলা যেতে পারে। তাই তাদের বই থেকেই তথাকথিত “কাফের” এবং পরোক্ষভাবে “মুসলমান” এর সংজ্ঞা আজ এখানে পোস্ট করতে বাধ্য হলাম। এখানে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হল, কাদিয়ানীদের উক্ত “কাফের” এর সংজ্ঞা মতে মির্যা কাদিয়ানীকে নবী রাসূল স্বীকার না করায় আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ আমরা সবাই তাহলে কী হতে যাচ্ছি? ভাবিয়ে তুলে কিনা?

(মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবী করার প্রমাণ তারই বইয়ের স্ক্রিনশট থেকে দেখতে ক্লিক করুন >> Click)

অতএব, কে মুসলমান আর কে কাফের – এর পুরোটাই যখন নির্ভর করছে মির্যা কাদিয়ানিকে গ্রহণ করার উপর তখন আমাদের প্রাণপ্রিয় এই বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ কোটি কোটি মানুষ কেউ-ই কি আর মুসলমান থাকল? যদিও বা আমরা আল্লাহ ও তাঁর খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বান্তকরণে মেনে চলি না কেন! যদিও বা মুসলমানের ন্যায় সালাত আদায় করি না কেন! যদিও বা কা’বা শরীফকে কেবলা মানি না কেন? যদিও বা মুসলমানের জবেহ কৃত হালাল জন্তুর গোশত আমরা ভক্ষণ করি না কেন? হায় হায়! এখন এর কী হবে!

ধন্যবাদ সবাইকে।

(লিখাটির কোনো রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে নগত ১ লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দেয়া হবে)।

লিখক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী। শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কবরের আযাব সম্পর্কে সহীহ হাদীস

  • কবরে ফেরেশতার সুওয়াল জওয়াব এবং আযাব সম্পর্কে :

কবরে ফেরেশতার সুওয়াল জওয়াব এবং আযাব সম্পর্কে সহীহ বুখারী’র কিতাবুল জানায়েজ অংশে বিস্তারিত বহু হাদীস উল্লেখ রয়েছে। এখানে লম্বালম্বি কোনো আলোচনায় যাব না। শুধুমাত্র ‘কবরের আযাব’ সম্পর্কিত একটি সহীহ হাদীস অনুবাদ সহ উল্লেখ করব! কাদিয়ানীদের অন্যতম একটি ধর্মবিশ্বাস হল, কবরে কোনো সুওয়াল জওয়াব কিংবা আযাব এসবের কিছুই হবেনা। অথচ ইমাম বুখারীর দাদা ওস্তাদ (শায়খ) সংকলিত হাদীসের প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘মুসান্নাফে আব্দ রায্যাক‘ কিতাবুল জানায়েজ, বাবু ফিতনাতিল কবরি, হাদীস নং ৬৭৩৭ -তেও সুুুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে : ফিরিশতা জিজ্ঞেস করবেন “তোমার নবী কে?”। এমনকি সহীহ বুখারীর মধ্যেও উল্লেখ আছে। এই দেখুন,

কবরের আযাব সম্পর্কে সহীহ হাদীস :

  • গ্রন্থ : সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন /ইফা:)
  • অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা (كتاب الجنائز)
  • হাদিস নম্বরঃ ১২৯১

৮৬৯. কবর আযাব প্রসংগে।

باب مَا جَاءَ فِي عَذَابِ الْقَبْرِ حَدَّثَنَا عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ، وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم‏.‏ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ‏.‏ فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ، قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ، فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا ‏”‏‏.‏ قَالَ قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ فِي قَبْرِهِ‏.‏ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ ‏”‏ وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي، كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ‏.‏ فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ‏.‏ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً، فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ، غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ ‏”‏‏.‏

অনুবাদ : আইয়াশ ইবনু ওয়ালিদ (রহ:) … আনাস ইবনু মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মৃত) বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথী এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে সে (মৃত ব্যাক্তি) তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফিরিশতা তার কাছে এসে তাকে বসান এবং তাঁরা জিজ্ঞেস করেন : مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم‏.‏ অর্থাৎ এ ব্যক্তি তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নজর কর! আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে ফেলবে।

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (রহ:) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি (কাতাদা) পুনরায় আনাস (রা:) এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [আনাস (রা:)] বলেন, আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে, তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কি বলতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানিনা। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি (মানব ও জ্বীন) ব্যতিত তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ:)-এর কবর নিয়ে মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধ বক্তব্য

ঈসা (আ:)-এর ‘কবর’ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর চার (৪) ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইসমূহে জীবিত ঈসা (আ:)-এর ‘কবর’-এর স্থান সম্পর্কে চার ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য। যথা :

(১) ‘সিরিয়া’ এর গ্যালীলে। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)।

(২) ‘ফিলিস্তিন’ এর বায়তুল মুকাদ্দাসের আঙ্গিনায়। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৮ পৃষ্ঠা নং ২৯৬-৩০০ [টিকা দ্রষ্টব্য])।

(৩) ‘কাশ্মীর’ অথবা তার আশপাশে [তথা তিব্বতের কোনো শহরে]। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১০ পৃষ্ঠা নং ৩০২)। উল্লেখ্য, এখানে ‘অথবা’ বলে কী বুঝালেন? তবে কি মির্যা সাহেব নিজেও কনফিউজড ছিলেন? এই তথ্যটি ইলহামি হলে আবার কনফিউজড কেন?

(৪) ‘কাশ্মীর’ এর শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’তে। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৪ পৃষ্ঠা নং ১৭২)।

এবার বিস্তারিত আলোচনা :

১. সিরিয়ার গ্যালীল এর কবর :

সিরিয়া এর গ্যালীলের কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “সত্য তো এটাই যে, মসীহ আপনা মাতৃভুমি গ্যালীলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু সেখানে তাঁর যে দেহ দাফন হয়েছিল সেটি আবার জীবিত হয়ে গিয়েছিল একথা কোনোভাবেই সত্য নয় । বরং (লূক এর ইঞ্জিলের) ঐ অধ্যায়ের তৃতীয় আয়াত দ্বারা প্রকাশ রয়েছে যে, মৃত্যুবরণ করার পর কাশফ (দিব্যি দর্শন) অবস্থায় মসীহ চল্লিশ দিন পর্যন্ত আপনা শিষ্যদের দর্শন করেছেন। এখানে কেউ যেন একথা মনে না করে যে, মসীহ শূলিবিদ্ধ হওয়ার কারণেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেননা আমরা প্রমাণ করে আসছি যে, খোদাতায়ালা মসীহকে শূলি হতে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। বরং ‘আমলের প্রথম অধ্যায়’ এর এই তৃতীয় আয়াত সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মসীহ’র স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিল যা গ্যালীলেই সংঘটিত হয়েছে। ঐ মৃত্যুর পরেই মসীহ আপনা শিষ্যদের চল্লিশ দিন পর্যন্ত কাশফ অবস্থায় দর্শন করেছিলেন।”

স্ক্রিনশট নং ১

সতর্কতা : এখানে কোনো ধুর্ত কাদিয়ানী হয়ত একথা বলতে পারে যে, উক্ত কথাগুলো মির্যা সাহেবের নিজেস্ব নয় বরং তিনি অন্য কারো কথাকে উদ্ধৃত করে এখানে উল্লেখ করে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, যে কেউই পড়ে বুঝতে সক্ষম যে কথাগুলো সম্পূর্ণ তারই। পাঠকবৃন্দ! আমার এ লিখাটি কোনো ব্রেইন ওয়াশ কাদিয়ানীর জন্য নয়, বরং সেসব সত্যানুসন্ধানীবন্ধুদের জন্যই যারা আখেরাতে নিজের নাজাতের পূর্ণ আশাবাদী ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতবাসী হতে চান। আমি আশা করব, নিরপেক্ষতার সাথে মির্যা সাহেবের স্ববিরোধ কথাবার্তাগুলো নিয়ে সামান্য একটু চিন্তা করবেন! তবেই মির্যা সাহেব ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করার জন্য এতটা উদগ্রীব কেন ছিলেন তার প্রকৃত রহস্য খুবই তাড়াতাড়ি উন্মোচন হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। অপ্রিয় হলেও সত্য কথা, মির্যা সাহেব মূলত নিজেকে ‘মসীহ’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি ঈসা (আ:)-কে মৃত প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন।

২. ‘ফিলিস্তিন’ এর বায়তুল মুকাদ্দাসের কবর :

বায়তুল মুকাদ্দাসের কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “আর বাস্তবতা এই যে, হযরত ঈসার কবরও শামে বিদ্যমান। আর আমি অত্যধিক সমাধানের জন্য এখানে টিকাতে আমার ভ্রাতা সাইয়েদ মৌলভী মুহাম্মদ সাঈদী তরাবলিসি’র সাক্ষ্য উল্লেখ করে দিয়েছি। তিনি শামের তরাবলিসের অধিবাসী। তথায় হযরত ঈসার কবর বিদ্যমান। যদি বল যে, ঐ কবর একখানা জা’লি (কৃত্রিম) কবর তাহলে সেটি যে কৃত্রিম কবর তার প্রমাণ দিতে হবে এবং সাব্যস্ত করতে হবে যে, এই কৃত্রিম কবর কবে তৈরী করা হয়েছিল! এই অবস্থায় তো অন্যান্য নবীর কবরের ব্যাপারেও কোনো শান্তনা থাকেনা, নিরাপত্তা উঠে যাবে। বলতে পারে যে, সে সকল নবীর কবরগুলোও হয়ত জা’লি (কৃত্রিম) কবরই!” (রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৬-৯৭)।

স্ক্রিনশট নং
স্ক্রিনশট নং ৩

উল্লেখ্য, প্রাচীন ভৌগলিক সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাসও শাম এর অন্তর্ভুক্ত। মির্যা সাহেব এখানে শামের কবর বলতে বায়তুল মুকাদ্দাসের কবরকেই বুঝিয়েছেন। তার প্রমাণ তারই মুরিদের উক্ত পত্র। যেখানে উল্লেখ আছে “হযরত ঈসা (আ:) বেথেলহামে জন্মগ্রহণ করেন। বেথেলহাম আর কুদ্স এই দুয়ের মধ্যবর্তী তিন কোছ তথা ছয় মাইল দূরত্ব এবং হযরত ঈসা (আ:) এর কবর কুদ্স শহরেই রয়েছে এবং তা এখনো বিদ্যমান। তথায় একটি গির্জা তৈরী করা হয়েছে যেটি সমস্ত গির্জা অপেক্ষা বড়। তার অভ্যন্তরে ঈসা (আ:) এর কবর রয়েছে এবং হযরত মরিয়ম সিদ্দিকার কবরও রয়েছে। দু’নো কবর পৃথক পৃথক। বনী ইসরাঈলী যুগে ‘কুদ্স’ এর নাম ছিল ইউরোসলম, তাকে উরসলমও বলা হত। ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুর পর ঐ শহরের নাম ‘ইলিয়া’ রাখা হয়েছিল। অতপর ইসলামী সাফল্যের পরবর্তীতে বর্তমান সময় পর্যন্ত শহরটি ‘কুদ্স’ নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। অনারবীরা সেটিকে ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ বলে।” (রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৯-৩০০)।

সর্তকতা : হয়ত মির্যাকে স্ববিরোধ কথাবার্তার অভিযোগ থেকে বাঁচাতে কোনো কাদিয়ানী বলতে পারে যে, এটি মির্যা সাহেবের নিজের কোনো কথা নয়, বরং তিনি তার জনৈক মুরিদের কথা উদ্ধৃত করেছেন মাত্র। এমন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আমার জিজ্ঞাসা হল, মির্যা সাহেব তো তার মুরিদের কথার উদ্ধৃতি দেয়ার আগেই লিখেছেন : ‘আর বাস্তবতা এই যে, হযরত ঈসার কবরও শামে বিদ্যমান’। মির্যা সাহেব তার উক্ত দাবীকে সঠিক প্রমাণ করতে আপনা মুরিদের পাঠানো পত্রের বিবরণকে সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাহলে এটি কিভাবে মির্যার নিজের কোনো কথা নয়, বলতে পারলেন? আর শামের তথা বায়তুল মুকাদ্দাসের ঐ কবরটি কৃত্রিম কোনো কবরই নয় বরং এটি ঈসা (আ:) এর প্রকৃত কবরই ছিল বলে দাবী করেন মির্যা সাহেব। তারই ভাষ্য : “যদি বল যে, ঐ কবর একখানা জা’লি (কৃত্রিম) কবর তাহলে সেটি যে কৃত্রিম কবর তার প্রমাণ দিতে হবে এবং সাব্যস্ত করতে হবে যে, এই কৃত্রিম কবর কবে তৈরী করা হয়েছিল!” সুতরাং বুদ্ধিমানদের জন্য গভীর চিন্তা করা দরকার যে, মির্যা সাহেব একজন মুলহাম দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও ঈসা (আ:) এর কবর সম্পর্কে বরাবরই স্ববিরোধ বক্তব্য দিয়ে গেছেন। তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য কি এইটুকুই যথেষ্ট নয়?

৩. ‘কাশ্মীর’ এর আশপাশে তথা তিব্বত এর কবর :

‘তিব্বত’ এর কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “কোনো আশ্চর্যের ব্যাপার নয় যে, তিনি (ঈসা) সেই পর্যটন যুগে তিব্বতেও আগমন করেছিলেন যেমনটি আজকাল কোনো কোনো ইংরেজ লিটারেচারদের রচনা দ্বারা বুঝা যায়। ডক্টর বার্নায়ার এবং কতিপয় ইউরোপীয় বিদ্যানদের মত হল, কোনো আশ্চার্যের বিষয় নয় যে, কাশ্মীরের অধিবাসীরা প্রকৃতই ইহুদীজাত। সুতরাং এই মতটিও একদমই আশ্চার্যের নয় যে, হযরত মসীহ সেসব (ইহুদীজাত) লোকদের নিকট আগমন করেছেন অতপর তিনি তিব্বত অভিমুখে যাত্রা করেছেন। তো আশ্চার্যের কি আছে যে, মসীহ এর কবর কাশ্মীর অথবা তার আশপাশে (যেমন তিব্বত ইত্যাদী) রয়েছে। ইহুদী রাষ্ট্রগুলো থেকে তাদের বেরিয়ে আসাই ইংগিত করে যে, নবুওয়তেরধারা তাদের বংশ থেকে বেরিয়ে গেছে।” (রূহানী খাযায়েন ১০/৩০২)।

স্ক্রিনশট নং

সতর্কতা : হয়ত এখানেও কাদিয়ানীরা মির্যাকে তার স্ববিরোধ বক্তব্যের অভিযোগ থেকে বাঁচাতে বলবে যে, না না; এসব মোল্লাদের বানোয়াট আর মিথ্যা। এগুলোর সাথে মির্যা সাহেবের কোনোই সম্পর্ক নেই। আমি সেসব কপাল পোড়া আর ব্রেইন ওয়াশ মানুষগুলোকে বলব, আমার পক্ষ হতে কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ রইল এখানে যা লিখেছি তার একটি বাক্যও মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেনা। পারলে চ্যালেঞ্জ কবুল কর।

৪. ‘কাশ্মীর’ এর শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’ এর কবর :

শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’ এর কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “খোদা তায়ালার দয়ায় বিরুদ্ধবাদীদের অপদস্থ করার জন্য এবং লিখকের (মির্যা) সত্যতা প্রমাণিত করার জন্য একথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, শ্রীনগরের খান-ইয়ার মহল্লাতে ইউজ আসেফ নামীয় ব্যক্তির যে কবর বিদ্যমান আছে সেটি প্রকৃতপক্ষে ও নিঃসন্দেহে হযরত ঈসা আলাইহে ওয়া সাল্লামের কবর।” তিনি একই পৃষ্ঠায় একদম শেষ দুই লাইনে লিখেছেন : “বরং আমরা প্রমাণ করেছি যে, ইউজ আসেফ এটি হযরত ঈসা আলাইহে ওয়া সাল্লামেরই নাম। ভাষাগত বিবর্তনের ফলেই শব্দের এই পরিবর্তন সাধিত হয়। এখনো কোনো কোনো কাশ্মীরী ইউজ আসেফ এর স্থলে ঈসা ছাহেব’ই বলে থাকে।” (রূহানী খাযায়েন ১৪/১৭২ [উর্দূ]; মূল গ্রন্থ ‘রাজে হাকীকত’ দ্রষ্টব্য)।

স্ক্রিনশট নং

অথচ মির্যা সাহেবের দাবী হল,

“আমি জমিনের কথা বলিনা। কেননা আমি জমিন থেকে নই বরং আমি সেটাই বলে থাকি যা খোদা আমার মুখে ঢেলে দেন।” (পয়গামে ছুলহি, রূহানী খাযায়েন ২৩/৪৮৫)।

এমতাবস্থায় কাদিয়ানীরা মির্যার উক্ত স্ববিরোধ বক্তব্যের কী জবাব দেবে? তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য কি এইটুকুই যথেষ্ট নয়?

মন্তব্য, আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। পাঠকবৃন্দ! এবার নিজেরাই ভাবুন! এই ধরণের কেউ নিজেকে ইমাম মাহদী, মসীহ ইত্যাদি দাবী করলে তা কতটুকু নির্ভরযোগ্য হতে পারে! পরন্তু মির্যা সাহেব নিজেই নিজের কথায় একজন জঘন্য মিথ্যাবাদীও প্রমাণিত হলেন কিনা?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ:) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকলে নিজ উম্মতের পক্ষে শাফায়াত করবেন কিভাবে?

কাদিয়ানীদের প্রশ্ন ও আমার জবাব

এখানে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর তাদেরকে পালটা দুটি প্রশ্ন করা হবে!

কাদিয়ানী : হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) যদি শেষ যুগে আকাশ থেকে নেমে এসে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে শামিল হন তাহলে তিনি স্বীয় উম্মতের জন্য শাফায়াতকারী হতে পারেন কিভাবে? যেহেতু তখন তাঁকে একই সঙ্গে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে! ফলে তাঁর উম্মত বনী ইসরাইলরা তাদের নিজেদের নবীকে না পেয়ে খুব বিপাকে পড়বেন! অতএব, বনী ইসরাইলী ঈসার পুনঃ আগমন সঠিক নয়!

মুসলমান : প্রথমে বুঝতে হবে, শাফায়াত কী এবং কত প্রকার ও কী কী? শাফায়াত বলতে ইসলামী পরিভাষায় কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবী-রাসূলগণের সুপারিশ করাকে বোঝায়। হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহর কাছে নবী-রাসূলরা শাফায়াত করবে। শাফায়াত দুই ধরণের। যথা: ১। শাফায়াতে কুবরা ২। শাফায়াতে সুগরা।

(ক) শাফায়াতে কুবরা : কিয়ামতের দিন যখন মানুষ অসহনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে তখন হযরত আদম (আ:), হযরত নূহ (আ.), হযরত মূসা (আ:) প্রভৃতি নবীদের নিকট উপস্থিত হয়ে শাফায়াতের অনুরোধ করবে। তারা সকলেই অপারগতা প্রকাশ করবে। এসময় সবাই মহানবী (সা:) এর নিকট উপস্থিত হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) সেজদাহ করবেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তার মর্যাদা বর্ণনা করবেন। তারপর তিনি তার প্রভুর নিকট সুপারিশ করার অনুমতি চাইবেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনুমতি দিবেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা:) তাদের জন্য সুপারিশ করবেন। একে শাফায়াতে কুবরা (সর্বশ্রেষ্ঠ শাফায়াত) বলা হয়। এরূপ শাফায়াতের অধিকার একমাত্র মহানবী (সা:) এর থাকবে। এছাড়াও নবী করীম (সা:) জন্নাতীগণকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন। এর পরেই জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।

(খ) শাফায়াতে সুগরা : কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফায়াত করা হবে। এটাই শাফায়াতে সুগরা। নবী-রাসূল, ফেরেশতা, শহীদ, আলিম, হাফেজ এ শাফায়াতের সুযোগ পাবে।

এবার চলুন প্রশ্নের উত্তরে ফিরে যাই।

প্রশ্ন ছিল, ঈসা (আ:) যদি শেষ যুগে আকাশ থেকে নেমে এসে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে শামিল হন তাহলে তিনি স্বীয় উম্মতের জন্য শাফায়াতকারী হতে পারেন কিভাবে? যেহেতু তখন তিনি একই সঙ্গে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন!

উত্তরে বলব, পবিত্র কুরআন মতে, প্রত্যেক নবীই হবেন তাঁর নিজ উম্মতের জন্য শাফায়াতকারী। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَہِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی ہٰۤؤُلَآءِ شَہِیۡدًا অর্থাৎ তখন তাদের কি অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? তাফসীরে জালালাইন কিতাবে উল্লেখ আছে, يشهد عليها و هو نبيها অর্থাৎ তাদের ব্যাপারে তাদের নবীই সাক্ষ্য দেবেন (কুরআন/০৪: ৪১)। সুতরাং প্রমাণিত হল, ঈসা (আ:) দুনিয়াতে পুনরায় এসে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেয়ামতের দিবসে স্বীয় উম্মতের পক্ষে একজন সাক্ষী ও শাফায়াতকারী হিসেবেও উপস্থিত হতে পারবেন। যেটি শাফায়াতে সুগরারই অন্তর্ভুক্ত।

এইপর্যায় কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, হযরত ঈসা (আ:) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে এমন কী অপরাধ করলেন যদ্দরুন তিনি আপনাদের বিচারে নবুওয়তের মাকাম (স্তর) থেকেই বহিষ্কৃত হয়ে যাবেন? কী জবাব? কেননা মুসলিম উম্মাহার বিশ্বাস কখনো এমন নয় যে, তিনি উম্মতি হিসেবে পুনঃ আগমন করবেন বলে তাঁর নবীত্ব বাতিল হয়ে যাবে! বড়জোর তখন তিনি নবুওয়তের দায়িত্বে থাকবেন না। ফলে একজন নবী হিসেবে কেয়ামতের দিন তাঁর শাফায়াত থেকেও তাঁর উম্মত বঞ্চিত হবেনা, ইনশাআল্লাহ। সুতরাং উল্লিখিত প্রশ্নটিই বাতিল।

আচ্ছা আপনারা যারা মনে করেন যে, ঈসা (আ:) কেয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন বলে তিনি একই সঙ্গে আপনা বনী ইসরাইলী উম্মতের পক্ষে শাফায়াতকারী হতে পারেন না তাদের এহেন অপযুক্তির মার-প্যাঁচে কেয়ামত দিবসে আমাদের প্রিয় নবী (সা:)-এর শাফায়াতে কুবরাও কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেননা আপনাদের যেই যুক্তিতে ঈসা (আ:) “উম্মতি” এবং “নবী” এই দুইয়ের কারণে কেয়ামতের দিন দোটানায় পড়ে যাবেন, সেই একই যুক্তিতে আপনারা আমাদের প্রিয়নবীকেও “নিজ উম্মত” আর “অন্যান্য উম্মত” এই দুইয়ের কারণেই দোটানায় ফেলে দিচ্ছেন? নাউযুবিল্লাহিমিন যালিক। অতএব বিষয়টি ভাবা উচিত!

তাছাড়া ঈসা (আ:)-এর ব্যাপারে আপনারা যেই যুক্তিটা প্রদর্শন করে থাকেন তার সমর্থনে কুরআন কিবা হাদীস থেকে দলিল কোথায়?

কাদিয়ানীদের নিকট আমার সর্বশেষ ২টি প্রশ্ন!

(১) মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে, যেসব হাদীস কসম সহ উল্লেখ হয়েছে সেটিকে বাহ্যিক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে, এর রূপক অর্থ করা চলবেনা। (হামামাতুল বুশরা, বাংলা অনূদিত : পৃষ্ঠা নং ২৭)। মজারব্যাপার হল, ঈসা (আ:)-এর নাযিল সম্পর্কিত হাদীসে “কসম” (والذي نفسى بيده) উল্লেখ রয়েছে। দেখুন, সহীহ বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া। এমতাবস্থায় হাদীসটির ঐ ঈসা বা ইবনে মরিয়ম হতে মির্যা কাদিয়ানী উদ্দেশ্য হলে তখন কি সেটিকে রূপক অর্থে গ্রহণ করা হচ্ছেনা? এখন এর কী জবাব দেবেন? অতএব, বনী ইসরাইলী ঈসার পুনঃ আগমন সঠিক নয় বলে যে মন্তব্য করা হয়েছে সেটিই বরং সঠিক নয়!

(২) মির্যা কাদিয়ানীর “নবী” দাবীকে আপনারা যারা স্বীকার করে নিয়েছেন তাদেরকে যদি মৃত্যুর পর কবরে ফেরেশতা জিজ্ঞেস করে যে, তোমার নবী কে? (و من نبيك؟)। ইমাম বুখারীর দাদা ওস্তাদ (শায়খ) সংকলিত হাদীসের প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘মুসান্নাফে আব্দ রায্যাক‘ কিতাবুল জানায়েজ, বাবু ফিতনাতিল কবরি, হাদীস নং ৬৭৩৭ দ্রষ্টব্য।

  • কবরে সুওয়াল জওয়াব হওয়া সম্পর্কে বুখারীর হাদীসেও উল্লেখ আছে, দু’জন ফিরিশতা কবরে মৃত ব্যক্তির কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করবেন : مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم‏.‏ অর্থাৎ এ ব্যক্তি তথা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে? সহীহ বুখারী, কিতাবুল জানায়েজ, হাদিস নম্বরঃ ১২৯১ (ইফা)।

তাহলে আপনারাও বা কী উত্তর দেবেন? তখন আপনারা উত্তরে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই আপনাদের নবী ছিল বলবেন? সুতরাং, কেয়ামতের দিন ঈসা (আ:)-এর দোটানায় পড়া নিয়ে চিন্তিত না হয়ে বরং নিজেদের অবস্থা নিয়েই চিন্তিত থাকুন! বিচার-বোধ নিজ হাতে হত্যা না করে নিজের আখেরাত নিয়ে পুনরায় ভাবুন!

  • বলে রাখতে চাই, কাদিয়ানীদের অন্যতম একটি বিশ্বাস, কবরে কোনো সুওয়াল জওয়াব হবেনা এবং কোনো ধরণের আযাবও হবেনা। তাই তাদের প্রতি ‘কবরের আযাব সম্পর্কে একটি সহীহ হাদীস’ শিরোনামে আমার এই লিখাটি পড়ার অনুরোধ রইল। Click in here

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইমাম হাসান এবং হোসাইনের বংশধারা অবশিষ্ট আছে কি?

ডকুমেন্ট

ইমাম হাসান এবং হুসাইন এর বংশধারা অবশিষ্ট আছে কি?

  • জনৈক কাদিয়ানী মির্যা গোলাম আহমদকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করতে আর কোনো দলিল প্রমাণ খুঁজে না পেয়ে অবশেষে বলল, আরে জনাব! ইমাম মাহদী হযরত হাসান (রা:)-এর বংশে কিভাবে জন্মিবেন, হাসানের বংশধারা কি এখন অবশিষ্ট আছে? এই লিখাটি ঐ কাদিয়ানীর অজ্ঞতা আর গোঁড়ামিপূর্ণ মন্তব্যের জবাবেই লিখলাম। এখানে বলে রাখতে চাই যে, হযরত হাসান (রা:) জীবনে অনেকগুলো বিয়ে করেছিলেন। তবে তিনি কখনো এক সঙ্গে চারের অধিক স্ত্রী রাখেননি। কারো ইন্তেকাল হলে বা তালাক হলে শুধু তখনি বংশধর বাড়াতে পরবর্তীতে আরেকটি বিয়ে করতেন। শেষ যুগে আগমনকারী ইমাম মাহদী উনারই বংশের কোনো সৌভাগ্যবান পুরুষের ঔরসে হবে বলে বহু সহীহ হাদীসে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে। দেখুন, আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী। অতএব বর্তমানে হযরত হাসানের বংশধারা অবশিষ্ট আছে কি নেই—এমন প্রশ্ন তোলাটাও সর্বনিম্নের মূর্খতার পরিচয় বৈ নয়।

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেও কোথাও লিখে যাননি যে, আহলে বাইয়েত নির্বংশ ছিল। কাদিয়ানীদের উচিত, মির্যা কাদিয়ানীর কথিত একটি স্বপ্নে নিজেকে আহলে বাইয়েতের অন্তর্ভুক্ত সাব্যস্ত করার দুরভিসন্ধিমূলক প্রচেষ্টাকে স্মরণ করে একটুখানি হলেও লজ্জা পাওয়া! এই যে দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কিসব হাস্যকর স্বপ্ন দ্বারা নিজের মাহদী হওয়ার দাবীকে বাস্তব করে দেখাতে চেয়েছিলেন!

  • ইমাম হাসান বিন আলী (রা:)-এর বংশ হতে প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের ভবিষ্যৎবাণী থাকায় কেয়ামত পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ এ বংশটিকে রক্ষা করবেন:

প্রথমেই জেনে নিই শেষ যুগে আগমনকারী ইমাম মাহদী কার বংশ হতে হবেন? উত্তর হল, বহু সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত, হযরত ইমাম মাহদী নবী পরিবার থেকে ও হযরত ফাতেমা (রা:) এর সন্তান হযরত হাসান এর বংশে জন্মগ্রহণ করবেন (আবুদাউদ হা/৪২৮৪)।

ইমাম যাহাবী রচিত ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ (খ-৪/পৃ-৩৪৭) থেকে :

بنو الحَسَنِ هُم : الحَسَنُ ، وَزَيْدٌ ، وَطَلْحَةُ، وَالقَاسِمُ، وَأَبُو بَكْرٍ، وَعَبْدُ اللهِ -فَقُتِلُوا بِكَرْبَلاَءَ مَعَ عَمِّهِمُ الشَّهِيْدِ- وَعَمْرٌو، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ، وَالحُسَيْنُ، وَمُحَمَّدٌ، وَيَعْقُوْبُ، وَإِسْمَاعِيْلُ، فَهَؤُلاَءِ الذُّكُورُ مِنْ أَوْلاَدِ السَّيِّدِ الحَسَنِ. وَلَمْ يُعْقِبْ مِنْهُم سِوَى الرَّجُلَيْنِ الأَوَّلَيْنِ: الحَسَنِ وَزَيْدٍ، فَلِحَسَنٍ خَمْسَةُ أَوْلاَدٍ أَعْقَبُوا، وَلزِيدٍ ابْنٌ، وَهُوَ الحَسَنُ بنُ زَيْدٍ، فَلاَ عَقِبَ لَهُ إلَّا مِنْهُ، وَلِي إِمْرَةَ المَدِيْنَةِ، وَهُوَ وَالِدُ السِّتِّ نَفِيْسَةَ، وَالقَاسِمِ، وَإِسْمَاعِيْلَ، وَعَبْدِ اللهِ، وَإِبْرَاهِيْمَ، وزيد، وإسحاق.

অর্থাৎ হাসান বিন আলী (০৩-৫০হিজরী) এর সন্তানগণ হলেন, হাসান, যায়েদ, তালহা, কাশেম, আবু বকর, আব্দুল্লাহ। তারা তাদের শহীদ চাচা (হুসাইন)’র সাথে কারবালায় নিহত হন। আর আমর, আব্দুর রহমান, হুসাইন, মুহাম্মদ, ইয়াকুব, ইসমাইল প্রমুখ এরা সর্দার হাসান (বিন আলী)’র সন্তানদের পুরুষগণ। এদের মধ্যে হাসান বিন হাসান আর যায়েদ বিন হাসান এ দুজন ছাড়া অন্যদের থেকে বংশ বিস্তার হয়নি। অধিকন্তু হাসান বিন হাসান এর ৫ সন্তান ছিল। আর যায়েদ বিন হাসানের ছিল ১ সন্তান। যার নাম ছিল হাসান বিন যায়েদ বিন হাসান। তার (যায়েদ বিন হাসান) থেকেও বংশ বিস্তার হয়নি। তবে কিন্তু তার মদীনার এক কৃতদাসীর সন্তান থেকে বংশ বিস্তার হয়েছে। যিনি ৬ সন্তানের জনক। তারা হলেন, কাশেম, ইসমাইল, আব্দুল্লাহ, ইবরাহীম, যায়েদ, ইসহাক। (অনুবাদ সমাপ্ত হল)। সুতরাং দৃৃৃঢ়ভাবে বলতে পারি, ইমাম মাহদী হযরত হাসান (রা:)-এর বংশে কিভাবে জন্মিবেন, হাসানের বংশধারা কি এখন অবশিষ্ট আছে—এধরণের যে কোনো কথাবার্তা পুরোই অজ্ঞতার শামিল।

  • ইমাম হুসাইন বিন আলী (রা:)-এর বংশধারা:

ইমাম যাহাবী রচিত ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ (খ-৪/পৃ-৩৭২) থেকে :

أَولاَدُ الحُسَيْنِ هُمْ: عَلِيٌّ الأَكْبَرُ الَّذِي قُتِلَ مَعَ أَبِيْهِ، وَعَلِيٌّ زِينُ العَابِديْنَ، وَذُرِّيَتُهُ عَدَدٌ كَثِيْرٌ، وَجَعْفَرٌ، وَعَبْدُ اللهِ وَلَمْ يُعْقِبَا. অর্থাৎ হুসাইন (০৪-৬১ হিজরী) এর সন্তানগণ হলেন, আলী আকবর (উপাধি, আবুল হাসান [৩৩-৬১হিজরী]) যিনি পিতার সাথে নিহত হন। আর আলী যয়নুল আবেদীন (উপনাম, আস-সাজ্জাদ) এর বংশের সন্তান সন্ততি অনেক রয়েছে। তবে জাফর ইবনে হুসাইন আর আব্দুল্লাহ ইবনে হুসাইন এদের বংশ বিস্তার হয়নি। (আরো দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব খ-২/পৃ-৩৪৫; তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত খ-১/পৃ-১৬৩)।

বলে রাখতে চাই যে, ইমাম হুসাইন (রহ:) এর পুত্র সন্তানদের মধ্যে আলী আকবর বিন হুসাইন ২৫ বছর বয়সে ৬১ হিজরীতে কারবালায় শহীদ হন। উনার অপর দুই পুত্র জাফর এবং আব্দুল্লাহ ছোটবেলাতেই ইন্তেকাল করেন। ফলে তাদের থেকেও বংশ বিস্তার হয়নি। কিন্তু আলী যয়নুল আবেদীন (৩৮-৯৫ হিজরী) থেকে বংশ বিস্তার হয় বহুলাংশে। কারবালার যুদ্ধে আলী যয়নুল আবেদীন যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন না। তিনি সস্ত্রীক ও পুত্র মুহাম্মদ আল-বাকের এবং আপনা ফুফু যয়নাব বিনতে আলী সহ তাবুতে ছিলেন । কারণ তিনি তখন প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। শত্রুরা তাঁকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ফুফু যয়নাব বিনতে আলী (০৫-৬২হিজরী) এর প্রাণপণ প্রচেষ্টায় ও খুব বেশি অসুস্থ থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান!

ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন : لما استشهد والده، قال شمر بن ذي الجوشن: اقتلوا هذا الغلام؛ فقال بعض أصحابه: أنقتل فتى حدثاً مريضاً لم يقاتل؟! فتركوه অর্থাৎ যখন তার পিতা হুসাইন বিন আলী শহিদ হয়ে গেলেন তখন শামির বিন যিল যোশন বলল, এই ছেলেটাকেও হত্যা করে ফেল। তখন তার কোনো কোনো সাথী নিষেধ করে বলল, ছেলেটি অসুস্থতায় ভুগছে। এর ফলে তাকে আর হত্যা করা হয়নি, তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। (তথ্যসূত্র : তাবক্বাতুল কোবরা লি-ইবনে সা’আদ ৫/১৬৩; তারীখে তাবারী ১১/৬৩০; তারীখে দামেস্ক লি-ইবনে আসাকীর ২/৩৩৫)।

আলী যয়নুল আবেদীন এর সংসারে প্রায় ১৬জন সন্তান সন্ততি জন্ম গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে একজনের নাম ছিল ‘হাসান আসগর’ (১০০-১৫৭ হিজরী)। এই হাসান আসগর থেকেই ৫ জন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তারা হলেন, উবায়দুল্লাহ আল-আ’রাজ, আব্দুল্লাহ আল-আকিকি, সুলায়মান, আলী, আল-হাসান। এভাবে অসংখ্য মাত্রায় বংশ বিস্তার হয়।

ইমাম মাহদী হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) এর বংশ থেকে হবে কিভাবে?

কোনো কোনো হাদীসে উল্লেখ আছে যে, ইমাম মাহদী ইমাম হুসাইনের বংশ থেকে হবেন। ফলে বাহ্যিকভাবে হাদীসের মধ্যে স্ববিরোধ মনে হয়ে থাকে। এর জবাবে বলব, ইমাম হাসান আর ইমাম হুসাইন দু’জনের সন্তানদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ইতিহাস যাদের ভালোভাবে জানা আছে তারা কখনোই এ জাতীয় বর্ণনা দ্বারা বিভ্রান্ত হবেনা।

ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ইমাম হুসাইন বিন আলী (রা:) এর একটি কন্যা ছিলেন ফাতেমা। তার বিয়ে হয়েছিল ইমাম হাসান বিন আলীর পুত্র হাসান আল মুছান্নাহ (৩৭-৯৭ হিজরী) এর সাথে। হাসান আল মুছান্নাহ’র মায়ের নাম ছিল খাওলাহ বিনতে মানযূর। তাদের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন, আব্দুল্লাহ আল-মুহায, ইবরাহীম আল-গুমার, হাসান আল-মুছাল্লাছ প্রমুখ। (সূত্র : মুনতাহিল আ-মা-ল ফী তাওরীখিন নাবী ওয়াল আ-ল, ১/৬৫১-৫৩; শায়খ আব্বাস আল-ক্বিম্মী)।

আপনাদেরকে আরও একটি তথ্য দেব। হযরত হাসান বিন আলী (রা:) এর ‘ফাতেমা‘ নামে একজন কন্যা ছিল। তাঁকে বিয়ে দেয়া হয় ইমাম হুসাইন (রা:) এর পুত্র আলী যয়নুল আবেদীন এর সাথে। সে ঘরে প্রায় ষোলজন সন্তান সন্ততি জন্ম লাভ করেন।

ইমাম মাহদী হযরত আব্বাস (রা:) এর বংশ থেকে হবে কিভাবে?

ইমাম মাহদী পিতার দিক থেকে হযরত হাসান এবং হযরত আব্বাস উভয়ের বংশধর হবেন। কেননা হযরত হাসানের সাথে হযরত আব্বাসের পুত্র আল-ফজলের মেয়ে উম্মে কুলছুমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ আল-আসগর, জাফর, হামজা এবং ফাতেমা (দেখুন তবক্বাতে ইবনে সা’আদ ৬/৩৫২)। স্ক্রিনশট –

ডকুমেন্ট

অতএব, বুঝা গেল প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর মাতা কিংবা পিতার বংশক্রম ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন দুইজনের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই কোনো কোনো বর্ণনায় ইমাম মাহদীর বংশ হিসেবে ইমাম হুসাইন (রা:)-এরও উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রধানতম কারণ এটাই। গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কেউই বুঝতে পারবে যে, হাদীসগুলোর কোনো কোনোটির সনদের মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও মূলত মতনের ক্ষেত্রে কোনো বৈপরীত্য নেই।

শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

মির্যা কাদিয়ানীর ঈমান বিধ্বংসী কথাবার্তা

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের তথাকথিত ইমাম মাহদী মির্যা গোলাম আহমদের বইতে মারাত্মক ঈমান-বিধ্বংসী কথাবার্তা

[১] মুসলমানদের জাহান্নামী ও কাফের আখ্যা দেয়াঃ

“আমাকে (ইলহামের মাধ্যমে) জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যেই লোক তোমাকে সনাক্ত করার পরেও তোমার সাথে দুশমনি রাখে এবং তোমার বিরোধিতা করে সে জাহান্নামী”। (দেখুন, তাযকিরাহ ১৩০; চতুর্থ এডিশন)।

“যে লোক তোমার আনুগত্য করবেনা, বাইয়েত নেবেনা এবং তোমার বিরোধী থাকবে সে খোদা এবং রাসূলের নাফরমান এবং জাহান্নামী।” (কালিমাতুল ফছল, অনলাইন এডিশন)।

কালিমাতুল ফছল

“প্রত্যেক মুসলমান যিনি হযরত মাসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)’র বাইয়েতে শামিল হয়নি, সে যদিও হযরত মসীহ মওঊদের নামও শুনেনি, এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলাম থেকে বাহিরে।” (আয়নায়ে সাদাক্বাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; মির্যাপুত্র মির্যা মাহমুদ; অনলাইন এডিশন)।

[২] মির্যার দৃষ্টিতে তাকে অমান্যকারীরা বেশ্যার সন্তানঃ

“(আমার) এই কিতাবগুলো এমন, যা সব মুসলমানই মুহাব্বতের দৃষ্টিতে দেখে আর তার জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হয় এবং আমাকে গ্রহণ করে ও সত্যায়ন করে শুধুমাত্র যুররিয়্যাতুল বাগাইয়া তথা বেশ্যার সন্তানেরা ছাড়া। আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। ফলে তারা (আমাকে) কবুল করবেনা” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন খন্ড ৫ পৃষ্ঠা ৫৪৭-৪৮)।

[৩] কাদিয়ানী সাহেব নিজেকে খোদা দাবীঃ

“স্বপ্নে দেখলাম আমি খোদা এবং বিশ্বাস করলাম আসলেই তাই।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৫/৫৬৪, অন্য জায়গায় কাশফে দেখার উল্লেখ আছে, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ১৫২; চতুর্থ এডিশন)।

[৪] মির্যা কাদিয়ানীর হাতে খোদার বাইয়াতঃ

“আল্লাহ তায়ালা আমার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৮ পৃষ্ঠা ২২৭)।

[৫] খোদার সাথে সহবাসঃ

“হযরত মসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী) একবার নিজের অবস্থা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, কাশফ (আধ্যাত্মিক ধ্যাণ)’র অবস্থা এভাবে চেপে বসল যে, নিজেকে মহীলা মনে হল। আর আল্লাহ তা’য়ালা পৌরুষত্বের শক্তি আমার উপর প্রকাশ করছেন। জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।” নাউযুবিল্লাহ। দেখুন (মির্যা কাদিয়ানীর কথিত এক অনুচর কাজী ইয়ার মুহাম্মদ সাহেব রচিত) ‘ইসলামী কুরবানী ট্রাকট, পৃষ্ঠা নং ১৩।

[৬] পবিত্র কুরআনের অবমাননাঃ

মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ইলহাম “কুরআনকে আমি কাদিয়ানের নিকট অবতীর্ণ করেছি।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন ৩/১৪০)। “হ্যাঁ বাস্তবিকই কুরআনের ভেতর ‘কাদিয়ান’ এর নাম উল্লেখ আছে।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন ৩/১৪০)।

“আমরা বলে থাকি যে, কুরআন কোথায় বিদ্যমান! কুরআন যদি বিদ্যমান থাকতই তাহলে কারো আগমন করার প্রয়োজন কী ছিল? সমস্যা তো এটাই যে, কুরআন দুনিয়া থেকে উঠে গেছে! সেজন্যই তো মুহাম্মদ (সা:)-কে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার বুরূজীভাবে প্রেরণ করে তাঁর উপর কুরআন শরীফ নাযিল করার প্রয়োজন দেখা দেয়।” (দেখুন ‘কালিমাতুল ফছল’ ষষ্ঠ অধ্যায় পৃষ্ঠা নং ৮৩)। “অতপর স্বীকার করতেই হবে যে, কুরআন শরীফ অশ্লীল গালি দিয়ে ভর্তি এবং কুরআন কঠোর ভাষার রাস্তা ব্যবহার করেছে।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন ৩/১১৫)।

“কুরআন আল্লাহ’র কেতাব এবং আমার মুখের কথা।” (দেখুন তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৭৭; হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ৬৮, আল ইস্তিফতা [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ১১০)।

[৭] রাসূল (সাঃ)-এর অবমাননাঃ

“রাসূল (সা:)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ২৬৩; সারমর্ম)।

মির্যার সম্পূর্ণ-বক্তব্যটি এরকম : ‘আর যেহেতু রাসূল (সা:) এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্ব হল, হিদায়াতের প্রচারকার্য সম্পূর্ণ করা। রাসূল (সা:) এর যুগে প্রচারকার্য চালানোর কোনো মিড়িয়া না থাকায় তা (সম্পূর্ণ করা) সম্ভব ছিলনা। তাই কুরআন শরীফের আয়াত “ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকূবিহিম” (সূরা জুম’আ ০৩) এর মধ্যে রাসূল (সা:) এর দ্বিতীয় আগমনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন এই জন্যই সৃষ্টি হয়েছে যে, যাতে রাসূল (সা:) এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্বটা অর্থাৎ দ্বীন ও হিদায়াতের প্রচারকার্যের পরিপূর্ণতা যা উনার (সা:) হাতেই সম্পূর্ণ হওয়ার ছিল, সেই সময় (রাসূলের যুগে) কোনো প্রচার মিড়িয়া না থাকায় তা সম্পূর্ণ হয়নি। অতএব রাসূল (সা:) তিনি তার বুরুজি রঙ্গে (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীর স্বরূপে) দ্বিতীয় আগমনের মাধ্যমে সেই আবশ্যিক দায়িত্বটা এমন যুগে সম্পূর্ণ করলেন যখন পৃথিবীর সমস্ত কওম পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছানোর জন্য মিড়িয়াগুলোর উদ্ভব হয়েছে।’ নাউযুবিল্লাহ।

“আমার আলামত (মুজিজা) দশ লক্ষ”। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ২১ পৃষ্ঠা ৭২)। ” রাসূল (সাঃ) এর মুজিজা (মাত্র) তিন হাজার।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৭ পৃষ্ঠা ১৫৩)। উল্লেখ্য, রূহানী খাযায়েন এর ২১ খন্ডের ৬৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে আলামত আর মুজিজা একই।

“এটা একদম সহীহ এবং বিশুদ্ধ কথা যে, প্রত্যেক ব্যক্তি উন্নতি লাভ করতে পারে। বড় থেকে বড় মর্যাদা অর্জন করতে পারে। হাত্তা কে মুহাম্মদ (সাঃ) চে বিহি বাড় ছেকতা হে। অর্থাৎ এমনকি মুহাম্মদ (সাঃ) থেকেও আগে বাড়তে পারবে।” (দেখুন, কাদিয়ানিদের পত্রিকা ‘আল ফদ্বল’ নং ৫, জিলদ ১০, তারিখ ১৭ জুলাই ১৯২২ ইং)। প্রিয়পাঠক! চিন্তা করে দেখুন, এর চেয়ে মারাত্মক নবী অবমাননা আর কী হতে পারে?

[৮] ঈসা (আঃ) এর অবমাননাঃ

(মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেঃ) “ইউরোপের লোকদের মদ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণ হল, (তাদের নবী) ঈসা মদ পান করত।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা ৭১)

“ঈসা (আঃ) মদ পান করত। হতে পারে অসুস্থতার কারণে কিংবা পুরনো অভ্যাসের কারণে।” নাউযুবিল্লাহ। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা ৭১)।

“স্মরণ থাকা দরকার যে, তাঁর (ঈসা)ও মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১১ পৃষ্ঠা ২৮৯)।

“ঈসা (আঃ)-এর অধিকাংশ ভবিষ্যৎবাণী পূরণ হয়নি।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ২২ পৃষ্ঠা ১৮৩)। উল্লেখ্য, মির্যা সাহেব লিখেছেন – যে ব্যক্তি আপনা দাবিতে মিথ্যাবাদী তার ভবিষ্যৎবাণী কখনো পূরণ হয়না। (দেখুন, আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম ৩২৩; রূহানী খাযায়েন খন্ড ৫)। একবার ভেবে দেখুন, মির্যা সাহেবের ছোড়া এই তীরটি কোন দিকে গেল!

“উনার (ঈসা) গালি দেয়ার এবং খারাপ ভাষা ব্যবহারের খুব বেশি অভ্যাস ছিল। সামান্য সামান্য ব্যাপারেই তিনি রেগে যেতেন”। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন খন্ড ১১ পৃষ্ঠা ২৮৯)।

“ঈসার তিন (৩) জন নানী আর দাদী ব্যভিচারিনী এবং দেহ ব্যবসায়ী ছিলেন। যাদের রক্তে ঈসার জন্ম।” নাউযুবিল্লাহ। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১১ পৃষ্ঠা ২৯১; দ্বমীমায়ে আঞ্জামে আথহাম)।

“কিন্তু সত্য কথা হল, ঈসার কোনো মুজিজা-ই ছিলনা।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ১১ পৃষ্ঠা ২৯০)।

“কেননা এই মাসীহ ইবনে মরিয়ম স্বীয় পিতা ইউসুফ নাজ্জারের সাথে বাইশ (২২) বছর পর্যন্ত কাঠ-মিস্ত্রির কাজ করেছিলেন”। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ২৫৪)। মির্যা কাদিয়ানী এই বাক্যে ঈসা (আঃ)-এর পিতা ছিল দাবী করেন! যা পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ৪৭ নং আয়াতের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

“আমরা ঈসা (আঃ) একজন মদ্যপ আর কাবাবি হওয়া যাকগে মেনে নিলাম, কিন্তু তিনি তো কখনো কখনো শুয়োরের গোস্তও খেয়েছিলেন।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন খন্ড ১২ পৃষ্ঠা ৩৭৩)।

“কুরআন শরীফে ঈসা (আ:) সম্পর্কে ‘হাছূর’ (নারীদের সংশ্রব হতে বিরত) শব্দ উল্লেখ হয়নি। তার কারণ তিনি মদ পান করতেন। অশ্লীল নারী আর সেবিকাগণ তাঁর মাথায় সুগন্ধি মেখে দিত এবং শরীর দাবিয়ে দিত।” (দেখুন, দাফেউল বালা, রূহানী খাযায়েন ১৮/২২০; সারমর্ম)। নাউযুবিল্লাহ।

[৯] হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর অবমাননাঃ

” অতএব এই উম্মতের ইউসুফ তথা এই অধম (মির্যা) বনী ইসরাইলী ইউসুফ (আঃ) অপেক্ষা (মর্যাদায়) এগিয়ে। কেননা এই অধম (মির্যা)’র দোয়াতে কারাবন্ধীর কারামুক্তি হয়েছে আর অপর দিকে ইউসুফ বিন ইয়াকুবকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছে।” (দেখুন, বারাহিনে আহমদিয়া, ৫ম খন্ড, রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ২১ পৃষ্ঠা ৯৯)।

[১০] হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর অবমাননাঃ

”দেখ এটা কত যে আপত্তিকর! মরিয়মকে মন্দিরের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল। ফলে সে বায়তুল মুকাদ্দাসের জন্য আজীবনের সেবক হয়ে থাকল। জীবনভর বিয়েও করলেন না। কিন্তু যখন তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়লেন তখন নিজ সম্প্রদায়ের মুরুব্বীগণ ইউসুফ নাজ্জার নামক একজনের সাথে তাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। তিনি (স্বামীর) ঘরে যাওয়ার এক বা দুই মাসের ভেতরই একটি সন্তান হয়ে গেল। সেই সন্তানটিই ঈসা বা ইসোয়া।” (দেখুন, চশমায়ে মাসীহ, রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ২০ পৃষ্ঠা নং ৩৫৫-৫৬)।

[১১] পবিত্র হাদীসের অবমাননাঃ

“সমর্থনের জন্য আমরা ওই সব হাদীসও উল্লেখ করি যা কুরআন মোতাবেক এবং আমার ওহীর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এ ছাড়া অন্য সব হাদীসকে ডাস্টবিনের ময়লার মত আমরা নিক্ষেপ করি।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৯ পৃষ্ঠা ১৪০)।

[১২] মক্কা মদীনার অবমাননাঃ

“ছায়া হজ্জ (কাদিয়ানের জলসা) ব্যতীত মক্কার হজ্জ রসহীন।” (দেখুন পয়গামে সুলহ ১৯ এপ্রিল ১৯৩৩ ইং)।

“এই সরকারের (ব্রিটিশ সরকার) অধীনে যে নিরাপত্তা পাচ্ছি তা মক্কা মদীনাতেও পাওয়া সম্ভব নয়।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৫ পৃষ্ঠা ১৫৬)।

[১৩] ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য ইসলামের অংশঃ

“আমি বরাবরই আমার মত প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দুইটি অংশ। প্রথমত আল্লাহর আনুগত্য করবে। দ্বিতীয়ত এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করবে যে নিরাপত্তা দিয়েছে। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৬ পৃষ্ঠা ৩৮০)।

অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা সাহেব নিজেকে ব্রিটিশের লাগানো চারাগাছ পরিচিত হতে পছন্দ করতেন। (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাতঃ খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা ২১)।

[১৪] জিহাদের অবমাননাঃ

“আমি বিশ্বাস রাখি যে, আমার মুরিদ (অনুসারী) যেই হারে বাড়ছে সেই হারে জিহাদের উপর বিশ্বাসীর সংখ্যাও কমছে। কেননা, আমাকে মাসীহ মওঊদ এবং ইমাম মাহদী মেনে নেয়াই ‘জিহাদ’ অস্বীকার করা।” (দেখুন, মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ১৯)।

[১৫] নবুওত দাবীদারের উপর মির্যা কর্তৃক অভিশাপ অতপর নিজেই নবুওত দাবী করেনঃ

“এটা একদম সুস্পষ্ট যে, আমরাও নবুওত দাবিদারের উপর অভিশাপ করে থাকি।” (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাতঃ খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা ২৯৭-৯৮)।

“আমি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এর পর অন্য যে কোনো নবুওত এবং রেসালত দাবিদারকে মিথ্যাবাদী এবং কাফের মনে করি।” (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত খন্ড ১ পৃষ্ঠা ২৩০)।

মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত

“আমার দাবী, আমি একজন নবী ও রাসূল।” (দেখুন মালফুযাত [নতুন এডিশন] খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা ৪৪৭)।

মালফুযাত

“সত্য খোদা তো সেই খোদা যিনি কাদিয়ানে আপনা রাসূল প্রেরণ করেছেন।” (দেখুন দাফেউল বালা [বাংলা অনূদিত] পৃষ্ঠা নং ১২, রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৮ পৃষ্ঠা নং ২৩১)। উল্লেখ্য মির্যা সাহেব নিজেই নিজের ফতুয়াতে অভিশপ্ত, মিথ্যাবাদী এবং কাফের সাব্যস্ত হলেন।

দাফেউল বালা

[১৬] ঈসা (আঃ)-কে জীবিত ও সশরীরে আকাশে বিশ্বাসকরা শিরক কিন্তু মূসা (আঃ)-কে জীবিত ও আকাশে বিশ্বাসকরা ফরজঃ

(ক) “এ কথা বলা যে, ঈসা (আঃ) মারা যাননি, এটি সুস্পষ্ট শিরিকি কথা।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড ২২ পৃষ্ঠা ২৬০)।

(খ) “ইনি সেই মূসা মর্দে খোদা। পবিত্র কুরআনে যার হায়াতের প্রতি ইংগিত রয়েছে যে, তিনি আকাশে (সশরীরে) জীবিত বিদ্যমান এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেননি; তিনি মৃতদের অন্তর্ভুক্তও নন – এসবে ঈমান রাখা আমাদের উপর ফরজ।” (দেখুন, নূরুল হক ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ৫০; রূহানী খাযায়েন খন্ড ৮ পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯)।

প্রিয় সচেতন দেশবাসী ভাই ও বোনেরা! এই তো অতি সামান্য। আরো বহু আপত্তিকর উক্তির প্রমাণ আছে। কিন্তু তার অনুসারী আহমদী বা কাদিয়ানিরা মির্যার বইগুলো পড়ার যোগ্যতা রাখেনা বলেই আজ তাদের নিকট এই উদ্ধৃতিগুলো মিথ্যা এবং বানোয়াট মনে হওয়াই স্বাভাবিক।

পরিশেষঃ দীর্ঘ আলোচনা শেষে আমি প্রমাণ করলাম যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং তার অনুসারী আহমদিয়া (কাদিয়ানী) জামাত পবিত্র ইসলামধর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে বাহিরে। এই সম্প্রদায়টি মূলত ব্রিটিশ সাম্রাবাদের-ই লাগানো চারাগাছ। ভারতবর্ষের ইতিহাস তারই সুস্পষ্ট প্রমাণবহন করছে। তাই আমাদের সবার একটাই দাবী, তা হল পাকিস্তান গভমেন্ট ১৯৭৪ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর সংবিধানের ২৬০ দফা অনুচ্ছেদের যেই ধারায় কাদিয়ানিদের ইসলাম বহির্ভূত “অমুসলিম সংখ্যালঘু” স্বতন্ত্র একটি ধর্মের অনুসারী ঘোষণা দিয়েছিল সেই একই ধারায় এদেশেও তাদের “অমুসলিম সংখ্যালঘু” ঘোষণা দেয়া হোক।

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লিখার লিংক :

  • ১. মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীর ১৫টি রেফারেন্স Click

লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

যেকোনো একটা মাযহাবের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার যৌক্তিকতা

যেকোনো একটা মাযহাবের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে :

পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলিম মুফতি তারিক মাসউদ একটি চমৎকার ঘটনা বলেছেন। তিনি তাঁর লম্বা বয়ানের এক স্থানে বলেছেন :

তারেক মাসউদ হাফিঃ

“এক লোক স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে আমার কাছে এসে জানতে চাইল, -‘মুফতি সাহেব, স্ত্রীকে একত্রে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক হয়?’

আমি বললাম, ‘জ্বি, হয়ে যায়।’

-‘কিন্তু, সৌদি আরবের বড় আলেম বিন বায রহ. তো বলেছেন, ‘হয় না’। তিনি তো কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই বলেছেন।’

-‘আপনি সাহাবীদের আমল, আইম্মায়ে আরবা’আর সর্বসম্মত মত ও ইজমার সাথে শাইখ বিন বায রহ.-এর মতের তুলনা করছেন! তিনি অবশ্যই বড় আলেম ছিলেন; তবে এক্ষেত্রে তিনি বিচ্ছিন্ন অভিমত দিয়েছেন। এমন বিচ্ছিন্ন অভিমত অনুসরণীয় নয়।’

-‘না. না… না… তিনি তো কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই ফাতওয়া দিয়েছেন। আমি শুধু কুরআন-সুন্নাহ মানি।’

-‘ঠিক আছে। আপনি যদি বিন বায রহ. এর এই বিচ্ছিন্ন ফতোয়া মানেন তাহলে শায়খের আরেকটা ফাতওয়া আছে। ওটাও মানুন। শাখ বিন বায রহ. বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় এক ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সে কাফির-মুরতাদ হয়ে যায়। স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে যায়।’ এটাও মানবেন আশা করি।’

‘না, না। এটা ঠিক না…।’

তখন আমি বললাম, ‘আপনি মাঝে মাঝে নামায ছেড়ে দেন। শায়খ বিন বায রহ. এর ওই ফতোয়া মানলে তো পৃথিবীর কোনো নারীর সাথেই আপনার বিয়ে টিকবে না। কাজেই কারো কথা এক মাসআলায় মানবেন, অন্য মাসআলায় মানবেন না। এর নাম ইসলাম নয়।”

সংগ্রহীত

কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:) এর মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?

কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:) এর মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?

এই যে দেখতে পাচ্ছেন এটা কি জানেন? এটি বিখ্যাত যুগ ইমাম ও মুফাসসির বরেণ্য মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ:)-এর সংকলিত ‘তাফসীর’ তাফসীরে জালালাইন এর একটি পৃষ্ঠা (অনলাইন ভার্সন)।

তাফসীরে জালালাইন (আল কুরআন /১৯:৫৭)।

যাইহোক, আজ হযরত ইদ্রিস (আ:) সম্পর্কে কিছু লিখব। কেননা সূরা মরিয়ম আয়াত নং ৫৭ এর ‘রাফা‘ শব্দ নিয়েও কাদিয়ানীরা দুরভিসন্ধিমূলক কতেক ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়ে যায়। আজ অতিব সংক্ষেপে সেটির খন্ডন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রথমেই ইদ্রিস (আ:)-এর অন্যতম কতেক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিত হলো আল্লাহর তরফ থেকে আসা ঐশী বাণী যা হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম বিকাশ ঘটে। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম ব্যক্তি আল্লাহ যাঁকে ‘ওয়া রাফা’নাহু মাকা-নান আলিয়্যা’ বলে আকাশে স্বশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়ার কথা পবিত্র কুরআনে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি ছাড়াও পরবর্তীতে আল্লাহতালা যথাক্রমে হযরত ঈসা (আ:)-কে ক্রুশীয় ঘটনাকালে এবং শেষনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মেরাজের ঘটনাকালে স্বশরীরে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।

হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর আলোচনা আসলেই গণিতবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যার প্রসঙ্গ অটোমেটিকেলি সামনে চলে আসে। যদিও বা উক্ত শিক্ষাদুটিকে আজকাল কেউ কেউ অবজ্ঞা করেন। এসব আসলে তাদের অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। আপনারা হয়তো অনেকেই হযরত ইদ্রিস (আ:) এর নাম পর্যন্ত শোনেননি বা চিনেন না জানেন না। তাই গণিতের জন্মকথা বলার আগে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের কিছুটা তুলে ধরছি।

সূরা মরিয়মে উল্লেখ করা হয়েছে : “এই গ্রন্থে উল্লেখিত ইদ্রিসের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, সে ছিল সত্যবাদী নবী। আমি তাঁকে সুউচ্চে তুলে নিয়েছি।” এই আয়াতের তাফসীর থেকে জানা যায়, এখানে ইদ্রিস (আ:)-এর কথা বর্ণনা করা হয়েছে; তিনি ছিলেন একজন সত্যনবী এবং আল্লাহ তাআলার একজন বিশিষ্ট বান্দা। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুউচ্চে তুলে নিয়েছেন।

হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত আছে, মেরাজ গমনকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের সাথে হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর সাক্ষাত ঘটেছিল। এ নিয়ে ইমাম ইবনে জারীর (রহ:) একটি অতি বিস্ময়কর হাদীস তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস (রা:) কা’আব ( রা:)-কে “ওয়া রাফা’নাহু মাকা-নান আলিয়্যা” (وَّ رَفَعۡنٰہُ مَکَانًا عَلِیًّا)- আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন: “আল্লাহ তা’আলা হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে ওহী করেন – ‘আদম সন্তানের আমলের সমান তোমার একার আমল আমি প্রতিদিন উঠিয়ে থাকি। কাজেই আমি পছন্দ করি যে, তোমার আমল বৃদ্ধি পাক।’ অতঃপর তাঁর নিকট একজন বন্ধু ফেরেশতা আগমন করলে তিনি তাঁর কাছে বলেন – ‘আমার নিকট ওহী এসেছে; অতএব আপনি মৃত্যুর ফেরেশতাকে বলে দিন তিনি যেন একটু দেরি করে আমার জান কবজ করেন, যাতে আমার আমল বৃদ্ধি পায়।” তারপর ওই বন্ধু ফেরেশতা তখন তাঁকে নিজের পালকের উপর বসিয়ে নিয়ে আকাশে উঠে যান এবং চতুর্থ আসমানে গিয়ে মালাকুল মাউত অর্থাৎ হযরত আজরাইল ফেরেশতার সাক্ষাত পান। ওই ফেরেশতা মালাকুল মাউত ফেরেশতাকে হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর ব্যাপারে সুপারিশ করলে মৃত্যুর ফেরেশতা বন্ধু ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করেন, “তিনি কোথায় আছেন?” উত্তরে বন্ধু ফেরেশতা বলেন, “এই তো তিনি আমার পালকের উপর বসে আছেন।”

মৃত্যুর ফেরেশতা তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “সুবহানাল্লাহ! আমাকে এখনই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন ইদ্রিস (আ:)-এর রূহ চতুর্থ আসমান থেকে কবজ করি। কিন্তু আমি চিন্তা করছিলাম – ইদ্রিস (আ:) তো আছেন জমিনে, চতুর্থ আসমান থেকে তাঁর রূহ কবজ করবো কিভাবে?” অতঃপর তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর রূহ কবজ করে নেন।

উক্ত রেওয়ায়েতটিই অন্য এক সনদে এভাবে এসেছে – হযরত ইদ্রিস (আ:) বন্ধু ফেরেশতার মাধ্যমে মালাকুল মাউত ফেরেশতাকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, “আমার হায়াত আর কত দিন বাকী আছে?” অন্য আরেক হাদীসে আছে তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে মালাকুল মাউত বলেছিলেন, “আমি লক্ষ্য করছি, চক্ষুর একটা পলক ফেলার সময় মাত্র বাকী আছে।” বন্ধু ফেরেশতা তাঁর পলকের নিচে তৎক্ষণাৎ তাকিয়ে দেখেন, হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর জান এরই মধ্যে কবজ করা হয়ে গেছে।

হযরত মুজাহিদ (রহ:) বলেন – হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, তিনি [জমিনে] মৃত্যুবরণ করেননি, বরং তাঁকে হযরত ঈসা (আ:)-এর মতো জীবিত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আউফী (রহ:)-এর রেওয়ায়েতের মাধ্যমে ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত আছে – হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে ষষ্ঠ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, আর সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী এবং ইবনে কাসীর এই দু’জনের মতামত কী?

ইমাম সুয়ুতি (রহ:) এর মতও পবিত্র কুরআনের (১৯:৫৭) অনুসারে হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে চতুর্থ আকাশে স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়ার কথাই বুঝানো উদ্দেশ্য। তবে কারো কারো মতে, ষষ্ঠ বা সপ্তম আকাশে উঠিয়ে নেয়ার কথাও এসেছে। আল্লাহতায়ালা তাকে সেখানেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন অতপর তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) হতেও অনুরূপ মত রয়েছে। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) লিখেছেন : (আল কুরআন /১৯:৫৭) ‘আমরা তাঁকে উন্নীত করেছিলাম সুউচ্চ স্থানে অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ইদ্রিস আলাইহিস সালামকে সুউচ্চ স্থানে উঠিয়ে নিয়েছেন এর উদ্দেশ্য এই যে, তাঁকে উচ্চ স্থান তথা আকাশে অবস্থান করার ব্যবস্থা করেছেন (তাফসীরে ইবন কাসীর)। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন আমাকে আকাশে উঠানো হয়েছিল মেরাজের রাত্ৰিতে আমি ইদ্রিসকে চতুর্থ আসমানে দেখেছি।” (তিরমিয়ী : ৩১৫৭)। তবে ইবনে কাসীর (রহ:) এই সম্পর্কে বলেছেন : এটা কা’আব আল-আহবারের ইসরাঈলী বৰ্ণনাগুলোর অন্যতম। সম্ভবত এইজন্যই কেউ কেউ আয়াতটির ‘স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়া’র ভিন্ন অর্থ—তাঁকে উঁচু স্থান জান্নাতে দেয়া হয়েছে অথবা তাঁকে নবুওয়ত ও রিসালাত দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে, উদ্দেশ্য নিয়েছেন। যাইহোক, উদ্দেশ্য যে কোনোটাই হতে পারে। তবে আকাশে স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়ার পক্ষেই ক্বারীনা বা ইংগিত শক্তিশালী। কেননা আয়াতের ‘রাফা’ এমন একটি সকর্মক ক্রিয়াপদ যার ‘কর্ম‘ বা Object (ه/ادريس) সত্তাবাচক। যেজন্য তাফসীরকারকদের বেশিরভাগই মনে করেন যে, এখানে রাফা শব্দটি রূপক কোনো অর্থকে (মর্যাদা উন্নীত করা বা নবুওয়ত ও রিসালত দ্বারা সম্মান বৃদ্ধি করা) বুঝাবেনা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী