Home Blog Page 28

ইমাম মাহদী এবং নবী দাবীদার সালেহ বিন তারিফ সম্পর্কে

কে এই সালেহ বিন তারিফ? যিনি শুধু ইমাম মাহদী হবার দাবী করেননি, বরং নিজেকে “নবী”ও দাবী করেছিলেন! ৭৪৪ সালে “নবী” দাবীকারী এই লোকটি ৭৯১ সাল পর্যন্ত বারঘৌতা বারবার (Barghawata মরক্কো কেন্দ্রিক একটি রাজ্য) এর শাসক-ও ছিলেন! আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এই মিথ্যা ইমাম মাহদী আপনা দাবীর উপর প্রায় ৪৭ বছর স্থায়ী ছিলেন!

বিস্তারিত ইতিহাস :

সালিহ ইবনে তারিফ (صالح بن طريف) এর পিতার নাম ছিল তারিফ ইবনে মালেক। তিনি ছিলেন ‘বারঘৌতা বারবার’ (বর্তমান মরক্কোর একটি প্রসিদ্ধ এলাকা) রাজ্যের নেতা ও প্রথম রাজা। তার মৃত্যুর পর পুত্র সালেহ ইবনে তারিফ দ্বিতীয় রাজা হিসেবে নির্বাচিত হন। তার জন্ম – ১১০ হিজরী মুতাবেক ৭২৮ খ্রিস্টাব্দে। তিনি নিজেকে “সালেহুল মুমিনীন” নামক নতুন একধর্মের ‘নবী’ বলে ঘোষণা দেন। ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খলীফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকের খিলাফতকালে তিনি ‘নবী‘ দাবী করেন। Click তিনি নবী দাবীর উপর প্রায় ৪৭ বছর সময় অতিবাহিত করে রাজ্য ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তিনি নিরুদ্দেশ হওয়ার পূর্বে নিজ পুত্র ইলিয়াস বিন সালেহকে (৭৯২-৮৪২) তার ধর্মের উপর অবিচল থাকতে বলেন। ২২৪ হিজরীতে পুত্রের মৃত্যুর পর পৌত্র ইউনুস ইবনে ইলিয়াস (৮৪২-৮৮৮) এই ধর্মের সেবা করেন এবং যারা সালেহ এর ধর্ম গ্রহণ করত না তিনি তাদেরকে হত্যাও করতেন। তারপর রাজত্ব করেন আবু গুফাইল মুহাম্মদ (৮৮৮-৯১৭)। ইবনু খালদুনের সূত্রমতে ইনিও নবী দাবী করেছিলেন। তারপর আবু আল আনসার আব্দুল্লাহ (৯১৭-৯৬১)। তারপর ২২ বছর বয়সে রাজ্যের শাসক হন আবু মনসুর ঈসা (৯৬১-?)। রাজ্যের প্রশাসনিক অবস্থা আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। অত:পর ৪৫১ হিজরীতে (আনুমানিক ১০৬৮ সালে) আলমুরাবিত রাজ-বংশের মুসলিম বীর সিপাহসালার ইউসুফ ইবনে তাসফিন (রাজত্বকাল ১০৬১-১১০৬ খ্রি.) বারঘৌতা বারবার রাজ্যকে যুদ্ধের মাধ্যমে জয় করে নেন এবং উক্ত ধর্মের বিলুপ্তি ঘটান। পরবর্তীতে সালেহ ইবনে তারিফ এর প্রতিষ্ঠিত পুরো সাম্রাজ্য ইসলামের মূলধারার অনুসারী ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত’-এর অধিভুক্ত হয়। এই ভিডিওটি শুনুন

সালেহ বিন তারিফ পবিত্র কুরআন থেকে নিজের পক্ষে দলিল প্রমাণও পেশ করেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাহরীম-এর অন্যতম আয়াত وَإِن تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلاَهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلاَئِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ হতে তিনি তার ধর্মের নামকরণ করেন صَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ বা সালেহুল মুমিনীন।

মজার ব্যাপার হল, সালেহ ইবনে তারিফ একজন ইমাম মাহদী দাবীদারও ছিলেন। তিনি যেই বছর ইমাম মাহদী দাবী করেন তার পরের বছর অর্থাৎ ১২৬ হিজরীতেই একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের ঘটনাও ঘটেছিল এবং তিনি রাজ্য শাসন করেছেন ১৭৪ হিজরী পর্যন্ত। এ সময়ে (অর্থাৎ ১২৫-১৭৪ হিজরী) একই রমাযান মাসে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ সংঘটিত হয়েছে চার বার। যথাক্রমে ১২৬ হিজরীতে (৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে), ১২৭ হিজরীতে (৭৪৫ খ্রিস্টাব্দে), ১৭০ হিজরীতে (৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে) এবং ১৭১ হিজরীতে (৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে)। এ সম্পর্কে দেখা যেতে পারে, কাদিয়ানীদের ‘পাক্ষিক আহমদী‘ পৃ-২৫, তাং ১৫ই এপ্রিল ২০১৫ইং।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের সূত্র অনুসারে, তিনি ৮০টি সূরা সহ আল্লাহর কাছ থেকে একটি নতুন কিতাব পেয়েছেন বলে দাবি করেন, যার মধ্যে কোনো কোনোটির নাম নবীগণের নামেও রয়েছে। যেমন, প্রথম সূরার নাম ছিল সূরা আইয়ুব আর শেষ সূরার নাম ছিল সূরা ইউনুস। এছাড়া সূরা নূহ, সূরা ইবলিশ নামেও ছিল। অন্যান্য বহু জিনিসের নামেও সূরার নামকরণ ছিল। যেমন হাঁস, উট, হাতি, হারুত, মারুত, কারূন, হামান, ইয়াজুজ, মাজুজ, দাজ্জাল, তালূত, নমরুদ ও গারায়িবুদ দুনিয়া ইত্যাদি। তার অনুসারীরা তাদের প্রার্থনায় এই সূরা (অধ্যায়) গুলো পড়তো। তিনি তার অনুসারীদের জন্য শরীয়ত (আইন)ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদেরকে “সালেহুল মুমিনীন” (অর্থাৎ বিশ্বাসীদের সংশোধনকারী) নামে ডাকা হত। তার দাবিকৃত তথাকথিত ওহীগুলো ‘বারবার’ নামীয় ভাষায় লিখিত ছিল আর সে এগুলোকে ৮০টি সূরা বিশিষ্ট নতুন একটি কোরআন নাম দিয়ে প্রচার করেছিল। (কিতাবুল ই’বর [العبر وديوان المبتدأ والخبر] লি ইবনি খালদূন দ্রষ্টব্য)। উল্লেখ্য, “বারবার (ইংরেজি : Berber)” একটি হাজার বছরের পুরনো ভাষা যেটি দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া এবং মালি রাষ্ট্রসমূহে এখনো প্রচলিত। সূত্র (Click)। সালেহ বিন তারিফের ঘোষণা মতে, তার পরে আর কাউকে নবী বানানো হবে না অর্থাৎ সে নিজেই একজন শেষনবী।

‘বার্ঘৌতা বারবার’ রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা সালেহ ইবনে তারিফ নিজেকে ইমাম মাহদী বলেও দাবী করেন এবং প্রচার করতে থাকেন যে, হযরত ঈসা (আ.) তাঁর সঙ্গী হবেন এবং তাঁর পিছনে সালাত আদায় করবেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, আরবী ভাষায় তার নাম ‘সালেহ’, সিরিয়াক ভাষায় ‘মালিক’, পার্সিয়ান ভাষায় ‘আলিম’, হিব্রু ভাষায় ‘রুবিয়া’ এবং বারবার ভাষায় ‘ওয়ারবা’ তথা শেষনবী। সালেহ বিন তারিফ নবুওয়ত দাবীর ৪৭ বছরে পৌঁছার পর বার্ঘৌতা বারবার রাজ্য ছেড়ে পূর্ব আফ্রিকার দিকে কোথাও আত্মগোপনে চলে যান এবং তার উত্তরাধিকারীদের সপ্তম রাজার রাজত্বে পুনরায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি তার ছেলে ইলিয়াসকে আন্দালুসের উমাইয়া শাসকদের সমর্থন করতে এবং নিজেদেরকে প্রকাশ্যে ইসলামের পক্ষের শক্তি বলে দাবী করতে বলে যান। তিনি আরো বলে যান যে, যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠলে তখনি যেন তার ‘সালেহুল মুমিনীন’ ধর্ম প্রকাশ্যে প্রচার করেন। ইতিহাস সাক্ষী যে, তার পৌত্র ইউনুস ইবনে ইলিয়াস পিতামহের ওসীয়তটি আমলে নেন। অর্থাৎ শক্তিশালী হওয়ার পরই তিনি উক্ত ধর্ম প্রচারের কাজ প্রকাশ্যে আঞ্জাম দিতে থাকেন।

কিছু সূত্র অনুসারে, সালিহ ইবনে তারিফ নিজেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরসূরী বলে মনে করতেন। সালেহ ইবনে তারিফের ১০ জন শিষ্য এবং অনেক স্ত্রী ছিল। ঐতিহাসিক ইবনে খালদূন লিখেছেন, সালেহ ইবনে তারিফ একজন আন্দুলুসীয় ইহুদীবংশীয় ছিলেন। তিনি উবায়দুল্লাহ মু’তাজিলির কাছ থেকে জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর দক্ষতা অর্জন করেন এবং যাদু বিদ্যায় পারদর্শীও ছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষদের এগুলোর মাধ্যমে সহজেই নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। তিনি মৃতদের সাথে কথা বলতে এবং অসুস্থদের সুস্থ করতে সক্ষম বলেও দাবি করতেন।

  • ইসলামের সাথে বৈপরীত্যের অন্যান্য নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে চুরির জন্য মৃত্যুদণ্ড, একজন পুরুষের সীমাহীন সংখ্যক স্ত্রী রাখার অনুমতি, রমাযানের পরিবর্তে রজব মাসে রোজার প্রচলন করা, ১০ই জিলহজ্জ মাসের পরিবর্তে ২১শে মহররমে কুরবানির প্রচলন করা। পাঁচ ওয়াক্তের পরিবর্তে দৈনিক দশ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের প্রচলন করা, সম্পূর্ণ নামায ইশারায় পড়া তবে শেষ রাকাতে একত্রে শুধু ৫টি সেজদা দেয়া। অজু, নামাজের নিয়মে পরিবর্তন এবং চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং জানাবতের গোসল মওকুফ ইত্যাদি। সালেহ বিন তারিফের উক্ত ধর্মের বিশদ বিবরণ অনেক আরবীয় সূত্রেও উল্লেখ রয়েছে। তাদের মধ্যে ঐতিহাসিক ইবনে হাজম, ইবনে খালদুন, ইবনে আছীর প্রমুখ অন্যতম।

ইসলামী সাহিত্যে সালেহ ইবনে তারিফের মতবাদ ও বিশ্বাসকে কুফুরী বলে মনে করা হয়। তবে আধুনিক কিছু ‘বারবার’ কর্মী সালেহ বিন তারিফকে উমাইয়াদের বিজয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং বারঘৌতা রাজ্যের ভিত্তি স্থাপনের জন্য একজন নায়ক হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। বলাবাহুল্য, সালেহ ইবনে তারিফ কর্তৃক প্রবর্তিত ও প্রচারিত ধর্মটি প্রায় সাড়ে তিন’শ (৩৫০) বছর পর্যন্ত আফ্রিকায় খুব দাপটের সাথে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু ১০ম শতকের শেষের দিকে আলমুরাবিত রাজ-বংশের মুসলিম বীর সিপাহসালার মুসলিম সেনাপতি ইউসুফ বিন তাসফিন এর নেতৃত্বে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে সালেহ বিন তারিফের উক্ত রাজত্বসহ তার মিথ্যা ধর্ম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এবং অল্প বছর কতেকের মধ্যেই মিথ্যাধর্মটির বিলুপ্তি ঘটতে শুরু করে।

আলমুরাবিত ছিল মরক্কো কেন্দ্রিক একটি ‘বারবার’ ভাষীয় সুন্নী মুসলিম রাজবংশ। মুসলিম সেনাপতি ইউসুফ বিন তাসফিন (মৃত. ১১০৬) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আলমুরাবিতের রাজধানী ছিল (মরক্কোর একটি বিখ্যাত শহর) মারাকেশ। তিনি ছিলেন আমীর আবুবকর ইবনে উমরের অধীনস্থ একজন মুসলিম সেনাপতি। ‘মারাকেশ’ এমন একটি শহর যেটি আমীর আবু বকরের হাত ধরে প্রায় ১০৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজবংশটি উদ্ভব হয়েছিল লামতুনা, গুদালা, পশ্চিম সাহারার যাযাবর বারবার উপজাতি, ড্রা এবং নাইজারের মধ্যবর্তী অঞ্চল জুড়ে ও সেনেগাল নদীর পাশে। উল্লেখ্য, আমীর আবু বকর ইবনে উমর (মৃত. ১০৮৭ইং) ছিলেন সেনাপতি ইউসুফ ইবনে তাসফিন এর চাচাত ভাই। তিনি ‘লামতুনা’ গোত্রের একজন স্বাভাবিক নেতা ও ইবনে ইয়াসিনের অন্যতম শিষ্য, যিনি ইসলামী বিচার বিভাগের মালেকি ফিকহের অনুসারী হিসেবে বিচারালয়ের কাজ করতেন। তিনি তার ভাই ইয়াহিয়া ইবনে উমর আল-লামতুনির মৃত্যুর পর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন। তার ভাই ছিলেন ইবনে ইয়াসিনের সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক। কিন্তু তিনি ১০৫৬ সালে গোদালা উপজাতিদের বিরুদ্ধে তাবফারিলার যুদ্ধে নিহত হওয়ার তিন বছর পর ইবনে ইয়াসিনও বারঘাওয়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হন।

সূত্র : অনলাইন (উইকিপিডিয়া, আরবী ও ইংরেজি সহ বিভিন্ন এ্যারাবিক ব্লগ এবং বেশ কিছু আরবী ইউটিউব চ্যানেল)।
ভাষান্তর – লিখক ও শিক্ষাবিদ
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ
এডমিন www.markajomar.org

কুইজের ৪০টি প্রশ্নের উত্তরমালা সহ

0

৪০টি প্রশ্নের উত্তরমালা সহ খতমে নবুওয়ত ইসলামিক কুইজ প্রতিযোগিতা-২০২১ইং

সম্পূর্ণ ফরম্যাটটির পিডিএফ এর জন্য এখানে নক করুন Cilck আর কপি করতে ক্লিক করুন এখানে।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইসলাম এবং কাদিয়ানীধর্মমত এই দুইয়ের মাঝে মৌলিক কিছু পার্থক্য জেনে রাখা দরকার

কাদিয়ানীদের এক ডজনেরও বেশি বই থেকে মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবীর প্রমাণ দেখুন

প্রশ্নকর্তা : কাদিয়ানীরা কাফের কেন? এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ জানাবেন!

উত্তরদাতা : প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলছি শুনুন! তাদের কাফের হওয়ার অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হল,

(এক) কাদিয়ানীরা এমন একব্যক্তির অনুসারী যে নবুওয়তের দাবীদারও (এক গলতি কা ইযালা [বাংলা অনূদিত] পৃষ্ঠা নং ৩,৫,৮,১০ দ্রষ্টব্য) । ফলে তারা পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতসহ বহু আয়াত এবং অসংখ্য তাওয়াতূর পর্যায়ের হাদীসেরই অস্বীকারকারী। বিস্তারিত ডকুমেন্টস সহ জানতে ভিজিট করুন- Click

(দুই) পবিত্র কুরআনের যে আয়াতটির অপব্যাখ্যা করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে দ্বিতীয় মুহাম্মদ বলে দাবী করেছিল এবং পৃথিবীতে মুহাম্মদ (সা.) কেয়ামতের আগে শেষ যুগে দ্বিতীয়বার আগমন করবেন বলে নতুন যে কনসেপ্ট দিয়েছিল তার কারণেও এ মানুষটি কাফের এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ হয়ে যায়।

মির্যা কাদিয়ানীর অপব্যাখ্যামূলক সম্পূর্ণ বিশ্লেষণটির খন্ডনমূলক উত্তর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) এর রচিত “ফাতহুল বারী” (فتح الباري فى شرح الصحيح البخارى) থেকে আমি অপর একটি লিখাতে তুলে ধরেছি। পড়তে ক্লিক (ওয়েবসাইট) করুন।

(তিন) কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই জানে না যে, তাদের মির্যা কাদিয়ানীর বইতে কী ধরণের ধর্মবিশ্বাস লিপিবদ্ধ আছে! মির্যা কাদিয়ানীর রচনার একস্থানে ঈসা (আ:)-এর দাদী ছিল বলে লিখা আছে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১১/২৯১)। অথচ তার এই কনসেপ্ট পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ৪৭ নং আয়াতের সুস্পষ্ট বিরোধী। কারণ যার দাদী থাকবে তার পিতা থাকাও সাব্যস্ত হবে। অথচ ঈসা (আ.) পিতা ছাড়াই আল্লাহর নিদর্শন স্বরূপ কুমারী মাতা বিবি মরিয়মের উদরে জন্মলাভ করেছিলেন। স্ক্রিনশট এই যে,

(চার) কাদিয়ানীরা হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে তাঁর স্বশরীরে জীবিত আকাশে উত্থিত হওয়া এবং কেয়ামতের পূর্বে তাঁর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসা মর্মে বিশ্বাস করেনা। ফলে তারা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১৫৮-৫৯, সূরা আলে ইমরানের ৪৬ নং আয়াতের সুস্পষ্ট ইংগিতসহ অসংখ্য তাওয়াতূর পর্যায়ের হাদীস অস্বীকারকারী। একাধিক সহীহ হাদীসের মধ্য হতে এখানে শুধুমাত্র একটি সহীহ হাদীস উল্লেখ করছি যেখানে পরিষ্কার করে ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন বলেই উল্লেখ আছে। স্ক্রিনশট এই যে,

মুসনাদে বাজ্জার হাদীস নং ৯৬৪২, (ঈসা ইবনে মরিয়ম আ. আকাশ থেকে নাযিল হবেন)।

(পাঁচ) মির্যা কাদিয়ানী তার রচনাবলীর জায়গায় জায়গায় হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে অকথ্য ও অবমাননাকর মন্তব্য করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে তার কাফের হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কাদিয়ানী সম্প্রদায় এমন ব্যক্তির অনুসারী হওয়ায় তারাও একই ঝাঁকের কৈ হিসেবে পরিগণিত। যেমন তার বইতে লিখা আছে,

“সীমাহীন লজ্জার কথা হল এই যে, তিনি (ঈসা) পাহাড়ি শিক্ষাকে যাকে ইঞ্জিলের নির্যাস বলে (তিনি) ইহুদীদের ‘তালমূদ’ গ্রন্থ থেকে চুরি করে লিখেছেন এবং তিনি (তা) এমনভাবে প্রকাশ করলেন যেন এটি তাঁর নিজেরই শিক্ষা! কিন্তু যখন এই চুরি ধরা পড়ল তখন ঈসায়ীরা খুবই লজ্জিত হল। তিনি (ঈসা) এই কাজ হয়ত এইজন্যই করলেন যে, যাতে তিনি উত্তম কোনো শিক্ষা-দীক্ষার নমুনা প্রদর্শন করে কৃতিত্ব হাসিল করতে পারেন! কিন্তু উনার এই অনর্থক কার্যকলাপের দরুন ঈসায়ীদের চরম অসম্মানী হয়।” (রূহানী খাযায়েন ১১/২৯০)। স্ক্রিনশট এই,

(ছয়) হযরত ঈসা (আ.)-এর অসংখ্য মুজিজা অস্বীকার করাও তাদের কাফের হওয়ার কারণ। কেননা এটি বিশেষত সূরা মায়েদার ১১০ নং আয়াতের সুস্পষ্ট বিরোধিতার শামিল। তাদের মিশনারীদের সাথে যারা উন্মুক্ত আলোচনা করেছেন তারা অবশ্যই এর প্রমাণ পেয়ে থাকবেন। এইজন্য কাদিয়ানীদের প্রকাশনা হতে তাদের অনূদিত কুরআনের কপি হতে (সূরা মায়েদা ১১০ [তাদের হিসেবে ১১১] নং আয়াতের বিশ্লেষণ) দেখুন। মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে প্রমাণ এই যে,

(সাত) মির্যা কাদিয়ানীর বইয়ের অন্য আরেক জায়গায় ঈসা (আ.) সম্পর্কে লিখা আছে, ‘তাঁর এইরকম আচার-আচরণ দ্বারা নিজ সহোদর ভাইও তাঁঁর (ঈসা) প্রতি ভীষণ অসন্তুষ্ট ছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল যে, তাঁর (ঈসা) মস্তিষ্কে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা রয়েছে। আর তিনি চাইতেন যেন কোনো দাওয়াখানায় (হাসপাতালে) তাঁঁর নিয়মিত চিকিৎসা চলে যাতে খোদাতালা তাঁকে আরোগ্য দান করেন।” (রূহানী খাযায়েন ১১/২৯০)। স্ক্রিনশট এই যে,

(আট) মির্যা কাদিয়ানী সাহেব হযরত ঈসা (আ.) ছাড়াও অন্যান্য নবীগণের শানে এমনকি মুহাম্মদে আরাবি (সা.)-এর শানেও সীমাহীন অমর্যাদাকর মন্তব্য করেছেন। যেমন সে লিখেছে, “রাসূল (সা:)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৭। পৃষ্ঠা নং ২৬৩; সারমর্ম)।

কাদিয়ানীরা এমন ব্যক্তিকে ইমাম মাহদী বলে বিশ্বাস করায় প্রকারান্তরে তারাও কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত।

(নয়) ইসলামের স্বতসিদ্ধ এমন বহু শিক্ষাকে বিকৃত করার কারণেও তারা ইসলাম থেকে খারিজ যেগুলোর স্বরূপ ইসলামের সোনালী যুগ থেকে অদ্যাবধি সুরক্ষিত; বরেণ্য যুগ-ইমামদের কেউই কোনো দিন ভিন্ন ব্যাখ্যায় যাননি। যেমন, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ, দাব্বাতুল আরদ, মেরাজ, কবরে সুওয়াল-জবাব, খাতামুন নাবিয়্যীন, ইমাম মাহদীর পরিচয় এবং প্রতিশ্রুত ঈসা (সা.) ইত্যাদী।

কিন্তু কাদিয়ানীরা এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মূলধারার মুসলিম উম্মাহার শিক্ষার বিপরীতে মস্তিষ্কপ্রসূত ব্যাখ্যার পেছনে দৌড়ায়। তাদের ধর্মমতে, খ্রিস্টান মিশনারীই দাজ্জাল, চীন-রাশিয়াই ইয়াজুজ-মাজুজ, প্লেগের কীটপতঙ্গই দাব্বাতুল আরদ, মেরাজ নিছক একটি স্বপ্ন, কবরে সুওয়াল-জবাব হবেনা, খাতামান নাবিয়্যীন-এর অর্থ সীল মেরে নবীদের নবুওয়তের সত্যায়নকারী, আগমনকারী ইমাম মাহদী এবং ঈসা দু’জন একই ব্যক্তি (নাউযুবিল্লাহ)। মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে পরিষ্কার করে একথাও লিখা আছে যে, ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলোর কোনোটিকেই সহীহ বলা যায় না। (হাকীকাতুল ওহী ১৭৩ বাংলা অনূদিত)।

(দশ) ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’-এর অস্বীকার করাও তাদের কাফের হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমন, মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “আমি বিশ্বাস রাখি যে, আমার মুরিদ (অনুসারী) যেই হারে বাড়ছে সেই হারে জিহাদের উপর বিশ্বাসীর সংখ্যাও কমছে। কেননা, আমাকে মসীহ মওউদ এবং ইমাম মাহদী মেনে নেয়াই ‘জিহাদ’ অস্বীকার করা।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/১৯; নতুন এডিশন)।

এই গোষ্ঠীটির স্ববিরোধী কথার অন্ত নেই। এরা একদিকে বলে কুরআনের কোনো একটি আয়াতও মানসূখ হয়নি। অন্যদিকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠেকাতে কুরআনের সাড়ে ১১শ জিহাদ আর ক্বিতালের আয়াত মানসূখ মেনে বিরোধিতা করে যায়।

(এগার) মির্যা কাদিয়ানীকে অস্বীকারকারী সমস্ত মুসলমানকে কাফের, জাহান্নামী আখ্যা দেয়াও তাদের কাফের হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমন তাদের বইগুলোতে লিখা আছে, মির্যা কাদিয়ানী লিখেন, “খোদাতায়ালা আমার উপর প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে আর তারা তা কবুল করেনি এমন ব্যক্তি মুসলমান নয় এবং এরা (পরকালে) পাকড়াও হবে।” (তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৫১৯; ইলহাম, মার্চ ১৯০৬ ইং, চতুর্থ এডিশন)।

  • মির্যার পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেন, “প্রত্যেক মুসলমান যিনি হযরত মসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)’র বাইয়েতে শামিল হয়নি, সে যদিও হযরত মসীহ মওঊদের নামও শুনেনি, এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলাম থেকে বাহিরে।” (আয়নায়ে সাদাক্বাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ; অনলাইন এডিশন)।

(বারো) ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্যকে ইসলামেরই অংশ বলে আখ্যা দেয়া-ও প্রমাণ করে যে, এই কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের গন্ডিভুক্ত নয় বরং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদেরই সৃষ্টি ছিল। যেমন সে লিখেছে, “আমি বরাবরই আমার মত প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দুইটি অংশ। প্রথমত, আল্লাহর আনুগত্য করা। দ্বিতীয়ত, এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা যে নিরাপত্তা দিয়েছে। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)।

এভাবে আরো বহু কারণ বিদ্যমান। সংক্ষেপে এটুকু জানানো হল। তাহলে একবার ভেবে দেখুন, এদেরকে জেনে-বুঝে মুসলমান মনে করার অর্থ নিজেদের জীবনে ঈমান বিধ্বংসী পরিণতি ডেকে আনা নয় কি?

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানীর ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ’ হবার আজগবি দাবীর দলিল খন্ডন

ইন্নাল হামদা লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা-বা’দু;

পবিত্র কুরআনের যে আয়াতটির অপব্যাখ্যা করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (لعنة الله عليه) নিজেকে ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ‘ বলে দাবী করে গেছেন এবং শেষ যামানায় পৃথিবীতে মুহাম্মদ (সা.) দ্বিতীয়বার আগমন করবেন বলে নতুন যে কনসেপ্ট দিয়ে গেছেন সেটি সম্পর্কে আজকে আরেকটু বিশ্লেষণ মূলক আলোকপাত করছি। অনুগ্রহপূর্বক সবাই এই বিশ্লেষণটি বুঝার চেষ্টা করবেন এবং কমেন্ট বক্সে মতামত দেবেন! আর হ্যাঁ, সম্পূর্ণ বিশ্লেষণটি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) এর লেখিত “ফাতহুল বারী” (فتح الباري فى شرح الصحيح البخارى) এর আলোকে করা হবে।

নিচে ফাতহুল বারী কিতাবের সংশ্লিষ্ট অংশের স্ক্রিনশট তুলে ধরা হল। পুরো লিখাটি লিখকের পেইজ থেকেও পড়তে পারেন। ক্লিক করুন।

সম্পূর্ণ বিশ্লেষণটি বুঝার সুবিধার্থে সূরা জুমার আয়াত নং ২-৩ এর অনুবাদ “ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনুবাদকৃত কপি থেকে” ভালো করে কয়েকবার পড়ে নিন। নিচে দেয়া হল।

বিশ্লেষণ শুরু-

সম্পূর্ণ বিশ্লেষণের সার কথা হল, কাদিয়ানীরা ঐ আয়াতের “আখারীনা” (آخرين) শব্দ হতে যেই কন্সেপ্ট নিয়ে থাকে সেটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন, অপ্রমাণিত ও কুরআনের উক্ত আয়াতের সুস্পষ্ট বিকৃতির শামিল।

  • সূরা জুমা’র ৩ নং আয়াতে কি মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বিতীয়বার আগমন করার ইংগিত আছে কি? কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে পালটা কিছু প্রশ্ন দেখুন! ক্লিক করুন।

প্রথমতঃ (সূরা জুমা ২-৩) আয়াতের “আখারীনা” (آخرين) শব্দ এবং সহীহ বুখারী সহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত একখানা হাদীসের رجال বা رجل (অর্থাৎ এক বা একাধিক ব্যক্তি) সম্পর্কে আলোকপাত করব, ইনশাআল্লাহ….।

  • لو كان الايمان عند الثريا لناله رجال او رجل من هؤلاء
  • হাদীসের অর্থ, ঈমান যদি ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটও থাকত এদের মধ্য থেকে এক বা একাধিক ব্যক্তি তা (ঈমান/দ্বীন/ইলম) নিশ্চয়ই অর্জন করত। (সহীহ বুখারী)।
  • কুরআন এবং হাদীসের সমষ্টিগত বুঝ ও শিক্ষা-

(১) এর দ্বারা একথা বুঝায়নি যে, ভবিষ্যতে মুহাম্মদ (সা.) আরেকবার আসবেন। বরং হযরত সালমান ফারসী (রা.)-এর বংশধর থেকে এক বা একাধিক ব্যক্তি (অন্য বর্ণনা মতে, তার গোত্রের লোকেরা) ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জ হতে (হলেও) ঈমান বা দ্বীন বা ইলম অর্জন করে ফেলত, বলেই বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জ হতে অর্জিত জিনিসটা হাদীসের মধ্যে বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন নামে এসেছে। ঈমান, দ্বীন এবং ইলম। শায়খ আলবানী (রহ.) সবগুলো বর্ণনার সূত্রকে সহীহ বলেছেন। দেখুন,

لو كانَ العلمُ بالثّريّا وفي لفظٍ آخرَ لو كانَ الإيمانُ عندَ الثريّا ، وفي لفظٍ ثالثٍ لو كانَ الدّينُ بالثّريّا لنالهُ رجالٌ مِن أبناءِ فارس

(২) আর তারা এক বা একাধিক ব্যক্তি কিংবা একটি গোত্রও হতে পারে। হাদীসের শব্দটি হচ্ছে,

رجال او رجل او قوم هذا

যার অর্থ হচ্ছে, সালমান ফারসীর পুরো গোত্রটি অথবা ঐ গোত্রের এক বা একাধিক ব্যক্তি তা (ঈমান, দ্বীন, ইলম) অর্জন করতো। আগেই এ সম্পর্কে বলেছি।

(৩) মুসলিম শরীফের হাদীসে ابناء فارس অর্থ পারস্যের সন্তানেরা (বহুবচন) উল্লেখ আছে।

(৪) তারা সবাই সালমান ফারসীর বংশধর হবেন এবং পারস্য বংশীয় হবেন।

  • উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর বংশ সম্পর্কে স্ববিরোধ অনেক তথ্য রয়েছে। এক জায়গায় লিখা আছে, তার বংশ ছিল মোগল অর্থাৎ তুর্কী তাতারি জাতি। আর তার পূর্বপুরুষ ছিল, মোগল সেনাপতি তৈমুর লং। একথা লিখা আছে, কাদিয়ানীদের “আহমদ চরিত” বইয়ের ১ নং পৃষ্ঠাতেও। আরো দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৩/১৬২। আরেক জায়গায় লিখা আছে, চায়নিজ বংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৭/১২৭)। আরেক জায়গায় লিখা আছে, ফাতেমি এবং ইসরাইলী বংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৮/২১৬)। তবে আরেকটি জায়গায় অবশ্যই পারস্য বংশীয় বলেও লিখা আছে (রূহানী খাযায়েন ১৩/১৬৩)। উফ! এ কেমন পাঁচমিশালি বংশীয় কথিত মসীহ মওউদ সাহেব! যাইহোক, এতেই সাব্যস্ত হচ্ছে যে, মির্যা কাদিয়ানীর সুনির্দিষ্ট কোনো বংশ-পরিচয় ছিলনা, বরং তার বংশ ছিল (বেশুমার) অগণিত।

(৫) আর এটি (ابناء فارس / একাধিক ব্যক্তির কনসেপশন) কুরআনের সূরা জুমার ৩ নং আয়াত و آخرين এরই মর্মার্থের অন্যতম প্রকাশ। ফলে ‘আখারীনা’ বা آخرين (অন্যান্যরা) শব্দটি বহুবচনাত্মক হওয়ায় তারই ইংগিতস্বরূপ বুখারী-মুসলিমে উল্লিখিত অপরাপর শব্দগুলোর অন্যতম رجال আর ابناء فارس (একাধিক ব্যক্তি, পারস্যের সন্তানেরা) উদ্দেশ্য হওয়াই বেশি জোরালো ও সঙ্গতিপূর্ণ।

(৬) আয়াতে উল্লিখিত ‘আখারীনা’ বা آخرين (অর্থাৎ অন্যান্যরা) শব্দটি বাক্যে مجرورا عطفا على الاميين হয়ে بعث (অতিতকাল বাচক) ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কযুক্ত বটে, কিন্তু কর্ম বা মাফউল নহে। যদি মাফউল হত তাহলে এটি কখনোই جار তথা যের-এর অবস্থায় পতিত হত না। যার ফলে নতুন কেউ আসবে বুঝায়নি, বরং একজন রাসূল হিসেবে আগমনকারী (بعث فى الاميين) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর অনারবী উম্মতের একটি বিশেষ শ্রেণীর কথা বুঝানো হয়েছে যারা অচিরেই আরবের উম্মী(নিরক্ষর)দের সাথে (اميين শব্দটি جار তথা যের-এর অবস্থায় রয়েছে, এর দ্বারা সাহাবীদের বুঝানো হয়েছে) মিলিত হবেন। এখানে ‘আখারীনা (آخرين) শব্দটি পূর্ব বাক্যের اميين এর উপর عطف বা সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় বিষয়টি পুরোই পরিষ্কার যে, ভবিষ্যতে কারো আসার কথা এখানে বুঝায়নি, বরং মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ উম্মিয়্যীন (আরবী) আর আখারীন (অনারবী)দের মাঝে প্রেরণ করিয়াছেন, একথাই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরগ্রন্থ সমূহ দ্রষ্টব্য)।

(৭) এই ‘আখারীনা’ (آخرين বা অন্যান্যরা) বলতে কুরআন কী বুঝাল? এমন প্রশ্নের উত্তর কুরআন (সূরা জুমা) নিজেই উপরিউক্ত ২ নং আয়াতে দিচ্ছে। অর্থাৎ ঐ অন্যান্যরা হচ্ছেন সেসব অনারবী জাতি (আরবের বাহিরের জাতি, বিশেষভাবে পারস্যের সন্তানেরা) যাদের মধ্য হতেও নবী মুহাম্মদ (সা:)-কে একজন রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে (بعث /অতিতকাল বাচক-প্রেরণ করা হইয়াছে)।

এবার তাহলে এই ‘আখারীনা’ (آخرين) শব্দ যের-এর অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও এবং بعث ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়েও কিভাবে এমন কোনো অর্থের নির্দেশ করতে পারে যার ফলে بعث অতিতকালবাচক ক্রিয়াপদের অর্থ ‘ভবিষ্যতবাচক ক্রিয়াপদের অর্থে‘ বদলে ফেলা লাগে এবং آخرين শব্দকে اميين এর উপর আতফ (عطف) হওয়াও অমান্য করে সেটিকে বরং بعث ফে’ল এর “দ্বিতীয় মাফউল” (مفعول ثانى) মানা লাগে! কেউ আছেন আমার এই লিখাটিকে সঠিক পন্থায় ভুল প্রমাণ করতে পারবেন? অপেক্ষায় থাকলাম।

পরিশেষে, এখন কাদিয়ানীদের ভন্ডামি, অজ্ঞতা আর বিকৃতি সম্পর্কে যদি বলি তাহলে রাত দিন শেষ হবেনা। শুধু এখানে নয়, পুরো কুরআনের ভেতর তারা ভয়ংকর আকারে বিকৃতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। এখন যাদের আরবী শব্দভাণ্ডার আর ব্যাকরণ বিষয়ে জ্ঞান নেই তাদের কী সাধ্য ওদের প্রতারণা আর বিকৃতি ধরতে পারার? আমি কি এমনিতেই এদেরকে মিথ্যুক, প্রতারক আর কুরআনের মর্মার্থ বিকৃতকারী বলি!?

আল্লাহ তাদেরকে কুরআনের অপব্যাখ্যা আর বিকৃতি থেকে ফিরে আসার তাওফিক দিন।

(লিখাটি কপি করে প্রচার করুন)

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

শিক্ষাবিদ ও গবেষক

তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের জন্য মেহনত করতে আল্লামা কাশ্মীরী’র অসীয়ত

0

ইন্নান হামদা লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মাবা’দু!

কাদিয়ানী ফেতনা মুকাবিলায় জগৎ বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী [জন্ম-মৃত্যু ১৮৭৫-১৯৩৩ইং] (রহ:) এর ঐতিহাসিক অসীয়ত। তিনি বলেন, “আমার শিক্ষকতার যামানায় আমার কাছ থেকে কমপক্ষে দু’হাজার ছাত্র হাদীসের পাঠ গ্রহণ করেছে। আমার হাদীসের সে সমস্ত ছাত্রের নিকট এতটুকুই আবদার করবাে, তারা যেন আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেদের ইলমি-আমলি শক্তি তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের জন্যে ব্যয় করে। তারা যদি এ ব্যাপারে কুতাহি (অলসতা) করে তাহলে আমি হাশরের ময়দানে তাদের আঁচল টেনে ধরবাে।” (সূত্র, আখেরী পায়গাম, পৃষ্ঠা নং ২৬)।

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ) সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন –

আল্লামা শাহ আনোয়ার কাশ্মীরী

সম্পর্কিত তথ্যের স্ক্রিনশট :-

কিতাব : আখেরি পায়গাম, লিখক আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী

মির্যা কাদিয়ানী কি সিজোফ্রেনিয়া রোগীও ছিল?

মির্যা কাদিয়ানী কি সিজোফ্রেনিয়া রোগীও ছিল?

ইন্নাল হামদা লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মাবা’দু!

কথিত ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ অর্থাৎ কাদিয়ানী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তার বেশিরভাগ অনুসারী জানেই না যে, মির্যা কাদিয়ানী শুধু হিস্টিরিয়া বা মৃগী রোগেই আক্রান্ত ছিল না, বরং সিজোফ্রেনিয়া রোগ-ও ছিল তার। আর এগুলো তার নিজের স্বীকারোক্তি দ্বারা-ও প্রমাণিত। অথচ তার অনুসারীরা তাকে আল্লাহর পক্ষ হতে হযরত মূসা (আ.) এর ন্যায় একজন ছাহিবুশ শরিয়ত বা শরীয়তবাহক নবী বলেও বিশ্বাস করে থাকে। মির্যা কাদিয়ানীর উর্দূ রচনা পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত ‘মালফুযাত‘ এর ৫ম খন্ডের ৪৪৭ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। তারই অপরাপর আরেকটি রচনা ‘আরবা’ঈন‘ থেকে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি এই,

আর তার এই দাবীটি তারই মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগের অর্থাৎ ১৯০৭ সালের দিককার। যদিও তিনি ইতিপূর্বে নিজেকে ইমাম মাহদী, আগত ঈসা (আ:)-এর অবতার তথা রূপক ঈসা (মসীহ); একজন বুরুজি বা জিল্লি নবী ইত্যাদি দাবী করেছিলেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল, আল্লাহ যাকে তার বান্দাদের জন্য নবী করে পাঠাবেন তার কি কখনো সিজোফ্রেনিয়া আর হিস্টিরিয়া কিংবা মৃগী ইত্যাদি রোগ-ও থাকতে পারে? তারই রচনা ‘হাকীকাতুল ওহী’ গ্রন্থ থেকে নিচে দেখুন,

বলে রাখতে চাই যে, মির্যা কাদিয়ানীর মিরাক্ব বা مراق রোগকে ইদানীংকাল তার অনুসারীরাও “মালিখোঁলিয়া” বলে স্বীকার করে নিয়েছে। তাহলে এই মালিখোঁলিয়াটা কী? অভিধান কী বলে? উর্দূ টু উর্দূ অভিধান ‘ফিরোজুল লুগাত‘ থেকে নিম্নরূপ,

মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবীর প্রমাণ তার বই “মালফুযাত” থেকে নিম্নরূপ :-

  • অনলাইনে জনৈক কাদিয়ানী মতাবলম্বী বিষয়টি অস্বীকার করলে আমি তার জবাব দিই এভাবে, পড়তে ক্লিক করুন।

প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮) কোথায় নিজের “মিরাক্ব” অর্থাৎ সিজোফ্রেনিয়া রোগ ছিল বলেছেন?

উত্তরে বলব, তিনি তার বহু রচনায় এর স্বীকারোক্তি করে লিখে গেছেন। এই নিন সামান্য কিছু প্রমাণ ডকুমেন্ট সহ।

মির্যা কাদিয়ানীর উল্লিখিত “মালফুযাত (ملفوظات)” বইয়ের অত্র পাতাটির সংশ্লিষ্ট অংশের পুরো অনুবাদ নিচে উল্লেখ করা হল। ফলে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই স্বীকার করে লিখে গেছেন, তার “মিরাক্ব” (مراق) বা সিজোফ্রেনিয়া (মস্তিষ্ক বিকৃতি) রোগ ছিল। আরও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এটি মির্যার প্রতি অন্য কারো পক্ষ থেকে উদ্ধৃত কোনো কথা নয়।

  • এখানে বিশেষত, সিজোফ্রেনিয়া (অর্থাৎ মানসিক ব্যাধি) রোগ এবং রোগীর আচরণ সম্পর্কে জানতে আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া সাইটের লিংক দেয়া হল। ক্লিক করুন।
  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বই থেকে অনুবাদ এই যে, তিনি লিখেছেন:-

“দুটি হলুদ চাদর হতে উদ্দেশ্য : (মির্যা সাহেব) বলেন, লক্ষ্য কর! হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রোগ সম্পর্কে যে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন সেটি পূর্ণতায় রূপ নিয়েছে। হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছিলেন, মসীহ (আ:) যখন আকাশ থেকে নাযিল হবেন তখন তিনি দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিহিত হবেন। তদ্রূপ আমার-ও দুটি রোগ রয়েছে। একটি উপরাংশে আর অপরটি নিম্নাংশে অর্থাৎ মিরাক্ব (মস্তিষ্ক বিকৃতি) এবং প্রস্রাবের আধিক্য (ডায়াবেটিস)। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধবাদীরা এর অর্থ করে থাকে যে, তিনি (মসীহ) প্রকৃতপক্ষে সন্যাসীদের ন্যায় দুটি হলুদ বর্ণের চাদর পরিহিত অবস্থায় আকাশ থেকে নিচে নেমে আসবেন। কিন্তু এটা ভুল কথা। কেননা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিরা ‘হলুদ বর্ণের চাদর’-এর তাৎপর্য হিসেবে সর্বদা রোগের কথাই লিখে গেছেন। যে কেউই হলুদ চাদর বা হলুদ বর্ণের কোনো বস্তু দেখবে তা হতে ‘রোগের’ তাৎপর্যই (উদ্দেশ্য) হবে এবং যে কেউই এভাবে দেখে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে যে, এর তাৎপর্য এটাই।” (অনুবাদ শেষ হল)।

  • যারা উর্দু বুঝেন না তাদের জন্য কাদিয়ানীদের প্রকাশিত বাংলা বই থেকে “মিরাক্ব” এর অর্থ নিচে দেখানো হল :-

কেউ হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, মিরাক্ব অর্থ ‘মস্তিষ্ক বিকৃতি’ এর আভিধানিক অর্থ তো পেলাম, কিন্তু এর আরেকটা অর্থ “পাগল” বা ‘এক প্রকারের মালিখোলিয়া রোগ’ এর প্রমাণ কোথায়? উত্তরে বলব, এর প্রমাণ হিসেবে উর্দু টু উর্দূ ফিরোজুল লুগাত দেখুন। ক্লিক করুন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

কাদিয়ানী নেতা আব্দুল আউয়াল এর ১০টি প্রশ্নের উত্তর

আলেম উলামাদের প্রতি কাদিয়ানীদের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেবের ১০টি প্রশ্ন ও আমার পক্ষ হতে সেগুলোর সহজ উত্তর

[অতিব সংক্ষেপে কাদিয়ানীদের বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নগুলোর একদম সহজ ভাষায় উত্তর দেয়া হল। আমি ইচ্ছে করলে প্রতিটি প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত একটি করে হলেও দাঁতভাঙ্গা প্রশ্ন করতে পারতাম। কিন্তু সংক্ষেপ রাখতে করলাম না]।

প্রশ্ন ১ : যেহেতু ৭২ দলের আলেম উলামারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবীর আগমনে বিশ্বাসীদেরকে ইসলাম বহির্ভূত মনে করে। অতএব, জবাব দিন আল্লাহর নবী ঈসা (আ.)-এর আগমনের অপেক্ষাকারী মুসলমানদেরকে আলেমরা কি হিসেবে গণ্য করে?

উত্তর : প্রশ্নকর্তার প্রশ্নেই ভুল। কেননা মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবীর আগমনের বিশ্বাসীদেরকে ইসলামের সমস্ত ফেরকার লোকেরাই ইসলাম বহির্ভূত মনে করেন। কাজেই প্রশ্নে উল্লিখিত সংখ্যাটি ৭২ নয়, বরং ৭৩ হবে। যেহেতু হাদীস শরীফে ‘উম্মতে মুহাম্মদীয়া ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে’ বলেই উল্লেখ রয়েছে (তিরমিজী, কিতাবুল ফিতান দ্রষ্টব্য)। যাইহোক, সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য প্রশ্নও সঠিক হওয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের জন্য নিজেদেরকে ইসলামের ফেরকাভুক্ত মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে “তৃতীয় শতাব্দীর পর বিগত উম্মত তেয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হইয়া গিয়াছে।” (হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] ৩৬)। তাই এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর জন্মের হাজার বছর আগেই যে উম্মত তার কথানুসারে তেয়াত্তর ফেরকায় ভাগ হয়ে গেল বর্তমান যুগের কাদিয়ানীরা সেই তেয়াত্তরের মধ্যে গণ্য হয় কিভাবে?

প্রশ্ন ২ : আগমনকারী ঈসা (আ.) নবী হবেন কিনা? যারা বলে, নবী হবেন তারা জবাব দিন ঈসা (আ.)-এর নবী হিসেবে আগমনের পরও হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে খাতামান্নাবীঈন (শেষ নবী) থাকবেন?

উত্তর : হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমন দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে খাতামান্নাবীঈন বা ‘শেষনবী’ থাকবেন, প্রশ্নটির উত্তর নেয়ার আগে “শেষনবী” এর সংজ্ঞা কী তা জেনে নিন! বরেণ্য ইমাম আল্লামা যামাখশারী (রহ.) লিখেছেন,

معنى كونه آخر الانبياء انه لا ينبأ أحد بعده و عيسى ممن نبى قبله و حين ينزل عاملا على شريعة محمد مصليا الى قبلته كانه بعض أمته

অর্থ: তিনি (মুহাম্মদ সা.) “শেষনবী”, একথার অর্থ তাঁর পরে অন্য আর কাউকে নবী বানানো হবেনা। অধিকন্তু ঈসা (আ.)-কে উনার আগেই নবী বানানো হয়েছে। আর তিনি (ঈসা আ.) যখন পুনরায় আগমন করবেন তখন তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের উপর একজন আমলকারী হবেন এবং তাঁর কেবলার দিকেই সালাত আদায়কারী হবেন। যেন তিনিও অপরাপর উম্মতগণের মত একজন উম্মতই। (তাফসীরে কাশশাফ, সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০ দ্রষ্টব্য)।

সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায়, আগমনকারী ঈসা কথিত রূপক কেউ নন, বরং তিনি বনী ইসরাইলী ঈসাই; তিনি পুনরায় এসে একজন “উম্মতী”ই হবেন, তিনি নবুওয়তের দায়িত্বে থাকবেন না। যেহেতু তাঁর নবুওয়ত শুধুমাত্র বনী ইসরাইলী সম্প্রদায়ের জন্যই খাস তথা নির্দিষ্ট ছিল। পবিত্র কুরআন ০৩:৪৯ দ্রষ্টব্য। আর সেজন্যই শায়খ ইবনে আরাবীও (রহ.) লিখেছেন, তাঁর পুনঃআগমন রাসূল (সা.)-এর বাণী “লা নাবিয়্যা বা’দী” (আমার পরে কোনো নবী নেই), এ কথার পরিপন্থী নয়। অতএব বুঝা গেল, প্রশ্নকারীর প্রশ্নই সঠিক হয়নি।

প্রশ্ন ৩ : যারা বলেন, ঈসা (আ.) নবী হিসেবে আগমন করবেন না। তারা জবাব দিন, আপনারা এ কথা কোথায় পেলেন? কুরআন হাদীস থেকে এর যথাযথ দলিল প্রমাণ দিতে পারবেন কি?

উত্তর : ঈসা (আ.) “নবী হিসেবে” অর্থাৎ নবুওয়তের দায়িত্ব নিয়ে আগমন করবেন, এটি তো বরং মির্যা কাদিয়ানীরও বিশ্বাস ছিল না! দেখুন ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-৩ পৃষ্ঠা নং ৫৯। যাইহোক, প্রশ্নকর্তার এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন নং ২ থেকে আবার দেখে নিন।

প্রশ্ন ৪ : ঈসা (আ.) নবী হিসেবে আগমন করবেন কিনা? দয়া করে আপনারা ৭২ দলের সকলে মিলে একটি অভিন্ন মতামত প্রদান করবেন কি? তা না হলে প্রমাণিত হয়ে গেল, আপনারাই এ বিষয়ে ঐক্যমত ও সন্দেহমুক্ত নন।

উত্তর : ৪ নং প্রশ্নের উত্তরটিও প্রশ্ন নং ২ থেকে দেখে নিন!

প্রশ্ন ৫ : ওহাবীরা দেওবন্দীকে কাফের মনে করে। দেওবন্দীরা ওহাবীকে কাফের মনে করে। তাহলে কেন আপনারা কাফেরের সাথে মিলিত হয়ে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধেই লেগেছেন? আর যদি তাদের কাফের মনে না করেন তাহলে আপনারা কি আপনাদের বুযুর্গ ও পথিকৃৎদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন?

উত্তর : কথিত ওহাবী কিংবা দেওবন্দী সম্পর্কে প্রশ্নকর্তার উক্ত দাবী সম্পূর্ণ বানোয়াট। প্রশ্নকর্তাকে আমার চ্যালেঞ্জ, তিনি কথিত ওহাবী কিংবা দেওবন্দীদের অথেনটিক কোনো গ্রন্থ থেকে “ওহাবীরা দেওবন্দীকে কাফের মনে করে অথবা দেওবন্দীরা ওহাবীকে কাফের মনে করে” এইরূপ হুবহু কিংবা কাছাকাছি শব্দচয়নেও প্রমাণ করতে পারবেনা। যেজন্য তাদের প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যও অমূলক বৈ কিছুই না।

প্রশ্ন ৬ : ৭২ ফিরকা কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা দেয়ার দাবী করে। অথচ আজ পর্যন্ত ‘মুসলমান কে’—এই সংজ্ঞা কেউ দিতে পারল না। দয়া করে বলবেন কি মুসলমান কাকে বলে? অবশ্যই আপনাদের প্রত্যেকের সংজ্ঞা এক রকম ও পরস্পর অভিন্ন হতে হবে।

উত্তর : কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণার দাবী উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সকলের। ফলে শব্দটি বায়াত্তর হবেনা, হবে তেয়াত্তর। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই তার জামাতকে তেয়াত্তর ফেরকার বাহিরে মনে করত। প্রমাণের জন্য ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-১৭, পৃষ্ঠা নং ২২৬ দেখে নিন। আপনি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুসলমান-এর সংজ্ঞা চাচ্ছেন, তাই তো! কিন্তু কেন? মানার জন্য?

আরে জনাব! আমি যদি বিশিষ্ট যুগ-ইমামগণের রচনাবলী হতে ‘মুসলমান’-এর সংজ্ঞা দিইও তবুও তো আপনার লাভ হবেনা। যেহেতু আপনি যে লোকটিকে উম্মতিনবী, মসীহ, ইমাম মাহদী মেনে নিয়েছেন সে নিজেই তো উম্মতে মুহাম্মদীয়ার পূর্ব ও পরবর্তী মনীষীদের কথা পূর্ণাঙ্গ কোনো দলিলই নয় বলে অগ্রাহ্য করে লিখে গেছে। (রূহানী খাযায়েন খ-৩, পৃ-৩৮৯ দ্রষ্টব্য)। তো যেখানে সাল্ফে সালেহীনের কোনো কথারই আপনাদের নিকট অথেনটিক নয় সেখানে এধরণের কোনো প্রত্যাশার কী অর্থ?

প্রশ্ন ৭ : আপনারা কাদিয়ানীদের কাফের মনে করছেন বিধায় তাদেরকে সরকারীভাবে কাফের ঘোষণা করতে হবে? আপনারাও তো প্রত্যেকে এক দল আরেক দলকে কাফের মনে করেন। অতএব জবাব দিবেন কি তাদেরকেও সরকারীভাবে কেন কাফের ঘোষণা করা হবে না?

জবাব : কোনো ব্যক্তি বিশেষের অতি উৎসাহীমূলক তাক্ফীর যা কখনো কখনো প্রতিহিংসামূলকও হয়ে থাকে সেটি আর বিশ্বব্যাপী উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সর্বসম্মত প্রাতিষ্ঠানিক তাকফীর কখনো এক নয়। কাদিয়ানীরা উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সর্বসম্মত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং বাস্তবতার নিরিখেই কাফের হিসেবে স্বীকৃত।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে মক্কায় আন্তর্জাতিক ইসলামীক সংস্থা ‘রাবেতা আলমে ইসলামী’র অধীনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশ্বের সকল মুসলিম নেতৃবৃন্দ কাদিয়ানীদের আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা দেয়। পক্ষান্তরে ব্যক্তি বিশেষের অতি উৎসাহীমূলক তাকফীরের জন্য সে নিজেই অভিযুক্ত, যদি না তার উক্ত তাক্ফীর বাস্তবতার নিরিখে হয়। তো যেখানে আপনাদের আর অন্যদের মধ্যে তাকফীরের ব্যাপারটি আকাশ-পাতাল ব্যবধান সেখানে কিভাবে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, কাদিয়ানীদের মত অন্যদেরকে সরকারীভাবে কাফের ঘোষণার দাবী করা হবেনা কেন?

প্রশ্ন ৮ : যদি মির্যা সাহেবের ইংরেজ সরকারকে জনগণের জন্য রহমতস্বরূপ বলার কারণে মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হয় তাহলে আহলে হাদীস, দেওবন্দ ও বেরেলভী আলেমদের ইংরেজ সরকার সম্বন্ধে একই ধরণের মন্তব্য তাদেরকে কি হিসেবে গণ্য করে?

উত্তর : তর্কের খাতিরে মানলাম যে, অন্যরাও ইংরেজ সরকার সম্বন্ধে ঐ একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর সাথে ঐ আহলে হাদীস, দেওবন্দী কিংবা বেরেলভী আলেমদের তুলনা কিভাবে করতে পারেন যেখানে আপনাদের বিশ্বাসমতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল! কারণ সে পরিষ্কার লিখে গেছে “আমার দাবী, আমি একজন নবী ও রাসূল”। দেখুন মালফুযাত খ-৫ পৃষ্ঠা নং ৪৪৭ নতুন এডিশন, লিখক মির্যা কাদিয়ানী।

তাই প্রশ্ন হল, অন্যরা ভুল করলেও একজন নবী ও রাসূল দাবীদার মির্যা কাদিয়ানী ইংরেজ সরকার সম্পর্কে ঐ একই ধরণের মন্তব্য করে কিভাবে ভুল করতে পারে?

এবার দেখুন ইংরেজ সরকারের আনুগত্য করার জন্য মির্যা কাদিয়ানী তার বইতে আরো কী কী লিখে গেছে! সে একস্থানে লিখেছে, “খোদাতালা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যে সরকারের নিরাপত্তায় জীবনযাপন করবে তার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং অনুগত থাকবে। তাই যদি আমরা ব্রিটিশ সরকারের (রাজত্বের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ করি তবে (জেনে রেখো আমরা) যেন ইসলাম, খোদাতালা এবং রাসূলের সাথেই বিদ্রোহ করছি। এই অবস্থায় আমাদের চেয়ে বড় অসৎ আর কে হতে পারে! কেননা খোদাতালার কানূন এবং শরীয়ত আমরা ছেড়ে দিয়েছি।” রূহানী খাযায়েন খ-৬, পৃ-৩৮১ দ্রষ্টব্য।

এখন প্রশ্ন হল, যে ইংরেজ ঔপনিবেশিক দানবদের হাতে শুধু দিল্লীরই ১৮ হাজার মাদরাসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর শুধু একদিনেই তেরো হাজার আলেমকে যারা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল, ১৮৩১ সালের বালাকোটের ট্র্যাজেডির আগেই যারা সাড়ে ৫৭ হাজার স্বাধীনতাকামী আলেম শহিদ করেছিল (দেখুন, ইতিহাসের ইতিহাস, মুন্সী গোলাম মর্তুজা); হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে যারা ভারতবর্ষের মানুষের জন-জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল; ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য যারা মুসলমানদের মধ্যে নানাভাবে ধর্মীয় বিভাজন তৈরী করেছিল, সেই দানব সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ আর অনুগত হওয়ার ঐ শিক্ষা অন্তত খোদাতালার কিভাবে হতে পারে? খোদাতালা কি কোনো সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির অনুগত হওয়ার সবক দেবেন? কখনো না। সুতরাং মির্যা কাদিয়ানীর মত একজন নবী রাসূল দাবীদার কর্তৃক ইংরেজ সরকারের নিকৃষ্ট গোলামীর ইতিহাস ঢাকতে অন্যদের প্রসঙ্গ টেনে আনা পুরোই অবান্তর!

প্রশ্ন ৯ : ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় মির্যা সাহেবকে ইংরেজদের দালাল বলেন! ভারতবর্ষের আহলে হাদীস, দেওবন্দ, বেরেলভী মৌলভীরাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে তারাও কি ইংরেজদের দালাল?

উত্তর : এর উত্তর ৮ নং প্রশ্নের উত্তরাংশে দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ১০ : যারা সরকারের কাছে কাদিয়ানীদের অমুসলমান ঘোষণা করার দাবী করে তারা জবাব দিবেন কি? সরকার যদি কাউকে অমুসলমান স্বীকৃতি দেয়ার অধিকার রাখে তাহলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের মুসলমান বানানোর ক্ষমতা রাখে না কেন?

উত্তর : এখানে দুইটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। অমুসলিম ঘোষণা করা আর অমুসলিম বানিয়ে দেয়া। মনে রাখতে হবে যে, সরকার কর্তৃক অমুসলিম ঘোষণা করার আগ থেকেই কাদিয়ানীরা নিজেদের কুফুরী আকীদার কারণে ইসলামের গন্ডি হতে খারিজ। ফলে সরকার কর্তৃক তাদের অমুসলিম ঘোষণা করার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জনগণকে সচেতনকরা আর তাদের ব্যাপারে সরকারের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করা।

সুতরাং বিষয়টি যাদের বুঝে আসছে তাদের নিকট একদম পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মুসলমানরা কখনোই বলতে চায় না যে, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার মানে অন্যান্য অমুসলিমদের সরকার মুসলমান বানানোরও ক্ষমতা রাখে! আসলে কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা ব্যাপারটি বুঝেনা যে তা নয়, মূলত তাদের উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাওয়া। নতুবা একজন সাধারণ মানুষও তাদের প্রশ্নগুলোর অসারতা ধরতে পারেন। আল্লাহ তাদের বিভ্রান্তি থেকে সবাইকে রক্ষা করুন।

পরিশেষ, আমরা কেন কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবী করি—প্রশ্নটির উত্তর দিতে গেলে অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন। তথাপি শুধু বুঝার জন্য এখানে একটি উপমা দিতে চাই। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র না মেনে যেভাবে কেউ ‘আওয়ামীলীগ’ নামধারণ ও তাদের একান্ত পরিভাষাসমূহ ব্যবহার করতে পারেনা, তদ্রুপ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইসলামের মৌলিক আকীদা না মেনে কেউ ‘মুসলিম’ বা ‘মুসলমান’ নামধারণ এবং একান্ত ইসলামী পরিভাষাসমূহও ব্যবহার করতে পারে না।

এখন হয়ত কারো মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কাদিয়ানীদের অথেনটিক কোনো রচনায় কি এমন কোনো কথা আছে যার ফলে তারাও মনে করে যে, তাদের সবকিছু মূলধারার মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা?

উত্তরে বলব, জ্বী হ্যাঁ আছে। মির্যা কাদিয়ানীর বড় ছেলে এবং তাদের দ্বিতীয় খলীফা(?) বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণ দিতে গিয়ে স্বীয় পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছিলেন, “তিনি (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের (মুসলমানদের) সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:)-এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের (মুসলমানদের) সাথে আমাদের বিরোধ আছে।”

(কাদিয়ানীদের ১৯১৩ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত উর্দূ দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১)

অতএব, জ্ঞানীদের বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।

  • আর এর পিডিএফ-এর জন্য এখানে ক্লিক করুন
  • পুরো লিখাটি শেয়ার করুন এবং লিখকের পেইজ থেকে কপি করে প্রচার করুন! Click

লিখক ও শিক্ষাবিদ
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
nabifeni44@gmail.com

খিজির, ইলিয়াস এবং ইদ্রীস কি এখনো জীবিত?

প্রশ্নকর্তা, চারজন নবী কি এখনও জীবিত আছেন? ইসলামের অথেনটিক কোনো সোর্স দ্বারা কি এ কথা প্রমাণিত?

উত্তর, কোনো কোনো তাফসীরের কিতাবে অবশ্যই এ ধরনের কথাবার্তার উল্লেখ রয়েছে। জ্ঞানীদের নিশ্চয় জানা আছে যে, লোকমুখে প্রচলিত এমন কোনো কথা কোনো ইতিহাস বা তাফসীর গ্রন্থে শুধুমাত্র সংগ্রহের জন্যই। তাই এর অর্থ এ নয় যে, সেটি প্রমাণযোগ্য হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, হযরত ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া এবং শেষ যামানায় তাঁর পুনরায় আগমনী সংবাদ পবিত্র কুরআনের নানা জায়গায় জোরালো ইংগিতে এবং বহু বিশুদ্ধ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। ফলে বর্তমানেও তাঁর জীবিত থাকার বিশ্বাস ইসলামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার উপর মুসলিম উম্মাহার ইজমা বা ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত। ফলে এর অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ হিসেবে গণ্য হবে।

মূল আলোচনা-

উম্মাহা’র বহু স্কলার বলেছেন, খিজির (আ.) এবং ইলিয়াস (আ.)-এর মৃত্যু হয়ে গেছে। ইদ্রীস (আ.) এর মৃত্যু আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পর সেখানেই হয়ে গেছে। ইমাম সুয়ূতি, ইবনে আসাকীর সহ কতিপয় তাফসীরকারকের বরাতে ইলিয়াস, ইদ্রীস এবং খিজির এঁদের জীবিত থাকার কথা কোনোরূপ বর্ণনামূলক ছিলনা, বড়জোর সংগ্রহমূলক ছিল। এর প্রমাণ হচ্ছে, ইমাম হাকেম নিশাপুরী এবং ইমাম ইবনে কাসীরের মতো অনুসন্ধানবিদ আলেমগণ এসব রেওয়ায়েতকে বিশুদ্ধ মনে করেননি। কেননা এগুলো ইসরাইলি রেওয়ায়েত তথা ঈসায়ী লিটারেচার থেকে গৃহীত।

হযরত ইদ্রীস (আ.) সম্পর্কে জানুন এখানে

তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন গ্রন্থকার নিজেও এই মত ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, “সারকথা, হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর জীবিত থাকার বিষয়টি কোনো নির্ভরযোগ্য ইসলামী রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত নয়”। (দেখুন, মা’আরেফুল কোরআন পৃ-১১৫৫; বাংলা)।

সুতরাং বিষয়টি ভালো ভাবে উপলব্ধি করা ব্যতীত যে বা যারাই বিতর্কে জড়াবেন তারা নিশ্চিত পদস্খলিত হবেন! কাদিয়ানী মু’আল্লিম আব্দুল মাবুদ সাহেব! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। মা’আরেফুল কোরআন এর খন্ডিত লিখা দ্বারা আপনি দুনিয়াকে ধোকা দিতে চাচ্ছেন কেন? এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে এসেও কিভাবে এইরূপ অপরিপক্ক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হওয়ার দুঃসাহস করলেন! আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। স্ক্রিনশট :-

হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে :

কাদিয়ানী সম্প্রদায় বরাবরই এই একটি জায়গায় খুব বেশি গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তারা হযরত আবু বকর (রা.)-এর ঐতিহাসিক বক্তব্যের আগের প্রসঙ্গটি রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যায় যেখানে হযরত উমর (রা.) থেকে একথাটিও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছিলেন যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাকে আমার এই তলোবারি দ্বারা হত্যা করব। তিনি আরও বলেছিলেন,

و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى ابن مريم عليه السلام

এর মানে হল, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে যেমনিভাবে ঈসা (আ:)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” (আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/২৪; ইমাম শাহরাস্তানী)। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেও কথাটি উদ্ধৃত করেছেন। রূহানী খাযায়েন ১৫/৫৮১ দ্রষ্টব্য। কিন্তু কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা হযরত উমর (রা.)-এর বক্তব্যের প্রথমাংশ বললেও শেষের অংশটুকু উদ্দেশ্যমূলকভাবে হজম করে ফেলে। আহা! কি সাংঘাতিক!!

স্ক্রিনশট

অথচ উমর (রা.)-এর ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত আবুবকর (রা.) সূরা আলে ইমরান এর ১৪৪ নং আয়াত তুলে ধরে বয়ান দিয়েছিলেন যে,

من كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات و من كان يعبد اله محمد فانه حى لا يموت و قرأ هذه الاية و ما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ

এর অর্থ হল, “যে মুহাম্মদ (সা.)-এর ইবাদত করে থাকে (সে যেন জেনে নেয়) মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভুর ইবাদত করে থাকে (তার জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। (তারপর) আবুবকর এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ (অর্থ-মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র তাহার পূর্বে অনেক রাসূল গত হইয়া গিয়াছে)”।

স্ক্রিনশট

সুতরাং এটি একথারই প্রমাণ যে, ঈসা (আ:) এর আকাশে উঠিয়ে নেয়ার আকিদা স্বয়ং সাহাবীদেরও। নইলে হযরত উমর (রা.) কেন একথা বললেন। আর আবুবকর (রা.)ও বা কেন উমরের ঐ কথার রদ (প্রত্যাখ্যান) করলেন না!? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে! মজার ব্যাপার হল, একদম সহীহ সনদ দ্বারা হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হযরত ঈসা (আ.)-এর নাযিল হবে আকাশ থেকে। মুসনাদু বাজ্জার হাদীস নং ৯৬৪২, সনদ সহীহ।

হযরত খিজির (আ.) সম্পর্কে

  • কোনো কোনো ইসরাইলী রেওয়ায়েত দ্বারা যারা বলে থাকেন যে, খিজির (আ.) জীবিত, হজ্ব করেন মদীনায় মানুষের সাথে মোলাকাত করেন মুসাফিরদেরকে সাহায্য করেন। মনে রাখা উচিৎ, এমন কোনো কথা সহীহ্ নয়, বরং সহীহ ও বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, তিনিও ইন্তেকাল করেছেন। হযরত খিজির (আ.) ইন্তেকাল করেছেন বলে যারা অভিমত পেশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম বুখারী (রহ.), ইবরাহীম আল হারবী (রহ.), আবুল হুসাইন ইবনুল মুনাদী (রহ:), ইবনুল জাওযী (রহ.)৷ ইবনুল জাওযী (রহ.) এ ব্যাপারে অধিকতর ভুমিকা রেখে গেছেন। এ সম্পর্কে তিনি পর্যাপ্ত দলিল প্রমাণ সহ একটি কিতাবও লিখে গেছেন। এ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

সূরা আহযাব আয়াত নং ৭ এর সঠিক তাৎপর্য

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

প্রশ্নকর্তা : সূরা আহযাব আয়াত নং ৭ এর মধ্যে উল্লেখ আছে “স্মরণ কর, আমি নবীদের নিকট হতে, তোমার নিকট হতে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, মরিয়ম-তনয় ঈসার নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।” এখানে মুহাম্মদ (সা.) সহ সমস্ত নবী-রাসূল থেকে আল্লাহতালা একখানা দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করার বলেছেন। তো সেই অঙ্গীকারটা কী? একজন নবীর আগমন সম্পর্কে কোনো অঙ্গীকার গ্রহণ নয় কি?

উত্তরদাতা : আয়াতটির সঠিক তাৎপর্য কী এ নিয়ে বহু কাদিয়ানী জ্ঞানপাপী আজও দ্বিধাদ্বন্দ্বে নিপতিত। ফলে তাদের অধিকাংশই মনে করছে যে, বোধহয় আয়াতটি নতুন একজন নবীর আগমনের বার্তা দিচ্ছে!! নাউযুবিল্লাহ। অথচ অত্র আয়াতে নতুন নবীর আগমনের বিন্দুমাত্র কোনো ইংগিতই নেই। প্রথমে আয়াত-

وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِنَ النَّبِیّٖنَ مِیۡثَاقَہُمۡ وَ مِنۡکَ وَ مِنۡ نُّوۡحٍ وَّ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ ۪ وَ اَخَذۡنَا مِنۡہُمۡ مِّیۡثَاقًا غَلِیۡظًا

অর্থ- স্মরণ কর, আমি নবীদের নিকট হতে, তোমার নিকট হতে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, মরিয়ম-তনয় ঈসার নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এই দৃঢ় অঙ্গীকার বলতে কি বুঝানো হয়েছে? উত্তরে বলতে পারি, এটি ঐ অঙ্গীকার, যার বর্ণনা সূরা (الشورى) আশ-শূরার ৪২:১৩ নং আয়াতে রয়েছে এবং তা এই যে, اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡہِ অর্থ—”দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে বিভক্ত হয়ো না।” এবার সূরা আশ-শূরার ১৩ নং আয়াত ও তার অনুবাদ-

شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِہٖ نُوۡحًا وَّ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَ مَا وَصَّیۡنَا بِہٖۤ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰۤی اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡہِ ؕ کَبُرَ عَلَی الۡمُشۡرِکِیۡنَ مَا تَدۡعُوۡہُمۡ اِلَیۡہِ ؕ اَللّٰہُ یَجۡتَبِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَہۡدِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ یُّنِیۡبُ

অর্থ- তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে, আর যা আমরা ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি কর না।

আয়াতটিতে মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম প্রথমে থাকার কারণ সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেই হাদীসে ইরশাদ করে গেছেন। তাফসীরে তাবারী-তে এসেছে, তিনি বলেছেন كنت اولهم فى الخلق و آخرهم فى البعث অর্থ আমি (যদিও) আবির্ভাবের দিক থেকে সবার শেষে (তবে কিন্তু) আমি সৃষ্টির দিক থেকে সবার প্রথম।

এখন বিস্ময়কর কথা হল, মহানবী (সা.) যে আয়াত দ্বারা নিজের খতমে নবুওয়তের প্রমাণ দিয়ে গেছেন সেই আয়াত দ্বারা কাদিয়ানীরা নবুওয়ত জারি থাকার প্রমাণ দিচ্ছে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের সঠিক মর্মবাণী মহানবী (সা.)-এর চেয়েও কাদিয়ানীরা খুব ভালো বুঝে! নাউযুবিল্লাহ।

  • মির্যা কাদিয়ানীকে কথিত উম্মতিনবী সাব্যস্ত করতে পবিত্র কুরআনের প্রায় ৯টি আয়াতের অপব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব পড়ুন! ক্লিক করুন
  • খতমে নবুওয়ত সংক্রান্ত ২০টি সহীহ হাদীস পড়তে ক্লিক করুন

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মুসায়লামা কাজ্জাব কিজন্য মুরতাদ হল?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

ইতিহাস আরো সাক্ষী, মুসায়লামা কাজ্জাব হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে তার সাথে আরবের উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা ভাগাভাগি করার প্রস্তাব জানায়। ১০ম হিজরির শেষের দিকে সে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে একটি চিঠিতে লিখে :

من مسيلمة رسول الله إلى محمد رسول الله صلى الله عليه و سلم أما بعد، فلكم نصف الأرض ولنا نصفها، ولكن قريشا قوم يعتدون.

অর্থ—“আল্লাহর রাসুল মুসায়লামার পক্ষ থেকে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদের নিকট। আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাকে আপনার নবুওয়তের অংশীদার করা হয়েছে। পৃথিবীর অর্ধেকটা আমাদের ভাগে এবং অপর অর্ধেক কুরাইশদের ভাগে। তবে কুরাইশরা সবসময় বাড়াবাড়ি করে থাকে।”

ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়,

মুসায়লামা কাজ্জাব মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়তেরও স্বীকারোক্তিকারী ছিল।

তার আযানেও ছিল اشهد ان محمدا رسول الله অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর একজন রাসূল।

সে পবিত্র কুরআনের উপরও বিশ্বাসী ছিল।

লিখেছেন, …..সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ:)

কিন্তু সে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর যুগেই নবুওয়তের দাবী করে বসে। ফলে সে মুরতাদ ও কাফের হয়ে যায়। তার দাবী, আল্লাহতালা তার উপর বহু সূরা নাযিল করেছেন। তার মতে وَالْفِيلْ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْفِيلْ، لَهُ زَلُّومٌ طَوِيلْ. এটিও নাকি তার উপর নাযিল হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ।

ঐতিহাসিক ইয়ামামার যুদ্ধে মুসায়লামা কাজ্জাব ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওয়াহশি ইবনুল হারব (রা:)-এর খঞ্জরের আঘাতে নিহত হন। সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন, মহাবীর হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা:)। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর)।

জনৈক কাদিয়ানী প্রশ্ন করল, মুসায়লামা কাজ্জাব হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সত্ত্বেও সে মুসলমান হিসেবে গন্য হবেনা। কারণ হাদীসে বর্ণিত আছে, সে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর নিকট বাইয়েত নেয়নি। সুতরাং সে মুরতাদ হয়েছিল নবুওয়তের দাবী করে—এভাবে মনে করার সুযোগ নেই। যেজন্য নবুওয়তের দাবী করায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবকে মুরতাদ আখ্যা দেয়া ঠিক নয়।

উত্তরে বলতে চাই, আরে আপনারাই তো সহীহ বুখারীর একটি হাদীস উল্লেখ করে বলে থাকেন যে, “যে মুসলমানদের মতই সালাত পড়ে, বায়তুল্লাহকে কেবলা মানে আর মুসলমানদের যবেককৃত জন্তুর গোস্ত খায় সেই মুসলমান।” এখানে আপনাদের দাবী অনুযায়ী বাইয়েত এর শর্ত কেন নেই?

দ্বিতীয় কথা হল, মুসায়লামা কাজ্জাব স্বীয় নবুওয়ত দাবীর পূর্বে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর রেসালতের স্বীকারোক্তি দেয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাইয়েতে শামিল না হওয়ার কারণে যদি মুসলমান হিসেবে গন্য না হয় তাহলে তো একই কারণে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কথিত উম্মুল মুমিনীন নুসরাত জাহানও আহমদীয়তের মধ্যে শামিল ছিল না! তার কারণ, সে মির্যা কাদিয়ানীর নিকট কখনো বাইয়েত নেয়নি। আমৃত্যু বাইয়েত ছাড়াই মির্যার সংসার করেছিল। সীরাতে মাহদী খ-১, বর্ণনা নং ২০ দ্রষ্টব্য

  • অর্থ – “অধম (মির্যাপুত্র বশির আহমদ) জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি (মির্যার স্ত্রী) কবে বাইয়েত নিয়েছিলেন? আম্মাজান বললেন, আমার সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আছে যে, আমি বাইয়েত থেকে বিরত থেকে বছর কতেক পরেই বাইয়েত করে নিয়েছি। (কিন্তু) এটি ভুল কথা। আমি কখনোই উনার থেকে পৃথক ছিলাম না, সব সময় সাথে ছিলাম। প্রথম থেকেই তিনি আমাকে বাইয়েতের অন্তর্ভুক্তই জানতেন এবং আমার জন্য আলাদাভাবে বাইয়েত করার প্রয়োজন মনে করেননি। তিনি বলেন, হযরত মসীহ মওউদ প্রথমাবস্থায় মসীহিয়ত এবং মাহদীয়তের দাবীদার ছিলেন না। বরং তিনি মুজাদ্দিদীয়তের উপরই বাইয়েত নিতেন।” (সীরাতে মাহদী, বর্ণনা নং ২০; খ-১)।
  • এখানে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, اور اپنے لئے باقاعدہ الگ بیعت کی ضرورت نہیں سمجھی অর্থাৎ এবং আমার জন্য আলাদাভাবে বাইয়েত করার প্রয়োজন মনে করেননি। মোদ্দাকথা, মির্যা সাহেব স্বীয় স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদাভাবে বাইয়েত নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। আর তাই মির্যা সাহেবের স্ত্রী নুসরাত জাহান আমৃত্যু বাইয়েত ছাড়াই ছিলেন।

এখন এর কী জবাব দেবেন?

শেষকথা হল, মুসায়লামা কাজ্জাব ইতিপূর্বে মুসলমানদের মধ্যে শামিল ছিল বলেই সে নবুওয়ত দাবী করায় শুধু মুরতাদ সাব্যস্ত হয়নি, একজন কাজ্জাব (বড় মিথ্যাবাদী)ও সাব্যস্ত হয়। সুতরাং এই একই কারণে মির্যা কাদিয়ানীও মুরতাদ ও কাফের। এতে যার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকবে সেও কাফের হয়ে যাবে।

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক