Home Blog Page 30

কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়?

বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম
কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়? তারা কেন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়? সংক্ষেপে জেনে নিন!

বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে মির্যা কাদিয়ানীর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার সামান্য তালিকা তুলে ধরছি। যেমন,

১ . মুলহাম (তাযকিরাহ পৃ-০৬; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৬৮ ইং)।

২. বায়তুল্লাহ (তাযকিরাহ পৃ-২৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮১ ইং)।

৩. মুজাদ্দিদ (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)।

৪. মামুর মিনাল্লাহ (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)।

৫. নাযীর (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)।

৬. আদম, বিবি মরিয়ম, আহমদ (তাযকিরাহ পৃ-৫৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮৩ ইং)।

৭. মুরসাল (তাযকিরাহ পৃ-৯৯; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮৪ ইং)।

৮. মাসীলে মসীহ (তাযকিরাহ পৃ-১৪৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯১ ইং)।

৯. তাওহীদ এবং তাফরিদ (তাযকিরাহ পৃ-১৬৪; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯২ ইং)।

১০. কুন ফা-ইয়াকুন (তাযকিরাহ পৃ-১৬৪; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯২ ইং)।

১১. মসীহ ইবনে মরিয়ম (তাযকিরাহ পৃ-১৭৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯৩ ইং)।

১২. ইমাম মাহদী এবং মসীহ ঈসা (তাযকিরাহ পৃ-২০৯; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯৪ ইং)।

১৩. ইমামুয যামান (রূহানী খাযায়েন খ-১৩ পৃ-৪৯৫; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৮৯৮ ইং)।

১৪. খোদা দাবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৩ পৃ-১০৩; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৮৯৮ ইং)।

১৫. নবুওয়তী প্রাসাদের সর্বশেষ ইট বা শেষনবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৬ পৃ-১৭৭-৭৮; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০০ ইং)।

১৬. কাশফ অবস্থায় নিজেকে একজন নারীরূপে খোদার সাথে সহবাস করার দাবী (ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট, নং ৩৪, পৃ-১৩; রচনাকারী কাদিয়ানীর ঘনিষ্ট সহচর কাজী ইয়ার মুহাম্মদখান)।

১৭. বুরুজি খাতামুল আম্বিয়া বা শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর অবতার। (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)।

১৮. জিল্লি মুহাম্মদ (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)।

১৯. জিল্লি, বুরুজি, উম্মতি নবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)।

২০. শরীয়তবাহক নবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৫ পৃ-৪৩২ এবং খ-১৭ পৃ-৪৩৫-৩৬; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০২ ইং)।

২১. শ্রীকৃষ্ণের অবতার (রূহানী খাযায়েন খ-২২ পৃ-৫২২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০৭ ইং)।

বিস্তারিত আলোচনা :

কাদিয়ানীদের প্রচারপত্রে (আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত-এর পরিচিতি-তে) ‘আমাদের ধর্ম বিশ্বাস’ শিরোনামে ‘নূরুলহক’ (রচনাকাল ১৮৯৪ইং) বইয়ের উদ্ধৃতিতে তারা তাদের যে ‘ধর্মবিশ্বাস’ উল্লেখ করেছে তা তাদেরই দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের মত অনুসারে বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে বাতিল। কেননা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণকালে মির্যা কাদিয়ানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তিনি (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:) এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ আছে।” (দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১)। এখানে একদম পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মাঝে প্রত্যেকটি বিষয়ে বিরোধ রয়েছে। অর্থাৎ তাদের সাথে যে আমাদের বিরোধ আছে একথা নতুন নয়, অনেক আগেই তারা তাদের রচনাবলীতে স্বীকার করে লিখে গেছে। ধূর্ত কাদিয়ানী নেতারা সাধারণ মানুষকে তাদের দলে ভিড়ানোর উদ্দেশ্যে এগুলো ভুলেও প্রকাশ করেনা। অধিকন্তু মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো স্ববিরোধ কথাবার্তায় ভরপুর। ফলে মির্যার বইগুলো নিরপেক্ষভাবে পড়লে যে কারো পক্ষে ‘কাদিয়ানী জামাত’ ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। এবার তাদেরই বিভিন্ন বই থেকে সংক্ষেপে তাদের মারাত্মক কিছু ঈমান-বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাস এখানে তুলে ধরছি। যেমন-

১। মির্যা কাদিয়ানীর দাবী হল, “অতএব, যেমনটি বারাহীনে আহমদীয়াতে খোদাতালা বলেছেন, আমি আদম, আমি নূহ, আমি ইবরাহিম, আমি ইসহাক, আমি ইয়াকুব, আমি ইসমাইল, আমি মূসা, আমি দাউদ, আমি ঈসা ইবনে মরিয়ম, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ বুরুজীভাবে।” (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫২১)।

এখন আমি নতুন কনভার্টেট কাদিয়ানীবন্ধুদের জিজ্ঞাস করতে চাই, কাদিয়ানী নেতারা যখন আপনাদেরকে কাদিয়ানীধর্মের দিকে দাওয়াত দিয়েছিল তখন কি মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত দাবীগুলোর সামান্য কিছুও আপনাদেরকে বলেছিল? ৯৯% শিউর যে, ওরা আপনাদেরকে এগুলো বলেনি। আচ্ছা, আপনারা শুধু একবার ভাবুন! মির্যা কাদিয়ানীর দাবী অনুসারে সে যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়, তখন কলেমার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর কী তাৎপর্য দাঁড়াবে? অতএব খুবই ভাবিয়ে দেখা দরকার।

এখন হয়ত জানতে চাইবেন যে, মুসলমানদের কলেমা’র “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থে কাদিয়ানীরা কী এমন বিকৃতি ঘটিয়েছে? উত্তরে বলব, জ্বী, অবশ্যই তারা বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। যেমন তাদেরই বইতে পরিষ্কার লিখা আছে, “আমাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। কেননা মসীহে মওঊদ [মির্যা কাদিয়ানী] নবী করীম (সা:) থেকে ভিন্ন কেউ নন। তিনি নিজেও বলতেন, আমার সত্তা তাঁর সত্তাতে পরিণত। এমনকি [তিনি এও বলতেন] যে ব্যক্তি আমার আর মুহাম্মদ মুস্তফার মাঝে পার্থক্য করে সে না আমাকে চিনল, না আমাকে দেখল। এটি এইজন্য যে, আল্লাহতালার ওয়াদা ছিল, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন [মুহাম্মদ মুস্তফা]’কে দুনিয়াতে আরেকবার পাঠাবেন। যেমন ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট। সুতরাং মসীহে মওঊদ-ই স্বয়ং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। যিনি ইসলাম প্রচার করতে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার আগমন করেছেন। তাই আমাদের [কাদিয়ানিদের] জন্য নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র স্থলে অন্য আর কেউ আসত তখনই কেবল [নতুন কলেমার] প্রয়োজন পড়ত।” (কালিমাতুল ফছল ৬৮, ষষ্ঠ অধ্যায়)। সবাই পড়ুন, নাউযুবিল্লাহ।

কেননা তারা মির্যা কাদিয়ানীকে মুহাম্মদ (সা:) মেনে নিয়ে বলছে যে, এইজন্যই তাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। তার মানে দাঁড়াল, তারা ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ হতে উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে মির্যা গোলাম আহমদকে। এমতাবস্থায় তারা কিভাবে মুসলমান হিসেবে গণ্য হতে পারে? তারপর চলুন, আমাদের প্রিয় নবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর একটি রচনায় কী লিখা আছে জেনে নিই।

২। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ২৬৩; সারমর্ম)। মির্যার সম্পূর্ণ-বক্তব্যটি এরকম, ‘আর যেহেতু রাসূল (সা:)-এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্ব হল, হিদায়াতের প্রচারকার্য সম্পূর্ণ করা। রাসূল (সা:)-এর যুগে প্রচারকার্য চালানোর কোনো মিডিয়া না থাকায় তা (সম্পূর্ণ করা) সম্ভব ছিলনা। তাই কুরআন শরীফের আয়াত “ওয়া আ-খারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকূ-বিহিম” (সূরা জুম’আ ০৩)’র মধ্যে রাসূল (সা:)-এর দ্বিতীয় আগমনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন এই জন্যই সৃষ্টি হয়েছে যে, যাতে রাসূল (সা:)-এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্বটা অর্থাৎ দ্বীন ও হিদায়াতের প্রচারকার্যের পরিপূর্ণতা যা উনার (সা:) হাতেই সম্পূর্ণ হওয়ার ছিল, সেই সময় (রাসূলের যুগে) কোনো প্রচার মিডিয়া না থাকায় তা সম্পূর্ণ হয়নি। অতএব রাসূল (সা:) আপনা বুরুজি রঙ্গে (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীর স্বরূপে) দ্বিতীয় আগমনের মাধ্যমে সেই আবশ্যিক দায়িত্বটা এমন যুগে সম্পূর্ণ করলেন যখন পৃথিবীর সমস্ত কওম পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছানোর জন্য মিডিয়াগুলোর উদ্ভব হয়েছে।’ নাউযুবিল্লাহ।

এখানে আমি আপনাদের জিজ্ঞাস করতে চাই, যে ব্যক্তি বলতে পারে যে “রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি বা তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি; আমি পূর্ণ করেছি”। নাউযুবিল্লাহ। এমন ব্যক্তি তো প্রকাশ্য নবীর দুশমন এবং নিকৃষ্ট কাফের! এখন তাহলে এই ব্যক্তি কিভাবে ইমাম মাহদী হতে পারে? আপনাদের মনে কি এধরণের প্রশ্ন জাগে না? এরপর দেখুন, এই মির্যা কাদিয়ানী আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর শানে আরো কী কী বেয়াদবী করল?

৩। মির্যা কাদিয়ানী তার বইতে লিখেছে “আমার আলামত (মুজিজা) দশ লক্ষ” (রূহানী খাযায়েন ২১/৭২)। ”রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মুজিজা (মাত্র) তিন হাজার” (রূহানী খাযায়েন ১৭/ ১৫৩)। নাউযুবিল্লাহ। এখানে বলে রাখতে চাই, মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ২১ খন্ডের ৬৩ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, আলামত আর মুজিজা একই।

এখন তাহলে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে আমাদের প্রিয় নবী (সা:)-এর চেয়েও মর্যাদায় বড় হওয়ার দাবী করল না কিভাবে? এমন বেয়াদব কখনো কি আশেকে রাসূল বা নবীজীর পূর্ণ আনুগত্যকারী হওয়ার দাবী করতে পারে? কখনো নয়। এবার চলুন, মির্যা কাদিয়ানীর মুখ থেকেই শুনে আসি। সে যে নিজেকে আমাদের প্রিয় নবী (সা:) থেকেও শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবী করে লিখে গেছে এখানে তারই বই থেকে উল্লেখ করছি।

৪। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “বরং সত্য এটাই যে, হযরত (সা:)-এর রূহানীয়ত ছয় হাজার বছরের শেষাংশে তথা ঐ বছরগুলোর তুলনায় এই দিনগুলোতে সব চেয়ে শক্তিশালী, স্বয়ংসম্পন্ন এবং সুদৃঢ়, বরং চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়। যেজন্য আমরা তলোয়ার আর যুদ্ধদলের মুখাপেক্ষী নই।” (খোতবাতুল ইলহামিয়্যাহ [আরবী], রূহানী খাযায়েন ১৬/২৭১-৭২)।

  • এখানে মির্যার কথাটির সারমর্ম হল, তার দাবীমতে সে দ্বিতীয় মুহাম্মদ (সা:)। নাউযুবিল্লাহ। যেমন সে লিখছে, “আবার এ পুস্তকেই উক্ত ওহীর সাথে আল্লাহ’র এ ওহী আছে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ওয়াল্লাযীনা মা’আহু আশিদ্দাউ আলাল কুফফারি রুহামাউ বাইনাহুম’। এ ঐশী বাণীতে আমার নাম মুহাম্মদ রাখা হয়েছে এবং রাসূলও।” (সূত্র, একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৪, দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ, অক্টোবর ২০০১ইং)। এভাবেই সে নিজ দাবীমতে, কথিত ছয় হাজার বছরের শেষাংশে এসেছে। উল্লেখ্য, মির্যার দাবী হল, বনী আদমের সময়সীমা পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত মাত্র সাত হাজার বছর। আর মাত্র এক হাজার বছর পরেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ঐ হিসেবে সে দাবী করছে, তার আগমন ছয় হাজার বছরের শেষাংশে (অর্থাৎ এই সময়) আগের মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর চাইতেও শক্তিশালী এবং স্বয়ংসম্পন্ন অবস্থায় হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। যাইহোক, কুরআন হাদীসের বর্ণনা অনুসারে কেয়ামতের সঠিক খবর মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো জানা নেই। মির্যা কাদিয়ানী তার এ সমস্ত কথাবার্তায় প্রকারান্তরে নিজেকে যেন খোদা হওয়ারই দাবী করল! অপ্রিয় হলেও সত্য যে, তার রচনার অন্য এক জায়গায় তার ‘খোদা হওয়ার দাবী’ও রয়েছে। যেমন,

মির্যা কাদিয়ানীর বই ‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম’ (উর্দূ) এর মধ্যে সে নিজের খোদায়িত্বের দাবী করে লিখেছে, ‘ওয়া রাআইতুনী ফিল মানামি আইনাল্লাহি ওয়া তাইয়াক্কানতু আন্নানি হুয়া’ অর্থাৎ আমি নিজেকে স্বয়ং খোদা হিসেবে স্বপ্নে দেখি এবং নিশ্চিত হলাম যে, নিশ্চয়ই আমি তাই। (আরো দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত ‘রূহানী খাযায়েন’ খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৫৬৪)। এখানে সে স্বপ্নের মধ্যে নিজেকে খোদাররূপে দেখতে পায়। সে এটুকুর মধ্যে কথা শেষ না করে তারপরেই বলেছে, ‘এবং নিশ্চিত হলাম যে, নিশ্চয়ই আমি তাই’। নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং তার এই স্বপ্নকে এইজন্যই আর কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। সে তার ‘চশমায়ে মসীহি’ (চতুর্থ বাংলা সংস্করণ ২০১৮) বইয়ের ৪৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, আল্লাহতালা তাকে সম্বোধন করে বলেছেন, আন্তা মিন্নী বি-মান-যিলাতী আওলাদী অর্থাৎ ‘তুমি আমার পুত্র স্থানীয়’। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে ‘খোদার স্ত্রী’ হওয়ার দাবীও করেছে। (দেখুন, তারই কথিত এক সাহাবী কাজী ইয়ার মুহাম্মদ খান বিরচিত ‘ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট’ পৃষ্ঠা নং ১৩)। এখানে শুধুমাত্র বইটির উক্ত উর্দূ অংশের বঙ্গানুবাদ করে দেব। লিখা আছে : ‘মসীহ মওউদ (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) একদা নিজের একটি অবস্থা এভাবে প্রকাশ করেছেন যে, একবার কাশফের অবস্থা উনার উপর এমনভাবে চেপে বসল যে, তিনি যেন একজন স্ত্রীলোক। আর আল্লাহতালা আপনা পুরুষত্বের শক্তি তার উপর প্রয়োগ করলেন, বুঝদারদের বুঝার জন্য ইশারাই যথেষ্ট।’ সুতরাং তার খোদা, খোদার পুত্র এবং খোদার স্ত্রী দাবী করার প্রমাণও পাওয়া গেল।

এখন আমি আপনাদের জিজ্ঞাস করতে চাই, কাদিয়ানী নেতারা যখন আপনাদেরকে তাদের জামাতে ভিড়াতে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিল তখন যদি আপনারা তাদের আভ্যন্তরীণ এসমস্ত নিকৃষ্ট বিষয়গুলো জানতেন কখনো কি খোদা, খোদারপুত্র এবং খোদার স্ত্রী দাবীদার এমন একজন মস্তিষ্ক-বিকৃত ব্যক্তিকে ইমাম মাহদী মেনে নিতেন? নিশ্চয়ই না। এবার বুঝলেন তো ওরা কিজন্য বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মানুষকে গোপনে দাওয়াত দেয়! কেন কথায় কথায় আলেম-সমাজকে নিন্দা করে! এরা ধর্মের নামে সারাবছর সদস্যদের আয়ের ১৬% মাসিক চাঁদা তুলে খায়, কথিত বেহেশতি মাক্ববারা’র ওসীয়তের নামে মৃতব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১০% হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে খায়; এরপরেও এরা ধর্ম-ব্যবসায়ী হয়না, আলেমরাই নাকি ধর্ম-ব্যবসায়ী! যাইহোক, এরা ভালো করেই জানে যে, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সাথে আপনারা তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়ামাত্রই তাদের আভ্যন্তরীণ কুফুরীগুলো ফাঁস হয়ে যাবে। তখন আর আপনাদেরকে কাদিয়ানী বানানো সম্ভব হবেনা। এখন বলতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর যে মস্তিষ্ক-বিকৃতি রোগও ছিল তার প্রমাণ কী? হ্যাঁ, তার প্রমাণ হল,

৫। মির্যা কাদিয়ানী ‘ঈসা (আ:) আকাশ থেকে দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিহিত অবস্থায় পৃথিবীতে নাযিল হবেন’ মর্মে মুসলিম শরীফের (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতিস সা’আহ, হাদীস নং ৭০৭৮) একটি হাদীসকে নিজের সাথে একজাস্ট করতে ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছে, “ঐ দু’টি চাদর হতে আমার দু’টি রোগের প্রতি ইংগিত। একটি উপরাংশে আরেকটি নিম্নাংশে। অর্থাৎ مِراق اور کثرت بول তথা সিজোফ্রেনিয়া (মস্তিষ্ক-বিকৃতি) এবং বহুমুত্র রোগ।” (দেখুন, মালফুযাত ৫/৩৩; নতুন এডিশন, তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন [বাংলা] পৃ-৪৯; লিখক মির্যা কাদিয়ানী)।

আপনারা প্রসিদ্ধ ‘উর্দূ টু উর্দূ অভিধান’ ফিরোজুল লুগাত দেখুন, সেখানে ‘মিরাক’ অর্থ ‘এক কিসিম কা মালিখোলিয়া জুনূন’ (অর্থাৎ এক ধরণের মস্তিষ্ক-বিকৃত পাগল) বলেই লিখা আছে। আপনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ ‘উইকিপিডিয়া’ থেকেও ঐ রোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন। সেখানে সিজোফ্রেনিয়া রোগের বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, ‘এ রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না। এর লক্ষণগুলো হলো উদ্ভট চিন্তা, বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখা, অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা এবং অন্যরা যা শুনতে পায় না এমন কিছু শোনা।’

এবার আমি জিজ্ঞাস করতে চাই, আপনারা কি কখনো আত্মস্বীকৃত এমন একজন মস্তিষ্ক-বিকৃতির কাউকে ইমাম মাহদী মানতে পারেন? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকে ইমাম মাহদী করে পাঠাবেন তাকে কি একজন সুস্থ্য-সবল করে পাঠাতে অক্ষম? অবশ্যই না। এবার হয়ত আপনাদের বুঝে এসে গেছে যে, মির্যা কাদিয়ানী কিজন্য নিজেকে এত কিছু দাবী করেছিল? যার ফলে সে একজন পাগল আর উম্মাদ বলেই সাব্যস্ত হচ্ছে। এই যে দেখুন, সে নিজের ব্যাপারে আরো কী দাবী করল? সে লিখেছে,

৬। “আদমের বাগান অদ্য পর্যন্ত ছিল অসম্পূর্ণ; আমার আগমনে তা ফল ও পাতায় হয়ে যায় পরিপূর্ণ।” (দেখুন, বারাহীনে আহমদীয়া ৫ম খন্ড, রূহানী খাযায়েন ২১/১৪৪)। অন্যত্রে লিখেছে, ‘ইন্নী মা’আল আকরাম, লাও লা-কা লামা খালাকতুল আফলাক’ অর্থাৎ আমি বুযূর্গদের সাথেই রয়েছি। যদি তুমি না হতে তাহলে আমি আসমান সমূহকে সৃষ্টি করতাম না। (সূত্র, তাযকিরাহ, চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫২৫; ইলহাম ০৪-০৫-১৯০৬ ইং)।

এখানে আমার প্রশ্ন হল, যদি কেউ মির্যার উক্ত কথাগুলো বিশ্বাস করে তাহলে কি সে মুহাম্মদ (সা:)-এর চেয়েও মির্যা কাদিয়ানীকে শ্রেষ্ঠ মানলো না? কোনো মুসলমান কি কখনো এটি মানতে প্রস্তুত হবে? অতএব, মির্যা কাদিয়ানী যে একজন মস্তিষ্ক-বিকৃত মানুষ ছিল তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।

এবার ভেবে দেখুন, এই ব্যক্তিকে অন্তত মুসলমান মানতেও আপনি প্রস্তুত আছেন কিনা? যেহেতু আপনাদেরকে একদিন অবশ্যই মরতে হবে। কাজেই কাকে মানবেন আর কাকে ছাড়বেন তা খুব ভেবেচিন্তে হয় যেন। দুনিয়ার তুচ্ছ লোভ-লালসা আর নিজেদের অজ্ঞতার কারণে কোনোভাবেই মহামূল্যবান ঈমানটা বরবাদ করা যাবে না! সর্বদা বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে ও যোগাযোগ বজায় রেখে চলবেন। তাহলে আশা করা যায়, পৃথিবীর কোনো ভন্ড প্রতারক সহজে ধোকা দিয়ে আপনাদের ঈমান লুটতে পারবেনা, ইনশাআল্লাহ।

আপনারা জেনে আরো অবাক হবেন, এই নিকৃষ্ট ভন্ড প্রতারক তার বইয়ের কোনো কোনো জায়গায় নিজেকে মুহাম্মদ (সা:)-এর দাস বলেও লিখেছে। এটি কেবল সাধারণ মানুষকে বুঝানোর জন্যই যে, সে কতবড় আশেকে রাসূল! অথচ একটু আগেই দেখেছেন যে, সে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য কী সমস্ত কথাবার্তা লিখে গেছে। এবার দেখুন, এই পাগল-উম্মাদ আর মিথ্যাবাদী লোকটি আমাদের প্রিয় নবী (সা:) সম্পর্কে আরো কী লিখে গেছে?

৭। সে লিখেছে, “কিন্তু তোমরা খুব মনযোগ সহকারে শুনে নাও যে, এখন মুহাম্মদ (সা:)-এর নামের তাজাল্লি (মর্যাদা বা বড়ত্ব) প্রকাশ করার সময় নয়। অর্থাৎ জালালি রঙ্গের কোনো খেদমত অবশিষ্ট নেই। কেননা সেই জালাল (মর্যাদা বা বড়ত্ব) যথাযথ পরিমাণে প্রকাশিত হয়ে গেছে। সূর্যের কিরণ এখন আর বরদাশত হওয়ার নয়। এখন চাঁদের শীতল আলোর প্রয়োজন। আর সেটি আহমদের রঙ্গে আমিই।” (আরবাঈন নং ৩, রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪৫-৪৬)।

এখন আমি প্রশ্ন করতে চাই সেসব নব দীক্ষিত কনভার্টেট কাদিয়ানীবন্ধুদের, যারা মনে করেন ইসলামের মূলধারা তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত থেকে বের হয়ে কাদিয়ানী জামাতে যোগ দিয়ে সঠিক কাজ করেছেন তারা কি কখনো মেনে নিবেন যে, এখন মুহাম্মদ (সা:) এর মর্যাদা বা বড়ত্ব প্রকাশ করার সময় নয়! নাউযুবিল্লাহ। এরপরেও আপনারা কিভাবে ভাবছেন যে, মির্যা কাদিয়ানীকে মেনে নিয়ে সঠিক পথে আছেন? আপনারা কি মনে করেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর মত একজন আত্মস্বীকৃত পাগলকে ‘শেষনবী’ বিশ্বাস করে পরকালে নাজাত পাবেন? এখন হয়ত জানতে চাচ্ছেন যে, মির্যা কাদিয়ানী সত্যিই কি নিজেকে শেষনবী হওয়ারও দাবী করেছিল? জ্বী হ্যাঁ, করেছিল। এই যে প্রমাণ দেখুন।

৮। মির্যা কাদিয়ানী তার বই ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ এর মধ্যে লিখেছে : ‘দো কিসিম কে মুরসাল মিনাল্লাহ কতল নিহি হুয়া করতে (১) এক উয়ো নবী জু সিলসিলাহ কে আউয়াল ফর আতে হেঁ জেইছা কে সিলসিলায়ে মূসোবিয়া মে হযরত মূসা আওর সিলসিলায়ে মুহাম্মদিয়া মে হামারে সাইয়েদ ও মওলা আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (২) দোসরে উয়ো নবী আওর মামূর মিনাল্লাহ জু সিলসিলাহ কে আখের মে আতে হেঁ জেইসা কে সিলসিলায়ে মূসোবিয়া মে হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওর সিলসিলায়ে মুহাম্মদিয়া মে ইয়ে আ’জেজ।’ অর্থাৎ “আল্লাহর বিধান, তাঁর দুই ধরনের প্রেরিত পুরুষ নিহত হন না। (১) প্রথমত: ঐ নবী যিনি সিলসিলার সূচনাতে আগমন করেন, যেমন মুসায়ী সিলসিলায় হযরত মুসা আলায়হিস সালাম এবং মুহাম্মদীয়া সিলসিলায় আমাদের প্রভু ও মওলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। (২) দ্বিতীয়ত: ঐ সকল নবী ও আল্লাহর প্রেরিতগণ যারা সিলসিলার শেষে আগমন করেন- যেমন, মুসায়ী সিলসিলায় হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম এবং মুহাম্মদী সিলসিলায় এই অধম।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন [উর্দূ] খন্ড ২০ পৃষ্ঠা নং ৬৯-৭০; রচনাকাল ১৯০৩ইং, তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ৮২; মূল লিখক মির্যা কাদিয়ানী)। এখানে সে পরিষ্কার শব্দে লিখেছে, সে নাকি মুহাম্মদী ধারাবাহিকতায় একজন শেষনবী। কী বুঝলেন? যে লোক নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করলো সে লোকই কিন্তু নিজেকে দাবী করছে একজন ‘শেষনবী’! যে কথা সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াত ‘ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন’ (এবং তিনি শেষনবী) এর পুরো বিরোধী। নবীজীর হাদীস ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ (আমার পর আর কোনো নবী নেই) এরও বিরোধী।

অথচ এই লোক নিজেকে নবী দাবী করার আগে প্রায় ১৮৯১ সালের দিকে রচিত তার ‘হামামাতুল বুশরা’ বইতে নিজের নবুওয়ত দাবী অস্বীকার করেছে এবং মুহাম্মদ (সা:)-কে একজন ‘শেষনবী’ আখ্যা দিয়ে লিখে গেছে। যেমন তার হামামাতুল বুশরা (বাংলা অনূদিত) বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে : ‘আমাদের রাসূল (সা:)-এর পর কীভাবে কোন নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।’ বইটির ১৪২ নং পৃষ্ঠায়সে এও লিখেছেন : ‘আর আমার দ্বারা নবুওয়তের দাবী করে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভবপর নয়।’

এখন তাহলে মির্যা কাদিয়ানী নিজেই নিজের কথা অনুসারে নবুওয়তের দাবী করে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল কিনা? এবার হয়ত বুঝতে পেরেছেন যে, মূলত এই ছিদ্রগুলোর উপর পর্দা ফেলতেই কাদিয়ানী নেতারা মুসলমানদের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিত বিষয় নিয়ে তর্ক শুরু করে। যাতে সাধারণ মানুষদের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের আগ্রহ নষ্ট করতে পারে। এই হল তাদের কুটকৌশল। জনৈক কাদিয়ানী একবার আমাকে প্রশ্ন করেছিল যে, আপনাদের যখন ঈসা (আ:)-এর জীবন-মৃত্যু নিয়ে বাহাস করার আহবান জানানো হয় তখন আপনারা সেটিকে এড়িয়ে যান কেন?

তখন আমি উত্তরে বললাম, ঈসা (আ:) জীবিত থাকা কিংবা মৃত্যুবরণ করার বিশ্বাস বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়। আর একথা খোদ্ মির্যা সাহেবই লিখে গেছে। (দেখুন ‘আহমদী ও গয়ের-আহমদীদের মধ্যে পার্থক্য’ পৃ-১; বাংলা দ্বিতীয় পূনর্মুদ্রণ, মে ২০১৮ইং)। যেজন্য আমরা তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মির্যার আত্ম-জীবনী নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। যেহেতু তার দাবী হল, তাঁর প্রতি যে ঈমান আনবেনা তার পূর্বের ঈমানও গ্রহণযোগ্য নয়। (কালিমাতুল ফছল, ৩য় অধ্যায়; পৃ-৫২)। তারপর সে জনমের মত চুপ হয়ে যায়। এবার মুসলমানদের ব্যাপারে মির্যা কাদিয়ানীর ফতুয়াবাজী কীরকম ছিল দেখুন।

৯। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে (ক) “খোদাতালা আমার উপর প্রকাশ করেছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে আর তারা তা কবুল করেনি এমন ব্যক্তি মুসলমান নয় এবং এরা (পরকালে) পাকড়াও হবে। (সূত্র, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৫১৯; ইলহাম, মার্চ ১৯০৬ ইং, চতুর্থ এডিশন, লিখক মির্যা কাদিয়ানী)।

(খ) এবার কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফার বইতে কী লিখা আছে শুনুন, “প্রত্যেক মুসলমান যিনি হযরত মসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)’র বাইয়েতে শামিল হয়নি, সে যদিও হযরত মসীহ মওঊদের নামও শুনেনি, এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলাম থেকে বাহিরে।” (সূত্র, আয়নায়ে সাদাক্বাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ; অনলাইন এডিশন)। সুতরাং এ সমস্ত বক্তব্য হতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীকে স্বীকার না করা পর্যন্ত একজন মুসলমান কোনোভাবেই মুসলমান থাকতে পারবেনা, যদিও ঐ মুসলমান ব্যক্তিটি আল্লাহ এবং তার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা:)-এর উপর পরিপূর্ণ ঈমান রাখেনা কেন! তো একথাগুলো কি আপনারা মানেন? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও আপনারা কি আপনাদের মৃত পূর্ব-পুরুষদের এমনকি এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারকেও শুধু কাদিয়ানী না হওয়ার কারণে কাফের আর জাহান্নামী মনে করবেন? নাউযুবিল্লাহ।

শুধু একটি প্রশ্ন : এই পর্যায় কাদিয়ানীদেরকে শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই, মির্যা কাদিয়ানীর দাবী হল, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমেই সে নবীর মোকাম (মর্যাদা) লাভ করেছে! এতে বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে, তার নবুওয়ত দাবীর ভিত্তিটা মূলত আনুগত্য-ই।

বিপরীতে মির্যা কাদিয়ানীর রচনার আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখা আছে, “তাদের পরিষ্কার জানা আছে যে, আমরাও নবুওয়তের দাবীদারের প্রতি অভিশাপ দিই এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রবক্তা এবং হযরত হযরত (সা:)-এর খতমে নবুওয়তের উপর ঈমান রাখি এবং ওহীয়ে নবুওয়ত বন্ধ তবে (আমরা) ওহীয়ে বেলায়তেরই প্রবক্তা যেটি মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়তকে আশ্রিত করে ও তারই আনুগত্য দ্বারা আউলিয়ায়ে কেরামের অর্জিত হয়ে থাকে। যে আমাদের প্রতি এর চেয়ে বেশি কোনো কথার অভিযোগ করবে সে যেন তাকওয়া আর সততাই পরিত্যাগ করল।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ২/২৯৭; নতুন এডিশন)। সারকথা, প্রথমোক্ত বক্তব্য হল, সে আনুগত্য দ্বারা ‘নবীর মোকাম’ লাভ করেছে। আর শেষোক্ত বক্তব্য হল, আনুগত্য দ্বারা আউলিয়ায়ে কেরামের ন্যায় শুধুই ‘বেলায়ত’ লাভ হয় (অর্থাৎ নবী’র মোকাম লাভ হয় না)।

তাহলে আপনারা কিভাবে বিশ্বাস করতে পরেন যে, মির্যা কাদিয়ানী নবীজীর আনুগত্য দ্বারা নবীর মোকাম লাভ করার দাবীতে একজন সত্যবাদী? এটি কি তার অসঙ্গতিপূর্ণ দাবী আর ভন্ডামী নয়?

শেষকথা : এখানে শুধু তাদের লিফলেটের ‘আমাদের ধর্ম বিশ্বাস’ শিরোনামে তারা যে সূক্ষ্ম মিথ্যা আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষদের ধোকা দিতে চেয়েছে সেটুকুরই সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হল। নতুবা এভাবে তাদের মিথ্যা আর প্রতারণার মুখোশ উন্মোচন করতে শুরু করলে অনেক বড় পুস্তক হয়ে যাবে। পরিশেষে আমার কলিজার টুকরো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবন্ধুরা! আপনারা দয়া করে এলাকার মুসলমানদের ঈমানের পাহাদারী করতে এগিয়ে আসুন। বিজ্ঞ আলেম উলামাদের সাথে নিয়ে নিজ এলাকার মুসলমানদেরকে ‘কাদিয়ানীরা কেন অমুসলিম’ তা জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করুন আর কাদিয়ানীদেরকে বলুন, তারা তাদের আসল ধর্মবিশ্বাস আর যেন গোপন না করে। আর যেন মুসলমানদের তাদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা না করে। তারাও এদেশে থাকবে। এটি তাদের নাগরিক অধিকার। তবে যে যার আসল পরিচয় নিয়ে থাকবে। যেভাবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা নিজেদের আসল পরিচয় নিয়ে আছে। ভেজাল পণ্য তৈরী করা যেমন অপরাধ তেমনি সেটি প্রচার করাও অপরাধ। তাই যেহেতু কাদিয়ানী মতবাদ ইসলামের বাহিরে সম্পূর্ণ একটি নতুন ধর্মমত সেহেতু ইসলামের নামে সেটি মানুষের মাঝে প্রচার করাও অপরাধ। কারণ মির্যা কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল দাবীদার। আর একথা সবারই জানা যে, নবী ও রাসূলের ভিন্নতার কারণে ধর্মও ভিন্ন পরিচিতি লাভ করে। যেমন মূসা (আ:)-এর অনুসারীরা ইহুদী হিসেবে পরিচিত, ঈসা (আ:)-এর অনুসারীরা ঈসায়ী বা খ্রিস্টান হিসেবে পরিচিত। আর শেষনবী মুহাম্মদ (সা:)-এর অনুসারীরা মুসলমান বা মুসলিম হিসেবে পরিচিত। অনুরূপ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর (জন্মমৃত্যু : ১৮৩৯-১৯০৮ইং) অনুসারীরা কিজন্য মুসলমান পরিচয় ধারণ করবে? তারা বরং কাদিয়ানী বা মির্যায়ী নামে পরিচয় ধারণ করবে। ফলে তাদের বিবাহ-শাদী, সমাজ-ব্যবস্থা এবং জানাজা ও দাফন-কাফন ইত্যাদী কোনো কিছুর সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক নেই। আজকের মত এখানে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

বলে রাখা জরুরি, এখানে উল্লিখিত কোনো তথ্য কোনো কাদিয়ানী মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে তাকে নগদে দশ লক্ষ টাকা পুরষ্কৃত করা হবে। পারলে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। আর যদি মিথ্যা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে অবশ্যই ঐ মজলিসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সামনে মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি লানত দিয়ে তওবাহ করে ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে। যদি সাহস থাকে তাহলে আসুন, আমার চ্যালেঞ্জ কবুল করুন।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ শিক্ষাবিদ ও গবেষক ; যোগাযোগ – ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩

মেরাজ সশরীরে হয়েছিল মর্মে সমস্ত সাহাবীর বিশ্বাস

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মেরাজ সশরীরে হবার আকীদা একটি ইজমা ভিত্তিক তথা সর্বসম্মত আকীদা, এ মর্মে মির্যা কাদিয়ানীর স্বীকারোক্তি তারই লিখনী থেকে নিম্নরূপ,

  • “আমাদের উলামায়ে কেরামের উপর আল্লাহ রহম করুন। আমাদের নেতা ও মওলা (সা.)-এর মান মর্যাদা তারা লক্ষ্য করেনা যে, আল্লাহতালার সব চেয়ে বেশি করুনা ছিল তাঁর উপর। কিন্তু তথাপি হযরত (সা.)-কে সশরীরে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে অর্থাৎ মেরাজের রজনীতে তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল মর্মে সমস্ত সাহাবীর তেমনই বিশ্বাস ছিল যেমনটা মসীহ (ঈসা)-কে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে এই যামানার মানুষের বিশ্বাস। অর্থাৎ সশরীরে (আকাশে) উঠিয়ে যাওয়া অতপর ফিরে আসা। কিন্তু তথাপি হযরত আয়েশা (রা.) একথা মানতেন না। তিনি বলতেন যে, এটি (মেরাজ) একটি সত্য স্বপ্নই ছিল মাত্র। যেজন্য নাউযুবিল্লাহ কেউ না তাঁর নাম নাস্তিক বা ভ্রষ্ট রেখেছে আর না ইজমার বিপরীতে চলে যাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে।” (রূহানী খাযায়েন ৩/২৪৭-৪৮)।

প্রখ্যাত মুহাদ্দেসীন ও হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত রেওয়াতটি সূত্রের বিচারে দুর্বল ও অপ্রমাণিত। স্ক্রিনশট

এবার নুযূলে মসীহ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর স্বীকারোক্তি কেমন ছিল পড়ুন!মির্যা সাহেব লিখেছেন,

“মসীহ এর আগমনী ভবিষ্যৎবাণী প্রথমস্তরের ভবিষ্যৎবাণী। সবাই সর্বসম্মতিক্রমে এটি গ্রহণ করে নিয়েছে। এর তাওয়াতূরের মর্যাদাও লাভ হয়েছে।” (রূহানী খাযায়েন ৩/৪০০; সারাংশ)।

“আল্লাহতালা আমার পূর্বে মুসলমানদের প্রতিভা মসীহ’র সশরীরে অবতরণের দিকেই ফিরিয়েছেন কিন্তু আমার উপর এই রহস্য উন্মোচন হয় যে, তার অবতরণ সশরীরে নয়, বরং রূহানীভাবেই হবে।” (রূহানী খাযায়েন ৫/৫৫৩)।

“তাওয়াতূর বিষয়ক কোনো কিছু অস্বীকার করা প্রকারান্তরে ইসলাম-ই অস্বীকার করা।” (রূহানী খাযায়েন ১৩/২০৬)।

শেষকথা : এখন সারমর্ম দাঁড়াল এই যে, নবী করীম (সা.)-এর মেরাজ সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল, এটি সমস্ত সাহাবীর বিশ্বাস ছিল বলে খোদ মির্যায়ী রচনাই সাক্ষী। হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর আগমনের ভবিষ্যৎবাণী একাধারে উম্মাহার ইজমা-ভিত্তিক আকীদা (جسکو سب نے بالاتفاق قبول کرلیاہے) এবং এর তাওয়াতূরের মর্যাদাও লাভ হওয়া, কথাগুলো স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী নিজেই লিখে গেছেন। তিনি এও লিখে গেছেন যে, ইতিপূর্বের সমস্ত মুসলমানের বিশ্বাস ছিল যে, ঈসা মসীহ (আ.) সশরীরেই অবতরণ করবেন। আর এই বিশ্বাস একটি তাওয়াতূর পর্যায়ের বিশ্বাস ছিল। মির্যা সাহেব লিখেছেন, “তাওয়াতূর বিষয়ক কোনো কিছু অস্বীকার করা প্রকারান্তরে ইসলাম-ই অস্বীকার করা।” এখন প্রশ্ন হল, বর্তমানে কেউ ঈসা (আ.) সম্পর্কিত কাদিয়ানী অনুরূপ কনসেপ্ট লালন করার অর্থ কি সাহাবায়ে কেরামের মত ও পথের বিপরীতমুখী কনসেপ্ট লালন করা নয়? তাহলে সাহাবায়ে কেরামের মতের বিপরীতে অবস্থান করে কোনো কাদিয়ানী কিভাবে নিজেকে মুসলমান দাবী করতে পারে? নাকি তারা বলতে চাচ্ছে যে, সাহাবায়ে কেরামের ঐ মত ও পথ ভুল ছিল! নাউযুবিল্লাহ।

জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

মির্যা কাদিয়ানীর বাণীতে অমুসলিমকে ‘সালাম’ দেয়া অনুচিত

আমরা কিজন্য কোনো আহমদী নামের কাদিয়ানীবন্ধুকে সালাম দিই না কিংবা তাদের দেয়া “সালাম” এর উত্তর নিই না? এর জবাব স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী থেকেই দেয়া হল। তিনি নিজেই স্বীকার করে লিখে গেছেন যে, কাফেরদের জন্য আসসালামু আলাইকুম – শব্দচয়নে লিখা (এবং বলা) অনুচিত।

উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদ নিম্নরূপ –

মির্যা সাহেব লিখেছেন :-

  • “তিনি (অর্থাৎ মৌলভি মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী রহঃ) স্বীয় প্রেরিত পত্রে [মির্যার উদ্দেশ্যে] ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ও লিখতেন। অথচ কাফেরদের জন্য এইরূপ শব্দচয়নে লিখা অনুচিত।” (মির্যা কাদিয়ানী রচিত মাকতুবাত, নং ৫৭; খ-৫, অধ্যায় নং ২)। স্ক্রিনশট
  • উল্লেখ্য, শায়খ হোসাইন বাটালভী রহঃ তদানীন্তন সময়কার একজন সুনামধন্য আহলে হাদীস মাসলাকের বিশিষ্ট স্কলার ছিলেন। তাঁর পূর্ণ নাম আবু সাঈদ মুহাম্মদ হোসাইন বাটালভী। তিনি আর মির্যা কাদিয়ানী দুইজনই সমবয়সী ও বাল্যবন্ধু ছিলেন। দুইজনই ‘গুল আলী শাহ’ নামক একজন শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী ব্রিটিশ সরকারের প্ররোচনায় খতমে নবুওয়তকে অস্বীকার করে যখনি ‘নবী’ দাবী করলেন তখনি দুইজনের পুরনো বন্ধুত্বে ফাটল ধরা শুরু করে।
  • শায়খ বাটালভী (রহ.) মির্যাকে বারবার বুঝাতে চেষ্টা করেন এবং ভন্ডনবী মুসাইলামা কাজ্জাবের পথ থেকে ফিরে আসতে তাগিদ দেন। নানা সময় এই নিয়ে তার নিকট পত্রও প্রেরণ করেন। কিন্তু পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পূজারি ও দুনিয়া আসক্ত মির্যা কাদিয়ানী স্ব অবস্থানেই অটল থাকলেন। তিনি ঈমানের বিনিময়ে দুনিয়াকেই প্রাধান্য দেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আযাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধ শিবিরেই নাম লিখালেন এবং জিহাদের বিরুদ্ধে ফতুয়াবাজি শুরু করেন। তাপরবর্তীতে শায়খ হোসাইন বাটালভী (রহ.) সহ সকলের সম্মিলিত ফতুয়া অনুসারে মির্যা কাদিয়ানী নিঃসন্দেহে একজন মুরতাদ ও কাফের আখ্যায়িত হন। স্ক্রিনশট
  • কাদিয়ানিরা কাফের কেন? ডকুমেন্ট সহ জানতে পড়ুন ক্লিক

এক নজরে হাদীসে বর্ণিত প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী

কাদিয়ানীদের আরো চারখানা প্রশ্নের উত্তর

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

চারটি প্রশ্নের জবাব :

১। আপনি বলেছেন হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন “আমার পরে নবী নাই”। আবার আপনারাই আল্লাহর নবী ঈসা নাবীউল্লাহ’র আসার অপেক্ষা করেন। এটা কি আপনাদের মোনাফেকী নয়?

২। নবীদেরকে খতম করনেওয়ালা বলতে আপনি কী বুঝেন? সব নবীই তো হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর ইন্তেকালের আগেই মারা গেছেন। তাহলে হযরত মুহাম্মদ (সা:) নবীদের খতম করলেন কিভাবে?

৩। হাদীস শরীফে ভবিষ্যতে আগমনকারী হযরত ঈসা (আ:)-কে নাবীউল্লাহ বা আল্লাহ’র নবী শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কি আপনি এটি মানেন যে, ঈসা (আ:) আল্লাহ’র নবীর পদে থাকবেন?

৪। পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ:)-কে ‘রসূলান ইলা বানী ইসরাঈলা’ বলা হয়েছে। তিনি আবার যখন আসবেন তখন কি কুরআনের এই অংশ বাতিল হবে?

(বানান ও শব্দচয়ন পরিমার্জিত সহ)।

জবাব :

[১] হাদীসের ভাষ্য, লা নাবিয়্যা বা’দী (لا نبى بعدى) অর্থাৎ আমার পরে নবী নাই, এই হাদীস কাদিয়ানিরা মানে কিনা জানিনা। যদি সত্যিই মেনে থাকে তাহলে “আমার পরে” এইরূপ কথার পরেও তারা মির্যার নবুওয়ত দাবী মেনে নিতে পারে কিভাবে?

এবার প্রশ্ন মতে উত্তরে আসি। প্রশ্নকারীর উক্ত প্রশ্নটি ভুলেভরা। কেননা রাসূল (সা:) এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণীতে আগমনকারী ঈসা (আ:) এমন একজন নবী যার পুনরায় আগমন দ্বারা নবুওয়তের দরজায় ধাক্কা লাগবেনা। কারণ তিনি নতুনভাবে নবুওয়ত প্রাপ্ত হবেন না। সুতরাং “আমার পরে” (بعدى) একথার তাৎপর্য হল, মুহাম্মদ (সা:) এর পরে আর কোনো নবীর জন্ম হবেনা। কাজেই এই হাদীস ঈসা (আ:) এর আগমনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেনা বলেই প্রশ্নকারীর প্রশ্নটাই পুরোপুরি অমূলক ও বাতিল।

[২] ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ হতে “নবীগণের খতমকারী (ختم کرنےوالا نبیوں کا)” হুবহু এই অর্থ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও নিয়েছেন। দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৩/৪৩১। এখন এর কী মর্মার্থ সেটিও আমি মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে দিচ্ছি। মির্যা সাহেব পরিষ্কার লিখেছেন, ‘ওয়া লা-কির রাসূলাল্লাহি ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন’ আয়াতাংশও এই কথার সত্যায়ন করে থাকে যে, প্রকৃতপক্ষে আমাদের নবীর উপর নবুওয়ত খতম বা শেষ হয়ে গেছে। দেখুন কিতাবুল বারিয়্যা, রূহানী খাযায়েন ১৩/২১৭-১৮। সুতরাং যা বুঝার বুঝতে পেরেছেন। তাই এর বেশি আমি আর কিছু বলতে চাই না।

[৩] দারুন প্রশ্ন করেছেন। কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ হল এই হাদীসটিতে আগমনকারী ঈসা (আ:)-কে রাসূল (সা:) ‘নাবীউল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়ম‘ (نبى الله عيسى بن مريم বা আল্লাহর নবী ঈসা ইবনে মরিয়ম) শব্দে সম্বোধন করা। এতেই সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, যার আগমন করা সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে তিনি নিশ্চিতভাবে কোনো রূপক ব্যক্তি নন। বরং তিনি এমন একজন যিনি ইতিপূর্বে নাবীউল্লাহ তথা আল্লাহর নবী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ। এর প্রমাণ হল, হাদীসে আগমনকারী ঈসা (আ:) সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণীটা শপথবাক্য সহকারে বর্ণিত হওয়া। ফলে হাদীসে উল্লিখিত ঈসা দ্বারা রূপক কাউকে বুঝাবেনা। কেননা, শপথ বাক্য সহকারে বর্ণিত ভবিষ্যৎবাণীর বিষয়টি নিশ্চিতভাবে হাকিকি অর্থে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আর এই একই কথা খোদ মির্যা কাদিয়ানীও লিখে গেছেন। দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ২৭। সুতরাং প্রশ্নকারীর মগজে এগুলো লোড না নিলে তাতে আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কী বা করার আছে!

মুসলিম শরীফের ‘ঈসা নাবীউল্লাহ’ শীর্ষক সম্পূর্ণ হাদীস অর্থসহ

[৪] পবিত্র কুরআনে রাসূলান ইলা বনী ইসরাঈলা – উল্লেখ আছে বলেই তো আমরা (মুসলিম উম্মাহা) সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি যে, তার দ্বিতীয়বারের আগমন হবে “(مصدقا بمحمد و على ملته) মুছাদ্দিকান বি মুহাম্মাদিন ওয়া আ’লা মিল্লাতিহি” অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা:)-এর রেসালতের সত্যায়নকারী এবং একজন উম্মত হিসেবে। এককথায় উনার পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসাটা নবুওয়তের দায়িত্ব সহকারে হবে না, বড়জোর একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক ও শরীয়তে মুহাম্মদীর উপর আমলকারীরূপে হবে। সুতরাং প্রশ্নকারী একজন নির্বোধ বলেই এ সমস্ত অর্বাচীন টাইপের প্রশ্ন করেছে। সত্য বলতে এসব প্রশ্নের অধিকাংশই পাকি কাদিয়ানী মহারথী রাবওয়ার মুবাশ্বির আহমদ খালনের মত মালাউনদের নাপাক মগজ থেকে উগরানো বৈ নয়।

যাইহোক, কাদিয়ানীদেরই উক্ত প্রশ্নের আলোকে আমিও তাদেরকে পালটা প্রশ্ন করতে চাই, সূরা আস-সাফ এর ৬ নং আয়াতে ঈসা (আ:)-এর ভবিষ্যৎবাণীটা এভাবে এসেছে যে, (يأتى من بعدى إسمه احمد) ‘ইয়াতি মিম বা’দিসমুহু আহমদ’ অর্থাৎ তার (ঈসা) পর আহমদ (তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামীয় ব্যক্তি আগমন করবেন। তাই প্রশ্ন আসে, উক্ত ভবিষ্যৎবাণী শীর্ষক আয়াতটি কি বর্তমানে বাতিল বলে গণ্য হবে? নাউযুবিল্লাহ। যেহেতু যার আসার কথা তিনি গত ১৪শ বছর আগেই এসে গেছেন! এখন এর কী জবাব?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

হাদীস বিশারদদের দৃষ্টিতে ‘ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা’ হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা

বিদগ্ধ হাদীস বিশারদদের দৃষ্টিতে “ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা ইবনে মরিয়ম” – খন্ডিত অংশের বর্ণনাটি কিজন্য দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য, জানতে পড়ুন!

সম্প্রতি ব্রাদার রাহুল ভাইয়ের একটি ভিডিও এর জবাবে কাদিয়ানীদের বর্তমান ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল আউয়াল সাহেবের চরম খেয়ানত ও প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত জবাব এটি। কারণ তিনি উক্ত বর্ণনাটিকে সহীহ প্রমাণ করতে নানা মিথ্যা, খেয়ানত আর হটকারিতাপূর্ণ চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। যা একজন জ্ঞানপাপীর পক্ষেই সম্ভব!

প্রাসঙ্গিক লিখা দুটি পড়া জরুরি –
(১) ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা ইবনু মরিয়াম – হাদীসের খণ্ডাংশটির সঠিক অর্থ Click

(২) প্রকৃত ইমাম মাহদী আর কাদিয়ানিদের মির্যা গোলাম আহমদ এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য গুলো Click

পর্ব ১

ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা ইবনে মরিয়ম – খণ্ডিত অংশের এই বর্ণনাটি সূত্রের বিচারে সমস্ত হাদীস বিশারদের মতে যঈফ তথা দুর্বল । একথা লিখেছেন, বিশিষ্ট যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ)। (মেরকাত, কিতাবুল ফিতান, বাবু আশরাতিস সা’আহ باب أشراط الساعة, ভলিয়ম নং ১০)।

বর্ণনাটির সনদ বা চেইন প্রসঙ্গে

উক্ত বর্ণনাটি যে চেইনে (Chain/সনদ) বর্ণিত হয়েছে সেখানে সূত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা না হওয়ার সমস্যা বিদ্যমান। তেমনি সূত্রের “মুহাম্মদ বিন খালিদ আল জানাদী” একজন অজ্ঞাত ও অপরিচিত ব্যক্তি বলেও অধিকাংশ হাদীস বিশারদ মত ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া ইমাম যাহাবী’র মীযানুল ই’তিদাল কিতাবে পরিষ্কার করে এই দুটি কথাও উল্লেখ আছে যে, (ভিন্ন আরেকটি চেইন হিসেবে – লিখক) সূত্রের “আবান ইবনে সালেহ” এইধরনের কোনো বর্ণনা “হযরত হাসান বসরী” থেকে শ্রবণ করা প্রমাণিত নয়। তেমনি এই সূত্রের “ইউনুস ইবনে আব্দুল আ’লা” নামক রাবীও হযরত ইমাম শাফেয়ী থেকে শ্রবণ করেননি। মজার ব্যাপার হল, ইমাম শাফেয়ীও এধরণের কোনো বর্ণনা “মুহাম্মদ বিন খালিদ আল জানাদী” হতে শ্রবণ করেননি। ইমাম ইয়াহইয়া বিন মাঈন (রহ:) নিজেও একথা বলেছেন বলে ইমাম যাহাবী এবং ইমাম ইবনে ছুলাহ (মৃত. ৬৪৩ হিজরী) দুইজনই লিখে গেছেন। সুতরাং এইরূপ বহু কারণে উক্ত বর্ণনাটি দলিল প্রমাণ হিসেবে অগ্রহযোগ্য। কারো কারো মতে বানোয়াটও। এবার বিস্তারিত।

  • এবার বর্ণনাটির অন্যতম সমালোচিত বর্ণনাকারী “মুহাম্মদ বিন খালিদ আল জানাদী”-محمد بن خالد الجندى সম্পর্কে যুগ বিখ্যাত হাদীস বিশারদদের মতামত দেখুন:-

১- ইমাম আবুল ফাতহ আল আযদী : তার বর্ণনার পেছনে পড়া যাবেনা।
২- ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকেম নিশাপুরী : সে একজন মাজহুল (অজ্ঞাত) বর্ণনাকারী।
৩- ইমাম বায়হাক্বী : সে একজন অজ্ঞাত বর্ণনাকারী।
৪- শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ : তার বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম শাফেয়ীর কিতাব ‘মুসনাদে শাফেয়ী’-এর মধ্যে এই হাদীস নেই।
৫- সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইবনে হাজার আসকালানী : সে একজন অজ্ঞাত বর্ণনাকারী।
৬- ইমাম ইবনে কাসীর : সে মাজহুল নন যেমনটি ইমাম হাকেম (রহ:) মনে করেন। বরং ইবনে মাঈন থেকে বর্ণিত আছে, তিনি তাকে ছিকাহ আখ্যা দিয়েছেন (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.)-এর এই বক্তব্যে সাধারণদের জন্য বিভ্রান্ত হবার কোনো কারণ নেই। কেননা ইবনে মাঈন (রহ.)-এর ঐ বক্তব্যটি ইবনে মাঈনের নামে প্রচার হলেও সেটি প্রকৃতপক্ষে অপ্রমাণিত। যেজন্য স্বয়ং ইমাম যাহাবী (রহ.) নিজেও এটি লিখার সময় والله اعلم বা আল্লাহই ভালো জানেন, বলে লিখে গেছেন। এ সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

  • এই পর্যায় কাদিয়ানী আমীর জনাব আব্দুল আউয়াল সাহেব যে জঘন্য খেয়ানত আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সেটি নিচে উল্লেখ করা হল,

তিনি ইবনে মাঈন (রহ.) এর নাম ভেঙ্গে ইবনে কাসীর (রহ.)-এর উদ্ধৃতিতে ঐ কথাটি খুব জোরালোভাবে উল্লেখ করলেও ইবনে মাঈনের বক্তব্যের পরের অংশটি আস্তে করে এড়িয়ে যান। ইবনে মাঈন থেকে ঐ একই বক্তব্যের শেষাংশে এটিও লিখা আছে و روى عنه ثلاثة رجال سوى الشافعي অর্থাৎ আর তার কাছ থেকে ইমাম শাফেয়ী ব্যতীত তিন ব্যক্তিই বর্ণনা করত। (দেখুন, ইমাম যাহাবী’র মীযানুল ই’তিদাল ৩/৫৩৫ দ্রষ্টব্য)।

এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, ঐ “লাল মাহদী” – ওয়ালা বর্ণনাটির সূত্র মুনকাতি তথা বিচ্ছিন্ন। কেননা মুহাম্মদ ইবনে খালিদ আল জানাদি থেকে ইমাম শাফেয়ী কিছুই বর্ণনা করেননি বলে খোদ ইবনে মাঈন (রহ.) থেকেও প্রমাণিত। সুতরাং কাদিয়ানীদের জন্য মোটেও উচিত হবেনা যে, ইবনে মাঈন (রহ.)-এর সম্পূর্ণ বক্তব্যের কিছু অংশ বাদ দিয়ে আর কিছু অংশ নেয়া! এটি মস্তবড় খেয়ানত (জালিয়াতি) নয় কি? তাই জনাব আব্দুল আউয়াল তার এই জালিয়াতির জন্য অন্তত স্বজাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া উচিত! কেননা তার অনুসারীদের অনেকে এমনও রয়েছেন যারা সরলমনে তার কথা বিনাবাক্যে বিশ্বাস করে ফেলেন!

৭- ইমাম যাহাবী : এই বর্ণনা মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য। সনদে উল্লিখিত ইউনুস নামক ব্যক্তি হযরত শাফেয়ী থেকে এই বর্ণনা শুনেনি।
৮- বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াহইয়া আল-মু’আল্লিমী : و لم يثبت هذا عن ابن معين অর্থাৎ হযরত ইয়াহইয়া বিন মাঈন হতে তার ছিকাহ (বিশ্বস্ত) হওয়ার কথাটি প্রমাণিত নয়।
৯- রিজালশাস্ত্রের হেভিওয়েট স্কলার ইমাম ছাগানী : এই বর্ণনা মওদ্বু বা বানোয়াট।
১০- ইমাম নাসাঈ : সে (মুহাম্মদ বিন খালিদ আল জানাদী) একজন মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য।
১১- ইমাম ইবনু আব্দিল বার : তিনি দুর্বল এবং মাতরূক বা পরিত্যাজ্য এবং و لا يثبت هذا الحديث অর্থাৎ এটি হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়।
১২- ইমাম ত্বীবি (রহ:) খণ্ডিত অংশের অর্থ করেছেন, معناه لا مهدى كاملا معصوما إلا عيسى بن مريم অর্থাৎ এর অর্থ হল, তখন ঈসা ইবনে মরিয়ম-ই একজন নিষ্পাপ ও পরিপূর্ণ সুপথপ্রাপ্ত হবেন (মেরকাত কিতাবুল ফিতান, টীকা দ্রষ্টব্য)।

  • রেফারেন্স : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী’র তাহযীবুত তাহযীব ৯/১২৬; আল আ’মালী, ইমাম ইবনে ছুলাহ ৪৮-৫২; ইমাম যাহাবী’র মীযানুল ই’তিদাল ৩/৫৩৫।

বিস্তারিত ২য় পর্বে আসছে। সবাই লিখাটি প্রচার করে মিথ্যাবাদী আর প্রতারকদের মুখোশ উন্মোচন করে দিন।

(অসমাপ্ত)

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মুসলিম শরীফের ‘ঈসা নাবীউল্লাহ’ শীর্ষক সম্পূর্ণ হাদীস অর্থসহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী (كتاب الفتن وأشراط الساعة)। হাদীস নাম্বার ৭১০৬।

১৮. দাজ্জাল, তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকবে তার বিবরণ :

হাদীসের আরবী ভার্সন :

باب ذِكْرِ الدَّجَّالِ وَصِفَتِهِ وَمَا مَعَهُ حَدَّثَنَا أَبُو خَيْثَمَةَ، زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ، بْنُ يَزِيدَ بْنِ جَابِرٍ حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ جَابِرٍ الطَّائِيُّ، قَاضِي حِمْصَ حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ، جُبَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ، جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ الْحَضْرَمِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ النَّوَّاسَ بْنَ سَمْعَانَ الْكِلاَبِيَّ، ح وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ مِهْرَانَ الرَّازِيُّ، – وَاللَّفْظُ لَهُ – حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ يَزِيدَ بْنِ جَابِرٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ جَابِرٍ الطَّائِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ، نُفَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ، جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ، قَالَ :

ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ فَخَفَّضَ فِيهِ وَرَفَّعَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ فَلَمَّا رُحْنَا إِلَيْهِ عَرَفَ ذَلِكَ فِينَا فَقَالَ ‏”‏ مَا شَأْنُكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَكَرْتَ الدَّجَّالَ غَدَاةً فَخَفَّضْتَ فِيهِ وَرَفَّعْتَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُنِي عَلَيْكُمْ إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ إِنَّهُ شَابٌّ قَطَطٌ عَيْنُهُ طَافِئَةٌ كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بِعَبْدِ الْعُزَّى بْنِ قَطَنٍ فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ إِنَّهُ خَارِجٌ خَلَّةً بَيْنَ الشَّأْمِ وَالْعِرَاقِ فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالاً يَا عِبَادَ اللَّهِ فَاثْبُتُوا ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الأَرْضِ قَالَ ‏”‏ أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلاَةُ يَوْمٍ قَالَ ‏”‏ لاَ اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا إِسْرَاعُهُ فِي الأَرْضِ قَالَ ‏”‏ كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ فَيَأْتِي عَلَى الْقَوْمِ فَيَدْعُوهُمْ فَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَجِيبُونَ لَهُ فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ وَالأَرْضَ فَتُنْبِتُ فَتَرُوحُ عَلَيْهِمْ سَارِحَتُهُمْ أَطْوَلَ مَا كَانَتْ ذُرًا وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعًا وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ ثُمَّ يَأْتِي الْقَوْمَ فَيَدْعُوهُمْ فَيَرُدُّونَ عَلَيْهِ قَوْلَهُ فَيَنْصَرِفُ عَنْهُمْ فَيُصْبِحُونَ مُمْحِلِينَ لَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ شَىْءٌ مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَيَمُرُّ بِالْخَرِبَةِ فَيَقُولُ لَهَا أَخْرِجِي كُنُوزَكِ ‏.‏ فَتَتْبَعُهُ كُنُوزُهَا كَيَعَاسِيبِ النَّحْلِ ثُمَّ يَدْعُو رَجُلاً مُمْتَلِئًا شَبَابًا فَيَضْرِبُهُ بِالسَّيْفِ فَيَقْطَعُهُ جَزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الْغَرَضِ ثُمَّ يَدْعُوهُ فَيُقْبِلُ وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ يَضْحَكُ.

فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ فَيَنْزِلُ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ بَيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ إِذَا طَأْطَأَ رَأَسَهُ قَطَرَ وَإِذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ مِنْهُ جُمَانٌ كَاللُّؤْلُؤِ فَلاَ يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلاَّ مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يَأْتِي عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ قَوْمٌ قَدْ عَصَمَهُمُ اللَّهُ مِنْهُ فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بِدَرَجَاتِهِمْ فِي الْجَنَّةِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى إِنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لاَ يَدَانِ لأَحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ ‏.‏ وَيَبْعَثُ اللَّهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ فَيَمُرُّ أَوَائِلُهُمْ عَلَى بُحَيْرَةِ طَبَرِيَّةَ فَيَشْرَبُونَ مَا فِيهَا وَيَمُرُّ آخِرُهُمْ فَيَقُولُونَ لَقَدْ كَانَ بِهَذِهِ مَرَّةً مَاءٌ ‏.‏ وَيُحْصَرُ نَبِيُّ اللَّهُ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ حَتَّى يَكُونَ رَأْسُ الثَّوْرِ لأَحَدِهِمْ خَيْرًا مِنْ مِائَةِ دِينَارٍ لأَحَدِكُمُ الْيَوْمَ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ فَيُرْسِلُ اللَّهُ عَلَيْهُمُ النَّغَفَ فِي رِقَابِهِمْ فَيُصْبِحُونَ فَرْسَى كَمَوْتِ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ يَهْبِطُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى الأَرْضِ فَلاَ يَجِدُونَ فِي الأَرْضِ مَوْضِعَ شِبْرٍ إِلاَّ مَلأَهُ زَهَمُهُمْ وَنَتْنُهُمْ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللَّهِ فَيُرْسِلُ اللَّهُ طَيْرًا كَأَعْنَاقِ الْبُخْتِ فَتَحْمِلُهُمْ فَتَطْرَحُهُمْ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ مَطَرًا لاَ يَكُنُّ مِنْهُ بَيْتُ مَدَرٍ وَلاَ وَبَرٍ فَيَغْسِلُ الأَرْضَ حَتَّى يَتْرُكَهَا كَالزَّلَفَةِ ثُمَّ يُقَالُ لِلأَرْضِ أَنْبِتِي ثَمَرَتَكِ وَرُدِّي بَرَكَتَكِ ‏.‏ فَيَوْمَئِذٍ تَأْكُلُ الْعِصَابَةُ مِنَ الرُّمَّانَةِ وَيَسْتَظِلُّونَ بِقِحْفِهَا وَيُبَارَكُ فِي الرِّسْلِ حَتَّى أَنَّ اللِّقْحَةَ مِنَ الإِبِلِ لَتَكْفِي الْفِئَامَ مِنَ النَّاسِ وَاللِّقْحَةَ مِنَ الْبَقَرِ لَتَكْفِي الْقَبِيلَةَ مِنَ النَّاسِ وَاللِّقْحَةَ مِنَ الْغَنَمِ لَتَكْفِي الْفَخِذَ مِنَ النَّاسِ.

فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ رِيحًا طَيِّبَةً فَتَأْخُذُهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ فَتَقْبِضُ رُوحَ كُلِّ مُؤْمِنٍ وَكُلِّ مُسْلِمٍ وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الْحُمُرِ فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَةُ ‏”‏ ‏.‏

হাদীসের বাংলা অনুবাদ :

অর্থাৎ আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাবী (রহঃ) … নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনাকালে তিনি কখনো আওয়াজ ছোট করলেন, আবার কখনো আওয়াজ বড় করলেন। ফলে আমরা মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের মধ্যেই বুঝি এসে পড়েছে। অতঃপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের কি অবস্থা? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো আওয়াজ ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছেন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক আশংকা করছি।

শোনো, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্থায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ক। দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা কাহাফের প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। সে ইরাক সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দাজ্জাল পৃথিবীতে তার গতির দ্রুততা কেমন হবে? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফুরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে।

এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুঁ’জ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্থায় তাদের নিকট ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে। অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার অনুগমন করবে, যেমন মৌমাছি তাদের সর্দারের অনুগমন করে।

অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দু’ফাঁক করে ফেলবে। অতঃপর সে পুনরায় তাকে ডাকবে। যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মরিয়মের পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুই হাত দুই ফিরিশতার ডানায় রেখে দুইটি হলুদ বর্ণের চাদর পরিধান করে দামেশক নগরীর পূর্ব প্রান্তে শ্বেত মিনারের নিকটে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোনো কাফিরের নিকট যাবেন সেই তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদুর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে লূদ নামক পটকের কাছে পেয়ে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাজত করেছেন। তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি এ মর্মে ওহী (ইলহাম) করবেন যে, আমি আমার এমন কিছু বিশেষ বান্দা আবির্ভূত করছি, যাদের সাথে কারোরই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার বান্দাদের তূর পর্বতে সমবেত কর। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন। তারা প্রতিটি উঁচু ভূমি হতে ছুটে আসবে। তাদের প্রথম দলটি তবরিস্তান উপসাগরের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দিনারের মূল্যের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট প্রতিপন্ন হবে।

তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তারাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে নেমে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যেথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে।

এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যার ফলে কাঁচা-পাকা কোনো ঘরই তাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। এতে যমীন বিধৌত হয়ে পরিচ্ছন্ন পিচ্ছিল মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নিচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বরকত হবে। ফলে দুগ্ধবতী একটি উটই ছোট ছোট অনেক গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী এক বড় গোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের (গোষ্ঠীর) জন্য। এ সময় আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলমানদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকি থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (অনুবাদ শেষ হল)।

পরিশেষ, মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসটি কাদিয়ানী জামাতের আমীর বা নেতৃত্বস্থানীয় কেউ কি পুরোটা আপনাদের কখনো পড়িয়ে শুনিয়েছিলেন? আমার বিশ্বাস, উত্তর হবে ‘না’। কেন পড়িয়ে শুনান না, তা এবার নিশ্চয়ই বুঝে আসার কথা। কেননা হাদীসটিতে চার চার বার ঈসা নাবীউল্লাহ এসেছে ঠিক, কিন্তু হাদীসটি পুরোপুরি যার পড়াশোনা আছে অন্তত সে ভালো ভাবেই বুঝতে পারবে যে, এই নাবিউল্লাহ বলতে ভারতের চেরাগ বিবির ছেলে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কোনোভাবেই উদ্দেশ্য হতে পারেনা। ফলে তার নবী দাবীকে বৈধতা দিতে হাদীসটির ‘চার চার বারের ঈসা নাবিউল্লাহ’-এর প্রসঙ্গ টানারও কোনো অর্থ থাকেনা। নতুবা হাদীসটির অন্যান্য বর্ণনাসমূহের কী অর্থ? সেগুলোও মির্যার সাথে মিলিয়ে দেখানো কি সম্ভব? মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানী নিজের মুখেই স্বীকার করে লিখে গেছে যে, নবুওয়তি ওহীর দ্বার বন্ধ। যেমন তিনি লিখেছেন,

অর্থাৎ “তাদের পরিষ্কার জানা আছে যে, আমরাও নবুওয়তের দাবীদারের প্রতি অভিশাপ দিই এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর প্রবক্তা এবং হযরত (সা:) এর খতমে নবুওয়তের উপর ঈমান রাখি এবং ওহীয়ে নবুওয়ত (وحى نبوت) বন্ধ তবে (আমরা) ওহীয়ে বেলায়তের (وحى ولايت) প্রবক্তা যেটি মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়তকে আশ্রিত করে ও তাঁরই অনুকরণে আউলিয়ায়ে কেরামের অর্জিত হয়ে থাকে। যে আমাদের প্রতি এর চেয়ে বেশি কোনো কথার অভিযোগ করবে সে যেন তাকওয়া আর সততাই পরিত্যাগ করল।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত খ-২ পৃষ্ঠা ২৯৭-৯৮; নতুন এডিশন)।

এখন প্রশ্ন আসে,

(১) তাহলে মির্যা সাহেব নবী রাসূল দাবী করতে পারেন কিভাবে?

(২) এমনকি মুসলিম শরীফের “নাবীউল্লাহ” শব্দকে আশ্রিত করে কিভাবে বলতে পারলেন যে, যেহেতু আগত ঈসাকে হাদীসে নাবীউল্লাহ বলা হয়েছে সেহেতু তিনি (মির্যা সাহেব) ঈসা দাবীর ভিত্তিতে একজন নবীও? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

নবীজী (সা:) কি ইউনুস (আ:) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নন? সংশয় নিরসন!

0

সহীহ হাদীসের মাঝে অসঙ্গতি থাকার অভিযোগ খণ্ডন

(কাদিয়ানীরা তাদের মির্যা গোলাম আহমদের স্ববিরোধী কথার পক্ষে ওকালতি করতে গিয়ে হাদীসের মধ্যেও অসঙ্গতি থাকার মিথ্যা আপত্তি পেশ করে, এখানে এমনি একটি অভিযোগ উল্লেখপূর্বক খণ্ডন করা হবে, ইনশাআল্লাহ)

  • মির্যা কাদিয়ানীর অসম্ভব রকমের স্ববিরোধী কথাবার্তার সিরিজ পড়ুন (এপিসোড ১-৪০) ক্লিক করুন এখানে

প্রশ্নকর্তা (কাদিয়ানী) :- মির্যা সাহেবের কথায় স্ববিরোধিতা খোঁজেন অথচ আপনাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কথাতেও স্ববিরোধিতা ছিল! যেমন তিনি এক জায়গায় (সুনানু তিরমিজী, হাদীস নং ৩২৪৫) বলেছেন, তাঁকে যে ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলবে সে মিথ্যা বলল (وَمَنْ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى فَقَدْ كَذَبَ)। আবার আরেক জায়গায় (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২২৭৮) বলেছেন, তিনি কেয়ামত দিবসে সকল বনী আদমের সাইয়েদ বা নেতা হবেন (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)। এখন এর কী জবাব?

অভিযোগ খণ্ডন, কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ এই কারণে যে, তাদের কাদিয়ানের কৃষ্ণ ও নবুওয়তের দাবীদার মির্যা সাহেবও উক্ত অভিযোগের জবাবে লিখেছেন, “যদি ঐ হাদীসগুলো সহীহও হয় তবু তাঁর ঐ কথা (শুধুমাত্র) বিনয় প্রদর্শনের জন্যই ছিল (وہ بطور انکسار اور تزلل ہے)।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৫/১৬৩ মির্যায়ী রচনাসমগ্র)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

মির্যায়ী রচনাসমগ্র

এখন বিনয় প্রদর্শনের জন্য কোনো বিশেষ মর্যাদাবান ব্যক্তি যদি বলেন যে, তোমরা আমাকে কারো চাইতে শ্রেষ্ঠ বলোনা, তবে কি তিনি এমন কথায় স্ববিরোধী প্রবক্তা বলে অভিযুক্ত হবেন? অন্তত মির্যা কাদিয়ানীর দৃষ্টিকোণ থেকেও উত্তর হবে, না; তিনি অভিযুক্ত হবেন না। এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব যে সমস্ত বক্তব্যের কারণে অভিযুক্ত সেগুলোও কি বিনয় সংক্রান্ত? নিশ্চয়ই না। এবার হাদীস দুটোর ব্যাখ্যায় আসি,

মেশকাত কিতাবের শরাহ মেরকাতের লিখক মোল্লা আলী (রহ.) লিখেছেন, “রাসূল (সা.)-এর বাণী ‘যে বলবে আমি ইউনুস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম…’ এই কথাটি মূলত নবুওয়তের ক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে। ফলে তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, যে ব্যক্তি বলবে আমি ইউনুস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা নবুওয়তের ক্ষেত্রেও উত্তম তবে সেই ব্যক্তি মিথ্যা বলল। কেননা নবীগণের সকলে নবুওয়তের মর্যাদায় এক ও অভিন্ন। তবে কতিপয় সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষত্বতা নিশ্চয়ই রয়েছে (أَيْ: فِي النُّبُوَّةِ :(مَنْ قَالَ: أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى لَقَدْ كَذَبَ) لِأَنَّ الْأَنْبِيَاءَ كُلَّهُمْ مُتَسَاوُونَ فِي مَرْتَبَةِ النُّبُوَّةِ، وَإِنَّمَا التَّفَاضُلُ بِاعْتِبَارِ الدَّرَجَاتِ)।” দেখুন, মেরকাত খণ্ড নং ৯, হা/ক্রমিক নং ৩৬৪৫। এই একই ব্যাখ্যা ইমাম কুরতুবী (রহ.)-এর কাছ থেকেও প্রমাণিত। তিনি লিখেছেন, অবশ্যই নবীগণের এককে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতে নিষেধ রয়েছে। আর তা নিশ্চিতভাবে ও শুধু কেবল নবুওয়তের ক্ষেত্রে। যেহেতু নবুওয়তের ক্ষেত্রে সবার মান সমান। তাতে কেউ অন্যের উপর শেষ্ঠত্ব রাখেনা। অধিকন্তু শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে, কতেক বিশেষত্ব, সম্মান আর দয়ার আধিক্যতার ক্ষেত্রে (ان المعنى من التفضيل. انما هو من جهة النبوة التى هى خصلة واحدة لا تفاضل فيها. و التفضيل فى زيادة الاحوال و الخصوص و الكرمات و الالطاف)। দেখুন, আল-মুয়াসওআ’তুল ফিকহিয়্যাহ [الموسوعة الفقهية] ৪০/৪৯, কিতাবটি অনলাইনে সর্বমোট ৪৫ খণ্ডে পাওয়া যায়; গ্রন্থনা ও প্রকাশনায়, আওকাফ ও ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কুয়েত।

অতএব আমরা প্রমাণ করে দিলাম যে, রাসূল (সা.)-এর কথায় সামান্যতমও স্ববিরোধিতার চাপ নেই। কাজেই মির্যা সাহেবের অগণিত মিথ্যা আর অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্যের পক্ষে ওকালতি করার জন্য রাসূল (সা.)-এর দিকে আঙুল উঠাবেন না। এটি নিঃসন্দেহে একজন সত্য নবী ও রাসূলের শানে চরম বেয়াদবির শামিল। পরিশেষে কাদিয়ানীদের প্রতি আমার প্রশ্ন, মির্যা কাদিয়ানীর যেসব কথাবার্তায় স্ববিরোধিতার অভিযোগ করা হয় সেগুলাও কি বিনয় সম্পর্কিত? আফসোস! ব্রেইন ওয়াশ কাল্টদের বুঝানোর সাধ্য কার!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

হেকিম নূরুদ্দীন কি দেওবন্দ মাদরাসায় পড়েছিল?

0

মির্যায়ী খলীফা হেকিম নূরুদ্দীন সম্পর্কে একটি জঘন্য মিথ্যাচার ও তার খন্ডন

কিছুদিন আগের কথা। জনৈক আহমদী (কাদিয়ানী) আমাকে বললেন, তাদের (অর্থাৎ কাদিয়ানীদের) প্রথম খলীফা হেকিম নূরুদ্দীন (১৮৪১-১৯১৪ইং) নাকি দেওবন্দেও পড়াশোনা করেছিল!

আমি প্রথমে কিছুক্ষণ হাসলাম তারপর তাকে প্রতিউত্তরে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে এই উদ্ভট কথা কে শুনাল? উত্তরে বললেন, আমাদের মু’আল্লিমরাই তো আমাদের বলেছেন!

আমি বললাম, তাহলে বলুন তো হেকিম নূরুদ্দীনের জন্ম কত সালে? তিনি বললেন, ১৮৪১ সালে। আমি তাকে বললাম, দারুল উলুম দেওবন্দ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা জানেন?

বললেন, না; তা তো জানিনা!!

বললাম, ৩১ মে, ১৮৬৬ সালে। আর তখন হেকিম নূরুদ্দীন ২৫ বছরের একজন টগবগে যুবক। তাহলে এবার নিজেই চিন্তা করুন, দারুলউলুম দেওবন্দ (সাহারানপুর জেলা) যখন সবেমাত্র শিশু; মাত্র একখানা ডালিম গাছের নিচে আলিফ বা তা ছা জীম…পাঠদানের মাধ্যমে হাতে গুণে কয়েকজন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করল সেখানে ২৫ বছরের যুবক হেকিম নূরুদ্দীন কেন ভর্তি হবেন? হলে, কোন ক্লাশে হবেন? আপনাদের যুক্তি কী বলে? বিষয়টি পুরোই হাস্যকর নয় কি? দারুলউলুম দেওবন্দ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।

এটি হেকিম নূরউদ্দীন এর জীবনীগ্রন্থ। এখানে লিখা আছে, তিনি শাহ আব্দুল গণী (রহ.)-এর নিকট মদীনায় উপস্থিত হন। সুতরাং এতেও পরিষ্কার হল যে, নূরউদ্দীন শাহ সাহেবের ছাত্র হলেও তদ্দ্বারা তিনি দেওবন্দের ছাত্র হওয়াকে প্রমাণ করেনা। কেননা দেওবন্দ মদীনায় নয়, ভারতে (সাহারানপুর জেলা) অবস্থিত।

হেকিম নূরুদ্দীন মূলত একজন জেনারেল শিক্ষিত। তিনি একাডেমিক পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন বলে প্রমাণিত নয়। তার বাড়ী হল, পাঞ্জাবের শাহপুর জেলার ভেরা নামক স্থানে। তিনি জীবনে কখনো কোনো মাদরাসায়ও পড়েছিলেন বলে জানা যায়না। তবে যতটুকু জানা যায় তা হল, তিনি একজন জেনারেল লাইনের পড়ুয়া এবং স্বীয় পিতা আর বড় ভাই সোলতান আহমদের সহযোগিতায় প্রাইভেট শিক্ষকদের মাধ্যমে ধর্মীয় কিছু বই পুস্তক অধ্যায়ন করেছিলেন মাত্র। সুতরাং তার দেওবন্দে পড়াশুনা করার তথ্যটি একদমই অসত্য এবং ডাহামিথ্যে।

হেকিম নূরুদ্দীন সম্পর্কে জানা যায় যে, তার বয়স যখন ১৬ বা ১৭ তখন তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে ‘নর্মাল স্কুলে’ ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ৪ বছর পড়াশুনা শেষে তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হন। ভেরা শহরের কয়েক মাইল দূরে ঝিলাম নদীর ওপারে অবস্থিত শহর পীন্ডদাদন খান স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। তিনি সেখানে ৪ বছর ছিলেন। সেখান থেকে চলে এসে আগেরমত আবার ঘরোয়াভাবে নিজে নিজে বইপত্র পড়া আরম্ভ করেন আরো প্রায় দুই বছর পর্যন্ত। তার বয়স যখন ২৭ বছর পূর্ণ হল তখন তিনি লাহোর যান এবং সেখান থেকে পদব্রজে রামপুর যান উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে প্রায় ৩ বছর ছিলেন।

তারপর তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়নের জন্য লক্ষ্ণৌর হাকীম আলী হোসেনের নিকট চলে যান। তখন তার বয়স ত্রিশের কোটায়। সেখানে ২ বছর অবস্থান করেন। তিনি তার তেত্রিশ বছর বয়সে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে মিরাঠে যান। তারপর ভূপালে যান। তারপর দিল্লি যান। সেখান থেকে হিজাজে। হিজাজ থেকে তিনি নিজ শহর ভেরায় ফিরে এসে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। তারপর তিনি একটি সময়ের ব্যবধানে কাশ্মীরের মহারাজার প্রধান চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। তখন তার বয়স ছত্রিশের কোটায় । হেকিম নূরুদ্দীন সাহেব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সাথে প্রথম যখন সাক্ষাৎ করেন তখন তার বয়স ছিল তেতাল্লিশ বছর (১৮৮২ সাল)। এ তথ্যগুলো মির্যায়ী ঘরানার রচনাবলী হতেই এখানে উল্লেখ করেছি। (দেখুন, মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান রচিত ‘হযরত মৌলভী নূরউদ্দিন খলীফাতুল মসীহ আউয়াল’ পৃষ্ঠা নং ১৩-৩৭)।

লিখাটি ফেইসবুক থেকে পড়তে

তাহলে এখন বলুন, এমতাবস্থায় হেকিম নূরুদ্দীন সাহেব দারুলউলুম দেওবন্দ (সাহারানপুর জেলা) কখন গেলেন? সুতরাং সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে দারুলউলুম দেওবন্দের নামে এই ধরণের অসত্য আর অযুক্তিক প্রচারণা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

ইমাম মাহদী একই সঙ্গে ফাতেমী আব্বাসী হাসানী এবং হোসাইনী কিভাবে হবেন?

মির্যা কাদিয়ানীর ৫ খণ্ডে প্রকাশিত “মালফুযাত” গ্রন্থের ৫ নং খন্ডের ২১ নং পৃষ্ঠাটি দেখলেই বুঝা যাবে যে, সে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কিভাবে হটকারিতার আশ্রয় নিয়েছিল। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিম্নরূপ। আজকের এ লিখাটিতে ইমাম মাহদীর পরিচয় সম্পর্কে তার বিভ্রান্তিকর লিখনীর খণ্ডনমূলক উত্তর দেয়া হবে।

মির্যার আপত্তি –

১. কেউ বলে থাকেন ইমাম মাহদী ফাতেমী হবেন অর্থাৎ তিনি ফাতেমা (রা.) এর বংশে জন্মিবেন।

২. কেউ বলেন, তিনি আব্বাসী হবেন অর্থাৎ তিনি হযরত আব্বাস ইবনে আবী তালিবের বংশে জন্মিবেন।

৩. কেউ বলেন, তিনি (হাসানী এবং) হোসাইনী হবেন অর্থাৎ তিনি হযরত (হাসান এবং) হোসাইন (রা.) এর বংশে জন্মিবেন।

৪. কেউ বলেন, উনি “ফয়দা হোগা” তথা জন্মিবেন।

৫. কেউ বলেন, উনি গুহা থেকে প্রকাশ পাবেন।

৬. কেউ বলেন, উনি উম্মতের মধ্য হতে জন্মিবেন।

৭. কেউ বলেন, ঈসা (আ.)-ই একজন মাহদী।

জবাব ও সলিউশন শুরু –

১। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন (সনদ সহ হাদীসটি এই), حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو الْمَلِيحِ الْحَسَنُ بْنُ عُمَرَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ بَيَانٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ نُفَيْلٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي، مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ: وَسَمِعْتُ أَبَا الْمَلِيحِ، يُثْنِي عَلَى عَلِيِّ بْنِ نُفَيْلٍ، وَيَذْكُرُ مِنْهُ صَلَاحًا

অর্থাৎ উম্মু সালামাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মাহদী আমার পরিজন থেকে ফাতিমার সন্তানদের বংশ থেকে আবির্ভূত হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফর বলেন, আমি আবুল মালীহকে আলী ইবনু নুফাইলের প্রশংসা করতে এবং তার গুণাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি।

সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল মাহদী, হাদীস নং ৪২৮৪; হাদীসের মান, সহীহ।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য হল, “হযরত মাহদী সম্পর্কে ফাতেমার সন্তান থেকে তাঁর আগমনী যে সংবাদ হাদীস সমূহে এসেছে আমি সেই হাদীসে বর্ণিত মাহদী নই।”

দেখুন, রূহানী খাযায়েন ২১/৩৫৬।

২। ইমাম মাহদী হযরত আব্বাস (রা.)-এর বংশেও হবেন কিভাবে তা বুঝে নিন! প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী পিতার দিক থেকে ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র হযরত হাসান এবং নবীজীর চাচা হযরত আব্বাস উভয়ের বংশধর হবেন। কেননা হযরত হাসানের সাথে হযরত আব্বাসের পুত্র আল-ফজলের মেয়ে উম্মে কুলছুমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ আল-আসগর, জাফর, হামজা এবং ফাতেমা

দেখুন তবক্বাতে ইবনে সা’আদ ৬/৩৫২।

এমতাবস্থায় এই উম্মে কলছুমের যে কোনো সন্তানের ঔরস থেকে ইমাম মাহদীর পিতা জন্ম গ্রহণ করার দ্বারা তিনি প্রকারান্তরে হযরত আব্বাস (রা.)-এর ঔরস থেকেও জন্ম লাভ করলেন বলে গণ্য হবেন! সুতরাং ১ আর ২ নং এর মাঝে আর কোনো মতানৈক্য রইল না।

৩। ইমাম মাহদী হযরত ইমাম হাসান এবং হোসাইন উভয়েরই বংশ থেকেও হওয়া কিভাবে সম্ভব তাও বুঝে নিন! ইতিপূর্বে তো জানলেন যে, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী পিতার দিক থেকে ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র হযরত হাসান (রা.)-এর ঔরস থেকে হবেন। এখন জেনে নেব যে, ইমাম মাহদী হযরত হোসাইন (রা.)-এর বংশেও হতে পারা সম্ভবপর কিভাবে? এর জবাব হল, ইমাম হাসান আর ইমাম হোসাইন দু’জনের সন্তানদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ইতিহাস যাদের ভালোভাবে জানা আছে তারা কখনোই এ জাতীয় বর্ণনা দ্বারা বিভ্রান্ত হবেনা।

ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ইমাম হোসাইন বিন আলী (রা.) এর একটি কন্যা ছিলেন ফাতেমা। তার বিয়ে হয়েছিল ইমাম হাসান বিন আলীর পুত্র হাসান আল মুছান্নাহ (৩৭-৯৭ হিজরী)-এর সাথে। হাসান আল মুছান্নাহ’র মায়ের নাম ছিল খাওলাহ বিনতে মানযূর। তাদের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন, আব্দুল্লাহ আল-মুহায, ইবরাহীম আল-গুমার, হাসান আল-মুছাল্লাছ প্রমুখ। (সূত্র : মুনতাহিল আ-মা-ল ফী তাওরীখিন নাবী ওয়াল আ-ল, ১/৬৫১-৫৩; শায়খ আব্বাস আল-ক্বিম্মী)।

আপনাদেরকে আরও একটি তথ্য দেব। হযরত হাসান বিন আলী (রা.) এর ‘ফাতেমা‘ নামে একজন কন্যা ছিল। তাঁকে বিয়ে দেয়া হয় ইমাম হোসাইন (রা.) এর পুত্র আলী যয়নুল আবেদীন এর সাথে। সে ঘরে প্রায় ষোলজন সন্তান সন্ততি জন্ম লাভ করেন। তাই নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করতে পারি যে, এরই বৈবাহিক সূত্রধরে আগত ইমাম মাহদীর পিতা একই সঙ্গে হাসানী এবং হোসাইনী দুটোই হবেন। ফলে তাদের সংসারে জন্মগ্রহণকারী প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী একই সঙ্গে হাসানী এবং হোসাইনী হওয়াও সম্ভব। সুতরাং উল্লিখিত সলিউশনের বিচারে ইমাম মাহদী একই সঙ্গে ফাতেমী, আব্বাসী, হাসানী এবং হোসাইনী সবই হতে পারেন! এতে কোনোভাবেই বৈপরীত্য নেই।

৪। ইমাম মাহদী জন্মিবেন, একথা দ্বারা মির্যা সাহেব হাদীসের মধ্যে কী ধরণের বৈপরীত্য থাকার আপত্তি তুললেন আমার জানা নেই। যেহেতু আমরা মুসলমানরাও বিশ্বাস করি যে, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী জন্মিবেন আর প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন।

৫। ইমাম মাহদী গুহা হতে প্রকাশিত হবেন, এটা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কনসেপশন নয়। বরং এই ধরণের প্রবক্তাদের মতে ঐ মাহদীর জন্ম আজ হতে ১১৮৭ চন্দ্রবছর আগে ২২৫ হিজরিতে ইরাকের (বর্তমান রাজধানী বাগদাদের উত্তরে) পবিত্র সামেরা শহরে হয়েছিল। নাম মুহাম্মদ আল মাহদী। পিতার নাম ইমাম হাসান আল আসগরি। সুতরাং ডালেচালে খিঁচূড়ি পাকানোর কোনো কারণ নেই।

উল্লেখ্য, আনুমানিক ১৮৪৪ সালে শীয়া মতবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন বাহাই ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে আলী মুহাম্মদ বা’ব ছিলেন পুনরাবির্ভূত দ্বাদশ ইমাম ও মাহদী।

৬। উম্মতের মধ্য হতে হবেন, একথা দ্বারাও মির্যা সাহেব হাদীসের মধ্যে কী ধরণের বৈপরীত্য থাকার আপত্তি তুললেন আমার জানা নেই। মির্যা কাদিয়ানী যদি এখন বেঁচে থাকতেন তাহলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আহলে বাইয়েতের সদস্যগণ কি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার গণ্ডীর বাহিরে? নিশ্চয়ই না। এখানে ঐ বর্ণনাটি দ্বারা সূক্ষ্মভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম মাহদী আর ঈসা দুইজনই আলাদা দুই চরিত্রের। নতুবা হাদীসে ‘তিনি জন্মিবেন’ একথা অর্থ কী? নিশ্চয়ই এর অর্থ হল, ইমাম মাহদী আর ঈসা একই চরিত্রের হবেন না, বরং তাদের একজন নাযিল হবেন আর অন্যজন জন্মিবেন! অতএব, বৈপরীত্য থাকার আপত্তি পুরোই বাগাড়ম্বর বৈ নয়।

৭। ঈসা (আ.)-ই মাহদী, একথা দ্বারা তো তখনি হাদীস সমূহের মধ্যে বৈপরীত্য থাকার আপত্তি সঠিক হত যদি এই বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য হত। মির্যা কাদিয়ানী নিজেই তো তার “হামামাতুল বুশরা” (বাংলা অনূদিত) গ্রন্থের ১৬১ নং পৃষ্ঠায় একে দূর্বল, ক্রটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য বলে লিখে গেছেন।

অতএব, বুঝা গেল প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর মাতা কিংবা পিতার বংশক্রম ইমাম হাসান এবং ইমাম হোসাইন দুইজনের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই কোনো কোনো বর্ণনায় ইমাম মাহদীর বংশ হিসেবে ইমাম হোসাইন (রা.)-এরও উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রধানতম কারণ এটাই। গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কেউই বুঝতে পারবে যে, হাদীসগুলোর কোনো কোনোটির সনদের মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও মূলত মতনের ক্ষেত্রে কোনো বৈপরীত্য নেই। সংক্ষেপে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

হাদীসকে গুরুত্বহীন সাব্যস্ত করতে কুরআনের আয়াতের বিকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার খন্ডন

হাদীস শরীফ বাতিল ও গুরুত্বহীন সাব্যস্ত করতে কাদিয়ানী এবং মুনকিরীনে হাদীস গোষ্ঠী কর্তৃক পবিত্র কুরআনের আয়াতের বিকৃত অনুবাদ ও নিকৃষ্টতর অপব্যাখ্যা আর তার খন্ডন :

খন্ডনমূলক জবাব : প্রথমে ওদের পক্ষ হতে আয়াতটির বিকৃত অনুবাদ উল্লেখ করছি। তারপর ইসলামিক ফাউণ্ডেশন হতে প্রকাশিত কুরআনুল কারীমের অনুবাদগ্রন্থ হতে সূরা জাশিয়া’র ৬ নং আয়াতটিসহ উপর থেকে কয়েকটি আয়াতের অনুবাদ-ও তুলে ধরা হবে যাতে পূর্বাপর সবগুলো আয়াতের সমন্বিত সারকথা উপলব্ধি করতে সহজ হয়। আসুন, প্রথমে ৬ নং আয়াতটি দেখে নিই। আল্লাহতালা বলেন,

تِلۡکَ اٰیٰتُ اللّٰہِ نَتۡلُوۡہَا عَلَیۡکَ بِالۡحَقِّ ۚ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَ اللّٰہِ وَ اٰیٰتِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বইতে এর বিভিন্ন অনুবাদ দেখা যায়। একটি জায়গায় তারা এর অর্থ করেছে,

ওই সব আল্লাহ’র আয়াত, যা আমি আপনার নিকট যথাযথভাবে উল্লেখ করছি। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন হাদীসকে বিশ্বাস করবে?

কিন্তু মজার ব্যাপার হল, তাদের প্রকাশিত কুরআনের অনুবাদকৃত কপিতে উক্ত আয়াতটির অনুবাদ করা হয় আরেক ভাবে যেটি ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত’ তথা মূলধারার মুসলমানদের অনুবাদের একদমই কাছাকাছি কিংবা হুবহু একই। এই যে তাদের সেই অনুবাদ নিম্নরূপ:-

“এইগুলি আল্লাহ’র নিদর্শন যাহা আমরা তোমার প্রতি যথাযথভাবে বর্ণনা করিতেছি। অতএব তাহারা আল্লাহ ও তাহার নিদর্শনাবলীর (অস্বীকার করার) পর কোন কথার উপর ঈমান আনিবে।” স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য:-

এবার যুক্তিক খন্ডনমূলক জবাব :

হাদীস অস্বীকারকারীরাই মূলত পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতের উদ্দেশ্যমূলক ও বিকৃত অনুবাদ দাঁড় করে বলে থাকে যে, “দেখ দেখ! আল্লাহতালা নিজেই বলছেন, তারা আয়াত বাদ দিয়ে কোন হাদীসের উপর বিশ্বাস রাখতে চায়!” বুঝা গেল, হাদীস গুরুত্বহীন, বরং কুরআনই সব। শুধু কুরআন হলেই চলবে, হাদীসের গুরুত্ব নেই। নাউযুবিল্লাহ। এরা আসলে দলিল প্রমাণের দিক থেকে পুরোপুরি দেউলিয়া, সম্পূর্ণ মিসকিন। হাদীসের কষ্টিপাথরেই এরা বাতিল সাব্যস্ত হয়ে যায় বলেই এরা এইরকম বিকৃত অনুবাদ আর শয়তানি যুক্তি দিয়ে হাদীসের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলার স্পর্ধা দেখায়। সত্যি বলতে সব বাতিল পন্থীর এই একই বৈশিষ্ট্য, হাদীসকে তারা পথের কাঁটা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।

তো এবার সূরা আল-জাশিয়ার ঐ ৬ নং আয়াতের তাৎপর্য কী?

উত্তরে বলতে চাই, সূরা আল জাশিয়ার ৬ নং আয়াতে ‘আয়াত’ এবং ‘হাদীস’ শব্দ দুইখানা আক্ষরিক অর্থে যথাক্রমে ‘নিদর্শনাবলী‘ এবং ‘কথা বা বাণী‘ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার দরুন, ঐ ‘আয়াত’ (ايات) শব্দকে ‘আয়াতে কুরআনী’ আর ‘হাদীস’ (حديث) শব্দকে ‘হাদীসে নববী’ উদ্দেশ্য নেয়া সম্পূর্ণ ভুল। উক্ত সূরার ৩ থেকে ৫ নং আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি আর সেটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপটের বিচারে হাদীস অস্বীকারকারীদের ঐ ধরনের মর্থার্থ শতভাগ কুরআনের ভেতর তাহরিফ তথা বিকৃতিরই শামিল।

এবার জানার বিষয় হল, উক্ত সূরার আয়াত নং ৩ হতে ৫ এর মধ্যেও কি “আয়াত” (ايات) শব্দ রয়েছে?

উত্তরে বলা হবে যে, জ্বী হ্যাঁ রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, সেগুলোর কোনো একটিও ‘আয়াতে কুরআনী’ অর্থে উদ্দেশ্য নেয়া হয়না। তদ্রূপ ৬ নং আয়াত (فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَ اللّٰہِ وَ اٰیٰتِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ)-এর মধ্যেও যে ‘আয়াত’ (ايات) শব্দ রয়েছে সেটিও একইভাবে ‘আয়াতে কুরআনী’ অর্থে উদ্দেশ্য হবেনা। এবার সূরা আল-জাশিয়ার আয়াত নং ৩-৬ পর্যন্ত সবগুলোর অনুবাদ দেখুন! ইসলামিক ফাউণ্ডেশন থেকে প্রকাশিত অনুবাদ কপি দ্রষ্টব্য।

আয়াতগুলোর অনুবাদ :-

  • সূরা আল জাশিয়া আয়াত নং ৩। “নিশ্চয় আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে নিদর্শন (আয়াত/اٰیٰتُ) রয়েছে মুমিনদের জন্য।”
  • সূরা আল জাশিয়া আয়াত নং ৪। “তোমাদের সৃষ্টিতে এবং জীবজন্তুর বিস্তারে নিশ্চিত নিদর্শন (আয়াত/اٰیٰتُ) রয়েছে বিশ্ববাসীর জন্য।”
  • সূরা আল জাশিয়া আয়াত নং ৫। “নিদর্শন (আয়াত/اٰیٰتُ) রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য, দিবারাত্রির পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশ থেকে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ দ্বারা; জমিনকে তার মৃত্যুর পর তদ্দারা পুনর্জীবিত করেন এবং বায়ুর পরিবর্তনে।”

খেয়াল করুন, সূরা আল-জাশিয়ার ৬ নং আয়াতের উপরোল্লিখিত ৩-৫ নং পর্যন্ত সবগুলো আয়াতের মধ্যে “আয়াত” শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যেখানে সবগুলোর “আয়াত” শব্দ দ্বারা ‘নিদর্শন বা নিদর্শনাবলী’-ই উদ্দেশ্য। এরপরের লাইনেই অর্থাৎ ৬ নং আয়াতেই আল্লাহতালা বলেন,

تِلۡکَ اٰیٰتُ اللّٰہِ نَتۡلُوۡہَا عَلَیۡکَ بِالۡحَقِّ ۚ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَ اللّٰہِ وَ اٰیٰتِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ

যার সঠিক অনুবাদ হল, ওই সব আল্লাহ’র নিদর্শন (আয়াত), যা আমি আপনার নিকট যথাযথভাবে আবৃত্তি করছি। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর নিদর্শনাবলীর পর তারা (কাফেররা) কোন কথায় বিশ্বাস করবে?

প্রিয় কাদিয়ানী অবুঝ ভাই ও বোনেরা! এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, আপনাদের তথাকথিত আহমদী মুরুব্বী নামের ভদ্রলোকগুলো হাদীসকে গুরুত্বহীন সাব্যস্ত করতে কুরআনের আয়াতকে কত নিষ্ঠুরভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করে দরাকে সরা বানাচ্ছেন!

পরিশেষে আমার একটি প্রশ্ন!

আমরা আয়াতটির শানে নুযূল দ্বারা বুঝতে পারলাম যে, আয়াতটির ঐ কথাগুলো বিশেষ করে মক্কার মুশরিকদের উদ্দেশ্যেই ছিল। তাদেরকেই বলা হয়েছিল যে,

“আল্লাহর নাযিল করা এই কুরআন, যাতে রয়েছে তাঁর একত্ববাদের বহু প্রমাণাদি, যদি তারা এর উপরও ঈমান না আনে, তবে আল্লাহর কথাকে বাদ দিয়ে কার কথার উপর এবং তাঁর নিদর্শনাবলীকে ছেড়ে আর কোন্ এমন নিদর্শন আছে যার উপর তারা ঈমান আনবে?” (তাফসীর দ্রষ্টব্য)। এখন প্রশ্ন হল,

  • কাফের আর মুশরিকরা যে জায়গায় কুরআনের বাণীই অমান্য করে যাচ্ছে, অবাধে আল্লাহর সাথে কুফুরি আর শিরকে লিপ্ত রয়েছে সেখানে তাদেরকে হাদীস শরীফের গুরুত্ব দেখানোর যুক্তিকতা কিসের? আল্লাহ’র বাণী
  • فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَ اللّٰہِ وَ اٰیٰتِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ
  • এর মধ্যে…… তারা কোন হাদীসের উপর বিশ্বাস করবে, এখন এর কী তাৎপর্য দাঁড়াল? এতে কি কাদিয়ানীদের কথা অনুসারে একথা বোধগম্য হচ্ছেনা যে, মনে হয় কাফের আর মুশরিকদের নিকট তখন আয়াতে কুরআনী অপেক্ষা হাদীসের প্রতি টানটা বেশি ছিল! যার দরুন তাদের উদ্দেশ্যে সতর্কতা জারি করে বলতে হল যে, “আল্লাহ’র আয়াতকে বাদ দিয়ে তারা কোন হাদীসকে বিশ্বাস করবে!!

খুবই হাস্যকর!!

কথা এখানেই সমাপ্ত করছি। সত্যের অনুসন্ধানীদের জন্য প্রকৃত বিষয়টি এতটুকুতেই যথেষ্ট হবে বলেই আমার বিশ্বাস। ওয়াসসালাম।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।