Home Blog Page 8

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস-3

এগুলো-ও কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস

তাদেরই অথেনটিক বইপুস্তক ও পত্র পত্রিকা থেকে

২৪ হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম ‘লূদ’ নামক ফটকে দাজ্জালকে হত্যা করবেন বলে হাদীসে যে ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে, সেই ‘লূদ’ হতে পাকিস্তানের ‘লুধিয়ানা’ শহর উদ্দেশ্য[24]

২৫ খ্রিস্টান পাদ্রীরাই প্রতিশ্রুত সেই দাজ্জাল[25]

২৬ ইয়াজুজ-মাজুজ হচ্ছে রাশিয়া ও বৃটেনের খ্রিস্টানজাতি[26]

২৭ ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র শাহাদাত বরণের চাইতে আব্দুল লতিফ সাহেবের শাহাদাত বরণ অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ, (কেননা) সে সততা, আনুগত্যের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে যার দরুন সে অতিব দৃঢ়তর প্রতিযোগিতায় অগ্রে পৌঁছে গেছে[27]

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে ১৮৯২ সালে মুরতাদের শাস্তি হিসেবে মির্যা কাদিয়ানীর মুরিদ আব্দুল লতিফকে সরকার মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।

২৮ মির্যা কাদিয়ানী মুসলমানদের জন্য ‘ইমাম মাহদী’ আর খ্রিস্টানদের জন্য ঈসা (মসীহ) হিসেবে আবির্ভূত হন[28]

২৯ মির্যা কাদিয়ানী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন[29]

৩০ মির্যা কাদিয়ানী পরিষ্কার লিখেছে, তাকে অমান্য করার মানেই হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অমান্য করা[30]

তথ্যসূত্রঃ
[24] রূহানী খাযায়েন ১৮:৩৪১।
[25] হামামাতুল বুশরা পৃ-৩৩, রূহানী খাযায়েন ২২:৪৫৬।
[26] হামামাতুল বুশরা পৃ-৩৮ বাংলা অনূদিত, চলমান টিকা দ্রষ্টব্য।
[27] মালফুযাত ৪:৩৬৪, মির্যা কাদিয়ানী।
[28] তিনিই আমাদের কৃষ্ণ পৃ-২, বাংলা অনূদিত, মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন।
[29] ইসলামে প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদীর দাবীসমূহ পৃ-১৪। একই বইয়ের ১৬ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে, বৌদ্ধদের প্রতিশ্রুত ‘মৈত্তেয়’ আর জরথুস্ত্রের প্রতিশ্রুত ‘মেসিওদরবাহমী’ এর ভবিষ্যৎবাণী হতে মির্যা কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য।
[30] হাকীকাতুল ওহী পৃষ্ঠা ১৭, বাংলা অনূদিত।

পড়ুন পর্ব ১ ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

আহলে কিতাবীদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত শত্রুতা সঞ্চারিত থাকা

আহলে কিতাবীদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত শত্রুতা সঞ্চারিত থাকা ও একটি প্রশ্নের উত্তর

এধরণের প্রশ্ন সাধারণত কাদিয়ানীরাই উত্থাপন করে থাকে। তাদের এ ধরনের প্রশ্নের অন্তরালে একটা মতলব থাকে। সেটি হচ্ছে, কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ও শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগে আগেই সমস্ত আহলে কিতাবী মুসলমান হয়ে যাওয়া’র বিষয়টিকে কুযুক্তির আড়ালে অস্বীকার করতে চাওয়া। যেহেতু সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ বলছে, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগে আগেই তারা প্রত্যেকে ঈমান গ্রহণ করবে। এখন পবিত্র কুরআনের এ ভবিষ্যৎবাণী সরাসরি অস্বীকার করার সাধ্য কার? মূলত এ জন্যই ওরা কুযুক্তির আশ্রয় নেয় এবং উল্লিখিত শিক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, তাদের এ ধরনের মতলবসিদ্ধ বিশ্বাস ধারণ ও অনুরূপ কুযুক্তির পেছনে দৌড়ানোর কারণ কী?

উত্তর হচ্ছে, মির্যা কাদিয়ানী (জন্ম-মৃত্যু ১৮৩৯-১৯০৮ইং) কুরআন ও হাদীসের আলোকে নিজেকে প্রতিশ্রুত মসীহ তথা হযরত ঈসা (আ.) বলে দাবী করেছে আর কাদিয়ানী তথা কথিত আহমদীয়া সম্প্রদায় তাকে সেভাবেই মেনে আসছে। কাজেই এখন সহজেই প্রশ্ন উঠবে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজ দাবীতে যদি সত্যিকারের সেই মসীহ তথা ইবনে মরিয়ম হন তাহলে তো পবিত্র কুরআনের (৪:১৫৯/নিসা) উল্লিখিত শিক্ষা অনুসারে বর্তমান দুনিয়ায় আর কোনো আহলে কিতাবী (ইহুদী খ্রিস্টান) না থাকারই কথা, সকলে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাওয়ারই কথা! কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এ সমস্ত যৌক্তিক যে কোনো প্রশ্নের সম্মুখে সম্পূর্ণ কোনঠাসা। এমতাবস্থায় তাদের জন্য আয়াতটির উল্লিখিত শিক্ষায় অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকেনা। মজার ব্যাপার হল, তাদের ন্যায় অনুরূপ কোনো ব্যাখ্যা ইসলামের বিগত চৌদ্দশত বছরেও নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স দ্বারা প্রমাণিত নয়।

তাদের সেই কুযুক্তি ও অপব্যাখ্যাটা কী?

তাদের সেই কুযুক্তি ও অপব্যাখ্যাটি হচ্ছে এ রকম, তারা যুক্তি দেয় যে, হযরত মসীহ তথা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর যুগে এবং তাঁরই মৃত্যুর আগে সমস্ত আহলে কিতাবী (ইহুদ-খ্রিস্টান) মুমিন হয়ে গেলে তখন পবিত্র কুরআনের (০৫:৬৪/মায়েদা) আয়াত অনুসারে আহলে কিতাবীদের মাঝে إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ তথা ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ শত্রুতা সঞ্চারিত থাকে কিভাবে? সুতরাং বুঝা গেল, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগে আগেই সমস্ত আহলে কিতাবী ঈমান গ্রহণের শিক্ষাটি একটি রূপক, বাস্তব নয়। (এ ছিল তাদের কুযুক্তি ও কুরআন বিরোধী চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ধর্মবিশ্বাস)।

  • আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন,
  • وَإِن مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا لَيُؤۡمِنَنَّ بِهِۦ قَبۡلَ مَوۡتِهِۦۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكُونُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا 

অনুবাদঃ কিতাবীদের যত দল আছে তারা অবশ্যই ঈসার প্রতি তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে। আর কেয়ামতের দিন তিনি ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন (অর্থাৎ তিনি ওদের অবস্থা ও আমল প্রকাশ করে বলবেন যে, ইহুদীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল আর খ্রিস্টানরা আমাকে আল্লাহর পুত্র বলেছিল)। (তাফসীরে উসমানী, আল্লামা জাস্টিস মুফতি তকি উসমানী হতে অনুবাদ চয়িত)। (সূরা নিসা ১৫৯)।

  • আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন,
  • وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ طُغۡيَٰنٗا وَكُفۡرٗاۚ وَأَلۡقَيۡنَا بَيۡنَهُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ كُلَّمَآ أَوۡقَدُواْ نَارٗا لِّلۡحَرۡبِ أَطۡفَأَهَا ٱللَّهُۚ وَيَسۡعَوۡنَ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَسَادٗاۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ

অনুবাদঃ ইহুদীরা বলে আল্লাহর হাত রুদ্ধ। ওদেরই হাত রুদ্ধ হয়ে যাক এবং ওরা যা বলেছে তার কারণে ওদের প্রতি লা’নত বর্ষিত হোক। বরং আল্লাহর উভয় হাত প্রসারিত, তিনি যেভাবে ইচ্ছে ব্যয় করেন। আর আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে নিশ্চয়ই তা অনেকের অবাধ্যতা ও কুফুর বাড়িয়ে দেবে এবং আমি কেয়ামত দিবস পর্যন্ত ওদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করে দিয়েছি। যখনি তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে আল্লাহ তা নিবিয়ে দেন। আর ওরা যমীনে ফাসাদ করার উদ্দেশ্যে দৌড়ঝাঁপ করে। অথচ আল্লাহ ফাসাদকারীদের পছন্দ করেন না। (তাফসীরে উসমানী, আল্লামা জাস্টিস মুফতি তকি উসমানী হতে অনুবাদ চয়িত)। (সূরা মায়েদা ৬৪)।

যাইহোক, এখন কাদিয়ানীদের উল্লিখিত কুযুক্তির উত্তর দেয়া হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের ০৫:৬৪ আয়াত অনুসারে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলে মূলত ‘সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত’ সময়ের বিশালতাকেই বুঝানো উদ্দেশ্য। যেহেতু সময়ের বিশালতাকে বুঝাতে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ কথাটি একধরণের বাগধারা ও একটি বালাগাত তথা অলংকারপূর্ণ বাণী। যেমন, সাজেদ তার পরম বন্ধু মাজেদকে বলল, তুই ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ চেষ্টা করলেও চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়ী হতে পারবিনা।

খেয়াল করুন, ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলতে সাজেদ মোটেও এটা বুঝাতে চায়নি যে, সে প্রকৃতপক্ষে কেয়ামতের শিঙ্গাফুঁক দেয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকবে! কারণ বাগধারাকে সাধারণ অর্থে বিচার করা যায়না।

এবার আরেকটু খোলাসা করছি! হাদীসে আসছে, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

অর্থাৎ আমার উম্মতের একটি জামাত সর্বদাই সত্যের স্বপক্ষে ক্বিতাল করে কিয়ামত পর্যন্ত বিজয় হতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম ৪৮০১ ইফা)। এখানেও ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ শব্দ চয়িত হয়েছে। পক্ষান্তরে অপর আরেকটি হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ আছে যে, যখন ঈসা (আ.) দ্বিতীয়বার আসবেন তখন

و تَضَع الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا

অর্থাৎ যুদ্ধ আপনা সমস্ত সমরাস্ত্র গুটিয়ে নেবে (মুসনাদে আহমদ হা/৯১১৭)। এবার তাহলে ক্বিতাল (সশস্ত্র ধর্মযুদ্ধ) ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ চলবে, এর কী অর্থ দাঁড়াল? যে ক্বিতাল কেয়ামত পর্যন্ত অবিরাম চলতে থাকবে বলা হল, সেই ক্বিতাল হযরত ঈসা (আ:)-এর যুগে কোনো কাফের বাহিনী না থাকায় আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে; এইরূপ উল্লেখ থাকাটাই কি প্রমাণ করে না যে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলে মূলত ‘সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত’ সময়ের বিশালতাই উদ্দেশ্য!

শেষকথাঃ পবিত্র কুরআন আর অসংখ্য সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো জন্য এমন কোনো যুক্তি দাঁড় করা ঠিক হবেনা যা ইজমায়ে উম্মতের সুপ্রতিষ্ঠিত ও তাওয়াতূর পর্যায়ের আকীদার পরিপন্থী। আসল কথা হল, যারা কুরআনকে নিজের মনগড়া যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় তারাই পথভ্রষ্ট হয়। কেননা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে কুরআন যেভাবে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তারপর সাহাবীরা পরবর্তী প্রজন্মকে তথা তাবেয়ীদের যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন, অনুরূপ তাবেয়ীগণ তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তথা তাবে-তাবেয়ীগণকে যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন সেসব শিক্ষা-দীক্ষাকে বিশুদ্ধ সনদ ও ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্রে নির্ভরযোগ্য তাফসীরকারকগণ স্ব স্ব তাফসীর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। কাজেই বর্তমানে কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর এমন কোনো ব্যাখ্যা বা শিক্ষা গ্রহণযোগ্য হবেনা যেটির কোনো সনদ নেই কিংবা নির্ভরযোগ্য তাফসীর হতে বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত নয়। কাদিয়ানী সহ তাবৎ পথভ্রষ্ট গোষ্ঠীর সমুদয় ধর্মমত ও শিক্ষা-দীক্ষা মূলত এ সমস্ত কারণেই বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস-2

এগুলো-ও কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস

তাদেরই অথেনটিক বইপুস্তক ও পত্র-পত্রিকা থেকে নেয়া

১৩ কাদিয়ানী রচনাবলীতে উল্লেখ আছে, আল্লাহতালার নাম ‘ইয়াল্লাস’[13]

১৪ আমাদের জলসাও হজ্জের মতো…হজ্জের মাধ্যমে যে উপকারীতা উদ্দেশ্য সেটি সালানা জলসায়
এসেও লাভ করতে পারে[14]

১৫ হযরত আদম আলাইহিসসালাম প্রথম মানব ছিলেন না[15]

১৬ কোনো কাফের মুশরিকও চিরকাল জাহান্নামে থাকবেনা[16]

১৭ হযরত মূসা আলাইহিসসালাম জীবিত এবং সশরীরে আকাশে রয়েছেন, তিনি এখনো মৃত্যুবরণ করেননি[17]

১৮ মসীহ (ঈসা) দেশ হইতে গোপনে পলায়ন করিয়া কাশ্মীরের দিকে চলিয়া গেলেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন[18]

১৯ ঈসা আলাইহিসসালাম সম্পর্কে জীবিত থাকার বিশ্বাস সুস্পষ্ট শিরক[19]

২০ মির্যা কাদিয়ানীর নিকট হযরত জিবরাঈল আলাইহিসসালামও ওহী নিয়ে আসতেন[20]

২১ মির্যা কাদিয়ানীর নিকট আরো যারা ওহী নিয়ে আসতেন তাদের একজনের নাম ছিল ‘টিচি-টিচি’[21]

২২ শেষযুগে আগমনকারী যে ইমাম মাহদীর সংবাদ হাদীসসমূহে এসেছে তিনি আর প্রতিশ্রুত ঈসা আলাইহিসসালাম দুইজন একই ব্যক্তি[22]

২৩ পবিত্র কুরআনে যে মসীহ মওউদের আগমন করার কথা রয়েছে তা হতে মির্যা কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য[23]

তথ্যসূত্রঃ
[13] রূহানী খাযায়েন ১৭:২০৩ উর্দূ, আরও কিছু নাম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন- কালা এবং কালূ। দেখুন যিকরে হাবীব পৃ-১৮১ (নতুন এডিশন), লিখক মির্যায়ী ঘনিষ্ঠ সহচর মুহাম্মদ সাদিক।
[14] খুতুবাতে মাহমুদ ৪:২৫৪, তাং ২৫-১২-১৯১৪ খ্রিস্টবর্ষ।
[15] মালফুযাত ৫:৬৭৫, উর্দূ।
[16] আহমদীয়তের পয়গাম পৃ-১২ দশম সংস্করণ মে ২০০৬ইং।
[17] রূহানী খাযায়েন ৮:৬৮-৬৯।
[18] কিশতিয়ে নূহ পৃ-৭২ বাংলায় অনূদিত, মির্যা কাদিয়ানী।
[19] রূহানী খাযায়েন ২২:৬৬০।
[20] রূহানী খাযায়েন ২২:১০৬, টিকা দ্রষ্টব্য।
[21] রূহানী খাযায়েন ২২:৩৪৬, আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন- ‘মিঠোন লাল’ (তাযকিরাহ পৃ-৫৭৩-৭৪ চতুর্থ এডিশন), ‘শের আলী’ এবং ‘খয়রাতি’ (রূহানী খাযায়েন ১৫:৩৫১-৫২), ‘আইল’ (তাযকিরাহ পৃ-৩৬৯), ‘হাফিয’ (তাযকিরাহ পৃ-৬৪৩), ২০ বছর বয়সী ইংরেজ টগবগে যুবকের আকৃতিতে দেখতে ‘দরুশনি’ (মালফুযাত ৪:৬৯)।
[22] হামামাতুল বুশরা পৃ-৩২, বাংলা অনূদিত।
[23] রূহানী খাযায়েন ৩:৪৬৮, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের রচনাসমগ্র, রিপ্রিন্ট ২০০৮ ইং।

উল্লিখিত কোনো একটি তথ্য-ও কোনো কাদিয়ানী মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে তাকে নগদ দশ লক্ষ টাকা পুরষ্কৃত করা হবে।

পড়ুন পর্ব ১ ক্লিক

পড়ুন পর্ব ৩ ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস-1

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস

তাদেরই অথেনটিক বইপুস্তক ও পত্র পত্রিকা থেকে

১ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ অর্থে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও অন্তর্ভুক্ত[1]

২ মির্যা কাদিয়ানী-ই ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এবং তিনি প্রকৃতপক্ষেই ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’[2]

৩ মির্যা কাদিয়ানীর যুগের পর থেকে কেয়ামতের আর মাত্র এক হাজার বছর বাকি। আর এ এক হাজার বছর মির্যা কাদিয়ানীর জন্য নির্ধারিত (অর্থাৎ এ পুরো সময়টিতে মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত মেনে নেয়া ছাড়া কারো মুক্তি নেই)[3]

৪ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে মিডিয়া না থাকার দরুন তাঁর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণ হয়নি, মির্যা কাদিয়ানী এসে সেসব অপরিপূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করেছেন[4]। নাউযুবিল্লাহ।

৫ কাশফ অবস্থায় মির্যা কাদিয়ানী নারীরূপ ধারণ করে আর আল্লাহ পুরুষের রূপে এসে তার সাথে সহবাস করে[5]। নাউযুবিল্লাহ।

৬ হ্যাঁ, আমি কেবল নবী নহি, এক দিক হইতে নবী এবং আরেক দিক হইতে উম্মতি[6]

৭ ‘বেহেশতি মাক্ববেরায় যারা দাফন হবেন তারা নিশ্চিত বেহেশতি’[7]

৮ পবিত্র কুরআনে কাদিয়ানের নাম উল্লেখ রয়েছে[8]

৯ পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ‘মসজিদে আকসা’ হতে কাদিয়ানে মির্যা কাদিয়ানীর নির্মিত ‘মসজিদ’ উদ্দেশ্য[9]

১০ পবিত্র কুরআনে ‘ইবনে মরিয়ম’ বলে মির্যা কাদিয়ানীর নাম রাখা হয়েছে[10]

১১ ‘যে ব্যক্তিই মির্যা কাদিয়ানীর দলে প্রবেশ করেছে, সে প্রকৃপক্ষে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেই দাখিল হয়ে গেছে[11]।’ নাউযুবিল্লাহ।

১২ আমাদের জন্য ফরজ হল, আমরা যেন গয়ের আহমদীদের ‘মুসলমান’ মনে না করি, তাদের পেছনে নামায না পড়ি। কেননা তারা আমাদের দৃষ্টিতে খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী[12]ডাউনলোড ফাইল

তথ্যসূত্রঃ
[1] কালিমাতুল ফসল, ষষ্ঠ অধ্যায় পৃ- ৬৮।
[2] দৈনিক আল ফজল, তাং ২৮/১০/১৯১৫ ইং, কাদিয়ানীদের উর্দূ পত্রিকা।
[3] ইসলাম ও এদেশে অন্যান্য ধর্মমত পৃ-৪২ ও ৪৯, দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ১০ আগস্ট ২০১২ খ্রি.।
[4] রূহানী খাযায়েন ১৭:২৬৩।
[5] ইসলামি কুরবানী ট্রাক্ট নং ৩৪ পৃ-১২ উর্দূ।
[6] উম্মতিনবী পৃ-৯, হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃ-১২৩।
[7] মালফুযাত ২:৫২৬-২৭ উর্দু, চতুর্থ এডিশন।
[8] রূহানী খাযায়েন ৩:১৪০।
[9] রূহানী খাযায়েন ১৬:২১।
[10] রূহানী খাযায়েন ১৯:৯৮।
[11] খুতবাতুল ইলহামিয়্যাহ পৃ-১৭১, রূহানী খাযায়েন ১৬:২৫৮।
[12] আনওয়ারে খিলাফত পৃ-৯৩, মির্যা বশির উদ্দীনের রচনাসমগ্র ‘আনওয়ারুল উলূম’ ৩:১৪৮ উর্দূ অনলাইন এডিশন, কাদিয়ানী দ্বিতীয় খলীফা।

প্রামাণ্য ও সংযুক্ত স্ক্রিনশট

ছবিঃ ফুটফুটে চেহারার এ মানুষটি কাদিয়ানীদের বর্তমান (পঞ্চম) খলীফা মির্যা মাসরূর আহমেদ।

ফেজবুক থেকে পড়ুন

পড়ুন পর্ব ২ ক্লিক

লিখক ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

সূরা আ’রাফ ৩৫ ও সংশ্লিষ্ট শানে নুযূল

ভবিষ্যতে কি আরও অসংখ্য নবী রাসূল আগমন করার দলীল পবিত্র কুরআনে রয়েছে? অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি নিরসন,

আল্লাহতালা ইরশাদ করেনঃ ((يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي ۙ فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ)) অর্থ- ‘হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ (বার্তাবাহকগণ) আগমন করেন, তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ শুনায়, তাহলে যে ব্যক্তি সংযত হয় এবং সৎকাজ করে; তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবেনা।’ (সূরা আল আ’রাফ আয়াত ৩৫)।

ইমাম জালালুদ্দিন আস সুয়ূতি (রহ.) (মৃত. ৯১১ হিজরী) আয়াতটির প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে লিখেছেন –

আবী সাইয়ার আস-সুলামি (أبي سيّار السُّلَمي) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সাইয়েদানা হযরত আদম এবং তাঁর সন্তানদেরকে হাতের মুষ্টিতে রেখে ইরশাদ করেছিলেন ((یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ اِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ رُسُلٌ مِّنۡکُمۡ یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ ۙ فَمَنِ اتَّقٰی وَ اَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ)) অর্থাৎ ‘হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ (বার্তাবাহকগণ) আগমন করেন…। তারপর তিনি রাসূলগণের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকালেন এবং ইরশাদ করলেন “হে রাসূলগণ….”। (তাফসীরে দুররে মানসুর ৩:২৬২)।

এতে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর উক্ত সংবাদ একটি দূরবর্তী অতীত সংবাদ, যার ফলে অসংখ্য নবী রাসূল আগমনী ক্রমধারার সমাপ্তি ঘটেছে খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। বলাবাহুল্য যে, পবিত্র কুরআনের একটি অলংকার হচ্ছে, কুরআনের যেসব আয়াতে “ইয়া বনী আদম” অথবা “ইয়া আইয়ুহান নাস” উপবাক্যে আল্লাহ যখন কোনো ব্যাপারে সংবাদ দেন তখন সমগ্র মানবমণ্ডলীকেই সম্বোধন করে সংবাদ দেন। যেজন্য আয়াতটি ভবিষ্যতেও নতুন নতুন নবী রাসূল আগমনকরার বিষয়ে সংবাদ দিতে মনে করা অজ্ঞতা ও কুফুরীর শামিল।

একই তাফসীর বিশিষ্ট যুগ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী (মৃত : ৩১০ হিজরী)ও সহীহ হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখে গেছেন। (দেখুন তাফসীরে তাবারী, সূরা আ’রাফ, হাদীস নং ১৪৫৫৪)। যেমন তিনি লিখেছেন, ((إن الله جعل آدم وذريته في كفّه فقال: (يا بني آدم إما يأتينكم رسل منكم يقصون عليكم آياتي فمن اتقى وأصلح فلا خوف عليهم ولا هم يحزنون)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন “হে আদম সন্তানেরা! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রসূলগণ আগমন করে তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনায়…” কথাটি রূহের জগতে হযরত আদম এবং তাঁর সন্তানদেরকে হাতের মুষ্টিতে রেখে বলেছিলেন।

তাফসীরে ইবনে কাসীর গ্রন্থে ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (রহ.) আয়াতটির ব্যাখ্যায় এভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ((ثم أنذر تعالى بني آدم بأنه سيبعث إليهم رسلا يقصون عليهم آياته)) অর্থাৎ অত:পর আল্লাহতালা বনী আদমকে (রূহের জগতে) সতর্ক করে বলেন, তিনি অচিরেই তাদের নিকট বহু রাসূল প্রেরণ করবেন, যারা তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন।

উল্লিখিত দুই ইমামই কিন্তু কাদিয়ানীদের নিকট মান্যবর ও যুগ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। কেননা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানীর কিতাব ‘আছলে মুছাফফা‘ খ-১ পৃষ্ঠা নং ১৬২-৬৫ এর মধ্যে উপরের দুইজন ইমামকে “যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলাবাহুল্য যে, কিতাবটি মির্যা কাদিয়ানীর জীবদ্দশায় লিখা হয় এবং তার মৃত্যুর প্রায় সাত বছর পূর্বেই প্রকাশ করা হয়। কিতাবটির ভুমিকায় পরিষ্কার লিখা আছে যে, কিতাবটির প্রতিটি কন্টেন্ট মির্যা কাদিয়ানীকে নিয়মিত দেখানো হত এবং তারই নির্দেশনায় লিখা সম্পন্ন করা হয়েছিল।

যুগ ইমাম সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের সুস্পষ্ট বাণী হচ্ছে, ((مجدد کا منکر فاسق ہے)) মুজাদ্দিদগণের কথা অস্বীকারকারী ফাসেক। (রূহানী খাযায়েন ৬:৩৪৪)। কাজেই মির্যা সাহেবের মুরিদদের উচিত, অন্তত ফাসেক হওয়া থেকে বাঁচতে হলেও উপরের মুজাদ্দিদ দ্বয়ের পেশকৃত তাফসীর মেনে নেয়া এবং স্বীকার করা যে, আয়াতটি ভবিষ্যতে আরও অসংখ্য নবী রাসূল আগমণের কনসেপ্ট দিতে নয়, বরং রূহের জগতেই সমগ্র আদম সন্তানদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতে নবী রাসূলগণের আগমনী কাহিনী জানান দেয়ার জন্য ছিল। আয়াতটির পূর্বাপর আয়াতগুলো পড়ে দেখলে আরও বেশি সুস্পষ্ট হওয়া যাবে। কারণ পূর্বাপর আয়াতগুলোয় হযরত আদম এবং আদি-মাতা হাওয়া তাঁদের দু’জনের সৃষ্টি অত:পর জান্নাতে অবস্থান করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচিত হয়।

  • এরপরেও যেসব কাদিয়ানী বিশ্বাস করবে যে, উল্লিখিত আয়াত হতে ভবিষ্যতে অসংখ্য নবী রাসূল আগমণের সংবাদ দেয়া হয়েছে, তাদের নিকট তখন নিচের প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব থাকেনা।

১ এটি ভবিষ্যতে আরও অসংখ্য নবী রাসূল আগমন করার পক্ষের দলীল হয়ে থাকলে তা অবশ্যই মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার রচনার কোথাও না কোথাও অবশ্যই লিখে যেতেন। কিন্তু তার বইপুস্তক যতটুকু আমার পড়াশোনা তার আলোকে আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি যে, সে ভবিষ্যতেও অসংখ্য নবী রাসূল আগমন করার দলীল হিসেবে কোথাও আয়াতটিকে উল্লেখ করে যায়নি। কেউ পারলে আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন!

২ মির্যা কাদিয়ানীর মতে, মুহাম্মদ (সা.)-এর পর সেই একমাত্র নবী। যেমন, তার বইতে লিখা আছে, “সহীহ হাদীস অনুযায়ী এই রূপ ব্যক্তি একজনই হইবেন এবং এই ভবিষৎবাণী পূর্ণ হইয়াছে।” (দেখুন রূহানী খাযায়েন ২২/৪০৬-৭, আরও দেখুন হাকীকাতুল ওহী পৃ-৩৩০, বাংলা)। একথা তার অন্য আরেক বইতে আরও পরিষ্কার করে উল্লেখ আছে। যেমন তিনি ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ (বাংলা অনূদিত) বইয়ের ৮২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মুহাম্মদী সিলসিলায় শেষে আগমনকারী এই অধম (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী)। এখন কী হবে? ভবিষ্যতেও অসংখ্য নবী রাসূল যদি আসতেই থাকে তাহলে মির্যা সাহেব নিজ দাবীমতে এ উম্মতে ‘সর্বশেষ’ আগমনকারী কিভাবে হন!?

৩ আয়াতটির খণ্ডিতাংশে আরও উল্লেখ আছে যে, یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ অর্থাৎ তাঁরা (রাসূলগণ) তোমাদেরকে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনাবে। এতে পরিষ্কার হয়ে গেল, আগমনকারী নবীগণ শরীয়তবাহক-ও হবেন এবং তাদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র উম্মতও থাকবে। নইলে “আয়াতসমূহ” পাঠ করে নিজ নিজ উম্মতদের শুনানোর কী মানে? শরীয়ত বিহীন নবীগণ আয়াতসমূহের অধিকারী হবেন কিভাবে?

উল্লেখ্য, ‘তাফসীরে বাগাভী’-তে লিখা আছে, হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ)-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ((قال ابن عباس : فرائضي وأحكامي)) অর্থাৎ রাসূলগণ এসে যখন তোমাদেরকে আমার ফরজ-সমূহ এবং শরীয়তের বিধানাবলী পাঠ করে শুনাবেন!

৪ কাদিয়ানী সাহেবের বহু রচনায় পরিষ্কার করে লিখা আছে যে, তার দাবীকৃত নবুওয়ত আসল নয়, বরং আনুগত্যস্বরূপ নবুওয়ত; আনুগত্যের মাধ্যমে তার উক্ত নবুওয়ত অর্জিত হয়। (দেখুন রূহানী খাযায়েন ২২:৩০)। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে আয়াতে উল্লিখিত রাসূলগণের সাথে মির্যা কাদিয়ানীর কী সম্পর্ক? যেখানে তারই বক্তব্য হল, তার নবুওয়ত আসল নয়। পূর্বের নবীদের মত সরাসরি আল্লাহপ্রদত্তও নয়! এমতাবস্থায় সে ঐ আয়াতটির “রসুল” শব্দেও কিভাবে শামিল হতে পারে?

লিখক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানীদের বুদ্ধিবৃত্তিক দুইখানা মারণাস্ত্র সামলাবেন কিভাবে

কাদিয়ানীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ‘টেবিলটি’কে কিভাবে উলটে দেবেন??

তর্ক শুরু হলেই কাদিয়ানী পণ্ডিতগণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করার জন্য বিশেষতঃ দুটি বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র ব্যবহার করে। একটি হল, আরে বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানদের অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখো, তাদের অবস্থা কতটা শোচনীয়, তারা কেমন নিপীড়িত ও বঞ্চিত। তাদের আলেমরা আকাশের নীচে সর্বনিকৃষ্ট জীব, একে অন্যে দলাদলিতে লিপ্ত। বর্তমানে ইসলামের আলো যেন নিভু নিভু অবস্থা! এ অবস্থায় আল্লাহ যদি দুনিয়ায় কোনো মহাপুরুষ প্রেরণ না করেন তবে আর কখন প্রেরণ করবেন? তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, সেই ব্রিটিশ পিরিয়ডে ইসলামের দুর্দিনে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রতিশ্রুত মসীহ এবং মাহদী হিসেবে আল্লাহর একজন প্রেরিত নবী। (নাউযুবিল্লাহ)।

দ্বিতীয় অস্ত্র হল, ঈসা (আ.) জীবিত নেই, আর একথা কুরআন দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। সুতরাং আগত ঈসা ইবনে মরিয়ম দ্বারা ‘রূপক ঈসা’-ই উদ্দেশ্য, আর তিনিই হলেন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (মৃত. ১৯০৮ ইং)। কেননা দুই হাজার বছর পূর্বের ঈসা (আ.) বর্তমানে বেঁচে থাকা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কেননা এ বয়সের কেউই সাধারণত বেঁচে থাকেন না, বেঁচে থাকা অসম্ভব! (নাউযুবিল্লাহ)।

কাদিয়ানীদের যুক্তিগুলো বাহ্যিকভাবে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কিন্তু একটু গভীর থেকে চিন্তা করলে যে কেউ সহজেই ধরতে পারবে যে, তাদের ঐ সমস্ত যুক্তিতর্কের মূল উদ্দেশ্য একটাই, সেটি হল- মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আর হযরত ইমাম মাহদী হিসেবেই দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া। তাই আপতত কোনো ধরণের বিতর্কে না গিয়েই আমরা তাদেরকে মাত্র কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই!

তর্কের খাতিরে মেনে নিচ্ছি যে, আপনাদের কথা অনুসারে হযরত ঈসা (আ.) জীবিত নেই এবং দুনিয়ার সব আলেম উলামা গোমরাহ, পথভ্রষ্ট। কিন্তু তাই বলে কি মির্যা কাদিয়ানী নিজ দাবীতে সত্য হয়ে যাবে? কারণ বাহায়ী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মসীহ দাবীকারী মির্যা হুসাইন আলী নূরী তথা বাহাউল্লাহ ইরানীও (জন্ম-মৃত্যু ১৮১৭-১৮৯২) হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত দাবী করার মাধ্যমে নিজেকে ‘মসীহ’ (ঈসা) বলে দাবী করে গেছেন।

দুনিয়ার বর্তমান আদর্শিক অবস্থা গত একশ বছর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। যে কেউ একথা স্বীকার করতে বাধ্য। কিন্তু আখেরি নবী মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পরেও দুনিয়ার অবস্থা খারাপ হলেই কি আল্লাহ একেরপর এক নবী রাসূল পাঠাতেই থাকবেন? তাহলে এ শতাব্দীতেও যারা নবী রাসূল দাবী করবে আপনারা কি তাদেরকেও নবী রাসূল মেনে নেবেন?

আল্লাহতালা দুনিয়ায় ঈসা মসীহ এবং ইমাম মাহদী দুইজনকেই যথাসময় প্রেরণ করার কথা যদি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে সেটির বিবরণ পবিত্র কুরআনে অথবা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসগুলোয় অবশ্যই থাকবে। কিন্তু কোনো একটি হাদীসও কি আপনারা মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মিলাতে পেরেছেন? পারেননি। দয়াকরে আমাদেরকে গ্রহণযোগ্য দলিলের ভিত্তিতে অবশ্যই প্রমাণ করে দেখাবেন যে, মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে মসীহ হলেন? কিভাবে ইমাম মাহদী হলেন? কিভাবে তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে একজন নবীও হলেন?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

কাদিয়ানীরা নিজেদের মতবাদ দ্বারা নিজেরাই ফেঁসে গেছে

কাদিয়ানী মিশনারীদের নিকট এ প্রশ্নগুলোর কোনো সঠিক উত্তর আছে কি?

১ আমরা মুসলিম উম্মাহ বিশ্বাস করি যে, ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমনের বিশ্বাস কুরআন দ্বারা ইংগিতে এবং সহীহ হাদীসগুলো দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে সাব্যস্ত। কিন্তু কাদিয়ানী সম্প্রদায়ও বিশ্বাস করে যে, কুরআন দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছে যে, ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আবার আসবেন! (রূহানী খাযায়েন ১:৫৯৩)। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, কাদিয়ানীদের মতে, আগত সেই ঈসা হতে পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিয়ান পল্লীর নবী দাবীদার গোলাম আহমদ উদ্দেশ্য। তাই প্রশ্ন আসবে, কুরআনের সেই আয়াত কী কী যেখানে আগত সেই ঈসা বলতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য? কিভাবে তা বুঝিয়ে দিন!

উল্লেখ্য, মুসলিম উম্মাহ বিশ্বাস করেন, ঈসা (আ.) আবার আসবেন ঠিকই, কিন্তু তিনি রূপক কেউ নন, বরং তিনি প্রকৃত ঈসা ইবনে মরিয়ম-ই। আর এর প্রমাণ কুরআনে [3:46] ইংগিতে (وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلا وَمِنَ الصَّالِحِينَ) অর্থাৎ (মরিয়মের প্রতি কৃত ইলহাম, যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে) আর তিনি (ঈসা) দোলনায় মানুষের সাথে কথা বলবেন এবং প্রৌঢ় বয়সেও বলবেন এবং তিনি নেককারদের মধ্য হতে একজন। হাদীস বলছে (وَالَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ، لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا) অর্থাৎ শপথ সেই সত্তার যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ, তোমাদের মাঝে মরিয়ম পুত্র একজন ন্যায়বিচারক ও শাসক হিসেবে অবশ্যই নেমে আসবেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া দ্রষ্টব্য।

২ আগমনকারী ঈসা ‘রূপক ঈসা‘ হবেন, এর মজবুত এমন কোনো দলীল কি কুরআনে বা হাদীসে রয়েছে, যা দ্বারা গত তেরশত বছর ধরে প্রতি শতাব্দীর সকল যুগ-ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুফাসসির এবং হাদীস বিশারদগণও আপনাদের মতোই মনে করতেন!?

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের ‘মহা সুসংবাদ’ নামের একটি বইয়ের শেষে আঠারো জন যুগ ইমামের নাম-তালিকা উল্লেখ আছে। অন্তত তাদের কোনো একজন-ও কি আপনাদের অনুরূপ কোনো কনসেপ্ট রাখতেন? প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ দেখাবেন!

৩ এমন একটি হাদীস বা কুরআনের আয়াত কি নির্ভরযোগ্য কোনো পুরনো তাফসীর বা ব্যাখ্যা সহকারে দেখাতে পারবেন যেখানে আগমনকারী ঈসা আর প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী তারা দু’জনই একজন হবেন বলে উল্লেখ রয়েছে?

৪ সহীহ মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে প্রায় চার চার বার আগত ঈসাকে ‘নবীউল্লাহ ঈসা‘ অর্থাৎ আল্লাহর নবী হযরত ঈসা নাযিল হবেন, উল্লেখ রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, সেই ‘নবীউল্লাহ ঈসা’ দ্বারা মির্যা কাদিয়ানী উদ্দেশ্য হলে তিনি কিজন্য নিজেকে সরাসরি ‘নবী’ দাবী করার পরিবর্তে বিভিন্ন বিশেষণমূলক শব্দ (উম্মতি-বুরুজি-জিল্লি)কে আশ্রয় নিলেন? তাকে এ অনুমতি কে দিয়েছে? আল্লাহ দিয়েছেন? তার কোনো লিখনীতে কি একথা পরিষ্কার করে উল্লেখ আছে যে, সে সমস্ত বিশেষণের আশ্রয় নিতে আল্লাহ-ই তাকে বলেছেন!? দয়া করে তার বই থেকে দলীল দেখাবেন!

৫ মনে করুন, আল্লাহ-ই তাকে ‘নবী‘ নামে নামকরণ করেছেন! যদি তার এ কথা সঠিক হত তাহলে সে কিজন্য তার আরেকটা লিখায় মানুষের উদ্দেশ্যে লিখেছে যে,

তোমরা আমার লিখায় আমার সম্পর্কে যেখানেই ‘নবী’ শব্দ দেখতে পাবে তোমরা সে নবী শব্দটি কর্তিত ধরে নেবে আর নবী শব্দের জায়গায় ‘মুহাদ্দাস’ শব্দ উদ্দেশ্য নেবে! (আনওয়ারুল উলূম ২:৫৪১, উর্দূ – আনলাইন এডিশন)।

ডকুমেন্টস সহ দেখুন- ক্লিক

উত্তরগুলো পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলুম!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

আবূ হানীফা (রহ.) একজন সিকাহ ছিলেন

সনদের তাহকিক সহ ইমামে আ’যম আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন (১৫৮-২৩৩ হিজরী)-এর অভিমত,

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন (রহ.)-এর শিষ্য আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে ইবরাহীম আদ-দাওরাক্বি বলেন ((قَالَ (أَبُو يَعْقُوب) وَنا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ الْحَافِظُ قَالَ نَا عبد الله بْنُ أَحْمَدَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ قَالَ سُئِلَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَأَنَا أَسْمَعُ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَقَالَ ثِقَةٌ مَا سَمِعْتُ أَحَدًا ضَعَّفَهُ هَذَا شُعْبَةُ بْنُ الْحَجَّاجِ يَكْتُبُ إِلَيْهِ أَنْ يحدث ويأمره وَشعْبَة شُعْبَة)) অর্থ ❝ইয়াহইয়া ইবন মা’ঈনকে আবূ হানীফা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আমি শুনতে পেলাম, তিনি বলেছেন, তিনি একজন সিকাহ (অর্থাৎ তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত)। কেউ তাঁকে দুর্বল বলেছেন বলে আমি শুনিনি। এ তো শু’বাহ ইবনুল হাজ্জাজ, তিনি আবূ হানীফাকে হাদীস বর্ণনা করতে লিখে পাঠান এবং অনুরোধ করেন। আর শু’বাহ তো শু’বাহ-ই।❞ (ইমাম ইবনু আব্দিল বার, আল-ইনতিকা পৃ. ১২৭)। – সহীহ। রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত।

তাহকিক ও রাবীর সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত

1 ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকি (গ্রন্থকার) জন্ম: ৩৬৮-মৃত্যু: ৪৬৩ হিজরী। ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((كان إماما دينا ، ثقة ، متقنا ، علامة ، متبحرا ، صاحب سنة واتباع)) অর্থাৎ একজন একনিষ্ঠ ইমাম, সিকাহ, সুপুরুষ, আল্লামা, বিশাল পণ্ডিত ও সুন্নাহর অনুসারী। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৮:১৫৮ ইমাম যাহাবী)।

2 ইবনু আব্দিল বার (রহ.)-এর শায়খ ইমাম আবূ ইয়াকুব। ইমাম যাহাবী তার মৃত্যুসন ৩৮৮ হিজরী বলে উল্লেখ করেছেন (দেখুন তারীখুল ইসলাম ৮:৬৪৩)। পূর্ণ নাম, ইউসুফ ইবনে আহমদ আস-সয়দালানী আল মাক্কী, উপনাম আবূ ইয়াকুব। তিনি বলেছেন ((نا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ الْحَافِظُ)) এ কথা আমাকে আহমদ ইবনুল হাসান আল হাফিয বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু আব্দিল বার (রহ.) সহ অনেক ইমাম তাঁকে তাওসীক্ব করেছেন (দেখুন আল ইস্তিযকার ১:২১)। তাছাড়া শায়খ আবুল ফাওযান কিফায়াতুল্লাহ আস-সানাবিলী তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন ((ابو یعقوب یوسف بن احمد بن يوسف الصيدلانی … … ثقہ ہیں)) ❝আবু ইয়াকুব আস-সয়দালানী একজন সিকাহ।❞ (দেখুন, আনওয়ারুল বদর, পৃ-৩৩৩)।

3 আহমদ ইবনুল হাসান হাফিয (পূর্ণ নাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আদ-দিনাওয়ারী), উপনাম আবূবকর, পেশা আদ্দাররাব (الضَرّابَ), নিসবত আদ-দিনাওয়ারী। একজন সিকাহ রাবী। ইমাম খতীব বাগদাদী লিখেছেন ((قدم بَغْدَاد وحدث بها، وكان ثقة. مات يوم الأربعاء لأربع عشرة خلت من جمادى الأولى سَنَة ثمان وعشرين وثلاثمائة ببَغْدَاد)) অর্থাৎ তিনি বাগদাদ গমন করেন এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করা হয়। তিনি একজন সিকাহ ছিলেন। তিনি জুমাদাল উলা মাসের ১৪ তারিখে বুধবার ৩২৮ হিজরীতে বাগদানে ইন্তেকাল করেন। (তারীখে বাগদাদ ৪:৪২৭ খতীব বাগদাদী, তারীখুল ইসলাম ২৪:২২৪ ইমাম যাহাবী, মু’জামু ইবনিল মুক্বরি ৫০৩)।

  • উল্লেখ্য, এ আহমদ ইবনুল হাসান আল হাফিয নামে দু’ ব্যক্তি রয়েছে। একজনের নামের শেষে السُّكّريّ রয়েছে, তার মৃত্যু-সন ২৬১ হতে ২৭০ হিজরীর মধ্যে (তারীখুল ইসলাম ৬:২৬২ ইমাম যাহাবী), আরেকজনের নামের শেষে الدينورى রয়েছে; কিন্তু উক্ত সনদে الدينورى নামীয় ব্যক্তিই উদ্দেশ্য যিনি ৩২৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আর একথার প্রমাণ আছে ইবনুল বার (রহ.)-এর কিতাব ‘আল ইন্তিক্বা’ এর ১৪৫ নং পৃষ্ঠায় উল্লিখিত অপর একটি বর্ণনার সনদে।

4 আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে ইবরাহীম আদ-দাওরাক্বি। উপনাম আবূ আব্দিল্লাহ। কেউ কেউ তাঁর মৃত্যু সন ২৪৬ হতে ২৭৬ হিজরীর মধ্যে বলে লিখেছেন। ইমাম যাহাবী (রহ.) তার মৃত্যু সন ২৭৬ হিজরী বলেই উল্লেখ করেছেন (দেখুন, সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩:১৫৪)। ইমাম যাহাবী (রহ.) লিখেছেন ((وكان صدوقا. وثقه الدارقطني)) ইমাম আবূ হাতিম তাঁকে সত্যবাদী (صدوق) বলেছেন এবং দারা কুতনী তাকে সিকাহ বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে ইমাম মুসলিম সহ অনেক মুহাদ্দিস হাদীস বর্ণনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গয়ের মুকাল্লিদরা উক্ত বর্ণনার সনদের উপর انقطاع এর যে অভিযোগ উত্থাপন করে সেটি তাদের ক্রুটিপূর্ণ তাহকিক আর অজ্ঞতা থেকেই করে থাকে। তারা রাবীগণের সঠিক পরিচয় নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বেশকিছু শাওয়াহিদ-شواهد ও মুতাবি’ ইমাম ইবনে মা’ঈন (রহ.) থেকে তাঁরই একাধিক শিষ্যের যৌথ বর্ণনা হতে নিম্নরূপ,

❝ইমাম মিয্যি (রহ.) এর তাহযীবুল কামাল ৭০৩২, ইমাম যাহাবীর তারীখুল ইসলাম ৬:৯৯১ এর তথ্য অবলম্বনে…❞

((محمد بن سعد العوفى سمعت ابن معين يقول: كان ابو حنيفة ثقة الخ))

1 মুহাম্মদ ইবনে সা’আদ আল আ’ওফী (২৭২ হিজরী) থেকে…। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ হাকিম উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ইমাম দারা কুতনী (রহ.)-কে বলতে শুনেছেন ((لا بأس به)) অর্থাৎ তার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। (তারীখে বাগদাদ ২:৩৬৮)।

ইমাম ইবনু হিব্বান বলেন ((لا يجوز به اذا انفرد)) অর্থাৎ তার একক বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া বৈধ নয়। (আল মাজরূহীন)।

ইবনে মা’ঈন (রহ.) বলেন ((ليس بمتين)) অর্থাৎ সে সুদৃঢ় নন। ইমাম আবূ যুর’আ (রহ.) বলেছেন ((لين الحديث)) সে হাদীসের ক্ষেত্রে কোমল। (তাহযীবুল কামাল, রাবী ক্রমিক নং ৫১৫০)।

((و قال صالح بن محمد الأسدى الحافظ سمعت يحيى ابن
معين يقول: كان ابو حنيفة ثقة فى الحديث الخ)) ((قال صالح بن جزرة وغيره سمعنا ابن معين يقول : أبو حنيفة ثقة الخ))

2 সালেহ ইবনে মুহাম্মদ আল আসদী আল হাফিয (২০৫-২৯৩ হিজরী) থেকেও…। তাঁর সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন ((الامام الحافظ الكبير الحجة)) তিনি একজন ইমাম, বড়মাপের হাফিয ও হুজ্জত। ইমাম দারা কুতনী (রহ.) বলেন ((و كان ثقة حافظا غازيا)) অর্থাৎ তিনি একজন সিকাহ, হাফিয এবং গাযী। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৪:২৪ ইমাম যাহাবী)।

ইবনে মা’ঈন (রহ.) থেকে আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে নিচের বর্ণনাগুলো জাল ও বানোয়াট যে কারণে,

1 ইবনে আবী মরিয়াম বলেন ((سألت يحيى بن معين عن أبي حنيفة، فقال: «لا يكتب حديثه)) অর্থ- আমি ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈনকে আবূ হানীফা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাঁর হাদীস লিখাযোগ্য নয়। (ইমাম ইবনু আদী সংকলিত আল কামিল ৮:২৩৬)।

  • দুর্বল।

কারণ এর সনদে ابن أبي مريم নামীয় রাবী অনির্ভরযোগ্য। ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((ضَعَّفَهُ: أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ، وَغَيْرُهُ، مِنْ قِبَلِ حِفْظِه.)) অর্থাৎ ইমাম আহমদ সহ অন্যান্যরা তাকে তার স্মরণশক্তির ক্রুটির কারণে দুর্বল বলেছেন। তিনি আরও লিখেছেন ((وَقَالَ ابْنُ عَدِيٍّ: أَحَادِيْثُه صَالِحَةٌ، وَلاَ يُحْتَجُّ بِهِ)) অর্থাৎ ইমাম ইবনু আদী বলেন, তার হাদীসসমূহ সঠিক, তবে তা দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন ((هُوَ رَدِيْءُ الحِفْظِ)) অর্থ- সে স্মরণ শক্তির দিক থেকে প্রত্যাখ্যাত। ইয়াযিদ ইবনে আব্দ রাব্বিহ বলেন, সে ১৫৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে। (ইমাম যাহাবীর সিয়ারু আলামিন নুবালা দ্রষ্টব্য)।

2 মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে আবী শায়বাহ বলেন ((سمعت يحيى بن معين وسئل عن أبي حنيفة، قال: «كان يضعف في الحديث)) অর্থ- আমি ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন থেকে শুনেছি তাঁকে আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন (উ’ক্বাইলীর সংকলন আদ-দ্বু’আফা ৪:২৮৪)।

  • জাল।

কারণ এর সনদে محمد بن عثمان بن أبي شيبة (মৃত. ২৯৭ হিজরী) নামীয় রাবী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে ছিল ((كذاب يضع الحديث)) একজন মহা মিথ্যাবাদী এবং হাদীস জালকারী। ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((وأما عبد الله بن أحمد بن حنبل فقال : كذاب. وقال عبد الرحمن بن خراش : كان يضع الحديث)) অর্থ- আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন, সে ছিল একজন মহা মিথ্যাবাদী। ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে খারাস বলেন, সে হাদীস জালকারী ছিল (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৪:২২, ইমাম যাহাবী)।

আলোচনা শেষ করব ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকী (রহ.)-এর একটি চমৎকার উক্তি দিয়ে। তিনি লিখেছেন ((الذين رووا عن أبي حنيفة ووثقوه وأثنوا عليه أكثر من الذين تكلموا فيه)) অর্থাৎ ❝যারা ইমামে আ’যম থেকে বর্ণনা করেছেন সকলে তাঁকে সিকাহ বলেছেন এবং প্রশংসা করেছেন। আর তাদের সংখ্যা ঐ সকল লোকের চেয়ে বেশি যারা তাঁর সমালোচনা করেছে।❞ (জামে বায়ানিল ইলম ২/১৪৯)।

তথ্যসংগ্রাহক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

এডমিন ফিকহ মিডিয়া

আবূ হানীফা ও তাঁর মাযহাবের প্রতি ইমাম আলী ইবনুল মাদীনির দৃষ্টিভঙ্গি

ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) ও তাঁর মাযহাবের প্রতি ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি (রহ.)-এর মোহাব্বত প্রকাশ

1 ইমাম বুখারী (রহ.)-এর উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি বলেন ((وَإِذَا رَأَيْتَ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَبَا حَنِيفَةَ وَرَأْيَهُ وَالنَّظَرَ فِيهِ فَلَا تَطْمَئِنَّ إِلَيْهِ وَإِلَى مَنْ يَذْهَبُ مَذْهَبَهُ مِمَّنْ يَغْلُو فِي أَمْرِهِ وَيَتَّخِذُهُ إِمَامًا))

❝তুমি যখন কোনো লোককে দেখবে যে, সে আবূ হানীফা এবং তাঁর রায়কে ভালোবাসে অথচ তাতে (সে) ক্রুটি করে, তাহলে তুমি এমন ব্যক্তির প্রতি একদমই প্রশান্তচিত্ত হবে না। আর এমন ব্যক্তির প্রতিও (প্রশান্তচিত্ত হবে না) যে তাঁর মাযহাব গ্রহণ করেছে বটে, (তবে) সে তাঁর ফাতাওয়া (মানার) ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে অথচ সে তাঁকে (নিজের) ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেছে।❞ (শারহু উসূলি ইতিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ- ১/১৮৫, হাফিয হিবাতুল্লাহ আলকাঈ মৃত. ৪১৮ হিজরী)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য।

ইমাম আলী ইবনুল মদনী (রহ.)-এর পক্ষ হতে সহীহ সনদে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর ব্যাপারে সুস্পষ্ট তাওসীক্ব (توثيق) নিম্নরূপ,

2 যেমন ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি (রহ.) বলেন ((وَقَالَ عَلِيُّ بْنُ الْمَدِيْنِيْ: أَبُوْ حَنِيْفَةَ رُوِيَ عَنْهُ الثَّوْرِيُّ وَاِبْنُ الْمُبَارَكِ وَحَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ وَهَشِيْمٌ وَوَكِيْعُ بْنُ الْجَرَّاحِ وَعَبَّادُ بْنُ الْعَوَّامِ وَجَعْفَرُ بْنُ عَوْنٍ وَهُوَ ثِقَةٌ لَا بَأْسَ بِهِ)) অর্থাৎ ❝আবূ হানীফা (রহ.)-এর কাছ থেকে সুফিয়ান আস-সওরী, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক, হাম্মাদ ইবনে যায়িদ, হাশিম, ওয়াকী’ ইবনে জাররাহ, আব্বাদ ইবনুল আ’ওয়াম প্রমুখ সকলে (হাদীস-আছার) রেওয়ায়েত করেছেন। তিনি একজন সিকাহ (বিশ্বস্ত), তার ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই।❞ (জামে’ বায়ানিল ইলম ওয়া ফাজলিহি, ইমাম ইবনে আব্দিল বার মালেকি – ২/১৪৯। আরো দেখা যেতে পারে ((اَلْجَوَاهِرُ الْمُضِيَّةُ فِىْ طَبَقَاتِ الْحَنَفِيَّةِ)) আল জাওয়াহিরুল মুদিয়্যাহ ফী তাবাক্বাতিল হানাফিয়্যাহ – ১/২৯)।

শেষকথা – আবূ হানীফা বিদ্বেষী কতিপয় উগ্র গয়ের মুকাল্লিদ ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি (রহ.)-এর কথার বিকৃত অনুবাদ করে এবং সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে থাকে। তাদের বিকৃত অনুবাদ দেখে আপনি অবাক হবেন! তাদের সেই বিকৃত ও খিয়ানতপূর্ণ অনুবাদটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হল!

ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এর উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

وَإِذَا رَأَيْتَ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَبَا حَنِيفَةَ وَرَأْيَهُ وَالنَّظَرَ فِيهِ فَلَا تَطْمَئِنَّ إِلَيْهِ وَإِلَى مَنْ يَذْهَبُ مَذْهَبَهُ مِمَّنْ يَغْلُو فِي أَمْرِهِ وَيَتَّخِذُهُ إِمَامًا

❝তুমি ঐ সমস্ত ব্যক্তির উপর একদম ভরসা (বিশ্বাস) রাখবে না, যারা আবু হানিফার প্রতি মুহাব্বত রাখে কিংবা তার মাজহাবের সাথে এবং তার রায়সমূহের দিকে নজর দেয়৷ আর ঐ সমস্ত ব্যক্তির ওপর ভরসা (বিশ্বাস) রাখবে না, যারা আবু হানিফার মাজহাবের ওপর চলে এবং তাতে বাড়াবাড়ি করে। আর (ওই ব্যক্তির ওপরেও ভরসা করবে না) যে আবু হানিফাকে নিজের ইমাম হিসেবে গ্রহন করে বা গন্য করে❞।

(শারহু উসূলি ইতিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ- ১/১৮৫)।

মজার ব্যাপার হল, কিতাবটিতে ইমাম আলী ইবনুল মাদীনির কথাটির কোনো সনদ নেই। কিন্তু তথাপি ইমামে আযম বিদ্বেষী গয়ের মুকাল্লিদ ও শীয়ারা সনদ বিহীন কথাটি বিকৃত অনুবাদ সহ প্রচারের সময় ❝সনদ সহীহ❞ লিখেই প্রচার করে, হয়ত তাদের অন্ধ অনুসারীরা এর বাস্তবতা কখনো যাচাই করার-ও প্রয়োজন মনে করেনি। কিতাবটির অনলাইন ভার্সন Click in here.

নাউযুবিল্লাহ।

অনুবাদ ও লিখক
এডমিন ফিকহ মিডিয়া

ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-কে সত্যিই কি দুই বার কুফুরী (كفر) থেকে তাওবা করানো হয়েছিল?

0

সম্পর্কিত খণ্ডনমূলক আর্টিকেলটির লিংক নিন্মে দেয়া হল,

আর্টিকেল Click

রাবী বৃত্তান্ত

1 গ্রন্থকার হাফিয ইমাম আবুল কাশিম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ আস সা’দী ❝ইবনু আবীল আ’ওয়াম❞ নামে প্রসিদ্ধ ((ابو القاسم عبدالله إبن محمد إبن أحمد إبن يحيى إبن الحارث السعدى، ابن أبى العوام))। মৃত্যু: ৩৩৫ হিজরী।

উল্লেখ্য বিশিষ্ট মুহাক্কিক শায়খ লতিফুর রহমান আল- বাহরাইজি লিখেছেন (( أصل الكتاب لابى القاسم جد ابى العباس…و ابو العباس روى عنه بواسطة ابيه أبى عبدالله محمد ابن عبدالله )) অর্থাৎ কিতাবটির মূল লিখক আবুল কাশিম হচ্ছেন আবুল আব্বাসের দাদা…এবং আবুল আব্বাস সেটি তার পিতা আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ থেকে রেওয়ায়েত করেছেন। (মানাকিবু আবী হানীফা – পৃষ্ঠা নং ৭, ভুমিকা দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘উ’কূদুল জুমান’ রচিতা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আস সালেহী (মৃত. ৯৪২ হিজরী) বলেছেন ((كلهم حنفيون ثقات اثبات نقاد)) অর্থাৎ তারা সকলেই বিশ্বস্ত হানাফি স্কলার। (মানাকিবু আবী হানীফা – পৃষ্ঠা নং ৬, ভুমিকা দ্রষ্টব্য)।

ইমাম আব্দুল কাদির মুহাম্মদ ইবনে নাসরুল্লাহ আল কারশী (মৃত. ৬৯৬ হিজরী) লিখেন ((أَحْمد بن مُحَمَّد بن عبد الله بن مُحَمَّد بن أَحْمد بن يحيى بن الْحَارِث أَبُو الْعَبَّاس عرف بِابْن أبي الْعَوام السَّعْدِيّ يَأْتِي أَبوهُ وَعبد الله جده من بَيت الْعلمَاء الْفُضَلَاء وَأحمد هَذَا أحد قُضَاة مصر مولده بهَا سنة تسع وَأَرْبَعين وَثَلَاث مائَة روى عَن أَبِيه عَن جده روى عَنهُ أَبُو عبد الله مُحَمَّد بن سَلامَة الْقُضَاعِي)) অর্থাৎ ❝আহমদ ইবনে মুহাম্মদের পিতা এবং দাদা (মিশরীয়) শীর্ষস্থানীয় আলেমগণের বাসায় যাওয়া আসা করতেন। ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ নিজেও স্বীয় জন্মস্থান মিশরের অন্যতম একজন বিচারপতি ছিলেন। তিনি ৩৪৯ হিজরীবর্ষ থেকে নিজ পিতা এবং দাদার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ আল-কুদা’ঈ।❞

হাফিয ইমাম আবুল কাশিম ইবনু আবীল আ’ওয়াম (রহ.) এর সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত জানতে পড়ুন ‘আল জাওয়াহিরুল মুদিয়্যাহ’ ১/২০৯।

2 তিনি (হাফিয ইমাম আবুল আবুল কাশিম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ) বলেন, ❝আমি  এ তথ্য পেয়েছি আবূ আলী আল হাসান ইবনু হাম্মাদ ইবনে কুসাইব আল হাযরামী ((أبو علي ، الحسن بن حماد بن كسيب الحضرمي البغدادي)) এর হাদীসগ্রন্থে, আর আমি তার সূত্রে এটি বর্ণনা করছি।❞ ইমাম যাহাবী তার সম্পর্কে বলেছেন ((قلت : كان من جلة العلماء وثقاتهم في زمانه)) আমি বলি, তিনি উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন একজন আলেম ও সমসাময়িক অন্যতম একজন সিকাহ তথা বিশ্বস্ত ব্যক্তি। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/৩৯৩)। মৃত্যু: ২৪১ হিজরী।

3 তিনি বলেন, এটি আমাকে বর্ণনা করেছেন আবূ কুতন আমর ইবনুল হাইসাম আল যুবায়দী ((أبو قطن عَمْرو بن الْهَيْثَم الزبيدِيّ))। জন্ম-মৃত্যু: ১২১-১৯৮ হিজরী। একজন সিকাহ। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন বলেন, ((إن أبا قطن اسمه عمرو بن الهيثم بن قطن بن كعب وانه ثقة)) তিনি একজন সিকাহ। (আল জারহু ওয়াত তা’দীল’ ৬/২৬৮ ইমাম ইবনে আবী হাতিম আর-রাযী)। তিনি সহীহ মুসলিম-এরও একজন রাবী। তিনি ইমাম শু’বাহ ইবনুল হাজ্জাজ থেকেও বর্ণনা করেছেন। (তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল খ-৩৪ পৃ-২০২ ইমাম মিজ্জি)।

সনদের মানঃ সহীহ ও মুত্তাসিল

প্রশ্ন, উল্লিখিত রেওয়ায়েতটির দ্বিতীয় কোনো বিশুদ্ধ মুতাবা’আত (সমর্থন) আছে কিনা?

উত্তর জ্বী হ্যাঁ, আছে। হিজরী দ্বিতীয় শতকের বিখ্যাত হাফিযুল হাদীস ও শায়খুল মুহাদ্দিসীন উপাধীতে ভূষিত ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন (রহ.) বলেন ((أَحْمَدَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ قَالَ سُئِلَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَأَنَا أَسْمَعُ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَقَالَ ثِقَةٌ مَا سَمِعْتُ أَحَدًا ضَعَّفَهُ هَذَا شُعْبَةُ بْنُ الْحَجَّاجِ يَكْتُبُ إِلَيْهِ أَنْ يحدث ويأمره وَشعْبَة شُعْبَة)) অর্থাৎ  আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে ইবরাহীম আল-দাওরাকী বলেন, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈনকে আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন আমি শুনছিলাম। উত্তরে তিনি বললেন “আবূ হানীফা সিক্বাহ (বিশ্বস্ত)। কেউ তাঁকে জঈফ (দুর্বল) বলেছেন বলে আমি শুনিনি। এ তো ইমাম শু’বাহ ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.) তাঁকে চিঠি লিখে হাদীস বর্ণনা করার আদেশ করেছেন। আর ইমাম শু’বাহ তো শু’বাই।” – সনদ সহীহ। (ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকী’র ‘আল-ইনতিকা’ [الانقاء], পৃষ্ঠা নং ১২৭)।

প্রথমোক্ত বর্ণনায় ইমাম শু’বাহ (রহ.)-এর কাছ থেকে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর নিকট পত্র প্রেরণ করার যে ঘটনার উল্লেখ আছে সেটাই যেন অত্র বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে ইবরাহীম আল-দাওরাকী (রহ.) ইমাম ইবনে মা’ঈনের সূত্রে বলা হল। সুতরাং পূর্বোক্ত বর্ণনায় বিশুদ্ধতার দিক থেকে শক্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি হল।

তথ্য-সংগ্রাহক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
এডমিন ফিকহ মিডিয়া