নবী রাসূল দাবী :
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখেছেন : ‘মোটকথা আমি মুহাম্মদ ও আহমদ (সঃ) হওয়ার কারণে আমার নবুওয়ত ও রেসালত লাভ হয়েছে, স্বকীয়তায় নয়, ‘ফানাফির রসূল’ হয়ে অর্থাৎ রসূলের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে পেয়েছি। সুতরাং এতে ‘খাতামান্নাবীঈনের’ অর্থে কোন ব্যতিক্রম ঘটলো না। পক্ষান্তরে ঈসা আলায়হেসসালাম আবার (এ পৃথিবীতে) আসলে (খাতামান্নাবীঈনের অর্থে) নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম ঘটবে।’ (দেখুন ‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৫; [বাংলায় অনূদিত], দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ২০০১ ইং; অনুবাদক মৌলভী মোহাম্মদ; মূল লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; রচনাকাল ১৯০১ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ)।
সারমর্ম :
উপরের দীর্ঘ বক্তব্য হতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেল, [১] মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে মুহাম্মদ ও আহমদ দাবীর পাশাপাশি নবুওয়ত এবং রেসালত লাভকারীও দাবী করত। [২] সে নবুওয়ত ও রেসালত লাভ করার জন্য নিজেকে নবী করীম (সা:) এর [পূর্ণ আনুগত্যের] মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বিলীনকারী বলেও দাবী করত। [৩] আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) যে ভবিষ্যতবাণী দিয়ে হাদীসে বলে গেছেন, হযরত ঈসা (আ:) শেষযুগে পৃথিবীতে একজন ন্যায়পরায়ন প্রশাসকরূপে আগমন করবেন [বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া], মির্যা কাদিয়ানী তার উক্ত বক্তব্যে নবী করীম (সা:)-এর সেই ভবিষ্যতবাণীকেও ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে অস্বীকার করলো।
ইমাম মাহদী দাবী :
মির্যা কাদিয়ানীর অনুসারীরা তাকে ইমাম মাহদী বলেও দাবী করে। অথচ নবী করীম (সা:) সহীহ হাদীসগুলোতে হযরত ইমাম মাহদীর যে পরিচয় উম্মতকে জানিয়ে গেছেন তার কোনো একটি হাদীসও মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মিলে না। এই দেখুন, বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদীসগ্রন্থের অন্যতম ‘সুনানু আবুদাউদ শরীফ’ কিতাবের ২য় খন্ডের ‘কিতাবুল মাহদী’ অধ্যায় ইমাম মাহদী সম্পর্কে পরিচয় কীভাবে রয়েছে :
ইমাম মাহদীর নাম হবে, মুহাম্মদ এবং পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ। তিনি হযরত ফাতেমা (রা:)-এর পুত্র সন্তান হযরত হাসান (রা:)-এর বংশধর (তথা কুরাইশী) হবেন।
- উল্লেখ্য, হযরত হাসানের সাথে হযরত আব্বাসের পুত্র আল-ফজলের মেয়ে উম্মে কুলছুমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ আল-আসগর, জাফর, হামজা এবং ফাতেমা (দেখুন তবক্বাতে ইবনে সা’আদ ৬/৩৫২)। সে হিসেবে ইমাম মাহদী মায়ের দিক থেকে হযরত আব্বাস (রা:)-এর বংশধর বললেও ভুল হবেনা।
ইমাম মাহদী মক্কায় বাইয়েত গ্রহণ করার পর যথাক্রমে গোরাসান এবং শামের উদ্দেশ্যে রণযাত্রা করবেন। অতপর তিনি এক বিশাল মুজাহিদ বাহিনী সাথে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে যাত্রা বিরতি করবেন এবং হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর জন্য অপেক্ষা করবেন। ইমাম ইবনে হাজার আল হাইছামী ওয়াল মাক্কী (রহ:) রচিত ‘আল ক্বওলুল মুখতাসার’ পৃষ্ঠা নং ৩৬ দ্রষ্টব্য। স্ক্রিনশট দেখুন!
তিনি আরবে (মদীনায়) জন্মগ্রহণ করবেন এবং পরিণত বয়সে সমস্ত শিক্ষা-দীক্ষা আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম (দৈব-বাণী)’র মাধ্যমে প্রাপ্ত হবেন। ইমাম মাহদী কোনো উস্তাদের ছাত্রত্বগ্রহণ করবেন না, একথা মির্যা কাদিয়ানী নিজেও লিখে গেছে। দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪।
রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪ দ্রষ্টব্য
তিনি শেষযুগে হযরত ঈসা (আ:) নাযিল হওয়ার নিকটবর্তী সময় মক্কায় (হজ্বের সময়) আত্মপ্রকাশ করবেন এবং হাজরে আসওয়াদ [রুকন] আর মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী জায়গায় তিনি মাহদীয়তের উপর প্রথম বাইয়াত নেবেন।
কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর সাথে এগুলোর একটিও মিলে না কিভাবে দেখুন :
তার নাম ছিল, মির্যা গোলাম আহমদ এবং পিতার নাম ছিল মির্যা গোলাম মর্তূজা, (তার মায়ের নাম, চেরাগ বিবি)। তার বংশ ছিল মোঘল [সম্রাট তৈমুরের বংশধর]। জন্মস্থান ছিল কাদিয়ান [গুরুদাসপুর জেলা, পাঞ্জাব, ভারত]।
সে সাধারণ মানুষের ন্যায় পড়াশোনা করেছিল। তার শিক্ষকবৃন্দের নাম, ফযল ইলাহী, ফযল আহমদ, মৌলভী গোলাম আলী। সে ১৮৯১ সালে নিজেকে রূপক ঈসা দাবী করেছিল এবং তার দুইবছর আগে লুধিয়ানায় (পাকিস্তান) মুজাদ্দিয়তের উপর প্রথম বাইয়াত নিয়েছিল। তারপর ১৮৯৪ সালে ইমাম মাহদীও দাবী করেছিল। বিস্তারিত তথ্যের জন্য দেখুন তারই পুত্রগণের রচিত ‘আহমদ চরিত’ [বাংলা অনূদিত] পৃষ্ঠা নং ১-৯; সীরাতে মাহদী, ক্রমিক নং ২০।
সীরাতে মাহদী, ক্রমিক নং ২০
শুনে অবাক হবেন, তার অনুসারীরা সাধারণ মানুষকে তাদের দলে ভিড়ানোর সময় মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত আর রেসালত লাভকরার দাবীকে গোপন রাখে। সহজে স্বীকার করেনা। আর যখন স্বীকার করতে বাধ্য হয় তখন সেটিকে ‘উম্মতিনবী’ শব্দে ব্যাখ্যা দিয়ে কোনোমতে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। এরা কেয়ামতের দিন নবী করীম (সা:) এর সামনে কোন্ মুখ নিয়ে দাঁড়াবে? সেদিন নবী করীম (সা:) যদি তাদের প্রশ্ন করেন, আমি কি ইমাম মাহদীর পরিচয় আমার হাদীসগুলোর মধ্যে রেখে আসিনি? তারপরেও তোমরা কিজন্য প্রকৃত ইমাম মাহদীকে সনাক্ত করতে [চিনতে] ভুল করলে? যাও আজকে তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই! এমতাবস্থায় এই সকল হতভাগা কাদিয়ানীদের তখন নাজাতের কী উপায় হবে?
মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে নবী করীম (সা:) এর মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করার দাবীও সত্য নয় কেন?
- আমরা তার জীবনচরিত্র থেকে যা যা পেয়েছি তা সংক্ষেপে এই যে,
[১] খেয়ানত ও আত্মসাৎ : আনুমানিক ১৮৬৪ সালের দিকে মির্যা কাদিয়ানী স্বীয় পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজার পেনশনের সাতশত রূপি উত্তোলন করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। [সীরাতে মাহদী ১/৪৩ পুরাতন এডিশন, নতুন এডিশন ১/৩৮; ক্রমিক নং ৪৯ দ্রষ্টব্য, মির্যাপুত্র বশির আহমদ এম.এ]। চিন্তার বিষয়, এমন আত্মসাৎকারী ব্যক্তিও কিভাবে ইমাম মাহদী হওয়ার দাবী করতে পারে? আরো প্রশ্ন আসে, এমন একজন ব্যক্তি কিভাবে নবী করীম (সা:) এর মাঝে নিজেকে বিলীন করার দাবী করতে পারে?
সীরাতে মাহদী নতুন এডিশন ১/৩৮; ক্রমিক নং ৪৯ দ্রষ্টব্য, মির্যাপুত্র বশির আহমদ এম.এ
[২] অশ্লিল গালি : মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ওহী, ইলহাম এবং কাশ্ফ এর সমষ্টি একখানা বইয়ের নাম ‘তাযকিরাহ’। বইটির ৫১৯ নং পৃষ্ঠাতে যারা তাকে গ্রহণ করবেনা তারা মুসলমান নয় বলেই উল্লেখ রয়েছে।
‘তাযকিরাহ‘ পৃষ্ঠা নং ৫১৯
সে তার বইয়ের আরেক জায়গায় এও লিখেছে : যারা তাকে গ্রহণ করেনা এবং সত্য বলে বিশ্বাস করেনা তারা যুররিয়্যাতুল বাগাইয়া তথা বেশ্যার সন্তান। নাউযুবিল্লাহ। দেখুন মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৫৪৭-৪৮। চিন্তার বিষয় হল, এমন অশ্লিল গালিবাজ কিভাবে ইমাম মাহদী দাবী করতে পারে?
[৩] প্রতারণা : মির্যা কাদিয়ানী শিয়ালকোট জেলা থেকে চাকুরী ছেড়ে চার বছর পর নিজ এলাকায় ফিরে যান। তখন নিজেকে শুধুমাত্র মুলহাম [দৈব-বাণীর অধিকারী] ও ইসলামের সেবক বলে দাবী করেন। তারপর ১৮৮০ সালে ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ নামক বই লিখার মনস্থ করেন। তিনি বইটি ৫০ খন্ডে লেখবেন বলে ওয়াদাও করেন। (বারাহীনে আহমদীয়া ৫/৮ [উর্দূ] দ্রষ্টব্য)। সেহিসেবে তিনি সবার নিকট চাঁদা দাবীও করেন। (বারাহীনে আহমদীয়া ৩/৩-৪ [বাংলা] দ্রষ্টব্য)। ফলে সেই সময় অসংখ্য মুসলমান তাকে প্রচুর রূপি চাঁদা প্রদান করেন। কিন্তু মির্যা সাহেব বই তো লিখলেন, তবে ৫০ খন্ডে নয়; মাত্র ৫ খন্ডে। তাই তিনি এর জবাবে লিখলেন, প্রথমে ৫০ খন্ডে লিখার ইচ্ছে [বা ওয়াদা] ছিল, কিন্তু ৫ খন্ডে সমাপ্ত করে দিয়েছি। কেননা ৫ ও ৫০ এর মধ্যে মাত্র একটি শূন্যের পার্থক্য! ফলে [পঞ্চাশ খন্ড লেখার] সেই ওয়াদা ৫ খন্ডে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে (রূহানী খাযায়েন ২১/৯ দ্রষ্টব্য)। আফসোস! একজন নবী দাবীদারের ওয়াদা পূর্ণ করার এ কি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত! কল্পনাতেও ভাবা যায় কি?
[৪] থিয়েটার দেখা : মির্যা কাদিয়ানীর খাস শিষ্য মুহাম্মদ ছাদেকের লেখিত বই ‘যিকরে হাবীব’ এর ১৪ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, মির্যা কাদিয়ানীর এক শিষ্য মুন্সী জফর আহমদ একবার মির্যা কাদিয়ানীর নিকট মির্যার আরেক শিষ্য মুহাম্মদ ছাদেক সম্পর্কে তার থিয়েটার দেখা নিয়ে নালিশ করলে মির্যা কাদিয়ানী প্রতিউত্তরে বললো : “আমিও একবার থিয়েটার [সিনেমা, নাট্যশালা] দেখতে গিয়েছিলাম সেখানে কী হয় তা দেখতে”! চিন্তার বিষয়, একজন ইমাম মাহদী দাবীদার তিনি থিয়েটারও দেখতে যান! শুনে অবাক হবেন, তার অনুসারীরা এর জবাবে লিখেছে ‘মির্যা সাহেবের এই আচরণ তাকে আধুনিক প্রগতিশীল মানসিকতা সম্পন্ন একজন মানুষ সাব্যস্ত করে।’ 100 Reply to Allegations : 46 দ্রষ্টব্য।
[৫] ওয়াইন মদ : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর শিষ্য হাকিম মুহাম্মদ হুসাইন কুরাইশী তার ‘খতূতে ইমাম ব-নামে গোলাম’ নামক একটি বইয়ের ৫ নং পৃষ্ঠায় মির্যা কাদিয়ানীর একখানা পত্র উল্লেখ করেন। সেখানে লিখা আছে, হে আমার ভ্রাতা হাকিম মুহাম্মদ হুসাইন সাহেব! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি এখন মিয়া ইয়ার মুহাম্মদকে পাঠাচ্ছি। আপনি নিজেই সবকিছু কিনে দেবেন এবং পলিমারের দোকান থেকে এক বোতল টনিক ওয়াইন [মদ]ও কিনে দেবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ওয়াইন (Wine) মদই হতে হবে। ওকে ফাইন।” উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ওয়াইন মদ একপ্রকার অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় যা সাধারণত গাঁজনকৃত আঙুরের রস থেকে তৈরি হয়। চিন্তার বিষয়, তবে কি একজন ইমাম মাহদী দাবীদার শরাবী আর মদ্যপায়ীও হতে পারে?
মির্যা কাদিয়ানীর প্রিয় শরাব : ওয়াইন মদ, উইকিপিডিয়া হতে সংগ্রহিত
‘খতূতে ইমাম ব-নামে গোলাম’ পৃষ্ঠা ৫
[৬] মাঝেমধ্যে জেনা করা : কাদিয়ানীদের তথাকথিত দ্বিতীয় খলিফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এমন এক ধরণের ব্যক্তি ছিল যার অত্যধিক পরিমাণে জেনা করার অভ্যাস ছিল। তাই নও মুসলিম আব্দুর রহমান মিসরী তিনি জামাতে আহমদিয়ার উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বরাবর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে একটি পত্র লিখেন। মির্যা বশিরের হাতে পত্রটি পৌঁছা মাত্রই সে কাদিয়ানে তাদের উপাসনালয়ে জুমার(!) বক্তৃতাকালে পত্রটি সবাইকে পড়ে শুনায় এবং মির্যা কাদিয়ানীর ঘনিষ্ট শিষ্য [হিন্দু থেকে কাদিয়ানী হওয়া] আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে সবাইকে ক্ষেপিয়ে তুলার চেষ্টা করে। কারণ পত্রটিতে লিখা ছিল:
- “হযরত মসীহ মাওউদ [অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী] আল্লাহর ওলী ছিলেন। আল্লাহর ওলীও কখনো কখনো জেনা করতেন। যদিও তিনি কখনো কখনো জেনা করতেন তাতে অসুবিধা কী! (তারপর লিখেন) মসীহ মাওউদের ব্যাপারে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কেননা তিনি জেনা করতেন কখনো কখনো। আমার অভিযোগ বিদ্যমান খলিফার ব্যাপারে। যেহেতু তিনি প্রতিদিন জেনা করে থাকেন।” (কাদিয়ানীদের পত্রিকা দৈনিক আল-ফজল, প্রকাশকাল ৩১ শে আগস্ট ১৯৩৮ ইং)।
উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজের তথাকথিত মাহ্দিয়ত দাবীর সত্যতার দলিল হিসেবে ‘তিনশ তের’ শিরোনামে নিজ অনুসারীদের মধ্য হতে ৩১৩ জনের নাম লিপিবদ্ধ করেছিল। যাদের ব্যাপারে সে লিখেছে “ইয়ে তামাম আছ্হাব খাছলত ছিদক ওয়া ছাফা রাখতে হেঁ।” অর্থাৎ এ সমস্ত সাথীরা তাদের স্বভাব-চরিত্র বিশ্বস্ত এবং নির্মল ও পরিচ্ছন্ন রেখে থাকেন [রূহানী খাযায়েন ১১/৩২৫ দ্রষ্টব্য]। সেখানে উক্ত তালিকার ২৫৫ নং সিরিয়ালে রয়েছেন শায়খ আব্দুর রহমান মিসরী। [রূহানী খাযায়েন ১১/৩২৮ দ্রষ্টব্য]।
যথাক্রমে রূহানী খাযায়েন ১১/৩২৫, ১১/৩২৮ এর স্ক্রিনশট
[৭] বেগানা নারীদের সাথে অবাধ মেলামেশা : মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ তার পিতার জীবনীগ্রন্থে লিখেছেন : ‘মোসাম্মৎ ভানু’ নামের জনৈকা মহিলা এক রাতে এক শীত মৌসুমে লেপের উপর দিয়ে মির্যা সাহেবের পা টিপতেছিলেন। হঠাৎ তিনি খাটের পট্টিকে পা ভেবে টিপতে থাকেন। সংক্ষেপে। উক্ত বইতে আরো উল্লেখ আছে যে, মোসাম্মৎ ভানু বেগম ছাড়াও মির্যার ব্যক্তিগত খাদেম (সেবক) হাফিয হামেদ আলীর স্ত্রী ‘মায়ী রসুল বিবি’ আর ‘বাবু শাহ্দীন’ এর স্ত্রী তারা উভয়ে সারা রাত্রী মির্যাকে পাশে বসে থেকে পাহারা দিতেন। মির্যার আরেক মুরিদ মুহাম্মদ দীন এর স্ত্রী ‘মায়ী ফাজ্জু’ এবং অন্য আরেক মুরিদ সাইয়েদ আব্দুস সাত্তার শাহ্ এর যুবতী কন্যা ‘যয়নব বেগম’ তারা সকলে কোনো কোনো সময় গভীর রাত পর্যন্ত মির্যা কাদিয়ানীর শারীরিক সেবায় নিয়োজিত থাকতেন বলেও উক্ত বইতে উল্লেখ রয়েছে। (সীরাতে মাহদী ৩/২১০ পুরাতন এডিশন, নতুন এডিশন ৩/৭২২; ক্রমিক নং ৭৮০ ও ৯১০ দ্রষ্টব্য)। আহা! একজন নবুওয়তের দাবীদার ও একই সাথে রাসূল (সা:) এর মাঝে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীনকারী দাবীদারের পক্ষে বেগানা নারীদের সাথে এইরূপ অবাধ মেলামেশা সত্যি বড়ই আজব ব্যাপার! অথচ আমাদের প্রিয় নবী (সা:)-এর জীবনে এসবের কল্পনাও করা যায় না!
[৮] নবীর শানে অবমাননা : ১৪শত বছর যাবত বিশ্বের সকল মুসলমানের অকাট্য বিশ্বাস হযরত মুহাম্মদ (সা:) আধ্যাত্মিকতা, খোদাভীরুতার দিক দিয়ে সমস্ত মানুষের উপরে, কিন্তু কাদিয়ানীদের বিশ্বাস যেহেতু উন্নতির কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি সেহেতু আধ্যাত্মিকতার দিক দিয়ে যে কেউ মুহাম্মদ (সা:)-কে পেছনে রেখে সামনে বেড়ে যেতে পারে। আর যিনি বেড়ে যেতে পেরেছেন তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। নাউযুবিল্লাহ। এটি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হিসেবে আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মদ (সা:)-এর নির্বাচনের প্রতি একটি পরিষ্কার চ্যালেঞ্জ নয় কি? প্রমাণের জন্য দেখুন : কাদিয়ানীদের পত্রিকা আখবারে ‘আল ফজল’ ১৭ ই জুলাই ১৯২২ ইং। সেখানে পরিষ্কার লিখা আছে : “এটা একটি সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী কথা যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই [আধ্যাত্মিকতার পথে] উন্নতি করতে পারে এবং উচ্চাসনে সমাসীন হতে পারে। এমনকি মুহাম্মদ (সা:) থেকেও সামনে বেড়ে যেতে পারে।” বক্তব্যটি মির্যা কাদিয়ানীদের কথিত দ্বিতীয় খলিফা মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমূদের। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানী থেকেও তার এই ধরণের আকীদা রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। দেখুন আখবারে ‘বদর’ ২৫ অক্টোবর ১৯০৬ ইং। তাতে উল্লেখ আছে, একদা তার সামনে তারই এক শিষ্য কাজী জহুর উদ্দিন আকমল কবিতা পড়ছিলেন: “মুহাম্মদ আবার আমাদের মাঝে এসেছে এবং মর্যাদায় আগের [মুহাম্মদের] চেয়েও সামনে বেড়ে গেছে। পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদকে যদি কেউ দেখতে চাও; তাহলে কাদিয়ানে এসে গোলাম আহমদকে দেখে যাও।” নাউযুবিল্লাহ। এমনকি সে তা সমর্থন করে তাকে ‘জাজাকাল্লাহ’-ও বলেছিল। (আখবারে ‘আল ফজল’ পাতা ৪, কলাম ১; ২২ ই আগস্ট ১৯৪৪ ইং)।
শেষকথা: তাহলে এমন জঘন্য চরিত্রের মানুষটি যদি দাবী করে যে, আমি নবুওয়ত ও রেসালত লাভ করেছি নবী করীম (সা:) এর মাঝে নিজেকে বিলীন করে, তার এই দাবী শুধুই কি মিথ্যা? নাকি নবী করীম (সা:) এর শানে চরম বেয়াদবিও! সুতরাং বুঝা গেল, মির্যা কাদিয়ানীর মত এই বেয়াদব জেনাকার ব্যক্তিটি আর যাইহোক না কেন; অন্তত ইমাম মাহদী হতে পারেনা, বরং সে একজন মিথ্যাবাদী ও মুরতাদ কাফের। ফলে তার মৃত্যুও হয়েছিল টয়লেটে। যেমন তাদেরই বইয়ের ভাষায়, “তিনি টয়লেটে গমন করতেই (নিচে) পড়ে যান। অতপর আমরা কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি ইহধম ত্যাগ করেন।” (হায়াতে নাসের পৃষ্ঠা নং ১৪; পুরতান এডিশন, লিখক, শায়খ ইয়াকুব আলী ইরফানী কাদিয়ানী, এডিটর : দৈনিক আল হিকাম পত্রিকা)।
অপ্রিয় হলেও সত্য, কাদিয়ানীরা ইদানীং তাদের বইগুলোর প্রতি সংস্করণে বইগুলো থেকে কখনো শব্দ কখনো বা সম্পূর্ণ এক কিংবা একাধিক বাক্য বাদ দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার নিকৃষ্টতম গোজামিলের পন্থা অবলম্বন করেছে। এই ভিডিওটি দেখুন Click
সংক্ষেপে এই পর্যন্ত। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন। [বিশেষ অফার : কোনো কাদিয়ানী তথ্যগুলো ভুল প্রমাণ করতে পারলে উপযুক্ত পুরষ্কার দেয়া হবে]।
- লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক