Home Blog Page 7

একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ বর্ণনার তাহকিক

0

দারাকুতনীর একটি জাল বর্ণনার আলোকে ১৮৯৪ এবং ‘৯৫ সালে একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের ঘটনা দিয়ে মির্যা গোলাম আহমদ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সেটিকে ঢাক-ডোল পিটিয়ে তার ইমাম মাহদী দাবীর সত্যতার প্রমাণ হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে। তার অনুসারীরা এ যুগে এসেও বহু মানুষকে এধরণের একটি মিথ্যা দিয়ে অনবরত পথভ্রষ্ট করেই চলছে। এ নির্বোধরা জানেনা যে, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত (২০০১ সাল) একই রমযান মাসে চন্দ্রসূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়ে আসছে কমকরে হলেও ১০৯ বার। ফলে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এধরণের “গ্রহণের” ঘটনা একদমই সাধারণ ও প্রাকৃতিক, ফলে কারো পক্ষে এধরনের কোনো ঘটনাকে পুঁজি করে নিজেকে “ইমাম মাহদী” প্রমাণ করার কোনো সুযোগ-ই থাকেনি।

আসি মূল আলাপে, প্রথমকথা হচ্ছে, দারাকুতনীর ঐ বর্ণনাটি ‘হাদীস’ হিসেবে প্রমাণিত নয়। বরং এর সনদের (বর্ণনাসূত্রে) মধ্যে দুইজন মিথ্যুক এবং মুনকার পর্যায়ের রাবী (বর্ণনাকারী) থাকার কারণে বর্ণনার কথাগুলো ইমাম বাকের (রহ.)-এর কিনা তাও নিশ্চিত নয়। যদি কথাগুলো ইমাম বাকের-এর বলেও নিশ্চিত হওয়া যেত তাহলেও কথাগুলোর একটু হলেও গুরুত্ব থাকত। অতএব, বর্ণনাটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল।

প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! অত্র বিষয়টি আমি প্রশ্নোত্তর আকারে নিচে তুলে ধরছি, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারে। তার আগে বর্ণনাটির সনদ বা ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র উল্লেখ করছি। যথা- এটি বর্ণনা করেছেন গ্রন্থকার ইমাম দারাকুতনী (রহ.), তিনি আবু সাঈদ থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু নওফল থেকে, তিনি উবায়েদ ইবনু ইয়া’ঈশ থেকে, তিনি ইউনুস ইবনু বুকাইর থেকে, তিনি আমর ইবনু শিম্মির থেকে, তিনি জাবের ইবনু ইয়াজিদ থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনু আলী (জন্ম-মৃত. ৫৭-১১৪ হিজরী) থেকে।

উল্লেখ্য, মুহাম্মদ ইবনু আলী হচ্ছেন হযরত হোসাইন ইবনু আলী (রহ.)-এর নাতী, যিনি ইমাম বাকের হিসেবেই পরিচিত।

প্রশ্নর্কতা : এটি ইমাম বাকেরের বক্তব্য হওয়াটাও কিজন্য নিশ্চিত নয়?

উত্তরদাতা : ঐ যে দুই মিথ্যুকের কারণে। উপরেই সনদ উল্লেখ করে দিয়েছি! সেখানে ইমাম বাকেরের নামে যে দুই ব্যক্তি চন্দ্রসূর্যগ্রহণের কথাটি মাহদীয়তের নির্দশন বলে চালিয়ে দিয়েছে তাদের নামও উল্লেখ আছে। দেখুন! ইমাম বুখারী, ইবনু হিব্বান, ইয়াহইয়া ইবনু মঈন সহ হাদীসশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞগণ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, এই দুই ব্যক্তি মিথ্যুক এবং মুনকার রাবী। এদের সূত্রে বর্ণিত কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এদের বর্ণিত কথাটি এই জন্যই ইমাম বাকেরের কথাও কিনা নিশ্চিত নয়।

প্রশ্নকর্তা : ইমাম বুখারী (রহ.)ও উক্ত সনদের রাবীদের সমালোচনা করেছেন কি?

উত্তরদাতা : জ্বী, সমালোচনা করেছেন। ইমাম যাহাবী সংকলিত ‘তালখীছুল মুস্তাদরিক’ (১/২৪৬) থেকে হুবহু আরবী ইবারত তুলে ধরছি। যেমন-((قال يحيى بن معين : ليس بشيئ و قال الجورجانى : زائغ كذاب. و قال ابن حبان : رافضى يشتم الصحابة و يروى الموضوعات عن الثقات. و قال البخارى : منكر الحديث. و قال يحيى : لا يكتب حديثه و قال السليمان : كان عمرو يضع للروافض و قال ابو حاتم : منكر الحديث جدا ضعيف الحديث الخ و قال الحاكم ابو عبدالله : كان كثير الموضوعات عن جابر))

এখানে নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন যে, ইমাম বুখারী (রহ.)ও সনদে উল্লিখিত ‘আমর ইবনে শিম্মির’-কে ‘মুনকার’ রাবী বলেছেন (قال البخارى : منكر الحديث)। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তো বলেছেনই। যেমন, সকল মুহাদ্দিস বলেছেন, তার বর্ণিত রেওয়ায়েত গুরুত্বহীন, সে কপট প্রকৃতির ও মিথ্যাবাদী, সে একজন রাফেজি (শীয়া মতাদর্শী) এবং সাহাবীদের গালি দিত; সে বিশ্বস্থ রাবীদের নামে জাল হাদীস তৈরী করত, সে একজন মুনকার রাবী, তার কোনো হাদীসই লিখাযোগ্য নয়, সে রাফেজিদের জন্য হাদীস জাল করত, সে হাদীসের জগতে খুবই দুর্বল। ইমাম হাকেম (রহ.) বলেছেন, সে জাবের ইবনু ইয়াজিদের কাছ থেকে বহু জাল হাদীস বর্ণনাকারী। উপরে যে সব কথা লিখলাম তা মূলত আরবী ইবারতটিরই অনুবাদ।

একই রাবী ‘আমর ইবনে শিম্মির‘ (عَمْرو بْنُ شِمِّرٍ) (মৃত. ১৫৭ হিজরী) সম্পর্কে ‘জারহু ওয়াত-তা’দীল’ বিষয়ক কিতাবগুলোতে এভাবেও লিখা আছে যে, তার পূর্ণ নাম আবূ আব্দিল্লাহ আমর ইবনে শিম্মির আল জা’ফী আল কূফী। তিনি হাদীসের জগতে মাতরূক (متروك الحديث) তথা পরিত্যাজ্য। তার সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের রায় হচ্ছে, ইমাম আবূ আহমদ আল হাকিম বলেন ليس بالقوي عندهم অর্থাৎ সে মুহাদ্দিসগণের নিকট শক্তিশালী রাবী নন। ইমাম আবূ আহমদ ইবনু আদী আল জুরজানী বলেন عامة ما يرويه غير محفوظ তার রেওয়ায়েত সমূহ অসংরক্ষিত ও ব্যাপক। ইমাম আবূবকর আল বায়হাক্বী বলেন لا يحتج به তার বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম আবূ হাতিম আর রাযী বলেন منكر الحديث جدا ضعيف الحديث لا يشتغل به تركوه সে চরম পর্যায়ের মুনকার, দুর্বল, তার বর্ণনার পেছনে ব্যস্ত হওয়া যাবেনা, মুহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন। ইমাম আবূ হাতিম ইবনু হিব্বান আলবাস্তী বলেন, رافضي يشتم الصحابة ويروي الموضوعات عن الثقات সে একজন রাফেযী, সাহাবায়ে কেরামদের গালি দিত, বিশ্বস্ত রাবীর নামে জাল হাদীস বর্ণনা করত। ইমাম আবূ যুর’আ আর রাযী বলেন, متروك الحديث، ضعيف الحديث সে একজন মাতরূক রাবী, হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ আল হাকিম আন নিশাপুরী বলেন, كان كثير الموضوعات عن جابر الجعفي জাবের আল জা’ফী এর সূত্রে তার নিকট অসংখ্য বানোয়াট হাদীস ছিল। ইমাম আবূ না’ঈম আল ইস্পাহানী বলেন, يروي عن جابر الجعفي بالموضوعات المناكير সে জাবের আল জা’ফী এর কাছ থেকে বহু বানোয়াট এবং মুনকার বিষয় বর্ণনা করত। ইমাম আহমদ ইবনে শোয়াইব আন নাসাঈ বলেন, متروك الحديث، ومرة: ليس بثقة ولا يكتب حديثه সে ছিল একজন মুনকার, বিশ্বস্থ ছিলনা, তার হাদীস লিখার উপযোগী নয়। ইমাম আহমদ ইবনে আলী আস সুলাইমানী বলেন, كان يضع للروافض সে রাফেযী (শীয়া-ইমামীয়া) সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে জাল হাদীস রচনাকারী ছিল। ইমাম ইব্রাহিম ইবনে ইয়াকুব আল জুরজানী বলেন, زائغ كذاب সে কপট ও মহা মিথ্যাবাদী। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, كذاب خبيث سباب شتام للصحب الكرام সে ছিল মহা মিথ্যুক, খবিস, সাহাবায়ে কেরামগণকে গালমন্দকারী। ইমাম দারাকুতনী বলেন, متروك الحديث، وذكره في السنن ضعيف সে হাদীসের জগতে মুহাদ্দিসগণের বিচার-বিশ্লেষণে মাতরূক বা পরিত্যাজ্য। সুনান গ্রন্থে তাকে তিনি দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম যাহাবী বলেন, متروك الحديث সে হাদীসে মাতরূক রাবী। ইমাম আমর ইবনু আলী আল পাল্লাস (عمرو بن علي الفلاس) বলেন, منكر الحديث حدث بأحاديث منكرة সে মুনকার রাবী, সে বহু মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী। ইমাম বুখারী বলেন, منكر الحديث সে হাদীসের জগতে মুনকার বা পরিত্যাজ্য। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সা’আদ কাতিব আল ওয়াক্বিদি বলেন, كان ضعيفا جدا متروك الحديث সে খুবই দুর্বল, মাতিরূক বা পরিত্যাজ্য রাবী। ইমাম ইয়াহইয়া বিন মা’ঈন বলেন, ليس بشيء، ومرة: ضعيف لا يكتب حديثه، ومرة: ليس ثقة সে গুরুত্বহীন ব্যক্তি, দুর্বল, তার বর্ণনাকৃত হাদীস লিখা যাবেনা, সে অনির্ভরযোগ্য। ইমাম ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান আল ফাসভী (يعقوب بن سفيان الفسوي) বলেন, ضعفه তাকে দুর্বল আখ্যা দেয়া হয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ আল মাজরূহীন-ইবনু হিব্বান, আদ-দ্ব’আফা-আবূ না’ঈম, আল কামিল ফী দু’আফাঈর রিজাল-ইবনু আদী, আল জারহু ওয়াত তা’দীল-আবূ হাতিম আর রাযী, আদ-দ্বু’আফা ওয়াল মাতরূকীন-ইবনু জাওযী, আত তাবকাতুল কোবরা-ইবনু সা’আদ, আদ-দ্বু’আফা ওয়াল মাতরূকূন-ইমাম নাসাঈ, ইবনু জুরাইক্ব, আস সুনানুল কোবরা, কবুলুল আখবার ওয়া মা’রিফাতির রিজাল, তারীখুল কাবীর-ইমাম বুখারী)।

এবার দ্বিতীয় রাবী সম্পর্কে কী লিখা আছে শুনুন। আসমাউর রিজাল শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব ইমাম ইবনু আদী (২৭৭-৩৬৫ হিজরী) রচিত ‘আল কামেল ফী দ্বু’আফাঈর রিজাল’ (খ-২/পৃ-১১৩) থেকে হুবহু আরবী ইবারত তুলে ধরছি। জাবের ইবনে ইয়াজিদ আল জা’ফী (মৃত. ১২৮ হি.) সম্পর্কে : যেমন-((عن ابى حنيفة قال : ما رأيت احدا اكذب من جابر الجعفى)) অর্থাৎ ইমামে আযম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, আমি জাবের ইবনে ইয়াজিদ আল জা’ফি এর চাইতে বড় মিথ্যাবাদী দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম লাইছ ইবনু আবি সুলাইম (রহ.) বলেছেন, فانه كذاب অর্থাৎ নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি মহা মিথ্যাবাদী। ইমাম মিজ্জি (রহ.)-এর ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থে (রাবী নং ৮৭৯) উল্লেখ আছে, ইসমাঈল ইবনে আবী খালিদ বলেন, ((فما مضت الأيام والليالي حتى اتهم بالكذب)) দিবারাত্রি অতিবাহিত না হতেই সে মিথ্যাচারিতার দোষে অভিযুক্ত হয়ে যায়। একই গ্রন্থে আরও লিখা আছে, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে ম’ঈন বলেন, ((لم يدع جابرا ممن رآه إلا زائدة ، وكان جابر كذابا)) যেই জাবেরকে দেখেছে সেই তাকে একজন অতিরঞ্জনকারী হিসেবে পেয়েছে, আর জাবের ছিল এখন কাজ্জাব (মহা মিথ্যুক)। ইমাম নাসাঈ বলেন, ((ليس بثقة ولا يكتب حديثه)) সে বিশ্বস্থ নয়, তার হাদীস লিখা যাবেনা। উল্লেখ্য, জাবের আল জা’ফী বড় মাপের একজন শীয়া পণ্ডিত, সে পুনঃজন্ম মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। কেউ তাকে তাওসীক্ব করলেও বেশিরভাগ মুহাদ্দিস-ই তাকে ‘জরাহ’ করেছেন।

এবার তাহলে নিজের বিবেককেই প্রশ্ন করুন, যে বর্ণনার মধ্যে দুইজন রাবীই মিথ্যাবাদী এবং জাল হাদীস তৈরীকারী হিসেবে অভিযুক্ত ও মুনকার, সে বর্ণনার কথাগুলো ইমাম বাকের-এরই ছিল বলে কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়?

প্রশ্নকর্তা : তা বুঝলাম, কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইমাম মাহদী দাবীকালে এই ধরণের ঘটনা ঘটলো কেন? এটা চিন্তার বিষয় নয় কি?

উত্তরদাতা : চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটা নিয়ে আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই। যেহেতু এটি আল্লাহর অন্যান্য প্রাকৃতিক সাধারণ নিয়মগুলোর মতই! হ্যাঁ, যদি এটি ওরকম না হত এবং এই ধরণের ঘটনা আগেও অসংখ্যবার না ঘটত তাহলে তা চিন্তাশীলদের অবশ্যই ভাবিয়ে তুলত! যেজন্য এতে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যই বাকি থাকেনি।

প্রশ্নকর্তা : আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, চন্দ্রসূর্যগ্রহণের এই অলৌকিক ঘটনাটি বিশেষ কোনো নিদর্শন নয়, ইতিপূর্বেও সময় সময় এটি প্রকাশিত হয়েছিল? কী প্রমাণ আছে?

উত্তরদাতা : জ্বী, এর আগেও এটি সাধারণ নিয়মেই বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। আর এটি আমার নিজের কোনো বক্তব্য নয়। এর পক্ষে ইতিহাস সাক্ষী। ঢাকা বকশিবাজার থেকে প্রকাশিত কাদিয়ানীদের ‘পাক্ষিক আহমদী’ (পৃ-২৪, তাং ১৫-এপ্রিল-২০১৫ইং) পড়ে দেখুন, সেখানেও এ ব্যাপারটি স্বীকার করে লিখা হয়েছে যে, ‘হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগের প্রফেসর জি. এম. বল্লভ ও আমি (মির্যায়ী লিখক) যে হিসাব কষেছি তাতে দেখা গেছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত একই রমযান মাসে চন্দ্রসূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়েছে মোট ১০৯ বার। এর মধ্যে তিনবার দুটি গ্রহণই নির্ধারিত তারিখে অর্থাৎ ১৩ ও ২৮ রমযানে কাদিয়ান থেকে দৃশ্যমান ছিল।’

বলে রাখা জরুরী, কাদিয়ানী লিখক এখানে ’কাদিয়ান থেকে দৃশ্যমান ছিল’ দাবী করলেও আমেরিকা মহাকাশ গবেষণা বিভাগ ‘নাসা’ তার এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ নাসা-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১৮৯৪ সালের ৬ই এপ্রিলে সংঘটিত গ্রহণের মানচিত্রে (বেগুনি রঙ্গের একটি অঙ্কিত রেখা দ্বারা) উক্ত গ্রহণের কক্ষপথ দেখিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, সেটি বাংলাদেশ আর বেঙ্গালুরু-এর উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চলে যায়। এই গ্রহণ এশিয়ার নানা দেশসহ ভারতেরও কয়েকটি স্থান থেকে দৃশ্যমান হলেও কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাঞ্জাব থেকে দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন হল, ‘কাদিয়ান’ কি ভারতের পাঞ্জাবের বাহিরে না ভেতরে? মজার বিষয় হল, নাসা-এর বিজ্ঞানীদের ওয়েবসাইটটিতে পরিষ্কার করে এও লিখা আছে, এই ধরণের চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনা আজ অব্ধি প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক বার ঘটেছিল। আপনি কি এরপরেও এটিকে প্রাকৃতিক সাধারণ নিয়মগুলোর মতই মানতে অস্বীকার করবেন?

প্রশ্নকর্তা : আপনি আর কোনো মাহদী দাবীদারের সময়ও এই ধরণের (চন্দ্রসূর্যগ্রহণের) ঘটনা ঘটেছিল বলে প্রমাণ করতে পারবেন?

উত্তরদাতা : জ্বী, পারব। আপনি কি মরক্কো বংশোদ্ভূত সালেহ বিন তারিফ-এর নাম শুনেছেন? তিনি নিজেকে ৭৪৪ সালে নবী দাবী করেন। তিনি ৭৯১ সাল পর্যন্ত মরক্কোর ‘বারঘৌতা বারবার’ রাজ্যের একজন শাসক ছিলেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদীও দাবী করেছিলেন। তিনি যে বছর ইমাম মাহদী দাবী করেন তার পরের বছর অর্থাৎ ১২৬ হিজরী মুতাবিক ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে একই রমাযানের ১৩ এবং ২৮ তারিখে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনাও ঘটেছিল। আর এই ঘটনা তার সময় চারবার ঘটেছিল যথাক্রমে ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৮৭ এবং ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। তার প্রতিষ্ঠিত ঐ জামাতের নাম ছিল ‘সালেহুল মুমিনীন’। তার মৃত্যুর পরেও তার এই জামাত প্রায় সাড়ে তিন’শ বছর পর্যন্ত আফ্রিকায় খুব দাপটের সাথে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। পরবর্তীতে ১০ম শতকের শেষের দিকে আল মুরাবিত রাজ-বংশের মুসলিম বীর সিপাহসালার ইউসুফ বিন তাসফিন এর নেতৃত্বে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে সালেহ বিন তারিফের রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে ঐ মিথ্যা দলটিরও বিলুপ্তি ঘটে।

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ তো ১৮৯৪ সালের দিকে শুধু ইমাম মাহদী দাবীদারই ছিলেন, তিনি নবী দাবী করেননি? অথচ সালেহ বিন তারিফ তো নবী দাবীও করেছিল?

উত্তরদাতা : ‘বাবী জামাত’ এর প্রতিষ্ঠাতা ইরানের আলী মুহাম্মদ বাব সাহেবও ইমাম মাহদী দাবী করেছিলে (১৮৪৪ সাল)। তার আমলেও (১৮৫১ সাল) একই রমাযানে চন্দ্রসূর্য গ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল। আর তিনিও শুধুই ইমাম মাহদী দাবী করেছিলেন। এখন সেও কি একই ঘটনার দরুন ইমাম মাহদী সাব্যস্ত হবেন? উল্লেখ্য, বর্তমানেও তার বহু অনুসারী (প্রায় ৪ মিলিয়ন, উইকিপিডিয়া) পৃথিবীতে রয়েছে। প্রায় ২১৮টি রাষ্ট্রে তার অনুসারীদের অবস্থান রয়েছে। যাইহোক, মির্যা গোলাম আহমদের জন্য একটি দুঃসংবাদ আছে, বলব?

: বলুন!

: মির্যা গোলাম আহমদ ঐ চন্দ্রসূর্যগ্রহণ সংক্রান্ত বর্ণনাটির মর্মার্থ বুঝাতে গিয়ে নিজ কিতাবে লিখে গেছেন, ‘বরং হাদীসের উদ্দেশ্য হল, কোনো নবুওয়ত বা রেসালত দাবীদারের সময়টিতে কখনো এই দুইটি গ্রহণ একত্রিত হবেনা।’ (রূহানী খাযায়েন ২২/২০৩)। মির্যা গোলাম আহমদ এই কথা বলে মূলত সে সমস্ত মাহদী দাবীদারের বিরুদ্ধে আঙ্গুল উঠাতে চাচ্ছেন যারা মাহদী দাবীর সময় নবুওয়ত ও রেসালতের দাবী করেনি, যদিও চন্দ্রসূর্যগ্রহণের ঘটনাও ঘটেছিল! হায়! মানুষ কতটা ধূর্ত হলে এইরূপ উদ্ভট ব্যাখ্যাও দিয়ে যেতে পারে! যাইহোক, এখন আমার প্রশ্ন হল, মির্যা গোলাম আহমদ ১৮৯৪ বা ১৮৯৫ সালে চন্দ্র সূর্যগ্রণের সময়ও পরিষ্কার করে নবুওয়ত বা রেসালতের দাবী করেননি, যা আপনিও জানেন; বরং তিনি ১৮৯৭ সালের দিকেও নবুওয়ত দাবিদারের প্রতি লানত (অভিশাপ) বর্ষণ করেছেন। (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ২/২৯৭-২৯৮ ও ২/২)।

এমতাবস্থায় ঐ দুই মিথ্যুকের সূত্রে বর্ণনাটি যদি সহীহও হত তবু মির্যা গোলাম আহমদকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করার কোনো উপায় থাকেনা। অধিকন্তু মির্যা গোলাম আহমদের উক্ত ব্যাখ্যা অনুসারে ‘সালেহ বিন তারিফ’-ই ইমাম মাহদী সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। কারণ সে একই সময় ইমাম মাহদী এবং নবী দুটোরই দাবীদার ছিল! আশা করি, উক্ত রেওয়ায়েতটির অসারতা এবার আপনার নিকটও পরিষ্কার হয়ে গেল!

আচ্ছা! আপনি কি জানেন আপনাদের মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব পরিষ্কার ভাষায় লিখে গেছেন যে, তার একনিষ্ঠ অনুসারীরা যে কোনো মতভেদপূর্ণ বিষয়ের সমাধান যেন তার কাছ থেকেই নেয়! (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৭/৬৪)। অন্তত এ দিক থেকেও আপনাদের জন্য বৈধ হবেনা ঐ দুই মিথ্যুকের বর্ণিত রেওয়ায়েতকে মাহদীয়তের কথিত নিদর্শন মনে করা। কারণ মির্যা সাহেব এও লিখে গেছেন ‘ইমাম বুখারীর কৃত শর্তের বিপরীত যে হাদীস সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।’ (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৭/১১৯-২০)। পক্ষান্তরে ইমাম বুখারী উক্ত বর্ণনার সনদ (সূত্র) সম্পর্কে পরিষ্কার বলেছেন, এটি মুনকার রেওয়ায়েত। আপনি ইমাম বুখারীর সংকল ‘তারীখু কাবীর’ (৬/৩৪৪, ক্রমিক নং ২৫৮৩) কিতাব থেকেও দেখতে পারেন। তিনি সনদ সহ পরিষ্কার লিখে দিয়েছেন এভাবে যে, ((عَمْرو بْنُ شِمِّرٍ : روى بعضهم عَنْ عَمْرو بْن أَبِي عَبْد اللَّه، الجعفِي، عَنْ جَابِر، منكر الْحَدِيث)) অর্থাৎ “আমর ইবনে শিম্মির সম্পর্কে : কতিপয় ব্যক্তি আমর ইবনে আবী আব্দিল্লাহ, (আমর ইবনে শিম্মির) আল জা’ফী ও জাবির (ইবনে ইয়াজিদ আল জা’ফী) থেকে বর্ণনা করেছে। সে (আমর ইবনে শিম্মির) একজন মুনকার রাবী।” মনে রাখতে হবে, অগ্রহণযোগ্য হাদীস গুলোর একটি প্রকারকে ‘মুনকার হাদীস’ বলে। কিন্তু কাদিয়ানীদের নিকট এ প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর নেই। সংক্ষেপে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইমাম মাহদী ‘কাদেয়া’ গ্রাম থেকে বের হওয়া এবং জমিদার বংশীয় হওয়া প্রসঙ্গে

প্রশ্নঃ ইমাম মাহদী ‘কাদেয়া’ নামক গ্রাম থেকে বের হওয়া এবং জমিদার বংশীয় হওয়া এধরণের কথাবার্তার ভিত্তি আছে কি?

উত্তরঃ

(এক)

ইমাম মাহদী ‘কাদেয়া’ নামক গ্রাম থেকে বের হবেন, এমন কথার কোনো ভিত্তি নেই। শুনে অবাক হবেন, কাদিয়ানীদের ‘তাবলিগি পকেটবুক‘ নামক ছোট্ট একখানা বইয়ে লিখা আছে, ইমাম মাহদীর গ্রামের নাম কাদ’আ বা কাদেয়া (আরবী : كدعة) বলেই হাদীসে উল্লেখ আছে! আমরা উত্তরে বলি যে, এই ধরণের কোনো শব্দ কোনো দুর্বল বর্ণনাতেও উল্লেখ নেই। মির্যা কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে “ইমাম মাহদী এমন একটি গ্রাম থেকে প্রকাশ পাবেন যে গ্রামের নাম থাকবে কাদ’আ। তার মাথায় থাকবে পাগড়ী। সেখানকার একজন আহ্বানকারী ডেকে বলবে, ইনি হলেন মাহদী। তোমরা তার অনুগত হও।” (মির্যা কাদিয়ানী তারপর লিখেন), এখানে যেই কাদ’আ শব্দ এসেছে তদ্দ্বারা পাঞ্জাবে (ভারত) ‘কাদিয়ান’ নামক গ্রামই উদ্দেশ্য। মির্যা কাদিয়ানীর রচনা ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ এর মধ্যেও অনুরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়।

এবার মূল আলাপে আসছি,

প্রথমকথা হচ্ছে, আলোচ্য রেওয়ায়েতটি জাল ও বানোয়াট। হাদীসশাস্ত্রের প্রায় ১৬ জন বিশেষজ্ঞ যাঁরা মির্যা কাদিয়ানীর জন্মেরও শতশত বছর আগে জন্মগ্রহণকারী, প্রত্যেকে বর্ণনাটির সনদ (সূত্র) পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পরিষ্কার বলে গেছেন যে ‘এটি জাল তথা বানোয়াট’ কথা। কারণ এর সূত্রে উল্লিখিত একজন বর্ণনাকারী হচ্ছে আব্দুল ওহাব বিন আল-জাহহাক।

তার সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের মতামত এই যে,

১. ইমাম বায়হাক্বী বলেন, সে হাদীসের জগতে পরিত্যাজ্য।

২. ইমাম আবু জা’ফর আল-আক্বিলী বলেন, সে হাদীসের জগতে মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য।

৩. ইমাম আবু হাতিম বলেন, সে মিথ্যা বলত।

৪. ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন, তার হাদীস দ্বারা দলিল দেয়া বৈধ নয়।

৫. ইমাম আবুদাউদ বলেন, সে হাদীস জাল করত এবং সে বিশ্বস্ত নয়।

৬. ইমাম আবু জুর’আ বলেন, সে হাদীস তৈরি করত।

৭. ইমাম হাকিম নিশাপুরী বলেন, তার বর্ণিত হাদীসগুলো বানোয়াট।

৮. ইমাম আবু নাঈম আল ইস্পাহানী বলেন, তার হাদীসগুলো জাল।

৯. ইমাম আহমদ ইবনে শু’আইব আন নাসায়ী বলেন, তার নিকট বিস্ময়কর হাদীস থাকত এবং সে অবিশ্বস্ত ও পরিত্যাজ্য আর ইমাম হাতিম তাকে মিথ্যাবাদী বলতেন।

১০. ইমাম ইবনুল ইরক বলেন, সে হাদীস তৈরি করত এবং মিথ্যাবাদী হিসেবে সমালোচিত ছিল।

১১. ইমাম দারে কুতনী বলেন, সে পরিত্যাজ্য, দুর্বল এবং তার বহু বাতিল আর পরিবর্তিত রেওয়ায়েত ছিল।

১২. ইমাম ছালেহ বিন মুহাম্মদ জাজিরাহ বলেন, সে মুনকারুল হাদীস (বিশ্বস্ত রাবীর উল্টো বর্ণনাকারী) এবং তার বর্ণিত হাদীস সাধারণত মিথ্যা।

১৩. ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল বুখারী বলেন, তার নিকট বহু পরিমাণে বিস্ময়কর বর্ণনা ছিল। (তাহযীবুল কামাল, মীযানুল ই’তিদাল ২/৬৭৯; রাবী নং ৫৩১৬; ইমাম যাহাবী রহ.)।

আফসোস! সাধারণ কাদিয়ানীদের পক্ষে কি আর এত গভীরভাবে তথ্য অনুসন্ধান করা সম্ভব? সব চেয়ে আশ্চর্যের কথা হল, রেওয়ায়েতটিতে ঐ শব্দটি “কাদ’আ বা কাদেয়া” নয়, বরং শব্দটি হল “কার’আ” (كرعة), যার ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে আরবের ‘ইয়েমেন‘ নামক রাষ্ট্রের উল্লেখ রয়েছে। যেমন ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.) সংকলিত “আল আ’রফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী-العرف الوردي في أخبار المهدي নামক কিতাবে লিখা আছে,

يخرج المهدي من قرية باليمن يقال لها كرعة

অর্থাৎ মাহদী ইয়েমেন এর কার’আ নামক গ্রাম থেকে বেরুবেন (পৃ.-৫৬ দ্রষ্টব্য)। আফসোস! মির্যা গোলাম আহমদ জাল রেওয়ায়েতটির সম্পূর্ণ বিবরণ পাশকাটিয়ে যায় এবং কাটছাঁট করে মতলবসিদ্ধ কনসেপ্ট দাঁড় করে যায়! দুনিয়ার বুকে এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে!!

পাঠকবৃন্দ! খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে, একই বর্ণনায় ইয়েমেন (يمن) শব্দও উল্লেখ রয়েছে। আরবি বাক্যটি একটু আগেই অর্থসহ দেখেছেন। যাদের সত্য খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে তারা একটু কষ্ট করে গুগলে সার্চ দিয়ে “কার’আ” নামীয় গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান দেখে নেবেন! তবেই ‘কার’আ’ গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন যে,

و كرعة قرية في منطقة بني خَوْلان باليمن قرب صعدة

অর্থাৎ “কার’আ” এটি ছ’দাহা নামক স্থানের নিকটতম ইয়েমেন এর বনী খাওলান অঞ্চলের একটি গ্রাম। আপনি অনলাইন থেকে আরো স্বচ্ছ তথ্য পাবেন যে, ইয়েমেনের একদম পশ্চিমে একটি সীমান্তবর্তী জেলার নাম Sadah (ছ’দাহা)। এটি রাজধানী San’a (সানা) হতে উত্তরে প্রায় ২৪৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কার’আ (كرعة) নামক গ্রামটি এই জেলার নিকটে এবং আল-হাদীদ শহরের দক্ষিণে ও Bayt al Faqih শহরের পূর্ব সীমান্তে দুটো পাহাড়ের মধ্যখানে অবস্থিত। গ্রামটি বর্তমানে ছোটছোট ৫ টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত। গ্রামগুলো হল- الظهرة, مكراع, الجروة, هاجرة, مرحلة (গুগল থেকে মানচিত্রসহ দেখে নিন)। উইকিপিডিয়া (আরবি ভার্সন) দ্রষ্টব্য।

(দুই)

আপনি কাদিয়ানী লিটারেচারগুলো পড়লে আরও দেখতে পাবেন যে, তারা আরেক জায়গায় দাবী করে লিখে রাখছে যে, হাদীসে আসছে ইমাম মাহদী একজন ‘জমিদার বংশীয়’ হবেন! অথচ এধরণের কোনো হাদীসই দুনিয়ারবুকে খোঁজে পাওয়া যায়না। কিন্তু কথা হল, তাহলে তাদের ঐ কথার ভিত্তি কী? এর উত্তর হচ্ছে, মূলত তারা হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদীসের শব্দে ইচ্ছাকৃত বিকৃত অনুবাদ দ্বারাই এ ধরণের অলীক কথাবার্তা লিখে রেখেছে।

এবার জেনে নেয়া যাক,

হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসটির শব্দগুচ্ছে তারা কী রকম বিকৃতি ঘটিয়েছে! হাদীসটিতে একটি শব্দ হচ্ছে ‘আল হারিছ হাররাছ’ (الْحَارِثُ حَرَّاثٍ)। ফলে প্রশ্ন আসবে যে, তাহলে এই ‘হারিছ হাররাছ’টা কে? সুনানে আবুদাউদ গ্রন্থের “কিতাবুল মাহদী” অংশে একই বর্ণনাকারী থেকে হাদীসটির আরবী ইবারত ( Text) দেখলে বুঝা যায় যে, সেই ‘আল হারিছ হাররাছ’ নামক ব্যক্তিটি ইমাম মাহদীর যুগের এমন এক ভাগ্যবান মহাপুরুষ যিনি “ওরায়ুন্নাহার তথা মধ্য এশিয়া” থেকে সৈন্যসামন্ত নিয়ে হযরত ইমাম মাহদীর সাহায্যে সম্মুখে এগিয়ে আসবেন। তার পূর্ণ নাম হবে আল হারিছ বিন হাররাছ (الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ) তথা হাররাছের পুত্র হারিছ। এবার অনুবাদসহ সংশ্লিষ্ট হাদীসটি নিচে দেখুন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ النَّهْرِ يُقَالُ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ عَلَى مُقَدِّمَتِهِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ مَنْصُورٌ يُوَطِّئُ أَوْ يُمَكِّنُ لآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا مَكَّنَتْ قُرَيْشٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ ‏.‏ أَوْ قَالَ إِجَابَتُهُ

অর্থাৎ ওরায়ুন্নাহার তথা মধ্য এশিয়া থেকে আল হারিছ বিন হাররাছ নামক এক ব্যক্তি বের হবেন। তাঁর আগে “মানছুর” নামের অপর এক ব্যক্তি বের হবেন। তিনি মুহাম্মদ (এখানে মুহাম্মদ বলতে ইমাম মাহদীকে বুঝানো উদ্দেশ্য। কেননা তার নামও মুহাম্মদ হবে)-এর অনুসারীর সাহায্যে এসে (বাহিনীতে) মিলিত হবেন ও তাঁকে শক্তিশালী করবেন; যেইরূপ কুরাইশরা রাসূল (সা.)-কে সাহায্য করেছিলো। (সেই সময়কার) সকল মুমিনের উচিত তাঁকে (ইমাম মাহদীকে) সাহায্য করা এবং তাঁর আহবানে সাড়া দেয়া।”

রেফারেন্স, আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী, হা/৪২৪০ [ইফা]; আরো দেখুন, ইমাম সুয়ূতী (রহ.) রচিত ‘আল আ’রফুল ওয়ারদী ফী আখবারিল মাহদী’ পৃষ্ঠা নং ২৭-২৮। হাদীসের মান, দুর্বল।

যাইহোক, এবার দেখুন, কাদিয়ানীদের রচনাসমূহে উক্ত হাদীসটির ‘আল হারিছ বিন হাররাছ’ নামক ব্যক্তির পরিচয় বিলুপ্ত করে এবং সেটিকে বিকৃত করে কত নিকৃষ্টতম অপব্যাখ্যার তুফান ঘটিয়েছে! যেমন তারা লিখেছে, ইমাম মাহদী জমিদার বংশীয় হবেন, বিপাশা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত ‘কাদিয়ান’ গ্রাম থেকে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন। নাউযুবিল্লাহ।

যাইহোক, সুনানে আবুদাউদ শরীফের উক্ত হাদীস হতে আমরা পরিষ্কার ধারণা পাই যে, ‘হারিছ হাররাছ’ হচ্ছে আল হারিছ ইবনে হাররাছ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ।

এবার ‘ওরায়ুন্নাহার’ (Wa’raun Nahar) এর ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে জেনে নেব। ওরায়ুন্নাহার (ইংরেজি : Central Asia) হল, মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ (বিশেষত, সমরকন্দ, বুখারা, তিরমিয, তাসখন্দ ইত্যাদি)’র ভূ-বেষ্টিত এলাকা! অঞ্চলটির সীমানার অনেকগুলো সংজ্ঞা আছে, যার কোনোটিই পুরোপুরি সর্বজনগৃহীত নয়।

ঐতিহাসিকভাবে অঞ্চলটি বিভিন্ন যাযাবর জাতি ও সিল্ক রোডের সাথে সম্পর্কিত। ফলে অঞ্চলটি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জাতি, দ্রব্য ও সাংস্কৃতিক ধারণাসমূহের আদানপ্রদানের অঞ্চল হিসেবে কাজ করেছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আছে কাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, এবং অন্যান্য ছোট ছোট রাষ্ট্র যেমন আজারবাইজান (কাস্পিয়ান সাগরের অপর পাড়ে অবস্থিত)। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকেও অনেক সময় এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)।

আল্লাহ আমাদেরকে আখেরি যামানার সকল ফেতনা ও ভণ্ডদের ভন্ডামি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা কাদিয়ানীর জামাত ব্রিটিশ সরকারের রোপিত চারাগাছ, বললেন মির্যা কাদিয়ানী

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বৃটিশ সরকারের সৃষ্ট ছিল কি? এ সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক সত্য কারনামা,

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ১৮৯৮ সালের দিকে কোনো এক প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারত সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ রাণী আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া বরাবর নিজেকে কিংবা নিজের প্রতিষ্ঠিত “জামাত” সম্পর্কে পত্রে লিখেছেন,

“নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার দলের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করেন। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)।

অবশেষে মির্যা কাদিয়ানী কিংবা তার “আহমদীয়া কমিউনিটি” ব্রিটিশ সরকারেরই রোপিত চারাগাছ বললে তা আদৌ বানিয়ে বলা হবেনা, বরং প্রকৃতই তারা তাদের “রোপিত চারাগাছ”। এটাই সত্য এবং এটাই বাস্তব ইতিহাস।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ব্রিটিশ সরকারের পতন মানে কাদিয়ানী জামাতের পতন, বললেন মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ

ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফার চাঞ্চল্যকর বক্তব্য

প্রশ্ন : কাদিয়ানীরা কি সত্যিই ব্রিটিশ প্রোডাক্ট? অনেককেই তো এভাবে বলতে শুনি! কিন্তু প্রমাণ আছে কি?

উত্তর : কাদিয়ানী জামাতের দ্বিতীয় খলীফা-এর বক্তব্যে ব্রিটিশ সরকার সম্পর্কে অতিব গুরুত্বপূর্ন একটি মূল্যায়ন তুলে ধরছি, যা একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষকেও ভাবতে উৎসাহিত করবে! একটি গোষ্ঠী কতটা পরগাছা আর ব্যক্তিত্বহীন হলে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের এতটা করুণা ভিক্ষুক হতে পারে তা চিন্তা করতেও মাথা নিচু হয়ে যায়! নিজেদের ‘ইমাম মাহদীর জামাত আর ট্রু ইসলাম’ দাবীদারদের এ-ই না হয় আসল রূপ!! ব্রিটিশ সরকারের পতনকে নিজেদেরই ‘পতন’ বলে দাবীদারদের মুখে কথায় কথায় “ইলাহী জামাত” শব্দটা শুধু শ্রুতিকটুই নয়, বরং দুনিয়ার সাথে তামাশা-ই বলা যায়! ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ কী বলেছেন দেখুন!

উর্দূ থেকে বাংলা অনুবাদ

یہ بات روز روشن کی طرح ظاہر ہوتی جاتی ہے کہ فی الواقع گورنمنٹ برطانیہ ایک ڈھال ہے جس کے نیچے احمدی جماعت اگے ہی اگے بڑھتی جاتی ہے۔ اس دهال کو ایک طرف کر دو اور دیکھو زہریلے تیروں کی کیسی خطرناک بارش تمہارے سروں پر ہوتی ہے۔ ہمارے مخالف اس بات کی انتظار میں رہتے ہے کہ ذرا ان کو موقع ملے۔ اور وہ زمین سے ہمارے جوڑ اکھاڑ کر پھینک دے لیکن جس درختوں کو خدا لگائے اسے کون اکھاڑ کر پھینک سکتا ہے اور جس باغ کا خدا مالی ہو اسی کون نقصان پہنچا سکتا ہے جب کبھی دشمن ہم پر حملہ آور ہوتا ہے۔ علاوہ اسمانی تائیدات کے۔ اللہ تعالی انسانوں میں سے بھی ایک محافظ ہمارے حفاظت کے لیے کھاڑا کر دیتا ہے اور وہ ہمیشہ ایک ہی ہوتا ہے یعنی گورنمنٹ برطانیہ پس کیوں ہم اس گورنمنٹ کے شکر گزار نہ ہوں۔ ہماری فوائد اس گورنمنٹ سے متحد ہوگے ہے اور اس گورنمنٹ کی تباہی ہمارے تباہی ہے اور اس گورنمنٹ کی ترقی ہمارے ترقی۔ جہاں جہاں اس گورنمنٹ کی حکومت پھیلتی جاتی ہیں ہمارے لیے تبلیغ کا ایک اور میدان نکلتا آتا ہے- پس کسی مخالفت کا اعتراض ہم کو اس گورنمنٹ کے وفاداری سے پھر نہیں سکتا۔

“একথা দিবালকের মত পরিষ্কার যে, প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ সরকার এমন একটি ঢাল, যার ছত্রছায়ায় ‘আহমদী জামাত’ নিরবচ্ছিন্নভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ঢালটিকে এক পাশে রেখে দেখতে থাকো যে, বিষাক্ত তীরসমূহের কত ভয়ানক বৃষ্টিধারা তোমাদের মাথার উপর ধেয়ে আসছে। আমাদের বিরোধীরা এরই অপেক্ষমান, যেন একটু সুযোগ মিলে আর এই ভূপৃষ্ঠ থেকে আমাদের গোড়া থেকেই উচ্ছেদ করতে পারে। অধিকন্তু কার সাধ্য সেই বাগানের ক্ষতি করতে পারে যার মালিক খোদা! শত্রু আমাদের উপর যখন আক্রমণ করে তখন স্বর্গীয় সমর্থন ছাড়াও মহান আল্লাহ আমাদের সুরক্ষার জন্য মানুষের মধ্য থেকে একজন রক্ষাকারী দাঁড় করে দিয়ে থাকেন। সেটি সবসময় একই হয়ে থাকে অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার। এমতাবস্থায় আমরা এই সরকারের কৃতজ্ঞতা (শোকরগুজার) স্বীকার না করে কিভাবে থাকতে পারি!! এই সরকারের সাথেই আমাদের সমস্ত উপকারিতা একাকার হয়ে গেছে। এই সরকারের পতন আমাদেরই পতন, এই সরকারের উন্নতি আমাদেরই উন্নতি। এ সরকারের হুকুমত (আধিপত্য) যেখানে যেখানেই সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য (সে সবখানে) তাবলীগের (সদস্য সংগ্রহের) একেকটি ময়দান সুগম (উন্মুক্ত) হচ্ছে। সুতরাং কোনো বিরুদ্ধবাদীর আপত্তি আমাদেরকে এ সরকারের অনুগত হওয়া থেকে বিচ্যুত করতে পারবেনা।” (দৈনিক আল ফজল, তারিখ-১৯/১০/১৯১৫ ইং, মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ-এর বক্তব্যের উদ্ধৃতাংশ)।

পরিশেষে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এটুকু বলব, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের লেজুড়বৃত্তি হয়ে যাদের টিকে থাকার খাহেশ, তারা আর যাইহোক; অন্তত আত্মমর্যাদার অধিকারী কোনো গোষ্ঠী হতে পারেনা। এ গোষ্ঠীটি যে রাষ্ট্রেই শিকড় গাঁথতে সক্ষম হবে সে রাষ্ট্রের কপালে শনি থাকা-ই স্বাভাবিক। কারণ ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্যই যাদের ধর্মের মূল শিক্ষা, তারা যে নিজ মাতৃভূমির বিরুদ্ধেও শত্রু দেশটির পক্ষে কোনো না কোনো সময় গুপ্তচরবৃত্তি করবেনা তা কিভাবে হয়! কাদিয়ানীরা সংখ্যায় পাকিস্তানে অনেক বেশি হওয়ায় আজ সেখানকার রাজনৈতিক অবস্থা দুনিয়ার সামনে পরিষ্কার। দেশটির অর্থনীতি খাত পুরোই বিপর্যস্ত। আত্মঘাতী বোমা হামলা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। একজন পাগলও বুঝতে পারে যে, এর সবই বিদেশীদের ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। আল্লাহ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশকে রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ.)-এর রাফা (উঠিয়ে নেয়া) কোথায় হয়েছিল?

হযরত ঈসা (আ.)-এর রাফা (بل رفعه الله اليه) কোথায় হয়েছিল…….? বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্ত উত্তর নিম্নরূপ, .

উত্তর : আল্লাহ ঈসা (আ.)-কে সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন অত:পর…..! রেফারেন্স দেখুন-

1 আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সা’আদ (মৃত. ২৩০ হিজরী)-এর ১১ খণ্ডে সংকলিত প্রাচীনতম হাদীসগ্রন্থ ‘আত-তবকাতুল কোবরা’ খ-১ পৃ-৩৫-৩৬ (رَفَعَهُ بِبَدَنِهِ); অর্থ- তিনি তাঁকে সশরীরে উঠিয়ে নেন। – সহীহ

2 শায়খ আহমদ আব্দুর রহমান আলবান্না (১৮৮২-১৯৫৮)-এর ২৪ খণ্ডে সংকলিত ‘আল ফাতহুর রব্বানী লি তারতীবে মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল আশ-শায়বানী’ খ-২০ পৃ-১৪১ দ্রষ্টব্য (لَمَّا اَرَادَ اللهُ اَنْ يَّرْفَعَ عِيْسَي اِلَى السَّمَاءِ); অর্থ-আল্লাহ ঈসাকে যখন আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন…। – সহীহ মুসলিম এর শর্তে সহীহ

3 ইমাম আবুবকর আহমদ আল-বাজ্জারের ১৮ খণ্ডে সংকলিত ‘মুসনাদে বাজ্জার’ হাদীস নং ৯৬৪২ (يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ); অর্থ-ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। – সহীহ

4 ইমাম নূরুদ্দীন আল-হাইসামীর ১২ খণ্ডে সংকলিত ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ খ-৭ পৃ-৩৪৯ (يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ); অর্থ-ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। – সহীহ

5 ইমাম বায়হাক্বীর ২ খণ্ডে সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত’ খ-১ পৃ-৩৩১, হাদীস নং ৮৯৫ (مِنَ السَّمَاءِ); অর্থ- আকাশ থেকে….। – সহীহ

  • উল্লেখ্য, এ বর্ণনায় من السماء অংশটুকু সিকাহ রাবীর নিজেস্ব বৃদ্ধি, যা গ্রহণযোগ্য। সনদে বুখারীর রাবীগণ ছাড়াও ইমাম বায়হাক্বীর সনদে অতিরিক্ত ৩ জন রাবী রয়েছেন, যারা প্রত্যেকে সিকাহ।

6 সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৮৯৬ ঈসা ইবনে মরিয়ম এসে হজ্জ করবেন (وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَيُهِلَّنَّ اِبْنُ مَرْيَمَ بِفَجِّ الرَّوْحَاءِ حَاجًّا اَوْ مُعْتَمِرًا اَوْ لَيَثْنِيَنَّهُمَا); অর্থ- সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ইবনে মরিয়ম রাওহা উপত্যকা হতে হজ্জ অথবা উমরা কিংবা উভয়টির জন্য তালবিয়াহ পাঠ করবেন। – সহীহ

7 ইমাম আলী আল মুত্তাকি আলহিন্দী-এর ১৮ খণ্ডে সংকলিত ‘কাঞ্জুল উম্মাল’ খ-১৪ পৃ-৬১৯ (مِنَ السَّمَاءِ); অর্থ- আকাশ থেকে….। – সহীহ

8 সহীহ মুসলিমের সূত্রে মির্যায়ী রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-৩ পৃ-১৪২ (صحیح مسلم کی حدیث میں جو یہ لفظ موجود ہے کہ حضرت مسیح جب آسمان سے اتریں گے)؛ অর্থ- মুসলিম শরীফের হাদীসে এমন শব্দ বিদ্যমান আছে যে, হযরত মসীহ যখন আকাশ থেকে নাযিল হবেন….!

মালফুযাত খ-৫ পৃ-৩৩ (آپ نے فرمایا تھا کہ مسیح آسمان پر سے جب اترےگا)। অর্থ- রাসূল (সা.) ফরমায়ে ছিলেন যে, মসীহ আকাশ থেকে যখন নাযিল হবে…! সংক্ষেপে।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ দেখতে এখানে ক্লিক করুন

লিখক – প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

রদ্দে কাদিয়ানী অ্যাপ-App ডাউনলোড করুন

রদ্দে কাদিয়ানী App ডাউনলোড লিংক Click : https://play.google.com/store/apps/details?id=com.mominul.radd_e_qadyyani

QR কোডটিও ব্যবহার করতে পারেন

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস-3

এগুলো-ও কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস

তাদেরই অথেনটিক বইপুস্তক ও পত্র পত্রিকা থেকে

২৪ হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম ‘লূদ’ নামক ফটকে দাজ্জালকে হত্যা করবেন বলে হাদীসে যে ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে, সেই ‘লূদ’ হতে পাকিস্তানের ‘লুধিয়ানা’ শহর উদ্দেশ্য[24]

২৫ খ্রিস্টান পাদ্রীরাই প্রতিশ্রুত সেই দাজ্জাল[25]

২৬ ইয়াজুজ-মাজুজ হচ্ছে রাশিয়া ও বৃটেনের খ্রিস্টানজাতি[26]

২৭ ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র শাহাদাত বরণের চাইতে আব্দুল লতিফ সাহেবের শাহাদাত বরণ অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ, (কেননা) সে সততা, আনুগত্যের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে যার দরুন সে অতিব দৃঢ়তর প্রতিযোগিতায় অগ্রে পৌঁছে গেছে[27]

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে ১৮৯২ সালে মুরতাদের শাস্তি হিসেবে মির্যা কাদিয়ানীর মুরিদ আব্দুল লতিফকে সরকার মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।

২৮ মির্যা কাদিয়ানী মুসলমানদের জন্য ‘ইমাম মাহদী’ আর খ্রিস্টানদের জন্য ঈসা (মসীহ) হিসেবে আবির্ভূত হন[28]

২৯ মির্যা কাদিয়ানী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন[29]

৩০ মির্যা কাদিয়ানী পরিষ্কার লিখেছে, তাকে অমান্য করার মানেই হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অমান্য করা[30]

তথ্যসূত্রঃ
[24] রূহানী খাযায়েন ১৮:৩৪১।
[25] হামামাতুল বুশরা পৃ-৩৩, রূহানী খাযায়েন ২২:৪৫৬।
[26] হামামাতুল বুশরা পৃ-৩৮ বাংলা অনূদিত, চলমান টিকা দ্রষ্টব্য।
[27] মালফুযাত ৪:৩৬৪, মির্যা কাদিয়ানী।
[28] তিনিই আমাদের কৃষ্ণ পৃ-২, বাংলা অনূদিত, মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন।
[29] ইসলামে প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদীর দাবীসমূহ পৃ-১৪। একই বইয়ের ১৬ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে, বৌদ্ধদের প্রতিশ্রুত ‘মৈত্তেয়’ আর জরথুস্ত্রের প্রতিশ্রুত ‘মেসিওদরবাহমী’ এর ভবিষ্যৎবাণী হতে মির্যা কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য।
[30] হাকীকাতুল ওহী পৃষ্ঠা ১৭, বাংলা অনূদিত।

পড়ুন পর্ব ১ ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

আহলে কিতাবীদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত শত্রুতা সঞ্চারিত থাকা

আহলে কিতাবীদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত শত্রুতা সঞ্চারিত থাকা ও একটি প্রশ্নের উত্তর

এধরণের প্রশ্ন সাধারণত কাদিয়ানীরাই উত্থাপন করে থাকে। তাদের এ ধরনের প্রশ্নের অন্তরালে একটা মতলব থাকে। সেটি হচ্ছে, কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ও শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগে আগেই সমস্ত আহলে কিতাবী মুসলমান হয়ে যাওয়া’র বিষয়টিকে কুযুক্তির আড়ালে অস্বীকার করতে চাওয়া। যেহেতু সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ বলছে, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগে আগেই তারা প্রত্যেকে ঈমান গ্রহণ করবে। এখন পবিত্র কুরআনের এ ভবিষ্যৎবাণী সরাসরি অস্বীকার করার সাধ্য কার? মূলত এ জন্যই ওরা কুযুক্তির আশ্রয় নেয় এবং উল্লিখিত শিক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, তাদের এ ধরনের মতলবসিদ্ধ বিশ্বাস ধারণ ও অনুরূপ কুযুক্তির পেছনে দৌড়ানোর কারণ কী?

উত্তর হচ্ছে, মির্যা কাদিয়ানী (জন্ম-মৃত্যু ১৮৩৯-১৯০৮ইং) কুরআন ও হাদীসের আলোকে নিজেকে প্রতিশ্রুত মসীহ তথা হযরত ঈসা (আ.) বলে দাবী করেছে আর কাদিয়ানী তথা কথিত আহমদীয়া সম্প্রদায় তাকে সেভাবেই মেনে আসছে। কাজেই এখন সহজেই প্রশ্ন উঠবে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজ দাবীতে যদি সত্যিকারের সেই মসীহ তথা ইবনে মরিয়ম হন তাহলে তো পবিত্র কুরআনের (৪:১৫৯/নিসা) উল্লিখিত শিক্ষা অনুসারে বর্তমান দুনিয়ায় আর কোনো আহলে কিতাবী (ইহুদী খ্রিস্টান) না থাকারই কথা, সকলে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাওয়ারই কথা! কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এ সমস্ত যৌক্তিক যে কোনো প্রশ্নের সম্মুখে সম্পূর্ণ কোনঠাসা। এমতাবস্থায় তাদের জন্য আয়াতটির উল্লিখিত শিক্ষায় অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকেনা। মজার ব্যাপার হল, তাদের ন্যায় অনুরূপ কোনো ব্যাখ্যা ইসলামের বিগত চৌদ্দশত বছরেও নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স দ্বারা প্রমাণিত নয়।

তাদের সেই কুযুক্তি ও অপব্যাখ্যাটা কী?

তাদের সেই কুযুক্তি ও অপব্যাখ্যাটি হচ্ছে এ রকম, তারা যুক্তি দেয় যে, হযরত মসীহ তথা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর যুগে এবং তাঁরই মৃত্যুর আগে সমস্ত আহলে কিতাবী (ইহুদ-খ্রিস্টান) মুমিন হয়ে গেলে তখন পবিত্র কুরআনের (০৫:৬৪/মায়েদা) আয়াত অনুসারে আহলে কিতাবীদের মাঝে إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ তথা ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ শত্রুতা সঞ্চারিত থাকে কিভাবে? সুতরাং বুঝা গেল, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগে আগেই সমস্ত আহলে কিতাবী ঈমান গ্রহণের শিক্ষাটি একটি রূপক, বাস্তব নয়। (এ ছিল তাদের কুযুক্তি ও কুরআন বিরোধী চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ধর্মবিশ্বাস)।

  • আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন,
  • وَإِن مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا لَيُؤۡمِنَنَّ بِهِۦ قَبۡلَ مَوۡتِهِۦۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكُونُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا 

অনুবাদঃ কিতাবীদের যত দল আছে তারা অবশ্যই ঈসার প্রতি তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে। আর কেয়ামতের দিন তিনি ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন (অর্থাৎ তিনি ওদের অবস্থা ও আমল প্রকাশ করে বলবেন যে, ইহুদীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল আর খ্রিস্টানরা আমাকে আল্লাহর পুত্র বলেছিল)। (তাফসীরে উসমানী, আল্লামা জাস্টিস মুফতি তকি উসমানী হতে অনুবাদ চয়িত)। (সূরা নিসা ১৫৯)।

  • আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন,
  • وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ طُغۡيَٰنٗا وَكُفۡرٗاۚ وَأَلۡقَيۡنَا بَيۡنَهُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ كُلَّمَآ أَوۡقَدُواْ نَارٗا لِّلۡحَرۡبِ أَطۡفَأَهَا ٱللَّهُۚ وَيَسۡعَوۡنَ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَسَادٗاۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ

অনুবাদঃ ইহুদীরা বলে আল্লাহর হাত রুদ্ধ। ওদেরই হাত রুদ্ধ হয়ে যাক এবং ওরা যা বলেছে তার কারণে ওদের প্রতি লা’নত বর্ষিত হোক। বরং আল্লাহর উভয় হাত প্রসারিত, তিনি যেভাবে ইচ্ছে ব্যয় করেন। আর আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে নিশ্চয়ই তা অনেকের অবাধ্যতা ও কুফুর বাড়িয়ে দেবে এবং আমি কেয়ামত দিবস পর্যন্ত ওদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করে দিয়েছি। যখনি তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে আল্লাহ তা নিবিয়ে দেন। আর ওরা যমীনে ফাসাদ করার উদ্দেশ্যে দৌড়ঝাঁপ করে। অথচ আল্লাহ ফাসাদকারীদের পছন্দ করেন না। (তাফসীরে উসমানী, আল্লামা জাস্টিস মুফতি তকি উসমানী হতে অনুবাদ চয়িত)। (সূরা মায়েদা ৬৪)।

যাইহোক, এখন কাদিয়ানীদের উল্লিখিত কুযুক্তির উত্তর দেয়া হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের ০৫:৬৪ আয়াত অনুসারে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলে মূলত ‘সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত’ সময়ের বিশালতাকেই বুঝানো উদ্দেশ্য। যেহেতু সময়ের বিশালতাকে বুঝাতে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ কথাটি একধরণের বাগধারা ও একটি বালাগাত তথা অলংকারপূর্ণ বাণী। যেমন, সাজেদ তার পরম বন্ধু মাজেদকে বলল, তুই ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ চেষ্টা করলেও চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়ী হতে পারবিনা।

খেয়াল করুন, ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলতে সাজেদ মোটেও এটা বুঝাতে চায়নি যে, সে প্রকৃতপক্ষে কেয়ামতের শিঙ্গাফুঁক দেয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকবে! কারণ বাগধারাকে সাধারণ অর্থে বিচার করা যায়না।

এবার আরেকটু খোলাসা করছি! হাদীসে আসছে, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

অর্থাৎ আমার উম্মতের একটি জামাত সর্বদাই সত্যের স্বপক্ষে ক্বিতাল করে কিয়ামত পর্যন্ত বিজয় হতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম ৪৮০১ ইফা)। এখানেও ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ শব্দ চয়িত হয়েছে। পক্ষান্তরে অপর আরেকটি হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ আছে যে, যখন ঈসা (আ.) দ্বিতীয়বার আসবেন তখন

و تَضَع الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا

অর্থাৎ যুদ্ধ আপনা সমস্ত সমরাস্ত্র গুটিয়ে নেবে (মুসনাদে আহমদ হা/৯১১৭)। এবার তাহলে ক্বিতাল (সশস্ত্র ধর্মযুদ্ধ) ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ চলবে, এর কী অর্থ দাঁড়াল? যে ক্বিতাল কেয়ামত পর্যন্ত অবিরাম চলতে থাকবে বলা হল, সেই ক্বিতাল হযরত ঈসা (আ:)-এর যুগে কোনো কাফের বাহিনী না থাকায় আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে; এইরূপ উল্লেখ থাকাটাই কি প্রমাণ করে না যে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলে মূলত ‘সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত’ সময়ের বিশালতাই উদ্দেশ্য!

শেষকথাঃ পবিত্র কুরআন আর অসংখ্য সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো জন্য এমন কোনো যুক্তি দাঁড় করা ঠিক হবেনা যা ইজমায়ে উম্মতের সুপ্রতিষ্ঠিত ও তাওয়াতূর পর্যায়ের আকীদার পরিপন্থী। আসল কথা হল, যারা কুরআনকে নিজের মনগড়া যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় তারাই পথভ্রষ্ট হয়। কেননা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে কুরআন যেভাবে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তারপর সাহাবীরা পরবর্তী প্রজন্মকে তথা তাবেয়ীদের যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন, অনুরূপ তাবেয়ীগণ তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তথা তাবে-তাবেয়ীগণকে যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন সেসব শিক্ষা-দীক্ষাকে বিশুদ্ধ সনদ ও ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্রে নির্ভরযোগ্য তাফসীরকারকগণ স্ব স্ব তাফসীর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। কাজেই বর্তমানে কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর এমন কোনো ব্যাখ্যা বা শিক্ষা গ্রহণযোগ্য হবেনা যেটির কোনো সনদ নেই কিংবা নির্ভরযোগ্য তাফসীর হতে বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত নয়। কাদিয়ানী সহ তাবৎ পথভ্রষ্ট গোষ্ঠীর সমুদয় ধর্মমত ও শিক্ষা-দীক্ষা মূলত এ সমস্ত কারণেই বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস-2

এগুলো-ও কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস

তাদেরই অথেনটিক বইপুস্তক ও পত্র-পত্রিকা থেকে নেয়া

১৩ কাদিয়ানী রচনাবলীতে উল্লেখ আছে, আল্লাহতালার নাম ‘ইয়াল্লাস’[13]

১৪ আমাদের জলসাও হজ্জের মতো…হজ্জের মাধ্যমে যে উপকারীতা উদ্দেশ্য সেটি সালানা জলসায়
এসেও লাভ করতে পারে[14]

১৫ হযরত আদম আলাইহিসসালাম প্রথম মানব ছিলেন না[15]

১৬ কোনো কাফের মুশরিকও চিরকাল জাহান্নামে থাকবেনা[16]

১৭ হযরত মূসা আলাইহিসসালাম জীবিত এবং সশরীরে আকাশে রয়েছেন, তিনি এখনো মৃত্যুবরণ করেননি[17]

১৮ মসীহ (ঈসা) দেশ হইতে গোপনে পলায়ন করিয়া কাশ্মীরের দিকে চলিয়া গেলেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন[18]

১৯ ঈসা আলাইহিসসালাম সম্পর্কে জীবিত থাকার বিশ্বাস সুস্পষ্ট শিরক[19]

২০ মির্যা কাদিয়ানীর নিকট হযরত জিবরাঈল আলাইহিসসালামও ওহী নিয়ে আসতেন[20]

২১ মির্যা কাদিয়ানীর নিকট আরো যারা ওহী নিয়ে আসতেন তাদের একজনের নাম ছিল ‘টিচি-টিচি’[21]

২২ শেষযুগে আগমনকারী যে ইমাম মাহদীর সংবাদ হাদীসসমূহে এসেছে তিনি আর প্রতিশ্রুত ঈসা আলাইহিসসালাম দুইজন একই ব্যক্তি[22]

২৩ পবিত্র কুরআনে যে মসীহ মওউদের আগমন করার কথা রয়েছে তা হতে মির্যা কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য[23]

তথ্যসূত্রঃ
[13] রূহানী খাযায়েন ১৭:২০৩ উর্দূ, আরও কিছু নাম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন- কালা এবং কালূ। দেখুন যিকরে হাবীব পৃ-১৮১ (নতুন এডিশন), লিখক মির্যায়ী ঘনিষ্ঠ সহচর মুহাম্মদ সাদিক।
[14] খুতুবাতে মাহমুদ ৪:২৫৪, তাং ২৫-১২-১৯১৪ খ্রিস্টবর্ষ।
[15] মালফুযাত ৫:৬৭৫, উর্দূ।
[16] আহমদীয়তের পয়গাম পৃ-১২ দশম সংস্করণ মে ২০০৬ইং।
[17] রূহানী খাযায়েন ৮:৬৮-৬৯।
[18] কিশতিয়ে নূহ পৃ-৭২ বাংলায় অনূদিত, মির্যা কাদিয়ানী।
[19] রূহানী খাযায়েন ২২:৬৬০।
[20] রূহানী খাযায়েন ২২:১০৬, টিকা দ্রষ্টব্য।
[21] রূহানী খাযায়েন ২২:৩৪৬, আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন- ‘মিঠোন লাল’ (তাযকিরাহ পৃ-৫৭৩-৭৪ চতুর্থ এডিশন), ‘শের আলী’ এবং ‘খয়রাতি’ (রূহানী খাযায়েন ১৫:৩৫১-৫২), ‘আইল’ (তাযকিরাহ পৃ-৩৬৯), ‘হাফিয’ (তাযকিরাহ পৃ-৬৪৩), ২০ বছর বয়সী ইংরেজ টগবগে যুবকের আকৃতিতে দেখতে ‘দরুশনি’ (মালফুযাত ৪:৬৯)।
[22] হামামাতুল বুশরা পৃ-৩২, বাংলা অনূদিত।
[23] রূহানী খাযায়েন ৩:৪৬৮, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের রচনাসমগ্র, রিপ্রিন্ট ২০০৮ ইং।

উল্লিখিত কোনো একটি তথ্য-ও কোনো কাদিয়ানী মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে তাকে নগদ দশ লক্ষ টাকা পুরষ্কৃত করা হবে।

পড়ুন পর্ব ১ ক্লিক

পড়ুন পর্ব ৩ ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস-1

এগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস

তাদেরই অথেনটিক বইপুস্তক ও পত্র পত্রিকা থেকে

১ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ অর্থে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও অন্তর্ভুক্ত[1]

২ মির্যা কাদিয়ানী-ই ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এবং তিনি প্রকৃতপক্ষেই ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’[2]

৩ মির্যা কাদিয়ানীর যুগের পর থেকে কেয়ামতের আর মাত্র এক হাজার বছর বাকি। আর এ এক হাজার বছর মির্যা কাদিয়ানীর জন্য নির্ধারিত (অর্থাৎ এ পুরো সময়টিতে মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত মেনে নেয়া ছাড়া কারো মুক্তি নেই)[3]

৪ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে মিডিয়া না থাকার দরুন তাঁর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণ হয়নি, মির্যা কাদিয়ানী এসে সেসব অপরিপূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করেছেন[4]। নাউযুবিল্লাহ।

৫ কাশফ অবস্থায় মির্যা কাদিয়ানী নারীরূপ ধারণ করে আর আল্লাহ পুরুষের রূপে এসে তার সাথে সহবাস করে[5]। নাউযুবিল্লাহ।

৬ হ্যাঁ, আমি কেবল নবী নহি, এক দিক হইতে নবী এবং আরেক দিক হইতে উম্মতি[6]

৭ ‘বেহেশতি মাক্ববেরায় যারা দাফন হবেন তারা নিশ্চিত বেহেশতি’[7]

৮ পবিত্র কুরআনে কাদিয়ানের নাম উল্লেখ রয়েছে[8]

৯ পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ‘মসজিদে আকসা’ হতে কাদিয়ানে মির্যা কাদিয়ানীর নির্মিত ‘মসজিদ’ উদ্দেশ্য[9]

১০ পবিত্র কুরআনে ‘ইবনে মরিয়ম’ বলে মির্যা কাদিয়ানীর নাম রাখা হয়েছে[10]

১১ ‘যে ব্যক্তিই মির্যা কাদিয়ানীর দলে প্রবেশ করেছে, সে প্রকৃপক্ষে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেই দাখিল হয়ে গেছে[11]।’ নাউযুবিল্লাহ।

১২ আমাদের জন্য ফরজ হল, আমরা যেন গয়ের আহমদীদের ‘মুসলমান’ মনে না করি, তাদের পেছনে নামায না পড়ি। কেননা তারা আমাদের দৃষ্টিতে খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী[12]ডাউনলোড ফাইল

তথ্যসূত্রঃ
[1] কালিমাতুল ফসল, ষষ্ঠ অধ্যায় পৃ- ৬৮।
[2] দৈনিক আল ফজল, তাং ২৮/১০/১৯১৫ ইং, কাদিয়ানীদের উর্দূ পত্রিকা।
[3] ইসলাম ও এদেশে অন্যান্য ধর্মমত পৃ-৪২ ও ৪৯, দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ১০ আগস্ট ২০১২ খ্রি.।
[4] রূহানী খাযায়েন ১৭:২৬৩।
[5] ইসলামি কুরবানী ট্রাক্ট নং ৩৪ পৃ-১২ উর্দূ।
[6] উম্মতিনবী পৃ-৯, হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃ-১২৩।
[7] মালফুযাত ২:৫২৬-২৭ উর্দু, চতুর্থ এডিশন।
[8] রূহানী খাযায়েন ৩:১৪০।
[9] রূহানী খাযায়েন ১৬:২১।
[10] রূহানী খাযায়েন ১৯:৯৮।
[11] খুতবাতুল ইলহামিয়্যাহ পৃ-১৭১, রূহানী খাযায়েন ১৬:২৫৮।
[12] আনওয়ারে খিলাফত পৃ-৯৩, মির্যা বশির উদ্দীনের রচনাসমগ্র ‘আনওয়ারুল উলূম’ ৩:১৪৮ উর্দূ অনলাইন এডিশন, কাদিয়ানী দ্বিতীয় খলীফা।

প্রামাণ্য ও সংযুক্ত স্ক্রিনশট

ছবিঃ ফুটফুটে চেহারার এ মানুষটি কাদিয়ানীদের বর্তমান (পঞ্চম) খলীফা মির্যা মাসরূর আহমেদ।

ফেজবুক থেকে পড়ুন

পড়ুন পর্ব ২ ক্লিক

লিখক ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী