Home Blog Page 4

বাহাউল্লাহ নতুন শরীয়তবাহক ও রাসূল দাবী করা

বাহায়ীরা বাহাউল্লাহকে “নতুন শরীয়তবাহক একজন রাসূল” বিশ্বাস করে কিনা?

এর উত্তর খোঁজতে গিয়ে তাদেরই নিজেস্ব একটি আরবী ওয়েবসাইট www.bahai.org থেকে নিন্মোক্ত তথ্যটি ফেলাম। লিখা আছে,

في اواسط القرن التاسع عشر اختار الله حضرة بهاء الله لإيصال رسالة جديدة إلى البشرية. فعلى مدى أربعة عقود نزلت آلاف الآيات والرسائل والكتب من يراعه المباركة. في آثاره الكتابية هذه وضع الخطوط الرئيسية لإطار عمل يهدف إلى تطور حضارة عالمية تأخذ بعين الاعتبار البعدين الروحي والمادي لحياة الانسان.

অর্থ- ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে মানবজাতির প্রতি নতুন রেসালত (শরীয়ত) পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহতালা বাহাউল্লাহকে মনোনীত করেন। তারপর তার বরকতময় হেফাজতে চার দশক ধরে বহু কিতাব, পত্রাবলী এবং হাজার হাজার আয়াত নাযিল করা হয়। তিনি তার লেখালেখিতে বৈশ্বিক সভ্যতার উন্নতির লক্ষ্যে কাঠামোগত প্রধান প্রধান অনেকগুলো পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন যা মানব জীবনের আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত মাত্রাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।

(সূত্র – বাহায়ী ডট অর্গ {ক্লিক})।

সম্পূর্ণ লিখাটি হতে জানা গেল, বাহায়ী জামাতের অনুসারীরাও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ন্যায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরেও মির্যা হোসাইন আলী নূরীকে (বাহাউল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ) নতুন একজন “রাসূল” বিশ্বাস করে। ফলে এরাও উম্মতে মুহাম্মদীয়ার গণ্ডি থেকে খারিজ ও বহিষ্কৃত। সুতরাং এদের ধর্মমত সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করতে হবে। যাতে সাধারণ কেউ এদের জামাতকে মুসলমানদের কোনো উপদল ভেবে পদস্খলিত না হয়।


একই তথ্য বাহায়ীদের আরও যেসব ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়

ক্লিক

ক্লিক

ক্লিক

ক্লিক

তথ্য প্রচারক ও লিখক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

লিখাটি প্রচার করতে হবে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

ডক্টর ইসরার আহমদ ও রাফউল ইয়াদাইন

সালাতে রাফউল ইয়াদাইনের চমৎকার বয়ান – আল্লামা ডক্টর ইসরার আহমদ রাহিমাহুল্লাহ, পাকিস্তান

ডক্টর ইসরার আহমদ। একজন মু’তাদিল ইসলামিক স্কলার। তিনি ইসলামের এবং ধর্মীয় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কিত ৬০টি গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে ৯টি বই ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়। এর পূর্বে তিনি একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং পিস টিভিতে একটি প্রতিদিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন। তিনি নির্দিষ্ট কোনো মাসলাকের সাথে পরিচিত ছিলেন না, উনার দালিলিক আলোচনা হতে লক্ষ লক্ষ দর্শক শ্রোতা পরিতৃপ্তির সাথে দ্বীনের ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। তিনি আজ আর দুনিয়ায় নেই, কিন্তু তাঁর অডিও ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, দেওবন্দী, বেরেলি, আহলে হাদীস ও সালাফী প্রত্যেকে তাঁকে নিজ নিজ মাসলাকের বলে দাবী করে থাকেন। কিন্তু সত্য হল, তিনি একজন ন্যাপরায়ণ ও মধ্যপন্থী ছিলেন। তিনি তারাবী সালাত বিশ রাকাতের প্রবক্তা যেমন, তেমনি সালাতে কখনো কখনো রাফউল ইয়াদাইনও করতেন আবার ছেড়েও দিতেন। আজকে উনার একটা আলোচনা এখানে তুলে ধরছি,

ডক্টর ইসরার আহমদ (রহ.) | ভিডিও – তিনি বলেছেন,

রাফউল ইয়াদাইন তথা সালাতে তাকবীরে তাহরিমাহ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু হাত উঠানামা করার দলিল বুখারী মুসলিম সহ বহু হাদীসের কিতাবে এসেছে। আর এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো ব্যাপক। কোনো কোনো হাদীসে রাসূল (সা.) এর উক্ত আমল সম্পর্কে সাহাবীদের কাছ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সালাতে রূকুর সময় রাফউল ইয়াদাইন করেছেন, কোনো কোনো হাদীসে রূকু হতে উঠার সময়ও করার কথা রয়েছে। আবার কোনো কোনো হাদীসে এসেছে, প্রত্যেক সেজদার সময় (নাসায়ী ১/১৬৫) এবং সেজদা থেকে উঠার সময়ও রাফউল ইয়াদাইন করেছেন (আবূ দাউদ ১/১০৮, নাসায়ী ১/১৭২)। সেজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়ও রাফউল ইয়াদাইন করার কথা রয়েছে (আবূ দাউদ ১/১০৫)। তৃতীয় রাকাতের শুরুতেও (সহীহ বুখারী ১/১০২)। সালাতে প্রতিটি উঁচুনিচু হওয়ার ক্ষেত্রে (ইবনে মাজাহ ৬২)। মানে প্রায় পুরো সালাতজুড়ে প্রায় ৭ জায়গায় রাফউল ইয়াদাইন করার দলিল রয়েছে হাদীসে। আহলে হাদীস ভাইয়েরা তো বুখারী মুসলিম এর হাদীসের কথাই বেশি বলেন, অথচ হাদীসের আরও তো অনেক সংকলন রয়েছে। যেমন মুসান্নাফ ইবনে আব্দির রাজ্জাক ইত্যাদি । কিতাবটি বুখারী মুসলিম-এরও অনেক পূর্বেকার সংকলন। সেখানে ঐ সমস্ত বর্ণনা ভূরি ভূরি নজরে পড়বে। কিন্তু আমাদের হানাফী ভাইয়েরা রাফউল ইয়াদাইন এর হাদীসগুলোর উপর আমল করেন না। কেননা রাসূল (সা.) থেকে রাফউল ইয়াদাইন এর যত হাদীস বর্ণিত আছে সেগুলো একেক সাহাবীর একেক সময়ের রাসূল (সা.)-এর সালাতের অবস্থার উপর তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন মাত্র, যা নিয়মিত কোনো অবস্থাকে নির্দেশ করেনা। আর রাসূল (সা.) তো জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে শুধুমাত্র তাকবীরে তাহরিমাহ এর রাফউল ইয়াদাইন ব্যতীত অন্য সব ধরণের রাফউল ইয়াদাইন পরিত্যাগ করেছেন। হানাফী মালেকী মাযহাবের বিশিষ্ট দুই ইমাম যারা অন্য দুই ইমামের-ও পূর্বেকার ও অধিক গ্রহণযোগ্য তারা রাফউল ইয়াদাইন এর হাদীসের আমল গ্রহণ করেননি, হোক তা সহীহ হাদীস। (কেননা সহীহ হাদীসের আমল যদি “মানসূখ” সাব্যস্ত হয় তখন আর সেটির উপর আমল করা হবেনা, যতই সহীহ হোক)।

ইমাম শাফেয়ী অনেক গুলো রাফউল ইয়াদাইন এর মধ্য থেকে মাত্র দু জায়গার আমল গ্রহণ করেছেন। রূকুতে যেতে এবং উঠতে। আর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলও শাফেয়ীর অনুরূপ বলেছেন।

হানাফী আর মালেকী মাযহাবের যুক্তি হচ্ছে, রাসূল (সা.)-এর জীবনের সর্বশেষ আমলই উম্মাহার জন্য চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। তাদের এ কথার দলিলও তারা দিয়ে থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর বর্ণনায় আছে, فصلى فلم يرفع يديه الا فى اول مرة অর্থাৎ রাসূল (সা.) সালাত পড়েছেন এবং শুধু প্রথমবার তাকবীরে তাহরিমায় দু হাত উঠিয়েছেন। (তিরমিজি ১/৩৫, হা/২৫৭, আবূ দাউদ হা/৭৪৮)। ইমাম তিরমিজি বলেছেন, هذا حديث حسن অর্থাৎ এ হাদীসের সনদ হাসান। ইবনে হাযম (রহ.) বলেছেন, এর সনদ সহীহ। (আল মুহাল্লা ৪/৮৮)।

সাহাবীরা ছিলেন রাসূল (সা.)-এর পূর্ণ আনুগত্যের একেকজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তারা রাসূল (সা.)-কে যখন যে অবস্থায় দেখেছেন সে অবস্থার কথা উল্লেখ করে দিয়েছেন। এগুলোকে অসঙ্গতি মনে করা পুরোপুরি মূর্খতা। এ সমস্ত বৈপরীত্য আমলগুলোর ডিসাইড করতে মুজতাহিদদেরকে গবেষণা করতে হয়েছে। আমাদেরকে তাদের সেই গবেষণার ফসল ফিকহকে গ্রহণ করতে হবে। আর প্রত্যেক মুজতাহিদের ছিল নিজেস্ব কিছু উসূল (নীতিমালা)। গবেষণার ফলাফল তাদের একেকজনকে একেক মতামতের দিকে নিয়ে যায়। নতুবা মাযহাব কখনো একাধিক হত না। সুতরাং যিনি যেই মুজতাহিদকে ফলো করবেন তিনি সেই মুজতাহিদের ইজতিহাদের উপরই চলবেন।

সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা.)-কে যখন যে অবস্থায় পেয়েছেন তারা শুধু সেটিকে বর্ণনা করে রেখে গেছেন। আমরা যেসব ক্ষেত্রে গবেষণার দাবী রাখে সেসব ক্ষেত্রে মুজতাহিদের ইজতিহাদের আলোকে সিদ্ধান্তে উপনীত হবো…!

(সম্পূর্ণ ভিডিও এর সার নির্যাস)।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ইমাম মালেকের দরসে ইমামে আযম আবূ হানীফা

ইমাম মালেক (রহ.)-এর সান্নিধ্যে হযরত ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)

ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর বুদ্ধিমত্তাঃ

একদা ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) ইমাম মালেক (রহ.)-এর দরসে (হাদীসের ক্লাসে) উপস্থিত ছিলেন, তখনো তিনি তাঁকে চিনতেন না।

ইত্যবসরে ইমাম মালেক (রহ.) তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন রাখলেন। অমনি ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) সেটির উত্তর দিয়ে দেন।

তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ লোকটি কোথা থেকে এসেছে?

তিনি উত্তর দেনঃ ইরাকবাসীর পক্ষ থেকে।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ভণ্ডামী আর বিভেদ সৃষ্টিকারী দেশের অধিবাসীদের কাছ থেকে!!

তিনি (ইমামে আযম) বললেনঃ আমাকে কুরআন থেকে কিছু বলার অনুমতি দিন!

ইমাম মালেক (রহ.) বললেনঃ হ্যাঁ, (অনুমতি দিলাম)।

তিনি (ইমামে আযম) তিলাওয়াত করলেনঃ
(অর্থ) ‘মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের মধ্য হতে কতিপয় এবং ইরাকবাসীদের মধ্যে হতেও কতিপয় লোক এমন মুনাফিক রয়েছে; যারা মুনাফিকিতে অটল। (তওবা ১০১)।

ইমাম মালেক (রহ.) বলেনঃ আল্লাহ তা এভাবে বলেননি!

আবূ হানীফা (রহ.) বললেনঃ আল্লাহ তাহলে কিভাবে বলেছেন?

তিনি বললেনঃ আল্লাহ বলেছেন وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ অর্থাৎ ‘মদীনাবাসীদের’ মধ্যে হতেও কতিপয় লোক এমন মুনাফিক রয়েছে…। (মানে ‘ইরাকবাসী’ এর স্থলে ‘মদীনাবাসী’ হবে)।

তিনি (ইমামে আযম) বললেনঃ আল্লাহ’র প্রশংসা জানাচ্ছি যে, আপনি নিজেই নিজের বিচার করেছেন। (অর্থাৎ কুরআনের ভাষ্যমতে মদীনার-ও কতেক লোক এমন রয়েছে যারা মুনাফিক ও মুনাফিকিতে অটল; তথাপি যত দোষ নন্দ ঘোষ!)

[ইমাম মালেক ইমামে আযমের উপরিউক্ত বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিউত্তরে হতবাক হয়ে] নিজের আসন থেকে লাফিয়ে উঠেন এবং তাঁকে (ইমামে আযমকে) চেনা মাত্রই সম্মান করলেন।

(এটি ইমাম আবূ হানীফার প্রতি ইমাম মালেকের অন্যতম গৌরবগাঁথা স্তুতি – লিখক)।

[রেফারেন্স : নুযহাতুল মাজালিস ওয়া মুন্তাখাবুন নাফাঈস-১৪৯, ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুস সালাম আস-সাফুরী (মৃত. ৮৯৪ হিজরী)]।

আরবীপাঠ সহ ফিকহ মিডিয়া গ্রুপ থেকে পড়ুন

(সংযুক্ত মূল আরবীপাঠ নিম্নরূপ)

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

অনুবাদক- মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর উপর আপত্তি ও সমালোচনার জবাব

ফকীহুল মিল্লাত Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.)-এর বিরুদ্ধে শীয়া ও অন্যান্যদের উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগাণ্ডার দালিলিক জবাব [১ হতে ৩০+]

প্রতিটি আর্টিকেল আমাদের স্যোসাল ফিকহ মিডিয়া গ্রুপ থেকে পড়তে 1to 30+ সংখ্যাগুলোয় (লিংক) ক্লিক করুন

❝সাহাবীর অবমাননা করে Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) বললেন (ذَاكَ قَوْلُ الشَّيْطَانِ) ‘এটা তো শয়তানের কথা’-এর জবাব❞ [01]

❝আবূ ইসহাক আল ফিজারী বলেন (كان ابو حنيفة يقول ایمان ابلیس و ايمان ابی بکر الصدیق رضی الله عنه واحد) ‘Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) বলতেন, ইবলিশের ঈমান এবং আবু বকর (রা.)-এর ঈমান একই’-এর জবাব❞ [02]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) ১৭টি হাদীস জানতেন (بلغت روايته الي سبعة عشر حديثا)-এর জবাব❞ [03]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) সম্পর্কিত (ﻳﻘﻮﻝ: ﻣﺎ ﻗﻮﻝ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭاﻟﺒﻌﺮ ﻋﻨﺪﻱ ﺇﻻ ﺳﻮاء) উক্তিটির জবাব❞ [04]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) সম্পর্কিত (يَقُولُ: حَدِيثُ أَبِي حَنِيفَةَ ضَعِيفٌ , وَرَأْيُهُ ضَعِيفٌ) জরাহ বা সমালোচনাটির জবাব❞ [05]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) সম্পর্কিত (عامة ما أحدثكم خطأ) জরাহ বা আপত্তির জবাব❞ [06]

❝আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদের রচনা كتاب السنة থেকে Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে (قَالَ ‌أَبُو ‌حَنِيفَةَ: ‌هَذَا ‌مَخْلُوقٌ) শীর্ষক জরাহ বা সমালোচনার জবাব❞ [07]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে (كَانَ أَبُو حنيفة متروك الحديث لَيْسَ بثقة) মাতরূকুল হাদীস ও শক্তিশালী নন, মর্মে জরাহ বা সমালোচনা’র জবাব❞ [08]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে (أبو حنيفة ليس بالقوي في الحديث) তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল, মর্মে জরাহ বা সমালোচনার জবাব❞ [09]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কিত (كَانَ مُرجِئًا، سَكَتُوا عنه وعَنْ رَأيِهِ، وعَنْ حديثه) একজন মুরজিয়া এবং মুহাদ্দিসীন তাঁর থেকে হাদীস গ্রহণ করা থেকে চুপ ছিলেন, মর্মে জরাহ বা সমালোচনার জবাব❞ [10]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কিত (لم يكن الحَدِيث صناعته) এই জরাহ বা সমালোচনার জবাব❞ [11]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে سَكَتُوا عنه وعَنْ رَأيِهِ، وعَنْ حديثه (মুহাদ্দিসগণ আবূ হানীফার কাছ থেকে হাদীস এবং রায় বর্ণনা করা থেকে চুপ [বা বিরত] ছিলেন) মর্মে সমালোচনার জবাব❞ [12]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) হাদীসে يتيما তথা এতিম ছিলেন মর্মে সমালোচনার জবাব❞ [13]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (كَانَ مُحَمَّد بن الحَسَن كذابا وَكَانَ جهميا، وَكَانَ أَبُو حنيفة جهميا ولم يكن كذابا) সম্পর্কিত এই সমালোচনাটির জবাব❞ [14]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে “ইসলামের মধ্যে তাঁর (আবূ হানীফা) চেয়ে অধিক অশুভ আর কেউ জন্মগ্রহণ করেনি” (ما ولد في الاسلام أشأم منه) এই সমালোচনাটির জবাব❞ [15]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে জনৈক ইমামের কথিত নিন্দাসূচক উক্তির খণ্ডাংশ (ما ينبغي لبلدكم أن تسكن) ‘তোমাদের (সেই) শহরে তোমার বসবাস না করাই উচিত’- সমালোচনাটির জবাব❞ [16]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে আবু আইয়্যুব সাখতিয়ানীর নিন্দা (قوموا لا يعدنا بجربه) ‘তোমরা সরে পড়ো, (যাতে) তিনি আমাদেরকে তাঁর চর্ম-ব্যাধী দ্বারা আক্রান্ত না করেন’-সমালোচনাটির জবাব❞ [17]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) সম্পর্কে (الحمد لله الذی اماته فإنه كان ينقض عری الاسلام عروة عروة) “নিঃসন্দেহে সে (আবু হানীফা) ইসলামের সীমারেখাকে একে একে ধ্বংস করতেছিল” মর্মে সমালোচনাটির জবাব❞ [18]

❝আমি Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) এবং আবূ ইউসুফ থেকে কোনো রেওয়ায়েত দেখতে পাইনি’ (لا أرى الرواية عنهما ) | সমালোচনাটির জবাব❞ [19]

❝আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক শেষ বয়সে Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.)-কে ত্যাগ করেছেন (ترك ابن المبارك ابا حنيفة في آخر امره) সমালোচনাটির জবাব❞ [20]

❝হানাফীরা মুরজিয়াদের একটি উপদল ইমাম আবুল হাসান আল আশ’আরী (রহ.) এবং শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (والفرقة التاسعة من المرجئة أبو حنيفة وأصحابه) নামে প্রচারিত সমালোচনাটির জবাব❞ [21]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.)-এর প্রতি ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর তথাকথিত মন্তব্য (ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻳﻀﻊ ﺃﻭﻝ اﻟﻤﺴﺄﻟﺔ ﺧﻄﺄ، ﺛﻢ ﻳﻘﻴﺲ اﻟﻜﺘﺎﺏ ﻛﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﺎ) এর জবাব❞ [22]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.)-এর বিরুদ্ধে তাঁরই শায়খ হাম্মাদ বিন সুলায়মান (রহ.)-এর কিতাব চুরি করা (سرق ابو حنيفة كتب حماد منى) মর্মে প্রোপাগাণ্ডার জবাব❞ [23]

❝Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) ২০০ হাদীসের বিপরীত করেছেন (وجدنا أبا حنيفة خالف مائتي حديث) মর্মে সমালোচনাটির জবাব❞ [24]

❝জুতার ইবাদত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভে কোনো সমস্যা নেই ((لو أَنَّ رجلًا عَبْد هذه النعل يتقرب بها إلى الله، لم أر بذلك بأسًا)) Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) এর নামে প্রচারিত সমালোচনাটির জবাব❞ [25]

❝ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-কে দুই বার কুফুরী থেকে তাওবা করানো হয়েছিল ((ﺳﻔﻴﺎﻥ اﻟﺜﻮﺭﻱ ﻳﻘﻮﻝ اﺳﺘﺘﻴﺐ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻣﻦ اﻟﻜﻔﺮ ﻣﺮﺗﻴﻦ)) মর্মে Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) এর নামে প্রচারিত প্রোপাগাণ্ডার জবাব❞ [26] [Other]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة)(রহ.)-এর পৈত্রিক ধর্ম পরিচয় কী ছিল? মাজূসী? জুরথ্রুস্টীয়? খ্রিস্টীয়? আসলে কোনটি?❞ [27]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة)(রহ.) আর তাঁর সাথীদের সাথে শত্রুতা রাখার বিনিময়ে সাওয়াব পাওয়া (يؤجر الرجل على بغض أبي حنيفة وأصحابه) সম্পর্কে❞ [28]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة)(রহ.)-এর পুত্র ‘হাম্মাদ ইবনে আবী হানীফা’ এর ‘খালক্বে কুরআন’ সম্পর্কিত কথাটি সূত্রের বিচারে অগ্রহণযোগ্য ও বানোয়া যেভাবে❞ [29]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة)(রহ.) হাদী’র জন্তুকে ইশ’আর করা (অর্থাৎ উট বা গরুর কুঁজের ডান বা বাম দিক দিয়ে চিরে রক্ত প্রবাহিত করা) এর বিপরীতে ভিন্নমত পোষণ করে কি ‘সুন্নাহ’ পরিপন্থী রায় দিলেন?❞ [30]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) গোমরাহ এবং গোমরাহকারী… (নাউযুবিল্লাহ)❞ – প্রোপাগাণ্ডার খণ্ডনমূলক উত্তর [31]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) ‘সে সব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যারা অনৈতিক কাজ করে’ – একথা নবী (সা.) নাকি জনৈক ব্যক্তিকে স্বপ্নে বলেছেন! – খণ্ডনমূলক উত্তর❞ [32]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) ব্যভিচারিণীর বিনিময়কে হালাল ফাতাওয়া দেয়া-মর্মে আপত্তির জবাব❞ [33]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.) বিবাহ-নিষিদ্ধ এইরূপ স্ত্রীলোককে বিয়েকারী এবং সহবাসকারীর উপর ‘হদ্দ’ ওয়াজিব নয়- বললেন কেন?❞ [34]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.)-এর পূর্বপুরুষ কি গোলাম (কৃতদাস) ছিলেন? একটি ভ্রান্তি ও তার নিরসন❞ [35]

❝ইমাম আবূ হানীফা Imam Abu Hanifa (الامام ابو حنيفة) (রহ.)-ই কি সব চেয়ে বড় ফেতনা? নাউযুবিল্লাহ! খণ্ডনমূলক উত্তর❞ [36]

(চলবে….)

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ 01629-941773 (Imo, Telegram & WhatsApp)

প্রত্যেক নবীই কেয়ামতের দিন তাদের উম্মতের সাক্ষী হবেন

প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ বিদ্রোহী উম্মতদের বিরুদ্ধে কেয়ামতের দিন সাক্ষী হওয়া,

আমরা যখনি কাদিয়ানী অনুসারীদের প্রশ্ন করি, মির্যা কাদিয়ানী যদি তার ‘নবী’ দাবীতে সত্য হয় তাহলে তার উম্মত কারা? আপনারা কীজন্য নিজেদেরকে তার ‘উম্মত’ বলে স্বীকার করেন না? অথচ পৃথিবীতে এমন কোনো নবী নেই যার ‘উম্মত’ ছিল না। (এ সম্পর্কে দলিল প্রমাণ একটু পরেই পেশ করা হবে)। এমন প্রশ্নের উত্তরে তখন তাদের অবস্থা দেখার মত হয়! বেশিরভাগই তখন চিন্তায় পড়ে যায়। কী উত্তর দেবে! তাদের আরও একটি প্রশ্ন করেছিলাম যে, কবরে ফেরেশতা যখন জিজ্ঞেস করবে যে, তোমার নবী কে? তখন কার নাম বলবেন? এ সব প্রশ্নের সামনে তাদেরকে সীমাহীন অসহায় দেখা যায়। বিবাড়িয়ার (কান্দিপাড়া) বেশ কয়জন তরুণ আহমদী (কাদিয়ানী) শুধু প্রশ্নগুলো নিয়ে নিরপেক্ষ চিন্তা থেকেই তওবা করে মুহাম্মদ (সা.)-কে মুক্ত ও স্বাধীন অর্থে ‘শেষনবী’ মেনে নিয়ে ‘ইসলামের মূলধারায়’ ফিরে এসেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। ইদানীং তাদের নেতাদের কেউ কেউ উক্ত প্রশ্নদুটি থেকে আত্মরক্ষার জন্য নতুন ডেলিভারি দিচ্ছে, তা হচ্ছে, ‘সব নবীর উম্মত থাকেনা!’ এ যেন রাজ্যবিহীন ‘রাজা’ আর সেনাবিহীন সেনাপতি! অথচ মির্যা কাদিয়ানীর দ্ব্যর্থহীন উক্তি, “আমার আগমন দ্বারা প্রত্যেক নবী জীবন ফিরে পেয়েছে। আর সমস্ত রাসূল আমার জামার মধ্যে গোপন হয়ে আছে।” দেখুন, নুযূলে মসীহ, রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-৪৭৮, (ফার্সি কাব্যাংশের অনুবাদ)। অধিকন্তু তার দাবী হচ্ছে, “আদমের বাগান অদ্য পর্যন্ত ছিল অসম্পূর্ণ; আমার আগমনে তা ফল ও পাতায় হয়ে যায় পরিপূর্ণ।” (দেখুন, বারাহীনে আহমদীয়া ৫ম খন্ড, রূহানী খাযায়েন ২১/১৪৪)। অন্যত্রে আরও লিখেছে, (কথিত ইলহাম: খোদাতালা মির্যাকে বলেছেন) ‘ইন্নী মা’আল আকরাম, লাও লা-কা লামা খালাকতুল আফলাক’ অর্থাৎ আমি বুযূর্গদের সাথেই রয়েছি। যদি তুমি না হতে তাহলে আমি আসমান সমূহকে সৃষ্টি করতাম না। (সূত্র, তাযকিরাহ, চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫২৫; ইলহাম ০৪-০৫-১৯০৬ ইং)। নাউযুবিল্লাহ। কাজেই প্রশ্ন আসে, এমন দম্ভোক্তি যার তার উম্মত থাকবেনা তা কিভাবে হয়? প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য,

রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-৪৭৮

সমস্ত নবী নিজ নিজ উম্মতের জন্য সাক্ষী হওয়া :

আল্লাহতালা বলেছেন, (আরবী) وَ یَوۡمَ نَبۡعَثُ مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍ شَہِیۡدًا ثُمَّ لَا یُؤۡذَنُ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ لَا ہُمۡ یُسۡتَعۡتَبُوۡنَ

অনুবাদঃ আর যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে এক একজন সাক্ষী পেশ করব তারপর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে না ওযর পেশের অনুমতি দেয়া হবে, আর না তাদেরকে (আল্লাহ্‌র) সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮৪)।

তাফসীরঃ ইতিপূর্বে যত নবী এসেছিলেন প্রত্যেকে কেয়ামতের দিন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনের পক্ষে সাক্ষী হবেন। আর বিদ্রোহী উম্মতগণের বিপক্ষে তাদের কুফরি ও মিথ্যারোপের সাক্ষী হবেন (ফাতহুল কাদীর)। তারা সাক্ষ্য দিবেন যে, তারা তাদেরকে তাওহীদ ও আল্লাহর আনুগত্যের দাওয়াত দিয়েছিলেন। অন্য আয়াতেও আল্লাহতালা সেটা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা এমন এক দিন যেদিন না তারা কথা বলবে, আর না তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে ওযর পেশ করার।” (সূরা আল-মুরসালাত ৩৫-৩৬) {তাফসীরে ইবন কাসীর}।

আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, বহু মানুষ সত্য অনুধাবনের পরও ঈমান আনে না। তারা কাফির থেকে যায়। আলোচ্য আয়াতে কাফিরদের পরকালীন করুণ পরিণতির বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এ আয়াতে তিনটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। এক. কিয়ামতের আদালতে সাক্ষী। দুই. কৈফিয়তের অবকাশ। তিন. আপত্তি গৃহীত না হওয়া।

কিয়ামতের দিন সমস্ত উম্মত থেকে সাক্ষী হাজির করা হবে এবং সাক্ষীরা নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দেওয়া প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দেবে। এমন ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা হবে, যাঁরা আল্লাহ’র কাছে গ্রহণযোগ্য ও মানুষের জন্য তাঁরা আদর্শ। তাঁরা হলেন নবী-রাসুল। প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতির (বিদ্রোহী উম্মতদের বিরুদ্ধে) সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে অন্য আয়াতে এসেছে, (আরবী) فَكَيْفَ إِذٰا جِئْنٰا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَ جِئْنٰا بِكَ عَلىٰ هٰؤُلاٰءِ شَهِيداً অর্থাৎ ‘তখন কী অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকে [মহানবী (সা.)] তাদের (বিদ্রোহী উম্মতদের মিথ্যা অভিযোগের) বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব, (সূরা : নিসা, আয়াত : ৪১)।

সম্পর্কিত আলোচনাঃ ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন, يشهد عليها و هو نبيها অর্থাৎ তাদের প্রত্যেক উম্মতের ব্যাপারে তাদের নবীই সাক্ষ্য দেবেন (জালালাইন)। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) থেকেও এর তাফসীরে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, (আরবী) فكيف يكون الأمر والحال يوم القيامة وحين يجيء من كل أمة بشهيد يعني الأنبياء عليهم السلام অর্থাৎ কেয়ামত দিবসের সেই পরিস্থিতি ও অবস্থা কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে সাক্ষী তথা নবীগণ (আ.)-কে উপস্থিত করব। (ইবনে কাসীর, সূরা নাহল ৪১)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য,

ইবনে কাসীর

শেষকথাঃ আল্লাহতালা পৃথিবীতে যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের প্রত্যেককে তিনি কেয়ামতের দিন নিজ নিজ উম্মতের সাক্ষীরূপে উত্থিত করবেন। কোনো কোনো নবী স্বজাতির বিদ্রোহীদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যা হওয়ায়, কেউ বা দাওয়াত কাজের দীর্ঘ সুযোগ না পাওয়ায় হাতেগুনে কয়জন উম্মত নিয়ে হাজির হবেন। এমন কোনো নবী থাকবেনা যাঁর কোনো উম্মত ছিলনা। আর এধরণের হওয়ার ব্যাপারটা কল্পনারই বাহিরে। কেননা কোনো নবীর একজন উম্মত-ও না থাকার অর্থ দাঁড়াচ্ছে আল্লাহ উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ। যা চিন্তা করাও কুফুরীর শামিল।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

তাহযীরুন্নাস সহ অগণিত কিতাবের নাম ভেঙ্গে কাদিয়ানীদের অপপ্রচার

দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহ.) (মৃ. ১২৯৭ হি.)-এর ‘তাহযীরুন্নাস’ কিতাব থেকে কাদিয়ানীরা ‘ইজরায়ে নবুওয়তের’ (নবুওয়তের ক্রমধারা অব্যাহত) ইস্তিদলাল করার চেষ্টা করে যেমন, তেমনি পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা আয়াত নং ৬৯ এর مع النبيين و الصديقين আর মুসলিম শরীফের ‘কিতাবুল ফিতান’ হাদীস নং ৭০৭৮ এর عيسى نبي الله চার চার বার এসেছে, উপবাক্যটি দ্বারাও ইজরায়ে নবুওয়তের ইস্তিদলাল করে থাকে…!

  • (আসলে তাহযীরুন্নাস কিতাবটির কোন কথাটিকে কাদিয়ানীরা বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে? পড়তে এখানে ক্লিক করুন – https://markajomar.org/?p=564)

এখন আমার প্রশ্ন হল, কাদিয়ানীদের ঐ সকল ইস্তিদলাল কি সঠিক বা বাস্তবসম্মত? আমার এ প্রশ্নটি বিশেষতঃ বেরেলভি মাসলাকের সেসব ভাই ও বন্ধুদের প্রতি যারা তাহযীরুন্নাস এর “যদি ধরে নেয়া হয় যে….” এরূপ খণ্ডিত ইবারত (اگر بالفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہیں اور کوئی نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے۔) দিয়েই কাদিয়ানীদের কৃত ইস্তিদলালের দরুন মওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.)-কে ‘কাফের’ আখ্যা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না! এখন আমার প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়—তাহলে একই রকম ইস্তিদলালের কারণে তবে কি পবিত্র কুরআন এবং মুসলিম শরীফের হাদীসও অভিযুক্ত হচ্ছেনা? অর্থাৎ তখন কি আপনারা এটাও মেনে নিবেন যে, কুরআন এবং হাদীসের আলোকে কাদিয়ানীদের উল্লিখিত ইস্তিদলাল সঠিক? নাউযুবিল্লাহ।

মোটেও না।

বরং আপনি একমত হন আর যাই হোন; সত্য এটাই যে, কাদিয়ানীরা তাদের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবীর বৈধতা খুঁজতে পূর্ববর্তী আরও অনেক বুযূর্গ আলেমদের কিতাবের নাম ভেঙ্গে ইস্তিদলাল চালিয়ে দিয়েছে, তাদের মধ্যে মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) এর রচনাটিও অন্যতম। পবিত্র কুরআন এবং হাদীসকে পর্যন্ত তারা ছাড়েনি, ইচ্ছেমতো তাবিল আর অপব্যাবহার নিশানায় পরিণত করেছে। সুতরাং, মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.)-এর কিতাবটির মূল ভাষা ফার্সী হলেও এর উর্দূটাও শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখুন, তবেই মনে হবে আকাশটা যেন আপনার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েছে। আপনি অবাক হবেন! আর অবাক হওয়ারই কথা, কেননা তিনি কিতাবটি আকীদায়ে খতমে নবুওয়তের পক্ষেই দলিল ও যুক্তি দিয়েই লিখে গেছেন। তিনি নবীকরীম (সা.)-এর খাতামিয়তকে একই সাথে যামানিরুতবিমাকানি (যুগ, মর্যাদা ও স্থান) সর্বোপরিভাবে সাব্যস্ত করে গেছেন। সব চেয়ে বড় কথা হল, তিনি তাঁর একই পুস্তকে পরিষ্কার করে লিখে গেছেন, যে রাসূল (সা.)-কে মুক্ত ও স্বাধীন অর্থে খাতামান নাবিয়্যীন স্বীকার করেনা সে কাফের। যেমন একই বইয়ের ৩৭ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার এও লিখেছেন যে, اطلاق خاتم اس بات کو مقتضی ہے کہ تمام انبیاء علیہم السلام کا سلسلہ نبوت آپ پر ختم ہوتا ہے অর্থাৎ “খাতাম (خاتم)-এর প্রয়োগ এই কথারই দাবী রাখে যে, হুজুর (সা:)-এর উপরই সমস্ত নবীর নবুওয়তেরধারা শেষ হয়ে গেছে।” (তাহযীরুন্নাস, হুজ্জাতুল ইসলাম একাডেমী ওয়াক্বফে দারুলউলুম দেওবন্দ, সাহারানপুর হতে প্রকাশিত)। স্ক্রিনশট থেকে দেখুন,

.

মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) আরও লিখেছেন, ‘রাসূল (সা.)-কে শেষ নবী অস্বীকারকারী কাফের। এই আকীদা ‘খাতামান নাবিয়্যীন’ সম্বলিত আয়াত, হাদীস ও ইজমা’য়ে উম্মত দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।’ (তাহযীরুন্নাস-এর নবম পৃষ্ঠার শেষ থেকে এগারতম পৃষ্ঠার শুরু)। নিচে স্ক্রিনশট থেকে দেখুন,

.

তিনি আরো বলেন, ‘আমার দীন ও ঈমান এই যে, রাসূল (সা.)-এর পরে অন্য কারো নবী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। যে এতে কোনো প্রকারের তাবীল (ব্যাখ্যা) করবে তাকে কাফের মনে করি।‘ (মুনাযারায়ে আজীবাহ পৃষ্ঠা নং ১০৩; জওয়াবে মাখদূরাত পৃষ্ঠা নং ৫০ আরো দেখুন, মুতালাআয়ে বেরেলবিয়্যাত ১: ৩০০-৩২২)

আসুন! এখন থেকে ঐ একই কারণে আমরা কুরআন এবং হাদীসকেও দোষারোপ করতে থাকি!!! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!

উল্লেখ্য, জনৈক শায়খ মরহূম’ তাহযীরুন্নাস’ কিতাবের তিন জায়গা থেকে মন মতো ইবারত উঠিয়ে এনে ও আগপাছ কেটেকুটে ‘হুসামুল হারামাইন’ নাম দিয়ে তৈরি করে গেছেন শতাব্দীর জঘন্য খেয়ানতপূর্ণ রচনা। আফসোস! এর মুতা’আল্লেকীন ও ভক্তবৃন্দ এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও অন্ধকারে পড়ে আছে। একটিবারের জন্যও তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেনা যে, হুসামুল হারামাইনে উদ্ধৃত ইবারতটি কতখানি স্বচ্ছ এবং লিগ্যাল?

‘তাহযীরুন্নাস’ কিতাবের বাস্তবতা ও শায়খ মরহুমের জঘন্য মিথ্যাচার তুলে ধরার জন্য বিক্ষিপ্ত ও স্বতন্ত্র অনেক কিতাব লেখা হয়েছে। বিশেষতঃ হযরত মাওলানা ইদ্রিস কান্দলভী, সারফারাজ খান সফদার ও শহীদে ইসলাম ইউসুফ লুধিয়ানাবি রাহিমাহুমুল্লাহ স্বতন্ত্র রিসালা লিখেছেন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ইমাম বায়হাক্বীর সংকলনে ‘মিনাস সামায়ি’ শব্দটির উপর একটি আপত্তির জবাব

প্রশ্ন : ইমাম বায়হাক্বী (রহ.)-এর সংকলন الاسماء و الصفات কিতাবে উল্লিখিত ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন (ينزل من السماء) শীর্ষক একই হাদীসটি সহীহ বুখারীতেও এসেছে, কিন্তু সেখানে ‘সামা’ বা আকাশ শব্দটি নেই! এখন ইমাম বায়হাক্বীর সনদে এই ‘সামা’ (আকাশ) শব্দ কোত্থেকে বা কিভাবে এলো? আসমাউর রিজালশাস্ত্রের গবেষক মুহাদ্দিসগণ থেকে এইধরনের বর্ণনার হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : এখানে হাদীসটির সনদে ইমাম বুখারী (রহ.)-এর সনদ অপেক্ষা শেষের দিকে আরো তিনজন রাবী অতিরিক্ত রয়েছে। শায়খ আলবানী (রহ.) এর তাহকিক অনুসারে এখানে ‘সামা’ (আকাশ) শব্দটি এঁদেরই কারো থেকে বৃদ্ধিকৃত হবে যাকে উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘যিয়াদাতুর রাবী’ (زيادة الراوى) বলা হয়। এই ক্যাটাগরির হাদীসকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। তন্মধ্যে প্রথম প্রকারের হাদীসকে ‘মাকবূল’ (শর্তমতে গ্রহণযোগ্য) বলা হয়। সহীহ বুখারীর আরবী ব্যাখ্যাকারক ও যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) যিয়াদাতুর রাবী-এর অন্যতম ‘মাকবূল‘ (গ্রহণযোগ্য) হাদীসের সংজ্ঞায় লিখেছেন, زيادة الراوى ليست مقبولة مطلقا عند الجمهور من المحدثين، بل تكون مقبولة اذا لم تقع منافية لرواية من هو أوثق، لانها فى حكم الحديث المستقل الذى يتفرد بروايته الثقة و لا يرويه عن شيخه غيره. অর্থাৎ জামহুর মুহাদ্দেসীনের মতে যিয়াদাতুর রাবী মুক্তভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। (মুক্তভাবে গ্রহণযোগ্য নয় একথার অর্থ হল, যদি রাবীর যিয়াদাত (বৃদ্ধি) অন্য সিকাহ রাবীদের বর্ণিত রেওয়ায়েতের বিরোধী হয়, যার ফলে একটিকে গ্রহণ করলে অন্যটিকে রদ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে; তখন বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া রাবীর যিয়াদাত (বর্ণনাকারীর বৃদ্ধি) গ্রহণ করা যাবেনা। এক্ষেত্রে রাবীদের অবস্থা যাচাইবাচাই করে একটিকে প্রাধান্য আর অপরটিকে অপ্রাধান্য বলে সাব্যস্ত করতে হয়)। তবে যদি কোনো রাবীর যিয়াদাত (বৃদ্ধি) অন্য কোনো আওসাক (অধিক বিশ্বস্ত) রাবীর রেওয়ায়েত কৃত হাদীসের বিরোধী না হয়, তখন রাবী সিকাহ (বিশ্বস্ত) হলে তার রেওয়ায়েত গ্রহণ করা হবে এবং সিকাহ রাবীর রেওয়ায়েতকে পৃথক হাদীস ধরা হবে। (আর মনে করা হবে) আওসাক রাবী সেই অংশ তার নিজ শায়খ থেকে অন্য কোনো কারণে বর্ণনা করেননি। (বলেছেন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ.)। দেখুন, ইবনে হাজার আসকালানী রচিত শরহে নুখবাতুল ফিকার, যিয়াদাতুর রাবী পর্ব দ্রষ্টব্য।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) সিকাহ রাবীর যিয়াদাতের হুকুম সম্পর্কে আরও বলেছেন, و زيادة راويهما مقبولة مالم تقع منافية لمن هو اوثق অর্থাৎ হাদীসে হাসান এবং সহীহ’র বর্ণনায় যিয়াদাত বা বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য, যে পর্যন্ত না বৃদ্ধিকৃত অংশটি ‘আওসাক’ (অপেক্ষাকৃত অধিক বিশ্বস্ত) রাবী’র বিপরীত হয়। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত নাখবাতুল ফিকার)। কিতাবটির উর্দূ ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ ‘তুহফাতুদ দুরার’-তে “মুখালাফাতুল আওসাক” এর বিশ্লেষণ করে লিখা আছে, اور مخالفت ایسی ہو کہ اس زیادتی کو لینے کی صورت میں ارجح کی روایت کا رد کرنا لازم آئے অর্থাৎ মুখালাফাত এইরূপ হওয়া যে, এই ধরনের বৃদ্ধিকৃত অংশ গ্রহণের দ্বারা অপেক্ষাকৃত অধিক বিশ্বস্ত রাবীর বর্ণনাকে রদ বা বিরোধিতা করা হয়! (তুহফাতুদ দুরার-১৯; শায়খ সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ.)। এখন আপত্তিকারীর উপরই দায়িত্ব বর্তাবে একথা প্রমাণ করা যে, বায়হাক্বীর সংকলিত সম্পূর্ণ ভিন্ন সনদে বর্ণিত হাদীসটির ‘মিনাস সামা’ (من السماء) শব্দের বৃদ্ধি দ্বারা অন্য কোন আওসাক রাবীর বর্ণিত রেওয়ায়েতের মুখালাফাত বা বিরোধিতা করা হয়েছে? এমন কোনো হাদীস কি দেখানো সম্ভব হবে যেখানে ঈসা (আ.)-এর নাযিল হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে ‘সামা’ (আকাশ) শব্দের বিপরীতধর্মী কোনো শব্দ দ্বারা রেওয়ায়ত বর্ণিত হয়েছে? আর তা একজন সহীহ সনদে অপর কোনো ‘আওসাক’ (اوثق) রাবী থেকেই হয়েছে?

বায়হাক্বীর সংকলন থেকে من السماء শীর্ষক হাদীস এর প্রামাণ্য স্ক্যানকপি,

.
মুসনাদে বাজ্জার হাদীস নং ৯৬৪২
  • এবার সহীহ বুখারীর রাবীগণের বাহিরে অতিরিক্ত আরও যে তিনজন রাবীর উল্লেখ ইমাম বায়হাক্বীর উল্লিখিত সনদে (সূত্রে) রয়েছে তাদের ব্যাপারে জারহু ওয়াত-তাদীল এর বিখ্যাত গ্রন্থে কী লিখা আছে তা জেনে নিন! ইমাম যাহাবী (রহ.) লিখেছেন,

১- আবু আব্দুল্লাহ আল হাফিজ। উনার পুরো নাম- মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হামদাবিয়্যা ইবনে নাঈম ইবনে হিকাম। মৃত ৪০৫ হিজরী। তিনি একজন ছিকাহ (বিশ্বস্ত) রাবী ও হাফিজুল হাদীস। ইমাম বুখারী ও মুসলিম উনার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। (তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ২৯৭৯৫ দ্রষ্টব্য)।

২- আবুবকর ইবনে ইসহাক। উনার পূর্ণ নাম- আবুবকর আহমদ ইবনে ইসহাক ইবনে আইয়ুব ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে নূহ। তিনি ২৫৮ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত: ৩৪২ হিজরী। তিনি একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু মাপের মুহাদ্দিস। ইমাম যাহাবী (রহ:) তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন : الإمام العلامة المفتي المحدث ، شيخ الإسلام أبو بكر أحمد بن إسحاق بن أيوب بن يزيد ، النيسابوري الشافعي المعروف بالصبغي অর্থাৎ আবুবকর আহমদ ইবনে ইসহাক তিনি একজন ইমাম, আল্লামা, মুফতি, মুহাদ্দিস ও শায়খুল ইসলাম। তিনি নিশাপুর শহরের অধিবাসী এবং “ছবগী” নামে প্রসিদ্ধ। (দেখুন, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪৪৭; ঊনবিংশতিতম স্তরীয় রাবী)।

৩- আহমদ ইবনে ইবরাহিম। উনার পূর্ণ নাম, আহমদ ইবনে ইবরাহিম ইবনে মালহান। তিনি একজন ছিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম বুখারী মুসলিম দুজনই উনার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি হাদীসটি ইবনে বুকাইর এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য, ইমাম ইবনে বুকাইর-এর পূর্ণ নাম ইয়াহিয়া ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বুকাইর। উনার উপনাম, আবু যাকারিয়া। মৃত: ২৩১ হিজরী। ইবনে হাব্বান (রহ:) উনাকে বিশ্বস্ত রাবীদের মধ্যে শামিল করেছেন। ইমাম বুখারী মুসলিম দুজনই উনার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। (দেখুন, সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৬১৪; দ্বাদশ স্তরীয় রাবী)।

শেষকথা : বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ও যুগ ইমাম আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)-এর সুস্পষ্ট অভিমত দ্বারা-ও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ইমাম বায়হাক্বীর হাদীসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র হাদীস হিসেবে গণ্য হবে এবং সনদের শেষাংশে অতিরিক্ত ৩জন রাবীই ছিকাহ, যাদের কোনো একজনের মাধ্যমেই من السماء টুকরাংশটি বৃদ্ধিকৃত; যা তার উর্ধতন শায়খ হয়ত বা অন্য কোনো কারণে বুখারীর রেওয়ায়েতে উল্লেখ করেননি। আর এ ‘যিয়াদাতুর রাবী’ কর্মটি এ জায়গায় উসূলে হাদীসের প্রতিষ্ঠিত নিয়মের পরিপন্থী না হওয়ায় মাকবুল ও দলিল প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী।

মির্যা কাদিয়ানীর মাযহাব কী ছিল?

মির্যা কাদিয়ানীর ‘নবী রাসূল’ দাবী করার পূর্বে সে কোন মাযহাবে ছিল? হানাফী? শাফেয়ী? মালেফী? হাম্বলী? নাকি ‘আহলে হাদীস’ মাযহাবের ছিল?

উত্তর : ভারত উপমহাদেশের বেশিরভাগই হানাফী মাযহাবের ফিকহ অনুসরণ করতেন বিধায় মির্যা কাদিয়ানীও সে একই মাযহাবের ফিকহ অনুসরণ করে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে নবী রাসূল দাবী করার পর থেকে তিনি নির্দিষ্ট কোনো মাযহাবের অনুসরণ করতেন না। সহজ করে বললে, তিনি মুক্ত তাকলিদ করতেন। অর্থাৎ যখন যে মাসয়ালায় সুবিধা নিতে চাইতেন তখন সে মাসয়ালা মতে তিনি আমল করতেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, তিনি ইরতিদাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার পূর্ব মুহূর্তে পর্যায়ক্রমে ‘লা মাযহাবী’ তারপর ‘হাদীস অস্বীকারকারী’ হয়ে পড়েন। হাদীসের প্রতি তার কীরকম বিদ্বেষ ও বিরুক্তি ছিল তা বুঝতে চাইলে তার ‘কিশতিয়ে নূহ’ বইটির শেষের দিকে (পৃষ্ঠা নং ৭৭, জুন ২০১৮ ইং) কয়েকটি পাতা পড়ে দেখুন। যাইহোক, একথা দিবালোকের মত সুস্পষ্ট যে, শরীয়তের শাখাগত ইখতিলাফি মাসয়ালায় উর্ধতন কোনো ইমামকেই তিনি ফলো করতেন না, বরং হানাফী, শাফেয়ী ইত্যাদী পরিচয়কে তিনি ‘বিদয়াত’ আখ্যা দিয়ে গেছেন। নিচে তারই লিখনী থেকে,

(উর্দু থেকে অনুবাদ) “লোকেরা নিজেদের নাম হানাফী, শাফেয়ী ইত্যাদি রেখেছে, এ সবই বিদয়াত। রাসূল (সা.)-এর নাম দু’টিই ছিলো। একটি হল মুহাম্মদ আরেকটি হল আহমদ (সা.)। রাসূল (সা.)-এর ইসমে আজম হল, মুহাম্মদ (সা.)। যেমন আল্লাহতালার ইসমে আজম হল আল্লাহ। আল্লাহ নামটি বাকি সমস্ত নাম তথা হাইয়্যুন, কাইয়্যুম, রহমান, রহীম ইত্যাদির মাউসূফ। রাসূল (সা.)-এর নাম আহমদ। …এভাইে ইসলামী মাযহাবগুলো ভুল করেছে। কেউ নিজেদের হানাফী বলেছে তো কেউ নিজেদের মালেকী বলছে, কেউ নিজেদের শীয়া, কেউ বা সুন্নী বলছে। অথচ রাসূল (সা.)-এর নাম ছিল দুইটি। মুহাম্মদ ও আহমদ (সা.)। সুতরাং মুসলমানদের দুটি দলই হতে পারে। মুহাম্মদী বা আহমদী। মুহাম্মদী সে সময় যখন তার মাঝে জালাল তথা তেজস্বীতার প্রভাব প্রবল ছিল, আর আহমদী তখন যখন জামাল তথা সৌন্দর্যতার প্রভাব থাকবে। (সূত্র: মালফুযাত ১:৪৪৩-৪৪ নতুন এডিশন, পুরাতন এডিশন ২:২০৮-২০৯)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

.
কিশতিয়ে নূহ ৭৭, জুন ২০১৮ ইং

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ত্রিশজন মিথ্যাবাদী নবুওয়ত দাবীদার সংক্রান্ত হাদীসের ব্যাখ্যা

ত্রিশজনের পরেরগুলো কি সত্যবাদী? প্রশ্নোত্তর :

প্রশ্ন – হাদীস শরীফে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী নবুওয়তের দাবীদারের আত্মপ্রকাশ হবে, বর্ণিত আছে। এখন প্রশ্ন হল, ঐ ত্রিশজনের পরেরগুলো কি নবুওয়ত দাবীতে সত্যবাদী বলে বিবেচিত হবেন?….. জনৈক কাদিয়ানী কাল্ট!

উত্তর – সহীহ বুখারীর আরবী ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) অনেক আগেই এতদসংক্রান্ত হাদীসটির সঠিক মর্মার্থ সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। তিনি ‘ত্রিশ‘ সংখ্যার হাদীসটিকে (হাদীসটি এখানে) অপরাপর আরও বেশকিছু রেওয়ায়েতকে সামনে রেখে ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন,

(আরবী) وليس المراد بالحديث من ادعى النبوة مطلقا فإنهم لا يحصون كثرة لكون غالبهم ينشأ لهم ذلك عن جنون أو سوداء وإنما المراد من قامت له شوكة وبدت له شبهة

সরল অনুবাদঃ হাদীসে ‘ত্রিশজন’ মিথ্যা নবুওয়ত দাবীদার হতে মুক্ত সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়, কেননা এ সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ বুঝানো হয়নি। যেহেতু মস্তিষ্ক ব্যাধি ও মানসিক সমস্যা থেকেও নবী দাবীর প্রবণতা লক্ষণীয়। যেজন্য হাদীসটি হতে শুধু এ অর্থই উদ্দেশ্য যে, তারা (ত্রিশজন) এমন বিশেষ শ্রেণীর হবে যাদের প্রতাপ (দাপট) থাকবে এবং বিভ্রান্তি সমুন্নত রাখতে সক্ষম হবে।’ (ফাওতহুল বারী শরহে বুখারী ৬/৬১৭)। আশাকরি বুঝতে আর কষ্ট হবার কথা নয়! ধন্যবাদ সবাইকে।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

Fathul Bari 6:617

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মস্তিষ্ক ব্যাধি জনিত সমস্যা ছিল। সে নিজেই প্রসঙ্গক্রমে এটি স্বীকার করে লিখে গেছে। নিচে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি থেকে দেখুন,

মূল লিখক মির্যা কাদিয়ানী

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

কুরআনের আলোকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত

পবিত্র কুরআনের আলোকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত বা নবুওয়তের ক্রমধারার সমাপ্তি,

খতমে নবুওয়ত এমন একটি প্রমাণিত বিশ্বাস, যা জরুরিয়াতে দ্বীন অর্থাৎ ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিশ্বাস সমূহের অন্যতম। নিচে এর দলিল দেওয়া হল, আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করছেন,

(আরবী) مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا অর্থ- ‎”মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৪০)। কুরআনের প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, (আরবী) وقد أخبر تعالى فى كتابه ، وأخبر رسوله فى السنة المتواترة عنه ، أنه لا نبى بعده ، ليعلموا أن كل من ادعى هذا المقام بعده فهو كذاب أفاك دجال ضال مضل ، ولو تخرق وشعبذ ، وأتى بأنواع السحر والطلاسم অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন এবং তাঁর রাসূল নিজ সম্পর্কে মুতাওয়াতির সুন্নাহ-তে বলেছেন যে, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই, যাতে প্রত্যেকে জানতে পারে যে, তাঁর পরে এই পদের দাবীদার প্রত্যেকেই চরম মিথ্যাবাদী, প্রতারক এবং পথভ্রষ্ট, যদিও বা সে অসাধারণ কর্ম প্রদর্শন করে, ভেল্কি, যাদু-মন্ত্র ইত্যকার ধরণের অলৌকিক কর্ম নিয়ে আসে না কেন! (সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা, মিশরীয় ছাপা)।

যৌক্তিক প্রমাণ : যুক্তি থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, ইতিপূর্বে নবীগণ আসতেন তিনটি কারণে,

১. পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে।

২. পূর্ববর্তী নবী কোনো নির্দিষ্টকাল বা স্থানের জন্য প্রেরিত হলে।

৩. পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত শিক্ষা অসম্পূর্ণ অথবা তাতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন হলে।

কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য এদের একটিরও প্রয়োজন নেই। তাই নতুনভাবে আর কোনো নবী আগমনের প্রয়োজন নেই। কারণ এই যে,

যুক্তি ১: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ এখনো বিদ্যমান।

যুক্তি ২: হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।

যুক্তি ৩: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

(আরবী) الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থাৎ “আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম ও ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা: ০৩)।

ইজমাহ : আকীদায়ে খতমে নবুওয়তের উপর উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ইজমা বা সর্বসম্মত রায় প্রতিষ্ঠিত।

এ সম্পর্কে ‘তাফসীর রূহুল মা’আনী’ প্রণেতা আল্লামা মাহমুদ আলূসী (রহ.) লিখেছেন, (আরবী) وقال الألوسي في تفسيره: وكونه صلى الله عليه وسلم- خاتم النبيين مما نطق به الكتاب، وصدعت به السنة، وأجمعت عليه الأمة، فيكفر مدعي خلافه. الأديان والفرق অর্থাৎ নবী করীম (সা.) খাতামুন নাবিয়্যীন হওয়ার ব্যাপারে কিতাবুল্লাহ কথা বলে এবং সুন্নাহ তার ঘোষণা দেয়। উম্মাহ এ বিশ্বাসের উপর ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং যে বা যারা এ বিশ্বাসের বিপরীত করবে সে বা তারা কুফুরী করলো। (আল আদইয়ান ওয়াল ফিরাক্ব ১০৭)।

কাজেই বর্তমানে এ আকীদার পক্ষে নতুনভাবে দলিল প্রমাণ তলব করা সুস্পষ্ট গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই না। ইমাম ইবনুল হাজম জাহেরী (রহ.) এ সম্পর্কে লিখেছেন, (আরবী) و أنه لا نبي مع محمد صلى الله عليه وسلم ولا بعده أبداً অর্থাৎ সবাই একমত এ কথার উপর যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে অথবা তাঁর পরবর্তীতে কখনোই আর কোনো নবী নেই। (অর্থাৎ আল্লাহ নতুনভাবে কাউকে নবুওয়ত দান করবেন না)। (মারাতিবুল ইজমা পৃষ্ঠা নং ২৬৮)। উক্ত ইজমার বিষয়টি পরিষ্কার করে আরও যে সমস্ত কিতাবে উল্লেখ আছে তন্মধ্যে ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনু নাজিম এর الْأَشْبَاهُ وَالنَّظَائِرُ عَلَى مَذْهَبِ أَبِيْ حَنِيْفَةَ النُّعْمَانِ (পৃষ্ঠা ১৭৩), ইমাম মোল্লা আলী ক্বারীর شرح الفقه الاكبر (পৃষ্ঠা ২৪৪), আল্লামা মাহমুদ আলূসী আল-বাগদাদীর روح المعانى (২২/৪৪), ইমাম শারফুদ্দীন আন-নববীর روضة الطالبين (১০/৬৪-৬৫), ইমাম কাযী ইয়াজের الشفاء (২/১০৭০-১০৭১) কিতাব সমূহ অন্যতম। ইবনুল হাজম (রহ.)-এর ‘মারাতিবুল ইজমা‘ কিতাব থেকে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –

.

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক