Home Blog Page 4

জাওনিয়া রাজকুমারীর সাথে বাসর হবার আগেই তালাক্ব দিয়ে দেয়ার কারণ

প্রশ্নঃ নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রী ‘জাওনিয়া’কে বাসরের আগেই তালাক প্রদান করার কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ আল্লামা খায়রুদ্দীন আয যিরিকলী আদ দামেস্কী (মৃত.১৩৯৬ হি.) এর সংকলন ‘আল আ’লাম’ (الأعلام للزِّرِكْلي) এর মধ্যে লিখা আছে, ((أسماء بنت النعمان بن أبي الجون الكندي: من شهيرات نساء العرب شرفا وجمالا. يرتفع نسبها إلى آكل المرار ملك كندة. كان مقام أهلها بنجد، وقدمت مع أبيها على النبي صلّى الله عليه وسلم وهو في المدينة، فعرضها أبوها على النبي صلّى الله عليه وسلم فارتضاها وأمهرها، ولم يتزوج بها لصلف كانت موصوفة به، فأقامت في المدينة إلى أن توفيت في خلافة عثمان)) অর্থাৎ তিনি আসমা বিনতে নুমান ইবনে আবী জাওন আল কিন্দী (মৃত. ৩০ হি.)। একজন অভিজাত ও সুন্দরী আরব রমনী। তিনি কিন্দী বংশীয় রাজকুমারী ছিলেন। নজদের বাসিন্দা। তিনি নবী করীম (সা.)-এর নিকট স্বীয় পিতার সাথে মদীনায় আসেন। অত:পর তার পিতা তাকে নবী করীম (সা.)-এর নিকট সমর্পণ করলে তিনি তাকে গ্রহণ করেন এবং মোহর প্রদান করেন। কিন্তু তিনি তার অহংকারী স্বভাবের কারণে তার সাথে সহবাস করেননি (পরবর্তীতে তালাক্ব দিয়ে দেন-অনুবাদক)। তিনি মদীনায় বসবাস করেন এবং উসমান (রা.)-এর খিলাফত যুগ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

এবার বিস্তারিতঃ

জাওনিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ এ সম্পর্কিত রেওয়ায়েত গুলোর মতন বা মূলপাঠ’কে মুযতারিব তথা উলোটপালোট বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) নিজেও এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর মতনকে ‘মুযতারিব’ আখ্যা দিয়েছেন (ফাতহুল বারী ৯/৩৫৮)। যেমন তিনি লিখেছেন ((وإن كانت القصة متعددة ولا مانع من ذلك فلعل هذه المرأة هي الكلابية التي وقع فيها الاضطراب)) অর্থাৎ গল্পটি যদিও একাধিক এবং তাতে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু এই মহিলাটি-ই গল্পের নায়িকা, যার গল্পে ইযতিরাব বা উলোটপালোট রয়েছে।

উসূলে হাদীসের একটি নিয়ম হচ্ছে, সনদ বা সূত্র সহীহ হলেও যখন ‘মতন’ মুযতারিব হিসেবে সাব্যস্ত হবে তখন আর ঐ মতনের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবেনা। জাওনিয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণটিও অনুরূপ। একটু পরেই এ সম্পর্কে লিখব, ইনশাআল্লাহ।

সম্পূর্ণ লিখাটির উপসংহার যদি ছোট্ট পরিসরে বলতে চাই তাহলে বলব, নবী করীম (সা.)-এর সাথে বিয়ে হওয়ার পরে ‘জাওনিয়া’ নামক ঐ রাজকুমারী সংসার করার প্রস্তাবে অমত পোষণ করেন। যার ফলে রাসূল (সা.) তাকে বিদায় করে দেন। এটা বুঝা যায় এক রেওয়ায়েত অনুসারে।

আরেক রেওয়ায়েত অনুসারে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আসলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন নিজেকে রাজকুমারী ভেবে। সে তখন রাসূল (সা.)-এর প্রতি অপ্রীতিকর উক্তিও করে বসে। কিন্তু তাকে পরবর্তীতে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, সে নাকি তখন রাসূল (সা.)-কে চিনতে পারেনি। আসল কথা হচ্ছে, রেওয়ায়েতগুলোর মতনে অসঙ্গতি খুব বেশি। ফলে মতনগুলোকে “মুযতারিব” (উলোটপালোট) আখ্যা দিয়ে এর উপর স্কলারগণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের আনাড়ি কতিপয় এন্টি-ইসলাম নাস্তিকদের এগুলো বুঝানোই অসম্ভব!

জাওনিয়ার পরিচয়ঃ

জাওনিয়া’র পরিচয় হিসেবে উঠে এসেছে যে, তিনি নুমান ইবনে জাওন আশ শারাহীল এর কন্যা। কেউ বলেছেন, নুমান ইবনে আসওয়াদ আল হারিছের কন্যা। কেউ বলেছেন, তিনি বনু হারিস গোত্রের নুমানের কন্যা আসমা, আবার কারো কারো মতে, তিনি বনু সুলাইম গোত্রের মেয়ে। যাইহোক, সহীহ বুখারীর বর্ণনায় তার নাম উমায়মাহ উল্লেখ থাকলেও অন্যান্য বর্ণনায় তাঁর বিভিন্ন নাম উল্লেখ থাকা প্রমাণিত। ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকী (রহ.) বলেছেন, ((أجمعوا أن رسول الله تزوجها واختلفوا في قصة فراقها)) অর্থাৎ সবাই একমত যে, রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেছেন। তবে তার বিচ্ছেদ সংক্রান্ত ঘটনায় ঐতিহাসিকগণ মতবিরোধ করেছেন।

হুসাইন ইবনু ওয়ালীদ নিশাপুরী (রহ.) … সাহল ইবনু সা’দ ও আবূ উসায়দ (রা.) থেকে বর্ননা করেন। তারা বলেন যে, ((تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أُمَيْمَةَ بِنْتَ شَرَاحِيلَ ، فَلَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَيْهِ بَسَطَ يَدَهُ إِلَيْهَا ، فَكَأَنَّهَا كَرِهَتْ ذَلِكَ ، فَأَمَرَ أَبَا أُسَيْدٍ أَنْ يُجَهِّزَهَا وَيَكْسُوَهَا ثَوْبَيْنِ رَازِقِيَّيْنِ)) অর্থাৎ নবী করীম (সা.) উমায়মাহ বিনত শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত প্রসারিত করেন। সে এটি অপছন্দ করল। এরপর তিনি আবূ উসায়দকে নির্দেশ দিলেন, তার জিনিস গুটিয়ে এবং দু-খানা কাতান বস্ত্র পরিয়ে তাকে তার পরিবারে পৌঁছে দিতে। (বুখারী-৫২৫৬ আন্তর্জাতিক নম্বর)।

তবক্বাতে ইবনে সা’দ (৮/১৪৫) গ্রন্থে একটি বর্ণনায় এসেছে, জাওনিয়া ছিলেন আরবের এক সুন্দরী ও অভিজাত রমনী। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেন। তিনি আরও বলেছেন ((فلما رآها نساء النبي صلى الله عليه وسلم حسدنها ، فقلن لها : إن أردت أن تحظي عنده فتعوذي بالله منه إذا دخل عليك . فلما دخل وألقى الستر مد يده إليها ، فقالت : أعوذ بالله منك . فقال: أمن عائذ الله ! الحقي بأهلك)) অর্থাৎ যখন নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীরা তাকে দেখলেন তখন তারা তার সৌন্দর্যের কারণে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হন। স্ত্রীরা জাওনিয়াকে শিখিয়ে দিলেন যে, যদি তুমি তার সাথে মজা করতে চাও, তাহলে তিনি তোমার কাছে প্রবেশ করলে তার কাছ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে অর্থাৎ তাঁকে বলবে ‘আউযুবিল্লাহহি মিনকা’। তারপর তিনি যখন প্রবেশ করে পর্দা সরিয়ে তার দিকে হাত প্রসারিত করলেন তখন তিনি বললেন, আউযুবিল্লাহহি মিনকা। অত:পর তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর আশ্রয়ে নিরাপদ থেকো। তুমি তোমার পরিবারের সাথে গিয়ে মিলিত হয়ে যাও (অর্থাৎ নবী করীম সা. তাকে বিয়ে থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন)।

জাওনিয়ার সাথে নবী করীম (সা.)-এর সাক্ষাৎ ও দু পক্ষের আলাপচারিতা,

সহীহ বুখারীর ৫২৫৫ নং হাদীস হতে বুঝা যায় যে, নবী করীম (সা.) হযরত আবূ উসায়েদ (রা.)-এর কাছ থেকে জাওনিয়া সম্পর্কে প্রথম সংবাদ পান। কিন্তু জাওনিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তিনি তার সাথে বাসর করা থেকে বিরত থাকেন। হাদীসটির বাংলা অনুবাদ এই,

আবূ উসায়দ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমরা নবী করীম (সা.) এর সাথে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌঁছলাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নবী করীম (সা.) বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (বাগানের ভেতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নুমান ইবনে শারাহীলের কন্যা উমায়মাহ’র খেজুর বাগানস্থিত ঘরে তাকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নবী করীম (সা.) যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোনো রাজকুমারী কি কোনো বাজারি (অ-রাজকুমার) মানুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে?

বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সা.) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। (বুখারী-৫২৫৫)।

যারা আরবী ভাষার অলংকার সম্পর্কে ভালো দখল রাখেন এবং বাগধারা বুঝেন তাদের নিকট এটা পরিষ্কার যে, হাদীসটির এই শেষাংশ যেন ডেকে ডেকে বলছে যে, জাওনিয়ার সাথে নবী করীম (সা.)-এর বিবাহ আগ থেকেই সম্পন্ন ছিল, যা অন্যান্য বিশুদ্ধ বর্ণনামতেও প্রমাণিত। অন্যথা তিনি আবূ উসায়দকে কেন নির্দেশ দিলেন যে, যেন তিনি জাওনিয়াকে দু’খানা কাতান কাপড় প্রদান করেন!? ফলে বলা যেতে পারে যে, জাওনিয়াকে উদ্দেশ্য করে ‘তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর’-কথাটি নবী করীম (সা.) বাসর অর্থেই বুঝিয়েছেন। ইমাম বুখারী (রহ.) হাদীসটির অধ্যায় দাঁড় করেছেন এইরূপ, ((بَاب مَنْ طَلَّقَ وَهَلْ يُوَاجِهُ الرَّجُلُ امْرَأَتَه“ بِالطَّلاَقِ)) অর্থাৎ তালাক্ব দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে তালাক্ব দেবে? সুতরাং এতেও বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ে পূর্ব থেকেই সম্পন্ন ছিল, কিন্তু জাওনিয়া সংসার করতে অসম্মতি প্রকাশ করায় নবী করীম (সা.) তার সম্মুখেই তাকে বিবাহ-বন্ধন থেকে অব্যহতি (তালাক্ব) দিয়ে দেন।

বলে রাখা দরকার, সহীহ বুখারীর হাদীস নং ৫২৫৪ দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, জাওনিয়া নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে শামিল ছিলেন। কারণ ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে ইমাম আওযা’ঈ এর সনদে ইমাম যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ((سَأَلْتُ الزُّهْرِي أَي أَزْوَاجِ النَّبِي صلى الله عليه وسلم اسْتَعَاذَتْ مِنْهُ ؟)) অর্থাৎ আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (সা.)-এর কোন স্ত্রী তাঁর কাছ থেকে ‘ইয়াজ’ (অব্যাহতি) চেয়েছিলেন? এর উত্তরে হযরত উরওয়াহ স্বীয় খালা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ((قَالَ : أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ ، عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها : أَنَّ ابْنَةَ الْجَوْنِ لَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَدَنَا مِنْهَا قَالَتْ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ . فَقَالَ لَهَا : لَقَدْ عُذْتِ بِعَظِيمٍ ، الْحَقِى بِأَهْلِكِ)) “তিনি বলেছেন, জাওন কন্যাকে নবী করীম (সা.)-এর নিকট যখন আনা হল এবং তিনি যখন তার নিকটবর্তী হলেন তখন সে বলল, আউযুবিল্লাহি মিনকা অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য আপনার কাছ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।”

প্রতিউত্তরে নবী করীম (সা.) তাকে সাফ জানিয়ে দিলেন যে, লাক্বাদ উ’যতি বি’আজিম অর্থাৎ তুমি মহান সত্তার নামে অব্যাহতি কামনা করলে। কাজেই তুমি তোমার পরিবারের সাথে (এখুনি) গিয়ে মিলিত হয়ে যাও (অর্থাৎ আমি তোমাকে অব্যাহতি দিয়ে দিলাম)। নাস্তিকরা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে এক পাশে রেখে মাঝখান থেকে খণ্ডিত অংশ উঠিয়ে নেয় এবং নবী করীম (সা.)-এর প্রতি মানহানিকর প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়। নাস্তিকদের প্রোপাগাণ্ডার মূল ইস্যুটি হচ্ছে, নবী করীম (সা.) পর নারীর দিকে হাত বাড়িয়েছেন কিজন্য? জাওনিয়া মূলত সেজন্যই উনাকে السوقة তথা বাজারি (অ-রাজকুমার) পুরুষ আখ্যা দিয়েছিলেন! নাউযুবিল্লাহ।

কিন্তু নাস্তিকদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, সহীহ বুখারীতে (হাদীস-৫২৩৫ ইফা) হযরত সাহাল ইবনে সা’আদ এর অন্য আরেকটি বর্ণনায় পরিষ্কার এসেছে যে, ((أَتَدْرِينَ مَنْ هَذَا ؟ قَالَتْ : لاَ . قَالُوا هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ لِيَخْطُبَكِ . قَالَتْ : كُنْتُ أَنَا أَشْقَى مِنْ ذَلِكَ)) অর্থাৎ জাওনিয়াকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কি জানো যে, তুমি কাকে ‘বাজারি’ বললে? তখন জাওনিয়া উত্তরে বলেন, না আমি জানতাম না। তখন লোকেরা বলল, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, তোমাকে প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। জাওনিয়া তখন (বিনয়ের সাথে) বলেছিল, আমি তো উনার থেকে বঞ্চিতা। সুতরাং বুঝা গেল, জাওনিয়া তখন নবী করীম (সা.)-কে চিনতেন না। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলেন যে, তিনি স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন, তখন খুবই অনুতপ্ত হন। একই হাদীসের শুরুতে সুস্পষ্ট লিখা আছে, আবূ উসায়দ আস সা’দী নবী করীম (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম আরবের একজন রাজকুমারীর নাম প্রস্তাব করেন। নবী করীম (সা.) আবূ উসায়দকে নির্দেশ দেন, যাতে তিনি ঐ রাজকুমারীর নিকট দূত প্রেরণ করেন।

উল্লেখ্য, ফাতহুল বারী (৯/৩৫৮) গ্রন্থে লিখা আছে, ভাষাবিদ ইবনুল মুনির বলেছেন ((والسوقة عندهم من ليس بملك كائنا من كان)) “আরবের সাহিত্য পরিভাষায় ‘আসসূক্বাতু’ (السوقة) বলতে বুঝায় এমন ব্যক্তিকে যে রাজকুমার নন।” পক্ষান্তরে নুমান ইবনে জাওন আশ শারাহীল এর কন্যা জাওনিয়া ছিলেন নজদ অঞ্চলের বনু হারিস গোত্রীয় একজন অভিজাত রাজকুমারী। ফলে সে রাজকুমারের সাথেই সংসার করার মনোবাসনা লালন করত এবং অহংকারী ছিল। যে কারণে নবী করীম (সা.) তার সাথে বাসর না করেই তাকে তালাক্ব দিয়ে দেন । কিন্তু ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো অনেক বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ। যেজন্য নির্দিষ্ট কোনো বর্ণনার উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে প্রধান প্রধান স্কলারগণ (ইমামগণ) প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে আসছেন। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের বঙ্গীয় এন্টি-ইসলাম ছুপা নাস্তিকদের বুঝানোর সাধ্য কার?

যেসব বর্ণনা হতে জাওনিয়াকে রাসূল (সা.)-এর স্ত্রী বলেই বুঝা যাচ্ছে আমি এখন সেসব বর্ণনার আলোকেই জাওনিয়ার ‘আউযুবিল্লাহি মিনকা’ কথাটির উত্তর দেব, ইনশাআল্লাহ। পাঠকবৃন্দ! বর্ণনাগুলোর মতনে যথেষ্ট ইযতিরাব রয়েছে, যা আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি।

জ্ঞানীদের নিকট পরিষ্কার আছে যে, বিবাহিত স্ত্রী তার স্বামীকে যখন বলবে যে, আমি আল্লাহর জন্য তোমার কাছ থেকে অব্যাহতি বা ‘ফানাহ’ চাচ্ছি, তখন এ জাতীয় শব্দ রূপকার্থে ‘তালাক্ব’-কেই বুঝায়। অর্থাৎ সে যেন স্বামীর কাছ থেকে তালাক্ব চাচ্ছে! যাইহোক, আগেই বলে আসছি যে, বর্ণনাগুলোর সনদ সহীহ হলেও মতনে ইযতিরাব (উলোটপালোট) রয়েছে। ফলে এ জাতীয় ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আইনসিদ্ধ হবেনা। যার দরুন ইসলামের ইতিহাসে প্রধান প্রধান স্কলারগণ সর্বসম্মতিক্রমে জাওনিয়াকে নবী করীম (সা.)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে শুমার করেননি।

আমি আমার দীর্ঘ স্টাডি এবং গবেষণা থেকে যতটুকু বুঝেছি এবং প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছি, ততটুকুই লিখার চেষ্টা করেছি। এখানে যদি কোনো ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তজ্জন্য আমি অধম একাই দায়ী থাকবো। আমি অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। – লিখক

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ, তাং ১৭-০৬-২০২৪ ইং যোগাযোগ-

কাদিয়ানী মতবাদের পোস্টমর্টেম

প্রশ্নোত্তরে কাদিয়ানী মতবাদের অসারতা সহজ সরল ভাবে নিচে বুঝিয়ে দেয়া হল,

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

ঈসা এবং মাহদী কি একই ব্যক্তি হবেন, নাকি ভিন্ন ব্যক্তি হবেন?

এর উত্তর হচ্ছে, যদি কুরআন থেকে প্রমাণিত হয় হযরত ঈসা (আ.) মারা গিয়েছেন, তার মানে হচ্ছে সেই বনী ইসরাইলী ঈসা (আ.) আর কখনো পৃথিবীতে আসবেন না। কুরআন থেকে প্রমাণিত যে, বনী ইসরাঈলী ঈসা মারা গেছেন। তাই তাঁর দ্বিতীয়বার আগমনের কোনো সুযোগ নাই (কাদিয়ানীদের বক্তব্য)।

সরল উত্তরঃ

পবিত্র কুরআনের নামে এগুলো কাদিয়ানীদের জঘন্য মিথ্যাচার। কারণ ইসলামের গত চৌদ্দশত বছরেও এধরণের দাবী কোনো বরেণ্য যুগ ইমাম, ফকীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস কেউই করেননি। সুতরাং এধরণের দাবী ও মতবাদ সম্পূর্ণ বাতিল ও বিদয়াতি মতবাদ। সত্যের সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই। বরং অসংখ্য আয়াতে ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমনী ইংগিত থাকা প্রমাণিত, উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ইজমাও এর উপর বিদ্যমান যে, মরিয়ম পুত্র হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনঃআগমন অকাট্য সত্য এবং এ বিশ্বাস ইসলামে তাওয়াতূর স্তরীয় বিশ্বাস।

এখন কাদিয়ানীদের মতে, কুরআন দ্বারা বনী ইসরাঈলী ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন বলে প্রমাণিত হলে, তখন পবিত্র কুরআন থেকে এ কথাও প্রমাণ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, কুরআনে ঈসা (আ.)-এর আসার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হতে কাদিয়ানের চেরাগ বিবির পুত্র মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য। কেননা মির্যা গোলাম আহমদ নিজেই তার আরেক রচনায় স্বীকার করে লিখেছেন,

اب ثبوت اس بات کا کہ وہ مسیح موعود جس کے آنے کا قران کریم میں وعدہ دیا گیا ہے یہ عاجز ہی ہے

অর্থ-“এখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, পবিত্র কুরআনে যেই মসীহ মওউদের আসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সে এই অধমই।” (রূহানী খাযায়েন ৩/৪৬৮)।

স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি রচনার সমষ্টি ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন, যার বাংলা অর্থ- আধ্যাত্মিক ভাণ্ডার।

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

হযরত রসূল করীম (সা.) ঈসা (আ.) এর অবতরণের কথা বলেছেন। এর মানে হল, শেষ যুগে যিনি আগমন করবেন তিনি ঈসা (আ.)-এর সদৃশ হবেন। এর সমাধান তিনি নিজেই বলে গেছেন। হাদিসে উল্লেখ আছে,

((لاَ يَزْدَادُ الأَمْرُ إِلاَّ شِدَّةً وَلاَ الدُّنْيَا إِلاَّ إِدْبَارًا وَلاَ النَّاسُ إِلاَّ شُحًّا وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ إِلاَّ عَلَى شِرَارِ النَّاسِ وَلاَ الْمَهْدِيُّ إِلاَّ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ))

অর্থাৎ, দিনে দিনে বিপদাপদ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। দুনিয়াতে অভাব অনটন ও দুর্ভিক্ষ বাড়তেই থাকবে। কৃপণতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নিকৃষ্ট লোকদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে। মাহদী ঈসা ইবনে মরিয়ম ব্যতিরেকে অপর কেউ নন। (ইবনে মাজাহ, বাবু শিদ্দাতিয্যামান, হাদীস নং-৪০৩৯)। অতএব, যিনি ঈসা তিনিই মাহদী।

সরল উত্তরঃ

বর্ণনাটি সহীহ নয়। সর্বসম্মত ইমামগণের মতে এর সনদ বা সূত্র খুবই দুর্বল ও মুনকার (মেরকাত শরহে মেশকাত, কিতাবুল ফিতান ১০/১০১, মোল্লা আলী ক্বারী)। ইমাম মিজ্জি (রহ.) এর সনদে উল্লিখিত ‘মুহাম্মদ বিন খালিদ আল জানাদী’ (محمد ابن خالد الجندى) নামক বর্ণনাকারী সম্পর্কে লিখেছেন, সে অপরিচিত এবং মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য। দেখুন, তাহযীবুল কামাল : খণ্ড নং ২৫ পৃষ্ঠা নং ১৪৬; রাবী নং ৫১৮১)। ইমাম শাওক্বানী (রহ.) বলেন, ইমাম সাগানী আল হিন্দী-الصغانى (মৃত. ৬৫০ হি.) ‘তাযকিরাতুল মওযূ’আত’ কিতাবে (১/২২৩) লিখেছেন, এ হাদীস জাল তথা বানোয়াট (আল ফাওয়ায়েদুল মাজমু’আহ-الفوائد المجموعة ১/৫১০)।

মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও তার রচনায় স্বীকার করে লিখে গেছেন যে, এর সনদ খুবই দুর্বল, ফলে এর উপর নির্ভর করা যাবেনা। দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ১৬১। তাছাড়া যুগ ইমামগণ বর্ণনাটির “ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা”-((وَلَا الْمَهْدِىْ اِلَّا عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ)) উপবাক্যটির অর্থ করেছেন ((مَعْنَاهُ وَ لَا مَهْدِىٌّ كَامِلُ اَوْ مَعْصُوْمُ اِلَّا عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ)) ‘তখন ঈসা ইবনে মরিয়ম ব্যতীত নিষ্পাপ বা পরিপূর্ণ সুপথপ্রাপ্ত আর কেউ নন1।’ এ অনুবাদ করেছেন, ইমাম কুরতুবি, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম এবং ইবনে কাসীর প্রমুখ। দেখুন, আল আহাদীসুয য’ঈফাহ ১/৮৯, শায়খ আলবানী।

মজার ব্যাপার হল, মির্যা গোলাম কাদিয়ানী তার রচনার এক জায়গায় লিখেছেন, ((آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم بھی مہدی تہے)) অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.)ও ‘মাহদী’ ছিলেন। দেখুন, রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৪, পৃষ্ঠা নং ৩৯৪। সুতরাং বুঝা গেল, আক্ষরিক অর্থে শুধু ঈসা (আ.) কেন, বরং যে কোনো সুপথপ্রাপ্ত পুরুষকেও ‘মাহদী’ শব্দে সম্বোধন করা যেতে পারে। তাতে সবাইকে একই ব্যক্তি বুঝাবেনা। যাইহোক, সর্বশেষ কথা হচ্ছে, বর্ণনাটি ‘সহীহ’ মানলেও কাদিয়ানীদের যে শিক্ষা ও মতবাদ সে ধরনের কোনো কিছুই এর দ্বারা ইংগিতেও প্রমাণিত হয় না।

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ((يُوْشِكُ مَنْ عَاشَ مِنْكُمَ اَنْ يَلْقَى عِيْسَى بْنَ مَرْيَمَ إِمَامًا مَهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدَلًا فَيَكْسِرُ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا))

অর্থঃ “তোমাদের মধ্যে তখন যারা জীবিত থাকবে তারা ঈসা ইবনে মরিয়মকে ইমাম মাহদী হিসেবে পাবে যিনি শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। এরপর তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া বা যুদ্ধকর বন্ধ করবেন আর তখন অস্ত্রযুদ্ধ রহিত হবে।” (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, হাদীস নং ৯০৬৮, প্রকাশনা: দারূল আহহীয়াউত্তুরাস আল আরাবী, বৈরুত, লেবানন)।

সরল উত্তরঃ

হাদীসটি সহীহ, তবে এটিও কাদিয়ানীদের শিক্ষা ও মতবাদকে ইংগিতেও সমর্থন করেনা। কেননা, হাদীসটিতে পরিষ্কার শব্দে وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এসে ‘যুদ্ধকর’ রহিত করবেন, উল্লেখ আছে। জ্ঞানীদের জানা আছে যে, যুদ্ধকর রহিত করার এ সক্ষমতা বেসামরিক কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নেই। বরং এ ধরনের সক্ষমতা শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী প্রশাসনিক ব্যক্তির-ই রয়েছে। কাজেই এ হাদীসটিও অকাট্য ইংগিত দিচ্ছে যে, আগমনকারী ঈসা হতে প্রকৃত ঈসা ইবনে মরিয়মই উদ্দেশ্য, যিনি আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন এবং যথাসময়ে উম্মাহার নেতৃত্বে থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করবেন এবং রাসূল (সা.)-এর ফরমান অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে “যুদ্ধকর” স্থগিত করবেন।

বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা গোলাম আহমদ সারা জীবনে মেম্বার চেয়ারম্যান হতে পারা তো দূরের কথা, তিনি কোনোদিন সর্বনিম্ন “গ্রাম সরকার” বা চকিদার-ও ছিলেন না। সুতরাং এ হাদীস জীবন গেলেও তার সাথে খাপ খাবেনা।

এবার হাদীসটির সঠিক অনুবাদ জেনে নিইঃ

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

((يُوْشِكُ مَنْ عَاشَ مِنْكُمَ اَنْ يَلْقَى عِيْسَى بْنَ مَرْيَمَ إِمَامًا مَهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدَلًا فَيَكْسِرُ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا))

অনুবাদঃ “তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অবশ্যই অচিরেই মরিয়ম পুত্র ঈসার সাথে মিলিত হবে, যিনি একজন ন্যায়বিচারক এবং সুপথপ্রাপ্ত নেতা হবেন, তিনি ক্রুশ চূর্ণ করবেন, শুয়োর হত্যা করবেন, যুদ্ধকর রহিত করবেন, এবং ধর্মযুদ্ধ তার সমস্ত যুদ্ধ-সরাঞ্জাম ভারমুক্ত করবে।”

এখানে হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে বিশেষণমূলক (মুরাক্কাবে তাওসীফী) যৌগিক উপবাক্য ((إِمَامًا مَهْدِيًّا)) অর্থ- “একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম”। কাদিয়ানীরা এর ব্যকরণ-বিরুদ্ধ অনুবাদ তো করেই, তার উপর অপব্যাখ্যা দিয়ে বলে যে, এতে নাকি এটাই বুঝানো উদ্দেশ্য যে, ঈসা আর ইমাম মাহদী দু’জন মূলত একই। নাউযুবিল্লাহ। মূর্খতারও একটা সীমা থাকা দরকার। আফসোস! এ নির্বোধরা এতই বেপরোয়া যে, একই ধরণের আরো যত বিশেষণমূলক হাদীস রয়েছে তারা সেগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে একদমই চিন্তা করেনা।

যেমন, হযরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন ((ﻭَإجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا)) অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি তাকে “একজন সুপথপ্রাপ্ত হিদায়াতকারী” বানিয়ে দিন (বুখারী কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার)।

তারপর হযরত মু’আবিয়া (রা.) সম্পর্কেও বলা হয়েছে যে, ((اَللَّهُمَّ إجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا وَ إهْدِ بِهِ)) অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি তাঁকে “একজন সুপথপ্রাপ্ত হিদায়াতকারী” বানিয়ে দিন আর তার মাধ্যমে [মানুষকে] হিদায়াত দান করুন। (তিরমিযী কিতাবুল মানাকিব)।

তদ্রুপ হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আরেকটি হাদীসে এসেছে ((إِمَامًا عَادِلاً وَ قَاضِيًاً)) “তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ ও বিচারক ইমাম…”। দেখুন, ইমাম আবু বকর আশ-শাফেয়ী (মৃত ৩৫৪ হিজরী) সংকলিত, আল ফাওয়ায়িদুশ শাহীর বিল গাইলানিয়াত : হাদীস নং ৭৯৩ ও ৮২৪।

এখন প্রশ্ন হল, তবে কি রাসূল (সা.) জারির ইবনে আব্দুল্লাহ আর হযরত মু’আবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁদের দু’জনকেও প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী বুঝালেন?

হাদীসটিকে অপরাপর সহীহ হাদীসগুলোর সাথে মিলিয়ে পড়ার পর পাঠকের নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, হাদীসটিতে ঈসা (আ.)-কে শুধু আক্ষরিক অর্থেই ‘মাহদী’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। যার দরুন হযরত ফাতেমা (রা.)-এর বংশ থেকে আসন্ন শেষ যুগের প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদীর ধারণা বাতিল হয়ে যাবেনা। কারণ, আক্ষরিক অর্থে আবুবকর, উমর, উসমান এবং আলীকেও রাসূল (সা.) একত্রে ‘আল-মাহদিয়্যীন’ ((فعليكم بسُنَّتي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ)) বলেছেন। দেখুন, তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম হা/২৬৭৬, সনদ সহীহ। আর সে হিসেবে তথা আক্ষরিক অর্থে শুধু ঈসা (আ.) নয়, বরং সকল নবী-ই ছিলেন ‘মাহদী’ তথা সুপথপ্রাপ্ত। আশাকরি, উত্তর পেয়েছেন।

কাদিয়ানীবন্ধুঃ

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ

অর্থ “তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন ইবনে মরিয়ম তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হবেন এবং (তিনি) তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের ইমাম হবেন (কাদিয়ানী অনুবাদ)।” (বুখারী-৩৪৪৯, মুসলিম, কিতাবুল ঈমান-২৮৩)।

সরল উত্তরঃ

কাদিয়ানীদের অনুবাদে নিকৃষ্ট তাহরিফ (বিকৃতি) রয়েছে। অথচ সঠিক অনুবাদ হচ্ছে,

“তোমাদের অবস্থা তখন কেমন (আনন্দের) হবে, যখন ইবনে মরিয়ম তোমাদের মধ্যে নাযিল হবেন আর তোমাদের ইমাম (মাহদী) তোমাদেরই মধ্য থেকে হবেন (ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার আসকালানী রহ.)।” (বুখারী-৩৪৪৯, মুসলিম, কিতাবুল ঈমান-২৮৩)।

সরল উত্তরঃ

এ হাদীসটি বরং কাদিয়ানীদের শিক্ষা ও মতবাদেরই সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রথমতঃ তার কারণ, হাদীসটিতে “ইবনু মরিয়ম” বলা হয়েছে। যার অর্থ- মরিয়মের পুত্র। কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদের মায়ের নাম ছিল চেরাগ বিবি। সুতরাং মিললো না।

দ্বিতীয়তঃ এ হাদীসের ((ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ)) উপবাক্যটি পরিষ্কার বলছে যে, ইমাম মাহদী এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম দু’জনই শেষযুগে পৃথিবীতে সমসাময়িক হবেন। সহীহে বুখারীর উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারী গ্রন্থে বিভিন্ন হাদীসবিদগণের উদ্ধৃতির পরিপ্রেক্ষিতে জোরালো যে মতটিকে সুস্পষ্ট করে গেছেন তা হচ্ছে, হাদীসটির ((وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ)) “আর তোমাদের ইমাম তোমাদেরই মধ্য হতে হবেন” এর দ্বারা ইমাম মাহদীকেই বুঝানো উদ্দেশ্য। (ফাতহুল বারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া হাদীস নং ৩৪৪৯)।

ইবনে মাজাহ’র দাজ্জাল সম্পর্কিত আবূ উমামাহ’র দীর্ঘ হাদীসে এসেছে,

((كُلُّهُمْ أَىْ الْمُسْلِمُوْنَ بِبِيْتِ الْمُقَدَّسِ وَ اِمَامُهُمْ رَجُلٌ صَالِحٌ قَدْ تَقَدَّمَ لِيُصَلِّى بِهِمْ, اِذْ نَزَلَ عِيْسَى فَرَجَعَ الْاَمامُ يَنْكُصُ لِيَتَقَدَّمَ عِيْسَى, فَيَقِفُ عِيْسَى بَيْنَ كَتِفَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ: تَقَدَّمْ فَاِنَّهَا لَكَ اُقِمَتْ))

অর্থ- “মুসলমানগণ বায়তুল মুকাদ্দাসে (সালাতের জন্য অপেক্ষা রত) থাকবে। তখন তাদের ইমাম থাকবেন জনৈক নেককার ব্যক্তি। তিনি তাদের সালাত পড়ানোর জন্য সামনে অগ্রসর হবেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ (তারা দেখতে পাবে) ঈসা অবতরণ করছেন। ফলে ইমাম সাহেব পেছনে সরে আসবেন যাতে ঈসা সামনে অগ্রসর হন। হযরত ঈসা তাঁর কাঁধের মাঝখান বরাবর এসে দাঁড়াবেন, তারপর (ইমামকে) বলবেন ‘আপনিই অগ্রসর হোন, ইক্বামত আপনার জন্যই দেয়া হয়েছে’। ইমাম আবুল হাসান আল খাস’ঈ আল আবিদী ‘মানাকিবে শাফেয়ী’ গ্রন্থে বলেন, মুতাওয়াতির ভাবে বহু হাদীস বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ঈসা (আ.) এই উম্মতের (ইমাম) মাহদীর পেছনেই সালাত আদায় করবেন। তিনি এটি ইবনে মাজাহ’র হাদীসে আনাস থেকে বর্ণিত [মুনকার রেওয়ায়েত] ((وَلَا مَهْدِيّ إِلَّا عِيسَى)) “ঈসা ব্যতীত আর কোনো মাহদী নেই” (কাদিয়ানী অনুবাদ)-এরই রদ করার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম আবূ ঝার আল হারাভী বলেন, ইমাম আল যাওযাকী কোনো কোনো মুতাকাদ্দিমীনের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ((وَإِمَامكُمْ مِنْكُمْ)) “তখন তোমাদের ইমাম তোমাদেরই মধ্য থেকে হবেন” এ কথার অর্থ হচ্ছে, তিনি (ঈসা) পবিত্র কুরআন দিয়েই রাষ্ট্রপরিচালনা করবেন, ইঞ্জিল কিতাব দিয়ে নয়। ইমাম ইবনে তীন বলেন, ((وَإِمَامكُمْ مِنْكُمْ)) এর অর্থ ((أَنَّ الشَّرِيعَةَ الْمُحَمَّدِيَّةَ مُتَّصِلَةٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامِ وَ أَنَّ كُلَّ قَرْنٍ طَائِفَةٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي الخ)) “নিশ্চয়ই শরীয়তে মুহাম্মদীয়া কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং প্রতি শতাব্দীতে আহলে ইলমগণ থেকে একটি দল (তার সেবায়) বিদ্যমান থাকবে”। ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী। (অনুবাদ সমাপ্ত হল)।

এখন হয়ত কাদিয়ানীবন্ধু বলবে যে, আগত ঈসা একজন “রূপক ঈসা”। কাজেই, হাদীসটির “ইবনু মরিয়ম” বলতেও “রূপক মরিয়ম পুত্র” উদ্দেশ্য! কিন্তু কাদিয়ানীবন্ধুরা হয়ত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইগুলো খেয়াল করে পড়লে জানার কথা যে, তিনি নিজেই তার একটি রচনায় লিখেছেন,

“রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর ভিত্তিতে কসম খেয়ে যা বলেছেন তার ব্যতিক্রম কীভাবে হতে পারে? এই ক্ষেত্রে এই কসমটি সাব্যস্ত করছে প্রদত্ত সংবাদটি বাহ্যিক অর্থেই পূর্ণ হবে এর রূপক অর্থ করা যাবেনা আর কোনো ব্যতিক্রমও হবেনা। আর যদি তাই হয় তাহলে কসম খেয়ে কী লাভ? অতএব অনুসন্ধিৎসু ও গবেষকের ন্যায় চিন্তা করে দেখ।” দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ২৭।

কি বুঝলেন?…. কসমটি সাব্যস্ত করছে প্রদত্ত সংবাদটি বাহ্যিক অর্থেই পূর্ণ হবে এর “রূপক” অর্থ করা যাবেনা!

এখন যিনি নিজেই “রূপক” অর্থ করা যাবেনা বলছেন তাকেই আপনারা কসম সম্বলিত হাদীসের আলোকে আপনারা “রূপক” মসীহ বলে চিৎকার করতেছেন! এটা কি নিজের আক্বল ও বিবেকের সাথে ঠাট্টা মশকরা করা নয়?

এ দেখুন, কসম বা শপথ বাক্য সহকারে বর্ণিত সহীহ বুখারীর হাদীসটি অর্থ সহ,

সহীহ বুখারী (ইফা), অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আ.) (كتاب أحاديث الأنبياء), হাদীস নম্বরঃ ৩২০৫, ((حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏’‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلاً، فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ، وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ، حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‏’.‏ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ‏(‏وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا‏)‏‏.‏))

অনুবাদঃ ‘ইসহাক (রহ.) … আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়মপুত্র ঈসা (আ.) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুয়োর মেরে ফেলবেন এবং তিনি জিজিয়া (রাষ্ট্রীয় কর) পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোতে বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর [ঈসা (আ.) এর] মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩২০৫; ঈসা ইবনে মরিয়ম নাযিল হওয়া শীর্ষক পরিচ্ছেদ)।

হাদীসটির শুরুতেই কসম বা শপথ বাক্যটি আরেকবার দেখুন,

“রাসূল (সা.) বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়মপুত্র ঈসা (আ.) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন।”

এখন এর কী উত্তর?

(লিখাটির উপর কারো কোনো মন্তব্য থাকলে তা মন্তব্যের জায়গায় লিখুন)

  1. আহাদীসুয যু’ঈফাহ শায়খ আলবানী রহ. খ ১ পৃ ৮৯, আল কওলুল মুখতাসার, ইবনু হাজার আল হাইতামী পৃ-৩২ ↩︎

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
Principal NurunNabi
তাং ১৫/০৬/২৪

যার নেক নিয়ত পূর্ণ করতেই মির্যা কাদিয়ানী দুনিয়ায় আসলেন

প্রশ্ন : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে তার দুনিয়ায় আগমন কার আকাঙ্খা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে ছিল?

উত্তর : তদানীন্তন সময়কার প্রতাপশালী ব্রিটিশ নারী ভিক্টোরিয়ার আকাঙ্খা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যেই ছিল তার দুনিয়ায় আগমন। এ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর ভাষায় নিচে খেয়াল করুন, তিনি লিখেছেন-

“হে মহামহিম ভারত সম্রাজ্ঞী! আপনার মহিমা এবং সুনাম মুবারক হোক! খোদার দৃষ্টি (তথা করুণা) সে দেশের উপরই রয়েছে, যে দেশের উপর রয়েছে আপনার দৃষ্টি, খোদার রহমত (তথা সাহায্য) সে জনতার উপরই রয়েছে যে জনতার উপর রয়েছে আপনার হাত (তথা হুকুমত)। আপনার পবিত্র নিয়ত (তথা আকাঙ্খা) এর ফলশ্রুতিতেই আল্লাহ আমাকে (রূপক ‘মসীহ’ বানিয়ে) প্রেরণ করেছেন।”

রেফারেন্স : সেতারায়ে কায়সারিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৫/১২০, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী

পরিশেষ : কাদিয়ানীরা বলে, মির্যা গোলাম আহমদ যুগের আকাঙ্খা পূর্ণ করতেই নাকি দুনিয়ায় এসেছিলেন। অথচ মির্যা গোলাম আহমদ লিখেছেন, তিনি রাণী ভিক্টোরিয়ার নেক নিয়ত ও আকাঙ্খা পূর্ণ করতেই দুনিয়ায় এসেছেন!

আমাদের প্রশ্ন, আমরা তাহলে কার কথা সত্য মেনে নেব?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থে নবীজীর ছায়া ও নূর এর তাৎপর্য সম্পর্কে

0

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থের একটি ভুল সংশোধন ও সতর্কতা প্রসঙ্গে,

এমদাদুস সুলুক গ্রন্থে ‘নবী করীম (সা.)-এর ছায়া থাকা এবং তিনি আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্ট – মর্মে দলীলবিহীন ও মনগড়া যত সব আকীদার উল্লেখ রয়েছে সেসব আকীদা থেকে আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি! কারণ আমি ‘আকীদা’ এর ক্ষেত্রে শুধুই কুরআন এবং সহীহ হাদীস অত:পর মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদারই একনিষ্ঠ অনুসারী। এর বিপরীতে কোনো ব্যক্তি কী বলল তা আমার নিকট কোনো গুরুত্ব রাখেনা। হোক সে ব্যক্তি মর্যাদা ও সম্মানে অনেক বড় জ্ঞানী, কুতুবে জামান কিংবা মুজাদ্দিদে দাওরান!

মূল আলাপে আসা যাক,

মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহিমাহুল্লাহ। একজন সমসাময়িক বিজ্ঞ স্কলার ও ফকীহ। আধ্যাত্মিক ধারার একজন বিখ্যাত পীর সাহেব। উনার অন্যতম রচনা ‘এমদাদুস সুলুক’। রচনাটি আধ্যাত্মিক কনসেপ্ট এর উপরই রচিত। এর মূল ভাষা ফার্সী, সেটিকে উর্দূতে ভাষান্তর করেছেন মওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

আমি এখানে বইটির উর্দূ এডিশন এর ২০১ এবং ২০২ নং পৃষ্ঠা থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি। পাঠকবৃন্দ খুব ভালো করে উর্দূর সাথে আমার অনুবাদটি মিলিয়ে নেবেন। এখানে যে বিষয়টির আলোকপাত করতে চাচ্ছি সেটি হচ্ছে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের একটি আকীদা, যা তিনি সম্পূর্ণ মনগড়া ব্যাখ্যার আলোকে চিত্রিত করে গেছেন। তিনি লিখেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছায়া ছিলনা, তিনি আরও লিখেছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনি আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হন এবং তাঁর নূর দ্বারা মুমিনগণ সৃষ্টি হন। অথচ তিনি এর সমর্থনে কোনো দলীল প্রমাণ উল্লেখ করেননি, কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকে কিছুই উদ্ধৃত করেননি। যদিও বা একজন কুতুবে জামান খ্যাত, দারুলউলুম দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় একজন মান্যবর আলেম এবং ফকীহ থেকে এধরণের দলীল বিহীন ও মনগড়া আকীদা কেউই আশা করেনা, করতে পারেনা।

আমি একজন হানাফী মাযহাবের ফলোয়ার ও মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদার অনুসারী। সে হিসেবে আমি মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের উক্ত আকীদার সমর্থন না হানাফী মাযহাবের স্বীকৃত কোনো কিতাবে পেয়েছি, আর না মাতুরিদি ধারার ব্যাখ্যামূলক আকীদার কোনো কিতাবে পেয়েছি, কোথাও পাইনি। বরং নির্ভরযোগ্য অসংখ্য হাদীসের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হিসেবেই দেখতে পাই। অথচ একথা কারোরই অজানা নয় যে, কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীতে শুধুমাত্র দুর্বল রেওয়ায়েত কিংবা উম্মাহার প্রধান প্রধান ইমামগণের নিজেস্ব মত দ্বারা আকীদার কোনো বিষয় কখনোই সাব্যস্ত হয়না।

এবার রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের কিতাব থেকে হুবহু অনুবাদ তুলে ধরছি। যাতে উম্মাহ তাঁর মত একজন বিশিষ্ট ফকীহ ও আল্লামার নিজেস্ব মত ও বক্তব্য দ্বারা বিভ্রান্ত না হন। মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী লিখেছেন,

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ এখানে

(এমদাদুস সুলুক পৃ-২০১ থেকে শুরু) আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ভাষায় বলেন, ((قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে নিজের নফসের তাযকিয়া ও পরিশুদ্ধি করেছে। (সূরা আ’লা আয়াত ১৪)।

অর্থাৎ মোজাহাদার তরবারি দ্বারা নফসের কামনা বাসনার কদার্যতা কেটে ফেলেছে। উল্লেখ্য সায়ের ও পরিভ্রমনের কারণে মানুষের নফস আলোকিত হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা আপন হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে বলেছেন, ((قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ)) অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়েদা আয়াত ১৫)। এখানে ‘নূর’ দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর পবিত্র সত্তা উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ((يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذْنِهِۦ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا)) অর্থাৎ হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে একজন সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, ভয়প্রদর্শনকারী, আল্লাহর দিকে তারই নির্দেশে আহ্বানকারী এবং সিরাজাম মুনীরা তথা আলোকবর্তিকা প্রদীপ স্বরূপ বানিয়ে প্রেরণ করেছি (সূরা আহযাব আয়াত ৪৬)।

‘মুনীর’ অর্থ আলোকদাতা। যিনি অন্যকে আলো প্রদান করেন। যদি অন্যকে আলোকিত করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব হতো, তাহলে এ যোগ্যতা ও কামাল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভেতরে পাওয়া যেত না। কারণ তিনি তো আদম সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আপন সত্তাকে এত পুতঃপবিত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন যে, নির্মল নূরে পরিণত হয়েছিলেন। পরন্তু আল্লাহতালাও তাঁকে ‘নূর’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রসিদ্ধ মতে সাব্যস্ত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না। অথচ দেহ বলতেই তার ছায়া থাকে। কেবল নূরেরই কোনো ছায়া থাকে না। যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নূর বা আলোকবর্তিকা ছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও নূরে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাদের কারামতের বর্ণনা দ্বারা কিতাব ভরপুর। এমনকি সেগুলো এত প্রসিদ্ধ যে, বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ((وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُ)) অর্থাৎ যারা আমার হাবীবের প্রতি ঈমান এনেছে তাদের নূর তাদের সামনে এবং ডানে ছুটাছুটি করতে থাকবে। (সূরা তাহরীম আয়াত ৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ((يَوْمَ تَرَى ٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَٰنِهِم)) অর্থ- স্মরণ কর সেদিনটি যেদিন মুমিন পুরুষ ও নারীদের দেখবে, তাদের নূর ছুটছে তাদের সামনে ও ডানে। (সূরা হাদীদ আয়াত ১২)।

(তারপর ‘এমদাদুস সুলুক‘ পৃ-২০২ থেকে শুরু) আল্লাহতালা আরো বলেছেন, ((يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ)) অর্থ- ঐ দিনকে স্মরণ কর, যেদিন মুমিনদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ছুটবে। মুনাফিকরা বলবে, একটু থামো! আমরাও তোমাদের আলো থেকে কিছু জ্যোতি নেব। (সূরা হাদীদ আয়াত ১৩)।

আলোচ্য আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ দ্বারা ঈমান ও নূর উভয়টি সাধিত হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তায়ালা আপন নূর দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন সকল মুমিনকে।”

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়াও করেছেন, “আমার পরওয়ারদিগার! আমার কান, চোখ ও কলবকে নূর বানিয়ে দিন, বরং আমাকেই নূর বানিয়ে দিন।” যদি মানুষের নফস আলোকিত হওয়া অসম্ভব হতো, তাহলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়া কখনোই করতেন না। কেননা উলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে অসম্ভব কাজের দোয়া করাও নিষেধ। হযরত আবুল হাসান নূরী (রহ.)-কে ‘নূরী’ বলার কারণ হচ্ছে, বহুবার তার থেকে নূর দেখা গিয়েছিল। এভাবে অসংখ্য আউলিয়া, সাধারণ ও শহীদের কবর থেকে নূর উঠতে দেখা যায়।

এটি মূলত তাঁদের পবিত্র আত্তারই ‘নুর’। কেননা যখন নফসের কাজ উচ্চাঙ্গের হয়ে যায়, তখন তার নূর সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর তা শরীরের মেজাজ ও স্বভাবে পরিণত হয়। এরপর যদি নফ্স শরীর থেকে আলাদাও হয়ে যায়, তবুও সে শরীর নূরের অনুরূপ উৎস ও কেন্দ্রস্থল থেকে যায়, যেমন ছিল জীবদ্দশায় নফস বাকি থাকা অবস্থায়।

(সম্পূর্ণ দুই পৃষ্ঠার অনুবাদ সমাপ্ত হল)

রেফারেন্সঃ এমদাদুস সুলুক (امداد السلوك ), ২০১-২০২, মূল লিখক মওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, উর্দূ অনুবাদ মওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

শেষকথাঃ উপরে তার দীর্ঘ আলোচনা হতে আমি যা বুঝলাম তার আলোকে বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব রাসূল (সা.)-কে ‘রূপকার্থেই নূর’ বলেছেন। নইলে তিনি একই লাইনের শেষাংশে ‘মুমিনগণ তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি’ – একথার কোনো অর্থই থাকেনা। তিনি এ ক্ষেত্রে দলীল বিহীন আরেকটি কথা লিখেছেন যে, “প্রসিদ্ধ মতে সাব্যস্ত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না।” তাঁর উপস্থাপনার ধরণ থেকে দুটি বিষয়ের যে কোনো একটি খুবই পরিষ্কার। তা হচ্ছে,

১. ছায়া ছিল না – এটি তাঁর আকীদা ছিলনা। বড়জোর তিনি ‘প্রচলিত আকীদা’ অনুসারেই এটি উদ্ধৃত করেছিলেন মাত্র। যেহেতু তিনি কোনো নস তথা গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই এটি লিখেছেন এমনকি কথার শুরুতেই ‘প্রসিদ্ধ মতে’- শব্দে শর্ত আরোপ করেছেন।

২. ছায়া ছিল না, এটি তাঁর নিজেস্ব আকীদা, আর একথাই বাস্তব বলে বুঝা যায়। যেহেতু তিনি রাসূল (সা.)-কে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আলোকে ‘নূর’ সাব্যস্ত করার ধারাবাহিকতায় ঐ কথাটুকু টেনে এনেছেন। আর শেষে লিখেছেন, “অথচ দেহ বলতেই তার ছায়া থাকে। কেবল নূরেরই কোনো ছায়া থাকে না।”

তিনি এটুকু বলেই কথা শেষ করেননি। বরং তিনি একই লাইনের শেষাংশে আরও লিখেছেন,

“যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নূর বা আলোকবর্তিকা ছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও নূরে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।”

বলাবাহুল্য যে, মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব তাঁর ঐ কথা দ্বারা সাধারণদের মনে একটা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেলেন। সেটি হচ্ছে, তাহলে কি একই যুক্তিতে রাসূল (সা.)-এর সকল অনুসারীর-ও ছায়া থাকেনা বলেই সাব্যস্ত হল না? অবশ্যই সাব্যস্ত হচ্ছে। নতুবা “তেমনিভাবে তাঁর অনুসারীদের অন্তরাত্মা ভালো করে তাদেরকেও ‘নূরে’ পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন”- তার এ কথার কী অর্থ?

আসলে মওলানা গাঙ্গুহী সাহেবের উপরিউক্ত কথাবার্তাগুলো শতভাগ আধ্যাত্মিক ও রূপকার্থেই ধর্তব্য ; নইলে তাঁর উক্ত কথাবার্তায় যে পরিমাণে অসঙ্গতি বিদ্যমান, তা বলাইবাহুল্য।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ অ্যাডমিন ফিকহ মিডিয়া

তারিখ ১৫/০৫/২৪

ইস্তিসকা কী? হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া

0

ইস্তিসকার সালাত কিংবা দোয়া, কোনটি হানাফী মাযহাবের মুফতাবিহি মত? ইস্তিসকা অর্থ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা। হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া সাহেবাইন এবং জামহূরের মতের উপর, তথা ইস্তিসতার সময় দুই রাকাত সালাতের শরয়ী হুকুম হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য ৬টি গ্রন্থের অন্যতম ‘আল মাবসূত’ থেকে,

“সালাতুল ইস্তিসকার অধ্যায়। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ. বলেন, আমি (ইমামে আ’যমকে) জিজ্ঞেস করলাম : ইস্তিসকার সালাত বলতে কিছু কি আছে? তিনি উত্তরে বললেন, ইস্তিসকার মধ্যে কোনো সালাত (প্রমাণিত) নয়। বড়জোর তাতে ‘দোয়া’ রয়েছে। আমি (তারপর) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি (ইস্তিসকার) সালাতের জন্য (মানুষকে) একত্রিত হবার এবং ইমাম স্বশব্দে ক্বিরাত পড়ার মত (রায়) দেননা? তিনি প্রতিউত্তরে বলেন, না; আমি এ ব্যাপারে এ রূপ মত দিইনা। তার কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি (ইস্তিসকার) জন্য বের হন এবং দোয়া করেন। (আরও কারণ এ যে) হযরত উমর রা. (একদা ইস্তিসকার জন্য) মিম্বারে আরোহন করেন এবং দোয়া করেন এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। অধিকন্তু আমাদের নিকট ‘ইস্তিসকার সালাত’ সংক্রান্ত একটি ‘শায’[1] হাদীস ব্যতীত এমন কোনো হাদীস পৌঁছেনি যেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। (ইমাম মুহাম্মদ আরও লিখেন) তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, (ইস্তিসকার সময়) ইমাম বা গোত্রের যে কেউই নিজ (শরীরের) চাদর উল্টিয়ে (আকাশের দিকে মেলে ধরে) ‘দোয়া’ করা কি মুস্তাহাব হবে? তিনি উত্তরে বললেন, (সহীহ হাদীস পাওয়া না যাওয়ায়) এ ধরণের কাজ মুস্তাহাব হবেনা। (ইমাম মুহাম্মদ বলেন, উপরের দীর্ঘ) মতটি ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর।

ইমাম শাফেয়ীর বিশিষ্ট উস্তাদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান বলেন, আমার মতে ইমাম ইস্তিসকার সালাত পড়বে, এবং ঈদের সালাতের মতই পড়বে। খোতবার পূর্বেই সালাত আরম্ভ করবে। তবে তাতে ঈদের সালাতের মত কোনো তাকবীর বলবেনা। কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে ইস্তিসকা সংক্রান্ত সংবাদ এসে পৌঁছেছে, এমন সংবাদও এসে পৌঁছেছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. ইস্তিসকার সালাত পড়তে নির্দেশও দিয়েছেন।”

– আল মাবসূত খ-১ পৃ-২৩৬, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ.

শেষকথা, উক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে মুফতাবিহি কওল বা চূড়ান্ত ফাতাওয়া হিসেবে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমামদ্বয় ‘সাহেবাঈন’ এর মতটি-ই ধর্তব্য। আরও সহজ করে বললে, ফিকহে হানাফীর চূড়ান্ত মত হিসেবে এখানে ইমাম মুহাম্মদ এবং ইমাম আবূ ইউসুফ (عليهما الرحمة) এর মতের উপরই ফাতাওয়া। সুতরাং আর কোনো বিতর্ক রইল না। আল্লাহু আ’লাম।

টিকা : [1] শায :  হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহ. শায হাদীসের সংজ্ঞায় বলেন ((مخالفة المقبول لمن هو أولى منه)) অর্থ-মাকবুল রাবীর তার চেয়ে উত্তম রাবীর বিরোধিতা করা শায”। (আন নুযহা-النزهة পৃ-৯৮)। এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহীহ ও হাসান হাদীসের রাবী। আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সিকাহ রাবী। অর্থাৎ মাকবুল রাবী একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সিকাহ রাবীর বিরোধিতা করলে তার হাদীসকে শাস্ত্রীয় ভাষায় শায বলে। আর শায হাদীস দলীলযোগ্য নয়। ইমামে আ’যম রহ. এর বিচার বিশ্লেষণে ইস্তিসকার মধ্যে ‘সালাত’ সংক্রান্ত কোনো হাদীস বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে পৌঁছেনি, আর যে-ও একটা হাদীস পৌঁছেছিল সেটি তাঁর বিবেচনায় ‘শায’ পর্যায়ের ছিল। তাই তিনি ঐ বর্ণনার উপর নির্ভর করেননি।

লিখক ও অনুবাদক – মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

নতুন নতুন “নবী” এর কনসেপ্ট কাদিয়ানীদের বই-পুস্তকে

0

নতুন নতুন “নবী” এর কনসেপ্ট কাদিয়ানীদের বই-পুস্তকে,

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ লিখেছেন, “যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরে রাখা হয় আর আমাকে বলতে বলা হয় যে, তুমি বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোনো নবী আসতে পারেনা! তাহলে আমি অবশ্যই বলব যে, তুমি মিথ্যাবাদী ও মহা মিথ্যুক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবী আসতে পারে, অবশ্যই আসতে পারে।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৭, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা বশির একই গ্রন্থের আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখেছেন, “তারা মনে করছে যে, আল্লাহতালার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে, তাই তিনি (এখন) কাউকে কিছুই দেন না। তেমনিভাবে এও বলে যে, কোনো কেউ দুনিয়াবিরাগী এবং খোদাভীরুতায় ও তাকওয়া আর পরহেজগারীতে কতেক নবী অপেক্ষায় যতই অগ্রে পৌঁছে যায় না কেন, সে যত বেশিই খোদার মা’রেফত (দর্শন) লাভ করেনা কেন; কিন্তু খোদা তাকে কখনোই নবী বানাবেন না। তাদের এইরূপ মনে করার কারণ হচ্ছে খোদাতালার মর্যাদা বুঝতে না পারা। অন্যথা নবী শুধুই একজন কেন! আমি তো বলি, হাজার হাজার নবী হবেন।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৪, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

শেষকথা : খতমে নবুওয়তের আকীদায় বিশ্বাসী মুসলিম উম্মাহকে কাদিয়ানীদের আসল ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে জানিয়ে দেয়াই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য, সে জায়গা থেকেই বলছি, এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে, সাধারণ কাদিয়ানীদের মাঝে দাওয়াতি কাজ বৃদ্ধি করা এবং ইসলামের পথে ফিরে আনতে চেষ্টা করা। কেননা বেশিরভাগ কাদিয়ানীই উর্দূ না পারার দরুন বা এ সমস্ত তথ্য সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে থাকার কারণে তারা মনে করে যে, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো সত্য নয়। ফলে তাদের পক্ষে ইসলামে ফিরে আসাও এক প্রকারের কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ সবাইকে হিদায়াতের দৌলত দান করুন।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি বা মূল গ্রন্থের পৃষ্ঠাগুলো নিম্নরূপ

ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর উপর সমস্ত সাহাবীর ইজমা হবার কাদিয়ানী দাবীর ভিত্তি কী?

0

ঈসা (আ.) সম্পর্কে ইসলামের প্রথম দুই খলীফার দৃষ্টিভঙ্গি ও সংশয় নিরসন,

সাধারণ কাদিয়ানীবন্ধুদের সম্পর্কে যখনি আলাপে যাই তখনি দুইচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আহা! এরা কতই না প্রতারণার শিকার! হায়, যদি ওরা বুঝতো!! সাধারণ কাদিয়ানীবন্ধুদের দুর্বলতা হচ্ছে, পড়াশোনা ছেড়ে তাদের মু’আল্লিম কিবা মুরুব্বী সিলসিলার কাল্টদের যাইচ্ছেতাই অপব্যাখ্যাগুলো তোতাপাখির মত গিলতে থাকা, তাহকিক না করা। ফলে তারা তাদের সূক্ষ্ম জালিয়াতিগুলোও বুঝতে পারে না। যেমন, প্রত্যেক কাদিয়ানীই হযরত উমর (রা.) সম্পর্কে বয়ান দিয়ে থাকে যে, তিনি বলেছিলেন, ‘যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাকে আমার এই তলোবারি দ্বারা হত্যা করব।’ কিন্তু হযরত উমরের একই বক্তব্যের পরের অংশটুকু কোনো কাদিয়ানী বলেনা। কেননা, তারা তাদের মুরুব্বী সিলসিলার কাল্টদের কাছ থেকেও এটুকুই শুনে আসছে। অথচ হযরত উমরের ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর (রা.) যে আয়াতটি তেলাওয়াত করেছিলেন তা হতে কাদিয়ানীরা ঈসা (আ.) বিষয়ে যে কনসেপ্ট দাঁড় করে সেটি হযরত উমরের একই বক্তব্যের পরের অংশটি দ্বারা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যায়। মূলত তারা তাদের অপব্যাখ্যামূলক উক্ত জালিয়াতি টিকানোর উদ্দেশ্যেই উমর (রা.)-এর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি পেশ করার সাহস রাখেনা।

এবার হযরত উমর (রা.)-এর একই বক্তব্যের পরের অংশটি দেখুন, তিনি আরও বলেছিলেন,

و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى ابن مريم عليه السلام

এর মানে হল, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে যেমনিভাবে ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” (আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/২৪; ইমাম শাহরাস্তানী)।

মির্যা কাদিয়ানী হযরত উমরের বক্তব্যের শেষের অংশটি নিজেও তার বইতে লিখে গেছেন। এজন্য মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ এর খণ্ড নং ১৫ এবং পৃষ্ঠা নং ৫৮১ দেখা যেতে পারে। আফসোস! এত নিকৃষ্ট জালিয়াতি করার চরিত্র যাদের তাদের অনুসারীরা তোতাপাখির মত নির্বিঘ্নে সব বিশ্বাস করে থাকে, তাহকিক করার প্রয়োজনও বোধ করছেনা।

বলাবাহুল্য, হযরত উমর (রা.)-এর উক্ত সম্পূর্ণ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত আবুবকর (রা.) সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতটি উপস্থিত সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন,

من كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات و من كان يعبد اله محمد فانه حى لا يموت و قرأ هذه الاية و ما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ

এর অর্থ হল, “যে মুহাম্মদ (সা.)-এর ইবাদত করে থাকে (সে যেন জেনে নেয়) মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভুর ইবাদত করে থাকে (তার জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। (তারপর) আবুবকর এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, ((وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ)) অর্থ-মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র তাহার পূর্বে রাসূলগণই গত হইয়া গিয়াছেন”।

মজার ব্যাপার হল, হযরত আবুবকর (রা.)-এর উক্ত আয়াত পেশ করার ভেতরে প্রচ্ছন্ন একটি উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হচ্ছে, মুহাম্মদ (সা.) কোনো প্রভূ বা খোদা ছিলেন না যে, তাঁর মৃত্যু হতে পারেনা। তিনি শুধুই একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বেও গত হয়ে যাওয়া প্রত্যেকেই ছিলেন রাসূল। তিনিও সেসব রাসূলের মতই গত হয়ে গিয়েছেন। কাজেই তাঁর মৃত্যুতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। হযরত আবুবকর (রা.) মূলত এ ম্যাসেজটাই দিতে চেয়েছিলেন। এখন হযরত আবুবকর (রা.)-এর উক্ত আয়াতে কারীমাহ’র তেলাওয়াত হতে ঈসা (আ.)-কেও ‘মৃত’ সাব্যস্ত করতে হলে নিচের প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর থাকেনা।

১. হযরত উমর (রা.)-এর যে বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর (রা.) و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটির দীর্ঘ আলোকপাত করলেন তিনি উমরের বক্তব্যের শেষের অংশের উপর কিজন্য দ্বিমত করলেন না? তিনি তো পরিষ্কার বলে দিতে পারতেন যে, হে উমর! ঈসা নবীও মরে গেছেন! তাই তোমার এ কথাও ঠিক না। কিন্তু আবুবকর (রা.) তো এভাবে তখন বলেননি!

বলে রাখা দরকার, উল্লিখিত প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে না পেরে হয়ত ওরা বলতে পারে, “ঈসা নবীকেও সমস্ত নবীর মতই আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।” কিন্তু ওরা জানে না যে, ঈসা নবীর মত অন্য সমস্ত নবীর ‘রাফা’ (উঠিয়ে নেওয়া) হযরত জিবরাইল ফেতেশতার মাধ্যমে হয়নি, বরং আজরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে হয়েছিল। সুতরাং সব ধরণের ‘রাফা’ মুক্ত অর্থে উদ্দেশ্য হবেনা। সাধারণ কাদিয়ানীদের গোলকধাঁধাটা-ই এখানে। যথা- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন

لَمَّا اِجْتَمَعَ الْيَهُوْدُ عَلَى عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ لِيَقْتُلُوْهُ وَ أَتَاهُ جِبْرَائِيْلُ … فاَوْحَى اللهُ اِلَى جِبْرَائِيْلَ اَنِ ارْفَعْ اِلَيَّ عَبْدِيْ

“যখন ইহুদীরা ঈসা (আ.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে সমবেত হলো তখন জিবরাইল (আ.) তাঁর নিকট আগমন করেন…আল্লাহতালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা (ঈসা)-কে আমার নিকট উঠিয়ে নিয়ে এসো।” (তারীখে দামেস্ক ৪৭/৪৭২; তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯, সনদ সহীহ – তাহকীক শায়খ আলবানী রহ.)।

তারপর বাকি থাকল, كما رفع (কামা রুফি’আ) অর্থ ‘যেমনিভাবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে’- এখানে হযরত উমর “কামা” শব্দে রাসূল (সা.)-কে ঈসার সাথে ‘মৃত্যুবরণ না করা’-এর দিক থেকে তাশবীহ (তুলনা) করেছেন, এটুকু পরিষ্কার। আর ঈসা (আ.)-এর মতই রাসূল (সা.)-কেও ‘আকাশে’ উঠিয়ে নেয়ার তাশবীহ’র কারণ, হযরত উমর (রা.) যখন রাসূলের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পান তখন তিনি নিকটে ছিলেন না। অন্যথা তিনি রাসূল (সা.)-এর মৃত্যু শোকে যতই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হন না কেন, তিনি রাসূল (সা.) সম্পর্কেও ‘আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে’ বলে উক্তি করতেন না। কারণ ঐ মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর শরীর মোবারক আয়েশা (রা.)-এর হুজরাতে-ই বিদ্যমান ছিল! সংক্ষেপে।

২. যদি و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন’ বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে তিনি আয়াতটিতে قد خلت ধরণের ‘মুশতারিক’ (ব্যপকার্থবোধক) শব্দ রাখতেন না। তিনি মওত বা قد ماتت ধরণের খাস তথা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ-ই রাখতেন। এখন তাঁর এ ‘মুশতারিক’ শব্দ নেয়ার হিকমত কী? জেনে রাখা জরুরি যে, উক্ত আয়াতটির ‘গত হইয়া গিয়াছে’ বলতে রূপক অর্থে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে এবং সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে (উভয় পদ্ধতিতে) ইহজগত থেকে স্থানান্তরিত হওয়া-ই বুঝানো উদ্দেশ্য। এটাই আল্লাহ’র উক্ত ‘মুশতারিক’ শব্দ গ্রহণের হিকমত বা রহস্য।

৩. রাসূল (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ দ্বিতীয় কেউই ভালো বুঝার দাবী করতে পারেনা। তিনিই কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁরপর কুরআনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। ফলে সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, যদি و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন’ বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে রাসূল এবং তাঁর সকল সাহাবী কিভাবে হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমনে বিশ্বাস রাখতে পারেন?

৪. এখন হয়ত কোনো কাদিয়ানী কাল্ট বলতে পারে যে, আয়াতটির পুরাতন কোনো অর্থ বা ব্যাখ্যা সে মানবেনা। সে মির্যা কাদিয়ানী আর তার খলীফাদের কৃত অর্থই মানবে। তার জন্য তাদের প্রথম খলীফা হেকিম নূরুউদ্দীনের কৃত অনুবাদটি এখানে তুলে ধরা হল। হেকিম নূরউদ্দীনের বইতে আয়াতটির অর্থ উর্দূতে উল্লেখ আছে এভাবে যে,

اور محمد تو ایک رسول ہے پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے پھر کیا اگر وہ مر جائے یا قتل کیا جاوے تو پھر جاؤ گے الٹے پاؤں پر (فصل الخطاب لمقدمة اہل الکتاب)

অর্থ-মুহাম্মদ তো একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে ‘বহু রাসূল’ হইয়েছিল। যদি তিনি মারা যান অথবা হত্যা হইয়া যান, তাহলে কি তোমরা পেছনে (বাপ-দাদার ধর্মে) ফিরিয়া যাইবে? (ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা ২৮; রচনাকাল ১৮৮৭-৮৮ইং দ্রষ্টব্য)।

প্রিয় কাদিয়ানীবন্ধু! হেকিম নূরউদ্দীন থেকে و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতটির অর্থ উর্দূ ভাষায় پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے বঙ্গানুবাদ “তাহার পূর্বে বহু রাসূল হইয়াছিল”।

বাংলায় উচ্চারণ : পহেলে উস চে বহুত রাসূল হো চুকে। যাইহোক, এখন পারলে এ অর্থের আলোকে ‘ঈসা (আ.)-কে মৃত’ সাব্যস্ত করে দেখান!

৫. তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার তাওয়াতূর স্তরীয় আকীদা কেমন তা পেশ করা হল, ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) সূরা যুখরুফ-এর ৬১ নং আয়াতের বিশ্লেষণে মুসলমানদের ধারাবাহিক (ইজমায়ী) আকীদা সম্পর্কে লিখেছেন

وقد تواترت الأحاديث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، أنه أخبر بنزول عيسى عليه السلام قبل يوم القيامة إماما عادلا، وحَكَما مقسطا

অর্থাৎ রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত তাওয়াতূর স্তরীয় হাদীসসমূহ সংবাদ দিচ্ছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম কিয়ামতের আগে একজন ন্যায়পরায়ণ ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসকরূপে অবতরণ করবেন। ইবনে কাসীর, ১২/৩২৩, সূরা যুখরুফ ৬১ দ্রষ্টব্য। এখন প্রশ্ন হল, উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ধারাবাহিক আকীদা পরিপন্থী و ما محمد الا رسول…الخ আয়াতের সেই অর্থ কিভাবে সঠিক হতে পারে যেটি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ধারাবাহিক আকীদার বিরুদ্ধে!?

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
অ্যাডমিন- রদ্দে কাদিয়ানী (গুগল অ্যাপ)

তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

প্রশ্ন : তারাবীহ চার মাযহাবের ইমামগণের মতে কত রাকাত পালনীয়?

উত্তর : হাম্বলী মাযহাবের অন্যতম স্কলার ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রহ.) বলেন,

وقال الإمام ابن قدامة المقدسي الحنبلي في المغني: فصل: والمختار عند أبي عبد الله أحمد بن حنبل – رحمه الله، فيها عشرون ركعة. وبهذا قال الثوري، وأبو حنيفة، والشافعي. وقال مالك: ستة وثلاثون. وزعم أنه الأمر القديم، وتعلق بفعل أهل المدينة، فإن صالحا مولى التوأمة، قال: أدركت الناس يقومون بإحدى وأربعين ركعة، يوترون منها بخمس

অর্থাৎ ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রহ.) তার ‘আলমুগনী’ কিতাবে লিখেছেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর চূড়ান্ত মতানুযায়ী তারাবীহ-তে বিশ রাকাত। আর এ মতটি ইমাম সুফিয়ান আস-সওরী, ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুমুল্লাহ) সকলের-ও। ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ছত্রিশ (৩৬) রাকাত। ধারণা করা হয় যে, এটি উনার পুরনো মত এবং মদীনাবাসীর প্রচলিত আমল। আত-তাওয়ামাহ এর ভৃত্য ছালেহ বলেছেন, আমি (মদীনাবাসীর) সাধারণদের একচল্লিশ (৪১) রাকাত পড়তে দেখেছি। তারা বিতির পড়তেন পাঁচ (৫) রাকাত।

(আল মুগনী ১:৪৫৭, ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ আল হাম্বলী রহঃ)।

সোর্স– ملتقى اهل التفسير অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি-

ইমাম মালেক (রহ.) ব্যতীত অবশিষ্ট সকল ইমাম এবং পূর্ববর্তী বড় বড় সালাফদের কেউই তারাবীহ বিশ রাকাতের কম পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এবার শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)-এর গুরুত্বপূর্ণ ফাতাওয়াটি উল্লেখ করছি। তিনি তারাবীহ’র রাকাত সংক্রান্ত নানা মতানৈক্যপূর্ণ রেওয়ায়েতকে সামনে রেখে লিখেছেন,

أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ

অর্থাৎ “তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা যদিও নির্দিষ্ট ছিলনা, পরবর্তীতে হযরত উমর (রা.)-ই ‘বিশ রাকাত’ তারাবীহ’র নিয়মটি চালু করেছিলেন। কাজেই সুন্নাহ এটাই।”

রেফারেন্স: মাজমূ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ ২৩:১১২।

তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.)-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনের বিপরীতে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ (রহ.)-এর একক চেইনে নিচের ১১ রাকা’আতের “মতন”-এর ক্ষেত্রে কী কী ইজতিরাব (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি হয়েছে তার সামান্য নিম্নরূপ,

৬টি চেইন :

১. ইমাম মালেক বিন আনাস হতে, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ)। (মুয়াত্তা মালিক, ১/১১৫)।

২. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আল আনসারী হতে, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (يَقْرَآنِ بِالْمِئِينَ)। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ, হা/৭৬৭১)।

৩. ইসমাঈল ইবনে জা’ফর হতে, প্রতি রাকা’আতে ২০০ আয়াত পড়া (يَقْرَءُونَ فِي الرَّكْعَةِ بِالْمِائَتَيْنِ)। (আহাদীসু ইসমাঈল ইবনে জা’ফর, হা/৪৪০)

৪. ইসমাঈল ইবনে উমাইয়্যাহ হতে, প্রতি রাকা’আতে ১০০ আয়াত পড়া (فكانا يقومان بمائة في ركعة)। (ফাওয়াইদু আবী বাকার লিন-নিশাপুরী, হা/১৬)।

৫. উসামা বিন যায়েদ হতে, প্রতি রাকা’আতে কত আয়াত পড়েছিল তার পরিমাণ উল্লেখ নেই। (ফাওয়াইদু আবী বাকার লিন-নিশাপুরী, হা/১৩৫)।

৬. আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ হতে, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (نَقْرَأُ فِيهَا بِالْمِئِينَ)। (আল হাভি লিল ফাতাওয়া ১/৪১৬, সুয়ূতি)।

এবার শাস্ত্রীয় নীতিমালার ভিত্তিতে মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফের সব গুলো চেইন-এর উপর কী হুকুম আসতেছে লক্ষ্য করুন,

হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.)-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনেরই ৩টি চেইনে ২০ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, অপরদিকে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসূফের ৮টি চেইনের মধ্য হতে ১টিতে (বিতির সহ) ২১ রাকা’আত, আরেকটিতে (বিতির সহ) ১৩ রাকা’আত আর অন্য ৬টিতে ১১ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, সে সাথে ১১ রাকা’আতের ভিন্ন ভিন্ন ৪টির মতনেই ‘প্রতি রাকা’আতে কত আয়াত করে পড়া হত’ সে হিসেবেও ইজতিরাব বা গণ্ডগোল রয়েছে, তাছাড়া ৮টি চেইনের মধ্যে ৩টি চেইনেই রাকা’আত সংখ্যায় রয়েছে যথাক্রমে ২১, ১৩, ১১ পরস্পর বিরোধী কথা। যার জন্য চারো মাযহাবের সকল ইমামই ‘মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ’ এর সনদে বা সূত্রের সবগুলো চেইনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মুহাদ্দিসগণের নীতিমালায় এধরণের হাদীসের সনদে রাবীগণ ‘সিকাহ’ (বিশ্বস্ত) হলেও কিন্তু মতনের ক্ষেত্রে ‘ইজতিরাব’ থাকায় এর হুকুম শাজ ও প্রত্যাখ্যাত। উল্লেখ্য, হাদীস সহীহ হতে হলে মতন ‘শাজ’ মুক্ত থাকা আবশ্যক। আর এ ধরনের বর্ণনার মতনের উপর ফকীহগণ নির্ভর করেন না।

সায়েব বিন ইয়াজিদ-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনেরই ৩টি চেইনে ২০ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, অপরদিকে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসূফের ৮টি চেইনের মধ্য হতে ১টিতে (বিতির সহ) ২১ রাকা’আত, আরেকটিতে (বিতির সহ) ১৩ রাকা’আত আর অন্য ৬টিতে ১১ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, উক্ত ৬টি চেইনের সবগুলোর মূল-ই হচ্ছে মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ, ইমাম ইবনে আব্দিল বার আল-মালেকী (রহ.) বলেছেন, উক্ত রাবী থেকে ‘এগার’ (احدى عشرة) শব্দটি সঠিক নয়, বরং অপরাপর অসংখ্য শাওয়াহেদ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ‘একুশ’ শব্দটাই সহীহ (আল ইসতিযকার ৫:১৫৪-৪৬)। যাইহোক, দ্বিতীয় কোনো শাহেদ (প্রমাণ) মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফের ১১ রাকা’আতকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনা। আল্লাহু আ’লাম। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে উল্লেখ করা হল।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

কাদিয়ানী জামাতের সাম্প্রতিক চেপে রাখা নীল ইতিহাস

0

1 ব্রিটিশ অভিবাসী লর্ড নাজির নামক কাদিয়ানী মুরুব্বীর বলাৎকারের নিউজ Zaitoon FM ((Click))

2 ব্রিটিশ অভিবাসী ও পার্লামেন্ট মেম্বার ইমরান আহমদ খান কাদিয়ানীর বলাৎকারের নিউজ Zaitoon FM ((Click))

3 মিস্টার সাইয়েদ নাসের আহমেদ ওরফে সেণ্ডি শাহ (চেয়ারম্যান- mta চ্যানেল ও কাদিয়ানী কেন্দ্রীয় মুরুব্বী) এর বলাৎকারের রিপোর্ট Zaitoon FM ((Click))

4 কাদিয়ানী মুরুব্বী ও মিশনারী সদস্য জনাব মুবিন আহমদ কর্তৃক একাধিক বলাৎকার মামলার ডকুমেন্টারি রিপোর্ট। একই সাথে তার উক্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতকে মোটা অংকের ঘুষ প্রদান করতে চেয়ে মান-ইজ্জত শেষ করেন মির্যা মাসরূর আহমদ। (প্রামাণ্য নথিপত্র সহ Click)

5 কাদিয়ানী মুরুব্বী কর্তৃক আরেক নাবালিকার সাথে বলাৎকারের মর্মান্তিক রিপোর্ট ((Click))

6 কাদিয়ানীদের সো-কল্ড তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের-এর পুত্র মির্যা লোকমানের মেয়ে ‘নিদা আন নাসের’ নিজ পিতার হাতে ধর্ষণের শিকার। শুধু তাই না, আরও নিকৃষ্ট ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ভিকটিম নিজেই। এ মামলায় কাদিয়ানী খলিফা মির্যা মাসরূর আহমদ-ও জড়িয়ে গেছেন। ব্রিটিশ প্রভাবশালী ‘ডেইলি মেইল‘ (dailymail) পত্রিকায় ছবি সহ কাদিয়ানী খলিফা মির্যা মাসরূর আহমদ কিভাবে শিরোনাম হলেন দেখুন! ((Click))

নিদা আন নাসের এর টুইট ভিডিও ১ ((Click))

টুইট ভিডিও ২ ((Click))

টুইট ভিডিও ৩ ((Click))

এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। আমরা চাচ্ছিনা, এধরণের নোংরামি চর্চা হোক। কাদিয়ানীরা মুসলমানদের চারিত্রিক দুর্বলতাগুলো নিয়ে খুব বাজে ভাবে হইহট্টগোল করে থাকে। আমরা দাবী করিনা যে, কেউই শতভাগ দোষ-ত্রুটিমুক্ত! মানুষ হিসেবে সব পক্ষেরই দুর্বলতা আছে, থাকবেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নবুওয়তের দাবীদার মির্যা কাদিয়ানীর ‘ব্যক্তিসত্তা’-কে এড়িয়ে অমুক-তমুকের সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে জল ঘোলা করার কী মানে? কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, ধূর্ত কাদিয়ানীরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হরহামেশা সে কাজটা-ই করে থাকে। তাই এখানে উদাহরণ স্বরূপ তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কিছু নীল চরিত্র তুলে ধরা হল।  

7 আহমদী-কাদিয়ানীবন্ধুরা! আপনাদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনারা তো খুব গর্ব করে বলেন যে, আপনাদের বাহিরে কেউই সত্যের উপর নেই, আপনারাই একমাত্র সত্য এবং মুক্তিপ্রাপ্ত জামাত। আপনারা দুনিয়ার অন্য সবার থেকে ব্যতিক্রম। আপনারা একই খলীফার অধীনে, মোবারক ও পবিত্র জামাতের সদস্য আপনারা। বিপরীতে দুনিয়ার সমস্ত অ-কাদিয়ানী মুসলমান পথভ্রষ্ট, জাহান্নামী। তাদের আলেমগণও নাকি  নিকৃষ্ট জীব (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে এখন উপরে অভিযুক্ত কাদিয়ানী শীর্ষ মুরুব্বীদের নিকৃষ্টতর চরিত্রহীন ঘটনার কী উত্তর দেবেন। এর বেশিরভাগই কিন্তু BBC নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত। 

অপ্রিয় হলেও সত্য, আপনারা নিজেদের খুব সাধু এবং পবিত্র প্রমাণ করতে আলেম উলামার দোষচর্চায়ও লিপ্ত থাকেন। কোনো আলেমের বিচ্ছিন্ন কোনো দোষ-ত্রুটি পাওয়া মাত্রই যারপরনাই হইহট্টগোল শুরু করে দেন। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, কাঁচের ঘরে বসবাস যার, তার জন্য অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়া বড্ড বিপদ!

এখন হয়ত বলবেন, ঐসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা স্বাভাবিক আর কি! অতসব হিসেবে নিলে কি চলবে? 

প্রতিউত্তরে আমার জিজ্ঞাসা, তাহলে আপনাদের অতসব গর্ব কিসের? কেন অবাস্তব যতসব আত্ম-অহংকারে ফেটে পড়ছেন! ইলাহী জামাত, ইলাহী জামাত!! কেন নিজেদের অত সাধু সাজছেন? কেন মুসলমানদের দোষচর্চায় সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকেন? আপনারা মির্যা গোলাম আহমদ আর তার কথিত ‘মুসলেহ মওউদ’ মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের রঙিন জীবন-চরিত্র কতকাল চেপে রাখবেন? ১৯৫৬ সালে আব্দুল গাফফার জম্বাহ এর নেতৃত্বে কাদিয়ানীদের নতুন ৩ নম্বর উপদল “Jamaat Ahmadiyya Islah Pasand (Hadhrat Abdul Ghaffar Janbah)” কিজন্য সৃষ্টি হল, সে ইতিহাস কি ভুলে গেলেন? মির্যা বশির উদ্দীন ইতালী নৃত্যশিল্পী মিস রূপাকে কাদিয়ানে ভাড়ায় এনে কী ঘটনা ঘটিয়েছেন তা কি দুনিয়া ভুলে গেছে? ১৯২৭ সালে মির্যা বশির উদ্দিন তারই পি.এস মিয়া জাহিদের বোন “মুসাম্মাৎ ছকিনা” নামের একজন বিবাহিতা নারীর-ও ইজ্জত লুটে নেন। তখন তার এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুরো কাদিয়ানজুড়ে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠেছিল। কী! এ ঘটনাও অস্বীকার করবেন?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মনে মনে নিজেকে ‘স্ত্রীলোক’ কল্পনা করতেন (তার মানে সে নিজেও একজন সমকামী ছিল-লিখক), যাকে আধুনিক কনসেপ্ট অনুসারে ‘ট্রান্স জেন্ডার’ বলা হয়; তারই ঘনিষ্ট শিষ্য আব্দুর রহমান মিশরীর সাক্ষ্যমতে একজন ব্যভিচারী (জেনাকার) সাব্যস্ত। এর একটিও কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না। মির্যা বশির উদ্দীন নিজ কন্যা আমাতুর রশীদকে ধর্ষণ করার ঘটনাও অস্বীকার করতে পারবেন না। হেকিম নূরউদ্দীনের পুত্র মিয়া আব্দুল ওহাবকে ‘জেহলম’ নদীর তীরে বলাৎকার করার নিকৃষ্ট সেই কার্যকলাপও অস্বীকার করতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবের কন্যা আমাতুল হাইকে বিবাহ করেছিলেন। ঐ সংসারে একজন পুত্র সন্তান জন্ম হয়। সম্ভবত তার নাম ছিল মির্যা খলিল আহমদ। আর দুইটি কন্যা সন্তান হয়। আমাতুর রশীদ আর আমাতুল কাইয়ুম। আমাতুর রশীদ ছিলেন বোনদের মধ্যে বড়। অত্যন্ত নির্লজ্জের ব্যাপার যে, মির্যা বশির উদ্দিন আপন কন্যা আমাতুর রশীদকে ধর্ষণ করেন। আমাতুর রশীদ তখনও পূর্ণ সাবালিকা হননি। নিজ স্ত্রী আমাতুল হাই এবং মির্যা বশির উদ্দিনের গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন বি.কম তারা হাতে নাতে ধর্ষণ অবস্থায় পাকড়াও করেছিলেন। উক্ত ঘটনার পর গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন চলে যান এবং তিনি ‘আহমদীয়ত’ ছেড়ে দেন। কয়েকদিন পরেই মির্যা বশিরের স্ত্রী আমাতুল হাই এর রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ বেরিয়ে আসে। তাকে যারা দেখেছেন সবাই তার চেহারা নীল বর্ণের দেখেছিলেন। তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নিজের উক্ত কুকর্ম ঢাকার জন্যই স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন। বলতে পারেন আমি এগুলো বানিয়ে বলছি। তাহলে নিচের রেফারেন্স গুলো পারলে অস্বীকার করুন![1 markajomar] 

রেফারেন্স : ১. শহরে ছদূম পৃ-৯৮, মির্যা শফিক।

২. দৈনিক আল-ফজল তাং ১৮/০৩/১৯৩৪ ইং।

৩. ইসলামী কুরবানী, ট্রাক্ট নং ৩৪, পৃষ্ঠা ১২, কাজী ইয়ার মুহাম্মদ খান। 

৪. দৈনিক আল ফজল, তাং ৩১-আগস্ট ১৯৩৮ ইং।

[1] Click

সে যাইহোক, আপনারা কাদিয়ানী হয়েছেন তাতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আপনারা আত্মপরিচয় গোপন রেখে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিতে পারবেন না। নবী দাবীদার মুলহিদ মির্যা গোলাম আহমদের অনুসারী হয়ে নিজেদের ‘মুসলমান’ পরিচয় দিতে পারবেন না। যেহেতু আত্ম-পরিচয় গোপন করে মানুষকে ইসলামের নামে ‘কাদিয়ানীধর্মে’ কনভার্ট করা এবং খতমে নবুওয়তের আকীদাকে অস্বীকার করে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দেয়া, এগুলো সুস্পষ্ট ধোকা এবং রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ। আল্লাহ আমাদেরকে সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

তাফসীরুল কুরআন থেকে ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমন সংক্রান্ত সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ

0

মুফাসসীরগণ সম্পর্কে মির্যা গোলাম আহমদ লিখেন, আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনকে এমন সব ইমাম আর আকাবীরগণের মাধ্যমেও (সংরক্ষণ করেন) যাদেরকে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে কুরআনের সঠিক বুঝ দান করা হয়েছে, তারা কুরআন শরীফের অস্পষ্ট জায়গাগুলো নবীজির হাদীসসমূহ দ্বারা তাফসীর করে খোদার পবিত্র বাণীকে এবং পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগে অর্থগত বিকৃতি হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।” (আইয়ামুছ ছুলহি, রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)। কাজেই এখন আর কোনো কাদিয়ানী মতাবলম্বীর পক্ষে কুরআনের সঠিক তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য ‘তাফসীর’ গ্রন্থসমূহের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করার সুযোগ থাকেনি।

তাফসীরুল কুরআন থেকে দলিল-প্রমাণ,

1 তাফসীরুল ওয়াসীত-শায়খ মুহাম্মদ সাইয়েদ আত-তানত্বাভী (الوسيط لطنطاوي), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وجمهور العلماء على أن الله تعالى رفع عيسى إليه بجسده وروحه لا بروحه فقط)) অর্থাৎ সর্বসম্মত ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের মতে, নিশ্চয়ই আল্লাহতালা ঈসা (আ.)-কে শুধুই রূহ সহকারে নহে, বরং শরীর এবং রূহ উভয় সহকারে তাঁর নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন।

2 তাফসীরে ইবনে কাসীর-ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (ابن كثير), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قال ابن أبي حاتم : حدثنا أحمد بن سنان، حدثنا أبو معاوية، عن الأعمش، عن المنهال بن عمرو، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس قال : لما أراد الله أن يرفع عيسى إلى السماء، خرج على أصحابه – وفي البيت اثنا عشر رجلا من الحواريين ……. فألقي عليه شبه عيسى ورفع عيسى من روزنة في البيت إلى السماء. وهذا إسناد صحيح إلى ابن عباس)) অর্থাৎ ইবনে আব্বাস থেকে, তিনি বলেন, আল্লাহ যখন ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন, তখন তিনি আপনা সাথীদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তখন তাঁর বাড়ীতে বারোজন হাওয়ারী ছিলেন……..ইত্যবসরে জনৈক ইহুদীকে ঈসার সাদৃশ করে দেয়া হয় এবং ঈসাকে বাড়ীর বাতায়ন পথে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। ইবনে আব্বাস পর্যন্ত এর সনদ তথা সূত্র সহীহ।

3 তাফসীরে কুরতুবী-ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবী (القرطبى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((بل رفعه الله إليه ابتداء كلام مستأنف؛ أي إلى السماء)) অর্থাৎ বরং আল্লাহ তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।

ইমাম কুরতুবী (রহ.) আরও উল্লেখ করেন, ((وروي عن مجاهد أنه قال : ما من أحد من أهل الكتاب إلا يؤمن بعيسى قبل موته ؛ فقيل له : إن غرق أو احترق أو أكله السبع يؤمن بعيسى؟ فقال : نعم ! وقيل : إن الهاءين جميعا لعيسى عليه السلام ؛ والمعنى ليؤمنن به من كان حيا حين نزوله يوم القيامة ؛ قال قتادة وابن زيد وغيرهما واختاره الطبري)) অর্থাৎ মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈসার মৃত্যুর আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। প্রশ্ন করা হল, যদি সে ডুবে যায় বা জ্বালিয়ে দেয়া হয় অথবা চতুষ্পদ জন্তু খেয়ে ফেলে তখনও কি বিশ্বাস স্থাপন করবে? তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ। বলা হয়েছে যে, আয়াতে উল্লিখিত উভয় সর্বনাম পদ ঈসা (আ.)-এর প্রতিই প্রত্যাবর্তনকারী। এখন এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রত্যেক ঐ আহলে কিতাবী অবশ্যই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, যিনি কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে তাঁর অবতরণকালে জীবিত থাকবে। ইমাম ক্বতাদাহ, ইবনু যায়েদ উভয়ই এরূপ বলেছেন। ইমাম তাবারী (রহ.) এ মতটি গ্রহণ করেছেন।

4 তাফসীরে তাবারী-ইমাম আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত তাবারী (الطبرى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قال أبو جعفر: أما قوله جل ثناؤه : “بل رفعه الله إليه”، فإنه يعني: بل رفع الله المسيح إليه. يقول: لم يقتلوه ولم يصلبوه، ولكن الله رفعه إليه فطهَّره من الذين كفروا)) অর্থাৎ আল্লাহতালার ফরমান : بل رفعه الله إليه এর তাৎপর্য হল, বরং আল্লাহ মসীহ-কে তাঁর নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইহুদীরা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না তাঁকে শূলে চড়িয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। (এভাবেই) তিনি তাঁকে কাফিরদের থেকে রক্ষা করেছেন।

5 তাফসীরে মুইয়াসসার-ইমাম শায়খ সা’ঈদ ইবনে আহমদ আল কিন্দী (التفسير الميسر), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وإنه لا يبقى أحدٌ من أهل الكتاب بعد نزول عيسى آخر الزمان إلا آمن به قبل موته عليه السلام)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই শেষ যামানায় হযরত ঈসার অবতরণের পর যত আহলে কিতাবী (জীবিত) থাকবে, তারা প্রত্যেকে তাঁর মৃত্যুর আগে আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।

6 তাফসীরে বাগাভী-ইমাম আবূ মুহাম্মদ হুসাইন ইবনে মাসউদ আল-বাগাভী (البغوى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قوله تعالى : ( وإن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل موته) أي : وما من أهل الكتاب إلا ليؤمنن بعيسى عليه السلام، هذا قول أكثر المفسرين وأهل العلم)) অর্থাৎ আল্লাহতালার বাণী : وإن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل موته এর তাৎপর্য হল, আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। এ বক্তব্য অধিকাংশ তাফসীরকারক এবং বিশেষজ্ঞগণের।

7 তাফসীরে সা’দী-শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আস-সা’দী (السعدى), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((أن الضمير في قوله: { قَبْلَ مَوْتِهِ } راجع إلى عيسى عليه السلام، فيكون المعنى: وما من أحد من أهل الكتاب إلا ليؤمنن بالمسيح عليه السلام قبل موت المسيح، وذلك يكون عند اقتراب الساعة وظهور علاماتها الكبار. فإنه تكاثرت الأحاديث الصحيحة في نزوله عليه السلام في آخر هذه الأمة)) অর্থাৎ আল্লাহর বাণী : قَبْلَ مَوْتِهِ এর মধ্যকার ‘হি’ সর্বনাম পদটি ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতিই ফিরেছে। ফলে এর তাৎপর্য হল, আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে মসীহ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর আগে আগেই তাঁর প্রতি অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করবে। আর এ ঘটনা ঘটবে কেয়ামতের নিকটবর্তী সময় এবং কেয়ামতের বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হতে থাকলে। এ উম্মতের শেষভাগে ঈসার অবতরকালে এটি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি বহু সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

8 তাফসীরে ইবনে কাসীর-ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (ابن كثير), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وأولى هذه الأقوال بالصحة القول الأول، وهو أنه لا يبقى أحد من أهل الكتاب بعد نزول عيسى، عليه السلام، إلا آمن به قبل موته، أي قبل موت عيسى، عليه السلام، ولا شك أن هذا الذي قاله ابن جرير، رحمه [الله] هو الصحيح)) অর্থাৎ এ বক্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সঠিক হল প্রথম উক্তি। সেটি এই যে, ঈসা (আ.)-এর অবতরণের পর আহলে কিতাবীদের মধ্য হতে যারাই অবশিষ্ট থাকবে প্রত্যেকে ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেই। আর নিঃসন্দেহে এটাই বিশুদ্ধ মত, ইবনে জারীর আত তাবারীও এমনটাই বলেছেন।

9 তাফসীরে কুরতুবী-ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবী (القرطبى), সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১৭ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((فلما توفيتني كنت أنت الرقيب عليهم قيل : هذا يدل على أن الله عز وجل توفاه قبل أن يرفعه; وليس بشيء; لأن الأخبار تظاهرت برفعه، وأنه في السماء حي، وأنه ينزل ويقتل الدجال)) অর্থাৎ আল্লাহর বাণী : فلما توفيتني كنت أنت الرقيب عليهم এর তাৎপর্য এই যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই আল্লাহতালা তাঁকে উঠিয়ে নেয়ার আগে নিদ্রা দিয়েছেন আর এটা কিছুই না। কেননা হাদীসসমূহ তাঁর উঠিয়ে নেয়ার বিষয়কে সাব্যস্ত করেছে যে, তিনি আকাশে জীবিত। তিনি নিশ্চয়ই নাযিল হবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

10 তাফসীরে বাহরুল উলূম/সামরকন্দী-ইমাম আবুল লাইস আস-সামরকন্দী (بحر العلوم أو تفسير السمرقندي), সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১৭ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((مَّا دُمْتُ فِيهِمْ} يعني ما دمت مقيماً في الدنيا بين أظهرهم {فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي} يعني رفعتني إلى السماء {كُنتُ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ} يعني الحفيظ والشاهد عليهم)) অর্থাৎ আল্লাহর বাণী : “যতক্ষণ আমি তাদের মধ্যে ছিলাম” তথা যতক্ষণ আমি তাদের মাঝে এই পৃথিবীতে অবস্থান করছিলাম, “অত:পর যখন আপনি আমাকে তাওয়াফা করলেন” তথা আপনি আমাকে আকাশে উঠিয়ে নিলেন। আপনিই তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক অর্থাৎ তাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং প্রত্যক্ষদর্শী।

শেষকথা– ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর পুনঃ আগমন সম্পর্কে ইসলামের গত চৌদ্দশত বছর ধরে মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মত বিশ্বাস সেটাই, যা সর্বকালে কুরআনের প্রধান প্রধান তাফসীরকারকগণ নিজ নিজ তাফসীরগ্রন্থে বিশুদ্ধ সনদে রেখে গেছেন। এর বিপরীতে সকল বিশ্বাস ও ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যাত ও বাতিল।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক