Home Blog Page 32

আনুগত্যরূপে মির্যার নবুওয়ত লাভের দাবী ও চারটি প্রশ্ন

আমি কেন “কাদিয়ানী জামাত” ত্যাগ করলাম?

(লিখাটি একজন সাবেক কাদিয়ানীর (যিনি এক সময় ঢাকা মিরপুর ৬ নং সেক্টরে কাদিয়ানী জামাতের প্রেসিডেন্ট পদাধিকারীও ছিলেন), নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এই নও মুসলিম এ সমস্ত প্রশ্নের কোনো জবাব না পেয়ে পরবর্তিতে কাদিয়ানী ত্যাগ করেন)।

কাদিয়ানিদের একটি পুস্তক ‘এক গলতি কা ইযালা‘। পুস্তকটিতে (বাংলা এডিশন, পৃষ্ঠা ৫, অনুবাদ মৌলভী মোহাম্মদ) মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন-

“নবুওয়তের সকল পথ রুদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু একটি পথ সীরাতে সিদ্দিকীর (সিদ্দিকীয়তের রাস্তা) খোলা আছে, যাকে ফানাফির রাসূল বলে। সুতরাং এ পথ দিয়ে যে ব্যক্তি খোদার নিকটবর্তী হয়, তাকে প্রতিচ্ছায়ারূপে মুহাম্মদী নবুওতের বসনেই ভূষিত করা হয়”। স্কিনশট দ্রষ্টব্য।

মির্যার উর্দু বইয়ের বাংলা অনূদিত ‘একটি ভুল সংশোধন‘ পৃষ্ঠা ৫
  • এবার নিচের প্রশ্নগুলো খেয়াল করুন-

(১) ‘একটি ভুল সংশোধন’ বইয়ের কথাটি দ্বারা তিনি যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, যখন নবুওয়তের সকল পথ রুদ্ধ তখন কীভাবে বুরূজী নবীও হওয়া যায়? এখন প্রশ্ন হলো তাহলে বর্তমানকালে তার অনুসারীরা কেন সূরা নিসার ৬৯ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন (নবী সিদ্দিক শহীদ সালেহ)? মির্যা সাহেব কি সূরা নিসা’র এই আয়াত তার নবুওয়ত বিষয়ক এ বইটিতে উল্লেখ করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে কেন এই আয়াত এখন তার অনুসারীরা উল্লেখ করেন? আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সূরা নিসার ৬৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় কোথাও কি বলে গেছেন আরো হাজার হাজার নবী আসবেন?

(২) দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে আমরা জানি তিনি সিদ্দিক ছিলেন। এটা তার টাইটেল। যদি প্রকৃতপক্ষে কেউ ফানাফির রাসূল হয় তাহলে তো তিনিই হওয়ার কথা। যিনি তাঁর জীবনের সব কিছু ত্যাগ করলেন তিনি কি সিদ্দিকীয়তের রাস্তা দিয়ে খোদার নিকটবর্তী হননি? হয়ে থাকলে তিনি নবুওয়তের বসনে ভূষিত হননি কেন?

(৩) মির্যা সাহেব বলেছেন উম্মতে মুহাম্মদীয়া সৌভাগ্যবান হতে পারেন না, যদি নবুওয়ত জারি না থাকে। কারণ মূসা নবীর শরীয়তের অধীনে অনেক নবী এসেছেন তাহলে আমাদের নবীর অধীনে এ নেয়ামত বঞ্চিত থাকবে কেন (সূরা ফাতেহার ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম, সিরাতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম -এর ব্যাখ্যায়)? যদি নেয়ামতের শর্ত নিয়ে আসা হয় তাহলে এখন প্রশ্ন হল, নবীজির পর দীর্ঘ আরো ১৪০০ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হলো কেন?

নেয়ামতের হিসাব করলে তো একের পর এক নবী আসা উচিত। আমরা কেন ১৪০০ বছর ধরে এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকলাম?

(৪) মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ১৮৭৯ – ‘৮০ সালের দিকে যদি নবী হয়ে থাকেন তাহলে ১৮৮১ – ‘৮২ তে আবার মুজাদ্দিদ হন কীভাবে? যাদের ভেবে দেখার প্রয়োজন তারা ভেবে দেখবেন!

লিখক, এক্স কাদিয়ানী টেক্সাস, ইউ.এস থেকে

কাদিয়ানিরা কি এ পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দেয়ার সাহস রাখে?

কাদিয়ানীদের নিকট পাঁচটি প্রশ্ন :

প্রশ্ন ১. ঈসা আলাইহিসসলামের ‘রাফা’ কোন ফেরেশতার মাধ্যমে হয়েছিল? (ক) আজরাইল? (খ) জিবরাইল?

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর ‘রাফা’ হযরত জিবরাইল (আ:)-এর মাধ্যমেই হয়েছিল। পবিত্র কুরআনের ০৩:৫৫ আয়াতের পটভূমিও আমাদের ডেকে ডেকে বলছে, ঈসা (আ:)-এর উক্ত ‘রাফা’ সেই সময় হয়েছিল যখন ইহুদী সন্ত্রাসীরা হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে ঈসার বাড়ীর আশেপাশে সমবেত হয়েছিল। এ সম্পর্কে হাদীসটি অনুবাদসহ এই, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, لما اجتمع اليهود على عيسى عليه السلام ليقتلوه و أتاه جبرائيل … فاَوْحَى اللهُ الى جبرائيلَ اَنِ ارْفَعْ اِلَيَ عَبْدِيْ অর্থাৎ যখন ইহুদীরা ঈসা (আ:)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিল তখন জিবরাইল (আ:) তাঁর নিকট আগমন করেন….. আল্লাহতায়ালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা [ঈসা]-কে আমার নিকট উঠিয়ে নিয়ে এসো। (রেফারেন্স, তারীখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৭২; তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯)।

প্রশ্ন ২. ঈসা আলাইহিসসালামের ‘রাফা‘ কখন হয়েছিল? (ক) ক্রুশীয় ষড়যন্ত্রের ৮৭ বছর পর (খ) ক্রুশীয় ষড়যন্ত্র চলা মুহূর্তে।

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর ‘রাফা’ তথা উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা ক্রুশীয় ঘটনা চলা মুহূর্তেই জেরুজালেমেই ঘটেছিল। কেননা বিশিষ্ট যুগ ইমাম আল্লামা জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ:) সংকলিত ‘দুররে মানছূর’ কিতাবে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে, ورفع وهو ابن أربع وثلاثين سنة من ميلاده অর্থাৎ ঈসাকে উঠিয়ে নেয়া হয় যখন তিনি ৩৪ বছর বয়সী যুবক।

প্রশ্ন ৩. ক্রুশীয় ষড়যন্ত্র হয়েছিল ঈসা আলাইহিসসালামের…..! (ক) পৌঢ়কালে (খ) যৌবনকালে।

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর বিরুদ্ধে ঈহুদী সন্ত্রাসী কর্তৃক হত্যার সেই ষড়যন্ত্র তাঁর যৌবনকালেই জেরুজালেমে ঘটেছিল, প্রৌঢ়কালে নয়। কেননা, প্রৌঢ়কাল বলতে ৩৪ হতে ৫১ বছরের মাঝামাঝি বয়সী ব্যক্তিকে বুঝায় (লিসানুল আরব) । কিন্তু ঈসা (আ:) সেই সময় উক্ত বয়সে পৌঁছেননি।

প্রশ্ন ৪. ঈসা আলাইহিসসালামের বিরুদ্ধে ‘হত্যা’-র ষড়যন্ত্র এবং তাঁর ‘রাফা’ উভয়ই হয়েছিল…..! (ক) হিন্দুস্তানে। (খ) ফিলিস্তিনে।

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং রাফা তথা উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা উভয়ই ঘটেছিল ফিলিস্তিনে। এটি একটি মুতাওয়াতির বিষয় যা নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই ।

প্রশ্ন ৫. আরবী মা/ما (না-বােধক) বর্ণযুক্ত বাক্যের পর খ্রিস্টানদের রদ করতে যেখানে-ই বাল’ (بل) শব্দটি ব্যবহার হয়েছে সেখানে-ই দেখা যায়…! (ক) ‘বাল’ (بل) শব্দের পূর্বের বাক্যের কর্ম আর পরের বাক্যের কর্ম একইকালে সংঘটিত হয়নি। (খ) ‘বাল’ (بل) শব্দের পূর্বের বাক্যের কর্ম আর পরের বাক্যের কর্ম একইকালে সংঘটিত হয়েছে।

নোট : জ্বী হ্যাঁ, এটি সর্বজন স্বীকৃত একটি আরবী ব্যাকরণগত নিয়ম যে, ‘বাল’ (بل) শব্দের পূর্বের বাক্যের কর্ম আর পরের বাক্যের কর্ম একইকালে সংঘটিত হয়ে থাকবে। কাজেই এই কথা বিশ্বাসকরা ঠিক হবেনা যে, ঈসা (আ:)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র ফিলিস্তিনে (বায়তুল মুকাদ্দাস) হলেও তাঁর রাফা’র (কাদিয়ানীদের মতে আয়াতটির ওই রাফা—র অর্থ ঈসার মৃত্যুর পর তাঁর রূহ উঠিয়ে নেয়া) ঘটনা একইকালে ঘটেনি বরং আরো ৮৭ বছর পর কাশ্মীরের শ্রীনগরে ঘটেছিল। (নাউযুবিল্লাহ)।

আরো পড়ুন : ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?

  • কাদিয়ানীদের কাছ থেকে এই ৫টি প্রশ্নের উত্তর দলিল-প্রমাণ সহ পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম!

মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে কুরআনের ন্যায় বলে দাবী!

মির্যা কাদিয়ানীর আরো বহু দাবী দাওয়া রয়েছে। তার দাবীগুলোর সামান্য কিছু দেখতে ক্লিক করুন।

আসলে মির্যা কাদিয়ানীর মত এমন একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগী থেকে এর চেয়ে বেশি আর কী আশা করা যায়! পবিত্র কুরআন নিয়েও বুঝি মির্যা কাদিয়ানীর তামাশা করার বাকি ছিল?

এই যে, দেখুন সে কী লিখল : –

(উর্দু উচ্চারণ) : “মাই তো বস কুরআন হি কি তরেহ হোঁ, আওর আনক্বরিব মেয়েরে হাত পর জাহের হোগা যু কুচ্ছ ফোরকান চে জাহের হুয়া”।

তাযকিরাহ (উর্দূ) চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫৭০

বাংলা অনুবাদ : (মির্যার কথিত ইলহাম) আমি তো কুরআনের মতই। আর অচিরেই ফোরকান (কুরআন) হতে যাই প্রকাশিত হয়েছে তাই আমার কাছ থেকেও প্রকাশিত হবে।

রেফারেন্স : তাযকিরাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং ৫৭০; চতুর্থ এডিশন।

কাজেই কাদিয়ানীরা যখন আমাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ করে যে, কুরআন থেকে প্রমাণ দিন ঈসা (আ:) আকাশে স্বশরীরে জীবিত আছে, তখন যদি তাদেরকে মির্যা কাদিয়ানীর বই “বারাহীনে আহমদীয়া” থেকে তাদের উক্ত চ্যালেঞ্জ এর জবাব দিই তাহলে কি আমাদের ভুল হবে? যেহেতু মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ওহী বা ইলহাম হল, সে নিজেই একটি কুরআন বা কুরআনের মত!! হয়ত জান ছুটাতে এখানেও রূপকের কাসুন্দি নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন! কাদিয়ানিরা এর কী জবাব দেবেন?

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানী নেতারা যে সব বুলির অন্তরালে সাধারণ কাদিয়ানীদের চোখের ও মনের উপর পর্দা ফেলে রাখে

সাধারণ কাদিয়ানীদের জন্য এই লিখাটি পড়া খুবই জুরুরী :

  • কাদিয়ানী নেতারা যে কয়টি কথা দিয়েই সাধারণ কাদিয়ানীদের ভুলিয়ে রাখে এবং নিজেরাও অহংকারে বাঁচেনা এখানে তারই কিছু কথা তুলে ধরে জবাব দেয়া হল। মূলত তারা এই কয়টি কথা দিয়েই তাদের চোখের ও মনের উপর পর্দা ফেলে রাখে। যেকেউ-ই উত্তরগুলো নিয়ে ভাবলে তার জন্য তাদের মিথ্যা আর ধোকা থেকে বাঁচতে সহজ হবে, ইনশা-আল্লাহ।

১. মোল্লা মৌলভীর পক্ষে সম্ভব না মির্যা কাদিয়ানীর কথার মর্ম বুঝা! মির্যা সাহেব এর আধ্যাত্মিক কথাবার্তার মর্ম বুঝতে হলে হৃদয় ও মন দুইটাই পবিত্র হতে হবে।

আমার বক্তব্য : নাউযুবিল্লাহিমিন যালিক। যারা এই ধরণের কথা বলেন তারা মির্যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) থেকেও বড় বুঝাতে চাচ্ছেন! নতুবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার মর্ম বুঝা সহজ হওয়া সত্ত্বেও মির্যা কাদিয়ানীর কথার মর্ম বুঝা কেন কঠিন হবে? সুতরাং শীঘ্র তাওবা করুন।

২. মির্যা সাহেব হাদীসের ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে প্রতিশ্রুত “মসীহ মাওউদ” হিসেবে আগমন করেছেন। তাই অন্যরা ভুল করলেও মির্যা সাহেব ভুল করতে পারেন না। কেননা রাসূল (সা:) মসীহে মাওউদ সম্পর্কে “হাকামান আদালান” অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হবেন, বলে গেছেন। সুতরাং অন্যদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উপর মির্যা সাহেবের ব্যাখ্যাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

আমার বক্তব্য : প্রথমে তো প্রমাণ করা চাই যে, মির্যা সাহেবই হাদীসে বর্ণিত সেই প্রতিশ্রুত মসীহ মাওঊদ কিনা? কারণ, বুখারী শরীফের “কিতাবুল আম্বিয়া” পর্বে ৩২৬৪ নং হাদীসে এসেছে, والذي نفسى بيده ليوشكن ان ينزل ابن مريم فيكم حكما عدلا অর্থাৎ “কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই মরিয়ম পুত্র (ঈসা) তোমাদের মাঝে একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে অবশ্যই নাযিল হবেন।” এখানে মোটা দাগে কয়েকটি পয়েন্ট লক্ষণীয়। (১) আগমনকারী ব্যক্তিটি মরিয়মপুত্র হযরত ঈসা (আ:)-ই হবেন, এইকথা কসম বা শপথ করে বলা (২) নাযিল হওয়া (৩) ইবনে মরিয়ম হওয়া এবং (৪) ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রপ্রশাসক হওয়া। যেহেতু তিনি রাষ্ট্রীয় কর মওকুফ করবেন। বলাবাহুল্য, রাষ্ট্রীয় কর (টেক্স) মওকুফ করতে পারে শুধুমাত্র যিনি রাষ্ট্র প্রধান তিনিই। তাই প্রশ্ন আসবে, এসবের একটিও কি মির্যা গোলাম আহমদের সাথে মিল পাওয়া যায়? চিন্তা করে দেখুন তো! এখানে বলে রাখা দরকার, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই কিন্তু লিখে গেছেন, কসম খেয়ে কোনো কথা বললে তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হয়না, বরং আক্ষরিক অর্থে-ই বহাল থাকে। (হামামাতুল বুশরা উর্দূ- পৃষ্ঠা ১৪; রূহানী খাযায়েন ৭/১৯২)। এমতাবস্থায় “ইবনে মরিয়ম” দ্বারা ইবনে চেরাগবিবি মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে উদ্দেশ্য হয়?

৩. সত্যের বিরোধীতা আগেও ছিল এখনো হচ্ছে আগামীতেও হবে। সুতরাং অন্য ফেরকার মুসলমান কর্তৃক কাদিয়ানীদের বিরোধীতা হওয়াই স্বাভাবিক। আর এটি তাদের সত্য হওয়ারই দলিল!

আমার বক্তব্য : অন্ততপক্ষে সহীহ বুখারীর মানদণ্ডে-ও মির্যা কাদিয়ানীর মসীহ হবার দাবী যেখানে মিথ্যা সাব্যস্ত হল সেখানে তাকে (মির্যা) “মিথ্যুক” প্রমাণ করার আর কী বাকি? পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১৫৯ নং আয়াতে ঈসা (আ:) এর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈমান আনা প্রসঙ্গে ক্ববলা মওতিহি অর্থাৎ ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুর পূর্বে… শব্দ উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ঈসা (আ:)-কে মির্যা কাদিয়ানী মৃত বলে চেঁচামেচি করার কে? বর্তমানে কি আহলে কিতাবিদের সবাই ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেছে বলতে চান? অন্যথা আমরা মহান আল্লাহকে ছেড়ে মির্যাকে কিরূপে সত্যবাদী মেনে নিতে পারি? উল্লেখ্য, অন্য আরেকটি মতে “মওতিহি” এর একবচনের সর্বনামপদ দ্বারা ‘আহলে কিতাবী’-কে বুঝানো উদ্দেশ্য। কিন্তু এটি সর্বসম্মত মতের বিরোধী ও বিচ্ছিন্ন একখানা মত মাত্র। সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া অংশে হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে ثم يقول ابو هريرة واقرأو ان شئتم শীর্ষক হাদীস দ্বারাও পরিষ্কার বুঝা যায় যে, আয়াতটির ‘মওতিহি’ শব্দ দ্বারা ‘ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুর পূর্বে’ বুঝানোই উদ্দেশ্য। সংক্ষেপে।

৪. হাদীসে এসেছে উম্মতে মুহাম্মদীয়া ৭৩ ফেরকা হবে। এদের ৭২ ফেরকা দোজখে যাবে আর ১টি মাত্র ফেরকা বেহেশতি। সুতরাং ৭২ ফেরকার লোকেরা এই ১টি ফেরকাকে অর্থাৎ “আহমদীয়ত”কে কুফুরী জামাত বলবে এটাই স্বাভাবিক।

আমার বক্তব্য : কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী নিজেই ‘জামাতে আহমদীয়া’ নামের নতুন এই দলটিকে তার বইয়ের এক জায়গায় উম্মতে মুহাম্মদীয়া’র ৭৩ ফেরকার বহির্ভূত সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি গোষ্ঠী বলেই সুস্পষ্ট ইংগিত দিয়ে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন : تمہارے ہاتھ میں کیا ہے؟ بجز ان حدیثوں کے جو تہتر فرقوں نے بوٹی بوٹی کرکے باہم تقسیم کر رکہی ہیں ۔ অর্থাৎ তোমাদের হাতে সেসব হাদীস ছাড়া আর কিবা আছে যেগুলো ৭৩ ফেরকার লোকেরা টুকরো টুকরো করে ভাগ ভাটোয়ারা করে রেখেছে! (রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ৪৫৬)। তাছাড়া “পাক্ষিক আহমদী” নামের সাময়িকীতেও মির্যার সেই কথারই প্রতিধ্বনি হিসেবে লিখা হয়েছে যে “এই যে তেয়াত্তর দল এই তেয়াত্তর দলই আহমদীয়া জামাতকে কাফির বলিয়া গণ্য করে”। (রেফারেন্স পাক্ষিক আহমদী ৩১ ডিসেম্বর,২০১৮ ঈসাব্দ পৃষ্ঠা নং ৩৮; ০৪/০৯/১৪৪০ হিজরী)। আরো মজার ব্যাপার হল, খোদ মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও লিখা আছে, উম্মতে মুহাম্মদীয়া তৃতীয় শতাব্দির পরে তেয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হইয়া গিয়েছে। (দেখুন, হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] ৩৬)। তাহলে তারও প্রায় এক হাজার বছর পরে এসে কাদিয়ানী জামাত এই উম্মতের তেয়াত্তর ফেরকার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কিভাবে? সুতরাং কাদিয়ানিরা ৭৩ দলের বাহিরে সম্পূর্ণ নতুন একটি গোষ্ঠী হওয়াই পরিষ্কার হয়ে গেল।

৫. দুনিয়ার ২১৩টি রাষ্ট্রে আহমদীয়া জামাত (কাদিয়ানীরা) বিজলির গতিতে পৌছে গেছে। এটাই প্রমাণ করে যে, এটি আল্লাহর জামাত। এটিকে ধ্বংস করা কারো সাধ্য নেই। আরেকটি কথা এই যে, মির্যা সাহেব মিথ্যা হলে তিনি দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারলেন কীভাবে?

আমার বক্তব্য : বিজলির গতিতে কোনো জামাত বা গোষ্ঠী সারা দুনিয়ায় পৌছে যাওয়াই সেটি “সত্য” হওয়ার যুক্তি সঠিক হলে তখন নিচের প্রশ্নটির কোনো-ই জবাব থাকবেনা! আপনি কি বাহাউল্লাহ সম্পর্কে জানেন? উইকিপিডিয়া (আরবী) আমাদের তথ্য দিচ্ছে, মির্যা হুসাইন আলী নূরী তথা বাহাউল্লাহ তিনি ১৮৬৩ সালে ‘মসীহ’ দাবী করার পর আরো ২৯ বছর বেঁচে ছিলেন! দ্য ব্রিটানিকা বুক অফ দ্য ইয়ার (১৯৯২-বর্তমান) বইটি ২০০২ সালে দেশের উপস্থিতির সংখ্যাকে ভিত্তি করে ধর্মের বর্ধনশীলতার একটি হার প্রকাশ করেছে। এই জরিপ অনুসারে বাহাই ধর্ম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বর্ধনশীল স্বাধীন ধর্ম। ব্রিটানিকা দাবি করেছে বিশ্বের ২২১টি দেশ ও স্থানে এই ধর্মের অস্তিত্ব আছে। সেই সাথে বিশ্বে প্রায় ২,১০০ জাতিগত, বর্ণভিত্তিক ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ধর্মের অনুসারী রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের প্রায় ৮০০টি ভাষাভাষীর মানুষের মধ্যে এই ধর্মের অস্তিত্ব বিদ্যমান এবং সবমিলিয়ে বিশ্বব্যাপী এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। ২০০৭ সালে এফপি ম্যাগাজিনের এক জরিপ অনুসারে বিশ্বে বাহাই ধর্মের অনুসারী বৃদ্ধির হার ১.৭%। Click

এবার বাহায়ী জামাতকে কী বলবেন? বাহাউল্লাহ কিংবা তার জামাতকে কি সত্য বলবেন? আর যদি বাহাউল্লাহ মিথ্যা হয় তাহলে আপনাদের দাবী আর যুক্তি অনুসারে সে অল্প কয়দিন পরেই ধ্বংস হয়ে গেল না কেন? কেন সে মসীহ দাবী করে আরও ২৯ বছর দীর্ঘ জীবন লাভ করল? আরেকটি কথা হল, অপরাধীর শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন (সূরা কাহফ/১৮:৫৮) আমাদের বলছে, আল্লাহ অপরাধীদের নিশ্চয়ই সাথে সাথে পাকড়াও করেন না বরং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন অতপর নির্ধারিত সময়ে তাদের পাকড়াও করবেন! মজার ব্যাপার হল, মির্যার ছেলে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন, মির্যা সাহেবের উপর নবুওয়তের মাসয়ালা ১৯০০ বা ১৯০১ সালের পরেই খুলেছিল। তিনি আরো লিখেছেন, ১৯০১ সালের পূর্বে তিনি তার দাবীকৃত নবুওয়তকে ‘মুহাদ্দাসিয়ত’ শব্দে তাবীল করেছেন এবং আপনা দাবীকৃত নবুওয়তকে জুঝী নবুওয়ত বা অসম্পূর্ণ নবুওয়ত বলে আখ্যা দিতেন। মির্যাপুত্র রচনাবলীর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম’ ২/৪৪৪-৪৫ দ্রষ্টব্য। এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানী নবুওয়তের দাবী করে মাত্র ৭ বা ৮ বছরই বেঁচেছিলেন বলা যেতে পারে! তো এটাই কি তার দীর্ঘ জীবন লাভ করা?

৬. অ-আহমদীরা যতই বিরোধিতা করবে ততই আহমদীয়ত সারা বিশ্বে বৃদ্ধি হতে থাকবে। এই বছর-ও প্রায় ছয় লক্ষ নতুন করে বাইয়েত নিয়েছে। তাই আহমদীয়ত সত্য! সারা দুনিয়াতে আহমদীরা (কাদিয়ানীরা) বর্তমানে ২৬ কোটির ঊর্ধ্বে। সুতরাং আমরাই সত্য!

আমার বক্তব্য : আহমদীয়ত যে মিথ্যা এবং সুস্পষ্ট মডারেট ধোকা তা উপরেই দলিল-প্রমাণের আলোকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন বাকি থাকল, ছয় লক্ষ বাইয়েতের দাবী! আমি এর প্রতিউত্তরে তাদেরই একজন সাবেক কাদিয়ানী মুরুব্বী পাকিস্তানের লাহোরের জেহলম জেলার সাবেক কাদিয়ানী নায়েবে আমীর প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমেদ এর একটি বক্তব্য উল্লেখ করব। তিনি ২০০১ সালে ইসলাম কবুল করে সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন “২০০০ সালে আমাকে কেন্দ্র থেকে ৩০০ গয়রে আহমদীকে বাইয়েতের জন্য টার্গেট করতে বলা হল। আমি মাত্র তিনজনকে প্রস্তুত করতে পারলাম। কিন্তু ইউ.কে জলসায় ৪১৩০৮৯৭৫ (চার কোটি ১৩ লক্ষ) নতুন বিশ্ব বাইয়েতের খবর প্রকাশ করা হয় এবং আমাকে জানানো হয় ‘আপ কা টার্গেট পুরা হো গী’ (অর্থাৎ আপনার টার্গেট পূর্ণ হয়ে গেছে)। তারপরের বছর অর্থাৎ ২০০১ সালে আমাকে সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০০ জনকে বাইয়েতের টার্গেট করতে বলা হল। আমি একজনকেও রাজি করতে পারিনি। কিন্তু ওদিকে বিশ্ব বাইয়েত থেকে ৮১০০৬৭২১ (আট কোটি দশ লক্ষ) জনের নতুন বাইয়েতের ঘোষণা দিয়ে দেয়া হল (দৈনিক আল ফজল, ৩রা আগস্ট ২০০৫ ইং সংখ্যা দ্রষ্টব্য)। আমি আশ্চর্য হলাম। জেলা আমীরকে প্রশ্ন করলাম। আমাকে উত্তর দেয়া হল, তুম খামুশ রাহো (অর্থাৎ তুমি চুপ থাক)। জামাতের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবানা খবরদার! তিনি আমাকে যুক্তি দিলেন, যদিও তোমার এখান থেকে কেউ বাইয়েত হয়নি, কিন্তু দুনিয়ার অন্যান্য জায়গা থেকে তো হয়েছে! তখন আমি বললাম, আমি আমার আশেপাশেও খবর নিয়েছি। সব জায়গায় আমার মতই অবস্থা এবং সবাই আপনার মতই একই শান্তনামূলক কথা বলে আত্মপ্রসাদ নিচ্ছে!” প্রমাণ হিসেবে প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমদ এর মুখ থেকেই শুনে নিন Click তারপরই তিনি ২০০১ সালে কাদিয়ানীদের বিশ্ব বাইয়েতের এই ড্রামা’র মুখোশ উন্মোচন করে ইসলামে ফিরে আসেন। সুতরাং আপনাদের নিকট কুরআন হাদীস বাদ দিয়ে বিশ্ব বাইয়েতি ড্রামা খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা আমাদের নিকট কোনোই গুরুত্ব রাখেনা।

প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমেদ (সাবেক কাদিয়ানী সদর মুরুব্বী)

৭. সব নবীই বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই মির্যা কাদিয়ানীও বিরোধীতার সম্মুখীন হবেন এমনটাই স্বাভাবিক। আর আল্লাহ তাকে ওহী(?) দ্বারা জানিয়ে দিয়েছেন যে, সারা দুনিয়ায় তিনি তার জামাতকে পৌঁছিয়ে দেবেন। আজ তাই হচ্ছে।

আমার বক্তব্য : কাদিয়ানীদের কথাতেই পরিষ্কার হয় যে, তারা মির্যাকে “নবী” হিসেবেই মান্য করে। নতুবা “সব নবীই বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন” এইধরণের উদাহরণ টানার মানে কী? যাইহোক, কোনো দাবীদার ব্যক্তি বিরোধীতার সম্মুখীন হওয়াই তার সত্য হওয়ার প্রমাণ নয়। বরং সত্যতার প্রমাণ হল, কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে সাহাবা। কেননা ইতিহাস সাক্ষী, বহু মিথ্যাবাদী তাদের ভন্ডামীর কারণে জনরোষের স্বীকার হয়েছিল এমনকি হত্যা পর্যন্ত হয়েছিল। সাহাবাদের যুগে মুসাইলামা কাজ্জাব আর অষ্টাদশ শতাব্দীর ইরানী বংশোদ্ভূত আলী মুহাম্মদ বাবী তারই দৃষ্টান্ত বহন করে। ১৮৫১ সালে ইরান সরকার “বাবী জামাত” এর প্রতিষ্ঠাতা আলী মুহাম্মদ বাবকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবীর পর ফায়ারিং স্কোয়াডে অমানুষিক কায়দায় হত্যা করেন। অনুরূপ বাহায়ী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মসীহ এবং রাসূল দাবীদার বাহাউল্লাহ ইরানীও প্রথমে ইরান থেকে ইরাক নির্বাসিত হন। তার কিছু দিন পর ইরানী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে আমৃত্যু জেল খাটেন। তার মৃত্যুর পর তার সেই বাহায়ী জামাত আজ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ২২১ টি রাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে কী বলবেন?

দুনিয়ার প্রায় ২২১টি রাষ্ট্রে বাহায়ীদের এমন সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন বহু উপাসনালয় রয়েছে

৮. মির্যার সত্যতা জানতে চাহিলে খোদার নিকট দোয়া করুন আর ইস্তিখারাহ করুন। দেখবেন চল্লিশ দিনের মধ্যেই ফল পেয়ে যাবেন।

আমার বক্তব্য : ইস্তিখারাহ সম্পর্কে ইসলামের একটি বিধান রয়েছে। তা হল, শরীয়তের পূর্ব মীমাংসিত কোনো বিষয়ে কনফিউশন হয়ে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ ও হারাম। বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারক, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) লিখেছেন, فإن الواجب و المستحب لا يستخار فى فعلهما و الحرام والمكروه لا يستخار فى تركهما . فتح البارئ كتاب الدعوات অর্থাৎ ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব বিষয়ে তা পালন করা আর না করার ক্ষেত্রে ইস্তিখারাহ বিধিবদ্ধ নয়। কোনো হারাম বা মাকরূহ বিষয়ে তা বর্জন করা আর না করার ক্ষেত্রেও ইস্তিখারাহ বিধিবদ্ধ নয়। (সূত্র : ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : কিতাবুদ দাওয়াত, বাব ৪৮; খন্ড ১৪ পৃষ্ঠা ৪১৮)। এতে বুঝা যায়, ইস্তিখারাহ হতে হবে দুনিয়াবী বিষয়ে। ইসলামের আলোকে যেই বিষয়টি পূর্ব থেকে মীমাংসিত ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত সেই বিষয়ে কনফিউশন হওয়া ও নতুন করে সমাধান চাওয়ার নিয়তে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ এবং হারাম। উদাহরণস্বরূপ, আপন ভাইয়ের সাথে বোনের বিয়ে হারাম, এটি পূর্ব মীমাংসিত বিষয়। তাই এই বিষয়ে কনফিউশন হওয়া এবং ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ। তদ্রুপ নবুওয়তের দরজায় সীল লেগে যাওয়া এবং ঈসা (আ:) জীবিত থাকা ও তাঁর দ্বিতীয়বারে আগমন করার বিষয়েও ইস্তিখারাহ করা হারাম। কেননা এগুলো ইসলামের পূর্ব মীমাংসিত বিষয়। তাই এসবে অস্বীকারকারী মির্যা কাদিয়ানী সম্পর্কে ইস্তিখারাহ করার অর্থই হল নিজকে নিজে ইসলামের গন্ডি থেকে খারিজ করে দেয়া। ফলে বিতাড়িত শয়তানের পক্ষে সহজ হয়ে যায় স্বপ্নযোগে তার চোখে মির্যাকে সত্যবাদীরূপে দর্শন করানো। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ইস্তিখারাহ এর শরয়ী বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বহু সরলমনা মুসলমান ধোকা খেয়ে কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম ঘটেনি। তাই আপনাদের মির্যা কাদিয়ানীর বিষয়ে ইস্তিখারাহ করার উক্ত পরামর্শ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য ও বাতিল।

৯. আমরা আহমদীরা (কাদিয়ানীরা) সারা দুনিয়াতে এক ও অভিন্ন জামাত। আমাদের খলিফা আছে। আমাদের বায়তুলমাল আছে। আর অপর দিকে অন্যরা নানা ফেরকায় বিভক্ত। সুতরাং আমরাই সঠিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমার বক্তব্য : যারা ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেনা তাদের মহলে আপনাদের এই সমস্ত ইমোশনালি কথাবার্তা খুবই গুরুত্ব রাখবে তা ঠিক। আপনি বললেন যে, আপনাদের নাকি খলিফা রয়েছে! যদি তাই হয় তাহলে বলুন, ইসলামের দৃষ্টিতে “খলিফা” এর সংজ্ঞা কী? সুনির্দিষ্ট কোনো ভুখন্ড ছাড়া কেউ “খলিফা” দাবী করা পাগলের প্রলাপ নয় কি? আমরা জানি, ইসলামের সকল খলিফার যুগে নির্দিষ্ট ভুখন্ডের উপর তাদের প্রত্যেকেরই দখল ছিল। তাদের নির্দিষ্ট সামরিক ফোর্স ছিল। তার পরেই বায়তুলমাল ইত্যাদীর প্রশ্ন আসবে। তার চেয়ে বড় কথা, কাদিয়ানী জামাত তো ইসলামেরই কেউ না। এমতাবস্থায় খলিফার প্রসঙ্গটাও আরো বহু পরের সাবজেক্ট, তাই নয় কি? আরেকটি অপ্রিয় সত্য হল, ২০০৮ সালের ভেতরেই কাদিয়ানী জামাত কম বেশি প্রায় ১০টি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে, লাহোরী গ্রুপ, জামাতে আহমদীয়া ইছলাহ পছন্দ, জামাতে আহমদীয়া আল মুসলিমীন, গ্রীন আহমদীয়ত, জামাতে সহীহ ইসলাম এবং জামাতে আহমদীয়া হাকিকি অন্যতম। সংক্ষেপে। সুতরাং দয়া করে এই বিশ্বায়নের যুগে এসেও আর মিথ্যা বলবেন না!

১০. একমাত্র আহমদীরাই ঈসা (আ:)-কে মৃত প্রমাণের মাধ্যমে খ্রিষ্টান ধর্মকে মৃত সাব্যস্ত করে থাকে। অপর দিকে অন্যান্য মুসলমান ঈসা (আ:)-কে জীবিত বিশ্বাস করে। ফলে তারা খ্রিষ্টানদের নবী ঈসা (যিশুখ্রিস্ট)কে জীবিত রেখে ঈসায়ী ধর্মকেও জীবিত রাখতে চাচ্ছে। সুতরাং আমরাই সঠিক ইসলামের অনুসারী।

আমার বক্তব্য : মির্যা কাদিয়ানী তার ‘নূরুল হক’ বইয়ের ১ম খন্ডের ৫০ নং পৃষ্ঠায় মূসা (আ:) সম্পর্কে লিখেছেন و فرض علينا أن نؤمن بأنه حيي فى السماء و لم يمت و ليس من الميتين অর্থাৎ আমাদের উপর একথা বিশ্বাস রাখা ফরজ যে, নিশ্চয়ই তিনি (মূসা) আকাশে জীবিত, তিনি মৃত্যুবরণ করেননি এবং মৃতদের অন্তর্ভুক্তও নন। (রূহানী খাযায়েন ৮/৬৮-৬৯ দ্রষ্টব্য)। সম্পূর্ণ পৃষ্ঠাটি পড়ে দেখুন। উপরে মূসা (আ:) এর দীর্ঘ আলোচনা শেষে পরের পৃষ্ঠায় তাঁর (আ:) সম্পর্কে মির্যা সাহেব এইধরণের কথা লিখে গেছেন। আসুন! এবার আপনার যুক্তিতে ফিরে আসি। খ্রিষ্টানদের নবী ঈসা (যিশুখ্রিস্ট)কে জীবিত রাখার অর্থ যদি ঈসায়ী ধর্মকে জীবিত রাখা হয় তাহলে মূসা (আ:)-কে জীবিত রাখার বিশ্বাসের কী অর্থ দাঁড়াল? শুনুন! ধোকা আর প্রতারণা করারও একটা লিমিট আছে!!

১১. ইসলামের প্রাথমিককালেও অনেকে মুরতাদ হয়ে যায়। জনৈক কাতেবে ওহীও মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। কাজেই আরব আহমদী খলিফা খ্যাত ডক্টর হানী তাহের, ইংল্যান্ড আহমদী খলীফার মসজিদুল ফতূহ এর নায়েবে ইমাম ইকরামা নজমি, মিশরের আহমদী মু’আল্লিম ইনসার্জ ও লাহোরের জেহলম জেলার নায়েবে সদর আমীর প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমদ প্রমুখ তারাও কাদিয়ানীয়ত ত্যাগ করে মুরতাদ হয়েছেন বলে বিরোধীদের এত খুশি হওয়ার কারণ নেই। মরা পাতা ঝরে গেলেই ভাল!

আমার বক্তব্য: শরীয়তের পরিভাষায় সাধারণ অর্থে মুরতাদ বলতে বুঝানো হয় ধর্ম-ত্যাগী ব্যক্তিকে। এখন কেউ কাদিয়ানীয়ত ত্যাগ করার কারণে কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে মুরতাদ হওয়ার অর্থ ‘কাদিয়ানীয়ত’ যে আলাদা একটি ধর্ম তা কি প্রমাণ করা নয়? অবশ্যই। এমতাবস্থায় অ-কাদিয়ানীদের (মুসলমানদের) পক্ষ হতে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘অমুসলিম সংখ্যালুঘু’ ঘোষণার দাবী ১০০% যুক্তিক বলেই সাব্যস্ত হল কিনা? সেযাইহোক, কাতেবে ওহী সাহাবীটির নাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’আদ ইবনে আবু সারাহ (রা:) তিনি (আয়াত): “ফা তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকীন” -কে কেন্দ্র করে মনে মনে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি কিছুদিনের জন্য ইসলাম ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান। অতপর মক্কা বিজয়ের আগ মুহূর্তে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় তাওবা করেন এবং রাসূল (সা.)-এর হাতে ইসলামের উপর বয়াত গ্রহণ করেন। ইমাম আবু জা’ফর মুহাম্মদ বিন জারির আল তাবারী (৮৩৮-৯২৩) তার “জামিউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন” বইয়ে বর্ণনা করেন : “ইসলামের নবী মক্কা বিজয়ের কিছু আগেই আব্দুল্লাহ ইবনে সা’আদ ইবনে আবু সারাহ (রা:) ইসলাম পুনরায় গ্রহণ করেন।” এ থেকে প্রমাণিত হয় আবদুল্লাহ ইবনে সা’আদ সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় ইসলাম পুনরায় গ্রহণ করেন। কারণ ঠিক মক্কা বিজয়ের সময়কালে তাকে প্রভাবিত করার কোনো মুসলিম সামরিক শক্তি তার আশেপাশে ছিল না। তারপর তিনি আমৃত্যু ইসলামের সেবায় নিয়োজিত থাকেন এবং হযরত উসমান (রা:) এর খেলাফতের আমলে মিশরের মত রাষ্ট্রের গভর্নরও হন। তিনি সামুদ্রিক বড় বড় জিহাদগুলোর চিপ কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। একথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল, উক্ত কাতেবে ওহী ব্যক্তিটি সাময়িকভাবে ইসলাম ত্যাগ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু এজন্য তিনি না কুরআনকে ভুল আখ্যা দিয়েছেন আর না মুহাম্মদ (সা:)-কে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছেন; বরং নিজেই নিজেকে দুষেছেন এবং নিজ ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করেছেন। পক্ষান্তরে ডক্টর হানী তাদের সহ যারাই কাদিয়ানীয়ত ত্যাগ করেছেন সবাই মির্যাকে মিথ্যুক আর ভন্ড আখ্যা দিয়েছে। তাহলে কিসের সাথে কিসের উপমা দিতে এলেন!

১২. কাদিয়ানীয়ত ছেড়ে কোন ইসলামে ফিরে যেতে চান? শীয়া, হানাফী মালেকী শাফেয়ী হাম্বলী আহলে হাদীস, দেওবন্দী, বেরলবী, জামাত শিবির, চরমোনাই, রাজারবাগী মাইজভাণ্ডারী ইত্যাদি কোন ফেরকার ইসলামে ফিরে গেলে সঠিক ইসলামে ফিরে যাওয়া হবে?

আমার বক্তব্য : প্রথমকথা হল, মনে করুন কাদিয়ানীয়ত ছেড়ে কেউ এদের যে কোনো একটিতে চলে গেল! অন্ততপক্ষে তাতেও তার ঈমানটা বাঁঁচবে। কেননা সে মুহাম্মদ (সা:)- এর পরে দ্বিতীয় আর কাউকে নবী মেনে নেয়া থেকে রক্ষা পেল। ফলে তার আমলের দুর্বলতার কারণে সাময়িক শাস্তি ভোগ করলেও একটি সময় ঈমানের কারণে সে নাজাত পাবে, ইনশাল্লাহ । দ্বিতীয় কথা হল, প্রশ্নে বর্ণিত নামগুলোর মধ্যে শীয়া হল ইসলামের একটি পুরনো ফেরকা। তাদের বিচারে তারাও সঠিক। বিপরীতে অন্যগুলোর মধ্যে হানাফী শাফেয়ী মালেকী আর হাম্বলী এগুলো ফেরকাই নয়, বরং ফিকহি মাসয়ালায় চারজন বিশিষ্ট ফকিহ ও মুজতাহিদ ইমামের চারটি ফিকহ বা গবেষণালব্ধ বুঝের ভিন্নতা মাত্র। যা আহলে সুন্নাহরই অভ্যন্তরীণ একটি ফিকহি মতভিন্নতা। তারপর আহলে হাদীস, চরমোনাই, জামাতে ইসলামি সহ এগুলোর কোনো কোনোটি রাজনৈতিক দল আবার কোনোটি পীর মুরশিদি তরিকা, কোনো কোনোটি মানহাজ তথা পার্সোনালিটি মাত্র। মনে রাখতে হবে যে, ফেরকা, মানহাজ, পলিটিকাল পার্টি ও মাযহাব এগুলো প্রত্যেকটি আলাদা জিনিস। কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন হল, কাদিয়ানীয়ত ইসলামী ফেরকা বা মানহাজ হলে তখন কেউ সেটিকে ত্যাগ করার দরুন ‘মুরতাদ’ হবে কেন? বলাবাহুল্য, কাদিয়ানীয়তের দৃষ্টিতে মির্যা কাদিয়ানীই তাদের সর্বশেষ নবী (রূহানী খাযায়েন খন্ড ২০ পৃষ্ঠা ৭০ দ্রষ্টব্য) !

রূহানী খাযায়েন ২০/৭০

তাই অপ্রিয় হলেও সত্য, সাধারণ কাদিয়ানীদের বুঝে আসুক বা না আসুক, সত্য এটাই যে, কাদিয়ানীয়ত নতুন একটি ধর্ম। ফলে এটি ইসলামের কোনো ফেরকারই অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন! আমীন। সংক্ষেপে…

(বি: দ্র: কথাগুলো তাদের আর জবাব গুলো আমার)।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

বিয়ের সময় হযরত আয়েশা (রা:)-এর প্রকৃত বয়স!

শুরুকথাঃ

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকাহ (রা.)-এর বিয়ের সময় উনার বয়স কত ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকভাবে দুইটি মত থাকা সত্ত্বেও আমাদের অধিকাংশ মুসলমান শুধুমাত্র একটি মতই ব্যক্ত করে থাকেন যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। আমি আজ এখানে উভয় মতই তুলে ধরব। সে সাথে আমি আমার পছন্দনীয় মতের পক্ষে দলিল ও যুক্তি পেশ করব, ইনশাআল্লাহ। (মহানবীর যুগে মেয়েদের বিয়ের আদর্শ বয়স সম্পর্কে এই লিখাটিও পড়া যেতে পারে)।

  • সম্প্রতি ইসলামের প্রাণ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লির মিডিয়া শাখার প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল। যার ফলে সারা দুনিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠে। অথচ হিন্দুদের বাল্মিকী রামায়ণের তৃতীয় খণ্ডের ৪৭শ অধ্যায়ে সীতার বিবৃতি থেকে আমরা জানতে পারি যে, সীতা অষ্টাদশ বছর বয়ঃক্রমকালে বিবাহের ত্রয়োদশ বছরে রামের বন গমণকালে তাঁর সঙ্গে অযোধ্যা ত্যাগ করেছিলেন। পাটিগণিতের সহজ হিসাব মতে, বিবাহের সময় সীতার বয়স পাঁচ-ছয় বছর ছিল। (মোহাম্মদ মতিয়র রহমান, প্রাচীন ভারতে বাল্যবিয়ে)। এছাড়া হিন্দুদের ‘স্কন্দ পুরান’ গ্রন্থেও লিখা আছে যে, রাম সীতাকে বিয়ে করেন, যখন সীতার বয়স ৬ বছর। (স্কন্দ পুরান ৩:২:৩০:৮-৯)। কথা এখানেই শেষ নয়, হিন্দুদের শ্রীকৃষ্ণও রুক্সীনিকে বিয়ে করেন যখন রুক্সীনির বয়স ৮ বছর। (স্কন্দ পুরান ৫:৩:১৪২:৮-৭৯)। আরও উল্লেখ আছে, শিব পার্বতিকে বিয়ে করেন যখন পার্বতির বয়স ৮ বছর। (শিব পুরান, রুদ্রসংহিতা, পার্বতি খণ্ড ৩:১১:১-২)। অপ্রিয় হলেও সত্য, যাঁরা মহানবী (সা.) ও আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স নিয়ে আপত্তি করেন, তাঁরা কিন্তু রাম আর সীতার, শ্রীকৃষ্ণ আর রুক্সীনি, শিব আর পার্বতি এদের কারোরই বিয়ের বয়স নিয়ে টুঁ শব্দটুকুও করেন না। এটি তাদের কেমন ইনসাফ?

উল্লেখ্য, বাল্মীকি রচিত মূল রামায়ণে ২৪,০০০ শ্লোক ছিল। এই রামায়ণ ছয়টি (মতান্তরে সাতটি) কাণ্ড বা খণ্ডে বিভক্ত ছিল। রামায়ণের উপজীব্য অযোধ্যার রাজকুমার রামের জীবনকথা। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০ অব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে এই মহাকাব্য রচিত হয়। এই মহাকাব্য মহাভারতের পূর্বসূরি।

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বিয়ের সময়কার বয়স :

প্রথম মত :

১. রাসূল (সা.) এর সাথে হযরত আয়েশা (রা.) এর বিয়ে হয় তৃতীয় হিজরী সনের শাওয়াল মাসে বা ৬২৩-৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে। যদিও বলা হয়, হযরত আয়েশা (রা.)-এর জন্ম ৬১৪ খৃষ্টাব্দে কিন্তু সহীহ বুখারীতে এসেছে আল কোরআনের ৫৪ তম অধ্যায় নাযিলকালে আয়েশা (রা.) একজন কিশোরী (جارية) বয়স্কা ছিলেন। যেমন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, بَلِ السَّاعَۃُ مَوۡعِدُہُمۡ وَ السَّاعَۃُ اَدۡہٰی وَ اَمَرُّ (অর্থাৎ বরং কিয়ামত তাদের শাস্তির নির্ধারিত সময়। আর কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্তকর) আয়াতটি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মক্কায় নাযিল হয়েছিল তখন আমি কিশোরী ছিলাম, খেলা-ধুলা করতাম। [সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর অধ্যায় নং ৫২, হাদীস নং ৪৫১২ (ইফা)]

সহীহ বুখারী কিতাবুল তাফসীর, হাদীস নং ৪৫১২ (ইফা)

উল্লেখ্য, সর্বসম্মত মুসলিম স্কলারদের মতে ৫৪তম উক্ত অধ্যায় (সূরা আল-ক্বমর) নাযিল হয় মক্কায় মুশরিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে (সহীহ মুসলিম)। আনুমানিক ৬১৫ খৃষ্টাব্দের দিকে (তাফসিরে কুরতুবী, সূরা ক্বমার আয়াত নং ২৪ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ সূরা আত-ত্বরিক আর সূরা ছোয়াদ নাযিলের পর নবুওয়তের পঞ্চমবর্ষে । রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) নিজেও বলেছেন, قال ابن عباس‏:‏ كان بين نزول هذه الآية وبين بدر سبع سنين؛ فالآية على هذا مكية‏.‏ وفي البخاري عن عائشة أم المؤمنين رضى الله عنها قالت‏:‏ لقد أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم بمكة وإني لجارية ألعب‏ অর্থাৎ বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া আর এই সূরাটি নাযিল হওয়া উভয়ের মধ্যখানে সাত (৭) বছরের তফাৎ রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রে আয়াতটি মক্কায় নাযিল হয়। এবং বুখারীতে এসেছে যে, আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে….। যাইহোক, সে হিসাবে হযরত আয়েশা’র বয়স তখন ৯ বছর হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দে তাঁর বয়স কোনো ভাবেই ১৭-১৮ বছরের নিচে নয়। স্ক্রিনশট :-

তাফসিরে কুরতুবিতে ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত বর্ণনাটি দেখুন

২. অধিকাংশ বর্ণনাকারীর মতে হযরত আয়েশা (রা.) বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খৃষ্টাব্দে) এবং ওহুদের যুদ্ধ (৬২৫ খৃষ্টাব্দে) ইত্যাদীতে অংশগ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য রাসুল (সা.) এর বাহিনীতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কেউ গ্রহণযোগ্য ছিলনা বরং তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হত। সুতরাং সেসময় যে হযরত আয়েশা’র বয়স ৬ বা ৯ ছিলনা, তা বলাই বাহুল্য। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার)।

A narrative regarding Ayesha’s participation in the battle of Uhud is given in Bukhari, (Kitabu’l-jihad wa’l-siyar, Arabic, Bab Ghazwi’l-nisa’ wa qitalihinna maa’lrijal; that all boys under 15 were sent back is given in Bukhari, Kitabu’l- maghazi, Bab ghazwati’l- khandaq wa hiya’l-ahza’b, Arabic).

৩. অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতে, হযরত আয়েশার বোন হযরত আসমা ছিলেন তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আসমা ৭৩ হিজরী সনে যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ১০০ বছর। সে হিসাবে ১লা হিজরীতে তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর। তাহলে সে হিসেবে ১লা হিজরীতে হযরত আয়েশার বয়স যে তখন ১৭ এর কম ছিলনা, তা বোঝা যায়। তাহলে ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ তাঁর বয়স ১৯ বছরই ছিল বলতে হয়। (ইমাম যাহাবীর আস-সিয়ারু আলামিন নুবালা ২/২৮৯)।

(For Asma being 10 years older than Ayesha, see Ala’ma’l- nubala’, Al- Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic, Mu’assasatu’l- risalah, Beirut, 1992. Ibn Kathir confirms this fact, [Asma] was elder to her sister [Ayesha] by ten years” (Al- Bidayah wa’l- nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-arabi, Al-jizah, 1933).

For Asma being 100 years old, see Al-Bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 372, Arabic, Dar al-fikr al- `arabi, Al-jizah, 1933). Ibn Hajar al-Asqalani also has the same information: “She [Asma (ra)] lived a hundred years and died in 73 or 74 AH.” Taqribu’l-tehzib, Ibn Hajar Al- Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi’l-nisa’, al- harfu’l-alif, Lucknow).

৪. প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল তাবারী’র বই ‘তারীখুল উমাম ওয়াল মামলূক’ থেকে পাওয়া যায় যে, হযরত আবু বকর (রা.) এর চার সন্তান ছিলেন যাঁরা সকলেই ইসলামপূর্ব যুগে জন্মগ্রহণ করেন (ইসলামপূর্ব যুগ ৬১০ খৃষ্টাব্দ শেষ হয় – লিখক)। তাহলে নিশ্চয়ই হযরত আয়েশা (রা.) এর জন্ম ৬১০ খৃষ্টাব্দের পূর্বেই হয়েছিল বলতে হবে। সে হিসাবেও মানতে হবে যে, তিনি বিবাহের সময় কমপক্ষে ১৯ বছর বয়স্কা ছিলেন। (তারীখুল উমাম ওয়াল মামলূক ৪/৫০; দারুল ফিকর, বৈরুত লেবানন)।

Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara’l-fikr, Beirut, 1979).

৫. আরেক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায়, হযরত আয়েশা (রা.) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রা.) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য উমর ইবনে আল খাত্তাব (রা.) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবার হযরত আবু বকর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং মানতে হবে যে, হযরত আয়েশা (রা.) ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে, তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহণ করবার নূন্যতম বয়স ৬ অথবা ৭ হলেও তাঁর ছিল। এমতাবস্থায় ৬২৩-৬২৪ সালে তাঁর বয়স প্রায় ১৮-২০ এর কম ছিলনা। (আস-সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ, ইমাম ইবনে আল হাইছাম ১/২২৭-২৩৪ এবং ২৯৫)।

(Al-Sirah al- Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al- Riyadh al- hadithah, Al- Riyadh)

৬. হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, আহমদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে (৬/২১০) উল্লেখ করেছেন, বিবি খাদিজাহ (রা.) এর মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্য খাওলাহ (خولة) নামের এক মহিলা দু’খানা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশা (রা.) এর কথা উল্লেখ করার সময় একজন পূর্ণবয়স্কা যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন, কোনো ছোট্ট শিশু (طفل) হিসেবে নয়। (মুসনাদে আহমদ ৬/২১০)।

(Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al- `arabi, Beirut).

৭. প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)-এর একটি কিতাবের নাম ﺍﻹﺻﺎﺑﺔ ﻓﻲ ﺗﻤﻴﻴﺰ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ (আল-ইছাবাহ ফী তাময়ীঝিস সাহাবাহ)। কিতাবটির ৪র্থ খণ্ডের ৩৭৭ নং পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ফাতেমা (রা.)- এর জন্মের ৫ বছর পর হযরত আয়েশা (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। আর ফাতেমা (রা.) এর জন্মের সময় রাসুল (সা.) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েশা (রা.) এর জন্মের সময় মুহাম্মদ (সা.) এর বয়স ছিল ৪০ বছর। সে হিসেবেও বিয়ের সময় হযরত আয়েশা (রা.) এর বয়স কোনোভাবেই ১৩ বছরের কম ছিল না।

(Al-isabah fi tamyizi’l- sahabah, Ibn Hajar al- Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu’l- Riyadh al- haditha, al- Riyadh,1978)

উক্ত দীর্ঘ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হল, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে বিয়ের সময় আয়েশা (রা.) যে ৬-৯ বছরের শিশু ছিলেননা, বরং নিম্নে ১৩ বছর আর উপরে ১৯ অথবা ২০ বছর বয়স্কা ছিলেন বলেই প্রমাণ করা। সংক্ষেপে। এই থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের সময় তিনি কত বছরের বয়সী ছিলেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকভাবে দুইটি মতই সেই শুরু থেকেই অদ্যাবধি চলে আসছে। দ্বিতীয় মতটি হল, তাঁর বিয়ের সময় বয়স ৬ থেকে ৯ বছর থাকা। সহীহ বুখারীতে উক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ থাকায় অধিকাংশ মানুষ সেটিকে গ্রহণ করে থাকে আর অপর মতটির কোনোই পরোয়া করেনা! অথচ ঐতিহাসিক বিচার-বিশ্লেষণ মতে প্রথম মতটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এবার সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ (রহ.) -এর সেই বর্ণনাটি নিয়ে কিছু কথা বলব।

  • বুখারীর বর্ণনা ও হিশাম ইবনে উরওয়াহ :
  • দ্বিতীয় মত :

অনেকে ইমাম বুখারী (রহ.)-এর বর্ণিত একটি মওকূফ (যে হাদিসের সনদ বা সূত্র নবী কিংবা সাহাবীদের কারো সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন) হাদীসের উপর ভিত্তি করে হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স ৬ বছর ছিল বলে মনে করে থাকেন। অথচ হাদীসটির সনদের ভেতর হিশাম ইবনে উরওয়াহ নামের রাবী (হাদীসের বর্ণনাকারী) সম্পর্কে ইমাম মালেক (রহ.) বলেছেন, তিনি শেষ বয়সে তথা ৭১ বছর বয়সে মদিনা থেকে ইরাক চলে যাওয়ার পর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে তার বর্ণনায় অনেক কিছুই উল্টোপাল্টা হয়ে যেত। সেজন্য তার থেকে কোনো ইরাকী রাবী যত হাদীসই বর্ণনা করবে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য হবেনা। উল্লেখ্য, বুখারী শরীফে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ তিনি ইরাকি রাবী থেকেই এটি বর্ণনা করেন। দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব, লেখক ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)।

(ক) প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম আবুল হাসান ইবনে ক্বাত্তান (রহ.) ‘বায়ানুল ওয়াহাম ওয়াল ইবহাম‘ (بيان الوهم و الإبهام) কিতাবের ৫ম খন্ডের ৫০৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন: أن هشام اختلط في آخر عمره অর্থ হিশাম ইবনে উরওয়াহ শেষ বয়সে উল্টাপাল্টা করে ফেলত।’

(খ) ইমাম যাহাবী (রহঃ) ‘মিযানুল ই’তিদাল‘ কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৩০১-৩০২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন : هشام بن عروة أحد الأعلام، حجة إمام، لكن في الكبر تناقض حفظه و لم يختلط أبداً অর্থ হিশাম ইবনে উরওয়াহ (রহ.) তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। নির্ভরযোগ্য ইমাম ছিলেন। তবে বৃদ্ধাবস্থায় তার স্মৃতিলোপ পায় অথচ (ইতিপূর্বে) তিনি কখনো উল্টাপাল্টা করেননি।’ আরো দেখুন, আল-জারহু ওয়াত তা’দীল ৬/৪৯০, ইমাম যাহাবী (রহ.)।

সহীহ বুখারীর হাদীস :

সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ অনেক হাদীসগ্রন্থে হিশাম ইবনে উরওয়াহ’র সূত্রে হযরত আয়েশা (রা.) এর বয়স নিয়ে যে তথ্য এসেছে, তা হিশাম ইবনে উরওয়াহ (রহ.) কর্তৃক বর্নিত একটি মওকূফ বর্ণনারই আশ্রয় করে। প্রায় ৫-টি সনদে হযরত আয়েশা (রা.) এর বয়স সম্পর্কিত রেওয়ায়েত উল্লেখ রয়েছে। সবই হিশাম ইবনে উরওয়াহ (রহ.) কর্তৃক বর্নিত। হিশামের বর্নিত ওই ৫-টি সনদে মদিনার কোনো রাবী (বর্ণনাকারী)’র সংশ্লিষ্টতা নেই। হিশাম তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন : ﺃﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺗﺰﻭﺝ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻭ ﻫﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺳﺖ ﺳﻨﻮﺍﺕ ﻭ ﺩﺧﻞ ﺑﻬﺎ ﻭ ﻫﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺗﺴﻊ অর্থাৎ, রাসূল (সা.) উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-কে যখন বিয়ে করেন তখন তিনি ছয় বছরের মেয়ে আর যখন তিনি তাঁকে উঠিয়ে নেন তখন তিনি নয় বছরের মেয়ে। (অনুবাদ শেষ হল)।

  • শেষকথা, হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের সময় তাঁর বয়স কত ছিল তা ঐতিহাসিক ভাবে দু’টি মতের উপরেই স্থাপিত। বুখারীর উক্ত হাদীসের আলোকে ও রাবী হিশাম ইবনে উরওয়াহ’র সাক্ষ্যমতে দ্বিতীয় মতটি একে তো ঊসূলে হাদীসের শর্তের বিরুদ্ধে যাওয়ায় গ্রহণযোগ্যতার পাল্লায় টিকছেনা তদুপরি ঐতিহাসিক বহু বর্ণনার সাথেও সাংঘর্ষিক। তাই আমার মতে এই বিষয়ে প্রথম মতটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। আল্লাহু আ’লাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

পবিত্র কুরআন দ্বারাও ঈসা (আ.) এখনো জীবিত থাকার প্রমাণ

সূরা আত-তওবাহ আয়াত নং ৩৩ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত! পড়তে ক্লিক করুন Click

প্রশ্ন : অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, হযরত ঈসা (আ:)-এর পুনঃ আগমন সত্য ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তেমনি পবিত্র কুরআনেও এর সমর্থনে কোনো ইংগিত কিবা প্রমাণ আছে কিনা?

  • এই লেখাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ :

কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে অ-কাদিয়ানীরা কেমন?

প্রকৃত ইমাম মাহদীর পরিচয়

ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা সংক্রান্ত বর্ণনা সম্পর্কে

চন্দ্রসূর্য গ্রহণের বর্ণনা সম্পর্কে

ইন্নী মুতাওয়াফফীকা (انى متوفيك)-এর সঠিক তাৎপর্য ও কাদিয়ানীদের ভ্রান্তি উন্মোচন

ঈসা (আ.) আবার আসলে মুহাম্মদ (সা.) শেষনবী কিভাবে থাকেন?

জবাব : জ্বী হ্যাঁ, অবশ্যই পবিত্র কুরআনেও হযরত ঈসা (আ.)-কে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়া এবং অচিরেই পৃথিবীতে পুনঃ আগমনের উপর সুস্পষ্ট ইংগিত ও প্রমাণ পাওয়া যায়। এজন্য পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬; ৪৮; ৫৫; সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫৭; ১৫৮; ১৫৯; সূরা যুখরুফ, আয়াত নং ৬১ ইত্যাদি দেখা যেতে পারে। অত্র লিখাটির শেষে মাত্র একখানা আয়াত ও তাফসীর পেশ করা হবে। জ্ঞানীদের জন্য সংক্ষেপে ততটুকুই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ। উম্মতে মুহাম্মদীয়া তথা মুসলমানদের অকাট্য বিশ্বাসগুলোর অন্যতম ঈসা (আ.)-কে মহান আল্লাহ সশরীরে জীবিত আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন, এটিকে কাদিয়ানীরা অনর্থক আখ্যা দিয়ে বলে বেড়ায় যে, কোনো মানুষকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া প্রকৃতি বিরোধী ও আল্লাহর নিয়ম বা কানুনের পরিপন্থী। মজার ব্যাপার হল, তাদের এসব অর্বাচীন আর অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তার জবাব আমাদের দিতে হয়না, বরং তাদের মির্যা কাদিয়ানীর লেখিত বইপুস্তকই তাদের ওসব মূর্খতার প্রতিউত্তরের জন্য যথেষ্ট। দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই লিখেছে, “তাকে (খোদাকে) কানুনের আকারে কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। খোদাকে চেনার জন্য এ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, খোদার জুল-জালাল-এর কুদরত ও হেকমতসমূহ অসীম ও অনন্ত।” (আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলী – ৫৭; প্রকাশকাল ২৭ মে ১৯৯৮ইং)।

স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য –

কাদিয়ানীদের প্রকাশনা হতে ‘মির্যার বিভিন্ন পুস্তক হতে আহরিত’ রচনাবলির সমষ্টি আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলী, পৃ-৫৭

কোনো কোনো ভাই হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, হযরত ঈসা (আ:)-কে সশরীরে আকাশে তুলে নেয়ার উল্লেখ কুরআনের কোন আয়াতে আছে?

  • এমন প্রশ্নকারী যারা তাদের ভাবখানা এমন যে, কুরআনে যা পরিষ্কার করে উল্লেখ নেই তা হাদীসে যতই পরিষ্কার করে উল্লেখ থাকুক না তা হবেনা! অথচ তাদের জানা থাকা উচিৎ ছিল যে, পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর কোনো কোনোটি সুস্পষ্ট আবার কোনো কোনোটি অস্পষ্ট। তাই পবিত্র কুরআনে যেসব বিষয় সংক্ষেপে কিংবা অস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে তা সুস্পষ্ট করতে পবিত্র হাদীসের মুখোমুখি হওয়া জরুরী। কেননা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) খোদ কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। আল্লাহতালা ফরমান :وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الذِّکۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ অর্থাৎ আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও, যা তাদের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে। (সূরা আন-নাহল /১৬ঃ৪৪)। এখন পবিত্র কুরআনেই যদি সব কিছু সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া হয় তাহলে রাসূল (সা.)-এর হাদীসের প্রয়োজন মিটানোর উপায় কী? কিংবা রাসূল (সা.)-এর আগমনেরই দরকার কী? ভাবিয়ে তুলে কিনা?
  • এবার আসুন প্রথমে হাদীস শরীফে ঈসা (আ.)-এর জীবিত থাকা ও পুনঃআগমন বিষয়ে কিরূপ শব্দচয়নে উল্লেখ আছে দেখে নিই!

পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে : (১) সহীহ বুখারী মুসলিমে এসেছে, শপথ খোদাতায়ালার যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় অচিরেই ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে নাযিল হবেন। (বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া, হাদীস নং ৩২৬৪)।

(২) ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। দেখুন ইমাম বয়হাক্বী সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াছ ছিফাত’ ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫। হাদীসের মান, সহীহ। হাদীসটি সনদ সহ দেখুন।

  • (হাদীসটি সহ নিচের সব কয়টি হাদীসের আরবী ইবারত ও মূল কিতাবের স্ক্রিনশট দেখতে চাইলে ক্লিক করুন)।
আল আসমা ওয়াছ ছিফাত ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫

(৩) অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। ইমাম আবুবকর আহমদ ইবনে আমর আল বাজ্জার (মৃত ২৯২ হিজরী) সংকলিত ‘মসনাদে বাজ্জার’ ১৭/৯৬; হাদীস নং ৯৬৪২। হাদীসের মান সহীহ, বর্ণনাকারীদের ভেতর ‘আলী ইবনে আল মুনযির’ ব্যতীত সবাই বুখারী ও মুসলিমের রাবী। স্ক্রিনশট :-

মসনাদে বাজ্জার নামক হাদীসগ্রন্থের কিতাব

(৪) সেই সময় আমার ভ্রাতা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে (শুভ্র মিনারার নিকটে) উঁচু টিলায় একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। (ইমাম ইবনে আসাকির সংকলিত ‘তারিখে দামেস্ক’ – খণ্ড নং ৪৭ পৃষ্ঠা নং ৫০৪-৫ ; প্রকাশনী বৈরুত লেবানন)।

তারিখে দামেস্ক

(৫) সেই সময় আমার ভ্রাতা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে (শুভ্র মিনারার নিকটে) উঁচু টিলায় অবতরণ করবেন। (দেখুন, কাঞ্জুল উম্মাল – খণ্ড ১৪ পৃষ্ঠা ৬১৮-১৯; রেওয়ায়েত নাম্বার ৩৯৭২৬)।

কাঞ্জুল উম্মাল

(৬) মির্যা কাদিয়ানী নিজেও মাসীহ দাবী করার পূর্বে ১৮৯১ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) তিনি আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। নইলে তিনি কেন লিখলেন যে ‘সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এমন শব্দও উল্লেখ রয়েছে যে, মসীহ (ঈসা) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন তার পরনে দুইটি হলুদ বর্ণের চাদর থাকবে! স্ক্রিনশট দেখুন :-

রূহানী খাযায়েন (উর্দূ) ৩/১৪২

এখানে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত বলে আখ্যা দেয়ার সকল প্রচেষ্টা মূলত খ্রিষ্টানদের রদ (খণ্ডন) করার উদ্দেশ্যে ছিলনা, বরং মির্যা কাদিয়ানী নিজের মসীহ দাবীকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই ছিল।

অন্যথা মির্যা কাদিয়ানী সেই নিজেকে মসীহ ঈসা, ইমাম মাহদী এবং নবী দাবী করার আগে ১৮৬৫ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত ইসলামের পক্ষে বহু লেখালেখি করলেন, বারাহীনে আহমদিয়া (খন্ড ১-৪) লিখলেন কিন্তু কখনো তো ঈসা (আ.)-কে মৃত বলে আখ্যা দেননি! ১৮৮১ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করতেন। কিন্তু সেই সময়টিতেও তিনি ঈসা (আ.)-কে মৃত বলেননি। বরং মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব মসীহ উপাধি লাভ করার পরে আরো প্রায় দশ বছর পর্যন্ত বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশে জীবিত আছেন। (হাকিকাতুন নবুওয়ত, আনওয়ারুল উলূম ২/৪৬৩)।

আনওয়ারুল উলূম, মির্যা বশির উদ্দিন

পরবর্তীতে ঈসা (আ.)-কে মৃত আখ্যা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। পবিত্র কুরআনের ৩০ টি আয়াত দিয়েও ঈসাকে মৃত প্রমাণ করার জোর চেষ্টা চালালেন। ভেবেচিন্তে অবাক হলাম যে, পবিত্র কুরআনের এই ৩০ আয়াত মির্যা সাহেবের মুজাদ্দিদ দাবীর ভেতরকার ১৮৮১-১৮৯১ সালের মধ্যে কুরআনের ভেতর কি ছিলনা? তখন কিজন্য তার মনে হলনা যে, ঈসা (আ.) জীবিত নন, বরং মৃত? সুতরাং অংক সোজা, নিজের উদ্দেশ্য পাকা করতেই তিনি আসল ঈসাকে মুর্দা আখ্যা দিতে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন!

উল্লেখ্য, সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে ‘আসমান’ শব্দটির উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও হযরত ঈসা (আ.) দ্বিতীয় আসমানে আছেন মর্মে কিরকম জোরালো বিশ্বাস থাকলে মির্যা সাহেব সহীহ মুসলিমের উদ্ধৃতিতে “ঈসা আকাশ থেকে নাযিল হবেন” এভাবে লিখে যেতে পারলেন! কাজেই, ঈসা (আ.)-কে আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নেয়ার উল্লেখ সুস্পষ্টভাবে কুরআনের কোন আয়াতে উল্লেখ আছে, এইরূপ প্রশ্ন করা অজ্ঞতা আর নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বৈ কিছুনা। এমন ব্যক্তিকে যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, “নামায যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করা ফরজ তার উল্লেখ কুরআনের কোন আয়াতে আছে” তাহলে সে এর জবাবে কী বলবে?

পবিত্র কুরআন থেকে : দ্বিতীয়ত, পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬ নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতালা ইরশাদ করেন, وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلاً وَمِنَ الصَّالِحِينَ অর্থ-“সে (ঈসা) দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) কথা বলবে এবং সে হবে নেককার মানুষদের একজন।” (০৩:৪৬)।

  • তাফসীর : 

আলোচ্য আয়াতে হযরত ঈসা (আ.)-এর একটি অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তিনি শৈশবে যে বয়সে কোনো শিশু কথা বলতে সক্ষম হয়না, তখনই তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন। এখানে তার পরেই আবার বলা হচ্ছে যে, যখন তিনি প্রৌঢ় বয়সের হবেন তখনো মানুষের সাথে কথা বলবেন। উল্লেখ্য, বিখ্যাত অভিধানবেত্তা ইবনে মানযূর আল আফ্রিকী (মৃত : ৭১১ হিজরী) তার বিখ্যাত “লিসানুল আরব” অভিধানগ্রন্থে ‘আল-মুহকিম’ (আরবি : المحكم) অভিধানের উদ্ধৃতিতে ‘কাহল’ (كَهْلاً) এর সংজ্ঞায় লিখেছেন যে, هو من أربع و ثلاثين إلى إحدى و خمسين “অর্থাৎ ‘কাহল’ বলতে ৩৪ হতে ৫১ বছর বয়সের ব্যক্তিকে বুঝাবে।” আল-মু’জাম অভিধানে আছে ‘৩৩ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্যবয়সীকে আরবীতে ‘কাহল‘ বলে। তবে কেউ কেউ অন্যভাবেও বলেছেন।

  • আল মু’জামুল ওয়াসীত (অভিধান) থেকে দেখুন :

যাইহোক, এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, শৈশবে কথা বলা নিঃসন্দেহে একটি অলৌকিক ব্যাপার। যার উল্লেখ এক্ষেত্রে সমীচীন হয়েছে। কিন্তু প্রৌঢ় বয়সে কথা বলা কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়। মুমিন, কাফের, পণ্ডিত, মূর্খ সবাই এ বয়সে কথা বলে। কাজেই এক্ষেত্রে বিশেষ গুণ হিসেবে এটা উল্লেখ করার অর্থ কী? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?

তাই এই প্রশ্নের উত্তরে নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাবে লিখা আছে যে, এখানে প্রৌঢ় বয়সের কথাবার্তার উল্লেখ একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিতস্বরূপ করা হয়েছে। তা এই যে, ইসলামী ও কুরআনী বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ.)-কে তাঁর ত্রিশ-তেত্রিশ মধ্যকার বয়সেই জীবিতাবস্থায় আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে। মির্যা কাদিয়ানীর কিতাব ‘তুহফাতুন নদওয়া‘ এর মধ্যে লেখা আছে, اور واقعہ صلیب کے وقت حضرت عیسیٰ کی عمر قریباً 33 سال تہی অর্থাৎ ক্রুশীয় ঘটনাকালে হযরত ঈসা’র বয়স ছিল প্রায় তেত্রিশ বছর। (রেফারেন্সঃ রূহানী খাযায়েন ১৯/১০৪)।

আমাদের আকিদাও এইরকম। কারণ বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, আকাশে তুলে নেয়ার সময় তার বয়স প্রায় ত্রিশ-তেত্রিশের মাঝামাঝি ছিল। অর্থাৎ তিনি যৌবনের প্রারম্ভিককালে উত্তোলিত হয়েছেন। অত:পর প্রৌঢ় বয়স, যাকে আরবীতে ‘কাহল/কুহল’ (كَهْلاً) বলা হয়; তিনি এ জগতে সেই বয়স পাননি। কাজেই প্রৌঢ় বয়সে মানুষের সাথে তাঁর কথা বলা তখনই সম্ভব, যখন তিনি আবার এ জগতে প্রত্যাবর্তন করবেন। পবিত্র কুরআনে মূলত এ দিকেই ইঙ্গিত করে “পরিণত বয়সেও তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন” এভাবে বলা হয়েছে। নতুবা এভাবে বলার কোনো দরকার ছিলনা। যেহেতু প্রৌঢ় বয়সে কথা বলতে পারা কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, বরং সাধারণ একটা ব্যাপার। (দেখুন, তাফসীরে বয়ানুল কুরআন, কৃত হাকীমুল উম্মত থানভী রহ. এবং মা’আরেফুল কুরআন, কৃত মুফতি শফী রহ.)। অনুরূপ একই তাফসীর পাওয়া যায় সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কিতাব তাফসীরে ইবনে কাসীরেও।

মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত যুগ ইমাম, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরের কিতাব “তাফসীরে তাবারী” এর ভেতর ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারী (রহ.) লিখেছেন- আমাকে ইউনুছ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন আমাকে ইবনে ওহাব বলেছেন, তিনি বলেন আমি ইবনে যায়েদ থেকে শুনেছি তিনি বলেন, আল্লাহতালার এই কথার অর্থ হল : قد كلمهم عيسى في المهد و سيكلمهم إذا قتل الدجال و هو يومئذٍ كهل অর্থাৎ ঈসা (আ.) দোলনাতে মানুষের সাথে কথা বলবেন, (তেমনিভাবে) তিনি অচিরেই মানুষের সাথে কথা বলবেন যখন দাজ্জালকে হত্যা করবেন আর তখন তিনি প্রৌঢ় বয়সে পরিণত হবেন। (তাফসীরে তাবারী, ইবনে জারীর রহ.)। স্ক্রিনশট

তাফসীরে তাবারী

এই একই তাফসীর রয়েছে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.) রচিত “তাফসীরে কাবীর” এর মধ্যে। তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীরকারক ইমাম হুসাইন ইবনে ফদ্বল আল বাজালী রহ. (মৃত : ২৮২ হিজরী) এর উদ্ধৃতিতে লিখেছেন, أن المراد بقوله و كهلا ان يكون كهلا بعد ان ينزل من السماء في آخر الزمان و يكلم الناس و يقتل الدجال الخ অর্থাৎ আয়াতের উদ্দেশ্য হল, ঈসা (আ.) তিনি শেষ যামানাতে আকাশ থেকে অবতরণকরার পরে প্রৌঢ় হওয়া। (তখন) তিনি মানুষের সাথে (প্রৌঢ় লোকদের মত জ্ঞানীসূলভ, মেধা সম্পন্ন প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধভাবে) কথা বলবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি বলেন, এই আয়াতে ঈসা (আ.) পৃথিবীতে অচিরেই নাযিল হওয়ার ব্যাপারে নস তথা প্রমাণ রয়েছে। (ইমাম রাজী রচিত, তাফসীরে কাবীর দ্রষ্টব্য)। আশাকরি চিন্তাশীলবন্ধুদের জন্য প্রকৃত ব্যাপারটি বুঝতে এতটুকুই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ । ওয়াসসালাম। স্ক্রিনশট –

ইমাম রাজীর তাফসীরে কাবীর

মির্যা কাদিয়ানী একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগী ছিল, এর কী কী প্রমাণ আছে?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিজেকে ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ (সা.)’ বলে দাবী করার দলিল খন্ডন

কাদিয়ানীরা কাফের কেন? এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ জানাবেন!

পবিত্র কুরআনের প্রায় ৯টি আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে মির্যা কাদিয়ানীকে “নবী” সাব্যস্ত করার সম্পূর্ণ অপচেষ্টার দাঁতভাঙা জবাব!

তথাকথিত “উম্মতিনবী”-এর কনসেপ্ট প্রমাণ করতে কাদিয়ানীদের উল্লিখিত বর্ণনাটির সনদ (সূত্র) মওজু অর্থাৎ ‘বানোয়াট’ হওয়ার প্রমাণ কী?

কাদিয়ানীরা ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে পবিত্র কুরআনের যে ত্রিশ আয়াতের অপব্যাখ্যা করে সেগুলোর দালিলিক ও যুক্তিক খন্ডন। (ধারাবাহিক ১-৩০টি আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা সহ)।
(1) (ফেইসবুক থেকে)
(2) (সংশ্লিষ্ট ৩০টি ইমেজ ডাউনলোড করতে)

(3) (ওয়েব সাইট থেকে)

ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন-এর প্রমাণ কুরআন থেকে দিন!

আলেম উলামাদের প্রতি কাদিয়ানীদের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেবের ১০টি প্রশ্ন ও আমার পক্ষ হতে সেগুলোর সহজ উত্তর!

লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

যেসব বর্ণনাকে আশ্রয় করে ‘খতমে নবুওয়ত’–কে অস্বীকার করা হয় সেগুলোর জবাব

খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারী কাদিয়ানিদের ১২টি বিভ্রান্তিকর দলিল ও আমার জবাব :

প্রদত্ত দলিলগুলো কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে আর জবাবগুলো আমার :

দলিল ১ :

প্রশ্নকর্তা : একটি হাদীসে উল্লেখ আছে “…অতপর মূসা (আ:) আরজ করলেন اِجْعَلْنِىْ نَبِيًّا تِلْكَ الْاُمَّة অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে সেই উম্মতের নবী বানিয়ে দাও। আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন “মিনহা নাবিয়্যুহা” অর্থাৎ তাদের নবী তাদেরই মধ্য থেকে হবে।” (আবু নাঈম এর সীরাতগ্রন্থ হুলিয়া, থানভীর সীরাতগ্রন্থ নশরুত্তিব দ্রষ্টব্য)। এই হাদীসে ‘তাদের নবী’ হতে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের কথাই কি বুঝানো হয়েছে?

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

ঈসা (আ:) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন কি?

ক্লিক করুন

দলিল ২ :

لو عاش ابراهيم لكان صديقا نبيا অর্থাৎ যদি ইব্রাহীম তথা হুজুর (সা:) এর সন্তান জীবিত থাকত তবে সে সত্যবাদী ও নবী হতো।” (সুনানু ইবনে মাজাহ ১/১০৮; ‘তারীখু ইবনে আসাকীর ৩/২৯৫)।

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

দলিল ৩ :

ابو بكر خير الناس الا ان يكون نبيا. অর্থাৎ আবু বকর এই উম্মতের মাঝে সবার  শ্রেষ্ঠ তবে নবী হলে ভিন্ন কথা। (কাঞ্জুল উম্মাল ১২/১৮০, হাদীসের মান জঈফ ও মওযূ)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নবুওয়তেরধারা জারি রয়েছে বুঝাবেনা। তার কারণ এখানে ان يكون এর মধ্যে ঊহ্য هو (ইংরেজি : He) সর্বনামপদটি আবুবকর (রা:)-কে নির্দেশ করেছে। ফলে সম্পূর্ণ বর্ণনাটির অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন আবুবকর (রা:)। তবে সে যদি নবী হত তখন ভিন্ন কথা ছিল। রাসূল (রা:) এই কথা বলে যেন বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আবুবকর (রা:) যেহেতু নবী নন, তাই তিনি শুধুমাত্র উম্মতির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। তবে হ্যাঁ সে “নবী” হলে তখন উম্মতির বাহিরে কোনো কোনো নবী অপেক্ষাও তাঁর পক্ষে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারা বিচিত্র ছিল না। কিন্তু আমি জানি যে, কাদিয়ানিদের নিকট আমার এই জবাব মোটেও সন্তোষজনক হবেনা। তাই তাদের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই যে, কাদিয়ানের কথিত কৃষ্ণ মির্যা গোলাম আহমদ কর্তৃক ১৮৯৩ সালে লেখিত ‘হামামাতুল বুশরা’ এর মধ্যে উল্লেখ আছে “আমাদের রাসূলের পর কিভাবে কোনো নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।” (দেখুন, পৃষ্ঠা নং ৪৮; বাংলা অনূদিত)।

তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকলে মির্যা গোলাম আহমদ নবুওয়ত দাবী করার আগে সে নিজেও “রাসূল (সা:) এর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে…” ইত্যাদি লিখে যাওয়ার কারণ কী? সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল, উক্ত বর্ণনাটির পরে আরো উল্লেখ রয়েছে هذا الحديث احد مما انكر (অর্থাৎ এই হাদীসটি মুনকার হাদীসগুলোর অন্যতম)। উল্লেখ্য, বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসের বিপরীতে দুর্বল বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসকে ‘মুনকার’ হাদীস বলা হয়। অতএব, জ্ঞানীদের বুঝার আর বাকি থাকেনি যে, তাদের প্রদত্ত বর্ণনাটি অন্ততপক্ষে আকীদা-বিষয়ক মাসআলায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংক্ষেপে। 

দলিল ৪ :

قال ليس بينى و بينه نبى يعنى عيسى و انه نازل অর্থাৎ আমার এবং আগমনকারী  ঈসার মধ্যবর্তীকালে আর কোনো নবী নেই এবং তিনি নিশ্চয় নাযিল হবেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩২৪; কিতাবুল মালাহিম)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবী কোনোভাবেই সিদ্ধি লাভ করবেনা। তার কারণ, হাদীসটিতে আগমনকারী ঈসা সম্পর্কে “নাযিল” শব্দ এসেছে। তার মানে আগমনকারী ঈসা অবতরণ করবেন, জন্মিবেন না। তার দেড় লাইনের মাথায় তাঁর সম্পর্কে এটিও উল্লেখ আছে فيقاتل الناس على الإسلام (অর্থাৎ তিনি মানুষের বিরুদ্ধে ইসলামের খাতিরে সশস্ত্র লড়াই করবেন)। তার এক লাইনের মাথায় আরো এসেছে و يهلك الله فى زمانه الملل كلها إلا الاسلام (অর্থাৎ আল্লাহতালা তাঁর যামানায় ইসলাম ব্যতীত বাকি সমস্ত ধর্ম ও মতবাদ ধ্বংস করে দেবেন)। হাদীসটির শেষাংশে এটিও এসেছে, فيمكث فى الأرض اربعين سنة ثم يتوفى فيصلى عليه المسلمون (অর্থাৎ অতপর তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর থাকবেন তারপর মৃত্যুবরণ করবেন। অতপর মুসলমানগণ তাঁর জানাজা পড়বেন)। যাইহোক, একজন নিরপেক্ষ পাঠক ঠাণ্ডামাথায় চিন্তা করলে বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, আগমনকারী সেই ঈসা রূপক কেউ নন, বরং বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত সেই মরিয়ম-পুত্র ঈসাই উদ্দেশ্য। যিনি হাদীসটিতে “নবী” শব্দেও আহূত হয়েছেন। তারমানে এই অর্থ নয় যে, আগমনকারী সেই ঈসা তখন নবুওয়তের দায়িত্বেও থাকবেন।

এটি আমার মনগড়া কোনো কথা নয়, বরং কাদিয়ানের কৃষ্ণ মির্যা গোলাম নিজেও লিখে গেছেন, آنے والے مسیح کیلئے ہمارے نبی اکرم نے نبوت شرط نہیں ٹہرائی অর্থাৎ আগমনকারী মাসীহ’র জন্য আমাদের নবী করীম (সা:) নবুওয়ত শর্ত করেননি। (তাওযীহুল মারাম, রূহানী খাযায়েন ৩/৫৯)। সুতরাং সরলমনা মানুষকে বিভ্রান্ত করার আর কোনো সুযোগ থাকল না।

মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে চার চার বার ঈসা (আ.)-কে নাবীউল্লাহ বলা হয়েছে, কাদিয়ানীদের অতিব শঠতাপূর্ণ বক্তব্যের দাঁতভাঙা উত্তর এখানে

দলিল ৫ :

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : قولوا خاتم الأنبياء و لا تقولوا لا نبى بعده অর্থাৎ তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো এবং তোমরা বলবেনা, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই। (মাজমাউল বিহার পৃষ্ঠা নং ৫০২)।

জবাব : না, এই বর্ণনা দ্বারাও কাদিয়ানিদের বিশ্বাস-মতে নবুওয়তী ওহীরধারা জারি থাকার দাবী কোনোভাবেই হালে পানি পায় না। কেননা ইমাম মুহাম্মদ তাহের পাটনী (মৃত ৯৮৬ হিজরী) বিরচিত ‘মাজমাউল বিহার’ কিতাবটির উক্ত পৃষ্ঠায় বর্ণনাটিতে আরো উল্লেখ আছে هذا ناظراً إلى نزول عيسى و هذا ايضا لا ينافى حديث “لا نبى بعدى” لانه اراد لا نبى ينسخ شرعه  অর্থাৎ এটি ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং এটি ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীসকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবেনা। কেননা তদ্দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর শরীয়তকে রহিত করতে পারে তিনি এমন নবী নন। এবার সম্পূর্ণ বর্ণনার তাৎপর্য দাঁড়াল এই যে “ঈসা আলাইহিস-সালামের নাযিলের প্রতি লক্ষ্য রেখে তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো, তবে ‘তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই’ বলবেনা।” এছাড়া বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুগীরা (রা:) হতেও বর্ণিত আছে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন حسبك إن قلت خاتم الأنبياء (অর্থাৎ  তোমার জন্য খাতামুল আম্বিয়া বলাই যথেষ্ট। তিনি আরো বলেন فإنا كنا نحدث أن عيسى خارج فإن هو خرج فقد كان قبله و بعده অর্থাৎ কেননা আমরা আলোচনা করে থাকি যে, ঈসা (আ:) নিশ্চয়ই আগমন করবেন। তিনি যদি আগমন করেন তাহলে তিনি তাঁর (মুহাম্মদ) পূর্বের এবং পরের (একজন মানুষ) হবেন। (দেখুন, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ১৩/৫৬৬; কিতাবুল আদাব)।

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সালাম আল বছরী (মৃতঃ ২০০ হিজরী) বিরচিত ‘তাফসীরে ইয়াহইয়া ইবনে সালাম’ (تفسير يحي بن سلام) নামক কিতাবেও এর সনদ (সূত্র) হিসেবে উল্লেখ আছে যে, রাবীঈ ইবনে ছুবাঈ (আরবি : ربيع ابن صبيح) এটি মুহাম্মদ ইবনে শিরীন (রহ:) থেকে আর তিনি হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, لا تقولوا : لا نبي بعد محمد و قولوا : خاتم النبيين، فإنه ينزل عيسى بن مريم حكماً عدلاً و إماماً مقسطا الخ অর্থাৎ তোমরা বলোনা, মুহাম্মদ (সা:)-এর পর আর কোনো নবী নেই (তবে) তোমরা ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ বলো। কেননা (অচিরেই) ঈসা ইবনে মরিয়ম একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক এবং ইনসাফগার ইমাম হিসেবে অবতরণ করবেন।” সে যাইহোক, এ সমস্ত রেওয়ায়েত যত জায়গায় পাওয়া যায় কোথাও একথা বুঝায় না যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে নবুওয়ত আর রেসালত জারি থাকবে বরং এ ধরণের সবগুলো বর্ণনাতেই শেষ যুগে হযরত ঈসা (আ:)-এর দ্বিতীয়বার আগমনের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। সুতরাং এই বর্ণনা দ্বারাও তাদের নবুওয়ত জারি থাকার তাবৎ দলিল-প্রমাণ(!) অন্তঃসারশূন্যই সাব্যস্ত হল। সংক্ষেপে।

দলিল ৬ :

সহীহ মুসলিম শরীফের একটি হাদীসের খন্ডাংশ হচ্ছে, রাসূল (সা:) বলেছেন  فإني آخر الأنبياء و ان مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ নিশ্চয় আমি সর্বশেষ নবী এবং আমার মসজিদ সর্বশেষ মসজিদ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৩৯)।

জবাব : না, এই হাদীসটিও নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকবে বুঝায়নি। প্রাসঙ্গিক জবাবে আরেকটু পরে আসি। আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ (সা:) মদীনায় এসে নিজ তত্ত্বাবধানে প্রথমে মসজিদে কূবা তারপর মসজিদে নববী  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এই মসজিদ রাসূল (সা:) কর্তৃক ৬২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ মসজিদ হওয়াতে তিনি বলেছেন : مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ আমার মসজিদই শেষ মসজিদ। এখন আমার প্রশ্ন হল, মসজিদে নববীর পরে কোটি কোটি মসজিদই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন তাতে কি? এগুলো কি রাসূল (সা:)-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত? নিশ্চয় না। কাজেই হাদীসটিকে কেউ বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে পথভ্রষ্ট হতে চাইলে তাতে আমাদের কিছুই করার নেই। হাদিসের অন্যতম কিতাব ‘আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব’ কিতাবে উপরিউক্ত হাদিসটি শব্দের সামান্য পরিবর্তনসহ বর্ণনাকারীর বর্ণনাতে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা:) বলেছেন مسجدى آخر مساجد الأنبياء (মাসজিদী আখেরু মাসাজিদিল আম্বিয়া) অর্থাৎ “আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।”

হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) হতেও এ সম্পর্কে আরেকটি  হাদীসে আছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন أنا خاتم الأنبياء و مسجدى خاتم مساجد الأنبياء অর্থাৎ “আমি সর্বশেষ নবী আর আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।” (দেখুন, কাঞ্জুল উম্মাল হাদীস নং ৩৪৯৯৯; হারামাঈন পরিচ্ছেদ)।  প্রমাণের জন্য আরো দেখা যেতে পারে –  ইমাম নূর উদ্দীন আল হাইছামী (মৃত ৮০৭হিজরী) রচিত ‘কাশফুল আছতার‘।  ইমাম আল ফাকেহী (মৃত ২৭৫ হিজরী) রচিত ‘আখবারু মাক্কা‘। ইমাম ইউছুফ আল মুযনী (মৃত ৭৪২ হিজরী) রচিত ‘তাহযীবুল কামাল‘। ইমাম আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী) রচিত ‘মাছীরুল গারামিস সাকিন ইলা আশরাফিল আমাকিন‘। ইমাম নূর উদ্দিন আলী ইবনে আহমদ আল সামহূদী রচিত ‘খোলাসাতুল ওয়াফা বি-আখবারি দারিল মুস্তফা‘ এর ‘ফাজিলাতু মসজিদিন নাবাবিয়্যি’ শীর্ষক অধ্যায় দ্রষ্টব্য।  তার মানে, রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করার জন্য প্রত্যেক যুগেই নবীগণ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, আর সর্বশেষ নবী হিসেবে আমি (মুহাম্মদ)ও “মসজিদে নববী” নির্মাণ করেছি। যেহেতু আমার পরে আর কোনো নবী নেই, সেহেতু নবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ হচ্ছে আমার মসজিদ তথা মসজিদে নববী।” সংক্ষেপে।

দলিল ৭ :

নবী করীম (সা:) স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস (রা:)-কে সম্বোধন করে বলেন “নবুওয়তে আমি যেমন খাতামুন্নাবিয়্যীন, হিজরতে আপনি তদ্রূপ খাতামুল মুহাজিরীন” (কাঞ্জুল উম্মাল দ্রষ্টব্য)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তের ওহী অব্যাহত থাকা প্রমাণিত হয় না। তার কারণ, অষ্টম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) এ সম্পর্কে লিখেছেন أن العباس بن عبد المطلب هاجر قبيل فتح مكة إلى المدينة فصار خاتم المهاجرين الذين هاجروا من مكة إلى المدينة لأنه لا هجرة بعد فتح مكة من مكة , كما ورد في الحديث الصحيح الذي أخرجه البخاري : ” لا هجرة بعد الفتح ” أي بعد فتح مكة অর্থাৎ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তিনি মক্কা বিজয়ের পূর্বক্ষণে মদীনায় (সপরিবারে) হিজরত করেন। যার ফলে তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারীদের মধ্যে ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ সাব্যস্ত হন। তার কারণ, মক্কা বিজয়ের পর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্ব-বিধান আর বহাল থাকেনি। সহীহ বুখারীতেও এ মর্মে হাদীস উল্লেখ আছে যে, লা হিজরাতা বা’দাল ফাতহে আই বা’দা ফাতহি মাক্কা।’ প্রমাণ হিসেবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত ‘আল ইছাবাহ’ (الاصابة) গ্রন্থের ২য় খন্ডের ২৬৩ নং পৃষ্ঠা এবং ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। মোটকথা হচ্ছে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মদীনায় হিজরত করা সকল মুসলমানের উপর যেহেতু ওয়াজিব ছিল সেহেতু রাসূল (সা:)-এর চাচা আব্বাসের উপরও ওয়াজিব ছিল। তিনি বদর যুদ্ধে গ্রেপ্তার হয়ে অতপর মুক্তি পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তিনি রাসূল (সা:) এর নিকট মক্কায় ফিরে গিয়ে সেখান থেকে মদীনায় হিজরতের অনুমতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মক্কায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও রাসূল (সা:) বিশেষ কারণে তাঁকে তৎক্ষনাৎ হিজরতকরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন يا عم اقم مكانك فان الله يختم بك الهجرة كما ختم بي النبوة অর্থাৎ হে আমার চাচা! আপনি আপনার জায়গাতেই থাকুন। কারণ আল্লাহতায়ালা আমার মাধ্যমে যেরূপ ভাবে নবুওয়তেরধারা শেষ করবেন তেমনি আপনার মাধ্যমে আবশ্যকীয় হিজরতের ক্রমধারাও শেষ করে দেবেন। (ইমাম যাহাবী (রহ:) রচিত ‘মীযানুল ইতিদাল’ এর ১ম খণ্ডের ২৪৫ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। সিয়ারু আলামিন নুবালা থেকে স্ক্যানকপি :-

ইমাম বাগাবী (রহ.) তাঁর ‘শরহে সুন্নাহ‘ কিতাবের দশম খন্ডের ৩৭৩-৭৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মক্কা বিজয়ের পর আর কোনো হিজরত নেই। একথা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, “মক্কা হতে মদীনায় আর কোনো অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের বিধি অবশিষ্ট নেই।” সে হিসেবে রাসূল (সা.) আপন চাচা আব্বাসকে কাছে পেয়ে পূর্বের ভবিষ্যৎবাণীর ভিত্তিতে বললেন “হে আমার চাচা আব্বাস! আপনি খাতামুল মুহাজিরীন তথা শেষ হিজরতকারী। রাসূল (সা.) তাঁকে ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ বলে যেন বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত যেই হিজরত মুসলমানদের উপর আবশ্যক (ওয়াজিব) ছিল আপনি-ই হলেন সেই অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের সমাপ্তকারী। এই ছিল ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। উল্লেখ্য, সেই বছরই তথা ৮ম হিজরী সালের ১০ রমযান তারিখে রাসূল (সা.) ১০,০০০ মুসলিম বাহিনীর এক বিরাট কাফেলা নিয়ে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কোনোরূপ রক্তপাত ছাড়াই মক্কা নগরী জয় করেছেন। 

দলিল ৮ :

নবী করীম (সা.) বলেছেন, “আনা খাতামুল আম্বিয়া ওয়া আনতা ইয়া আলী খাতামুল আওলিয়া” (শীয়া মতাবলম্বী মুহসিন আল কাশানী’র (মৃত. ১০৯১ হিজরী) ‘তাফসীরে সাফী’ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ আমি খাতামুল আম্বিয়া এবং হে আলী তুমি খাতামুল আওলিয়া।

জবাব : না, এটি হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। যতটুকু জানা যায়, ‘খতমুল বেলাদত’ গ্রন্থের রচিতা বিশিষ্ট সাধক আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলী-ই প্রথম এই বাক্যাংশের প্রবর্তক ছিল। সংক্ষেপে তাঁকে হাকিম তিরমিযী বলে। শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ:)-এর কিতাব থেকে জানা যায়, সাধক আবু আব্দুল্লাহ (রহ:) ইতিপূর্বে নিজেকে ‘খাতামুল আওলিয়া’ মনে করত। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি এজন্য ভুল স্বীকার করেছেন এবং ভীষণ অনুতপ্তও হয়েছেন।

হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর যুগ ইমাম, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ:) এ সম্পর্কে তাঁর ‘মাজমু’ ফাতাওয়া’ গ্রন্থের ১১তম খন্ডের ৪৪৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন  : وكذا خاتم الأولياء لفظ باطل لا أصل له. وأول من ذكره محمد بن علي الحكيم الترمذي. وقد انتحله طائفة كل منهم يدعي أنه خاتم الأولياء: كابن حموي، وابن عربي، وبعض الشيوخ الضالين بدمشق وغيرها অর্থাৎ অনুরূপভাবে ‘খাতামুল আওলিয়া’ এটি এমন একটি শব্দ যার কোনো ভিত্তি নেই। এটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন, মুহাম্মদ ইবনে আলী আল হাকিম তিরমিযী। একটি দল এটিকে অবলম্বন করেই তাদের প্রত্যেকে নিজেকে ‘খাতামুল আওলিয়া’ দাবি করত। এদের মধ্যে ইবনে হামাভী, মুহী উদ্দিন ইবনে আরাবীসহ দামেস্ক ইত্যাদি শহরের কিছু সংখ্যক বিপথগামী ছূফীও রয়েছে।” অতএব প্রমাণ পাওয়া গেল যে ‘খাতামুল আওলিয়া’ শীর্ষক শব্দটি মূলত কোনো হাদীসের অংশ নয়। বরং শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর প্রদত্ত তথ্যমতে এটি ‘খতমুল বেলাদত’ গ্রন্থের রচিতা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলীর-ই প্রবর্তিত মাত্র। (রেফারেন্স, প্রাগুক্ত)। তাই অসংখ্য সহীহ হাদীস আর ইজমায়ে উম্মতের মুকাবেলায় কে কী লিখল তা নিয়ে ভাবার দরকার কী? খতমে নবুওয়তের মত এমন একটি চির মীমাংসিত বিষয়ের খেলাফ কারো ব্যক্তিগত কোনো কথার গুরুত্বটাই বা কী?

দলিল ৯ :

সুনানু তিরমিযী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে أن الرسالة و النبوة قد انقطعت فلا رسول بعدى ولا نبى  অর্থাৎ নিশ্চয়ই রেসালত এবং নবুওয়ত বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আর কোনো রাসূল নেই, নবীও নেই। (হাদীসটি সহীহ)। কিন্তু কাদিয়ানিদের বই পুস্তকে শায়খ ইবনে আরাবী (রহ.) এর নাম ভেঙ্গে হাদীসটির একখানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, “হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে নবুওয়ত এবং রেসালতেরধারা বন্ধ—একথার অর্থ হল, কেবল তাশরীয়ী (শরিয়তবাহক) নবুওয়ত ও রেসালত-ই বন্ধ। তাই মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে যিনি আগমন করবেন তিনি এমন কেউ নন যিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের বিপরীতে হবেন। বরং তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর আনিত শরীয়তের-ই অধীনে হবেন।” (ফতুহাতে মাক্কিয়া ২/৩ দ্রষ্টব্য)।

উত্তর : শায়খ ইবনে আরাবী’র উক্ত ব্যাখ্যার সঠিক মর্মার্থ কী তা একই পৃষ্ঠার শেষের দুই-তিন লাইনে নিজেই পরিস্কার করে দিয়েছেন এই বলে যে “যার ফলে ঈসা (আ:) একজন নবী ও রাসূল থাকাটা লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীস অংশের বিরুদ্ধে যায় না।” সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ইবনে আরাবীর উপরিউক্ত বক্তব্যের ইংগিত নুযূলে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর প্রতিই ছিল। তাই তাঁর বক্তব্যটিকে ব্যাপকার্থে ধরে নিয়ে বর্তমানেও নবুওয়ত জারি থাকার আকিদা সাব্যস্ত করতে চাওয়া পুরোপুরি বাতিল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

‘উম্মতি’ শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানীর “নবী” দাবীর গোমর ফাঁস : Click

দলিল ১০ :

ألا انه خليفة فى امتى ألا انه ليس بينى و بينه نبى অর্থাৎ সাবধান! নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) আমার উম্মতের মাঝে একজন খলীফা হবেন এবং তাঁর ও আমার মাঝে আর কোনো নবী নেই। (সুনানু তাবারানী)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পর নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকা বুঝায়নি। বড়জোর, এটি শেষ যামানায় প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর দ্বিতীয়বার আগমন কী হিসেবে হবে তা “আন্নাহু খালীফাতু” শুব্দগুচ্ছের আলোকে সুস্পষ্ট করে দেয়ার জন্যই বর্ণিত হয়েছে। এখানে খুবই লক্ষণীয় ব্যাপার হল, অত্র বর্ণনায় শব্দটি উল্লেখ হবার ধরণ! অর্থাৎ এখানে “খালীফাতু ফী উম্মাতি” (আমার উম্মতের মাঝে একজন খলীফা) চয়িত হয়েছে, কিন্তু “খালীফাতু মিন উম্মতি” (আমার উম্মতের মধ্য থেকে একজন খলীফা)  চয়িত হয়নি। ফলে একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আগত ঈসা দ্বারা এই উম্মতের মধ্য হতে রূপক কেউ হবেনা, বরং “সহীহ মুসলিম শরীফ” এর কিতাবুল ফিতান অধ্যায়ের বর্ণনানুসারে আগত ঈসা দ্বারা বনী ইসরাইলী ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-ই উদ্দেশ্য, যিনি দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর আপনা দুই বাহু রেখে এই উম্মতের মাঝে [আকাশ থেকে] আবির্ভূত হবেন। সংক্ষেপে।  এই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। দেখে নিন। ওয়াস-সালাম।

দলিল ১১ :

হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন : قالوا : يا رسول الله ! متى وجبت لك النبوة ؟ قال : وآدم بين الروح والجسد رواه الترمذي অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (একদা নবীজীকে) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য নবুওয়ত কবে থেকে নির্ধারিত? তিনি (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, যখন আদম রূহ এবং শরীরের মাঝে নিহিত [তখন থেকে আমার জন্য নবুওয়ত নির্ধারিত]। (মেরকাত শরহে মেশকাত, খন্ড নং ১০; হাদীস নং ৫৭৫৮, কিতাবুল ফাজায়েল ওয়াশ শামায়েল)। এই হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে খাতাম অর্থ ‘শেষ’ নয়, বরং ‘শ্রেষ্ঠ’। সুতরাং মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে নবুওয়ত বন্ধ থাকেনি, বরং বিদ্যমান রয়েছে।

জবাব : না, এই হাদীসও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরে ‘ওহীয়ে নবুওয়ত’ জারি থাকার পক্ষে কোনোই ইংগিত করেনা। যেহেতু বিষয়টি আমরা হযরত ইরবাছ ইবনে সারিয়াহ (রা.) হতে আরেকটি হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট করে নিতে পারি। হাদীসের ভাষ্য, أنه قال إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين অর্থাৎ রাসূল (সা:) বলেছেন নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর নিকটে খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম (আল-মেশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফাজায়েল ওয়াশ শামায়েল)। খুব খেয়াল করুন, এখানে বলা হয়েছে مكتوب (মাকতূব) অর্থাৎ লিপিবদ্ধ ছিলাম। হাদীস কিন্তু বলছেনা যে, রাসূল (সা.) স্বীয় জন্মের পূর্ব থেকেই নবুওয়ত লাভ করেছেন বরং বলছে, খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম (যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হবে)। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

দলিল ১২ :

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ নামে কারা সম্বোধন করত এবং কেন করত?

মক্কার মুশরিকরা রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনে আবি কাবশাহ‘ কেন বলত? এর জবাব আমি আরবী ভাষার একটি ওয়েব সাইট থেকে বাংলায় অনুবাদ করে পাঠকদের উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরছি। (আরবী):

كان المشركون يطلقون على النبي صلى الله عليه وسلم (ابن أبي كبشة)، فمن أبو كبشة ؟ قيل: هو جد النبي صلى الله عليه وسلم من قبل أمه، وهو والد أمه آمنة واسمه وهب بن عبد مناف بن زهرة. وقيل: هو جد النبي صلى الله عيبه وسلم من قبل جدة أبيه، وهو والد سلمى الأنصارية الخزرجية والدة عبد المطلب، وهو ابن عمرو بن زيد بن لبيد الخزرجي. وقيل: هو الحارث بن عبد العزي السعدي زوج حليمة التي أرضعت النبي صلى الله تعالى عليه وسلم في صغره وقيل: هو “جزء بن غالب بن عامر بن الحارث بن غبشان الخزاعي”، أو “وجز بن غالب”، وهو من خزاعة ثم من بني غبشان، أحد أجداد النبي من قبل أمهاته سبب تسمية قريش النبي صلى الله عليه وسلم بأبي كبشة كان مشركو قريش يسمون النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابن أبي كبشة حين دعا إلى الله وخالف أديانهم، تشبيهاً لأبي كبشة (وجز بن غالب)، الذي خالف قريشاً في عبادة الأوثان فعبد الشعر (والشعرى هو النجم المضيء الذي يخرج في شدة الحر)، فنسبوه إليه للاشتراك في مطلق المخالفة وقيل: إن قريشاً كانت تنسب النبي صلى الله عليه وسلم إلى جد غامض غير معروف تحقيراً له؛ لأن العرب كانت إذا حقرت إنساناً نسبته إلى جدٍ غامض غير معروف في الناس. والله أعلم

(বাংলা) অনুবাদ : মুশরিকরা নবী করীম (সা:)-কে ‘ইবনে আবি কাবশাহ’ বলত! তো কে সেই ‘আবু কাবশাহ’? জবাবে বলা হয় যে, কারো মতে “আবি কাবশাহ” ছিলেন নবী করীম (সা:)-এর আম্মা বিবি আমেনার বংশের দিক থেকে উনার নানা। যিনি নবী করীম (সা:)-এর আম্মা বিবি আমেনার পিতা জনাব ওয়াহাব ইবনু আব্দে মানাফ ইবনু যোহরাহ। কারো মতে, নবী করীম (সা:)-এর বাবার দাদীর বংশের দিক থেকে নবী করীম (সা:)-এর একজন পর-দাদা, যিনি আব্দুল মুত্তালিবের আম্মা জনাবা সালমা আল আনসারিয়্যাহ আল খাজরাজিয়্যাহ’র পিতা ছিলেন। তার নাম ছিল, ইবনু আমর ইবনু যায়েদ ইবনু লাবিদ আল খাজরাজী। কারো মতে, তিনি নবী করীম (সা:)-এর দুধমাতা জনাবা হালিমা’র স্বামী জনাব হারেছ ইবনু আব্দুল উজ্জা আস-সা’দিয়্যি। কারো মতে, তিনি নবী করীম (সা)-এর মাতার দিক থেকে কোনো এক দাদা ছিলেন, যার নাম, জুয ইবনু গালিব ইবনু হারিছ ইবনু গাবশান আল-খাজায়ী। অথবা জুয ইবনু গালিব যিনি বনু খাজা’আ গোত্রের এমনকি বনু গাবশান গোত্রেরও (পূর্বপুরুষ ছিলেন)। রাসূল (সা:)-কে ইবনে আবি কাবশাহ নামে নামকরণ করার কারণ এই যে, আবি কাবশাহ নামের রাসূলের পূর্বপুরুষ (পরদাদা/নানা) লোকটি কোরাইশ মুশরিকদের মূর্তিপূজার যেমন বিরোধিতা করত ঠিক তেমনি রাসূল (সা:)ও যখন মুশরিকদের আল্লাহ’র দিকে ডাকতেন এবং তাদের পৌত্তলিক ধর্মগুলোর বিরোধিতা করতেন তখন তারা তাঁকে অনুরূপ বিরোধিতার কারণে সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে ‘ইবনে আবি কাবশাহ’ (অর্থাৎ আবি কাবশাহ’র বংশধর) বলতো। [উল্লেখ্য, ‘ইবনু‘—এর আরেক অর্থ ‘বংশধর‘। যেমন, সমস্ত মানুষকে ‘বনী আদম’ তথা আদমের বংশধর বলা হয় – অনুবাদক]। কেউ কেউ বলেন, কোরাইশ মুশরিকরা একজন অপ্রসিদ্ধ ও রহস্যময় ব্যক্তির দাদা’র প্রতি সম্বোধন করে নবী করীম (সা:)-কে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে ‘ইবনু আবি কাবশাহ’ বলতো। কেননা, কোরাইশরা যখন কাউকে অপমান করতে চাইত তখন এভাবেই তাকে সম্বোধন করতো। (আল্লাহু আ’লাম।) অনুবাদ শেষ হল।

উল্লিখিত লিখাটি দ্বারা আমাদের কী ম্যাসেজ দেয়া উদ্দেশ্য?

এই বিষয়ে লিখাটি এখানে অনুবাদ করার উদ্দেশ্য হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবীকে অযৌক্তিক নয় সাব্যস্ত করার জন্য রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ বিষয়টি টেনে আনার চেষ্টা করে এবং যুক্তি দেয় যে, মির্যা কাদিয়ানী ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবী অযৌক্তিক হলে তবে রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়ার কী যুক্তি?

এর জবাব হল, প্রথমত, রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়া এটি উনার নিজের কোনো দাবী ছিল না। তিনি কখনো নিজেকে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়ার দাবী করেননি! বরং মক্কার উগ্র মুশরিকরাই উনাকে এইরকম শব্দচয়নে সম্বোধন করত! তাও ভালো উদ্দেশ্যে নয়, বরং কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যেই। অপর দিকে মির্যা কাদিয়ানী ইবনে মরিয়ম হওয়ার দাবী নিজেই করেছিল এবং সে এই দাবীর ভিত্তিতে নিজেকে হযরত ঈসা (আ:) অপেক্ষায় মর্যাদায় বড় দাবী করত। (দেখুন হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১১৯)।

দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আবু কাবশাহ নামক ব্যক্তিটি কোরাইশদের কোনো একজন পূর্বপুরুষ ও মূর্তি পূজা-বিরোধী, যার সাথে রাসূল (সা:)-এর বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ তথা আবু কাবশাহ’র বংশধর বা আবু কাবশাহ’র উত্তরসূরী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা কোনোভাবেই অযৌক্তিক ছিলনা। অপর দিকে মির্যা কাদিয়ানীর ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবী সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক ছিল। কেননা তার মায়ের নাম ছিল, চেরাগ বিবি! আর তার পূর্ব পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিটির নাম ছিল মোঘল বরলাস। তিনি সম্রাট তৈমুরলং এর বংশধর। (দেখুন, আহমদ রচিত (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১)। সে হিসেবে তার ‘ইবনে তৈমুর লং’ হওয়াই যৌক্তিক ছিল!

শেষকথা, দীর্ঘ আলোচনা হতে বুঝা গেল, রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ এর উপর অনুমান করে মির্যার ‘ইবনে মরিয়ম’ দাবীকে কোনোভাবেই যুক্তির মানদণ্ডে উঠানো যায় না। তাই তাদের ওই সমস্ত যুক্তি পুরোপুরি বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত!

অনুবাদক ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম. এ

‘উম্মতি’ শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানীর “নবী” দাবীর গোমর ফাঁস

মির্যা কাদিয়ানীকে কথিত “উম্মতিনবী” মান্যকারীরা কি আমার এই ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেবেন? প্রশ্নগুলো ধারাবাহিকভাবে নিচে তুলে ধরা হল :

  • প্রশ্ন করার আগে বলে রাখা দরকার যে, আমরা যখনি মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবী করার বিষয়ে আপত্তি করি তখনি অধিকাংশ কাদিয়ানী মির্যাকে রক্ষা করতে বলে থাকেন যে, আরে না না; উনি নবী দাবী করেননি, উনি তো বরং উম্মতিনবী দাবী করেছিলেন! যার অর্থ ‘মুহাদ্দাস‘, প্রকৃত নবী নয়! তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রশ্ন হল,
লিখক, মির্যা কাদিয়ানী

১। তার মানে কি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, যিনি উম্মতিনবী হওয়ার দাবী করেন তাকে মূলত ‘নবী’ দাবীদার বলা যায় না? যদি তাই হয় তাহলে আপনাদের বইতে যে লিখা আছে “তিনি যেমন একজন উম্মতি তেমনি দায়রা-এ-মুহাম্মদীয়ার মধ্যে অবস্থান করেই একজন নবীও” (দেখুন, উম্মতিনবী ৯)। একথার অর্থ কী এই নয় যে, মির্যা সাহেব একই সাথে ‘উম্মতি’ এবং ‘নবী’ দুইয়েরই দাবীদার ছিলেন? তো এবার তিনি ‘নবী’ দাবী করেননি একথা কিভাবে বলতে পারেন? অন্যথা তাকে ‘নবী’ শব্দ বাদ দিয়ে শুধু ‘উম্মতি’ শব্দে লিখা হল না কেন? তাহলে তো সবাই বুঝে নিতেন যে, সে নবী নয়, শুধুমাত্র একজন ‘উম্মতি’!

২। আপনারা এও বলেন যে, তিনি তো শরীয়ত ওয়ালা নবী হওয়ার দাবী করেননি! আমি উত্তরে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, তাহলে প্রথমেই কেন তার ‘নবী’ দাবী অস্বীকার করেন? প্রথমেই কেন তার দাবীকে উম্মতি, বুরুজি এসব শব্দে বিশেষিত করেন? যাইহোক, তারপর রইল মির্যার দাবীর মধ্যে শরীয়তধারী হওয়াও ছিল কিনা? তার জবাবে আমি মির্যার বই থেকেই এখানে তুলে ধরছি, তিনি লিখেছেন : (ক) “শরীয়তধারী নবীকে অস্বীকার করা ব্যতীত অন্য আর কাউকে অস্বীকার করায় কেউ কাফের হবেনা, চাই সে যেই পর্যায়েরই মুলহাম বা মুহাদ্দাস হোক, কিংবা মহান আল্লাহর নিকট যেই মর্যাদারই অধিকারী হোক না কেন?” (রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৩২)। অধিকন্তু মির্যা সাহেব তার অস্বীকারকারীদের কাফের, অমুসলিম এবং জাহান্নামী আখ্যায়িত করার বহু প্রমাণ রয়েছে। তাযকিরা (উর্দু) পৃষ্ঠা নং ৫১৯; চতুর্থ এডিশন দ্রষ্টব্য। তারপরেও কি বলতে চান যে, মির্যা শরীয়তধারী নবী হওয়ার দাবী করেনি!?

তিনি অন্য জায়গায় আরো সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন : (খ) “এ ছাড়া এটিও তো চিন্তা কর শরীয়ত কী বিষয়? যিনি নিজের ওহীর মাধ্যমে কতক আদেশ ও নিষেধ বর্ণনা করেন আর স্বীয় উম্মতের জন্য নিয়মকানূন নির্ধারণ করেন তিনিই শরীয়তবাহকও হয়ে যান। সুতরাং এ সংজ্ঞার দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের বিরোধীরা অভিযুক্ত কেননা আমার ওহীতে আদেশ নিষেধ উভয়ই আছে” (দেখুন, আরবাঈন ১০০-১০১, বাংলা অনূদিত)। এখানে মির্যা কাদিয়ানী শরীয়তধারীর সংজ্ঞা দিয়েই শেষে ‘কেননা আমার ওহীতে আদেশ নিষেধ উভয়ই আছে’ উল্লেখপূর্বক নিজেকে প্রকারান্তরে শরীয়তধারীর অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করলেন কিনা? আসলে মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো আপনাদের পড়া নেই বলেই আপনারা কখনো বলেন সে নবী দাবী করেনি, কখনো বলেন শুধু উম্মতিনবী দাবী করেছিল; আবার কখনো বলেন সে শরীয়তধারী নবী দাবী করেনি। আর যখন তারও প্রমাণ দেয়া হয় তখন সত্যটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য টেনে আনেন ঈসা (আ:) এর প্রসঙ্গ; তিনি জীবিত না মৃত!

৩। আপনাদের বইতে মির্যার নবী দাবীর ব্যাখ্যায় লিখা হয় যে, তার দ্বারা ‘মুহাদ্দাস’ উদ্দেশ্য। এই দেখুন আপনাদের বইতেই লিখা আছে “পক্ষান্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে শরীয়তবিহীন ওহী একাধারে লাভ করার দাবীও বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন এবং এই ওহী প্রাপ্তির মর্যাদাকে মুহাদ্দাসিয়্যত বলে অভিহিত করেছেন” (হামামাতুল বুশরা ১৪৮; টিকা, বাংলা অনূদিত)। এখানে অন্ততপক্ষে মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ (বান্দার সাথে আল্লাহর কথোপকথন) বলে বুঝানোর প্রমাণ পাওয়া গেল! তাই এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো মুহাদ্দাসকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফের কেন হবে? তার থেকে কেউ ফিরে এলে তাকে মুরতাদ কেন বলা হবে?

৪। এখন হয়ত কেউ বলতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানী কোথায় লিখেছেন যে, তার অস্বীকারকারী ব্যক্তি অমুসলিম বা তার থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী? তার জবাব হল, মির্যা সাহেব থেকে তার বহু লেখাতে এর প্রমাণ রয়েছে। দেখুন, তাযকিরাহ (উর্দু) ৫১৯, হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) ১৩০। মির্যা কাদিয়ানী তার দীর্ঘ বিশ বছরের সঙ্গী ডাক্টার আব্দুল হাকিম খানকে তার বইয়ের বিভিন্ন স্থানে ‘মুরতাদ’ ও ‘অমুসলিম’ আখ্যা দিয়েছে শুধু এই কারণে যে, সে মির্যাকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে ত্যাগ করেছিলেন। তাই প্রশ্ন বরাবরের মতই, যার নবী দাবী হতে ভিন্ন কিছু অর্থাৎ মুহাদ্দাস উদ্দেশ্য তাকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কেন কাফের বা মুরতাদ হবে? এমতাবস্থায় আপনারা নতুন আরেকটি ধর্মমতের অনুসারী বলেই গণ্য হবেন না কেন?

৫। হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, এই উম্মতের মধ্যে মুহাদ্দাস হিসেবে একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিটি হযরত উমরই। খোদ মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও লিখা আছে যে, “আর জেনে রেখো! এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা:) এর সুন্নত ও হাদীস থেকে যা প্রমাণিত তা হলো, তিনি (সা:) বলেছেন : তোমাদের পূর্বে বনী ঈসরাইলীদের মাঝে এমন মানুষও ছিলেন যারা নবী না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’লা তাদের সাথে বাক্যলাপ করেছেন আর আমার উম্মতে যদি এমন কেউ থাকে সে হলো উমর। পুনরায় বলেছেন, তোমাদের পূর্বে যে সকল উম্মত গত হয়েছে তাদের মাঝে মুহাদ্দাসও ছিলেন। আমার এই উম্মতে যদি তাদের মতো কেউ থাকে তিনি হলেন, উমর বিন খাত্তাব।” (সহীহ বুখারী) হামামাতুল বুশরা ১৪৫-৪৬ (বাংলা অনূদিত) দ্রষ্টব্য। এখানে সহীহ বুখারীর উক্ত হাদীস এর ‘আমার উম্মতে যদি এমন কেউ থাকে সে হলো উমর’ এই কথা দ্বারা উমর (রা:) ব্যতীত এই উম্মতে আর কেউই মুহাদ্দাস হবেনা বলেই সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হল। এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানীর নবী শব্দটিকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ বলে অভিহিত করার সুযোগ কোথায়? এটি কি সরাসরি হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ নয়?

৬। তর্কের খাতিরে মানলাম যে, মির্যার নবী শব্দটির উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু তথা মুহাদ্দাসিয়্যত-ই। অধিকন্তু ‘মুহাদ্দাস‘ আর ‘নবী‘ এই দুইয়ের মাঝে অন্তর্নিহিত যোগ্যতা এবং এর কার্যকারিতার পার্থক্য থাকাটা খোদ মির্যা কাদিয়ানী নিজেও স্বীকার করে লিখে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন “আমি আমার কোনো কোনো বইয়ে লিখেছি, মুহাদ্দাসের মর্যাদা নবীর পদমর্যাদার সাথে গভীরভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই দুইয়ের মাঝে অন্তর্নিহিত যোগ্যতা এবং এর কার্যকারিতার পার্থক্য ছাড়া অন্য কোনো পার্থক্য নেই” (হামামাতুল বুশরা ১৪৬, বাংলা অনূদিত)। খেয়াল করুল, তার এই কথায় যদিও স্ববিরোধি কথার ছাপও রয়েছে তথাপি এইটুকু তো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, একজন নবী আর একজন মুহাদ্দাস, এই দুইয়ের মাঝে অন্তর্নিহিত যোগ্যতা এবং এর কার্যকারিতার পার্থক্য রয়েছে। কাজেই এই পার্থক্যের দেয়াল টপকে কিভাবে বলা যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীকৃত নবীর উদ্দেশ্য মুহাদ্দাসিয়্যত!

৭। মির্যা কাদিয়ানীর কথায় বহু স্ববিরোধ থাকা সত্ত্বেও তিনি এক জায়গায় এও লিখেছেন “যদি নবুওয়তের দ্বার রুদ্ধ না হতো তাহলে কার্যত: তিনি (অর্থাৎ মুহাদ্দাস ব্যক্তিটিও) নবীই হতেন” (হামামাতুল বুশরা ১৪৬, বাংলা অনূদিত)। এতে একদম সুস্পষ্ট হল যে, নবী আর মুহাদ্দাস ভিন্ন ভিন্ন দুই জিনিস! তাহলে মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীকে ভিন্ন কিছু বলে ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ কোথায়? কী জবাব?

৮। মির্যা কাদিয়ানীর মতে কেয়ামত পর্যন্ত আরো যে সমস্ত ‘মুহাদ্দাস’ আসবে তাদেরই মধ্য হতে সে নিজেও একজন বলে লিখে গেছেন। যেমন সে লিখেছে “আঁ হযরতের পরে এই উম্মতের জন্য কোন নবী আসবেনা, না নূতন, না পুরাতন। …তবে মুহাদ্দাস আসবে যার সঙ্গে খোদা বাক্যালাপ করেন এবং পূর্ণ নবুওয়তের কিছু গুণাবলীর তারা প্রতিছায়ারূপে অধিকারী হন এবং কোন কোন দিক দিয়ে নবুওয়তের শান ও মর্যাদার রঙ্গে রঙ্গীন হন। তাদেরই মধ্যে আমি একজন” (নিশানে আসমানী বা শাহাদাতুল মুলহামীন ৪৩ [বাংলা]; লিখক মির্যা কাদিয়ানী)। এখানে খেয়াল করুন ‘তাদেরই মধ্যে আমি একজন’ এইভাবেই উল্লেখ থাকার পরেও সেই ‘আমি’টা (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) কিভাবে লিখতে পারলেন, ‘আমিই একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি’ অর্থাৎ বুরুজি, উম্মতিনবী হিসেবে একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিটা আমিই! যেমন তারই ভাষ্য হচ্ছে – “মোটকথা খোদার ওহী ও অদৃশ্য বিষয়ের এই বিপুল অংশের জন্য এই উম্মতে আমিই একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি” (হাকীকাতুল ওহী ৩৩০, বাংলা অনূদিত)! তাই প্রশ্ন হল, তিনি যাদেরই মধ্য হতে তাদের কেউই যা হতে পারেনা তা মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে পারল? তবে কি আল্লাহতায়ালা মুহাদ্দাসদের মধ্যে এমন বৈষম্যপূর্ণ আচরণও করেন, বলবেন? নাউযুবিল্লাহ।

৯। মির্যা কাদিয়ানী এক জায়গায় ঈসা (আ:) সম্পর্কে লিখেছে “আর যেহেতু খোদাতায়ালা কাহারো আকাশে চলে যাওয়ার মত পূর্ব কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেননি তাতেই প্রমাণ হয় তাঁর আকাশে চলে যাওয়ার বিশ্বাস একটি ডাহা মিথ্যা” (মালফূযাত [উর্দু] খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৩৪০, নতুন এডিশন)। এখানে তিনি ‘পূর্ব কোনো দৃষ্টান্ত’ এইরূপ শব্দচয়নে যেই অজুহাতে ঈসা (আ:)-এর আকাশে চলে যাওয়ার বিশ্বাসকে ডাহা মিথ্যা বললেন সেই একই অজুহাতে তার নিজের কথিত উম্মতিনবী দাবীটাও কেন ডাহা মিথ্যা হবেনা? কেননা এই তথাকথিত উম্মতিনবী কোনো কালে ছিলনা, হবেও না। কী জবাব?

১০। সর্বশেষ এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনাদের বুঝার মত জ্ঞান থেকে থাকে। ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, আপনাদের বইতেই লিখা আছে “পক্ষান্তরে (মির্যা সাহেব) আল্লাহর পক্ষ থেকে শরীয়তবিহীন ওহী একাধারে লাভ করার দাবীও বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন এবং এই ওহী প্রাপ্তির মর্যাদাকে মুহাদ্দাসিয়্যত বলে অভিহিত করেছেন” (হামামাতুল বুশরা ১৪৮; টিকা, বাংলা অনূদিত)। খুব খেয়াল করুন, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীকৃত নবুওয়তকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ শব্দে অভিহিত করা হয়েছে। আর এইজন্যই তার অনুসারীরা বলতে চাচ্ছে যে, মির্যা সাহেব প্রকৃতপক্ষে নবুওয়তি ওহী লাভ করার দাবী করেননি, বরং ভিন্ন কিছু তথা মুহাদ্দাস হওয়ার দাবী করেছেন! অথচ মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও তথাকথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন যে, “মির্যা সাহেব ১৯০১ সালে নবুওয়ত সংক্রান্ত পূর্বের আকীদায় পরিবর্তন এনেছেন।” দেখুন তার বইগুলোর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম’ [উর্দু] খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৪৪। তিনি একই পৃষ্ঠায় তার প্রমাণও উল্লেখ করেছেন এই বলে যে, তাই তিনি প্রথমে নিজেকে বনী ঈসরাইলী মসীহ থেকে নিজেকে মর্যাদায় নগন্ন আখ্যা দিয়েছিলেন। যেহেতু গয়রে নবী কখনো একজন নবীর সম-মর্যাদার হতে পারেনা। কথিত মুসলেহ মওউদ আরো সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন “সুতরাং এক দিকে তার বইগুলো দ্বারা একথা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, ১৯০১ সাল থেকে তিনি নবী শব্দ বারবার ব্যবহার করেছেন আর অপরদিকে ‘তারিয়াকুল কুলুব’ (রচনাকাল ১৮৯৯সাল)’র পরে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, তিনি নবুওয়ত সম্পর্কে আপনা আকীদায় পরিবর্তন এনেছেন। অতএব সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, ১৯০১ সালের পূর্বে তিনি যে সমস্ত স্থানে নবী হওয়া অস্বীকার করেছেন তা বর্তমানে মানসূখ তথা রহিত হয়ে গেছে। তাই সেগুলো দ্বারা এখন দলিল পেশ করা ভুল হবে।” দেখুন, তার বইগুলোর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম’ [উর্দু] খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৪৫। সেযাইহোক, আপনারা মির্যার নবী শব্দকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ বলে অভিহিত করাটাও বর্তমানে রহিত হয়ে গেছে মর্মে খোদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নিজেই বলতেছেন! তারপরেও কি বলতে চান যে, না না, মির্যা সাহেব নবী বলে ভিন্ন ধরণের কিছু অর্থাৎ মুহাদ্দাস হওয়ার দাবীই করেছেন!! আফসোস! একজন নবুওয়ত দাবীদার কিভাবে এমন বহুরূপী হতে পারে তা সত্যিই অবাককরা বিষয়!

পরিশেষে প্রমাণিত হয়েছে যে, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীকৃত নবী শব্দকে আপনারা উম্মতি বুরুজি কিংবা জিল্লি যত শব্দেই বিশেষিত করেননা কেন, তাকে কোনোভাবেই হালাল করা যাবেনা! সে যে নবুওয়তের দাবী করে মুসাইলামা কাজ্জাবেরই শিষ্যত্ব বরণ করেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। নতুবা উপরের প্রশ্নগুলোর কী জবাব? শেষমেষ হয়ত বলবেন, যে যাই বলুক, মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীটাই সঠিক! তা যে অর্থেই হোক; উম্মতি নবী হোক অথবা প্রকৃত নবী হোক। তার উত্তরে আমি বলব, আপনার বিশ্বাস আপনার সাথে তাতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। তবে আমার আপত্তি শুধু এক জায়গায়, তা হল আপনাদের প্রকৃত ধর্ম-বিশ্বাস যখন এইরূপই তখন কিজন্য সাধারণ মানুষদের এগুলো বলেন না? নিজেদের রিয়েল আইডেন্টিটি তথা প্রকৃত পরিচয় গোপন করে কেন প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষদের ধোকা দিতে বলেন যে, আহমদী আর অ-আহমদীদের মাঝে পার্থক্য শুধু এটাই যে, আগমনকারী ইমাম মাহদীকে আমরা মেনে নিয়েছি আর অ-আহমদীরা মনে করে সেই ইমাম মাহদী এখনো আসেনি! হায় হায়!! একি জঘন্য ধোকাবাজি কথা! সবাইকে ধন্যবাদ। লিখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

(সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট গুলোর স্ক্রিনশট লাগলে দেয়া যাবে)

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কুরআন শরীফের এক জায়গায় ‘মরিয়ম’ শব্দের সর্বনাম পদ পুংলিঙ্গ বাচক হল কেন?

  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কুরআন শরীফের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যার অন্তরালে নিজের “বিবি মরিয়ম” দাবী কিভাবে হালাল করার চেষ্টা করেছিল জেনে নিন!!

পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাহরীম এর মধ্যে আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন :

وَ مَرۡیَمَ ابۡنَتَ عِمۡرٰنَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ صَدَّقَتۡ بِکَلِمٰتِ رَبِّہَا وَ کُتُبِہٖ وَ کَانَتۡ مِنَ الۡقٰنِتِیۡنَ

উচ্চারণ : ওয়া মারইয়ামাবনাতা ‘ইমরা-নাল্লাতীআহসানাত ফারজাহা-ফানাফাখনা-ফীহি মিররূহিনাওয়া সাদ্দাকাত বিকালিমা-তি রাব্বিহা-ওয়া কুতুবিহী ওয়া কা-নাত মিনাল কা-নিতীন।

অর্থাৎ (আল্লাহ আরো উদাহরণ পেশ করেন) ইমরান কন্যা মরিয়মের, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম। আর সে তার রবের বাণীসমূহ ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যতা স্বীকার করেছিল এবং সে ছিল অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (আত-তাহরীম/৬৬:১২)।

আয়াতের ‘ফানাফাখনা-ফীহি‘-তে “মরিয়ম” শব্দের জন্য পুং লিঙ্গ বাচক সর্বনাম উল্লেখ করার ব্যাখ্যায় মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, এই থেকে উদ্দেশ্য হল, সমস্ত মুমিন “মরিয়মী” গুণ অর্জনকারী হিসেবে রূপক অর্থে তারা সবাই ‘বিবি মরিয়ম’-ও। ফলে আয়াত (৩:৩৬) অনুসারে “বিবি মরিয়ম” এর ন্যায় তারা প্রত্যেকে শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে! মির্যার উক্ত মনগড়া ব্যাখ্যার জবাবে বলা হবে যে,

আলোচ্য আয়াতে সর্বনামপদ পুং লিঙ্গ নেয়ার আগে তো “আল্লাতী” (الَّتِیۡۤ) স্ত্রীবাচক ইসমে মওছূল-ও নেয়া হয়েছে। এখানে কী বলবেন?

সূরা আত তাহরীম /৬৬ঃ১২

সেযাইহোক আয়াতটিতে সর্বনামপদ পুং লিঙ্গ নেয়ার কারণ হচ্ছে, “মরিয়ম” শব্দটি শব্দগত (লফজী) দিক থেকে পুং লিঙ্গ যদিও বা বিধানগত (মা’নবী) দিক থেকে সেটি স্ত্রী লিঙ্গ। অনুরূপ কোনো একটি শব্দ পবিত্র কুরআনের মধ্যে শব্দগত পুং লিঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও বিধানগত (মা’নবী) স্ত্রী লিঙ্গ হওয়াতে সেটি স্ত্রীবাচক ক্রিয়াপদ দ্বারাও ব্যবহৃত হওয়া প্রমাণিত। যেমন – লাং তামাচ্ছাহুন না-রু ইল্লা আইয়্যামাম মা’দূদা-ত (সূরা আলে ইমরান ২৪)। এখানে “আইয়্যাম” শব্দটি শব্দগত পুং লিঙ্গ কিন্তু বিধানগত স্ত্রী লিঙ্গ (যেমনিভাবে মরিয়ম শব্দটি শব্দগত পুং লিঙ্গ কিন্তু বিধানগত স্ত্রী লিঙ্গ।) তাই এই থেকে এমন কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করা যাবেনা যে, সমস্ত মুমিন ‘মরিয়মী’ গুণ অর্জনকারী বলেই তারাও শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে! পরন্তু এইধরণের ব্যাখ্যা শুধুই তাহরীফ (বিকৃতি) নয়, রীতিমত হাস্যকর-ও।

এবার তাহলে প্রশ্ন হতে পারে যে, মরিয়ম (আ:)-কে তাঁর জন্মমুহূর্তে শয়তান কেন স্পর্শ করতে পারেনি। উত্তরে বলা হবে, হযরত মরিয়ম (আ:)-এর মাতার বিশেষ দোয়ার কারণেই আল্লাহতায়ালা তাঁকে এবং তাঁর সন্তানকে শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য, ইন্নী ও’ঈযুহা বিকা ওয়া যুররিয়্যাতাহা মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম (০৩:৩৬)। অর্থাৎ আমি তোমার নিকট তাঁর এবং তাঁর সন্তানের ব্যাপারে শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি।

এবার বাকি থাকল, মরিয়ম আর তার সন্তান ব্যতীত অন্যান্য নবীগণও শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়েছেন কিনা? উত্তর হল, জ্বী হ্যাঁ। কেননা পবিত্র কুরআনের ভাষ্য (২১:১০১) অনুসারে নবীগণের প্রত্যেকের জন্য পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত। তাই তাঁরা আল্লাহর বিশেষ হেফাজতের চাদরে আবৃত। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। তাই শয়তানের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় যে, সেই অনুগ্রহের চাদর ভেদ করে অভ্যন্তরে ঢুকবে এবং তাঁদের স্পর্শ করে আল্লাহ’র উপর জয়লাভ করবে! সুতরাং রাসূল (সা:) সহ আরো যারা শয়তানের স্পর্শতা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তারা কথিত “মরিয়মী” গুণেগুনান্বিত হয়ে নয়, বরং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের চাদরে আবৃত থাকার মু’জিজার কারণেই। অধিকন্তু “মরিয়ম” শব্দটি কুরআনের প্রায় সকল জায়গায় স্ত্রীবাচক শব্দেও এসেছে। যেমন “ইয়া মারইয়ামুক্বনুতী লি-রাব্বিকে ওয়াসজুদী ওয়ারক্বা’ঈ মা’আর রাকি’ঈন” (সূরা আলে ইমরান ৪৩)। এখানে “যের যুক্ত কাফ [কে]” স্ত্রী বাচক সর্বনাম পদ হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ মরিয়ম (আ:) সম্পর্কে বলেছেন, “ওয়াসত্বফাকে আ’লা নিসা-ইল আ’লামীন” অর্থাৎ তিনি [আল্লাহ] তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত নারীর উপর মনোনীত করেছেন। তাই এবার কাদিয়ানীদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনাদের এসমস্ত অপব্যাখ্যা মতে মির্যা সহ যারাই “মরিয়ম” হবে তারা কি দুনিয়ার নারীদের উপর মনোনীত হওয়ার সেই শ্রেষ্ঠত্বও লাভ করবে?

মজার ব্যাপার হল, সূরা মরিয়ম এর ৫৫ নং আয়াতে ইসমাইল (আ:) সম্পর্কে এসেছে “ওয়া কা-না ইন্দা রাব্বিহি মারদ্বিয়্যাহ” অর্থাৎ সে ছিল তাঁর প্রভুর নিকট সন্তোষপ্রাপ্ত। তো এর মানে কি অন্য নবীগণ আল্লাহর নিকট সন্তোষপ্রাপ্ত ছিলেন না? নতুবা কুরআনে “মারদ্বিয়্যা” শব্দটি শুধুমাত্র ইসমাইল (আ:)-এর জন্য বিশেষভাবে কিজন্য ব্যবহৃত হল? ভাবিয়ে তুলে কিনা??

অতএব মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে “বিবি মরিয়ম” দাবী করার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কুরআনের আয়াতকে যেভাবে ইচ্ছেমত বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে গেছে অনুরূপ গত চৌদ্দশত বছর থেকে আর কোনো বরেণ্য তাফসীরকারক থেকে প্রমাণিত নয় বলে তার কৃত ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক কথাবার্তা সর্বান্তকরণে পরিত্যাজ্য। যেজন্য মির্যা আর মির্যায়ী উম্মত ভন্ড, মুরতাদ এবং জিন্দিক বলেই প্রমাণিত। আশাকরি জবাব পেয়েছেন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক