Home Blog Page 31

শায়খ ইবনে কাইয়ুম (রহ:) এর আকীদা ঈসা (আ:) জীবিত

  • ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এর আকিদা ঈসা (আ:) জীবিত ও আকাশেই আছেন!

প্রথমে বলে রাখা দরকার যে, কাদিয়ানিদের দৃষ্টিতে ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) ছিলেন সপ্তম শতাব্দির মুজাদ্দিদ। দেখুন মির্যা খোদা বখশ কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ ১/১৬৪। স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন, ইবনে কাইয়ুম (রহ:) তদানীন্তন সময়ের একজন মুহাদ্দিস, মুফাসসির এবং যুগের ইমাম ছিলেন। (রূহানী খাযায়েন ১৩/২২১)। এবার আমরা ইবনে কাইয়ুম (রহ:) -এর বক্তব্য জানব। ইবনে কাইয়ুম (রহ:) লিখেছেন : وهذا المسیح ابن مریم حی لم یمت وغذأہ من جنس غذاء الملائكة অর্থাৎ মসীহ ইবনে মরিয়ম তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। ফেরেশতাদের (আধ্যাত্মিক) খাবারের মতই তাঁকেও খাওয়ানো হয়। (দেখুন, আত-তিবইয়ান ফী আকসামিল কুরআন: পৃষ্ঠা নং ২৫৫; মাকতাবাতুল মুতানাব্বী কায়রো মিশর, মূল লিখক, ইবনে কাইয়ুম কৃত)।

মূল লিখক, বরেণ্য যুগ ইমাম শায়খ ইবনুল কাইয়ুম রহ:

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) আরো লিখেছেন : و اجتمعوا على قتل المسيح و صلبه فضانه الله من ذلك و أكرمه ان يهينه على أيديهم و ألقى شبهه على غيره فقتلوه و صلبوه. অর্থাৎ ইহুদীরা ঈসাকে হত্যা এবং ক্রুসবিদ্ধ করতে সবাই একত্রিত হলে আল্লাহতালা তাঁকে তা হতে রক্ষা করেন এবং তাঁকে তাদের হাতে অপদস্ত হওয়া থেকে সম্মানিত করেন আর তিনি অন্য একজনকে তাঁঁর সাদৃশ করে দেন। ফলে তারা তাকে হত্যা করে এবং ক্রুসবিদ্ধ করে। (হিদায়াতুল হাইয়ারা ফী আজবিবাতিল ইয়াহুদ ওয়ান নাসারা, পৃষ্ঠা নং ৪৮; ইবনুল কাইয়ুম রহ:)। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য

ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) তিনি আরো লিখেছেন : المسلمین الذی ینتظرونه هو عبدﷲ ورسوله وروحه وکلمته القاها الی مریم العذراء البتول عیسیٰ ابن مریم اخو عبدﷲ ورسوله محمد بن عبد ﷲ فیظهر دین ﷲ وتوحیدہ ویقتل اعداء الدین اتخذوہ وامه الٰهين من دون ﷲ واعداء لا الیهودة الذین رموہ وامه بالعظائم فهذا هو الذی ینتظرہ المسلمون وهو نازل علی المنارۃ الشرقية بدمشق واضعاً یدیه علی منکبي ملکین یراہ الناس عیاناً بابصارهم نازلاً من السماء فیحکم بکتاب ﷲ وسنة رسوله অর্থাৎ মসীহ’র জন্য মুসলমানরা অপেক্ষা করতেছে। তিনি আল্লাহ’র বান্দা এবং আল্লাহ’ রাসূল। তিনি আল্লাহ’র রূহ এবং আল্লাহ’র ঐ কালিমা যা তিনি মরিয়ম (আ:)-এর প্রতি নাযিল করেছেন। অর্থাৎ ঈসা ইবনে মরিয়ম আল্লাহ’র বান্দা এবং আল্লাহ’র রাসূল হযরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সা:)-এর একজন ভাই (হাদিসে এসেছে, নবীগন পরস্পর বৈপিত্রেয় ভাই)। তিনি আল্লাহ’র দ্বীন এবং তাওহীদকে জয়ী করবেন এবং নিজ দুশমনদের (লড়াইয়ের মাধ্যমে) হত্যা করবেন, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁকে এবং তাঁর মাতাকে উপাস্য বানিয়েছে। আর তিনি সেসব ইহুদী দুশমনদের হত্যা করবেন যারা তাঁর উপর এবং তাঁর মাতার উপর অপবাদ রটিয়েছে। তিনিই হলেন মসীহ মুসলমানগণ যার অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে সাদা মিনারার নিকটে এমন অবস্থায় নাযিল হবেন যে, তখন তাঁর দুই হাত দুই ফেরেশতার দুই পাখার উপর রাখা থাকবে। লোকেরা তখন স্বচক্ষে তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখবে। তিনি আল্লাহ’র কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।” দেখুন, হিদায়াতুল হাইয়ারা ফী আজবিবাতিল ইয়াহুদ ওয়ান- নাসারা; লেখক ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)।

উপরের দীর্ঘ বক্তব্য দ্বারা ঈসা (আ:) সম্পর্কে ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এর আকিদা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কেননা সেখানে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ঈসা (আ:) তিনি আকাশে জীবিত আছেন। তিনি দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর হাত রেখে যখন নাযিল হবেন তখন সমসাময়িককালের মুসলমানরা স্বচক্ষে সেই দৃশ্য দেখবেন।

  • এবার কাদিয়ানীরা ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এর যে বক্তব্যটিকে নিজেদের পক্ষে দলিল বানিয়ে মিথ্যাচার করে বেড়ায় সেটি নিচে দেখুন:

ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) ‘মাদারিজুস সালিকীন’ কিতাবের ২য় খন্ডের ২৪৩ এবং ৩১৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন : ومحمدﷺ مبعوث الی جمیع الثقلین فرسالتة عامة لجمیع الجن والانس فی کل زمان ولو کان موسیٰ وعیسیٰ حیین لکانا من اتباعه واذا نزل عیسیٰ ابن مریم فانما یحکم بشریعة محمدﷺ অর্থাৎ হযরত (সা:)-এর নবুওয়ত তামাম জীন এবং ইনসানের জন্য এবং প্রত্যেক যামানার জন্য। যদি হযরত মূসা এবং ঈসা (অদ্যাবধি পার্থিব) হায়াতে থাকত তাহলে তাদেরকে অবশ্যই হযরত (সা:)-এর অনুসরণ করতে হত। আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) যখন নাযিল হবেন তখন তিনি শরীয়তে মুহাম্মদীর উপরই আমল করবেন।”

  • যদি হযরত মূসা এবং ঈসা (অদ্যাবধি পার্থিব) হায়াতে থাকত মর্মে এর তাৎপর্য :

মির্যা কাদিয়ানী তার বই পুস্তকের বহু জায়গায় লিখেছেন যে, শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) ঈসা (আ:)-কে মৃত্যুবরণ করেছেন বলেই বিশ্বাস করতেন! নাউযুবিল্লাহ। শায়খের অসংখ্য বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে ‘মাদারিজুস সালিকীন’ গ্রন্থের একখানা উদ্ধৃতির حیین (হাইয়ীন) শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানী উনার নামে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করে বসে। অথচ ওই শব্দের প্রকৃত তাৎপর্য হল, যদি মূসা এবং ঈসা তারা দুইজনই পার্থিব জীবনে বর্তমান থাকতো! আরো সহজ করে বললে, যদি মূসা আর ঈসা দুইজনই পৃথিবীতে বর্তমান থাকত! একথার বিপরীত দিক হল, যেহেতু মূসা আর ঈসা তারা পার্থিব জীবনে বর্তমান নেই সেহেতু তাদের কেউই বর্তমানে নবী করিম (সা:)-এর আনুগত্য করতে বাধ্য নয়। তবে হ্যাঁ, শেষ যামানায় হযরত ঈসা (আ:) আবার যখন পার্থিব জীবনে ফিরে আসবেন তখন তিনি অবশ্যই শরীয়তে মুহাম্মদীর উপরই আমল করবেন। শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) আপনা মাদারিজুস সালিকীন পুস্তকে واذا نزل عیسیٰ ابن مریم فانما یحکم بشریعة محمدﷺ অনুরূপ বক্তব্যের মাধ্যমে তা একদমই পরিষ্কার করে দিয়েছেন।

সেযাইহোক এই পর্যায় আমি কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। (১) যদি لو کان حیین (লাও কানা হাইয়ীন) শব্দের মাধ্যমে তিনি ঈসা (আ:)-কে জীবিত নেই বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে তিনি তাঁর পুস্তকের অন্যান্য জায়গায় কিজন্য লিখলেন যে, ঈসা (আ:) জীবিত তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। আল্লাহতালা অন্য একজনকে ঈসার সাদৃশ করে দেন। ফলে তারা তাঁকে হত্যা করে এবং ক্রুসবিদ্ধ করে। ঈসা (আ:) দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে সাদা মিনারার নিকটে এমন অবস্থায় নাযিল হবেন যে, তখন তাঁর দুই হাত দুই ফেরেশতার দুই পাখার উপর রাখা থাকবে। লোকেরা তখন স্বচক্ষে তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখবে, ইত্যাদি। (২) শায়খ তার উক্ত শব্দচয়নের মাধ্যমে যদি অনুরূপ কোনো কথা বুঝাতে চাইতেন তাহলে ‘মাদারিজুস সালিকীন’ পুস্তকের ২য় খন্ডের ২৪৩ ও ৩১৩ নং পৃষ্ঠায় ওই একই শব্দের পরপরই তিনি واذا نزل عیسیٰ ابن مریم فانما یحکم بشریعة محمدﷺ [আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) যখন নাযিল হবেন তখন তিনি শরীয়তে মুহাম্মদীর উপরই আমল করবেন]–এমন কথা কিজন্য লিখলেন? মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ:) মৃত্যুবরণ করে থাকলে ‘আর যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম নাযিল হবেন’—শায়খের একথার কী অর্থ? মরা মানুষ কি কেয়ামতের আগে পুনরায় ফিরে আসতে পারে? ভাবিয়ে তুলে কিনা? (৩) বাঁচা-মরা এসবের সাথে অপার্থিব জগতের কী সম্পর্ক? শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) হযরত ঈসা (আ:)-কে বর্তমানে অপার্থিব জগতেরই একজন বাসিন্দা বলে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও তিনি حیین (হাইয়ীন) শব্দকে আশ্রয় করে মূসা আর ঈসা (আলাইহিমাস সালাম) সম্পর্কে ‘যদি তারা জীবিত থাকত’—অনুরূপ তাৎপর্য কিভাবে নিতে পারেন? এবার একটু গোঁড়ামি ছেড়ে ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসুন।

পরিশেষে খুবই দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এরও আকিদা ছিল, হযরত ঈসা (আ:)-ই কেয়ামত পূর্ব সময়ে আকাশ থেকে নাযিল হবেন এবং তিনি বর্তমানে জীবিত। কাজেই মির্যা কাদিয়ানী একজন মিথ্যুক এবং ভন্ড। এমনকি সে মছীলে ঈসা দাবী করায় ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ:)-এর ফতুয়াতেও ‘শয়তানের ওলী’ সাব্যস্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে হেফাজত করুন। আমীন!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ:)-এর কবর কোথায় হবে?

হযরত ইমাম বুখারী (রহ:) এর আকীদা ঈসা (আ:)-এর কবর হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর রাওজাতে হবে!

ইমাম বুখারী (রহ:) আপনা কিতাব “তারীখে কাবীর” এর মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) এর বর্ণনায় একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) রেওয়ায়েত করেন: ليدفنن عيسى بن مريم مع النبي صلى الله عليه وسلم في بيته উচ্চারণঃ লাইয়ুদ ফানান্না ঈসা ইবনু মরিয়াম মা’আন নাবিয়্যি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফী বাইতিহি। অর্থাৎ “নিশ্চিত ভাবেই হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর কবর নবী করীম (সা:)-এর রাওজাতে হবে।” ‘তারীখে কাবীর’ কিতাবের স্ক্রিনশট লিখাটির ভেতর দেখা যেতে পারে। ইমাম বুখারী সংকলিত “তারীখে কাবীর (التاريخ الكبير للبخاري) খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১৬৩; কিতাবটি সর্বমোট ৯ খন্ডে প্রকাশিত।

  • একটি প্রশ্নোত্তর : হাদীসটিতে ‘ফী বায়তিহি’ শব্দ উল্লেখ থাকার কারণে ঈসা (আ:)-এর কবর রাসূল (সা:)-এর রাওজা শরীফের অভ্যন্তরে তথা রাওজা শরীফ খুঁড়ে তার ভেতরেই হওয়ার কথা বুঝাতে চাইল কিনা? অথচ এমনটি চিন্তা করাও অসম্ভব!

উত্তর : হাদীসে “ফী বাইতিহি” (فى بيته) শব্দ থাকায় রাসূলের রাওজা শরিফ খুঁড়ে তার অভ্যন্তরে ঈসাকে দাফন করা বুঝাল কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ আরবী বর্ণ “ফী” (فى) কখনো সখনো অভিধানে “অতি নিকটে” অর্থেও ব্যবহৃত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা ‘আন নামল’ এর একটি আয়াতে মূসা (আ:) সম্পর্কে নাযিল হয়েছে: فَلَمَّا جَاءهَا نُودِيَ أَن بُورِكَ مَن فِي النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَا অর্থাৎ “অতপর সে (মূসা) যখন (আগুনের) কাছে পৌছলো, তখন তাঁকে (অদৃশ্য থেকে) আওয়াজ দেয়া হল, বরকতময় হোক সে, যিনি এই আগুনের মধ্যে (তথা নিকটে) রয়েছে, বরকতময় হোক তারা যারা এর আশেপাশে রয়েছে।” (সূরা আন নামল, আয়াত নং ৮)। বলাই বাহুল্য, সবাই জানেন যে, তূর পর্বতমালায় তখন মূসা (আ:) আগুনের অভ্যন্তরে ছিলেন না, বরং আগুনের অতি নিকটে বা কোনো এক পাশে-ই ছিলেন। (তাফসীরে কাবীর, ইমাম রাজীঃ ২৪/১৮৩)। তদ্রূপ উক্ত হাদীসেও “ফী বাইতিহি” (فى بيته) বলতে রাওজা শরীফ খুঁড়ে তার অভ্যন্তরে—এই অর্থ নয়; বরং এর উদ্দেশ্য হল, রাওজা শরীফের অতিব নিকটে। অতএব দুশ্চিন্তার আর কোনো কারণ থাকল না।

অন্য আরেকটি হাদীসে ‘ফী ক্ববরী‘ অর্থাৎ ঈসার কবর আমার কবরে হবে—একথার তাৎপর্য কী তা বিশিষ্ট যুগ-ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:)-এর কিতাব ‘মেরকাত‘ (কিতাবুল ফিতান)-এর মধ্যে ‘ফী মাক্ববিরাতী’ তথা আমার গোরস্তানে, এইরূপ শব্দে উল্লেখ আছে। স্ক্রিনশট থেকে দেখুন!

হাদীসের সনদ সম্পর্কিত তথ্য :- হাদীসটি সূত্রের বিচারে এতটা শক্তিশালী যে, এটি ভিন্ন ভিন্ন ৩টি সনদে বর্ণিত হয়েছে। ‘আল-মু’জামুল কাবীর‘ কিতাবের খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ১৫৯ এর মধ্যে একই অর্থবোধক আরেকটি হাদীস ভিন্ন আরেক সনদে পাওয়া যায়। সনদসহ হাদীসটি এইরকম :

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﺍﻟﺘَّﺮْﻣِﺬِﻱُّ ﺛَﻨَﺎ ﺑَﻜْﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏِ ﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦُ ﻧَﺎﻓِﻊٍ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻎُ ﻋَﻦْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦ ﺍﻟﻀَّﺤَّﺎﻙِ ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﻳُﻮﺳُﻒَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺳَﻼﻡٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ : ﻳُﺪْﻓَﻦُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒَﻴْﻪِ ، ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ﻗَﺒْﺮُﻩُ ﺭَﺍﺑِﻌَﺎً অর্থাৎ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) বলেছেন, ঈসা (আ:)-কে রাসূল এবং তাঁর দুই সাহাবী (আবুবকর, উমর)’র সাথে (একই কবরস্থানে) দাফন করা হবে। ফলে (সেখানে) তাঁর কবরটি চতুর্থতম কবর হবে।’ এই হাদীস উপরে উল্লিখিত হাদীসটির বিশ্লেষণকারী এবং ‘রাওজা শরীফ খুঁড়ে তার অভ্যন্তরে দাফন করার কথা বুঝাল কিনা’ সেই সংশয়টুকুরও তিরোহিতকারী। কেননা এই হাদীসে সুস্পষ্টই ‘ক্বাবরুহু রাবি’আন’ (ঈসার কবরটি সেখানে চতুর্থতম কবর) বলেই উল্লেখ রয়েছে।

ইমাম তিরমিযী (রহ:) তিনি এটি স্বীয় “আল-জামে” গ্রন্থে আগের ২টি সনদের বাহিরে ভিন্ন আরেক সনদেও উল্লেখ করে বলেছেন, এর সনদ হাসান এবং গরীব তথা সনদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্ণনাকারী অনূর্ধ্ব একজন। ইমাম তিরমিযী (রহ:) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি এইরকম : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺯَﻳْﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺧْﺰَﻡَ ﺍﻟﻄَّﺎﺋِﻲُّ ﺍﻟْﺒَﺼْﺮِﻱُّ ﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻗُﺘَﻴْﺒَﺔَ ﺳَﻠْﻢُ ﺑْﻦُ ﻗُﺘَﻴْﺒَﺔَ ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﺑُﻮ ﻣَﻮْﺩُﻭﺩٍ ﺍﻟْﻤَﺪَﻧِﻲُّ ﺛَﻨَﺎ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﺑْﻦُ ﺍﻟﻀَّﺤَّﺎﻙِ ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﻳُﻮﺳُﻒَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺳَﻼﻡٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﻜْﺘُﻮﺏٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﻮْﺭَﺍﺓِ ﺻِﻔَﺔُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ، ﻭَﺻِﻔَﺔُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺑْﻦِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻳُﺪْﻓَﻦُ ﻣَﻌَﻪُ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻣَﻮْﺩُﻭﺩٍ : ﻭَﻗَﺪْ ﺑَﻘِﻲَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻣَﻮْﺿِﻊُ ﻗَﺒْﺮٍ . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ : ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﻏَﺮِﻳﺐٌ অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) বলেছেন, তাওরাতের মধ্যে মুহাম্মদ (সা:)-এর গুণাগুণ লিপিবদ্ধ রয়েছে আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর গুণটি (এভাবে বর্ণিত আছে যে তা) হল, তাঁকে মুহাম্মদ (সা:)-এর (রাওজা শরীফের) সাথে দাফন করা হবে। অতপর (বর্ণনাকারী) আবু মওদূদ বলেন, (রাসূলের) রাওজাতে একটি কবরের স্থান (এখনও) খালি রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রহ:) বলেছেন, এই হাদীস হাসান (সহীহ) এবং গরীব (তথা সূত্রের কোনো স্তরে রাবীর সংখ্যা অনূর্ধ্ব একজন)।”

হযরত আয়েশা (রা:) হতেও বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : يا رسول الله انى أرى اعيش من بعدك فتأذن لى ان ادفن إلى جنبك فقال و إنى لك بذالك الموضع؟ ما فيه إلا موضع قبرى و قبر أبى بكر و عمر و عيسى بن مريم অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল! আমার ধারণা যে, আমি আপনার পরেও জীবিত থাকব! তাই আপনার কবরের পাশেই আমি দাফন হবার কোনো অনুমতি আছে কি? উত্তরে রাসূল (সা:) বললেন, তুমি এমন একটি স্থানে দাফন কিভাবে হতে পার যেখানে আমার, আবুবকর, উমর আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর কবর থাকবে! (বর্ণনাকারী উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, কিতাব : কাঞ্জুল উম্মাল খন্ড নং ৭ পৃষ্ঠা নং ২৬৮)।

পরিশেষঃ মির্যা কাদিয়ানীর নিকটও মাননীয় মুজাদ্দিদ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারী” কিতাবের ৭ম খন্ডের ৮২ নং পৃষ্ঠায় ঈসা (আঃ) এর কবর রাসূল (সা:)-এর রাওজা শরীফে হওয়া সম্পর্কে লিখেছেন : ﺇﻥ قبور الثلاثة ﻓﻲ ﺻﻔﺔ ﺑﻴﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ، ﻭﻫﻨﺎﻙ ﻣﻮﺿﻊ ﻗﺒﺮ ﻳُﺪﻓﻦ ﻓﻴﻪ ﻋﻴﺴﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ অর্থাৎ হযরত আয়েশা (রা:)-এর ঘরের শামিয়ানায় (তথা রাসূলের রাওজাতে) তিনটি কবর বিদ্যমান আছে। সেখানে আরেকটি কবরের স্থান (অবশিষ্ট) আছে যেখানে ঈসা (আ:) দাফন হবেন।

বলে রাখতে চাই, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:)-এর উক্ত ব্যাখ্যাকে ‘আল-মু’জামুল কাবীর‘ এর একটি হাদীসের খন্ডাংশ জোরালোভাবে সমর্থন করে। কারণ সেখানে লেখা আছে ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ﻗَﺒْﺮُﻩُ ﺭَﺍﺑِﻌَﺎً অর্থাৎ ‘রাওজাতে ঈসা’র কবরটি চতুর্থতম হবে।‘

কাদিয়ানীদের অর্বাচীন যুক্তির কারণ : কাদিয়ানীরা হাদীসগুলো অমান্য করার অসৎ উদ্দেশ্যে নানা অর্বাচীন যুক্তি আর কাসুন্দির পিছু নিয়ে থাকে। তারা হাদীসগুলোর প্রকৃত মর্মার্থ ঘুরে দিতে জঘন্যতম ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়। ‘ঈসা (আঃ)-কে রাসূলের রাওজাতে দাফন করলে নাকি রাওজা শরীফ খুঁড়তে হবে! আর তাই হাদীসগুলো বাদ দিতে হবে, এই হল কাদিয়ানীদের অর্বাচীন যুক্তি ! মূলত তাদের এই সমস্ত হাস্যকর কথাবার্তা মির্যা কাদিয়ানীর বই হামামাতুল বুশরা সহ অন্যান্য বই-পুস্তকেরই হান্ড্রেড পার্সেন্ট চর্বিতচর্বন। এই সমস্ত নিকৃষ্ট বোবা শয়তানদের জন্য দুঃসংবাদ যে, তাদের সেসব শয়তানী যুক্তি অপরাপর হাদীসগুলো আর যুগ ইমামদের বক্তব্যের আলোকে পুরোপুরি তিরোহিত হয়ে গেছে। তাই দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, ইতিপূর্বে যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদগণের আকীদা ছিল পুনঃ আগমনকারী ঈসা ইবনে মরিয়ম বলতে বনী ইসরাইলের সেই ঈসা-ই উদ্দেশ্য যিনি অচিরেই আগমন করবেন। অতপর মৃত্যুবরণ করবেন এবং রাসূল (সা:)-এর রাওজাতে দাফন হবেন। সেখানে তাঁর কবরটি হবে চতুর্থতম। জ্ঞানীদের সত্যটা বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। সংক্ষেপে এ পর্যন্ত। ওয়াসসালাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইমাম মাহদী কি নবী?

ইমাম মাহদী কি নবী?

প্রশ্ন : ইমাম মাহদী (المهدى) কি নবী হবেন? অন্যথা তাঁর নামের পরে “আলায়হে ওয়া সাল্লাম” কিজন্য বলা হয় বা লিখা হয়?

উত্তর : ইমাম মাহদীর নামের পর কোথাও কেউ “আলায়হে ওয়া সাল্লাম” লিখলে বা বললে যদি তিনি “নবী”ই হবেন বুঝায়, তাহলে হযরত লোকমান হাকিম, খিজির, বিবি মরিয়ম, বিবি আছিয়া, বিবি হাওয়া প্রমুখ এঁরাও কি নবী ছিলো বলবেন? অবশ্যই না। আপনি সহীহ বুখারী’র ‘কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবা’ অধ্যায়ের (হাদীস নং ৩৭১১, অধ্যায় নং ৬২; আত-তাওহীদ প্রকাশনী) ‘বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমা’ শীর্ষক পর্ব খুলে দেখুন! সেখানে হযরত ফাতেমা (রা:) এর নামের পরেও “আলায়হাস সালাম” (عليها السلام) লিখা আছে। সুনানু তিরমিজি গ্রন্থে একটি শিরোনাম হল “মানাক্বিবুল হাসান ওয়াল হোসাইন আলায়হিমাস্ সালাম” (مناقب الحسن والحسين عليهما السلام)। সেখানে ৩৭৭৪ নং হাদীসটির খন্ডাংশে লিখা আছে “জা-আল হাসানু ওয়াল হোসাইনু আলায়হিমাস সালাম (جاء الحسن والحسين عليهما السلام)।” তাই বলে কি ফাতেমা আর হাসান হোসাইন-ও নবী? নাউযুবিল্লাহ। এখানে কী বলবেন? মূলত যাদের নিকট ইসলামের সঠিক কোনো শিক্ষা নেই কাদিয়ানীরা এই সমস্ত অর্বাচীন যুক্তি দিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। যাইহোক, নামের পরে ‘আলায়হিস সালাম’ বলা বা লিখা প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইয়েত’রই অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। হযরত ইমাম মাহদী আহলে বাইয়েত থেকে হবেন বলেই তার নামের পরেও অনুরূপ বলা হয় কিংবা লিখা হয়। এটাই মূল কারণ। আল্লাহু আ’লাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ছন্দে ছন্দে মির্যা কাদিয়ানীর চরিত্র

ছন্দে ছন্দে মির্যা কাদিয়ানীর চরিত্র
লেখকঃ কবি সবুজ ইসমাইল

জাহান্নামে দগ্ধ হচ্ছে শয়তানের এক ভাই; মৃত্যুকালে আপনা বিষ্ঠা মেখেছিলো যে গায়।

শয়তানিতে সারাটি জীবন করিয়া দিছে পার; খোদা দ্রোহী এই ভণ্ডের জায়গা কোথায় হবে আর?

নারী-লোভী তার বৃদ্ধকালে, এক যুবতীর লাগি; ঘোষণা দিলো, এই মেয়ে যেনো হয় মোর অনুরাগী।

ইহার সাথে শাদী হয়েছে মোর, দূর আকাশের পারে; দাও বিয়ে দাও আমার সাথে সঁপিয়োনা আর কারে!

আমি ব্যতিরেক কেউ হবেনা এই মেয়েটির স্বামী; খোদার ফয়সালা ইহার চেয়ে আর কী আছে দামী?

মেয়েটির বাপে বড় উত্তাপে কহিলো মির্জা শোন; তোরে চিনি আমি, বড্ড পাপী; নিজের পাপটা গুন।

কাল দিবো শাদী, পাত্র দেখিয়াছি, তুই যা পারিস কর; তোর অভিশাপে হবেনা কিছুই, বরং তা সাপে বর।

আমার আল্লাহ আমার সহায়, শয়তানে নাহি ডরি; তুই হেথা আসি যত সর্বনাশী বলি যা জীবন ভরই।

কী চেয়েছিল কী হয়ে গেলো—এই ভাবিয়া সার; কত ছল করি, মেয়েটিরে ধরি, করবো বিয়ে আর!

বিয়েটা হলো অন্যের সাথে, মোর মুখে মেখে কালি; স্বপনে স্বপনে বিভোর ছিলাম, মেলেছিনু কত ডালি!

ধরা খেয়ে বেশ, সব হল শেষ, নতুন ফন্দি আঁটে; যেই করে হোক তাহারে ভোগ করিব এই বাটে।

এইবার আরও জোর উদ্যমে নামিয়া পড়িল বেশ; মেয়েটিরে চাই, চাই পেতে চাই, দেখিয়া লইবো শেষ।

ঢেঁড়া পিটিয়া কহিয়া দিলো, শোনো হে দেশবাসী; এই মেয়েটা বিধবা হবে, বউ হবে তখন আসি।

এই নহে নহে মোর কথা, নহে, এই যে খোদার বাণী; অচিরেই আমি করব শাদী হবে সে মোর রানী।

লোকে বলিলো, আরে বেচারা! আর কত কবে মিছে; জীবনটাই তার কেটে গেল তার মিথ্যা এর পিছে পিছে।

খোদাতালা কি অবিচার করেন, মিথ্যুকদের লাগি; পর ঘরনীরে তাহার নীড়ে আনিয়া দিবে সে ভাগি?

দেখিতে দেখিতে দিব্যি কত বছর যাইতেছে কেটে; মেয়েটি তখনও স্বামী সংসারে বিচরে সুখে-হেটে!

লোকে তখনি বলিতে লাগিলো, ওরে ও মিথ্যাবাদী; ছল করে তুই কত কথা ক’লি, নাহি হলো তবু শাদী।

না মরে গেলো মেয়েটির স্বামী, না ফলে তোর কথা; পাগলের প্রলাপ পাগলে বলে, সর্বত্রই অযথা।

কবিতায় ‘মেয়ে’টির চরিত্র হল, মির্যার স্বপ্নের রানী মুহাম্মদী বেগম

মির্যার স্ববিরোধীতা-২

পড়ুন: মির্যার স্ববিরোধীতা-৩

একেক সময় একেক রকম কথা! কখনো বলে, ঈসা নাযিল হওয়া সম্পর্কে হাদীসে ‘আকাশ’ শব্দ নেই, আবার বলে ‘আছে’!

এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?

১. (তিনি লিখেছেন) ‘সমস্ত হাদীস পড়ে দেখো কোনো সহীহ হাদীসে [ঈসা’র নাযিল সম্পর্কে] ‘আসমান’ শব্দ পাবেনা।’ (রূহানী খাযায়েন: ২৩/২২৯; রচনাকাল ১৯০৭ইং)। স্ববিরোধী কথা : ‘এই জন্যই তাঁর সম্পর্কে নিষ্পাপ নবীর ভবিষ্যৎবাণীতে এসেছে যে, তিনি [ঈসা] ‘আসমান’ থেকে নাযিল হবেন।’ (রূহানী খাযায়েন: ৫/২৬৮; রচনাকাল ১৮৯২ইং)।

রূহানী খাযায়েন: ২৩/২২৯ ও ৫/২৬৮

শেষকথা : মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন: মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে। (রূহানী খাযায়েন: ২১/২৭৫)। অতএব এবার মির্যা কাদিয়ানী তারই স্ববিরোধী কথার কারণে কী সাব্যস্ত হলেন একটু ভেবে দেখবেন কি? এমন একজন মিথ্যাবাদীকে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান কিজন্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে রক্ষা করুন। আমীন।

রূহানী খাযায়েন: ২১/২৭৫

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানীদের বইতে রাসূল (সা:) ‘শেষনবী’ হওয়ার ব্যাখ্যা

  • কাদিয়ানীদের বিভিন্ন পত্র-পুস্তকে নবীজীকে ‘শেষনবী‘ মান্য করার দাবীতে নিকৃষ্টতম অপব্যাখ্যার স্বরূপ স্ক্রিনশটসহ দেখানো হল:

কাদিয়ানীদের ধোকা আর প্রতারণা বুঝা বড় কঠিন! তারা ইদানিংকাল জোর গলায় প্রচার করছে যে, তারা মুহাম্মদ (সা:)-কে শেষনবী মানে। অথচ তাদের লিফলেট আর পত্র পুস্তক বলছে তারা মির্যা কাদিয়ানীকেও নবী মানে এমনকি তাকে শেষনবী বলেই বিশ্বাস করে! তারা যে মির্যা কাদিয়ানীকেও “নবী” মানে সেটি তাদের মির্যা কাদিয়ানীরই অসংখ্য বই থেকে চাইলে প্রমাণ করে দেব। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে একজন পূর্ণ শরীয়তবাহক নবী ও রাসূল বলেও দাবী করে লিখে গেছেন। আমি নিজ চোখে এসব বহুবার পড়েছি, এখনো ডকুমেন্ট আমার হাতেই রয়েছে। এখানে শুধুমাত্র “এক গলতি কা ইযালা” (মূল লিখক, মির্যা কাদিয়ানী) বইয়ের স্ক্রিনশট দিলাম। দেখে নেবেন।

  • তারপর আসি লিফলেট সম্পর্কে

আমি লাল দাগ টেনে দেখিয়েছি যে, তারা হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে শুধুমাত্র ‘শরীয়তবাহক‘ (শর্তযুক্ত) হিসেবেই শেষনবী মানে কিন্তু শর্তহীনভাবে ও বিনা ব্যতিক্রমে “শেষনবী” মানেনা!

কাদিয়ানীদের একটি লিফলেট

এই লিফলেট তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। তারা এইরূপ শর্তযুক্ত (শরীয়তবাহক) করার মাধ্যমে একদম সূক্ষ্মভাবে যেই মতবাদটি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে সেটি হল, মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে নবুওয়ত বন্ধ হয়নি, বরং চালু ছিল। তাই মির্যা কাদিয়ানীও একজন নবী, তবে সে শরীয়তবাহক নবী নন; স্রেফ একজন শরীয়ত বিহীন ও প্রতিবিম্বস্বরূপ নবী! পাঠক! বুঝলেন তো তারা কিভাবে প্যাঁচ লাগিয়ে মির্যার নবুওয়ত দাবীকে হালাল করার চেষ্টা করে!!!

সে যাইহোক, আমার বক্তব্য হল, ওরা যাইচ্ছেতাই বিশ্বাস করুক, তাতে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু তারা ইসলাম পরিপন্থী জঘন্য কুফুরী বিশ্বাস পোষণ করা সত্ত্বেও সেটিকে ইসলামী বিশ্বাস বলে কেন চালিয়ে দিতে চাইবে? কিজন্য তাদের এইরূপ কুফুরীকে প্রকৃত ইসলাম বলিয়া সাধারণ মানুষকে সেদিকে ধাবিত করে সুকৌশলে ঈমান হরণ করতে চাইবে? আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এইরূপ একটি ধোকা আর প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্রের নিকট জোর দাবী জানাব না? বিজ্ঞ পাঠকের সুষ্ঠু বিবেক কী বলে? তাই আমার বন্ধুরা! ওদের ধোকা আর চতুরতা ধরতে না পারলে আপনাকে যে কোনো সময় প্রতারিত হতে হবে, তাতে সন্দেহ নেই! অতএব খুব সাবধান!

যেসব বর্ণনাকে আশ্রয় করে ‘খতমে নবুওয়ত’–কে অস্বীকার করা হয় সেগুলোর জবাব

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

সূরা জুম’আ-তে মুহাম্মদ (সা:)-এর পুনঃজন্ম হওয়ার কোনো ইংগিত আছে কি?

পাতা নং ১
পাতা নং ২
  • সম্পূর্ণ লিখাটি আমার ফেইসবুক পেইজ থেকে কপি করুন!

ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?

ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন??

(সূরা মুমিনুন, আয়াত ৫০) ‘এবং আমি মরিয়ম পুত্র (ঈসা) ও তাঁর মাকে করেছিলাম এক নিদর্শন। তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে।’

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : উক্ত আয়াতে ঈসা এবং তাঁর মা মরিয়মকে আল্লাহর ক্ষমতার এক নিদর্শন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহতায়ালা মরিয়মকে বিনা স্বামীতে গর্ভবতী করে ঈসা (আ:)-কে বিনা পিতায় সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহতায়ালারই ক্ষমতার অন্যতম এক নিদর্শন। তারপর আয়াতটিতে রাবওয়াহ (উচ্চভূমি) শব্দও উল্লেখ রয়েছে। যার অর্থ এমন উচ্চভূমি যা সমতল এবং আশপাশের এলাকা থেকে উঁচু। এটি বায়তুল মুকাদ্দাসেরই একটি স্থানকে বুঝানাে হয়েছে। আরেকটি শব্দ এসেছে ‘মা’ঈন’ (বহমান ঝর্ণা) । আরবীতে মা’ঈন বলতে সেই ঝর্ণাকে বুঝানাে হয়েছে যা মহান আল্লাহ ঈসা (আ:)-এর জন্মের সময় মরিয়ম (আ:)-এর পদতলে অলৌকিকভাবে প্রবাহিত করেছিলেন যেমনটি সূরা মরিয়মে (১৯:২৪) উল্লেখ রয়েছে। আয়াতের আরবী, فَنَادَاهَا مِن تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا অর্থ, ‘অত:পর তিনি (জিবরাইল) তাঁকে (মরিয়ম) তাঁর নিম্ন দিক (-এর পাহাড়ের পাদদেশ) থেকে আহবান করে বললেন, তুমি চিন্তিত হয়ো না। তোমার প্রভু তোমার (পদতলে) নিচ দিয়ে একটা বহমান ঝর্ণা সৃষ্টি করে দেবেন।’ তাফসিরে ইবনে কাসীর। কিতাবটি পড়তে ক্লিক করুন

এখানে বলে রাখা জরুরি, সূরা মরিয়মের ২৩ নং আয়াত সাক্ষী, উক্ত নিরাপদ ও প্রস্রবণ বিশিষ্ট উচ্চভূমিতে তাঁদের দু’জনের আশ্রয়-মুহূর্তে বিবি মরিয়ম (আ:) গর্ভবতী ছিলেন। ফলে প্রসব-বেদনার দরুন তিনি জেরুজালেমের নিকটস্থ উঁচু ও সমতল কোনাে নিরিবিলি জায়গায় খেজুর গাছের কান্ডের কাছে চলে গিয়েছিলেন।

নাতি-দীর্ঘ বিশ্লেষণ : এই পর্যায় আয়াতটির রাবওয়াহ এবং মা’ঈন শব্দদুটি নিয়ে একটু কথা বলব। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে যাহহাক (রহ:) বর্ণনা করেন যে, রাবওয়াহ বলা হয় ঐ উঁচু ভূমিকে যা সবুজ-শ্যামল ও কৃষি কাজের উপযােগী (দুররে মানছুর ৬/১০০)। হযরত মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সাঈদ ইবনে যােবাইর এবং কাতাদাহ প্রমুখও অনুরূপ বলেছেন (তাফসীরে তাবারী ৫/৫৩৬-৩৭)। মা’ঈন সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, এটি হল ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির প্রবাহ (তাফসীরে তাবারী ১৯/৩৮)। মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সাঈদ ইবনে যােবাইর এবং কাতাদাহ প্রমুখও অনুরূপ বলেছেন। সে যাইহােক আয়াতে রাবওয়াহ বলে প্রকৃতপক্ষে আরবের কোন স্থানটিকে বুঝানাে উদ্দেশ্য সে সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এখানে উল্লেখ করছি। তাফসীরে তাবারীর (১৯/৩৭) মধ্যে ইবনে আবী হাতেম হতে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব (রহ:) এর সূত্রে জায়গাটির নাম ‘দামেস্ক’ উল্লেখ আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, হাসান বসরী, যায়িদ ইবনে আসলাম এবং খালিদ ইবনে মাদানও প্রায় অনুরূপ বলেছেন। লাইস ইবনে আবী সুলাইম (রহ:) তিনি মুজাহিদ (রহ:) হতে বর্ণনা করেছেন, আয়াতাংশে ঈসা (আ:) এবং তাঁর মা মরিয়ম দামেস্কের [বর্তমান জেরুজালেম দামেস্কের প্রাচীন ভৌগোলিক সীমানারই অন্তর্ভুক্ত – লিখক] কোনাে এক সমতল ভূমিতে আশ্রয় নেয়ার কথাই বলা হয়েছে (দুররে মানছুর ৬/১০০)। আব্দুর রাজ্জাক (রহ:)-এর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে হযরত আবু হােরায়রা (রা:) হতে ফিলিস্তিনের ‘রামাল্লা’ এলাকার কথা বলা হয়েছে। তবে সব চেয়ে বেশি নির্ভরযােগ্য যে বিবরণ পাওয়া যায় তা হল, ইবনে আব্বাস (রা:) হতে প্রাপ্ত আল আউফী’র বর্ণনা। ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, আয়াতের অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত পানি এবং ঐ ঝর্ণা যা “ক্বদ জা’আলা রাব্বুকি তাহতাকি ছারিইইয়া” অর্থাৎ তােমার প্রভু তােমার পদতলে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন (সূরা মরিয়ম/১৯:২৪) আয়াতে আল্লাহতায়ালা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটা হল জেরুজালেম (ফিলিস্তিন) এর একটি স্থান। তবে এই আয়াতটি যেন ঐ আয়াতেরই তাফসীর। আর পবিত্র কুরআনের তাফসীর প্রথমত: কুরআন দ্বারা, তারপর হাদীস দ্বারা এবং এরপর আছার (বিশেষজ্ঞ সাহাবীদের তাফসীর) দ্বারা করা উচিত (তাফসিরে ইবনে কাসীর, সূরা মুমিনুল আয়াত নং ৫০ এর তাফসীর অংশ দ্রষ্টব্য) । উল্লেখ্য, জেরুজালেম প্রাচীন যুগের শাম বা দামেস্কের ভৌগােলিক সীমানারই অংশ বিশেষ।

  • একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) ‘রাবওয়া’ শব্দ হতে ফিলিস্তিনের “রামাল্লাহ” শহরকেই উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন। এইভাবে আরো দলিল প্রমাণ সহ জানতে ক্লিক করুন এখানে। ক্লিক

শেষকথা : পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে জায়গার নাম উল্লেখ না থাকায় বিশেষজ্ঞ যুগ ইমামগণের মাঝে ‘রাবওয়াহ’ বলতে জেরুজালেমের কোন স্থানকে বুঝানো উদ্দেশ্য তা নিয়ে মতানৈক্য হয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সবাই একমত যে, উল্লিখিত আশ্রয় লাভের ঘটনা হযরত ঈসার (আ:) ভুমিষ্টকালীন সময়েই ঘটেছিল এবং সেটি আরবের কোনাে এক স্থানেই। তবে সব চেয়ে নির্ভরযােগ্য বর্ণনামতে এমনকি ইবনে আব্বাস হতে অন্য আরেকটি সূত্রে সেই স্থানটি জেরুজালেমের (বর্তমান ফিলিস্তিন) রামাল্লা নামক স্থানই ছিল। রাসূল (সা.) হতে মারফূহ সূত্রে এটি প্রমাণিতও বটে। হাদীসটির স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।

সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীদের দাবী : উক্ত আয়াতে ঈসা (আ:) আর তাঁর মা মরিয়ম কাশ্মীরে আগমন করার কথাই বলা হয়েছে, এটি সর্বান্তকরণে মিথ্যা, অপব্যাখ্যা ও পবিত্র কুরআনের নিকৃষ্টতম বিকৃতির শামিল। কেননা তখন প্রশ্ন আসবে, তবে কি ঈসা (আ:) ভারতের কাশ্মীরেই ভূমিষ্ট হয়েছিলেন? আরাে প্রশ্ন আসবে, বিবি মরিয়ম তিনি ঈসা (আ:)-কে প্রসব করার জন্য আপনা বসতি থেকে প্রায় ৪৬৬০ কিলােমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর ভারতের কাশ্মীরে কিভাবে গেলেন আর কেনই বা যাবেন? ভাবিয়ে তুলে কিনা! আশাকরি কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা কাদিয়ানীর ন্যায় একজন সিজোফ্রেনিয়া রুগীর যতসব উদ্ভট দর্শন নিয়ে শেষবারের মত ভেবে দেখবেন। মির্যা কাদিয়ানীর সিজোফ্রেনিয়া রোগ থাকা সম্পর্কে এখানে পড়ুন

  • সম্পূর্ণ লিখাটি আমার ফেইসবুক পেইজ থেকে পড়ুন!

‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ সম্পর্কে – পর্ব ২

অত্র বিষয়ে আর্টিকেল নং ১

অত্র বিষয়ে আর্টিকেল নং ৩

‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ এর সঠিক তাৎপর্য ও কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন :

সূরা আলে ইমরান এর যে আয়াতটির অপব্যাখ্যা দিয়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে চায় সেটির সঠিক তাৎপর্য নিয়ে আজকে ২ নং আর্টিকেল নিয়ে লিখতে বসছি। এই পর্যায় অত্র আর্টিকেলে যে কয়টি পয়েন্ট নিয়ে লিখব,

  • ১. আয়াতটির من قبله الرسل এর الرسل শব্দের অনুবাদ স্বয়ং কাদিয়ানীদেরই কোনো কোনো লিটারেচারে ‘বহু রাসূল‘ মর্মে গ্রহণ করা!
  • ২. আয়াতটির الرسل এর মর্মার্থে ‘শর্ত প্রযোজ্য‘-এর রীতি না মানলে যে সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং যে সমস্ত প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব হবেনা!

হেকিম নূরউদ্দিন এর বই থেকে : আমরা মুসলিম উম্মাহা উক্ত আয়াতটির যেরূপ অর্থ গ্রহণ করে থাকি হুবহু সেই অর্থই গ্রহণ করেছেন কাদিয়ানী খলীফা হেকিম নূরুউদ্দীনও। তার উর্দূ গ্রন্থ থেকে বাংলায় অনুবাদটি এইরূপ, (অর্থ) ‘মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে।’ (কুরআন ০৩:১৪৪)। বলাবাহুল্য, হেকিম নূরউদ্দীন ‘আর-রসুল’ (الرسل) হতে ‘বহু রাসূল’ (بہت رسول) অর্থ নিয়েছেন। (দেখুন, ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা ২৮; রচনা ১৮৮৭-৮৮ইং দ্রষ্টব্য)। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, তিনিও আয়াতটির الرسل এর শুরুতে যুক্ত ال-কে ‘আহদে খারেজি’ হিসেবেই মনে করতেন। ফলে আয়াতটির الرسل এর অর্থে শর্ত প্রযোজ্য হবার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। স্ক্রিনশট :-

ফছলুল খিতাব

বইটি মির্যা কাদিয়ানীর তত্ত্বাবধানে লিখা : এখানে বলে রাখতে চাই, হেকিম সাহেব বইটি জম্মুর মহারাজার রাজপুত্রকে চিকিৎসা দেয়ার উদ্দেশ্যে পুঞ্চে অবস্থানকালে খ্রিস্টানদের রদ করতে লিখেছিলেন। বইটি লিখার সময় তিনি সকল বিষয়ে মির্যা কাদিয়ানীর পরামর্শ চাইতেন। একথা লিখা আছে ‘হযরত মৌলভী নূরউদ্দীন (রা.) খলীফাতুল মসীহ আউয়াল’ নামীয় পুস্তকের ৭৪-৭৫ পৃষ্ঠায়।

ইস্তিগরাকি অর্থেও শর্ত প্রযোজ্য বিধানযোগ্য : কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাসহ তার বেশিরভাগ অনুসারী, قد خلت من قبله الرسل -এর মধ্যকার الرسل -এর ال-কে ইস্তিগরাকি (ব্যাপক অন্তর্ভুক্তকারী) ধরে অর্থ করে থাকেন ‘সমস্ত রাসূল’ বা ‘সব রাসূল’। অথচ তাদের এই অনুবাদ নানা শক্তিশালী কারীনার বিরুদ্ধে যাওয়ায় সুস্পষ্ট ভুল। পরন্তু তাদের এই ধরণের কনসেপ্ট উসূলে ফিকহ শাস্ত্রের স্বতসিদ্ধ উসূল তথা নিয়ম-নীতির পুরোপুরি বিরোধী। বরং তাদের নিয়ম-নীতি পরিপন্থী এই ধরনের উদ্দেশ্যমূলক অর্থ ও ব্যাখ্যা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে। এই সম্পর্কে একটু পরেই লিখা হবে, ইনশাআল্লাহ। তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, তাদের এই মনগড়া অর্থ হেকিম নূরউদ্দিনের উল্লিখিত অনুবাদ এমনকি একখানা উসূলেরও সম্পূর্ণ বিরোধী। তা এই যে,

হেকিম নূরউদ্দিন সাহেব কৃত ‘তাসদীকে বারাহীনে আহমদীয়া’ পুস্তকটির ১০৪ নং পৃষ্ঠায় চমৎকার একটি উসূল (নীতিমালা) উল্লেখ আছে এভাবে যে, الف و لام اگرچہ عموم اور استغراق کے معنی بھی دیتا ہے مگر خصوصیت کے معنی بھی دیتا ہے- ہر دو معنی اپنے اپنے موقع پر لے جاتے ہیں অর্থাৎ ‘আলিফ লাম যদিও আম এবং ইস্তিগরাকের অর্থও প্রদান করে কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য অর্থও প্রদান করে থাকে। উভয় অর্থ যথোপযুক্ত স্থানে গ্রহণ করা হবে।’ (তাসদীক বারাহীনে আহমদীয়া – ১০৪; অনলাইন এডিশন)। এখন তাহলে আপনাদেরই দাবী অনুসারে الرسل-এর আলিফ লাম ‘ইস্তিগরাকি’ হলেও সেখানে এখন শর্ত প্রযোজ্য এর বিধান প্রয়োগের সুযোগ থাকল না কিভাবে? স্ক্রিনশট –

তাছদীকে বারাহীনে আহমদিয়া

মির্যা বশির উদ্দিন এর রচনা থেকে : মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব তার পিতা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কথিত একখানা ইলহামের ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নরূপ, (উর্দূ) آسمان سے کئ تخت اترے پر تيرا تخت (رسول ص پاک کے بعد) سب سے اوپر بچھایا گیا অর্থাৎ ‘আকাশ থেকে কয়েকটি সিংহাসন নাযিল হয়েছে। কিন্তু তোমার সিংহাসনটি (রাসূলেপাকের পর) সবার উপরে পাতা হয়েছে।’ (আল-ফজল, তারিখ ১৯ই আগস্ট ১৯৬১ ইং রাবওয়া হতে প্রকাশিত)। মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ ‘সবার উপরে‘ শব্দটিতে ইস্তিগরাকের অর্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখানে ‘তাখছীছ’ এর বিধান প্রয়োগ করলেন কিভাবে যদি না শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম না থাকবে? তিনি কিন্তু বিশেষভাবে একজনকে ‘সবার উপরে’ অর্থের ব্যাপকতার বাহিরে রেখেছেন। তিনি এর মধ্য দিয়ে যেন বুঝাতে চাইলেন, ইস্তিগরাকি অর্থেও শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম বিধানযোগ্য। এটি স্ক্রিনশট সহ ৩ নং আর্টিকেল থেকে দেখে নিন!

এবার আলোচনা করা হবে যে, আলিফ লাম-কে ইস্তিগরাকি ধরে অনুবাদ করার ফলে কাদিয়ানী সম্প্রদায় কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হবে?

কে জানি প্রশ্ন করেছিল যে, পুরো আয়াতখানা পড়ে দেখুন, শেষে উল্লেখ আছে, أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ এতে বোঝা যাচ্ছে, এখানে ‘খালাত’ অর্থ মৃত্যু বা হত্যা। এ দুই অর্থের সাথেই শব্দটি নির্দিষ্ট। উত্তরে বলতে চাই যে, এই আয়াতের قد خلت ফে’লকে প্রকৃত অর্থ থেকে বের করে রূপক অর্থে তথা ‘মৃত্যু’ অর্থে গ্রহণ করলে তখন শব্দটির নিজেস্ব গুণাগুণ তথা ইশতিরাক্ব (অর্থের দ্বৈততা) আর অবশিষ্ট থাকেনা। তাছাড়া আয়াতটির أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ এর মৃত্যু আর হত্যা উভয়টাই শুধুমাত্র রাসূল (সা.)-এর উদ্দেশ্যেই ছিল বলে ‘খাস’ এর হুকুমে নিহিত। যার ফলে এগুলোকে ‘আম’ অর্থে ধরে নতুন কোনো ব্যাখ্যার পিছু নেয়া সুস্পষ্ট দুষ্টুমি ও নীতিবিরুদ্ধ বৈ কিছুই না।

যে প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই :

১। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৪৪ এর من قبله الرسل এর الرسل এর মর্মার্থে শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম মেনে অর্থ ও ব্যাখ্যায় যাওয়া আবশ্যক। যেহেতু পবিত্র কুরআনের অপরাপর আয়াত সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে বহু রাসূল এখনো জীবিত। যেমন, সূরা নিসা আয়াত নং ৫৪, আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬, সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩, সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১০, সূরা যুখরুফ আয়াত নং ৬১ ইত্যাদি আয়াত সমূহের সুস্পষ্ট ইংগিত দ্বারা হযরত ঈসা রাসূলুল্লাহ (আ.) জীবিত প্রমাণিত। সূরা মরিয়াম আয়াত নং ১৯ দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আ.) রাসূল নামে আখ্যায়িত। সূরা হাজ্জ আয়াত নং ৭৫ দ্বারা আরও বহু ফেরেশতা রাসূল নামে আখ্যায়িত। এই সম্পর্কে আর্টিকেল নং ৩ দেখা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, قد خلت من قبله الرسل শীর্ষক আয়াতে ‘সমস্ত রাসূল’ গত হইয়া গিয়াছে বলে ‘সমস্ত রাসূল’-ই মৃত্যুবরণ করেছেন- এই উদ্দেশ্য হলে তখন কি উল্লিখিত রাসূলগণকেও মৃত বলা হল না? অথচ এদের সকলেই এখনো জীবিত!

২। সূরা মায়েদা আয়াত নং ৩ (حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ) “তোমাদের উপর মৃত, রক্ত এবং শুয়োরের মাংস হারাম করা হয়েছে”- দ্বারা সমস্ত ‘মৃত জন্তু’-এর মধ্যে মৃত মাছও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল কিনা? এখন কাদিয়ানীরা যদি এই সমস্ত ক্ষেত্রে হাদীসের বর্ণনাগুলোর আলোকে আয়াতের এই সমস্ত অর্থে শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম না মানেন তাহলে তাদের পক্ষে মৃত মাছ খাওয়াও বৈধ হয় কিভাবে? কেননা ‘সমস্ত মৃত’ বলতে ‘মৃত মাছ’-ও তার মধ্যে শামিল। এবার শর্ত প্রযোজ্য-এর নিয়ম লঙ্ঘন করে মৃত মাছ খাওয়া হালাল করুন! উল্লেখ্য, যারা মনে করেন যে, কুরআন দ্বারা যে কথা সাব্যস্ত হবে সেটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য হাদীসে যাওয়ার দরকার নেই, তারা এই জিজ্ঞাসার কী সমাধান দেবেন!

৩। সূরা আল ফাতির আয়াত নং ২৮ (إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ) “নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমগণই তাঁকে ভয় করে”- দ্বারাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তাঁকে প্রকৃতপক্ষে ভয় করেন আলেমগণই। কিন্তু আমরা সচরাচর দেখি যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় কথায় কথায় আলেম উলামাকে ‘আকাশের নিচে নিকৃষ্ট জীব’ বলে কটুক্তি করে থাকে। অথচ আয়াতটিতে আলেমদের সম্পর্কে আল্লাহতালার উক্ত প্রশংসা বাণী الْعُلَمَاءُ (আল-উলামা) বহুবচনাত্মক শব্দেই এসেছে। ফলে সমস্ত আলেমই উক্ত শব্দে শামিল হওয়াতে একজন আলেম সম্পর্কেও কটুক্তি করার কোনো সুযোগ থাকেনি কাদিয়ানীদের জন্য, যে পর্যন্ত না শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম তারা মানবে! এখন এর সুরাহা কিভাবে করবেন?

৪। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৮১ (سَنَکۡتُبُ مَا قَالُوۡا وَ قَتۡلَہُمُ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ) “অচিরেই আমি তারা যা বলেছে তা এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিষয় লিখে রাখব”- দ্বারাও বাহ্যত সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, বনী ইসরাঈলি সমস্ত নবী তাদের হাতে হত্যা হয়েছেন। কারণ আয়াতে শব্দটি বহুবচনে الْأَنبِيَاءَ (আন আম্বিয়া) এসেছে। এখন এক্ষেত্রেও শর্ত প্রযোজ্য নিয়ম না মানার অর্থই হল, ইয়াকুব, ইউসুফ, শু’আইব, আইয়ুব, মূসা এবং ঈসা (عليهم السلام) সহ সমস্ত ইসরাঈলী নবীকে হত্যা করা হয়েছিল বলেই বিশ্বাস করতে হবে। এখন এর কিভাবে সমাধান করবেন?

৫। সূরা আল-হুজুরাত আয়াত নং ১৩ (يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ) “হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি”- দ্বারাও বাহ্যত সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, সমস্ত মানুষের ন্যায় হযরত আদম, হাওয়া এবং ঈসাও একই নর এবং নারী হতে সৃষ্ট। আসলে কি তাই? নিশ্চয়ই না। বরং এখানে শর্ত প্রযোজ্য এর নিয়ম মেনে বিশ্বাস করতে হবে যে, এঁদের তিনজনই কুরআনের উক্ত ঘোষণার (مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ) তথা একজন নর এবং নারী থেকে সৃষ্টির প্রচলিত নিয়মের অন্তর্ভুক্তির বাহিরে। এখন কাদিয়ানীরা কি শর্ত প্রযোজ্য এর নিয়ম লঙ্ঘন করে এখানেও সমস্ত মানুষকে একই নর নারী থেকে সৃষ্ট বলবে?

৬। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৮৫ (كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ) অর্থাৎ ‘প্রতিটি নফসকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে’ দ্বারা সকল নফস বা সত্তা মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবেই। অথচ এখানেও ‘শর্ত প্রযোজ্য‘-এর নিয়ম বিধানযোগ্য। অন্যথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালাকেও মরণশীল বিশ্বাস করতে হয়, যেহেতু সূরা আল মায়েদার আয়াত নং ১১৬ (تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ)-এর মধ্যে আল্লাহ’র জন্যও ‘নফস‘ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এখন কাদিয়ানীরা কি আল্লাহকেও মরণশীল বলবে? নাউযুবিল্লাহ।

৭। তর্কের খাতিরে মানলাম যে, আয়াতটির الرسل হতে ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছে’ এ অর্থই সঠিক; এমতাবস্থায় আপনারা সূরা মায়েদার ৭৫ নং আয়াতের ‘الرسل’ হতেও কি ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছে’—এমন অর্থ নেবেন? যদি এমন অর্থ নেন তখন কি মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়ত ও রেসালতেরও অস্বীকার করা হল না? কেননা যদি বলা হয় যে, মসীহ ইবনে মরিয়মের পূর্বেই সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করিয়াছেন, তখন মসীহ (আ:)-এর পর আগমনকারী মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-কে আপনারা একজন রাসূল হিসেবে কিভাবে স্বীকার করলেন?

বলে রাখা দরকার যে, আয়াতটির মধ্যে قبل শব্দটি মুদাফ (مضاف)। আর ব্যাকরণের একটি নিয়ম হল, মুদাফ-এর অর্থ নেয়ার ক্ষেত্রে ‘র’ কিংবা ‘এর’ ধরণের ষষ্ঠী বিভক্তি উল্লেখ থাকতে পারবেনা। কাজেই কাদিয়ানী নেতা জনাব আব্দুল আউয়াল সাহেব কর্তৃক গৃহীত অনুবাদ – তাঁর পূর্বেকার সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে‘ – ব্যাকরণ বিরুদ্ধ ও পরিত্যাজ্য। অথচ এক্ষেত্রে ব্যাকরণসিদ্ধ অনুবাদ হল – তাঁর পূর্বে। শব্দের শেষাংশে ‘র’ বিভক্তি থাকবেনা। যেমন, يد الله على الجماعة ; فوق كل ذى علم عليم ; رسول الله اسوتنا ; এখানে যথাক্রমে يد; فوق এবং رسول শব্দগুলো নিজ নিজ বাক্যে মুদাফ (مضاف) হওয়ায় অনুবাদের ক্ষেত্রে এগুলোতে “” বা “এর” ধরণের ষষ্ঠী বিভক্তি উল্লেখ ছাড়া অনুবাদ হবে এভাবে – আল্লাহর সাহায্য জামাতের উপর; প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী আছে; আল্লাহর রাসূল আমাদের আদর্শ। অনুরূপ من قبله الرسل এর من قبله -তে অনুবাদ করতে হবে ‘তার পূর্বে‘। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

ঈসা (আ.) জীবিত ও ইজমা প্রতিষ্ঠা : উক্ত আয়াত দ্বারা ঈসা (আ:) বেঁচে নেই, মৃত্যুবরণ করিয়াছেন মর্মে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে, এমন ধারণা যাদের, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক বরেণ্য স্কলার ও যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ঈসা (আ.)-এর সশরীরে আকাশে জীবিত থাকা মর্মে (انه رفعه بدنه حيا) ‘আন্নাহু রাফা’আহু বি-বাদানিহি হাইয়ান’ অর্থাৎ আল্লাহতালা নিশ্চয়ই তাঁকে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন, কেন লিখে গেলেন? (রেফারেন্স, ইবনে হাজার রচিত ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক, খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৬২)। তেমনিভাবে শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) তিনিও বা কেন লিখলেন যে (واجمعت الامة على ان الله عز و جل رفع عيسى اليه الى السماء) ‘ওয়াজমা’আতুল উম্মাতু আ’লা আন্নাল্লাহা আ’জ্জা ওয়া জাল্লা রাফা’আ ঈসা ইলাইহি ইলাস-সামায়ি’ অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীয়া এইমর্মে সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহতালা ঈসা (আ:)-কে নিজের নিকট আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন? (রেফারেন্স, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যা’ ৪/৪৫৭)। কিতাবটি ডাউনলোড করুন

.

এরা দুইজনও স্বীকৃত মুজাদ্দিদ : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী আর শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ তারা দুইজনই মির্যা কাদিয়ানীর নিকটেও মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। (দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীর শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ [উর্দূ] খন্ড ১ পৃষ্ঠা নং ১৪২-৪৫; প্রথমপ্রকাশ ১৯০১ইং, কাদিয়ান থেকে)। স্ক্রিনশট –

কাদিয়ানীদের স্বীকৃত কিতাব ‘আছলে মুছাফফা‘ (উর্দূ)। রচনাকাল ১৯০১ ইং

মুজাদ্দিদ সম্পর্কে মির্যার দৃষ্টিভঙ্গি : মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন, মুজাদ্দিদগণ দ্বীনের মধ্যে কোনোরূপ বেশকম করেননা বরং হারানো দ্বীন পুন: প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪) স্ক্রিনশট দেখুন। এখন এর সুরাহা কিভাবে করবেন?

.

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ওয়াহদাতুল উজূদ এর সঠিক ব্যাখ্যা

ওয়াহদাতুল উজূদ (وحدةالوجود) এর ব্যাখ্যা কী? ওয়াহদাতুল উজূদের আক্বীদা কি সঠিক?

ওয়াহদাতুল উজূদের দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। যার একটি সঠিক অপরটি ভুল।

প্রথম ব্যাখ্যাটি হলো : আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাঁর সামনে পুরো জগতের অস্তিত্ব এতটাই অসম্পূর্ণ, যেনো তা অস্তিত্বহীন। যেমন বলা হয় অমুক বড় আলেমের সামনে অমুক সাধারণ ব্যক্তি তো কিছুই না। সূর্যের সামনে মোমবাতির আলো অস্তিত্বহীন। অথবা যেমন বলা হয় সমুদ্রের বিশাল অস্তিত্বের সামনে তার মাঝে বিদ্যমান ক্ষুদ্রাকৃতির ফেনাগুলোর যেনো কোনো অস্তিত্বই নেই।

ঠিক আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বের সামনে পুরো জগতকে সুফিয়ায়ে কেরাম তেমনই অস্তিত্বহীন ভাবেন। এর অর্থ এই নয় যে, কোনো জিনিসের অস্তিত্বই নেই। বরং এর অর্থ হলো, আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যদের অস্তিত্ব আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টির দ্বারা সৃষ্ট। স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

ওয়াহদাতুল উজূদের এ ব্যাখ্যাটি সঠিক। এটাই সুফিয়ায়ে কেরাম ও দেওবন্দীদের আক্বীদা।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হল : ওয়াহদাতুল উজূদের দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাখ্যা এমন করা হয় যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো কোনো ধরণের অস্তিত্বই নেই। সব কিছুর মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা হুলূল করে আছেন। যেটা হিন্দুদের সর্বেশ্বরবাদের বিশ্বাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ওয়াহদাতুল উজূদের এ দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি ভুল। শুধু ভুল নয় বরং এ আক্বীদা কোনো মুসলিম পোষণ করতে পারেন না।

দুঃখের বিষয় হলো, কিছু ভাইয়েরা ওয়াহদাতুল উজূদের এই ভুল ব্যাখ্যাটি দিয়ে সুফিয়ায়ে কেরাম এবং ওলামায়ে দেওবন্দের উপর অপবাদ দিয়ে থাকে। যা তাদের মূর্খতা ও অজ্ঞতার প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।

লিখক, মুফতী শফী কাসেমী