Home Blog Page 31

কাদিয়ানীদের জনসংখ্যা সারা দুনিয়ায় কত?

সারা দুনিয়ায় কাদিয়ানীরা সংখ্যায় কত, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়ে আমি মির্যায়ী রচনাবলি থেকে নানা সময়ের নানা রকম যেসমস্ত গোঁজামিল তথ্যের মুখোমুখি হলাম তা নিচে উল্লেখ করছি।

১৯৯৩-২০০৫ ইং বাইয়াতের নামে ধোকাবাজিঃ

সম্প্রতি একটি হিসেব :

প্রাসঙ্গিক আলোচনায় যাওয়ার আগে কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.alislam.org এর একটি পৃষ্ঠার স্ক্রিনশট এখানে তুলে ধরছি। পাতাটি দেখতে ক্লিক করুন। এখানে এই ১০ মিলিয়নের হিসেবটি ২০০৩ সালের পরের। এখানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, সারা বিশ্বে তারা সংখ্যায় মাত্র ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি আর তাদের জামাত ২০০টি দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

মির্যা কাদিয়ানীর সময়কার হিসেব :

১। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০৮ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা তিন লাখের কাছাকাছি। (বারাহীনে আহমদীয়া পঞ্চম খন্ড, রূহানী খাযায়েন ২১/১০৮)।

২। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০৭ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা কয়েক লাখ। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫৭০, টিকা)।

৩। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০৫ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা চার লাখ। (চশমায়ে মা’আরিফত, রূহানী খাযায়েন ২৩/৪০৬)।

৪। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০২ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা এক লাখের চেয়ে বেশি। (তুহফাতুন নাদওয়া, রূহানী খাযায়েন ১৯/১০১)।

এখানে হিসেবের গোজামিলটা হল, ১৯০২ সালে বললেন এক লাখের চেয়ে একটু বেশি। আবার ১৯০৫ সালে যে সংখ্যাটি মির্যার দাবী অনুসারে চার লাখ, সেই সংখ্যা ১৯০৮ সালে মাত্র তিন লাখের কাছাকাছি! গোঁজামিল হয়ে গেল না? আমার জানার বিষয় হল, সামনের দিকে না বেড়ে বরং পেছনে ব্রেক মারল কেন?

৫। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৮৯৯ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা দশ হাজারের চেয়ে একটু বেশি।  (রূহানী খাযায়েন ১৩/৪২২)। কিন্তু তিনি দুই বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৯৭ সালে লিখেছেন, তার প্রতিষ্ঠিত নতুন ফেরকাটির মোট জনসংখ্যা তিন শত আট (৩০৮) জন। (জরুরাতুল ইমাম, রূহানী খাযায়েন ১৩/৫১৪)। তিনি আবার ১৯০০ সালে লিখেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি। (রূহানী খাযায়েন ১৭/২৮)। এখানে প্রশ্ন হল, যেই সংখ্যাটি তিন বছর আগে মাত্র ৩০৮ ছিল সেটি মাত্র ৩ বা ৪ বছরের ব্যবধানে কিভাবে ৩০,০০০ হতে পারে? আচ্ছা তাও না হয় মানলাম, কিন্তু ১৯০২ সালে সেই সংখ্যা এক লাখের-ও অধিক বলে যে দাবীটা করা হল সেটি কিভাবে মানা যায়? যদি ব্যাপারটা এমনই হত তাহলে সেই সময়কার মিডিয়াগুলোয় এই নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি কেন?

এবার বর্তমান সময়ের হিসেব :

৬। মোট আহমদী জনসংখ্যা ১১ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ১০ লক্ষ। (সূত্র, আহমদীয়া গ্রেজেট, তারিখ জুন ১৯৯৫ ইং)। মির্যা তাহের আহমদ এর সময়কার তাদেরই একটি অফিসিয়াল শুমারি। কিন্তু মির্যা তাহের আহমদ এর মৃত্যুর পর ইংল্যান্ড থেকে তাদের নতুন শুমারি অনুসারে আহমদী জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ২০ কোটি বলে প্রকাশ করা হয়। (সূত্র, প্রেস রিলিজ, তাং ০৯-সেপ্টেম্বর-২০০৩ ইং)। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, যে সংখ্যাটি ৯ বছর আগে মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ সেটি মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে তবে কি রকেটে চড়েই ২০ কোটিতে পৌঁছলো? মিথ্যাচারের-ও একটা লিমিট থাকা চাই!

৭। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা কয়েক মিলিয়ন অর্থাৎ ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি)। এর অধিকাংশই পাকিস্তানে। (সূত্র, কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল দৈনিক আল ফজল, ৪ই জুন ২০১২ ইং পাতা ৪, কলাম ১)।

স্ক্রিনশট

  • এটি তাদের দৈনিক আল ফজল পত্রিকা। তাং ৪-৬-২০১২ ইং। ৪ নং পাতার ১নং কলাম দ্রষ্টব্য। এখানে পরিষ্কার করে লিখা আছে, ২০১২ সালে তারা নাকি সংখ্যায় ২০০ মিলিয়নে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ ২০ কোটিতে তারা পৌঁছে গেছেন। আর এরই অধিকাংশ নাকি পাকিস্তানে!
  • এখানে বলে রাখতে চাই যে, লন্ডন থেকে ডক্টর সাদাত সাহেব থেকে একটি রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পাক ইসলামাবাদ হাইকোর্টের চীফ জাস্টিস শওকত আজীজ সিদ্দিকি সাহেবের নেতৃত্বে পাক হুকুমতের পক্ষ হতে কাদিয়ানীদের উপর চালানো আদম শুমারীর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানে আহমদীদের (কাদিয়ানীদের) মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৪২ হাজার। উল্লেখ্য, পাক লাহোরের জেহলম জেলার সাবেক কাদিয়ানী নায়েবে সদর আমীর প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমদ সাহেব ২০০১ সালে সপরিবারে ইসলাম কবুল করার পর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমানে পাকিস্তানে কাদিয়ানীরা সংখ্যায় কোনোভাবেই আড়াই লাখের বেশি হবেনা। এরা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে অর্থাৎ ব্রিটিশ, কানাডা, জার্মান, সুইডেন, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, নাইজার, ঘানা-সহ আফ্রিকার দেশ সমূহে কাদিয়ানী মতবাদের প্রচারকার্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

আমি তাদের ২০ কোটি সংখ্যা দাবী নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। যেহেতু এসব তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমার আপত্তি হল, তাদের একখানা গোঁজামিল হিসেব নিয়ে। তারা বলল, তারা ২০০ মিলিয়ন আর তার অধিকাংশই নাকি পাকিস্তানে। তাহলে এবার হিসেব কষে নিন! যদি তারা ২০০ মিলিয়ন তথা ২০ কোটি হন তাহলে তাদেরই কথা অনুসারে অন্তত অধিকাংশ বাদ দিলাম, শুধু অর্ধেকটাই ধরি; তখন পাকিস্তানে তারা সংখ্যায় দাঁড়াচ্ছে ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি। আর যদি তাদের কথা অনুসারে অধিকাংশই ধরি, তাহলে আরো ১ বা ২ কোটি যুক্ত করে মোট ১১ অথবা ১২ কোটি ধরতে হচ্ছে। এখন আমার প্রশ্ন হল, সত্যিই কি কাদিয়ানী সম্প্রদায় সংখ্যায় পাকিস্তানে ঐ ১১ বা ১২ কোটি?? কখনোই নয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে পাকিস্তানে জনসংখ্যা মোট ১৮ কোটি! তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের সংখ্যা নিয়ে কাদিয়ানীদেরই প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে কী লিখা আছে!  উইকিপিডিয়ায় লিখা আছে, বর্তমানে পাকিস্তানে কাদিয়ানীরা সংখ্যায় ৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪০ লক্ষ! (যদিও প্রকৃত হিসেবে তারা কোনো ভাবেই দেড় লাখের বেশি হবেনা – লিখক)।

উইকিপিডিয়া এর লিংক

এখন তাহলে হিসেব কিভাবে মিলাবেন? যদি ২০০ মিলিয়নের মধ্যে অধিকাংশই পাকিস্তানে থেকে থাকে তাহলে ঐ ৪০ লক্ষ দ্বারা কিভাবে ১১ বা ১২ কোটির হিসেব চুকাবেন? এসব মিথ্যা আর প্রতারণা নয় কি? সাধারণ কাদিয়ানীদেরকে এসব মিথ্যা আর গোঁজামিল দিয়ে আর কতকাল ধোকা দেবেন আপনারা? আপনাদের পুরো গেইমটাই কি এসব মিথ্যা আর গোঁজামিল দ্বারা বুমেরাং হয়ে গেল না??

৮। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন (১৫ কোটি)।  (সূত্র, কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল দৈনিক আল ফজল, ২৪ই অক্টোবর ২০১৩ ইং পাতা ৪, কলাম ৪)।

এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়, যেই সংখ্যাটি ২০১২ সালে ২০ কোটি সেই সংখ্যা পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ২০১৩ সালে মাত্র ১৫ কোটি কেন হবে? তাহলে বাকি ৫ কোটি কি কাদিয়ানী ছেড়ে চলে গেল?

৯। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি)। জামাত বিস্তৃত হয়েছে এমন রাষ্ট্র সংখ্যা মোট ১৭৩ টি। (সূত্র, ইংলিশ মিডিয়া “প্রেস রিলিজ” লন্ডন, তাং ৭ই জুলাই ২০০৫ ইং। কাদিয়ানীদের লন্ডন ভিত্তিক নিজেস্ব কেন্দ্রীয় তথ্য প্রকাশ।

১০। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি)। জামাত বিস্তৃত হয়েছে এমন রাষ্ট্র সংখ্যা মোট ১৯২ টি। (সূত্র, ইংলিশ মিডিয়া “প্রেস রিলিজ” লন্ডন, তাং ১৭ই আগস্ট ২০০৯ ইং)। কাদিয়ানীদের লন্ডন ভিত্তিক নিজেস্ব কেন্দ্রীয় তথ্য প্রকাশ। এখানেও একই প্রশ্ন, ২০০৫ সালে যে সংখ্যাটি ২০০ মিলিয়ন হবে সেই সংখ্যাটি পরবর্তী ৪ বা ৫ বছরের মাথায় সামনের দিকে না বেড়ে বরং মাত্র ৮০ মিলিয়নে এসে কেন দাঁড়াল? তবে কি বাকি ১২০ মিলিয়ন গায়েব হয়ে গেল? সমীকরণ তো মিলেনা! কাদিয়ানী নেতারা অন্তত নিচের এই হিসেবেটিরও কী উত্তর দেবেন? প্রেস রিলিজ এর স্ক্রিনশট :-

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

রূহানী খাযায়েন এর ৮৩টি বইয়ের নাম ও রচনাকাল

  • মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলোর ‘নাম’ বাংলায় এখানে
  • Book’s Name : Ruhani Khajaeen Total Volume 23

(১) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-01 :

Baraheen e Ahmadiyya1880
Baraheen e Ahmadiyya1880
Baraheen e Ahmadiyya1882
Baraheen e Ahmadiyya1884

(২) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-02 :

Purani Tehreeren1879
Surma Chashma Arya1886
Shahnae Haq1887
Sabz Ishtihar1888

(৩) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-03 :

Fathe Islam1891
Taozehe Maram1891
Azalae Aoham1891

(৪) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-04 :

Alhaq Mubahsa Ludhyana1891 جولائی
Alhaq Mubahsa Dehli1891 اکتوبر
Asmani Faisla1892 جنوری
Nishane Asmani1892 جون
Ek esai kay teen sawal aor inke jawab1889 جون

(৫) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-05 :

Aenae Kamalate Islam . Dafiul Wasawas1892

(৬) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-06 :

Barkatuddua1893 اپریل
Hujjatul Islam1893 مئی
Sachai Ka Izhar1893 مئی
Jange Muqaddas1893
Shahadatul Quran1893 جولائی

(৭) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-07 :

Tohfae Baghdad1893
Karamatussadiqen1893 مارچ
Hamamatul Bushra1893 اگست

(৮) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-08 :

Noorul Haq Hissa Awwal1894فروری
Noorul Haq Hissa Dom1894 اپریل
Itmamul Hujjah1894 جون
Sirrul Khilafah1894 جولائی

(৯) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-09 :

Anwarul Islam1895 پانچ ستمبر
Mananur Rahman1895
Ziaul Haq1895 مئی
Nurul Haq Number 11895 جون جولائی اگست
Nurul Haq Number 21895 ستمبر اکتوبر نومبر دسمبر
Miyarul Mazahab1895

(১০) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-10 :

Arya Dharam1895
Sat Bachan1895
Islami Usoolon Ki filasfi1896 دسمبر

(১১) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-11 :

Anjame Atham1986 جولائی

(১২) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-12 :

Siraj Muneer1897 مئی
Istafta1897 12 مئی
Hujjatullahمئی 1897
Tohfae Qaisria1897 25 مئی
Mahmood Ki Amenجون 1897
Sirajudden Esai k Char sawalon k jawab1897 22 جون

(১৩) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-13 :

Kitabul Bariyya1898 24 جنوری
Albalag / Faryade Dard1898 مئی
Zarooratul Imam1897 ستمبر

(১৪) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-14 :

Najmul Huda1898
Raze Haqeeqat1898
Haqeeqatul Mahdi1898

(১৫) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-15 :

Maseeh Hindustan Men1899 اپریل
Sitara Qaisriya1899 24 اگست
Taryaqul Qulum1899 جولائی
Tohfae Gaznavia1900
Roedad Jalsa Dua1900 2 فروری

(১৬) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-16 :

Khutbae Ilhamia1900 11 اپریل
Lujjatunoor1900

(১৭) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-17 :

Government angrezi aor jihad1900 22 مئی
Tohfa Golarvia1900 اگست
Arbaeen1900 23 جولائی

(১৮) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-18 :

Ejazul Maseeh1901 23 فروری
Ek galati ka azala1901 5 نومبر
Dafiul balaاپریل 1902
Alhuda1902 12 جون
Nazulul Maseeh1902
Gunah se nijat kun kar mil sakti he1902 جنوری
Asmate anbia alaihimussalam1902 مئی

(১৯) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-19 :

Kashtie Nooh1902 5 اکتوبر
Tohfatunnadwa1902 6 اکتوبر
Ejaze Ahmadi1902 15 نومبر
Review Mubahasa Chakralwai1902 نومبر
Moahaburrahman1903 جنوری
Naseeme Dawat1903 28 فروری
Snatan Dharam1903 1 8 مارچ

(২০) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-20 :

Tajkiratus shahadatain1903
Sirate Abdal1903 دسمبر
Lecture Lahor1903 3 ستمبر
Islam Lecture Syalcort1904 2 نومبر
Lecture Ludyana1905 4 نومبر
Risalah Al Wasiyat1905 دسمبر
Coshma-e Mashehi1906 مارچ
Tajallyat e Elahiyyah1906 مارچ
Qadian ke Aryah Aor Ham1907 جنوری
Ahmadi Aor goer Ahmadi mee kiya faraq hee1905 27 دسمبر

(২১) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-21 :

Baraheen e Ahmadiyya Vol-5 1908 15 اکتوبر

(২২) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-22:

Haqiqatul Wahi1907 30 اپریل
Zamimah Haqiqatul Wahi, Al Istiftah1907 30 اپریل
Qasidah Arabi1907 30 اپریل

(২৩) রূহানী খাযায়েন খণ্ড নম্বর-23 :

Coshma e M’arifat1905 15 مئی
Faygam e Sulheh1908 21 جون

Click in here

সম্পর্কিত তথ্যঃ রূহানী খাযায়েন [আধ্যাত্মিক ভান্ডার] নামের ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত এই রচনা-সমগ্রটি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উল্লিখিত ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি।

রূহানী খাযায়েন (খণ্ড ১-২৩)-এর মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩,৫৩৮। যেমন, ১/৭৭৫, ২/৫২৫, ৩/৭২৭, ৪/৫৮৪, ৫/৭৫০, ৬/৪৮৮, ৭/৪০৭, ৮/৫০৪, ৯/৫৬৫, ১০/৫৪০, ১১/৪৩৮, ১২/৪৪৮, ১৩/৬২৩, ১৪/৫৩৭, ১৫/৭৪৪, ১৬/৫২০, ১৭/৫৮২, ১৮/৭৮৭, ১৯/৫৫৩, ২০/৫৮০, ২১/৪৯২, ২২/৮১৩, ২৩/৫৫৬।

আনুমানিক ১৯৬০ সালের দিকে কাদিয়ানীদের শীর্ষ মুরুব্বি পাক বংশোদ্ভূত জালালুদ্দিন আশ-শামস কর্তৃক এই রচনা-সমগ্রটির রূপ দেয়া হয়। যাতে মির্যার বইগুলো এক সঙ্গে একই পান্ডুলিপিতে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। এর বর্তমান রিপ্রিন্ট সন ২০০৮ ইং।

ডাউনলোড করুন (রূহানী খাযায়েন) (দৈনিক আল ফজল ১৯১৩-২০১৬) (বাংলা বইসমূহ) (পাক্ষিক আহমদী ১৯২২-২০২৩+)। (মাসিক আল ফোরকান ১৯৫৪-১৯৭৭) (সাপ্তাহিক বদর, কাদিয়ান ১৯৫২-২০২২) (আল-হিকাম), কাদিয়ান দারুল আমান হতে প্রকাশিত (১৮৮৯-১৯১২ইং)।

তথ্য সংগ্রহকারী, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

নিজের বয়স নিয়ে আল্লাহ’র নামে মিথ্যাচার-২

নিচের ছবিতে উর্দূ হরফে সজ্জিত এই ফলকটি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কবরের। সেটিতে মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যুসাল লিখা থাকলেও তার জন্মসাল লিখা নেই! তার রহস্য নিয়ে একটু পরেই লিখব, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ’র নামে মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা ইলহামঃ

মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেনঃ

خدا نے مجھے وعدہ دیا کہ میں اسی برس یا دو تین برس کم یا زیادہ تیری عمر کروں گا

উচ্চারণ : খোদা নে মুঝে ওয়াদা দিয়া কে, মে আশি বরছ ইয়া দো তিন বরছ কম ইয়া যিয়াদাহ তেরে ওমর করোঁগা।

“খোদা আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, আমি তোমাকে দুই-তিন বছর কম-বেশি আশি বছর হায়াত দান করব!” (যমীমাহ তোহফায়ে গোলডবিয়াহ, রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা কাদিয়ানীর নিজেস্ব বয়ান অনুযায়ী তার জন্ম হয়েছিল ১৮৩৯ বা ১৮৪০ সালে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৩/১৭৭)।

মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা ও ভন্ডামীঃ

মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু দুই-তিন বছর কম বেশি ৮০ বছর বয়সে হয়নি। সুতরাং আল্লাহর নামে সে যে “ওয়াদা” বা প্রতিশ্রুতি এর কথা লিখলো তা ছিল সম্পূর্ণ তার মনগড়া বয়ান এবং আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যাচার।

  • আল্লাহর নামে কিভাবে মিথ্যাচার? নিচে হিসেবটি দেখুন,

মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত বয়ান অনুসারে তার বয়স তিন বছর কমে (৮০-৩) ৭৭ বছর অথবা তিন বছর বেড়ে (৮০+৩) ৮৩ বছর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ৬৮ বা ৬৯ বছর বয়সে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেবকে সত্যিই যদি আল্লাহতালা ঐরকম কোনো কথা বলে থাকেন তাহলে তো সেটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হওয়ার ছিল! কিন্তু সেভাবে না হওয়াই এখন আপনি বা আমি কাকে মিথ্যাবাদী বলব?

নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বলব? ছুম্মা নাউজুবিল্লাহিমিন যালিক। অবশ্যই না। তাহলে? কথা পরিষ্কার যে, এখানে মিথ্যাবাদী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই। তারই কথিত ইয়াল্লাশ, কালা আর কালূ নামের শয়তানই তাকে এধরণের মিথ্যা ওহী ইলহাম করে! এর সাথে মহান আল্লাহতালার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

এবার মির্যা কাদিয়ানীর কবরের ফলকটিতে তার জন্মসাল উল্লেখ না করার রহস্যঃ

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটাই হল আসল রহস্য। মূলত এই রহস্য উন্মোচন হওয়ার ভয়ে তার ব্রেইন ওয়াশ মুরিদরা কবরের ফলকটিতে তার জন্মসাল উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন!

আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বললে কী হুকুম?

এ পর্যায় তারই রচিত “হাকীকাতুল ওহী” বই থেকে একটা চমৎকার লিখা তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার প্রতি মিথ্যা আরোপ করা কত বড় অপরাধ? এমন প্রশ্নের উত্তরে পবিত্র কুরআনের সূরা আল আ’রাফ আয়াত নং ৩৭ উল্লেখ করে মির্যা সাহেব লিখছেন, “অর্থাৎ বড় কাফের দুইটিই আছেপ্রথমটি হইল, যে খোদা সম্পর্কে মিথ্যা বলে এবং দ্বিতীয়টি হইল, যে খোদার কালামকে অস্বীকার করে।” (হাকীকাতুল ওহী পৃষ্ঠা নং ১৩০, বাংলা অনূদিত কপি)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি,

জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে! আল্লাহ তুমি এদের অন্তরকে হিদায়াত দাও।

লিখক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী-১

0

তথাকথিত মুসলেহ মওউদ এর মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী

মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের পুত্র বশির আহমদ এম.এ এর রচিত “সীরাতে মাহদী” (খন্ড ১ পৃ- ৯৪-৯৫ নতুন এডিশন) থেকে!

ঘটনাটি সংক্ষেপে এইরূও যে, মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব ১৮৮৬ সালে (তার দাবীমতে) আল্লাহ’র নির্দেশে কথিত মুসলেহ মওউদ স্বরূপ একটি পুত্র সন্তানের ভবিষ্যৎবাণী দেন। কিন্তু তার কয়েক মাস পর ১৮৮৬ সালের মে মাসে পুত্র সন্তানের পরিবর্তে জন্ম হয় কন্যা সন্তানের। ফলে মির্যা সাহেব বয়ান পালটে ফেলেন এবং পুনরায় ইশতিহার প্রচার করে বলতে থাকেন, খোদার ওহীতে একথা ছিলনা যে প্রত্যাশিত ঐ পুত্র সন্তান এটাই। যাইহোক এর কিছু দিন পর অর্থাৎ ১৮৮৭ সালের আগস্টে তার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম রাখা হয় বশির আহমদ। মির্যা সাহেব নিজেও বিশ্বাস করলেন যে, এটাই তার সেই কথিত প্রতিশ্রুত পুত্র। কিন্তু আফসোস! এক বছর পর হঠাৎ সেই পুত্রটি মৃত্যুবরণ করেন। এই ছিল মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ওহী ইলহাম আর প্রতিশ্রুত পুত্রের চেপে রাখা ইতিহাস। এখন আমার প্রশ্ন হল, মির্যা সাহেবের দাবী তো ছিল যে, “নিশ্চয়ই আল্লাহতালা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর ছাড়েন না এবং আমাকে রক্ষা করেন প্রত্যেক ভুলভ্রান্তি থেকে এবং শয়তানি পথ থেকে আমাকে হেফাজত করেন।” (রূহানী খাযায়েন ৮/২৭২)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি এই,

যদি তাই হয় তাহলে তিনি এভাবে নিজের কথিত খোদায়ী ইলহামের সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে কিজন্য চরমভাবে ব্যর্থ হলেন? কেন বছরের পর বছর তাকে কথিত মুসলেহ মওউদ ওয়ালা ইলহামের গ্যাঁড়াকলে বিভ্রান্ত হতে হল?

আহা! এরপরেও যদি কাদিয়ানীদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় আর কি!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের আয়েশী জীবন চরিত্র

কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফার আয়েশী জীবন সম্পর্কে ডকুমেন্টারি একটি লাইভ প্রোগ্রাম!

কানাডিয়ান প্রবাসী সাবেক কাদিয়ানী সগির আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় জনাব মুস্তাক মালেক সাহেবের আলোচনা হতে চম্বুকাংশ তুলে ধরলাম।

(মুস্তাক মালেক সাহেব নিজেও একজন কাদিয়ানী। পাকিস্তানের কাদিয়ানী অধ্যুষিত শহর রাবওয়ারই বাসিন্দা। একজন প্রবীণ কাদিয়ানী। তবে বর্তমানে তিনি কাদিয়ানী জামাতে নেই।)

জানিয়ে দিতে চাই যে, সগির আহমদ চৌধুরীকে সংক্ষেপে এস.এ চৌধুরী বলা হয়।

এস.এ চৌধুরী : আমাতুল হাই উনি কে?

মুস্তাক মালেক : উনি জামাতে আহমদীয়ার (কাদিয়ানী জামাতের) প্রথম খলীফা হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবের কন্যা!

এস.এ চৌধুরী : হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবের সন্তান আর কারা ছিলেন?

মুস্তাক মালেক : মিয়া আব্দুল মান্নান, মিয়া আব্দুল ওয়াব এবং মিয়া আব্দুল হাই। আর কন্যা ছিলেন আমাতুল হাই। আহমদীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব আমাতুল হাই সাহেবাকে বিয়ে করেছিলেন।

এস.এ চৌধুরী : ও তাই! মানে দ্বিতীয় খলীফা আর প্রথম খলীফা জামাই শ্বশুর ছিলেন!

মুস্তাক মালেক : জ্বী, হ্যাঁ। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, আমাতুল হাইকে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব বিষ পানে হত্যা করে ফেলেন!!

এস.এ চৌধুরী : কিন্তু কেন?

মুস্তাক মালেক : মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবের কন্যা আমাতুল হাইকে বিবাহ করেছিলেন। ঐ সংসারে একজন পুত্র সন্তান জন্ম হয়। সম্ভবত তার নাম ছিল মির্যা খলিল আহমদ। আর দুইটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। আমাতুর রশীদ আর আমাতুল কাইয়ুম। আমাতুর রশীদ ছিলেন বোনদের মধ্যে বড়। অত্যন্ত নির্লজ্জের ব্যাপার যে, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ আপন কন্যা আমাতুর রশীদের সাথে জেনা করেন। আমাতুর রশীদ তখনও পূর্ণ সাবালিকা হননি। নিজ স্ত্রী আমাতুল হাই এবং মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন বি.কম তারা হাতে নাতে জেনা করা অবস্থায় পাকড়াও করেছিলেন। উক্ত ঘটনার পর গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন সাহেব চলে যান এবং তিনি আহমদীয়ত ত্যাগ করেন। যদিও ইতিপূর্বে তিনি অত্যন্ত মুখলিস আহমদীদের একজন ছিলেন। কয়েকদিন পরেই মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের স্ত্রী আমাতুল হাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ বেরিয়ে আসে। তাকে যারা দেখেছেন সবাই তার চেহারা নীল বর্ণের দেখেছিলেন। তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নিজের উক্ত কুকর্ম ঢাকার জন্যই স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছেন।

এস.এ চৌধুরী : হায়! মুসলেহ মওউদ!!

মুস্তাক মালেক : একবার ডক্টর ইসরার আহমদ সাহেব মির্যা মুহাম্মদ হোসাইনকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন সমস্ত ঘটনা তার নিকট বর্ণনা করেন। মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন বলেন, এই যে আমার মাথার চুলের দিকে তাকান। এই চুল আমার এক দিনেই উঠে গেছে। আমি নিজ চোখে ঘটনা না দেখলে জীবন চলে গেলেও তা একজন মুসলেহ মওউদ সম্পর্কে বিশ্বাসও করতাম না। আমার তো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, জামাতে আহমদীয়া আল্লাহরই পরিচালিত একটি সত্য জামাত। এ জামাতের খলীফা আল্লাহই বানান। তার উপর মুসলেহ মওউদ বলে কথা। তাহলে নিজ চোখে না দেখলে আমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারতাম যে, একজন পিতা তার আপন কন্যাকে র‍্যাপ করেছে!?

এস.এ চৌধুরী : আমাতুর রশীদ সাহেবার কি অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছিল?

মুস্তাক মালেক : জ্বী হ্যাঁ, আব্দুর রহিম আহমদের সাথে পরবর্তীতে তার বিয়ে হয়। তিনি আব্দুর রহিম আহমদের নিকটেও ঐসব ঘটনা স্বীকার করেছেন। সালেহ নূর সাহেবও এর একজন সাক্ষী।

এস.এ চৌধুরী : সালেহ নূর সাহেব কে ছিলেন?

মুস্তাক মালেক : তিনি আব্দুর রহিম আহমদের একজন ব্যবসায়ী সেক্রেটারি ছিলেন।

এস.এ চৌধুরী : মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেবের সাথে হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবের পুত্র মিয়া আব্দুল ওহাবের ঘটনাটি সম্পর্কে বলুন!

মুস্তাক মালেক : ঐ ঘটনা সম্পর্কে কি আর বলব! এটি তো দ্বিপ্রহরের সূর্যের ন্যায় পরিষ্কার একটি সত্য ঘটনা। শতকরা ৯৯% আহমদীই ঐ ঘটনা মনে মনে হলেও সত্য বলে বিশ্বাস করেন। ঘটনাটি সম্পর্কে যখন জিজ্ঞেস করেছেন তখন বলেই ফেলি! হেকিম নূরুদ্দিন এর ছেলে মিয়া আব্দুল ওহাব নিজ মুখেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, কথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তাকে বলৎকার করেছেন। এটি ১৯২৪ সালের ঘটনা। এই ঘৃণ্য অপকর্মের ঘটনাটির সত্যতা প্রমাণে সাবেক কাদিয়ানী মির্যা শফিক রচিত “শহরে ছদূম” বইটির পৃষ্ঠা নং ৯৭-৯৮ দেখে নিতে পারেন।

  • মির্যা শফিক এর ‘শহরে ছদূম‘ গ্রন্থের ভাষ্যমতে,
  • 1924 میں مرزا محمود بفرض سیر و تفریح کشمیر تشریف لے گئے – دریائے جہلم میں پیراکی میں مصروف تھے کہ مرزا محمود نے غوطہ لگاکر ایک سولہ سالہ نوجوان کے منارہ وجود کو کو اپنی گرفت میں لے لیا۔ وہ اتنا کہہ کر خاموش ہو گئے۔تو ان کے دواخانہ کے انچارج جناب اکرم بٹ نے پوچھا آپ کیسے پتہ چلا؟ تو وہ بولے یہ میں ہی تھا
  • অর্থাৎ ১৯২৪ সালে মির্যা মাহমুদ ভ্রমণ এবং বিনোদনের জন্য কাশ্মীর যান। জেহলাম নদীতে সাঁতার কাটানোর সময় মির্যা মাহমুদ ডুব দিয়েছিলেন এবং ১৬ বছরের এক তরুনের নিতম্ব (পাছা) চেপে ধরেছিলেন। (গ্রন্থকার বলেন) তিনি (আব্দুল ওহাব) এতটুকু বলার পর চুপ হয়ে গেলেন। তাই তার দাওয়াখানার ইনচার্জ মিস্টার আকরাম বাট জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কীভাবে জানলেন? তখন তিনি বলেছিলেন যে, ঐ তরুনটা আমিই ছিলাম।” (শহরে ছদূম পৃ-৯৮, মির্যা শফিক)।

এস.এ চৌধুরী : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

মুস্তাক মালেক : ঘটনা এখানে শেষ নয়। তারপরের ইতিহাস আরো জঘন্য। ১৯৩৪ সালে ইতালিয়ান নাগরিক নৃত্যশিল্পী মিস রূপা নামের একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন পুনরায় সমালোচনার কেন্দবিন্দুতে পরিণত হন। দৈনিক আল-ফজল (১৮/০৩/১৯৩৪) পত্রিকাতেও এই সংবাদ ছেপে এসেছে। মুসলেহ মওউদ সাহেব মিস রূপার সাথে জেনা তো করেছেন কিন্তু সামনে নিজ ১৪ বছর বয়সী কন্যা নাসেরা সাহেবাকে বসিয়ে রেখেছিলেন। মিস রূপা যখন লাহোরে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে জাস্টিস মুনির সাহেবের নিকট মুকাদ্দামা দায়ের করতে চেয়েছিলেন তখন তিনি তার নিকট উক্ত ঘটনা ব্যক্ত করেন। কিন্তু জাস্টিস মুনির সাহেব এই মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, নিজ কন্যাকে পাশে বসিয়ে কেউ অন্য একজন মহিলার সাথে জেনা করবে, আমি এই অভিযোগ নিয়ে মামলায় জিততে পারব না। মির্যা বশির সাহেব অভিযোগ ঢাকতে সাংবাদিক ব্রিফিং করে জানালেন, নৃত্যশিল্পী মিস রূপাকে তিনি তার বাসায় তার ছেলে মেয়েদের বিশুদ্ধ ইংলিশ শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে ইতালি থেকে ভাড়ায় নিয়ে এসেছিলেন। লাহোরের দৈনিক জমিদার পত্রিকাসহ তখনকার পত্রিকাগুলোতে এই খবর বেশ জোরালোভাবে ছাপিয়ে আসে।

এস.এ চৌধুরী : নাসেরা সাহেবা সম্পর্কে একটু বলুন!

মুস্তাক মালেক : উনি মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের কন্যা, মির্যা নাসির আহমদ সাহেবের বোন এবং বর্তমান খলীফা মির্যা মাসরূর আহমদ সাহেবের মা। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব নিজ এই সুন্দরী কন্যাকে স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে গায়ুর পাঠান নামের একটি যুবকের শয্যাসঙ্গীনী করে দিয়েছিলেন।

এস.এ চৌধুরী : গায়ুর পাঠান যুবকটা কে ছিল?

মুস্তাক মালেক : এখানে অনেক রহস্য লুকায়িত। এই সুদর্শন চেহারার যুবকটি একজন পাঠান ছিল। সে লাহোর তালিমুল ইসলাম হাইস্কুলে লেখাপড়া করত। অনেক মেধাবীও। মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেবকে লাহোর থেকে সেক্সুয়াল ড্রাগ গুলো এই যুবকই রুটিন মাফিক এনে দিত। একবার পাঠান যুবকটিকে কাছে পেয়ে মির্যা বশির সাহেব বললেন, তুমি আমার কাছে এখন যা চাহিবা তাই পাবে। কী চাও বল! তখন পাঠান যুবকটা বললেন, আমি নাসেরাকে চাই। মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নির্লজ্জের মত ঐ যুবককে তার মনোরঞ্জনের জন্য নিজ মেয়ের কামরায় (কক্ষে) প্রবেশ করিয়ে দেন! কারণ তিনি শর্তহীনভাবে তাকে খুশি করবেন বলে আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন।

আপনি মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের শেষ বয়সের চেহারার অবয়ব দেখেই বুঝতে পারবেন যে, তিনি কী পরিমাণে অস্বাভাবিক সেক্সুয়াল ড্রাগ সেবন করতেন! তিনি বিয়েও করেছিলেন তিনটি। অতিমাত্রায় ড্রাগ সেবন করায় তিনি মানসিকভাবে সেক্স-উম্মাদনায় বেসামাল থাকতেন। ফলে তার থেকে তার কন্যাও বাঁচতে পারেনি। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ঐ পাঠান যুবকটি মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের ছোট ভাই মির্যা বশির আহমদের সেক্স-পার্টনার ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় সমকামিতার ঘটনাও ঘটেছিল। যার ফলে পাঠান যুবকটি মির্যা বশির আহমদকে ব্ল্যাকমেইলও করেছিল। তার ভাজিতি নাসেরা সাহেবাকে যেন তার সাথে বিয়ে দেয়া হয় সেজন্য তদবির চালাতেও বাধ্য করে। কিন্তু মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ পাঠানের সাথে আত্মীয়তার প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

এস.এ চৌধুরী : মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ কি তার কুকর্মের ঘটনাগুলো সরাসরি অস্বীকার করেছিল?

মুস্তাক মালেক : অস্বীকার করার মত সুযোগ ছিলনা। কারণ ভিক্টিমরাই তার বিরুদ্ধে প্রথমে আওয়াজ তুলেছিল। তাছাড়া সেই সময়কার বহু আহমদী মুরুব্বিও মির্যা বশিরকে প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে তাকে ত্যাগ করে লাহোরি জামাতে চলে গিয়েছিল। বেশিরভাগই তাওবা পড়ে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। গোলাম রাসূল (এম.এ) সাহেব তখন মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদকে মুবাহালার চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। কিন্তু মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস রাখেননি। কারণ তিনি জানতেন যে, ঘটনাগুলো সবই সত্য। গোলাম রাসূল সাহেব এখনো লাহোরেই জীবিত আছেন। বর্তমানে তার বয়স হবে ৯৫ বছর। যদি বিশ্বাস না হয়, তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।

সাক্ষাৎকারের ভিডিও এখানে https://youtu.be/Eh_Ko4O7VhE

(পরের অংশটি মুস্তাক মালেক সাহেবের অন্য আরেকটি সাক্ষাৎকার থেকে নেয়া-ভাষান্তরকারী)

এস.এ চৌধুরী : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবের বিরুদ্ধেও তো জেনার অভিযোগ ছিল! আপনি এ সম্পর্কে কিছু বলুন!

মুস্তাক মালেক : মির্যা সাহেবের পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন এর বিরুদ্ধে জেনার অভিযোগ উঠলে তখন কাকতালীয়ভাবে মির্যা সাহেবেরটাও সামনে চলে আছে।

এস.এ চৌধুরী : প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটা কী?

মুস্তাক মালেক : প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটা হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব আর তার পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে জেনার অভিযোগ করেছিলেন শায়খ আব্দুর রহমান মিশরি।

এস.এ চৌধুরী : শায়খ আব্দুর রহমান মিশরীর পরিচয় কী?

মুস্তাক মালেক : তিনি প্রথমে জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন। হিন্দু থাকাকালীন তাঁর নাম ছিল, লালাহ শংকর দাস। অনেক বড় এডুকেটেড পার্সন ছিলেন। মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবের বইগুলো তাঁকে আকৃষ্ট করায় তিনি ১৯০৫ সালে মির্যার হাতে বাইয়াত নিয়ে কাদিয়ানী ধর্মে দীক্ষিত হন। কাদিয়ানী হওয়ার পর তিনি নও মুসলিম শায়খ আব্দুর রহমান নামেই পরিচিতি লাভ করেন। মিশর থেকে আরবী ভাষাজ্ঞান শিক্ষা লাভ করায় তাকে “মিশরি”ও বলা হয়। আব্দুর রহমান মিশরি সাহেব কাদিয়ানের “মাদরাসায়ে আহমদীয়া”-র প্রধান শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও কাদিয়ানী জামাতের উচ্চ পর্যায়ের নানা পদে থেকে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সব চেয়ে বড় পরিচয়, তিনি মির্যার ৩১৩ বিশ্বস্ত সাথীদের তালিকাভুক্তদের একজন। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তাঁকে ২৫৫ নং সিরিয়ালে স্থান দেয়। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১১/৩২৮)।

এস.এ চৌধুরী : ঘটনাটি এখনো জানা হল না! একটু মূল ঘটনাটি বলুন!

মুস্তাক মালেক : জ্বী হ্যাঁ, অবশ্যই বলব, ১৯৩৭ সালের কথা। মির্যা কাদিয়ানীর হাতে বাইয়াতপ্রাপ্ত আব্দুর রহমান মিশরি সাহেব-ই কাদিয়ানীদের তখনকার দ্বিতীয় গদ্দিনিসিন মির্যা বশিরের বিরুদ্ধে জেনার অভিযোগ তুলে পত্র প্রেরণ করেন।

যদিও তখন তার পত্রটিতে মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর দুশ্চরিত্রের বিষয়টিও কাকতালীয়ভাবে উঠে আসে। মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের সাহাবী আব্দুর রহমান মিশরির অভিযোগ পত্রে উল্লেখ ছিল,

  • “মসীহে মওউদ আল্লাহর ওলী ছিলেন। আল্লাহর ওলীও কখনো সখনো জেনা করতেন। কিন্তু মসীহে মওউদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কেননা, তিনি জেনা করতেন মাঝেমধ্যে। আমার অভিযোগ শুধুমাত্র বর্তমান খলীফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে। কারণ তিনি সর্বদা জেনা ব্যভিচারে লিপ্ত থাকেন।”

এই কথাগুলো খোদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ-ই উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে হস্তগত পত্রটি হতে সবাইকে পড়ে শুনিয়েছিলেন। (দেখুন, দৈনিক আল ফজল, তারিখ ৩১-আগস্ট ১৯৩৮ ইং)। যাইহোক, এই তথ্যের ভিত্তিতে অন্তত এটুকু হলেও প্রমাণিত হল, মির্যা বশিরের বিরুদ্ধে জেনার অভিযোগ উত্থাপনকারী সাধারণ কোনো আহমদী (কাদিয়ানী) ছিলনা বরং সে মির্যা কাদিয়ানীর কথিত একজন সাহাবী এবং ১৯০৫ সালে তার হাতে বাইয়াতপ্রাপ্ত ও ৩১৩ জনের একজন ছিলেন।

এস.এ চৌধুরী : মুসাম্মাৎ ছকিনা সম্পর্কিত ঘটনাটিও যদি বলতেন!

মুস্তাক মালেক : মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিনের জেনা ব্যভিচারের বিরুদ্ধে আগেও অনেকে আওয়াজ তুলেছিলেন। ১৯২৭ সালে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ তারই পি.এস মিয়া জাহিদ এর বোন “মুসাম্মাৎ ছকিনা” নামের একটি বিবাহিতা নারীর সম্ভ্রম হরন করলে তার বিরুদ্ধে পুরো কাদিয়ানজুড়ে প্রতিবাদের আওয়াজ জোরালো হয়ে উঠে। তার স্বামী আব্দুল হক, পিতা আব্দুল করিম এবং ভাই মিয়া জাহিদ সবাই তখন জোরালোভাবে এর প্রতিবাদ জানান। এখানে বলে রাখতে চাই যে, মুসাম্মাৎ ছকিনা নামের বিবাহিতা মেয়েটির ভাই মিয়া জাহিদ সেই সময় মির্যা বশিরের ডান হস্ত ও ফ্যামিলি মেম্বারদের মতই পাশে থাকতেন। তিনি ভাবতেই পারেননি, তার কথিত মুসলেহ মওউদ এভাবে তার বিবাহিতা বোনটির ইজ্জত মেরে দেবেন!!

পরের ইতিহাস হয়ত অনেকই জানেন! মির্যা বশির উদ্দিন সাহেব নিজের এই বেত্তমিজি ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করলে বাদীপক্ষের সবাই তখন তাকে মুবাহালার আহবান জানান। কিন্তু মির্যা বশির উদ্দিন সাহেব মুবাহালার আহবানে সাড়া দেননি। উপরন্তু বাদীপক্ষের প্রতিবাদকে “ফেতনায়ে মুসতারিয়া” আখ্যা দিয়ে বসেন এবং বলপ্রয়োগ করে তাদের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। সে যাইহোক, এখানে আমি যেটি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি সেটি হল, বাদীপক্ষের মুবাহালার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোই প্রমাণ করে যে, মির্যা বশির উদ্দিন সাহেব প্রকৃতই একজন জেনাকার ছিলেন।

তারপর কাদিয়ানী জামাত ভেঙ্গে তৃতীয় টুকরা হিসেবে ১৯৫৬ সালে “জামাতে আহমদীয়া ইছলাহ পছন্দ” গ্রুপটির গোড়াপত্তন হয়। বর্তমানে এই গ্রুপের প্রধান হলেন, আব্দুল গাফফার জম্বাহ

তাদের গ্রুপটির অফিসিয়ালি ওয়েবসাইট হল www.alghulam.com সে যাইহোক, কাদিয়ানীদের প্রথম গদ্দিনিসিন হেকিম নূরুদ্দিনের কন্যা আমাতুল হাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে আওয়াজ উঠানোর কারণে হেকিম সাহেবের দুই পুত্র মিয়া আব্দুল মান্নান আর মিয়া আব্দুল ওহাবও রক্ষা পাননি। তাদেরকেও জামাতে আহমদীয়া হতে খারেজ করে দেয়া হয়।

(সংক্ষেপে)।

আল্লাহতালা ঈসা (আ:)-কে রক্ষা করতে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার মত এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কিজন্য নিলেন?

কাদিয়ানীবন্ধুদের একটি উদ্ভট ও সংশয়পূর্ণ প্রশ্ন এবং তার জবাব :

প্রশ্ন : মুহাম্মদে আরবী (সাঃ) সারা জীবনে কতভাবেই রক্তাক্ত হলেন, কত কষ্ট সহ্য করলেন; তবু আল্লাহতালা তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেন নি। তাহলে সেই আল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-কে কিজন্য উঠিয়ে নেবেন? ঈসা (আঃ)-এর মর্যাদা কি উনার চেয়েও বেশি ছিল? কারো কারো প্রশ্ন এটাও যে, আল্লাহতালা রক্ষা করতে গিয়ে ঈসা (আ:)-এর ক্ষেত্রে কিজন্য ব্যতিক্রম করলেন? কেনই বা আকাশে উঠিয়ে নেবেন? (কাদিয়ানীদের আপত্তি শেষ হল)।

জবাব :

প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের ভঙ্গিতে বুঝা যাচ্ছে যে, আকাশে যেতে পারা কিবা কাউকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া বিশেষ কোনো মর্যাদার প্রমাণ! যদি এমনই হয় তাহলে এইরকম দাবীদার যিনি তিনি যেন স্বীয় দাবীর পক্ষে দলিল পেশ করেন! এই হল একটি জবাব। আর যারা ঈসা (আঃ)-এর ক্ষেত্রে আল্লাহতালার ব্যতিক্রমী উদ্যোগের উপর আপত্তি তুলছেন এবং তিনি কখন কীরকম উদ্যোগ নেবেন তা তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে বলছেন, তাদের নিকট আমারও প্রশ্ন, আল্লাহতালা তো ঈসা (আঃ)-কে পিতা ছাড়াই দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন! তো আপনারা এর উপর কিজন্য আপত্তি তুলেন না? অথচ এটিও তাঁর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছিল! আগে এর জবাব দিন!!

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি লিখা। পড়তে ক্লিক করুন, কাদিয়ানীদের আসল চেহারা – Click

√ এবার, ঈসা (আ:)-এর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়ার কারণ সম্পর্কে বলছি!

হযরত ঈসা (আ)-এর মর্যাদা মুহাম্মদে আরবী (সা:)-এর চেয়ে কোনো ভাবেই বেশি ছিলনা। তবু আল্লাহতালা ঈসাকে জীবিত সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নেন। এর অন্যতম একটি কারণ, ঈসায়ী ধর্মাবলম্বীদের দাবী ছিল, হযরত ঈসা (আঃ) তাদেরকে তাঁকে এবং তাঁর মাতা বিবি মরিয়মকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করতে বলে গেছেন! (নাউযুবিল্লাহ)। এ কথা উল্লেখ আছে সূরা মায়েদার ১১৬ নং আয়াতে। ঈসা (আঃ)-কে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহতালা ঈসায়ীদের সেইসব আজগুবি দাবীর মূলোৎপাটন করে তাঁকে তাদের অপবাদ থেকে পবিত্র করবেন। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৫৫ পড়ে দেখুন। আল্লাহতায়ালা ভবিষ্যৎবাচক শব্দ ‘ওয়া মুতাহহিরুকা মিনাল্লাযীনা কাফারূ’ আয়াত নাযিল করেছেন। যার একটি তাৎপর্য এটিও যে, “এবং আমি (অচিরেই) তোমাকে কাফেরদের (নিকৃষ্ট অপবাদ) থেকে পবিত্র করব।” কাজেই মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে, ঈসা (আঃ)-এর পুনরায় আগমনের অন্যতম কারণ এটাও।

কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, আল্লাহতালা আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -কে পরবর্তীতে আবার পাঠানোর উদ্দেশ্যে কিজন্য আকাশে উঠিয়ে নেবেন? বর্তমানে আমরা উম্মতে মুহাম্মদীয়া কি ঐ খ্রিস্টানদের মত বলি বা বিশ্বাস করি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদেরকে তাঁরও (সাঃ) উপাসনা করতে বলে গেছেন? নিশ্চয়ই না।

আরেকটি কারণ হল, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এমন মর্যাদার অধিকারী ছিলেন যে, যদি তাঁর যামানাতেও কোনো নবীর আবির্ভাব হত তাদের জন্যও মুহাম্মদ (সাঃ) -এর আনুগত্য করা আবশ্যক হয়ে যেত। সূরা আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াতের “মীছা-ক্বান নাবিয়্যীনা” (مِیۡثَاقَ النَّبِیّٖنَ) দ্বারা মূলত নবীগণ থেকে সেই গৃহীত অঙ্গীকারের দিকেই ইংগিত করা হয়েছে। ঈসা (আঃ) দুনিয়াতে আবার যখন আসবেন তখন আল্লাহতালা তাঁর মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুওয়ত এবং রেসালতের তাসদীক বা সত্যায়ন করার মাধ্যমে উক্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন। কাজেই ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেয়া হল কেন, এমন প্রশ্ন একে তো আল্লাহর ইচ্ছায় চরম বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, দ্বিতীয়ত ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব।

মীছা-ক্বান নাবিয়্যীন (مِیۡثَاقَ النَّبِیّٖنَ) শীর্ষক আয়াতাংশের তাফসীর :

وَ اِذۡ اَخَذَ اللّٰہُ مِیۡثَاقَ النَّبِیّٖنَ لَمَاۤ اٰتَیۡتُکُمۡ مِّنۡ کِتٰبٍ وَّ حِکۡمَۃٍ ثُمَّ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَکُمۡ لَتُؤۡمِنُنَّ بِہٖ وَ لَتَنۡصُرُنَّہٗ ؕ قَالَ ءَاَقۡرَرۡتُمۡ وَ اَخَذۡتُمۡ عَلٰی ذٰلِکُمۡ اِصۡرِیۡ ؕ قَالُوۡۤا اَقۡرَرۡنَا ؕ قَالَ فَاشۡہَدُوۡا وَ اَنَا مَعَکُمۡ مِّنَ الشّٰہِدِیۡنَ

অর্থ:- আর যখন আল্লাহ নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা দান করছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রসূল আসবে, তখন নিশ্চয় তোমরা তাঁকে বিশ্বাস ও সাহায্য করবে।

তিনি বললেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে এবং আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করলে?’ তারা বলল, ‘আমরা স্বীকার করলাম।’ তিনি বললেন, ‘তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।’ (আলে ইমরান ৮১)।

  • তাফসীর : প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এই অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যে, তাঁর জীবদ্দশায় এবং তাঁর নবুওয়তকালে যদি অন্য একজন নবী (তথা মুহাম্মদ) এর আবির্ভাব ঘটে, তাহলে এই নবাগত নবীর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর সহযোগিতা করা অত্যাবশ্যক হবে। কোনো কোনো মুফাসসির رَسُوْلٌ مُصَدِّقٌ (সমর্থক রসূল) থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ব্যাপারে অন্য সমস্ত নবীর কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যে, যদি তাঁদের যুগে তিনি এসে যান, তাহলে নিজেদের নবুওয়তের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে এই নবীর উপর ঈমান আনতে হবে। সুতরাং এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুওয়তের সূর্য উদিত হওয়ার পর আর কোনো নবীর (নবুওয়তের) প্রদীপ উজ্জ্বল থাকবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে যে, একদা হযরত উমর (রাঃ) তাওরাতের কয়েকটি পাতা নিয়ে পড়ছিলেন। তা দেখে নবী করীম (সাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, “সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! যদি মুসা (আঃ)ও জীবিত থাকত আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসারী হয়ে যেতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে যেতে।” (রেফারেন্স, মুসনাদ আহমদ, তাফসীরে ইবনে কাসীর)।

আরও একটি কারণ হল, উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করা। কেননা সহীহ মুসলিম শরীফের ২৮৬ নং হাদীসে উল্লেখ আছে, ঈসা (আঃ) যখন নাযিল হবেন তখন তাঁকে সালাতের ইমামত করার জন্য তদানিন্তন সময়কার মুসলমানদের আমীর (ইমাম মাহদী) বলবেন, তা’আল ছাল্লি লানা। তখন প্রতিউত্তরে ঈসা (আঃ) বলবেন, লা, ইন্না বা’দ্বাকুম আ’লা বা’দ্বিন উমারা-য়ু। তথা না, (বরং তোমাদেরই কোনো একজন ইমাম নিযুক্ত হও) নিশ্চয় তোমরা একে অন্যের উপর নেতৃত্ববান। ঈসা (আঃ) তারপর এও বলবেন, তাকরিমাতাল্লাহি হা-যিহিল উম্মাহ। অর্থাৎ ‘এটি এই উম্মতের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ সম্মান।’ সুতরাং প্রমাণিত হল, ঈসা (আঃ)-এর পুনরায় আগমনের আরেক উদ্দেশ্য স্বয়ং ঈসার পবিত্র জবানীতে এ উম্মতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করা। যারা ঈসা (আঃ)-এর পুনঃআগমনে অবিশ্বাসী তারা মূলত উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে শামিল নন ।

হযরত ঈসা (আঃ) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন কি? উত্তর এখানে। ক্লিক করুন Click

√ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে রক্ষা করা প্রসঙ্গে :

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কাফেরদের থেকে রক্ষা করা বিষয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। সত্য বলতে কি, কাদিয়ানীরা হয়ত ভেবেও দেখেনি যে, তারা বরং নিজেদেরই যুক্তিতে নিজেরাই ফেঁসে যাচ্ছেন। কিভাবে দেখুন। আল্লাহতালা প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সাঃ)-কে পবিত্র কুরআনে (৫:৬৬) ‘ইয়া’ছিমুকা মিনান নাস’ বলে রক্ষা করার প্রতিশ্রতি দেয়ার ফলে কোনো কাফেরই নবী করীম (সাঃ)-কে পাকড়াও করবে তো দূরের কথা, কাছেও ঘেঁষতে দেননি। আল্লাহতালা তাঁকে (সাঃ) নিরাপদে মদীনায় পৌঁছিয়ে দেন। এই মর্মে এখন আমি কাদিয়ানীদের প্রশ্ন করতে চাই, রাসূল (সাঃ)-কে আল্লাহতালা রক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি শতভাগ রক্ষা করতে পারলে তবে কেন ঈসা (আঃ)-এর ক্ষেত্রেও তিনি তাঁর “ওয়া ইয কাফাফতু বানী ইসরাঈলা আনকা” (কুরআন/০৫:১১০) বলে ঐ প্রতিশ্রুতি শতভাগ রক্ষা করতে পারবেন না? যদি তিনি এক্ষেত্রেও আপনা ঐ প্রতিশ্রুতি (অর্থাৎ বনী ইসরাইল থেকে ঈসাকে নিবৃত রাখার প্রতিশ্রুতি) শতভাগ রক্ষা করতে পেরেছেন বলেই বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে কিজন্য আবার একথা বলেন যে, ইহুদীরা ঈসাকে পাকড়াও করেছিল এবং শূলির উপরেও চড়িয়েছিল? (নাউযুবিল্লাহ)। আসলে আপনাদের কথাবার্তা সম্পূর্ণ অচিন্তনীয় এবং জগাখিচুড়ি!

এবার হয়ত কেউ জানতে চাইবেন যে, ঈসা (আঃ)-এর হায়াত বিলম্বিত করে সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পক্ষে দলিল কোথায়? জবাবে বলব, হ্যাঁ দলিল অবশ্যই আছে। এই যে দেখুন খোদ মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পরিস্কার করে লিখে গেছেন, “উসকি হক মে নবীয়ে মা’ছূম কি ফেশগূয়ী মে ইয়ে আলফাজ আয়ে কে, ওহ আসমান চে উতরেগা”। অর্থাৎ তার সম্পর্কে নিস্পাপ নবী (সাঃ)-এর ভবিষ্যৎবাণীর ভেতর এই শব্দটি আছে যে, তিনি (ঈসা) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা ২৬৮)। তবে হ্যাঁ, মির্যা সাহেব এতটুকুর মধ্যে থেমে যাননি। তিনি এর পরে ‘ইয়ানী’ বা তথা বলে নবী (সাঃ)-এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণীর একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। যা তিনি নিজের মত করেই দিয়েছেন।

ঈসা (আঃ)-এর আয়ুষ্কাল দীর্ঘ করে দেয়া সম্পর্কে দলিল এখানে Click

এখন কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন হল, ঈসা (আঃ) যদি বর্তমানে আকাশেই থাকেন আর অচিরেই পুনঃ আগমন করে থাকেন তাহলে এমন একজনকে মৃত আখ্যা দেয়ার মানে কোনো মৃতকে পুনরায় জীবিত হয়ে ফিরে আসার বিশ্বাস লালন করা নয় কি? কাদিয়ানী মতাবলম্বীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?

আরো যদি দলিল দেখতে চান তাহলে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (রহঃ) রচিত তাফসীরের কিতাব ‘দুররে মানসুর’ এর ২য় খন্ডটি হাতে নিন। ৩৫০ নং পৃষ্ঠায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে ঈসার আয়ুস্কাল দীর্ঘ করে দেয়া সম্পর্কিত হাদীসটি কেমন শব্দচয়নে উল্লেখ আছে দেখে নিন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন : “ওয়া মাদ্দা ফী উমরিহী হাত্তা আহবাতা মিনাস সামায়ী ইলাল আরদ্বি ওয়া ইয়াক্বতুলুদ দাজ্জাল।” অর্থাৎ আকাশ থেকে পৃথিবীতে তার নিচে নেমে আসা পর্যন্ত তিনি তাঁর আয়ুষ্কাল বিলম্বিত করে দিয়েছেন। তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এটি ইমাম সুয়ূতি (রহঃ) তার উক্ত কিতাবে ‘ইন তু’আজ্জিবহুম ফা-ইন্নাহুম ইবাদুকা’ শীর্ষক আয়াতের প্রেক্ষিতে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেছেন। আহমদীবন্ধু! এবার ইবনে আব্বাস (রাঃ) সম্পর্কে যাইচ্ছে তাই বলে আত্মতৃপ্তি নিতে থাকুন!

আসলে কাদিয়ানীদের জ্ঞানের বক্রতা থেকেই চিন্তার বক্রতার সৃষ্টি। অন্যথা ঈসা (আঃ)-এর রফয়ে আসমানি’র উপর অনুমান করে সর্বশেষ পয়গম্বর মুহাম্মদে আরবি (সা:)-কেও তারা আকাশে পাঠিয়ে দিতে চাইবে কেন? আমি হবাক হবনা যদি শুনি কোনো কাদিয়ানী যুক্তি দাঁড় করল এই বলে যে, আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আঃ)-কে পিতা ছাড়া দুনিয়াতে পাঠালেও মুহাম্মদে আরবী (সাঃ)-কে তদ্রূপ পাঠাননি কেন? আল্লাহ’র নিকট মুহাম্মদে আরবি (সাঃ) অপেক্ষা ঈসা (আঃ)-এর শান ও মর্যাদা কি বেশি ছিল? (আসতাগফিরুল্লাহ)।

পরিশেষে কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আকাশে কাউকে উঠিয়ে নেয়া যদি কোনো বিশেষ মর্যাদা কিবা শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হত, তাহলে মানুষের বিপরীতে ফেরেশতাজাতি-ই আশরাফুল মাখলূকাত হতে পারত। তার কারণ আকাশে যারা বাস করছেন তারা কিন্তু সবাই ফেরেশতা। এখন এর কী জবাব? আশাকরি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। ওয়াসসালাম।

এ লেখাগুলোও পড়া যেতে পারে :

১- পবিত্র কুরআন দ্বারাও প্রমাণিত ঈসা (আঃ) এখনো জীবিত এবং তিনি দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। Click

২- ত্রিশ আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব Click

৩- হাদীসের অপব্যাখ্যায় কাদিয়ানীদের দুই ঈসা তথ্যের খন্ডন Click

৪- বাইবেল দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে যে, কথিত রূপক ঈসার কনসেপশন শুধুই মানুষকে ঠকানো! Click

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

হাদীস সমূহের আলোকে ঈসা (আ:)-এর পুনঃ আগমনের প্রমাণ

ঈসা (আ:) উম্মতে মুহাম্মদীয়ায় শামিল হতে চেয়ে দোয়া করেছিলেন কি? এ সম্পর্কে পড়তে ক্লিক করুন। Click

পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত দ্বারাও ঈসা (আ:)-এর পুনঃ আগমনের ইংগিত থাকার প্রমাণ রয়েছে। দলিলসহ জানতে ক্লিক করুন। Click

হাদীস-১ : রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন : ثُمَّ يَنْزِلُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مِلَّتِهِ إِمَامًا مَّهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدَلًا : অর্থাৎ অতপর মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ:) মুহাম্মদ (সা:)-কে সত্যায়নকারী ও একজন উম্মত এবং সুপথপ্রাপ্ত ইমাম আর ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। (আল-মু’জামুল আওসাত ৭/৩৩৬, হাদীস নং ৪৫৮০, ইমাম তাবারানী, রাবীগণ সকলে সিকাহ)। সম্পূর্ণ হাদীসটি অনুবাদ সহ নিম্নরূপ-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَا أَهْبَطَ اللهُ تَعَالَى إِلَى الْأَرْضِ. مُنْذُ خَلْقِ آدًمَ إِلَى أَنْ تَقُوْمَ   السَّاعَةَ فِتْنَةٌ أَعْظَمُ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ وَقَدْ قُلْتُ فِيْهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ أَحَدٌ قَبْلِيْ. إِنَّهُ آدَمُ جَعْدٌ مَمْسُوْحٌ عَيْنُ الْيَسَارِ عَلَى عَيْنِهِ ظَفْرَةٌ غَلِيْظَةٌ وَإِنَّهُ يُبْرِئُ الْأَكْمَهُ وَالْأَبْرَصُ وَيَقُوْلُ : أَنَا رَبُّكُمْ . فَمَنْ قَالَ : رَبِّي اللهُ فَلَا فِتْنَة عَلَيْهِ وَمَنْ قَالَ : أَنْتَ رَبِّيْ . فَقَدِ افْتَتَنَ يَلْبَثُ فِيْكُمْ مَّا شَاءَ اللهُ ثُمَّ يَنْزِلُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مِلَّتِهِ إِمَامًا مَّهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدَلًا فَيَقْتُلُ الدَّجَّالَ. فَكَانَ الْحَسَنُ يَقُوْلُكَ : وَنَرَى ذَلِكَ عِنْدَ السَّاعَةِ. رَوَاهُ الطَّبَرَنِيْ فِيْ (الْكَبِيْرِ) وَ (الْأَوْسَطِ) وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ وَفِيْ بَعْضِهِمْ خِلَافٌ لَا يَضُرُّ كَمَا قَالَ فِيْ. مَجْمَع الزَّوَائِدِ ٧:٣٣٦

অনুবাদঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করা অবধি কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে দাজ্জালের ফেতনা অপেক্ষা জঘন্যতম আর কোনো ফেতনা পরিদৃষ্ট হবেনা। আমি তার ফেতনা সম্পর্কে এমন সব সংবাদ দেব যা আমার পূর্বে কেউই দেয়নি। নিশ্চয়ই সে হবে গোধুম বর্ণের ও কোঁকড়াচুল বিশিষ্ট, তার বাম চোখের পাতলা টিস্যু পুরোপুরি আচ্ছাদিত হবে। সে কুষ্ঠরোগী আর জন্মান্ধকে সুস্থ করতে পারবে। সে দাবী করে বলবে, আমিই তোমাদের রব! এর প্রতিউত্তরে (তখন) যে বলবে, আমার রব আল্লাহ। তাহলে তার জন্য আর কোনো পরীক্ষা নেই। আর যে বলবে, তুমিই আমার রব, সে তখন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে যাবে। আল্লাহ যতদিন চাইবেন সে তোমাদের মাঝে (সে) অবস্থান করবে। অত:পর মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.) নেমে আসবেন মুহাম্মদ (সা.)-এর (নবুওয়ত ও রেসালতের) সত্যায়নকারীরূপে ও তাঁরই মিল্লাতের (দ্বীনের) অনুসারী (এককথায় উম্মতরূপে) এবং একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম আর ন্যায়পরায়ণ শাসক হয়ে। তিনি অত:পর দাজ্জালকে হত্যা করবেন।” [ইমাম তাবারানী তার ‘আল-মু’জামুল কাবীর‘ এবং ‘আল-মু’জামুল আওসাত্ব’ গ্রন্থদ্বয়ে এটি রেওয়ায়েত করেছেন, আর এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত, তবে তাদের কারো কোরো ব্যাপারে (সামান্য) জরাহ থাকলেও তাতে কোনো ক্ষতি (অসুবিধা) হবার নয়। এমনটাই বলেছেন (ইমাম নূরুদ্দীন আল হাইসামী স্বীয়) মাযমাউয যাওয়ায়েদ (৭/৩৩৬) কিতাবে]। – শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ এর কিতাব থেকে।

হাদীস-২ : রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন : فَرُدَّ الْحَدِيثُ إِلَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ فَقَالَ قَدْ عُهِدَ إِلَىَّ فِيمَا دُونَ وَجْبَتِهَا فَأَمَّا وَجْبَتُهَا فَلاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ اللَّهُ অতঃপর বিষয়টি ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেনঃ আমার থেকে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের সঠিক জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে নেই। (সুনানু ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪০৮১)। অতএব প্রশ্ন আসে যে, যদি আগত ঈসা প্রকৃত ঈসা না হয়ে বরং রূপক ঈসা হতেন তাহলে হযরত ঈসা (আ.) কেন বললেন যে, আমার থেকে কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দুনিয়াতে ফেরার প্রতিশ্তি নেয়া হয়েছে? বাইবেলেও একই কথা বলা আছে। বাইবেলের নতুন নিয়মের ভাষ্যমতে,

  • “যীশু যখন জৈতুন পর্বতমালার ওপর বসেছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যরা একান্তে তাঁর কাছে এসে তাঁকে বললেন, আমাদের বলুন, কখন এসব ঘটবে, আর আপনার আসার এবং এযুগের শেষ পরিণতির সময় জানার চিহ্নই বা কি হবে? এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, ‘দেখো! কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়। আমি তোমাদের একথা বলছি কারণ অনেকে আমার নামে আসবে আর তারা বলবে, ‘আমি খ্রীস্ট।’ আর তারা অনেক লোককে ঠকাবে।” (বাইবেল : মথি, অধ্যায় নং ২৪ পদ নং ৩-৫)।

হাদীস-৩ : রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে عن ابن عباس رضى الله عنه : مد فى عمره حتى اهبط من السماء الى الارض و يقتل الدجال অর্থাৎ আল্লাহতালা তাঁর (অর্থাৎ ঈসার) হায়াত দীর্ঘায়িত করে দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে দুনিয়ায় নেমে আসবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। (তাফসীরে দুররে মানছূর ২/৩৫০)।

হাদীস-৪ : আল্লামা ইমাম সুয়ূতীর ‘দুররে মানছূর’ কিতাবের ৩য় খন্ডে ঈসা (আ.) সম্পর্কিত ‘ইন্নী মুতাওয়াফফীকা ওয়া রাফেউকা ইলাইয়্যা’ শীর্ষক আয়াতটির ব্যাখ্যায় ইমাম যাহহাক (রহ.) ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণনা করে বলেছেন :عن ابن عباس في قوله: إني متوفيك و رافعك يعني رافعك ثم متوفيك في آخر الزمان অর্থাৎ ‘ইন্নী মুতাওয়াফ্ফীকা ওয়া রাফেউকা’ এর তাৎপর্য হল তোমাকে (অর্থাৎ ঈসাকে প্রথমে) উঠিয়ে নেব তারপর শেষ যুগে পুনরায় পাঠানোর পর মৃত্যু দেব।

হাদীস-৫ : হযরত নাওয়াস ইবনে সাম’আন (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ অর্থাৎ “…আল্লাহতালা তখন ঈসা ইবনে মরিয়মকে পাঠাবেন। তিনি দুটি হলুদ বর্ণের চাদর পরিধান করে এবং দু’হাত দু’ফিরিশতার ডানায় রেখে দামেস্কের পূর্বে (বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকায়) শুভ্র মিনারের সন্নিকটে অবতরণ করবেন।” সংক্ষেপে। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান, অনুবাদ তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন ৪৯; হামামাতুল বুশরা ৩০)।

হাদীস-৬ : হযরত আলী (রা.)-এর বিশিষ্ট শিষ্য ইমাম হাসান বছরী (রহ.) থেকে একদম সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لليهود إن عيسى لم يمت، وإنه راجع إليكم قبل يوم القيامة অর্থাৎ রাসূল (সা:) জনৈক ইহুদীকে বলেছেন নিশ্চয় ঈসা মসীহ মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি নিশ্চয় কেয়ামতের পূর্বে তোমাদের নিকট ফিরে আসবেন।’ (সূত্র তাফসীরে তাবারী ৫/৪৪৮; দুররে মানছূর ২/৬৪; ইমাম সুয়ূতী)। বলে রাখা জরুরী, ইমাম হাসান বসরী (রহ.) কর্তৃক বর্ণিত ‘মুরসাল’ হাদীস মুহাদ্দিসীনের নিকট দলিল-প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। (নাখবাতুল ফিকার)।

হাদীস-৭ : পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ১৪৪ নং আয়াত ‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ নাযিল হওয়ার ছয় বছর পর অর্থাৎ হিজরী নবম-বর্ষে নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল যখন রাসূল (সা.)-এর নিকট আসলেন, তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, الستم تعلمون ان ربنا حى لا يموت و ان عيسى يأتى عليه الفناء অর্থাৎ আপনারা কি জানেন না যে, আমাদের প্রভু চিরঞ্জীব আর মৃত্যু নিশ্চয় ঈসার নিকট আসবে? (তাফসীরে তাবারী ৩/১৩০, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৪০৮; তাফসীরে গারায়েবুল কুরআন ১/২৯৫)। এখানে লক্ষণীয় হল, আয়াতটি ঈসা (আ.)-কে মৃত প্রমাণ করলে রাসূল (সা.) কখনোই ‘মৃত্যু ঈসার নিকট আসবে’ বলতেন না।

হাদীস-৮ : রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, والذى نفسى بيده ليوشكن ان ينزل فيكم ابن مريم حكما عدلا الخ অর্থাৎ কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, অতিসত্বর তোমাদের মাঝে মরিয়ম পুত্র একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসকরূপে অবশ্যই নাযিল হবেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া হাদীস নং ৩২৬৪)।

  • উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে এই কসমটি সাব্যস্ত করছে প্রদত্ত সংবাদটি বাহ্যিক অর্থে পুরো হবে এর রূপক অর্থ করা যাবেনা। (কসম সম্বলিত হাদীসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এইরূপই বলা আছে। দেখুন, হামামাতুল বুশরা [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ২৭)।

হাদীস-৯ : রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, كيف انتم إذا نزل عيسى بن مريم من السماء فيكم وامامكم منكم অর্থাৎ তখন তোমাদের কেমন (আনন্দ) হবে যখন (ঈসা) ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে তোমাদের মাঝে নাযিল হবেন আর তখন তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য হতে হবেন।” (সুনানে বায়হাক্বীর সংকলক কর্তৃক সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত’ ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫, বাবু ক্বওলিল্লাহি আজ্জা ওয়া জাল্লা লি-ঈসা ইন্নী মুতাওয়াফ্ফীকা ওয়া রাফিউকা ইলাইয়্যা; হাদীসের মান : সহীহ; রাবীদের সবাই সহীহ বুখারীর রাবী)।

হাদীস-১০ : সহীহ মুসলিম শরীফের ‘কিতাবুল ফিতান’ অধ্যায়ে দীর্ঘ একটি হাদীসের খন্ডাংশে এসেছে, ইমাম মাহদী ঈসা (আ.)-কে সালাতের ইমামতির জন্য অনুরোধ করবেন। হাদীসের ভাষ্য, فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا (ফা-ইয়াকূলু আমীরুহুম! তা’আল ছল্লি লানা) অর্থাৎ …এরপর তাদের ‘আমীর’ বলবেন, আপনি আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন!

বিশিষ্ট যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:)-এর ‘মেরকাত’ কিতাবে “আমীর”-এর ব্যাখ্যায় লিখা আছে : اى المهدى অর্থাৎ মুসলমানদের সেই আমীর লোকটিই ইমাম মাহদী, যিনি ঈসাকে ইমামতির জন্য অনুরোধ করবেন। তিনি আরো লিখেছেন: ঈসা (আ.) প্রতিউত্তরে সালাত পড়াতে অস্বীকার করে ‘না’ সূচক জবাব দেবেন। তার মানে, আমি তোমাদের (এই সালাতের) ইমাম হব না, যাতে তোমাদের জন্য আমার (এই) ইমামতি তোমাদের দ্বীনে মুহাম্মদী রহিত হয়ে যাওয়া মর্মে (তোমাদের ভেতরে) কোনো সংশয় তৈরী না করে। (মেরকাত শরহে মেশকাত, কিতাবুল ফিতান ১০/১৬৫)।

সুতরাং প্রমাণিত হল যে, ইমাম মাহদী এবং প্রতিশ্রুত মসীহ তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন দু’ব্যক্তিই হবেন। ফলে মির্যা কাদিয়ানীর নিজেকে একই সাথে মসীহ এবং প্রতীক্ষিত মাহদী দাবী পুরোই হাস্যকর।

হাদীস-১১ : দীর্ঘ একটি হাদীসের খন্ডাংশে উল্লেখ আছে, হাশরবাসীরা শাফায়াতে কোবরা মুহূর্তে ঈসা (আ.)-এর নিকট শাফায়াতের আবেদন করলে তিনি তখন এই বলে অক্ষমতা প্রকাশ করবেন, اِنِّى اُتُّخِذتُ الها مِن دون الله و انه لا يُهِمُّنِى اليوم الا نفسى অর্থাৎ আমাকে আল্লাহ ব্যতীত একজন ইলাহরূপে গ্রহণকরা হয়েছিল। তাই আজ আমি শুধুমাত্র নিজেকে নিয়েই চিন্তিত। (মুসনাদে আহমদ ৩:১০২-৩, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ১/৩৭৩; আবুদাউদ আত্-ত্বয়ালিসী ২/২২৬, রাবীদের সবাই সহীহাইনের, হাদীসের মান : সহীহ লি গয়রিহি)।

সুতরাং প্রমাণিত হল যে, ঈসা (আ.) দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে আগমন করবেন বলেই খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে কেয়ামত দিবসে তাঁর জানা থাকবে। অন্যথা তিনি কেয়ামতের দিন কিভাবে জানতে পারবেন যে, খ্রিস্টানরা তাঁকে উপাস্য বানিয়ে ত্রিত্ববাদে লিপ্ত হয়েছিলো?

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা কাদিয়ানীর ‘মসীহ’ দাবীর ভিত্তিটা কী?

হায়! কেমনে কি!!!

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। অগণিত দরুদ ও সালাম খাতামুন নাবিয়্যীন ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদে আরাবি (সা:)-এর উপর বর্ষিত হোক!

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর রচনা হতে তারই একটি বক্তব্য নিচে তুলে ধরছি :-

  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সম্পূর্ণ বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, ৩ (তিন) জন মাছীলে মসীহ’র আবির্ভাব হওয়াই নির্ধারিত। রূহানী খাযায়েন এর ৫ম খন্ডের পৃষ্ঠা নং ৩৩৯ হতে ৩৪৬ পর্যন্ত ৮টি পৃষ্ঠা খুব ভালো করে পড়ে দেখুন। তবেই আপনার মনে হবে, মাথার উপর যেন এই বিশাল আকাশটি এখনি ভেঙ্গে পড়ল!! হায় হায়! এ কেমন স্ববিরোধ কথাবার্তা! কাদিয়ানীবন্ধুদের উচিত, আপাতদৃষ্টে (কাদিয়ানী) জামাতের অমুক তমুকের বই পুস্তক ঘাটাঘাটি বাদ দিয়ে মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলোতে কিসব স্ববিরোধ কথাবার্তা রয়েছে তা নিরপেক্ষ ভাবে খতিয়ে দেখা। তবেই বুঝতে আর কষ্ট হবেনা যে, আপনারা প্রকৃতপক্ষে দ্বীনে মুহাম্মদীর গন্ডীতে আছেন, নাকি নিজেদেরই অজান্তে ভিন্ন কোনো ধর্মের অনুসারী হয়ে রয়েছেন!

মির্যা সাহেবের ভাষ্য হচ্ছে,

اس سے معلوم ہوا کہ مسیح کی امت کی نالائق کرتوتوں کی وجہ سے مسیح کی روحانیت کے لیے یہی مقدر تھا کہ تین مرتبہ دنیا میں نازل ہو۔

অর্থাৎ এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মসীহ’র উম্মতের (খ্রিস্টানদের) অযাচিত কৃতকর্মের কারণে মাসীহ’র রূহানীয়তের জন্য এটাই নির্ধারিত ছিল যে, ৩ (তিন) বার দুনিয়ায় অবতীর্ণ হবেন।” (উপর থেকে সংশ্লিষ্ট সম্পূর্ণ লিখাটি পড়ুন – লিখক)।

আমার কাজ সত্যটা তুলে ধরা। আর আপনাদের কাজ হল, বিষয়টি নিজ চোখে ও নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই করে দেখা। আল্লাহ তুমি নবুওয়তের দাবীদার মুরতাদ মির্যা কাদিয়ানীর কবল থেকে আমার কলিজার টুকরো আহমদীবন্ধুদের রেহাই দান কর। আমীন।

প্রামাণ্য স্ক্রিনশট

পড়তে ক্লিক করুন :-

ঈসা (আ:)-কে মৃত প্রমাণ করতে পবিত্র কুরআনের ৩০টি আয়াতের অপব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব Click

বাইবেল বলছে ‘রূপক ঈসা’ এর ধারণাটি শুধুই মানুষকে ঠকানো Click

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়ার হাদীসের অপব্যাখ্যার খন্ডন

পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়া ও কাদিয়ানীদের অপব্যাখ্যা খন্ডন

পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় সংক্রান্ত হাদীসকে কাদিয়ানী সম্প্রদায় কর্তৃক অস্বীকার করার মতলবসিদ্ধ অপব্যাখ্যাটি প্রায় এরকম :

  • “হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের যে দশটি আলামতের কথা বলেছেন যার মধ্যে আছে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, আমরা বরাবরের মতোই মনে করি, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় আলামতটি একটি রূপক। বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মাধ্যমে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা সভ্যতার আবির্ভাব এবং সমগ্র বিশ্বের উপর এর ক্রমবর্ধমান আধিপত্যকে আমরা (আপাতদৃষ্টিতে) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের প্রতীক হিসেবে সনাক্ত করেছি, এবং এটাই শেষ সময়ের একটি বড় আলামত।”

খন্ডনমূলক জবাব :

বর্তমানে প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদিত হচ্ছে। আখেরী যামানায় কিয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ঘটবে। এটি হবে কিয়ামতের অত্যন্ত নিকটবর্তী সময়ে। পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমাণিত। কিন্তু কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের সাধারণ কাদিয়ানীদেরকে এই ধরনের অপব্যাখ্যা দ্বারা বিভ্রান্ত করা সত্ত্বেও তারা এক্ষেত্রে আরও যে বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে সেটি হল, ওই সময় তাওবার দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে মর্মে যে কথাটিও হাদীসে রয়েছে সেটি এড়িয়ে যাওয়া। যাতে তারা নিজেদের এ সমস্ত ব্যাখ্যার নামে ভন্ডামি ও প্রতারণার মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে।

এই পর্যায় আমি পবিত্র কুরআন থেকে কয়েকটি আয়াত এবং কয়েকটি সহীহ হাদীস এখানে তুলে ধরছি। যার ফলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে, তারা কত নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী আর ভন্ড হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:)-এর কথাকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে বিকৃত-ব্যাখ্যার পথ বেচে নিয়েছে। পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়ার পর কাফেরদের ঈমান গ্রহণ তাদের উপকারে আসবেনা, এই মর্মে আল্লাহতালা বলেন,

  • هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمْ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلْ انتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ

অর্থাৎ ‘‘তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমণ করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমণ করবেন। অথবা আপনার পালনকর্তার কোনো নিদর্শন আসবে। যে দিন আপনার পালনকর্তার কোনো নিদর্শন এসে যাবে তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোনো উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো সৎকাজ করেনি। হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমরা অপেক্ষা করতে থাক। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম’’ (সূরা আনআমঃ ১৫৮)।

অধিকাংশ মুফাসসিরে কুরআনের মতে অত্র আয়াতে ‘‘কোনো নিদর্শন’’ বলতে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়কে বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর আত্-তাবারী বলেনঃ আয়াতে বর্ণিত নিদর্শনটি পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়াই অধিক বিশুদ্ধ। কারণ এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে (তাফসীরে তাবারী, ৮/ ১০৩)।

১। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

  • لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ يَعْنِي آمَنُوا أَجْمَعُونَ فَذَلِكَ حِينَ ( لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا )

অর্থাৎ ‘‘যতদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবেনা ততদিন কিয়ামত হবেনা। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখতে পাবে তখন সকলেই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোনো উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো সৎকাজ করেনি’’। (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিক্বাক)।

২। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

  • إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا

অর্থাৎ ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহতালা দিনের বেলায় অপরাধকারীদের তাওবা কবূল করার জন্য সারা রাত স্বীয় হাত প্রসারিত করে রাখেন এবং রাতের বেলায় অপরাধকারীদের তাওবা কবূল করার জন্য সারা দিন তাঁর হাত প্রসারিত করে রাখেন। পশ্চিম আকাশ দিয়ে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তাওবার দরজা খোলা থাকবে’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওবা)।

পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবেঃ

আল্লাহতালা অত্যন্ত পরম দয়াময় ও ক্ষমাশীল। বান্দা গুনাহ করে যখন তাঁর কাছে ক্ষমা চায় তখন তিনি খুশী হন এবং বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত তিনি বান্দার তাওবা কবুল করতে থাকবেন। কিন্তু যখন পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠে যাবে তখন কারো ঈমান গ্রহণযোগ্য হবেনা এবং ফাসেক ও গুনাহগারের তাওবাও কবুল হবেনা। কারণ পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়া একটি বিরাট নিদর্শন যা সে সময়কার প্রতিটি জীবিত ব্যক্তিই দেখতে পাবে এবং প্রত্যেক কাফেরই কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। অথচ ইতিপূর্বে তারা অস্বীকার করতো। মরণ উপস্থিত হওয়ার পর পাপী মু’মিন ব্যক্তির মতই হবে তাদের অবস্থা। মরণ উপস্থিত হওয়ার পর গুনাহগার বান্দার তাওবা যেমন কবুল হয়না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর তেমনি কাফেরের ঈমান ও গুনাহগারের তাওবা কবুল হবেনা। আল্লাহতালা বলেনঃ

  • فَلَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا قَالُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ (84) فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ فِي عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُونَ

অর্থাৎ ‘‘তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো তখন বললোঃ আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলাম এবং যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করতাম তাদেরকে পরিহার করলাম। অতঃপর তাদের এ ঈমান কোনো উপকারে আসলোনা যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করল। আল্লাহতালার এ নীতি পূর্ব থেকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। সেখানে কাফেরেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’ (সূরা গাফেরঃ ৮৪-৮৫)।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) পূর্ববর্তী যামানার আলেমদের থেকে বর্ণনা করে বলেনঃ পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর ঈমান ও তাওবা কবূল না হওয়ার করণ এই যে, তখন অন্তরে ভয় ঢুকে যাবে, পাপ কাজ করার আশা-আকাঙ্খা মিটে যাবে এবং শরীরের শক্তি শেষ হয়ে যাবে। কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় সকল মানুষ মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে উপস্থিত ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাবে। তাই পশ্চিম আকাশে সূর্য দেখে কেউ তাওবা করলে তার তাওবা কবূল হবেনা। যেমন মালকুল মাওতকে দেখে তাওবা করলে কারো তাওবা কবুল হয়না (তাফসীরে কুরতুবী, ৭/ ১৪৬)

ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেনঃ ‘‘সে দিন যদি কোনো কাফের ঈমান এনে মুসলমান হয়ে যায় তার ঈমান গ্রহণ করা হবেনা। সে দিনের পূর্বে যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে যদি ঈমানদার হওয়ার সাথে সাথে সৎকর্ম পরায়ন হয়ে থাকে তাহলে সে মহান কল্যাণের উপর থাকবে। আর যদি সে গুনাহগার বান্দা হয়ে থাকে এবং পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠতে দেখে তাওবা করে তার তাওবা কবূল হবেনা’’ (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩/৩৭১)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

হাদীসে কথিত ‘উম্মতিনবী’র দলিল থাকার দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট

হাদীসে কথিত ‘উম্মতি নবী‘ এর দলিল থাকার দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট

প্রশ্নকর্তা : একটি হাদীসে উল্লেখ আছে “…অতপর মূসা (আ:) আরজ করলেন,

اِجْعَلْنِىْ نَبِيًّا تِلْكَ الْاُمَّة

অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে সেই উম্মতের নবী বানিয়ে দাও। আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন “মিনহা নাবিয়্যুহা” অর্থাৎ তাদের নবী তাদেরই মধ্য থেকে হবে।” ( ইমাম আবু নাঈম আল-ইস্পাহানী (রহ:)-এর সীরাতগ্রন্থ “হুলিয়া” এবং থানভীর সীরাতগ্রন্থ “নশরুত্তিব” দ্রষ্টব্য)। এই হাদীসে ‘তাদের নবী’ হতে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের কথাই কি বুঝানো হয়েছে?

খন্ডনমূলক জবাব : প্রথমত, ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন মঈন, ইবনে আদী, ইমাম বুখারী, আবু যুর’আ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির রাবীগণের কঠোর সমালোচনা করেছেন [ইমাম যাহাবী (রহ:) রচিত ‘মীযানুল ইতিদাল’ ৩/৬৭ দ্রষ্টব্য]। ইমাম ইবনে হাব্বান (রহ:) থেকে উক্ত বর্ণনাটির একজন রাবী সাঈদ ইবনে মূসা আল-উমাবী সম্পর্কে ‘মীযানুল ইতিদাল’ কিতাবে লিখা আছে,

اتهمه ابن حبان بالوضع. ثم ساق له ثلاثة أحاديث هذا أحدها ، وقال: موضوع

অর্থাৎ ইবনে হাব্বান (রহ:) উক্ত বর্ণনাকারীকে জাল হাদীস তৈরিকারী বলে অভিহিত করেছেন। অতপর তিনি ঐ বর্ণনাকারীর তিনখানা হাদীসের অন্যতম এই একখানা হাদীসকে জাল তথা বানোয়াট বলেছেন। শায়খ আলবানী (রহ:) লিখেছেন, এর সূত্র খুবই দুর্বল ও বানোয়াট (ইমাম ইবনে আবী আ’ছেম রচিত কিতাবুস সুন্নাহ’র তাহ্কিক শায়খ আলবানীর ‘যিলালুল জুন্নাহ ফী তাখরীজিস্ সুন্নাহ ১/৩০৬ দ্রষ্টব্য)। ফলে হাদীসের ঐ কথাগুলো প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা:)-এরই কথা কিনা তা নিশ্চিত নয়, বরং সন্দেহজনক। তাই ঐ কথাগুলো আকীদার ক্ষেত্রে মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যথা কাদিয়ানীদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর কোনোই জবাব থাকেনা।

কারণ উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায়, মূসা (আ:) প্রথমে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার নবী হতে আরজ করেছিলেন। এমনকি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে শামিল হতেও চেয়েছিলেন! ফলে প্রশ্ন আসবে যে, হযরত মূসা (আ:) বনী ইসরাঈলের জন্য অলরেডি একজন রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েও তিনি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ‘নবী’ হতে চাইবেন কেন? অথচ ঐ উম্মতের জন্য সর্বশেষ নবী মুহাম্মদে আরাবী (সা:) পূর্ব থেকেই মনোনীত হয়ে আছেন যার সংবাদ ‘তাওরাত’ কিতাবেও দেয়া হয়েছে! আরো প্রশ্ন আসবে যে, মূসা (আ:) নিজের নবী ও রাসূলের পদ মর্যাদা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র একজন “উম্মত” হতে চাইবেন কোন্ যুক্তিতে? কোনো উম্মত কি কখনো নবী রাসূলের সমকক্ষ হতে পারে?

  • দ্বিতীয়ত, ইমাম আবু নাঈম আল-ইস্পাহানী (রহ:)-এর আরেকটি সীরাতগ্রন্থ ‘দালায়িলুন নাবুওয়্যাহ‘ [دلائل النبوة] (পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯) এর মধ্যে উক্ত বর্ণনাটি নিম্নোক্ত শব্দচয়নেও উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বর্ণনা করেছেন,
  • إِنَّ مُوسَى لَمَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِ التَّوْرَاةُ، وَقَرَأَهَا فَوَجَدَ فِيهَا ذِكْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ فَقَالَ: يَا رَبِّي، إِنِّي أَجِدُ فِي الْأَلْوَاحِ أُمَّةً هُمُ الْآخِرُونَ السَّابِقُونَ، فَاجْعَلْهَا أُمَّتِي قَالَ: تِلْكَ أُمَّةُ أَحْمَدَ … قَالَ: يَا رَبِّ فَاجْعَلْنِي مِنْ أُمَّةِ أَحْمَدَ.
  • অর্থাৎ “মূসা (আ:) এর প্রতি যখন তাওরাত নাযিল হল এবং তিনি যখন সেটি পড়লেন এবং সেখানে এই উম্মতের আলোচনা দেখতে পেলেন তখন তিনি আরজ করলেন, হে আমার প্রভু! আমি এই তখতে (তাওরাতের পান্ডুলিপি) শেষ যামানার অগ্রগামী উম্মতের আলোচনা দেখতে পাই। তাদেরকে আমার উম্মত বানিয়ে দিন। আল্লাহতালা উত্তরে বললেন, তারা আহমদের উম্মত।…. তখন মূসা (আ:) বললেন, তাহলে আমাকে আহমদের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করে দিন।”

তৃতীয়ত, ‘তাফসীরে আবী হাতিম’ (৫/১৫৮৭) এর মধ্যেও এই ধরণের আরেকটি দুর্বল বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, আল্লাহপাক মূসা (আ:)-কে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করলেন,

تِلْكَ الْاُمَّةُ تَكُوْنُ بَعْدَكَ اُمَّةُ اَحْمَدَ

অর্থাৎ ঐ উম্মত তোমার পর আহমদের উম্মত হবে। এতে কিন্তু পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, মূসা (আ:) যেই উম্মতের নবী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলিয়া কথিত আছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহও যে বলেছেন ‘তাদের নবী তাদেরই মধ্য থেকে হবে’-এই সমস্ত কথাবার্তায় ভবিষ্যতে একজন ‘উম্মতিনবী’ হবে—বুঝায় না, বরং ঐ সমস্ত কথাবার্তায় মুহাম্মদ (সা:)-এরই আগমনী সংবাদ দেয়া উদ্দেশ্য। নচেৎ ‘তিলকাল উম্মাতু তাকূনু বা’দাকা উম্মাতু আহমাদ’ (تِلْكَ الْاُمَّةُ تَكُوْنُ بَعْدَكَ اُمَّةُ اَحْمَدَ) একথার কী মানে?

  • এবার প্রশ্ন আসতে পারে যে, ঐ “আহমদ” দ্বারা মুহাম্মদ (সা:)-ই যে উদ্দেশ্য তা কিভাবে বুঝলাম? একজন উম্মতিনবীর আগমনী সংবাদও তো হতে পারে! এর জবাব নিম্নরূপ,

বিজ্ঞপাঠকবৃন্দ! একটু লক্ষ্য করুন। আবু নঈম এর হুলিয়াতুল আউলিয়া حلية الأولياء গ্রন্থের উক্ত বর্ণনাতেই “আহমদ” নামক ব্যক্তিটির পরিচয় এভাবে উল্লেখ আছে যে, “হযরত মূসা (আ:) আরজ করলেন, আহমদ কে? আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন : হে মূসা! আমার ইজ্জত ও গৌরবের শপথ। আমি সমস্ত সৃষ্টি জগতের মধ্যে তাঁর চেয়ে অধিক সম্মানিত কাউকেই সৃষ্টি করিনি। আমি তাঁর নাম আরশের মধ্যে আমার নামের সাথে আসমান ও জমিন এবং চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টির বিশ লক্ষ বছর পূর্বে লিপিবদ্ধ করেছি। আমার ইজ্জত ও গৌরবের শপথ! আমার সমস্ত মাখলূকের জন্য জান্নাত হারাম যতক্ষণ মুহাম্মদ (সা:) এবং তাঁর উম্মত জান্নাতে প্রবেশ না করবে।”

আশাকরি বুঝতেই পেরেছেন যে, হাদীসটি যদি সহীহও ধরি তাহলেও কিন্তু এখানে ‘আহমদ’ নামীয় মহান ঐ ব্যক্তিটি দ্বারা স্বয়ং মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-ই উদ্দেশ্য। সুতরাং এর দ্বারা তথাকথিত উম্মতিনবী’র কনসেপশন পুরোপুরি ভ্রান্ত ও বাতিল সাব্যস্ত হল।

  • হাদীসের নামে তাদের আরো ১২টি দলিলের জবাব এখানে Click

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ