Home Blog Page 42

মুসলিম শরীফের হাদীসে ঈসা (আ:)-কে ‘নাবিউল্লাহ’ বলা প্রসঙ্গে

প্রশ্ন: ঈসা (আ:) যদি আবার এসে নবী না হন (তথা নবুওয়তের দায়িত্বে না থাকেন) তাহলে মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে তাঁকে ‘নাবিউল্লাহ’ (আল্লাহর নবী) সম্বোধন করা হয়েছে কেন?

উত্তর : এর উত্তর হল, আগত ঈসা কোনো রূপক ঈসা নন, বরং বনী ইসরায়েলের জন্য ইতিপূর্বে যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন শেষ যুগে তিনি-ই পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, এ কথাটি সুস্পষ্ট করে দিতেই হাদীসে “নাবিউল্লাহ” বলে ইংগিত দেয়া হয়েছে। যাতে রূপক ঈসা দাবীদারদের উদ্দেশ্যমূলক ও বিকৃত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়ে প্রকৃত ঈসাকে বাদ দিয়ে কথিত রূপক ঈসার জালে বন্দী হয়ে না যায়!

আরেকটু বুঝিয়ে বলছি, মনে করুন, সাবেক দুই-একজন চেয়ারম্যান যারা বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলেও জীবিত, কিন্তু চেয়াম্যানের দায়িত্বে নেই। আর লোকজন তাদেরকেও চেয়ারম্যান শব্দে সম্বোধন করার অর্থ কি এই যে, তারাও নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান? অবশ্যই না। এবার একটি হাদীস দিয়ে বুঝিয়ে বলছি! কেয়ামত দিবসেও হযরত ঈসা (আ:)-কে ‘ইয়া ঈসা আন্তা রাসূলুল্লাহ’ (يا عيسى انت رسول الله) অর্থাৎ হে ঈসা আপনি আল্লাহর রাসূল, এইভাবে সম্বোধিত হবেন। (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, কিতাবুর রিক্বাক, হাদীস নং ৬১৯৭)। এখন বুঝে থাকলে বলুন, ঈসা (আ:)-কে বিচার দিবসে ‘রাসূলুল্লাহ’ বলা হবে বলে তিনি কি সেই সময় পুনরায় রেসালতপ্রাপ্ত হবেন? অবশ্যই না। অনুরূপ আগমনকারী ঈসাকে ‘নাবিউল্লাহ’ বলা হয়েছে বলে তিনিও পুনরায় নবুওয়তের দায়িত্বে সমাসীন হবেন, বুঝায়নি।

মজার ব্যাপার হল, আগত ঈসা সম্পর্কে সহীহ বুখারীর (কিতাবুল আম্বিয়া অধ্যায়) হাদীসে রাসূল (সা.) ভবিষ্যৎবাণীতে কসম বাক্য সহকারে,

و الذى نفسى بيده ليوشكن ان ينزل فيكم ابن مريم

অর্থ- “শপথ সে সত্তার যাঁর মুঠোয় আমার প্রাণ নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে মরিয়ম পুত্র নাযিল হবেন”- শব্দচয়নে সংবাদ দেয়ার উল্লেখ রয়েছে।

জেনে আশ্চর্য হবেন যে, মির্যা গোলাম আহমদের ভাষ্যমতে ‘যেসব হাদীসে কসম বাক্য সহ কোনো বিষয়ে সংবাদ দেয়া হবে সেটি কখনো রূপক অর্থে উদ্দেশ্য হবেনা, বরং প্রকৃত অর্থেই হবে।’ (মির্যা কাদিয়ানী রচিত, হামামাতুল বুশরা, বাংলা পৃ-২৭ দ্রষ্টব্য)। সুতরাং মির্যা গোলাম আহমদের কথা অনুসারেও হাদীসে উল্লিখিত ‘ইবনু মরিয়ম’ হতে রূপক ইবনু মরিয়ম উদ্দেশ্য হওয়ার কথা নয়! সত্যানুরাগী কাদিয়ানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে!

একটি সংশয় নিরসন :

মুসলিম শরীফের ‘كتاب الفتن و اشراط الساعة’ অধ্যায়ে ঈসা নাবিউল্লাহ শীর্ষক হাদীসটি প্রায় দুই পৃষ্ঠাব্যাপী। হাদীসটিতে হযরত ঈসা (আ:) ফেরেশতার মাধ্যমে দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে তথা বায়তুল মুকাদ্দাসে শুভ্র মিনারার নিকটে অবতরণ করার কথাও উল্লেখ আছে। তিনি ইয়াজুজ আর মাজুজ গোষ্ঠীর অনিষ্টতা থেকে আত্মরক্ষার্থে আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী তথা ইলহাম প্রাপ্ত হয়ে আপনা সঙ্গী সাথীদের সাথে নিয়ে তূর পর্বতমালার চূড়ায় উঠে যাবেন মর্মেও উল্লেখ আছে।

ফলে মহাসমুদ্র হতে একফোঁটা পানি তুলে নেয়ার মতই উক্ত সম্পূর্ণ হাদীসটির একটি মাত্র শব্দ ‘নাবিউল্লাহ’-এর আশ্রয় নিয়ে কাদিয়ানীরা মির্যা গোলাম আহমদের ‘নবী’ দাবীর বৈধতা খোঁজার চেষ্টা করে, যেহেতু সে নিজেকে প্রতিশ্রুত মসীহ ঈসা দাবীও করেছে। অথচ তার মসীহ ঈসা দাবীটাই একটি উদ্ভট দাবী। ইসলামে কথিত রূপক মসীহ ঈসার কোনো ধারণাই নেই। মজার ব্যাপার হল, সে নিজেও লিখেছে যে, ‘আমার মসীহ দাবীর ভিত্তি কোনো হাদীস নয়।’ (রূহানী খাযায়েন ১৯/১৪০)। মুসলিম শরীফের নাবিউল্লাহ শীর্ষক সম্পূর্ণ হাদীসটি অর্থ সহ এখানে।

ওহী শব্দের আভিধানিক অর্থগুলো সম্পর্কে :

ওহী শব্দটি কখনো সখনো ‘ইলহাম’ (আল্লাহর পক্ষ হতে অন্তরে কোনো বিষয়ে ইলক্বা বা প্রক্ষেপণ) অর্থেও হয়ে থাকে। এধরণের ইলহাম আ’ম বা সাধারণ, নবুওয়তের দায়িত্বে সমাসীন নন—এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে তো বটে; এমনকি আল্লাহ’র যে কোনো সৃষ্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। (দেখুন পবিত্র কুরআন ১৬:৬৮; ২০:৩৮; ২৮:০৭)।

মজার ব্যাপার, মির্যা কাদিয়ানী তার ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ (বাংলা) বইয়ের ৬২ নং পৃষ্ঠায় তদীয় শিষ্য সাহেবজাদা আব্দুল লতিফ ওহীর ভিত্তিতেও কথা বলতেন বলেই লিখে গেছেন (স্ক্রিনশট দেখুন)।

কাদিয়ানীদের জিজ্ঞেস করা উচিত যে, তো এখানে এই ‘ওহী’ বলতে কী উদ্দেশ্য?

নিশ্চয়ই ‘ওহীয়ে নবুওয়ত’ উদ্দেশ্য নয়! সুতরাং উক্ত হাদীসেও ঈসা (আ:) এর প্রতি যে ‘ওহী’ হবে বলা হয়েছে তদ্দ্বারাও ‘ওহীয়ে নবুওয়ত’ (الوحى النبوة) উদ্দেশ্য নয়, বরং ‘ওহীয়ে বেলায়ত’ (الوحى الولايت) তথা ইলহাম-ই উদ্দেশ্য।

মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবী তারই বই থেকে :

কে জানি প্রশ্ন করেছিল যে, ওহীর আরেক অর্থ যেহেতু ইলহাম (অন্তরে প্রক্ষেপণ) সেহেতু মির্যা গোলাম আহমদ এর ওহী দাবীর ফলে তিনিও কিজন্য সমালোচনার পাত্র হবেন এবং ইসলাম থেকে খারিজ বলে গণ্য হবেন? এর উত্তর হল, মির্যা গোলাম আহমদ এর ওহী দাবী সাধারণ ওহীর পর্যায়ভুক্ত ছিলনা, বরং ওহীয়ে নবুওয়তেরই পর্যায়ভুক্ত ছিল। তাই তার ওহী দাবী আর অন্যান্য সাধারণ ওহী (ইলহাম) দুটো এক নয়। যেমন সে এক জায়গায় লিখেছে, ‘মোটকথা আমি মুহাম্মদ ও আহমদ (সা.) হওয়ার কারণে আমার নবুওয়ত ও রেসালত লাভ হয়েছে, স্বকীয়তায় নয়, ফানাফির রসূল হয়ে…।’ (দেখুন, একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৫)।

ঈসা (আ:) এর প্রতি ওহী করা সম্পর্কে আরেকটু খোলাসা :

কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে কখনো সখনো এধরণের প্রশ্নও করা হয় যে, ঈসা (আ:) দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পর যদি তিনি পুনরায় নবী না হন, তবে কিজন্য তাঁর প্রতি ওহী করার কথা উল্লেখ আছে? এর জবাব হচ্ছে, আপনি হয়ত “ওহী” শব্দের আক্ষরিক অর্থ আরো কী কী আছে সে সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেন না। হাদীসটিতে এ মর্মে বাক্যটি কিভাবে আছে লক্ষ্য করুন,

إِذْ أَوْحَى اللَّهُ إلى عِيسَى (উচ্চারণ) ইয আওহাল্লাহু ইলা ঈসা অর্থাৎ…. ইত্যবসরে আল্লাহতালা ঈসার প্রতি ওহী করবেন….। এখানে ক্রিয়াপদ “আওহা” (أوحى) এসেছে। এর বেশ কয়েকটি অর্থ রয়েছে। ‘ওহী করা’ কিংবা ‘ইলহাম বা ইলক্বা (অন্তরে প্রক্ষেপণ)‘ ইত্যাদী সবই তার অর্থ বহন করে।

  • এই সম্পর্কে আমার নিজের একটি ভিডিও দেখুন, হাদীসে “ঈসা নাবিউল্লাহ” চার চার বার এসেছে, এইরূপ জালিয়াতিমূলক বয়ান দেয়ায় কাদিয়ানী আমীরের ইজ্জত শেষ! ভিডিও

তবে হাদীসটিতে শেষোক্ত অর্থই ধর্তব্য হবে এ জন্যই যে, এখানে প্রথমোক্ত অর্থটি উদ্দেশ্য নেয়া পূর্ব থেকে পরিত্যাজ্য। কারণ প্রতীক্ষিত ঈসা (আঃ) ‘নবুওতি ওহী‘র দ্বার ভাঙ্গতে আসবেন না, বরং শরীয়তে মুহাম্মদীর তাবলীগ করতে আসবেন। হাদীসটির অবিকল “আওহা” শব্দটি পবিত্র কুরআনেরও বহু স্থানে গায়রে নবীদের জন্য এসেছে যার একটিতেও তদ্দ্বারা “নবুওয়তি-ওহী” অর্থ কেউ নেয়নি। এমন কি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ও নেয় না।

যেমন পবিত্র কুরআনের সূরা আন নাহল এর ৬৮ নং আয়াত দেখুন। সেখানে মৌমাছির প্রতিও ওহী পাঠানোর কথা আছে। তো এর দ্বারা আপনি শেষোক্ত অর্থ বাদ দিয়ে কি প্রথমোক্ত অর্থ নেবেন? মৌমাছিকেও “নবী” বানাবেন? মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,

اَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ اَنِ اتَّخِذِیۡ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا وَّ مِنَ الشَّجَرِ وَ مِمَّا یَعۡرِشُوۡنَ

অর্থ- ‘তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে ওহী (প্রত্যাদেশ) করেছেন যে, তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে।’ (সূরা আন নাহল ৬৮)।

তাফসীরের কিতাবে আয়াতটির ওহী (وحي) শব্দকে ইলহাম অর্থে ব্যাখ্যা দিয়ে লিখা আছে যে, এখানে ওহী থেকে ‘ইলহাম’ (অন্তরে প্রক্ষেপণ) বা এমন জ্ঞান-বুদ্ধি যা নিজ প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রত্যেক জীবকে দান করা হয়েছে। (আহসানুল বয়ান)।

এভাবে আরো দেখুন সূরা ক্বাছাছ, আয়াত নাম্বার ৭ এবং সূরা ত্বাহা, আয়াত নাম্বার ৩৮; পবিত্র কুরআন খুলে দেখুন সবখানে “আওহা” শব্দ পাবেন। কিন্তু সবাই এ থেকে অর্থ নিয়েছেন “ইলহাম করেছেন”। সুতরাং উক্ত হাদীসেও এ একই অর্থ ধরে নিতে হবে। তখন আর কোনো সন্দেহ জাগবেনা। ওয়াল্লাহু আ’লাম। আল্লাহ সবাইকে ভ্রান্তি থেকে বের করে শেষনবী মুহাম্মদে আরাবীর উম্মতে শামিল হওয়ার তাওফিক দিন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানীরা যেসব হাদীস দেখিয়ে ঈসা (আ:)-কে মৃত দাবী করে

ঈসা (আ:) সম্পর্কিত কাদিয়ানীদের উদ্ধৃত ৫টি হাদীসের জবাব :

১. ইহুদী-নাসারাগণ তাদের নবীগণের কবর-সমূহকে সেজদার স্থলে পরিণত করা… প্রসঙ্গে (এপিসোড-১) :

প্রশ্নকর্তা, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, অভিশাপ সেসব ইহুদী নাসারার প্রতি। যারা তাদের নবীগণের কবরগুলোও সেজদার স্থলে পরিণত করেছিল। এখন এর দ্বারা ঈসা (আ.)ও একজন কবর-পথযাত্রী মৃত সাব্যস্ত হল না?

উত্তরতাদা, প্রশ্নকারী হয়ত জানেই না যে, উল্লিখিত হাদীস সহীহ বুখারীতে সংক্ষিপ্তাকারে এলেও সহীহ মুসলিম শরীফ, মসনাদে আহমদ, মু’জামুল কাবীর এবং তাবারানী প্রভৃতিগ্রন্থে আরেকটু বিস্তারিত উল্লেখ আছে। যদ্দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, বনী ইসরাইলী সম্প্রদায় তাদের নবীগণের কবরগুলো তো বটে, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্য হতে পুন্যবান ব্যক্তিদের কবরগুলোও সেজদার স্থলে পরিণত করেছিল। তাই সবগুলো বর্ণনাকে সামনে রেখে বিশিষ্ট যুগ-ইমাম আল্লামা জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ.) হাদীসটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে,

  • “রাসূল (সা.) যখন মৃত্যুশয্যায় নিপতিত হন তখন তিনি আপন মুখের উপর একখানা চাদর দিয়ে রাখলেন পরে যখন খারাপ লাগল তখন তা চেহারা মুবারক হতে সরিয়ে দিলেন এবং তিনি এ অবস্থায় বললেন, ‘ইহুদী আর নাসারা জাতির উপর আল্লাহ’র অভিশাপ। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সেজদার স্থলে পরিণত করেছে’।” (সহীহ বুখারী)।

হাদীসটিতে ‘নাসারা’ (ঈসায়ী) শব্দ উল্লেখ থাকায় একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, তবে কি ঈসা (আ.)ও মৃত্যুবরণ করেছেন? আর যেহেতু নাসারাদের একমাত্র নবী ঈসা (আ.) ইন্তেকাল করেননি, তাই এর জবাব হল, হাদীসে ইহুদী এবং নাসারা সম্পর্কে ‘নবী’ শব্দের বহুবচন أنبياء (আম্বিয়া) উল্লেখ থাকায় আরও বেশি কৌতূহল জাগে! যেহেতু (নাসারা-ধর্মে একজন ছাড়া) আর কেউই নবী ছিলেননা। যেমন ঈসা (আ:)-এর শিষ্যগণ এবং হযরত মরিয়ম সিদ্দিকা প্রমুখ। কাজেই (এখানে ‘আম্বিয়া’/انبياء শব্দের পর ‘ছলেহীন’/صَالِحين শব্দ ঊহ্য মেনে) ‘নবীগণ’ দ্বারা যথাক্রমে ইহুদীদের নবীগণ আর (ছলেহীন থেকে) নাসারাদের অনুসৃত পুন্যবান ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য নিতে হবে। মুসলিম শরীফের একখানা হাদীস হতে ব্যাখ্যাটির সমর্থনে জোরালো ইংগিত পাওয়া যায়। হাদীসটি এই যে, হযরত জুনদুব (রা.) হতে বর্ণিত আছে, كانوا يتخذون قبورَ أنبيائِهم وصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবীগণের এবং নেককার ব্যক্তিদের কবরগুলোকে সেজদার স্থলে পরিণত করেছিলো।” (তথ্যসূত্রঃ শরহে সুয়ূতী লি-সুনানে নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ; আরো দেখুন, ফাতহুল বারী, কিতাবুস সালাত; হাদীস নং ৪৩৭)। {এই প্রশ্নটির দ্বিতীয় উত্তর পড়ুন}।

আফসোস! কাদিয়ানীরা মুসলিম শরীফের হাদীসটির এই অংশটিকে কৌশলে এড়িয়ে যায় এবং সহীহ বুখারীর উল্লিখিত হাদীসের একতরফা বাহ্যিক অর্থে নিজেরা তো ধোকা খায়, অন্যকেও একই ধোকা দেয়ার চেষ্টা করে। অধিকন্তু রাসূল (সা:) থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণিত আছে ان عيسى لم يمت অর্থাৎ “নিশ্চয়ই ঈসা (আ:) মৃত্যুবরণ করেননি।” (তাফসীরে তাবারী ৫/৪৪৮; দুররে মানছূর ২/৬৪)। নির্বোধদের কি জানা নেই যে, রাসূল (সা.)-এর সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসগুলোয় কখনো বৈপরীত্য নেই। অথচ কাদিয়ানীদের একতরফা মতলবি-দলিল নেয়া হলে তখন হাদীসগুলোয় চরম বৈপরীত্য দেখা দেবে, যা কখনো কোনো উম্মতে মুহাম্মদীর পক্ষে বরদাশত করার মত নয়। সংক্ষেপে।

২. যদি মূসা এবং ঈসা জীবিত থাকত তাহলে তাদের উভয়ের জন্য আমার আনুগত্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলনা :

উত্তর এখানে

৩. ঈসা (আ.) একশত বিশ বছর জীবন-যাপন করা :

প্রশ্নকর্তা : ঈসা (আ:) (ইহ-জাগতিক) একশত বিশ বছর জীবন যাপনকরা মর্মে রেওয়ায়েতটির তাহকিক এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তরদাতা : প্রথমত, হাদীসশাস্ত্রের প্রায় সকল স্কলারই বলে গেছেন, এর সনদ অর্থাৎ সূত্র দুর্বল (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৬/৩৮৪)। ইমাম বুখারী (রহ.) তার বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উসমান সম্পর্কে স্পষ্টই বলে গেছেন : لا يكاد يتابع فى حديثه অর্থাৎ তার বর্ণনা অনুসরণ করার মত কোনো গ্রহণযোগ্যতাই তার নেই।’ (আস-সিলসিলাতুয য’য়ীফাহ ৯/৪২৫; ক্রমিক নং ৪৪৩৪)। ইমাম ইবনে আসাকীর (রহ.) এ সম্পর্কে মন্তব্য করে লিখেছেন : সঠিক হচ্ছে, হযরত ঈসা (আ.) এইরূপ বয়সে পৌঁছেননি। (তারিখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৮২)। ইমাম নূরউদ্দিন আল-হাইছামী (রহ.) বলেছেন : رواه الطبرانى باسناد ضعيف অর্থাৎ ইমাম তাবারানী এটি দুর্বল সূত্রে এনেছেন (মাজমা’উয যাওয়ায়েদ, ক্রমিক নং ১৪২৪৫)।

দ্বিতীয়ত, বর্ণনাটির ‘আ’শা’ (عَاشَ) শব্দের অর্থ ‘জীবিত বা বেঁচে থাকা’ নয়। খুব ভালোভাবে খেয়াল করলে যে কেউই বুঝতে পারবে যে (হাদীসের আরবী ইবারত) ان عيسى ابن مريم عاش عشرين و مائة سنة (অর্থাৎ নিশ্চয়ই ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) একশত বিশবছর (ইহ-জাগতিক) জীবন যাপন করেছিলেন) হাদীসটির عَاشَ শব্দের অর্থ অভিধানে ‘বেঁচে থাকা, জীবনযাপন করা, জীবিকা নির্বাহ করা’ রয়েছে। তাই হাদীসটির সঠিক তাৎপর্য এটাই দাঁড়ায় যে, ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার আগে তিনি পৃথিবীতে একশত বিশবছর (ইহ-জাগতিক) জীবন যাপন করেছিলেন। এখন হয়ত আপনি ভাবছেন যে, ওম্মা আকাশটাই না যেন ভেঙ্গে পড়লো মাথার উপর! জ্বী হ্যাঁ, আশ্চার্য হবার কিছু নেই; সত্য এটাই! কিন্তু আফসোস! খোদাদ্রোহী, সত্যগোপনকারী যারা তারা হাদীসের শব্দের অর্থ উলোটপালোট করে দরাকে সরা বানিয়েছে। তাই সাধারণ যে কেউই তাদের এই সমস্ত ভুল অনুবাদ অত:পর অপব্যাখ্যা দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছে।

আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।

৪. হাদীসেও মুহাম্মদ (সা.) এবং ঈসা (আ.) দুইজনের জন্যই ‘ফা-লাম্মা তাওয়াফ্ফাইতানী’ শব্দ উল্লেখ থাকা :

প্রশ্নকর্তা : হাদীস শরীফে মুহাম্মদে আরাবী (সা:) আর ঈসা (আ:) দু’জনের ক্ষেত্রেই কিন্তু ‘ফা-লাম্মা তাওয়াফ্ফাইতানী’ শব্দ উল্লেখ আছে। তাহলে দুই স্থানে দুইরকম অর্থ কেন?

জবাবদাতা : হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসটির উদ্দিষ্ট অংশের মর্মার্থ হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আমি সেই সময় অর্থাৎ কেয়ামত দিবসে অনুরূপ বলব যেরূপ আল্লাহর নেক বান্দা ঈসাও বলবেন : ‘অতপর যখন তুমি আমাকে নিয়ে নিলে (তখন) তুমিই ছিলে তাদের (উম্মতে মুহাম্মদীয়া) উপর একক নেগাহ্বান।’ (সংক্ষেপে)। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, ইসলাম সম্পর্কে যাদের নূন্যতম জ্ঞান আছে তারাও বুঝতে পারে যে, ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে প্রশ্নকারীর উল্লিখিত যুক্তি একদমই ঠিক না। কারণ প্রশ্নকারী জানেনই না যে ‘তাওয়াফ্ফা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিয়ে নেয়া। যেমন حتى يتوفهن الموت (সূরা নিসা, আয়াত ১৫ দ্রষ্টব্য)। যদিও বা শব্দটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ক্বারীনার বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন অর্থ প্রদান করবে। আর তাই রাসূল (সা:) এর ক্ষেত্রে উপরিউক্ত হাদীসের توفى শব্দটি ক্বারীনার কারণে রূপক অর্থে মৃত্যু বুঝালেও ঈসা (আ:)-এর ক্ষেত্রে সেটি অসংখ্য ক্বারীনার বিচারে সশরীরে উঠিয়ে নেয়াই বুঝাবে।

মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও توفى শব্দের ভিন্ন ভিন্ন ৬ ধরণের অর্থ পাওয়া যায়। সেই অর্থগুলো হচ্ছে ‘পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করা’ (১:৬২০); ‘পরিপূর্ণ পুরষ্কার দেয়া’ (১:৬৬৪-৬৫); ‘অপমানকর ও অভিশপ্ত মৃত্যু হতে রক্ষাকরা’ (১২:২৩); ‘জন্মগ্রহণকরা’ (১৯:৪৯) ইত্যাদী। সব কয়টি জায়গাতেই তারই কৃত ঊসূল-মতে ‘কর্তা আল্লাহ্ আর কর্ম প্রাণী’ই রয়েছে। এখন পবিত্র কুরআন আর হাদীসে توفيتنى একই রকম হয়েছে বলে আপনারা যারা একই অর্থ নেয়ার যুক্তি দিচ্ছেন তারা এর কী উত্তর দেবেন?

দ্বিতীয়ত, আলোচ্য হাদীসটির হুবহু ‘তাওয়াফ্ফাইতানী’ শব্দটি আয়াতেও উল্লেখ থাকায় যদি মনে করেন যে, ঈসা (আ:) এর توفي আর রাসূল (সা:)-এর توفي মর্মের দিক থেকে হুবহু একই হওয়া যুক্তিক; তাহলে বিরাট ভুল করবেন। তার কারণ, আপনারা যে হাদীসটি নিজেদের মতের পক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করছেন সেটি হযরত সাঈদ ইবনু জুবায়ের (রহ:) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) উনাদের সূত্রেই কিন্তু বর্ণিত হয়েছে। আর উনাদের দুইজনই বিশ্বাস করতেন, হযরত ঈসা (আ:) সশরীরে আকাশে জীবিত।

মূলকথা হল, আজরাইল (আ:)-এর মাধ্যমে তুলে নেয়া আর জিবরাইল (আ:)-এর মাধ্যমে তুলে নেয়ার তাৎপর্য কিন্তু এক নয়। রাসূল (সা:)-এর তুলে নেয়ার ঘটনা মালাকুল মউত হযরত আজরাইল (আ:)-এর মাধ্যমে ঘটেছিল। তাই এর অর্থ মৃত্যুর মাধ্যমে শুধু রূহ তুলে নেয়া উদ্দেশ্য আর ঈসা (আ:)-এর তুলে নেয়ার ঘটনা রূহুল কুদস হযরত জিবরাইল (আ:)-এর মাধ্যমে ঘটেছিল। পবিত্র কুরআনেও এর ইংগিত রয়েছে। দেখুন اذ ايدتك بروح القدس অর্থ—স্মরণ কর, যখন রূহুল কুদস (জিবরাইল)-এর মাধ্যমে আমি তোমাকে শক্তিশালী (সুদৃঢ়) করেছিলাম। (সূরা মায়েদা ১১০)। এর সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে একাধিক সহীহ হাদীসে। যেমন রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন : ‘লাম্মা ইজতামা’আল ইয়াহূদু আ’লা ঈসা আলাইহিস সালাম লি-ইয়াকতুলূহু ওয়া আতা-হু জিবরাইলু…ফা-আওহাল্লা-হু ইলা জিবরাইলা আন ইরফা ইলাইয়্যা আ’বদী’। অর্থাৎ যখন ইহুদীরা ঈসা (আ:)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে সমবেত হলো তখন জিবরাইল (আ:) তাঁর নিকট আগমন করেন…আল্লাহতালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা (ঈসা)-কে আমার নিকট তুলে নিয়ে এসো।’ (তারীখে দামেস্ক ৪৭/৪৭২; তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯)। স্ক্রিনশট :-

ঈসা (আ.)-কে রাফা করা হয়েছিল, মানে সশরীরে ও জীবিত আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। এর সমর্থনে আরো কিছু প্রমাণ উল্লেখ করছি। (১) رفع كان ابن اثنتين و ثلاثين سنة و ستة اشهر অর্থ—তাঁকে বত্রিশ বছর ছয় মাস বয়সে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল (আত তবকাতুল কাবীর লি ইবনে সা’আদ, ১/৩৬; ইবনে আব্বাস থেকে)। (২) رفع عيسى من روزننة فى البيت الى السماء অর্থ—ঈসাকে বাড়ীর বাতায়ন পথে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হাফিয ইবনে কাসীর; ইবনে আব্বাস থেকে)। (৩) হযরত সাঈদ ইবনে জোবায়ের তিনি ইবনে আব্বাস থেকে, রাসূল (সা.) বলেছেন, لما اراد الله ان يرفع عيسى الى السماء خرج على اصحابه الخ অর্থ—যখন আল্লাহতালা ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন সে মুহূর্তে তিনি তার হাওয়ারীদের নিকট গমন করলেন…! (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হাদীস নং ৩১৮৭৬, ইমাম নাসাঈ হাদীসটি عن ابى كريب عن ابى معاوية به نحوه এইরূপ সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন। ইমাম হাফিয ইবনে কাসীর (রহ.) তার ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবে উদ্ধৃত করে লিখেছেন و هذا اسناد صحيح الى ابن عباس على شرط مسلم অর্থ—ইবনে আব্বাস পর্যন্ত এই সনদটি সহীহ, মুসলিম শরীফের কর্ত শর্তেই সহীহ। আরও দেখুন, আল ফাতহুর রব্বানী খ-২০/পৃ-১৪১। সংক্ষেপে।

তাই ঈসা (আ:)-এর ‘তুলে নেয়া’ জীবিত ও সশরীরে হওয়াই উদ্দেশ্য। সুতরাং বুঝা গেল ‘তাওয়াফফা’ শব্দটি নির্দিষ্ট কোনো অর্থের জন্য খাস নয়। আবার সব জায়গায় তার একটি মাত্র অর্থ নেয়াও আইন-সিদ্ধ নয়। আশাকরি জবাব পেয়েছেন।

৫. হাদীস শরীফে ঈসা (আ:)-কে চার চার বার ‘নাবীউল্লাহ’ বলা প্রসঙ্গে :

প্রশ্নকর্তা : মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে আগমনকারী মসীহকে ‘নাবিউল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহর নবী) সম্বোধন করা হয়েছে। মির্যা সাহেবই যখন সেই মসীহ হবার দাবীদার তখন তিনি কিজন্য ‘নবী’ হবেন না?

উত্তর এখানে

কাদিয়ানীদের ভ্রান্ত মতবাদের খন্ডন সম্পর্কে ‘মারকায উমর ডট অর্গ’ – ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ লিংক :- (৪টি ক্যাটাগরিতে) Click

মির্যা কাদিয়ানী “নবী রাসূল” দাবী করার স্ক্রিনশটসহ ডকুমেন্ট এখানে Click

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া ও সেখান থেকে অচিরেই নাযিল হওয়া মর্মে কয়েকটি হাদীস

ঈসা (আ:)-এর পরিবর্তে অন্য একজনকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় এবং ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় :

[১] বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরকারক ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) রচিত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর ২য় খন্ডের ذِكْرُ رَفْعِ عِيسى عليه السلام إلى السماء (ঈসা আলাইহিস-সালামকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার আলোচনা) অধ্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ সহীহ হাদীসের উল্লেখ পাওয়া যায়। নিচে সনদ সহকারে হাদিসটি উল্লেখ করছি।

সনদ (ধারাবাহিক সূত্র) :

“ইমাম ইবনু আবী হাতিম > আহমদ ইবনু সানান > আবু মু’আবিয়া > আ’মাশ > মিনহাল ইবনু আমর > সাঈদ ইবনু জুবায়ের > রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে।”

ইমাম ইবনে কাসীর তিনি বর্ণনাটির উক্ত সনদ সম্পর্কে লিখেছেন,

وهذا إسناد صحيح إلى ابن عباس على شرط مسلم

অর্থাৎ হ্যরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) পর্যন্ত এই সনদটি সহীহ এবং ইমাম মুসলিম (রহ.) এর কৃত শর্তের উপরই প্রতিষ্ঠিত।

  • হাদীসের আরবী পাঠ –
  • لما أراد الله أن يرفع عيسى إلى السماء خرج على أصحابه وفي البيت اثنا عشر رجلا منهم من الحواريين، يعني فخرج عليهم من عين في البيت ورأسه يقطر ماء فقال لهم: إن منك من يكفر بي اثني عشرة مرة بعد أن آمن بي، ثم قال: أيكم يلقى عليه شِبْهِيْ فيُقتلُ مكاني فيكون معي في درجتي؟ فقام شاب من أحدثهم سنا فقال له: اجلس. ثم أعاد عليهم فقام الشاب فقال: أنا. فقال عيسى اجلس، ثم أعاد عليهم فقام الشاب فقال أنا، فقال: أنت هو ذاك. فأُلْقِىَ عَليه شِبْهُ عيسى، ورُفِعَ عيسى من روزنة في البيت إلى السماء. قال وجاء الطلب من اليهود فأخذوا الشِبْهَ فقتلوه ثم صَلبوه.

অর্থাৎ আল্লাহতালা ঈসা (আ.)-কে যখন আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন তখন তিনি (ঈসা) গৃহের অভ্যন্তরে আপনা সাথীদের অন্যতম বারোজন হাওয়ারীর সাথে [জুরুরি আলোচনায়] বসলেন। অর্থাৎ তিনি সাথীদের মাঝে একটি ঝর্ণা হতে এমন অবস্থায় উপনীত হলেন যখন তাঁর মাথা হতে ফোটায় ফোটায় পানি ঝরছিল। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বললেন, তোমাদের মধ্য হতে জনৈক ব্যক্তি আমার প্রতি ঈমান এনেও আমার সাথে দশবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারপর তিনি বলেছেন, তোমাদের মাঝে এমন কেউ কি (নিজেকে সপে দিতে প্রস্তুত) আছ, যার চেহারাকে আমার মত করে দেয়া হবে এবং আমার জায়গায় তাকে হত্যা করা হবে। ফলে সে আমার মর্যাদায় ভূষিত হয়ে (জান্নাতে) আমার সঙ্গী হবে? তারপর বয়সে সর্ব কনিষ্ঠ একজন হাওয়ারী তাদের মধ্য হতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি তাকে বসে যেতে বলেন। তারপর তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণের পুনরাবৃত্তি করেন। যুবকটি আবার দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি’। ঈসা (আ.) তাকে [আবারও] বসে যেতে বলেন। তিনি আবার ভাষণের পুনরাবৃত্তি করেন। যুবকটি (এবারও) দাঁড়িয়ে বলেন, আমি। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, (হ্যাঁ) তুমিই সেই [ভাগ্যবান] ব্যক্তি! তারপর তাকে ঈসার অবিকল সাদৃশ করে দেয়া হল এবং ঈসাকে তাঁর বাড়ীর বাতায়ন পথে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হল। তিনি [ইবনে আব্বাস] বলেন, ইহুদীদের তল্লাশি দল আসলো অতপর ঈসার সাদৃশ যুবকটিকে পাকড়াও করে হত্যা করলো তারপর ক্রুশবিদ্ধ করলো। (অনুবাদ শেষ হল)। সুতরাং সহীহ হাদীস দ্বারাও প্রমাণ পাওয়া গেল যে, ঈসা (আ.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং তাঁর জায়গায় অন্য একজনকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল।

  • আকাশে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে ‘ইলাছ ছামায়ি’ শব্দে হাদীস :

[২] হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন,

فأخبره بأنه يرفعَه الى السماء و يُطهره من صُحبة اليهود

অর্থ- “তিনি (আল্লাহতালা) তাঁকে (ঈসা) জানিয়ে দেন, নিশ্চয়ই তিনি [আল্লাহ] তাঁকে (ঈসা) আকাশে উঠিয়ে নেবেন এবং ইহুদীদের নাগাল পাওয়া থেকে তিনি তাঁকে (ঈসা) পবিত্র (মুক্ত) করবেন।” [রেফারেন্স : আস-সুনানুল কোবরা লিন-নাসাঈ, হাদীস নং ১১৫৯; সংকলক, ইমান আহমদ ইবনে শোয়াইব ইবনে আলী আল খোরাসানী রহ: মৃত ৩০৩ হিজরী, তাফসীরে বায়দ্বাভী ২/১৮১]।

  • আকাশে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে রুফি’আ ইলাছ ছামায়ি শব্দে হাদিস :

[৩] দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের সংবাদ শুনামাত্র-ই শোকে মূহ্যমান হয়ে বলেছিলেন,

و انما رُفع الى السماء كما رُفع عيسى ابنُ مريمَ عليه السلام

অর্থ- “নিশ্চয়ই তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় যেমনিভাবে ঈসা ইবনে মরিয়মকে (আকাশে) উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” [দেখুন, আল-মিলালু ওয়ান নাহাল, খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ৯; সংকলক, ইমাম শাহরাস্তানী; মৃত ৫৪৮ হিজরী]।

  • ঊর্ধ্বগমন করানো মর্মে ‘আসরা বি-ঈসা’ শব্দে হাদীস :

[৪] হযরত হাসান ইবনে আলী ইবনে আবী তালেব (রা:) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন,

قُتِلَ ليلةَ اَنزلَ القرآنُ و ليلةَ أُسْرِىَ بِعيسى و ليلةَ قُبِضَ مُوسى. در منثور للسيوطي

অর্থ- “তিনি (আলী বিন আবী তালেব) পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার রাতে (তথা শবে ক্বদরে) শহীদ হন আর সেই রাতে ঈসা (আ.) ঊর্ধ্বগমন করেন এবং মূসা (আ.) মৃত্যুবরণ করেন।” [রেফারেন্স, ইমাম সুয়ূতী সংকলিত ‘দুররে মানছূর’ খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৩৬]।

  • সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে বি-জাছাদিহি শব্দে হাদীস :

[৫] হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন,

…كان بينَ موسى بنِ عمرانَ وَ عيسى بنِ مريمَ الفُ سنةٍ وَ تِسعةُ مائةِ سنةَ و اَن عيسى عليه السلام حِين رُفِعَ كان ابنُ اثنتين و ثلاثين سنةَ و ستةَ أشهُرٍ و كانت نبوتُه ثلاثين شهراً و أَن اللهَ رَفَعَهُ بِجَسَدِهِ وَأَنهُ حَيُ الْآنَ و سَيَرْجِعُ الي الدنيا فيها مَلِكاً ثم يَموتُ كما يموتُ الناسُ. الطبقات الكبرى لابن سعد

অর্থ- “মূসা ইবনে ইমরান আর ঈসা ইবনে মরিয়ম তাঁদের দু’জনের মাঝে ঊনিশশত বছরের ব্যবধান ছিল।… নিশ্চয় ঈসা (আ.)-কে যখন উঠিয়ে নেয়া হয় তখন তিনি ছিলেন বত্রিশ বছর ছয় মাসের যুবক। তাঁর নবুওয়তি কার্যক্রম চলেছিল ত্রিশ মাস অব্ধি। নিশ্চয় আল্লাহতালা তাঁকে স্বশরীরে উঠিয়ে নেন এবং তিনি এখনো জীবিত। অতিসত্বর তিনি পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসবেন। আর তিনি পৃথিবীতে একজন বাদশাহ [শাসক] হবেন। তারপর তিনি অন্যান্য মানুষের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবেন।” [দেখুন, আত তবকাতুল কোবরা লি-ইবনে সা’আদ : ১/৩৫-৩৬; ‘যিকরুল কুরূনি ওয়াস সানীনি আল্লাতি বাইনা আদাম ওয়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ শীর্ষক পর্ব, মাকতাবাতুল খাঞ্জী, কায়রো মিশর]।

  • উপরে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে ‘উরিঝা ফীহা বি-রূহ’ শব্দে হাদিস :

[৬] হাবাইরা ইবনু ইয়ারীম হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন, আলী (রা.) যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন হযরত হাসান (রা.) মিম্বারে উঠে ভাষণ দেয়ার প্রাক্কালে বলেছেন,

…. و لقد قُبِضَ فى الليلةِ التى عُرِجَ فيها بِرُوْحِ عيسى ابنَ مريم ليلةَ سبعِ و عشرين مِن رمضانَ

অর্থ- “এমন একটি রাত্রিতে তাঁর [আলী] রূহ কবজ [মৃত্যুদান] করা হয়েছে যেই রাত্রিতে রূহ (জিবরাইল)’র মাধ্যমে ঈসা ইবনে মরিয়মকে উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। রাত্রটি ছিল রমাদ্বানের ২৭ তারিখ।” [রেফারেন্স, আত-তবক্বাতুল কোবরা, লি ইবনে সা’আদ ৩/৩৭; মাকতাবাতুল খান্জি লাহোর, সহীহ ইবনে হাব্বান খন্ড ১৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ খন্ড ১৭]।

  • উপরে উঠিয়ে নেয়া মর্মে ‘রুফি’আ ঈসা’ শব্দে হাদীস :

[৭] যখন হযরত আলী (রা.) শহীদ হয়ে যান তখন তাঁর পুত্র হযরত হাসান (রা.) খোৎবা দানকালে উপস্থিত শ্রোতাদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

فقد قَتلتُم الليلةَ رجلا فى ليلةٍ نَزل فيها القرآنُ و فيها رُفِع عيسى و فيها قُتل يوشع ابنُ نونٍ الخ

অর্থ- “তোমরা এক ব্যক্তি [আলী]-কে এমন এক রাত্রিতে শহীদ করেছ যেই রাত্রটিতে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল এবং ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং ইউশা ইবনু নূন (আ.)-কেও শহীদ করা হয়েছিল।” [রেফারেন্স, তারিখুল কামিল লি-ইবনে আছীর খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ৩০; মিসরীয় প্রকাশনী]।

  • ইবনে মরিয়ম (আ.) ‘আকাশ থেকে নাযিল হবে’ মর্মে সহীহ হাদীস :

[৮] রাসূল (সা:) বলেছেন,

والذي نفسى بيده ليوشكن ان ينزل ابن مريم فيكم حكما عدلا

অর্থাৎ শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ অতিসত্বর তোমাদের মাঝে ইবনে মরিয়ম একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে অবশ্যই নাযিল হবেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া হাদীস নং ৩২৬৪)।

[৯] হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

كيف انتم إذا نزل ابن مريم من السماء فيكم و امامكم منكم

অর্থাৎ তখন তোমাদের কেমন হবে যখন ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে তোমাদের মাঝে নাযিল হবেন আর তখন তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য হতে হবেন। [সুনানে বায়হাক্বীর সংকলক কর্তৃক সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত’ ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫, বাবু ক্বওলিল্লাহি আজ্জা ওয়া জাল্লা লি-ঈসা ইন্নী মুতাওয়াফ্ফীকা ওয়া রাফিউকা ইলাইয়্যা; হাদীসের মান : সহীহ]।

  • সহীহ বুখারী’র হাদীসে من السماء শব্দ নেই, অতএব বায়হাক্বী’র সংকলন الاسماء والصفات কিতাবে শব্দটি থাকতে পারেনা! কাদিয়ানীদের একটি অজ্ঞতা আর সংশয় ও তার জবাব! Click

[১০] “…আল্লাহতায়ালা তখন ঈসা ইবনে মরিয়মকে পাঠাবেন। জাফরানের রঙ্গে রঙ্গিত দুটি পোষাক পরিহিত হয়ে এবং দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর আপনা দুই বাহু রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বপ্রান্তে শ্বেত মিনারার নিকটে তিনি নাযিল হবেন।” সংক্ষেপে। [সহীহ মুসলিম, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতিস সা’আহ হা/৭০৭৬ ইফা ]।

পরিশেষ :

পরিশেষে বলব, কাদিয়ানী সম্প্রদায় অতিব চতুরতার সাথে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের সরলমনা অনুসারীদের বোকা বানিয়ে মুরোদ হাসিল করতে অবিরাম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এমনকি তাদের অনুসারীদেরকে সত্য থেকে পুরোদমে বঞ্চিত রাখার কৌশল হিসেবে ঢালাওভাবে উলামায়ে কেরামকে আকাশের নিচে নিকৃষ্ট জীব বলেও আখ্যা দেয়। যাতে তাদের মিথ্যা, রূপকের কাসুন্দি আর অহরহ জালিয়াতী বরাবরই ধরা-ছোঁয়া থেকে রক্ষা পায়।

অধিকন্তু রাসূল (সা.) হক্কানী উলামায়ে কেরামকে সুনানে আবুদাউদ এবং তিরমীজীর হাদীসে ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’ (নবীগণের উত্তরসূরী) শব্দে মর্যাদাবান করেছেন এমনকি সুনানে দারেমীর ৩৭০ নং হাদীসে ‘ওয়া ইন্না খাইরাল খিয়ারি খিয়ারুল উলামা’ (এবং নিশ্চয়ই আলেমগণই সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী) শব্দেও মর্যাদাবান করেছেন। অথচ তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগুলো চেপে যায়। উফ! কতটা ধুর্ত তারা! আল্লাহ তাদের হিদায়াত করুন।

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

আলেমগণ বানর আর শূয়োরের আকৃতিতে পরিণত হওয়ার প্রেক্ষিত ও পর্যালোচনা

প্রশ্ন: আমাদের আহমদী (কাদিয়ানী) মুরুব্বীদের বলতে প্রায় শুনা যায় যে, শেষ যামানার আলেমদের ব্যাপারে হাদীসে নাকি এসেছে যে, তারা সবাই বানর আর শূয়োরের আকৃতিতে পরিণত হবে! একথা সত্য হলে তখন আমরা সত্য জানার উদ্দেশ্যে আলেমদের নিকট কেন যাব?

জবাব:

হাদীসটির গ্রহণযোগ্য সম্পর্কে “ইতহাফুল জামা’ত বি মা জায়া ফিল-ফিতানি ওয়াল মালাহিম ওয়া আশরাতিস সা’আহ (إتحاف الجماعة)” -কিতাবের রচয়িতা শায়খ আত-তাভিযরী (পূর্ণ নাম হুমুদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে হুমুদ ইবনে আব্দির রহমান আত তুওয়াইজরী-حمود بن عبد الله بن حمود بن عبد الرحمن التويجري) (মৃত. ১৪১৩ হিজরী) রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, হাদীসটি ইমাম হাকিম আত-তিরমিযি (রহ.) সংকলিত ‘নাওয়াদিরুল উসূল’ কিতাবটি ছাড়া অন্য আর কোনো কিতাবে পাওয়া যায়না। আর এর সনদ জঈফ বা দুর্বল। হযরত আবু উমামাহ (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, تكون في أمتي فزعة، فيصير الناس إلى علمائهم، فإذا هم قردة وخنازير অর্থাৎ আমার উম্মতের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করবে। তারই প্রেক্ষিতে লোকজন তাদের উলামা-(য়ে  ছূ)দের নিকট যাবে। ইত্যবসরে তারা তাদেরকে বানর আর শূয়োরের আকৃতিতে বিকৃত চেহারার দেখতে পাবে। (সূত্র, নাওয়াদিরুল উসূল, হাকীম তিরমিযী রহ.)। হাদীসের মান, দুর্বল। (আল-জামেউল কাবীর এর ভুমিকা দ্রষ্টব্য, ইমাম সুয়ূতী রহ.)।

জ্ঞানীদের নিকট গোপন নয় যে, বর্ণনাটিতে উল্লিখিত ‘বানর’ আর ‘শূয়োরে’ পরিণত হওয়ার সাবধানবাণী শুধুমাত্র উলামায়ে ছূ-দের সাথেই সম্পর্কিত এবং সেটি কেয়ামতের বড় আলামতগুলো যখন একেরপর এক প্রকাশিত হতে থাকবে সেই সময়ের সাথেই সম্পৃক্ত। যেমন ইমাম সুয়ূতী (রহ.) ‘দুররে মানসূর’ নামক কিতাবে একই বিষয়ে এই হাদীসটিও উল্লেখ করেছে, أن ريحا تكون في آخر الزمان وظلمة فيفزع الناس إلى علمائهم، فيجدونهم قد مسخوا অর্থাৎ শেষ যামানায় বায়ুপ্রবাহ এবং অন্ধকারের ঘটনা ঘটবে। অতপর লোকজন (অস্থিরতার সমাধান খুঁজতে) উলামা (য়ে ছূ-)দের নিকট অস্থির হয়ে ছুটবে। অতপর তারা তাদেরকে বিকৃত চেহারার দেখতে পাবে। (সূত্র: যাম্মুল মালাহী, ইবনে আবি আদ-দুনিয়া)। দুররে মানসূর-এর স্ক্যানকপি নিম্নরূপ,

এ বর্ণনার সমর্থনে আরও বহু হাদীস বিদ্যমান। যেমন “মুসনাদে আহমদ” গ্রন্থে রয়েছে, و يبعث على إحياء من احيائهم ريح فتنسفهم অর্থাৎ তখন তিনি (আল্লাহতালা) তাদের নানা প্রান্তে বায়ু প্রেরণ করবেন ফলে সেটি তাদের গ্রাস করবে। ইবনে আবিদ-দুনিয়া (রহ.) হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে একটি দলকে বানর আর শূয়োরের আকৃতি করে দেয়া হবে এবং আরেকটি দলকে ভুমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে ও সেই মুহূর্তে প্রবল বায়ু ওই দলটির নিকট প্রেরণ করা হবে। কেননা তারা মদ পান করবে, রেশমি কাপড় পরবে আর দফ এবং বাদ্যযন্ত্র অবলম্বন করবে। বহু হাদীস দ্বারা এও জানা যায় যে, সেই সময় জিন্দিক আর কদরিয়াহ মতবাদে বিশ্বাসীসহ শরাবী, গান বাদ্যকারী আর হালাল হারাম মিশ্রিতকারীদের চেহারাও বানর আর শূয়োরের আকৃতিতে পরিণত হয়ে যাবে (সূত্র: ইগাছাতুল লাহফান, ইমাম ইবনু কাইয়্যুম)।

বর্ণনাগুলোর শিক্ষাঃ বর্ণনাগুলোর আলোকে ঢালাওভাবে সব আলেমকে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়। অনুরূপ বর্তমান সময়ের সাথেও সম্পর্কযুক্ত বলা যাবেনা। অন্যথা চ্যালেঞ্জ থাকলো বর্তমানে দুনিয়ার কোথাও কোনো একজন উলামায়ে ছূ-র চেহারা বানর বা শূয়োরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে—এমন একটি প্রমাণও কেউ দেখাতে পারবেনা। বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করতে চাই, ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন, والنسخ يكون حقيقيا و يكون معنويا و هذا القول هو الراجح و هو ما ذهب إليه ابن عباس وغيره من أئمة التفسير অর্থাৎ বিকৃতিটা প্রকৃতপক্ষে এবং রূপক দুইভাবেই হতে পারে। এটাই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত। ইবনে আব্বাস সহ সমস্ত তাফসীরকারকের একই মত। পক্ষান্তরে রাসূল (সা.) হক্কানী উলামায়ে কেরামকে সুনানে আবুদাউদ এবং তিরমীজীর হাদীসে ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’ (নবীগণের উত্তরসূরী) শব্দে ভূষিত করেছেন এমনকি সুনানে দারেমীর ৩৭০ নং হাদীসে ওয়া ইন্না খাইরাল খিয়ারি খিয়ারুল উলামা’ (এবং নিশ্চয়ই আলেমগণই সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী) শব্দেও মর্যাদাবান করেছেন। কাজেই সবাইকে এক করে দেখা প্রকারান্তরে রাসূল (সা.)-এর হাদীসগুলোরই সুস্পষ্ট অবমাননা বৈ নয়।

মূল আলোচনাঃ মূল-কথায় ফেরা যাক। প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা.) আলেমদেরকে হাদীসে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। উলামায়ে ছূ অর্থাৎ মন্দ ও নিকৃষ্ট আলেম এবং উলামায়ে হক অর্থাৎ সত্যপন্থী আলেম। হাদীসে উলামায়ে হক যারা তাদের বহু মর্যাদার উল্লেখ রয়েছে। এখানে বিপত্তির জায়গাটা হল, কাদিয়ানীরা আগুন পানি দুটোকে এক ও একাকার করে গুলিয়ে ফেলে আর তাদের সরলমনা ও অবোধ প্রকৃতির অনুসারীদের বিকৃত শিক্ষা দিয়ে আলেমদের প্রতিও বিদ্বেষী করে তুলে। আসুন এবার উল্লিখিত হাদীসটির সূত্র তথা সনদ সম্পর্কে মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম কী লিখেছেন তা জানা যাক!

  • হাদীসটির ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ‘ইসলাম ওয়েব ডট নেট’ (আরবী) থেকে একটি ফাতাওয়া উল্লেখপূর্বক বঙ্গানুবাদ,

فأما هذا الحديث فلم نجده إلا في (نوادر الأصول) للحكيم الترمذي، وضعفه التويجري في (إتحاف الجماعة). وقد نبه السيوطي في مقدمة (الجامع الكبير) على أن ما عزي للحكيم الترمذي في نوادر الأصول، أو الحاكم في تاريخه، أو الديلمي في مسند الفردوس، فهو ضعيف، فليستغن بالعزو إليها، أو إلى بعضها، عن بيان ضعفه. اهـ. وعلى افتراض صحته، فإن ذلك يكون في آخر الزمان مع ظهور العلامات الكبرى للساعة؛ فقد روى ابن أبي الدنيا في (ذم الملاهي) عن مالك بن دينار قال: بلغني أن ريحا تكون في آخر الزمان وظلمة، فيفزع الناس إلى علمائهم، فيجدونهم قد مسخوا

অর্থাৎ এই হাদীসটি আমরা শুধু কেবল ইমাম হাকিম আত-তিরমিযি’র (নাওয়াদিরুল উসূল) কিতাবে পেয়েছি। ইমাম হুমূদ ইবনু আব্দিল্লাহ আত-তুওয়াইজরী (মৃত: ১৪১৩ হিজরী) তিনি ‘ইতহাফুল জামা’আহ বি-মা জা-আ ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম ওয়া আশরাতিস সা’আহ’ (সংক্ষেপে, ইতহাফুল জামা’আহ) নামক গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন।  আল-হাকিম আত-তিরমিযী স্বীয় ‘নাওয়াদিরুল উসূল’ গ্রন্থে এবং ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকেম স্বীয় ‘তারীখে নিশাপুর’ গ্রন্থে এবং ইমাম দাঈলামী তিনি তার মসনাদে ফেরদাউস গ্রন্থে যেটি এনেছেন সেটি সম্পর্কে ইমাম আস-সুয়ুতি (রহ.) ‘আল-জামেউল কাবীর’ এর ভুমিকায় সতর্ক করেছেন। কারণ এটি দুর্বল হাদীস। সুতরাং তার কারণ চিহ্নিত করে তা হতে বিরত থাকা উচিত। অধিকন্তু এর বৈধতা ধরে নিয়ে বলা যেতে পারে যে, এটি শেষ যামানায় কেয়ামতের বড় আলামত সমূহ সংঘটিত মুহুর্তে ঘটবে। ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া (রহ.) তিনি তার যাম্মুল মালাহী গ্রন্থে মালিক বিন দিনার (রহ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আমাকে বলেছেন: আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, শেষ যামানায় বায়ুপ্রবাহ এবং অন্ধকার এর ঘটনা ঘটবে। অতপর লোকজন (অস্থিরতার সমাধান খুঁজতে) উলামা (য়ে ছূ-)দের নিকট অস্থির হয়ে ছুটবে। অতপর  তারা তাদেরকে বিকৃত চেহারার দেখতে পাবে। (অনুবাদ শেষ হল)।

শেষকথা, ইমাম ইবনে আবিদ-দুনিয়া (রহ.)-এর রচিত “যাম্মুল মালাহী” গ্রন্থে হযরত মালিক বিন দিনার (রহ.)-এর বর্ণনাকৃত হাদীসের আলোকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, শেষ যামানার যেসব আলেমকে লোকজন বানর আর শূয়োরের আকৃতিতে দেখবে সেটি প্রথমত: আলেমদের মধ্যে শুধুই উলামায়ে ছূ-য়ের সাথে খাস বা নির্দিষ্ট, দ্বিতীয়তঃ এইধরণের ঘটনা কেবল নির্ধারিত একটি সময় ঘটবে আর সেই সময়টি কেয়ামতের বড় বড় নিদর্শনগুলো সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তেই হবে। আশাকরি এখন থেকে আর কেউই গোমরাহ হবেনা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু কলেরায় ও টাট্টিতে যেভাবে

শুরুকথা :

প্রথমেই বলে রাখি, মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ (و لعنة الله على الكاذبين )! তাই আসুন, শুনা শুনা কথায় নয়, নগদে সঠিক ইতিহাস জেনে নিই। যাদের ইতিহাস তাদেরই বই থেকে জেনে নিন! তবেই ক্লিয়ার হতে পারবেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু কোথায় এবং কিভাবে হয়েছিল! আর এই কথা যে দুনিয়াবাসীর বানানো কোনো কথা নয়, বরং বাস্তব একটি সত্য ঘটনা তাতে কোনো সন্দেহ থাকবেনা। অত্র লিখাটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে দুটি। কাদিয়ানের কৃষ্ণ মির্যা গোলাম আহমদ এর মৃত্যু “কলেরা” এবং “টাট্টিতে” হয়েছিল কিনা? কলেরাকে তিনি তার নিজের জন্য ‘অভিশপ্ত মৃত্যু’ স্বরূপ গণ্য করতেন কিনা?

অপ্রিয় হলেও সত্য, আধুনিক অনেক কাদিয়ানী-ই বিশ্বাস করেনা যে মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু কলেরায় এবং মলমুত্রে হয়েছিল! আফসোস! সম্প্রতি অধিকাংশ কাদিয়ানী এগুলোকে উলামায়ে কেরামের বানানো গল্প মনে করেন। যদিও সত্য মিথ্যা যাচাই করে অন্তত নিজ চোখে একবার হলেও দেখে নেয়া উচিত! যাতে কাজ্জাব মির্যা কাদিয়ানীর হাকিকত পর্যন্ত পৌছা সহজ হয়! যেন বোধগম্য হয় যে, এরকম অপমানকর ও অভিশপ্ত মৃত্যু কোনোভাবেই কোনো নবীর হতে পারেনা। হে আল্লাহ তুমি তাদের সুমতি দাও! জেনে অবাক হবেন, এ ব্যাপারগুলো সঠিক প্রমাণ করতে কাদিয়ানী ঘরানার বইগুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বহু শীর্ষ স্থানীয় কাদিয়ানী উম্মত(?) নিরবে এগুলোকে সঠিক স্বীকার করলেও উদ্দেশ্যমূলক কারণে প্রকাশ করতে চান না!

মির্যায়ীদের অথেনটিক বইপুস্তক থেকে : মির্যার ছেলে মির্যা বশির আহমদ (এম এ) রচিত সিরাতে মাহদী‘র ১ম খন্ডের ১১ নং পাতা খুলে দেখুন। কলেরার সুস্পষ্ট ইংগিত ও মৃত্যুক্ষণের বীভৎস ঘটনার প্রমাণসহ তার পায়খানায় (রেডিমেড চার-পায়া টাট্টির উপর) উল্টে পড়ে জীবন-মৃত্যুুুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যাওয়ার প্রমাণ দেখতে পাবেন। যেমন, তাদেরই বইয়ের ভাষায় :

“(মির্যা কাদিয়ানীর স্ত্রী বলেন)…কিন্তু তিনি এমনি দুর্বল ছিলেন যে, টয়লেটেও যেতে পারছিলেন না, তাই আমি (খাটের) চারপায়ার নিকটেই (রেডিমেড টাট্টির) ব্যবস্থা করে দিই। তিনি সেখানেই বসে সেরে ফেলেন এবং পুনরায় উঠে বসে পড়েন। (তারপর) আমি তার পা দাবাতে থাকি। কিন্তু (তার) দুর্বলতা খুবই বেড়ে গিয়েছিল। তারপর (তার) আরেকবার ডায়রিয়া হল। আরো একবার বমিও বল। তারপর তিনি বমি সেরে বসতে চাইলেন। তখন দুর্বলতা এতখানি ছিল যে, তিনি বসতেই পেছন দিকে চারপায়ার (রেডিমেড টাট্টির ) উপর উল্টে পড়ে যান এবং তার মাথা চারপায়ার পট্টির সাথে লেগে যায় আর (তার) অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে যায়। তখন আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, ও আল্লাহ! এটা কী হতে চলল!”

তারপর ১৯০৮ সালের ২৫ই মে মঙ্গলবার (মির্যার মৃত্যুর আগের দিন) মির্যা সাহেবের মুরিদ ও তদীয় শ্বশুর (কাদিয়ানির দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জাহানের পিতা) মীর নাসির সাহেবকে মির্যা কাদিয়ানী উদ্দেশ্য করে রাত্রবেলায় মুমূর্ষু অবস্থায় বলেছিলেনঃ- میر صاحب مجہے وباہی ہیضہ ہوگیا ہے অর্থাৎ মীর সাহেব! আমাকে কলেরার বিপদ পেয়ে বসেছে। (রেফারেন্স – হায়াতে নাসির– ১৪; লিখক কাদিয়ানী মুরুব্বী শেখ ইয়াকুব আলী ইরফানি কাদিয়ানী [এডিটর, আল হিকাম]) এই পর্যায় মির্যার স্বীকারোক্তি দ্বারাই প্রমাণ করা হয়েছে যে, তার মৃত্যু হয়েছিল হাইদ্বাহ তথা কলেরায়। উল্লেখ্য, কলেরাকে উর্দূতে ‘হাইদ্বাহ’ বলে। স্ক্রিনশট নিচে দেখুন-

এবার মির্যার শ্বশুর মুহাম্মদ আলী খান (মীর নাসের নামে পরিচিত) এর মুখ থেকে শুনুন! তিনি বলেন,

  • “হযরত (মির্যা) সাহেবের যেই রাতে অসুখ হল সেই রাতেই আমি আমার জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। যখন তার খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন আমাকে জাগানো হল আর আমি হযরতের নিকট যখনি গিয়ে পৌঁছলাম এবং তার কষ্ট দেখলাম তখন তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মীর সাহেব! আমাকে কলেরার বিপদ পেয়ে বসছে। তারপর থেকে আমার জানামতে তিনি আর কোনো কথা বলেননি। এই অবস্থায় দ্বিতীয় দিন সকাল দশটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।” (হায়াতে নাসের পৃষ্ঠা ১৪; পুরাতন এডিশন)।

এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, মির্যা কাদিয়ানী কলেরার মৃত্যুকে তার নিজের জন্য অভিশপ্ত মৃত্যু হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। তিনি ১৯০৭ সালে ১৫-ই এপ্রিল ভারতের অমৃতসরের প্রখ্যাত আলেম সানাউল্লাহ অমৃতসরী (জন্মমৃত্যু : ১৮৬৮-১৯৪৮)-এর প্রতি লেখিতভাবে একটি দীর্ঘ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। সেখানে উল্লেখ করেন :

  • যদি আমি এইরূপই একজন মিথ্যাবাদী এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকি যেরকমটি আপনি আপনার লিখাতে উল্লেখপূর্বক অধিকাংশ সময় আমাকে স্মরণ করে থাকেন তাহলে আমি আপনার জীবদ্দশাতেই ধ্বংস হয়ে যাব। কেননা আমি জানি কোনো ফাসাদ সৃষ্টিকারী এবং মিথ্যাবাদীর হায়াত বেশী হয়না। (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/৫৭৯)।

ইতিহাস স্বাক্ষী, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু মওলানা সানাউল্লাহ (রহ:) এর আগেই ১৯০৮ সালে হয়েছে আর সানাউল্লাহ সাহেবের মৃত্যু হয়েছে ১৫ ই মার্চ ১৯৪৮ সালে। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজের মিথ্যাবাদী হওয়া শর্তে “হাইদ্বাহ” তথা কলেরার মৃত্যু চেয়ে নিজের উপর বদ-দোয়াও করেন। দেখুন, মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৫৭৮। স্ক্রিনশট নিচে দেখুন-

মির্যার স্বীকারোক্তি ছিল, মুবাহালাকারীর যেই পক্ষ মিথ্যাবাদী সে সত্যবাদীর জীবদ্দশাতে মারা যাবে। দেখুন, মালফূজাত খন্ড ৫ পৃষ্ঠা ৩২৭। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মুবাহালায় অংশগ্রহণকারী শায়খ আব্দুল হক গজনভী (রহ:) এর মৃত্যু হয় ১৬ই মে ১৯১৭ সালে। তার মানে শায়খের আগেই মির্যা কাদিয়ানী মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমেও প্রমাণ করে গেলেন যে, তিনি একজন জঘন্য মিথ্যাবাদী! স্ক্রিনশট নিচে দেখুুন-

আরো একটি কথা বলে রাখা দরকার। শায়খ আব্দুল হক গজনভী (রহ:) এর সাথে মির্যা কাদিয়ানীর মুবাহালা হয়েছিল ১৮৯৩ সালে অমৃতসরের ঈদগাহ ময়দানে। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৭২)। নিচে স্ক্রিনশট দেখুন!

এখানে লক্ষনীয় বিষয় হল, সীরাতে মাহদী আর ‘হায়াতে নাসের’ বই দুটোর বর্ণনা মতে মির্যার কলেরায় মৃত্যু হওয়াটা যদিও ১০০% নিশ্চিত কিন্তু তার মৃত্যুটা টাট্টিতেই হয়েছিল বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। তবে হ্যাঁ, টাট্টিতে উল্টে পড়ে যাওয়া এবং অবস্থা চরম শোচনীয় হওয়া, এইটুকু পরিষ্কার। সম্ভবত, কাদিয়ানীরা এই জন্য মির্যার মৃত্যু টাট্টিতে হওয়ার বিরুধিতা করেন। কিন্তু তাদের ‘হায়াতে নাসের‘ বইটির একদম পুরাতন এডিশন দেখলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু টাট্টিতে হওয়া ১০০% সত্য, সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যেখানে মির্যার কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার বক্তব্য তো আছেই, সে সাথে তার মৃত্যু টাট্টিতে হওয়ার উল্লেখও পরিষ্কার শব্দে রয়েছে। দুঃখের বিষয় হল, কাদিয়ানীরা সেটির পরবর্তী এডিশনে ‘মৃত্যু টাট্টিতে হওয়া’ এর তথ্যটি গায়েব করে ফেলে। তারপরের এডিশনে ‘কলেরায় আক্রান্ত হওয়া’ এর তথ্যটিও গায়েব করে ফেলে। এই সম্পর্কে ৩ ঘণ্টার উর্দূ এই ডিবেটটা দেখা যেতে পারে। তারিখ ২০২০ ইং। কাদিয়ানীদের পক্ষে মুরুব্বী দাউদ নাসের কথা বলছেন। তিনি অবশেষে বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। ভিডিওতে ক্লিক করুন।

আগের এডিশনগুলোতে তথ্য গায়েব করার প্রামাণ্য ডকুমেন্ট এখানে!

অবশেষে বলতে পারি, মির্যা কাদিয়ানী এবং তার মুরিদদের বই দ্বারাও আমরা প্রমাণ করতে পারলাম যে, মির্যার মৃত্যু কলেরাতে হয়েছিল এবং পায়খানাতে হয়েছিল। কাজেই কাদিয়ানিদের নিকট আমাদের শুধু প্রশ্ন একটাই। তা হল, মির্যা সাহেবের রাওজা শরিফ(?) লাহোরে আহমদী বিল্ডিং এর অভ্যন্তরে মলমুত্রে না হয়ে পাঞ্জাবের “কাদিয়ান” পল্লিতে কেন হল? অথচ সে ছিল একজন নবী দাবিদার। আর তিরমিজি শরীফের একটি হাদীসে এসেছে ما قبض الله تعالى نبيا، الا فى الموضع الذي يحب أن يدفن فيه অর্থ:- আল্লাহতালা কোনো নবীকে এমন কোনো স্থানে মৃত্যু দেননা যে স্থানটি তাঁর সমাধি হিসেবে প্রিয় নয়। (হাদীসের মান, সহীহ)।

সুতরাং মির্যা সাহেবের টাট্টিতে উপড়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনা কাদিয়ানীরা যতভাবেই অস্বীকার করেনা কেন, প্রকৃতপক্ষে ঘটনা বাস্তব সত্য। তাই বলা যায়, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যুই তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট! কাজেই যাদের চোখ আছে দেখবে আর যাদের অন্তর আছে উপলব্ধি করবে। সবাইকে ধন্যবাদ। ওয়াসসালাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মাহে রমজানে কী করবেন?

0
  • মাহে রমজানে আমাদের করণীয় :

মাহে রমজানের রোজা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়সী বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মুসলিম নর নারীর উপর একটি ফরজ বিধান। সুবহে সাদেক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে প্রত্যেক ধরণের পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে নিজেকে বিরত রাখাই রোজা। মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। ধনী ব্যক্তি উপবাসের মাধ্যমে গরিবের দুঃখ ও অনাহারের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। একে অপরের সুখ-দুঃখ উপলব্ধির মধ্য দিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। এবার রোজাদারের জন্য পালনীয় বিষয়গুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরব!

  • রোজাদারের জন্য করণীয় :

রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা লাভের জন্য রোজাদারকে যেসব বিষয় পালন করতে হবে তা হলো :

১. রোজাদার অতিরিক্ত কথা বলবেন না। ২. অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ বর্জন করবেন। ৩. কারো সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করবেন না। কেউ ঝগড়া করতে এলে (আমি রোজাদার) বলে তাকে বিদায় দেবেন। ৪. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার করবেন। ৫. মিথ্যা কথা বলবেন না। ৬. কারো সমালোচনায় লিপ্ত হবে না। ৭. রোজার হক যথাযথভাবে আদায় করবেন। ৮. স্ত্রীর সাথে যৌনালাপ থেকে বিরত থাকবেন। ৯. অশ্লীল ও অশালীন ছবি-চিত্র দেখা থেকে বিরত থাকবেন। ১০. মুখ দিয়ে কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করবেন না। ১১. গরম বা রোদের কারণে বারবার কুলি করা যাবে না। ১২. অধিক উষ্ণতার কারণে গায়ে ভেজা কাপড় জড়িয়ে রাখা যাবে না। ১৩. বেশি বেশি দান-সাদকাহ করবেন। ১৪. রোজাদারের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত সব অবৈধ কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। ১৫. যথাসময়ে সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করতে হবে প্রভৃতি।

  • রোজা যেসব কারণে ভেঙে যায় :

এবার রোজাদারকে জানতে হবে কী কারণে তার অতি কষ্টের রোজা ভেঙে যায়। রোজা ভেঙে যাওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হচ্ছে, ১. ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করা। ২. স্ত্রী-সহবাস করা। ৩. স্ত্রী চুম্বন দ্বারা বীর্যপাত হওয়া বা হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত করা। ৪. ইচ্ছা করে মুখভর্তি বমি করা। ৫. পাথর, লোহার টুকরা বা ফলের আঁটি প্রভৃতি গিলে ফেলা। ৬. ইচ্ছাকৃতভাবে পায়ু বা যৌনপথে যৌন সম্ভোগ করা। ৭. ইচ্ছাপূর্বক এমন জিনিস পানাহার করা, যা খাদ্য বা ওষুধরূপে ব্যবহার হয়। ৮. ডুজ নেয়া। ৯. কান বা নাকের ভেতর ওষুধ দেয়া। ১০. ধূমপান, লোবান এবং হুক্কা ইত্যাদির ধোঁয়া শুঁকা ইত্যাদি মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।

শেষকথা : রোজার সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ বিভিন্ন পাপাচার থেকে দূরে থেকে সৎ কাজের প্রতি ধাবিত হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত, রোজার এ মহান শিক্ষাকে উপলব্ধি করা। তাই রোজার প্রতি সবারই যত্মবান হওয়া অপরিহার্য। লিখাটি ভাল লাগলে সবাই শেয়ার করুন!

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক