Home Blog Page 18

নবীগণ তাদের কবরে জীবিত

নবীগণের অন্যতম একটি সম্মান ও বৈশিষ্ট্য!

নবীগণ তাদের কবরসমূহে জীবিত, সুবহানাল্লাহ!! নবীগণের মুজিজা বা অন্যতম একটি ঐশী মর্যাদা।

হাদীসের তাহকীক ও তাখরীজ : قال أبو يعلى: حدثنا أبو الجهم الأزرق بن علي حدثنا يحيى بن أبي بكير حدثنا المستلم بن سعيد عن الحجاج عن ثابت البناني: عن أنس بن مالك: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (الأنبياء أحياء في قبورهم يصلون). অর্থ, আবু ই’য়ালা মওছূলি বলেন আমাকে আবুল জিহাম আল আযরাক ইবনু আলী বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন আমাকে ইয়াহইয়া ইবনু আবী বুকাইর বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন আমাকে মুস্তালিম ইবনে সাঈদ বর্ণনা করেছেন, তিনি হাজ্জাজ থেকে আর তিনি সাবেত আল বুনানি থেকে, তিনি হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে। (সনদ সমাপ্ত)। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, (উচ্চারণ) আল আম্বিয়া আহইয়াউন ফী কুবূরিহিম ইউসাল্লূনা। অর্থাৎ, নবীগণ নিজেদের কবরগুলোতে জীবিত, তারা সালাত পড়েন। (মুসনাদু আবী ই’য়ালা [مسند أبي يعلى الموصلي], হাদীস ক্রমিক নং ৩৪২৫, হাদীসের মান : সহীহ)। এবার হাদীসটির তাহকীক দেখুন,

তাহকীক, ইমাম বায়হাক্বী (রহ.) হাদীসটি আবু ই’য়ালা (أبي يعلى الموصلي) এর সূত্রেই স্বীয় কিতাব حياة الأنبياء في قبورهم এর ২৩ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন। ইমাম নূরুদ্দীন আল হাইছামী (রহ.) ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ কিতাবে (খ-৮ পৃ-২১১) হাদীসটির রাবীগণ সম্পর্কে লিখেছেন رواه أبو يعلى والبزار ورجال أبو يعلى ثقات অর্থাৎ এটি আবু ই’য়ালা আল মওছূলি এবং ইমাম বাজ্জার উভয়ই তাদের মুসনাদে বর্ণনা করেছেন আর আবু ই’য়ালা এর বর্ণনার সমস্ত রাবী সিকাহ তথা বিশ্বস্ত। শায়খ আলবানী (রহ.) ‘আস সিলসিলাতুস সহীহা’ (السلسلة الصحيحة) কিতাবেও এটি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এর সনদ সহীহ

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যার স্ববিরোধীতা-৩৬

কোথাও লিখলেন, পাখির উড্ডয়ন কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়, আরেক জায়গায় লিখল, কুরআন দ্বারা প্রমাণিত…!!

এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?

মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে (তিনি লিখেছেন),

اور یہ بھی یاد رکھنا چاہئے کہ ان پرندوں کا پرواز کرنا قرآن شریف سے ہر گز ثابت نہیں ہوتا بلکہ ان کا ہلنا اور جنبش کرنا بھی بپایہ ثبوت نہیں پہنچتا اور نہ درحقیقت ان کا زندہ ہوجانا ثابت ہوتا ہے

অর্থাৎ আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই পাখিদের উড়ে যাওয়া পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়, এমনকি তাদের ঝাঁকুনি ও নড়াচড়া করাও প্রমাণিত নয় আর প্রকৃতপক্ষে এটাও প্রমাণিত নয় যে, তারা জীবিত। (রূহানী খাযায়েন ৩/২৫৬-৫৭, টিকা দ্রষ্টব্য)।

স্ববিরোধ কথা :

মির্যা সাহেব লিখেছেন

, اور حضرت مسیح کی چڑیاں با وجودیکہ معجزہ کے طور پر ان کا پرواز قرآن کریم سے ثابت ہے مگر پھر بھی مٹی کے مٹی ہی تھے

অর্থাৎ, আর হযরত মসীহ (আ.)-এর পাখিরা যদিও তাদের উড্ডয়ন একটি অলৌকিক ঘটনা যা পবিত্র কুরআন দ্বারাই প্রমাণিত, তবুও তারা মৃত্তিকাই (মাটিই) ছিল। খোদাতালা কোথাও বলেননি যে, এরা জীবিতই হয়ে গিয়েছিলো! (আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম, রূহানী খাযায়েন ৫/৬৮)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

শেষকথা হল, এমতাবস্থায় মির্যা সাহেব কি সীমাহীন মিথ্যা আর অসঙ্গতির জন্ম দিয়ে গেলেন না? এখন তাহলে মির্যা সাহেবকে তারই কথা অনুসারে আমি যদি একজন নাম্বার ওয়ান ‘কাজ্জাব-মিথ্যাবাদী‘ আখ্যা দিই তবে কি অন্যায় হবে? যেহেতু তিনি খোদ লিখেছেন, “মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে।” (রূহানী খাযায়েন ২১/২৭৫)। আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের কাছে প্রশ্নগুলো রেখে দিলাম।

মির্যা স্ববিরোধীতা-৩৭

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যার স্ববিরোধীতা-৩৫

কোথাও লিখলেন, কুরআনের মধ্যে ইয়াসোর (ঈসা) পরিচয় দেয়া হয়নি, আরেক জায়গায় লিখেন, ইয়াসোর সৃষ্টির বর্ণনায় আদম (আ.)-কে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে! কি নিকৃষ্ট বৈপরীত্য কথা রে বাপু!

এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বই থেকে, তিনি লিখেছেন

ﻣﺴﻠﻤﺎﻧﻮﮞ ﮐﻮ ﻭﺍﺿﺢ ﺭﮨﮯ ﮐﮧ ﺧﺪﺍ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﻧﮯ ﯾﺴﻮﻉ ﮐﯽ ﻗﺮﺍﻥ ﺷﺮﯾﻒ ﻣﯿﮟ ﮐﻮﺋﯽ ﺧﺒﺮ ﻧﮩﯿﮟ ﺩﯼ ﮐﮧ ﻭﮦ ﮐﻮﻥ تها

অর্থাৎ, মুসলমানদের জানা আছে যে, খোদাতালা কুরআন শরীফের ভেতর ‘ইয়াসো’ (যীশু) কে তার কোনো সংবাদই দেননি। (দেখুন, দ্বামিমায়ে আঞ্জামে আথহাম, রূহানী খাযায়েন ১১/২৯৩; টীকা)।

স্ববিরোধ কথা :

মির্যা সাহেব লিখেন,

ﺍﺳﯽ ﻭﺟﮧ ﺳﮯ ﺧﺪﺍ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﻧﮯ ﯾﺴﻮﻉ ﮐﯽ ﭘﯿﺪﺍﺋﺶ ﮐﯽ ﻣﺜﺎﻝ ﺑﯿﺎﻥ ﮐﺮﻧﮯ ﮐﮯ ﻭﻗﺖ ﺁﺩﻡ ﮨﯽ ﮐﻮ ﭘﯿﺶ ﮐﯿﺎ ﮨﮯ۔ ﺟﯿﺴﺎ ﮐﮧ ﻓﺮﻣﺎﺗﺎ ﮨﮯ۔ ﺍﻥ ﻣﺜﻞ ﻋﯿﺴﯽٰ ﻋﻨﺪ ﷲ ﮐﻤﺜﻞ ﺁﺩﻡ

অর্থাৎ এ জন্য খোদাতালা ইয়াসো (যীশু)-এর সৃষ্টির উদাহরণ বর্ণনাকালে আদম (আ.)-কেই উপস্থাপন করলেন। যেমন এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ’র নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমেরই অনুরূপ। (দেখুন, মির্যার রচিত ‘চশমায়ে মা’আরিফাত’ ২১৮; রূহানী খাযায়েন ২৩/২২৭)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি:-

শেষকথা : মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন: মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে। (রূহানী খাযায়েন: ২১/২৭৫)। অতএব এবার মির্যা কাদিয়ানী তারই স্ববিরোধী কথার কারণে কী সাব্যস্ত হলেন একটু ভেবে দেখবেন কি? এমন একজন মিথ্যাবাদীকে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান কিজন্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে রক্ষা করুন। আমীন।

মির্যা স্ববিরোধীতা-৩৬

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

বয়স্কদের দুধ পান করানোর শরয়ী হুকুম

নাস্তিক মুরতাদদের একটি আপত্তি ও তার জবাব

বয়স্কদের দুধ পান করানো সম্পর্কে নাস্তিকদের আপত্তি খণ্ডন

নাস্তিকরা নিন্মোক্ত হাদীস দেখিয়ে বলতে চায় যে, তাহলে এখন কেন বয়স্কদের দুধ পান করানোর মাধ্যমে হুরমত সাব্যস্ত করা হয় না? হাদীসটি পড়ুন, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহলা বিনতে সুহাইল (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার নিকট সালেম-এর যাতায়াতের কারণে আমি (আমার স্বামী) আবূ হুযাইফাহ’র চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দাও। সে বলল, আমি তাকে কিভাবে দুধপান করাবো, সে যে বয়স্ক পুরুষ? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে বলেন, আমিও অবশ্য জানি যে, সে বয়স্ক পুরুষ। সে তাই করলো, দুধ পান করানোর পর আবূ হুযাইফাহ’র চেহারায় আমি কোনো অপছন্দের ভাব লক্ষ্য করিনি। (রাবী বলেন), তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুন নিকাহ হাদীস নং ১৯৪৩)।

উত্তর, হাদীসটি সহীহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে হাদীসে রাসূল (সা.)-এর নির্দেশটি মুক্ত কোনো নির্দেশ ছিল না, বরং এটি সালিমের জন্য ‘খাস’ ছিল। যেজন্য নাস্তিক সহ অন্যান্য সমালোচকদের দাবীটি সম্পূর্ণ বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। এবার প্রাসঙ্গিক কয়েকটি হাদীস নিচে দেয়া হল। ফলে বিষয়টি বুঝতে আরও সহজ হবে।

(১) বয়স্কদের দুধ পান করানো সম্পর্কে সুনান নাসাঈ থেকে সনদ সহ হাদীস :-

بَاب رَضَاعِ الْكَبِيرِ أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ يَحْيَى أَبُو الْوَزِيرِ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ عَنْ يَحْيَى وَرَبِيعَةُ عَنْ الْقَاسِمِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةَ أَبِي حُذَيْفَةَ أَنْ تُرْضِعَ سَالِمًا مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ حَتَّى تَذْهَبَ غَيْرَةُ أَبِي حُذَيْفَةَ فَأَرْضَعَتْهُ وَهُوَ رَجُلٌ قَالَ رَبِيعَةُ فَكَانَتْ رُخْصَةً لِسَالِمٍ

অর্থাৎ, আহমদ ইবন ইয়াহইয়া আবুল ওয়াযির (রহ.) … আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুযায়ফা-এর স্ত্রীকে আদেশ করেছেন, আবু হুযায়ফা-এর মাওলা সালিমকে দুধ পান করাবার জন্য। তাতে আবু হুযায়ফা-এর ক্ৰোধ প্রশমিত হবে, অতএব তিনি তাকে দুধ পান করালেন, আর তখন সে একজন বয়স্ক পুরুষ। রবী’আ বলেন, আর এটা ছিল সালিম-এর জন্য বিশেষ অনুমতি। (সুনানু নাসাঈ, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং ৩৩২৪)।

(২) এবার একই বিষয়ে আরো কিছু বর্ণনা দেখুন, বয়স্কদের দুধ সম্পর্ক নবীপত্নীগণ আয়েশা (রা.)-কে বলতেন,

وَاللَّهِ مَا نُرَى الَّذِي أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَهْلَةَ بِنْتَ سُهَيْلٍ إِلَّا رُخْصَةً فِي رَضَاعَةِ سَالِمٍ وَحْدَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللَّهِ لَا يَدْخُلُ عَلَيْنَا أَحَدٌ بِهَذِهِ الرَّضْعَةِ وَلَا يَرَانَا

অর্থাৎ, আল্লাহর কসম! আমরা মনে করি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহলা বিনত সুহায়াল-কে যে আদেশ করেন, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ হতে শুধু সালিম-এর দুধ পানের ব্যাপারেই অনুমতি ছিল। আল্লাহর কসম! যেন কেউ আমাদের নিকট আগমন না করে এ দুধ সম্পর্ক নিয়ে এবং আমাদেরকে না দেখে। (সুনানু নাসাঈ, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং ৩৩২৭)।

(৩) তারপর আরেকটি বর্ণনা দেখুন, নবী করীম (সা.)-এর সহধর্মিণীগণ হযরত আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলতেন,

وَاللَّهِ مَا نَرَى هَذَا إِلاَّ رُخْصَةً أَرْخَصَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِسَالِمٍ خَاصَّةً فَمَا هُوَ بِدَاخِلٍ عَلَيْنَا أَحَدٌ بِهَذِهِ الرَّضَاعَةِ وَلاَ رَائِينَا

অর্থাৎ আল্লাহর কসম! আমরা এটাকে (প্রাপ্ত বয়সে দুধপান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হওয়াকে) একটি বিশেষ অনুমতি মনে করি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল সালিমের জন্য দিয়েছিলেন। অতএব এ ধরনের দুধপানের মাধ্যমে কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবে না এবং আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৭৪)।

কে এই সালিম?

  • অত্র হাদীসটির প্রধানতম চরিত্রের নাম সালিম। তিনি ছিলেন আবু হুযায়ফা (রা.)-এর পালকপুত্র। আবু হুযায়ফা ইবন উতবা ইবন রবি’আ (রা.) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে শহীদ হন, তিনি সালিম (রা.)-কে পালক পুত্র করেছিলেন যাকে বলা হত সালিম মাওলা আবু হুযায়ফা। (সায়িবা নামক জনৈকা মহিলা তাকে আযাদ করেন, পরে আবু হুযায়ফা তাকে লালন-পালন করেন এবং পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। এইজন্য সালিমকে আবু হুযায়ফার মাওলা বলা হয়) যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবন হারিস (রা.)-কে পুত্র সন্তান বানিয়েছিলেন এবং আবু হুযায়ফা সালিমের নিকট তার ভাতিজী ফাতেমা বিনত ওয়ালিদ ইবন উতবা ইবন রবি’আকে বিবাহ দিলেন, তিনি সালিমকে নিজের পুত্র বলে মনে করতেন। (মুয়াত্তা মালেক, كتاب الرضاع; হাদীস নং ১২৭৯)।
  • কে জানি মন্তব্য করেছিল যে, আবু হুযায়ফা (রা.)-এর স্ত্রী দুধ পান করিয়েছিলেন কি স্তন মুখে লাগিয়ে? উত্তরে বলব, একজন লজ্জাবতী নারী যেখানে সালিমের সাথে দেখা দিতে ইতস্ততবোধ করতেন, উপায় খোঁজতে স্বামীর শরণাপন্ন হলেন সেখানে তিনি সালিমকে দুধ পান করাবেন স্তন মুখে লাগিয়ে, তা শুধু বদমাইশ আর চরিত্রহীন প্রকৃতির মনই চিন্তা করতে পারে। অধিকন্তু এই সংক্রান্ত সব হাদীসেই দুধ পানের শব্দ رضاعة (রিদ্বা’আ) এসেছে, مس বা ‘মুখ লাগিয়ে চুষে খাওয়া’ আসেনি। নোংরা হৃদয়ের মন্তব্যকারীরা কি খেয়াল করেনা যে, হাদীসগুলো কেমন শব্দচয়নে এসেছে? বিশেষজ্ঞগণও একই আইডিয়া দিয়ে গেছেন আজ থেকে শত সহস্র বছর আগেই। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার ‘ফাতহুল বারী’ (খ-৯/পৃ-১২৭) গ্রন্থে এধরণের একটি প্রশ্নের উত্তরে সম্ভাব্য উপায় থাকার প্রতি ইংগিত দিয়ে গেছেন। যেমন তিনি ইমাম আলী ইবনুল হাজম (রহ.)-এর একটি প্রশ্ন ও তার জবাবে ইমাম আ’ইয়াজ (রহ.)-এর উক্তি তুলে ধরেছেন এভাবে,
  • أَنَّهُ يَلْزَمُ عَلَى قَوْلِهِمْ إِشْكَالٌ فِي الْتِقَامِ سَالِمٍ ثَدْيَ سَهْلَةَ وَهِيَ أَجْنَبِيَّةٌ مِنْهُ فَإِنَّ عِيَاضًا أَجَابَ عَنِ الْإِشْكَالِ بِاحْتِمَالِ أَنَّهَا حَلَبَتْهُ ثُمَّ شَرِبَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَمَسَّ ثَدْيَهَا قَالَ النَّوَوِيُّ وَهُوَ احْتِمَالٌ حسن
  • অর্থ, কৃতদাস সালেমের দিক থেকে একজন বেগানা রমনী সাহলা’র স্তন চুষা নিয়ে তাদের (আহলে জাওয়াহের ও ইমাম লাঈস প্রমুখ) মন্তব্যের উপর প্রশ্ন জাগে (অর্থাৎ এভাবে স্তন চুষা যেহেতু সম্ভবপর নয়, সেহেতু ভিন্ন উপায়ে তার দুধ পান দ্বারাও রিদ্বা’আত সাব্যস্ত হওয়ার নয়!)। (ইবনুল হজমের উক্ত প্রশ্নের জবাবে) ইমাম আ’ইয়াজ (রহ.) বলেছেন, স্তনে মুখ লাগিয়ে চুষা বিহীন শুধুই দুধ দোহন করে তাকে (সালিম) পান করানোর সম্ভাবনা থাকাও বিচিত্র নয়। ইমাম নববী (রহ.) তার এই মতটি সমর্থন করে বলেছেন, এমন সম্ভাবনা থাকার মতটি খুবই উত্তম।….(ইমাম নববী রহ. ইবনে হাজমের প্রশ্নের উত্তরে আরও বলেছেন) আর ঐ ব্যতিক্রমী পন্থায় দুধ পান করার দ্বারা রিদ্বা’আত সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি শুধুই সালেমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তাগিদে অনুমোদিত ও খাস (بانه عفى عن ذالك للحاجة)। (অনুবাদ শেষ হল)। সুতরাং মন্তব্যকারীর জন্য আরেকটু উন্নত রুচিবোধ আর লজ্জাশরম নিয়ে মন্তব্য করা উচিত। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি)

শেষকথা হল, যেসব হাদীসে সালিমকে দুধ পান করিয়ে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে সেই একই হাদীসে এটি যে সালিমের ক্ষেত্রেই খাস বা বিশেষভাবে নির্দিষ্ট সেসব কথাও উল্লেখ রয়েছে। যেমন, لِسَالِمٍ خَاصَّةً অর্থাৎ, সালিমের জন্য খাস, رُخْصَةً فِي رَضَاعَةِ سَالِمٍ وَحْدَهُ অর্থাৎ শুধুই সালিমের দুধ পানের ব্যাপারেই অনুমতি ছিল, فَكَانَتْ رُخْصَةً لِسَالِمٍ অর্থাৎ এটি সালিমের জন্য অনুমতি ছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাছাড়া আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.) পরিষ্কার বলেছেন, لَا رَضَاعَةَ إِلَّا مَا كَانَ فِي الْحَوْلَيْنِ অর্থাৎ দুধ খাওয়া দুই বৎসরের ভিতরেই হয় (মুয়াত্তা মালেক, অধ্যায় ৩০, হাদীস নং ১২৮১)। সুতরাং এরপরেও যারাই ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে চায় তাদেরকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি। আল্লাহর সাথে তাদের বুঝাপড়া হোক।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ছাগলে বুঝি কুরআনের কিছু আয়াত খেয়ে ফেলেছিল?

শীয়া, খ্রিস্টান মিশনারী আর নাস্তিকদের ভিত্তিহীন আপত্তির জবাব

সম্পূর্ণ লিখাটির সোর্স

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

  • আলোচ্য বিষয় : (১) রজমের আয়াত (২) বয়স্কদের দশ ঢোক দুধ পান করা (৩) পাঁচ ঢোক দুধ পান করা, ইত্যাদি মর্মে আয়াতগুলো কোথায়? (৪) ছাগলে হযরত আয়েশা (রা.)-এর ছহিফা খেয়ে ফেলা শীর্ষক বর্ণনার জবাব (৫) আবু হুযায়ফা’র পালকপুত্র প্রাপ্ত বয়স্ক সালিমকে দুধ পান করানোর উপর উত্থাপিত আপত্তির জবাব। এখানে এই ৫ নং আপত্তির জবাব অন্য পাতায় দেয়া হয়েছে। পড়তে ক্লিক করুন।
  • পাঠকবৃন্দ, অত্র লিখাটির একদম শেষে অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে মাত্র দুইখানা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছে। তা অবশ্যই পড়বেন।

প্রথমে সংক্ষিপ্ত জবাব : বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ব্যাপারে রজম, বয়স্ক লোককে (দুধ সম্পর্কের হুরমত সাব্যস্ত করতে) দশ ঢোক অতপর পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত আয়াতগুলো মানসুখ বা রহিত হয়ে যায়। যার কারণে এগুলো পরবর্তীতে কুরআন যখন গ্রন্থবদ্ধ করা হয় তখন কুরআনে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বাহিরে রাখা হয়।

  • প্রমাণ স্বরূপ দেখুন, জনৈক সাহাবী রাসূল (সা.)-কে যখন বললেন, يا رسول الله أكتبني آية الرجم قال لا أستطيع অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল আমাকে রজমের আয়াতটি লিখতে অনুমতি দিন। তখন তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এটি তেলাওয়াত হিসেবে গণ্য নয়। (সুনানু বায়হাক্বী আল কোবরা ৮/২১১)।

প্রশ্ন আসতে পারে যে, কুরআনে বিদ্যমান এমনও তো বহু আয়াত রয়েছে যাদের সম্পর্কে ‘রহিত’-এর হুকুম রয়েছে। অথচ সেগুলো কুরআন থেকে বাদ পড়েনি! এর উত্তর দিয়েছেন শারেহে সহীহ মুসলিম ইমাম নববী (রহ.)। তিনি বলেন, মানসূখ বা রহিত তিন (৩) প্রকারের হয়ে থাকে। তন্মধ্যে এক প্রকারের মানসূখ বা রহিত হচ্ছে, তেলাওয়াত এবং হুকুম (বিধান) উভয়টাই রহিত বা বাদ পড়ে যাওয়া। এর উদাহরণ হচ্ছে, ‘দশ ঢোক দুধ পান করা সংক্রান্ত আয়াত‘। আরেক প্রকারের মানসূখ বা রহিত হচ্ছে, তেলাওয়াত রহিত হয়ে যাওয়া তবে কিন্তু হুকুম (বিধান) কার্যকরী অবস্থায় থাকা। এর উদাহরণ হচ্ছে, ‘বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য অবতীর্ণ রজম সংক্রান্ত আয়াত‘। যেমন, (وَالشّيْخُ وَالشَّيخَةُ إِذَ زَنَيَا فَارْجُمُوْهُمَا الْبَتَّةَ) অর্থাৎ বৃদ্ধ (বিবাহিত) পুরুষ ও বৃদ্ধা (বিবাহিতা) নারী যদি ব্যভিচার করে, তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করো।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)। আর ‘পাঁচ ঢোক দুধ পান করার মাধ্যমে মাহরাম সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আয়াত।‘ যেমন, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৪৬৬। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, (আরবী পাঠ)

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنَ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ ‏.‏ ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنَ الْقُرْآنِ ‏.‏

অর্থাৎ তিনি বলেন, কুরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল, عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ (তথা পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়)-এর দ্বারা। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত। (সহীহ মুসলিম, كتاب الرضاع)।

উল্লেখ্য, ইমাম শাফেয়ী (রহ.) সহ কেউ কেউ বলেছেন, দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাথে মাহরামের বিধান সাব্যস্ত হতে হলে কমপক্ষে পাঁচ ঢোক দুধ পান করানো জরুরী। অপরদিকে জামহূর উলামায়ে কেরাম বলেছেন, পাঁচ ঢোক সংক্রান্ত আয়াতের তেলাওয়াতের ন্যায় তার হুকুমও এখন মানসূখ বা রহিত। বরং একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু তিন ঢোক দুধ পান করাই হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। জামহূরের মতের পক্ষে দলিল আর যুক্তি খুবই শক্তিশালী। কারণ, ইবনে মাজাহ-তে দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান করার বিধানটি (لَقَدْ نَزَلَتْ آيَةُ الرَّجْمِ وَرَضَاعَةُ الْكَبِيرِ عَشْرًا) বয়স্ক লোকের সাথে সম্পর্কিত ছিল বলেই বর্ণনায় এসেছে। আর বর্তমানে সেটি মানসূখ হওয়াটা হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বারাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত। কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন, انْظُرْنَ إِخْوَتَكُنَّ مِنَ الرَّضَاعَةِ فَإِنَّمَا الرَّضَاعَةُ مِنَ الْمَجَاعَةِ‏ অর্থাৎ “তোমরা ভাল করে দেখে নিও। কেননা রাযআত (দুধ মা সম্পর্ক) সাব্যস্ত হয় যখন দুধপানের দ্বারা সন্তানের ক্ষুধা নিবারণের বয়স থাকে (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১৮, হাদীস নং ৩৪৭৫)।”

আশাকরি এবার নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত হুকুমের উপরও আমল নেই কিভাবে! এটিও পুরোপুরি রহিত ও বাতিল, এজন্যই এর উপরেও আমল নেই। এবার এই হাদীস খানার মর্মার্থও সুস্পষ্ট করে দেব। রাসূল (সা.) থেকে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, لاَ تُحَرِّمُ الْمَصَّةُ وَالْمَصَّتَا অর্থাৎ দু’এক চুমুক হারাম করে না (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৪৫৯)।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) এটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, فان مفهومه ان الثلاث تحرم অর্থাৎ হাদীসের ঐ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই তিন চুমুক দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়ে যাবে। (ফাতহুল বারী ফী শরহে সহীহ বুখারী)।

এবার মুয়াত্তা ইমাম মালেক গ্রন্থ থেকে সহীহ সনদে দুধপানের আদর্শ বয়স সম্পর্কে এমন একটি ‘আছার’ (آثار) উল্লেখ করব যেখানে একাধিক যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ ও ইমামগণের ফতুয়া বিদ্যমান। তা এইরূপ,

بَاب رَضَاعَةِ الصَّغِيرِ وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّهُ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ يَقُولُ لَا رَضَاعَةَ إِلَّا مَا كَانَ فِي الْمَهْدِ وَإِلَّا مَا أَنْبَتَ اللَّحْمَ وَالدَّمَ وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ الرَّضَاعَةُ قَلِيلُهَا وَكَثِيرُهَا تُحَرِّمُ وَالرَّضَاعَةُ مِنْ قِبَلِ الرِّجَالِ تُحَرِّمُ قَالَ يَحْيَى وَسَمِعْت مَالِك يَقُولُ الرَّضَاعَةُ قَلِيلُهَا وَكَثِيرُهَا إِذَا كَانَ فِي الْحَوْلَيْنِ تُحَرِّمُ فَأَمَّا مَا كَانَ بَعْدَ الْحَوْلَيْنِ فَإِنَّ قَلِيلَهُ وَكَثِيرَهُ لَا يُحَرِّمُ شَيْئًا وَإِنَّمَا هُوَ بِمَنْزِلَةِ الطَّعَامِ

অর্থাৎ, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) বলেন, আমি সাঈদ ইবন মুসাইয়েব (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, স্ত্রীলোকদের সন্তানদের দুধ পান করানো তখন গ্রহণযোগ্য হবে যখন তারা দোলনাতে থাকে এবং যা গোশত ও রক্ত সৃষ্টি করে। ইবন শিহাব (রহ.) বলতেন, রাযা’আত (দুধ পান করান) অল্প হোক আর বেশি হোক তা দ্বারা মাহরাম সাব্যস্ত করবে। আর রাযা’আত পুরুষের পক্ষের আত্মীয়তাও হারাম করবে। ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, সন্তানদের দুধ পান অল্প হোক, বেশি হোক, যদি তা দুই বৎসরের মধ্যে হয় তবে হারাম করিবে। তিনি বলেন, দুই বৎসরের পরে হইলে অল্প হোক আর বেশি হোক তা কিছুই হারাম করবে না। তা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের মত। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় ৩০; হাদীস নং ১২৭৮)।

সে যাইহোক, দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত আয়াতগুলোর তেলাওয়াত মানসূখ তথা রহিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উম্মাহ সর্বান্তকরণে একমত।

মূলত এজন্যই রজম আর দশ-পাঁচ এর আয়াতগুলো পবিত্র কুরআনে স্থান পায়নি। আর এইধরণের মানসূখ বা রহিতকরণের বিধিমালা স্বয়ং আল্লাহতালাই আয়াত নাযিল করে রাসূল (সা.)-এর যুগ থেকে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, যাতে পরবর্তীতে এ নিয়ে আর কোনো সংশয় তৈরি না হয়। যেমন সূরা বাকারা, আয়াত নং ১০৬। বলা হয়েছে যে, ‘আমি কোনো আয়াত (বাক্য) রহিত করলে অথবা ভুলিয়ে দিলে তা থেকে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোনো আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান?’

এই সম্পর্কে জানতে হলে রাসূল (সা.) থেকে রহিত সংক্রান্ত হাদীসগুলো, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে সহীহ সূত্রে প্রাপ্ত বর্ণনা এবং অন্যান্য সাহাবী আর তাবেয়ী এবং যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও মুফাসসীরদের তাহকিক ও তাখরিজ সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান লাভ করতে হবে। ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে কখনো কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া বা কারো সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া খুবই অন্যায় এবং ঈমানের জন্য বড্ড খতরনাক হবে! সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। প্রিয় পাঠকপাঠিকা! আমি কিন্তু এখনো ‘ছাগলে বুঝি কুরআন খাইয়া ফেলে?’ শিরোনামে আলোচনায় আসিনি। মাত্র ইসলাম বিরোধীদের তিনটি আপত্তির জবাব দিলাম। চলুন, এবার এই বিষয়ে আপত্তির জবাব দেয়া যাক!

প্রধান আপত্তির জবাব :

এই পর্যায় দলিল প্রমাণ সহ জবাবটি সাধারণদের বুঝানোর জন্য আমি প্রথমে ছোট্ট একটা ঘটনা বলতে চাই। গত ৩১ ই মার্চ ২০২২ ইং এর একটি নিউজ পড়েছিলাম। নিউজটি আমেরিকার একটি দুর্ঘটনা সম্পর্কে। নিউজটির শিরোনাম ছিল ‘আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত ৮০ গাড়ি’। ভেতরে লিখা ছিল এইরকম, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের একটি মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৮০টি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ২৪ জন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর দিয়েছে।

এবার প্রভাবশালী আরেকটি মিডিয়া সংবাদটি কিভাবে কভারেজ দিচ্ছে দেখুন, সিএনএন জানিয়েছে, হঠাৎ ভারী তুষারপাতে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার একটি মহাসড়কে একসঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে অন্তত ৮০টি গাড়ি, তাতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। খুবই প্রভাবশালী দুইটি মিডিয়ায় গাড়ী বিধ্বস্ত হওয়া আর মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে নিউজ এক ও অভিন্ন। এখন মনে করুন, উল্লিখিত দুটি প্রভাবশালী ও নির্ভরযোগ্য মিডিয়ার বিপরীতে অপরিচিত কোনো মিডিয়া যেমন, News BNN কিংবা Energy Bangla এমন কিছু তথ্য দিল যা নিউইয়র্ক টাইমস আর সিএনএন দেয়নি। অথবা এই দুটির সমপর্যায়ের আর কোনো মিডিয়াও দেয়নি। এমতবস্থায় আমরা কি নির্ভরযোগ্য ও প্রভাবশালী মিডিয়ার বিপরীতে প্রচারিত এমন কোনো সংবাদ বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে পারি যা যুক্তি আর সুস্থ্যবিবেকও গ্রহণ করেনা? আমি কী বুঝাতে চেয়েছি তা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন! এবার আসুন, যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অপেক্ষা করছি সেদিকে!

নাস্তিক, শীয়া (ইসরা আশারিয়া সম্প্রদায়) আর খ্রিস্টান মিশনারীদের আপত্তিগুলো একদমই ভিত্তিহীন! এতটাই ঠুনকো আর দুর্বল যে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতও নয়। ইসলামের ইতিহাস আর সহীহ হাদীস সম্পর্কে এবং বিশিষ্ট যুগ ইমামগণের তাহকিক তাখরিজ সম্পর্কে যাদের একটু পড়াশোনা আছে তারা বরং আপত্তিকারীদের বালখিল্যধরণের আপত্তি শুনে শুধুই হাসবে!

মোটা দাগে উত্তরটি এরকম। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত যে হাদীসটি নিয়ে ওরা উল্লিখিত আপত্তিটি করে থাকে সেটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত। তন্মধ্যে (ক) হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারীর সূত্রে (সহীহ মুসলিম হা/৩৪৬৭), (খ) বিখ্যাত ফকিহ হযরত মালেক ইবনে আনাসের সূত্র (মুয়াত্তা মালেক, كتاب الرضاع হাদীস নং ১২৮৪), (গ) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের সূত্রে (মুসনাদে আহমদ ৪৩/৩৪৩)। এবার বর্ণনাটি আরবী সহ উল্লেখ করব তারপর বুঝিয়ে দেব যে, উপরে ঐ তিন ব্যক্তির নাম আমি কিজন্য ব্যতিক্রম করে উল্লেখ করলাম! নিচের ৩ টি হাদীস সনদ সহ পড়ুন!

(ক) সহীহ মুসলিম থেকে : (আরবীপাঠ)

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ يَحْيَى، – وَهُوَ ابْنُ سَعِيدٍ – عَنْ عَمْرَةَ، أَنَّهَا سَمِعَتْ عَائِشَةَ، تَقُولُ – وَهْىَ تَذْكُرُ الَّذِي يُحَرِّمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ – قَالَتْ عَمْرَةُ فَقَالَتْ عَائِشَةُ نَزَلَ فِي الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ثُمَّ نَزَلَ أَيْضًا خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ ‏.‏

অর্থাৎ, আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা’নবী (রহ.) … আমরাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যাদ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়। আমরাহ বললেন যে, আয়েশা (রা.) বলেছিলেন, আল কুরআনে নাযিল হয় عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “নির্ধারিত দশবার দুধপানে” তারপর নাযিল হয خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ “নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান (كتاب الرضاع), হাদীস নাম্বার ৩৪৬৭)।

(খ) মুয়াত্তা ইমাম মালেক থেকে : (আরবীপাঠ),

بَاب جَامِعِ مَا جَاءَ فِي الرَّضَاعَةِ وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنْ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ قَالَ يَحْيَى قَالَ مَالِك وَلَيْسَ عَلَى هَذَا الْعَمَلُ

অর্থাৎ, আ’মরা বিনত আবদির রহমান (রহ.) হইতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়েশা (রা.) বলেছেন, কুরআনে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে দশ ঢোক দুধ পান করার কথা নির্ধারিত ছিল, যা হারাম করবে, তারপর তা রহিত হয়ে যায় নির্ধারিত পাঁচ ঢোক দুধ পান করার (অবতীর্ণ হুকুমের) দ্বারা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচ ঢোক দুধ পানের (হুকুমের অংশ) সম্মিলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, এর উপর আমল নেই। অর্থাৎ পাঁচ ঢোক দুধ পানের উপর আমল নেই। দুধ পান অল্প হোক বা বেশি হোক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় ৩০; كتاب الرضاع হাদীস নং ১২৮৪)।

(গ) ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ থেকে : (আরবীপাঠ),

بَاب رِضَاعِ الْكَبِيرِ حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَقَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ و عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ لَقَدْ نَزَلَتْ آيَةُ الرَّجْمِ وَرَضَاعَةُ الْكَبِيرِ عَشْرًا وَلَقَدْ كَانَ فِي صَحِيفَةٍ تَحْتَ سَرِيرِي فَلَمَّا مَاتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَتَشَاغَلْنَا بِمَوْتِهِ دَخَلَ دَاجِنٌ فَأَكَلَهَا.

অর্থাৎ, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে। (সুনানে ইবনে মাজাহ অধ্যায় ৯, كتاب النكاح হাদীস নং ১৯৪৪)। এই হাদীসটি মুসনাদে আহমদ খণ্ড নং ৪৩ পৃষ্ঠা নং ৩৪৩ এর মধ্যেও মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক এর সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে।

এবার আসল কথায় চলুন, আপনি উপরে যথাক্রমে ক, খ এবং গ অংশে মোট তিনখানা হাদীস দেখতে পাচ্ছেন। খুব খেয়াল করে দেখুন, রজম আর বয়স্ক লোকদের দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান করানো সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিবরণ ক, খ অংশে যেমন রয়েছে তেমনি গ অংশেও রয়েছে। তবে কিন্তু অতিরিক্ত একটি কথা শুধুই ‘গ’ অংশেই রয়েছে। সেটি হচ্ছে,

وَلَقَدْ كَانَ فِي صَحِيفَةٍ تَحْتَ سَرِيرِي فَلَمَّا مَاتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَتَشَاغَلْنَا بِمَوْتِهِ دَخَلَ دَاجِنٌ فَأَكَلَهَا

অর্থাৎ ‘যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।’ এই খণ্ডিত অংশটিকেই কেন্দ্র করে সমালোচকরা পবিত্র কুরআনের উপর ‘বিকৃতি’ সংঘটিত হবার আপত্তি তুলার দুঃসাহস করে। অথচ নির্বোধরা জানেই না যে, এই খণ্ডিত অংশটি সম্পূর্ণ অনির্ভরযোগ্য ও প্রত্যাখ্যাত। কেননা এই কথাটি সত্যিই যদি আয়েশা (রা.) বলতেন তাহলে অবশ্যই সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম মালেক সহ আরও যতগুলো হাদীসের কিতাব রয়েছে সব জায়গায় সহীহ বর্ণনাসূত্রে উল্লেখ থাকত। অথচ সেভাবে কোথাও এর উল্লেখ পাওয়া যায়না। এই খণ্ডিত অংশটি শুধুই ‘মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক’ নামীয় একজন অনির্ভরযোগ্য রাবী থেকে পাওয়া যায়। যার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে মুহাদ্দিসগণ রিজালশাস্ত্রের কিতাবগুলোতে হাজার বছর আগেই সতর্ক করে গেছেন। এ সম্পর্কে একটু পরেই আসছি।

এখন আপনাকে আমি আবারও আগের কথায় ফিরিয়ে নিচ্ছি। আপনার মনে আছে তো, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভয়াবহ সেই সড়ক দুর্ঘটনার নিউজের কথা। সেখানে কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস আর সিএনএনের তথ্যে পুরো খবরটি এক ও অভিন্ন দেখেছি। কিন্তু বিপরীতে দুইটি দুর্বল মিডিয়ার সূত্রে আমরা অতিরিক্ত আরও যে কোনো তথ্যকে যা প্রথম দুই প্রভাবশালী মিডিয়ার সূত্রে উঠে আসেনি, অগ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বহীন বলে আখ্যা দিয়েছিলাম। অনুরূপ এই ক্ষেত্রেও উম্মাহার বক্তব্য হচ্ছে, অতিব প্রভাবশালী দুইজন নির্ভরযোগ্য রাবী অর্থাৎ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারী (রহ.) এবং ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রহ.) এঁদের বর্ণিত বর্ণনার বিপরীতে দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য রাবী মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক কর্তৃক এই বর্ণনা সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন ও প্রত্যাখ্যাত। ফলে এর উপর ভিত্তি করে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করা নেহাত পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুইনা।

মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক সম্পর্কে :

রিজালশাস্ত্রের কিতাব ইমাম যাহাবী সংকলিত ‘তাহযীবুত তাহযীব‘ এর খণ্ড নং ৯ পৃষ্ঠা নং ৪৫ থেকে – (১) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর পুত্র শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ابن اسحاق ليس بحجة অর্থাৎ ইবনে ইসহাক প্রমাণযোগ্য নয়। (২) শায়খ আইয়ুব ইবনে ইসহাক বলেন, আমি আহমদ ইবনে হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, হে আব্দুল্লাহর পিতা! ইবনে ইসহাক যদি একাকী কোনো হাদীস বর্ণনা করে তবে কি সেটি গ্রহণযোগ্য হবে? তিনি উত্তরে বললেন, না। (৩) তার সম্পর্কে আরও লিখা আছে,

وضعفه يحيى بن معين في إحدى الروايات عنه ، وقال النسائي : ليس بالقوي ، وقال الدارقطني : اختلف الأئمة فيه ، وليس بحجة إنما يعتبر به

অর্থাৎ ইমাম ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন (রহ.) তার থেকে বর্ণিত একটি বর্ণনায় তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, (৪) ইমাম নাসাঈ (রহ.) বলেছেন, সে দলিল প্রমাণের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নয়। (৫) ইমাম দারে কুতনি (রহ.) বলেছেন, ইমামগণ তার ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। তবে তার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য মত হল, সে প্রমাণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী (রহ.) তার বর্ণিত রেওয়ায়েতটিকে ‘হাসান’ বলেছেন অথচ তার এই সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী মুহাক্কিক ইমামগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। বরং মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনাটি আওসাক (اوثاق) রাবীর মুখালাফাত (বিরুদ্ধ) হওয়ায় শাজ (شاذ) এবং অগ্রহণযোগ্য (غير مقبول)। কেননা (৬) ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে লিখা আছে, قال حنبل بن إسحاق : سمعت أبا عبد الله يقول : ابن إسحاق ليس بحجة অর্থাৎ হাম্বল ইবনে ইসহাক ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-কে বলতে শুনেছেন, ইবনে ইসহাক প্রমাণযোগ্য নয়। (৭) আর ইবনে কুতায়বাহ (রহ.) বলেছেন,

ألفاظ حديث مالك خلاف ألفاظ حديث محمد بن إسحاق ، ومالك أثبت عند أصحاب الحديث من محمد بن إسحاق

অর্থাৎ ইমাম মালেক (রহ.) এর বর্ণিত হাদীসের পরিপন্থী শব্দে এসেছে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণিত হাদীস। আর হাদীসশাস্ত্রের সমস্ত মুহাদ্দিসের নিকট মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের চেয়ে ইমাম মালেক অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। (তাবীলু মুখতালিফিল হাদীস পৃষ্ঠা নং ৪৪৫)।

(৮) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক কর্তৃক বর্ণিত ইবনে মাজাহ এবং মুসনাদে আহমদ গ্রন্থের হাদীসটির সনদে তিনি একাই। যেজন্য এর সনদ জঈফ বা দুর্বল। একথা বলেছেন, মুসনাদে আহমদ গ্রন্থের মুহাক্কিকগণ। যেমন মুসনাদে আহমদ (৪৩/৩৪৩) এর ব্যাখ্যা অংশে লিখা আছে,

إسناده ضعيف لتفرد ابن إسحاق – وهو محمد – وفي متنه نكارة

অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের স্বতন্ত্রতার কারণে এর বর্ণনাসূত্র দুর্বল আর তার মতনে (পাঠ্যটিতে) আপত্তি রয়েছে। (৯) ইমাম মাহমুদ আলূসী (রহ.) লিখেছেন,

وأما كون الزيادة كانت في صحيفة عند عائشة فأكلها الداجن ، فمن وضع الملاحدة وكذبهم في أن ذلك ضاع بأكل الداجن من غير نسخ ، كذا في الكشاف

অর্থাৎ আয়েশা (রা.) নিকট থাকা ছহিফাটি ছাগলে খেয়ে ফেলেছে, মর্মে অতিরিক্ত কথাটি মুলহিদদের বানানো আর তাদের মিথ্যাকথা। তারা (রজম আর বয়ষ্কদের দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত) আয়াতগুলোকে মানসূখ তথা রহিত হওয়ার বিরোধিতা থেকেই ছাগলে খেয়ে ফেলেছে কথাটি তৈরি করেছে। (রূহুল মা’আনী ১১/১৪০)। (১০) ইমাম ইবনে হাযম (রহ.) বলেন, এই শব্দমালাগুলো মানসূখ হয়ে গেছে, এটাই বিশুদ্ধ কথা। আর আয়েশা (রা.) এর নামে চালিয়ে দেওয়া ছহিফায় লিপিবদ্ধ থাকা বিদ্যমান আয়াতগুলোর যা ছাগলে খেয়ে ফেলেছে বলে কথিত আছে সে প্রসঙ্গে কারোরই আগ্রহী হবার প্রয়োজন নেই। (আল মুহাল্লা ১২/১৭৭)।

শেষ কথা, পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতা ও অক্ষুণ্ণতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সমালোচকরা যেসব বর্ণনা আর যুক্তির আশ্রয় নেয় সবই দুর্বল আর অগ্রহণযোগ্য। যা উপরে দীর্ঘ আলোচনা হতে সহজেই বুঝতে পেরেছেন। আর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক নামীয় রাবী (বর্ণনাকারী) সম্পর্কে তো জানলেনই। তো এমন একজন বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তির বর্ণনা; তাও আবার এই ব্যক্তি ছাড়া এধরণের কথা আর কেউই বলেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমন একটি কথায় আমরা কিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতিশ্রুতিকে ভুলে যেতে পারি? অথচ সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য আমাদের প্রভূ আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের সূরা আল হিজর আয়াত নং ৯-এর মধ্যে বলেছেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আমরা এই যিকির (কুরআন) নাযিল করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী।’

ইসলাম বিরোধীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন :

  • (এক) কুরআনের উপর বর্তমান যুগের যারা এ সমস্ত অভিযোগের পেছনে দৌড়াচ্ছেন, তারা কি গত চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসেও সাহাবী এবং তাবেয়ীর যুগেকার আরব ভুখণ্ডের কোনো ইসলাম বিরোধী থেকেও এই ধরনের অভিযোগ তুলার প্রমাণ দিতে পারবেন? () কুরআন সংকলনের ইতিহাস থেকে আমরা পরিষ্কার শিক্ষা লাভ করেছি যে, বিশেষ বিশেষ সাহাবীদের অধিকাংশই কুরআন মুখস্ত করে রাখতেন। কুরআন সংকলন বোর্ডের ৪০ জন ক্যাবিনেট সদস্যগণের প্রধান হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রা.)ও একজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন। আবুবকর (রা.)-এর খেলাফত আমলে ভণ্ডনবী মুসায়লামা কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ‘ইয়ামামা’-র যুদ্ধে প্রায় ৭০০ জন হাফেজে কুরআন শহীদ হয়েছিলেন।
  • তাই প্রশ্ন আসে, তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই যে, আয়েশা (রা.) হতে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক এর বর্ণনায় ‘ছাগলে কুরআনের কিছু সংখ্যক আয়াত খেয়ে ফেলেছে’ কথাটি সত্য! এখন এই ছাগলে হযরত আয়েশা (রা.)-এর ছহিফার আয়াতগুলো খেয়ে ফেলার কারণে কি অসংখ্য অগণিত হাফেজে কুরআন সাহাবীর অন্তরে মুখস্থ থাকা আয়াতগুলোও খেয়ে ফেলেছিল? সুতরাং প্রমাণ আর যুক্তি কোনোটার মানদণ্ডেই নাস্তিক আর অন্যান্য সমালোচকদের উক্ত দাবী উত্তীর্ণ হতে পারেনা।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম. এ এডমিন : মারকায উমর ডটঅর্গ। যোগাযোগ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩

গাদীরে খুম কী?

গাদীরে খুম কী? শীয়াদের না জানা এমন কিছু তথ্য

প্রশ্নঃ রাসূল (সা.) সত্যই কি গাদীরে খুমে হযরত আলী (রা.)-কে বেলায়াত দিয়ে গিয়েছেন?

উত্তরঃ বিগত ১৪শত বছর ধরে শীয়া সম্প্রদায় এই একখানা হাদীস দেখিয়ে আহলে সুন্নাহর অনুসারীদের ভুল বুঝিয়ে আসছে। এতে সাধারণ মানুষ তো বটে বরং অনেক বড় বড় শিক্ষিতরাও ভটকে যান। আজকের এই লিখাটি পড়া দ্বারা শীয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেও টনক নড়বে। তাদের কাছেও মনে হবে যে, হায় হায় এতকাল কোন ঘোর অন্ধকারে ছিলাম!

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে, আহলুস সুন্নাহর হাদীসগ্রন্থেও এমনি একটি হাদীস পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

“আমি (নবী মুহাম্মদ সা.) যার মওলা, আলী তাঁর মওলা।”

হাদীসের মানঃ

ইমাম তিরমিজি : সহীহ ও হাসান।
শায়খ আলবানী : সহীহ।
ইমাম যাহাবী : সহীহ।
ইমাম যায়লা’ঈ : দুর্বল।
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ : দুর্বল।

এই কথাটি তিনি বলেছিলেন ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে। এই একটি মাত্র হাদীসকে কেন্দ্র করে শীয়াগণ দাবী করে থাকেন যে,

ঐ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকি মওলা আলী (রা.)-কে তাঁর পরবর্তী খলীফা নিযুক্ত করে গিয়েছেন।

অথচ ঐ হাদীসের প্রাধান্যযোগ্য একটি তাৎপর্য মুহাদ্দিসগণ থেকে এভাবে উল্লেখ আছে যে,

مَنْ كُنْت أُحِبُّهُ فِعْلِيٌّ يُحِبُّهُ

অর্থ- “আমার (অর্থাৎ রাসূল সা.-এর) কর্ম বা কার্যকলাপ যার নিকট প্রিয় সেই তাঁকে (অর্থাৎ আলীকে) ভালোবাসে।” (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিজি)।

যাইহোক, এই হাদীস দিয়ে শীয়ারা আরও প্রমাণ করতে চান যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর নাকি সাহাবীগণ মুরতাদ হয়ে যান। (নাউযুবিল্লাহ)। আর ক্ষমতার লোভে হযরত আবুবকর, উমর এবং উসমান (رضوان الله عليهم أجمعين)-গণ মওলা আলীর ক্ষমতা জবর দখল করেন। নাউযুবিল্লাহ।

গাদীরে খুম এর ঘটনাঃ

মুসলিম উম্মাহা ঐতিহাসিক ‘বিদায় হজ্জ’ থেকে ফেরার পথে গাদীর খুমের ঘটনাটি সংঘটিত হয়। শীয়া-বিশ্বাসমতে, একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পরিবেশনের জন্য রাসূল (সা.)-এর নিকট কুরআনের একটি আয়াত নাযিল হয়। ফলে সবাইকে একত্র করে তিনি একটি দীর্ঘ ভাষণ দেন। ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি সেই বিখ্যাত বিবৃতি প্রদান করেনঃ “মান কুনতু মওলাহু ফা-আলীউন মওলাহু” ((مَنْ کُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلاَهُ)) অর্থাৎ, আমি যার মওলা ছিলাম, আলীও তার মওলা। শীয়ারা এই বাক্যকে রাসূল (সা.) কর্তৃক আলীকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত মনোনয়ন বলে ব্যাখ্যা করেন, যদিও সুন্নিরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। সংক্ষেপে।

কিন্তু সত্য হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন হযরত আলী (রা.)-কে কোনো প্রকার জাহেরী অথবা বাতেনী কোনো প্রকার বেলায়াত বা খেলাফত প্রদান করার প্রমাণ নেই। বলে রাখা দরকার যে, উল্লিখিত হাদীসটির ন্যায় এমন কোনো একটা রেওয়ায়েতও শীয়া সম্প্রদায় দেখাতে পারেনা যেটি নিচের ৩টি শর্তের আওতায় থাকবে। যথা,

১. হাদীসটির অনুরূপ শব্দচয়নে।

২. শীয়া সোর্স থেকে বিশ্বস্ত রাবীদের সত্যায়িত সনদে।

৩. শীয়াদের নির্ভরযোগ্য কিতাবে।

এভাবেই এই হাদীসখানা তাদের নিকট পুরোপুরি অনুপস্থিত। আর যা আছে, তাতে এই তিন শর্তের কোনো না কোনো একটা অবশ্যই অনুপস্থিত। এজন্যেই তারা বারবার আহলুস সুন্নাহর কিতাব থেকে হাদীসখানা পেশ করেন। অথচ তারা আহলুস সুন্নাহর সকল হাদীসকেই অস্বীকার করে থাকেন। প্রিয় ভাই আমার!

এবার একটা হাদীস শুনুন, মওলা আলী (রা.) কী বলেছেন,

عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَخْطُبُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَكْذِبُوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ يَكْذِبْ عَلَيَّ يَلِجِ النَّارَ

অর্থ, মওলা আলী (রা.) যখন খুতবাহ প্রদান করতেন, তখন তিনি বলতেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। আমি যা বলি নি, তা আমার নামে প্রচার করো না। সন্দেহাতীত ভাবে সে জাহান্নামে যাবে যে আমার উপর মিথ্যারোপ করলো।”

(সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নম্বরঃ ০২)।

উল্লিখিত হাদীস পরিষ্কার আমাদেরকে সতর্ক করছে যে, নবীজিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা যাবে না। তিনি তাঁকে (আলী) এরূপ কোনো জাহেরি অথবা বাতেনী বেলায়াত প্রদান করেন নি। কেউ যদি বলে, করেছেন; তাহলে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে। তা না হলে, সে আল্লাহর নবীর উপর মিথ্যারোপ করলো। এবার দেখুন, প্রমাণ বা উপযুক্ত দলিল কতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস! মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে,

وحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، وَسَعِيدُ بْنُ عَمْرٍو الْأَشْعَثِيُّ جَمِيعًا عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، قَالَ سَعِيدٌ: أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حُجَيْرٍ، عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: جَاءَ هَذَا إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ – يَعْنِي بُشَيْرَ بْنَ كَعْبٍ – فَجَعَلَ يُحَدِّثُهُ، فَقَالَ لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ: عُدْ لِحَدِيثِ كَذَا وَكَذَا [ص:13]، فَعَادَ لَهُ، ثُمَّ حَدَّثَهُ، فَقَالَ لَهُ: عُدْ لِحَدِيثِ كَذَا وَكَذَا، فَعَادَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ: مَا أَدْرِي أَعَرَفْتَ حَدِيثِي كُلَّهُ، وَأَنْكَرْتَ هَذَا؟ أَمْ أَنْكَرْتَ حَدِيثِي كُلَّهُ، وَعَرَفْتَ هَذَا؟ فَقَالَ لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ: «إِنَّا كُنَّا نُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ لَمْ يَكُنْ يُكْذَبُ عَلَيْهِ، فَلَمَّا رَكِبَ النَّاسُ الصَّعْبَ وَالذَّلُولَ، تَرَكْنَا الْحَدِيثَ عَنْهُ

অর্থ-বশির ইবনে কাব হযরত ইবন আব্বাস (রা.) এর নিকটে আগমন করেন এবং তাকে হাদীস শোনাতে থাকেন। হযরত ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, অমুক অমুক হাদীসগুলো আবার বলো তো? তার সামনে পুনরায় তা পাঠ করা হয়। তিনি আবার বলেন, অমুক হাদীসখানা আবার শোনাও! তিনি যখন সেই হাদীসখানা তাঁকে পড়ে শোনান এবং বলেন, আপনি কি আমার হাদীসগুলো বুঝতে পেরেছেন? এখন আপনি এই হাদীসগুলোর মাঝে এই একটা হাদীসকে মুনকার মনে করেন নাকি সবগুলো হাদীসকে? হযরত ইবন আব্বাস (রা.) তাঁকে বলেন, যখন নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যাচার করা হতো না, তখন আমরা সরাসরি সনদ ছাড়া রাসূলুল্লাহ থেকে হাদীস বর্ণনা করতাম। কিন্তু মানুষ যখন সহজ ও কঠিন উভয় বাহনে সওয়ার হতে লাগলো (অর্থাৎ নিজের সুবিধা মত নবীজির নামে জাল হাদীস বানাতে লাগলো) তখন থেকে আমরা সরাসরি নবীজির থেকে হাদীস বর্ণনা ছেড়ে দেই। অর্থাৎ সনদ ছাড়া হাদীস বর্ণনা করাই ইবনে আব্বাস ছেড়ে দেন।

(সূত্রঃ সহীহ মুসলিম। হাদীসঃ ১৯)।

সনদের গুরুত্ব কতটা?

সহীহ মুসলিমের মুকাদ্দমায় (ভুমিকাতে) উল্লেখ আছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, সনদ হলো দ্বীন। হ্যাঁ ভাই, ইসলাম কিতাব আর সনদের মাধ্যমে এসেছে। শুধুই কারোর সীনায় সীনায় আসে নি। এখন আপনার সামনে দুটি রাস্তা খোলা। সনদ দ্বারা আসা দ্বীনকে আপনি মানবেন? নাকি মানুষের মনগড়া, অলীক মিথ্যাচার, শোনা শোনাভাবে চলে আসা ইলম মানবেন? আপনি যদি বলেন, সনদ মানব। তাহলে আমার এই লিখাগুলো আপনার হেদায়াতের পাথেয় হবে। ইনশাআল্লাহ। আর যদি বলেন, সনদ মানি না; বুজুর্গ যা বলেছেন, যা তাঁদের সীনায় সীনায় এসেছে তা ছাড়া কিছুই মানি না। তাহলে এই লিখা পড়লে আপনার শুধুই সময় নষ্ট হবে।

এবার আসুন, সেই মূল হাদীসখানা আগে দেখে নেই যার জন্য এতো আলোচনা ও সমালোচনা,

عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ کُهَيْلٍ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا الطُّفَيْلِ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيْ سَرِيْحَةَ . . . أَوْ زَيْدِ بْنِ أرْقَمَ، (شَکَّ شُعْبَةُ). . . عَنِ النَّبِيِّ، قَالَ : مَنْ کُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلاَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَ قَالَ هَذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيْحٌ. (قَالَ : ) وَ قَدْ رَوَی شُعْبَةُ هَذَا الحديث عَنْ مَيْمُوْنٍ أبِيْ عَبْدِ اﷲِ عَنْ زَيْدِ بْنِ أرْقَمَ عَنِ النَّبِيِّ صلی الله عليه وآله وسلم.

অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার মওলা আমি তাঁর মওলা আলী।” এই হাদীসখানা ইমাম তিরমিজি (রহ.) বর্ণনা করে বলেন, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ। এই হাদীসটি আরও বহু হাদীসের কিতাবে এসেছে। এখন সে দিকে যাওয়ার মত এত সময় বা ধৈর্য্য কোনটাই নেই।

এখন এই হাদীসে শুধু এতোটুকু শব্দ এসেছে যে, আমি যার মওলা আলী তাঁর মওলা। এবার আসুন, ভুল বুঝাবুঝি দূর করে দিই! প্রশ্ন করতে পারেন যে,

১. রাসূল (সা.) কথাটি কেন বললেন?

২. কোথায় বললেন?

৩. কাদেরকে বললেন?

৪. কিসের পরিপ্রক্ষিতে বললেন?

৫. তিনি কোন সময় বললেন?

৬. কী অর্থ ও উদ্দেশ্য নিয়ে বললেন?

এই প্রশ্নগুলোর জবাব এই টুকরো করা হাদীসের মধ্যে নেই। এই প্রশ্নগুলোর জবাব জানতে হলে, এই হাদীসটি যতগুলো সনদে, যতগুলো কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, তা সংগ্রহ করে পড়ে দেখতে হবে যে, আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন! ভয় নেই আমি এই হাদীসের প্রায় সমস্ত সনদ ও মতন সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখেছি। পৃথিবীর কতগুলো কিতাবে তা এসেছে তাঁর নাম সহ ঠিকানা আমার সংগ্রহে। আমি সব খুলে খুলে সবাইকে বলে দিব। মূল মতন যখন দেখিয়ে দেব তখন সব অজানা গোমর কথা ফাঁস হয়ে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী ইবন আবী তালেব (রা.)-কে কোনো ধরনের বেলায়াত প্রদান করার প্রমাণ কোথাও নেই, না সুস্পষ্টভাবে আর না ইংগিতে; কোনোভাবেই কেউ তা প্রমাণ করতে পারবেনা।

এখন কথা হল একটাই, আপনি যদি কুরআন আর হাদীস মেনে থাকেন, তাহলে আপনি বাধ্য হবেন সত্য মেনে নিতে। আরেকটি কথা, হযরত আলী (রা.)-এর সাথে আমার আপনার দুশমনি কেন থাকবে? রাসূল (সা.) সত্যিই যদি তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন তবে তো সেটির সুস্পষ্ট প্রমাণও থাকবে। এমন তো আর হতে পারেনা যে, রাসূল (সা.) লোকচক্ষু অন্তরালে কোনো কাজ করে যাবেন যার দরুন পরবর্তীতে মানুষের মাঝে সংশয় আর বিতর্ক জন্ম নেবে! আল্লাহর একজন রাসূল কি কখনো এমন কাজ করবেন বলে আপনি মনে করেন? মোটেও না। তাছাড়া হযরত আলী (রা.) নিজেও তো কোথাও বা কখনো এমন কথা বলে যাননি!

সুতরাং, এই সমস্ত অনিশ্চিত আর সন্দেহজনক বিষয়ে বাড়াবাড়ি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। বরং এতে করে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মাঝে অনৈক্য আর বিদ্বেষই জন্ম দেবে!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
সার্বিক সহযোগিতায় Tayeff Hasan Khan

শীয়া খোমেনীবাদ ২

  • খোমেনীবাদ : ২

শীয়া মতবাদ! ইরানের শীয়া বিপ্লবী নেতা ও শীয়া মতবাদের গুরু আয়াতুল্লাহ খোমেনী (১৯০২-১৯৮৯)-এর চিন্তাধারা ও কুফুরী মতবাদের উৎস :

আমি বলছি, আল্লাহর কসম! এগুলো সবই তাঁদের আকিদা বিশ্বাস। তারা তাকীয়া ও কিতমান (সত্য গোপনকরা)-এর নীতি অনুসরণ করে থাকে। তারা ভাবছে, এসব বললে বিপদ, আর মিথ্যা বললে হয় সওয়াব। তাই ঝটপট মিথ্যা বলে সওয়াব কামাই করছে। এঁদের কিতাব থেকে এমন এমন ইবারত দেখাব, ওয়াল্লাহি-আল্লাহ’র কসম! কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে, ফিনকি দিয়ে সজোরে রক্ত বের হওয়া শুরু করবে। আপনার রাতের ঘুম হারিয়ে যাবে। আমি পাগল হয়ে যাবেন। শীয়াদের মতবাদ কতটা নিষ্ঠুর, খতরনাক আর আজেবাজে! মূল আলোচনায় যাওয়া যাক, চলুন!

খোমেনীর যুগে শীয়াবাদ!

ভূপৃষ্ঠের উপর শীয়া মতবাদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ সালে ইরানের শীয়াবিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী ইরানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত শীয়াদের একটি কিতাবও কোনো দিন ছাপানো হয়নি। সবগুলো কিতাবই ছিল কলমী নোসখা অর্থাৎ হাতে লিখা। তাঁদের ছাত্রদের মাঝেও সবচেয়ে যোগ্য সাগরেদকে যে যে গ্রন্থ দেয়া হত তাঁর সবই হাতে লিখা থাকত। কোনো দিন এই কিতাবগুলো ছাপা হত না। কারণ তাঁদের আকিদা ছিল ভারি দুষ্টু ও খতরনাক। আজকের আধুনিক দুনিয়ার ৯০% শীয়া মতবাদের অনুসারীকে আপনি মনের দিক থেকে একদমই দুর্বল আর অসহায় পাবেন। কারণ এটাই।

আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসলাম। শায়খ আল কুলাইনী সাহেবের ‘আল কাফী’ (الكافى) কিতাবের ভাষ্য, “তাকীয়া দ্বীনের ১০ ভাগের ৯ ভাগ। যে তাকীয়া করবে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন আর যে তাকীয়া করবে না আল্লাহ তাঁর মর্যাদা কমিয়ে দেবেন।” কী সব কথা! সত্য গোপন করতে হবে কেন? এটি ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য? এটি কি কপটতা নয়? আপনার অফিসের একজন সামান্য কর্মচারীও যদি আপনার সাথে এমন কপট আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, আপনি কী করবেন? পুরষ্কার দেবেন? আপনার কোম্পানির কী হাশর তখন? দুনিয়ার সমস্ত নিয়ম কানুন আস্তে আস্তে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে কিনা? যাইহোক, মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কুলাইনী (আরবী : محمد بن يعقوب بن إسحاق الكليني) (মৃত. ৩২৯ হিজরী, বাগদাদ) ‘উসূলে কাফী’-তে কিতমান (كتمان)-এর আরেকটি অধ্যায় রয়েছে। তাতে একটি রেওয়ায়তে (হাদীস) এসেছে,

علي بن إبراهيم، عن أبيه، عن ابن أبي عمير، عن يونس بن عمار، عن سليمان ابن خالد قال: قال أبو عبد الله (عليه السلام): يا سليمان إنكم على دين من كتمه أعزه الله ومن أذاعه أذله الله

অর্থ, ইমাম জাফর আস সাদেক তাঁর ছাত্র সোলাইমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে সোলাইমান! তোমরা যে দ্বীন বা ধর্মের উপর রয়েছ, তা সর্বদা গোপন রাখবে। যে এই ধর্মকে গোপন রাখবে, আল্লাহ তাঁকে ইজ্জত দান করবেন। আর যে ফাঁস করে দিবে আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন।’ (রেফারেন্স, আল কাফী ফীল উসূল ওয়াল ফুরূ)।

  • বস্তুতপক্ষে এই সমস্ত কারণেই বিগত সাড়ে চৌদ্দশত বছরেও তারা কোনো কিতাব ছাপে নাই। সব কিতমান তথা গোপন করে রাখত। যার প্রয়োজন হত সে হাতে লিখা নোসখা তৈরি করে নিত। এই তো মাস তিনেক আগের কথা। আমি দারুলউলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মৌলবী কাশেম নানুতবী সাহেবের একটি বই অধ্যায়ন করছিলাম। তিনিও স্বীকার করেছেন যে, তিনি কোনো দিন উসূলে কাফী সচক্ষে দেখেননি। আর শীয়ামতবাদের রদে তিনিও যে কিতাবখানা লিখেছেন, তা তিনি শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস আদ-দেহলভী (রহ.) এর লিখা ‘তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া‘ গ্রন্থের উপর নির্ভর করেই লিখেছিলেন।
  • এবার আপনি নিজেই চিন্তা করুন, ভাবুন তো একবার! কি পরিমান কিতমান করতো এরা! কত জঘন্য সত্য গোপনকারী হলে তারা নিজেদের দ্বীন ধর্ম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত আর্গুমেন্ট গুলো গোপন করে মানুষকে কাছে টানার চেষ্টায় থাকত! বর্তমানেও আপনি অনলাইনে বহু শীয়া মতবাদিকে সূন্নী মোড়কে খোঁজে পাবেন, পরিচয় গোপন করে লিখা লিখি করে যাচ্ছে। বেশভূষায় শীয়া মনে হবেনা। প্রয়াত মওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকি, চাঁদপুরের বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী, ঢাকা কমলাপুরের শায়খ গোলাম মওলা নকশবন্দী, কথিত ইমাম হায়াত সহ বহু ছদ্মবেশী। কিতমান আর তাকীয়ায় বিশ্বাসী এরা। কিন্তু আপনার সেই সাধ্য নেই যে, আপনি এদের চিহ্নিত করতে পারবেন!

১৯৭৯ সালে যখন খোমেনী ইরানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তখন তিনি বিভিন্নস্থানে খুতবাহ প্রদান করেন। তাঁর সমস্ত খুতবাহ বা ভাষণ একত্র করে ‘সহীফায়ে নূর’ নামে ছাপানো হয়। এই সহীফায়ে নূর প্রায় ৩০ খণ্ডেরও বেশি হবে। তাতে খোমেনীর ৭০০ এরও অধিক ভাষণ বা খুতবাহ সংকলিত হয়েছে। এই সহীফায়ে নূরের ৩ নম্বর ভাষণটির অংশবিশেষ আজ এখানে উল্লেখ করে মূল আলোচনায় চলে যাব, ইনশাআল্লাহ।

ইরানের শীয়া মতবাদের পুরোধা আয়াতুল্লাহ খোমেনী সাহেব তার ঐ ৩ নম্বর ভাষণে বলেছেন,

امام کا حکم یہ تھا کہ مذہب کو چھپاؤ گے عزت پاو گے مذہب کو ظاہر کرو گے ذلیل ہو جاؤ گے ۔ لیکن جو حکومت اللہ نے مجھے عطا فرمائی ہے یہ چودہ سو سال سے شیعہ کو حکومت کبھی نہیں ملی اس لیے کہ جو شیعہ حکمران بنا یا وہ لا دین تھا یا وہ ملحد تھا یا وہ سنی کی زیر اثر تھا ۔ لیکن میں آج پہلا تن ہے تنہا حکمران ہوں میں شیعہ مجتہد ہوں میں علی کا نائب ہوں میں امام کا نائب ہوں ۔ یہ پہلی حکومت چودہ سو سال میں شیعہ کی قائم ہوئی ہے ۔ اسی لیے میں علی المرتضی امام کے اس حکم کو منسوخ کر کے اعلان کرتا ہوں کہ شیو! اپنی مذہب کو ظاہر کرو پہلے مذہب کو چھپانا عبادت تھا اب ظاہر کرنا عبادت ہے ۔

অর্থ, খোমেনী সাহেব বলেন, ইমামদের হুকুম ছিল, যে ধর্মকে লুকিয়ে রাখবে সে সম্মানিত হবে। ধর্মকে যে প্রকাশ করবে সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। কিন্তু যে রাজত্ব আল্লাহ আমাকে আজ প্রদান করেছেন এরূপ রাজত্ব ১৪শত বছরেও কোনো শীয়া পায় নি। এরূপ রাজত্ব না পাওয়ার কারণ হল, আমার পূর্বে যাঁরাই ক্ষমতা পেয়েছিলাম, হয় তারা লা-দ্বীন অর্থাৎ নাস্তিক ছিলাম, না হয় মুলহিদ ছিলাম আর না হয় সুন্নীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলাম। কিন্তু আজ আমি একা ও একক রাষ্ট্রপ্রধান। সেই সাথে আমি শীয়া মুজতাহিদ, হযরত আলীর নায়েব, ইমামের নায়েব। এই রাজত্ব আমার দ্বারা ১৪শত বছর পর শীয়াদের প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য আমি আলী আল মর্তুজার নায়েব বা স্থলাভিষিক্ত। তাই আজ আমি আলী আল মর্তুজার সেই হুকুমকে মানসূক (রহিত) করে ঘোষণা দিচ্ছি, হে শীয়াগণ! নিজেদের ধর্মকে প্রকাশ করো। আগে শীয়া মতবাদকে লুকানো ইবাদত ছিল, এখন প্রকাশ করা ইবাদত। (মূল ভাষণের উর্দূ তর্জমার বাংলা)।

এই ঘোষণা করে সে শুধু বসে থাকেনি। তৎকালীন সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয় করে শীয়া মতবাদের সমস্ত গ্রন্থ আরবী, ফার্সি, উর্দূ ও ইংরেজিতে ছাপানো শুরু হয়। তাঁর এই অসামান্য খিদমতের কারণে সাড়ে চোদ্দশত বছর পর সমগ্র বিশ্ব তাঁদের আসল চেহারা দেখতে শুরু করে। যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খোমেনীকে সাধুবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়েছিল, সেই তারাই তাঁদের ধর্মবিশ্বাস আর মতবাদ দেখে থুতু করতে শুরু করে। ইরানের জন্মসূত্রে বহু শীয়া তাদের আসল চেহারা উন্মোচন হওয়ার পর ইসলামের আহলে সুন্নাহ’র মতাদর্শ গ্রহণ করেন। বর্তমানে ইরানে আহলে সুন্নাহর প্রতিনিধিত্ব যাদের হাতে তাদের সিংহভাগই পূর্বে শীয়া ছিলেন। অনেককে খোমেনীর রাষ্ট্রযন্ত্র নির্যাতন করে হত্যা করেছে, আবার অনেকে জেলে।

যাইহোক, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শীয়াদের থেকে মুসলিম বিশ্ব নিজেদের গুটিয়ে নেয়। দেওবন্দী আন্দোলনের বিশিষ্ট বুযূর্গ উস্তাদ মানযুর নোমানী সাহেব শীয়াদের তাকফির করেন। একই ভাবে এই তাকফিরি ফতওয়া আসতে থাকে বিশ্বের বড় বড় এদারাগুলো থেকেও। পাকিস্তান, মিশর, লেবাননের বৈরুত এবং সৌদি আরব থেকেও। মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী (রহ.) বহু পূর্বেই তাদেরকে তারদিদ করে জাতিকে পথ দেখিয়ে যান।

সুতরাং এখন আমি যে তথ্যগুলো প্রচার করছি, এজন্য আমি একা দায়ী নই, বরং আপনাদের জনাব খোমেনী সাহেবই এজন্য দায়ী। যদি রাগ ও বিদ্বেষ করতে হয়, তাঁকে করুন। আমি ধন্যবাদ জানাই, খোমেনী সাহেবকে। যিনি সাহস করে শীয়া মতবাদের বীভৎস চেহারার উপর থেকে পর্দাটা সরিয়ে নিয়েছেন। আমার ভাষায় বললে, তিনি শীয়া মতবাদের চেহারা থেকে নেকাব খুলে সেটিকে একদমই বিবস্ত্র করে দিয়ে গিয়েছেন। আমাদেরকে আপনাদের আসল চেহারাটা দেখার মত সুযোগ করে দিয়ে গেছেন। আমার একটি বড় খারাপ অভ্যাস আছে। আমি যাকে খুব পছন্দ করি, তাঁকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা করি। আমি যেহেতু মাওলানা আবুল আলা মওদূদী সাহেবের দ্বারা এক সময় বেশ প্রভাবিত ছিলাম, তাই জনাব খোমেনীকে অনেক বড় মুজাদ্দিদ ও ইমাম মানতাম।

আমার পুরনো লিখাগুলো দেখেন। আমি খোমেনীর প্রশংসায় কেমন পঞ্চমুখ ছিলাম। কিন্তু সেই বদ-অভ্যাসের দরুন তাঁকেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করি। ফলে জাহির হয় তাঁর মাকরূহ চেহারা। যাঁর খিদমতে আজ শীয়া মতবাদের হাকীকত জানতে পারি। চলুন, তাঁকে দিয়েই আগে শুরু করি। চলবে…

আগের পর্ব পড়ুন

লিখক, তায়েফ হাসান খান, শীয়া মতবাদের উপর একজন স্পেশালিষ্ট ও গবেষক।

সম্পাদনায়, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

শীয়া খোমেনীবাদ ১

  • খোমেনীবাদ : ১

শীয়া মতবাদ! ইরানের শীয়া বিপ্লবী নেতা ও শীয়া মতবাদের গুরু আয়াতুল্লাহ খোমেনী (১৯০২-১৯৮৯)-এর চিন্তাধারা ও কুফুরী মতবাদের উৎস :

প্রথমে জেনে রাখুন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত-এর প্রধান হাদীসের কিতাব হল, সহীহ আল বুখারী। ঠিক অনুরূপভাবে শীয়াদের প্রধানগ্রন্থ হল, আল কাফী (আরবী : الكافي في الأصول والفروع)। ‘কাফী’ (الكافى) শব্দের অর্থ হল, যথেষ্ট। এই কাফী-তে ১৬ হাজার ১ শত ৯৯খানা রেওয়ায়েত (তাদের ভাষায় হাদীস) উল্লেখ রয়েছে। প্রায় ২০ বছর ধরে সাধনা করে নাকি শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকূব আল কুলাইনী সাহেব এই ‘কাফী’ কিতাবটি সংকলন করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, এই কিতাব লিখার পর তাদের তথাকথিত আত্মগোপনে থাকা ইমাম মাহদী (মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল আসগরী)-এর নিকট এটি পেশ করা হয়। শায়খ কুলাইনী সাহেব অবশ্য কোন গুহায় ইমাম মাহদীর খোঁজ পেয়েছিলেন বা কিভাবে পেয়েছিলেন এ সবের কোনো তথ্যই তিনি উল্লেখ করে যাননি। যাইহোক, ইমাম মাহদী নাকি কিতাবটি দেখে বলেছেন, الکافی كافى অর্থাৎ আল কাফী (শীয়াদের জন্য) যথেষ্ট। আমার নিকট লাখনৌর ছাপা ‘আল কাফী’র যে কপিটা রয়েছে, তার ১ম খণ্ডের মুকাদ্দমাতে (ভুমিকাতে)-ই উপরের কথাগুলো লিখা আছে। তাঁদের আরও দাবী হল, এই সাড়ে ১৬ হাজার হাদীসের(?) মধ্যে নাকি একটি জাল (বানোয়াট/মিথ্যা) হাদীসও নেই।

এবার তাদের একখানা স্ববিরোধী আচরণ দেখুন, তারা “বুখারী” এর নাম ‘সহীহ’ কেন রাখা হল, এই ধরনের প্রশ্ন করতে করতে পুরাই পাগল করে দেয়। অথচ তাদেরই শায়খ কুলাইনীর কিতাব “আল কাফী” কিভাবে ‘যথেষ্ট’ (كافى) হল, তার কোনো কোনো জবাব নেই! যাইহোক, এই ‘কাফী’ কিতাবকে তিন (৩) ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা, ১. উসূলে কাফী (اصول الكافى)। ২. ফুরূয়ে কাফী (فروع الكافى)। ৩. রওজাতুল কাফী (روضة الكافى)।

শীয়া মতবাদ সত্যিই এক অদ্ভুত মতবাদ। এদের মতাদর্শ খুব কম মানুষই জানতে পারে। কারণ এরা এগুলো কখনো প্রকাশ করেনা। যাইহোক, উসূল বা নীতিমালা (الاصول) বর্ণিত আছে ‘আল উসূলু মিনাল কাফী’-তে (الاصول من الكافى)। আর তাঁদের ফুরূয়ী মাসআলা যেমন, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ-তালাক সহ ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে আল ফুরূ’ মিনাল কাফী-তে (الفروع من الكافى)। আর ইমামগণের (১২ ইমাম সহ) জীবনী রয়েছে রওজাতুল কাফী-তে (الروضة الكافى)। আহলে সুন্নাহ তথা সুন্নী মুসলিমগণ যেরূপ বুখারী ও মুসলিমের উপর খুব আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন, শীয়াগণ তার চেয়েও বেশি বিশ্বাস রাখেন ‘আল কাফী’ কিতাবের উপর। এই ‘আল কাফী’ কিতাবটির প্রথম অংশে অর্থাৎ উসূলে কাফী’র চতুর্থ খণ্ডের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় ‘বাবুত তাকীয়া’ (باب التقية) নামক একটি অধ্যায় রয়েছে, অধ্যায় নং ২২৫, আর এই অধ্যায়ে ২৩ খানা রেওয়ায়েত (হাদীস) এনেছেন শায়খ কুলাইনী সাহেব। আমি এখানে মাত্র দুটি হাদীস (মূলত এগুলো শীয়া পণ্ডিতদের বানোয়াট বর্ণনা – লিখক) পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরব। তাঁর পূর্বে চলুন জেনে নেয়া যাক, তাদেরই অন্যতম একটি মতবাদ “তাকীয়া” সম্পর্কে জেনে নিই। তাকীয়া (التقية) কী ও কেন?

তাকীয়া বা তাকিয়্যাহ :

  • তাকীয়া (التقية) হল, শীয়াদের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও শিক্ষা। এর ব্যবহারিক অর্থ হল, মানুষ তাঁর মান ও মর্যাদা এবং জান-মাল শত্রুর কাছ থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে যা কিছু অন্তরে রয়েছে তাঁর বিপরীতে মত প্রকাশ করা। এরই নাম ‘তাকীয়া’। খুব খেয়াল করুন, যদি আপনি কোনো মিথ্যাকথা বলেন অথবা অন্তরে এক কথা আর মুখে আরেক কথা রাখেন, তাহলে কিন্তু তা অপরাধ নয়। নাউযুবিল্লাহ। কিয়েক্টাবস্থা!
  • শীয়াগণ (পূর্ব নাম রাফেজী) সামান্য বিষয়েও এই রূপ তাকীয়া করেন। প্রয়োজনে করেন, আবার অপ্রয়োজনেও করেন। এর অহরহ দলিল দেয়া যাবে। বলাবাহুল্য যে, তাদের মতাদর্শটি বিগত ১৪ শত বছর ধরেই এইরকম তাকীয়া আর কিতমান (সত্য গোপন)-এর উপর টিকে আছে। এই তাকীয়া অধ্যায়ের ২য় রেওয়ায়েতটি নিচে দেখুন,
  • ابن أبي عمير، عن هشام بن سالم، عن أبي عمر الأعجمي قال: قال لي أبو عبد الله (عليه السلام): يا أبا عمر إن تسعة أعشار الدين في التقية ولا دين لمن لا تقية له والتقية في كل شئ إلا في النبيذ والمسح على الخفين
  • অর্থ, ইমাম জাফর আস সাদেক বলেছেন, (নিশ্চিত কথাগুলো জাফর সাদেকের নামে জঘন্য মিথ্যাচার। তিনি এমন কথা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র – অনুবাদক) হে উমরের পিতা, তাকীয়াতে দ্বীন ইসলামের ১০ ভাগের ৯ ভাগ রয়েছে। কোনো প্রকারের দ্বীন অবশিষ্ট নেই তাকীয়াহ ছাড়া। আর ‘ওয়াত তাকিয়্যাতু ফী কুল্লি শাইয়িন’ তথা দ্বীনের সকল কিছুতেই তাকীয়া রয়েছে, শুধুই মোজার উপর মাসেহ করা আর মদ পান করা এই দুই কর্মে তাকীয়া নেই।’

পাঠকবর্গ! চিন্তা করুন, যাঁদের দ্বীন ধর্মটাই এমন মিথ্যা আর কপটতার উপর প্রতিষ্ঠিত, তাঁদের থেকে আপনি কখনো কোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য কিভাবে আশা করতে পারেন? মনে করুন, আপনি একজন কনভার্টেট শীয়া। আপনাকে নানা ধরনের ইতিহাস বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে বুঝালো! এখন যাদের রক্তমাংসে তাকীয়া মিশে আছে তারা যে আপনাকে ধোকায় ফেলেনি, সত্যটা কৌশলে গোপন রেখে দেয়নি; আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন? কারণ যার একটি কথায় মিথ্যা প্রমাণিত হবে তার তো বাকি সমস্ত কথায় মিথ্যা হওয়া স্বাভাবিক, তাই নয় কি? আহা! তাকীয়া!! ইসলামের ৯ ভাগ তাকীয়াতেই!! মা’আজাল্লাহ! তাহলে ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে!! এই কুরআন, এই হাদীস; সব মিলেও ১০ ভাগের ১ ভাগ না, তাই না? আস্তাগফিরুল্লাহ। তাহলে দ্বীনের বাকিগুলো কোথায় বলবেন কি?

এবার তাকীয়া সম্পর্কিত পরবর্তী রেওয়ায়েতে যাওয়া যাক, শায়খ কুলাইনী (মৃত. ৩২৯ হিজরী, বাগদাদ) সাহেব রচিত ‘আল কাফী’ কিতাবে এসেছে,

محمد بن يحيى، عن أحمد بن محمد بن عيسى، عن محمد بن خالد، والحسين بن سعيد جميعا، عن النضر بن سويد، عن يحيى بن عمران الحلبي، عن حسين بن أبي العلاء عن حبيب بن بشر قال: قال أبو عبد الله (عليه السلام): سمعت أبي يقول: لا والله ما على وجه الأرض شئ أحب إلي من التقية، يا حبيب إنه من كانت له تقية رفعه الله، يا حبيب من لم تكن له تقية وضعه الله، يا حبيب إن الناس إنما هم في هدنة. فلو قد كان ذلك كان هذا

অর্থ, ইমাম জাফর আস সাদেক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (নাকি) তাঁকে বলতে শুনেছেন, এই জমিনের উপর আমার নিকট তাকীয়া অপেক্ষা অধিক প্রিয় বস্তু আর নেই। যে তাকীয়া করবে আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। আর যে তাকীয়া করবে না আল্লাহ তার মর্যাদা কমিয়ে দেবেন। হে হাবীব! নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ যুদ্ধবিগ্রহ অবস্থায় আছে। অতএব যদি তেমনি হয় তাহলে তাকীয়া করবে, না হয় করবেনা।

মানে বুঝা গেল, যে কপটতা করবে আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন, আর যে তা করবে না আল্লাহ তাঁদের লাঞ্ছিত করে পেছনে ফেলে দেন। তাকীয়াহ ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো প্রিয়তম বস্তু এই জগতে আর কিছুই নেই। কত ফজিলত! কল্পনা করেছেন!! এজন্যই তাঁদেরকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে,

১. তোমরা কি খলীফাতুল মুসলিমীন আবু বকর ও উমর (রাযি.)-কে কাফের মানো? যা উসূলে কাফী কিতাবেও লিখা আছে! তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

২. তোমরা খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান (রাযি.)-কে বেশ্যার ছেলে, মদখোর ইত্যাদি মানো কি? যা তোমাদের ‘হায়াতুল কুলুব’ কিতাবেও লিখা আছে। তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

৩. তোমরা কি আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআনকে বিকৃত হয়ে গিয়েছে এমন বিশ্বাস রাখো? যা উসূলে কাফী কিতাবেও লিখা আছে। তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

৪. তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, তোমাদের বারো (১২) ইমামগণ মতান্তর ১ লক্ষ কিবা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী রাসূল থেকেও উত্তম? যা উসূলে কাফী কিতাবেও লিখা আছে। তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

৫. তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, ইমাম মাহদীর আগমন হলে মুসলিম উম্মাহার কলিজার টুকরো সাইয়্যিদা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.), যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে নবীজির পত্নী, যার বিশুদ্ধ চরিত্রের সাফাই দিয়ে কুরআনের আয়াত (সূরা নূরের প্রায় ১০ আয়াত) নাযিল হয়েছে, সেই আম্মাজান আয়েশার বিরুদ্ধে জিনা-ব্যভিচারের অভিযোগ দাঁড় করিয়ে হদ কায়েম করবেন? নাউযুবিল্লাহ। তারা উত্তরে বলবে, না এমনটা আমরা বিশ্বাস করি না, এটা আমাদের আকিদাও নয়।

৬. তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, ইমাম মাহদীর আগমনের পর সর্বপ্রথম কাজ হবে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর এবং হযরত উমর (রাযি.) – উভয়কে নবীজির রওজা থেকে তুলে কাপড়চোপড় খুলে বিবস্ত্র করবেন আর উল্টা ঝুলিয়ে পেটাবেন? তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

এরূপ অসংখ্য প্রশ্ন ও ইবারত খুলে খুলে তাদের কিতাব থেকে দেখালেও তারা বলবে, না মানি না। এগুলো আমার/আমাদের আকিদা বিশ্বাস নয়। এরই নাম শীয়াবাদ, এরই নাম ইসলামের মূলে কুঠারাঘাতকারী জামাত। এরা বিধর্মীদের চেয়েও ইসলামের ঠান্ডা মাথার জঘন্য দুশমন। কিন্তু অধিকাংশ আহলে সুন্নাহ অনুসারী আমাদের মুসলিম ভাই বোন তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার কারণে তাদের শুধুই বাহ্যিকরূপ আর জৌলুশ দেখেই ধোকায় পড়ে এবং পুরোপুরি অন্ধকারে নিপতিত হয়ে যায়। অথচ তাদের এই সমস্ত আকীদা বিশ্বাসের দরুন কোনো ঈমানদার মুসলমান তাদেরকে মুমিন মুসলিম মনে করলে নিজের ঈমান আর ইসলামটাই বরবাদ হয়ে যাবে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। (চলমান)।

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন

লিখক, তায়েফ হাসান খান, শীয়া মতবাদের উপর একজন স্পেশালিষ্ট ও গবেষক।

সম্পাদনায়, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যার মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী-৪

লেখরাম সম্পর্কে মির্যার ভবিষ্যৎবাণী যেসব শব্দচয়নে ছিল!

মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণীতে পণ্ডিত লেখরাম (پنڈت لیکھرام) সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণীর শব্দচয়ন কীরকম ছিল? লেখরাম কবে এবং কিভাবে হত্যা হল? তার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মির্যায়ী ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণতা পেয়েছে, এমন দাবী করা কেন ঠিক হবেনা? খারেক্বে আদত বলতে কী বুঝায়? ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে আজকের এই লিখাটি আপনার জন্য!

আর্য সমাজের জনপ্রিয় ধর্মগুরু ও পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ২০-০২-১৮৯৩ ইং ভবিষ্যৎবাণী করেছিল এভাবে যে,

اگر اس شخص پر چھ برس کے عرصہ میںؔ آج کی تاریخ سے کوئی ایسا عذاب نازل نہ ہوا جو معمولی تکلیفوں سے نرالا اور خارق عادت اور اپنے اندر الٰہی ہیبت رکھتا ہو تو سمجھو کہ میں خدا تعالیٰ کی طرف سے نہیں

অর্থাৎ এই ব্যক্তির উপর আজকের এই তারিখ থেকে আগামী ছয় বছরের মধ্যে যদি এমন কোনো আজাব নাযিল না হয়, যেটি সাধারণ যে কোনো শাস্তির উর্ধ্বে ও নজিরবিহীন (রহস্যময়) হবে আর তার অভ্যন্তরে ইলাহি ভীতি সঞ্চার করবে, তাহলে জেনে রেখো আমি খোদার পক্ষ হতে প্রেরিত নই। (রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫০-৫১)। কিন্তু লেখরামের মৃত্যু হয় মির্যার এক দুর্বৃত্ত মুরিদের ছুরিকাঘাতে। (আর্যদের লেখিত পুস্তক হতেও একথাই প্রমাণিত)। মির্যার কথা ছিল নজিরবিহীন এমন এক আজাব তার উপর নাযিল হওয়া যেটি তার অভ্যন্তরে খোদায়ী ভীতি সঞ্চার করবে, কিন্তু তা সেভাবে হয়নি। কারণ দুনিয়ায় ছুরিকাঘাতে অসংখ্য লোক প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। ফলে এইরূপ মৃত্যু খারেক্বে আদত তথা নজিরবিহীন-এর পর্যায় পড়েনা। সুতরাং মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

নাতিদীর্ঘ ঘটনা : পণ্ডিত লেখরাম আর মির্যা কাদিয়ানীর মাঝে প্রথমে কলমি আন্দাজে অনেক তর্কবিতর্ক চলেছিল। দুইপক্ষই একে অন্যের জাতগুষ্ঠি পর্যন্ত উদ্ধার করে ছাড়ে! অকথ্য গালিগালাজ কারে কয়। কারো থেকে কেউ কোনো অংশে কম ছিল না। মনের জমানো রাগ-ক্ষোভ প্রশমিত করতে যাইচ্ছেতাই লিখে যেত। মির্যা সাহেব তো একবার আর্যদের ইশ্বর সম্পর্কে বেদ-এর নাম ভেঙ্গে এমন এক কথাও লিখে ফেলে, যার ফলে পাপিষ্ঠ পণ্ডিত লেখরাম প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-এর পবিত্র সত্তায় উপর্যুপরি আঘাত হানতে শুরু করে। উম্মুল মুমিনীনদের নিয়েও অশালীন মন্তব্য করতে শুরু করে। আসলে এ সমস্ত দুর্ঘটনার জন্য মির্যাই দায়ী। সেই বরং এগুলোর জন্য তাকে প্ররোচিত করেছিল। পরবর্তী সময়ে ইসলামের নবী এবং উম্মুল মুমিনীনদের শানে আর্য সমাজের পণ্ডিতরা আরও যতসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছিলো তার সবকয়টিই পণ্ডিত লেখরামের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে ছিল। অথচ আর্যগণ একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারত যে, ইসলাম আর কাদিয়ানীজম দুটো পুরোপুরি আলাদা জিনিস! কাজেই মির্যাকে কাউন্টার দিতে গিয়ে ইসলামকে আক্রমণ করা তাদের বোকামী ছিল। যাইহোক, আর্য সমাজের ইশ্বর সম্পর্কে ‘বেদ‘ এর নাম ভেঙ্গে মির্যার মিথ্যাচারমূলক উক্তিটি ছিল এইরকম –

پرمیشر ناف سے دس انگلی نیچے ہے. سمجھنے والے سمجھ لی

অর্থ- পরমেশ্বর নাভীর দশ আঙুল নিচে। জ্ঞানীরা বুঝে নিও! (চশমায়ে মা’আরেফত, রূহানী খাযায়েন ২৩/১১৪)। ছিঃ! একটা মানুষ কত নোংরা মনের অধিকারী হলে অন্য ধর্মের অনুসারীদের অনুভূতিতে এভাবে আঘাত দিতে মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে!

পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণীর ভবিষ্যৎ :

  • পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট আছে, মির্যা কাদিয়ানী তারই একজন অনুগত ঘাতক-দুর্বৃত্ত মুরিদকে দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছিল। পণ্ডিত লেখরাম ঐ ঘাতকের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হন ৭ই-মার্চ ১৮৯৭ সালে। ইতিহাস একটু দীর্ঘ।
  • সংক্ষেপে বলতে গেলে, মির্যা কাদিয়ানী ১৮৮৪ সালের দিকে ৪ খণ্ডে ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ নাম দিয়ে বই লিখেন। সেখানে আর্য সমাজের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয় এবং যে এগুলো খণ্ডন করতে পারবে তাকে ১০ হাজার রুপি পুরষ্কার দেয়ার ঘোষণা করা হয়। পণ্ডিত লেখরাম সে সময়কার একজন আর্য সমাজের জনপ্রিয় পণ্ডিত, লিখক ও বিতার্কিক ছিল। আনুমানিক ৩২টি বই রচনা করে। সে একাধারে উর্দূ, আরবী এবং ফার্সী ভাষায়ও এক সমানে বলতে ও লিখতে পারত। সে মির্যার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং ‘তাকজীবে বারাহীনে আহমদীয়া‘ (বারাহীনে আহমদীয়ার মিথ্যাচার) বই লিখে মির্যাকে খণ্ডন করে। এই ঘটনায় মির্যা কাদিয়ানী অত্যাধিক রেগে আগুন হয়ে যান। তিনি আর কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কে গেলেন না। সিদ্ধান্ত করলেন লেখরাম সম্পর্কে মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণী করবেন। অথচ মানুষের হায়াত মউতের মালিক হলেন আল্লাহ, তিনি কখনো কাউকে বলে রাখেন না যে, কার মৃত্যু কখন এবং কিভাবে হবে? আমার বুঝে আসেনা, মির্যা কাদিয়ানী মানুষের হায়াত মউতের ভবিষ্যৎবাণী করার এই খোদায়ী ক্ষমতা পেলেন কোথা থেকে! অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কেও আল্লাহ এই ক্ষমতা এক মুহূর্তের জন্যও দেননি। যাইহোক, পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে ১৮৯৩ সালের ২০ই ফেব্রুয়ারী মির্যার ভবিষ্যৎবাণী করা হয়ে গেল! আগামী ছয় বছরের মধ্যে কোনো এক ঈদের কাছাকাছি সময় লেখরামের মৃত্যু হয়ে যাবে। তবে সেই মৃত্যু خارق عادت (খারেক্বে আদত) (অর্থাৎ নজিরবিহীন ও রহস্যময়/mysterious) হবে। (আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম, রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫০-৫১)।
  • ইতিহাস সাক্ষী, মির্যা কাদিয়ানী যখন দেখল, ১৮৯৭ সাল-ও গত হয়ে যাচ্ছে। পণ্ডিত লেখরামের মৃত্যুর আলটিমেটাম শেষের দিকে। তবু তার খারেক্বে আদত কোনো মৃত্যু হচ্ছেনা। সে বছরই একজন দুর্বৃত্তকে দিয়ে তাকে ছুরিকাঘাতে চোরাগোপ্তা হত্যার ষড়যন্ত্র করা হল। মির্যা কাদিয়ানীকে সে সময় লেখরামের হত্যা মামলার প্রধান আসামীও করা হয়েছিল। কিন্তু সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সাথে তার জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় শেষমেশ ব্রিটিশ আদালত তাকে জামিন দিয়ে দেয়। এখন নিরপেক্ষভাবে যদি কোনো একজন আহমদীও ‘খারেক্বে আদত’ নিয়মে লেখরামের ধ্বংস সম্পর্কে মির্যার কৃত ভবিষ্যৎবাণীর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করেন তাহলে বলতে বাধ্য হবেন যে, দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে লেখরামের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার সাথে মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণতা পাওয়ার কানাকড়ি সম্পর্কও নেই। এবার ‘খারেক্বে আদত’ বলতে কী বুঝায়, জেনে নিন! মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ‘খারেক্বে আদত’ (خارق عادت) এর সংজ্ঞায় লিখেছেন,

ظاہر ہے کہ جس امر کی کوئی نظیر نہ پائی جائے اسی کو دوسرے لفظوں میں خارق عادت بھی کہتے ہیں.

অর্থাৎ প্রকাশ থাকে যে, যে ঘটনা নজিরবিহীন তাকে অন্য শব্দে খারেক্বে আদতও বলা হয়। (সুরমা চশমায়ে আরিয়া, রূহানী খাযায়েন ২/৬৭)। তিনি আরেক জায়গায় লিখেন,

خارق عادت اسی کو تو کہتے ہیں کہ اس کی نظیر دنیا میں نہ پائی جائے

অর্থ, খারেক্বে আদত বলা হয় যার কোনো দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/২০৪)।

কাজেই এখন প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, পণ্ডিত লেখরাম তো ঘাতকের হাতে চোরাগোপ্তা হত্যা হল, خارق عادت (খারেক্বে আদত) বা নজিরবিহীন মৃত্যু হল না! উপরন্তু যে খুন-খারাপি মির্যাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য করল, খুনের হুকুমদাতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে হল; সেই হত্যাকাণ্ড কিভাবে মির্যার ভবিষ্যৎবাণীর পূর্ণতার নিদর্শন হতে পারে? এইভাবে দুর্বৃত্ত দিয়ে চোরাগোপ্তা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যে কেউই তো নিজের পক্ষে হুবহু মির্যার মত একটি ‘নিদর্শন’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, তাই নয় কি? সারা দুনিয়া যেই কর্মের জন্য মির্যাকে পরোক্ষ একজন খুনি বলছে সেই একই কর্মকে তার অনুসারীরা খোদার নিদর্শন বলতে চাইলে বলুক! আচিরেই আল্লাহর সাথে তাদের বুঝাপড়া হবে!

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ওফাতে মসীহ’র উপর সাহাবীদের মাঝে কি ইজমা হয়েছিল?

ওফাতে মসীহ’র উপর সাহাবীদের মাঝে কি ইজমা হয়েছিল?

  • ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল, এমন কথায় নাকি সমস্ত সাহাবী একমত (ইজমা) হয়েছিলেন! আহা! কত বড় মিথ্যা কথা! এই পর্যায় কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন করছি,

১. আবুবকর (রা.) যখন و ما محمد الا رسول… (৩:১৪৪) আয়াতটি সবার সম্মুখে পাঠ করলেন এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যু হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে বুঝাতে লাগলেন ঠিক সেই সময় হযরত উমর (রা.) খুব জোশে এসে বললেন ‘যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) মারা গেছেন তাকে আমি আমার তরবারি দিয়ে হত্যা করব।’ তিনি কিন্তু এটুকু বলেই থেমে যাননি। তিনি আরও বলেন,

و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى بن مريم

অর্থাৎ ঈসা (আ.)-কে যেভাবে “আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে” তদ্রূপ মুহাম্মদ (সা.)-কেও উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।’ মির্যা কাদিয়ানীও হাদীসটি তার বইতে এনেছেন। (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৫/৫৮০)। এখানে আমার প্রশ্ন হল, তখন আবুবকর (রা.) সহ কোনো একজন সাহাবীও কেন হযরত উমর (রা.)-এর ঈসা সম্পর্কিত ঐ কথার বিরোধিতা করলো না? বুঝা গেল সাহাবীদের নামে ‘ইজমা’ হওয়া সংক্রান্ত কাদিয়ানীদের দাবীটি অনেক বড় মিথ্যা কথা!

২. মির্যা সাহেব তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছে,

اور ابتداء سے آج تک بعض اقوال صحابہ اور مفسرین بھی اس کو مارتے ہی چلے آئے ہیں

অর্থাৎ সেই প্রথম থেকে আজকের এই দিন পর্যন্ত কিছু সংখ্যক সাহাবী এবং মুফাচ্ছিরও তাঁকে (ঈসাকে) মৃত বলে আসছে। (রূহানী খাযায়েন ৩/৩৫১)।

এখানে প্রশ্ন হল, সমস্ত সাহাবী ঐ বিষয়ে আসলেই একমত হয়ে থাকলে ‘কিছু সংখ্যক সাহাবী তাঁকে মৃত বলে আসছে’—মির্যার এই কথার কী মানে? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

৩. মির্যা সাহেব এক জায়গায় (ভিন্ন আরেকটি প্রসঙ্গে লিখলেন), তিন’শ বা চার’শ সংখ্যক সাহাবীর নাম উল্লেখ করতে হবে এবং প্রমাণ পেশ করতে হবে যে, সাহাবীদের ইজমা রয়েছে, নতুবা এক/দু’জনের বয়ানের নাম ‘ইজমা’ রাখা খুবই অবিচার।’ (রূহানী খাযায়েন ৩/২৫৫)।

এখানে প্রশ্নটি হল, ওফাতে মসীহ’র উপর সাহাবীদের ইজমা সংক্রান্ত উক্ত বিপুল সংখ্যক কোনো রেকর্ড কি কাদিয়ানীদের নিকট রয়েছে? সংক্ষেপে। সুতরাং প্রমাণিত হল যে, ঈসা (আ.)-কে নিয়ে কাদিয়ানীদের যতসব দাবী দাওয়া ভিত্তিহীন ও মিথ্যা!

হে আল্লাহ তুমি পথভ্রষ্ট এই সমস্ত কাদিয়ানীদের সহীহ বুঝ দান কর।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী