Home Blog Page 37

ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?

ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন??

(সূরা মুমিনুন, আয়াত ৫০) ‘এবং আমি মরিয়ম পুত্র (ঈসা) ও তাঁর মাকে করেছিলাম এক নিদর্শন। তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে।’

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : উক্ত আয়াতে ঈসা এবং তাঁর মা মরিয়মকে আল্লাহর ক্ষমতার এক নিদর্শন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহতায়ালা মরিয়মকে বিনা স্বামীতে গর্ভবতী করে ঈসা (আ.)-কে বিনা পিতায় সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহতায়ালারই ক্ষমতার অন্যতম এক নিদর্শন। তারপর আয়াতটিতে রাবওয়াহ (উচ্চভূমি) শব্দও উল্লেখ রয়েছে। যার অর্থ এমন উচ্চভূমি যা সমতল এবং আশপাশের এলাকা থেকে উঁচু। এটি বায়তুল মুকাদ্দাসেরই একটি স্থানকে বুঝানাে হয়েছে। আরেকটি শব্দ এসেছে ‘মা’ঈন’ (বহমান ঝর্ণা) । আরবীতে মা’ঈন বলতে সেই ঝর্ণাকে বুঝানাে হয়েছে যা মহান আল্লাহ ঈসা (আ.)-এর জন্মের সময় মরিয়ম (আ.)-এর পদতলে অলৌকিকভাবে প্রবাহিত করেছিলেন যেমনটি সূরা মরিয়মে (১৯:২৪) উল্লেখ রয়েছে। আয়াতের আরবী, فَنَادَاهَا مِن تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا অর্থ, ‘অত:পর তিনি (জিবরাইল) তাঁকে (মরিয়ম) তাঁর নিম্ন দিক (-এর পাহাড়ের পাদদেশ) থেকে আহবান করে বললেন, তুমি চিন্তিত হয়ো না। তোমার প্রভু তোমার (পদতলে) নিচ দিয়ে একটা বহমান ঝর্ণা সৃষ্টি করে দেবেন।’ তাফসিরে ইবনে কাসীর। কিতাবটি পড়তে ক্লিক করুন

এখানে বলে রাখা জরুরি, সূরা মরিয়মের ২৩ নং আয়াত সাক্ষী, উক্ত নিরাপদ ও প্রস্রবণ বিশিষ্ট উচ্চভূমিতে তাঁদের দু’জনের আশ্রয়-মুহূর্তে বিবি মরিয়ম (আ:) গর্ভবতী ছিলেন। ফলে প্রসব-বেদনার দরুন তিনি জেরুজালেমের নিকটস্থ উঁচু ও সমতল কোনাে নিরিবিলি জায়গায় খেজুর গাছের কান্ডের কাছে চলে গিয়েছিলেন।

নাতি-দীর্ঘ বিশ্লেষণ : এই পর্যায় আয়াতটির রাবওয়াহ এবং মা’ঈন শব্দদুটি নিয়ে একটু কথা বলব। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে যাহহাক (রহ.) বর্ণনা করেন যে, রাবওয়াহ বলা হয় ঐ উঁচু ভূমিকে যা সবুজ-শ্যামল ও কৃষি কাজের উপযােগী (দুররে মানছুর ৬/১০০)। হযরত মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সাঈদ ইবনে যােবাইর এবং কাতাদাহ প্রমুখও অনুরূপ বলেছেন (তাফসীরে তাবারী ৫/৫৩৬-৩৭)। মা’ঈন সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এটি হল ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির প্রবাহ (তাফসীরে তাবারী ১৯/৩৮)।

মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সাঈদ ইবনে যােবাইর এবং কাতাদাহ প্রমুখও অনুরূপ বলেছেন। সে যাইহােক আয়াতে রাবওয়াহ বলে প্রকৃতপক্ষে আরবের কোন স্থানটিকে বুঝানাে উদ্দেশ্য সে সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এখানে উল্লেখ করছি। তাফসীরে তাবারীর (১৯/৩৭) মধ্যে ইবনে আবী হাতেম হতে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব (রহ.) এর সূত্রে জায়গাটির নাম ‘দামেস্ক’ উল্লেখ আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, হাসান বসরী, যায়িদ ইবনে আসলাম এবং খালিদ ইবনে মাদানও প্রায় অনুরূপ বলেছেন। লাইস ইবনে আবী সুলাইম (রহ.) তিনি মুজাহিদ (রহ.) হতে বর্ণনা করেছেন, আয়াতাংশে ঈসা (আ.) এবং তাঁর মা মরিয়ম দামেস্কের [বর্তমান জেরুজালেম দামেস্কের প্রাচীন ভৌগোলিক সীমানারই অন্তর্ভুক্ত – লিখক] কোনাে এক সমতল ভূমিতে আশ্রয় নেয়ার কথাই বলা হয়েছে (দুররে মানছুর ৬/১০০)। আব্দুর রাজ্জাক (রহ:)-এর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে হযরত আবু হােরায়রা (রা.) হতে ফিলিস্তিনের ‘রামাল্লা’ এলাকার কথা বলা হয়েছে।

তবে সব চেয়ে বেশি নির্ভরযােগ্য যে বিবরণ পাওয়া যায় তা হল, ইবনে আব্বাস (রা.) হতে প্রাপ্ত আল আউফী’র বর্ণনা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আয়াতের অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত পানি এবং ঐ ঝর্ণা যা “ক্বদ জা’আলা রাব্বুকি তাহতাকি ছারিইইয়া” অর্থাৎ তােমার প্রভু তােমার পদতলে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন (সূরা মরিয়ম/১৯:২৪) আয়াতে আল্লাহতায়ালা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটা হল জেরুজালেম (ফিলিস্তিন) এর একটি স্থান। তবে এই আয়াতটি যেন ঐ আয়াতেরই তাফসীর। আর পবিত্র কুরআনের তাফসীর প্রথমত: কুরআন দ্বারা, তারপর হাদীস দ্বারা এবং এরপর আছার (বিশেষজ্ঞ সাহাবীদের তাফসীর) দ্বারা করা উচিত (তাফসিরে ইবনে কাসীর, সূরা মুমিনুল আয়াত নং ৫০ এর তাফসীর অংশ দ্রষ্টব্য) । উল্লেখ্য, জেরুজালেম প্রাচীন যুগের শাম বা দামেস্কের ভৌগােলিক সীমানারই অংশ বিশেষ।

  • একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) ‘রাবওয়া’ শব্দ হতে ফিলিস্তিনের “রামাল্লাহ” শহরকেই উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন। এইভাবে আরো দলিল প্রমাণ সহ জানতে ক্লিক করুন এখানে। ক্লিক

শেষকথা : পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে জায়গার নাম উল্লেখ না থাকায় বিশেষজ্ঞ যুগ ইমামগণের মাঝে ‘রাবওয়াহ’ বলতে জেরুজালেমের কোন স্থানকে বুঝানো উদ্দেশ্য তা নিয়ে মতানৈক্য হয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সবাই একমত যে, উল্লিখিত আশ্রয় লাভের ঘটনা হযরত ঈসার (আ.) ভুমিষ্টকালীন সময়েই ঘটেছিল এবং সেটি আরবের কোনাে এক স্থানেই। তবে সব চেয়ে নির্ভরযােগ্য বর্ণনামতে এমনকি ইবনে আব্বাস হতে অন্য আরেকটি সূত্রে সেই স্থানটি জেরুজালেমের (বর্তমান ফিলিস্তিন) রামাল্লা নামক স্থানই ছিল। রাসূল (সা.) হতে মারফূহ সূত্রে এটি প্রমাণিতও বটে। হাদীসটির স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।

সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীদের দাবী : উক্ত আয়াতে ঈসা (আ.) আর তাঁর মা মরিয়ম কাশ্মীরে আগমন করার কথাই বলা হয়েছে, এটি সর্বান্তকরণে মিথ্যা, অপব্যাখ্যা ও পবিত্র কুরআনের নিকৃষ্টতম বিকৃতির শামিল। কেননা তখন প্রশ্ন আসবে, তবে কি ঈসা (আ.) ভারতের কাশ্মীরেই ভূমিষ্ট হয়েছিলেন? আরাে প্রশ্ন আসবে, বিবি মরিয়ম তিনি ঈসা (আ.)-কে প্রসব করার জন্য আপনা বসতি থেকে প্রায় ৪৬৬০ কিলােমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর ভারতের কাশ্মীরে কিভাবে গেলেন আর কেনই বা যাবেন? ভাবিয়ে তুলে কিনা!

আশাকরি কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা কাদিয়ানীর ন্যায় একজন সিজোফ্রেনিয়া রুগীর যতসব উদ্ভট দর্শন নিয়ে শেষবারের মত ভেবে দেখবেন। মির্যা কাদিয়ানীর সিজোফ্রেনিয়া রোগ থাকা সম্পর্কে এখানে পড়ুন

  • সম্পূর্ণ লিখাটি আমার ফেইসবুক পেইজ থেকে পড়ুন!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ সম্পর্কে – পর্ব ২

অত্র বিষয়ে আর্টিকেল নং ১

অত্র বিষয়ে আর্টিকেল নং ৩

‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ এর সঠিক তাৎপর্য ও কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন :

সূরা আলে ইমরান এর যে আয়াতটির অপব্যাখ্যা দিয়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে চায় সেটির সঠিক তাৎপর্য নিয়ে আজকে ২ নং আর্টিকেল নিয়ে লিখতে বসছি। এই পর্যায় অত্র আর্টিকেলে যে কয়টি পয়েন্ট নিয়ে লিখব,

  • ১. আয়াতটির من قبله الرسل এর الرسل শব্দের অনুবাদ স্বয়ং কাদিয়ানীদেরই কোনো কোনো লিটারেচারে ‘বহু রাসূল‘ মর্মে গ্রহণ করা!
  • ২. আয়াতটির الرسل এর মর্মার্থে ‘শর্ত প্রযোজ্য‘-এর রীতি না মানলে যে সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং যে সমস্ত প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব হবেনা!

হেকিম নূরউদ্দিন এর বই থেকে :

আমরা মুসলিম উম্মাহা উক্ত আয়াতটির যেরূপ অর্থ গ্রহণ করে থাকি হুবহু সেই অর্থই গ্রহণ করেছেন কাদিয়ানী খলীফা হেকিম নূরুউদ্দীনও। তার উর্দূ গ্রন্থ থেকে বাংলায় অনুবাদটি এইরূপ, (অর্থ) ‘মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে।’ (কুরআন ০৩:১৪৪)। বলাবাহুল্য, হেকিম নূরউদ্দীন ‘আর-রসুল’ (الرسل) হতে ‘বহু রাসূল’ (بہت رسول) অর্থ নিয়েছেন। (দেখুন, ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা ২৮; রচনা ১৮৮৭-৮৮ইং দ্রষ্টব্য)। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, তিনিও আয়াতটির الرسل এর শুরুতে যুক্ত ال-কে ‘আহদে খারেজি’ হিসেবেই মনে করতেন। ফলে আয়াতটির الرسل এর অর্থে শর্ত প্রযোজ্য হবার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। স্ক্রিনশট :-

বইটি মির্যা কাদিয়ানীর তত্ত্বাবধানে লিখা :

এখানে বলে রাখতে চাই, হেকিম সাহেব বইটি জম্মুর মহারাজার রাজপুত্রকে চিকিৎসা দেয়ার উদ্দেশ্যে পুঞ্চে অবস্থানকালে খ্রিস্টানদের রদ করতে লিখেছিলেন। বইটি লিখার সময় তিনি সকল বিষয়ে মির্যা কাদিয়ানীর পরামর্শ চাইতেন। একথা লিখা আছে ‘হযরত মৌলভী নূরউদ্দীন (রা.) খলীফাতুল মসীহ আউয়াল’ নামীয় পুস্তকের ৭৪-৭৫ পৃষ্ঠায়।

ইস্তিগরাকি অর্থেও শর্ত প্রযোজ্য বিধানযোগ্য :

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাসহ তার বেশিরভাগ অনুসারী, قد خلت من قبله الرسل (তাঁর পূর্বে রাসূলগণই গত হইয়া গিয়াছেন) এর মধ্যকার الرسل -এর ال-কে ইস্তিগরাকি (ব্যাপক অন্তর্ভুক্তকারী) ধরে অর্থ করে থাকেন ‘সমস্ত রাসূল’ বা ‘সব রাসূল’। অথচ তাদের এই অনুবাদ নানা শক্তিশালী কারীনার বিরুদ্ধে যাওয়ায় সুস্পষ্ট ভুল।

পরন্তু তাদের এই ধরণের কনসেপ্ট উসূলে ফিকহ শাস্ত্রের স্বতসিদ্ধ উসূল তথা নিয়ম-নীতির পুরোপুরি বিরোধী। বরং তাদের নিয়ম-নীতি পরিপন্থী এই ধরনের উদ্দেশ্যমূলক অর্থ ও ব্যাখ্যা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে। এই সম্পর্কে একটু পরেই লিখা হবে, ইনশাআল্লাহ। তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, তাদের এই মনগড়া অর্থ হেকিম নূরউদ্দিনের উল্লিখিত অনুবাদ এমনকি একখানা উসূলেরও সম্পূর্ণ বিরোধী। তা এই যে,

হেকিম নূরউদ্দিন সাহেব কৃত ‘তাসদীকে বারাহীনে আহমদীয়া’ পুস্তকটির ১০৪ নং পৃষ্ঠায় চমৎকার একটি উসূল (নীতিমালা) উল্লেখ আছে এভাবে যে,

الف و لام اگرچہ عموم اور استغراق کے معنی بھی دیتا ہے مگر خصوصیت کے معنی بھی دیتا ہے- ہر دو معنی اپنے اپنے موقع پر لے جاتے ہیں

অর্থাৎ ‘আলিফ লাম যদিও আম এবং ইস্তিগরাকের অর্থও প্রদান করে কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য অর্থও প্রদান করে থাকে। উভয় অর্থ যথোপযুক্ত স্থানে গ্রহণ করা হবে।’ (তাসদীক বারাহীনে আহমদীয়া – ১০৪; অনলাইন এডিশন)। এখন তাহলে আপনাদেরই দাবী অনুসারে الرسل-এর আলিফ লাম ‘ইস্তিগরাকি’ হলেও সেখানে এখন শর্ত প্রযোজ্য এর বিধান প্রয়োগের সুযোগ থাকল না কিভাবে? স্ক্রিনশট –

মির্যা বশির উদ্দিন এর রচনা থেকে :

মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব তার পিতা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কথিত একখানা ইলহামের ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নরূপ, (উর্দূ)

آسمان سے کئ تخت اترے پر تيرا تخت (رسول ص پاک کے بعد) سب سے اوپر بچھایا گیا

অর্থাৎ ‘আকাশ থেকে কয়েকটি সিংহাসন নাযিল হয়েছে। কিন্তু তোমার সিংহাসনটি (রাসূলেপাকের পর) সবার উপরে পাতা হয়েছে।’ (আল-ফজল, তারিখ ১৯ই আগস্ট ১৯৬১ ইং রাবওয়া হতে প্রকাশিত)। 

মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ ‘সবার উপরে‘ শব্দটিতে ইস্তিগরাকের অর্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখানে ‘তাখছীছ’ এর বিধান প্রয়োগ করলেন কিভাবে যদি না শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম না থাকবে?

তিনি কিন্তু বিশেষভাবে একজনকে ‘সবার উপরে’ অর্থের ব্যাপকতার বাহিরে রেখেছেন। তিনি এর মধ্য দিয়ে যেন বুঝাতে চাইলেন, ইস্তিগরাকি অর্থেও শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম বিধানযোগ্য। এটি স্ক্রিনশট সহ ৩ নং আর্টিকেল থেকে দেখে নিন!

  • এবার আলোচনা করা হবে যে, আলিফ লাম-কে ইস্তিগরাকি ধরে অনুবাদ করার ফলে কাদিয়ানী সম্প্রদায় কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হবে?

কে জানি প্রশ্ন করেছিল যে, পুরো আয়াতখানা পড়ে দেখুন, শেষে উল্লেখ আছে, أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ এতে বোঝা যাচ্ছে, এখানে ‘খালাত’ অর্থ মৃত্যু বা হত্যা। এ দুই অর্থের সাথেই শব্দটি নির্দিষ্ট। উত্তরে বলতে চাই যে, এই আয়াতের قد خلت ফে’লকে প্রকৃত অর্থ থেকে বের করে রূপক অর্থে তথা ‘মৃত্যু’ অর্থে গ্রহণ করলে তখন শব্দটির নিজেস্ব গুণাগুণ তথা ইশতিরাক্ব (অর্থের দ্বৈততা) আর অবশিষ্ট থাকেনা। তাছাড়া আয়াতটির أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ এর মৃত্যু আর হত্যা উভয়টাই শুধুমাত্র রাসূল (সা.)-এর উদ্দেশ্যেই ছিল বলে ‘খাস’ এর হুকুমে নিহিত। যার ফলে এগুলোকে ‘আম’ অর্থে ধরে নতুন কোনো ব্যাখ্যার পিছু নেয়া সুস্পষ্ট দুষ্টুমি ও নীতিবিরুদ্ধ বৈ কিছুই না।

যে প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই :

১। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৪৪ এর من قبله الرسل এর الرسل এর মর্মার্থে শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম মেনে অর্থ ও ব্যাখ্যায় যাওয়া আবশ্যক। যেহেতু পবিত্র কুরআনের অপরাপর আয়াত সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে বহু রাসূল এখনো জীবিত। যেমন, সূরা নিসা আয়াত নং ৫৪, আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬, সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩, সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১০, সূরা যুখরুফ আয়াত নং ৬১ ইত্যাদি আয়াত সমূহের সুস্পষ্ট ইংগিত দ্বারা হযরত ঈসা রাসূলুল্লাহ (আ.) জীবিত প্রমাণিত। সূরা মরিয়াম আয়াত নং ১৯ দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আ.) রাসূল নামে আখ্যায়িত। সূরা হাজ্জ আয়াত নং ৭৫ দ্বারা আরও বহু ফেরেশতা রাসূল নামে আখ্যায়িত। এই সম্পর্কে আর্টিকেল নং ৩ দেখা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, قد خلت من قبله الرسل শীর্ষক আয়াতে ‘সমস্ত রাসূল’ গত হইয়া গিয়াছে বলে ‘সমস্ত রাসূল’-ই মৃত্যুবরণ করেছেন- এই উদ্দেশ্য হলে তখন কি উল্লিখিত রাসূলগণকেও মৃত বলা হল না? অথচ এদের সকলেই এখনো জীবিত!

২। সূরা মায়েদা আয়াত নং ৩ (حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ) “তোমাদের উপর মৃত, রক্ত এবং শুয়োরের মাংস হারাম করা হয়েছে”- দ্বারা সমস্ত ‘মৃত জন্তু’-এর মধ্যে মৃত মাছও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল কিনা? এখন কাদিয়ানীরা যদি এই সমস্ত ক্ষেত্রে হাদীসের বর্ণনাগুলোর আলোকে আয়াতের এই সমস্ত অর্থে শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম না মানেন তাহলে তাদের পক্ষে মৃত মাছ খাওয়াও বৈধ হয় কিভাবে? কেননা ‘সমস্ত মৃত’ বলতে ‘মৃত মাছ’-ও তার মধ্যে শামিল। এবার শর্ত প্রযোজ্য-এর নিয়ম লঙ্ঘন করে মৃত মাছ খাওয়া হালাল করুন! উল্লেখ্য, যারা মনে করেন যে, কুরআন দ্বারা যে কথা সাব্যস্ত হবে সেটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য হাদীসে যাওয়ার দরকার নেই, তারা এই জিজ্ঞাসার কী সমাধান দেবেন!

৩। সূরা আল ফাতির আয়াত নং ২৮ (إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ) “নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমগণই তাঁকে ভয় করে”- দ্বারাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তাঁকে প্রকৃতপক্ষে ভয় করেন আলেমগণই। কিন্তু আমরা সচরাচর দেখি যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় কথায় কথায় আলেম উলামাকে ‘আকাশের নিচে নিকৃষ্ট জীব’ বলে কটুক্তি করে থাকে। অথচ আয়াতটিতে আলেমদের সম্পর্কে আল্লাহতালার উক্ত প্রশংসা বাণী الْعُلَمَاءُ (আল-উলামা) বহুবচনাত্মক শব্দেই এসেছে। ফলে সমস্ত আলেমই উক্ত শব্দে শামিল হওয়াতে একজন আলেম সম্পর্কেও কটুক্তি করার কোনো সুযোগ থাকেনি কাদিয়ানীদের জন্য, যে পর্যন্ত না শর্ত প্রযোজ্যের নিয়ম তারা মানবে! এখন এর সুরাহা কিভাবে করবেন?

৪। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৮১ (سَنَکۡتُبُ مَا قَالُوۡا وَ قَتۡلَہُمُ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ) “অচিরেই আমি তারা যা বলেছে তা এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিষয় লিখে রাখব”- দ্বারাও বাহ্যত সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, বনী ইসরাঈলি সমস্ত নবী তাদের হাতে হত্যা হয়েছেন। কারণ আয়াতে শব্দটি বহুবচনে الْأَنبِيَاءَ (আন আম্বিয়া) এসেছে। এখন এক্ষেত্রেও শর্ত প্রযোজ্য নিয়ম না মানার অর্থই হল, ইয়াকুব, ইউসুফ, শু’আইব, আইয়ুব, মূসা এবং ঈসা (عليهم السلام) সহ সমস্ত ইসরাঈলী নবীকে হত্যা করা হয়েছিল বলেই বিশ্বাস করতে হবে। এখন এর কিভাবে সমাধান করবেন?

৫। সূরা আল-হুজুরাত আয়াত নং ১৩ (يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ) “হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি”- দ্বারাও বাহ্যত সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, সমস্ত মানুষের ন্যায় হযরত আদম, হাওয়া এবং ঈসাও একই নর এবং নারী হতে সৃষ্ট। আসলে কি তাই? নিশ্চয়ই না। বরং এখানে শর্ত প্রযোজ্য এর নিয়ম মেনে বিশ্বাস করতে হবে যে, এঁদের তিনজনই কুরআনের উক্ত ঘোষণার (مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ) তথা একজন নর এবং নারী থেকে সৃষ্টির প্রচলিত নিয়মের অন্তর্ভুক্তির বাহিরে। এখন কাদিয়ানীরা কি শর্ত প্রযোজ্য এর নিয়ম লঙ্ঘন করে এখানেও সমস্ত মানুষকে একই নর নারী থেকে সৃষ্ট বলবে?

৬। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৮৫ (كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ) অর্থাৎ ‘প্রতিটি নফসকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে’ দ্বারা সকল নফস বা সত্তা মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবেই। অথচ এখানেও ‘শর্ত প্রযোজ্য‘-এর নিয়ম বিধানযোগ্য। অন্যথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালাকেও মরণশীল বিশ্বাস করতে হয়, যেহেতু সূরা আল মায়েদার আয়াত নং ১১৬ (تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ)-এর মধ্যে আল্লাহ’র জন্যও ‘নফস‘ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এখন কাদিয়ানীরা কি আল্লাহকেও মরণশীল বলবে? নাউযুবিল্লাহ।

৭। তর্কের খাতিরে মানলাম যে, আয়াতটির الرسل হতে ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছে’ এ অর্থই সঠিক; এমতাবস্থায় আপনারা সূরা মায়েদার ৭৫ নং আয়াতের ‘الرسل’ হতেও কি ‘সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করেছে’—এমন অর্থ নেবেন? যদি এমন অর্থ নেন তখন কি মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়ত ও রেসালতেরও অস্বীকার করা হল না? কেননা যদি বলা হয় যে, মসীহ ইবনে মরিয়মের পূর্বেই সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করিয়াছেন, তখন মসীহ (আ:)-এর পর আগমনকারী মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-কে আপনারা একজন রাসূল হিসেবে কিভাবে স্বীকার করলেন?

বলে রাখা দরকার যে, আয়াতটির মধ্যে قبل শব্দটি মুদাফ (مضاف)। আর ব্যাকরণের একটি নিয়ম হল, মুদাফ-এর অর্থ নেয়ার ক্ষেত্রে ‘র’ কিংবা ‘এর’ ধরণের ষষ্ঠী বিভক্তি উল্লেখ থাকতে পারবেনা। কাজেই কাদিয়ানী নেতা জনাব আব্দুল আউয়াল সাহেব কর্তৃক গৃহীত অনুবাদ – তাঁর পূর্বেকার সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে‘ – ব্যাকরণ বিরুদ্ধ ও পরিত্যাজ্য। অথচ এক্ষেত্রে ব্যাকরণসিদ্ধ অনুবাদ হল – তাঁর পূর্বে। শব্দের শেষাংশে ‘র’ বিভক্তি থাকবেনা। যেমন, يد الله على الجماعة ; فوق كل ذى علم عليم ; رسول الله اسوتنا ; এখানে যথাক্রমে يد; فوق এবং رسول শব্দগুলো নিজ নিজ বাক্যে মুদাফ (مضاف) হওয়ায় অনুবাদের ক্ষেত্রে এগুলোতে “” বা “এর” ধরণের ষষ্ঠী বিভক্তি উল্লেখ ছাড়া অনুবাদ হবে এভাবে – আল্লাহর সাহায্য জামাতের উপর; প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী আছে; আল্লাহর রাসূল আমাদের আদর্শ। অনুরূপ من قبله الرسل এর من قبله -তে অনুবাদ করতে হবে ‘তার পূর্বে‘। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

ঈসা (আ.) জীবিত ও ইজমা প্রতিষ্ঠা :

উক্ত আয়াত দ্বারা ঈসা (আ:) বেঁচে নেই, মৃত্যুবরণ করিয়াছেন মর্মে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে, এমন ধারণা যাদের, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক বরেণ্য স্কলার ও যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ঈসা (আ.)-এর সশরীরে আকাশে জীবিত থাকা মর্মে (انه رفعه بدنه حيا) ‘আন্নাহু রাফা’আহু বি-বাদানিহি হাইয়ান’ অর্থাৎ আল্লাহতালা নিশ্চয়ই তাঁকে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন, কেন লিখে গেলেন? (রেফারেন্স, ইবনে হাজার রচিত ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক, খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৬২)। তেমনিভাবে শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) তিনিও বা কেন লিখলেন যে (واجمعت الامة على ان الله عز و جل رفع عيسى اليه الى السماء) ‘ওয়াজমা’আতুল উম্মাতু আ’লা আন্নাল্লাহা আ’জ্জা ওয়া জাল্লা রাফা’আ ঈসা ইলাইহি ইলাস-সামায়ি’ অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীয়া এইমর্মে সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহতালা ঈসা (আ:)-কে নিজের নিকট আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন? (রেফারেন্স, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যা’ ৪/৪৫৭)। কিতাবটি ডাউনলোড করুন

এরা দুইজনও স্বীকৃত মুজাদ্দিদ :

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী আর শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ তারা দুইজনই মির্যা কাদিয়ানীর নিকটেও মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। (দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীর শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ [উর্দূ] খন্ড ১ পৃষ্ঠা নং ১৪২-৪৫; প্রথমপ্রকাশ ১৯০১ইং, কাদিয়ান থেকে)। স্ক্রিনশট –

মুজাদ্দিদ সম্পর্কে মির্যার দৃষ্টিভঙ্গি :

মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন, মুজাদ্দিদগণ দ্বীনের মধ্যে কোনোরূপ বেশকম করেননা বরং হারানো দ্বীন পুন: প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪) স্ক্রিনশট দেখুন। এখন এর সুরাহা কিভাবে করবেন?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ওয়াহদাতুল উজূদ এর সঠিক ব্যাখ্যা

ওয়াহদাতুল উজূদ (وحدةالوجود) এর ব্যাখ্যা কী? ওয়াহদাতুল উজূদের আক্বীদা কি সঠিক?

ওয়াহদাতুল উজূদের দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। যার একটি সঠিক অপরটি ভুল।

প্রথম ব্যাখ্যাটি হলো : আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাঁর সামনে পুরো জগতের অস্তিত্ব এতটাই অসম্পূর্ণ, যেনো তা অস্তিত্বহীন। যেমন বলা হয় অমুক বড় আলেমের সামনে অমুক সাধারণ ব্যক্তি তো কিছুই না। সূর্যের সামনে মোমবাতির আলো অস্তিত্বহীন। অথবা যেমন বলা হয় সমুদ্রের বিশাল অস্তিত্বের সামনে তার মাঝে বিদ্যমান ক্ষুদ্রাকৃতির ফেনাগুলোর যেনো কোনো অস্তিত্বই নেই।

ঠিক আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বের সামনে পুরো জগতকে সুফিয়ায়ে কেরাম তেমনই অস্তিত্বহীন ভাবেন। এর অর্থ এই নয় যে, কোনো জিনিসের অস্তিত্বই নেই। বরং এর অর্থ হলো, আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যদের অস্তিত্ব আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টির দ্বারা সৃষ্ট। স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

ওয়াহদাতুল উজূদের এ ব্যাখ্যাটি সঠিক। এটাই সুফিয়ায়ে কেরাম ও দেওবন্দীদের আক্বীদা।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হল : ওয়াহদাতুল উজূদের দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাখ্যা এমন করা হয় যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো কোনো ধরণের অস্তিত্বই নেই। সব কিছুর মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা হুলূল করে আছেন। যেটা হিন্দুদের সর্বেশ্বরবাদের বিশ্বাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ওয়াহদাতুল উজূদের এ দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি ভুল। শুধু ভুল নয় বরং এ আক্বীদা কোনো মুসলিম পোষণ করতে পারেন না।

দুঃখের বিষয় হলো, কিছু ভাইয়েরা ওয়াহদাতুল উজূদের এই ভুল ব্যাখ্যাটি দিয়ে সুফিয়ায়ে কেরাম এবং ওলামায়ে দেওবন্দের উপর অপবাদ দিয়ে থাকে। যা তাদের মূর্খতা ও অজ্ঞতার প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।

লিখক, মুফতী শফী কাসেমী

মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর নামে কাদিয়ানীদের মিথ্যাচারের জবাব

0
  • মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর নামে কাদিয়ানীদের মিথ্যাচারের জবাব

প্রশ্ন : ইমামে রাব্বানী সাইয়িদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) এর কিতাবে কি লেখা আছে যে, শেষ যুগে আলেমগণ ইমাম মাহদীকে গ্রহণ করতে চাইবেনা?

জবাব : আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, কাদিয়ানীরা ইমামে রাব্বানী সাইয়িদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ)-এর প্রতি নিজেদের কথাকেই তাঁর কথা বলে চালিয়ে দেয় মূলত মির্যা কাদিয়ানীর “ইমাম মাহদী” দাবীকে হালাল করার জন্য। নিচে মুজাদ্দিদে আলফে সানী’র খণ্ডিত বক্তব্যের উপর তাদের অতিব খেয়ানতপূর্ণ মন্তব্যের খন্ডন করা হল!

প্রিয়পাঠক! প্রথমে মুজাদ্দিদ সাহেবের নাম ভেঙ্গে প্রচারিত কাদিয়ানীদের লেখাটি পড়ুন। জনৈক কাদিয়ানী মতাবলম্বী লিখেছেন :

“হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-কে আরব অঞ্চলের (নামধারী) উলামাগণ গ্রহণ করেন না কেন? বার’শ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ হযরত শায়খ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) লিখেছেন: “বর্ণিত আছে, হযরত মাহদী রাযিআল্লাহু আনহু তাঁর রাজত্ব কালে যখন ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং সুন্নতকে সঞ্জীবিত করবেন, তখন মদীনার আলেম যে কি-না বেদাতের উপর আমল করা নিজ অভ্যাসে পরিণত করেছে এবং এটি (বেদাত)-কে ধর্মের অংশ বানিয়েছে, আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলবে, এই ব্যক্তি আমাদের ধর্মকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আর আমাদের ধর্ম ও মিল্লাতকে হত্যা এবং বিনষ্ট করেছে।” (মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী, মাকতুবাত নং-২৫৬, উর্দূ তরজমা, ২য় খণ্ড)।

(উক্ত কাদিয়ানী উম্মত তিনি মুজাদ্দিদ সাহেবের খন্ডিত বক্তব্যের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে তারপর লিখেছেন) অর্থাৎ আরব অঞ্চলের ‘নামধারী আলেমগণ’ ইমাম মাহদীর বিরোধীতা করবে তা বুযুর্গানে দ্বীন জানতেন। আর আজ তাই ঘটছে।” (কাদিয়ানিদের লেখাটি শেষ হল)।

  • এবার খন্ডনমূলক আলোচনা :

হিজরী দশম শতাব্দীর বরেণ্য মুজাদ্দিদ ইমামে রাব্বানী সাইয়েদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) এর সম্পূর্ণ বক্তব্য সামনে রাখলে আপনি একজন নিরপেক্ষ পাঠক হিসেবে বুঝতে পারবেন যে, মির্যা কাদিয়ানী আর তার অন্ধভক্তরা কিভাবে সাতপাঁচ ব্যাখ্যা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকেন! কিভাবে তারা সম্পূর্ণ বক্তব্যের আগপাছ বাদ দিয়ে খন্ডিত বক্তব্য দ্বারা অশিক্ষিত ও সহজ সরল আহমদীদের বোকা বানিয়ে যাচ্ছেন!!
এবার ইমামে রাব্বানীর লেখা থেকে যেসব বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে তা নিচে দেখানো হল-

(১) ইমামে রাব্বানীর বক্তব্য দ্বারা পরিষ্কার হচ্ছে যে, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী শাসক হবেন। কারণ ইমামে রব্বানি (রহঃ) তার বক্তব্যে “সুলতানত” শব্দ উল্লেখ করেছেন। অভিধান দেখুন, সুলতানত অর্থ বাদশাহি।

(২) ইমামে রাব্বানী (রহঃ) এর বক্তব্যের ভেতর তিনি ইমাম মাহদীর নামের শেষে “রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু” শব্দ উল্লেখ করেছেন। এতে বুঝা গেল, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী যিনি হবেন তিনি স্রেফ একজন মুজাদ্দিদ হবেন কিন্তু নবুওত পেয়ে “নবী” হবেন না। কারণ নবুওয়তপ্রাপ্ত যারা তাদের নামের শেষে “রাদ্বিয়াল্লাহু” হয় না।

(৩) হযরত ইমামে রাব্বানী (রহঃ) এর সাথে মদীনার কতিপয় বিদয়াতী আলেমের সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব হতে পারে “বিদয়াত” বিষয় নিয়ে। আর এমনটি হওয়া-ই স্বাভাবিক। এখনো বহু আলেম নানাভাবে বিদয়াতে লিপ্ত। যা আজ কারো অজানা নয়। কেয়ামতের শেষ সময় এই ধারা হয়ত আরো প্রকট আকার ধারণ করার দিকে তিনি ইংগিত করতে চেয়েছিলেন।

(৪) ইমামে রাব্বানী (রহঃ) তার একই পৃষ্ঠার একই বক্তব্যের তৃতীয় লাইনের শেষের দিকে এটাও লিখেছেন “হযরত ইমাম মাহদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নে উস আলেম কো ক্বতল করনে কা হুকুম ফরমায়ে গে।” অর্থাৎ ইমাম মাহদী তখন ওই [মদীনার বিদয়াতি] আলেমকে হত্যার নির্দেশ দেবেন।” এতে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, সে সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকবে ইমাম মাহদীর হাতে। তাই দেশের কাউকে তখন হত্যার নির্দেশ দেয়ার অধিকার তাঁর থাকবে। লিখাটির সংশ্লিষ্ট স্ক্রিনশট নিচে দেখুন

মাকতুবাত, ৪র্থ খন্ড দপ্তরে আউয়াল (উর্দু) পৃষ্ঠা ৫৮৭; মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃ
  • এবার আসুন, মির্যা কাদিয়ানির সাথে উপরের ৪টি বিষয় কিভাবে মিলাবেন?

মির্যা সাহেব কি নবুওয়তের দাবি করেননি? করেছেন। নামের শেষে কি “আলাইহিস সালাম” লিখত না? অবশ্যই লিখত। তাহলে বুঝা গেল কী? ইমামে রাব্বানীর বক্তব্যে যার চরিত্রের উল্লেখ আছে তিনি-ই যদি আজকের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব হন তাহলে তার নামের শেষে “রাদ্বিয়াল্লাহু” কোথায়? নাকি ইমামে রাব্বানী ভুল করে গেছেন? যদি ভুল করেন তাহলে উনার নাম ভেঙ্গে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য কী? তাদের এধরণের ফাজলামি কে শিখাল? সাধারণ মানুষকে কাদিয়ানী বানানোর অপচেষ্টা নয় তো?

মির্যা সাহেব কি নির্দিষ্ট কোনো ভুখন্ডের শাসক ছিলেন? অবশ্য না। যেজন্য ধূর্ত মির্যা আজীবন নিজেকে দুনিয়ার বাদশাহ এর স্থলে “আসমানি বাদশাহ” হবার বুলি আওড়াতেন। কেননা কথিত আসমানি বাদশাহ হতে নির্দিষ্ট ভুখন্ড লাগেনা। যেমন বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের “জ্বীনের বাদশাহ” দাবী করে মানুষকে প্রতারিত করছে।

মির্যায়ীরা সব কিছুতে রূপক খোঁজে। তাই তারা মির্যাকে প্রকৃত অর্থে শাসক না বলে বরং রূপকার্থে শাসক মানতে চায়। তা হল, আসমানি শাসক। কেননা তারা জানে যে, রূপক অর্থের আশ্রয় না নিলে মির্যার ভাঁওতাবাজিও ধোপে টিকেনা।

যাইহোক মির্যা সাহেবের সাথে মদীনার আলেমগণসহ সারা দুনিয়ার ইসলামি স্কলার ও মুফতী মাশায়েখদের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিশেষত তার নবুওয়ত দাবীর কারণেই। পক্ষান্তরে ইমামে রাব্বানী (রহঃ) লিখে গেছেন ভিন্ন কথা। অর্থাৎ দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হতে পারে ‘বিদয়াত বা কুসংস্কার বিষয়াবলী’ নিয়ে। তাহলে…?

মির্যা সাহেবকে ইমামে রাব্বানী (রহঃ)-এর উপরিউক্ত বক্তব্যের চরিত্রের সাথে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন যেখানে মির্যা সাহেব না নির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের শাসক ছিলেন, না শাসনকর্তা হিসেবে মদীনার কোনো বিদয়াতি আলেমকে হত্যার হুকুম দিতে পেরেছেন? বিপরীতে মির্যাকেই সবাই হত্যার ফতুয়া দিয়ে রেখেছেন।

ইতিহাস সাক্ষী, মির্যার বংশটাই ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন করার জন্য। মির্যা সাহেবের লেখিত বই পুস্তক খুলে দেখুন। তিনি ব্রিটিশের কেমন সেবাদাস ছিলেন তা বুঝে আসবে। খোদার প্রেরিত কোনো পয়গম্বর কি কোনো বিধর্মী দখলদার জালিম শাহীর গোলামী করতে পারে?

এর কোনো জবাব আহমদীদের নিকট নেই। শুধু এটুকু স্বীকার করা ছাড়া যে, মূলত ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) এর বক্তব্যের সাথে ভারতীয় ভন্ড মাহদী মির্যা কাদিয়ানীর ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। ইনিয়েবিনিয়ে এবং জোড়াতালি দিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যাই হল তাদের শেষরক্ষা।

আল্লাহতালা এসব অর্ধ শিক্ষিত ও বিবেকহীন কাদিয়ানিদের সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন। ওয়াসসালাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আনুগত্যরূপে মির্যার নবুওয়ত লাভের দাবী ও চারটি প্রশ্ন

0

আমি কেন “কাদিয়ানী জামাত” ত্যাগ করলাম?

(লিখাটি একজন সাবেক কাদিয়ানীর (যিনি এক সময় ঢাকা মিরপুর ৬ নং সেক্টরে কাদিয়ানী জামাতের প্রেসিডেন্ট পদাধিকারীও ছিলেন), নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এই নও মুসলিম এ সমস্ত প্রশ্নের কোনো জবাব না পেয়ে পরবর্তিতে কাদিয়ানী ত্যাগ করেন)।

কাদিয়ানিদের একটি পুস্তক ‘এক গলতি কা ইযালা‘। পুস্তকটিতে (বাংলা এডিশন, পৃষ্ঠা ৫, অনুবাদ মৌলভী মোহাম্মদ) মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন-

“নবুওয়তের সকল পথ রুদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু একটি পথ সীরাতে সিদ্দিকীর (সিদ্দিকীয়তের রাস্তা) খোলা আছে, যাকে ফানাফির রাসূল বলে। সুতরাং এ পথ দিয়ে যে ব্যক্তি খোদার নিকটবর্তী হয়, তাকে প্রতিচ্ছায়ারূপে মুহাম্মদী নবুওতের বসনেই ভূষিত করা হয়”। স্কিনশট দ্রষ্টব্য।

মির্যার উর্দু বইয়ের বাংলা অনূদিত ‘একটি ভুল সংশোধন‘ পৃষ্ঠা ৫
  • এবার নিচের প্রশ্নগুলো খেয়াল করুন-

(১) ‘একটি ভুল সংশোধন’ বইয়ের কথাটি দ্বারা তিনি যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, যখন নবুওয়তের সকল পথ রুদ্ধ তখন কীভাবে বুরূজী নবীও হওয়া যায়? এখন প্রশ্ন হলো তাহলে বর্তমানকালে তার অনুসারীরা কেন সূরা নিসার ৬৯ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন (নবী সিদ্দিক শহীদ সালেহ)? মির্যা সাহেব কি সূরা নিসা’র এই আয়াত তার নবুওয়ত বিষয়ক এ বইটিতে উল্লেখ করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে কেন এই আয়াত এখন তার অনুসারীরা উল্লেখ করেন? আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সূরা নিসার ৬৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় কোথাও কি বলে গেছেন আরো হাজার হাজার নবী আসবেন?

(২) দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে আমরা জানি তিনি সিদ্দিক ছিলেন। এটা তার টাইটেল। যদি প্রকৃতপক্ষে কেউ ফানাফির রাসূল হয় তাহলে তো তিনিই হওয়ার কথা। যিনি তাঁর জীবনের সব কিছু ত্যাগ করলেন তিনি কি সিদ্দিকীয়তের রাস্তা দিয়ে খোদার নিকটবর্তী হননি? হয়ে থাকলে তিনি নবুওয়তের বসনে ভূষিত হননি কেন?

(৩) মির্যা সাহেব বলেছেন উম্মতে মুহাম্মদীয়া সৌভাগ্যবান হতে পারেন না, যদি নবুওয়ত জারি না থাকে। কারণ মূসা নবীর শরীয়তের অধীনে অনেক নবী এসেছেন তাহলে আমাদের নবীর অধীনে এ নেয়ামত বঞ্চিত থাকবে কেন (সূরা ফাতেহার ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম, সিরাতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম -এর ব্যাখ্যায়)? যদি নেয়ামতের শর্ত নিয়ে আসা হয় তাহলে এখন প্রশ্ন হল, নবীজির পর দীর্ঘ আরো ১৪০০ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হলো কেন?

নেয়ামতের হিসাব করলে তো একের পর এক নবী আসা উচিত। আমরা কেন ১৪০০ বছর ধরে এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকলাম?

(৪) মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ১৮৭৯ – ‘৮০ সালের দিকে যদি নবী হয়ে থাকেন তাহলে ১৮৮১ – ‘৮২ তে আবার মুজাদ্দিদ হন কীভাবে? যাদের ভেবে দেখার প্রয়োজন তারা ভেবে দেখবেন!

লিখক, এক্স কাদিয়ানী টেক্সাস, ইউ.এস থেকে

কাদিয়ানিরা কি এ পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দেয়ার সাহস রাখে?

0

কাদিয়ানীদের নিকট পাঁচটি প্রশ্ন :

প্রশ্ন ১. ঈসা আলাইহিসসলামের ‘রাফা’ কোন ফেরেশতার মাধ্যমে হয়েছিল? (ক) আজরাইল? (খ) জিবরাইল?

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর ‘রাফা’ হযরত জিবরাইল (আ:)-এর মাধ্যমেই হয়েছিল। পবিত্র কুরআনের ০৩:৫৫ আয়াতের পটভূমিও আমাদের ডেকে ডেকে বলছে, ঈসা (আ:)-এর উক্ত ‘রাফা’ সেই সময় হয়েছিল যখন ইহুদী সন্ত্রাসীরা হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে ঈসার বাড়ীর আশেপাশে সমবেত হয়েছিল। এ সম্পর্কে হাদীসটি অনুবাদসহ এই, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, لما اجتمع اليهود على عيسى عليه السلام ليقتلوه و أتاه جبرائيل … فاَوْحَى اللهُ الى جبرائيلَ اَنِ ارْفَعْ اِلَيَ عَبْدِيْ অর্থাৎ যখন ইহুদীরা ঈসা (আ:)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিল তখন জিবরাইল (আ:) তাঁর নিকট আগমন করেন….. আল্লাহতায়ালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা [ঈসা]-কে আমার নিকট উঠিয়ে নিয়ে এসো। (রেফারেন্স, তারীখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৭২; তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯)।

প্রশ্ন ২. ঈসা আলাইহিসসালামের ‘রাফা‘ কখন হয়েছিল? (ক) ক্রুশীয় ষড়যন্ত্রের ৮৭ বছর পর (খ) ক্রুশীয় ষড়যন্ত্র চলা মুহূর্তে।

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর ‘রাফা’ তথা উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা ক্রুশীয় ঘটনা চলা মুহূর্তেই জেরুজালেমেই ঘটেছিল। কেননা বিশিষ্ট যুগ ইমাম আল্লামা জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ:) সংকলিত ‘দুররে মানছূর’ কিতাবে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে, ورفع وهو ابن أربع وثلاثين سنة من ميلاده অর্থাৎ ঈসাকে উঠিয়ে নেয়া হয় যখন তিনি ৩৪ বছর বয়সী যুবক।

প্রশ্ন ৩. ক্রুশীয় ষড়যন্ত্র হয়েছিল ঈসা আলাইহিসসালামের…..! (ক) পৌঢ়কালে (খ) যৌবনকালে।

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর বিরুদ্ধে ঈহুদী সন্ত্রাসী কর্তৃক হত্যার সেই ষড়যন্ত্র তাঁর যৌবনকালেই জেরুজালেমে ঘটেছিল, প্রৌঢ়কালে নয়। কেননা, প্রৌঢ়কাল বলতে ৩৪ হতে ৫১ বছরের মাঝামাঝি বয়সী ব্যক্তিকে বুঝায় (লিসানুল আরব) । কিন্তু ঈসা (আ:) সেই সময় উক্ত বয়সে পৌঁছেননি।

প্রশ্ন ৪. ঈসা আলাইহিসসালামের বিরুদ্ধে ‘হত্যা’-র ষড়যন্ত্র এবং তাঁর ‘রাফা’ উভয়ই হয়েছিল…..! (ক) হিন্দুস্তানে। (খ) ফিলিস্তিনে।

নোট : মুসলমানদের বিশ্বাস, ঈসা (আ:)-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং রাফা তথা উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা উভয়ই ঘটেছিল ফিলিস্তিনে। এটি একটি মুতাওয়াতির বিষয় যা নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই ।

প্রশ্ন ৫. আরবী মা/ما (না-বােধক) বর্ণযুক্ত বাক্যের পর খ্রিস্টানদের রদ করতে যেখানে-ই বাল’ (بل) শব্দটি ব্যবহার হয়েছে সেখানে-ই দেখা যায়…! (ক) ‘বাল’ (بل) শব্দের পূর্বের বাক্যের কর্ম আর পরের বাক্যের কর্ম একইকালে সংঘটিত হয়নি। (খ) ‘বাল’ (بل) শব্দের পূর্বের বাক্যের কর্ম আর পরের বাক্যের কর্ম একইকালে সংঘটিত হয়েছে।

নোট : জ্বী হ্যাঁ, এটি সর্বজন স্বীকৃত একটি আরবী ব্যাকরণগত নিয়ম যে, ‘বাল’ (بل) শব্দের পূর্বের বাক্যের কর্ম আর পরের বাক্যের কর্ম একইকালে সংঘটিত হয়ে থাকবে। কাজেই এই কথা বিশ্বাসকরা ঠিক হবেনা যে, ঈসা (আ:)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র ফিলিস্তিনে (বায়তুল মুকাদ্দাস) হলেও তাঁর রাফা’র (কাদিয়ানীদের মতে আয়াতটির ওই রাফা—র অর্থ ঈসার মৃত্যুর পর তাঁর রূহ উঠিয়ে নেয়া) ঘটনা একইকালে ঘটেনি বরং আরো ৮৭ বছর পর কাশ্মীরের শ্রীনগরে ঘটেছিল। (নাউযুবিল্লাহ)।

আরো পড়ুন : ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?

  • কাদিয়ানীদের কাছ থেকে এই ৫টি প্রশ্নের উত্তর দলিল-প্রমাণ সহ পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম!

মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে কুরআনের ন্যায় বলে দাবী!

0

মির্যা কাদিয়ানীর আরো বহু দাবী দাওয়া রয়েছে। তার দাবীগুলোর সামান্য কিছু দেখতে ক্লিক করুন।

আসলে মির্যা কাদিয়ানীর মত এমন একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগী থেকে এর চেয়ে বেশি আর কী আশা করা যায়! পবিত্র কুরআন নিয়েও বুঝি মির্যা কাদিয়ানীর তামাশা করার বাকি ছিল?

এই যে, দেখুন সে কী লিখল : –

(উর্দু উচ্চারণ) : “মাই তো বস কুরআন হি কি তরেহ হোঁ, আওর আনক্বরিব মেয়েরে হাত পর জাহের হোগা যু কুচ্ছ ফোরকান চে জাহের হুয়া”।

তাযকিরাহ (উর্দূ) চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫৭০

বাংলা অনুবাদ : (মির্যার কথিত ইলহাম) আমি তো কুরআনের মতই। আর অচিরেই ফোরকান (কুরআন) হতে যাই প্রকাশিত হয়েছে তাই আমার কাছ থেকেও প্রকাশিত হবে।

রেফারেন্স : তাযকিরাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং ৫৭০; চতুর্থ এডিশন।

কাজেই কাদিয়ানীরা যখন আমাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ করে যে, কুরআন থেকে প্রমাণ দিন ঈসা (আ:) আকাশে স্বশরীরে জীবিত আছে, তখন যদি তাদেরকে মির্যা কাদিয়ানীর বই “বারাহীনে আহমদীয়া” থেকে তাদের উক্ত চ্যালেঞ্জ এর জবাব দিই তাহলে কি আমাদের ভুল হবে? যেহেতু মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ওহী বা ইলহাম হল, সে নিজেই একটি কুরআন বা কুরআনের মত!! হয়ত জান ছুটাতে এখানেও রূপকের কাসুন্দি নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন! কাদিয়ানিরা এর কী জবাব দেবেন?

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানী নেতারা যে সব বুলির অন্তরালে সাধারণ কাদিয়ানীদের চোখের ও মনের উপর পর্দা ফেলে রাখে

0

সাধারণ কাদিয়ানীদের জন্য এই লিখাটি পড়া খুবই জুরুরী :

  • কাদিয়ানী নেতারা যে কয়টি কথা দিয়েই সাধারণ কাদিয়ানীদের ভুলিয়ে রাখে এবং নিজেরাও অহংকারে বাঁচেনা এখানে তারই কিছু কথা তুলে ধরে জবাব দেয়া হল। মূলত তারা এই কয়টি কথা দিয়েই তাদের চোখের ও মনের উপর পর্দা ফেলে রাখে। যেকেউ-ই উত্তরগুলো নিয়ে ভাবলে তার জন্য তাদের মিথ্যা আর ধোকা থেকে বাঁচতে সহজ হবে, ইনশা-আল্লাহ।

১. মোল্লা মৌলভীর পক্ষে সম্ভব না মির্যা কাদিয়ানীর কথার মর্ম বুঝা! মির্যা সাহেব এর আধ্যাত্মিক কথাবার্তার মর্ম বুঝতে হলে হৃদয় ও মন দুইটাই পবিত্র হতে হবে।

আমার বক্তব্য : নাউযুবিল্লাহিমিন যালিক। যারা এই ধরণের কথা বলেন তারা মির্যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) থেকেও বড় বুঝাতে চাচ্ছেন! নতুবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার মর্ম বুঝা সহজ হওয়া সত্ত্বেও মির্যা কাদিয়ানীর কথার মর্ম বুঝা কেন কঠিন হবে? সুতরাং শীঘ্র তাওবা করুন।

২. মির্যা সাহেব হাদীসের ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে প্রতিশ্রুত “মসীহ মাওউদ” হিসেবে আগমন করেছেন। তাই অন্যরা ভুল করলেও মির্যা সাহেব ভুল করতে পারেন না। কেননা রাসূল (সা:) মসীহে মাওউদ সম্পর্কে “হাকামান আদালান” অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হবেন, বলে গেছেন। সুতরাং অন্যদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উপর মির্যা সাহেবের ব্যাখ্যাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

আমার বক্তব্য : প্রথমে তো প্রমাণ করা চাই যে, মির্যা সাহেবই হাদীসে বর্ণিত সেই প্রতিশ্রুত মসীহ মাওঊদ কিনা? কারণ, বুখারী শরীফের “কিতাবুল আম্বিয়া” পর্বে ৩২৬৪ নং হাদীসে এসেছে, والذي نفسى بيده ليوشكن ان ينزل ابن مريم فيكم حكما عدلا অর্থাৎ “কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই মরিয়ম পুত্র (ঈসা) তোমাদের মাঝে একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে অবশ্যই নাযিল হবেন।” এখানে মোটা দাগে কয়েকটি পয়েন্ট লক্ষণীয়। (১) আগমনকারী ব্যক্তিটি মরিয়মপুত্র হযরত ঈসা (আ:)-ই হবেন, এইকথা কসম বা শপথ করে বলা (২) নাযিল হওয়া (৩) ইবনে মরিয়ম হওয়া এবং (৪) ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রপ্রশাসক হওয়া। যেহেতু তিনি রাষ্ট্রীয় কর মওকুফ করবেন। বলাবাহুল্য, রাষ্ট্রীয় কর (টেক্স) মওকুফ করতে পারে শুধুমাত্র যিনি রাষ্ট্র প্রধান তিনিই। তাই প্রশ্ন আসবে, এসবের একটিও কি মির্যা গোলাম আহমদের সাথে মিল পাওয়া যায়? চিন্তা করে দেখুন তো! এখানে বলে রাখা দরকার, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই কিন্তু লিখে গেছেন, কসম খেয়ে কোনো কথা বললে তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হয়না, বরং আক্ষরিক অর্থে-ই বহাল থাকে। (হামামাতুল বুশরা উর্দূ- পৃষ্ঠা ১৪; রূহানী খাযায়েন ৭/১৯২)। এমতাবস্থায় “ইবনে মরিয়ম” দ্বারা ইবনে চেরাগবিবি মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে উদ্দেশ্য হয়?

৩. সত্যের বিরোধীতা আগেও ছিল এখনো হচ্ছে আগামীতেও হবে। সুতরাং অন্য ফেরকার মুসলমান কর্তৃক কাদিয়ানীদের বিরোধীতা হওয়াই স্বাভাবিক। আর এটি তাদের সত্য হওয়ারই দলিল!

আমার বক্তব্য : অন্ততপক্ষে সহীহ বুখারীর মানদণ্ডে-ও মির্যা কাদিয়ানীর মসীহ হবার দাবী যেখানে মিথ্যা সাব্যস্ত হল সেখানে তাকে (মির্যা) “মিথ্যুক” প্রমাণ করার আর কী বাকি? পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১৫৯ নং আয়াতে ঈসা (আ:) এর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈমান আনা প্রসঙ্গে ক্ববলা মওতিহি অর্থাৎ ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুর পূর্বে… শব্দ উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ঈসা (আ:)-কে মির্যা কাদিয়ানী মৃত বলে চেঁচামেচি করার কে? বর্তমানে কি আহলে কিতাবিদের সবাই ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেছে বলতে চান? অন্যথা আমরা মহান আল্লাহকে ছেড়ে মির্যাকে কিরূপে সত্যবাদী মেনে নিতে পারি? উল্লেখ্য, অন্য আরেকটি মতে “মওতিহি” এর একবচনের সর্বনামপদ দ্বারা ‘আহলে কিতাবী’-কে বুঝানো উদ্দেশ্য। কিন্তু এটি সর্বসম্মত মতের বিরোধী ও বিচ্ছিন্ন একখানা মত মাত্র। সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া অংশে হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে ثم يقول ابو هريرة واقرأو ان شئتم শীর্ষক হাদীস দ্বারাও পরিষ্কার বুঝা যায় যে, আয়াতটির ‘মওতিহি’ শব্দ দ্বারা ‘ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুর পূর্বে’ বুঝানোই উদ্দেশ্য। সংক্ষেপে।

৪. হাদীসে এসেছে উম্মতে মুহাম্মদীয়া ৭৩ ফেরকা হবে। এদের ৭২ ফেরকা দোজখে যাবে আর ১টি মাত্র ফেরকা বেহেশতি। সুতরাং ৭২ ফেরকার লোকেরা এই ১টি ফেরকাকে অর্থাৎ “আহমদীয়ত”কে কুফুরী জামাত বলবে এটাই স্বাভাবিক।

আমার বক্তব্য : কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী নিজেই ‘জামাতে আহমদীয়া’ নামের নতুন এই দলটিকে তার বইয়ের এক জায়গায় উম্মতে মুহাম্মদীয়া’র ৭৩ ফেরকার বহির্ভূত সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি গোষ্ঠী বলেই সুস্পষ্ট ইংগিত দিয়ে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন : تمہارے ہاتھ میں کیا ہے؟ بجز ان حدیثوں کے جو تہتر فرقوں نے بوٹی بوٹی کرکے باہم تقسیم کر رکہی ہیں ۔ অর্থাৎ তোমাদের হাতে সেসব হাদীস ছাড়া আর কিবা আছে যেগুলো ৭৩ ফেরকার লোকেরা টুকরো টুকরো করে ভাগ ভাটোয়ারা করে রেখেছে! (রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ৪৫৬)। তাছাড়া “পাক্ষিক আহমদী” নামের সাময়িকীতেও মির্যার সেই কথারই প্রতিধ্বনি হিসেবে লিখা হয়েছে যে “এই যে তেয়াত্তর দল এই তেয়াত্তর দলই আহমদীয়া জামাতকে কাফির বলিয়া গণ্য করে”। (রেফারেন্স পাক্ষিক আহমদী ৩১ ডিসেম্বর,২০১৮ ঈসাব্দ পৃষ্ঠা নং ৩৮; ০৪/০৯/১৪৪০ হিজরী)। আরো মজার ব্যাপার হল, খোদ মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও লিখা আছে, উম্মতে মুহাম্মদীয়া তৃতীয় শতাব্দির পরে তেয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হইয়া গিয়েছে। (দেখুন, হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] ৩৬)। তাহলে তারও প্রায় এক হাজার বছর পরে এসে কাদিয়ানী জামাত এই উম্মতের তেয়াত্তর ফেরকার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কিভাবে? সুতরাং কাদিয়ানিরা ৭৩ দলের বাহিরে সম্পূর্ণ নতুন একটি গোষ্ঠী হওয়াই পরিষ্কার হয়ে গেল।

৫. দুনিয়ার ২১৩টি রাষ্ট্রে আহমদীয়া জামাত (কাদিয়ানীরা) বিজলির গতিতে পৌছে গেছে। এটাই প্রমাণ করে যে, এটি আল্লাহর জামাত। এটিকে ধ্বংস করা কারো সাধ্য নেই। আরেকটি কথা এই যে, মির্যা সাহেব মিথ্যা হলে তিনি দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারলেন কীভাবে?

আমার বক্তব্য : বিজলির গতিতে কোনো জামাত বা গোষ্ঠী সারা দুনিয়ায় পৌছে যাওয়াই সেটি “সত্য” হওয়ার যুক্তি সঠিক হলে তখন নিচের প্রশ্নটির কোনো-ই জবাব থাকবেনা! আপনি কি বাহাউল্লাহ সম্পর্কে জানেন? উইকিপিডিয়া (আরবী) আমাদের তথ্য দিচ্ছে, মির্যা হুসাইন আলী নূরী তথা বাহাউল্লাহ তিনি ১৮৬৩ সালে ‘মসীহ’ দাবী করার পর আরো ২৯ বছর বেঁচে ছিলেন! দ্য ব্রিটানিকা বুক অফ দ্য ইয়ার (১৯৯২-বর্তমান) বইটি ২০০২ সালে দেশের উপস্থিতির সংখ্যাকে ভিত্তি করে ধর্মের বর্ধনশীলতার একটি হার প্রকাশ করেছে। এই জরিপ অনুসারে বাহাই ধর্ম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বর্ধনশীল স্বাধীন ধর্ম। ব্রিটানিকা দাবি করেছে বিশ্বের ২২১টি দেশ ও স্থানে এই ধর্মের অস্তিত্ব আছে। সেই সাথে বিশ্বে প্রায় ২,১০০ জাতিগত, বর্ণভিত্তিক ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ধর্মের অনুসারী রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের প্রায় ৮০০টি ভাষাভাষীর মানুষের মধ্যে এই ধর্মের অস্তিত্ব বিদ্যমান এবং সবমিলিয়ে বিশ্বব্যাপী এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। ২০০৭ সালে এফপি ম্যাগাজিনের এক জরিপ অনুসারে বিশ্বে বাহাই ধর্মের অনুসারী বৃদ্ধির হার ১.৭%। Click

এবার বাহায়ী জামাতকে কী বলবেন? বাহাউল্লাহ কিংবা তার জামাতকে কি সত্য বলবেন? আর যদি বাহাউল্লাহ মিথ্যা হয় তাহলে আপনাদের দাবী আর যুক্তি অনুসারে সে অল্প কয়দিন পরেই ধ্বংস হয়ে গেল না কেন? কেন সে মসীহ দাবী করে আরও ২৯ বছর দীর্ঘ জীবন লাভ করল? আরেকটি কথা হল, অপরাধীর শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন (সূরা কাহফ/১৮:৫৮) আমাদের বলছে, আল্লাহ অপরাধীদের নিশ্চয়ই সাথে সাথে পাকড়াও করেন না বরং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন অতপর নির্ধারিত সময়ে তাদের পাকড়াও করবেন! মজার ব্যাপার হল, মির্যার ছেলে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন, মির্যা সাহেবের উপর নবুওয়তের মাসয়ালা ১৯০০ বা ১৯০১ সালের পরেই খুলেছিল। তিনি আরো লিখেছেন, ১৯০১ সালের পূর্বে তিনি তার দাবীকৃত নবুওয়তকে ‘মুহাদ্দাসিয়ত’ শব্দে তাবীল করেছেন এবং আপনা দাবীকৃত নবুওয়তকে জুঝী নবুওয়ত বা অসম্পূর্ণ নবুওয়ত বলে আখ্যা দিতেন। মির্যাপুত্র রচনাবলীর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম’ ২/৪৪৪-৪৫ দ্রষ্টব্য। এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানী নবুওয়তের দাবী করে মাত্র ৭ বা ৮ বছরই বেঁচেছিলেন বলা যেতে পারে! তো এটাই কি তার দীর্ঘ জীবন লাভ করা?

৬. অ-আহমদীরা যতই বিরোধিতা করবে ততই আহমদীয়ত সারা বিশ্বে বৃদ্ধি হতে থাকবে। এই বছর-ও প্রায় ছয় লক্ষ নতুন করে বাইয়েত নিয়েছে। তাই আহমদীয়ত সত্য! সারা দুনিয়াতে আহমদীরা (কাদিয়ানীরা) বর্তমানে ২৬ কোটির ঊর্ধ্বে। সুতরাং আমরাই সত্য!

আমার বক্তব্য : আহমদীয়ত যে মিথ্যা এবং সুস্পষ্ট মডারেট ধোকা তা উপরেই দলিল-প্রমাণের আলোকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন বাকি থাকল, ছয় লক্ষ বাইয়েতের দাবী! আমি এর প্রতিউত্তরে তাদেরই একজন সাবেক কাদিয়ানী মুরুব্বী পাকিস্তানের লাহোরের জেহলম জেলার সাবেক কাদিয়ানী নায়েবে আমীর প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমেদ এর একটি বক্তব্য উল্লেখ করব। তিনি ২০০১ সালে ইসলাম কবুল করে সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন “২০০০ সালে আমাকে কেন্দ্র থেকে ৩০০ গয়রে আহমদীকে বাইয়েতের জন্য টার্গেট করতে বলা হল। আমি মাত্র তিনজনকে প্রস্তুত করতে পারলাম। কিন্তু ইউ.কে জলসায় ৪১৩০৮৯৭৫ (চার কোটি ১৩ লক্ষ) নতুন বিশ্ব বাইয়েতের খবর প্রকাশ করা হয় এবং আমাকে জানানো হয় ‘আপ কা টার্গেট পুরা হো গী’ (অর্থাৎ আপনার টার্গেট পূর্ণ হয়ে গেছে)। তারপরের বছর অর্থাৎ ২০০১ সালে আমাকে সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০০ জনকে বাইয়েতের টার্গেট করতে বলা হল। আমি একজনকেও রাজি করতে পারিনি। কিন্তু ওদিকে বিশ্ব বাইয়েত থেকে ৮১০০৬৭২১ (আট কোটি দশ লক্ষ) জনের নতুন বাইয়েতের ঘোষণা দিয়ে দেয়া হল (দৈনিক আল ফজল, ৩রা আগস্ট ২০০৫ ইং সংখ্যা দ্রষ্টব্য)। আমি আশ্চর্য হলাম। জেলা আমীরকে প্রশ্ন করলাম। আমাকে উত্তর দেয়া হল, তুম খামুশ রাহো (অর্থাৎ তুমি চুপ থাক)। জামাতের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবানা খবরদার! তিনি আমাকে যুক্তি দিলেন, যদিও তোমার এখান থেকে কেউ বাইয়েত হয়নি, কিন্তু দুনিয়ার অন্যান্য জায়গা থেকে তো হয়েছে! তখন আমি বললাম, আমি আমার আশেপাশেও খবর নিয়েছি। সব জায়গায় আমার মতই অবস্থা এবং সবাই আপনার মতই একই শান্তনামূলক কথা বলে আত্মপ্রসাদ নিচ্ছে!” প্রমাণ হিসেবে প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমদ এর মুখ থেকেই শুনে নিন Click তারপরই তিনি ২০০১ সালে কাদিয়ানীদের বিশ্ব বাইয়েতের এই ড্রামা’র মুখোশ উন্মোচন করে ইসলামে ফিরে আসেন। সুতরাং আপনাদের নিকট কুরআন হাদীস বাদ দিয়ে বিশ্ব বাইয়েতি ড্রামা খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা আমাদের নিকট কোনোই গুরুত্ব রাখেনা।

প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমেদ (সাবেক কাদিয়ানী সদর মুরুব্বী)

৭. সব নবীই বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই মির্যা কাদিয়ানীও বিরোধীতার সম্মুখীন হবেন এমনটাই স্বাভাবিক। আর আল্লাহ তাকে ওহী(?) দ্বারা জানিয়ে দিয়েছেন যে, সারা দুনিয়ায় তিনি তার জামাতকে পৌঁছিয়ে দেবেন। আজ তাই হচ্ছে।

আমার বক্তব্য : কাদিয়ানীদের কথাতেই পরিষ্কার হয় যে, তারা মির্যাকে “নবী” হিসেবেই মান্য করে। নতুবা “সব নবীই বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন” এইধরণের উদাহরণ টানার মানে কী? যাইহোক, কোনো দাবীদার ব্যক্তি বিরোধীতার সম্মুখীন হওয়াই তার সত্য হওয়ার প্রমাণ নয়। বরং সত্যতার প্রমাণ হল, কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে সাহাবা। কেননা ইতিহাস সাক্ষী, বহু মিথ্যাবাদী তাদের ভন্ডামীর কারণে জনরোষের স্বীকার হয়েছিল এমনকি হত্যা পর্যন্ত হয়েছিল। সাহাবাদের যুগে মুসাইলামা কাজ্জাব আর অষ্টাদশ শতাব্দীর ইরানী বংশোদ্ভূত আলী মুহাম্মদ বাবী তারই দৃষ্টান্ত বহন করে। ১৮৫১ সালে ইরান সরকার “বাবী জামাত” এর প্রতিষ্ঠাতা আলী মুহাম্মদ বাবকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবীর পর ফায়ারিং স্কোয়াডে অমানুষিক কায়দায় হত্যা করেন। অনুরূপ বাহায়ী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মসীহ এবং রাসূল দাবীদার বাহাউল্লাহ ইরানীও প্রথমে ইরান থেকে ইরাক নির্বাসিত হন। তার কিছু দিন পর ইরানী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে আমৃত্যু জেল খাটেন। তার মৃত্যুর পর তার সেই বাহায়ী জামাত আজ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ২২১ টি রাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে কী বলবেন?

দুনিয়ার প্রায় ২২১টি রাষ্ট্রে বাহায়ীদের এমন সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন বহু উপাসনালয় রয়েছে

৮. মির্যার সত্যতা জানতে চাহিলে খোদার নিকট দোয়া করুন আর ইস্তিখারাহ করুন। দেখবেন চল্লিশ দিনের মধ্যেই ফল পেয়ে যাবেন।

আমার বক্তব্য : ইস্তিখারাহ সম্পর্কে ইসলামের একটি বিধান রয়েছে। তা হল, শরীয়তের পূর্ব মীমাংসিত কোনো বিষয়ে কনফিউশন হয়ে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ ও হারাম। বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারক, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) লিখেছেন, فإن الواجب و المستحب لا يستخار فى فعلهما و الحرام والمكروه لا يستخار فى تركهما . فتح البارئ كتاب الدعوات অর্থাৎ ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব বিষয়ে তা পালন করা আর না করার ক্ষেত্রে ইস্তিখারাহ বিধিবদ্ধ নয়। কোনো হারাম বা মাকরূহ বিষয়ে তা বর্জন করা আর না করার ক্ষেত্রেও ইস্তিখারাহ বিধিবদ্ধ নয়। (সূত্র : ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : কিতাবুদ দাওয়াত, বাব ৪৮; খন্ড ১৪ পৃষ্ঠা ৪১৮)। এতে বুঝা যায়, ইস্তিখারাহ হতে হবে দুনিয়াবী বিষয়ে। ইসলামের আলোকে যেই বিষয়টি পূর্ব থেকে মীমাংসিত ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত সেই বিষয়ে কনফিউশন হওয়া ও নতুন করে সমাধান চাওয়ার নিয়তে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ এবং হারাম। উদাহরণস্বরূপ, আপন ভাইয়ের সাথে বোনের বিয়ে হারাম, এটি পূর্ব মীমাংসিত বিষয়। তাই এই বিষয়ে কনফিউশন হওয়া এবং ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ। তদ্রুপ নবুওয়তের দরজায় সীল লেগে যাওয়া এবং ঈসা (আ:) জীবিত থাকা ও তাঁর দ্বিতীয়বারে আগমন করার বিষয়েও ইস্তিখারাহ করা হারাম। কেননা এগুলো ইসলামের পূর্ব মীমাংসিত বিষয়। তাই এসবে অস্বীকারকারী মির্যা কাদিয়ানী সম্পর্কে ইস্তিখারাহ করার অর্থই হল নিজকে নিজে ইসলামের গন্ডি থেকে খারিজ করে দেয়া। ফলে বিতাড়িত শয়তানের পক্ষে সহজ হয়ে যায় স্বপ্নযোগে তার চোখে মির্যাকে সত্যবাদীরূপে দর্শন করানো। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ইস্তিখারাহ এর শরয়ী বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বহু সরলমনা মুসলমান ধোকা খেয়ে কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম ঘটেনি। তাই আপনাদের মির্যা কাদিয়ানীর বিষয়ে ইস্তিখারাহ করার উক্ত পরামর্শ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য ও বাতিল।

৯. আমরা আহমদীরা (কাদিয়ানীরা) সারা দুনিয়াতে এক ও অভিন্ন জামাত। আমাদের খলিফা আছে। আমাদের বায়তুলমাল আছে। আর অপর দিকে অন্যরা নানা ফেরকায় বিভক্ত। সুতরাং আমরাই সঠিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমার বক্তব্য : যারা ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেনা তাদের মহলে আপনাদের এই সমস্ত ইমোশনালি কথাবার্তা খুবই গুরুত্ব রাখবে তা ঠিক। আপনি বললেন যে, আপনাদের নাকি খলিফা রয়েছে! যদি তাই হয় তাহলে বলুন, ইসলামের দৃষ্টিতে “খলিফা” এর সংজ্ঞা কী? সুনির্দিষ্ট কোনো ভুখন্ড ছাড়া কেউ “খলিফা” দাবী করা পাগলের প্রলাপ নয় কি? আমরা জানি, ইসলামের সকল খলিফার যুগে নির্দিষ্ট ভুখন্ডের উপর তাদের প্রত্যেকেরই দখল ছিল। তাদের নির্দিষ্ট সামরিক ফোর্স ছিল। তার পরেই বায়তুলমাল ইত্যাদীর প্রশ্ন আসবে। তার চেয়ে বড় কথা, কাদিয়ানী জামাত তো ইসলামেরই কেউ না। এমতাবস্থায় খলিফার প্রসঙ্গটাও আরো বহু পরের সাবজেক্ট, তাই নয় কি? আরেকটি অপ্রিয় সত্য হল, ২০০৮ সালের ভেতরেই কাদিয়ানী জামাত কম বেশি প্রায় ১০টি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে, লাহোরী গ্রুপ, জামাতে আহমদীয়া ইছলাহ পছন্দ, জামাতে আহমদীয়া আল মুসলিমীন, গ্রীন আহমদীয়ত, জামাতে সহীহ ইসলাম এবং জামাতে আহমদীয়া হাকিকি অন্যতম। সংক্ষেপে। সুতরাং দয়া করে এই বিশ্বায়নের যুগে এসেও আর মিথ্যা বলবেন না!

১০. একমাত্র আহমদীরাই ঈসা (আ:)-কে মৃত প্রমাণের মাধ্যমে খ্রিষ্টান ধর্মকে মৃত সাব্যস্ত করে থাকে। অপর দিকে অন্যান্য মুসলমান ঈসা (আ:)-কে জীবিত বিশ্বাস করে। ফলে তারা খ্রিষ্টানদের নবী ঈসা (যিশুখ্রিস্ট)কে জীবিত রেখে ঈসায়ী ধর্মকেও জীবিত রাখতে চাচ্ছে। সুতরাং আমরাই সঠিক ইসলামের অনুসারী।

আমার বক্তব্য : মির্যা কাদিয়ানী তার ‘নূরুল হক’ বইয়ের ১ম খন্ডের ৫০ নং পৃষ্ঠায় মূসা (আ:) সম্পর্কে লিখেছেন و فرض علينا أن نؤمن بأنه حيي فى السماء و لم يمت و ليس من الميتين অর্থাৎ আমাদের উপর একথা বিশ্বাস রাখা ফরজ যে, নিশ্চয়ই তিনি (মূসা) আকাশে জীবিত, তিনি মৃত্যুবরণ করেননি এবং মৃতদের অন্তর্ভুক্তও নন। (রূহানী খাযায়েন ৮/৬৮-৬৯ দ্রষ্টব্য)। সম্পূর্ণ পৃষ্ঠাটি পড়ে দেখুন। উপরে মূসা (আ:) এর দীর্ঘ আলোচনা শেষে পরের পৃষ্ঠায় তাঁর (আ:) সম্পর্কে মির্যা সাহেব এইধরণের কথা লিখে গেছেন। আসুন! এবার আপনার যুক্তিতে ফিরে আসি। খ্রিষ্টানদের নবী ঈসা (যিশুখ্রিস্ট)কে জীবিত রাখার অর্থ যদি ঈসায়ী ধর্মকে জীবিত রাখা হয় তাহলে মূসা (আ:)-কে জীবিত রাখার বিশ্বাসের কী অর্থ দাঁড়াল? শুনুন! ধোকা আর প্রতারণা করারও একটা লিমিট আছে!!

১১. ইসলামের প্রাথমিককালেও অনেকে মুরতাদ হয়ে যায়। জনৈক কাতেবে ওহীও মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। কাজেই আরব আহমদী খলিফা খ্যাত ডক্টর হানী তাহের, ইংল্যান্ড আহমদী খলীফার মসজিদুল ফতূহ এর নায়েবে ইমাম ইকরামা নজমি, মিশরের আহমদী মু’আল্লিম ইনসার্জ ও লাহোরের জেহলম জেলার নায়েবে সদর আমীর প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমদ প্রমুখ তারাও কাদিয়ানীয়ত ত্যাগ করে মুরতাদ হয়েছেন বলে বিরোধীদের এত খুশি হওয়ার কারণ নেই। মরা পাতা ঝরে গেলেই ভাল!

আমার বক্তব্য: শরীয়তের পরিভাষায় সাধারণ অর্থে মুরতাদ বলতে বুঝানো হয় ধর্ম-ত্যাগী ব্যক্তিকে। এখন কেউ কাদিয়ানীয়ত ত্যাগ করার কারণে কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে মুরতাদ হওয়ার অর্থ ‘কাদিয়ানীয়ত’ যে আলাদা একটি ধর্ম তা কি প্রমাণ করা নয়? অবশ্যই। এমতাবস্থায় অ-কাদিয়ানীদের (মুসলমানদের) পক্ষ হতে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘অমুসলিম সংখ্যালুঘু’ ঘোষণার দাবী ১০০% যুক্তিক বলেই সাব্যস্ত হল কিনা? সেযাইহোক, কাতেবে ওহী সাহাবীটির নাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’আদ ইবনে আবু সারাহ (রা:) তিনি (আয়াত): “ফা তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকীন” -কে কেন্দ্র করে মনে মনে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি কিছুদিনের জন্য ইসলাম ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান। অতপর মক্কা বিজয়ের আগ মুহূর্তে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় তাওবা করেন এবং রাসূল (সা.)-এর হাতে ইসলামের উপর বয়াত গ্রহণ করেন। ইমাম আবু জা’ফর মুহাম্মদ বিন জারির আল তাবারী (৮৩৮-৯২৩) তার “জামিউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন” বইয়ে বর্ণনা করেন : “ইসলামের নবী মক্কা বিজয়ের কিছু আগেই আব্দুল্লাহ ইবনে সা’আদ ইবনে আবু সারাহ (রা:) ইসলাম পুনরায় গ্রহণ করেন।” এ থেকে প্রমাণিত হয় আবদুল্লাহ ইবনে সা’আদ সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় ইসলাম পুনরায় গ্রহণ করেন। কারণ ঠিক মক্কা বিজয়ের সময়কালে তাকে প্রভাবিত করার কোনো মুসলিম সামরিক শক্তি তার আশেপাশে ছিল না। তারপর তিনি আমৃত্যু ইসলামের সেবায় নিয়োজিত থাকেন এবং হযরত উসমান (রা:) এর খেলাফতের আমলে মিশরের মত রাষ্ট্রের গভর্নরও হন। তিনি সামুদ্রিক বড় বড় জিহাদগুলোর চিপ কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। একথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল, উক্ত কাতেবে ওহী ব্যক্তিটি সাময়িকভাবে ইসলাম ত্যাগ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু এজন্য তিনি না কুরআনকে ভুল আখ্যা দিয়েছেন আর না মুহাম্মদ (সা:)-কে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছেন; বরং নিজেই নিজেকে দুষেছেন এবং নিজ ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করেছেন। পক্ষান্তরে ডক্টর হানী তাদের সহ যারাই কাদিয়ানীয়ত ত্যাগ করেছেন সবাই মির্যাকে মিথ্যুক আর ভন্ড আখ্যা দিয়েছে। তাহলে কিসের সাথে কিসের উপমা দিতে এলেন!

১২. কাদিয়ানীয়ত ছেড়ে কোন ইসলামে ফিরে যেতে চান? শীয়া, হানাফী মালেকী শাফেয়ী হাম্বলী আহলে হাদীস, দেওবন্দী, বেরলবী, জামাত শিবির, চরমোনাই, রাজারবাগী মাইজভাণ্ডারী ইত্যাদি কোন ফেরকার ইসলামে ফিরে গেলে সঠিক ইসলামে ফিরে যাওয়া হবে?

আমার বক্তব্য : প্রথমকথা হল, মনে করুন কাদিয়ানীয়ত ছেড়ে কেউ এদের যে কোনো একটিতে চলে গেল! অন্ততপক্ষে তাতেও তার ঈমানটা বাঁঁচবে। কেননা সে মুহাম্মদ (সা:)- এর পরে দ্বিতীয় আর কাউকে নবী মেনে নেয়া থেকে রক্ষা পেল। ফলে তার আমলের দুর্বলতার কারণে সাময়িক শাস্তি ভোগ করলেও একটি সময় ঈমানের কারণে সে নাজাত পাবে, ইনশাল্লাহ । দ্বিতীয় কথা হল, প্রশ্নে বর্ণিত নামগুলোর মধ্যে শীয়া হল ইসলামের একটি পুরনো ফেরকা। তাদের বিচারে তারাও সঠিক। বিপরীতে অন্যগুলোর মধ্যে হানাফী শাফেয়ী মালেকী আর হাম্বলী এগুলো ফেরকাই নয়, বরং ফিকহি মাসয়ালায় চারজন বিশিষ্ট ফকিহ ও মুজতাহিদ ইমামের চারটি ফিকহ বা গবেষণালব্ধ বুঝের ভিন্নতা মাত্র। যা আহলে সুন্নাহরই অভ্যন্তরীণ একটি ফিকহি মতভিন্নতা। তারপর আহলে হাদীস, চরমোনাই, জামাতে ইসলামি সহ এগুলোর কোনো কোনোটি রাজনৈতিক দল আবার কোনোটি পীর মুরশিদি তরিকা, কোনো কোনোটি মানহাজ তথা পার্সোনালিটি মাত্র। মনে রাখতে হবে যে, ফেরকা, মানহাজ, পলিটিকাল পার্টি ও মাযহাব এগুলো প্রত্যেকটি আলাদা জিনিস। কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন হল, কাদিয়ানীয়ত ইসলামী ফেরকা বা মানহাজ হলে তখন কেউ সেটিকে ত্যাগ করার দরুন ‘মুরতাদ’ হবে কেন? বলাবাহুল্য, কাদিয়ানীয়তের দৃষ্টিতে মির্যা কাদিয়ানীই তাদের সর্বশেষ নবী (রূহানী খাযায়েন খন্ড ২০ পৃষ্ঠা ৭০ দ্রষ্টব্য) !

রূহানী খাযায়েন ২০/৭০

তাই অপ্রিয় হলেও সত্য, সাধারণ কাদিয়ানীদের বুঝে আসুক বা না আসুক, সত্য এটাই যে, কাদিয়ানীয়ত নতুন একটি ধর্ম। ফলে এটি ইসলামের কোনো ফেরকারই অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন! আমীন। সংক্ষেপে…

(বি: দ্র: কথাগুলো তাদের আর জবাব গুলো আমার)।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

পবিত্র কুরআন দ্বারাও ঈসা (আ.) এখনো জীবিত থাকার প্রমাণ

সূরা আত-তওবাহ আয়াত নং ৩৩ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত! পড়তে ক্লিক করুন Click

প্রশ্ন : অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, হযরত ঈসা (আ:)-এর পুনঃ আগমন সত্য ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তেমনি পবিত্র কুরআনেও এর সমর্থনে কোনো ইংগিত কিবা প্রমাণ আছে কিনা?

  • এই লেখাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ :

কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে অ-কাদিয়ানীরা কেমন?

প্রকৃত ইমাম মাহদীর পরিচয়

ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা সংক্রান্ত বর্ণনা সম্পর্কে

চন্দ্রসূর্য গ্রহণের বর্ণনা সম্পর্কে

ইন্নী মুতাওয়াফফীকা (انى متوفيك)-এর সঠিক তাৎপর্য ও কাদিয়ানীদের ভ্রান্তি উন্মোচন

ঈসা (আ.) আবার আসলে মুহাম্মদ (সা.) শেষনবী কিভাবে থাকেন?

জবাব : জ্বী হ্যাঁ, অবশ্যই পবিত্র কুরআনেও হযরত ঈসা (আ.)-কে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়া এবং অচিরেই পৃথিবীতে পুনঃ আগমনের উপর সুস্পষ্ট ইংগিত ও প্রমাণ পাওয়া যায়। এজন্য পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬; ৪৮; ৫৫; সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫৭; ১৫৮; ১৫৯; সূরা যুখরুফ, আয়াত নং ৬১ ইত্যাদি দেখা যেতে পারে। অত্র লিখাটির শেষে মাত্র একখানা আয়াত ও তাফসীর পেশ করা হবে। জ্ঞানীদের জন্য সংক্ষেপে ততটুকুই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ। উম্মতে মুহাম্মদীয়া তথা মুসলমানদের অকাট্য বিশ্বাসগুলোর অন্যতম ঈসা (আ.)-কে মহান আল্লাহ সশরীরে জীবিত আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন, এটিকে কাদিয়ানীরা অনর্থক আখ্যা দিয়ে বলে বেড়ায় যে, কোনো মানুষকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া প্রকৃতি বিরোধী ও আল্লাহর নিয়ম বা কানুনের পরিপন্থী। মজার ব্যাপার হল, তাদের এসব অর্বাচীন আর অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তার জবাব আমাদের দিতে হয়না, বরং তাদের মির্যা কাদিয়ানীর লেখিত বইপুস্তকই তাদের ওসব মূর্খতার প্রতিউত্তরের জন্য যথেষ্ট। দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই লিখেছে, “তাকে (খোদাকে) কানুনের আকারে কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। খোদাকে চেনার জন্য এ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, খোদার জুল-জালাল-এর কুদরত ও হেকমতসমূহ অসীম ও অনন্ত।” (আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলী – ৫৭; প্রকাশকাল ২৭ মে ১৯৯৮ইং)।

স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য –

কোনো কোনো ভাই হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, হযরত ঈসা (আ:)-কে সশরীরে আকাশে তুলে নেয়ার উল্লেখ কুরআনের কোন আয়াতে আছে?

এমন প্রশ্নকারী যারা তাদের ভাবখানা এমন যে, কুরআনে যা পরিষ্কার করে উল্লেখ নেই তা হাদীসে যতই পরিষ্কার করে উল্লেখ থাকুক না তা হবেনা! অথচ তাদের জানা থাকা উচিৎ ছিল যে, পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর কোনো কোনোটি সুস্পষ্ট আবার কোনো কোনোটি অস্পষ্ট। তাই পবিত্র কুরআনে যেসব বিষয় সংক্ষেপে কিংবা অস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে তা সুস্পষ্ট করতে পবিত্র হাদীসের মুখোমুখি হওয়া জরুরী। কেননা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) খোদ কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। আল্লাহতালা ফরমান,

وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الذِّکۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ

অর্থাৎ আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও, যা তাদের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে। (সূরা আন-নাহল /১৬ঃ৪৪)। এখন পবিত্র কুরআনেই যদি সব কিছু সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া হয় তাহলে রাসূল (সা.)-এর হাদীসের প্রয়োজন মিটানোর উপায় কী? কিংবা রাসূল (সা.)-এর আগমনেরই দরকার কী? ভাবিয়ে তুলে কিনা?

  • এবার আসুন প্রথমে হাদীস শরীফে ঈসা (আ.)-এর জীবিত থাকা ও পুনঃআগমন বিষয়ে কিরূপ শব্দচয়নে উল্লেখ আছে দেখে নিই!

পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে : (১) সহীহ বুখারী মুসলিমে এসেছে, শপথ খোদাতায়ালার যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় অচিরেই ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে নাযিল হবেন। (বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া, হাদীস নং ৩২৬৪)।

(২) ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। দেখুন ইমাম বয়হাক্বী সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াছ ছিফাত’ ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫। হাদীসের মান, সহীহ। হাদীসটি সনদ সহ দেখুন।

  • (হাদীসটি সহ নিচের সব কয়টি হাদীসের আরবী ইবারত ও মূল কিতাবের স্ক্রিনশট দেখতে চাইলে ক্লিক করুন)।

(৩) অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। ইমাম আবুবকর আহমদ ইবনে আমর আল বাজ্জার (মৃত ২৯২ হিজরী) সংকলিত ‘মসনাদে বাজ্জার’ ১৭/৯৬; হাদীস নং ৯৬৪২। হাদীসের মান সহীহ, বর্ণনাকারীদের ভেতর ‘আলী ইবনে আল মুনযির’ ব্যতীত সবাই বুখারী ও মুসলিমের রাবী। স্ক্রিনশট :-

(৪) সেই সময় আমার ভ্রাতা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে (শুভ্র মিনারার নিকটে) উঁচু টিলায় একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। (ইমাম ইবনে আসাকির সংকলিত ‘তারিখে দামেস্ক’ – খণ্ড নং ৪৭ পৃষ্ঠা নং ৫০৪-৫ ; প্রকাশনী বৈরুত লেবানন)।

(৫) সেই সময় আমার ভ্রাতা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে (শুভ্র মিনারার নিকটে) উঁচু টিলায় অবতরণ করবেন। (দেখুন, কাঞ্জুল উম্মাল – খণ্ড ১৪ পৃষ্ঠা ৬১৮-১৯; রেওয়ায়েত নাম্বার ৩৯৭২৬)।

(৬) মির্যা কাদিয়ানী নিজেও মাসীহ দাবী করার পূর্বে ১৮৯১ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) তিনি আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। নইলে তিনি কেন লিখলেন যে ‘সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এমন শব্দও উল্লেখ রয়েছে যে, মসীহ (ঈসা) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন তার পরনে দুইটি হলুদ বর্ণের চাদর থাকবে! স্ক্রিনশট দেখুন :-

এখানে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত বলে আখ্যা দেয়ার সকল প্রচেষ্টা মূলত খ্রিষ্টানদের রদ (খণ্ডন) করার উদ্দেশ্যে ছিলনা, বরং মির্যা কাদিয়ানী নিজের মসীহ দাবীকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই ছিল।

অন্যথা মির্যা কাদিয়ানী সেই নিজেকে মসীহ ঈসা, ইমাম মাহদী এবং নবী দাবী করার আগে ১৮৬৫ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত ইসলামের পক্ষে বহু লেখালেখি করলেন, বারাহীনে আহমদিয়া (খন্ড ১-৪) লিখলেন কিন্তু কখনো তো ঈসা (আ.)-কে মৃত বলে আখ্যা দেননি! ১৮৮১ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করতেন। কিন্তু সেই সময়টিতেও তিনি ঈসা (আ.)-কে মৃত বলেননি। বরং মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব মসীহ উপাধি লাভ করার পরে আরো প্রায় দশ বছর পর্যন্ত বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশে জীবিত আছেন। (হাকিকাতুন নবুওয়ত, আনওয়ারুল উলূম ২/৪৬৩)।

পরবর্তীতে ঈসা (আ.)-কে মৃত আখ্যা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। পবিত্র কুরআনের ৩০ টি আয়াত দিয়েও ঈসাকে মৃত প্রমাণ করার জোর চেষ্টা চালালেন। ভেবেচিন্তে অবাক হলাম যে, পবিত্র কুরআনের এই ৩০ আয়াত মির্যা সাহেবের মুজাদ্দিদ দাবীর ভেতরকার ১৮৮১-১৮৯১ সালের মধ্যে কুরআনের ভেতর কি ছিলনা? তখন কিজন্য তার মনে হলনা যে, ঈসা (আ.) জীবিত নন, বরং মৃত? সুতরাং অংক সোজা, নিজের উদ্দেশ্য পাকা করতেই তিনি আসল ঈসাকে মুর্দা আখ্যা দিতে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন!

উল্লেখ্য, সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে ‘আসমান’ শব্দটির উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও হযরত ঈসা (আ.) দ্বিতীয় আসমানে আছেন মর্মে কিরকম জোরালো বিশ্বাস থাকলে মির্যা সাহেব সহীহ মুসলিমের উদ্ধৃতিতে “ঈসা আকাশ থেকে নাযিল হবেন” এভাবে লিখে যেতে পারলেন! কাজেই, ঈসা (আ.)-কে আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নেয়ার উল্লেখ সুস্পষ্টভাবে কুরআনের কোন আয়াতে উল্লেখ আছে, এইরূপ প্রশ্ন করা অজ্ঞতা আর নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বৈ কিছুনা। এমন ব্যক্তিকে যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, “নামায যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করা ফরজ তার উল্লেখ কুরআনের কোন আয়াতে আছে” তাহলে সে এর জবাবে কী বলবে?

পবিত্র কুরআন থেকে : দ্বিতীয়ত, পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬ নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতালা ইরশাদ করেন, وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلاً وَمِنَ الصَّالِحِينَ অর্থ-“সে (ঈসা) দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) কথা বলবে এবং সে হবে নেককার মানুষদের একজন।” (০৩:৪৬)।

  • তাফসীর : 

আলোচ্য আয়াতে হযরত ঈসা (আ.)-এর একটি অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তিনি শৈশবে যে বয়সে কোনো শিশু কথা বলতে সক্ষম হয়না, তখনই তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন। এখানে তার পরেই আবার বলা হচ্ছে যে, যখন তিনি প্রৌঢ় বয়সের হবেন তখনো মানুষের সাথে কথা বলবেন। উল্লেখ্য, বিখ্যাত অভিধানবেত্তা ইবনে মানযূর আল আফ্রিকী (মৃত : ৭১১ হিজরী) তার বিখ্যাত “লিসানুল আরব” অভিধানগ্রন্থে ‘আল-মুহকিম’ (আরবি : المحكم) অভিধানের উদ্ধৃতিতে ‘কাহল’ (كَهْلاً) এর সংজ্ঞায় লিখেছেন যে, هو من أربع و ثلاثين إلى إحدى و خمسين “অর্থাৎ ‘কাহল’ বলতে ৩৪ হতে ৫১ বছর বয়সের ব্যক্তিকে বুঝাবে।” আল-মু’জাম অভিধানে আছে ‘৩৩ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্যবয়সীকে আরবীতে ‘কাহল‘ বলে। তবে কেউ কেউ অন্যভাবেও বলেছেন।

যাইহোক, এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, শৈশবে কথা বলা নিঃসন্দেহে একটি অলৌকিক ব্যাপার। যার উল্লেখ এক্ষেত্রে সমীচীন হয়েছে। কিন্তু প্রৌঢ় বয়সে কথা বলা কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়। মুমিন, কাফের, পণ্ডিত, মূর্খ সবাই এ বয়সে কথা বলে। কাজেই এক্ষেত্রে বিশেষ গুণ হিসেবে এটা উল্লেখ করার অর্থ কী? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?

তাই এই প্রশ্নের উত্তরে নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাবে লিখা আছে যে, এখানে প্রৌঢ় বয়সের কথাবার্তার উল্লেখ একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিতস্বরূপ করা হয়েছে। তা এই যে, ইসলামী ও কুরআনী বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ.)-কে তাঁর ত্রিশ-তেত্রিশ মধ্যকার বয়সেই জীবিতাবস্থায় আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে। মির্যা কাদিয়ানীর কিতাব ‘তুহফাতুন নদওয়া‘ এর মধ্যে লেখা আছে, اور واقعہ صلیب کے وقت حضرت عیسیٰ کی عمر قریباً 33 سال تہی অর্থাৎ ক্রুশীয় ঘটনাকালে হযরত ঈসা’র বয়স ছিল প্রায় তেত্রিশ বছর। (রেফারেন্সঃ রূহানী খাযায়েন ১৯/১০৪)।

আমাদের আকিদাও এইরকম। কারণ বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, আকাশে তুলে নেয়ার সময় তার বয়স প্রায় ত্রিশ-তেত্রিশের মাঝামাঝি ছিল। অর্থাৎ তিনি যৌবনের প্রারম্ভিককালে উত্তোলিত হয়েছেন। অত:পর প্রৌঢ় বয়স, যাকে আরবীতে ‘কাহল/কুহল’ (كَهْلاً) বলা হয়; তিনি এ জগতে সেই বয়স পাননি। কাজেই প্রৌঢ় বয়সে মানুষের সাথে তাঁর কথা বলা তখনই সম্ভব, যখন তিনি আবার এ জগতে প্রত্যাবর্তন করবেন। পবিত্র কুরআনে মূলত এ দিকেই ইঙ্গিত করে “পরিণত বয়সেও তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন” এভাবে বলা হয়েছে। নতুবা এভাবে বলার কোনো দরকার ছিলনা। যেহেতু প্রৌঢ় বয়সে কথা বলতে পারা কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, বরং সাধারণ একটা ব্যাপার। (দেখুন, তাফসীরে বয়ানুল কুরআন, কৃত হাকীমুল উম্মত থানভী রহ. এবং মা’আরেফুল কুরআন, কৃত মুফতি শফী রহ.)। অনুরূপ একই তাফসীর পাওয়া যায় সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কিতাব তাফসীরে ইবনে কাসীরেও।

মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত যুগ ইমাম, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরের কিতাব “তাফসীরে তাবারী” এর ভেতর ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারী (রহ.) লিখেছেন- আমাকে ইউনুছ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন আমাকে ইবনে ওহাব বলেছেন, তিনি বলেন আমি ইবনে যায়েদ থেকে শুনেছি তিনি বলেন, আল্লাহতালার এই কথার অর্থ হল : قد كلمهم عيسى في المهد و سيكلمهم إذا قتل الدجال و هو يومئذٍ كهل অর্থাৎ ঈসা (আ.) দোলনাতে মানুষের সাথে কথা বলবেন, (তেমনিভাবে) তিনি অচিরেই মানুষের সাথে কথা বলবেন যখন দাজ্জালকে হত্যা করবেন আর তখন তিনি প্রৌঢ় বয়সে পরিণত হবেন। (তাফসীরে তাবারী, ইবনে জারীর রহ.)। স্ক্রিনশট

এই একই তাফসীর রয়েছে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.) রচিত “তাফসীরে কাবীর” এর মধ্যে। তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীরকারক ইমাম হুসাইন ইবনে ফদ্বল আল বাজালী রহ. (মৃত : ২৮২ হিজরী) এর উদ্ধৃতিতে লিখেছেন, أن المراد بقوله و كهلا ان يكون كهلا بعد ان ينزل من السماء في آخر الزمان و يكلم الناس و يقتل الدجال الخ অর্থাৎ আয়াতের উদ্দেশ্য হল, ঈসা (আ.) তিনি শেষ যামানাতে আকাশ থেকে অবতরণকরার পরে প্রৌঢ় হওয়া। (তখন) তিনি মানুষের সাথে (প্রৌঢ় লোকদের মত জ্ঞানীসূলভ, মেধা সম্পন্ন প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধভাবে) কথা বলবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি বলেন, এই আয়াতে ঈসা (আ.) পৃথিবীতে অচিরেই নাযিল হওয়ার ব্যাপারে নস তথা প্রমাণ রয়েছে। (ইমাম রাজী রচিত, তাফসীরে কাবীর দ্রষ্টব্য)। আশাকরি চিন্তাশীলবন্ধুদের জন্য প্রকৃত ব্যাপারটি বুঝতে এতটুকুই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ । ওয়াসসালাম। স্ক্রিনশট –

মির্যা কাদিয়ানী একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগী ছিল, এর কী কী প্রমাণ আছে?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিজেকে ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ (সা.)’ বলে দাবী করার দলিল খন্ডন

কাদিয়ানীরা কাফের কেন? এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ জানাবেন!

পবিত্র কুরআনের প্রায় ৯টি আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে মির্যা কাদিয়ানীকে “নবী” সাব্যস্ত করার সম্পূর্ণ অপচেষ্টার দাঁতভাঙা জবাব!

তথাকথিত “উম্মতিনবী”-এর কনসেপ্ট প্রমাণ করতে কাদিয়ানীদের উল্লিখিত বর্ণনাটির সনদ (সূত্র) মওজু অর্থাৎ ‘বানোয়াট’ হওয়ার প্রমাণ কী?

কাদিয়ানীরা ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে পবিত্র কুরআনের যে ত্রিশ আয়াতের অপব্যাখ্যা করে সেগুলোর দালিলিক ও যুক্তিক খন্ডন। (ধারাবাহিক ১-৩০টি আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা সহ)।
(1) (ফেইসবুক থেকে)
(2) (সংশ্লিষ্ট ৩০টি ইমেজ ডাউনলোড করতে)

(3) (ওয়েব সাইট থেকে)

ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন-এর প্রমাণ কুরআন থেকে দিন!

আলেম উলামাদের প্রতি কাদিয়ানীদের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেবের ১০টি প্রশ্ন ও আমার পক্ষ হতে সেগুলোর সহজ উত্তর!

লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

যেসব বর্ণনাকে আশ্রয় করে ‘খতমে নবুওয়ত’–কে অস্বীকার করা হয় সেগুলোর জবাব

0

খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারী কাদিয়ানিদের ১২টি বিভ্রান্তিকর দলিল ও আমার জবাব :

প্রদত্ত দলিলগুলো কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে আর জবাবগুলো আমার :

দলিল ১ :

প্রশ্নকর্তা : একটি হাদীসে উল্লেখ আছে “…অতপর মূসা (আ:) আরজ করলেন اِجْعَلْنِىْ نَبِيًّا تِلْكَ الْاُمَّة অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে সেই উম্মতের নবী বানিয়ে দাও। আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন “মিনহা নাবিয়্যুহা” অর্থাৎ তাদের নবী তাদেরই মধ্য থেকে হবে।” (আবু নাঈম এর সীরাতগ্রন্থ হুলিয়া, থানভীর সীরাতগ্রন্থ নশরুত্তিব দ্রষ্টব্য)। এই হাদীসে ‘তাদের নবী’ হতে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের কথাই কি বুঝানো হয়েছে?

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

ঈসা (আ:) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন কি?

ক্লিক করুন

দলিল ২ :

لو عاش ابراهيم لكان صديقا نبيا অর্থাৎ যদি ইব্রাহীম তথা হুজুর (সা:) এর সন্তান জীবিত থাকত তবে সে সত্যবাদী ও নবী হতো।” (সুনানু ইবনে মাজাহ ১/১০৮; ‘তারীখু ইবনে আসাকীর ৩/২৯৫)।

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

দলিল ৩ :

ابو بكر خير الناس الا ان يكون نبيا. অর্থাৎ আবু বকর এই উম্মতের মাঝে সবার  শ্রেষ্ঠ তবে নবী হলে ভিন্ন কথা। (কাঞ্জুল উম্মাল ১২/১৮০, হাদীসের মান জঈফ ও মওযূ)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নবুওয়তেরধারা জারি রয়েছে বুঝাবেনা। তার কারণ এখানে ان يكون এর মধ্যে ঊহ্য هو (ইংরেজি : He) সর্বনামপদটি আবুবকর (রা:)-কে নির্দেশ করেছে। ফলে সম্পূর্ণ বর্ণনাটির অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন আবুবকর (রা:)। তবে সে যদি নবী হত তখন ভিন্ন কথা ছিল। রাসূল (রা:) এই কথা বলে যেন বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আবুবকর (রা:) যেহেতু নবী নন, তাই তিনি শুধুমাত্র উম্মতির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। তবে হ্যাঁ সে “নবী” হলে তখন উম্মতির বাহিরে কোনো কোনো নবী অপেক্ষাও তাঁর পক্ষে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারা বিচিত্র ছিল না। কিন্তু আমি জানি যে, কাদিয়ানিদের নিকট আমার এই জবাব মোটেও সন্তোষজনক হবেনা। তাই তাদের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই যে, কাদিয়ানের কথিত কৃষ্ণ মির্যা গোলাম আহমদ কর্তৃক ১৮৯৩ সালে লেখিত ‘হামামাতুল বুশরা’ এর মধ্যে উল্লেখ আছে “আমাদের রাসূলের পর কিভাবে কোনো নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।” (দেখুন, পৃষ্ঠা নং ৪৮; বাংলা অনূদিত)।

তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকলে মির্যা গোলাম আহমদ নবুওয়ত দাবী করার আগে সে নিজেও “রাসূল (সা:) এর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে…” ইত্যাদি লিখে যাওয়ার কারণ কী? সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল, উক্ত বর্ণনাটির পরে আরো উল্লেখ রয়েছে هذا الحديث احد مما انكر (অর্থাৎ এই হাদীসটি মুনকার হাদীসগুলোর অন্যতম)। উল্লেখ্য, বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসের বিপরীতে দুর্বল বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসকে ‘মুনকার’ হাদীস বলা হয়। অতএব, জ্ঞানীদের বুঝার আর বাকি থাকেনি যে, তাদের প্রদত্ত বর্ণনাটি অন্ততপক্ষে আকীদা-বিষয়ক মাসআলায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংক্ষেপে। 

দলিল ৪ :

قال ليس بينى و بينه نبى يعنى عيسى و انه نازل অর্থাৎ আমার এবং আগমনকারী  ঈসার মধ্যবর্তীকালে আর কোনো নবী নেই এবং তিনি নিশ্চয় নাযিল হবেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩২৪; কিতাবুল মালাহিম)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবী কোনোভাবেই সিদ্ধি লাভ করবেনা। তার কারণ, হাদীসটিতে আগমনকারী ঈসা সম্পর্কে “নাযিল” শব্দ এসেছে। তার মানে আগমনকারী ঈসা অবতরণ করবেন, জন্মিবেন না। তার দেড় লাইনের মাথায় তাঁর সম্পর্কে এটিও উল্লেখ আছে فيقاتل الناس على الإسلام (অর্থাৎ তিনি মানুষের বিরুদ্ধে ইসলামের খাতিরে সশস্ত্র লড়াই করবেন)। তার এক লাইনের মাথায় আরো এসেছে و يهلك الله فى زمانه الملل كلها إلا الاسلام (অর্থাৎ আল্লাহতালা তাঁর যামানায় ইসলাম ব্যতীত বাকি সমস্ত ধর্ম ও মতবাদ ধ্বংস করে দেবেন)। হাদীসটির শেষাংশে এটিও এসেছে, فيمكث فى الأرض اربعين سنة ثم يتوفى فيصلى عليه المسلمون (অর্থাৎ অতপর তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর থাকবেন তারপর মৃত্যুবরণ করবেন। অতপর মুসলমানগণ তাঁর জানাজা পড়বেন)। যাইহোক, একজন নিরপেক্ষ পাঠক ঠাণ্ডামাথায় চিন্তা করলে বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, আগমনকারী সেই ঈসা রূপক কেউ নন, বরং বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত সেই মরিয়ম-পুত্র ঈসাই উদ্দেশ্য। যিনি হাদীসটিতে “নবী” শব্দেও আহূত হয়েছেন। তারমানে এই অর্থ নয় যে, আগমনকারী সেই ঈসা তখন নবুওয়তের দায়িত্বেও থাকবেন।

এটি আমার মনগড়া কোনো কথা নয়, বরং কাদিয়ানের কৃষ্ণ মির্যা গোলাম নিজেও লিখে গেছেন, آنے والے مسیح کیلئے ہمارے نبی اکرم نے نبوت شرط نہیں ٹہرائی অর্থাৎ আগমনকারী মাসীহ’র জন্য আমাদের নবী করীম (সা:) নবুওয়ত শর্ত করেননি। (তাওযীহুল মারাম, রূহানী খাযায়েন ৩/৫৯)। সুতরাং সরলমনা মানুষকে বিভ্রান্ত করার আর কোনো সুযোগ থাকল না।

মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে চার চার বার ঈসা (আ.)-কে নাবীউল্লাহ বলা হয়েছে, কাদিয়ানীদের অতিব শঠতাপূর্ণ বক্তব্যের দাঁতভাঙা উত্তর এখানে

দলিল ৫ :

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : قولوا خاتم الأنبياء و لا تقولوا لا نبى بعده অর্থাৎ তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো এবং তোমরা বলবেনা, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই। (মাজমাউল বিহার পৃষ্ঠা নং ৫০২)।

জবাব : না, এই বর্ণনা দ্বারাও কাদিয়ানিদের বিশ্বাস-মতে নবুওয়তী ওহীরধারা জারি থাকার দাবী কোনোভাবেই হালে পানি পায় না। কেননা ইমাম মুহাম্মদ তাহের পাটনী (মৃত ৯৮৬ হিজরী) বিরচিত ‘মাজমাউল বিহার’ কিতাবটির উক্ত পৃষ্ঠায় বর্ণনাটিতে আরো উল্লেখ আছে هذا ناظراً إلى نزول عيسى و هذا ايضا لا ينافى حديث “لا نبى بعدى” لانه اراد لا نبى ينسخ شرعه  অর্থাৎ এটি ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং এটি ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীসকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবেনা। কেননা তদ্দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর শরীয়তকে রহিত করতে পারে তিনি এমন নবী নন। এবার সম্পূর্ণ বর্ণনার তাৎপর্য দাঁড়াল এই যে “ঈসা আলাইহিস-সালামের নাযিলের প্রতি লক্ষ্য রেখে তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো, তবে ‘তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই’ বলবেনা।” এছাড়া বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুগীরা (রা:) হতেও বর্ণিত আছে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন حسبك إن قلت خاتم الأنبياء (অর্থাৎ  তোমার জন্য খাতামুল আম্বিয়া বলাই যথেষ্ট। তিনি আরো বলেন فإنا كنا نحدث أن عيسى خارج فإن هو خرج فقد كان قبله و بعده অর্থাৎ কেননা আমরা আলোচনা করে থাকি যে, ঈসা (আ:) নিশ্চয়ই আগমন করবেন। তিনি যদি আগমন করেন তাহলে তিনি তাঁর (মুহাম্মদ) পূর্বের এবং পরের (একজন মানুষ) হবেন। (দেখুন, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ১৩/৫৬৬; কিতাবুল আদাব)।

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সালাম আল বছরী (মৃতঃ ২০০ হিজরী) বিরচিত ‘তাফসীরে ইয়াহইয়া ইবনে সালাম’ (تفسير يحي بن سلام) নামক কিতাবেও এর সনদ (সূত্র) হিসেবে উল্লেখ আছে যে, রাবীঈ ইবনে ছুবাঈ (আরবি : ربيع ابن صبيح) এটি মুহাম্মদ ইবনে শিরীন (রহ:) থেকে আর তিনি হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, لا تقولوا : لا نبي بعد محمد و قولوا : خاتم النبيين، فإنه ينزل عيسى بن مريم حكماً عدلاً و إماماً مقسطا الخ অর্থাৎ তোমরা বলোনা, মুহাম্মদ (সা:)-এর পর আর কোনো নবী নেই (তবে) তোমরা ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ বলো। কেননা (অচিরেই) ঈসা ইবনে মরিয়ম একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক এবং ইনসাফগার ইমাম হিসেবে অবতরণ করবেন।” সে যাইহোক, এ সমস্ত রেওয়ায়েত যত জায়গায় পাওয়া যায় কোথাও একথা বুঝায় না যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে নবুওয়ত আর রেসালত জারি থাকবে বরং এ ধরণের সবগুলো বর্ণনাতেই শেষ যুগে হযরত ঈসা (আ:)-এর দ্বিতীয়বার আগমনের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। সুতরাং এই বর্ণনা দ্বারাও তাদের নবুওয়ত জারি থাকার তাবৎ দলিল-প্রমাণ(!) অন্তঃসারশূন্যই সাব্যস্ত হল। সংক্ষেপে।

দলিল ৬ :

সহীহ মুসলিম শরীফের একটি হাদীসের খন্ডাংশ হচ্ছে, রাসূল (সা:) বলেছেন  فإني آخر الأنبياء و ان مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ নিশ্চয় আমি সর্বশেষ নবী এবং আমার মসজিদ সর্বশেষ মসজিদ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৩৯)।

জবাব : না, এই হাদীসটিও নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকবে বুঝায়নি। প্রাসঙ্গিক জবাবে আরেকটু পরে আসি। আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ (সা:) মদীনায় এসে নিজ তত্ত্বাবধানে প্রথমে মসজিদে কূবা তারপর মসজিদে নববী  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এই মসজিদ রাসূল (সা:) কর্তৃক ৬২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ মসজিদ হওয়াতে তিনি বলেছেন : مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ আমার মসজিদই শেষ মসজিদ। এখন আমার প্রশ্ন হল, মসজিদে নববীর পরে কোটি কোটি মসজিদই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন তাতে কি? এগুলো কি রাসূল (সা:)-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত? নিশ্চয় না। কাজেই হাদীসটিকে কেউ বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে পথভ্রষ্ট হতে চাইলে তাতে আমাদের কিছুই করার নেই। হাদিসের অন্যতম কিতাব ‘আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব’ কিতাবে উপরিউক্ত হাদিসটি শব্দের সামান্য পরিবর্তনসহ বর্ণনাকারীর বর্ণনাতে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা:) বলেছেন مسجدى آخر مساجد الأنبياء (মাসজিদী আখেরু মাসাজিদিল আম্বিয়া) অর্থাৎ “আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।”

হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) হতেও এ সম্পর্কে আরেকটি  হাদীসে আছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন أنا خاتم الأنبياء و مسجدى خاتم مساجد الأنبياء অর্থাৎ “আমি সর্বশেষ নবী আর আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।” (দেখুন, কাঞ্জুল উম্মাল হাদীস নং ৩৪৯৯৯; হারামাঈন পরিচ্ছেদ)।  প্রমাণের জন্য আরো দেখা যেতে পারে –  ইমাম নূর উদ্দীন আল হাইছামী (মৃত ৮০৭হিজরী) রচিত ‘কাশফুল আছতার‘।  ইমাম আল ফাকেহী (মৃত ২৭৫ হিজরী) রচিত ‘আখবারু মাক্কা‘। ইমাম ইউছুফ আল মুযনী (মৃত ৭৪২ হিজরী) রচিত ‘তাহযীবুল কামাল‘। ইমাম আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী) রচিত ‘মাছীরুল গারামিস সাকিন ইলা আশরাফিল আমাকিন‘। ইমাম নূর উদ্দিন আলী ইবনে আহমদ আল সামহূদী রচিত ‘খোলাসাতুল ওয়াফা বি-আখবারি দারিল মুস্তফা‘ এর ‘ফাজিলাতু মসজিদিন নাবাবিয়্যি’ শীর্ষক অধ্যায় দ্রষ্টব্য।  তার মানে, রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করার জন্য প্রত্যেক যুগেই নবীগণ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, আর সর্বশেষ নবী হিসেবে আমি (মুহাম্মদ)ও “মসজিদে নববী” নির্মাণ করেছি। যেহেতু আমার পরে আর কোনো নবী নেই, সেহেতু নবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ হচ্ছে আমার মসজিদ তথা মসজিদে নববী।” সংক্ষেপে।

দলিল ৭ :

নবী করীম (সা:) স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস (রা:)-কে সম্বোধন করে বলেন “নবুওয়তে আমি যেমন খাতামুন্নাবিয়্যীন, হিজরতে আপনি তদ্রূপ খাতামুল মুহাজিরীন” (কাঞ্জুল উম্মাল দ্রষ্টব্য)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তের ওহী অব্যাহত থাকা প্রমাণিত হয় না। তার কারণ, অষ্টম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) এ সম্পর্কে লিখেছেন أن العباس بن عبد المطلب هاجر قبيل فتح مكة إلى المدينة فصار خاتم المهاجرين الذين هاجروا من مكة إلى المدينة لأنه لا هجرة بعد فتح مكة من مكة , كما ورد في الحديث الصحيح الذي أخرجه البخاري : ” لا هجرة بعد الفتح ” أي بعد فتح مكة অর্থাৎ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তিনি মক্কা বিজয়ের পূর্বক্ষণে মদীনায় (সপরিবারে) হিজরত করেন। যার ফলে তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারীদের মধ্যে ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ সাব্যস্ত হন। তার কারণ, মক্কা বিজয়ের পর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্ব-বিধান আর বহাল থাকেনি। সহীহ বুখারীতেও এ মর্মে হাদীস উল্লেখ আছে যে, লা হিজরাতা বা’দাল ফাতহে আই বা’দা ফাতহি মাক্কা।’ প্রমাণ হিসেবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত ‘আল ইছাবাহ’ (الاصابة) গ্রন্থের ২য় খন্ডের ২৬৩ নং পৃষ্ঠা এবং ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। মোটকথা হচ্ছে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মদীনায় হিজরত করা সকল মুসলমানের উপর যেহেতু ওয়াজিব ছিল সেহেতু রাসূল (সা:)-এর চাচা আব্বাসের উপরও ওয়াজিব ছিল। তিনি বদর যুদ্ধে গ্রেপ্তার হয়ে অতপর মুক্তি পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তিনি রাসূল (সা:) এর নিকট মক্কায় ফিরে গিয়ে সেখান থেকে মদীনায় হিজরতের অনুমতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মক্কায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও রাসূল (সা:) বিশেষ কারণে তাঁকে তৎক্ষনাৎ হিজরতকরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন يا عم اقم مكانك فان الله يختم بك الهجرة كما ختم بي النبوة অর্থাৎ হে আমার চাচা! আপনি আপনার জায়গাতেই থাকুন। কারণ আল্লাহতায়ালা আমার মাধ্যমে যেরূপ ভাবে নবুওয়তেরধারা শেষ করবেন তেমনি আপনার মাধ্যমে আবশ্যকীয় হিজরতের ক্রমধারাও শেষ করে দেবেন। (ইমাম যাহাবী (রহ:) রচিত ‘মীযানুল ইতিদাল’ এর ১ম খণ্ডের ২৪৫ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। সিয়ারু আলামিন নুবালা থেকে স্ক্যানকপি :-

ইমাম বাগাবী (রহ.) তাঁর ‘শরহে সুন্নাহ‘ কিতাবের দশম খন্ডের ৩৭৩-৭৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মক্কা বিজয়ের পর আর কোনো হিজরত নেই। একথা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, “মক্কা হতে মদীনায় আর কোনো অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের বিধি অবশিষ্ট নেই।” সে হিসেবে রাসূল (সা.) আপন চাচা আব্বাসকে কাছে পেয়ে পূর্বের ভবিষ্যৎবাণীর ভিত্তিতে বললেন “হে আমার চাচা আব্বাস! আপনি খাতামুল মুহাজিরীন তথা শেষ হিজরতকারী। রাসূল (সা.) তাঁকে ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ বলে যেন বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত যেই হিজরত মুসলমানদের উপর আবশ্যক (ওয়াজিব) ছিল আপনি-ই হলেন সেই অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের সমাপ্তকারী। এই ছিল ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। উল্লেখ্য, সেই বছরই তথা ৮ম হিজরী সালের ১০ রমযান তারিখে রাসূল (সা.) ১০,০০০ মুসলিম বাহিনীর এক বিরাট কাফেলা নিয়ে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কোনোরূপ রক্তপাত ছাড়াই মক্কা নগরী জয় করেছেন। 

দলিল ৮ :

নবী করীম (সা.) বলেছেন, “আনা খাতামুল আম্বিয়া ওয়া আনতা ইয়া আলী খাতামুল আওলিয়া” (শীয়া মতাবলম্বী মুহসিন আল কাশানী’র (মৃত. ১০৯১ হিজরী) ‘তাফসীরে সাফী’ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ আমি খাতামুল আম্বিয়া এবং হে আলী তুমি খাতামুল আওলিয়া।

জবাব : না, এটি হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। যতটুকু জানা যায়, ‘খতমুল বেলাদত’ গ্রন্থের রচিতা বিশিষ্ট সাধক আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলী-ই প্রথম এই বাক্যাংশের প্রবর্তক ছিল। সংক্ষেপে তাঁকে হাকিম তিরমিযী বলে। শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ:)-এর কিতাব থেকে জানা যায়, সাধক আবু আব্দুল্লাহ (রহ:) ইতিপূর্বে নিজেকে ‘খাতামুল আওলিয়া’ মনে করত। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি এজন্য ভুল স্বীকার করেছেন এবং ভীষণ অনুতপ্তও হয়েছেন।

হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর যুগ ইমাম, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ:) এ সম্পর্কে তাঁর ‘মাজমু’ ফাতাওয়া’ গ্রন্থের ১১তম খন্ডের ৪৪৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন  : وكذا خاتم الأولياء لفظ باطل لا أصل له. وأول من ذكره محمد بن علي الحكيم الترمذي. وقد انتحله طائفة كل منهم يدعي أنه خاتم الأولياء: كابن حموي، وابن عربي، وبعض الشيوخ الضالين بدمشق وغيرها অর্থাৎ অনুরূপভাবে ‘খাতামুল আওলিয়া’ এটি এমন একটি শব্দ যার কোনো ভিত্তি নেই। এটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন, মুহাম্মদ ইবনে আলী আল হাকিম তিরমিযী। একটি দল এটিকে অবলম্বন করেই তাদের প্রত্যেকে নিজেকে ‘খাতামুল আওলিয়া’ দাবি করত। এদের মধ্যে ইবনে হামাভী, মুহী উদ্দিন ইবনে আরাবীসহ দামেস্ক ইত্যাদি শহরের কিছু সংখ্যক বিপথগামী ছূফীও রয়েছে।” অতএব প্রমাণ পাওয়া গেল যে ‘খাতামুল আওলিয়া’ শীর্ষক শব্দটি মূলত কোনো হাদীসের অংশ নয়। বরং শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর প্রদত্ত তথ্যমতে এটি ‘খতমুল বেলাদত’ গ্রন্থের রচিতা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলীর-ই প্রবর্তিত মাত্র। (রেফারেন্স, প্রাগুক্ত)। তাই অসংখ্য সহীহ হাদীস আর ইজমায়ে উম্মতের মুকাবেলায় কে কী লিখল তা নিয়ে ভাবার দরকার কী? খতমে নবুওয়তের মত এমন একটি চির মীমাংসিত বিষয়ের খেলাফ কারো ব্যক্তিগত কোনো কথার গুরুত্বটাই বা কী?

দলিল ৯ :

সুনানু তিরমিযী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে أن الرسالة و النبوة قد انقطعت فلا رسول بعدى ولا نبى  অর্থাৎ নিশ্চয়ই রেসালত এবং নবুওয়ত বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আর কোনো রাসূল নেই, নবীও নেই। (হাদীসটি সহীহ)। কিন্তু কাদিয়ানিদের বই পুস্তকে শায়খ ইবনে আরাবী (রহ.) এর নাম ভেঙ্গে হাদীসটির একখানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, “হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে নবুওয়ত এবং রেসালতেরধারা বন্ধ—একথার অর্থ হল, কেবল তাশরীয়ী (শরিয়তবাহক) নবুওয়ত ও রেসালত-ই বন্ধ। তাই মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে যিনি আগমন করবেন তিনি এমন কেউ নন যিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের বিপরীতে হবেন। বরং তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর আনিত শরীয়তের-ই অধীনে হবেন।” (ফতুহাতে মাক্কিয়া ২/৩ দ্রষ্টব্য)।

উত্তর : শায়খ ইবনে আরাবী’র উক্ত ব্যাখ্যার সঠিক মর্মার্থ কী তা একই পৃষ্ঠার শেষের দুই-তিন লাইনে নিজেই পরিস্কার করে দিয়েছেন এই বলে যে “যার ফলে ঈসা (আ:) একজন নবী ও রাসূল থাকাটা লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীস অংশের বিরুদ্ধে যায় না।” সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ইবনে আরাবীর উপরিউক্ত বক্তব্যের ইংগিত নুযূলে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর প্রতিই ছিল। তাই তাঁর বক্তব্যটিকে ব্যাপকার্থে ধরে নিয়ে বর্তমানেও নবুওয়ত জারি থাকার আকিদা সাব্যস্ত করতে চাওয়া পুরোপুরি বাতিল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

‘উম্মতি’ শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানীর “নবী” দাবীর গোমর ফাঁস : Click

দলিল ১০ :

ألا انه خليفة فى امتى ألا انه ليس بينى و بينه نبى অর্থাৎ সাবধান! নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) আমার উম্মতের মাঝে একজন খলীফা হবেন এবং তাঁর ও আমার মাঝে আর কোনো নবী নেই। (সুনানু তাবারানী)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পর নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকা বুঝায়নি। বড়জোর, এটি শেষ যামানায় প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর দ্বিতীয়বার আগমন কী হিসেবে হবে তা “আন্নাহু খালীফাতু” শুব্দগুচ্ছের আলোকে সুস্পষ্ট করে দেয়ার জন্যই বর্ণিত হয়েছে। এখানে খুবই লক্ষণীয় ব্যাপার হল, অত্র বর্ণনায় শব্দটি উল্লেখ হবার ধরণ! অর্থাৎ এখানে “খালীফাতু ফী উম্মাতি” (আমার উম্মতের মাঝে একজন খলীফা) চয়িত হয়েছে, কিন্তু “খালীফাতু মিন উম্মতি” (আমার উম্মতের মধ্য থেকে একজন খলীফা)  চয়িত হয়নি। ফলে একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আগত ঈসা দ্বারা এই উম্মতের মধ্য হতে রূপক কেউ হবেনা, বরং “সহীহ মুসলিম শরীফ” এর কিতাবুল ফিতান অধ্যায়ের বর্ণনানুসারে আগত ঈসা দ্বারা বনী ইসরাইলী ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-ই উদ্দেশ্য, যিনি দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর আপনা দুই বাহু রেখে এই উম্মতের মাঝে [আকাশ থেকে] আবির্ভূত হবেন। সংক্ষেপে।  এই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। দেখে নিন। ওয়াস-সালাম।

দলিল ১১ :

হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন : قالوا : يا رسول الله ! متى وجبت لك النبوة ؟ قال : وآدم بين الروح والجسد رواه الترمذي অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (একদা নবীজীকে) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য নবুওয়ত কবে থেকে নির্ধারিত? তিনি (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, যখন আদম রূহ এবং শরীরের মাঝে নিহিত [তখন থেকে আমার জন্য নবুওয়ত নির্ধারিত]। (মেরকাত শরহে মেশকাত, খন্ড নং ১০; হাদীস নং ৫৭৫৮, কিতাবুল ফাজায়েল ওয়াশ শামায়েল)। এই হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে খাতাম অর্থ ‘শেষ’ নয়, বরং ‘শ্রেষ্ঠ’। সুতরাং মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে নবুওয়ত বন্ধ থাকেনি, বরং বিদ্যমান রয়েছে।

জবাব : না, এই হাদীসও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরে ‘ওহীয়ে নবুওয়ত’ জারি থাকার পক্ষে কোনোই ইংগিত করেনা। যেহেতু বিষয়টি আমরা হযরত ইরবাছ ইবনে সারিয়াহ (রা.) হতে আরেকটি হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট করে নিতে পারি। হাদীসের ভাষ্য, أنه قال إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين অর্থাৎ রাসূল (সা:) বলেছেন নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর নিকটে খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম (আল-মেশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফাজায়েল ওয়াশ শামায়েল)। খুব খেয়াল করুন, এখানে বলা হয়েছে مكتوب (মাকতূব) অর্থাৎ লিপিবদ্ধ ছিলাম। হাদীস কিন্তু বলছেনা যে, রাসূল (সা.) স্বীয় জন্মের পূর্ব থেকেই নবুওয়ত লাভ করেছেন বরং বলছে, খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম (যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হবে)। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

দলিল ১২ :

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী