- মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী :
নাম, গোলাম আহমদ। পিতা, গোলাম মর্তুজা আর মাতা, চেরাগবিবি। তিনি মোঘল সম্রাট তৈমুর লং এর বংশধর। [আহমদ চরিত পৃ-১; মূল লিখক, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ]। তার আরেক পূর্ব পুরুষ ছিল মোঘল বরলাস। জন্মস্থান ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ান নামক গ্রাম। জন্মগ্রহণ ১৮৩৯ সালে মতান্তরে ১৮৩৫ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি। তিনি বহুমুত্র রুগী ছিলেন। পরিণত বয়সে মিরাক [সিজোফ্রেনিয়া], হিস্টিরিয়া [মূর্ছারোগ] এবং মালিখোলিয়া (উম্মাদনা) রোগেও আক্রান্ত ছিলেন (সীরাতে মাহদী ১/১৪-১৬; বর্ণনা নং ১৯ নতুন এডিশন)। আনুমানিক ১৮৬৪ সালের দিকে পিতা গোলাম মর্তুজার পেনশনের সাতশত রুপি উত্তোলন করে সঙ্গীসহ উধাও হন এবং তা মাত্র তিনদিনের মধ্যেই উড়িয়ে দেন। অতপর চোখ-লজ্জায় বাড়ি না ফিরে চলে যান পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট জেলায় (সীরাতে মাহদী ১/৩৮; বর্ণনা নং ৪৯ নতুন এডিশন)। সেখানে তিনি এক ইংরেজ ডেপুটি কমিশনারের অফিসে চার বছরব্যাপী (১৮৬৪-৬৮) কেরানীর চাকুরী করেন।
সে সময় খ্রিস্টান মিশনারিদের অন্যতম ও ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স মিশনের ইনচার্জ অফিসার Mr. Reverend Butler (১৮১৯-৬৯) এর সাথে তার খুব সখ্যতা গড়ে উঠে [সীরাতে মসীহে মওউদ পৃ. ১৫; মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ]। তারই কিছুদিনের মধ্যে তিনি রহস্যজনকভাবে চাকুরী ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরে যান এবং নিজেকে প্রথমাবস্থায় ‘ইসলামের সেবক’ বলে প্রচার করা শুরু করেন। তখন ১৮৬৮ সাল। তিনি সেই বছরই নিজেকে প্রথমে ‘মুলহাম’ [আল্লাহর পক্ষ হতে অনুপ্রেরণাপ্রাপ্ত] হবার দাবী করেন। ১৮৮২ সালে মুজাদ্দিদ দাবী করেন। ১৮৯১ সালে রূপক ঈসা দাবী করেন। ১৮৯৩ সালে ঈসা ইবনে মরিয়ম দাবী করেন। একই বছর নিজেকে একজন জিল্লি বুরুজি নবীও দাবী করেন। তিনি ঠিক সেই বছরই ‘জিহাদ’ হারাম বলে দেশব্যাপী জোর আওয়াজ তুলেন।
১৮৫৭ সালে মুসলমানরা সর্বশক্তি দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করায় ইংরেজরা ক্ষমতা হারানোর উপক্রম হয়েছিল। তাই জিহাদ হারাম ঘোষণা দিয়ে তিনি এক দিকে যেমন মিস্টার রিভার্ন্ড বাটলারের পরামর্শে ইংরেজদের গদি রক্ষায় নেমে পড়লেন অপরদিকে নিজে ঈসা (আ:) হওয়ার দাবী করে ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আকীদার উপর উপর্যুপরি হামলা করতে লাগলেন। কেননা জিহাদকে বন্ধ করার জন্য তার পক্ষে তখন নিজেকে ঈসা দাবী করা ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো উপায় ছিলনা। তাই প্রথমেই তিনি যে কাজটি করলেন সেটি ছিল, ঈসাকে মৃত প্রমাণ করা। এতে ব্রিটিশরাও তার উপর ছিল ভীষণ খুশি। কারণ, অন্তত জিহাদটা যদি বন্ধ করা যায় তবে গদিটা রক্ষা পাবে! কথায় আছেনা, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা! নানা নমুনায় তার প্রমাণও মিলে। জেনে অবাক হবেন, মির্যা সাহেব ১৮৯৮ সালের দিকে কোনো এক প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারত সম্রাজ্ঞী বৃটিশ রাণী আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়াকে সম্বোধন করে পত্র লিখেছিলেন:
[১] ‘নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার দলের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করেন। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে।’ (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)।
[২] তিনি এও লিখেছেন : আমার বিশ্বাস, যে হারে প্রতিদিন আমার অনুসারির সংখ্যা বাড়ছে সেই হারে জিহাদের পক্ষাবলম্বীর সংখ্যাও কমছে। (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/১৯)।
[৩] তিনি এও লিখে গেছেন, ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য ইসলামেরই একটি অংশ (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)। যাইহোক ২৫ শে মে ১৮৯৩ সালে অমৃতসর নামক স্থানে তার সাথে শায়খ আব্দুলহক গজনভী সাহেবের মুবাহালা হয় (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৭২)। উভয়পক্ষ নিজের উপর নিজে বদ দোয়া করেন এবং মুবাহালাকারী দুইপক্ষের সত্যবাদীর জীবদ্দশায় যেই মিথ্যাবাদী তার ধ্বংস কামনাও করেন (মালফূজাত ৫/৩২৭; চতুর্থ এডিশন)।
ইতিহাস সাক্ষী, শায়খ গজনভী মারা যান ১৬ই মে ১৯১৭ সালে। অপরদিকে মির্যা কাদিয়ানী শায়খের জীবদ্দশায় প্রায় ৯ বছর পূর্বেই ১৯০৮ সালে ২৬ শে মে বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় কলেরায় মারা যান। তাই দৃঢ়ভাবে বলা যায় মির্যা কাদিয়ানী মুবাহালায় আপনা বদ-দোয়ার মাধ্যমেও অভিশপ্ত ও মিথ্যুক প্রমাণিত হন। সংক্ষেপে।
- লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক