Home Blog Page 38

সহীহ হাদীসের আলোকে ঈসা এবং ইমাম মাহদী তারা দুইজন-ই

0

শেষ যুগে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যেই প্রতিশ্রুত মসীহ এবং ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী হাদীসসমূহে এসেছে সেই মসীহ এবং ইমাম মাহদী তারা ভিন্নভিন্ন চরিত্রের হওয়া সত্ত্বেও মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে একই সাথে ইমাম মাহদী এবং মসীহ হওয়ার দাবী করেছিল। তাই এবার আসুন জেনে নিই, প্রতিশ্রুত মসীহ এবং প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী এঁরা একই ব্যক্তি নাকি ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি?

[১] বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা:) বলেন, আমি নবী (সা:)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন :

  • لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لاَ.‏ إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ ‏.‏ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الأُمَّةَ‏ ‏‏

অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি দল হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আ:) অবতরণ করবেন। (সেই সময়কার) মুসলমানদের ‘আমীর’ (নেতা) বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন! তারপর তিনি (ঈসা) বলবেন, না; নিশ্চয় আপনারাই একে অন্যের ইমাম। এই হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মতের সম্মান। (রেফারেন্স, সহীহ মুসলিম, খন্ড নং ১, কিতাবুল ঈমান, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীয়ত অনুসারী প্রশাসক হিসেবে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর অবতরণ শীর্ষক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ১৫৬)। এই হাদীসে ঈসা (আ:) অবতরণ করার পরে সেই সময়কার মুসলমানদের আমীরের সাথে তৎক্ষণাৎ সালাতের ইমামতির বিষয়ে দুই পক্ষের কথাবার্তার উল্লেখ রয়েছে। তাদের একজন ঈসা (আ:) আর অন্যজন মুসলমানদের ‘আমীর তথা নেতা’। মূলত, সেই ‘নেতা’-ই কিন্তু ইমাম মাহদী। একথার প্রমাণ একই সাহাবী থেকে ভিন্ন আরেকটি সহীহ হাদীসে নিম্নরূপ বর্ণিত আছে। যেমন :

[২] হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূল (সা:) বলেছেন :

  • يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَيَقُولُ أَمِيْرُهُمُ الْمَهْدِيْ تَعَالَ صَلِّ بِنَا فَيَقُولُ لاَ.‏إِنَّ بَعْضَهُمْ أَمِيْرُ بَعْضٍ تَكْرِمَةَ اللَّهِ لِهذه الأُمةِ‏‏

অর্থাৎ, ঈসা (আ:) অবতরণ করবেন। অতপর মুসলমানদের আমীর ইমাম মাহদী বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন! তারপর তিনি বলবেন, না; নিশ্চয় তাদেরই একে অন্যের ইমাম। এটি আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এই উম্মতের সম্মান। [দেখুন, ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ সংকলিত আখবারুল মাহদী; বিশিষ্ট যুগ ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ:) বলেছেন, এই হাদীসের সনদ জায়্যিদ বা খুবই ভাল; আল-মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা নং ১৪৭; শায়খ আলবানী (রহ:) বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ এবং তিনি স্বীয় কিতাব ‘আস-সিলসিলাতুস সহীহা’তেও এনেছেন। হাদীস নং ২২৩৬]। উক্ত হাদীসটিতে ‘আমীরুহুম আল-মাহদী’ [أميرهم المهدي] অর্থাৎ মুসলমানদের আমীর ইমাম মাহদী-এভাবেই কিন্তু পরিষ্কার উল্লেখ আছে। সুতরাং মুসলিম শরীফের হাদীস এবং এই হাদীসদুটো মিলে একদম সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আগত মসীহ আর প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন দুইজনই।

[৩] রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন :

  • يكون في زمن المهدي ويصلى عيسى خلفه (ইয়াকূনু ফী যামানিল মাহদী ওয়া ইউসাল্লী ঈসা খালফাহু)

অর্থাৎ ইমাম মাহদী’র যুগেই ঈসার আগমন হবে এবং তিনি ইমাম মাহদী’র পেছনে সালাত পড়বেন।’ [রেফারেন্স : কাঞ্জুল উম্মাল খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৩৮৩; হাদীস নং ৭৩৮৪; কিতাবুল ফিতান মানাকিবুল মাহদী, সংকলক ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ; মুসনাদে আহমদ, মুসতাদ্রিক লিল হাকিম। হাদীসের মান : সহীহ]। এই তো অতি সামান্য। পরন্তু সিহাহ সিত্তাহসহ প্রায় সব কয়টি হাদীসের কিতাবে ঈসা (সা:)-এর দ্বিতীয়বার আগমন করার সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান।

সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী সে মসীহ কিংবা ইমাম মাহদী হবে তো দূরের কথা বরং সে মসীহ এবং মাহদী একই সঙ্গে দুইজন হওয়ার দাবী করে শুধু ভন্ড সাব্যস্ত হয়নি, বরং রাসূল (সা:)-এর হাদীসকে বিকৃত করে সে মহা প্রতারকে পরিণত হয়েছে।

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মধ্যকার পার্থক্য

0

মির্যা কাদিয়ানী কোথায় এবং কিভাবে মৃত্যুবরণ করেছিল?

কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেও একজন নবী ও রাসূল বলিয়া বিশ্বাস করে। তাই এরা দুনিয়ার সমস্ত মুসলিম স্কলারদের সর্বসম্মতিক্রমে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত ও কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত। নিচে তাদেরই বিভিন্ন রচনাবলী থেকে তাদের এবং মুসলমানদের মাঝে মৌলিক পার্থক্যগুলো কী কী তা সপ্রমাণে দেখানো হল! স্ক্রিনশট দেখুন

একটি ভুল সংশোধন ৮; মির্যা কাদিয়ানী

এক. কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস :
সকলের অবগতির জন্য বলা জরুরী, কাদিয়ানিদের ‘লিফলেট’ এর মধ্যে ‘নূরুল হক’ নামক যে বই থেকে তাদের ধর্মবিশ্বাস উল্লেখ রয়েছে ওই বইটি মির্যা কাদিয়ানী ১৮৯৪ সালের দিকে লিখেছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যকথা হল, ১৯০১ সালের পর মির্যা কাদিয়ানী তার পূর্বেকার নবুওয়ত সংক্রান্ত ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তন করে ফেলেন। আমরা এই তথ্য তাদেরই সেকেন্ড খলিফা(!) মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বই থেকে পাই। [দেখুন, ২৬ খন্ডে প্রকাশিত তার রচনা-সমগ্র ‘আনওয়ারুল উলূম’ খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৪৫]।

তাই আসুন ১৯০১ সালের পর মির্যা কাদিয়ানীর চূড়ান্ত আকীদা কেমন ছিল তার সামান্য কিছু এখান থেকে জেনে নিই।

নবী রাসূল দাবী :
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখেছেন, আমার দাবী, আমি একজন নবী ও রাসূল। (মির্যা কাদিয়ানির রচিত, মালফুযাত [ঊর্দু] ৫/৪৪৭; নতুন এডিশন)।

অ-কাদিয়ানিরা মুসলমান নয় :
মির্যা কাদিয়ানী বলেছেন, খোদাতালা আমার উপর প্রকাশ করেছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে আর তারা তা কবুল করেনি এরা মুসলমান নয় এবং এরা পাকড়াও হবে। (তাযকিরাহ, পৃষ্ঠা নং ৫১৯; ইলহাম, মার্চ ১৯০৬ ইং, চতুর্থ এডিশন)।

এতেই প্রমাণিত হল, মূলত মির্যা প্রকৃতপক্ষে নবী ও রাসূল হওয়াই দাবী করত। তার জিল্লি বুরূজি আর উম্মতি এই শব্দগুলো নিছক সাধারণ মানুষকে চিন্তাগতভাবে বিভ্রান্ত করার কৌশল ছিল। নইলে তাকে অস্বীকার করলে অমুসলমান হবে কেন?

মুহাম্মদ (সা:) চেয়েও মির্যা কাদিয়ানী শ্রেষ্ঠ :
মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “এটা সম্পূর্ণ সঠিক কথা যে, প্রত্যেক ব্যক্তি (আধ্যাত্মিক জগতে) উন্নতি সাধন করতে পারে এবং উঁচু থেকে উঁচু মর্যাদা পেতে পারে। এমনকি মুহাম্মদ (সা:)-কে পেছনে রেখে সামনে বেড়ে যেতে পারে।” (আখবারে ফজল, ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ানী দারুল আমান থেকে প্রকাশিত, নং ৫ জিলদ ১০, তারিখ ১৭ ই জুলাই ১৯২২ ইং)। নাউযুবিল্লাহ। এবার দেখুন, মুহাম্মদ (সা:) থেকেও মর্যাদায় সামনে বেড়ে যাওয়া ব্যক্তিটি নাকি মির্যা কাদিয়ানী! প্রমাণস্বরূপ কাদিয়ানী ঘরানার আরেকটি পত্রিকা ‘আখবারে বদর’ ২৫ অক্টোবর ১৯০৬ ইং সংখ্যায় উল্লেখ আছে, মির্যা কাদিয়ানীর সম্মুখে কাজী জহূর উদ্দিন আকমল একটি কবিতা পাঠ করেছিল।

কবিতার অর্থ ‘মুহাম্মদ আবার আমাদের মাঝে এসেছে এবং মর্যাদায় আগের (মুহাম্মদের) চেয়ে সামনে বেড়ে গেছে, পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদকে যদি কেউ দেখতে চাও তাহলে গোলাম আহমদকে দেখে যাও কাদিয়ানে।’ মির্যা কাদিয়ানী এই কবিতা শ্রবণ করার পর ওই ব্যক্তিকে ‘জাজাকুমুল্লাহ’ বলার কথাও ছাপিয়ে এসেছে। (দেখুন, দৈনিক আখবারে ফজল, পৃষ্ঠা নং ৪, কলাম ১; ২২ শে আগস্ট ১৯৪৪ ইং)। নাউযুবিল্লাহ। এতেই প্রমাণিত হল, মির্যা কাদিয়ানী তার শিষ্যের আবৃত্তির সাথে সহমত। যার ফলে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে মুহাম্মদ (সা:) থেকেও মর্যাদায় বড় দাবী করা সাব্যস্ত হল। এর চেয়ে জঘন্যতম নবী অবমাননা আর কী হতে পারে?

মির্যা কাদিয়ানী তার শিষ্যকে ‘জাজাকুমুল্লাহ‘ বলার ডকুমেন্ট। দৈনিক আল ফজল ২২ আগস্ট ১৯৪৪ ইং

মুমিন হওয়ার মানদন্ড :
‘কালিমাতুল ফছল’ বইতে মির্যা কাদিয়ানীর কথিত একটি ইলহামের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখা আছে, ‘এই ইলহাম দ্বারা পরিস্কার বুঝা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা এই যামানায় মুমিন হওয়ার মানদন্ড স্থির করেছেন মাসীহ মওঊদ [অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী]’র উপর ঈমান আনয়ন করাকে। সুতরাং মসীহ মওঊদকে যেই অস্বীকার করে তার পূর্বের ঈমানও যাবে।’ (কালিমাতুল ফছল বা রিভিউ অফ রিলিজন্স (উর্দু), তৃতীয় অধ্যায় পৃষ্ঠা নং ৫২ [হার্ডকপি]; লিখক, মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ‘কমরুল আম্বিয়া’ খ্যাত মির্যা বশির আহমদ এম. এ, প্রকাশকাল ১লা মে ১৯১৫ ইং, কাদিয়ান দারুল আমান থেকে প্রকাশিত)। এতে সাব্যস্ত হল, তারা নিজেদের বাহিরে কোনো মুসলমানকে মুসলমানই মনে করেনা। কাজেই “কে মুসলমান আর কে কাফের তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন” এইরূপ সস্তা কথাবার্তা অন্তত কাদিয়ানীদের মুখে মানায় না। স্ক্রিনশট দেখুন

কলেমার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র তাৎপর্য :
‘কালিমাতুল ফছল’ বইতে কলেমা তাইয়্যেবাহ সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে মির্যা কাদিয়ানীর ছেলে লিখেছেন: “আমাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। কেননা মসীহে মওঊদ [মির্যা কাদিয়ানী] নবী করীম (সা:) থেকে ভিন্ন কেউ নন। তিনি নিজেও বলতেন, আমার সত্তা তাঁর সত্তাতে পরিণত। এমনকি [তিনি এও বলতেন] যে ব্যক্তি আমার আর মুহাম্মদ মুস্তফার মাঝে পার্থক্য করে সে না আমাকে চিনল, না আমাকে দেখল। এটি এইজন্য যে, আল্লাহতায়ালার ওয়াদা ছিল, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন [মুহাম্মদ মুস্তফা]’কে দুনিয়াতে আরেকবার পাঠাবেন। যেমন ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট। সুতরাং মসীহে মওঊদ-ই স্বয়ং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। যিনি ইসলাম প্রচার করতে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার আগমন করেছেন। তাই আমাদের [কাদিয়ানিদের] জন্য নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র স্থলে অন্য আর কেউ আসত তখনই কেবল [নতুন কলেমার] প্রয়াজন পড়ত।” (কালিমাতুল ফছল ৬৮, ষষ্ঠ অধ্যায়)।

প্রত্যেক বিষয়ে মতবিরোধ :
মির্যার বড় ছেলে এবং কাদিয়ানিদের দ্বিতীয় খলীফা(?) বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন “তিনি (মির্যা) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:) এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ আছে।” [দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১]।

এবার চিন্তা করে দেখুন, এইধরণের কথাবার্তা যাদের বইপুস্তকে লিখা থাকে আর যারা এদের অনুসারী হিসেবে নিজেদের ‘আহমদী মুসলমান’ বলে পরিচয় দেয় তাদের সাথে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর রেখে যাওয়া ইসলামধর্মের ন্যূনতম সম্পর্ক কোথায়? এমন জঘন্য ধর্মমত পোষণকারীর কোনো নেক আমল কস্মিনকালেও কি গ্রহণযোগ্য? দয়াকরে শুধুমাত্র একবার কথাগুলো নিয়ে ভাবুন এবং নিরপেক্ষতার সাথে সত্য-মিথ্যা যাচাই করুন!

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানীরা হাদীসে বর্ণিত ৭৩ ফেরকার কোনো একটিরও অন্তর্ভুক্ত নয় কেন?

0

কাদিয়ানীরা হাদীসে বর্ণিত ৭৩ ফেরকার কোনো একটিরও অন্তর্ভুক্ত নয় কেন জেনে নিন!

বাংলাদেশের ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ তথা কাদিয়ানী জামাতের বর্তমান ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল আউয়ালখান সাহেব হচ্ছেন প্রাণ, আর এফ এল কোম্পানীর মালিক মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খাঁন চৌধুরীর ফুফাত ভাই। উল্লেখ্য, আমজাদ সাহেবের পিতা আলী কাশেম খাঁন চৌধুরী আর আব্দুল আউয়াল সাহেবের আম্মা জনাবা মাসুদা সামাদ উনারা দুইজন বৈমাত্রেয় (সৎ) ভাই বোন। [তথ্যসূত্র : আহমদীয়াতের ইতিহাসে বাংলার স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, লিখক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাবুল]।

জনাব আব্দুল আউয়াল সাহেব একটি লেকচারে বলেছেন :

হাদীস শরীফে উম্মতে মুহাম্মদিয়া ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে উল্লেখ আছে। এদের ৭২ ফেরকা দোজখে যাবে আর ১টি ফেরকা বেহেশতে যাবে। আর সেই বেহেশতি একমাত্র ফেরকাটি ‘আহমদী [কাদিয়ানী] জামাত’। সংক্ষেপে।

এবার তাকে আমার প্রশ্ন, আপনার মির্যা সাহেব তো লিখে গেছেন : “তৃতীয় শতাব্দীর পর বিগত উম্মত তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হইয়া গিয়াছে।” (হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] ৩৬)। উল্লেখ্য, বর্তমানে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দী চলছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন আসে, মির্যা কাদিয়ানীর জন্মের হাজার বছর আগেই যে উম্মত তেয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত তার অভ্যন্তরে আপনারা প্রবেশ করতে পারেন কিভাবে?

সেযাইহোক, হাদীস শরীফে তো সুস্পষ্টভাবে এও রয়েছে যে, উম্মতে মুহাম্মদিয়া কখনো গোমরাহীর উপর ঐক্যবদ্ধ হবেনা (তিরমিযী, কিতাবুল ফিতান : হাদীস সহীহ)। আর ইতিহাস সাক্ষী যে, কাদিয়ানিরা কাফের এই বিষয়ে দুনিয়ার সব উম্মতে মুহাম্মদিয়া একমত। তাহলে কি অন্তত এই হাদীস দ্বারাও কাদিয়ানীরা সুস্পষ্টরূপে কাফের সাব্যস্ত হচ্ছেনা? আপনাদের কেন্দ্রীয় মুখপত্র ‘পাক্ষিক আহমদী’ পত্রিকার ২০১৮ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর এর সংখ্যাটির ৩৮ নং পৃষ্ঠাতেও লিখা আছে : ‘এই যে তেয়াত্তর দল এই তেয়াত্তর দলই আহমদিয়া জামাতকে কাফির বলিয়া গণ্য করে।’

সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায় উম্মতে মুহাম্মদিয়ার বাহিরে হওয়াই পরিস্কর হয়ে গেল। নতুবা তেয়াত্তর ফেরকার লোকেরা কাদিয়ানীদেরকে কাফির গণ্য করে থাকলে তখন কাদিয়ানী জামাত তেয়াত্তরতম দল হয় কিভাবে?

প্রকৃত ইমাম মাহদী ও কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদের মধ্যকার পার্থক্যগুলো

0

পার্থক্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হল :

নাম : হযরত ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ (দেখুন, আবুদাউদ, অধ্যায় কিতাবুল মাহদী হা/৪২৮২)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের নাম ছিল, মির্যা গোলাম আহমদ । (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

পিতার নাম : হযরত ইমাম মাহদীর নাম হবে আব্দুল্লাহ। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদের পিতার নাম ছিল, মির্যা গোলাম মর্তূজা (মাতার নাম, চেরাগ বিবি)। (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

বংশ পরিচয় : হযরত ইমাম মাহদীর বংশ হবে কুরাইশ (নবীর বংশধর)। (দেখুন, আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের বংশ ছিল, মোঘল বরলাস (সম্রাট তৈমুর লং এর বংশধর)। দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ।

জন্মস্থান : হযরত ইমাম মাহদীর জন্ম হবে আরবে (মদীনায়)। (দেখুন, আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী; আল-ফিতান, নুআঈম বিন হাম্মাদ, কাঞ্জুল উম্মাল হা/৩৯৬৭১)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের জন্ম হয়েছিল, ভারতের কাদিয়ান গ্রামে [গুরুদাসপুর জেলা, পাঞ্জাব]। (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

শিক্ষাদীক্ষা : হযরত ইমাম মাহদীর শিক্ষাদীক্ষা আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম (দৈব-বাণী)’র মাধ্যমে হবে। (দেখুন, ইবনে মাজাহ কিতাবুল ফিতান হা/৪০৮৫; মিযা কাদিয়ানী নিজেও একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের শিক্ষকবৃন্দের নাম ছিল, ফযল ইলাহী, ফযল আহমদ, মৌলভী গোলাম আলী (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ৩, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

আত্মপ্রকাশের স্থান : হযরত ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ শেষযুগে মক্কায় (হজ্বের সময়) হবে এবং বাইয়াত রুকন আর হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে। (দেখুন, আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার নিজেকে সর্বপ্রথমে মুজাদ্দিদ দাবী করে ১৮৮১ সালে। তারপর ১৮৮৯ সালে মুজাদ্দিয়তের উপর প্রথম বাইয়াত নিয়েছিল লুধিয়ানায় (পাকিস্তান) নয়ীমহল্লায় মিঞা আহমদজান নামক তার এক মুরিদের বাড়িতে। (দেখুন, আহমদ চরিত পৃষ্ঠা ৮; প্রকাশকাল মে ২০০৯)। তারপর ১৮৯১ সালে লুধিয়ানায় (পাকিস্তান) নিজেকে রূপক ঈসা হওয়ার দাবী করেছিল। (দেখুন, আহমদ চরিত পৃষ্ঠা ৯; প্রকাশকাল মে ২০০৯)। সর্বপ্রথম ১৮৮৯ সালে মুজাদ্দিয়তের উপর বাইয়াত নেয়ার প্রমাণ এখানে :

অন্যমত বৈশিষ্ট্য : হযরত ইমাম মাহদীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তিনি নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে ইমাম মাহদী দাবী করবেন না। হাদীসের و هو كاره শব্দ দ্বারা একথাই বুঝানো হয়েছে বরং যথাসময় আল্লাহতায়ালাই তাঁর আত্মপ্রকাশের উপায় বের করে দেবেন। (দেখুন, আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী অধ্যায়)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার নিজেকে মসীহ এবং ইমাম মাহদী দাবী করে নিজেকে ঘটা করে প্রকাশ করেছিলেন আর সেজন্য পত্র পত্রিকা বিতরণ ও বই পুস্তক প্রকাশ করে বিলিও করেছেন। (মির্যা কাদিয়ানীর ইশতিহারগুলোর সমষ্টি ‘মাজমুআয়ে ইশতিহারাত’ খন্ড নং ১ হতে ৩ দ্রষ্টব্য)।

যুদ্ধাভিযান : হযরত ইমাম মাহদী বাইয়াত শেষে খোরাসানের দিকে অতপর সিরিয়ার দিকে রণযাত্রা করবেন। (দেখুন, আল কওলুল মুখতাসার, ইমাম ইবনে হাজার আল-হাইতামী রহ:)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার তিনি কখনো ইসলামের জন্য জিহাদ করেননি, হজ্জ, উমরাহ, যাকাত এবং ইতিকাফ কিছুই করেননি। (দেখুন, সীরাতে মাহদী, রেওয়ায়েত নং ৬৭২, খন্ড নং ৩; মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ)।

সালাতের ইমামতি : হযরত ঈসা (আ:) নাযিল হয়ে ইমাম মাহদীর পেছনে সালাত আদায় করবেন। যাতে তাঁর পুণ: আগমন শুধুমাত্র একজন উম্মতি হিসেবে হওয়ার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা লাভ করে। (সহীহ মুসলিম কিতাবুল ঈমান হা/১৫৬; আল-মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা ১৪৭; ইমাম ইবনে কাইয়ুম রহ:)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার তিনি নিজেকে একই সাথে মাহদী এবং ঈসা দুটো একত্রে হওয়ার দাবী করেছিলেন। (দেখুন, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ২০৯; ৪র্থ এডিশন)।

দেশ শাসন : হযরত ইমাম মাহদী তিনি শাসন সাত বছর আরব শাসন করবেন। (আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী হা/৪২৮২)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী জীবনে কখনো গ্রামের মেম্বারও ছিলনা। বরং ব্রিটিশ সরকারের হুকুমত রক্ষায় নিজেকে আমৃত্যু উৎসর্গই করে গেছেন। (দেখুন, তার ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)।

ইনসাফ ভিত্তিক শাসন-প্রতিষ্ঠা : হযরত ইমাম মাহদী তিনি সমগ্র পৃথিবীকে ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন। (দেখুন, ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান হা/৪০৭৭)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সময় থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার প্রতিনিয়ত বাড়তেই আছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো তার অন্যতম সাক্ষী।

খেলাফত হস্তান্তর : হযরত ঈসা (আ:)-এর নিকট ইমাম মাহদী তিনি খেলাফত হস্তান্তর করবেন। সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলো এরপক্ষে সুস্পষ্ট ইংগিত বহন করে। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সারা জীবনটাই কেটেছে ব্রিটিশের চাটুকারিতা আর পদলেহনের মধ্য দিয়ে। (মাজমুআয়ে ইশতিহারাত ৩/১৯; আশ-শিরকাতুল ইসলামিয়া রাবওয়া)।

ইন্তেকাল : হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, হযরত ইমাম মাহদী তিনি ঈসা (আ:)-এর নুযূলের কয়েক বছর পরেই মারা যাবেন। (আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী হা/৪২৮৬ হযরত উম্মে সালমাহ রা: হতে)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী শায়খ আব্দুল হক গজনভী রহ: এর সাথে ১৮৯৩ সালে অনুষ্ঠিত মুবাহালার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন)। (দেখুন, মালফূজাত ৫/৩২৭ নতুন এডিশন, হায়াতে নাসের পৃষ্ঠা ১৪, পুরাতন এডিশন, লিখক এডিটর ‘আল হিকাম’ পত্রিকা)। উপরের দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, হাদীসে বর্ণিত সেই ইমাম মাহদী কোনোভাবেই মির্যা কাদিয়ানী হতে পারেনা।

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আরও পড়ুন : একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ এর ঘটনা নিয়ে কাদিয়ানীদের বাড়াবাড়ি

মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে ‘খাতামুন নাবীঈন’ এর অনুবাদ

0
  • মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে ‘খাতামান নাবীঈন’ এর অর্থ

বাংলাদেশি কাদিয়ানিদের বইতে “খাতামান নাবীঈন” এর অর্থ ‘সর্বশেষ নবী’ করা হয়না। অথচ নবুওয়ত দাবী করার আগে মির্যা কাদিয়ানী সে নিজেও তার বইতে “খাতামান নাবীঈন” অর্থ সেটাই লিখে গেছেন যেটি ইসলামের প্রথম শতাব্দী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমস্ত মুসলমানের হৃদয়ে বদ্ধমূল। আমার জানা মতে এদেশীয় কাদিয়ানীদের মধ্যে বেশিরভাগই ঊর্দু পারেনা। যেসব কাদিয়ানী মতাবলম্বী উর্দু পারেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি :

পড়ুন : ঈসা (আ:) পুনরায় আগমন করলে তখন শেষ নবী কে হবেন?

এই দেখুন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেও পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০ এর খন্ডাংশ “ওয়া খাতামান নাবীঈন” এর অর্থ ঊর্দুতে করেছেন “আওর খতম করনে ওয়ালা নবীয়ুঁ কা” (اور ختم کرنے والا نبیوں کا)। অর্থাৎ তিনি (মুহাম্মদ) নবীগণের সমাপ্তকারী। (রূহানী খাযায়েন ৩/৪৩১) স্কিনশর্ট দ্রষ্টব্য। বাকিটা নিজেই বুঝে নিন!

  • উল্লেখ্য, খাতাম শব্দের অনেকগুলো আভিধানিক অর্থ রয়েছে। যথা সীল-মোহর, শেষ ও সমাপ্তি এবং আংটি। সহীহ বুখারী সহ বহু সহীহ হাদীসে রাসূল (সা:) নিজেই ‘খাতামান নাবীঈন’ এর প্রকৃত অর্থ কী তা ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ (অর্থাৎ আমার পর আর কোনো নবী নেই)-এইরূপ শব্দচয়নে সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। তাই “খাতাম” শব্দটির যতগুলোই আভিধানিক অর্থ থাকুক না কেন তন্মধ্যে এখানে শব্দটি শুধুমাত্র ‘শেষ বা সমাপ্তকারী’ অর্থেই ধর্তব্য হবে। আর যারা ‘সীল-মোহর’ অর্থ নিয়ে থাকেন তাদেরটাও নিম্নোক্ত ব্যাখ্যায় সঠিক। কেননা, সীল-মোহর কোনো কিছু লেখার শেষেই লাগিয়ে দেয়া হয়। এর দ্বারা বুুুঝানো হয় যে, এই লিখাটি এখানেই সমাপ্ত। তদ্রুপ রাসূল (সা:) এমন একজন নবী ছিলেন যাঁর আগমনের মাধ্যমে আল্লাহতালা কেয়ামত পর্যন্ত নবুওয়তের দরজায় সীল-মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত আর কারো জন্য এই সীল-মোহর খোলা হবেনা। আর ঈসা (আ:) যেহেতু পূর্ব থেকেই নবুওয়তপ্রাপ্ত , নতুনভাবে নবুওয়তের দায়িত্বভার নিয়ে আসবেন না, স্রেফ একজন উম্মতি মর্যাদায় আসীন হবেন; ফলে তাঁর পুনঃ আগমনে কোনোভাবেই উক্ত নবুওয়তের দরজায় ধাক্কা লাগবেনা। যেজন্য একথা বলাও জায়েজ হবেনা যে, ঈসা (আ:) পুনঃ আগমন করলে তখন শেষ নবী কে হবেন? আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

বাহাস ১ : ঈসা নবী জিন্দা না মুর্দা?

0

বাহাস : ঈসা নবী জিন্দা না মুর্দা?

কাদিয়ানীরা কথায় কথায় ঈসা নবী জিন্দা না মুর্দা এই প্রসঙ্গে আলোচনা ছুড়ে দেয়, যাতে মির্যার জীবনচরিত্র নিয়ে কেউ আলোচনা করার সুযোগ না পায়। তাই এই বিষয়ে সংক্ষেপে যেভাবে আলোচনার ইতি টানবেন…

এক নজরে মির্যা কাদিয়ানী ও কাদিয়ানীয়ত Click

কাদিয়ানী : মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কুরআনের ত্রিশ আয়াত দিয়ে প্রমাণ করেছেন ঈসা (আ:) মুর্দা। তাই আকাশ থেকে কেউ আর আসবেনা।
মুসলমান : যদি তাই হয় তাহলে তিনি ইতিপূর্বে কেন লিখে গেলেন ঈসা (আ:) জীবিত এবং আকাশ থেকে নাযিল হবেন!?
কাদিয়ানী : এটি তখনকার কথা যখন আল্লাহ তাকে ইলহামের মাধ্যমে জানাননি। তাই তিনি প্রচলিত আকীদা অনুসারেই এমনটি লিখেছিলেন।
মুসলমান : আচ্ছা তাহলে দেখা যাক, তিনি কথাগুলো প্রচলিত আকীদা অনুসারে লিখেছিলেন নাকি তার কথিত ইলহাম অনুসারেই লিখেছিলেন!
মির্যা সাহেব লিখেছেন “হযরত ঈসা (আ:) তো ইঞ্জিল কিতাব একদম অসম্পূর্ণ রেখেই আকাশে গিয়ে বসে রয়েছেন”। (রূহানী খাযায়েন ১/৪৩১; বারাহিনে আহমদিয়া ৪/৩৬১ টিকা দ্রষ্টব্য)।

আরো লিখেছেন : “আমি বারাহিনে আহমদিয়া নামক বইতে লিখেছিলাম মসীহ ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। তবে পরবর্তীতে আমি লিখেছি, আগত মসীহ (ঈসা) আমি নিজেই।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২-৫৩; হাকীকাতুল ওহী)।

  • এবার আসুন উক্ত কথাগুলো যে কিতাবে তিনি লিখে গেছেন সেই কিতাবের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মির্যার মুখ থেকে জেনে নিই :

(ক) “আমি কিতাবটি আল্লাহর পক্ষ হতে একজন মুলহাম (প্রেরণাপ্রাপ্ত) এবং মামূর তথা আদিষ্ট হয়েই লিখেছি।” (রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫৭; আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম)।


(খ) “প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ উভয় দিক থেকে কিতাবটির পরিচালক মহান আল্লাহ।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/৫৬; ‘আমি এবং আমার বই’ শীর্ষক শিরোনাম)।

তাহলে এবার বলুন! ঈসা (আ:) সত্যিই মুর্দা হলে মির্যা কাদিয়ানী সাহেব বারাহিনে আহমদিয়া নামক কিতাবে ঈসা (আ:) জীবিত থাকা, আকাশ থেকে নাযিল হওয়া ইত্যাদী কথাবার্তাগুলোও কি আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম ছাড়াই কিংবা আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট হওয়া ছাড়াই লিখেছিলেন মনে করেন? অথচ তিনি এও দাবী করতেন, আল্লাহতায়ালা তাকে ভুলের উপর এক মুহূর্তও স্থির থাকতে দেন না (রূহানী খাযায়েন ৮/২৭২)।

তাহলে এবার আমাকে বলুন! যার দাবী, আল্লাহ তাকে ভুলের উপর এক মুহূর্তও স্থির রাখেন না সে ১৮৮৪ সালে কিতাবটি লিখার পর হতে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত বরাবরই কি ভুলের উপর স্থির ছিলেন মনে করেন? তার বারাহিনে আহমদিয়া’র ইলহাম সত্য হলে পরবর্তীতে তিনি কুরআনের ত্রিশ আয়াত দিয়ে ঈসা (আ:)-কে কিভাবে মুর্দা প্রমাণ করতে পারেন? সংক্ষেপে।

কাদিয়ানী : [একদম যখন আর কোনো উত্তর থাকেনা তখন] আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি আমাদের কেন্দ্রে আসুন। আমাদের ইনসার্চগণ তার জবাব দেবেন।
মুসলমান : আপনাদের মির্যা সাহেব যা লিখে গেছেন তা কি আপনাদের ইনসার্চগণ বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন? যদি তা না হয় তাহলে আপনার জন্য কি মির্যা সাহেবের এই উদ্ধৃতিগুলো যথেষ্ট নয়?

[বিশেষ-দ্রষ্টব্য : প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) জিন্দা নাকি মুর্দা এই বিষয়ে ওদের সাথে এইরূপ কনসেপশনেই কথা বলা। যাতে তাদেরকে মির্যা কাদিয়ানীর জীবন-চরিত্র ও সত্যবাদিতা নিয়ে আলোচনায় বাধ্য করা যায়। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর সীমাহীন মিথ্যাচারিতা আর বিদঘুটে জীবনচরিত্র নিয়ে আমার লেখিত ডকুমেন্টারী পুস্তক সিলেক্টিভ’ পড়া যেতে পারে অথবা প্লে স্টোর থেকে ‘রদ্দে কাদিয়ানী‘ অ্যাপটিও ডাউনলোড করে নিতে পারেন।]

কুরআন দ্বারা ঈসা (আ:) এর মৃত্যু সাব্যস্ত হলে তখন এই প্রশ্নগুলোর জবাব কী? Click

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধী ইলহামের সামান্য চিত্র

0

একজন কাদিয়ানী আর একজন মুসলমান তাদের দুইজনের মাঝে ঈসা (আ:) সম্পর্কে কথোপকথন হচ্ছে

  • জনৈক কাদিয়ানীর বক্তব্য :

আল্লাহ তায়ালা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে ১৮৯১ সালে ইলহামের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঈসা (আঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই বর্তমানে তাঁর আকাশে থাকা এবং কেয়ামতের আগে সেখান থেকে নাযিল হওয়ার প্রচলিত বিশ্বাস ঠিক না। (মির্যা সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবনীগ্রন্থ ‘আহমদ চরিত‘ বইয়ের পৃষ্ঠা নং ৮ দ্রষ্টব্য)। তাই আমাদের বিশ্বাস মতে, আগত ঈসা বলতে সে ঈসা-ই উদ্দেশ্য যিনি বনী ইসরাইলী ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর পরিপূর্ণ গুণাবলির অধিকারী হয়ে এই উম্মতের মধ্যে জন্ম নিবেন। আর তিনি-ই ভারতের কাদিয়ান গ্রামের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮ ইং)।

  • কাদিয়ানীর বক্তব্যের প্রতিউত্তর :

প্রিয় আহমদী (কাদিয়ানী)বন্ধু! আমাদের মুসলিম উম্মাহা’র সাথে মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীদের মাঝে অন্যতম সাংঘর্ষিক বিষয়টি হল, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরে মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবী করা। তাই মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবীর সাথে ঈসা (আঃ) জীবিত নাকি মৃত এ সমস্ত বিষয়ের আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমরা মনে করিনা। আর যেহেতু ঈসা (আ:) জীবিত নেই মর্মে সম্পূর্ণ বিষয়টি শুধুমাত্র মির্যা কাদিয়ানীরই কথিত ইলহাম-নির্ভর; তাই এই মুহূর্তে হযরত ঈসা (আঃ) জীবিত নাকি মৃত সেই প্রসঙ্গে আপাদত ১০টা মিনিট পরে যাই। তার আগে মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ইলহাম সম্পর্কে আমার যে প্রশ্নগুলো রয়েছে তার উত্তর দিন! অন্যথা ঈসা (আ:) সম্পর্কে সে যেই ইলহামের (আল্লাহপ্রদত্ত দৈব-বাণী) কথা লিখে গেছে তা জঘন্য মিথ্যা ও বানোয়াট বলেই সাব্যস্ত হবে!

  • মির্যা কাদিয়ানীর বই ‘এক গলতি কা ইযালা’ থেকে তার নবী রাসূল দাবী করার প্রমাণ দেখুন! Click

আপনাদের মির্যা গোলাম কাদিয়ানী নিজেকে মাসীহ ঈসা, ইমাম মাহদী এবং নবী রাসূল ইত্যাদি দাবী করার আগে ১৮৭৫ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছরব্যাপী নিজেকে একজন মুজাদ্দিদ এবং মুলহাম হবার দাবী করতেন। তারই দাবী অনুযায়ী আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে ১৮৮০-৮৪ ইং মধ্যকার সময়টিতে তিনি ৪ খন্ডে “বারাহীনে আহমদিয়া” নামক একখানা কিতাব-ও রচনা করেন। মূলকথা শুরু করার আগে আমি মির্যা সাহেবের চারখানা বক্তব্য পেশ করছি।

  • বারাহীনে আহমদিয়া কিতাবের বৈশিষ্ট্যঃ

প্রথমত, ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ কিতাবের বিশেষত্ব উল্লেখ করে মির্যা সাহেব লিখেছেন :-

“১৮৬৪ কিংবা ১৮৬৫ সালে তথা কাছাকাছি কোনো একটি সময় যখন এই অধম (মির্যা) স্বীয় হায়াতের প্রথমাংশে শিক্ষা-দীক্ষা অর্জনে ব্যস্ত ছিল, তখন (এই অধম) জনাব আঁ-হযরত (সা:)-কে স্বপ্নে দেখতে পেল এবং সেই সময় এই অধম (মির্যা)’র হাতে একটি দ্বীনি কিতাব ছিল যেটি এই অধমের কোনো কিতাব বলেই (তখন) মনে হচ্ছিল। আঁ-হযরত (সা:) তিনি এই কিতাবটি দেখতে পেয়ে আরবি ভাষায় (স্বপ্নে) জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি (মির্যা) এই কিতাবের নাম কী রেখেছ? (আমি) অধম প্রত্যুত্তরে বললাম, আমি এর নাম “কুতুবী” রেখেছি। এই নামের স্বপ্ন-ব্যাখ্যা এখন এই ইশতিহারী কিতাব রচিত হওয়াতে সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই কিতাব (বারাহীনে আহমদী) এমন একটি কিতাব, যেটি কুতুবে ছেতারা (ধ্রুবতারা)’র ন্যায় গয়রে মুতাযালযিল (নিখুঁত) এবং মুসতাহকিম (সুদৃঢ় ও শক্তিশালী)। যার পরিপূর্ণ দৃঢ়তা পেশ করতে দশ হাজার রূপিয়ার ইশতিহার দেয়া হয়। মোদ্দাকথা, আঁ-হযরত (সা:) তিনি কিতাবটি আমার কাছ থেকে নিয়ে নেন। কিতাবটি যখন হযরত (সা:)-এর পবিত্র হাতের সংস্পর্শে আসল এবং তাঁর হাতের ছোঁয়া লাগল তখনি সেটিতে অবর্ণনীয় একটি খোশ রঙ সৃষ্টি হল এবং চমৎকার আমরুত (পেয়ারা) ফল হিসেবে পরিণত হয়ে গেল। আঁ-হযরত (সা:) যখন এই ফলকে বণ্টন করার জন্য টুকরো টুকরো করতে চাচ্ছিলেন তখন তা হতে এই পরিমাণে স্বাদ নির্গত হল যার ফলে আঁ-হযরত (সা:)-এর হাত মুবারক কনি পর্যন্ত মধুতে ভরে গেল।” (রেফারেন্স – বারাহীনে আহমদিয়া খন্ড নং ৩ (বাংলা অনূদিত পৃষ্ঠা নং ১৯২); রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ২৭৫; লেখক, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত; ২০০৮ সালে পুনঃ মুদ্রিত)।

  • পুরো বক্তব্যের খোলাসাঃ

(১) খোদার নির্দেশিত কিতাবটির নাম “কুতুবী“। অর্থাৎ ধ্রবতারার ন্যায় নিখুঁত, আর দলিল-প্রমাণের দিক থেকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী।

(২) এটি অপ্রতিরোধ্য কিতাব যার মুকাবিলায় সেই সময়ে দশ হাজার রূপীর ইশতিহার (চ্যালেঞ্জ) ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

(৩) এমন কিতাব যেটি হযরত (সা:)-এর পবিত্র হাতের ছোঁয়া লাগায় তাতে অবর্ণনীয় খোশ রঙ সৃষ্টি হয় এবং চমৎকার আমরুত (পেয়ারা) ফলে পরিণত হয় এবং যার স্বাদ এই পরিমাণে নির্গত হয় যার ফলে হুজুর (সাঃ)-এর হাত কনি পর্যন্ত মধুতে ভরে যায়।

(৪) মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত পুস্তকের ১ম খন্ডের ৫৬ নং পৃষ্ঠায় মির্যা সাহেব “বারাহীনে আহমদিয়া” সম্পর্কে আরো লিখেছেন “প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় দিক থেকে এই কিতাবের তত্ত্বাবধায়ক এবং কর্তৃপক্ষ হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

  • যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদের বৈশিষ্ট্যঃ

দ্বিতীয়ত, মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমামগণ সম্পর্কে মির্যার বক্তব্য :

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ১৮৯৯ সালেও খোদ নিজ হাতে যুগ ইমাম তথা মুজাদ্দিদ আর মুফাসসির সম্পর্কে তার কিতাবে লিখে গেছেন, دوسرے ایسے ائمہ اور اکابر کے ذریعہ سے جن کو ہریک صدی میں فہم قرآن عطا ہوا ہے جنہوں نے قرآن شریف کے اجمالی مقامات کی احادیث نبویہ کی مدد سے تفسیر کرکے خدا کی پاک کلام اور پاک تعلیم کو ہریک زمانہ میں تحریف معنوی سے محفوظ رکھا. ایام الصلح অর্থাৎ [আল্লাহতালা কর্তৃক পবিত্র কুরআনের সঠিক শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগে সর্বসাকুল্য অবিকৃত রাখার চারটি পদ্ধতির মধ্য হতে] দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এমন ইমাম এবং আকাবের (তথা মুজাদ্দিদ)গণ দ্বারাও যাঁদের প্রত্যেক শতাব্দীর মাথায় কুরআনের বিশুদ্ধ বুঝ প্রদান করা হয়ে থাকে। তারা কুরআন শরীফের অস্পষ্ট বিষয়াদী নবীর হাদীস সমূহের সাহায্যে তাফসীর করে খোদার পবিত্র বাণী ও পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগেই অর্থগত বিকৃতি থেকে রক্ষা করেছিলেন।’ (আয়্যামুছ ছুলহি ৫৫, সংকলনের তাং ১৮৯৯ ইং; রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)। (স্ক্রিনশটে দেখুন)

  • তারপর প্রত্যেক যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের ব্যাখ্যা মেনে নেয়া কিরূপ জুরুরী সে সম্পর্কে মির্যা সাহেব লিখেছেন :

(১) মুজাদ্দিদ ব্যক্তি খোদাপ্রদত্ত জ্ঞান আর ঐশী আয়াত সহকারে আগমন করা জুরুরী। (রূহানী খাযায়েন ৩/১৭৯)।

(২) মুজাদ্দিদকে কুরআনের বুঝ দান করা হয়। (রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)।

(৩) স্মরণ রেখো! মুজাদ্দিদ ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে কোনোরূপ বেশকম করেননা। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪)।

(৪) যে ব্যক্তি ইলহামপ্রাপ্ত সে কি নিজ থেকে কোনো কথা বলতে পারে? (রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)।

(৫) মুজাদ্দিদের কথায় বিশ্বাস রাখা ফরজ নয় বলা খোদার হুকুম থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার সমতুল্য। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪)।

  • মির্যা সাহেব ভুল-ক্রুটির উর্ধ্বে হওয়াঃ

তৃতীয়ত, মির্যা সাহেব নিজেকে একজন সুরক্ষিত এবং ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে বুঝাতে যা যা লিখে গেছেন তা তারই বই থেকে জেনে নিন!

(১) আল্লাহতালা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির থাকতে দেন না এবং আমাকে প্রত্যেক ধরণের ভুল ভ্রান্তি কথা হতে রক্ষা করেন। (নূরুল হক, রূহানী খাযায়েন ৮/২৭২)।

(২) আমি যাই কিছু বলি সবই খোদার নির্দেশে বলি এবং আমি আমার নিজ থেকে কিছুই করিনা। (মাওয়াহিবুর রহমান, রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)।

(৩) আমি দুনিয়ার কথা বলিনা। কেননা আমি দুনিয়া হতে নই। বরং আমি সেটাই বলি যা খোদাতায়ালা আমার মুখে ঢেলে দেন। (পয়গামে ছুলহি, রূহানী খাযায়েন ২৩/৪৮৫)।

  • কুরআনের সমস্ত প্রজ্ঞা অর্জনকরাঃ

চতুর্থত, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-ও তুলে ধরা হবে। মির্যা সাহেবের কথিত ওহী, ইলহাম আর কাশফ এর সমষ্টিকে গ্রন্থবদ্ধ করা হয় “তাযকিরা” নামে। এই বইয়ের ৩৫ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে,

তিনি লিখেছেন, ১৮৮২ সালে তার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম হয় ‘আর রাহমান আল্লামাল কুরআন’। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার উক্ত কথিত ইলহামের ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, اس الہام کے رو سے خدا نے مجھے علوم قرآنی عطا کئے ہیں اور میرا نام اول المومنین رکھا اور مجھے سمندر کی طرح معارف اور حقائق سے بهر دیا ہے অর্থাৎ “আর-রহমান আল্লামাল কুরআন” এই ইলহাম দ্বারা খোদাতায়ালা আমাকে কুরআনের অগণিত প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং আমার নাম রেখেছেন ‘আওয়্যালুল মুমিনীন’। আমাকে সমুদ্রের মত কুরআনের প্রজ্ঞা আর নিগূঢ় রহস্যাবলী দ্বারা পূর্ণ করে দিয়েছেন।” (রূহানী খাযায়েন ১৩/৫০২)।

  • এক নজরে মির্যা কাদিয়ানী ও কাদিয়ানীয়ত Click


মূল-কথাঃ

এবার মূল কথায় ফিরে আসা যাক ! মির্যা সাহেবের মত এমন একজন মুলহিম এবং মুজাদ্দিদ দাবীদারের বইতে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পরিস্কার শব্দে লিখা আছে,

(১) ঈসা (আঃ) তো ইঞ্জিল কিতাবকে একদম অসম্পূর্ণ অবস্থায় ছেড়ে আকাশে গিয়ে বসে আছেন। (টীকাঃ বারাহীনে আহমদিয়া ৩৬১; রূহানী খাযায়েন ১/৪৩১)।

(২) “আমার-ও এই বিশ্বাস ছিল যে, ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবে।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২)।

(৩) “আমি বারাহীনে আহমদিয়ার মধ্যে লিখেছিলাম, মাসীহ ইবনে মরিয়ম (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবেন। কিন্তু পরবর্তীতে লিখেছি, আগত সেই মাসীহ আমি নিজেই।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২-৫৩)।

(৪) খোদাতালা স্বীয় পবিত্র বাণীতে ঈসার পুনঃআগমন বিষয়ে ইংগিত করেছেন। তাই সেই ইংগিতের বর্ণনা বারাহীনে আহমদিয়া’র তৃতীয় খন্ডে উল্লেখ করা হয়েছে। অত্র আয়াত ‘হুয়াল্লাযী আরসালা রাসূলাহু বিল হুদা… (সূরা তাওবা ৩৩)’র মধ্যে ফোরকানি ইশারা রয়েছে যে, اور جب حضرت مسیح علیہ السلام دوبارہ اس دنیا میں تشریف لائیں گے تو ان کے ہاتھ سے دین اسلام جمیع آفاق اور أقطار میں پہیل جائے گا অর্থাৎ যখন মাসীহ আলাইহিস সালাম ‘দ্বিতীয়বার’ এই পৃথিবীতে আগমন করবেন তখন তাঁর হাতে ইসলাম সমগ্র দুনিয়ার আনাচেকানাচে পৌঁছে যাবে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩; সারমর্ম)।

  • আমার প্রশ্নগুলোঃ

যদি মনে করেন যে, মির্যা সাহেবের আগের সে সমস্ত কথা সঠিক ছিলনা অথবা তার পরবর্তী বক্তব্যের মাধ্যমে আগের গুলো রহিত হয়ে গেছে কিংবা আল্লাহতায়ালা তাকে পরবর্তীতে নতুনভাবে ইলহামের মাধ্যমে ঈসা’র মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন; তখন নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর কিভাবে দেবেন!

(১) প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ কিতাবটির তত্ত্বাবধায়ক ও কর্তৃপক্ষ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিভাবে হন যেখানে ঈসা (আঃ) আকাশে থাকা এবং তাঁর দ্বিতীয়বার আগমন সম্পর্কে উল্লিখিত কথাগুলো ভুল ও ভ্রান্ত?

(২) এই ধরণের ভুল ভ্রান্তি কথা যেই কিতাবে থাকে সেটি কিভাবে “কুতুবী” (ধ্রুবতারা)’র ন্যায় নিখুঁত এবং দলিল-প্রমাণের দিক থেকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয়? ভাবিয়ে তোলে কিনা?

(৩) স্বপ্নযোগে রাসূল (সাঃ) এমন একখানা কিতাবের প্রসংশা কিভাবে করতে পারেন যেই কিতাবটি চরম পর্যায়ের ভুলভ্রান্তি এমনকি শিরিকি আকীদায় ভরপুর? কারণ মির্যা সাহেব বলেছেন, ঈসা (আঃ)-কে জীবিত থাকার বিশ্বাস শিরিক! (রূহানী খাযায়েন ২২/৬৬০)।

(৪) ‘দোবারা‘ তথা দ্বিতীয়বার তো সে ব্যক্তি-ই আসতে পারেন যিনি প্রথমবার এসেছিলেন, তাই নয় কি? এমতাবস্থায় সে ঈসা-ই যদি আর জীবিত না থাকেন তখন গোলাম আহমদের এই “দো-বারা” ওয়ালা ইলহামের কী হবে? অথচ বারাহিনে আহমদিয়া নামক বইটির বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে গিয়ে মির্যা সাহেব লিখেছেন “আমি এই কিতাব খোদাতায়ালার পক্ষ হতে ‘মামূর’ তথা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই লিখেছি। কেউ তার প্রদত্ত কোনো দলিল ভাঙ্গতে পারলে তাকে দশ হাজার রূপিয়া পুরস্কার দেয়া হবে।” (দেখুন, মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩-২৫; আরো ১/২৭-২৮; নতুন এডিশন)। এই কথাগুলোর কী জবাব? মির্যা সাহেবের আকীদা-বিষয়ক পরের ইলহামী কথা দ্বারা কি তার আগের ইলহামী কথা রহিত হয়ে যাবে?

(৫) মির্যা সাহেব খোদার নির্দেশ ছাড়া কিছুই বলেন না, মুলহাম কখনো নিজ থেকে কিছুই বলেন না, মির্যা সাহেবের মুখে আল্লাহ যা ঢেলে দেন তিনি শুধু তাই বলেন, আল্লাহ তাকে ভুলের উপর এক মুহূর্ত-ও স্থির থাকতে দেন না, কথাগুলো সত্য হলে তখন এই টাইপের একটি লোক কিভাবে খোদার নির্দেশিত পুস্তকে-ও যতসব ভ্রান্তিপূর্ণ(!) আর শিরিকি(!) কথা লিখতে পারেন? তা-ও আবার “কুতুবী” নামক খ্যাতি পাওয়া কোনো বইতে যেটি স্বপ্নে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বলেই মির্যার দাবী! জবাব কিভাবে দেবেন!

(৬) মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব (মৃত ১৯০৮ ইং) পরিস্কারভাবে কিন্তু এ-ও লিখে গেছেন : میرے ہر بات الہامات پر مبنی ہوتی ہے۔ অর্থাৎ আমার প্রত্যেকটা কথা ইলহামের উপর প্রতিষ্ঠিত। (রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা ২২১)। কাজেই ঈসা (আঃ) বেঁচে নেই, তার এই বক্তব্য ইলহামী হলে তখন ঈসা (আঃ) আকাশে জীবিত, তিনি সেখান থেকে কেয়ামতের আগে দ্বিতীয়বার আগমন করবেন, মর্মে আগেকার ইলহামী বক্তব্যগুলোর কী হবে?

(৭) এতদ্ব্যতীত মির্যা সাহেবের পরবর্তী দাবী অনুসারে আগত সেই মাসীহ যদি তিনি নিজে-ই হন তখন বনী ইসরায়েলি ঈসা’র দ্বিতীয়বার আগমনের সেই ফোরকানী ইশারা‘র কী হবে?

(৮) মির্যা গোলাম আহমদকে সমুদ্রের মত কুরআনের অগণিত প্রজ্ঞা আর নিগূঢ় রহস্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়ার ইলহামের দুই বছর পর ১৮৮৪ সালে ঈসা (আঃ)-এর দ্বিতীয়বার আগমন করার সেই ‘ফোরকানী ইশারা’ ওয়ালা ইলহামটির-ও বা কী জবাব?

সংক্ষেপে এ কয়েকটি প্রশ্ন করলাম। আল্লাহর ওয়াস্তে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন আর ভেবে দেখুন, ইসলামের গত চৌদ্দশত বছরের উম্মতে মুহাম্মদিয়ার সর্বসম্মত আকীদা, তাফসির, অসংখ্য সহীহ হাদীস আর সকল যুগ ইমাম এবং ইসলামের ইতিহাস সব কিছুকে পাশ কেটে শুধু এমন একজন ব্যক্তির কথায় আপনারা কিভাবে আস্থা আর বিশ্বাস রেখে ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয়বার আগমনকে অস্বীকার করতে পারেন, যেই মানুষটির জীবনে স্ববিরোধী কথাবার্তার অন্ত ছিল না!? নতুবা উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর জবাব কিভাবে দেবেন?

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইসলামকে সহজীকরণের উদ্দেশ্যে দাওয়াতের এক ভয়ঙ্করপন্থা

0
  • আলোচনার শুরুতে আমরা দু’টি পরিভাষার সাথে পরিচিত হই… ওলামায়ে কেরামের তো জানাই আছে, অন্যদের জন্য নিম্নে পরিভাষা দুটোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো!

১। التلفيق (আত তালফীক) :

একাধিক মাযহাবকে একত্র করে আমল করাকে তালফীক বলা হয়। যেমন- একজন অজু করলো। এরপর তার শরীর থেকে রক্ত বের হলো। সে মনে মনে বললো, ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ এর মাযহাব অনুযায়ী যেহেতু শরীর থেকে রক্ত বের হলে অযু ভাঙ্গে না, অতএব আমি এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহের মাযহাব অবলম্বন করলাম। কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রীর শরীরের সাথে হাত লাগলো। মেয়েদের শরীর স্পর্শ করলে ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মাযহাব অনুযায়ী ওযু নষ্ট হয় না। কিন্তু ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর মাযহাব মোতাবেক ওযু নষ্ট হয়ে যায়। সে এখন স্থির করলো, এ ব্যাপারে আমি ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ এর মাযহাব গ্রহণ করলাম। এরপর সে ঐ অজু দ্বারা নামায আদায় করলো। এটা হচ্ছে তালফীকের উদাহরণ।

২। تتبع الرخص (রুখসত অন্বেষণ বা সুযোগ সন্ধান) :

শরীয়তে রুখসত বলতে দুই ধরনের বিষয়কে বুঝানো হয় : এক. কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা নির্দেশিত রুখসত। যেমন- মুসাফির অবস্থায় চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযকে দুই রাকআত আদায় করা। এ ধরনের রুখসত পালনে কোনো অসুবিধাই নেই। এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

  • ان الله يحب ان تؤتى رخصه كما يحب ان تؤتى عزائمه

আল্লাহ তাআলা রুখসতগুলো পালন করাও তেমনটিই পছন্দ করেন, যেমনটি তিনি চান আযীমতগুলো পালন করা। (আল মুজামুল কাবীর: ১১/৩২৩, হাফেয মুনযিরী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আত তারগীব: ২/১৩৫)। দুই. ফুকাহায়ে কেরামের ইজতেহাদী রুখসত সমূহ খুঁজে বেড়ানো। অর্থাৎ কোনো একজন মুজতাহিদ ইমাম একটি বিষয়কে নাজায়েয বলে আখ্যা দিয়েছেন, আর অন্য কোনো ইমাম সে ব্যাপারে জায়েযের ফতওয়া দিয়েছেন। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র সুবিধার স্বার্থে এই ধরনের রুখসতগুলো অন্বেষণ করে করে আমলের জন্য গ্রহণ করার চেষ্টা করা। এক কথায় নিজের মনের সাথে যেটা মিলে, সব মাযহাব থেকে এমন সহজটা গ্রহণ করা। অথচ শরীয়তে প্রবৃত্তির অনুসরণকে সম্পূর্ণভাবে হারাম করা হয়েছে। (দেখুন, আল মুওয়াফাকাত,৫/৯৯, আল বাহরুল মুহীত,৬/৩২৫, জামিউ বয়ানিল ইলমি ওয়া ফাজলিহী ২/৯২)। এখানে এই দ্বিতীয় অর্থ উদ্দেশ্য।

তালফীক ও তাতাব্বুউর রুখাসের মাঝে যেমন কিছুটা সাদৃশ্য আছে, তেমনিভাবে এ দু’য়ের মাঝে কিছুটা পার্থক্যও রয়েছে। এ সম্পর্কে অনেক লম্বা আলোচনা আছে, যা এ অল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ‘তালফীক’ ও ‘তাতাব্বুউর রুখসাত’ এ দু’টি চিন্তাধারাকেই ওলামায়ে কেরাম নাজায়েয, হারাম ও মারাত্মক গোনাহের কাজ বলে গণ্য করেছেন। (আল মুওয়াফাকাত: ৪/১৪০)। কেউ বলতে পারেন, হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো দুই জিনিসের মাঝে সহজটাই গ্রহণ করতেন। আমি বলবো, হাদীসটা অর্ধেক বলে থামেন কেন? পূর্ণ হাদীসটি ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন, ভুল ভেঙ্গে যাবে।

  • عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّهَا قَالَتْ مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلاَّ أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا، فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ.‏

হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা হতে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে যখনই দু’টি জিনিসের মাঝে একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহ না হতো। গুনাহ হতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। সহীহুল বুখারী, হাদীস নম্বর: ৩৫৬০।

দুইজিনিসের মাঝে স্বাধীনতা দেয়া হলে, সেই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহজটা ওই সময় গ্রহণ করতেন, যখন তা গুনাহ না হতো। আর তালফীক ও সুযোগসন্ধানকে তো প্রবৃত্তির অনুসরণ হবার কারণে নাজায়েয ও গুনাহের কাজ বলা হয়েছে। তাই অর্ধেক হাদীস পড়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না। হাফেয ইবনে হাযম রাহিমাহুল্লাহ এবং হাফেয ইবনে আব্দুল বার রহিমাহুল্লাহ এই ধরনের চিন্তাধারা নাজায়েয ও হারাম হওয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের ইজমা’ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। (মারাতিবুল ইজমা’: পৃষ্ঠা নম্বর: ১৭৫, জামিউ বয়ানিল ইলম)। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন: যদি কোনো ব্যক্তি নাবীযে তামারের ব্যাপারে আহলে কূফার মাযহাবের উপর, সেমা’ অর্থাৎ গান-বাদ্যের ব্যাপারে আহলে মদীনার মাযহাবের উপর, আর নিকাহে মুতআ’র ব্যাপারে আহলে মক্কার অভিমতের উপর আমল করে, তাহলে সে ফাসেক হয়ে যাবে। মা’মর রহিমাহুল্লাহ থেকেও এই ধরনের বর্ণনা এসেছে। (ইরশাদূল ফুহূল: পৃষ্ঠা নম্বর: ২৭২)।

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ইফতাবোর্ড এর ফতওয়ার কিতাব ফাতাওয়া আল লাজনা আদ দাইমাহ ও আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ-তে (২২/১৬৪) শরয়ী মাসায়েলে রুখসত খুঁজে বেড়ানো বা সুযোগসন্ধানকে নাজায়েয, শরীয়তবিমুখতা, ও প্রবৃত্তির অনুসরণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে শরীয়ত মানুষের খেল তামাশার পাত্র হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। ফাতাওয়া আল লাজনাহ আদ দাইমাহ এর এই ইবারতটিও ভালো করে লক্ষ্য করুন :

  • أما إن كان المراد بالأخذ بالرخص في الدين هو الأخذ بالأسهل وما يوافق هوى الإنسان من فتاوى وأقوال العلماء – فإن ذلك غير جائز، والواجب على الإنسان أن يحتاط لدينه، وأن يحرص على إبراء ذمته، فلا يتبع إلا ما صح به الدليل من كتاب الله وسنة نبيه صلى الله عليه وسلم، وإن كان جاهلا بالحكم فإنه يسأل أهل الذكر ممن يوثق بعلمه وفتواه، ولا يكثر من سؤال العلماء في المسألة الواحدة فيتبع الأسهل له وما يوافق هواه، فإن ذلك دليل على تفريطه وإهماله لأمور دينه، وقد أثر عن بعض السلف قوله: (من تتبع رخص العلماء فقد تزندق).

রুখসত থেকে উদ্দেশ্য যদি তুলনামূলক বেশি সহজটি ও বিভিন্ন অভিমত থেকে নিজের মনমতো অভিমতটি গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা নাজায়েয। মানুষের জন্য জরুরী হলো, দ্বীনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা। কর্তব্য আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। অতএব, কুরআন-সুন্নাহর সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণিত অভিমতটিই অনুসরণ করবে। আর যদি হুকুম না জানা থাকে তাহলে যার ইলম এবং ফায়ারওয়াল উপর আস্থা রাখা যায় এমন গ্রহণযোগ্য কোনো আহলে ইলমকে জিজ্ঞাসা করবে। সহজ ও সুযোগ সন্ধানের উদ্দেশ্যে একই মাসআলা বিভিন্ন জনের কাছে জিজ্ঞেস করবে না। এটা তার দ্বীনের ব্যাপারে অবহেলা ও উদাসিনতার প্রমাণ হবে। সালাফের মধ্যে অনেকে বলেছেন, যে ওলামায়ে কেরামের রুখসতগুলো খুঁজে বেড়াবে, সে বদ্বদ্বীন হয়ে যাবে। বড় আফসোসের বিষয় আমাদের কিছু দাঈ ভাইয়েরা বর্তমানে জনপ্রিয়তা অর্জন করার ভয়ঙ্কর এক দাওয়াতিপন্থা বেছে নিয়েছেন। তা হলো, ইসলামকে সহজীকরণ। আর এ উদ্দেশ্যে তারা কখনো তালফীক, কখনো রুখসত সন্ধানের পথ বেছে নেন। এ ধরনের তালফীকপন্থী ও সুযোগসন্ধানী শায়েখদেরকে দেখবেন, তারা নিরপেক্ষতার ভূমিকা গ্রহণ করে বিভিন্ন সময়ে বলে যে, “এটা কি অমুক মাযহাবে নাই?” হানাফী মাযহাবের ইমামগণও তো কখনো কখনো অন্য মাযহাব মোতাবেক ফতওয়া দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঐ ধরনের আমল করলে কী অসুবিধা?

আমি এদের কান্ডজ্ঞান দেখে অবাক হই। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তারা আমজনতাকে গোমরাহী ও বদদ্বীনির দিকে ঠেলে দিতে চান। শরীয়তকে খেল-তামাশা বানাতে চান। নিজ মাযহাব থেকে অন্য মাযহাবের দিকে গমন করা কোনো অপরিহার্য জরুরতের ক্ষেত্রেই হতে পারে। আর এটা কেবলমাত্র যুগশ্রেষ্ঠ, বিজ্ঞ মুফতীয়ানে কেরামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষেত্র বিশেষে হয়। আমজনতা নিজে নিজেই এ ধরনের যেকোনো সময় যেকোনো মাযহাবের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ ধরনের অনুমতি আমজনতার জন্য কখনোই হতে পারে না।

যেখানে এসব শায়খদেরও কোনো না কোনো ইমামের ব্যাখ্যার আলো অনুসরণ করা ছাড়া চলার কোনো পথ নেই। সেখানে তারা কি আমজনতাকে মুজতাহিদ মনে করেন? কোরআন-হাদীসের সামান্য ও সাধারণ জ্ঞান এবং কোরআন-হাদীসের শুধুমাত্র অনুবাদ জানা এ ব্যাপারে যথেষ্ট নয়। কখনো হতে পারে না। সেখানে আমজনতা, যারা কুরআন-সুন্নাহর অনুবাদ জানা তো দূরের কথা অনেকে তো অনুবাদ পড়তেও জানেন না। তাদেরকে আমাদের নিরপেক্ষ এ সমস্ত শায়খ ও দাঈগণ কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও ইচ্ছাস্বাধীনভাবে যেকোনো সময় যেকোনো মাযহাবের অনুসরণ করার অনুমতি দিচ্ছেন। এর প্রতি উৎসাহিত করছেন। আপনি কি ভেবে দেখেছেন, অবস্থা কতটা ভয়ংকর ? কতটা মারাত্মক? এভাবে সাধারণ মানুষ আস্তে আস্তে সুযোগ সন্ধান করতে করতে, মাযহাব থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে, দ্বীন থেকেই এক সময় বের হয়ে যাবে।

মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন বাটালবী, যিনি লা-মাযহাবীদেরকে ওয়াহাবী নাম হতে আহলে হাদীস নামের রেজিস্ট্রেশন এনে দিয়েছিলেন, ইংরেজ সরকার থেকে। তিনি তার ইশাআতুস সুন্নাহ পত্রিকায় উল্লেখ করেছেন, “আমার পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারলাম, পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলম ছাড়া যারা মাযহাব ত্যাগ করে, তারা আস্তে আস্তে দ্বীন থেকে সটকে পড়ে। কেউ খ্রিস্টান হয়, কেউ লামাযহাবী। শরীয়তের আহকাম থেকে বের হয়ে ফাসেক আর ফাজের হয়ে যাওয়া তো এই স্বাধীনচিন্তার অতি স্বাভাবিক ফলাফল।” (ইশাআতুস সুন্নাহ, খ:১১, সংখ্যা: ২, পৃষ্ঠা নম্বর: ৫৩)

শরীয়তের দৃষ্টিতে আসল হচ্ছে সরাসরি কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করা। ‌ কিন্তু এটা কার জন্য? জায়েদ, ওমর, বকরের জন্য? যেকোনো কলিমুদ্দিন সলিমুদ্দিনের জন্য? এটা কি খেলনা? এটা কি ছেলের হাতের মোয়া? তা কখনো না। তাহলে কেনো এবং কোন স্বার্থে আমজনতার সামনে যেকোনো সময় যেকোনো মাযহাবের অনুসরণের দ্বার উন্মোচন করে দেয়া হচ্ছে? বিভিন্ন মাযহাবের রুখসত আর সুযোগগুলো তাদের সামনে বয়ান করে করে কেনো তাদের মধ্যে সুযোগসন্ধানী মানসিকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে?

আমাদের দেশের একজন জনপ্রিয় দাঈ আছেন। যিনি সদাসর্বদা জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টায় মত্ত। কখনো ইংরেজি, কখনো সুযোগসন্ধানী বক্তব্য রেখে একে একে আলোচনার শিরোনাম হতে তিনি প্রতিনিয়তই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তালফীকপন্থী। রুখসত অন্বেষণ তথা সুযোগসন্ধানী মানসিকতায় বিশ্বাসী তিনি। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, তিনি কিছুদিন আগে একজন ইমামের একটি অভিমত সামনে এনে ফতওয়া দিয়েছিলেন, মেয়েরা চেহারা খুলে বাইরে বের হতে পারবে। চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়। পরবর্তীতে আবার অন্য একজন ইমামের বক্তব্য অনুযায়ী ফতওয়া দিলেন, নামাযে কোরআন শরীফ দেখে পড়া যাবে। এটাকেই বলে তালফীক ও সুযোগসন্ধান । আবার ইদানিং নতুন একটি ফতওয়া দিয়েছেন, কষ্টকর কাজ যারা করেন, তারা রোযা না রাখলেও চলবে। আবার বলছেন, তারাবীহের নামায চার রাকাত পড়লেও চলবে। আবার কেহ কেহ বলছেন, অজু ছাড়াও কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা যাবে। এটাকে বলে রুখসত অন্বেষণ , সুযোগসন্ধান। অনেকে বলেন, উক্ত মাওলানার এটা ভুল হয়েছে। তাঁর ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা নাই, ইত্যাদি….।

কিন্তু আমি তা মনে করি না। ইফতা না পড়লেও আমাদের দারুল ইফতাগুলো থেকে সাধারণ যেসব মুফতী বের হন, কিতাব পত্র দেখে-শুনে তাকওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে ফতোয়া দিলে তিনি তাঁদের চেয়ে খারাপ করবেন না। আমি মনে করি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এরকম করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করবেন। কারণ তিনি তালফীকপন্থী, সুযোগসন্ধানী মানসিকতায় বিশ্বাসী। যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। শরীয়তের বুনিয়াদ বিধ্বংসী চিন্তা। কিন্তু তিনি সেই নিষিদ্ধ পন্থাই অনুসরণ করে যাচ্ছেন। বরং সেদিকে মানুষকে বয়ানের মাধ্যমে উৎসাহিত করছেন। দাওয়াত দিচ্ছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা অর্জনের মেইন হাতিয়ারই হচ্ছে, تلفيق ও تتبع الرخص । কারণ, তাঁর যে প্রয়োজন জনপ্রিয়তা…দ্বীন কোথায় যায় যাক, দ্বীনের বুনিয়াদ ধ্বংস হয় হোক, তাতে তেমন কিবা যায় আসে? দ্বীনের অবস্থা যাই হোক, নিজের অবস্থান তো তৈরি হবে… বস্তুবাদী ও ভোগবাদী সমাজের যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী ও আমজনতা অধিকাংশই যে এখন শুধু সহজ চায় তাদেরকে আকৃষ্ট করতে দ্বীনের সহজীকরণ প্রয়োজন। তাই দরকার তালফীক ও রুখসত। অথচ আমরা দেখি, আমাদের সালাফগণ এ ব্যাপারে অনেক অনেক সর্তকতা অবলম্বন করেছেন। যেনো সাধারণ মানুষ দ্বীন-ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে না পড়ে। সামান্য ব্যাপারে রুখসত অন্বেষণ না করে। সুযোগসন্ধানী না হয়ে যায়। এখানে আমি সহীহুল বুখারীতে তায়াম্মূম অধ্যায়ে উল্লেখিত একটি হাদীস পেশ করছি –

  • عَنْ شَقِيقٍ، قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ وَأَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ فَقَالَ لَهُ أَبُو مُوسَى لَوْ أَنَّ رَجُلاً أَجْنَبَ، فَلَمْ يَجِدِ الْمَاءَ شَهْرًا، أَمَا كَانَ يَتَيَمَّمُ وَيُصَلِّي فَكَيْفَ تَصْنَعُونَ بِهَذِهِ الآيَةِ فِي سُورَةِ الْمَائِدَةِ ‏{‏فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا‏}‏ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ لَوْ رُخِّصَ لَهُمْ فِي هَذَا لأَوْشَكُوا إِذَا بَرَدَ عَلَيْهِمُ الْمَاءُ أَنْ يَتَيَمَّمُوا الصَّعِيدَ‏.‏ قُلْتُ وَإِنَّمَا كَرِهْتُمْ هَذَا لِذَا قَالَ نَعَمْ‏.‏

শাক্বীক রাহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নে মাস’ঊদ ও আবূ মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ‘আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-কে বললেন, কোনো ব্যক্তি জুনুবী (গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি) হলে সে যদি এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, তা হলে কি সে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে না? শাক্বীক (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, এক মাস পানি না পেলেও সে তায়াম্মুম করবে না। তখন তাঁকে আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, তাহলে সূরা মায়িদাহ্‌র এ আয়াত সম্পর্কে কী করবেন যে, “পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে” (সূরা আল-মায়িদা ৫/৬)। আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জওয়াব দিলেন, মানুষকে সেই অনুমতি দিলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে যে, সামান্য ঠান্ডা লাগলেই লোকেরা মাটি দিয়ে তায়াম্মুম শুরু করবে। আমি বললাম আপনারা এ জন্যেই কি তা অপছন্দ করেন? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ।

জুনুবীর ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনে তায়াম্মুমের অনুমতি থাকলেও, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করতেন। কেন? যাতে করে মানুষের মাঝে সুযোগ সন্ধানের মানসিকতা সৃষ্টি না হয়। সামান্য ঠাণ্ডার ভয়েই যেন তায়াম্মুম শুরু করে না দেয়। সহীহুল বুখারী, হাদীস নম্বর: ৩৪৭। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু কিছু বক্তা আমজনতার অজ্ঞতা আর মূর্খতাকে পুঁজি করে তাদের চাহিদা মোতাবেক শুধু সহজ ও রুখসতের মাসায়েলগুলো উল্লেখ করেন। মাঝেমধ্যে হিন্দি ও বাংলা সিনেমার গান গেয়েও শোনান। যাতে সহজেই শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়া যায়। বাস্তবিকপক্ষে এ সকল বক্তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য তো নয়ই, বরং তারা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। কারণ তারা শরীয়তকে তামাশায় রূপান্তরিত করছে। আহ্ ! যে জনপ্রিয়তা অর্জনে আমরা গর্ব করি, আমাদের আসলাফ ও পূর্বসূরীগণ সেটা ঘৃণা করতেন।

ওয়াজ-নসীহত ও দ্বীনের কথা সবার থেকে হাসিল করা যায় না। এখনতো স্টেজে দু-চারটি কথাবার্তা সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারলেই তাকে অনেক বড় ‘আল্লামা’ মনে করা হয়। আমাদের দেশের সাধারণ পাবলিকের ভক্তি-শ্রদ্ধার কোনো মাপকাঠি বলতেই নেই। রাস্তার হকাররা এমবিবিএস ডাক্তারের চেয়ে লেকচার ভালো দেয়। তার লেকচার যতই শ্রুতিমধুর হোক, তার কথায় ওষুধ খাওয়া যাবে না। তদ্রুপ সব বক্তার উপর আস্থা রাখা যাবে না। তাদের সবার বক্তব্যের উপর আমল করা যাবে না। বিনোদনমূলক ওয়াজ থেকে বিনোদন নেওয়া যাবে, আমল করা যাবে না। একমাত্র হকপন্থী, উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়ার উপরই আমল করতে হবে। যেনতেন বক্তার বক্তৃতা, যেকোনো লেকচারারের লেকচার শুনেই দৌড় দেওয়া যাবে না। মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে, মুহাম্মদ ইবনে ছীরীন রহিমাহুল্লাহ বলেন :

  • إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِينٌ، فَانْظُرُوا عَمَّنْ تَأْخُذُونَ دِينَكُمْ.

“নিশ্চয় ইহা দ্বীনের অংশ। সুতরাং তোমরা কার কাছ থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো, তা ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখো।” (মুকাদ্দিমায়ে মুসলিম: পৃষ্ঠা ১১)। একজন মানুষের সবচেয়ে বড় গোমরাহী হলো, চিন্তা-চেতনার গোমরাহী। মানুষের মতাদর্শ যখন বদলে যায়, ইসলামের সঠিক রূপরেখা থেকে ফিরে যেতে থাকে, তখন আস্তে আস্তে সে ‘ফিকরি ইরতিদাদে’র শিকার হয়ে যায়। উপর থেকে দেখে আপনি মনে করবেন, সে আসলে একজন পাক্কা মুসলিম। কিন্তু বাস্তবে ভেতর থেকে চিন্তা-চেতনা, মাসলাক-মাশরাবের দিক থেকে, সে সম্পূর্ণই ভ্রান্ত পথের অনুসারী হয়ে যায়। মানুষ যখন তালফীক ও সুযোগসন্ধানের পথে চলতে থাকে, তখন তারাও এই ধরনের পরিনণতির পথে চলতে শুরু করে…. আমাদের কিছু ভাইয়েরা বুঝে না বুঝে আমজনতাকে সে পথের দিকেই নিয়ে যাচ্ছেন।

হঠাৎ জনপ্রিয়তা সংক্রান্ত একটি গল্প মনে পড়লো। ছোটবেলায় আমি আমার কোনো একজন শিক্ষকের কাছে গল্পটি শুনেছিলাম। একজন লোক কয়েকবার হজ্ব করলো। কিন্তু তাকে কেউ হাজী বলে না। তখন সে একজনের কাছে পরামর্শ চাইলো, আমি এতবার হজ করলাম, আমাকে কেউ তো হাজী বলে না, এখন কী করি বলুন তো? লোকটি সব শুনে বললো, ব্যতিক্রমধর্মী কিছু না করলে, স্রোতের বিপরীত না চললে, রাতারাতি শোহরত পাওয়া যায় না। জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায় না। তুমি এবার হজে গিয়ে এমন একটা কাজ করবা, যা ইতিপূর্বে কেহই করে নি, তাহলে দেখবা সবাই তোমাকে হাজী বলে ডাকবে। সে জিজ্ঞাসা করলো, কী করতে হবে? লোকটি বললো, এবার হজে গিয়ে জমজম কূপে পেশাব করতে শুরু করবা, দেখবে সবাই তোমাকে হাজী বলবে। লোকটি এবার হজে গিয়ে সত্যি সত্যি জমজম কূপের মধ্যে পেশাব করার পরিকল্পনা করলো। জমজম কূপের পারে গিয়ে যেই মাত্র পেশাব শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে, ওমনি লোকজন বাঁধা দিয়ে বলা শুরু করলো, এই দেখো দেখো মুতুরে হাজী কী করে ! হায়রে মুতুরে হাজীর কারবার ইত্যাদী। তখন থেকে সবাই লোকটিকে হাজী বলা শুরু করলো, তবে সাথে একটি বিশেষণ যুক্ত করে। সেটা হলো, “মুতুরে হাজী”। জনপ্রিয় হওয়ার জন্য ইসলামকে সহজীকরণ করে ব্যবসা করার কোনো দরকার নেই। ইসলাম ধর্মের সমস্ত হুকুম-আহকাম এমনিতেই সহজ। সুন্দর। আকর্ষণীয়। ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই যুগে যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইসলাম ধর্মে অনুপ্রাণিত হয়েছে। ইসলাম তলোয়ারের জোরে নয়, আদর্শ ও সৌন্দর্যের কারণে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

  • وَ مَا جَعَلَ عَلَیۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ مِنۡ حَرَجٍ

আল্লাহ তাআলা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি। (সূরা হজ্ব, আয়াত নম্বর:৭৮)। অর্থাৎ ইসলামের মধ্যে এমন কোনো নির্দেশ নেই, যেখানে সঙ্কীর্ণতা রয়েছে।

  • يريد الله بكم اليسر

এই আয়াতটির এবং الدين يسر হাদীসটির আজকাল অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য সহজ আহকাম চান। কোনো হুকুম-আহকামের মধ্যে সংকীর্ণতা রাখেননি, কথাটির অর্থ হচ্ছে, ইসলামে যে বিধানগুলো দেওয়া হয়েছে, তা আসলেই অনেক সহজ। এতে কোনো ধরনের সংকীর্ণতা নেই, কঠোরতা নেই। যেমন পূর্ববর্তী উম্মতের উপরে ছিলো। পূর্ববর্তী উম্মতের জন্য গুনাহের তওবা ছিলো, হত্যা করে ফেলা। রাতে গুনাহ করলে সকালে দরজায় লেখা উঠতো। জাকাতের কোনো নিসাব ছিল না। সবারই দিতে হতো‌। দেওয়াও লাগতো চার ভাগের এক ভাগ। আবার তা কারো উপকারে আসতো না। মাঠে রেখে আসতে হতো। আগুন এসে জ্বালিয়ে দিতো। কোরবানীর বিষয়ও ঠিক এমনই ছিল। কেউ গোশত খেতে পারত না। আগুন এসে কবুল হওয়া কোরবানীটি জ্বালিয়ে দিতো। কাপড়ে এমনকি কোনো কোনো বর্ণনা মোতাবেক শরীরেও নাপাক লাগলে, পবিত্রতার জন্য কাপড় বা শরীরের ওই স্থান কেটে ফেলতে হতো। এরকম আরো অনেক অনেক কঠোর বিধান ছিল‌। চিন্তা করে দেখুন ! ইসলামের বিধানগুলো সে তুলনায় কত সহজ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

  • بُعِثْتُ بِالْحَنِيفِيَّةِ السَّمْحَةِ

অর্থাৎ আমাকে সব বাতিল আদয়ান ও ভ্রান্তমতবাদ থেকে ভিন্নতর, সহজ সরল দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। মুসনাদে আহমাদ,৩৬/৬২৪, হাদীস নম্বর: ২২২৯১, আল মুজামুল কাবীর,৮/২২২ হাদীস নম্বর: ৭৮৮৩। আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ইসলামী বিধি-বিধান এমনিতেই সহজ। সব মাযহাব থেকে রুখসত, সুযোগ ও ছাড় দেওয়া বিধানগুলো একত্রিত করে, নতুন করে সহজীকরণের কোনো প্রয়োজন নেই। যারা ইসলামকে শর্টকাট ও সহজীকরণের মতাদর্শে বিশ্বাসী তারা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন! আপনি যদি শরীরের উপরের অংশের সবচেয়ে শর্টকাট পোশাকটি, আর নিচের অংশের সবচেয়ে শর্টকাট পোশাকটি পরিধান করেন, তাহলে এই পোশাক পরিধান করে জনসম্মুখে যাওয়ার, স্টেজে বসে লেকচার দেওয়ার মত পরিস্থিতি থাকবে কি? (সতর শুধুমাত্র নিজের সামনের ও পিছনের লজ্জাস্থান দুটি, এমন অভিমতও তো একজন অনেক বড় ইমামের রয়েছে।) তাহলে স্টেজে বসে ইসলামকে এতো শর্টকাট করার চিন্তাভাবনা কেন? রুখসত ও সুযোগসন্ধানী মানসিকতায় বিশ্বাসীরা সালাফের একটি কথা স্মরণ করে ভয় করা উচিৎ।

  • من تتبع الرخص فقد تزندق

যে ব্যক্তি রুখসত ( সুযোগ ) খুঁজে বেড়াবে, সে ঈমানহারা হয়ে যাবে। এটা সম্ভবত ইমাম আউযায়ী রাহিমাহুল্লাহর বক্তব্য। ইরশাদুল ফুহুল কিতাবে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। কাজী ইসমাঈল রাহিমাহুল্লাহ একদিন খলীফা মু’তাজিদ বিল্লাহ আব্বাসীর দরবারে প্রবেশ করলেন। তখন খালীফা তার সামনে একটি কিতাব তুলে ধরে বললেন, এটা ভালো করে দেখুন তো! কাজী সাহেব ভালো করে দেখলেন, সেখানে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামের রুখসতগুলো (সুযোগ এর ফতোয়াগুলো) একত্রিত করা হয়েছে। কাজী সাহেব খলীফার উদ্দেশ্যে বললেন, এ কিতাবের লেখক বদদ্বীন। খলীফা জিজ্ঞাসা করলেন, একিতাবের হাদীসগুলো কি সহীহ নয়? এখানে উল্লেখিত মাসআলাগুলো কি সহীহ হাদীস শরীফে উল্লেখ নেই? তিনি বললেন, অবশ্যই সহীহ। তবে যিনি একটিকে জায়েয বলেছেন, তিনি অন্যটিকে জায়েয বলেননি। যিনি একটির অনুমতি দিয়েছেন, তিনি অন্যটির অনুমতি দেননি। কিন্তু লেখক সব মাযহাব থেকে শুধু সুযোগ ও রুখসতের ফতোয়াগুলোই এখানে একত্র করেছেন। তখন খলীফা ওই কিতাবটি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ,২২/১৬৪)। এসব শর্টকাট ও সহজীকরণের কথা শুনলে, আমার ছোটবেলায় পড়া একটি বাবুরাম সাপুড়ে কবিতার কথা মনে পড়ে।

                    বাবুরাম সাপুড়ে,               কোথা যাস্ বাপুরে ?                আয় বাবা দেখে যা,               দুটো সাপ রেখে যা—              যে সাপের চোখ্ নেই,               শিং নেই, নোখ্ নেই,  ছোটে না কি হাঁটে না, ‌‌কাউকে যে কাটে না, ‌করে নাকো ফোঁস্ ফাঁস্, মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ, নেই কোনো উৎপাত, খায় শুধু দুধ ভাত, সেই সাপ জ্যান্ত গোটা দুই আন্ত ! তেড়ে মেরে ডাণ্ডা ক'রে দিই ঠাণ্ডা।!

আমাদের কিছু ভাইয়েরা এরূপ ইসলামই চান, যেটা হবে এ কবিতার সাপের মতো, নখ-দন্ত বিহীন। আর সে জন্যই তারা বেছে নিয়েছেন মারাত্মক ভয়ংকর দাওয়াতীপন্থা ” তালফীক ও সুযোগসন্ধান” । আল্লাহ তাআ’লা আমাদের ঐসকল ভাইদেরকে হিদায়াত করুন। সঠিক পথে ব্যবহৃত হলে, তাঁরা আমাদের সম্পদ । আল্লাহ তাআলা তাদের সঠিক পথে, ইখলাসের সাথে দাওয়াত দেওয়ার তাওফীক দিন। আর আমাদের সবাইকে শরীয়াহ’র বুনিয়াদ বিধ্বংসী তালফীক ও সুযোগসন্ধানী মানসিকতা থেকে হিফাজত করুন।

  • মুফতী মুহাম্মদ শফী কাসেমী সাহেবের টাইমলাইন থেকে
  • স্বনামধন্য হাদীস বিশারদ [মুহাদ্দিস], বগুড়া জামিল মাদরাসা

মির্যার স্ববিরোধীতা-১

1

প্রথমত, নবুওয়ত ও রেসালত দাবী অস্বীকার:

এখন এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?

১. মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে (তিনি লিখেছেন) ‘আমাদের নবী সৈয়্যদেনা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-কে খোদার পক্ষ থেকে খাতামান নাবীঈন নিযুক্ত করার পর নবুওয়তের দাবী করা থেকে আমি খোদার আশ্রয় চাই’। (হামামাতুল বুশরা [বাংলা], পৃষ্ঠা নং ১৪৮; অনুবাদক ফিরোজ আলম, কেন্দ্রীয় বাংলা ডেস্ক, ইউ. কে; প্রকাশকাল নভেম্বর ২০১১ ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ; মূল লিখক মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী [আরবী])।

২. আরো লিখেছেন : ‘আমাদের রসূল (সা.)-এর পর কীভাবে কোন নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।’ (হামামাতুল বুশরা [বাংলা], পৃষ্ঠা নং ৪৮)।

৩. মির্যা সাহেব তার বইটির আরেক স্থানে আরও লিখেছেন : “আর আমার দ্বারা নবুওয়তের দাবী করে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাওয়া এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভবপর নয়।” (দেখুন ‘হামামাতুল বুশরা‘ (বাংলা) অনূদিত পৃষ্ঠা নং ১৪২; স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তিনি পরবর্তীতে নবুওয়তের দাবী করে নিজেই নিজের ফতুয়ায় কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন!

৪. মির্যা কাদিয়ানী সাহেব আরো লিখেছেন :
ان سب باتوں کو مانتا ہوں جو قرآن اور حديث کی رو سے مسلم الثبوت ہیں. اور سیدنا مولانا حصرت محمد مصطفیٰ صلى الله عليه وسلم ختم المرسلين کے بعد کسی دوسرے مدعی نبوت اور رسالت کو کازب اور کافر جانتا ہوں. میرا یقین ہے کہ وحی رسالت حضرت آدم صفی اللہ سے شروع ہوئی اور جناب رسول اللہ محمد مصطفیٰ صلی اللہ علیہ و سلم پر ختم ہو گئی

  • (উচ্চারণ) “যূ কুরআন আওর হাদীস কি রো ছে মুসাল্লামুছ ছবূত হেঁ আওর সাইয়েদানা ওয়া মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতমুল মুরসালীন কে বা’দ কেসি দোসরে মুদ্দায়ীয়ে নবুওয়ত আওর রেসালত কো কাজিব আওর কাফের জানতা হোঁ। মেয়েরা একীন হে, কে ওহীয়ে রেসালত হযরত আদম ছফিউল্লাহ চে শুরু হুয়ি আওর জনাবে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফর খতম হো গি।”

অর্থঃ কুরআন হাদীস দ্বারা যেসব বিষয় দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত আমি সেসব বিষয় মান্য করি। সায়্যেদিনা মাওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতমুল মুরসালিন)’র পরে কেউ নবুওয়ত আর রিসালতের দাবি করলে সে মিথ্যাবাদীকাফের। আমার ইয়াক্বিন (বিশ্বাস), ওহী এবং রেসালত ছফি উল্লাহ হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু হয়ে জনাব রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপর সমাপ্ত হয়ে গেছে। (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩১; উর্দূ এডিশন ও অনলাইন ভার্সন)।

সূত্র: মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩১ (উর্দূ)

দ্বিতীয়ত, নবুওয়ত ও রেসালত দাবী :

১. মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে : ‘মোটকথা আমি মুহাম্মদ ও আহমদ (সঃ) হওয়ার কারণে আমার নবুওয়ত ও রেসালত লাভ হয়েছে, স্বকীয়তায় নয়, ‘ফানাফির রসূল’ হয়ে অর্থাৎ রসূলের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে পেয়েছি। সুতরাং এতে ‘খাতামান্নাবীঈনের’ অর্থে কোন ব্যতিক্রম ঘটলো না। পক্ষান্তরে ঈসা আলায়হেস্সালাম আবার (এ পৃথিবীতে) আসলে [খাতামান্নাবীঈনের অর্থে] নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম ঘটবে।’ (দেখুন ‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৫; [বাংলায় অনূদিত], দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ২০০১ ইং; অনুবাদক মৌলভী মোহাম্মদ; মূল লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; রচনাকাল ১৯০১ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ)।

২. আরো লিখেছেন : “সুতরাং আমি যখন আজ পর্যন্ত খোদার নিকট হতে প্রায় দেড়শত ভবিষ্যতবাণী লাভ করে স্বচক্ষে পূর্ণ হতে দেখেছি। তখন আমার নবী ও রসূল হওয়া আমি কীরূপে অস্বীকার করতে পরি? যখন স্বয়ং খোদাতাআলা আমাকে নবীরসূল আখ্যা দিয়েছেন, তখন আমি কীরূপে এটা প্রত্যাখ্যান করতে পারি এবং তাকে ছেড়ে অন্যকে ভয় করি?” (দেখুন ‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৮; [বাংলায় অনূদিত], দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ২০০১ ইং; অনুবাদক মৌলভী মোহাম্মদ; মূল লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; রচনাকাল ১৯০১ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ)। সংক্ষেপে এই কয়েকটি প্রমাণ দেয়া হল।

নইলে আরো অসংখ্য প্রমাণ দেয়া যেত। যাদের সত্য গ্রহণকরার মত পিপাসা রয়েছে তাদের জন্য মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবীর প্রমাণের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। সুতরাং তার অনুসারীরা মির্যার এই কুফুরীগুলো ঢাকতে যতভাবেই ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয় না কেন, কথা একটাই; নবুওয়তের দাবীদার মুসাইলামা কাজ্জাব, আসওয়াদে আনুসী, তুলায়হা ও শাজাহ এরা যেমন কাফের ও মুরতাদ হিসেবে গণ্য হয়েছিল তদ্রুপ মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীরাও কাফের হিসেবে গণ্য হবে। যে পর্যন্ত মির্যার মত এই নিকৃষ্ট কাফের ও মুরতাদকে ত্যাগ না করবে, মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর খতমে নবুওয়তের উপর পরিপূর্ণরূপে ঈমান না আনবে সে পর্যন্ত তারা নামায রোজা হজ্ব ও যাকাত সহ যাই করুক না কেন তার সবই মূল্যহীন ও অগ্রহণযোগ্য। সহজকথায়, অজু ব্যতীত নামায পড়লে নামাযের যে অবস্থা হবে ঠিক অনুরূপ অবস্থা হবে মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর খতমে নবুওয়তের উপর পরিপূর্ণ ঈমান না রাখলে।

শেষকথা : মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন: মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে। (রূহানী খাযায়েন: ২১/২৭৫)। অতএব এবার মির্যা কাদিয়ানী তারই স্ববিরোধী কথার কারণে কী সাব্যস্ত হলেন একটু ভেবে দেখবেন কি? এমন একজন মিথ্যাবাদীকে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান কিজন্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

তারাবীহ’র সালাতের রাকাত সংখ্যা কত?

0

তারাবীহ’র সালাত কত রাকাত, প্রশ্নের উত্তর শুনে তিনি আর কোনো প্রতিউত্তর করলেন না….

গত রাত্রে হঠাৎ এক লোক ফোন দিলো। রিসিভ করার পর সে বলল, আপনি কি মুফতী শফী কাসেমী? আমি বললাম আপনার পরিচয়টা? সে পরিচয় দিতে রাজি হলো না। বারবার জিজ্ঞাসা করার পরে বলল, আমি লালমনিরহাট থেকে বলছি। কী করেন? জিজ্ঞাসা করলে বলল, তিনি নাকি কোথা থেকে কামিল পাস করেছেন।

আমি বললাম, ঠিক আছে ভাই! কোনো কথা থাকলে বলতে পারেন। সে কোনো ভুমিকা ছাড়াই সরাসরি বলে উঠলো, আপনারা যে ২০ রাকআত তারাবীহ পড়েন এটা ভুল। আমি বললাম কেন? সে বলল, বুখারী শরীফে আছে, মা আয়েশা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। আমি বললাম, ভাই ! হাদীসটির মূল এবারত পড়ে, তারপরে অনুবাদ করুন। আপনার ভুলটা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। হাদীসের আরবী ইবারত বলতে পারবেনা বলে জানালো সে। কিন্তু তার দাবি, বাংলাতে তিনি যা বলেছেন হাদিসটা এমনই। বারবার বলতে লাগলো, বাংলায় বললে কি হবে না? আমি বললাম, ভাই আপনি এখানে হাদিসের কিছু অংশ ছেড়ে দিয়ে বলছেন। তাই আমি আপনাকে মূল আরবী ইবারত বলে, এরপর তরজমা করতে বলেছিলাম। এবার মূল হাদীসটি শুনুন, বলে আমি তাকে মূল ইবারত ও তার অনুবাদ শোনালাম, (আরবী)

روى البخاري (3569) ، ومسلم (738) عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ ؟ قَالَتْ : " مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ تَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ :(تَنَامُ عَيْنِي وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي)

তারপর বললাম, এখানে আমার তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিন,

১) রাবীয়ে হাদীস হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সালামের যে নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য গিয়েছিলেন, সেটা যদি তারাবিহ হতো, তাহলে হযরত আয়েশা সিদ্দিকাকে জিজ্ঞাসা করতে যাওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? তারাবীহ তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল সাহাবীদের সামনে মসজিদেই পড়েছেন। যে কোনো পুরুষ সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর পেয়ে যেতেন। এতে তো বোঝা যায়, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে ওই নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্যই গিয়েছিলেন, যেটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়িতে নীরবে নিভৃতে একাকী পড়তেন অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায সম্পর্কে।

২) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেছেন, এটা ঐ নামায যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান এবং রমজান ছাড়া বাকি এগারো মাস অর্থাৎ সারাবছরই পড়তেন। বলুনতো তারাবির নামাজ কি সারা বছর পড়ে? এতে কি স্পষ্ট হয়ে যায় না যে এ নামাযটি তারাবীহ নয়, বরং তাহাজ্জুদের নামায?

৩) আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর চৌদ্দ হিজরীতে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সকল সাহাবীদের সামনেই মসজিদে নববীতে সকলকে একত্রে এক জামাতে এক ইমামের পিছনে ২০ রাকাত তারাবীহর নামাযের উপরে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তখন তো হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাও জীবিত ছিলেন। কারণ তিনি ইন্তেকাল করেছেন আটান্ন হিজরীতে। এই দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছর হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা তাঁর হুজরা শরীফের পাশে ২০ রাকাত তারাবিহ হতে দেখলেন। এই হাদীসটি যদি ৮ রাকাত তারাবির দলিলই হতো, তাহলে মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা কেন এই সুদীর্ঘ ৪৪ বছর সময়কালের মধ্যে একবারও মনে করলেন না যে, এ হাদিস দিয়ে ৮ রাকাত তারাবি প্রমাণ হতে পারে? তিনি তো কোনদিনই বলেননি, ওগো নবীর সাহাবীরা! আপনারা আমার হুজুর শরীফের পাশে রসুলের জায়নামাজে কেন ২০ রাকাত তারাবিহ আদায় করছেন? অথচ আমার কাছে একটি হাদিস আছে যা দ্বারা ৮ রাকাত তারাবীহ প্রমাণ হয়। বরং হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাও সকল সাহাবীদের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবিই মেনে নিয়েছেন। তারাবির নামায ৮ রাকাত হয়, এটা তিনি কখনো মনে করেননি। তিনি এও মনে করেন নি যে, তার বর্ণিত হাদীস শরীফটি দিয়ে ৮ রাকাত তারাবিহ প্রমাণ হতে পারে। দয়া করে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিন।

আমার প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর না দিয়েই সে বললো, আমি আপনার সাথে বাহাস করবো। আপনি কি হাদীস জানেন?

আমি বললাম, ভাই বাহাস‌ তো করবেন কিন্তু দয়া করে হাদীসের সংজ্ঞাটা একটু বলুন! হাদীস কাকে বলে? এটা বাংলায় বললেও হবে। তিনি হাদীসের সংজ্ঞা জানেন না বলে জানালেন। আমি বললাম, দাবী করলেন আপনি আহলে হাদীস, আপনি হাদীস নিয়ে বাহাস করবেন। অথচ হাদীস কাকে বলে তাই জানেন না? তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গালি দিতে দিতে ফোন রেখে দিলেন।এরপর আর কোনো দলিল নয়, বারবার এসএমএস পাঠিয়ে শুধু গালিই দিয়ে যাচ্ছেন।কী আর করবেন? দলীল যখন নেই, গালিই তো তখন পুঁজি…..।

  • মুফতি মুহাম্মদ শফী কাসেমী সাহেবের টাইমলাইন থেকে