Home Blog Page 6

ইমাম বায়হাক্বীর সংকলনে ‘মিনাস সামায়ি’ শব্দটির উপর একটি আপত্তির জবাব

0

প্রশ্ন : ইমাম বায়হাক্বী (রহ.)-এর সংকলন الاسماء و الصفات কিতাবে উল্লিখিত ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন (ينزل من السماء) শীর্ষক একই হাদীসটি সহীহ বুখারীতেও এসেছে, কিন্তু সেখানে ‘সামা’ বা আকাশ শব্দটি নেই! এখন ইমাম বায়হাক্বীর সনদে এই ‘সামা’ (আকাশ) শব্দ কোত্থেকে বা কিভাবে এলো? আসমাউর রিজালশাস্ত্রের গবেষক মুহাদ্দিসগণ থেকে এইধরনের বর্ণনার হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : এখানে হাদীসটির সনদে ইমাম বুখারী (রহ.)-এর সনদ অপেক্ষা শেষের দিকে আরো তিনজন রাবী অতিরিক্ত রয়েছে। শায়খ আলবানী (রহ.) এর তাহকিক অনুসারে এখানে ‘সামা’ (আকাশ) শব্দটি এঁদেরই কারো থেকে বৃদ্ধিকৃত হবে যাকে উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘যিয়াদাতুর রাবী’ (زيادة الراوى) বলা হয়। এই ক্যাটাগরির হাদীসকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। তন্মধ্যে প্রথম প্রকারের হাদীসকে ‘মাকবূল’ (শর্তমতে গ্রহণযোগ্য) বলা হয়। সহীহ বুখারীর আরবী ব্যাখ্যাকারক ও যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) যিয়াদাতুর রাবী-এর অন্যতম ‘মাকবূল‘ (গ্রহণযোগ্য) হাদীসের সংজ্ঞায় লিখেছেন, زيادة الراوى ليست مقبولة مطلقا عند الجمهور من المحدثين، بل تكون مقبولة اذا لم تقع منافية لرواية من هو أوثق، لانها فى حكم الحديث المستقل الذى يتفرد بروايته الثقة و لا يرويه عن شيخه غيره. অর্থাৎ জামহুর মুহাদ্দেসীনের মতে যিয়াদাতুর রাবী মুক্তভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। (মুক্তভাবে গ্রহণযোগ্য নয় একথার অর্থ হল, যদি রাবীর যিয়াদাত (বৃদ্ধি) অন্য সিকাহ রাবীদের বর্ণিত রেওয়ায়েতের বিরোধী হয়, যার ফলে একটিকে গ্রহণ করলে অন্যটিকে রদ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে; তখন বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া রাবীর যিয়াদাত (বর্ণনাকারীর বৃদ্ধি) গ্রহণ করা যাবেনা। এক্ষেত্রে রাবীদের অবস্থা যাচাইবাচাই করে একটিকে প্রাধান্য আর অপরটিকে অপ্রাধান্য বলে সাব্যস্ত করতে হয়)। তবে যদি কোনো রাবীর যিয়াদাত (বৃদ্ধি) অন্য কোনো আওসাক (অধিক বিশ্বস্ত) রাবীর রেওয়ায়েত কৃত হাদীসের বিরোধী না হয়, তখন রাবী সিকাহ (বিশ্বস্ত) হলে তার রেওয়ায়েত গ্রহণ করা হবে এবং সিকাহ রাবীর রেওয়ায়েতকে পৃথক হাদীস ধরা হবে। (আর মনে করা হবে) আওসাক রাবী সেই অংশ তার নিজ শায়খ থেকে অন্য কোনো কারণে বর্ণনা করেননি। (বলেছেন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ.)। দেখুন, ইবনে হাজার আসকালানী রচিত শরহে নুখবাতুল ফিকার, যিয়াদাতুর রাবী পর্ব দ্রষ্টব্য।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) সিকাহ রাবীর যিয়াদাতের হুকুম সম্পর্কে আরও বলেছেন, و زيادة راويهما مقبولة مالم تقع منافية لمن هو اوثق অর্থাৎ হাদীসে হাসান এবং সহীহ’র বর্ণনায় যিয়াদাত বা বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য, যে পর্যন্ত না বৃদ্ধিকৃত অংশটি ‘আওসাক’ (অপেক্ষাকৃত অধিক বিশ্বস্ত) রাবী’র বিপরীত হয়। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত নাখবাতুল ফিকার)। কিতাবটির উর্দূ ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ ‘তুহফাতুদ দুরার’-তে “মুখালাফাতুল আওসাক” এর বিশ্লেষণ করে লিখা আছে, اور مخالفت ایسی ہو کہ اس زیادتی کو لینے کی صورت میں ارجح کی روایت کا رد کرنا لازم آئے অর্থাৎ মুখালাফাত এইরূপ হওয়া যে, এই ধরনের বৃদ্ধিকৃত অংশ গ্রহণের দ্বারা অপেক্ষাকৃত অধিক বিশ্বস্ত রাবীর বর্ণনাকে রদ বা বিরোধিতা করা হয়! (তুহফাতুদ দুরার-১৯; শায়খ সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ.)। এখন আপত্তিকারীর উপরই দায়িত্ব বর্তাবে একথা প্রমাণ করা যে, বায়হাক্বীর সংকলিত সম্পূর্ণ ভিন্ন সনদে বর্ণিত হাদীসটির ‘মিনাস সামা’ (من السماء) শব্দের বৃদ্ধি দ্বারা অন্য কোন আওসাক রাবীর বর্ণিত রেওয়ায়েতের মুখালাফাত বা বিরোধিতা করা হয়েছে? এমন কোনো হাদীস কি দেখানো সম্ভব হবে যেখানে ঈসা (আ.)-এর নাযিল হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে ‘সামা’ (আকাশ) শব্দের বিপরীতধর্মী কোনো শব্দ দ্বারা রেওয়ায়ত বর্ণিত হয়েছে? আর তা একজন সহীহ সনদে অপর কোনো ‘আওসাক’ (اوثق) রাবী থেকেই হয়েছে?

বায়হাক্বীর সংকলন থেকে من السماء শীর্ষক হাদীস এর প্রামাণ্য স্ক্যানকপি,

.
মুসনাদে বাজ্জার হাদীস নং ৯৬৪২
  • এবার সহীহ বুখারীর রাবীগণের বাহিরে অতিরিক্ত আরও যে তিনজন রাবীর উল্লেখ ইমাম বায়হাক্বীর উল্লিখিত সনদে (সূত্রে) রয়েছে তাদের ব্যাপারে জারহু ওয়াত-তাদীল এর বিখ্যাত গ্রন্থে কী লিখা আছে তা জেনে নিন! ইমাম যাহাবী (রহ.) লিখেছেন,

১- আবু আব্দুল্লাহ আল হাফিজ। উনার পুরো নাম- মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হামদাবিয়্যা ইবনে নাঈম ইবনে হিকাম। মৃত ৪০৫ হিজরী। তিনি একজন ছিকাহ (বিশ্বস্ত) রাবী ও হাফিজুল হাদীস। ইমাম বুখারী ও মুসলিম উনার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। (তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ২৯৭৯৫ দ্রষ্টব্য)।

২- আবুবকর ইবনে ইসহাক। উনার পূর্ণ নাম- আবুবকর আহমদ ইবনে ইসহাক ইবনে আইয়ুব ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে নূহ। তিনি ২৫৮ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত: ৩৪২ হিজরী। তিনি একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু মাপের মুহাদ্দিস। ইমাম যাহাবী (রহ:) তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন : الإمام العلامة المفتي المحدث ، شيخ الإسلام أبو بكر أحمد بن إسحاق بن أيوب بن يزيد ، النيسابوري الشافعي المعروف بالصبغي অর্থাৎ আবুবকর আহমদ ইবনে ইসহাক তিনি একজন ইমাম, আল্লামা, মুফতি, মুহাদ্দিস ও শায়খুল ইসলাম। তিনি নিশাপুর শহরের অধিবাসী এবং “ছবগী” নামে প্রসিদ্ধ। (দেখুন, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪৪৭; ঊনবিংশতিতম স্তরীয় রাবী)।

৩- আহমদ ইবনে ইবরাহিম। উনার পূর্ণ নাম, আহমদ ইবনে ইবরাহিম ইবনে মালহান। তিনি একজন ছিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম বুখারী মুসলিম দুজনই উনার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি হাদীসটি ইবনে বুকাইর এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য, ইমাম ইবনে বুকাইর-এর পূর্ণ নাম ইয়াহিয়া ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বুকাইর। উনার উপনাম, আবু যাকারিয়া। মৃত: ২৩১ হিজরী। ইবনে হাব্বান (রহ:) উনাকে বিশ্বস্ত রাবীদের মধ্যে শামিল করেছেন। ইমাম বুখারী মুসলিম দুজনই উনার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। (দেখুন, সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৬১৪; দ্বাদশ স্তরীয় রাবী)।

শেষকথা : বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ও যুগ ইমাম আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)-এর সুস্পষ্ট অভিমত দ্বারা-ও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ইমাম বায়হাক্বীর হাদীসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র হাদীস হিসেবে গণ্য হবে এবং সনদের শেষাংশে অতিরিক্ত ৩জন রাবীই ছিকাহ, যাদের কোনো একজনের মাধ্যমেই من السماء টুকরাংশটি বৃদ্ধিকৃত; যা তার উর্ধতন শায়খ হয়ত বা অন্য কোনো কারণে বুখারীর রেওয়ায়েতে উল্লেখ করেননি। আর এ ‘যিয়াদাতুর রাবী’ কর্মটি এ জায়গায় উসূলে হাদীসের প্রতিষ্ঠিত নিয়মের পরিপন্থী না হওয়ায় মাকবুল ও দলিল প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী।

মির্যা কাদিয়ানীর মাযহাব কী ছিল?

0

মির্যা কাদিয়ানীর ‘নবী রাসূল’ দাবী করার পূর্বে সে কোন মাযহাবে ছিল? হানাফী? শাফেয়ী? মালেফী? হাম্বলী? নাকি ‘আহলে হাদীস’ মাযহাবের ছিল?

উত্তর : ভারত উপমহাদেশের বেশিরভাগই হানাফী মাযহাবের ফিকহ অনুসরণ করতেন বিধায় মির্যা কাদিয়ানীও সে একই মাযহাবের ফিকহ অনুসরণ করে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে নবী রাসূল দাবী করার পর থেকে তিনি নির্দিষ্ট কোনো মাযহাবের অনুসরণ করতেন না। সহজ করে বললে, তিনি মুক্ত তাকলিদ করতেন। অর্থাৎ যখন যে মাসয়ালায় সুবিধা নিতে চাইতেন তখন সে মাসয়ালা মতে তিনি আমল করতেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, তিনি ইরতিদাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার পূর্ব মুহূর্তে পর্যায়ক্রমে ‘লা মাযহাবী’ তারপর ‘হাদীস অস্বীকারকারী’ হয়ে পড়েন। হাদীসের প্রতি তার কীরকম বিদ্বেষ ও বিরুক্তি ছিল তা বুঝতে চাইলে তার ‘কিশতিয়ে নূহ’ বইটির শেষের দিকে (পৃষ্ঠা নং ৭৭, জুন ২০১৮ ইং) কয়েকটি পাতা পড়ে দেখুন। যাইহোক, একথা দিবালোকের মত সুস্পষ্ট যে, শরীয়তের শাখাগত ইখতিলাফি মাসয়ালায় উর্ধতন কোনো ইমামকেই তিনি ফলো করতেন না, বরং হানাফী, শাফেয়ী ইত্যাদী পরিচয়কে তিনি ‘বিদয়াত’ আখ্যা দিয়ে গেছেন। নিচে তারই লিখনী থেকে,

(উর্দু থেকে অনুবাদ) “লোকেরা নিজেদের নাম হানাফী, শাফেয়ী ইত্যাদি রেখেছে, এ সবই বিদয়াত। রাসূল (সা.)-এর নাম দু’টিই ছিলো। একটি হল মুহাম্মদ আরেকটি হল আহমদ (সা.)। রাসূল (সা.)-এর ইসমে আজম হল, মুহাম্মদ (সা.)। যেমন আল্লাহতালার ইসমে আজম হল আল্লাহ। আল্লাহ নামটি বাকি সমস্ত নাম তথা হাইয়্যুন, কাইয়্যুম, রহমান, রহীম ইত্যাদির মাউসূফ। রাসূল (সা.)-এর নাম আহমদ। …এভাইে ইসলামী মাযহাবগুলো ভুল করেছে। কেউ নিজেদের হানাফী বলেছে তো কেউ নিজেদের মালেকী বলছে, কেউ নিজেদের শীয়া, কেউ বা সুন্নী বলছে। অথচ রাসূল (সা.)-এর নাম ছিল দুইটি। মুহাম্মদ ও আহমদ (সা.)। সুতরাং মুসলমানদের দুটি দলই হতে পারে। মুহাম্মদী বা আহমদী। মুহাম্মদী সে সময় যখন তার মাঝে জালাল তথা তেজস্বীতার প্রভাব প্রবল ছিল, আর আহমদী তখন যখন জামাল তথা সৌন্দর্যতার প্রভাব থাকবে। (সূত্র: মালফুযাত ১:৪৪৩-৪৪ নতুন এডিশন, পুরাতন এডিশন ২:২০৮-২০৯)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

.
কিশতিয়ে নূহ ৭৭, জুন ২০১৮ ইং

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ত্রিশজন মিথ্যাবাদী নবুওয়ত দাবীদার সংক্রান্ত হাদীসের ব্যাখ্যা

0

ত্রিশজনের পরেরগুলো কি সত্যবাদী? প্রশ্নোত্তর :

প্রশ্ন – হাদীস শরীফে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী নবুওয়তের দাবীদারের আত্মপ্রকাশ হবে, বর্ণিত আছে। এখন প্রশ্ন হল, ঐ ত্রিশজনের পরেরগুলো কি নবুওয়ত দাবীতে সত্যবাদী বলে বিবেচিত হবেন?….. জনৈক কাদিয়ানী কাল্ট!

উত্তর – সহীহ বুখারীর আরবী ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) অনেক আগেই এতদসংক্রান্ত হাদীসটির সঠিক মর্মার্থ সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। তিনি ‘ত্রিশ‘ সংখ্যার হাদীসটিকে (হাদীসটি এখানে) অপরাপর আরও বেশকিছু রেওয়ায়েতকে সামনে রেখে ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন,

(আরবী) وليس المراد بالحديث من ادعى النبوة مطلقا فإنهم لا يحصون كثرة لكون غالبهم ينشأ لهم ذلك عن جنون أو سوداء وإنما المراد من قامت له شوكة وبدت له شبهة

সরল অনুবাদঃ হাদীসে ‘ত্রিশজন’ মিথ্যা নবুওয়ত দাবীদার হতে মুক্ত সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়, কেননা এ সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ বুঝানো হয়নি। যেহেতু মস্তিষ্ক ব্যাধি ও মানসিক সমস্যা থেকেও নবী দাবীর প্রবণতা লক্ষণীয়। যেজন্য হাদীসটি হতে শুধু এ অর্থই উদ্দেশ্য যে, তারা (ত্রিশজন) এমন বিশেষ শ্রেণীর হবে যাদের প্রতাপ (দাপট) থাকবে এবং বিভ্রান্তি সমুন্নত রাখতে সক্ষম হবে।’ (ফাওতহুল বারী শরহে বুখারী ৬/৬১৭)। আশাকরি বুঝতে আর কষ্ট হবার কথা নয়! ধন্যবাদ সবাইকে।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

Fathul Bari 6:617

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মস্তিষ্ক ব্যাধি জনিত সমস্যা ছিল। সে নিজেই প্রসঙ্গক্রমে এটি স্বীকার করে লিখে গেছে। নিচে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি থেকে দেখুন,

মূল লিখক মির্যা কাদিয়ানী

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

কুরআনের আলোকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত

0

পবিত্র কুরআনের আলোকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত বা নবুওয়তের ক্রমধারার সমাপ্তি,

খতমে নবুওয়ত এমন একটি প্রমাণিত বিশ্বাস, যা জরুরিয়াতে দ্বীন অর্থাৎ ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিশ্বাস সমূহের অন্যতম। নিচে এর দলিল দেওয়া হল, আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করছেন,

(আরবী) مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا অর্থ- ‎”মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৪০)। কুরআনের প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, (আরবী) وقد أخبر تعالى فى كتابه ، وأخبر رسوله فى السنة المتواترة عنه ، أنه لا نبى بعده ، ليعلموا أن كل من ادعى هذا المقام بعده فهو كذاب أفاك دجال ضال مضل ، ولو تخرق وشعبذ ، وأتى بأنواع السحر والطلاسم অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন এবং তাঁর রাসূল নিজ সম্পর্কে মুতাওয়াতির সুন্নাহ-তে বলেছেন যে, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই, যাতে প্রত্যেকে জানতে পারে যে, তাঁর পরে এই পদের দাবীদার প্রত্যেকেই চরম মিথ্যাবাদী, প্রতারক এবং পথভ্রষ্ট, যদিও বা সে অসাধারণ কর্ম প্রদর্শন করে, ভেল্কি, যাদু-মন্ত্র ইত্যকার ধরণের অলৌকিক কর্ম নিয়ে আসে না কেন! (সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা, মিশরীয় ছাপা)।

যৌক্তিক প্রমাণ : যুক্তি থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, ইতিপূর্বে নবীগণ আসতেন তিনটি কারণে,

১. পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে।

২. পূর্ববর্তী নবী কোনো নির্দিষ্টকাল বা স্থানের জন্য প্রেরিত হলে।

৩. পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত শিক্ষা অসম্পূর্ণ অথবা তাতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন হলে।

কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য এদের একটিরও প্রয়োজন নেই। তাই নতুনভাবে আর কোনো নবী আগমনের প্রয়োজন নেই। কারণ এই যে,

যুক্তি ১: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ এখনো বিদ্যমান।

যুক্তি ২: হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।

যুক্তি ৩: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

(আরবী) الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থাৎ “আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম ও ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা: ০৩)।

ইজমাহ : আকীদায়ে খতমে নবুওয়তের উপর উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ইজমা বা সর্বসম্মত রায় প্রতিষ্ঠিত।

এ সম্পর্কে ‘তাফসীর রূহুল মা’আনী’ প্রণেতা আল্লামা মাহমুদ আলূসী (রহ.) লিখেছেন, (আরবী) وقال الألوسي في تفسيره: وكونه صلى الله عليه وسلم- خاتم النبيين مما نطق به الكتاب، وصدعت به السنة، وأجمعت عليه الأمة، فيكفر مدعي خلافه. الأديان والفرق অর্থাৎ নবী করীম (সা.) খাতামুন নাবিয়্যীন হওয়ার ব্যাপারে কিতাবুল্লাহ কথা বলে এবং সুন্নাহ তার ঘোষণা দেয়। উম্মাহ এ বিশ্বাসের উপর ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং যে বা যারা এ বিশ্বাসের বিপরীত করবে সে বা তারা কুফুরী করলো। (আল আদইয়ান ওয়াল ফিরাক্ব ১০৭)।

কাজেই বর্তমানে এ আকীদার পক্ষে নতুনভাবে দলিল প্রমাণ তলব করা সুস্পষ্ট গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই না। ইমাম ইবনুল হাজম জাহেরী (রহ.) এ সম্পর্কে লিখেছেন, (আরবী) و أنه لا نبي مع محمد صلى الله عليه وسلم ولا بعده أبداً অর্থাৎ সবাই একমত এ কথার উপর যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে অথবা তাঁর পরবর্তীতে কখনোই আর কোনো নবী নেই। (অর্থাৎ আল্লাহ নতুনভাবে কাউকে নবুওয়ত দান করবেন না)। (মারাতিবুল ইজমা পৃষ্ঠা নং ২৬৮)। উক্ত ইজমার বিষয়টি পরিষ্কার করে আরও যে সমস্ত কিতাবে উল্লেখ আছে তন্মধ্যে ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনু নাজিম এর الْأَشْبَاهُ وَالنَّظَائِرُ عَلَى مَذْهَبِ أَبِيْ حَنِيْفَةَ النُّعْمَانِ (পৃষ্ঠা ১৭৩), ইমাম মোল্লা আলী ক্বারীর شرح الفقه الاكبر (পৃষ্ঠা ২৪৪), আল্লামা মাহমুদ আলূসী আল-বাগদাদীর روح المعانى (২২/৪৪), ইমাম শারফুদ্দীন আন-নববীর روضة الطالبين (১০/৬৪-৬৫), ইমাম কাযী ইয়াজের الشفاء (২/১০৭০-১০৭১) কিতাব সমূহ অন্যতম। ইবনুল হাজম (রহ.)-এর ‘মারাতিবুল ইজমা‘ কিতাব থেকে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –

.

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

অভিধান থেকে ‘খাতাম’ (خاتم) অর্থ

1

আরবী “খাতাম” (خاتم) অর্থ – আংটি, সীল, ছাপ, শেষ, সমাপ্তি। ‘খাতামুন নাবিয়্যীন অর্থ- সর্বশেষ নবী : হযরত মুহাম্মদ (স)। (অভিধান : আল মু’জামুল ওয়াফী, ডক্টর ফজলুর রহমান)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

আরবী বাংলা অভিধান

এবার কয়েকটি পূর্ববর্তী প্রাচীনতম অভিধান ও তাফসীরগ্রন্থ থেকে ‘খাতামান নাবিয়্যীন’ এর অর্থ উল্লেখ করছি,

১. ইসলামের প্রাচীন লিটারেচার ও সুপ্রসিদ্ধ আরবী অভিধান গ্রন্থ ‘তাজুল উরূস‘ এর ৭৬৮৭ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার করে লিখা আছে, ومنه قوله تعالى: {وخاتم النبيين} أي آخرهم অর্থাৎ আল্লাহতালার বাণী : ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন অর্থ- আখেরি নবী (তথা শেষনবী)।

২. ইমাম ইবনুল মানযূর (রহ.) এর শ্রেষ্ঠ আরবী অভিধান গ্রন্থ ‘লিসানুল আরব‘ এর ১২তম খণ্ডের ১৬৪ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, وخِتامُ القَوْم وخاتِمُهُم وخاتَمُهُم آخرُهم……ولكن رسول الله وخاتِمَ النبيّين}: أَي آخرهم অর্থাৎ খিতামুল কওম এবং খাতিমুহুম এবং খাতামুহুম (শব্দগুলোর সমার্থক অর্থ) আখিরুহুম তথা তাদের সর্বশেষ……(আল্লাহর বাণী:) কিন্তু তিনি আল্লাহর একজন রাসূল এবং খাতিমান নাবিয়্যীন তথা তাঁদের মধ্যে তিনি সর্বশেষ। বলে রাখতে চাই যে, শুধুমাত্র ‘ক্বেরাতে হাফস’ ব্যতীত সর্বসম্মত অপরাপর ক্বেরাত মতে خاتم النبيين আয়াতাংশের পঠনরীতিতে ‘তা’ বর্ণে যের রয়েছে (‘লিসানুল আরব’ অভিধান দ্রষ্টব্য)। ‘লিসানুল আরব’ অভিধান গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে আরও লিখা আছে যে, (আরবী) والخاتِمَ والخاتَمُ من اسماء النبى صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ خاتِمَ (খাতিম) এবং خاتَمُ (খাতাম) দু’টিই নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য,

Lisanul Arab 12:164 Old Arabic Dictionary

৩. ইমাম রাগিব আল ইস্পাহানী (রহ.) এর ‘আল মুফরাদাত‘ এর ১৪২ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে خاتم النبيين ختم النبوة أى تممها بمجيئه অর্থাৎ খাতামান নাবিয়্যীনই নবুওয়তের সমাপ্তি। এর অর্থ হল, তিনি তার আগমন দ্বারা নবুওয়তের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।

৪. ‘তাহযীবুল লুগাতিল আযহারী‘ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৪৭৪ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, مَا كانَ مُحَمّدٌ أبَا أحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ ولكنَّ رسول اللهِ وخَاتِمَ النَّبِيِّين (معناه: آخر النَّبيِيِّن.) অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের কোনো পুরুষদের মধ্য থেকে কারো পিতা নন, তবে কিন্তু তিনি আল্লাহর একজন রাসূল এবং খাতিমান নাবিয়্যীন, এর অর্থ হচ্ছে আখিরুন নাবিয়্যীন বা সর্বশেষ নবী।

৫. সর্বাধিক প্রাচীন যুগীয় ইসলামী লিটারেচার ও তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে তাবারী‘-তে ইবনে জারীর আত-তাবারী (রহ.) লিখেছেন, ولكنَّ رسول اللهِ وخَاتِمَ النَّبِيِّين (أى: آخرهم) অর্থাৎ তবে কিন্তু তিনি আল্লাহর একজন রাসূল এবং খাতিমান নাবিয়্যীন, এর অর্থ হচ্ছে আখিরুহুম বা তাদের মধ্য হতে সর্বশেষনবী।

  • উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও “নবী” দাবী করার আগে তার ‘ইজালায়ে আওহাম’ গ্রন্থে “খাতাম” অর্থ লিখেছে – সমাপ্তকারী (উর্দূ: ختم کرنے والا)। রূহানী খাযায়েন ৩/৪৩১। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
.

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবীর সুস্পষ্ট প্রমাণ

0

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘নবী রাসূল’ দাবীর সুস্পষ্ট প্রমাণ তাদেরই ওয়েবসাইটে আপলোডকৃত বই দুটি ডাউনলোড করে সরাসরি দেখে নিন! মির্যা কাদিয়ানী রচিত (একটি ভুল সংশোধন)-এর ডাউনলোড লিংক (রচনাকাল ১৯০১ ইং)
https://www.ahmadiyyabangla.org/books/ekti-bhul-sangshodhan/

ডাউনলোড করে, ৩,৫,৮,১০ নং পৃষ্ঠাগুলো পড়ে দেখুন। ভুল ভাঙবে, ইনশাআল্লাহ

তারপর তার আরেকটা রচনা ‘দাফেউল বালা‘ বইটির ডাউনলোড লিংক
https://www.ahmadiyyabangla.org/books/dafi-ul-balaa/

বইটির ১২ নং পৃষ্ঠাটি পড়ে দেখুন। ইনশাআল্লাহ, তাদের যাদুময় কথাবার্তায় যারা এতকাল বিভ্রান্ত হয়ে আছেন তাদের কাছে মনে হবে, আকাশটা যেন এখুনি তাদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ল!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানী হাকিকি নবী?

0

মির্যা কাদিয়ানীর হাকিকি নবী দাবী :

মির্যা কাদিয়ানীর বইতে ‘হাকিকি‘ নবীর দুই রকম পরিভাষা আমরা খুঁজে পাই। এখানে এটি দ্বিতীয়টা। উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের পরিভাষায় নবী ৩ প্রকার। যথা- হাকিকি নবী, মুস্তাকিল নবী এবং জিল্লি-বুরুজি-উম্মতি-দাস নবী। তারা তাদের পরিভাষা অনুযায়ী মির্যা কাদিয়ানীকে শুধুই তৃতীয় স্তরীয় নবী বলে বিশ্বাস করার কথা বলে (মির্যাপুত্র বশির আহমদ এম.এ রচিত ‘কালিমাতুল ফসল’ পৃ-২৩ প্রথম অধ্যায়)। অথচ তারা তাদের উক্ত পরিভাষা থেকেও অনেক আগে বেরিয়ে যায়। কারণ তাদের দ্বিতীয় খলীফা ও মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ রচিত ‘হাকিকাতুন নবুওয়ত’ গ্রন্থের ভাষ্যমতে মির্যা কাদিয়ানী মূলত ‘হাকিকি নবী’ হবারই দাবীদার বলে প্রমাণিত হচ্ছে। মির্যাপুত্র তার বইটির অত্র পৃষ্ঠায় কোনোরূপ রাখঢাক ছাড়াই তার পিতাকে (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীকে) একজন “হাকিকি নবী” (প্রকৃত নবী) বলেই স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, ہاں آپ نے نبی کے حقیقی معنی وہ فرمائے ہیں کہ وہ کثرت سے امور غیبہ پر اطلاع پائے اور بتاؤ کہ جو شخص ان معنوں کی رو سے جو حقیقی معنیٰ ہے نبی ہو کہ وہ حقیقی نبی ہوگا یا نہیں؟ অর্থাৎ “হ্যাঁ, হযরত (মির্যা) সাহেব নবী’র হাকিকি অর্থ সেটাই বলে গেছেন যে, সে (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি) অদৃশ্যের বিষয়াবলি ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে অবগতি লাভ করবে, (এখন) বলো যে, যে ব্যক্তি হাকিকি নবীর এ পারিভাষিক অর্থে একজন হাকিকি নবী, সে হাকিকি নবী হবেন কি হবেন না?” (হাকিকাতুন নবুওয়ত ২/৩৫১)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য-

হাকিকাতুন নবুওয়ত ২/৩৫১

বলে রাখা জরুরি, বিগত ০৪-০৩-২০২৩ইং ‘ফেজ দ্যা পিপল‘ লাইভে অনুষ্ঠিত একটি ডিবেটে জনৈক ভদ্রলোক নজিব আকবর সাহেব কাদিয়ানী মু’আল্লিম মুবাশ্বিরুর রহমানকে যখন উক্ত প্রশ্নটি করেন তখন তিনি ‘এমন কোনো বক্তব্য থাকা-কে’ সরাসরি অস্বীকার করেন এবং উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ সত্য কখনো গোপন থাকেনা। পাঠকবৃন্দ! এটাই হচ্ছে কাদিয়ানীদের আসল চরিত্র। তারা জনসম্মুখে নিজেদের প্রকৃত মতবাদ গোপন রাখে এবং উপস্থিত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরাসরি অস্বীকার করে বসে!

আহা! আর কবে চোখ খুলবে এ মতবাদের সহজ সরল অনুসারীদের? এত প্রতারণা, এত জালিয়াতি!! এত সব মেকি ছিদ্র নিয়ে এরা দুনিয়ায় এ চাতুর্যপূর্ণ মতবাদ কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে আমার বুঝে আসেনা!

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

শবে বরাতের ফজিলত ও আমল কি প্রমাণিত?

0

ইমাম বায়হাক্বী (রহ.)-এর কিতাব থেকে,

(আরবী) عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

অনুবাদঃ হযরত আয়শা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসূল (সা.)-কে কাছে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে (মদীনার কবরস্থান) গিয়ে পেয়ে গেলাম। তিনি (আমাকে বিষণ্ণ অবস্থায় দেখে) বললেন, কী ব্যাপার আয়েশা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোনো অন্যায় করবেন? হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে চলে গেলেন কিনা! রাসূল (সা.) বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাত আসে (অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়), তখন আল্লাহতালা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে নাযিল হন এবং বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (হাদীস নং ৩৫৪৪, রাবীদের সকলেই সিক্বাহ, হাদীসের মান- সহীহ ও মুরসাল)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য-

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

শায়খ আলবানী (রহ.) এর ‘সিলসিলাতুস সহীহাহ’ গ্রন্থে শবে বরাতের ফজিলত শীর্ষক হাদীস সম্পর্কে লিখেছেন,

(আরবী) قال الشيخ الألباني: يطلع الله تبارك وتعالى إلى خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن : ‏‏‏‏حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ ‏‏‏‏ابن جبل وأبو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وأبي موسى الأشعري وأبي هريرة ‏‏‏‏وأبي بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة.

অর্থাৎ “অর্ধ শাবানের রাতে (তথা শবে বরাতে) আল্লাহতালা তাঁর সমস্ত মাখলূকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন (হযরত মু’আয বিন জাবাল থেকে)।–(حديث صحيح) এই হাদীস সহীহ। এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে, যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন হযরত মু’আয বিন জাবাল, আবু সা’লাবা, আব্দুল্লাহ বিন আমর, আবু মূসা আশ’আরী, আবু হোরায়রাহ, আবু বকর সিদ্দীক, আ’উফ বিন মালিক এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখ সাহাবীগণ।” (সিলসিলাতুস সাহীহাহ হাদীস নং ১১৪৪, খণ্ড ৩ পৃষ্ঠা নং ১৩৫) (অনুবাদ সমাপ্ত হল)।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

সালাতে পুরুষের জন্য বুকের উপর হাত বাঁধার হাদীস ও সনদের তাহকীক

0

হাদীসের সনদ সহ পূর্ণ আরবী ইবারত :

اخبرنا ابو طاهر ، نا أبو بكر، نا ابو موسى، نا مؤمل، نا سفيان عن عاصم ابن كليب عن ابيه عن وائل ابن حجر قال : ﺻﻠﻴﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ অর্থাৎ ওয়ায়েল ইবনুল হুজর (রা.) থেকে, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) সাথে সালাত পড়েছি। তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন। (সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯; হাদীসের মান – দুর্বল)।

সনদের তাহকীক : উক্ত হাদীসের রাবী মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, ﻣﺆﻣﻞ ﺑﻦ ﺍﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻌﺪﻭﻯ ﻣﻮﻟﻰ ﺁﻝ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻭﻗﻴﻞ ﻣﻮﻟﻰ ﺑﻨﻲ ﺑﻜﺮ ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﻧﺰﻳﻞ ﻣﻜﺔ . ﺍﻟﺦ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ অর্থ-মুআম্মাল বিন ইসমাঈল আল আদাবী আলূল খিতাব-এর মাওলা ছিলেন, কারো মতে বনী বকরের মাওলা ছিলেন। তিনি মক্কায় আগত। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, তিনি ছিলেন মুনকারুল হাদীস (অর্থাৎ বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিপরীতে বর্ণনাকারী)। (তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং-৬৮১, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য:-

তাহযিবুত তাহযিব

ইমাম ইবনে কাত্তান (রহ.) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমি “মুনকারুল হাদীস” বলি তার থেকে বর্ণনা করা জায়েজ নয়। (মীযানুল ইতিদাল ১/৬)। এবার ফলাফল দাঁড়াল, ইমাম বুখারী (রহ.) এর মতানুসারে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল থেকে হাদীস বর্ণনা কারা জায়েজ নয়। শায়খ আলবানীও সিলসিলাতুয যয়ীফার অনেক জায়গায় মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে জঈফ (দুর্বল) বলেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। (দেখুন : সিলসিলাতুয যয়ীফা ১/১৩১; ২/২৪৬, ৩/১৭৯; ৩/২২৭; ৪/৪৫৫; ৮/৪৬১ ইত্যাদি)। শায়খ আলবানী সাহেব হাদীসটির সনদ জঈফ বলার সাথে সাথে আরও বলেছেন, এটি ত্রুটিপূর্ণ। মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের স্মৃতিশক্তি ছিল খুবই দুর্বল। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য)

আস-সিলসিলাতুয যঈফাহ

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) হাদীসের জগতে একজন বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী

0

ইমাম যাহাবী (রহ.)-এর রচনা হতে : ‘জারহু ওয়াত তা’দীল’ এর প্রথিতযশা ইমাম, ইমাম যাহাবী (রহ.) ইমামে আযম আবু হানীফা (রহ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরে স্বতন্ত্র ‘মানাকীব’ গ্রন্থ রচনা করেন। ইমামে আযমের বিরুদ্ধে তদানীন্তন যুগের বাতিল ফেরকাগুলো উপর্যুপরি মিথ্যা, ইলমি খেয়ানত আর প্রোপাগাণ্ডার যে তুফান ঘটিয়েছিল তা শক্ত হাতে মুকাবিলা করেছেন ইমাম যাহাবীর মত অসংখ্য বরেণ্য ইমাম। তাদের মধ্যে, ইবনু আব্দির বার, ইমাম সুয়ূতী, ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়ুম (রাহিমাহুমুল্লাহ) অন্যতম। কিন্তু তারপরেও ইমামে আযমের বিরুদ্ধে একশ্রেণীর মিথ্যাবাদীদের অপপ্রচার এখনো চলছে। গুগল সার্চ করলেই দেখা যাবে, ইমামে আযমের বিরুদ্ধে কত পরিমাণে জাল, জঈফ আর মুনকার সূত্রে প্রোপাগাণ্ডার তুফান হয়ে আছে। এবার ইমাম যাহাবীর মত বিশ্ববিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) সম্পর্কে কী লিখছেন দেখুন,

قال محمد بن سعد العوفي : سمعت يحيى بن معين يقول : كان أبو حنيفة ثقة لا يحدث بالحديث إلا بما يحفظه ، ولا يحدث بما لا يحفظ .كان أبو حنيفة ثقة لا يحدث بالحديث إلا بما يحفظه ، ولا يحدث بما لا يحفظ .

وقال صالح بن محمد : سمعت يحيى بن معين يقول : كان أبو حنيفة ثقة في الحديث ، وروى أحمد بن محمد بن القاسم بن محرز ، عن ابن معين : كان أبو حنيفة لا بأس به . وقال مرة : هو عندنا من أهل الصدق ، ولم يتهم بالكذب . ولقد ضربه ابن هبيرة على القضاء ، فأبى أن يكون قاضيا .

অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে সা’আ আল-আওফী বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, আবু হানীফা (রহ.) একজন ছিকাহ (বিশ্বস্ত) ছিলেন, তিনি যা মুখস্থ রাখতেন তাই বর্ণনা করতেন, যা মুখস্থ রাখতেন না তা তিনি বর্ণনা করতেন না। মুহাম্মদ ইবনে ছালেহ বলেন, আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আবু হানীফা হাদীসের জগতে একজন ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য), আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে কাশিম ইবনে মুহরিয ইমাম ইবনে মাঈন থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (তিনি বলেছেন) আবু হানীফা (রহ.)-এর (হাদীস বর্ণনার) ক্ষেত্রে কোনোই সমস্যা নেই। আরেকবার বলেন, তিনি আমাদের নিকট একজন সত্যবাদী। উনাকে মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত করা যাবেনা। তাঁকে ইবনুল হুবায়রাহ (ইরাকের সুপ্রিম) বিচারপতির দায়িত্ব পেশ করেছিলেন কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেন। (সূত্র: ইমাম যাহাবী সংকলিত ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ খণ্ড নং ৬ পৃষ্ঠা নং ৩৯৫)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য :-

সিয়ারু আলামিন নুবালা

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ