Home Blog Page 6

ইমামে আযম আবু হানীফা (রহ.) সম্পর্কে যুগে যুগে বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ফকিহগণের দৃষ্টিভঙ্গি

যুগ বিখ্যাত ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণের চোখে ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা (রহ.)-এর শান ও শ্রেষ্ঠত্ব

কিস্তিঃ ৩ (রেফারেন্স-এর জন্য সর্বনিম্নে টিকা দ্রষ্টব্য) :

قال الإمام الشافعي رحمه الله: (الناس عيال على أبي حنيفة في الفقه) (1).

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, ফিকহের ক্ষেত্রে সমগ্র মানুষ আবু হানীফা-এর পরিবারভুক্ত {প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ সনদের তাহকীক এখানে}। (১)

وقال الذهبي معلقا: (الإمامة في الفقه ودقائقه مسلمة إلى هذا الإمام وهذا أمر لا شك فيه: وليس يصح في الأفهام شيء إذا احتاج النهار إلى دليلِ (2).

ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন, ফিকহ আর তার সূক্ষ্মতর বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব এই ইমাম (আবু হানীফা)-এর জন্যই স্বীকৃত। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দিবসের প্রামাণিকতার প্রয়োজন হলে তবে কোনো কিছুই বুঝা সঠিক নয়। (২)

এবার ইমাম যাহাবীর মত বিশ্ববিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) [৮০-১৫০ হিজরী] সম্পর্কে কী লিখছেন দেখুন,

قال محمد بن سعد العوفي : سمعت يحيى بن معين يقول : كان أبو حنيفة ثقة لا يحدث بالحديث إلا بما يحفظه ، ولا يحدث بما لا يحفظ .

وقال صالح بن محمد : سمعت يحيى بن معين يقول : كان أبو حنيفة ثقة في الحديث ، وروى أحمد بن محمد بن القاسم بن محرز ، عن ابن معين : كان أبو حنيفة لا بأس به . وقال مرة : هو عندنا من أهل الصدق ، ولم يتهم بالكذب . ولقد ضربه ابن هبيرة على القضاء ، فأبى أن يكون قاضيا .

মুহাম্মদ ইবনে সা’আ আল-আওফী বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, আবু হানীফা (রহ.) একজন ছিকাহ (বিশ্বস্ত) ছিলেন, তিনি যা মুখস্থ রাখতেন তাই বর্ণনা করতেন, যা মুখস্থ রাখতেন না তা তিনি বর্ণনা করতেন না। মুহাম্মদ ইবনে ছালেহ বলেন, আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আবু হানীফা হাদীসের জগতে একজন ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য), আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে কাশিম ইবনে মুহরিয ইমাম ইবনে মাঈন থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (তিনি বলেছেন) আবু হানীফা (রহ.)-এর (হাদীস বর্ণনার) ক্ষেত্রে কোনোই সমস্যা নেই। আরেকবার বলেন, তিনি আমাদের নিকট একজন সত্যবাদী। উনাকে মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত করা যাবেনা। তাঁকে ইবনুল হুবায়রাহ (ইরাকের সুপ্রিম) বিচারপতির দায়িত্ব পেশ করেছিলেন কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেন। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ এখানে দেখুন)।

وقال ابن المبارك رحمه الله: (أفقه الناس أبو حنيفة، ما رأيت في الفقه مثله) (3).

ইমাম ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ফকীহ ছিলেন আবু হানীফা। আমি তাঁর মত ফকীহ (ইসলামী আইনশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ) দেখিনি। (৩)

وقال أيضا: (إن كان الأثر قد عرف واحتيج إلى الرأي فرأي مالك وسفيان وأبي حنيفة، وأبو حنيفة أحسنهم وأدقهم فطنة وأغوصهم على الفقه، وهو أفقه الثلاثة) (4).

তিনি আরো বলেছেন, যদি আছার (বিশিষ্ট সাহাবী ও তাবেয়ীদের কর্ম আর ফাতাওয়া) বুঝতে হয় এবং মতামতের প্রয়োজন বোধ করতে হয় তাহলে ইমাম মালেক, সুফিয়ান এবং আবু হানীফার মতামতই যথেষ্ট। তবে আবু হানীফার মতামত অন্যদের চেয়ে সর্বোত্তম, তিনি তাদের মধ্যে খুবই বিচক্ষণ এবং ফিকহের ক্ষেত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। তিনি ঐ তিনজনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফকীহ। (৪)

وقال: (رأيت مسعرا في حلقة أبي حنيفة جالسا بين يديه يسأله ويستفيد منه وما رأيت أحدا قط تكلم في الفقه أحسن من أبي حنيفة) (5).

তিনি আরও বলেছেন, আমি মিস’আরকে আবু হানীফা (রহ.)-এর মজলিসে তাঁরই সামনে বসে থেকে ও তাঁরই কাছ থেকে উপকারীতা লাভ করতে দেখেছি। আমি ফিকহের ক্ষেত্রে আবু হানীফা (রহ.)-এর চেয়ে সর্বোত্তম ফাতাওয়া দিতে কাউকে কখনো দেখিনি। (৫)

وقال صاحبه أبو يوسف رحمه الله: (ما رأيت أحدا أعلم بتفسير الحديث ومواضع النكت التي فيه من الفقه من أبي حنيفة) (6).

ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর শিষ্য আবু ইউসুফ (রহ.) বলেছেন, হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও ফিকহ সংক্রান্ত নানা মজাদার স্থান নিয়ে আবু হানীফার চেয়ে সর্বাধিক জ্ঞানী আমি আর কাউকে দেখিনি। (৬)

وقال شعبة بن الحجاج رحمه الله لما علم بوفاته: (لقد ذهب معه فقه الكوفة، تفضل الله علينا وعليه برحمته) (7).

ইমাম শু’বাহ ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.) যখন আবু হানীফা (রহ.)-এর মৃত্যু সংবাদ জানলেন তখন বলেন, কূফার (তাবৎ) ফিকহ (অদ্য) তাঁর সাথেই বিদায় নিয়ে যাচ্ছে, আল্লাহ তাঁর উপর এবং আমাদের উপর-ও আপনা রহমত দ্বারা করুণা করুন। (৭)

وقال النضر بن شميل رحمه الله: (كان الناس نياما عن الفقه حتى أيقظهم أبو حنيفة بما فتقه وبينه ولخصه) (8).

হযরত নাজর ইবনু শামিল (রহ.) বলেন, সমগ্র মানুষ ফিকহের দিক থেকে ঘুমন্ত ছিল আর আবু হানীফা তাদেরকে জেগে উঠালেন সেসব জিনিস দ্বারা যা তিনি নাতিদীর্ঘ সুস্পষ্টরূপে আবিষ্কার করেছেন । (৮)

وحين سئل يزيد بن هارون رحمه الله: (أيما أفقه: أبو حنيفة أو سفيان؟ قال: سفيان أحفظ للحديث، وأبو حنيفة أفقه) (9).

ইয়াজিদ ইবনে হারুনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আবু হানীফা আর সুফিয়ান আস-সওরী দুজনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় ফকীহ কে? উত্তরে তিনি বলেন, আবু সুফিয়ান তো হচ্ছে হাদীস সর্বাধিক সংরক্ষণকারী আর আবু হানীফা ছিলেন সর্বাপেক্ষা বড় ফকীহ। (৯)

وقال ابن المبارك رحمه الله : (إن كان أحد ينبغي له أن يقول برأيه فأبو حنيفة ينبغي له أن يقول برأيه) (10).

ইমাম ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেন, যদি কারো জন্য নিজের রায় দ্বারা মত ব্যক্ত করা উচিত হত, তাহলে আবু হানীফা (রহ.)-এর জন্যই রায় ব্যক্ত করা উচিত। (১০)

وقال محمد بن بشر رحمه الله: (كنت أختلف إلى أبي حنيفة وإلى سفيان، فآتي أبا حنيفة فيقول لي: من أين جئت؟ فأقول: من عند سفيان. فيقول: لقد جئت من عند رجل لو أن علقمة والأسود حضرا لاحتاجا إلى مثله. فآتي سفيان فيقول: من أين جئت؟ فأقول: من عند أبي حنيفة. فيقول: لقد جئت من عند أفقه أهل الأرض) (11).

মুহাম্মদ ইবনে বাশির (রহ.) বলেছেন, আমি আবু হানীফা আর সুফিয়ান আস-সওরীর প্রতি মতভেদপূর্ণ বিষয় পেশ করতাম। (একদা) আমি আবু হানীফার নিকট আসি। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কোথা হতে এসেছ? আমি বললাম, সুফিয়ান আস-সওরীর কাছ থেকে। তিনি বললেন, তুমি তো এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছ, যদি আলক্বামা আর আসওয়াদও (আজ) উপস্থিত থাকতেন তাহলে তারা উভয় তার মত ব্যক্তির প্রয়োজন বোধ করতেন। তারপর আমি সুফিয়ান আস-সওরীর নিকট আসি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, কোথা থেকে এসেছ? তখন আমি বললাম, আবু হানীফার কাছ থেকে এসেছি। তারপর তিনি বললেন, তুনি তো এমন ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছ যে পৃথিবীবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ফকীহ। (১১)

وقال يحيى بن معين رحمه الله: سمعت يحيى بن سعيد القطان يقول: (لا نكذب الله، ما سمعنا أحسن من رأي أبي حنيفة، وقد أخذنا بأكثر أقواله). قال: (وكان يحيى بن سعيد يذهب في الفتوى إلى قول الكوفيين، ويختار قوله من أقوالهم، ويتبع رأيه من بين أصحابه) (12).

ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আলকাত্তানকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে মিথ্যা বলতে পারব না। আমি আবু হানীফার মত ও রায় অপেক্ষা সর্বোত্তম দ্বিতীয় কোনো মত ও রায় শুনিনি। আমরা তাঁর বহু ফাতাওয়া গ্রহণ করে নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) কূফাবাসীর ফাতাওয়ার উপরই ফাতাওয়া দিতেন। আর তিনি কূফাবাসীর ফাতাওয়ার অনুরূপ স্বীয় মত বেছে নিতেন। (১২)

وقال عبد الرزاق الصنعاني رحمه الله: (كنت عند معمر فأتاه ابن المبارك، فسمعنا معمرا يقول: ما أعرف رجلا يحسن يتكلم في الفقه أو يسعه أو يقيس ويشرح لمخلوق النجاة في الفقه أحسن معرفة من أبي حنيفة، ولا أشفق على نفسه من أن يدخل في دين الله شيئا من الشك من أبي حنيفة) (13).

ইমাম আব্দুর রাজ্জাক আস-সান’আনী (রহ.) বলেন, আমরা (একদা) মু’আম্মারের নিকট ছিলাম। এমনি সময় আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক তার নিকট এলেন। তখন আমরা মু’আম্মারকে বলতে শুনি, তিনি বলেন- আমি আবু হানীফা (রহ.)-কে ছাড়া এমন আর কাউকে চিনি না যে ফিকহে (আইনশাস্ত্রে) সুন্দর বলতে পারে বা সেটিকে প্রসারিত বা পরিমাপ করতে পারে আর ইসলামী আইনশাস্ত্রে তাঁর (আবুহানীফা) চেয়েও সর্বোত্তম ব্যাখ্যা দিতে পারে। আর আমি সংশয়হীনভাবে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে আবু হানীফা ছাড়া আর কারো কোনো করুণা দেখিনা। (১৩)

وقال الذهبي رحمه الله: (وأما الفقه والتدقيق في الرأي وغوامضه فإليه المنتهى، والناس عليه عيال في ذلك) (14).

ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন, ফিকহ এবং পরীক্ষিত মতামত ও তার রহস্যাবলী তাঁর (আবু হানীফা) পর্যন্তই সমাপ্ত। সমস্ত মানুষ ফিকহের ক্ষেত্রে তাঁরই পরিবারভুক্ত। (১৪)

لقد أسس أبو حنيفة مدرسة الرأي في الكوفة، واستجاب لدواعي التجديد والقياس مما طرأ على حياة الناس وجد من المسائل، خاصة مع نقص الرواية عندهم، ولقي في ذلك عنتا من بعض من لم تتسع عقولهم لما اتسع له عقله، ولم يدركوا ما أدرك، وما هو إلا أن قامت المدرسة واستقرت أصولها حتى سلم لها كثير من المخالفين، وعذرها آخرون، وانقطع الكلام أو كاد، وهذا شأن المدارس التاريخية كما تجده في النحو والأصول وغيرها. ولله در الإمام أحمد رحمه الله حين يقول: (ما زلنا نلعن أهل الرأي ويلعنونا حتى جاء الشافعي فأصلح بيننا) (15).

আবু হানীফা (রহ.) কূফা নগরীতে মাদরাসাতুর রায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ মাসয়ালায়, বিশেষতঃ তাদের নিকট রেওয়ায়েতের অভাব থাকায় তিনি কিয়াস এবং সংস্কারকাজের আহবানে সাড়া দেন।……..ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, আমরা (না বুঝেই) আহলুর রায়-দের অভিশাপ দিয়েছিলাম আর তারাও আমাদের অভিশাপ দিয়েছিল, যতক্ষণ না ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এসে আমাদের মধ্যে (ভুল বুঝাবুঝি) মিটমাট করে দেয়। (১৫)

وهكذا قال إسحاق وغيره: (أنهم ما زال بهم الأمر حتى أخذوا بكثير من مسائل أبي حنيفة). وهذا شأن المنصفين؛ الرجوع إلى الحق وأخذه من غير أنفة ولا استكبار.

وفعلا فالرسالة للإمام الشافعي كانت تأصيلا لطرائق الاستدلال، وتدوينا لقواعده، وقطعا لدابر كثير من التهاوش والتهارش والتناوش بين المدارس المتنوعة في الفقه الإسلامي والتي كان تنوعها خيرا وثراء للشريعة، وهكذا ولدت المدارس الفقهية المعروفة، في الحجاز والشام والعراق ومصر وما وراء النهر و بلاد المغرب؛ استجابة لدواعي الصيرورة الحضارية، ومعايشة لتقلبات الحياة، فالغنى والفقر والقوة والضعف، وقدر المعرفة ونوع العلاقة التي تحكم صلة الشعوب بعضها ببعض ذات تأثير واضح في عقل الفقيه واستنباطه، وقد كان عمر بن عبد العزيز رحمه الله يقول: (تحدث للناس أقضية بقدر ما أحدثوا من الفجور) (16).

এধরণের অবস্থা ইমাম ইসহাক (রহ.) সহ অন্যান্যদেরও ছিল। তাদের এ অবস্থা অব্যাহত ছিল। এরই মধ্যে তাঁরা আবু হানীফা (রহ.)-এর অগণিত মাসয়ালা নিজেরাই গ্রহণ করেছেন। এটাই সম্মানিত ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য যে, তাঁরা সত্যের দিকে ফিরে আসেন এবং কোনো রূপ অহংকারী ও বড়ত্ব প্রদর্শন ছাড়াই সত্যকে গ্রহণ করেন।………. (১৬)

ফিকহে হানাফীর উসূল বা নীতিমালা (أصول فقهه) :

قال أبو حنيفة رحمه الله: (ما جاء عن الرسول صلى الله عليه وسلم فعلى الرأس والعين وما جاء عن الصحابة اخترنا وما كان من غير ذلك فهم رجال ونحن رجال) (17).

আবু হানীফা (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে যা যা বর্ণিত হয়ে এসেছে এর সবই আমার মাথা এবং চোখের উপর (অর্থাৎ নিঃশর্তভাবে মাননীয়)। আর সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে (যেসব আছার-ফাতাওয়া ও কর্ম) এসেছে আমরা তা-ও (সমাধানের জন্য প্রমাণ হিসেবে) গ্রহণ করে নিয়েছি। এর বাহিরে অন্যান্যদের ব্যাপারে কথা হচ্ছে, তাদের আর আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। (১৭)

وقال الحسن بن زياد اللؤلؤي رحمه الله: (سمعت أبا حنيفة يقول: قولنا هذا رأي، وهو أحسن ما قدرنا عليه، فمن جاءنا بأحسن من قولنا فهو أولى بالصواب منا) (18).

হাসান ইবনে যিয়াদ আল-লু’লুবী (রহ.) বলেন, আমি আবু হানীফা (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, আমাদের ফাতাওয়া হচ্ছে এ ক্বওল বা রায় (ফিকহি মত)। আর আমরা এ রায়ের উপর যা সিদ্ধান্ত দিয়েছি তা সর্বোত্তম। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি আমাদের রায় অপেক্ষা অধিক উত্তম রায় পেশ করতে পারে তাহলে সেটাই আমাদের রায়ের চেয়ে সঠিক ও সর্বোত্তম বলে গণ্য হবে। (১৮)

وقال يحيى بن ضريس رحمه الله: (شهدت سفيان وأتاه رجل، فقال له: ما تنقم على أبي حنيفة؟ قال: وما له؟ قال: سمعته يقول: آخذ بكتاب الله، فما لم أجد فبسنة رسول الله، فما لم أجد في كتاب الله ولا في سنة رسول الله أخذت بقول أصحابه، آخذ بقول من شئت منهم وأدع من شئت منهم، ولا أخرج من قولهم إلى قول غيرهم، فأما إذا انتهى الأمر أو جاء إلى إبراهيم، والشعبي، وابن سيرين، والحسن، وعطاء، وسعيد بن المسيب .. ــ وعدد رجالا ــ فقوم اجتهدوا، فأجتهد كما اجتهدوا) (19).

ইয়াহইয়া বিন দ্বুরাইস (রহ.) বলেন, আমি সুফিয়ান আস-সওরীর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট আসে। সে তাঁকে বলে, আপনি আবু হানীফার উপর প্রতিশোধ নেবেন না? সুফিয়ান উত্তরে বললেন, তাঁর কী হয়েছে? (আরও) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘আমি (প্রথমে) কিতাবুল্লাহ গ্রহণ করেছি। আর যা আমি পাইনি সেখানে, তা আমি সুন্নাহ দ্বারা (সমাধান খোঁজেছি)। আর যা কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাহ-তে পাইনি, আমি তজ্জন্য রাসূলের সাহাবীদের ফাতাওয়া ও কর্ম দ্বারা (সমাধান খোঁজেছি)। আমি উনাদের যার কাছ থেকেই ইচ্ছে হয়েছে প্রমাণ নিয়েছি, আর ইচ্ছে হয়েছে তো (মূলনীতির ভিত্তিতে) ছেড়ে দিয়েছি। আমি তাঁদের একে অন্যের দিকে ফিরিয়ে দিতে ফাতাওয়া নিইনি। যখন বিষয়টা শেষ হয় বা ইবরাহীম, শা’বী, ইবনে সিরীন, হাসান, আত্বা, সাঈদ ইবনে মুছায়্যিব…. আরও বহু ব্যক্তির নিকট এসে পৌঁছে, তখনই (কেবল) লোকেরা ইজতিহাদ করতে শুরু থাকে। তারা যেভাবে ইজতিহাদ করতে থাকে, তেমনি আমি (সুফিয়ান)ও করতে থাকি। (১৯)

تلك هي مصادر فقه أبي حنيفة، يقررها في وضوح وجلاء، يلتزم بالمصدرين الأساسين للفقه الإسلامي وهما كتاب الله وسنة رسوله، ثم يلزم نفسه بمصدر ثالث هو أقوال صحابة رسول الله صلى الله عليه وسلم، ولما لم تكن أقوالهم متطابقة تطابقا كاملا في بعض القضايا؛ فإن أبا حنيفة يأخذ عمن يراه أكثر علما من غيره وهو مع ذلك ملتزم بقول رسول الله صلى الله عليه وسلم في صحابته: «أصحابي كالنجوم بأيهم اقتديتم اهتديتم» (20).

এটি আবু হানীফার ফিকহের উৎসসমূহ। তিনি ইসলামী ফিকহের (আইনশাস্ত্র) দুটি প্রধান উৎসকে মেনেই পরিষ্কার ও স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন। সে দুটো হল, কিতাবুল্লাহ এবং রাসূলের সুন্নাহ। তারপর তিনি তৃতীয় মাত্রার উৎস হিসেবে রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের ফাতাওয়া ও কর্মকে (দলিল হেসেবে) বেছে নেন। যেহেতু তাদের বক্তব্য কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অভিন্ন ছিল না, সেহেতু আবু হানীফা অন্যদের থেকে যাদেরকে তিনি বেশি জ্ঞানী বলে মনে করেন তাদের কাছ থেকে (মিমাংসা) নিতেন এবং তা সত্ত্বেও তিনি রাসূলের সাহাবীদের সম্পর্কে আল্লাহর রসূল যা বলেছেন তার প্রতি তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। {আমার সাহাবীরা আকাশের নক্ষত্রতূল্য। তোমরা তাদের মধ্য হতে যারই আনুগত্য করবে সুপথপ্রাপ্ত হবে, ইনশাআল্লাহ।} (২০)

فإذا كان الأمر متعلقا بالتابعين، والتابعون على جلالة قدرهم لا يستوون مع الصحابة في موازين العلم والتقدير، فإن أبا حنيفة يرى نفسه أهلا لأن يجتهد كما اجتهدوا، وأنه ليس ملزما بالأخذ عنهم إلا تطوعا واقتناعا، وذكر في هذا السبيل عددا من خيرة التابعين، وبعضهم يعتبر شيخا له مثل عطاء بن رباح.. وإبراهيم النخعي الذي كان أستاذا لحماد بين أبي سليمان شيخ أبي حنيفة. ومهما يكن الأمر فأبو حنيفة مؤهل لأن يجتهد كما اجتهد غيره من العلماء الذين ذكرهم في معرض مصادر فقهه من غير الصحابة طبعا (21).

আর ব্যাপারটা যখন তাবেয়ীদের সাথে সম্পর্কিত হবে, এবং তাবেয়ীরা তাদের মহিমা সত্ত্বেও জ্ঞান ও উপলব্ধির মাপকাঠিতে সাহাবায়ে কেরামের সমান নন বিধায়; আবু হানীফা (রহ.) নিজেকে তাদের মতো মনে করতেন। যেজন্য তারা যেমন ইজতিহাদ করতেন তেমনি তিনিও ইজতিহাদ করতেন। তিনি স্বেচ্ছায় এবং দৃঢ় বিশ্বাস ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করতে বাধ্য নন। এ প্রসঙ্গে তিনি বেশ কয়েকজন শ্রেষ্ঠ তাবেয়ীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি তাঁর শায়খ হিসেবেও গণ্য। যেমন আত্বা ইবনে রাবাহ…ইবরাহীম নাখয়ী যিনি হাম্মাদ ইবনে আবী সোলায়মানের উস্তাদ এবং আবু হানীফার শায়খ। যাইহোক না কেন, আবু হানীফা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞসম্পন্ন। তিনি ইজতিহাদ করেছেন যেমনিভাবে সাহাবীরা ব্যতীত অন্যান্য আলেমগণ করেছেন। যাদের কথা তিনি ফিকহের উৎস বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। (২১)

وقال الحسن بن صالح رحمه الله: (كان النعمان بن ثابت فهما عالما متثبتا في علمه، إذا صح الخبر عنده عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، لم يعده إلى غيره) (22).

হাসান ইবনে সালেহ বলেন, নোমান ইবনে সাবেত ছিলেন একজন বোধগম্য পণ্ডিত, যিনি ইলম ও জ্ঞানে সুদৃঢ়। যখন তার নিকট রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোনো ‘খবর’ (হাদীস) সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে, তখন তিনি সেটি (গ্রহণ করেছেন), অন্যদিকে ফিরিয়ে দেননি। (২২)

أقول: وهذا هو الظن بإمام مثله، وبإخوانه من الأئمة، فهم لم يختلفوا في الكتاب، ولم يختلفوا على الكتاب، وإنما اجتهدوا كما أمرهم الله، ومن شأن الاجتهاد أن يتعدد، وقد قال عمر بن عبد العزيز رحمه الله: (ما أحب أن أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يختلفوا؛ لأنه لو كان قولا واحدا كان الناس في ضيق، وإنهم أئمة يقتدى بهم، ولو أخذ رجل بقول أحدهم كان في سعة) (23).
আমি বলি, এটাই তাঁর ন্যায় একজন ইমামের ব্যাপারে ধারণা এবং তাঁর ভ্রাতা অন্যান্য ইমামগণের ব্যাপারেও। তারা কেউই কিতাবুল্লাহর সাথে বা উর্ধ্বে মতভেদ করেননি। তারা মাত্র আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ইজতিহাদ করেছেন এবং ইজতিহাদের যে শান ও মাক্বাম সেভাবেই গণ্য। হযরত উমর ইবনে আব্দিল আজীজ (রহ.) বলেছেন, আমি এটি পছন্দ করি না যে, আল্লাহর রসূলের সাহাবীগণ কোনো মতানৈক্য করেননি। কেননা, (সবার মতামত) যদি একই রকম ফাতাওয়া (ফিকহ) হত তাহলে লোকজন কষ্টের শিকার হতেন। অথচ তারা ইমামগণের (ফিকহের) অনুসরণ করে আসছেন। যদিওবা মানুষজন ইমামগণের মধ্য হতে যে কোনো একজনের ফাতাওয়া গ্রহণ করতেও সক্ষম। (২৩)

আবু হানীফার মেধাশক্তি ও প্রমাণাদি (ذكاؤه وحجته):

قال الإمام الشافعي رحمه الله: (قيل لمالك بن أنس: هل رأيت أبا حنيفة؟ قال: نعم. رأيت رجلا لو كلمك في هذه السارية أن يجعلها ذهبا لقام بحجته) (24).

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-কে প্রশ্ন করা হল, আপনি আবু হানীফাকে কেমন দেখেছেন? তিনি উত্তরে বলেছেন, হ্যাঁ; আমি তাঁকে এমন একজন ব্যক্তিরূপে দেখেছি যে, তিনি যদি এই মাস্তুলটিকে ‘সোনা’ সাব্যস্ত করতে চাইতেন তিনি তা সাব্যস্ত করতে অবশ্যই প্রমাণ দাঁড় করতে পারতেন। (২৪)

وقال جعفر بن الربيع: (أقمت على أبي حنيفة خمس سنين فما رأيت أطول صمتا منه، فإذا سئل عن شيء من الفقه تفتح وسال كالوادي، وسمعت له دويا وجهارة بالكلام) (26).

জা’ফর ইবনুর রবী আমি আবু হানীফা (রহ.)-এর দরবারে পাঁচ বছর ছিলাম। আমি তার চেয়ে দীর্ঘ নিরবতা পালনকারী আর কাউকে দেখিনি। যখনি ফিকহ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে (তাকে) জিজ্ঞেস করা হত তখনি তিনি উপত্যকার মতো খুলে খুলে তার জবাব দিয়ে দিতেন। আমি তাকে জোরে জোরে সমাধা দিতে শুনতে পেতাম। (২৬)

وذكر المتقي المكي في مناقب أبي حنيفة مناظرة جرت بين الإمام أبي حنيفة وبين جماعة من الزنادقة: قال لهم أبو حنيفة: ما تقولون في رجل يقول لكم: إني رأيت سفينة مشحونة بالأحمال، مملوءة بالأمتعة وقد احتوشتها في لجة البحر أمواج متلاطمة، ورياح مختلفة، وهي من بينها تجري مستوية ليس فيها ملاح يجريها ويقودها ويسوقها، ولا متعهد يدفعها، هل يجوز ذلك في العقل؟ فقالوا: لا. هذا لا يقبله العقل، ولا يجيزه الوهم.

فقال لهم أبو حنيفة: فيا سبحان الله! إذا لم يجز في العقل وجود سفينة تجري مستوية من غير متعهد، فكيف يجوز قيام الدنيا على اختلاف أحوالها وتغير أمورها، وسعة أطرافها، وتباين أكنافها من غير صانع وحافظ ومحدث لها؟! (27).

ইমাম মুত্তাকী আল মক্কী ‘মানাকীবে আবী হানীফা’ গ্রন্থে আবু হানীফা আর যিন্দীকদের মাঝে সংঘটিত একটি বিতর্ক উল্লেখ করেছেন। আবু হানীফা (রহ.) তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কী ধারণা রাখো যে তোমাদেরকে বলল যে, আমি দেখলাম একটা জাহাজ বোঝাই, মালপত্র ভর্তি, আর সেটা সমুদ্রের গভীরে নানা রকম বায়ুর কবলে ও উত্তাল তরঙ্গে আছড়ে পড়েছে। জাহাজটি তাদের নিয়ে শান্তভাবে চলছে। তবে তাদের চালনা করার জন্য কোনো মাঝিমাল্লা নেই, কোনো নাবিক নেই, কোনো অধীনস্থ কর্মকর্তা নেই যিনি জাহাজটিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। তো এটি কি বিবেকের সামনে বৈধ? (অর্থাৎ বিবেক কি এ কথাগুলো মেনে নেবে?) তখন তারা উত্তরে বলল, না; এগুলো বিবেক গ্রহণ করেনা, চিন্তার জগত এটিকে অনুমতি দেয় না।

তখন আবু হানীফা (রহ.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, সুবহানাল্লাহ! যদি নাবিক ছাড়াই শান্তভাবে চলমান কোনো জাহাজের অস্তিত্ব কল্পনা করাই বিবেকগ্রাহ্য না হয় তাহলে এই পরিবর্তনশীল সুবিশাল পৃথিবীটা কোনো স্রষ্টা, রক্ষক ও নির্মাতা ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে কিভাবে? (২৭)

আবু হানীফা (রহ.)-এর জ্ঞানশক্তি (رجاحة عقله):

قال محمد بن عبد الله الأنصاري: (كان أبو حنيفة يتبين عقله في منطقه ومشيه ومدخله ومخرجه) (28).

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী বলেন, আবু হানীফা (রহ.)-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর এলাকায়, চাল-চলনে এবং প্রবেশ ও বহির্গমণ দ্বারা। (২৮)

وقال يزيد بن هارون: (أدركت الناس، فما رأيت أحدا أعقل ولا أفضل ولا أورع من أبي حنيفة) (29).

ইয়াযিদ ইবনে হারুন বলেন, আমি অনেক মানুষ দেখেছি। কিন্তু আমি আবু হানীফার চেয়ে অত্যাধিক জ্ঞানী, উত্তম আর বিচক্ষণ কাউকে দেখিনি। (২৯)

  • প্রামাণ্য তথ্যসূত্রের জন্য টিকাসমূহ (الهوامش:):

(1) تاريخ بغداد (13/346)، تهذيب الكمال (29/433)، تهذيب التهذيب (10/402)، سير أعلام النبلاء (6/403).

(2) سير أعلام النبلاء (6/403)، والبيت للمتنبي وهو في ديوانه (3/92) بشرح العكبري.

(3) تهذيب الكمال (29/430)، تهذيب التهذيب (10/401)، سير أعلام النبلاء (6/403).

(4) تاريخ بغداد (13/343).

(5) المرجع السابق.

(6) تاريخ بغداد (13/340).

(7) الانتقاء لابن عبد البر (ص126).

(8) تاريخ بغداد (13/345).

(9) تهذيب الكمال (29/429).

(10) المرجع السابق (29/431).

(11) المرجع السابق.

(12) انظر: تهذيب الكمال (29/433)، سير أعلام النبلاء (6/402)، تهذيب التهذيب (10/402).

(13) تاريخ بغداد (13/339).

(14) سير أعلام النبلاء (6/390-392).

(15) انظر: ترتيب المدارك (1/386-387)، الاعتصام للشاطبي (1/226).

(16) الاعتصام للشاطبي (1/476).

(17) سير أعلام النبلاء (6/401).

(18) تاريخ بغداد (13/352).

(19) تهذيب الكمال (29/443)، تهذيب التهذيب (10/402).

(20) الحديث ضعيف ، انظر سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة للألباني (1/78) برقم : (58).

(21) انظر الأئمة الأربعة للشكعة (ص/164 ــ 165).

(22) الانتقاء لابن عبد البر (ص:128).

(23) أخرجه ابن عبد البر في جامع بيان العلم وفضله (2/80).

(24) تاريخ بغداد (13/337-338)، تهذيب الكمال (29/429)، سير أعلام النبلاء (6/399).

(25) تاريخ بغداد (13/345).

(26) تاريخ بغداد (13/347).

(27) مناقب أبي حنيفة (ص:51).

(28) تهذيب الكمال (29/439).

(29) المرجع السابق (29/438).

মূল : ডক্টর সালমান বিন ফাহাদ আল-আওদাহ (হাফিঃ), অধ্যাপক- ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়া বিভাগ, সোদিআরব। শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রহ.)-এর ঘনিষ্ঠ শিষ্য। বর্তমানে সৌদি সরকারের কারাগারে বন্দী (উইকিপিডিয়া)। অনুবাদক : মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

সোর্স- okaz.com | fnoor.com | fnoor.com

ইমামে আযম সম্পর্কে জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরটি পড়া যেতে পারে! এখানে ক্লিক করুন।

মসীহ মওউদ ওলী আল্লাহ থে…

মির্যা কাদিয়ানী এবং তার কথিত মুসলেহ মওউদের লীলা

সত্য প্রচারক নামক ফেইসবুক আইডির কাদিয়ানী মু’আল্লিম! আপনি মির্যা আর তার পুত্রের “জেনা (الزنا)” করা সংক্রান্ত আমার লেখিত (লিংক) গত পোস্টের উপর খণ্ডনমূলক জবাব লিখবেন, বলেছেন। লিখার চেষ্টাও করেছেন (লিংক)। আমি লিখাটি পড়লাম…! পড়ে বুঝে আসল যে, অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো এখনকার কাদিয়ানী মোল্লাদের-ও পড়াশোনা নেই। নইলে এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে “মুনাফিক“, “আহমদীয়া জামাতের বিরুদ্ধবাদী” বা “সিলসিলার দুশমন” (১ নং স্ক্যানকপি থেকে দেখে নিন) এ সমস্ত কথা উল্লেখ করা কোনোমতেই সম্ভব ছিলনা, যে ব্যক্তিটা কিনা স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানীরই হাতে বয়আতপ্রাপ্ত এমনকি তার ৩১৩ জন ঘনিষ্ট সাথীদের মধ্যে ২৫৫ নং সিরিয়ালের অন্তর্ভুক্ত! (২ নং স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য)।

এখন আসি, তাহলে সে ব্যক্তিটির নাম কী? জ্বী হ্যাঁ, সে ব্যক্তি হলেন শায়খ আব্দুর রহমান মিশরী, যিনি ১৯০৫ সালে মির্যা কাদিয়ানীর হাতে বয়আত নেন। তিনি হিন্দু ছিলেন, পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামেরই অধিবাসী; পূর্বনাম ছিল লালাশংকর দাস। তিনি সাধারণ কোনো কাদিয়ানী ছিলেন না। তাকে আরবী ভাষায় পাণ্ডিত্য লাভ করতে মির্যা কাদিয়ানী সে সময় মিশরের কায়রোতে পাঠান। সে জন্য তার উপনাম “মিশরী“ও। সে কাদিয়ান জামেয়া আহমদিয়ার অধ্যক্ষ ছিলেন। রূহানী খাযায়েন (খ-১১/পৃ-৩২৮) এর মধ্যে মির্যার ৩১৩ জন নির্বাচিত ঘনিষ্ঠ সাথীদের মধ্যে ২৫৫ নং সিরিয়ালে রয়েছেন। (নিচে ২ নং স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য)।

এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর ৩১৩ জন ঘনিষ্ঠ সাথীদের ২৫৫ নম্বর সিরিয়ালে থাকা (মির্যার কথিত সাহাবী) মানুষটিও কি তাহলে “মুনাফিক“? “কাদিয়ানী জামাতের দুশমন”? মির্যা কাদিয়ানী আর তার পুত্র মির্যা বশির উদ্দিনের “জেনা” করা নিয়ে ঐ চিঠিতে যা যা লিখলেন, “সবই মিথ্যা“? মজারব্যাপার হল, ঐ ৩১৩ জন সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর পরিষ্কার স্বীকারোক্তি ছিল, یہ تمام اصحاب خصلت صدق و صفا رکھتے ہیں” অর্থাৎ এ সাথীরা সকলে স্বভাব চরিত্রে বিশ্বস্ত ও নির্মল আর পরিচ্ছন্ন। দেখুন, রূহানী খাযায়েন খ-১১/পৃ-৩২৫।” (নিচের ৩ নং স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য)।

তাই বরাবরের মতই প্রশ্ন আসবে, মির্যা কাদিয়ানী যেখানে ঐ ঘনিষ্ঠ ৩১৩ জন সম্পর্কে সত্যবাদিতা আর নিষ্কলুষ স্বভাবের সার্টিফিকেট দিলেন সেই মানুষটা-ও যদি আপনাদের মতে মুনাফিক, জামাতের দুশমন আর মিথ্যাবাদী হন, তাতে আমাদের কী বা করার আছে, বলুন! আর আপনি তো খণ্ডন করতে গিয়ে এখন পুরাই সর্বনাশ ডেকে আনলেন! কেঁচো খুড়তেই সাপ বের করে আনলেন? আপনিও পরিষ্কার একমত হয়ে গেলেন যে,

  • ১- আল ফজল পত্রিকায় উল্লিখিত বয়ানটি উল্লেখ থাকা মিথ্যা নয়, বরং সত্য।
  • ২- মির্যা আর তার পুত্র তথাকথিত মুসলেহ মওউদের “জেনা” সংক্রান্ত সেই বয়ানটি অ-কাদিয়ানী কারও ছিলনা, বরং এমন এক ব্যক্তিরই ছিল যে মির্যারই কথিত সাহাবী এবং ৩১৩ জন ঘনিষ্ঠ সাথীদের অন্যতম। (নিচে ৩ নং স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য)।
মির্যা আর তার পুত্রের চরিত্রের উপর জেনা ব্যভিচারের আওয়াজ উঠানো ব্যক্তিটি সেই মিশরী সাহেবই। আল ফজল পত্রিকার একই পৃষ্ঠায় নামটিও উল্লেখ আছে, দেখুন।
স্ক্যানকপি-১
স্ক্যানকপি-২
স্ক্যানকপি-৩

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

উত্তর আনন্দপুর জামেয়া কুরআনিয়া মাদরাসা

জামেয়া কুরআনিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। উত্তর আনন্দপুর। মুন্সীরহাট, ফুলগাজী, ফেনী। এবার জামেয়ার ছবির এ্যালবাম থেকে…. কিছু স্মৃতি

জামেয়ার প্রধান ফটক (গেইট)
জামেয়া ভবন
জামেয়ার মহামান্য প্রতিষ্ঠাতার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক
জামেয়ার প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সহকারী মরহুম আব্দুল্লাহ মজুঃ (সাবেক মেম্বার) মৃত্যু ৬ জুলাই ২০২১
জামেয়ার ভেতরের মাঠ ও টিন সেট ভবন
জামেয়ার অফিসে বিদেশী মেহমানদের আপ্যায়ন
মওলানা আজাদী সাহেবের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ইসলাহি বয়ান
একাংশ
হুফফাজুল কুরআন বোর্ড-এর কুরআন কপি
দেশ শীর্ষ বুযূর্গ আলেমদের উপস্থিতিতে হিফজ ছাত্রদের সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠান
জামেয়ার হিফজ ছাত্রদের ক্লাসরুম
জামেয়ার মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ উদ্বোধন করছেন মহামান্য প্রতিষ্ঠাতা জনাব আলহাজ্ব আবু তৈয়ব পাটোয়ারী
মুফতি নূরুল্লাহ (হাফিঃ), মহাপরিচালক নূরপুর মাদরাসা -জিএমহাট
জামেয়ার একজন শিক্ষকের পাশে ছাত্রদের একটি অংশের ফটোসেশান
প্রিয় শিক্ষকবৃন্দের ফটোসেশান
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পুরষ্কার
পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত কুরআনের পাখিদের একাংশ
জামেয়ার দরিদ্র ছাত্রের হাতে ফ্রি শীতবস্ত্র (রুমাল) তুলে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক
পরীক্ষা হল
জামেয়ার পরীক্ষা হল (একাংশ)
জামেয়ার শিক্ষা সফর ও আনন্দভ্রমণ
জামেয়ার কুরআনের পাখিদের মিলন মেলা
রোজার সময় খাবারের রুটিন
জামেয়ার ছাত্রদের ইফতার মুহূর্ত
জামেয়ার রুটিন বোর্ড

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় নূরানী তালিমুল কোরআন বোর্ড বাংলাদেশের অধীনে নূরানী মাদরাসার সমাপনী পরীক্ষাসমূহ। আল-হামদুলিল্লাহ, নূরানী এ বোর্ড পরীক্ষায় সাফল্যের তালিকায় “উত্তর আনন্দপুর জামিয়া কুরআনিয়া” মাদরাসা সেরা দশ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথমস্থান অর্জন করে। উক্ত পরীক্ষায় মাদরাসার সর্বমোট ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন A+ এবং ১৪ জন A সহ বাকিরা বিভিন্ন গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :

জামেয়ার একজন ছাত্রের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল (বোর্ড সেরা দশজনের অন্যতম)
জামেয়ার লিল্লাহ বোর্ডিং ও স্টোররুমে চাউলের স্টক
জামেয়ার একাডেমিক তথ্যাবলী

জামেয়ার ছাত্রদের নামায শিক্ষা প্রদর্শনী এর একটি চমৎকার ভিডিও

জামেয়ার প্রতিষ্ঠা ২০১৬ ইং। বর্তমান জামেয়ার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক : হযরত মওলানা মুফতি আব্দুর রহমান গিলমান (হাফিঃ), মোবাইল নং +8801816-442094, ফেসবুক একাউন্ট : মু. আব্দুর রহমান গিলমান

নিউজ করেছেন- শিক্ষাবিদ ও গবেষক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

তাকলিদ-এর বিরোধিতাকারী সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর সতর্কবাণী

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর দৃষ্টিতে ‘তাকলিদ’ (التقليد)-এর বিরোধিতাকারীর পরিণাম,

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, (আরবী) ومن زعم أنه لا يرى التقليد ولا يقلد دينه أحدًا فهو قول فاسق عند اللَّه ورسول – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – إنما يريد بذلك إبطال الأثر تطيل العلم والسنة والتفرد بالرأي والكلام والبدعة والخلاف

অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ ধারনা রাখবে যে, তাকলিদ বলতে কোনো কিছুই সে দেখতে পায় না এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে কারোরই তাকলিদ করা যায় না, তার এ কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর দৃষ্টিতে একটি ফাসেকি (পাপপূর্ণ) কথা। (বস্তুতঃ) এ ব্যক্তি তার এই কথা দ্বারা আছার সমূহকে (সাহাবী এবং তাবেয়ীগণের ফতুয়া ও কর্ম)-কে বাতিল করতে চায় এবং ইলম ও সুন্নাহকে সংকীর্ণ করতে চায়। সে (প্রকৃতপক্ষে) মতামত এবং বক্তব্যে স্বতন্ত্রতা ও বিদয়াত এবং মতবিরোধ তৈরি করতে চায়।

কিতাবতাবক্বাতুল হানাবিলাহ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৩১, লিখক- ইমাম আবুল হোসাইন মুহাম্মদ বিন আবী ই’য়ালা আল ফাররাহ আল-বাগদাদী আল-হাম্বালী (محمد بن أبي يعلى الفراء البغدادي الحنبلي أبو الحسين), তাহকীক- শায়খ মুহাম্মদ হামেদ আল-ফাক্বী (محمد حامد الفقي)৷ প্রকাশনায়- মাত্ববা’আতুস সুন্নাতুল মুহাম্মদীয়াহ, কায়রো মিশর। মোট দুই খণ্ডে প্রকাশিত।

  • প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –
স্ক্যানকপি

আসুন, এবার তাকলিদ-কে শিরিক, ব্যক্তিপূজা ইত্যাদি বলে বলে মুখে যতপারি ফেনা তুলি, কোমরে গিট বেঁধে মাযহাবের বিরোধিতায় মাঠ গরম করতে থাকি, “সহীহ সহীহ” ভাব নিয়ে বিশেষতঃ ফিকহে হানাফীর বিরুদ্ধে জনমনে সংশয় আর বিদ্বেষ তৈরি করতে ইচ্ছেমতো অপপ্রচার করি…..!!! হে আল্লাহ! তুমি পরকালে আমাদের প্রত্যেকের কলিজায় জবাবদিহিতার ভয় ঢুকিয়ে দাও!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

১৯৮৯ সালে বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা

ঐতিহাসিক দু’টি বিরল ছবি!

১৯৮৯ সাল। বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। করমর্দন করছেন একে অন্যের সাথে। নীচের ছবিতে পাশেই ওআইসিভুক্ত মিশর, মরোক্কোসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রীগণ। এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি একজন সাংবাদিক, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও পানি সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যশোর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। যাইহোক, ওআইসির ওই ঐতিহাসিক সভায় আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের সর্বসম্মতিক্রমে অমুসলিম ঘোষণা করে। ঘোষণাপত্রে তখন বাংলাদেশের পক্ষে দস্তখত করেন ধর্মমন্ত্রী ও সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী জনাব এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। (কয়েকটি ছবি) :

ছবি:

উল্লেখ্য, তার-ও পূর্বে ১৯৮৫ সালে ডিসেম্বর মাসের ২২ হতে ২৮ তারিখ মোট ছয় দিনব্যাপী সৌদিআরবের জেদ্দায় ওআইসির অঙ্গসংগঠন ‘ইসলামী ফেকাহ একাডেমী’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে-ও বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়া হয়। (সূত্র: ইসলামী ফেকাহ একাডেমীর ২য় সম্মেলনের উপর প্রকাশিত পত্রিকা: সংখ্যা ২, প্রথম খণ্ড ১৪০৭ হিজরী মুতাবেক ১৯৮৬ ইং)।

তার-ও পূর্বে ১৯৭৪ সালের ১০ই এপ্রিল মুতাবেক ১৩৯৪ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে রাবেতার সদর দফতর মক্কা মুকাররমায় ১৪৪টি ইসলামী সংগঠনের এক আন্তর্জাতিক মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানেও সভার সর্বসম্মতিক্রমে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। (সূত্র: আন-নদওয়া সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ জাতীয় দৈনিক, তারিখ ১৪ই এপ্রিল ১৯৭৪ইং)।

এছাড়া তার-ও পূর্বে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আফগান সরকার, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের সন্নিকটে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মরিসাশ এর প্রধান বিচারপতি, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক সরকার, ১৯৩৫ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ শাসনামলে ভাওয়ালপুরের জেলা জজ মুহাম্মদ আকবর সাহেব একটি মামলার রায়ে (মামলাটি ‘মুকাদ্দামায়ে ভাওয়ালপুর’ নামে পরিচিত। এটি দায়ের করা হয় ১৯২৬ সালে আর রায় প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে), ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া সরকার, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মিশর সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সৌদী সরকার, ১৯৭৪ইং সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাহরাইন সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কাতার সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের জাতীয় এসেম্বলি সর্বসম্মতিক্রমে ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী জনাব মুসা তিহাম, ১৯৯০-এর দশকে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া সরকারের প্রধান ইয়াহইয়া আবু বকর প্রত্যেকে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। আমাদের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ে ১৯৮৫ সালের ৮ই আগস্ট হাইকোর্টের মাননীয় বিজ্ঞ দুই বিচারপতি কাদিয়ানীদের একটি প্রকাশনা ‘ইসলামে নবুওয়ত’ বাজেয়াপ্ত করে (৪৫ ডি.এল.আর, ১৯৯৩)। তারই চার বছর ব্যবধানে ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের সভার সর্বসম্মতিক্রমে অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মীমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে উক্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। অতি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সরকার দেশটির একজন মুসলিম নারী পার্লামেন্ট সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংসদে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার পক্ষে বিল পাস করেন। যদিও ইতিপূর্বেই ‘ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল অফ সিঙ্গাপুর‘ (MUIS) ১৯৭৯ সালে একটি ফাতাওয়া (ডিগ্রি) জারি করে আহমদী তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশটিতে কাদিয়ানীদের সাথে মূলধারার মুসলমানদের বিবাহ-শাদী ও কাবিন রেজিঃ হাজ্জ-ভিসা, মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন ইত্যাদি নিষিদ্ধ।

আফ্রিকার স্বাধীন মুসলিম দেশ “মালি” এর গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের অন্যতম অংশ ‘HAUT COUNSEL ISLAMIQUE DU MALI CONFERENCE NATIONAL DES OULEMAS (মালির ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল, স্কলারদের জাতীয় সম্মেলন)’ এর আবেদনে সাংবিধানিকভাবে দেশটি কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয় (ভিডিও)। উলামা কাউন্সিলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটির প্রধান (গ্র‍্যাণ্ড মুফতি) ডক্টর সাইয়েদ মুহাম্মদ। ৮ ই আগস্ট ২০২২ ইং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সাথে উলামা কাউন্সিলের প্রধানের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উলামা কাউন্সিলের পক্ষ হতে দেশটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বরাবর লেখিত সুপারিশনামা হস্তান্তর করা হয়। যেখানে আরবী ভাষায় প্রায় ১-৯টি পয়েন্টে কাদিয়ানীদের অমুসলিম হবার প্রধান প্রধান কারণগুলো প্রমাণসহ তুলে ধরা হয়। উক্ত সুপারিশনামায় المجلس الاعلى الاسلامى فى مالى বা HAUT COUNSEL ISLAMIQUE DU MALI-এর প্রধান ডক্টর সাইয়েদ মুহাম্মদ এবং সেক্রেটারি ডক্টর ইব্রাহিম মুস্তফা জাবি (ভিডিও) উভয় স্বাক্ষর করেন (কিছু ডকুমেন্ট)।

হাইকোর্টের রায়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত বই বাজেয়াপ্ত

তথ্যসংগ্রহকারী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

মানুষ, বানর আর শিম্পাঞ্জি নাকি একই প্রজাতির প্রাণী থেকে ধীরেধীরে বিকশিত হয়েছে?

মানুষ কি বানর ও শিম্পাঞ্জীর সহোদর ভাই?

২০২৩ইং শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, অনুসন্ধানী পাঠ’ এর ২৪ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে: “আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আধুনিক মানুষ এবং বানর গোত্রের নানা প্রাণী (যেমন শিম্পাঞ্জি, গরিলা) একটি সাধারণ প্রাইমেট জাতীয় প্রজাতি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাং ওটাং ও গিবনের মতন এপ জাতীয় প্রাণীরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অন্যদিকে বানর তৈরী হয়েছে। আর একটি ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে নানা পর্যায়ে। তোমাদের মনে রাখতে হবে, বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি। বরং মানুষ, শিম্পাঞ্জিসহ এপ-রা আর বানরের বিভিন্ন প্রজাতি একই ধরণের প্রাইমেট প্রজাতির প্রাণী থেকে বিকশিত হয়েছে”। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, অনুসন্ধানী পাঠ, ষষ্ঠ শ্রেণি, পৃষ্ঠা-২৪

সুতরাং জানা গেল যে, বানর, গরিলা, শিম্পাঞ্জি আর মানুষ মূলত ভাইবোন! আরো সহজ করে বললে, বানর, গরিলা, শিম্পাঞ্জি এবং মানুষ হলো একই আব্বার সন্তান। মানে সহোদর আর কি! বানর নামক প্রাণীটি হলো মানুষ নামক প্রাণীটির সহোদর, আব্বা নয়। সহোদরকে আব্বা পরিচয় দেয়া মহা অন্যায়। এতো বড় মহা অন্যায় করা কিছুতেই উচিত হয়নি। কিন্তু মানুষকে, গরিলা আর বান্দরের সহোদর যারা প্রমাণ করছেন, বিবর্তনবাদের আজগুবি থিউরী কপচে আদি মানব আদম [آدم](আলাইহিস সালাম) ও হওয়া [حواء](আলাইহাস সালাম) বলে কুরআনের চিরন্তন সত্য বাণীকে অস্বীকার করিয়ে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের যারা ভ্রষ্ট ও নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারা করছেন তাদের অন্যায়টা কত বড় তাও ভাবা দরকার। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি)

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

হাদীস সংকলক ইমামগণ কে কোন মাযহাবের অনুসারী?

সিয়াহ সিত্তার ইমামগণ কে কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ? শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর কিতাব থেকে,

  • আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর উপর আনীত ২০টি অভিযোগ ও তার জবাব Click

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, ইমাম বুখারী এবং ইমাম আবু দাউদ তারা উভয়ই ফিকহের ক্ষেত্রে ইজতিহাদকারী ইমাম ছিলেন। ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম ইবনে খুযায়মাহ, ইমাম আবু ইয়া’লা; ইমাম বাজ্জার প্রমুখ ইমামগণের মাযহাব ছিল ‘আহলে হাদীস‘[১]। তারা নির্দিষ্ট কোনো আলেমের অনুসারী ছিলেন না। আবার তারা মুজতাহিদে মুত্বলাকও (প্রসিদ্ধ চার ইমামের মত স্বতন্ত্র মুজতাহিদ) ছিলেন না। বরং তারা ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ, ইমাম ইসহাক, ইমাম আবু উবাইদ প্রমুখ হাদীসশাস্ত্রবিদদের মতামতের (ফিকহের) দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে এঁদের মধ্যে কতিপয় ইমাম, বিশেষত ইমাম আবু দাউদ (রহ.) প্রমুখ তাঁরা আহমদ বিন হাম্বলের (ফিকহের) দিকে এবং কেউ কেউ আহলে হিজাজের তথা ইমাম মালেকের (ফিকহের) দিকে, কেউ কেউ আহলে ইরাকের তথা হানাফী এবং সুফিয়ান আস-সওরীর (ফিকহের) দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।[২]

[১] ‘আহলে হাদীস’ও একটি ‘মাযহাব’ (فهم على مذهب أهل الحديث)। আরও সহজ করে বললে, এটি হাদীসবিশারদদের কর্ম ও যোগ্যতার বিশেষণমূলক একটি ‘উপাধি’ মাত্র। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) নিজেই একথা লিখেছেন। এঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এঁরা নির্দিষ্ট কারো তাকলীদ করতেন না, তবে শাফেয়ী, হাম্বলী ইত্যাদী মাযহাবের ইমামগণের মতামত স্ব স্ব ইজতিহাদ মাফিক (من أهل الاجتهاد) অনুসরণ করতেন। বুঝা গেল, ইবনে তাইমিয়া’র “আহলে হাদীস” এর তাৎপর্য আর প্রচলিত “আহলে হাদীস”-এর তাৎপর্য সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থিত! দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশের কোনো কোনো ঠেলা-ওয়ালা, রিক্সা চালক ও দিনমজুর ভাইয়েরা যাদের হয়ত আলিফ বা তা ছা জ্ঞানও নেই; তারাও নাকি ‘আহলে হাদীস’! অথচ শায়খ ইবনে তাইমিয়ার ‘আহলে হাদীস’ এর তাৎপর্যমতে ‘আহলে হাদীস’-এর জন্য ইজতিহাদের যোগ্যতা পূর্ব-শর্ত!

[২] الحمد لله رب العالمين. أما البخاري؛ وأبو داود فإمامان في الفقه من أهل الاجتهاد. وأما مسلم؛ والترمذي؛ والنسائي؛ وابن ماجه؛ وابن خزيمة؛ وأبو يعلى؛ والبزار؛ ونحوهم؛ فهم على مذهب أهل الحديث ليسوا مقلدين لواحد بعينه من العلماء ولا هم من الأئمة المجتهدين على الإطلاق بل هم يميلون إلى قول أئمة الحديث كالشافعي؛ وأحمد؛ وإسحاق وأبي عبيد؛ وأمثالهم. ومنهم من له اختصاص ببعض الأئمة كاختصاص أبي داود ونحوه بأحمد بن حنبل وهم إلى مذاهب أهل الحجاز – كمالك وأمثاله – أميل منهم إلى مذاهب أهل العراق – كأبي حنيفة والثوري

রেফারেন্স : مجموع فتاوى ابن تيمية (মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ), খণ্ড নং ২০ পৃষ্ঠা নং ২৫

সংযুক্ত প্রামাণ্য স্ক্রিনশট :-

মাজমু ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ
  • ফেইসবুকে লিখাটির উপর একজন আহলে হাদীস দাবীদার ভাইয়ের কয়েক ডজন মন্তব্য ও সেগুলোর যথাযথ সদুত্তর সহ দেখে নেয়ার অনুরোধ!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর সুমহান ব্যক্তিত্ব ও তাকওয়া

মাজলুম ইমাম, হযরত আবু হানীফা (রহ.)-এর সুমহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী’র রচনা থেকে,

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) যখনি কারো আলোচনা করতেন উত্তম ও প্রীতির সাথে করতেন। রাবী হযরত রাশীদ বলেন, এটাই প্রকৃত ধার্মিকদের নীতি। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ও ফকীহ ইমাম সুফিয়ান আস-সওরী (রহ.) বলেন, আবু হানীফা (রহ.) ছিলেন সেই সময়কার সব চেয়ে বেশি সালাত আদায়কারী ব্যক্তি, সততায় সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বীরত্বে সর্বোত্তম। রাবী শারিকের সূত্রে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু হানীফা (রহ.) সুদীর্ঘ নীরবতা পালনকারী ছিলেন, সর্বদা চিন্তাশীল, দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন এবং মানুষের সাথে খুব কম কথা বলতেন।[১]

[১] لا يذكر احدا الا بخير. فقال الرشيد : هذه أخلاق الصالحين. فقال سفيان : مه! كان أبو حنيفة اكثر الناس صلاة و اعظمهم امانة و احسنهم مروءة. و روى عن شريك قال : كان ابو حنيفة طويل الصمت ، دائم الفكر ، كبير العقل ، قليل محادثة للناس. كذا فى المناقب للذهبى

রেফারেন্স : مناقب الامام ابى حنيفة و صحابيه (মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা ওয়া সাহাবাইহি), পৃষ্ঠা ১৭; তাহকীক, শায়খ মুহাম্মদ যাহেদ আল কাউসারী (রহ.)।

আমার মন্তব্য, বর্তমান স্যোসাল মিডিয়ায় আবু হানীফা (রহ.)-এর ফিকহের কতিপয় অনুসারী ও মুকাল্লিদ দাবীদারদের উচিত, ভিন্নমতের পেছনে উগ্রতার সাথে লেগে না থেকে বরং ইমামে আজমের সুমহান গুণে গুণান্বিত হয়ে ভিন্নমতকে সুন্দর পদ্ধতিতে ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে রদ করে আদিম ও সহজ সরল পথে ফিরে আনা।

সংযুক্ত স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য :-

মানাকিবুল ইমাম, যাহাবী

লিখক ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

হানাফী মাযহাবের মূলনীতি

হানাফী মাযহাবে ইজতিহাদের উসূল বা মূলনীতি সম্পর্কে,

সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআন। তাতেও পরিষ্কার সমাধান পাওয়া না গেলে দ্বিতীয়তে বিশ্বস্ত রাবীর সূত্র পরম্পরায় প্রাপ্ত রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ, তাতেও পরিষ্কার সমাধান পাওয়া না গেলে তৃতীয়তে আছারে সাহাবা তথা কোনো সাহাবীর মতামত, তাতেও পরিষ্কার সমাধান পাওয়া না গেলে চতুর্থতে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখয়ী, শা’বী, হাসান বসরী এবং আতা (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখের অবিকল ইজতিহাদের নমুনায় ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা। [১]

[১] হানাফী মাযহাবের ইজতিহাদের উক্ত মূলনীতি ইমাম যাহাবী (রহ.)-এর কিতাব থেকে নিম্নরূপ, يقول : آخذ بكتاب الله فما لم اجذ فبسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم و الآثار الصحاح الذى فشذ فى ايدى الثقات عن الثقات فإن لم اجد فبقول اصحابه آخذ بقول من شئت و اما اذا انتهى الامر إلى ابراهيم و الشعبى و الحسن و عطاء فاجتهد كما اجتهدوا. كذا فى المناقب الذهبى

রেফারেন্স : مناقب الإمام أبي حنيفة وصاحبيه للذهبى (ইমাম যাহাবী কৃত মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা ওয়া সাহিবাইহি), পৃষ্ঠা নং ৩৪, তাহকীক, শায়খ মুহাম্মদ যাহেদ আল কাওসারী।

সংযুক্ত স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য :-

মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা ওয়া সাহিবাইহি

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

আহলে হাদীস মতবাদের উৎপত্তি ইতিহাস

আহলে হাদীস ও সালাফি নামধারীদের উৎপত্তি ইতিহাস এবং আমাদের করণীয়

‘ওহাবী’ শব্দ থেকে ‘আহলে হাদীস’ নামমঞ্জুর যেভাবে?
আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া‘র ভাষ্যমতে ‘আহলে হাদীস নামক এই দলটি আঠারো শতকের মধ্যভাগে সৈয়দ নজির হোসেন এবং সিদ্দিক হাসান খানের শিক্ষা থেকে উত্তর ভারতে উত্থিত হয়েছিল।’ এর আগে এধরণের মতবাদের কোনো অস্তিত্বই ছিলনা। নামধারী আহলে হাদীস মতবাদের ফাউণ্ডার ব্যক্তিত্ব শীয়া থেকে কনভার্টেট মিয়া নজির হোসেন দেহলভী সাহেবের অনুরোধেই এবং একখানা দরখাস্তের মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ ইং তদানিন্তন ব্রিটিশ-ভারত সরকারের উচ্চমহল থেকে পূর্বনাম ‘ওহাবী‘ বাদ দিয়ে নতুন নাম ‘আহলে হাদীস‘ নাম মঞ্জুর করেন (প্রামাণ্য স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। আধুনিক অনেক আহলে হাদীস ভাই-বেরাদর ব্রিটিশদের এই সহানুভূতি স্বীকার করতে নারাজ। অথচ এটি এমন একটি সত্য ইতিহাস যা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। আহলে হাদীস শীর্ষ আলেম, মওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহ.) রচিত ‘রাসায়েলে সানায়িয়্যাহ‘ (পৃষ্ঠা নং ১০২) কিতাব হতেও এই ইতিহাস পরিষ্কার।

রাসায়েলে সানায়িয়্যাহ

নতুন এ দলটির মূল টার্গেট ছিল, নানা চটকদার স্লোগানের আড়ালে সাধারণ মানুষের মনে মাযহাব সম্পর্কে সংশয় তৈরি করে দেয়া। মাযহাবকে শির্ক/শিরিক, ব্যক্তিপূজা, বাপ-দাদারধর্ম ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করা। অথচ মাযহাব শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘চলার পথ’। পরিভাষায়, ইখতিলাফি মাসয়ালায় নির্ভরযোগ্য কোনো মুজতাহিদের গবেষণালব্ধ ফিকহের (মতের) অনুসরণকে মাযহাব বলে। সিয়াহ সিত্তাহ-র ইমামগণসহ পূর্বেকার বড় বড় ইমামগণও মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এ সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য, শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ শায়খ ছালেহ বিন আল ফাউযান (হাফিঃ) লিখেছেন, و ها هم الأئمة من المحدثين الكبار كانوا مذهبيين، فشيخ الاسلام ابن تيمية وابن القيم كانا حنبليين، والإمام النووي وابن حجر شافعيين، والإمام الطحاوي كان حنفيا وابن عبدالبر كان مالكيا অর্থাৎ বড় বড় হাদীস বিশারদ ইমামগণ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম দুইজনই হাম্বলি মাযহাবের, ইমাম নববী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী দুইজনই শাফেয়ী মাযহাবের, ইমাম আবু জা’ফর আত ত্বহাবী ছিলেন হানাফী মাযহাবের, ইমাম ইবনে আব্দুল বার ছিলেন মালেকী মাযহাবের। (ই’য়ানাতুল মুস্তাফীদ বি-শারহে কিতাবুত তওহীদ, খণ্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১২)। এখন মাযহাব মানা শির্ক হলে ঐ সমস্ত বড় বড় ইমামগণও কি মুশরিক ছিল বলবেন? এ পর্যায় আহলে হাদীস নামধারণকারীদের উদ্দেশ্যে শুধু একটা প্রশ্ন করছি, ‘আহলে হাদীস’ শব্দটি তো হাদীস গবেষকদের একটি উপাধি মাত্র। এখন আপনারাও কি প্রত্যেকে হাদীস গবেষক? নইলে আপনাদের জন্য “আহলে হাদীস” পরিচয় ব্যবহার করা সুস্পষ্ট কপিরাইট আইন লঙ্ঘন নয় কি?

নামধারী আহলে হাদীস কিংবা সালাফি দলটির উৎপত্তি ইতিহাস : ‘মুজাহেরে হক্ব’ কিতাবের স্বনামধন্য লেখক মাওলানা কুতুব উদ্দীন (রহ.) তাঁর ‘তুহফাতুল আরব ওয়াল আজম’ (تحفة العرب والعظم) বইতে উল্লিখিত দলটির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গেছেন। যার সারসংক্ষেপ এখানে পেশ করা হল, (তিনি লিখেছেন) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বীর সেনানী সাইয়েদ আহমদ শহীদ, মওলানা ইসমাইল শহীদ ও মওলানা আব্দুল হাই যখন পাঞ্জাবে আগমন করেন তার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে মাযহাবের (ফিকহ) বিরোধিতাকারী নতুন একটি দলের আত্মপ্রকাশ হয়। যারা হযরত সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর গঠিত ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতাকামী দলের নীতি আদর্শের বাহিরে ও বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল। এদের মুখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক বেনারসী (মৃত ১২৭৫ হিজরী)। তার এ ধরণের অসংখ্য ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডের কারণে সাইয়েদ আহমদ শহীদ পূর্বেই (১২৪৬ হিজরীতে) তাকে নিজ দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। তখনি গোটা ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষকরে সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর শিষ্য ও অনুসারীগণ মক্কা মদীনার সেসময়কার মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফতুয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন সম্মানিত মুফতীগণ সর্বসম্মতিক্রমে মৌলভী আব্দুল হক আর তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারী বিচ্ছিন্ন ফেরকা বলে রায় প্রদান করেন। মুফতীগণ একই ফতুয়ায় আব্দুল হককে রাষ্ট্রিয়ভাবে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশও করেন। আরব-জাহানের মুফতীগণের এই ফতুয়া ১২৫৪ হিজরীতে ‘তাম্বীহুদ্দাল্লীন ওয়া হিদায়াতুস সালেহীন’ (পৃষ্ঠা নং ৩) নামে প্রকাশ করা হয়। কিতাবটির রচয়িতা মওলানা আব্দুল খালেক যিনি সৈয়দ নজির হুসাইন দেহলভীর উস্তাদ এবং শ্বশুর। ‘বর সগীর পাক ওয়া হিন্দ কে ছন্দ তারিখি হাক্বায়েক‘ (পৃষ্ঠা ১১৫) এর উদ্ধৃতিতে স্ক্রিনশট নিচে প্রদত্ত হল। ডাক্তার আল্লামা খালেদ মাহমুদ লিখেছেন, یہ صحیح ہے کہ ہندوستان میں ترکِ تقلید کے عنوان سے جس شخص نے پہلے زبان کھولی وہ عبدالحق بنارسی تھا۔ অর্থাৎ একথা সত্য যে, ভারতবর্ষে মাযহাব বা তাকলীদ উপেক্ষা করার জন্য যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মুখ খুলেছিল সে ছিল আব্দুলহক বেনারসী (আসারুল হাদীস খণ্ড ২ পৃষ্ঠা নং ৩৭৫)। (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)।

بحوالہ برصغیرپاک وہندکے چندتاریخی حقائق صفحة ١١٥
আসারুল হাদীস

এই ফতুয়াজারির পরপরই আব্দুল হক বেনারসী আত্মগোপনে চলে যায়। উপরোক্ত বিবরণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, আব্দুল হক বেনারসীর হাত ধরেই ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে বর্তমানের এই ‘আহলে হাদীস’ নামক নতুন দলটির জন্ম। এরা সময় সময় নাম পরিবর্তন করে। কখনো সালাফী, কখনো মুহাম্মদী।

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকে ইসলামী রাষ্ট্রের উপর প্রাধান্য দেয়া : ভারত উপমহাদেশে এই দলের প্রধান মুখপাত্র সৈয়দ নজির হোসেন-এর অন্যতম শিষ্য মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লিখেছেন, “আহলে হাদীস দলটি ব্রিটিশ সরকারের কল্যাণ প্রত্যাশী, চুক্তি রক্ষাকারী ও অনুগত হওয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ প্রমাণ হচ্ছে, তারা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থাকাকে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে থাকার চাইতে উত্তম মনে করে।” (দেখুন, আল-হায়াত বা’দাল মামাত, পৃষ্ঠা নং ৯৩)। এই থেকেও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এই নতুন দলটি উপমহাদেশীয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গোপনে ব্রিটিশদেরই পক্ষাবলম্বী ছিল। আল্লাহু আ’লাম।

আহলে হাদীসদের কিছু মতবাদ : নতুন এই দলটির উৎপত্তি ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এবার তাদের কিছু বইপুস্তক থেকে প্রধান প্রধান কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি,

১। (কলেমা সম্পর্কে) : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ উচ্চারণ করলে বা লিখলে শিরিকী অর্থ প্রকাশ পায়। (আকীদার মানদণ্ডে ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমাহ তাইয়্যিবাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, পৃষ্ঠা নং ৬৯, লিখক-আব্দুল্লাহ আল ফারূক)।

২। (মাযহাব মানা সম্পর্কে) : ঠিক এই কাফিরদের মতই বর্তমানে যারা মাযহাবের অনুসারী তারা চার মাযহাবের যে কোনো একটির অনুসরণ করে তাদের বাপ দাদাদের মাযহাব অনুযায়ী। অর্থাৎ বাবা যদি হানাফী হয় তাহলে ছেলেও হানাফী হয় এবং বাবা যদি শাফেয়ী হয় তাহলে ছেলেও শাফিয়ী হয়। যে কারণে এইভাবে মাযহাবের অনুসরণ করা শিরকও কুফর। (আমাদের মাযহাব কি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত? পৃষ্ঠা নং ২২, লিখক-মুহাম্মদ ইকবাল বিন ফাখরুল)।

৩। (মাযহাব অনুসারীদের হত্যা করা সম্পর্কে) : যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট এক ইমামের তাকলীদকে ওয়াজিব করে নিবে তাকে তাওবাহ করানো হবে, অন্যথায় হত্যা করতে হবে। (অধ্যাপক ডক্টর রঈসুদ্দীন সম্পাদিত ‘চার মাযহাবের নির্দিষ্ট কোনো এক মাযহাবের অনুসরণ করতে মুসলিম কি বাধ্য?’ পৃষ্ঠা নং ৪৩; শায়েখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত ‘মুসলিম কি চার মাযহাবের কোন একটির অনুসরণে বাধ্য?’ পৃষ্ঠা নং ৩২)।

৪। (মাযহাবের অনুসারীরা নাকি জাহান্নামী) : হানাফী মাযহাবের আলেম/ওলামাগণের ইজমা [ঐক্যবদ্ধতা] মান্য করা বিদয়াত। হানাফী মাযহাব পালনকারী জনগণ বিদআতী কাজ করে চলেছেন বলে তাদের পরিণাম জাহান্নাম। (ফিকহে ইসলাম বনাম দ্বীন ইসলাম পৃষ্ঠা নং ১৭৯, লেখক-ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমদ)।

৫। (তাবলীগ নিয়ে অপপ্রচার) : তাবলীগ জামাত শিরক জনিত আকীদার জালে আবদ্ধ এক ফেরকা। (সহীহ আকীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব-লিখক মুরাদ বিন আমজাদ)। উল্লেখ্য, এই মুরাদ বিন আমজাদ আহলে হাদীসের শায়খ ছিল। বর্তমানে সে ঈসায়ী মিশনারীদের এজেন্ট এবং হাদীস অস্বীকারকারী দলের সক্রিয় সদস্য।

৬। (শির্ক কালাম সম্পর্কে) : সাপ বিচ্ছু ইত্যাদি বিষাক্ত প্রাণীর কাটাস্থানে শির্ক/শিরিকি শব্দ দিয়ে কোনো অমুসলিম বা মুসলিম ঝাড়ফুঁক করার দ্বারাও কোনো সমস্যা নেই। (করাচী থেকে প্রকাশিত আহলে হাদীস দলের প্রধান মুখপাত্র পাক্ষিক ‘সহীফায়ে আহলে হাদীস’, জমাদিউস সানী, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ)।

৭। (নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে) : নামায ত্যাগকারী ব্যক্তি মুরতাদ তথা ইসলামত্যাগী। এমন ব্যক্তি নাকি আত্মীয় স্বজনের উত্তরাধিকারী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এমন ব্যক্তির জন্য নাকি মক্কা মদীনার সীমানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমন ব্যক্তির যবেহকৃত পশুর গোশত ভক্ষণকরাও নাকি হারাম। মৃত্যুর পর নাকি তার জানাযাও পড়া যাবে না। এমন ব্যক্তির জন্য নাকি মুসলিম মহিলা বিবাহ করাও হারাম। (জামাআতে সালাত ত্যাগকারীর পরিণাম, পৃষ্ঠা নং ২৭, ২৮, ২৯, ৩০; লিখক-খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান, আত-তাওহীদ প্রকাশনী)।

৮। (রমজানে রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে) : রমযান মাসে কারীগণের রাত জেগে কুরআন পাঠ করা নাবীর শিক্ষা ছিল না। (‘মৃত ব্যক্তির নিকট কুরআন পাঠের সওয়াব পৌঁছে কি?’ লেখক-খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান-৩৯)।

৯। (পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা সম্পর্কে) : অজু তথা পবিত্রতা ছাড়াই কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা জায়েজ। (শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ-এর ভিডিও হতে সংগৃহীত, এছাড়াও ‘দলীলুত ত্বালিব আ’লা আরযাহিল মাত্বালিব’, লিখক-নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান, পৃষ্ঠা নং ৫২)।

১০। (অমুসলিমদের যবেহ সম্পর্কে) : অমুসলিমদের যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া হালাল। (উরফুল জাদী পৃষ্ঠা নং ১০, লিখক, সাইয়েদ নূরুল হাসান আল কুনুজী [নওয়াব নূরুল হাসান খান ভূপালী নামে পরিচিত])।

১১। (হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পায়খানা সম্পর্কে) : প্রতিটি হালাল প্রাণীর প্রস্রাব এবং পায়খানা পবিত্র। কাপড়ে লাগলেও তা নিয়ে নামায পড়া জায়েজ। এমনকি ঔষধ হিসেবেও সেবনকরা বৈধ। (ফাতওয়ায়ে সাত্তারিয়াহ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা নং ৫৩, শায়খ আলী মুহাম্মদ সা’দী)।

১২। (মহিলা মুয়াজ্জিন হওয়া) : মহিলাও মুয়াজ্জিন হতে পারে। (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা নং ২৩)। এছাড়া আরও বহু নতুন নতুন এমন সব বিষাক্ত মতবাদ নিয়ে তারা সামনের দিকে এগুচ্ছে যার ফলে একদম খুব সহজেই মুসলিম উম্মাহাকে বেঈমান বানানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ দ্বীনি ভাই-বোন তাদের সম্পর্কে ভালো মত জানা না থাকায় তাদের কথিত ‘সহীহ আকীদা’ এর চটকদার স্লোগানে দুর্বল হয়ে পড়ে। যা খুবই বেদনাদায়ক।

তাকলীদ প্রসঙ্গ : তাকলীদ অর্থ অনুকরণ-অনুসরণ। কুরআনুল কারীম থেকে দলিল, আল্লাহতালা ইরশাদ করছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহতালার আনুগত্য করো এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্তদের আনুগত্য করো। (সূরা নিসা: ৫৯)। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আববাস (রা.) আয়াতটির أُولِي الْأَمْرِ হতে يعنى أهل الفقه والدين তথা ফোকাহায়ে কেরাম এবং দ্বীনের ধারকবাহকগণ উদ্দেশ্য। আবার কেউ কেউ أُولِي الْأَمْرِ এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম ও শাসকশ্রেণীও বলেছেন। বরেণ্য মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (রহ.) কৃত রচনা ‘ইকদুল জীদ’ (عقد الجيد) কিতাবে যে কোনো নির্দিষ্ট একজন মুজতাহিদের তাকলীদ করা জরুরী বলে উল্লেখ রয়েছে। কেননা মুজতাহিদগণের উসূল (নীতিমালা) ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। (হানাফী মাযহাবের মূলনীতি সম্পর্কে জানুন)।

মাযহাব সম্পর্কে যারা ডিপ্রেশনের শিকার তাদের জন্য আরব-বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার ও বরেণ্য হাদীসবিদ শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল উসাইমিন (রহ.)-এর নির্দেশনা : (ক) তিনি (রহ.) লিখেছেন, أن يكون المقلد عاميا لا يستطيع معرفة الحكم بنفسه، ففرضه التقليد، لقوله تعالي ( فاسألوا أهل الذكر إن كنتم لا تعلمون) অর্থাৎ যেসব সাধারণ মানুষ সরাসরি শরীয়তের বিধি-বিধান জানতে সক্ষম নন তাদের জন্য তাকলীদ করা ফরজ। কেননা আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন, (অর্থ) তোমরা যদি না জানো তাহলে আহলে ইলমদের জিজ্ঞাসা কর। (মাজমু’ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল [مجموع فتاوى ورسائل], খণ্ড ১১ পৃষ্ঠা নং ৮২)। (খ) শায়খ উসাইমিন (রহ.) যার যার অঞ্চল/দেশের আলেমগণের অনুসরণের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আরও লিখেছেন, لا يسوغ لك هذا، لأن فرضك أنت هو التقليد وأحق من تقلد علماؤك، لو قلدت من كان خارج بلادك أدى ذلك إلى الفوضى في أمر ليس عليه دليل شرعي… فالعامي يجب عليه أن يقلد علماء بلده الذين يثق بهم অর্থাৎ (জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে) এটা তোমার জন্য পছন্দ হবে না। তাই তোমার কর্তব্য হল তাকলীদ করা। আর তোমার তাকলীদের সবচে বড় হকদার হলেন তোমার (অঞ্চল/দেশের) আলেমগণ। যদি তুমি তা না করে বাহিরের দেশের আলেমদের তাকলীদ কর তবে তা লাগামহীনতা আর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। সুতরাং সাধারণ মানুষের কর্তব্য নিজ দেশের আলেমদের অনুসরণ করা। (সিলসিলাতু লিক্বাইল বাবিল মাফতূহ [سلسلة لقاء الباب المفتوح] খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা নং ৩২)। (গ) শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)ও প্রায় একই কথা লিখেছেন। তিনি লিখেন, وتقليد العاجز عن الاستدلال للعالم يجوز عند الجمهور অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে অক্ষম জনসাধারণের জন্য আলেমের [ফকিহগণের] অনুসরণ জায়েজ। (মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা নং ২৬২)। এভাবে আরও বহু প্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে। (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)

مجموع فتاوى ورسائل

আহলে হাদীসদের চটকদার স্লোগানের আড়ালে থাকা কিছু ভণ্ডামী : এদের প্রায় প্রতিটি লিখক, বক্তা বা ডিবেটার কথায় কথায় সহীহ হাদীস আর সহীহ আকীদার বয়ানের ফুলঝুরিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। তাদের বক্তব্য, মাযহাবের কারণেই নাকি ইসলামে চার চারটা ভাগের জন্ম হয়ে গেছে। অথচ এই নির্বোধদের যদি ‘ফিকহি ইখতিলাফ’ বিষয়ে উসূল জানা থাকত বা একাডেমিক পড়াশোনাটাও থাকত, তাহলেও এধরণের পাতলা অভিযোগ কপচানোর দুঃসাহস কোনোদিন হত না। অথচ ‘মাযহাব’ এসেছে মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সমাধান যদি কুরআন সুন্নাহ কিবা ইজমায় পাওয়া না যায় শুধুমাত্র তখনি মীমাংসায় পৌঁছার জন্য মাযহাব বা ফিকহ। মাযহাব কখনোই কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার বিপরীত বস্তু নয়, বরং সমাধানের চতুর্থ স্তরীয় অথেনটিক সোর্স মাত্র। সহীহ বুখারীতে এসেছে, মুজতাহিদের ইজতিহাদে ভুল হলেও মুজতাহিদ (গবেষক) একটি সওয়াব পান। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪)। তা সত্ত্বেও এই ফেতনাবাজদের বলতে শুনা যায়, কুরআন সুন্নাহ থাকতে মাযহাব কেন? এর উত্তরে আমি তাদেরকে পালটা প্রশ্ন করেছিলাম যে, তাহলে তো প্রশ্ন আসবে—চোখ থাকতে চশমা কেন? আজ থেকে তোমাদের শায়খদের বল, তারা যেন চশমার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলে! এবার দেখুন, ওনাদের সহীহ’র মোড়কে একেকটা বিষয়ে কতটা ভিন্ন ভিন্ন মত!

১–নামাযে কিরাত পড়া প্রসঙ্গে,
(ক) শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানীর মতে, সশব্দে সূরা পড়া হয় এরকম নামাযে ইমামের পেছনে মুক্তাদির জন্য কিরাত পড়া [ফাতিহা পড়া] রহিত। (শায়েখ আলবানী’র ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত সম্পদনের পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৮৩)।
(খ) ডক্টর আসাদুল্লাহ আল গালিবের মতে, কিরাত পড়া ফরজ। (আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৮)।

২–বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে,
(ক) ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ হবার পক্ষে কোনো সহীহ দলীল নেই। (আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৬)।
(খ) সূরা ফাতিহা কুরআনের অংশ। (অধ্যাপক হাফিজ আইনুল বারী রচিত, আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা পৃষ্ঠা নং ১০৫)।

৩–বিসমিল্লাহ জোরে পড়া,
(ক) গালিব সাহেবের মতে, ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বা আস্তে পড়ার কোনো ভিত্তি নেই। (আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৬)।
(খ) জোরে আস্তে উভয়ভাবে পড়া সহীহ সনদে বর্ণিত। (আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ২৮)

৪–রুকু সম্পর্কে,
(ক) সালাতে রুকু পেলে রাকাআত পাওয়া যায়। (আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৩৩)।
(খ) সালাতে শুধু রুকু পেলে উক্ত রাকাত পায়নি, ধরা হবে। (আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সাঃ পৃষ্ঠা নং ৯৬)।

৫–সালাম সম্পর্কে,
(ক) ডান দিকে ফিরে ‘ওয়াবারাকাতুহু’ বলতে হবে (আকরামুজ্জামান সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৬২)।
(খ) উভয় দিকেই ওয়াবারাকাতুহু বলতে হবে। (ইবনে ফজলের ‘সহীহ নামায ও দুআ শিক্ষা’ পৃষ্ঠা নং ১০৩)।

৬–জনাযায় ফাতিহা পড়া সম্পর্কে,
(ক) আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, জানাযায় ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (ছালাতুর রাসূল পৃষ্ঠা নং ২১৩)
(খ) শায়খ আলবানী বলেন, সুন্নত। (সিফাতু সালাতিন্নবী পৃষ্ঠা নং ১১১)। উল্লেখ্য, সঠিক মাসয়ালা হচ্ছে, এটি বড়জোর জায়েজ, যেহেতু ইবনে আব্বাসের বিচ্ছিন্ন একটি আমলে পাওয়া গেছে কিন্তু সুন্নাতে রাসূল হিসেবে প্রমাণিত নয়।

৭- রুকু থেকে উঠে হাত বাঁধা,
(ক) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন এবং শায়খ ইবনে বাজ বলেন, রুকুর থেকে উঠে হাত বাঁধা সুন্নাত (ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম পৃষ্ঠা নং ২৭৩)।
(খ) শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, বিদয়াত। (আসলু সিফাতিস সালাহ খণ্ড ২ পৃষ্ঠা নং ৭০০)।

এখন প্রশ্ন হল, সব ক্ষেত্রেই নিয়ম যদি একই হবে, ফিকহি মাসয়ালাতেও সুন্নাহ পালনে নানা বৈচিত্রময় নিয়ম বা একাধিক পদ্ধতির অবকাশ নাই থাকবে তবে কেন আহলে হাদীস নামক শায়খ ও তাদের অনুকরণীয় বিশিষ্টজনদের মধ্যেও একই বিষয়ে ভিন্ন মত সৃষ্টি হল? মাযহাবের ইমামগণের ফিকহি মতভিন্নতার দরুন ইসলাম বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হলে তবে কি উল্লিখিত শায়খদের মতভিন্নতার দরুন ইসলামে ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি হল? আসলে যাদের মাযহাব সম্পর্কে একাডেমিক জ্ঞান নেই, ইজতিহাদের উসূল (নীতিমালা) সম্পর্কেও অন্ধকারে, ফলে সার্ক্ষণিক কথিত ‘সহীহ’ ডিপ্রেশনের শিকার, তাদের এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশের গবেষক কোনো আলেমের সান্নিধ্যে থেকে এসব বিষয়ে কিছুদিন একাডেমিক পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করা।

আহলে হাদীস ছদ্মনামী এই নতুন দল সম্পর্কে রাষ্ট্র ব্যক্তিবর্গের মূল্যায়ন :

১. ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার শিরোনাম, ‘সালাফি মতাদর্শী ব্যক্তিদের নিয়ে উত্থান জেএমবির।’ নিউজে উল্লেখ করা হয় যে, আহলে হাদিস ধারাটি আগে ‘ওহাবি’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে এরা ‘সালাফি’ হিসেবে পরিচিত। ধারাটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হলেও মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সালাফি ধারার ‘জিহাদি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠার ধারণা পান বা আগ্রহী হন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শায়খ আবদুর রহমান। (দৈনিক প্রথম আলো ০৩-১১-২১৬ইং)।

২. রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি আমাদের দেশের উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশই আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের।’ (দৈনিক ইনকিলাব, ১১-১২-২০১৯ ইং)।

আহলে হাদীস নামক দলটির ফেতনার মুকাবিলায় আমাদের করণীয় :

১. সাধারণ যুবক যুবতীদের কোনো দোষ নেই। তারা এটিকে সরল মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে, এটুকুই। তাদের যুক্তিযুক্তভাবে মাযহাবের সংজ্ঞা ও তার সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে বুঝানো হলে তারা এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

২. এরা বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আমাদের করণীয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সাথে সংলাপে বসা। দালিলিকভাবে তাদের ভ্রান্ত মতবাদের খণ্ডন করে বুঝিয়ে দেয়া যে, হানাফী ফিকহের আলোকে প্রচলিত আমল-ও সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এর বিপরীতে নতুন কোনো নিয়ম চালু করার ফলে সমাজে/এলাকায় কোনো গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।

৩. প্রতিটি মসজিদের ইমাম-খতিবদের নিয়ে আহলে হাদীস/সালাফি নামধারীদের ফেতনার রদে তারবিয়তের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় বড় জামে মসজিদের কমিটিকেই এর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে কোনোভাবে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা মনোভাব সৃষ্টি হয় এমন কোনো কার্যকলাপ করা যাবেনা। একমাত্র ঐক্য ও সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনাই উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ