Home Blog Page 35

আকাশে মৃতদের সাথে জীবিত ব্যক্তিও থাকতে পারা

0

প্রশ্নকর্তা : ঈসা (আঃ) দ্বিতীয় আসমানে জীবিত আছেন, এর দলিল দিন! তারপর একটি প্রশ্নের উত্তর দিন, ঈসা (আঃ) যদি দ্বিতীয় আসমানে জীবিত থেকে থাকেন তাহলে তো মানতে হবে যে, আসমানে অন্যান্য মৃতদের সাথেই জীবিত রয়েছেন! অথচ মৃত আর জীবিত একত্রে থাকতে পারেনা! এর কী জবাব?

উত্তর : আপনার প্রশ্নের উত্তরে একটু পরে আসছি। তার আগে আমাকে দুটি প্রশ্নের উত্তর দিন! (১) মৃত আর জীবিত একত্রে থাকতে পারেনা, এই কথার দলিল কী? কুরান হাদীসে কি এমন কোনো কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও এসেছে? (২) তর্কের খাতিরে মানলাম যে, আকাশে মৃতদের সাথে জীবিতরা একত্র হওয়া সম্ভব না! এমতাবস্থায় মেরাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কি মৃত ছিলেন যে, ফলে তাঁর পক্ষে সাত আসমানে মৃত নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়েছিল!?

এবার প্রাসঙ্গিক আলোচনায় চলুন! হযরত ঈসা (আঃ) দ্বিতীয় আসমানে থাকা মর্মে সহীহ বুখারীতে এসেছে “ছুম্মা ছ’য়িদা হাত্তা আতাস সামায়াছ ছানিয়াহ” অর্থাৎ অতপর (জিবরাইল আমাকে নিয়ে) দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌঁছলেন। (রাসূল সাঃ আরো বলেন) “ফালাম্মা খালাছতু ফা ইযা ইয়াহইয়া ওয়া ঈসা ওয়া হুমা ইবনা খা-লাতিন।” অর্থাৎ এরপর আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন সেখানে ইয়াহইয়া এবং ঈসা আলাইহিমাস সালাম-কে দেখলাম। তাঁরা উভয়ই খালাত ভাই। দেখুন, সহীহ বুখারী কিতাবু আ-হাদীসিল আম্বিয়া, অধ্যায় ৫০; হা/৩১৮৯ (ইফা)।

প্রাপ্ত শিক্ষা ও কাদিয়ানী যুক্তির খন্ডন : উপরের হাদীস আমাদের বলছে, ঈসা আঃ বর্তমানে দ্বিতীয় আকাশে স্বশরীরে জীবিত। কিন্তু প্রশ্ন হল, তবে কি অন্যান্য নবীগণও আকাশে স্বশরীরে জীবিত?

উত্তরে বলব, না, বরং শুধুমাত্র ঈসা (আঃ)-ই দ্বিতীয় আকাশে স্বশরীরে জীবিত! তার কারণ প্রথমত বহু সহীহ হাদীসে এসেছে আল্লাহতালা ঈসা (আঃ)-কে স্বশরীরে আকাশে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি শীঘ্রই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন (আত-ত্ববকাতুল কোবরা লি-ইবনে সা’আদ ১/৩৬-৩৭ দ্রষ্টব্য)। কিন্তু এইভাবে কোনো কথাই অন্যান্য নবীগণ সম্পর্কে কোনো হাদীসে পাওয়া যায়না। দ্বিতীয়ত, মেরাজের আরেকটি হাদীসে পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাঁর কাছ থেকে দুনিয়াতে পুনরায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। একথা সুনানু ইবনে মাজাহ’র হাদীসেও এসেছে। হাদীসের ভাষ্য : “ফা-রুদ্দাল হাদীসু ইলা ঈসা ইবনে মরিয়ম ফা-ক্বলা ক্বদ ও’হিদা ইলাইয়্যা ফী-মা দূনা ওয়াজবাতিহা ফা-আম্মা ওয়াজবাতুহা ফা-লা ই’য়ালামুহা ইল্লাল্লাহু”। অর্থাৎ অতপর (কেয়ামতের) বিষয়টি ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেন, আমার থেকে কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু কেয়ামতের সঠিক জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৪০৮১)। কিন্তু অন্য আর কোনো নবী-ই এইধরনের কোনো কথা বলেননি। এই সমস্ত কারণে কাদিয়ানীদের উক্ত প্রশ্ন – তবে কি অন্যান্য নবীগণও স্বশরীরে জীবিত, এটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল। সংক্ষেপে।

তাদের আরেকটি যুক্তি হল, মৃত আর জীবিত একত্রে থাকতে পারেনা। তাই ইয়াহইয়া (আঃ) আর সাথে অবস্থানকারী ঈসা (আঃ) তিনিও মৃত প্রমাণিত! আমার জবাব, (১) পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ আছে, মৃতরা কেয়ামতের আগে পুনরায় ফিরে আসবেনা। অথচ রাসূল (সাঃ) সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া অংশে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে শপথ করে ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে বলেছেন, ঈসা (আঃ) অচিরেই নাযিল হবেন। সুনানে ইবনে মাজাহ’র উক্ত হাদীসেও আপনারা দেখেছেন, ঈসা (আঃ) নিজেই নিজের পুনরায় ফিরে আসা সম্পর্কে প্রতিশ্রুতির কথা জানান দিয়েছেন। এখন মির্যায়ী উক্ত যুক্তি বাতিল না হলে তখন কাদিয়ানীদের নিকট নিচের প্রশ্নটির আর কোনো জবাব থাকেনা! প্রশ্নটি হল, তবে কি প্রতিশ্রুত সেই ঈসা ইবনে মরিয়ম পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য আকাশে আবার জীবিত হবেন? (২) তর্কের খাতিরে মানলাম, দ্বিতীয় আকাশে ইয়াহইয়া (আঃ) আর ঈসা (আঃ) দুইজনই মৃত, কিন্তু সেই দুই মৃত ব্যক্তির সাথে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাক্ষাৎ কিভাবে সম্ভব হল? নাকি এবার মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাক্ষাতকেও অস্বীকার করে বসবেন? দয়া করে ধূর্ত মির্যায়ী উগরানো বমি অন্ধের মতো না ছেঁটে নিজের মগজটা এবার একটু খাটাবেন! সত্য বলতে, মৃত আর জীবিত একত্রে থাকতে পারেনা, মির্যায়ী এই অপযুক্তি মূলত রাসূল (সাঃ) এর হাদীসকে অমান্য করার বড় চালাকি বৈ কিছুই না!

সেযাইহোক, আপনাদের উল্লিখিত যুক্তির খন্ডনে আমি শুধু একটি প্রশ্ন করব।

আপনাদের যুক্তি হল, মৃত আর জীবিত একত্রে থাকতে পারেনা! তাই আমার পাল্টা প্রশ্ন, আপনাদের উক্ত যুক্তি যদি সঠিক হয় তাহলে বায়তুল মুকাদ্দাসে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-এর পক্ষে আপনা জীবিত অবস্থায় সেখানে মৃত্যুবরণকারী অন্যান্য নবীগণের সাথে একত্রিত হওয়া কিভাবে সম্ভব হল? তিনি (সাঃ) তো বায়তুল মুকাদ্দাসে আগত সমস্ত নবীর নামাযের ইমামতিও করেছিলেন। ফলে তিনি ‘ইমামুল আম্বিয়া’ উপাধিতে ভূষিত হন। কাজেই মৃত আর জীবিত একত্রে থাকতে পারেনা, এটি একটি বাতিল ও দুর্বল যুক্তি বৈ নয়।

এবার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে একজন যুগ ইমামের উদ্ধৃতি তুলে ধরব। শায়খ ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ লিখেছেন :

أُسْرِىَ برسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ بجسده على الصحيح من المسجد الحرام إلى بيت المقدس، راكبًا على البُرَاق، صحبة جبريل ـ عليهما الصلاة والسلام ـ، فنزل هناك، وصلى بالأنبياء إمامًا، وربط البراق بحلقة باب المسجد‏، ثم عرج به تلك الليلة من بيت المقدس إلى السماء الدنيا

অর্থাৎ সহীহ হাদীস অনুসারে রাসূল সাঃ এর ইসরাহ (ঊর্ধ্ব জগত ভ্রমণ) হযরত জিবরাঈল আঃ এর সাহচর্যে থেকে স্বশরীরে ও মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত বোরাক যোগে আরোহন অবস্থায় সংঘটিত হয়েছিল। অতপর তিনি বোরাক থেকে নিচে অবতারণ করেন এবং বোরাককে মসজিদুল আকসার এক কোণে বেধে (সেই বরকতময় রাতে সম্মিলিত) নবীগণকে নিয়ে ইমামতির মাধ্যমে তিনি সালাত আদায় করেন। অতপর তিনি জিবরাইলের সাথে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে প্রথম আসমানের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বাকাশে পাড়ি দেন। (রেফারেন্স : যাদুল মা’আদ পৃষ্ঠা নং ৪৭)। এবার হয়ত প্রসঙ্গ এড়িয়ে আপনা জান ছুটাতে আপনারা মেরাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হওয়া-ও অস্বীকার করতে পারেন। তখন উত্তরে বলব, এই সম্পর্কে আপনাদের নিকটেও মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমাম হিসেবে মাননীয় শায়খ ইবনুল কাইয়্যুম (রহঃ) এর উদ্ধৃতি দ্বারা একটু আগেই মেরাজ স্বশরীরে হওয়ার প্রমাণ দেখেছেন। এই পর্যায় আপনাদের মির্যা কাদিয়ানীর মেরাজ সংক্রান্ত একটি উদ্ধৃতি পেশ করে আজকের মত আলোচনা এখানেই শেষ করব, ইনশাআল্লাহ।

মেরাজ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী তার “মালফূযাত” বইতে লিখেছেন,

উর্দু উচ্চারণ : হামারা ইয়ে মাযহাব হারগেয নিহি কে উয়ো এক খাব থা ইয়া স্রেফ রূহ গী, বলকে হাম তু কাহাতে হেঁ কে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কো আঈনে বিদারী মে মেরাজ হুয়া আওর এক লতিফ জিসিম বিহি সাথ থা। “অর্থাৎ মেরাজ স্বপ্নযোগে বা আধ্যাত্মিকভাবে হয়েছিল এটা আমাদের মতামত নয়, বরং আমরা তো বলে থাকি যে, মেরাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল এবং সূক্ষ্মতর একটি শরীরও সাথে ছিল।” (মির্যা কাদিয়ানীর রচিত মালফূযাত [উর্দু] খন্ড ৫ পৃষ্ঠা ১৩৪; নতুন এডিশন)।

এখানে বলে রাখা দরকার, মির্যার উল্লিখিত বক্তব্যে মেরাজ যে, স্বপ্নযোগে ছিলনা, বরং জাগ্রত অবস্থায়ই ছিল; অন্তত এইটুকু তো পরিষ্কার হল। তারপর বাকি থাকল “সূক্ষ্ণতর শরীর” বিষয়টি। আমি বলি, সূক্ষ্মতর শরীর এর ব্যাখ্যা আর যাইহোক না কেন, অন্ততপক্ষে মেরাজ যে “জাগ্রত অবস্থায়”-তেও হয়েছিল তা কিন্তু কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না! আল্লাহ আমাদেরকে সত্যটা যতই কঠিন হোক তা যেন সহজেই বুঝার এবং গ্রহণ করার তাওফিক দিন, আমীন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আযানের আগে সালাত ও সালাম পাঠ করার বিধান কী?

0
  • আযানের আগে পরে সালাত ও সালাম :

প্রশ্নকর্তা : আযানের আগে সালাত ও সালাম পাঠ করার বিধান কী?
উত্তরদাতা : ইমাম ইবনে হাজার আল-হায়সামী (রহ.)-এর কিতাব {الفتاوى الكبرى} ‘আল ফাতাওয়াল কোবরা’ এর ১ম খন্ডের ১৩১ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে ان الصلاة و السلام على نبى قبل الآذان ليست السنة ‘আন্নাস সালাতা ওয়াস সালামা আলান নাবিয়্যি কবলাল আযান লাইছাত সুন্নাতুন।’ অর্থাৎ আযানের পূর্বে নবী করীম (সা.)-এর প্রতি সালাত ওয়া সালাম পাঠকরা সুন্নাত নয়। (ফেইসবুক থেকে পড়ুন)
প্রশ্নকর্তা : তাহলে দেশের কোথাও কোথাও এটি কোন্ দলিলে প্রচলিত?
উত্তরদাতা : আল্লাহই ভাল জানেন। তবে যতটুকু জানা যায় তা হল, আযানের পরে উচ্চৈঃস্বরে (মাইকে) সালাত ওয়া সালাম পাঠের প্রচলন হয়েছিল ৭৯১ হিজরীতে সুলতান নাসির সালাউদ্দিন ইবনে আইয়ুবের শাসনামলে এবং তারই নির্দেশে। এর প্রমাণ ইমাম আবুল আব্বাস ইবনে হাজার আল হাইছামী রচিত ‘আল ফাতাওয়াল কুবরা‘ এর আযান অধ্যায়ের ১৯১ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে (নিচে স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। এই তথ্য ইমাম সাখাবী (রহ.) থেকে তাঁরই রচিত {القول البديع فى الصلاة على الحبيب الشفيع} ‘আল ক্বওলুল বাদী ফিস-সালাতি আলাল হাবীবিশ শাফী’ কিতাবেও রয়েছে। কিন্তু ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ.) থেকে এই তারিখ ৭৮১ হিজরী উল্লেখ রয়েছে। (দেখুন ইমাম সুয়ূতী রচিত {حسن المحاضرة فى تاريخ مصر و القاهرة} হুসনুল মুহাযারাহ ফী তারীখে মিশর ওয়াল কাহেরাহ)। সুতরাং বুঝা গেল, এটি সুন্নত নয়। আরো বুঝা গেল, এটি অন্ততপক্ষে সাহাবায়ে কেরামের যুগেরও প্রায় ৬৭১ বছর পরে ফেতনা ফাসাদের যুগে উদ্ভাবন হয়। তাই জ্ঞানীদের উচিৎ হবে, বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে সাধারণ মানুষকে আন্তরিকতার মাধ্যমে যথাসাধ্য বুঝিয়ে আদিম ও সহজ সরল পন্থায় ফিরে আনতে চেষ্টা করা। প্রয়োজনে দুই পক্ষের বিজ্ঞ আলেম উলামাগণ দ্বারা উত্তম বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংশয় নিরসনে উদ্যোগ নেয়া। তবে কিন্তু যেখানে বুঝাতে গেলে ঝগড়া বাধার সম্ভাবনা থাকবে সেখানে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছবর আর দোয়ার মাধ্যমে নিরব থাকাই উত্তম। কেননা পবিত্র কুরআন বলছে, {الفتنة اشد من القتل} আল ফিতনাতু আশাদ্দু মিনাল ক্বাতলি। অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হত্যা থেকে জঘন্য।

বাবুল আযান, পৃষ্ঠা ১৯১, ইমাম ইবনে হাজার আল হাইছামী
  • লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

নবীজী (সা:)-কে হাজির নাজির বিশ্বাস করা যাবে কিনা?

0
  • হাজির নাজির :

প্রশ্নকর্তা : নবীজীকে হাজির নাজির বিশ্বাস করা যাবে কিনা?
উত্তরদাতা : আগে বলুন হাজির নাজির কাকে বলে?
প্রশ্নকর্তা : আমার জানা মতে, যিনি কোথাও উপস্থিত হন এবং সব কিছু দেখেন তাকে হাজির নাজির বলে।
উত্তরদাতা : কিন্তু পবিত্র কুরআন তো বলছে, মৃত্যুর পর কেয়ামতের পূর্বে আর কারো জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসার অনুমতি নেই! (সূরা মুমিনূন ৯৯-১০৩)। এখন আপনি কি মনে করেন যে, নবীজী পবিত্র কুরআনের এই বিধান লঙ্গন করবেন? নাউযুবিল্লাহ।
প্রশ্নকর্তা : না, কিন্তু আহলে সুন্নাহ’র পবিত্র বিশ্বাস তো এই যে, নবীজী (সা:) বরযখী তথা দুনিয়া আর কেয়ামতের মধ্যবর্তী জগতে জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত। তাহলে তো তিনি বরযখী জগতের বাহিরেও আল্লাহ্ চাহিলে বিশেষ কোনো পন্থায় নিশ্চয়ই যাওয়া আসা করার অনুমতি পাবেন, তাই নয় কি?
উত্তরদাতা : আপনার কথার সাথে আমিও একমত। কিন্তু আল্লাহ্ যে চাহিবেন না, সে কথা তো আগেই ‘কাল্লা ইন্নাহা কালিমাতুন হুয়া ক্বায়েলুহা’ (২৩:১০০) আয়াতে বলে দিয়েছেন। সেযাইহোক, তিনি (সা:) যে বরযখী জগতের বাহিরে আসতে অনুমতি পেয়েছেন তার কী দলিল আছে? তর্কের খাতিরে কিছুক্ষণের জন্য যদি মেনে নিই, নবীজী (সা:) বরযখী জগতের বাহিরেও যাওয়া আসা করেন; তখন তো প্রশ্ন আসবে, তিনি রাওজা শরীফ ত্যাগ করে বাহিরে কোথাও চলে গেলে সেই মুহুর্তে যেসব হাজী সাহেব মদীনায় নবীজীর রাওজা শরীফে উপস্থিত হয়ে ‘ওয়াস সালাতু ওয়াস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’ পাঠ করবেন তখন কি তারা জনমানবহীন একটি খালি কবরকে সালাম করছেন না? উম্মতে মুহাম্মদিয়ার জন্য এর চেয়ে বড় কষ্টদায়ক আর কী হতে পারে? এই অবস্থায় কোটি কোটি উম্মতে মুহাম্মদিয়া অস্বস্তিকর অবস্থায়ও পড়বে কিনা?
প্রশ্নকর্তা : কোনো কোনো বক্তা তো বলে থাকেন, নবীজী মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানগুলোতে আসা যাওয়া করেন!
উত্তরদাতা : না এটি তাদের মনগড়া কথাবার্তা, যা সঠিক দলিল প্রমাণ আর যুক্তির কষ্টিপাথরে একদমই টিকেনা। সেযাইহোক, আচ্ছা যেসব বক্তা এমন কথা বলেন তাদেরকে আজই জিজ্ঞেস করবেন তারা নিজেদেরকে নবীজীর ‘সাহাবী’ মনে করেন কিনা? কেননা নবীজী যখন মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে আসবেন তখন তো তিনি তাদেরকেও দেখবেন, তাই নয় কি? কারণ, সাহাবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ঈমানের সহিত নবীজীর সোহবত (সাহচর্য) লাভ করবে এবং ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করবে তারা সাহাবী। ফলে বুঝা গেল, সাহাবী হতে হলে নবীকে চর্মচোখে দেখা জুরুরি নয়, বরং নবীজীর সাহচর্য পাওয়াই জুরুরি। কেননা বহু সাহাবী এমনও ছিলেন যারা জন্মান্ধ। যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা:) প্রমুখ। এখন এর কী জবাব?
প্রশ্নকর্তা : পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে ‘ইয়াকূনুর রাসূলু আলাইকুম শাহীদা’ (০২:১৪৩) তাহলে বলুন, তিনি হাজির নাজির না হয়ে কেয়ামতের দিন স্বীয় উম্মতের পক্ষে সাক্ষ্যদানকারী কিভাবে হবেন?
উত্তরদাতা : এখানে ‘শাহীদান’ বলতে সাক্ষ্যদানকারী বুঝায়নি, বরং ‘সত্যায়নকারী’ বুঝানো হয়েছে। কারণ কেয়ামতের দিন নবীগণের পক্ষে ও তাঁদের উম্মতদের দায়েরকৃত অভিযোগ খন্ডনে উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ঐতিহাসিক সাক্ষ্যদানের পর্বটি নবীজী কর্তৃক সত্যায়িত হবে। তাই এই আয়াতে ‘শাহীদান’ অর্থ ‘সাক্ষ্যদানকারী’ নেয়া আয়াতের পটভুমি (Context)’র বিচারে সঠিক নয়। (দেখুন সহীহ বুখারী ২/৬৪৫, আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত হাদীস)। আচ্ছা, আল্লাহতালা তো কোনো এক ঘটনা-প্রেক্ষিতে নবীজী সম্পর্কে এও বলেছেন ‘ওয়া মা কুনতা মিনাশ শাহিদীন’ (ক্বাছাছ ৪৪)। অর্থাৎ আর আপনি (তখন) শাহিদ ছিলেন না। এবার এই ‘শাহিদ’ এর কী হবে?
প্রশ্নকর্তা : কবরের ভেতর নবীজির দিকে সম্বোধন করে মাইয়্যেতকে ফেরেশতা প্রশ্ন করবেন ‘ওয়া মান হাযার রাজুল’ ( و من هذا الرجل)? এখানে ‘হাযা’ (This/هذا) শব্দটি তো নিকটবর্তী কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে বুঝাতে আসে!
উত্তরদাতা : কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করার কারণে অনেক সময় প্রচলিত ব্যাকরণের বিরুদ্ধেও চলে যায়। তার অন্যতম উদাহরণ, হযরত ইবরাহিম (আ:) কর্তৃক ‘হাযা’ শব্দ দ্বারা চন্দ্র-সূর্যের দিকে ইংগিত করা। যেমন, তিনি বলেছিলেন ‘হাযা রাব্বী’ (কুরআন ৬:৭৮)। অর্থাৎ ইহা আমার প্রভু। এখানেও কিন্তু ‘মুশারুন ইলাইহি’ (সম্বোধিত বস্তু) চন্দ্র। যা নিকটে নয়, বরং দূরে। উল্লেখ্য, এটি নবুওতপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা, তাই এই জন্য তিনি অভিযুক্ত হবেন না।

  • লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

নবীজী (সা:)-এর ছায়া বা প্রতিবিম্ব ছিল কিনা?

0
  • নবীজী (সা:) এর ছায়া বা প্রতিবিম্ব :

প্রশ্নকর্তা : নবীজী (সা:)-এর ছায়া বা প্রতিবিম্ব ছিল কিনা?

উত্তরদাতা : নবীজী (সা:)-এর ছায়া বা প্রতিবিম্ব ছিল কিনা, এর চাক্ষুষ প্রমাণ কেবল মাত্র ওরাই দিতে পারেন যারা নবীজীকে কাছ থেকে দেখেছেন এবং দিবারাত্রি উনার পাশেই থেকেছেন! সে হিসেবে এই তালিকায় আমরা সর্বপ্রথম উনার (সা:) স্ত্রী তারপর উনার খুব কাছের সাহাবীদের স্থান দেব। উনাদের মাধ্যমে সহীহ ও মারফূ (তথা ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র নবীজী পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকা) সনদে কোনো একটি বর্ণনা দ্বারাও যদি প্রমাণিত হয় যে, উনার ছায়া মুবারক ছিল কিংবা ছিলনা; যেটাই হোক সেটাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। কেননা ঈমানের দাবী হচ্ছে, দ্বীনের ব্যাপারে নিজকে নিরপেক্ষ রাখা ও সত্যকে বিনাবাক্যে লুফে নেয়া।

(ক) উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, হযরত যয়নব (রা:) তিনি নবীজীর ছায়া দেখা সম্পর্কে পরিস্কার বলেছেন : ‘ফা রাআইতু জিল্লাহু (فرأيت ظله)।’ অর্থাৎ আমি তাঁর ছায়া দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ ৭/৪৭৪; হাদীস নং ২৬৩২৫ দ্রষ্টব্য)।

(খ) উম্মুল মুমিনীন হযরত সাফিয়্যাহ বিনতে হোইয়াই (রা:) হতেও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : ‘ইয্ আনা বি-জিল্লি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্ববিলুন (ذ أنا بظل رسول الله صلى الله عليه وسلم مقبل)।’ অর্থাৎ ইত্যবসরে আমি আল্লাহ’র রাসুলের ছায়ার নাগাল পেয়ে গেলাম (মুসনাদে আহমদ ৬/১৩২); হাদীস নং ২৫০০২; হাদীসের সব রাবী ছিক্বাহ)।

(গ) নবীজী (সা:)-এর দীর্ঘ দশ বছরের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা:) হতে মারফূ সনদে ও একদম সহীহসূত্রে বর্ণিত আছে, নবীজী (সা:) কোনো এক ঘটনাপ্রেক্ষিতে বলেছেন : ‘রাআইতু জিল্লি ওয়া জিল্লাকুম ফীহা’ (رأيت ظلى و ظلكم فيها)। অর্থাৎ তার মধ্যে আমি আমার এবং তোমাদের ছায়া দেখেছি। সংক্ষেপে। (সহীহ ইবনে খোজায়মা ২/৫০, হাদীস নং ৮৯; মুসতাদরিক আল হাকেম ৫/৬৪৮; হাদীস নং ৮৪৫৬; হাদীসের মান, সহীহ)। ইমাম রাজী (রহ:) লিখেছেন, ‘ফী’ বর্ণটি অভিধানে ‘অতি নিকটে’ অর্থ বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন সূরা আন-নমল আয়াত নং ৮; মূসা (আ:) সম্পর্কে ‘আন বূরিকা মান ফীননার’ (অর্থাৎ বরকতময় হোক তিনি যিনি আগুনের মধ্যে আছেন…) উল্লেখ আছে। অথচ তূর পর্বতমালায় তখন তিনি আগুনের অভ্যন্তরে ছিলেন না, বরং অতি নিকটে বা কোনো এক পাশেই ছিলেন (তাফসীরে কাবীর ২৪/১৮৩)। কাজেই উক্ত হাদীসে ‘আগুনের মধ্যে’ মানে আগুনের অতি নিকটে বা আগুনের এক পাশে, এই অর্থই উদ্দেশ্য। হতে পারে তখন ছায়াগুলো নবীজীর পেছনে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ হাদীসে এও উল্লেখ আছে যে, নবীজী (সা:) নামাজ অবস্থায় আপনা পেছনেও তদ্রূপ দেখতে পান যেভাবে সামনে দেখেন। যেমন তিনি বলেছেন : ‘ইন্নী লা-আরাকুম মিন ওরায়ী কামা আরাকুম’। (উমাদাদুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, কিতাবুস সালাত, অধ্যায় নং ৪০)। সুতরাং এরপরেও যাদের বিশ্বাস যে, নবীজী (সা:)-এর ছায়া মুবারক থাকা সঠিক নয় তাদের নিরপেক্ষ বিবেকের নিকট প্রশ্ন, আপনারা ‘ছায়া না থাকা’ এর সমর্থনে অন্তত একটি হাদীসও কি দেখাতে পারবেন যেটির সনদ (সূত্র) ‘মারফূ’ এবং গয়রে মাজরূহ ও বিশুদ্ধ! অথচ উপরে উল্লিখিত হাদীসগুলোর সনদ যেমন গয়রে মাজরূহ ও বিশুদ্ধ তেমনি আনাস ইবনে মালেক (রা:)-এর বর্ণিত হাদীসের সনদ ‘মারফূ’ পার্যায়েরও। সংক্ষেপে।

প্রশ্নকর্তা : বহু বক্তা সাহেবকে তো ওয়াজ মাহফীলে বলতে শুনা যায় যে, সূর্যের কিরণে নবীজীর ছায়া পড়ত না কিবা দেখাও যেত না! তাহলে কি ওনারা এসব ভুল বলেন?

উত্তরদাতা : আচ্ছা বলুন দেখি! সূর্যের কিরণে নবীজীর ছায়া না পড়া কিংবা ছায়া দেখতে না পারার ব্যাখ্যা কি ‘ছায়া না থাকা’? নিশ্চয়ই ছায়া না থাকা নয়। বরং ছায়া থাকা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে তা মাটিতে না পড়াই ছিল নবীজীর মুজিজা। অন্যথা উল্লিখিত সহীহ হাদীসগুলোর প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ ছাড়া আর কিছুই না! সেযাইহোক, এবার সূর্যের কিরণে নবীজীর ছায়া মাটিতে না পড়ার অন্যতম কারণ কী ছিল তা তাফসীরে মাদারিক প্রণেতার কাছ থেকে জেনে নিন! তিনি লিখেছেন: ‘লি-আল্লা ইয়াক্বা’আ ইনসানু ক্বাদামাহু আলা যালিকাজ জিল্লি’ (لئلا يقع انسان قدمه على ذالك الظل)। অর্থাৎ আল্লাহতালা নবীজীর ছায়া মুবারক মাটিতে পতিত করেন না, যাতে কেউ উনার ছায়াকে মাড়াতে না পারে। (পারা নং ১৮ দ্রষ্টব্য)। এবার বলুন, বর্তমান যুগের এই সমস্ত বক্তাদেরকে বিশ্ববিখ্যাত ‘তাফসীরে মাদারিক’ প্রণেতার চেয়েও কি অধিক জ্ঞানী মানবেন?

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

নবীজী (সা:) কি গায়েব জানতেন?

0

নবীজী (সা:)-এর গায়েব জানা প্রসঙ্গ :

প্রশ্নকর্তা : নবীজী (সা:) কি গায়েব জানতেন?

উত্তরদাতা : আগে বলুন, গায়েব কাকে বলে?

প্রশ্নকর্তা : তাফসীরে কাবীর গ্রন্থের ২য় খন্ডের ১৭৪ নং পৃষ্ঠায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) লিখেছেন : গায়েব হচ্ছে পঞ্চ ইন্দ্রিয়শক্তির বহির্ভূত অদৃশ্যবস্তু।

উত্তরদাতা : তাহলে এবার আপনিই বলুন, উক্ত সংজ্ঞামতে রাসূল (সা:) এর গায়েব জানা বস্তুগুলো কী কী?

প্রশ্নকর্তা : কেন! জান্নাত জাহান্নাম সহ আরো তো কত কিছু!! আপনি কি মনে করেন এগুলো গায়েবী বিষয় নয়?

উত্তরদাতা : তা অবশ্যই। কিন্তু রাসূল (সা:) তো এগুলো আল্লাহ’র পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমেই জেনেছেন! (পবিত্র কুরআনের সূরা আন নাজম আয়াত নং ৩-৪ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ এগুলো তো তিনি ওহীর মাধ্যমেই জেনেছিলেন!

প্রশ্নকর্তা : তাতে কী! ওহীর মাধ্যমে জানলে কি সেটি ‘গায়েব’ হবেনা?

উত্তরদাতা : না, গায়েব হবেনা। তখন নাম পবিরর্তন হয়ে ‘ইলমে ওহী’ হয়ে যাবে। আপনি তাফসীরে রূহুল বয়ান এর ২১ নং পারা থেকে দেখুন। সেখানে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে, নবীগণ হতে যে সব অদৃশ্যের সংবাদ বর্ণিত আছে তা শুধুমাত্র بطريق الوحى অর্থাৎ ওহীর প্রক্রিয়ায় ছিল। অর্থাৎ ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত অদৃশ্যবস্তুকে ইলমে ওহী তথা ঐশীলব্ধ জ্ঞান-ই বলা হবে! যেমন হাদীসের ইলমকে ‘ইলমে হাদীস’ এবং ফিকহের ইলমকে ‘ইলমে ফিকহ’ বলা হয়। আরো সহজ করে বলতে গেলে, যে জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর নিকটেই সংরক্ষিত তা গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞান; কিন্তু যখন তা কোনো গায়রুল্লাহ’র নিকট প্রকাশিত হবে তখন তা ‘গায়েব’ ছাড়া ভিন্নভিন্ন নামে নামকরণ হবে।

প্রশ্নকর্তা : আচ্ছা নবীজী (সা:) গায়েব জানেন, এইরকম বিশ্বাস রাখা কেমন?

উত্তরদাতা : নবীজী (সা:) গায়েব জানেন, এইরকম বিশ্বাস রাখা অন্যায়। আপনি পবিত্র কুরআনের সূরা নামাল এর ৬৫ নং আয়াতটির অনুবাদ দেখুন। আল্লাহ নিজেই বলছেন, ‘লা ইয়া’লামু মান ফিছ ছামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বিল গাইবা ইল্লাল্লাহু।’ অর্থাৎ আসমান আর জমিনে যা কিছু রয়েছে তারা কেউই গায়েব জানেনা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তো এবার কী বুঝলেন? তাছাড়া হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ফকিহ্ ও মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ইমাম সাহেব এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কুফুরীর ফতুয়া দিয়েছেন যে নবীজী (সা:)-কে গায়েব জান্তা মনে করে। দেখুন ফিকহে আকবর এর ব্যাখ্যামূলক কিতাব ‘শরহে ফিকহে আকবর’ (পৃষ্ঠা নং ৮৫; মোল্লা আলী ক্বারী)। সংক্ষেপে। তবে হ্যাঁ, নবীজী (সা:) সম্পর্কে আমাদের আকীদা বড়জোর এমন হতে পারে যে, তিনিই (সা:) একমাত্র খুব জান্তা, তবে সব জান্তা নন। কারণ সব জান্তা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’লা।

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

রাসূল (সা:) কিসের সৃষ্টি? নূরের না মাটির?

0

রাসূল (সা:)-এর সৃষ্টিমূল উপাদান!

(যাদের সময় কম তারা এই লিখাটি পড়তে পারেন)

প্রশ্নকর্তা : রাসূল (সা:) কিসের সৃষ্টি? নূরের না মাটির?

উত্তরদাতা : পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বহা এর ৫৫ নং আয়াত দেখুন। সেখানে সুস্পষ্টভাবে ‘মিনহা খালাক্বনাকুম’ (منها خلقناكم) অর্থাৎ তোমাদেরকে এই মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছি, উল্লেখ আছে; অনুবাদ, ফতুয়ায়ে আফ্রিকা পৃ ৮২; ঊর্দূ ভার্সন। আয়াতটির ‘কুম’ (كم/You) বহুবচনাত্মক শব্দটি আম বা ব্যাপকার্থক। এর তাৎপর্যে বিনা ব্যতিক্রমে নবী, গয়রে নবী সকল কবর পথযাত্রী অন্তর্ভুক্ত। অতএব রাসূল (সা:) তিনিও যেহেতু একজন কবর পথযাত্রী ছিলেন সেহেতু তাঁর (সা:) শরীর মুবারকের সৃষ্টিমূল উপাদানও মাটি ছিল প্রমাণিত।

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু বহু মওলানা সাহেব তো বলে থাকেন, আল্লাহতালা সর্বপ্রথম রাসূল (সা:)-এর নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন!

উত্তরদাতা : এর উত্তর আমি আমার পক্ষ থেকে না দিয়ে বরং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও মেশকাতুল মাসাবীহ্ কিতাবের ব্যাখ্যাকারক হযরত মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) এর উদ্ধৃতিতে দিতে চাই। তিনি লিখেছেন: সর্বপ্রথম রাসূল (সা:) এর নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে বলে যে কথা বর্ণিত আছে তদ্দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্লাহতালা সর্বপ্রথম তাঁর রূহ মুবারক সৃষ্টি করেছেন। (মেরকাত শরহে মেশকাত, কিতাবুল ঈমান, ঈমান বিল কদর অধ্যায়, হা/৯৪; স্ক্রীনশট দ্রষ্টব্য)।

তবে ইমাম সুয়ূতী (রহ:) বলেছেন, সর্বপ্রথম রাসূলের নূর সৃষ্টি করা সম্পর্কিত বর্ণনাটির নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ (ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র) নেই। (আল-হাভী লিল ফাতাওয়া ১/৩২৫, ফাতাওয়াল কুরআনিয়্যা, সূরা মুদ্দাসসির অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। স্ক্রিনশট দেখুন।

তাই শুধুমাত্র নূর এর রেওয়ায়েতগুলোর সনদের খোঁজ পাওয়া ও তা সহীহ প্রমাণিত হওয়া শর্তেই নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে, রাসূল (সা:)-এর রূহ মুবারক-ই সর্বপ্রথম সৃষ্ট! তবে সহীহ এবং দ্বয়িফ মিলে বহু বর্ণনা দ্বারা প্রথম সৃষ্টির বহু কিছুই উল্লেখ রয়েছে। সেক্ষেত্রে জবাব হল, সেই প্রথম সৃষ্ট বস্তুগুলো তাদেরই সমজাতীয় বস্তুর মধ্য থেকেই উদ্দেশ্য। যেমন রূহ সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্ট মুহাম্মদ (সা:)-এর রূহ মুবারক, যাকে সম্মানসূচক ‘নূর’ বলা হয়। মোল্লা আলী ক্বারী লিখেছেন : ‘আন্না কুল্লা ওয়াহিদিন মিম্মা যুকিরা খুলিক্বা ক্বাবলু মা হুয়া মিন জিনসিহি।’ সংক্ষেপে। (মেরকাত, কিতাবুল ঈমান)।

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু আলা হযরত আহমদ রেজাখাঁ বেরলভী (আলাইহির রাহমাহ্) কর্তৃক লেখিত কিতাব ‘আসসানিয়াতুল আনীফা ফী ফতুয়ায়ে আফ্রীকা’ নামক কিতাবের একস্থানে লিখা আছে “হুজুরপাক (সা:) আল্লাহর নূর হতে সৃষ্ট।” যেমন ‘মুঝে আপনে নূর চে পয়দা কিয়া’। অর্থাৎ আমাকে তিনি স্বীয় নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। একই পৃষ্ঠার আরেকটু নিচে হাদীসের উদ্ধৃতিতে লিখা আছে, হুজুর আকদাস নে ফরমাইয়া… মে আওর আবুবকর ওয়া উমর এক মেট্টি চে বনে উসি মে দফন হোঁ গি। অর্থাৎ হযরত আক্বদাস (সা:) ইরশাদ করেছেন… আমি এবং আবুবকর আর উমর তিনোজন একই (গোরস্তানের) মাটি হতে সৃষ্ট এবং তাতেই দাফন হবো।’ (রেফারেন্স ‘ফতুয়ায়ে আফ্রিকা’ পৃষ্ঠা নং ৮২, মাসয়ালা নং যথাক্রমে ৬২-৬৩, ঊর্দূ ভার্সন, মাকতাবায়ে নূরিয়া রেজভিয়া, ফয়সালাবাদ; স্ক্রীনশট দ্রষ্টব্য)।


উত্তরদাতা : হ্যাঁ, আমি নিজেও কিতাবটি পড়েছি। উনার বক্তব্য দুটি বাহ্যত স্ববিরোধী। তাই উচিত, মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর নিকটই সমর্পণ করা। পবিত্র কুরআন (৪:৫৯) আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়। তাই আলা হযরত (আলাইহির রহমাহ্) কোথায় কী লিখলেন আর না লিখলেন সেটি প্রকৃত বিচারে মোটেও গুরুত্ব রাখেনা। কেননা তিনি না আল্লাহ আর না তাঁর প্রেরিত কেউ! আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করুন।

প্রশ্নকর্তা : প্রত্যেক নবজাতক শিশু মৃত্যুর পর যেই স্থানে দাফন হবে ফেরেশতা সেই স্থানের মাটির কিছু অংশ নিয়ে এসে মাতৃগর্ভস্থিত নোতফার উপর ছিটিয়ে দেন। তারপর সেই মৃত্তিকা থেকেই তাকে সৃষ্টি করা হয়-এমন কথাও তো আলা হযরতের কিতাবে লিখা আছে! (দেখুন, পৃষ্ঠা নং ৮৩, মাসয়ালা নং ৬৩)।

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ। তিনি একখানা হাদীসের উদ্ধৃতিতে এবং বে-গয়রে ইসতিছনা তথা বিনা ব্যতিক্রমেই এইরূপ বয়ান দিয়েছেন। তবে হাদিসটির সূত্র (Chain) কতটা সহীহ তা আল্লাহপাকই সব চে ভাল জানেন। এ থেকেও প্রমাণ মিলে যে, রাসূল (সা:)-এর সৃষ্টিমূল উপাদানে আপনা কবরের মাটি মিশ্রিত ছিল। পার্থক্য শুধু এইটুকু, উনার কবরের মাটি নিঃসন্দেহে ‘রাওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ’ হিসেবে জান্নাতি মহামূল্যবান মাটি আর আমাদেরটা সাধারণ মাটি।

প্রশ্নকর্তা : হযরত উসমান (রা:)-এর উপাধী ছিল ‘যুন্নূরাঈন’ অর্থাৎ দুই নূরের (রুকাইয়্যাহ্, কুলছুমাহ্) অধিপতি। তাই প্রশ্ন আসে, নবীজি (সা:) নূরের তৈরী না হলে তাঁর মেয়েদের ‘নূর’ বলার কী মানে?

উত্তরদাতা : এখানে নবীজির কন্যাদ্বয়কে শুধুমাত্র সম্মানসূচক কারণেই ‘নূর’ বলা হয়েছে। যেমন কা’বা শরীফকে সম্মানসূচক কারণে আল্লাহ’র দিকে সম্বন্ধযুুুক্ত করে ‘বায়তুল্লাহ’ তথা আল্লাহ’র ঘর বলা হয়। যাদের পেটে কথা থাকেনা বাংলাভাষার বাগধারায় তাদের বলা হয় ‘পেটপাতলা’। আরবীভাষার তেমনি কোনো বাগধারার নিয়মেই হযরত উসমানও ‘যুন্নূরাঈন’ শব্দে ভূষিত হয়েছেন বলা যায়। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

প্রশ্নকর্তা : রাসূল (সা:)-কে সাধারণ মানব বলা কুফুরী হবে কিনা?

উত্তরদাতা : এমন কোনো কথা বেয়াদবির নিয়তে বলা নিঃসন্দেহ কুফুরী এবং নবী অবমাননার শামিল।

প্রশ্নকর্তা : সূরা কাহাফ এর ১১০ নং আয়াত তো পরিষ্কার বলছে, কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকুম। অর্থাৎ বলুন! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ।

উত্তরদাতা : উক্ত আয়াতের Context বা পটভুমি দেখে নিন। তবেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আল্লাহর এই কথার পেছনে উদ্দেশ্য কী? সূরা মুমিনূন এর ৩৩-৩৪ আয়াত দুটোও দেখুন। মুহাম্মদ (সা:) রাসূল হয়ে থাকলে তিনি খাওয়া দাওয়া, হাটবাজার ইত্যাদি কেন করবেন! এই ছিল মুশরিকদের আপত্তি! মূলত, তাদের অজ্ঞতাপূর্ণ আপত্তিকে খন্ডন করতেই ‘ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকুম’ নাযিল হয়েছিল। অথবা সহীহ বুখারীর ৪০১ নং হাদীসটাও দেখতে পারেন। রাসূল (সা:) ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ’ একথা বলার পরে তিনি নিজেই এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিতে বলেছেন ‘আন্সা কামা তানসাওনা’ (أنسى كما تنسون) অর্থাৎ তোমরা যেমন ভুলে যাও তেমনি (মানবীয় কারণে) আমিও ভুলে যাই। বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে আরো বলা যায় যে, মানবীয় কারণে যেহেতু মানুষের অভ্যাস ভুলে যাওয়া, অপারগ ও অসুস্থ হওয়া, ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগা, বিবাহ করা, সন্তান-সন্ততি হওয়া ইত্যাদি। মুহাম্মদে আরাবী (সা:) তিনিও একজন মানব ছিলেন বিধায় মুশরিকদের অজ্ঞতাপূর্ণ আপত্তির খন্ডনপূর্বক আল্লাহতালা বলেছেন, বলুন! আমিও তোমাদের মতই মানুষ।… এই ছিল পটভুমি। কে জানি বলেছিল, আয়াতে ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ’ একথা শুধু নবীজীকেই বলতে বলা হয়েছে! যুক্তি হচ্ছে, ‘কুল’ (قل) অর্থাৎ আপনি বলুন (একবচনে)। কিন্তু এই যুক্তি ভুল। কেননা সূরা ইখলাসের মধ্যে হুবহু ‘কুল’ শব্দ দ্বারাই নবীজীকে বলতে আদেশ করা হয়েছে যে, বলুন! হুয়াল্লাহু আহাদ। অর্থাৎ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তো এর মানে কি আল্লাহ একজন তা আমরা বলতে পারব না?

প্রশ্নকর্তা : রাসূল (সা:)-কে ‘নূর’ বলা যাবে কি?

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ, অবশ্যই। সূরা মায়েদা আয়াত নং ১৫ দেখুন। আল্লাহ বলেছেন, মিনাল্লাহি নূর। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ হতে একখানা নূর তথা জ্যোতি। আল্লাহতালা নবীজিকে নূর আখ্যা দিয়েই থেমে যাননি, বরং পরের আয়াতে ‘ইয়াহ্দি বিহিল্লাহু’ (يهدى به الله) অর্থাৎ যার মাধ্যমে তিনি হিদায়াত দিয়ে থাকেন, এভাবে উল্লেখ আছে। বুঝা গেল, উনাকে জাতি নূর বলে বুঝাননি, বরং বাংলা ব্যাকরণের বাগ্ধারার নিয়মে সত্যের দিকে পথপ্রদর্শনকারী হিসেবে একখানা হিদায়াতী নূর বুঝানো হয়েছে। যাকে আরবী ভাষায় ‘সিফাতি নূর’ বলে। একথা সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারক কাজী ইয়াজ (রহ:) তার ‘ইকমালুল মুসলিম’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ১২৫-২৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন : ‘মা’নান্নূরি হুনা বয়ানুল হাক্কি ওয়াল হিদায়াতু ইলাইহি’ (معنى النور هنا بيان الحق والهداية اليه)। অর্থাৎ এখানে নূর এর তাৎপর্য হল সত্য ও হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শনকারী। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বলি, সোনার বাংলাদেশ। এখানে আর যাইহোক অন্তত বাংলাদেশকে সোনার তৈরী বুঝায়নি! অনুরূপ মক্কা হতে ৬ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত গারে হেরা-কে বলা হয় ‘জাবালে নূর’ বা নূরের পাহাড়! তার মানে এই নয় যে, ওই পাহাড়টি নূরের তৈরী! সংক্ষেপে।

প্রশ্নকর্তা : বহু আলেম তো বলে থাকেন, এর মানে তিনি (সা:) নূরের তৈরী!

জবাবদাতা : তা আমিও জানি। কিন্তু গ্রহণযোগ্য দলিল প্রমাণ তো থাকতে হবে! আচ্ছা বহু আলেম তো এটাও বলেন যে, নবী সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না! তাই সে সমস্ত আলেমকে আজই প্রশ্ন করবেন, নবী নূরের তৈরী হলে তখন সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘নবী’ আগে না ‘নূর’ আগে? কেননা, যে জিনিস দ্বারা তৈরী করা হবে সেটি অবশ্যই আগে হতে হয়? সহীহ মুসলিম শরীফের ২৭৮৯ নাম্বার হাদীসে উল্লেখ আছে : ‘ওয়া খালাক্বান নূরা ইয়াওমাল আরবা’আয়ি’ (ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻳﻮﻡ ﺍﻷﺭﺑﻌﺎﺀ )। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বুধবারে নূর সৃষ্টি করেছেন। ভাবিয়ে তুলে কিনা? তাই আবেগপ্রবণ হয়ে যাইচ্ছেতাই বলা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কেননা আমরা যাই বলিনা কেন, একদিন সব কিছুরই হিসেব দিতে হবে।

প্রশ্নকর্তা : যদি বলেন ‘মাটির তৈরী’ তখনও তো একই প্রশ্ন দাঁড়াবে?

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ, এই জন্যই বলতে হবে যে, নবী কীসের সৃষ্টি-প্রাইকারী হারে প্রশ্নটাই ভুল। এতদ্ব্যতীত আহলে সুন্নাহ’র সব মানহাজের কলেমা গো মুসলমানগণ সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করেন যে, অপরাপর নূর সমুহের ন্যায় প্রিয় নবীর রূহ মুবারকও মহান আল্লাহর নিকট একখানা নূর তুল্য। মূলত এই জন্যই লোকমুখে প্রসিদ্ধ আছে : ‘লাও লা-কা লামা খালাক্বতুল আফলাক্ব।’ তাই সঠিক প্রশ্নটি হল ‘নবীজির শরীর মুবারক সৃষ্টির মূল উপাদান মাটিও ছিল কিনা?’ উল্লেখ্য, মানব সৃষ্টির মূল উপাদানে শুধুই মাটি ছিলনা, বরং অগ্নি, অক্সিজেন এবং পানিও ছিল। তাই সারসংক্ষেপ উত্তর হল, একজন মানুষ হিসেবে আমাদের প্রিয় নবীজির শরীর মুবারক মাটিরই নির্যাস থেকে সৃষ্ট। কারণ মানুষের সৃষ্টিমূল উপাদান সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বলছে, সুলালাতিম্ মিন ত্বীন।’ অর্থাৎ মানুষ মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্ট (সূরা মুমিনূন ১২)।

প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ইতিটানার আগে একখানা অপ্রিয় তথ্য জানান দেব। অনুরোধ থাকবে পাঠকবৃন্দ ধৈর্য্য হারা হবেননা! ইমাম হাকিম (রহ:) সংকলিত ‘মুসতাদরিক আলা আস-সহীহাঈন’ এর ২য় খন্ডের ৭২২ নং পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহতালা হযরত আদমকে কোনো এক ঘটনাপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞেস করেন, তুমি মুহাম্মদকে কিভাবে চিনলে? ‘ওয়া লাম আখলুক্বহু’ অথচ আমি তাঁকে [এখনো] সৃষ্টিই করেনি (আরবী: و لم اخلقه)। হাদীসের মান, সহীহ। হাদীসটি বায়হাক্বী এবং তাবারানী প্রভৃতি হাদীসগ্রন্থেও উল্লেখ আছে। এই হাদীস আমাদের পরিষ্কার ঈংগিত দিচ্ছে, রাসূল (সা:)-এর শরীর মুবারক আপনা মাতৃগর্ভে সকল নবী রাসূলের পরে ‘সুলালাতিম মিন ত্বীন’ হিসেবে মাটির নির্যাস হতেই সৃষ্টি হয়েছিল। অন্যথা, হাদীসে কুদসী: ‘অথচ আমি তাঁকে (এখনো) সৃষ্টিই করেনি’-এর কী মানে? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলে কিনা? সারকথা, নবীজির রূহ মুবারক সম্মানসূচক কারণে “নূর” শব্দে ভূষিত (الاضافة إضافة تشريف)। (শরহে মাওয়াহিব আয্-যুরকানী ৯০)।

প্রশ্নকর্তা : জনৈক বক্তা বলেছেন, হাদীসে নাকি আছে : আউয়ালু মা খালাক্বাল্লাহু নূরী মিন নূরিহি! মানে, সর্বপ্রথম আল্লাহর নূর হতে নবীর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে।

উত্তরদাতা : এর জবাব উপরে দেয়া হয়েছে যে, ইমাম সুয়ূতী (রহ:) সহ বহু হাদীস বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এটি ভিত্তিহীন কথা। কিন্তু তার আরেকটি জবাব হচ্ছে, উল্লিখিত বর্ণনাটি প্রায় দেড় পৃষ্ঠাব্যাপী দীর্ঘ একটি বর্ণনা। যেখানে এও লিখা আছে, ওয়া খালাক্বা কুল্লা শাইয়িম মিন নূরী। অর্থাৎ আল্লাহতালা সব কিছু আমার নূর হতে সৃষ্টি করেছেন (ফতুয়ায়ে আফ্রিকা, মাসআলা নং ৬২ দ্রষ্টব্য)। তো এবার সব কিছুই যদি নূরের সৃষ্টি হয় তাহলে মাটি আর আগুনের সৃষ্টি কারা? ভাবিয়ে তুলে কিনা? কাজেই বক্তা সাহেবদের আরো ভেবেচিন্তে কথা বলা দরকার।

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মিলাদ কিয়াম

0

প্রশ্নকর্তা : মিলাদ কিয়াম জায়েজ না নাজায়েজ?
উত্তরদাতা : আগে মিলাদ কিয়ামের সংজ্ঞা দিন, তারপর উত্তর দিচ্ছি?
প্রশ্নকর্তা : কিছু লোক একত্রিত হয়ে যেভাবে নবীজীর জন্মালোচনা করেন এবং জন্মালোচনার মাঝখানে সবাই দাঁড়িয়ে ইয়া নবী সালামু আলাইকা… বলেন এটি কি জায়েজ না নাজায়েজ?
উত্তরদাতা : ও আচ্ছা! এই সম্পর্কে আমার বক্তব্য হল, যদি দলিল থাকে তবে অবশ্যই জায়েজ।
প্রশ্নকর্তা : আপনি কি জায়েজ মনে করেন না?
উত্তরদাতা : আমি মনে করি প্রিয়নবী (সা:)-এর জন্মালোচনা অবশ্যই সাওয়াবের কাজ। তবে এক্ষেত্রে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।
প্রশ্নকর্তা : বাড়াবাড়ির একটি উদাহরণ দিন!
উত্তরদাতা : নবীজী (সা:)-এর জন্মালোচনা মুহূর্তে মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাওয়াকে প্রয়োজন বা আবশ্যক মনে করা যেমন বাড়াবাড়ি, তেমনি ঢালাওভাবে ‘মিলাদুন্নবী’-কে বিদয়াত আখ্যা দিয়ে ফতুয়াবাজি করা আরেক বাড়াবাড়ি। এতে উভয়পক্ষই অভিযুক্ত। এই ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা হচ্ছে, মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের সংখ্যাধিক্যের কাজকে সম্মান দেয়া। যেখানে সবাই দরূদ বসে পড়তে অভ্যস্ত সেখানে বসে পড়া আর যেখানে কিয়ামে অভ্যস্ত সেখানে তাদেরকে তাদের অভ্যাসের উপর ছেড়ে দেয়া। তবে সাধারণ মানুষদের বলে দিতে হবে যে, কিয়াম এটি রাসূল (সা:)-কে হাজের মনে করে নয়। অনুরূপ দরূদ শরীফ বসে পড়াও রাসূল (সা:)-এর শানে বেয়াদবি নয়। নতুবা কোনো মুসলমানই নামাযে দরূদ শরীফ কখনো বসে পড়তেন না!
প্রশ্নকর্তা : রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিতব্য ‘মিলাদুন্নবী’ এর আমল জায়েজ নাকি নাজায়েজ?
উত্তরদাতা : সাল্ফে সালেহীনের পন্থায় অবশ্যই জায়েজ। তবে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে নাজায়েজ। কেননা বহু সাওয়াবের কাজ এমন আছে যা সীমা অতিক্রম করার কারণে যে কেউই নাজায়েজ বলবে। যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ। কিন্তু ছয় ওয়াক্ত পড়তে চাওয়া বাড়াবাড়ি। তেমনি রোজা রাখাও সাওয়াবের কাজ। তবে তা ঈদের দিনে হলে নিঃসন্দেহ বাড়াবাড়ি।
প্রশ্নকর্তা : প্রতি সোমবার রোজা রাখা দ্বারাও আমালুল মওলিদের হক্ব আদায় হবে কি?
উত্তরদাতা : অবশ্যই আদায় হবে। হাদীসে এসেছে, প্রিয়নবী (সা:) নিজে সোমবার রোজা রাখার কারণ বলেছেন ‘যালিকা ইয়াওমুন উলিদতু ফীহি’। অর্থাৎ এটি এমন একটি দিন যে দিনটিতে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। (সহীহ মুসলিম শরীফ সিয়াম অধ্যায়, হাদীস নং ১১৬২; হযরত আবু কাতাদা আল আনসারী হতে বর্ণিত)। সত্যি বলতে, প্রকৃত ‘আমালুল মওলিদ’ (মিলাদুন্নবী) কিন্তু এটাই যা সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ্ হিসেবে বিশুদ্ধ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।
প্রশ্নকর্তা : মিলাদুন্নবী তথা আমালুল মওলিদকে মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান হিসেবে বিবেচনা করলে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা আছে কি?
উত্তরদাতা : না, কোনো অসুবিধা নেই। তবে সেটি শরীয়ত অনুমোদিত সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপদ্ধতি (System)’র আলোকে হওয়া চাই। কেননা, মনগড়া কাজ যতই সুন্দর হোক, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্নকর্তা : সাম্প্রতিককালে ১২ ই রবিউল আউয়ালে উদ্যাপিত জশ্নে জুলূস কি শরীয়তে অনুমোদিত?
উত্তরদাতা : বেরলভী মানহাজের বরেণ্য মুফতিয়ে আজম মুনিবুর রহমান সাহেব কর্তৃক সত্যায়িত (উর্দূ) কিতাব ‘ঈদে মীলাদুন্নবী (দ.) আওর চন্দ ইছলাহ তলব পহলূ’ এর মধ্যে এ সম্পর্কে লিখা আছে “সালাতের মত একটি ইবাদত আদায় করার জন্য যদি পথিকের অধিকার পথচলা বন্ধ করা না যায়, তাহলে কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, ঈদে মীলাদুন্নবী মাহফীল (জশ্সে জুলূস) উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে পথিকের পথচলা বন্ধ করে দেয়ার অনুমতি রয়েছে!” (পৃষ্ঠা নং ১০০, লিখক মুফতী সাইয়েদ ছাবের হোসাইন; আল মুনিব শরিয়াহ্ একাডেমী করাচী হতে প্রকাশিত)। জ্ঞানীদের বুঝার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট।
প্রশ্নকর্তা : প্রচলিত মিলাদুন্নবী তথা আমালুল মওলিদকে নাজায়েজ বলা যাবে কি?
উত্তরদাতা : বাড়াবাড়ি পর্যায় না পৌঁছলে তখন তাকে অবশ্যই নাজায়েজ বলা যাবেনা; বরং মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বাবস্থায় শাখাগত পার্থক্যগুলো সকলেরই ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা জুরুরি। নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, উভয় পক্ষের মাঝে মৌলিকভাবে কোনোই পার্থক্য নেই। বড়জোর পার্থক্য শুধুই নিয়ম (System) মানা ক্ষেত্রে। এক পক্ষ যেমন বিশ্বাস, নবীপ্রেম ঈমানের পূর্বশর্ত তেমনি এটি বিপক্ষেরও। পার্থক্য হল, এক পক্ষ মনে করেন নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় হওয়া উচিত। বিপরীতে বিপক্ষের ভাইয়েরা মনে করেন প্রচলিত নিয়মেও হতে পারে। অথচ নবীজী (সা:) বলেছেন: ‘মা আনা আলাইহি ওয়া আস্হাবী অর্থাৎ আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরাম যে মত ও পথে রয়েছে সেটাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল’। (তিরমিযী হাদীস নং ২৬৪১)।
প্রশ্নকর্তা : নবীজির চারিত্রিক গুণাবলী আলোচনার নাম সীরাতুন্নবী না হয়ে আখলাকুন্নবী হওয়া উচিত কিনা?
উত্তরদাতা : হ্যাঁ উচিত। কিন্তু চারিত্রিক গুণাবলীর পাশাপাশি নবীজির অন্যান্য দিকগুলোও যদি আলোচনায় স্থান পায় তখন তাকে অবশ্যই ‘সীরাত’ শব্দে চয়ন করতে হবে। যেমন জিহাদ, মেরাজ ও দাওয়াত ইত্যাদি। কারণ, সীরাত আর আখলাক শব্দ দুটি সমার্থক নয়। বরং ১০০% সীরাত বা Lite history আম (ব্যাপকার্থক) আর আখলাক বা Character শব্দ খাস (নির্দিষ্টবাচক)। সংক্ষেপে।
প্রশ্নকর্তা : ওয়াজ মাহফীলে কোনো কোনো বক্তা থেকে শুনেছি, মিলাদুন্নবী তথা আমালুল মওলিদের দলিল নাকি কুরআনেও রয়েছে!
উত্তরদাতা : পবিত্র কুরআনে দলিল থাকলে তবে তো উনাদের উচিত মিলাদুন্নবীর আমলকে ফরজ অথবা ওয়াজিব বলা! অধিকন্তু বর্তমানে যারা প্রচলিত মিলাদুন্নবীর দলিল পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-তে খুঁজে পাওয়ার দাবী করেন; আমি মনে করি, উনারা অন্তত প্রজ্ঞা, যোগ্যতা আর ইনসাফের বিচারে কিছুতেই ইমাম সুয়ূতী (রহ:)-এর সমতূল্য নন! এবার তাহলে দেখুন, ইমাম সুয়ূতী (রহ:) এর মত জগত বিখ্যাত ও মাননীয় মুহাদ্দিস ও মুফাসসীর ‘আমালুল মওলিদ’ (সাধারণের ভাষায় মিলাদুন্নবী) এর সোর্স (উৎস) সম্পর্কে কী লিখেছেন! তিনি তার ‘হুসনুল মাকছিদ ফী আমালিল মওলিদ’ পত্রে শায়খ তাজুদ্দীন ফাকিহানী আল মালেকী (রহ:)-কে তারদীদ করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ওয়া ইল্লাম ইউরিদ ফীহি নাস্সুন ফা-ফীহিল কিয়াসু আলাল আছলাইন’। অর্থাৎ যদিও আমালুল মওলিদ (নবী জন্মে করণীয়) পালনকরার পক্ষে কোনো নস (কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাহ) প্রমাণিত নয়, তবে তা প্রমাণে দুটো মৌলিকত্বের বিচারে ক্বেয়াস (অনুমান নির্ভর দলিল) ঠিকই রয়েছে। (পৃষ্ঠা নং ১১ দ্রষ্টব্য)। জ্ঞানীদের নিশ্চয় ভাবিয়ে তুলবে।
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের উদ্ধৃতি দ্বারাও তো কেউ কেউ দলিল দিতে চান!
উত্তরদাতা : সাহাবায়ে কেরামের নামে ওই সমস্ত উদ্ধৃতির সনদ (সূত্র) কতটুকু প্রমাণিত সেই বিতর্কে না হয় নাই গেলাম, কিন্তু ইমাম সুয়ূতী রহ: (মৃত ৯১১ হিজরী) তো মিলাদুন্নবী পালনকরার প্রচলিত এই পন্থার প্রথম উদ্ভাবক ইরবিলের (ইরাক) বাদশাহ মুজাফফর আবু সাঈদ কূকুবরী’র ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তখন ছিল ৬০৪ হিজরী। কিতাবের ভাষ্য : ‘আউয়ালু মান আহ্দাছা ফে’লা যালিকা ছাহেবু ইরবিলিল মালিকিল মুজাফফর আবু সাঈদ কূকুবরী’। রেফারেন্স, ইমাম সুয়ূতীর ‘হুসনুল মাকছিদ ফী আমালিল মওলিদ’ দ্রষ্টব্য। আরো জানার বিষয় যে, ১১০ হিজরীর পরে দুনিয়ায় একজন সাহাবীও কিন্তু বেঁচে থাকেননি, যা সর্বসম্মত মত। এখন এর সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন? ইমাম সুয়ূতী (রহ:) কি তাহলে ইতিহাস ভুল লিখলেন? অবশ্যই না। আরো দেখুন, আল মুদখাল, লিখক বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদূন (রহ:)।

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আকাবির মান্যতা

0

সর্বপ্রথম আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, আকাবিরগণ কি মা’সুম (ভুলের উর্ধ্বে) ছিলেন? এর উত্তর হল, অবশ্যই না। অমুক আকাবির এই এই বিষয়ে ভুল করেছেন।অমুক আরও বেশি কিছু বিষয়ে ভুল করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সেই অমুক আকাবির আসলেই ভুল করেছেন। তাহলে প্রমাণিত হয়ে গেল, আকাবিররা মা’সুম না। তাদের ভুল হয় বা হয়েছে। আকাবির যেহেতু ভুলের উর্ধ্বে না, তাহল আমাদের কী করণীয়? আকাবিরদের যেহেতু ভুলের সম্ভাবনা আছে, এজন্য আকিবিরদের কথা আমরা কুরআন-সুন্নাহর দলিলের আলোকে মানব। কুরআন-সুন্নাহর দলিলের আলোকে যদি আকাবিরদের কথা ঠিক হয়, তাহলে মানব, নতুবা মানব না। এই পর্যন্ত কথাগুলো যে কারও কাছে একেবারে টাটকা মজবুত মনে হবে। একটু অপেক্ষা করুন। আমরা কথাগুলো একটু বিশ্নেষণ করতে চাই।

আশ্চর্য্যের বিষয় হল, উপরের যুক্তিটা আহলে কুরআনদের কাছ থেকে ধার করা। এটা তাদের একটা হট আর্গুমেন্ট। আমাদের খুব খারাপ একটা স্বভাব আছে। আমরা অনেক সময় বুঝে অথবা না বুঝে বাতিলের দলিল ব্যবহার করি। সেদিন একজন আলিমকে বলতে শুনলাম, আমি এতায়াতীও না, শুরাও না। আমি কুরআন-হাদীস মেনে চলি। এটা তো সেই হানাফীও না-শাফেয়ীও না, আমি মুসলমানের কার্বন কপি। এগুলোর দরকার কী ভাই? উপরের যুক্তির বিষয়ে আসি। আহলে কুরআনরা একই কথা বলে। ইমাম বোখারী বা মুসলিম কি মা’সুম (ভুলের উর্ধ্বে) ছিলেন। উত্তর হল, না। তারা ভুল করতে পারেন। এরপর এই কথার স্বপক্ষে আপনাকে ১০-২০টা অথবা ধরেন ১০০টা ভুল দেখাবে। এবং বলবে যেহেতু তারা ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না এবং তাদের এই এই ভুল আছে, সুতরাং তাদের কথা যাচাই-বাছাই করা ছাড়া মানা যাবে না।এজন্য তাদের কথা কুরআন দিয়ে যাচাই করতে হবে। তাদের যেসব কথা কুরআনের সাথে মিলবে, সেগুলো বিশ্বাস করব। যেগুলো মিলবে না, সেগুলো পরিত্যাগ করব। এবার উপরের কথার সাথে আরেকবার মিলিয়ে নেন। আকাবির না মানার যুক্তিটা কোথা থেকে ধার করা হল? সমস্যার গোড়া কোথায়? এখানে মূলত: খুব বাজে একটা টেকনিক ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এই টেকনিকের ব্যবহার খুব কমন। নবী-রাসূলগণ ছাড়া মানুষ ভুল করে বা করতে পারে, এটাই স্বাভাবিক বিষয়। একজন মানুষ ভুল করতে পারে, এর অর্থ কি সে সারা জীবন তার সমস্ত কাজে ভুল করে?

ডাক্তার ভুল করে বা করতে পারে। এর অর্থ কি তার জীবনের সমস্ত চিকিৎসা ভুল। ইঞ্জিনিয়ার ভুল করে বা করতে পারে, এর অর্থ কি ইঞ্জিনিয়ারের সমস্ত কাজ ভুল। একজন ড্রাইভার এক্সিডেন্ট করে বা করতে পারে, এর অর্থ কি সে সারা জীবন এক্সিডেন্ট করে? একজন শিক্ষক ভুল পড়াতে পারে, এর অর্থ কী সে সারা জীবন ভুল পড়ায়? মানুষ ভুল করে বা করতে পারে, এর অর্থ কি তার সমস্ত গবেষণা ও আবিষ্কার ভুল? এখানে টেকনিক হল, কারও ৫-১০ টা ভুল দেখিয়ে তার পুরো কাজের উপর অনাস্থা তৈরি করা। সময়ে-অসময়ে মানুষ এটা ব্যবহার করে। তবে আহলে কুরআনরা এটা দিয়ে সাধারণ মানুষকে খুব সহজে বিভ্রান্ত করতে পারে। এটা বাস্তব যে ইমাম বোখারী রহ: ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না এবং তার সামান্য কিছু ভুল হয়েছে, এর অর্থ কি ইমাম বোখারীর সমস্ত কিতাবই ভুল? এখানে আরেকটা বিষয় বলে রাখি। কারও যদি ভুল করাটা স্বভাবে পরিণত হয়ে যায়, অথবা সে প্রায়-ই ভুল করে, তাহলে সে উক্ত বিষয়ে কাজ করার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। একজন ডাক্তার যদি প্রায়-ই ভুল করে তাহলে সে ডাক্তারির গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এটা শুধু এই ডাক্তারের সমস্যা। একজন ব্যক্তির সমস্যাকে এখানে জেনারেলাইজ করা যাবে না।

এখন আসি ভুল সংশোধনের উপায় নিয়ে। ইমাম বোখারী রহ: একটা দু’টো ভুল হলে আমাদের কী করণীয়? তার পুরো কিতাব বাদ দিয়ে শুধু কুরআন মানা শুরু করব? এটাই কি ভুল শোধরানোর উপায়? কখনও না। আপনার উপরের টেকনিক থেকে এটা আরও ভয়ঙ্কর। যে কোন বিষয়ে ভুল হলে তা সংশোধনেরও কিছু সঠিক পদ্ধতি আছে। আপনি যে পদ্ধতি বলেছেন, এটা কোনভাবেই সঠিক নয়। ইমাম বোখারী রহ: ভুল করলে সেটা হাদীস শাস্ত্রে অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসরা সংশোধন করে দিবেন। আর বাস্তবে মুহাদ্দিসরা যুগে যুগে তা করেছেনও। এটা তো সংশোধনের কোন পদ্ধতি যে, একটা – দু’টো ভুলের জন্য সমস্ত হাদীসকেই পরিত্যাগ করতে হবে? এবার আসি আকাবিরদের বিষয়ে।

যারা আকাবিরদের প্রতি অনাস্থা তৈরি করতে চান, তারাও তাদের একটা দু’টো ভুল সামনে এনে অনাস্থা তৈরির চেষ্টা করেন। একই টেকনিক। বাকী রইল, আকাবিরদের ভুল সংশোধনের পদ্ধতি। তাদের ভুল হলে সংশোধনের সঠিক পদ্ধতি কোনটি? কুরআন-সুন্নাহর দলিলের আলোকে তাদের কথা যাচাই করা? এটাই কি সঠিক পদ্ধতি? জ্বী, না। মুহতারাম, দু:খের বিষয় হল, এই কথাটা আপনি আহলে হাদীসদের কাছ থেকে ধার করেছেন। আপনার জন্য প্রথম পরামর্শ হচ্ছে, আপনি যুক্তি ধার করা বন্ধ করেন। আহলে হাদীসরা বলে, যেহেতু ইমাম আবু হানীফা রহ: বা অন্যান্য ইমামগণ ভুল করতে পারেন বা করেছেন, সুতরাং আমরা তাদের বক্তব্যকে কুরআন-হাদীস দিয়ে যাচাই করব। যদি কুরআন-হাদীসের অনুগামী হয়, তাহলে মানব, নতুবা পরিত্যাগ করব। মুহতারাম, একটু মিলিয়ে নেন। কথাগুলো কোথা থেকে ধার করা হয়েছে। এবার আসি, ইমাম আবু হানীফা রহ: বা অন্য ইমাম অথবা যে কোন যুগের যে কোন আলিম ভুল করলে তা সংশোধনের উপায় কি? তাদের কথা আমি আর আপনি কুরআন-হাদীস দিয়ে যাচাই করলেই তা সংশোধন হবে?

এখানে বড় একটা ঘাপলা আছে। সাধারণ মানুষ এটা ধরতে হিমশিম খায়। এই যে, কুরআন-হাদীস দিয়ে যাচাই করব, এই কথাটার মধ্যেই সমস্যা। কথাটা শুনতে সুন্দর। কিন্তু এর পেছনে একটা অন্ধকার আছে। আমরা সাধারণত: সুন্দর কথার তালে অন্ধকারে ডুবে যাই। সহজ কথা হল, কোন বিষয় যদি এত স্পষ্ট হয় যে, কুরআন-হাদীস খুলেই আমি আপনি ভুল বের করে ফেলব, তাহলে সাধারণত: এমন বিষয়ে বড় বড় আলিমরা ভুল করেন না। আর যদি এমন স্পষ্ট ভুল কখনও হয়ে যায়, সেটা বলে দেয়ার জন্য সব যুগেই আলিমরা ছিলেন। আছেন। তারা দেখেই বলে দিয়েছেন, অমুক বিষয়ে এই আলিমের এই বক্তব্য স্পষ্ট ভুল। এটার জন্য কারও প্রতি অনাস্থা তৈরি বা তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ থাকে না।

তাহলে মূল সমস্যা কোথায়? মূল বিষয় হল, কুরআন-হাদীসের আলোকে গবেষণা (ইজতিহাদ) নিয়ে। এই গবেষণা কুরআন-হাদীস খুললেই পাওয়া যায় না। বিষয়টা কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট নেই। কেউ গবেষণা করে বের করেছে। যে বিষয় কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট নেই, সেই গবেষণার ভুল কুরআন-হাদীস খুললেও কীভাবে পাওয়া যাবে? আর এই দাবীই বা কি করে যৌক্তিক হতে পারে যে, উক্ত গবেষণার ভুল আমি কুরআন-হাদীস খুলেই বের করে ফেলব? আপনি হয়ত বড় জোর এতটুকু বলতে পারেন, অমুক আলিমের গবেষণাকে আমি আমার নিজের গবেষণা দিয়ে যাচাই করে ভুল বের করব। একথা বললে তো আপনার আসল বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমি জানি, আপনি সেটা বলবেন না।

এবার আসি মূল বিষয়ে। ইমামগণ বা আকিবরদের গবেষণায় যদি ভুল হয়, তাহলে ভুল সংশোধণের উপায় কী?

এই ভুল সংশোধনের সঠিক উপায় হল, উক্ত বিষয়ে পন্ডিত আলিমগণ সেই গবেষণাকে যাচাই করবে। গবেষণার ভুল-ত্রুটি যাচাই করাও এক ধরণের গবেষণা। বরং অনেক ক্ষেত্রে গবেষণা থেকে কঠিন। এক্ষেত্রে যারা যাচাই করবেন, তাদের শাস্ত্রীয় যোগ্যতার পাশাপাশি তাকওয়া, আমানতদারি, আল্লাহর ভয় থাকা শর্ত। যে কেউ যেমন গবেষণা করতে পারবে না, যে কেউ গবেষণার ভুলও ধরবে না। আমরা যারা আকাবিরদের কথা কুরআন-হাদীস খুলেই ভুল বের করতে চাই, তাদের সুন্দর একটা উদাহরণ মনে পড়েছে। সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে থিসিস হয়। সেই থিসিসগুলো বিভিন্ন জার্নালে পাবলিশ হয়। ভাই বলল, চলেন ভাই! নীল ক্ষেতে গিয়ে বিজ্ঞানের দু’চারটা বই কিনে এসব থিসিসের ভুল যাচাই করি। এসব থিসিসে তো ভুল থাকতেই পারে। আমরা বিজ্ঞানের বই খুলব, আর থিসিস যাচাই করব। কেমন হবে ভাইয়া? আমার আর কী বলার আছে। বলব, ভালো হবে ভাইয়া। এর আগে চলেন আমরা কুরআন-হাদীস খুলে ইমাম ও আকাবিরদের ভুল বের করি।

  • লিখেছেন, ইজহারুল ইসলাম আল-কাউসারী। বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ইসলামি আকীদা বিষয়ক গবেষক। মাগুরা, খুলনা, বাংলাদেশ। ফেইসবুক

কুরআন দ্বারা ঈসা (আ:) এর মৃত্যু সাব্যস্ত হলে তখন এই প্রশ্নগুলোর জবাব কী?

0

কাদিয়ানীদের মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলক দাবী: পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত ঈসা (আ:) বেঁচে নেই, তাই তাদের নিকট এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই!

  • প্রশ্নগুলো যথাক্রমে –

(১) বহু সহীহ হাদীস বলছে, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই ইবনে মরিয়ম (আ:) নাযিল হবেন (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া), ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন (আল-আসমা ওয়াস-সিফাত ২/৩৩১; ইমাম বায়হাক্বী, হাদীসের মান : সহীহ, রাবীদের সবাই সহীহ বুখারীর), মরিয়ম পুত্র ঈসা নিশ্চয়ই রাওহা উপত্যকায় হাজ্জ অথবা উমরাহ কিংবা উভয়েরই তালবিয়াহ পাঠ করবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯২০)। ঈসা ইবনে মরিয়ম দুইজন ফেরেশতার পাখার উপর আপনা দুই বাহু রেখে নাযিল হবেন (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফিতান), ঈসা ইবনে মরিয়মকে তিনি স্বশরীরে জীবিত আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন, তিনি অতি সত্বর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন (আত-তবকাতুল কোবরা লি-ইবনে সা’আদ ১/৩৫-৩৬; হাদীসের মান : সহীহ)! দীর্ঘ আরেকটি হাদীসের একাংশে এসেছে : ‘ছুম্মা ইয়ানযিলু ঈসা ইবনু মারইয়ামা মুছাদ্দিকান বি-মুহাম্মাদিন ও আ’লা মিল্লাতিহী’ অর্থাৎ তারপর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) নাযিল হবেন মুহাম্মদ (সা:)-কে সত্যায়নকারী হিসেবে ও তাঁরই উম্মত হয়ে। (আল-মু’জামুল আওসাত হাদীস নং ৪৫৮০; হাদীসের মান : হাসান)। বেশ কিছু সহীহ হাদীসের সংক্ষিপ্ত বঙ্গানুবাদ। এমতাবস্থায় হাদীসগুলো সহীহ হওয়া সত্তে¡ও কাদিয়ানীরা সেগুলো পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা বলে তারা প্রকারান্তরে রাসূল (সা:)-কেই কুরআন বুঝতে অক্ষম কিংবা কুরআনের বিরুদ্ধবাদী বলে সাব্যস্ত করল কিনা? এবার আসুন! খোদ মির্যা কাদিয়ানী তার বইতে সহীহ হাদীসের বিশেষত্ব কেমন শব্দচয়নে তুলে ধরেছে দেখা যাক।

আল-আসমা ওয়াস-সিফাত ২/৩৩১; ইমাম বায়হাক্বী, হাদীসের মান : সহীহ

(২) মির্যা কাদিয়ানী তার বইয়ের এক জায়গায় সহীহ হাদীসের বিশেষত্ব তুলে ধরে লিখেছেন : “বরং মুওয়াফিকতে কুরআনকে হাদীসের বিশুদ্ধতার মানদন্ড স্থীর করবেনা। এই বিষয়ে উসূলে রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার মূলনীতির দিকে রুজূ করার দুইটি কারণ রয়েছে। একটি কারণ এই যে, উসূলে রেওয়ায়েত দ্বারা সহীহ সাব্যস্তকৃত হাদীসসমূহ আপনাআপনি কুরআন মাজিদ এর মুওয়াফিক হয়ে থাকে এবং কখনোই সেটি কুরআন বিরোধী হয় না। কুরআন হচ্ছে ইমাম আর হাদীসসমূহ তার খাদেম বা সেবক ও তার বিভিন্ন বিষয় এবং অস্পষ্ট অর্থের বিশ্লেষণকারী ও সুস্পষ্টকারী যা অল্প জ্ঞানসম্পন্ন আর অসম্পূর্ণ চিন্তাবিদদের ধারণায় সাংঘর্ষিক মনে হয়ে থাকে।” (রেফারেন্স: মুবাহাছায়ে লাদূনিয়া, রূহানী খাযায়েন ৪/৫৪)। তাই প্রশ্ন হল, বর্তমানে যেসব কাদিয়ানী সহীহ হাদীসকেও কুরআন বিরোধী বলে আখ্যা দেন তারা কি একদিকে রাসূল (সা:)-কে কুরআন বিরোধী বলে আখ্যায়িত করল না? অপরদিকে মির্যা কাদিয়ানী নিজেও যেখানে “উসূলে রেওয়ায়েত (আল-মুস্তালাহাতুল আহাদীস বা হাদীসশাস্ত্রের নীতিমালা) দ্বারা সহীহ সাব্যস্তকৃত হাদীসসমূহ আপনাআপনি কুরআন মাজিদ এর মুওয়াফিক হয়ে থাকে এবং কখনোই সেটি কুরআন বিরোধী হয় না” বলল, সেখানে কথা কাদেরটা সঠিক মানবো? কাদিয়ানী নেতাদেরটা নাকি তাদের কথিত মসীহ মির্যা কাদিয়ানীরটা?

(৩) মির্যা কাদিয়ানী তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন : “আমি ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ নামক বইতে লিখেছিলাম মসীহ ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। তবে পরবর্তিতে আমি লিখেছি, আগত মসীহ (ঈসা) আমি নিজেই।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২-৫৩)। এখানে বলে রাখা দরকার যে, মির্যা কাদিয়ানী তার উক্ত বারাহীনে আহমদীয়া নামক বইটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশপ্রাপ্ত ও একজন মুলহাম [দৈব-বাণীর অধিকারী] হয়েই লিখার দাবী করেছেন। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫৭)। তিনি আরো লিখেছেন, প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ উভয় দিক থেকে বইটির পরিচালক (পৃষ্ঠপোষক) মহান আল্লাহ। (দেখুন, মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/৫৬)। তিনি তার বারাহীনে আহমদীয়া বইকে আল্লাহর কিতাব বলেও আখ্যা দিয়েছেন। দেখুন ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাঈন’ (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৭৭)। তাহলে এবার বলুন, ঈসা (আ:) সত্যিই বেঁচে না থাকলে মির্যা কাদিয়ানী তার উক্ত বইতে ঈসা (আ:) জীবিত থাকা, আকাশ থেকে নাযিল হওয়া ইত্যাদি কথাবার্তাগুলোও কি আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম ছাড়াই কিংবা আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশপ্রাপ্ত হওয়া ছাড়াই লিখেছিলেন মনে করেন? অথচ তিনি এও দাবী করতেন : আল্লাহতালা তাকে ভুলের উপর এক মুহূর্তও স্থির থাকতে দেন না। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৮/২৭২)। তাহলে এবার আমাকে বলুন! যার দাবী, আল্লাহতালা তাকে ভুলের উপর এক মুহূর্তও স্থির রাখেন না সে ১৮৮৪ সালে বইটি লিখার পর হতে ১৮৯৩ সালে মসীহ দাবীর আগ পর্যন্ত বরাবরই কি ভুলের উপর স্থির ছিলেন মনে করেন? এখন তার ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ বইয়ের সেসমস্ত ইলহাম সত্য হলে পরবর্তিতে তিনি পবিত্র কুরআনের ত্রিশ আয়াত দিয়ে ঈসা (আ:)-কে কিভাবে মৃত আখ্যা দিতে পারেন?

(৪) অসংখ্য সাহাবী থেকে ঈসা (আ:) জীবিত ও স্বশরীরে আকাশে উত্থিত হয়ে যাওয়া এবং কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে দুনিয়াতে ফিরে আসার সমর্থনে বহু সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। যার সংখ্যা এত বেশি যে, ফলে সেগুলোর হুকুম (বিধান) তাওয়াতূর পর্যায়ে পৌছে গেছে। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সূরা আলে ইমরান এর ৫৫নং আয়াত ‘ইন্নী মুতাওয়াফফীকা’ এর তাফসীর বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত হয়েছে এভাবে যে, তিনি বলেছেন “ক্বালা ইন্নী রাফিউকা ছুম্মা মুতাওয়াফফীকা ফী আখিরিয যামান”। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে উঠিয়ে নেব অতপর শেষ যামানায় তোমাকে (মৃত্যুর মাধ্যমে) পুরোপুরি নিয়ে নেব।” (দুররে মানছ‚র, ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী খন্ড নং ৩ দ্রষ্টব্য)। বলে রাখা দরকার, সহীহ বুখারীর কিতাবুল ইলম অধ্যায়ে (হা/ ৭৫ ইফা) একটি হাদীসে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা:) ইবনে আব্বাসের জন্য দোয়া করেছেন ‘আল্লাহুম্মা আ’ল্লিমহুল কিতাব’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি তাঁকে কুরআন শিখিয়ে দিন।’ এমতাবস্থায় রঈসুল মুফাসসিরীন ইবনে আব্বাস (রা:), প্রখ্যাত তাবেয়ী ও ইবনে আব্বাসের খাস শিষ্য ইমাম যাহহাক, মুজাহিদ, আলকামা, ইক্বরিমা, আবু মালেক ও আবু আ’লীয়াহ প্রমূখ তারাও কি কুরআনের সঠিক অর্থ বুঝতে অক্ষম ছিলেন মনে করেন? কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে তাঁদের চেয়েও কুরআন বেশী বুঝার দাবী করে কি? আসতাগফিরুল্লাহ!!

(৫) ইসলামের প্রথম শতাব্দী হতে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান অদ্যাবধি সর্বসম্মতভাবে বিশ্বাস করে আসছেন যে, ঈসা (আ:) জীবিত এবং তিনি আকাশে রয়েছেন। এই কথার স্বীকারোক্তি খোদ কাদিয়ানী দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীনও দিয়ে গেছেন। (তার বইগুলোর সমষ্টি আনওয়ারুল উলূম ২/৪৬৩ দ্রষ্টব্য)। তাই প্রশ্ন হল, তবে কি সর্বসম্মতভাবে সমস্ত মুসলমানও কুরআনের সঠিক অর্থ বুঝতে অক্ষম ছিলেন বলবেন? কাদিয়ানীরা কি নিজেদেরকে তাঁদের চেয়েও কুরআন বেশী বুঝে বলেই দাবী করতে চায়? অথচ হাদীসে উল্লেখ আছে, উম্মতে মুহাম্মদীয়া কখনো ভুল ও ভ্রষ্টতার উপর একমত হবেনা (তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ফিতান)। এখন কাদিয়ানীরা কি রাসূল (সা:)-এর ভবিষ্যতবাণীটাও সঠিক নয় বলবে? নাউযুবিল্লাহ!

(৬) যুগ শ্রেষ্ঠ ও বরেণ্য ইমামগণের তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসীর, বায়দ্বাভী, তাবারী, কুরতুবী, রূহুল মা’আনী, দুররে মানছূর, জালালাইন, খাজেন, আল-মা’আলিমুত তানজিল, কাশশাফ, ইমাম রাজী’র তাফসীরে কাবীর, আবু হাতিম, ইমাম শাওক্বানী’র ফাতহুল ক্বাদির ও শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস আদ-দেহলভীর ‘ফতহুর রহমান’সহ উল্লেখযোগ্য সমস্ত তাফসীর গ্রন্থে পরিষ্কার লিখা আছে : ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশে জীবিত এবং তাঁর দ্বিতীয়বারের আগমন অকাট্য সত্য। এখন প্রশ্ন হল, এঁদের সবাই কি পবিত্র কুরআনের সঠিক অর্থ বুঝতে অক্ষম ছিলেন? কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে তাঁদের চেয়েও কুরআন বেশী বুঝার দাবী করবে কি? আসতাগফিরুল্লাহ!! অথচ মির্যা কাদিয়ানী নিজেও কুরআন শরীফ অর্থগত বিকৃতি থেকে রক্ষা পাওয়ার দ্বিতীয় উপায় হিসেবে লিখে গেছেন, (অনুবাদ) “দ্বিতীয়ত : আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনকে এমন সব ইমাম আর আকাবীরগণের মাধ্যমেও যাদেরকে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে কুরআনের সঠিক বুঝ দান করা হয়েছে, যারা কুরআন শরীফের অস্পষ্ট জায়গাগুলো নবীজির হাদীসসমূহ দ্বারা তাফসীর করে খোদার পবিত্র বাণীকে এবং পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগে অর্থগত বিকৃতি হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)। এমতাবস্থায় উল্লিখিত তাফসীরকারকগণ ঈসা (আ:) সম্পর্কে নাযিলকৃত কুরআনের আয়াতগুলোর সঠিক মর্ম উদঘাটনে কিভাবে অক্ষম হতে পারেন? তাহলে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে তাদেরকে কুরআনের সঠিক বুঝ কিভাবে দান করা হল? আপনাদের মতেও মির্যা নিজেই মিথ্যুক সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা?

আসুন! নিজেদের বিচার-বুদ্ধিকে এভাবে নিজ হাতে হত্যা না করে আগে বরং এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ:) “স্বশরীরে আকাশে রয়েছেন” কুরআনে কি হুবহু এইভাবে থাকতে হবে?

0

কাদিয়ানীদের চরম মূর্খতাপূর্ণ জিজ্ঞাসার জবাব :

কাদিয়ানীরাই হরহামেশা এই ধরণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মত চরম মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে থাকে। অথচ তাদের শরম হওয়া উচিত এই কারণে যে, তাদেরই মির্যা কাদিয়ানী তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছে : “আমি বারাহিনে আহমদীয়া নামক বইতে লিখেছিলাম, মসীহ ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। তবে পরবর্তীতে আমি লিখেছি, আগত মসীহ (ঈসা) আমি নিজেই।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২-৫৩; হাকীকাতুল ওহী)। এবার আসুন তার উক্ত কথাটি তিনি যে কিতাবে লিখে গেছেন সেই কিতাবের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তারই মুখ থেকে জেনে নিই।


(ক) “আমি কিতাবটি আল্লাহর পক্ষ হতে একজন মুলহাম (প্রেরণাপ্রাপ্ত) এবং মামূর তথা আদিষ্ট হয়েই লিখেছি।” (রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫৭; আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম)।


(খ) “প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ উভয় দিক থেকে কিতাবটির পরিচালক মহান আল্লাহ।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/৫৬; ‘আমি এবং আমার বই’ শীর্ষক শিরোনাম)।

তাহলে এবার বলুন! ঈসা (আ:) সত্যিই বেঁচে না থাকলে মির্যা কাদিয়ানী তার বারাহিনে আহমদীয়া নামক বইতে ঈসা (আ:) জীবিত থাকা, আকাশ থেকে নাযিল হওয়া ইত্যাদী কথাবার্তাগুলোও কি আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম ছাড়াই কিংবা আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট হওয়া ছাড়াই লিখেছিলেন মনে করেন? জবাব দিন!
সেযাইহোক, বর্তমান কাদিয়ানীর অনুসারীদের কথার ধরণে বুঝা যায়, যে কোনো বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা পবিত্র কুরআনেই উল্লেখ থাকা জুরুরি, অন্যথা সেটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়; যদিও বা অসংখ্য সহীহ হাদীসে তার পক্ষে দলিল থাকেনা কেন!! আচ্ছা যদি তাই হয় তাহলে মির্যা কাদিয়ানীর দাবী, সে ইমাম মাহদী, মসীহ। তার আরো দাবী, সে মুহাম্মদ (সা:) এর দ্বিতীয় প্রকাশ। তার আরো দাবী, আনুগত্যস্বরূপ সেই একমাত্র উম্মতিনবী। তাই আমারও প্রশ্ন থাকবে, মির্যা কাদিয়ানীর কথাগুলোর প্রমাণ হুবহু কিংবা ইংগিতে হলেও পবিত্র কুরআন থেকে পারলে দেখিয়ে দিন! তারপর আসুন, পবিত্র কুরআনের নামে মির্যা কাদিয়ানীর বেশ কিছু মিথ্যা উদ্ধৃতি আপনাদের দেখাব! তিনি লিখেছেন :

[১] তিনটি শহরের নাম অত্যন্ত মর্যাদার সাথে কুরআনে উল্লেখ আছে। মক্কা, মদীনা এবং কাদিয়ান।
[২] কুরআন শরীফে এমনকি তাওরাতের নানা ছহীফাতেও ভবিষ্যতবাণী রয়েছে যে, মসীহ মওউদের সময় তাউন তথা মহামারী দেখা দেবে।
[৩] যদি পবিত্র কুরআনে আমার নাম ‘ইবনে মরিয়ম’ না রাখা হয় তাহলে আমি মিথ্যাবাদী।
[৪] আমাকে বলা হয়েছে যে, তোমার ব্যাপারে কুরআন এবং হাদীসে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে তুমিই এই আয়াতটির [সূরা আছ-ছফ আয়াত নং ৯] মেস্দাক তথা বাস্তবরূপ।
[৫] এখন এই কথার প্রমাণ হয়ে গেল যে, পবিত্র কুরআনে যেই মসীহে মওউদের আগমনের ওয়াদা রয়েছে সে এই অধমই [অর্থাৎ সে মির্যা কাদিয়ানী]।

রেফারেন্স যথাক্রমে : রূহানী খাযায়েন: খ-৩ পৃ-১৪০; খ-১৯ পৃ ৫; খ-১৯ পৃ-৯৮; খ-১৯ পৃ-১১৩; খ-৩ পৃ-৪৬৮।

এখন জানার বিষয় হল, মির্যা কাদিয়ানীর কথাগুলো কুরআনের কোথায় এবং কোন শব্দে আছে দেখান! অন্যথা মেনে নিন, সে জঘন্যতম একজন মিথ্যুক আর ভন্ড ছিল!

এবার উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে ফিরে আসা যাক :

আমাদের জেনে রাখা জুরুরি যে, কোনো বিষয়ে দলিল শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন থেকেই তলব করা এটি কুরআনেরই বিরুদ্ধাচারণ বৈ নয়! কেননা আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন “অতপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা [সমাধানের উদ্দেশ্যে] আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ [বিচার] দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর” (সূরা নিসা আয়াত ৫৯ দ্রষ্টব্য)। সমস্ত তাফসীরকারক একমত যে, এখানে রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থ হল (সহীহ) হাদীসের দিকে রুজু করা (দেখুন তাফসীরে ইবনে কাসীর)। তাই সাব্যস্ত হল যে, কাদিয়ানীদের দলিল তলব করার উক্ত পদ্ধতি কোনোভাবেই পবিত্র কুরআনের শিক্ষার অনকূলে পড়েনা। যেজন্য এই ধরণের প্রশ্ন আমলে নেয়াও উচিত নয়, বরং গুনাহ।

এবার আসুন মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে একজন মুলহাম আর মুজাদ্দিদ দাবী করে তার শুরুর দিকের বইগুলোতে ঈসা (আ:) সম্পর্কে কী লিখলো! আমরা জানি মির্যা কাদিয়ানী তার কথিত ইলহামী পুস্তক ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ এর মধ্যে ১৮৮৪ সালে পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবাহ এর ৩৩ নং আয়াত উল্লেখপূর্বক লিখেছে, আয়াতটিতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, মসীহ (আ:) দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আগমন করবেন। তার বইয়ের ভাষ্যমতে: ‘ফোরকানী ইশারা ইস আয়াত মে হে হুয়াল্লাজি আরসালা রাসূলাহু…আওর যব মসীহ (আ:) দোবারা ইস দুনিয়া মে তাশরীফ লায়ে গে তু উন কি হাত ছে দ্বীনে ইসলাম জমিয়ে আফাক্ব আওর আকত্বার মে ফহেল যায়েগা।’ (রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩; বারাহিনে আহমদিয়া ৪/৪৯৯ [উর্দূ] দ্রষ্টব্য)।

  • তাই সহজেই প্রশ্ন উঠে, পবিত্র কুরআনে যেই ঈসার আগমন দ্বিতীয়বারের আগমন বলে ইঙ্গিত রয়েছে সে ঈসা ১৮৯৩ সালের পরে রূপক ঈসা হন কিভাবে? উল্লেখ্য, সে ব্যক্তির আগমনকেই দ্বিতীয়বারের আগমন বলে যে ইতিপূর্বে আরো একবার এসেছিলেন।

আরো মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানী উক্ত লিখাটির দুই বছর পূর্বে দাবী করে এও লিখেছেন ‘খোদা নে তুজ্হে কুরআন শিখলাইয়া আওর উসকে সহীহ মা’নে তেরে ফর খোল দেগা।’ অর্থাৎ খোদাতায়ালা তোমাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন আর তাঁর বিশুদ্ধ অর্থ(ও) তোমার নিকট উন্মোচন করেছেন। (রূহানী খাযায়েন ১৩/২০১; তাযকিরাহ ৩৫; ইলহাম ১৮৮২ সাল)। সুতরাং প্রমাণিত হল, আগত ঈসা কোনোভাবেই ‘রূপক ঈসা’ হতে পারেনা। নতুবা যিনি দাবী করে লিখলেন যে, কুরআনের সঠিক অর্থ স্বয়ং আল্লাহ তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন, তিনিই যখন পরবর্তী দুই বছর পর নিজেই কুরআন থেকে বলছেন যে, পবিত্র কুরআনে ঈসার দ্বিতীয়বারের আগমন সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে; তা অন্তত আপনাদের বিচারেও ভুল হতে পারে কিভাবে? আপনাদের কেউ কি আছেন আমার এই প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সন্তোষজনক উত্তর দেবেন? জানি কেয়ামত পর্যন্ত উত্তর দেয়া সম্ভব হবেনা। আর তাই ‘ঈসা (আ:) স্বশরীরে আকাশে রয়েছেন’ হুবহু এইভাবেই পবিত্র কুরআনে উল্লেখ থাকতে হবে, ইংগিত ইশারায় থাকলেও চলবেনা; কাদিয়ানীদের এইধরণের আর কোনো প্রশ্ন তোলারই অধিকার নেই। প্রাসঙ্গিক একটি লেখা পড়তে : Click this link

এবার আপনি হয়ত জানতে চাচ্ছেন যে, হযরত ঈসা (আ)-এর পুনঃ আগমন সম্পর্কে ইঙ্গিত কোথায়?

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক