Home Blog Page 34

যেসব বর্ণনাকে আশ্রয় করে ‘খতমে নবুওয়ত’–কে অস্বীকার করা হয় সেগুলোর জবাব

0

খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারী কাদিয়ানিদের ১২টি বিভ্রান্তিকর দলিল ও আমার জবাব :

প্রদত্ত দলিলগুলো কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে আর জবাবগুলো আমার :

দলিল ১ :

প্রশ্নকর্তা : একটি হাদীসে উল্লেখ আছে “…অতপর মূসা (আ:) আরজ করলেন اِجْعَلْنِىْ نَبِيًّا تِلْكَ الْاُمَّة অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে সেই উম্মতের নবী বানিয়ে দাও। আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন “মিনহা নাবিয়্যুহা” অর্থাৎ তাদের নবী তাদেরই মধ্য থেকে হবে।” (আবু নাঈম এর সীরাতগ্রন্থ হুলিয়া, থানভীর সীরাতগ্রন্থ নশরুত্তিব দ্রষ্টব্য)। এই হাদীসে ‘তাদের নবী’ হতে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের কথাই কি বুঝানো হয়েছে?

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

ঈসা (আ:) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন কি?

ক্লিক করুন

দলিল ২ :

لو عاش ابراهيم لكان صديقا نبيا অর্থাৎ যদি ইব্রাহীম তথা হুজুর (সা:) এর সন্তান জীবিত থাকত তবে সে সত্যবাদী ও নবী হতো।” (সুনানু ইবনে মাজাহ ১/১০৮; ‘তারীখু ইবনে আসাকীর ৩/২৯৫)।

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

দলিল ৩ :

ابو بكر خير الناس الا ان يكون نبيا. অর্থাৎ আবু বকর এই উম্মতের মাঝে সবার  শ্রেষ্ঠ তবে নবী হলে ভিন্ন কথা। (কাঞ্জুল উম্মাল ১২/১৮০, হাদীসের মান জঈফ ও মওযূ)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নবুওয়তেরধারা জারি রয়েছে বুঝাবেনা। তার কারণ এখানে ان يكون এর মধ্যে ঊহ্য هو (ইংরেজি : He) সর্বনামপদটি আবুবকর (রা:)-কে নির্দেশ করেছে। ফলে সম্পূর্ণ বর্ণনাটির অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন আবুবকর (রা:)। তবে সে যদি নবী হত তখন ভিন্ন কথা ছিল। রাসূল (রা:) এই কথা বলে যেন বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আবুবকর (রা:) যেহেতু নবী নন, তাই তিনি শুধুমাত্র উম্মতির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। তবে হ্যাঁ সে “নবী” হলে তখন উম্মতির বাহিরে কোনো কোনো নবী অপেক্ষাও তাঁর পক্ষে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারা বিচিত্র ছিল না। কিন্তু আমি জানি যে, কাদিয়ানিদের নিকট আমার এই জবাব মোটেও সন্তোষজনক হবেনা। তাই তাদের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই যে, কাদিয়ানের কথিত কৃষ্ণ মির্যা গোলাম আহমদ কর্তৃক ১৮৯৩ সালে লেখিত ‘হামামাতুল বুশরা’ এর মধ্যে উল্লেখ আছে “আমাদের রাসূলের পর কিভাবে কোনো নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।” (দেখুন, পৃষ্ঠা নং ৪৮; বাংলা অনূদিত)।

তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকলে মির্যা গোলাম আহমদ নবুওয়ত দাবী করার আগে সে নিজেও “রাসূল (সা:) এর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে…” ইত্যাদি লিখে যাওয়ার কারণ কী? সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল, উক্ত বর্ণনাটির পরে আরো উল্লেখ রয়েছে هذا الحديث احد مما انكر (অর্থাৎ এই হাদীসটি মুনকার হাদীসগুলোর অন্যতম)। উল্লেখ্য, বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসের বিপরীতে দুর্বল বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসকে ‘মুনকার’ হাদীস বলা হয়। অতএব, জ্ঞানীদের বুঝার আর বাকি থাকেনি যে, তাদের প্রদত্ত বর্ণনাটি অন্ততপক্ষে আকীদা-বিষয়ক মাসআলায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংক্ষেপে। 

দলিল ৪ :

قال ليس بينى و بينه نبى يعنى عيسى و انه نازل অর্থাৎ আমার এবং আগমনকারী  ঈসার মধ্যবর্তীকালে আর কোনো নবী নেই এবং তিনি নিশ্চয় নাযিল হবেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩২৪; কিতাবুল মালাহিম)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবী কোনোভাবেই সিদ্ধি লাভ করবেনা। তার কারণ, হাদীসটিতে আগমনকারী ঈসা সম্পর্কে “নাযিল” শব্দ এসেছে। তার মানে আগমনকারী ঈসা অবতরণ করবেন, জন্মিবেন না। তার দেড় লাইনের মাথায় তাঁর সম্পর্কে এটিও উল্লেখ আছে فيقاتل الناس على الإسلام (অর্থাৎ তিনি মানুষের বিরুদ্ধে ইসলামের খাতিরে সশস্ত্র লড়াই করবেন)। তার এক লাইনের মাথায় আরো এসেছে و يهلك الله فى زمانه الملل كلها إلا الاسلام (অর্থাৎ আল্লাহতালা তাঁর যামানায় ইসলাম ব্যতীত বাকি সমস্ত ধর্ম ও মতবাদ ধ্বংস করে দেবেন)। হাদীসটির শেষাংশে এটিও এসেছে, فيمكث فى الأرض اربعين سنة ثم يتوفى فيصلى عليه المسلمون (অর্থাৎ অতপর তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর থাকবেন তারপর মৃত্যুবরণ করবেন। অতপর মুসলমানগণ তাঁর জানাজা পড়বেন)। যাইহোক, একজন নিরপেক্ষ পাঠক ঠাণ্ডামাথায় চিন্তা করলে বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, আগমনকারী সেই ঈসা রূপক কেউ নন, বরং বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত সেই মরিয়ম-পুত্র ঈসাই উদ্দেশ্য। যিনি হাদীসটিতে “নবী” শব্দেও আহূত হয়েছেন। তারমানে এই অর্থ নয় যে, আগমনকারী সেই ঈসা তখন নবুওয়তের দায়িত্বেও থাকবেন।

এটি আমার মনগড়া কোনো কথা নয়, বরং কাদিয়ানের কৃষ্ণ মির্যা গোলাম নিজেও লিখে গেছেন, آنے والے مسیح کیلئے ہمارے نبی اکرم نے نبوت شرط نہیں ٹہرائی অর্থাৎ আগমনকারী মাসীহ’র জন্য আমাদের নবী করীম (সা:) নবুওয়ত শর্ত করেননি। (তাওযীহুল মারাম, রূহানী খাযায়েন ৩/৫৯)। সুতরাং সরলমনা মানুষকে বিভ্রান্ত করার আর কোনো সুযোগ থাকল না।

মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে চার চার বার ঈসা (আ.)-কে নাবীউল্লাহ বলা হয়েছে, কাদিয়ানীদের অতিব শঠতাপূর্ণ বক্তব্যের দাঁতভাঙা উত্তর এখানে

দলিল ৫ :

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : قولوا خاتم الأنبياء و لا تقولوا لا نبى بعده অর্থাৎ তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো এবং তোমরা বলবেনা, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই। (মাজমাউল বিহার পৃষ্ঠা নং ৫০২)।

জবাব : না, এই বর্ণনা দ্বারাও কাদিয়ানিদের বিশ্বাস-মতে নবুওয়তী ওহীরধারা জারি থাকার দাবী কোনোভাবেই হালে পানি পায় না। কেননা ইমাম মুহাম্মদ তাহের পাটনী (মৃত ৯৮৬ হিজরী) বিরচিত ‘মাজমাউল বিহার’ কিতাবটির উক্ত পৃষ্ঠায় বর্ণনাটিতে আরো উল্লেখ আছে هذا ناظراً إلى نزول عيسى و هذا ايضا لا ينافى حديث “لا نبى بعدى” لانه اراد لا نبى ينسخ شرعه  অর্থাৎ এটি ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং এটি ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীসকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবেনা। কেননা তদ্দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর শরীয়তকে রহিত করতে পারে তিনি এমন নবী নন। এবার সম্পূর্ণ বর্ণনার তাৎপর্য দাঁড়াল এই যে “ঈসা আলাইহিস-সালামের নাযিলের প্রতি লক্ষ্য রেখে তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো, তবে ‘তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই’ বলবেনা।” এছাড়া বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুগীরা (রা:) হতেও বর্ণিত আছে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন حسبك إن قلت خاتم الأنبياء (অর্থাৎ  তোমার জন্য খাতামুল আম্বিয়া বলাই যথেষ্ট। তিনি আরো বলেন فإنا كنا نحدث أن عيسى خارج فإن هو خرج فقد كان قبله و بعده অর্থাৎ কেননা আমরা আলোচনা করে থাকি যে, ঈসা (আ:) নিশ্চয়ই আগমন করবেন। তিনি যদি আগমন করেন তাহলে তিনি তাঁর (মুহাম্মদ) পূর্বের এবং পরের (একজন মানুষ) হবেন। (দেখুন, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ১৩/৫৬৬; কিতাবুল আদাব)।

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সালাম আল বছরী (মৃতঃ ২০০ হিজরী) বিরচিত ‘তাফসীরে ইয়াহইয়া ইবনে সালাম’ (تفسير يحي بن سلام) নামক কিতাবেও এর সনদ (সূত্র) হিসেবে উল্লেখ আছে যে, রাবীঈ ইবনে ছুবাঈ (আরবি : ربيع ابن صبيح) এটি মুহাম্মদ ইবনে শিরীন (রহ:) থেকে আর তিনি হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, لا تقولوا : لا نبي بعد محمد و قولوا : خاتم النبيين، فإنه ينزل عيسى بن مريم حكماً عدلاً و إماماً مقسطا الخ অর্থাৎ তোমরা বলোনা, মুহাম্মদ (সা:)-এর পর আর কোনো নবী নেই (তবে) তোমরা ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ বলো। কেননা (অচিরেই) ঈসা ইবনে মরিয়ম একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক এবং ইনসাফগার ইমাম হিসেবে অবতরণ করবেন।” সে যাইহোক, এ সমস্ত রেওয়ায়েত যত জায়গায় পাওয়া যায় কোথাও একথা বুঝায় না যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে নবুওয়ত আর রেসালত জারি থাকবে বরং এ ধরণের সবগুলো বর্ণনাতেই শেষ যুগে হযরত ঈসা (আ:)-এর দ্বিতীয়বার আগমনের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। সুতরাং এই বর্ণনা দ্বারাও তাদের নবুওয়ত জারি থাকার তাবৎ দলিল-প্রমাণ(!) অন্তঃসারশূন্যই সাব্যস্ত হল। সংক্ষেপে।

দলিল ৬ :

সহীহ মুসলিম শরীফের একটি হাদীসের খন্ডাংশ হচ্ছে, রাসূল (সা:) বলেছেন  فإني آخر الأنبياء و ان مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ নিশ্চয় আমি সর্বশেষ নবী এবং আমার মসজিদ সর্বশেষ মসজিদ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৩৯)।

জবাব : না, এই হাদীসটিও নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকবে বুঝায়নি। প্রাসঙ্গিক জবাবে আরেকটু পরে আসি। আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ (সা:) মদীনায় এসে নিজ তত্ত্বাবধানে প্রথমে মসজিদে কূবা তারপর মসজিদে নববী  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এই মসজিদ রাসূল (সা:) কর্তৃক ৬২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ মসজিদ হওয়াতে তিনি বলেছেন : مسجدى آخر المساجد অর্থাৎ আমার মসজিদই শেষ মসজিদ। এখন আমার প্রশ্ন হল, মসজিদে নববীর পরে কোটি কোটি মসজিদই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন তাতে কি? এগুলো কি রাসূল (সা:)-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত? নিশ্চয় না। কাজেই হাদীসটিকে কেউ বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে পথভ্রষ্ট হতে চাইলে তাতে আমাদের কিছুই করার নেই। হাদিসের অন্যতম কিতাব ‘আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব’ কিতাবে উপরিউক্ত হাদিসটি শব্দের সামান্য পরিবর্তনসহ বর্ণনাকারীর বর্ণনাতে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা:) বলেছেন مسجدى آخر مساجد الأنبياء (মাসজিদী আখেরু মাসাজিদিল আম্বিয়া) অর্থাৎ “আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।”

হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) হতেও এ সম্পর্কে আরেকটি  হাদীসে আছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন أنا خاتم الأنبياء و مسجدى خاتم مساجد الأنبياء অর্থাৎ “আমি সর্বশেষ নবী আর আমার মসজিদ নবীদের মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ।” (দেখুন, কাঞ্জুল উম্মাল হাদীস নং ৩৪৯৯৯; হারামাঈন পরিচ্ছেদ)।  প্রমাণের জন্য আরো দেখা যেতে পারে –  ইমাম নূর উদ্দীন আল হাইছামী (মৃত ৮০৭হিজরী) রচিত ‘কাশফুল আছতার‘।  ইমাম আল ফাকেহী (মৃত ২৭৫ হিজরী) রচিত ‘আখবারু মাক্কা‘। ইমাম ইউছুফ আল মুযনী (মৃত ৭৪২ হিজরী) রচিত ‘তাহযীবুল কামাল‘। ইমাম আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী) রচিত ‘মাছীরুল গারামিস সাকিন ইলা আশরাফিল আমাকিন‘। ইমাম নূর উদ্দিন আলী ইবনে আহমদ আল সামহূদী রচিত ‘খোলাসাতুল ওয়াফা বি-আখবারি দারিল মুস্তফা‘ এর ‘ফাজিলাতু মসজিদিন নাবাবিয়্যি’ শীর্ষক অধ্যায় দ্রষ্টব্য।  তার মানে, রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করার জন্য প্রত্যেক যুগেই নবীগণ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, আর সর্বশেষ নবী হিসেবে আমি (মুহাম্মদ)ও “মসজিদে নববী” নির্মাণ করেছি। যেহেতু আমার পরে আর কোনো নবী নেই, সেহেতু নবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলোর সর্বশেষ মসজিদ হচ্ছে আমার মসজিদ তথা মসজিদে নববী।” সংক্ষেপে।

দলিল ৭ :

নবী করীম (সা:) স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস (রা:)-কে সম্বোধন করে বলেন “নবুওয়তে আমি যেমন খাতামুন্নাবিয়্যীন, হিজরতে আপনি তদ্রূপ খাতামুল মুহাজিরীন” (কাঞ্জুল উম্মাল দ্রষ্টব্য)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তের ওহী অব্যাহত থাকা প্রমাণিত হয় না। তার কারণ, অষ্টম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) এ সম্পর্কে লিখেছেন أن العباس بن عبد المطلب هاجر قبيل فتح مكة إلى المدينة فصار خاتم المهاجرين الذين هاجروا من مكة إلى المدينة لأنه لا هجرة بعد فتح مكة من مكة , كما ورد في الحديث الصحيح الذي أخرجه البخاري : ” لا هجرة بعد الفتح ” أي بعد فتح مكة অর্থাৎ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তিনি মক্কা বিজয়ের পূর্বক্ষণে মদীনায় (সপরিবারে) হিজরত করেন। যার ফলে তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারীদের মধ্যে ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ সাব্যস্ত হন। তার কারণ, মক্কা বিজয়ের পর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্ব-বিধান আর বহাল থাকেনি। সহীহ বুখারীতেও এ মর্মে হাদীস উল্লেখ আছে যে, লা হিজরাতা বা’দাল ফাতহে আই বা’দা ফাতহি মাক্কা।’ প্রমাণ হিসেবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত ‘আল ইছাবাহ’ (الاصابة) গ্রন্থের ২য় খন্ডের ২৬৩ নং পৃষ্ঠা এবং ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। মোটকথা হচ্ছে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মদীনায় হিজরত করা সকল মুসলমানের উপর যেহেতু ওয়াজিব ছিল সেহেতু রাসূল (সা:)-এর চাচা আব্বাসের উপরও ওয়াজিব ছিল। তিনি বদর যুদ্ধে গ্রেপ্তার হয়ে অতপর মুক্তি পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তিনি রাসূল (সা:) এর নিকট মক্কায় ফিরে গিয়ে সেখান থেকে মদীনায় হিজরতের অনুমতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মক্কায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও রাসূল (সা:) বিশেষ কারণে তাঁকে তৎক্ষনাৎ হিজরতকরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন يا عم اقم مكانك فان الله يختم بك الهجرة كما ختم بي النبوة অর্থাৎ হে আমার চাচা! আপনি আপনার জায়গাতেই থাকুন। কারণ আল্লাহতায়ালা আমার মাধ্যমে যেরূপ ভাবে নবুওয়তেরধারা শেষ করবেন তেমনি আপনার মাধ্যমে আবশ্যকীয় হিজরতের ক্রমধারাও শেষ করে দেবেন। (ইমাম যাহাবী (রহ:) রচিত ‘মীযানুল ইতিদাল’ এর ১ম খণ্ডের ২৪৫ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। সিয়ারু আলামিন নুবালা থেকে স্ক্যানকপি :-

ইমাম বাগাবী (রহ.) তাঁর ‘শরহে সুন্নাহ‘ কিতাবের দশম খন্ডের ৩৭৩-৭৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মক্কা বিজয়ের পর আর কোনো হিজরত নেই। একথা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, “মক্কা হতে মদীনায় আর কোনো অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের বিধি অবশিষ্ট নেই।” সে হিসেবে রাসূল (সা.) আপন চাচা আব্বাসকে কাছে পেয়ে পূর্বের ভবিষ্যৎবাণীর ভিত্তিতে বললেন “হে আমার চাচা আব্বাস! আপনি খাতামুল মুহাজিরীন তথা শেষ হিজরতকারী। রাসূল (সা.) তাঁকে ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ বলে যেন বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত যেই হিজরত মুসলমানদের উপর আবশ্যক (ওয়াজিব) ছিল আপনি-ই হলেন সেই অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের সমাপ্তকারী। এই ছিল ‘খাতামুল মুহাজিরীন’ এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। উল্লেখ্য, সেই বছরই তথা ৮ম হিজরী সালের ১০ রমযান তারিখে রাসূল (সা.) ১০,০০০ মুসলিম বাহিনীর এক বিরাট কাফেলা নিয়ে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কোনোরূপ রক্তপাত ছাড়াই মক্কা নগরী জয় করেছেন। 

দলিল ৮ :

নবী করীম (সা.) বলেছেন, “আনা খাতামুল আম্বিয়া ওয়া আনতা ইয়া আলী খাতামুল আওলিয়া” (শীয়া মতাবলম্বী মুহসিন আল কাশানী’র (মৃত. ১০৯১ হিজরী) ‘তাফসীরে সাফী’ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ আমি খাতামুল আম্বিয়া এবং হে আলী তুমি খাতামুল আওলিয়া।

জবাব : না, এটি হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। যতটুকু জানা যায়, ‘খতমুল বেলাদত’ গ্রন্থের রচিতা বিশিষ্ট সাধক আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলী-ই প্রথম এই বাক্যাংশের প্রবর্তক ছিল। সংক্ষেপে তাঁকে হাকিম তিরমিযী বলে। শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ:)-এর কিতাব থেকে জানা যায়, সাধক আবু আব্দুল্লাহ (রহ:) ইতিপূর্বে নিজেকে ‘খাতামুল আওলিয়া’ মনে করত। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি এজন্য ভুল স্বীকার করেছেন এবং ভীষণ অনুতপ্তও হয়েছেন।

হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর যুগ ইমাম, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ:) এ সম্পর্কে তাঁর ‘মাজমু’ ফাতাওয়া’ গ্রন্থের ১১তম খন্ডের ৪৪৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন  : وكذا خاتم الأولياء لفظ باطل لا أصل له. وأول من ذكره محمد بن علي الحكيم الترمذي. وقد انتحله طائفة كل منهم يدعي أنه خاتم الأولياء: كابن حموي، وابن عربي، وبعض الشيوخ الضالين بدمشق وغيرها অর্থাৎ অনুরূপভাবে ‘খাতামুল আওলিয়া’ এটি এমন একটি শব্দ যার কোনো ভিত্তি নেই। এটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন, মুহাম্মদ ইবনে আলী আল হাকিম তিরমিযী। একটি দল এটিকে অবলম্বন করেই তাদের প্রত্যেকে নিজেকে ‘খাতামুল আওলিয়া’ দাবি করত। এদের মধ্যে ইবনে হামাভী, মুহী উদ্দিন ইবনে আরাবীসহ দামেস্ক ইত্যাদি শহরের কিছু সংখ্যক বিপথগামী ছূফীও রয়েছে।” অতএব প্রমাণ পাওয়া গেল যে ‘খাতামুল আওলিয়া’ শীর্ষক শব্দটি মূলত কোনো হাদীসের অংশ নয়। বরং শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর প্রদত্ত তথ্যমতে এটি ‘খতমুল বেলাদত’ গ্রন্থের রচিতা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলীর-ই প্রবর্তিত মাত্র। (রেফারেন্স, প্রাগুক্ত)। তাই অসংখ্য সহীহ হাদীস আর ইজমায়ে উম্মতের মুকাবেলায় কে কী লিখল তা নিয়ে ভাবার দরকার কী? খতমে নবুওয়তের মত এমন একটি চির মীমাংসিত বিষয়ের খেলাফ কারো ব্যক্তিগত কোনো কথার গুরুত্বটাই বা কী?

দলিল ৯ :

সুনানু তিরমিযী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে أن الرسالة و النبوة قد انقطعت فلا رسول بعدى ولا نبى  অর্থাৎ নিশ্চয়ই রেসালত এবং নবুওয়ত বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আর কোনো রাসূল নেই, নবীও নেই। (হাদীসটি সহীহ)। কিন্তু কাদিয়ানিদের বই পুস্তকে শায়খ ইবনে আরাবী (রহ.) এর নাম ভেঙ্গে হাদীসটির একখানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, “হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে নবুওয়ত এবং রেসালতেরধারা বন্ধ—একথার অর্থ হল, কেবল তাশরীয়ী (শরিয়তবাহক) নবুওয়ত ও রেসালত-ই বন্ধ। তাই মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে যিনি আগমন করবেন তিনি এমন কেউ নন যিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের বিপরীতে হবেন। বরং তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর আনিত শরীয়তের-ই অধীনে হবেন।” (ফতুহাতে মাক্কিয়া ২/৩ দ্রষ্টব্য)।

উত্তর : শায়খ ইবনে আরাবী’র উক্ত ব্যাখ্যার সঠিক মর্মার্থ কী তা একই পৃষ্ঠার শেষের দুই-তিন লাইনে নিজেই পরিস্কার করে দিয়েছেন এই বলে যে “যার ফলে ঈসা (আ:) একজন নবী ও রাসূল থাকাটা লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীস অংশের বিরুদ্ধে যায় না।” সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ইবনে আরাবীর উপরিউক্ত বক্তব্যের ইংগিত নুযূলে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর প্রতিই ছিল। তাই তাঁর বক্তব্যটিকে ব্যাপকার্থে ধরে নিয়ে বর্তমানেও নবুওয়ত জারি থাকার আকিদা সাব্যস্ত করতে চাওয়া পুরোপুরি বাতিল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

‘উম্মতি’ শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানীর “নবী” দাবীর গোমর ফাঁস : Click

দলিল ১০ :

ألا انه خليفة فى امتى ألا انه ليس بينى و بينه نبى অর্থাৎ সাবধান! নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) আমার উম্মতের মাঝে একজন খলীফা হবেন এবং তাঁর ও আমার মাঝে আর কোনো নবী নেই। (সুনানু তাবারানী)।

জবাব : না, এই হাদীস দ্বারাও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পর নবুওয়তেরধারা অব্যাহত থাকা বুঝায়নি। বড়জোর, এটি শেষ যামানায় প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর দ্বিতীয়বার আগমন কী হিসেবে হবে তা “আন্নাহু খালীফাতু” শুব্দগুচ্ছের আলোকে সুস্পষ্ট করে দেয়ার জন্যই বর্ণিত হয়েছে। এখানে খুবই লক্ষণীয় ব্যাপার হল, অত্র বর্ণনায় শব্দটি উল্লেখ হবার ধরণ! অর্থাৎ এখানে “খালীফাতু ফী উম্মাতি” (আমার উম্মতের মাঝে একজন খলীফা) চয়িত হয়েছে, কিন্তু “খালীফাতু মিন উম্মতি” (আমার উম্মতের মধ্য থেকে একজন খলীফা)  চয়িত হয়নি। ফলে একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আগত ঈসা দ্বারা এই উম্মতের মধ্য হতে রূপক কেউ হবেনা, বরং “সহীহ মুসলিম শরীফ” এর কিতাবুল ফিতান অধ্যায়ের বর্ণনানুসারে আগত ঈসা দ্বারা বনী ইসরাইলী ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-ই উদ্দেশ্য, যিনি দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর আপনা দুই বাহু রেখে এই উম্মতের মাঝে [আকাশ থেকে] আবির্ভূত হবেন। সংক্ষেপে।  এই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। দেখে নিন। ওয়াস-সালাম।

দলিল ১১ :

হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন : قالوا : يا رسول الله ! متى وجبت لك النبوة ؟ قال : وآدم بين الروح والجسد رواه الترمذي অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (একদা নবীজীকে) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য নবুওয়ত কবে থেকে নির্ধারিত? তিনি (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, যখন আদম রূহ এবং শরীরের মাঝে নিহিত [তখন থেকে আমার জন্য নবুওয়ত নির্ধারিত]। (মেরকাত শরহে মেশকাত, খন্ড নং ১০; হাদীস নং ৫৭৫৮, কিতাবুল ফাজায়েল ওয়াশ শামায়েল)। এই হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে খাতাম অর্থ ‘শেষ’ নয়, বরং ‘শ্রেষ্ঠ’। সুতরাং মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে নবুওয়ত বন্ধ থাকেনি, বরং বিদ্যমান রয়েছে।

জবাব : না, এই হাদীসও নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরে ‘ওহীয়ে নবুওয়ত’ জারি থাকার পক্ষে কোনোই ইংগিত করেনা। যেহেতু বিষয়টি আমরা হযরত ইরবাছ ইবনে সারিয়াহ (রা.) হতে আরেকটি হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট করে নিতে পারি। হাদীসের ভাষ্য, أنه قال إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين অর্থাৎ রাসূল (সা:) বলেছেন নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর নিকটে খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম (আল-মেশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফাজায়েল ওয়াশ শামায়েল)। খুব খেয়াল করুন, এখানে বলা হয়েছে مكتوب (মাকতূব) অর্থাৎ লিপিবদ্ধ ছিলাম। হাদীস কিন্তু বলছেনা যে, রাসূল (সা.) স্বীয় জন্মের পূর্ব থেকেই নবুওয়ত লাভ করেছেন বরং বলছে, খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম (যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হবে)। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

দলিল ১২ :

খণ্ডনমূলক উত্তর এখানে

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ নামে কারা সম্বোধন করত এবং কেন করত?

0

মক্কার মুশরিকরা রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনে আবি কাবশাহ‘ কেন বলত? এর জবাব আমি আরবী ভাষার একটি ওয়েব সাইট থেকে বাংলায় অনুবাদ করে পাঠকদের উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরছি। (আরবী):

كان المشركون يطلقون على النبي صلى الله عليه وسلم (ابن أبي كبشة)، فمن أبو كبشة ؟ قيل: هو جد النبي صلى الله عليه وسلم من قبل أمه، وهو والد أمه آمنة واسمه وهب بن عبد مناف بن زهرة. وقيل: هو جد النبي صلى الله عيبه وسلم من قبل جدة أبيه، وهو والد سلمى الأنصارية الخزرجية والدة عبد المطلب، وهو ابن عمرو بن زيد بن لبيد الخزرجي. وقيل: هو الحارث بن عبد العزي السعدي زوج حليمة التي أرضعت النبي صلى الله تعالى عليه وسلم في صغره وقيل: هو “جزء بن غالب بن عامر بن الحارث بن غبشان الخزاعي”، أو “وجز بن غالب”، وهو من خزاعة ثم من بني غبشان، أحد أجداد النبي من قبل أمهاته سبب تسمية قريش النبي صلى الله عليه وسلم بأبي كبشة كان مشركو قريش يسمون النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابن أبي كبشة حين دعا إلى الله وخالف أديانهم، تشبيهاً لأبي كبشة (وجز بن غالب)، الذي خالف قريشاً في عبادة الأوثان فعبد الشعر (والشعرى هو النجم المضيء الذي يخرج في شدة الحر)، فنسبوه إليه للاشتراك في مطلق المخالفة وقيل: إن قريشاً كانت تنسب النبي صلى الله عليه وسلم إلى جد غامض غير معروف تحقيراً له؛ لأن العرب كانت إذا حقرت إنساناً نسبته إلى جدٍ غامض غير معروف في الناس. والله أعلم

(বাংলা) অনুবাদ : মুশরিকরা নবী করীম (সা:)-কে ‘ইবনে আবি কাবশাহ’ বলত! তো কে সেই ‘আবু কাবশাহ’? জবাবে বলা হয় যে, কারো মতে “আবি কাবশাহ” ছিলেন নবী করীম (সা:)-এর আম্মা বিবি আমেনার বংশের দিক থেকে উনার নানা। যিনি নবী করীম (সা:)-এর আম্মা বিবি আমেনার পিতা জনাব ওয়াহাব ইবনু আব্দে মানাফ ইবনু যোহরাহ। কারো মতে, নবী করীম (সা:)-এর বাবার দাদীর বংশের দিক থেকে নবী করীম (সা:)-এর একজন পর-দাদা, যিনি আব্দুল মুত্তালিবের আম্মা জনাবা সালমা আল আনসারিয়্যাহ আল খাজরাজিয়্যাহ’র পিতা ছিলেন। তার নাম ছিল, ইবনু আমর ইবনু যায়েদ ইবনু লাবিদ আল খাজরাজী। কারো মতে, তিনি নবী করীম (সা:)-এর দুধমাতা জনাবা হালিমা’র স্বামী জনাব হারেছ ইবনু আব্দুল উজ্জা আস-সা’দিয়্যি। কারো মতে, তিনি নবী করীম (সা)-এর মাতার দিক থেকে কোনো এক দাদা ছিলেন, যার নাম, জুয ইবনু গালিব ইবনু হারিছ ইবনু গাবশান আল-খাজায়ী। অথবা জুয ইবনু গালিব যিনি বনু খাজা’আ গোত্রের এমনকি বনু গাবশান গোত্রেরও (পূর্বপুরুষ ছিলেন)। রাসূল (সা:)-কে ইবনে আবি কাবশাহ নামে নামকরণ করার কারণ এই যে, আবি কাবশাহ নামের রাসূলের পূর্বপুরুষ (পরদাদা/নানা) লোকটি কোরাইশ মুশরিকদের মূর্তিপূজার যেমন বিরোধিতা করত ঠিক তেমনি রাসূল (সা:)ও যখন মুশরিকদের আল্লাহ’র দিকে ডাকতেন এবং তাদের পৌত্তলিক ধর্মগুলোর বিরোধিতা করতেন তখন তারা তাঁকে অনুরূপ বিরোধিতার কারণে সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে ‘ইবনে আবি কাবশাহ’ (অর্থাৎ আবি কাবশাহ’র বংশধর) বলতো। [উল্লেখ্য, ‘ইবনু‘—এর আরেক অর্থ ‘বংশধর‘। যেমন, সমস্ত মানুষকে ‘বনী আদম’ তথা আদমের বংশধর বলা হয় – অনুবাদক]। কেউ কেউ বলেন, কোরাইশ মুশরিকরা একজন অপ্রসিদ্ধ ও রহস্যময় ব্যক্তির দাদা’র প্রতি সম্বোধন করে নবী করীম (সা:)-কে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে ‘ইবনু আবি কাবশাহ’ বলতো। কেননা, কোরাইশরা যখন কাউকে অপমান করতে চাইত তখন এভাবেই তাকে সম্বোধন করতো। (আল্লাহু আ’লাম।) অনুবাদ শেষ হল।

উল্লিখিত লিখাটি দ্বারা আমাদের কী ম্যাসেজ দেয়া উদ্দেশ্য?

এই বিষয়ে লিখাটি এখানে অনুবাদ করার উদ্দেশ্য হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবীকে অযৌক্তিক নয় সাব্যস্ত করার জন্য রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ বিষয়টি টেনে আনার চেষ্টা করে এবং যুক্তি দেয় যে, মির্যা কাদিয়ানী ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবী অযৌক্তিক হলে তবে রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়ার কী যুক্তি?

এর জবাব হল, প্রথমত, রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়া এটি উনার নিজের কোনো দাবী ছিল না। তিনি কখনো নিজেকে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ হওয়ার দাবী করেননি! বরং মক্কার উগ্র মুশরিকরাই উনাকে এইরকম শব্দচয়নে সম্বোধন করত! তাও ভালো উদ্দেশ্যে নয়, বরং কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যেই। অপর দিকে মির্যা কাদিয়ানী ইবনে মরিয়ম হওয়ার দাবী নিজেই করেছিল এবং সে এই দাবীর ভিত্তিতে নিজেকে হযরত ঈসা (আ:) অপেক্ষায় মর্যাদায় বড় দাবী করত। (দেখুন হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১১৯)।

দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আবু কাবশাহ নামক ব্যক্তিটি কোরাইশদের কোনো একজন পূর্বপুরুষ ও মূর্তি পূজা-বিরোধী, যার সাথে রাসূল (সা:)-এর বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই রাসূল (সা:)-কে ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ তথা আবু কাবশাহ’র বংশধর বা আবু কাবশাহ’র উত্তরসূরী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা কোনোভাবেই অযৌক্তিক ছিলনা। অপর দিকে মির্যা কাদিয়ানীর ‘ইবনে মরিয়ম’ হওয়ার দাবী সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক ছিল। কেননা তার মায়ের নাম ছিল, চেরাগ বিবি! আর তার পূর্ব পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিটির নাম ছিল মোঘল বরলাস। তিনি সম্রাট তৈমুরলং এর বংশধর। (দেখুন, আহমদ রচিত (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১)। সে হিসেবে তার ‘ইবনে তৈমুর লং’ হওয়াই যৌক্তিক ছিল!

শেষকথা, দীর্ঘ আলোচনা হতে বুঝা গেল, রাসূল (সা:)-এর ‘ইবনু আবী কাবশাহ’ এর উপর অনুমান করে মির্যার ‘ইবনে মরিয়ম’ দাবীকে কোনোভাবেই যুক্তির মানদণ্ডে উঠানো যায় না। তাই তাদের ওই সমস্ত যুক্তি পুরোপুরি বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত!

অনুবাদক ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম. এ

‘উম্মতি’ শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানীর “নবী” দাবীর গোমর ফাঁস

0

মির্যা কাদিয়ানীকে কথিত “উম্মতিনবী” মান্যকারীরা কি আমার এই ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেবেন? প্রশ্নগুলো ধারাবাহিকভাবে নিচে তুলে ধরা হল :

  • প্রশ্ন করার আগে বলে রাখা দরকার যে, আমরা যখনি মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবী করার বিষয়ে আপত্তি করি তখনি অধিকাংশ কাদিয়ানী মির্যাকে রক্ষা করতে বলে থাকেন যে, আরে না না; উনি নবী দাবী করেননি, উনি তো বরং উম্মতিনবী দাবী করেছিলেন! যার অর্থ ‘মুহাদ্দাস‘, প্রকৃত নবী নয়! তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রশ্ন হল,
লিখক, মির্যা কাদিয়ানী

১। তার মানে কি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, যিনি উম্মতিনবী হওয়ার দাবী করেন তাকে মূলত ‘নবী’ দাবীদার বলা যায় না? যদি তাই হয় তাহলে আপনাদের বইতে যে লিখা আছে “তিনি যেমন একজন উম্মতি তেমনি দায়রা-এ-মুহাম্মদীয়ার মধ্যে অবস্থান করেই একজন নবীও” (দেখুন, উম্মতিনবী ৯)। একথার অর্থ কী এই নয় যে, মির্যা সাহেব একই সাথে ‘উম্মতি’ এবং ‘নবী’ দুইয়েরই দাবীদার ছিলেন? তো এবার তিনি ‘নবী’ দাবী করেননি একথা কিভাবে বলতে পারেন? অন্যথা তাকে ‘নবী’ শব্দ বাদ দিয়ে শুধু ‘উম্মতি’ শব্দে লিখা হল না কেন? তাহলে তো সবাই বুঝে নিতেন যে, সে নবী নয়, শুধুমাত্র একজন ‘উম্মতি’!

২। আপনারা এও বলেন যে, তিনি তো শরীয়ত ওয়ালা নবী হওয়ার দাবী করেননি! আমি উত্তরে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, তাহলে প্রথমেই কেন তার ‘নবী’ দাবী অস্বীকার করেন? প্রথমেই কেন তার দাবীকে উম্মতি, বুরুজি এসব শব্দে বিশেষিত করেন? যাইহোক, তারপর রইল মির্যার দাবীর মধ্যে শরীয়তধারী হওয়াও ছিল কিনা? তার জবাবে আমি মির্যার বই থেকেই এখানে তুলে ধরছি, তিনি লিখেছেন : (ক) “শরীয়তধারী নবীকে অস্বীকার করা ব্যতীত অন্য আর কাউকে অস্বীকার করায় কেউ কাফের হবেনা, চাই সে যেই পর্যায়েরই মুলহাম বা মুহাদ্দাস হোক, কিংবা মহান আল্লাহর নিকট যেই মর্যাদারই অধিকারী হোক না কেন?” (রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৩২)। অধিকন্তু মির্যা সাহেব তার অস্বীকারকারীদের কাফের, অমুসলিম এবং জাহান্নামী আখ্যায়িত করার বহু প্রমাণ রয়েছে। তাযকিরা (উর্দু) পৃষ্ঠা নং ৫১৯; চতুর্থ এডিশন দ্রষ্টব্য। তারপরেও কি বলতে চান যে, মির্যা শরীয়তধারী নবী হওয়ার দাবী করেনি!?

তিনি অন্য জায়গায় আরো সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন : (খ) “এ ছাড়া এটিও তো চিন্তা কর শরীয়ত কী বিষয়? যিনি নিজের ওহীর মাধ্যমে কতক আদেশ ও নিষেধ বর্ণনা করেন আর স্বীয় উম্মতের জন্য নিয়মকানূন নির্ধারণ করেন তিনিই শরীয়তবাহকও হয়ে যান। সুতরাং এ সংজ্ঞার দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের বিরোধীরা অভিযুক্ত কেননা আমার ওহীতে আদেশ নিষেধ উভয়ই আছে” (দেখুন, আরবাঈন ১০০-১০১, বাংলা অনূদিত)। এখানে মির্যা কাদিয়ানী শরীয়তধারীর সংজ্ঞা দিয়েই শেষে ‘কেননা আমার ওহীতে আদেশ নিষেধ উভয়ই আছে’ উল্লেখপূর্বক নিজেকে প্রকারান্তরে শরীয়তধারীর অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করলেন কিনা? আসলে মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো আপনাদের পড়া নেই বলেই আপনারা কখনো বলেন সে নবী দাবী করেনি, কখনো বলেন শুধু উম্মতিনবী দাবী করেছিল; আবার কখনো বলেন সে শরীয়তধারী নবী দাবী করেনি। আর যখন তারও প্রমাণ দেয়া হয় তখন সত্যটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য টেনে আনেন ঈসা (আ:) এর প্রসঙ্গ; তিনি জীবিত না মৃত!

৩। আপনাদের বইতে মির্যার নবী দাবীর ব্যাখ্যায় লিখা হয় যে, তার দ্বারা ‘মুহাদ্দাস’ উদ্দেশ্য। এই দেখুন আপনাদের বইতেই লিখা আছে “পক্ষান্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে শরীয়তবিহীন ওহী একাধারে লাভ করার দাবীও বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন এবং এই ওহী প্রাপ্তির মর্যাদাকে মুহাদ্দাসিয়্যত বলে অভিহিত করেছেন” (হামামাতুল বুশরা ১৪৮; টিকা, বাংলা অনূদিত)। এখানে অন্ততপক্ষে মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ (বান্দার সাথে আল্লাহর কথোপকথন) বলে বুঝানোর প্রমাণ পাওয়া গেল! তাই এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো মুহাদ্দাসকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফের কেন হবে? তার থেকে কেউ ফিরে এলে তাকে মুরতাদ কেন বলা হবে?

৪। এখন হয়ত কেউ বলতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানী কোথায় লিখেছেন যে, তার অস্বীকারকারী ব্যক্তি অমুসলিম বা তার থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী? তার জবাব হল, মির্যা সাহেব থেকে তার বহু লেখাতে এর প্রমাণ রয়েছে। দেখুন, তাযকিরাহ (উর্দু) ৫১৯, হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) ১৩০। মির্যা কাদিয়ানী তার দীর্ঘ বিশ বছরের সঙ্গী ডাক্টার আব্দুল হাকিম খানকে তার বইয়ের বিভিন্ন স্থানে ‘মুরতাদ’ ও ‘অমুসলিম’ আখ্যা দিয়েছে শুধু এই কারণে যে, সে মির্যাকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে ত্যাগ করেছিলেন। তাই প্রশ্ন বরাবরের মতই, যার নবী দাবী হতে ভিন্ন কিছু অর্থাৎ মুহাদ্দাস উদ্দেশ্য তাকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কেন কাফের বা মুরতাদ হবে? এমতাবস্থায় আপনারা নতুন আরেকটি ধর্মমতের অনুসারী বলেই গণ্য হবেন না কেন?

৫। হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, এই উম্মতের মধ্যে মুহাদ্দাস হিসেবে একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিটি হযরত উমরই। খোদ মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও লিখা আছে যে, “আর জেনে রেখো! এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা:) এর সুন্নত ও হাদীস থেকে যা প্রমাণিত তা হলো, তিনি (সা:) বলেছেন : তোমাদের পূর্বে বনী ঈসরাইলীদের মাঝে এমন মানুষও ছিলেন যারা নবী না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’লা তাদের সাথে বাক্যলাপ করেছেন আর আমার উম্মতে যদি এমন কেউ থাকে সে হলো উমর। পুনরায় বলেছেন, তোমাদের পূর্বে যে সকল উম্মত গত হয়েছে তাদের মাঝে মুহাদ্দাসও ছিলেন। আমার এই উম্মতে যদি তাদের মতো কেউ থাকে তিনি হলেন, উমর বিন খাত্তাব।” (সহীহ বুখারী) হামামাতুল বুশরা ১৪৫-৪৬ (বাংলা অনূদিত) দ্রষ্টব্য। এখানে সহীহ বুখারীর উক্ত হাদীস এর ‘আমার উম্মতে যদি এমন কেউ থাকে সে হলো উমর’ এই কথা দ্বারা উমর (রা:) ব্যতীত এই উম্মতে আর কেউই মুহাদ্দাস হবেনা বলেই সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হল। এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানীর নবী শব্দটিকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ বলে অভিহিত করার সুযোগ কোথায়? এটি কি সরাসরি হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ নয়?

৬। তর্কের খাতিরে মানলাম যে, মির্যার নবী শব্দটির উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু তথা মুহাদ্দাসিয়্যত-ই। অধিকন্তু ‘মুহাদ্দাস‘ আর ‘নবী‘ এই দুইয়ের মাঝে অন্তর্নিহিত যোগ্যতা এবং এর কার্যকারিতার পার্থক্য থাকাটা খোদ মির্যা কাদিয়ানী নিজেও স্বীকার করে লিখে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন “আমি আমার কোনো কোনো বইয়ে লিখেছি, মুহাদ্দাসের মর্যাদা নবীর পদমর্যাদার সাথে গভীরভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই দুইয়ের মাঝে অন্তর্নিহিত যোগ্যতা এবং এর কার্যকারিতার পার্থক্য ছাড়া অন্য কোনো পার্থক্য নেই” (হামামাতুল বুশরা ১৪৬, বাংলা অনূদিত)। খেয়াল করুল, তার এই কথায় যদিও স্ববিরোধি কথার ছাপও রয়েছে তথাপি এইটুকু তো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, একজন নবী আর একজন মুহাদ্দাস, এই দুইয়ের মাঝে অন্তর্নিহিত যোগ্যতা এবং এর কার্যকারিতার পার্থক্য রয়েছে। কাজেই এই পার্থক্যের দেয়াল টপকে কিভাবে বলা যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীকৃত নবীর উদ্দেশ্য মুহাদ্দাসিয়্যত!

৭। মির্যা কাদিয়ানীর কথায় বহু স্ববিরোধ থাকা সত্ত্বেও তিনি এক জায়গায় এও লিখেছেন “যদি নবুওয়তের দ্বার রুদ্ধ না হতো তাহলে কার্যত: তিনি (অর্থাৎ মুহাদ্দাস ব্যক্তিটিও) নবীই হতেন” (হামামাতুল বুশরা ১৪৬, বাংলা অনূদিত)। এতে একদম সুস্পষ্ট হল যে, নবী আর মুহাদ্দাস ভিন্ন ভিন্ন দুই জিনিস! তাহলে মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীকে ভিন্ন কিছু বলে ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ কোথায়? কী জবাব?

৮। মির্যা কাদিয়ানীর মতে কেয়ামত পর্যন্ত আরো যে সমস্ত ‘মুহাদ্দাস’ আসবে তাদেরই মধ্য হতে সে নিজেও একজন বলে লিখে গেছেন। যেমন সে লিখেছে “আঁ হযরতের পরে এই উম্মতের জন্য কোন নবী আসবেনা, না নূতন, না পুরাতন। …তবে মুহাদ্দাস আসবে যার সঙ্গে খোদা বাক্যালাপ করেন এবং পূর্ণ নবুওয়তের কিছু গুণাবলীর তারা প্রতিছায়ারূপে অধিকারী হন এবং কোন কোন দিক দিয়ে নবুওয়তের শান ও মর্যাদার রঙ্গে রঙ্গীন হন। তাদেরই মধ্যে আমি একজন” (নিশানে আসমানী বা শাহাদাতুল মুলহামীন ৪৩ [বাংলা]; লিখক মির্যা কাদিয়ানী)। এখানে খেয়াল করুন ‘তাদেরই মধ্যে আমি একজন’ এইভাবেই উল্লেখ থাকার পরেও সেই ‘আমি’টা (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) কিভাবে লিখতে পারলেন, ‘আমিই একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি’ অর্থাৎ বুরুজি, উম্মতিনবী হিসেবে একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিটা আমিই! যেমন তারই ভাষ্য হচ্ছে – “মোটকথা খোদার ওহী ও অদৃশ্য বিষয়ের এই বিপুল অংশের জন্য এই উম্মতে আমিই একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি” (হাকীকাতুল ওহী ৩৩০, বাংলা অনূদিত)! তাই প্রশ্ন হল, তিনি যাদেরই মধ্য হতে তাদের কেউই যা হতে পারেনা তা মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে পারল? তবে কি আল্লাহতায়ালা মুহাদ্দাসদের মধ্যে এমন বৈষম্যপূর্ণ আচরণও করেন, বলবেন? নাউযুবিল্লাহ।

৯। মির্যা কাদিয়ানী এক জায়গায় ঈসা (আ:) সম্পর্কে লিখেছে “আর যেহেতু খোদাতায়ালা কাহারো আকাশে চলে যাওয়ার মত পূর্ব কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেননি তাতেই প্রমাণ হয় তাঁর আকাশে চলে যাওয়ার বিশ্বাস একটি ডাহা মিথ্যা” (মালফূযাত [উর্দু] খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৩৪০, নতুন এডিশন)। এখানে তিনি ‘পূর্ব কোনো দৃষ্টান্ত’ এইরূপ শব্দচয়নে যেই অজুহাতে ঈসা (আ:)-এর আকাশে চলে যাওয়ার বিশ্বাসকে ডাহা মিথ্যা বললেন সেই একই অজুহাতে তার নিজের কথিত উম্মতিনবী দাবীটাও কেন ডাহা মিথ্যা হবেনা? কেননা এই তথাকথিত উম্মতিনবী কোনো কালে ছিলনা, হবেও না। কী জবাব?

১০। সর্বশেষ এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনাদের বুঝার মত জ্ঞান থেকে থাকে। ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, আপনাদের বইতেই লিখা আছে “পক্ষান্তরে (মির্যা সাহেব) আল্লাহর পক্ষ থেকে শরীয়তবিহীন ওহী একাধারে লাভ করার দাবীও বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন এবং এই ওহী প্রাপ্তির মর্যাদাকে মুহাদ্দাসিয়্যত বলে অভিহিত করেছেন” (হামামাতুল বুশরা ১৪৮; টিকা, বাংলা অনূদিত)। খুব খেয়াল করুন, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীকৃত নবুওয়তকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ শব্দে অভিহিত করা হয়েছে। আর এইজন্যই তার অনুসারীরা বলতে চাচ্ছে যে, মির্যা সাহেব প্রকৃতপক্ষে নবুওয়তি ওহী লাভ করার দাবী করেননি, বরং ভিন্ন কিছু তথা মুহাদ্দাস হওয়ার দাবী করেছেন! অথচ মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও তথাকথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন যে, “মির্যা সাহেব ১৯০১ সালে নবুওয়ত সংক্রান্ত পূর্বের আকীদায় পরিবর্তন এনেছেন।” দেখুন তার বইগুলোর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম’ [উর্দু] খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৪৪। তিনি একই পৃষ্ঠায় তার প্রমাণও উল্লেখ করেছেন এই বলে যে, তাই তিনি প্রথমে নিজেকে বনী ঈসরাইলী মসীহ থেকে নিজেকে মর্যাদায় নগন্ন আখ্যা দিয়েছিলেন। যেহেতু গয়রে নবী কখনো একজন নবীর সম-মর্যাদার হতে পারেনা। কথিত মুসলেহ মওউদ আরো সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন “সুতরাং এক দিকে তার বইগুলো দ্বারা একথা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, ১৯০১ সাল থেকে তিনি নবী শব্দ বারবার ব্যবহার করেছেন আর অপরদিকে ‘তারিয়াকুল কুলুব’ (রচনাকাল ১৮৯৯সাল)’র পরে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, তিনি নবুওয়ত সম্পর্কে আপনা আকীদায় পরিবর্তন এনেছেন। অতএব সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, ১৯০১ সালের পূর্বে তিনি যে সমস্ত স্থানে নবী হওয়া অস্বীকার করেছেন তা বর্তমানে মানসূখ তথা রহিত হয়ে গেছে। তাই সেগুলো দ্বারা এখন দলিল পেশ করা ভুল হবে।” দেখুন, তার বইগুলোর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম’ [উর্দু] খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৪৫। সেযাইহোক, আপনারা মির্যার নবী শব্দকে ‘মুহাদ্দাসিয়্যত’ বলে অভিহিত করাটাও বর্তমানে রহিত হয়ে গেছে মর্মে খোদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নিজেই বলতেছেন! তারপরেও কি বলতে চান যে, না না, মির্যা সাহেব নবী বলে ভিন্ন ধরণের কিছু অর্থাৎ মুহাদ্দাস হওয়ার দাবীই করেছেন!! আফসোস! একজন নবুওয়ত দাবীদার কিভাবে এমন বহুরূপী হতে পারে তা সত্যিই অবাককরা বিষয়!

পরিশেষে প্রমাণিত হয়েছে যে, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীকৃত নবী শব্দকে আপনারা উম্মতি বুরুজি কিংবা জিল্লি যত শব্দেই বিশেষিত করেননা কেন, তাকে কোনোভাবেই হালাল করা যাবেনা! সে যে নবুওয়তের দাবী করে মুসাইলামা কাজ্জাবেরই শিষ্যত্ব বরণ করেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। নতুবা উপরের প্রশ্নগুলোর কী জবাব? শেষমেষ হয়ত বলবেন, যে যাই বলুক, মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীটাই সঠিক! তা যে অর্থেই হোক; উম্মতি নবী হোক অথবা প্রকৃত নবী হোক। তার উত্তরে আমি বলব, আপনার বিশ্বাস আপনার সাথে তাতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। তবে আমার আপত্তি শুধু এক জায়গায়, তা হল আপনাদের প্রকৃত ধর্ম-বিশ্বাস যখন এইরূপই তখন কিজন্য সাধারণ মানুষদের এগুলো বলেন না? নিজেদের রিয়েল আইডেন্টিটি তথা প্রকৃত পরিচয় গোপন করে কেন প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষদের ধোকা দিতে বলেন যে, আহমদী আর অ-আহমদীদের মাঝে পার্থক্য শুধু এটাই যে, আগমনকারী ইমাম মাহদীকে আমরা মেনে নিয়েছি আর অ-আহমদীরা মনে করে সেই ইমাম মাহদী এখনো আসেনি! হায় হায়!! একি জঘন্য ধোকাবাজি কথা! সবাইকে ধন্যবাদ। লিখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

(সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট গুলোর স্ক্রিনশট লাগলে দেয়া যাবে)

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কুরআন শরীফের এক জায়গায় ‘মরিয়ম’ শব্দের সর্বনাম পদ পুংলিঙ্গ বাচক হল কেন?

0
  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কুরআন শরীফের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যার অন্তরালে নিজের “বিবি মরিয়ম” দাবী কিভাবে হালাল করার চেষ্টা করেছিল জেনে নিন!!

পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাহরীম এর মধ্যে আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন :

وَ مَرۡیَمَ ابۡنَتَ عِمۡرٰنَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ صَدَّقَتۡ بِکَلِمٰتِ رَبِّہَا وَ کُتُبِہٖ وَ کَانَتۡ مِنَ الۡقٰنِتِیۡنَ

উচ্চারণ : ওয়া মারইয়ামাবনাতা ‘ইমরা-নাল্লাতীআহসানাত ফারজাহা-ফানাফাখনা-ফীহি মিররূহিনাওয়া সাদ্দাকাত বিকালিমা-তি রাব্বিহা-ওয়া কুতুবিহী ওয়া কা-নাত মিনাল কা-নিতীন।

অর্থাৎ (আল্লাহ আরো উদাহরণ পেশ করেন) ইমরান কন্যা মরিয়মের, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম। আর সে তার রবের বাণীসমূহ ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যতা স্বীকার করেছিল এবং সে ছিল অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (আত-তাহরীম/৬৬:১২)।

আয়াতের ‘ফানাফাখনা-ফীহি‘-তে “মরিয়ম” শব্দের জন্য পুং লিঙ্গ বাচক সর্বনাম উল্লেখ করার ব্যাখ্যায় মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, এই থেকে উদ্দেশ্য হল, সমস্ত মুমিন “মরিয়মী” গুণ অর্জনকারী হিসেবে রূপক অর্থে তারা সবাই ‘বিবি মরিয়ম’-ও। ফলে আয়াত (৩:৩৬) অনুসারে “বিবি মরিয়ম” এর ন্যায় তারা প্রত্যেকে শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে! মির্যার উক্ত মনগড়া ব্যাখ্যার জবাবে বলা হবে যে,

আলোচ্য আয়াতে সর্বনামপদ পুং লিঙ্গ নেয়ার আগে তো “আল্লাতী” (الَّتِیۡۤ) স্ত্রীবাচক ইসমে মওছূল-ও নেয়া হয়েছে। এখানে কী বলবেন?

সূরা আত তাহরীম /৬৬ঃ১২

সেযাইহোক আয়াতটিতে সর্বনামপদ পুং লিঙ্গ নেয়ার কারণ হচ্ছে, “মরিয়ম” শব্দটি শব্দগত (লফজী) দিক থেকে পুং লিঙ্গ যদিও বা বিধানগত (মা’নবী) দিক থেকে সেটি স্ত্রী লিঙ্গ। অনুরূপ কোনো একটি শব্দ পবিত্র কুরআনের মধ্যে শব্দগত পুং লিঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও বিধানগত (মা’নবী) স্ত্রী লিঙ্গ হওয়াতে সেটি স্ত্রীবাচক ক্রিয়াপদ দ্বারাও ব্যবহৃত হওয়া প্রমাণিত। যেমন – লাং তামাচ্ছাহুন না-রু ইল্লা আইয়্যামাম মা’দূদা-ত (সূরা আলে ইমরান ২৪)। এখানে “আইয়্যাম” শব্দটি শব্দগত পুং লিঙ্গ কিন্তু বিধানগত স্ত্রী লিঙ্গ (যেমনিভাবে মরিয়ম শব্দটি শব্দগত পুং লিঙ্গ কিন্তু বিধানগত স্ত্রী লিঙ্গ।) তাই এই থেকে এমন কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করা যাবেনা যে, সমস্ত মুমিন ‘মরিয়মী’ গুণ অর্জনকারী বলেই তারাও শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে! পরন্তু এইধরণের ব্যাখ্যা শুধুই তাহরীফ (বিকৃতি) নয়, রীতিমত হাস্যকর-ও।

এবার তাহলে প্রশ্ন হতে পারে যে, মরিয়ম (আ:)-কে তাঁর জন্মমুহূর্তে শয়তান কেন স্পর্শ করতে পারেনি। উত্তরে বলা হবে, হযরত মরিয়ম (আ:)-এর মাতার বিশেষ দোয়ার কারণেই আল্লাহতায়ালা তাঁকে এবং তাঁর সন্তানকে শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য, ইন্নী ও’ঈযুহা বিকা ওয়া যুররিয়্যাতাহা মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম (০৩:৩৬)। অর্থাৎ আমি তোমার নিকট তাঁর এবং তাঁর সন্তানের ব্যাপারে শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি।

এবার বাকি থাকল, মরিয়ম আর তার সন্তান ব্যতীত অন্যান্য নবীগণও শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা পেয়েছেন কিনা? উত্তর হল, জ্বী হ্যাঁ। কেননা পবিত্র কুরআনের ভাষ্য (২১:১০১) অনুসারে নবীগণের প্রত্যেকের জন্য পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত। তাই তাঁরা আল্লাহর বিশেষ হেফাজতের চাদরে আবৃত। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। তাই শয়তানের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় যে, সেই অনুগ্রহের চাদর ভেদ করে অভ্যন্তরে ঢুকবে এবং তাঁদের স্পর্শ করে আল্লাহ’র উপর জয়লাভ করবে! সুতরাং রাসূল (সা:) সহ আরো যারা শয়তানের স্পর্শতা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তারা কথিত “মরিয়মী” গুণেগুনান্বিত হয়ে নয়, বরং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের চাদরে আবৃত থাকার মু’জিজার কারণেই। অধিকন্তু “মরিয়ম” শব্দটি কুরআনের প্রায় সকল জায়গায় স্ত্রীবাচক শব্দেও এসেছে। যেমন “ইয়া মারইয়ামুক্বনুতী লি-রাব্বিকে ওয়াসজুদী ওয়ারক্বা’ঈ মা’আর রাকি’ঈন” (সূরা আলে ইমরান ৪৩)। এখানে “যের যুক্ত কাফ [কে]” স্ত্রী বাচক সর্বনাম পদ হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ মরিয়ম (আ:) সম্পর্কে বলেছেন, “ওয়াসত্বফাকে আ’লা নিসা-ইল আ’লামীন” অর্থাৎ তিনি [আল্লাহ] তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত নারীর উপর মনোনীত করেছেন। তাই এবার কাদিয়ানীদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনাদের এসমস্ত অপব্যাখ্যা মতে মির্যা সহ যারাই “মরিয়ম” হবে তারা কি দুনিয়ার নারীদের উপর মনোনীত হওয়ার সেই শ্রেষ্ঠত্বও লাভ করবে?

মজার ব্যাপার হল, সূরা মরিয়ম এর ৫৫ নং আয়াতে ইসমাইল (আ:) সম্পর্কে এসেছে “ওয়া কা-না ইন্দা রাব্বিহি মারদ্বিয়্যাহ” অর্থাৎ সে ছিল তাঁর প্রভুর নিকট সন্তোষপ্রাপ্ত। তো এর মানে কি অন্য নবীগণ আল্লাহর নিকট সন্তোষপ্রাপ্ত ছিলেন না? নতুবা কুরআনে “মারদ্বিয়্যা” শব্দটি শুধুমাত্র ইসমাইল (আ:)-এর জন্য বিশেষভাবে কিজন্য ব্যবহৃত হল? ভাবিয়ে তুলে কিনা??

অতএব মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে “বিবি মরিয়ম” দাবী করার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কুরআনের আয়াতকে যেভাবে ইচ্ছেমত বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে গেছে অনুরূপ গত চৌদ্দশত বছর থেকে আর কোনো বরেণ্য তাফসীরকারক থেকে প্রমাণিত নয় বলে তার কৃত ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক কথাবার্তা সর্বান্তকরণে পরিত্যাজ্য। যেজন্য মির্যা আর মির্যায়ী উম্মত ভন্ড, মুরতাদ এবং জিন্দিক বলেই প্রমাণিত। আশাকরি জবাব পেয়েছেন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

১৮৯৪ সালে সংঘটিত চন্দ্র সূর্যগ্রহণ কি কাদিয়ান থেকেও দেখা গেছে?

3

প্রশ্নকর্তা : মাহদীয়তের আলামত একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হওয়া, এটি রাসূল (সা:) থেকে কিংবা কোনো সাহাবী থেকে বর্ণিত কোনো হাদীস? তাছাড়া ৬ ই এপ্রিল ১৮৯৪ সালে সংঘটিত গ্রহণ কাদিয়ান থেকেও দৃশ্যমান হওয়ার দাবীটা কতটুকু সত্য?

উত্তরদাতা : প্রথমত, মাহদীয়তের আলামত হিসেবে হাদীস নামক বর্ণনাটি ‘দারে কুতনী’ নামক হাদীসের একটি কিতাবে পাওয়া যায়। যেটি রাসূল (সাঃ)-এর কথা নয়, কোনো সাহাবীরও কথা নয়। হ্যাঁ এটি মুহাম্মদ বিন আলী বিন হোসাইন-এর নিজের একখানা বক্তব্য (তিনি আবূ জা’ফর আল-বাকের নামেও পরিচিত)। ‘দারে কুতনী’ কিতাবটির “বাবুল ছিফাতি সালাতিল খুসূফ” শীর্ষক পৃষ্ঠাটি খুলে দেখুন, সেখানেই দেখতে পাবেন যে, হাদীসটির সনদ (ধারাবাহিক সূত্র) মুহাম্মদ বিন আলী (রহঃ) পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায়।

দ্বিতীয়ত, বর্ণনাটি বহু কারণে দলিল প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তার কারণ ইমাম বাকের এর নামে যেই সূত্রে (সনদ) এটি বর্ণিত হয়েছে সেটির Chain of narration তথা বর্ণনাসূত্র মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল। এ সম্পর্কে প্রমাণ্য কিছু উক্তি নিম্নরূপ –

  • আমর ইবনে শামির : ইমাম ইবনে হাব্বান (রহ:) তিনি এর একজন রাবী তথা বর্ণনাকারী ‘আমর ইবনে শামির’-কে “শীয়া” আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই লোক রাসূল (সা:)-এর সাহাবীদের গালমন্দ করত। দেখুন ইবনে হাব্বান (রহ:) রচিত ‘আল-মাজরূহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন’। বিস্তারিত দেখুন ইমাম যাহাবী (রহ:) রচিত ‘মীযানুল ইতিদাল’ খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ২৬২।

ইমাম নাসাঈ (রহ:) ‘আদ-দ্বু’আফা ওয়াল মাতরূকীন’ কিতাবে লিখেছেন, এই ব্যক্তি মাতরূকুল হাদীস তথা হাদীসের জগতে পরিত্যাজ্য। ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রহ:) এবং ইমাম বুখারী (রহ:) উনারাও বলেছেন, এই লোক মুনকারুল হাদীস তথা হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। (দেখুন, ‘তালখিছুল মুসতাদরিক’ খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ২৪৬)।

এখানে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানী (রহঃ) রচিত ‘লিসানুল মীযান’ এর উদ্ধৃতি পেশ করছি। তিনি লিখেছেন : عمرو بن شمر الجعفي الكوفي الشيعي أبو عبد الله عن جعفر بن محمد وجابر الجعفي والأعشم روى عباس عن يحيى ليس بشيء وقال الجوزجاني زائغ كذاب وقال بن حبان رافضي يشتم الصحابة ويروي الموضوعات عن الثقات وقال البخاري منكر الحديث قال يحيى لا يكتب حديثه অর্থাৎ আমর ইবনে শামির (রাবী নং ১০৭৫) সে একজন শীয়া রাবী, সঙ্কীর্ণমনা, চরম মিথ্যাবাদী, রাফেজি, সাহাবাদের গালমন্দকারী, বিশ্বস্ত রাবীদের নাম ভেঙ্গে জাল হাদীস বর্ণনাকারী, মুনকারুল হাদীস, তার হাদীস লেখাযোগ্য নয় ইত্যাদি। অতএব, জ্ঞানীদের নিকট এখন আর গোপন থাকেনি যে, সূত্রে অবস্থিত এমন একজন রাবী তথা বর্ণনাকারী সম্পর্কে এইরকম ৮ প্রকারের জরাহ (আপত্তি) উল্লেখ থাকার পরে এটি কোনোভাবেই আর গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা!

  • জাবের আল-জা’ফী : সনদের আরেকজন রাবী হচ্ছেন, জাবের আল-জা’ফী (মৃত : ১২৮ হিজরী)। ইমাম ইবনে হাব্বান (রহঃ) বলেছেন, এই ব্যক্তি ইহুদী বংশোদ্ভূত আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা এর দলভুক্ত ছিল। সে হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে পুনঃজন্ম হবার আকীদা রাখত। সে বলত, আলী দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার জন্মিবেন । ইবনে হাব্বান রচিত ‘আল-মাজরূহীন, বাবুল আঈন দ্রষ্টব্য। (দেখুন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) রচিত ‘তাহযীবুত তাহযীব’ খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ২৮৫) ।

ইমাম সুফিয়ান আস সাওরী, ইমাম হুমাইদী, ইমাম বুখারী, ইমাম মুহাম্মদ বিন সালমান বিন ফারিস প্রমুখ সবাই বলেছেন, এই ব্যক্তি “পুনঃজন্ম” মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। আর ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) তার সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমি জাবের আল-জা’ফী অপেক্ষা অতি মিথ্যাবাদী আর কাউকে দেখিনি।” (দেখুন, ইবনে আবী আদী রচিত ‘আল কামিল ফী দ্বু’আফায়ির রিজাল’ খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ১১৩)। এখন নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে বলুন তো এই ধরণের বর্ণনা কিরূপে দলিলপ্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে? সব চেয়ে বড় কথা হল, এটি না রাসূল (সাঃ)-এর বক্তব্য আর না কোনো সাহাবীর বক্তব্য; কারোর-ই বক্তব্য নয়।

তৃতীয়ত, তর্কের খাতিরে রেওয়ায়েতটি কিছুক্ষণের জন্য যদি সঠিক মেনে নিই, তবুও বিপত্তি থেকেই যায়। কারণ, বর্ণনাটির ভাষ্য হল “ইন্না লি-মাহদীনা আয়াতাঈনি লাম তাকূনা মুনযু খালক্বিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি”। ‘দারেকুতনী’র উল্লিখিত বর্ণনাটিতে পরিষ্কার লেখা আছে “আমাদের মাহদীর দুটি আলামত বা নিদর্শন এমন রয়েছে যা নভোমণ্ডল আর ভূমন্ডলের জীবন ইতিহাসে সংগঠিত হয়নি”। এবার লক্ষ্য করুন। যে দুটি নিদর্শন (একই রমযানে চন্দ্র এবং সূর্যগ্রহণ লাগা)—’র কথা বলা হচ্ছে সেটি যেন এইরূপ নিদর্শন যা ইতিপূর্বে আর কখনো সংঘটিত হয়েছে – এমন না।

অথচ ইতিহাস সাক্ষী, একই রমযানে চন্দ্রসূর্য গ্রহণ লাগার ঘটনা শত-সহস্রবার ঘটেছে। আপনি Encyclopedia of Britannica ছাড়াও আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ওয়েব সাইটে গিয়েও দেখতে পারেন, সেখানে ‘গ্রহণ’ সম্পর্কে গবেষণাধর্মী বেশ কিছু তথ্য পাবেন। খ্রিস্টপূর্ব ৭৬৩ বছর থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬৬৪ বছর অব্ধি চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের উপর বিশদ তথ্য-উপাত্ত দেখতে পাবেন। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ব্রিটানিকা দাবী করেছে, প্রত্যেক ২২৩ বছর পরপর এইরূপ “গ্রহণ” এর পুনঃবৃত্তি বহুলাংশে ঘটে থাকে। ইতিপূর্বে এই ‘গ্রহণ’ যেই মাসে, যেই পদ্ধতিতে এবং যেই সময়টিতে হয়েছিল পরবর্তী ২২৩ বছর পরেও সেটি অভিন্ন নিয়মে ঘটে থাকবে। এই হিসেবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, গত অষ্টাদশ শতাব্দীতে হিজরীর ১২৬৭ (১৮৫১ইং) হতে হিজরী ১৩১২ এর ভেতর মাত্র (১৩১২-১২৬৭) পয়তাল্লিশ বছরের ব্যবধানে একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনা পাঁচবার (০৫) ঘটেছিল।

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পাক্ষিক আহমদী সাময়িকির ১৫ই এপ্রিল ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যাতেও একথাগুলো উল্লেখ আছে। নিচে দেখুন-

(ক) ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে (১২৬৭ হিজরী মুতাবেক) চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সে সময় চন্দ্রগ্রহণ হয় ১৩ই জুলাই এবং সূর্যগ্রহণ হয় ২৮ই জুলাই। তখন একমাত্র মাহদী দাবীদার ছিলেন ইরান বংশোদ্ভূত বাহায়ী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আলী মুহাম্মদ বাব। তার মাহদীয়ত দাবির ৫ বছর পরেই এটি সংঘটিত হয়। কারণ তিনি ১৮৪৮ সালে নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করেন। মজার ব্যাপার হল, সেই শতাব্দীতে মুহাম্মদ আহমদ সুদানী (সুদান, আফ্রিকা) সাহেবও মাহদী দাবী করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে। তার বয়স যখন ২৮ বছরে পদার্পণ করে তখনো ১২৮৯ হিজরীতে (১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দ) একই রমযানে উভয়গ্রহণ সংঘটিত হয়। তেমনি পরের বছরও ১২৯০ হিজরীতে (১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দ) উভয়গ্রহণ আবার সংঘটিত হয়। কিন্তু সেই সময় মাহদী দাবিদার কেউ ছিলনা। তবে হ্যাঁ পরবর্তীতে ১৮৮১ সালে তথা উভয়গ্রহণ সংঘটিত হবার পরবর্তী আট (৮) বছরের মাথায় মুহাম্মদ আহমদ সুদানী সাহেব নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করেন। সেই সময় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছিলেন মাত্র ১২ বছরের কিশোর। এ পর্যন্ত গ্রহণের তিনবারের তথ্য পাওয়া গেল।

(খ) তারপর ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে চন্দ্রগ্রহণ হয় ২১ই মার্চ এবং সূর্যগ্রহণ হয় ৬ই এপ্রিল। তখন মাহদী দাবীদার ছিলেন ভারতের পাঞ্জাবের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীএই সময় সূর্যগ্রহণ এশিয়ার নানা দেশসহ ভারতের নানা স্থান থেকে সামান্য দৃশ্যমান হলেও পাঞ্জাব (কাদিয়ান) থেকে সেটি মোটেও দৃশ্যমান ছিলনা। এটি আমার মুখের কথায় নয়, বরং নাসার বিজ্ঞানীদের ওয়েবসাইটে এইরকমই উল্লেখ পাওয়া যায়। (নাসার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মানচিত্র দুটি দেখুন)। Click in here

(গ) তারপর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ১১ই মার্চ চন্দ্রগ্রহণ হয় আর সূর্যগ্রহণ হয় ২৬ই মার্চ। সে সময় আমেরিকা বংশোদ্ভূত মিস্টার জোহন আলেকজান্ডার ডুঈ (মৃত ১৯০৭ ইং) সাহেব ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে নিজেকে মসীহ মওউদের অগ্রদূত বলে দাবী করেন। এই পর্যায় মিস্টার ডুঈ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী একথা ঠিক, কিন্তু আমার কথা সেখানে না; কথা হল, একই রমযানে উভয় গ্রহণ ১৮৯৫ সালেও সংঘটিত হওয়াতে কি পরিষ্কার হয়ে গেল না যে, এটি প্রকৃতির সাধারণ নিয়মই বটে, কোনো নিদর্শন তিদর্শন এগুলা কিচ্ছুনা !? নইলে প্রশ্ন আসবে,

(১) উক্ত গ্রহণ দুটি প্রকৃতপক্ষেই মাহদীয়তের বিশেষ কোনো নিদর্শন হলে তখন এইধরণের কোনো হাদীস সরাসরি রাসূল (সা:) কিংবা কোনো সাহাবী থেকেও কী কারণে বর্ণিত হয়নি?

(২) আরো প্রশ্ন আসবে, দারে কুতনী নামক কিতাবের বর্ণনাটির ভাষ্যমতে : آيتين لم تكونا (আয়াতাঈনি লাম তাকূনা) অর্থাৎ এই দুটি এমন নিদর্শন যা (ইতিপূর্বে আর) সংঘটিত হয়নি’- তাহলে রাসূল (সা:) এর যুগ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এটি কম করে হলেও প্রায় ১০৯ বার কী কারণে সংঘটিত হল? যদিও বা নাসা’র বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে আজ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক এই ধরণের গ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। এখন এর কী জবাব?

উল্লেখ্য, তাকূনা (تكونا) শব্দটি দ্বিবাচক স্ত্রীলিঙ্গ ক্রিয়াপদ। তার কারণ, তাকূনা শব্দটির মুবতাদা (উদ্দেশ্য/Subject) হচ্ছে (শুরুতে লাম হরফে যর-র কারণে যের এর অবস্থায়) ‘আইয়াতাঈনি’ (آيتين); যেটির বচন ও লিঙ্গও যথাক্রমে, দ্বিবাচক স্ত্রীলিঙ্গ। অতএব কাদিয়ানীরা শব্দটির ভুলভাল বিশ্লেষণ দিয়ে নিজেদের অবোধ অনুসারীদের বোকা বানাতে চাওয়ায় এখন তাদেরকে অনতিবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিত! আল্লাহ সবাইকে কথাগুলো নিরপেক্ষতার সাথে ভেবে দেখার তাওফিক দিন, আমীন!!

  • লিখাটি লাইক/শেয়ার/কপি করে প্রচার করুন! অথবা আরো কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে কমেন্টে নক করুন!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

সূরা আত তাকভীরের মধ্যে কি ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্ব লক্ষণ রয়েছে?

0

প্রশ্নকর্তা : সূরা আত তাকভীর এর আয়াত নং ১ হতে ১১ -তে কী আছে? কাদিয়ানীদের দাবী, আয়াতগুলো নাকি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের যুগ লক্ষণ ও আলামত সম্পর্কিত? জানতে চাই!

উত্তরদাতা : আমরা মুসলমানগণ বিশ্বাস করি যে, কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে ইমাম মাহদী জন্ম নেবেন। তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে পবিত্র মক্কায় হজ্জের সময়। তিনি প্রথম বয়াত নেবেন মক্কায় রুকন ও মাক্বামে ইবরাহিমের মধ্যবর্তী জায়গায়। এভাবে আরো বেশকিছু পরিচিতি পাওয়া যায়। আর এগুলো শুধুমাত্র পবিত্র হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত।

কিন্তু অনলাইনে জনৈক কাদিয়ানী মুরিদ (আব্দুল মাবুদ, চট্টগ্রাম) দাবী করে বললেন যে, সূরা আত তাকভীরের মধ্যে নাকি হযরত ইমাম মাহদীর আগমনী লক্ষণ ও ভবিষৎবাণী এসেছে! যেগুলোর প্রতিটি লক্ষণই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদ (মৃত : ১৯০৮ইং)’র মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে গেছে। নিচে তার অভিব্যক্তিগুলো পড়ে দেখুন –

  • “নূরুন্নবী ভাই (আমাকে লক্ষ্য করে) আপনাকে আগেও বলেছি, যুগের মাহদী (তথা মির্যা কাদিয়ানী)কে না মানার কারণে আপনি ঈমানহারা, আপনার অন্তরচক্ষু অন্ধ। আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চান। আল্লাহ আপনার অন্তরচক্ষু খুলে দেবেন। আপনাকে একটি প্রশ্ন করি, সূরা আত তাকভীর এর আলোকে মাহদীর আসার আলামতকাল গত হয়ে গেছে (আরো) ১৩০ বৎসর আগে। (তাই) আপনি যদি বলেন মাহদী আসে নাই, তাহলে তো আপনি কুরআনকেই মিথ্যাবাদী বানালেন। আপনি অমুকে কী তাফসীর করছে, তমুকে কী তাফসীর করছে; ইহা না দেইখা নিজে কুরআনকে গবেষণামূলক পড়েন । কুরআন নিজেই আপনাকে পথ দেখাবে….।”

এবার সূরা আত তাকভীরে এমন কী আছে তা দেখা যাক,

প্রিয় পাঠক! আমি এখানে সূরাটির ১ থেকে ১১ নং আয়াতগুলো অনুবাদসহ তুলে ধরছি। আমার নিকট দীর্ঘ পড়াশোনা দ্বারা মনে হয়েছে যে, পুরো সূরাটির বিষয়বস্তু কেয়ামত সংঘটিত হওয়া মুহূর্তের ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কিত। সংক্ষেপে দুচারটে বলছি। আয়াতের প্রথমেই এসেছে, ইযাশ শামছু কু’ভিরাত (আরবী : إذا الشمس كورت)….এখানে “তাকভীর” (تكوير) এর এক অর্থ – জ্যোতিহীন হওয়া। হযরত হাসান বছরী (রহ.) এই তাফসীর করেছেন। এর অপর অর্থ নিক্ষেপ করাও হয়ে থাকে। হযরত রবী ইবনে খায়সাম (রহ.) এই তাফসীর করেছেন। আয়াতের তাৎপর্য এই যে, সূর্যকে সমুদ্রে দুমড়ে মুষড়ে নিক্ষেপ করা হবে এবং সূর্যের উত্তাপে সারা সমুদ্র অগ্নিতে পরিণত হবে। দুই তাফসীরই সঠিক। কেননা, এটা সম্ভবপর যে, প্রথমে সূর্যকে জ্যোতিহীন করে দেয়া হবে, অত:পর সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে (তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন দ্রষ্টব্য)। এখন আমার প্রশ্ন হল, সূর্য জ্যোতিহীন হওয়া এবং সমুদ্রে দুমড়ে মুষড়ে নিক্ষেপ করা এসব কিভাবে ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্বলক্ষণ হতে পারে? তখন তো পুরোদস্তুর কেয়ামতের মহাপ্রলয় ঘটতে থাকবে। প্রাণীকুল নাস্তনাবুদ হতে থাকবে। তো এগুলো ইমাম মাহদীর লক্ষণ হলে ইমাম মাহদী ওই সময় এসে কী করবেন? জনমানবশূন্য আর ধ্বংসাবশেষ দুনিয়াতে ইমাম মাহদীর কাজ কী? জ্ঞানীদের একথা গুলো ভাবিয়ে তুলবে কিনা? সহীহ বুখারীতেও আবু হোরায়রা (রা.) এর রেওয়ায়েতক্রমে রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন চন্দ্র সূর্য সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হবে। যাইহোক, হাদীস শরীফের আলোকে এভাবে যতই ঘেঁটে দেখতে চাইবেন ততই সূরা আত তাকভীরের প্রকৃত বিষয় আপনার সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তাই একেবারে নিশ্চিত হয়েই বলতে পারি, সূরাটির আলোচ্য বিষয়ের সাথে ইমাম মাহদীর আগমনী পূর্বলক্ষণ কিংবা মির্যা কাদিয়ানীর অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়ার সাথে বিন্দুবিসর্গ সম্পর্কও নেই। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি রূপকের কাসুন্দি করে কিবা গাঁজাখুরি ব্যাখ্যা দিয়ে মির্যা কাদিয়ানীকে সূরা আত তাকভীরের আয়াতগুলোতে খোঁজে পাওয়ার দাবী করে সেটি ভিন্নকথা।

  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়ত ও রেসালতের দাবী করার ডকুমেন্ট তারই লেখিত পুস্তক হতে Click in here

প্রিয় পাঠক! লেখার কলেবর সংক্ষেপ রাখতে এতটুকুতেই চলমান আলোচনার ইতি টানছি। আলোচ্য আয়াতগুলো অনুবাদসহ তুলে দিলাম।

إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
01

যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে,

وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
02

যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,

وَإِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ
03

যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে,

وَإِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ
04

যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে;

وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
05

যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে,

وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ
06

যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,

وَإِذَا النُّفُوسُ زُوِّجَتْ
07

যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে,

وَإِذَا الْمَوْؤُودَةُ سُئِلَتْ
08

যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,

بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ
09

কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?

وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
10

যখন আমলনামা খোলা হবে,

وَإِذَا السَّمَاء كُشِطَتْ
11

যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে। (আয়াতগুলোর বিশ্লেষণ পড়ুন)।

শেষকথা, তারা কিভাবে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানায় তা এবার ভালোভাবেই বুঝে নিন! বিচারের ভার আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।

লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইমাম মাহদী একজন ‘জমিদার বংশীয়’ হবেন এটি কি হাদীস?

0

ইমাম মাহদী জমিদার বংশীয় হবেন, বিপাশা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত ‘কাদিয়ান’ গ্রাম থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন, বলিয়া হাদীসের নামে কাদিয়ানীদের প্রতারণার জবাব:

প্রশ্নকর্তা : হাদীসের কোথাও ইমাম মাহদী একজন ‘জমিদার বংশীয়’ হবেন এইরূপ উল্লেখ আছে কি?

উত্তরদাতা : না, এইরূপ কোনো হাদীস খোঁজে পাওয়া যায়না। তবে নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীদের বইতে এই ধরণের অনেক কিছুই উল্লেখ আছে, যা ভুল এবং বানোয়াট। মূলত তারা হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে নিজেদের ভুল অনুবাদ থেকেই এই রকমটি মনে করে থাকে। এবার জেনে নেয়া যাক, হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসটিতে এমন কী উল্লেখ আছে! হাদীসে একটি শব্দ এসেছে ‘হারিছ হাররাছ’। তাই প্রশ্ন আসবে, এই ‘হারিছ হাররাছ’টা কে? জবাবে বলা হবে যে, সুনানে আবুদাউদ এর “কিতাবুল মাহদী” অংশে একই বর্ণনাকারী থেকে হাদীসটির আরবী ইবারত ( Text) দেখলে বুঝা যায় ওই হারিছ হাররাছ নামীয় ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি ওই সময়ে আত্মপ্রকাশকারী হযরত ইমাম মাহদীর সাহায্যে “ওরায়ুন্নাহার তথা মধ্য এশিয়া” থেকে সৈন্যসামন্ত নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে আসবেন। তার পূর্ণ নাম হবে হারিছ বিন হাররাছ (الحارث بن حراث) তথা হাররাছ এর পুত্র হারিছ। এবার অনুবাদসহ সংশ্লিষ্ট হাদীসটি নিচে দেখুন! হাদীস :

قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏: يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ النَّهْرِ يُقَالُ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ عَلَى مُقَدِّمَتِهِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ مَنْصُورٌ يُوَطِّئُ أَوْ يُمَكِّنُ لآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا مَكَّنَتْ قُرَيْشٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ ‏.‏ أَوْ قَالَ إِجَابَتُهُ ‏

অর্থাৎ : রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন “ওরায়ুন্নাহার তথা মধ্য এশিয়া থেকে হারিছ বিন হাররাছ (الحارث بن حراث) নামীয় এক ব্যক্তি বের হবে। তাঁর আগে “মানছুর” নামের অপর এক ব্যক্তি বের হবে। তিনি মুহাম্মদ (এখানে মুহাম্মদ বলতে ইমাম মাহদীকে বুঝানো উদ্দেশ্য। কেননা তার নাম মুহাম্মদ হবে)-এর অনুসারীর সাহায্যে এসে (বাহিনীতে) মিলিত হবেন ও তাঁকে শক্তিশালী করবেন; যেইরূপ কুরাইশরা রাসূল (সা:)-কে সাহায্য করেছিলো। (সেই সময়কার) সকল মুমিনের উচিত তাঁকে (ইমাম মাহদীকে) সাহায্য করা এবং তাঁর আহবানে সাড়া দেয়া।” রেফারেন্স, আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী, হা/৪২৪০ [ইফা]; আরো দেখুন, ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) রচিত ‘আল আ’রফুল ওয়ারদী ফী আখবারিল মাহদী’ পৃষ্ঠা নং ২৭-২৮। (অনুবাদ শেষ হল)। হাদীসের মান, জঈফ।

وراء النهر ‘ওরাউন নাহার’ এর ভৌগোলিক সীমারেখা দেখুন ক্লিক

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! সুনানে আবুদাউদ শরীফের এই হাদীস দ্বারা একদম পরিষ্কার হয়ে গেল যে, হারিছ হাররাছ এটি হারিছ ইবনে হাররাছ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। মূলত হারিছের পুত্র হাররাছ-এরূপই বুঝানো উদ্দেশ্য। এবার ‘ওরায়ুন্নাহার’ এর ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিন!

  • ওরায়ুন্নাহার (Wa’raun Nahar) এর ভৌগলিক পরিচয় :

ওরায়ুন্নাহার (ইংরেজি : Central Asia) হল, মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ (বিশেষত, সমরকন্দ, বুখারা, তিরমিয, তাসখন্দ ইত্যাদি)’র ভূ-বেষ্টিত এলাকা! অঞ্চলটির সীমানার অনেকগুলো সংজ্ঞা আছে, যার কোনোটিই পুরোপুরি সর্বজনগৃহীত নয়। ঐতিহাসিকভাবে অঞ্চলটি বিভিন্ন যাযাবর জাতি ও সিল্ক রোডের সাথে সম্পর্কিত। ফলে অঞ্চলটি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জাতি, দ্রব্য ও সাংস্কৃতিক ধারণাসমূহের আদানপ্রদানের অঞ্চল হিসেবে কাজ করেছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আছে কাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, এবং অন্যান্য ছোট ছোট রাষ্ট্র যেমন – আজারবাইজান (কাস্পিয়ান সাগরের অপর পাড়ে অবস্থিত)। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকেও অনেক সময় এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)।

আপনি গুগলে আরবীতে ‘ওরায়ুন্নাহার’ (وراء النهر) লিখে সার্চ দিয়ে দেখুন, শব্দটির পুরো ডিটেলস মানচিত্রসহ বেরিয়ে আসবে। তখন আপনি নিজেও জেনে অবাক হবেন যে, কাদিয়ানীরা মধ্য-এশিয়ার ভৌগলিক সীমানার হাত পা ভেঙ্গে ‘বিপাশা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গ্রাম বলিয়া মির্যার জন্মস্থান কাদিয়ান’-কে কিভাবে অপব্যাখ্যার নিশানায় পরিণত করল! শুধু কি তাই? না না, তারা ‘হাররাছ ইবনে হারিছ’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘হাররাছ হারিছ’ শব্দকে জমিদার বংশীয় বলেও ব্যাখ্যা দিতে ভুলেনি!

আহা! এ কি নিকৃষ্ট বিকৃতি! কি সব উদ্ভট ব্যাখ্যা!! কি যে অসম্ভব ধোকা!!! অথচ রাসূল (সা:) হাদীসটির আলোকে ইমাম মাহদীর বাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে আসা তদানীংকালের একটি মুসলিম সৈন্যদলের নেতৃত্বদানকারী হারিছের পুত্র হাররাছ নামীয় ব্যক্তির ভৌগলিক অবস্থান কোথায় হবে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে চাচ্ছিলেন! মধ্য এশিয়ার মানচিত্র (উইকিপিডিয়া হতে সংগৃহীত) দেখুন, চীন, পাকিস্তান আর ইন্ডিয়া এই দেশগুলো নির্দিষ্ট সীমারেখার সম্পূর্ণ বাহিরে ও বরাবরই এশিয়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত। এমতাবস্থায় ‘কাদিয়ান’ গ্রামটিও মধ্য এশিয়ার সীমানার বাহিরেই থাকল কিনা? অবশ্যই। উফ! ওরা কিভাবে এতবড় প্রতারণার খেল খেলতে পারল!!

শেষে শুধু এইটুকু বলব, এখনো সময় আছে, রাসূল (সা:)-এর হাদীস, ইসলামের ইতিহাস আর ভৌগলিক অবস্থানের ভুলভাল ব্যাখ্যার কবলে পড়ে আল্লাহর ওয়াস্তে আর বিভ্রান্ত হবেন না! ফিরে আসুন, ইসলামের পুরণো ছাতার নিচে; আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মূলস্রোতে!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেস সালাম’ বলা

0
  • ইমাম মাহদী যদি “নবী” না হন তাহলে তাঁর নামের পর ‘আলায়হেস সালাম’ (সংক্ষেপে আঃ) কেন লিখা হয় বা বলা হয়? কাদিয়ানীদের প্রশ্ন ও আমার জবাব :

আমার জবাব, পবিত্র কুরআন বলছে, ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন (খতম করনে ওয়ালা নবীয়ুঁ কা [উর্দূ]) অর্থাৎ তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) নবীগণের আগমনীধারা সমাপ্তকারী। সূরা আহযাব, আয়াত নং ৪০; অনুবাদ- রূহানী খাযায়েন খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৩১; মূল মির্যা কাদিয়ানী। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ১ যদি আমার পরে কেউ নবী হত তাহলে উমর ইবনে খাত্তাবই নবী হত। অন্য জায়গায় তিনি সাঃ আরো ইরশাদ করেছেন, ২ আমি আখেরি নবী আর তোমরা আখেরি উম্মত। তিনি আঃ এও ইরশাদ করেছেন, ৩ আমার মাধ্যমে নবীগণের আগমনীধারা খতম করে দেয়া হয়েছে। তিনি আঃ আরেক জায়গায় ইরশাদ করেছেন, ৪ আমার পরে আর কোনো নবী নেই তবে অচিরেই বহু খলিফা হবে। তিনি আঃ এও ইরশাদ করেছেন, ৫ নিশ্চয়ই রেসালত এবং নবুওয়তের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার পর না কোনো নবী রয়েছে আর না কোনো রাসূল রয়েছে। সংক্ষেপে। সুতরাং বুঝা গেল, মুহাম্মদ সাঃ এর পরে নবুওয়তের ধারা বন্ধ, তাঁর পরে আল্লাহতালা আর কাউকে নবী বানাবেন না। উদ্ধৃতিগুলোর রেফারেন্স নিন্মরূপ!

রেফারেন্স :- ১ তিরমিজি শরীফ। ২ ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান বাবুদ দাজ্জাল। ৩ সহীহ বুখারী। ৪ সহীহ বুখারী কিতাবুল মানাকিব। ৫ তিরমিজি শরীফ।

উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পরে যে কোনো প্রকারের নবুওয়তের দাবীদার মিথ্যুক এবং দাজ্জাল তথা প্রতারক ও মুসাইলামা কাজ্জাবেরই উত্তরসূরী। সেযাইহোক, এখন প্রশ্ন আসে যে, তাহলে শেষযুগে প্রেরিত প্রতীক্ষিত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহদী ওয়াল ফাতেমি ওয়াল হাসানী ওয়াল কুরাইশী এর নামের শেষে কিজন্য ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা হয় বা বলা হয়? তার কারণ কী?

উত্তর হচ্ছে, কুরআন কিংবা হাদীস থেকে কেউই দেখাতে পারবেনা যে, মাহদীর নামের শেষে ‘আলাইহেসসালাম’ লিখা হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, কেউ পারলে প্রমাণ করুন! আর সেজন্যই মাহদীর নামের শেষে দোয়াস্বরূপ ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা বা বলার জন্য আপনার আর আমার মতই সাধারণ মানুষরাই দায়ী। যদিও বা কোনো কোনো যুগ ইমাম এবং মুজাদ্দিদ ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলাইহেসসালাম’ লিখা বা বলার পক্ষে ছিলেন না। মুজাদ্দিদে আলফে সানী হযরত শায়খ আহমদ সারহেন্দী (রহ:) তাদেরই মধ্যে অন্যতম। তিনি ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ লিখেছেন। প্রমাণ স্বরূপ তারই মাকতূবাত কিতাবের স্ক্রিনশট দেখুন (৪/৫৮৭; দপ্তরে আউয়াল, উর্দু এডিশন) । কিন্তু তিনি ‘আলায়হেসসালাম’ লিখতে কোথাও বারণ করেছেন কিনা তা জানা নেই।

কতিপয় মনীষীর নামের পরে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা বা বলা প্রসঙ্গে :

আমরা জানি, হযরত লোকমান হাকিম, হযরত খিজির, হযরত বিবি আছিয়া, হযরত বিবি মরিয়ম প্রমুখ এঁদের কেউই নবী ছিলেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এঁদের সকলের নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ বা ‘আলায়হাসসসালাম’ (লিঙ্গভেদে হি/হা যোগে) থাকে। তদ্রূপ হযরত ইমাম মাহদীর নামের শেষেও ‘আলায়হেসসালাম’ লিখার অর্থ এই নয় যে, তিনি নবী হবেন!

ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখার কারণ :

তার কারণ এইও হতে পারে যে, শেষ যুগে আগমনকারী ইমাম মাহদী নবী করীম সাঃ এর আহলে বাইয়েত হতে ও ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-র পুত্র হযরত হাসানের ওরশে কুরাইশ বংশে জন্মিবেন (সুনানু আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী অধ্যায়) বলেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তারও নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখতে নিরুৎসাহিত করা হয়না। এই পর্যায়ে কেউ কেউ হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, আহলে বাইয়েত এর সদস্যদের নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা বা বলার দলিল কোথায়?

উত্তরে বলতে চাই যে, সহীহ বুখারী শরীফের “কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবাহ” অধ্যায়ের (হাদিস নং ৩৭১১, অধ্যায় নং ৬২; আত-তাওহিদ প্রকাশনী) “বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমা” শীর্ষক পর্বে নবীজীর কলিজার টুকরো হযরত ফাতিমার নামের শেষে ‘আলায়হাসসালাম’ (عليها السلام) ব্যবহার করা হয়েছে । একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের “বাবুল মানাক্বিবি ক্বরাবাতি রাসূলিল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমা আলাইহাসসালাম বিনতে নবী” শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) “আলায়হাসসালাম” ব্যবহার করা হয়েছে। ইমাম বুখারী রহঃ এর কৃত অনুরূপ শিরোনামই প্রমাণ করে যে, আহলে বাইয়েত তথা নবী-পরিবারের সদস্যদের নামের শেষে ‘আলাইহেসসালাম’ (যার অর্থ, তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) লিখা বা বলার অনুমতি রয়েছে। তবে বলতেই হবে এইরূপ উৎসাহিত করা হয়নি। অন্যথা মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃ ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ লিখতেন না।

সুনানু তিরমিজি গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদ এর শিরোনাম আছে “মানাক্বিবুল হাসান ওয়াল হুসাইন আলায়হেমাসসাল্লাম”। তারই সংশ্লিষ্ট একটি হাদীসের (হাদীস নং ৩৭৭৪) খন্ডাংশ اذ جاء الحسن والحسين عليهما السلام যাইহোক, ইমাম হাসান আর হুসাইন এঁদের দুইজনের নামের শেষে (দ্বিবচনে) ‘আলায়হেমাসসালাম’ উল্লেখ থাকাটাও প্রমাণ করে যে, এটি আহলে বাইয়েত এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর শেষ যুগে আগমনকারী হযরত ইমাম মাহদী যেহেতু আহলে বাইয়েত থেকে কুরাইশ বংশে (আরবে তথা মদীনায়) জন্মিবেন সেহেতু ওই একই বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাঁর নামের শেষেও ‘আলায়হেসসালাম’ লিখতে বা বলতে নিরুৎসাহিত করা হয়না। তবে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃ এর লিখনী দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, উত্তম হল ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’-ই লিখা বা বলা। ওয়াল্লাহু আ’লাম!

শেষকথা : কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী সাব্যস্ত করতে ইমাম মাহদীর নামের শেষে ব্যবহৃত ‘আলায়হেসসালাম’ এর প্রসঙ্গ টেনে এনে যুক্তি দিতে চায়। অথচ উপরের দীর্ঘ আলোচনা হতে আমরা বুঝলাম যে, ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ এর ব্যবহার তিনি ” নবী” একথা বুঝাতে নয়, বরং তিনি আহলে বাইয়েত এর মধ্য হতে এবং একজন কুরাইশী হবেন-এদিকেই ইংগিত করতে। অন্যথা হযরত লোকমান, হযরত খিজিরসহ তাঁদের সবাই এমনকি জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল ও আজরাইল ফেরেশতাগণও কাদিয়ানীদের একই যুক্তিতে নবী হয়ে যাচ্ছেন! আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আখেরি যামানার আলেমরা ‘উলামাউহুম শাররুম’ হওয়া হাদীসের পর্যালোচনা

0
  • আখেরি যামানার আলেমরা ‘উলামাউহুম শাররুম’ হওয়া প্রসঙ্গে

কাদিয়ানীরা কথায় কথায় বলে আলেমরা নিকৃষ্ট! হাদীস শরীফে আখেরি যামানার আলেমদের “নিকৃষ্ট” বলা হয়েছে! কিন্তু তারা উক্ত হাদীসের কথাগুলোর প্রসঙ্গ কখনো খতিয়ে দেখেনা যে, হাদীসের “উলামাউহুম শাররুম—জাতীয় কথাগুলো প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আগের না পরবর্তী যুগের সাথে সম্পর্কিত? চিন্তাশীলদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে। মনে করুন, ইমাম মাহদী এসে আবার চলেও গেছেন অথচ নিকৃষ্ট জীব খ্যাত দুষ্ট মৌলভীদের দৌরাত্ম পর্যায়ক্রমে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে, বন্ধ হচ্ছেনা; এমতাবস্থায় খুব সহজেই জনমনে প্রশ্ন দেখা দেবে যে, তাহলে ইমাম মাহদীর আগমনে ফায়দা হল কী? আকাশে সূর্য উদিত হলে পৃথিবী কোনোভাবেই কি অন্ধকারে ঢাকা পড়তে পারে? কখনো না। কাজেই, কাদিয়ানীদের বিশ্বাস, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইমাম মাহদী, এটি নির্জলা মিথ্যা বৈ নয়।

এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করা জুরুরি, যাদের চোখ আছে তারা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন এবং যাদের অন্তর আছে তারা অবশ্যই উপলব্ধি করবেন যে, উল্লিখিত ৪টি- যুগলক্ষণই কিন্তু প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বের সময়কে ইংগিত দিচ্ছে। যথা, ইসলাম শুধু নামমাত্র থাকবে, কুরআনের শুুধুমাত্র পাণ্ডুলিপি অক্ষত থাকবে, মসজিদগুলো হিদায়াতশূন্য হয়ে যাবে আর তখন তোমাদের আলেমগণ আকাশের নিচে নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হবে!

সুতরাং বর্তমানে যেহেতু বহু আলেম দুনিয়া লোভী, খেয়ানতকারী ও হাদীসের ভাষায় ‘উলামাউহুম শাররূম’ হওয়াই দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করছে সেহেতু পরিষ্কার হয়ে গেল, প্রকৃত ইমাম মাহদী (মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহদী ওয়াল ফাতেমি ওয়াল হাসানী ওয়াল কুরাইশী)’র আগমন এখনো বাকি। তবে ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই তাঁর আগমন হবে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

শেষকথা, সব বাতিল মতবাদের অনুসারীরাই নিজেদের ইসলাম পরিপন্থী মতবাদ টিকিয়ে রাখতে সর্বাগ্রে উলামায়ে কেরামের উপর চড়াও হয়। নির্বিচারে সব আলেমকে ঘৃণা আর সমালোচনার নিশানা বানায়। যাতে তাদের বিভ্রান্ত অনুসারীরা আলেমদের কাছে না যায়। মূলত আলেমদের কাছ থেকে তাদের বিপথগামী অনুসারীদের দূরে রাখার অসৎ উদ্দেশ্যেই তারা নির্বিচারে হাদীসগুলো প্রসঙ্গ ছাড়াই উদ্ধৃত করে! আল্লাহ তাদের সহীহ বুঝ দিন। আমীন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ইউনুছ ইবনে মাত্তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নন, হাদীসের ব্যাখ্যা

0
  • মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধী কথাবার্তার বদনাম ঘোচাতে রাসূল (সাঃ) এর হাদীসের উপর কাদিয়ানীদের আপত্তি ও তার খন্ডন!

কাদিয়ানীদের আপত্তিমূলক প্রশ্নটি হল, হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা:) বলেছেন, যে আমাকে ইউনুছ ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম বলবে সে মিথ্যা বলল । (তিরমিযী হা/৩২৪৫)। অথচ তিনি (সা:) আরেক হাদীসে ইরশাদ করেছেন, আমি সমস্ত বনী আদমের সর্দার কিন্তু তাতে আমার নিজের কোনো গৌরব নেই… (তিরমিযী হা/৩৬১৫)। বাহ্যিকভাবে তিনি (সা:) স্ববিরোধী উক্তি করলেন কিনা? এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানীর ক্ষেত্রে কিজন্য স্ববিরোধী উক্তির আপত্তি করা হবে??

জবাব ও খন্ডনঃ উপরের বক্তব্য দু’টির জবাব বিশিষ্ট যুগ ইমাম ও মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) এর কিতাব “মেরকাত শরহে মেশকাত” থেকে নিচে অনুবাদ আকারে তুলে ধরছি।

(مَنْ قَالَ: أَنَا خَيْرٌ) أَيْ: فِي النُّبُوَّةِ (مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى لَقَدْ كَذَبَ) : لِأَنَّ الْأَنْبِيَاءَ كُلَّهُمْ مُتَسَاوُونَ فِي مَرْتَبَةِ النُّبُوَّةِ، وَإِنَّمَا التَّفَاضُلُ بِاعْتِبَارِ الدَّرَجَاتِ، وَخُصَّ يُونُسُ بِالذِّكْرِ لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَصَفَهُ بِأَوْصَافٍ تُوهِمُ انْحِطَاطَ رُتْبَتِهِ حَيْثُ قَالَ: (فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ)

অর্থাৎ, রাসূল (সা:) এর বাণী “যে বলবে আমি ইউনুছ ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম…”—এই কথাটি মূলত শুধুই নবুওয়তের ক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে। ফলে তার অর্থ দাঁড়ায়, যে ব্যক্তি বলবে আমি ইউনুছ ইবনে মাত্তা অপেক্ষা নবুওয়তের ক্ষেত্রেও উত্তম তবে সেই ব্যক্তি মিথ্যা বলল। কেননা নবীগণের সকলে নবুওয়তের মর্যাদায় এক ও অভিন্ন। তবে কতিপয় সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষত্ব নিশ্চয়ই রয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনুছ (আ:) এর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হল, আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে তাঁকে নানা বিশেষণ দ্বারা বিশেষিত করে তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ অর্থাৎ সে (ইউনুছ) মনে করেছিল আমি তাঁর উপর (পৃথিবীটা) কখনোই সংকীর্ণ করব না। (মেরকাত শরহে মেশকাত : ৯/৩৬৪৫)।

  • মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকেও রাসূল (সা:) এর উল্লিখিত হাদীস দুইখানার পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন যথাক্রমে ২টি আয়াত :

আল্লাহতালা বলেন: لا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ অর্থঃ তাহারা বলে, আমরা তাহার রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করিনা (সূরা বাক্বারা ২৮৫)। অন্য জায়গায় এসেছে, আল্লাহ বলেন: تلك الرسل فضلنا بعضهم على بعض অর্থঃ এই রাসূলগণ, তাহাদের মধ্যে কাহাকেও কাহারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি (সূরা বাকারা ২৫৩)।

খুব খেয়াল করুন, সূরা বাক্বারার ২৮৫ নং আয়াতে নবীদের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ না করা সম্পর্কে উল্লেখ আছে। তারপর অন্য আয়াতে নবীগণের মাঝে পরস্পর অপেক্ষা বিশেষভাবে মর্যাদাবান বলেও উল্লেখ রয়েছে। তাই মোল্লা আলী কারী (রহ:) একজন যুগ ইমাম হিসেবে যেই ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন সেটি পবিত্র কুরআনের আলোকেই দিয়ে গেছেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী নিজেও লিখেছে, মুজাদ্দিদ ব্যক্তি কুরআনের বুঝপ্রাপ্ত হন এবং ঐশী নিদর্শনসহ আগমন করে থাকেন। (রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮) সুতরাং আপনাদের উত্থাপিত আপত্তি পুরোপুরি অসার সাব্যস্ত হল। বিশিষ্ট মুফাসসীর, ইমাম কুরতুবী (রহ:) এর বক্তব্য হতেও হুবহু এমন ব্যাখ্যাই পাওয়া যায়। নিচে দেখুন!

ইমাম কুরতুবী (রহ:) লিখেছেন: ‘আন্নাল মান’আ মিনাত তাফদ্বীল। ইন্নামা হুয়া মিন জিহাতিন নাবুওয়্যাতি আল্লাতি হিয়া খাছলাতুন ওয়াহিদাতুন। লা তাফাদ্বালা ফীহা। ওয়াত তাফদ্বীলু ফী যিয়াদাতিল আহওয়াল ওয়াল খুছূছ ওয়াল কারামাত ওয়াল আল-ত্বাফ।’ অর্থাৎ অবশ্যই নবীগণের এককে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতে নিষেধ রয়েছে। আর তা নিশ্চিতভাবে ও শুধু কেবল নবুওয়তের ক্ষেত্রে। যেহেতু নবুওতের ক্ষেত্রে সবার মান সমান। তাতে কেউ অন্যের উপর শেষ্ঠত্ব রাখেনা। অধিকন্তু শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে, কতেক বিশেষত্ব, সম্মান আর দয়ার আধিক্যতার ক্ষেত্রে। (আল মুয়াসসাসাতুল ফিকহিয়্যাহ : ৪০/৪৯)। আশাকরি যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী আর ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুমাল্লাহু দুইজনের জ্ঞানগর্ভ সামঞ্জস্যতার বিধান ও বিশ্লেষণ দ্বারা সমাধান পেলেন।

জ্ঞানীদের নিকট পরিস্কার যে, মূলত হাদীস দুটির ভেতরে কোনো স্ববিরোধিতা নেই। কাজেই মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধী কথাবার্তা হালাল করতে হাদীসের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা পুরোপুরি বৃথা গেল! সংক্ষেপে উত্তর দিলাম।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।