Home Blog Page 34

লোহা, লেবাস, গবাদিপশু ইত্যাদি এগুলোও কি আকাশ থেকে নাযিল হয়েছে?

আল-কুরআনে লোহা, পোশাক, গবাদিপশু ইত্যাদি নাযিল হওয়ার আয়াত ও কাদিয়ানীদের ভ্রান্তি নিরসন :

আলোচনা শুরুর আগে কাদিয়ানীদের প্রশ্ন-সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো দেখে নিন :

১. সূরা হাদীদ আয়াত : ২৭। আল্লাহতালা বলেন, ওয়া আনযালনা আলাইকুমুল হাদীদা অর্থাৎ আমি তোমাদের জন্য লোহা নাযিল করেছি।

২. সূরা আ’রাফ আয়াত : ২৬। আল্লাহতালা এখানে ‘ক্বদ আনযালনা’র পরে বলেছেন, ‘আলাইকুম লিবাসা’ অর্থাৎ আমরা তোমাদের জন্য লেবাস (পোশাক) অবতীর্ণ করেছি।

৩. সূরা যুমার আয়াত : ৬। আল্লাহতালা এ আয়াতে ‘আনযালা’র পরে বলেছেন, ‘লাকুম মিনাল আন’আমি ছামানিয়াতা আঝওয়াজ’। অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য আট জোড়া গবাদিপশু নাযিল করেছেন’।

৪. সূরা ত্বালাক আয়াত : ৯। আল্লাহতালা এই আয়াতের ‘ক্বদ আনযালাল্লাহু’ এর পরেই বলেছেন, ইলাইকুম যিকরা। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের প্রতি কুরআন নাযিল করেছেন। তার পরের আয়াতে আছে ‘রাসূলা’ অর্থাৎ রাসূল নাযিল করেছেন (কাদিয়ানীদের অনুবাদ অনুসারে)।

  • বলে রাখতে চাই যে, ইমাম সুয়ূতী (রহ:) সহ সকল যুগ ইমাম সূরা ত্বালাক এর ৯ নং আয়াতের ‘ক্বদ আনযালাল্লাহু’ এর পরের আয়াতে ‘রাসূলান’ এর তাফসীরে লিখেছেন এখানে رسولًا এর পূর্বে أَرسَلْنَا ক্রিয়াপদ ঊহ্য মেনে নিতে হবে। ফলে অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহতালা অবতীর্ণ করেছেন উপদেশ (কুরআন) এবং প্রেরণ করেছেন এক রসূল। অতএব, এই আয়াত দ্বারা “রাসূল (সা:)ও আকাশ থেকে নাযিল হলেন কিনা” কাদিয়ানীদের এই প্রশ্ন চরম মূর্খতাপূর্ণ বৈ নয়।

একটি প্রশ্নের জবাব :

  • কাদিয়ানীদের প্রশ্নটি এরকম, “নাযিল” শব্দ থাকলেই কোনো জিনিস ‘আকাশ’ থেকে অবতীর্ণ হওয়াকে আবশ্যক করেনা। যদি ‘নাযিল’ হওয়া মানে ‘আকাশ’ থেকেই অবতীর্ণ হওয়াকে আবশ্যক করত তখন প্রশ্ন আসবে যে, তবে কি আয়াতের আট জোড়া গবাদিপশুও আকাশ থেকে নাযিল হয়েছিল? লেবাস বা পোশাক পরিচ্ছেদও কি আকাশ থেকে ছিল? রাসূল অবতীর্ণ হওয়াটাও কি আকাশ থেকে বুঝাল? যেহেতু এখানে নাযিল হওয়ার অর্থ আকাশ থেকে নাযিল হওয়াকে বুঝায়নি সেহেতু ঈসা (আ:) সম্পর্কেও যেই ‘নাযিল’ অর্থাৎ অবতীর্ণ হওয়ার কথা এসেছে তার-ও একই অর্থ উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ ঈসা (আ:) নাযিল হওয়ার মানে ‘আকাশ থেকে’ অবতীর্ণ হওয়া উদ্দেশ্য নয়। (কাদিয়ানিদের বক্তব্য শেষ হল)।

আমার জবাব : জ্বী হ্যাঁ, আমরাও আপনাদের উক্ত যুক্তির সাথে একমত হতে পারতাম যদি হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে “নাযিল” শব্দের পাশাপাশি একাধিক সহীহ হাদীসে মিনাস সামায়ি (من السماء) বা ‘আকাশ থেকে নাযিল হবে’ শব্দ-ও উল্লেখ না থাকত এবং হাদীসের মধ্যে হযরত ঈসা (আ:)-এর আগমনী ভবিষ্যৎবাণীতে ‘রুজূ’ (رجوع) তথা ঈসা (আ:) দ্বিতীয়বার ফিরে আসবেন, এজাতীয় শব্দ-ও না হত। অধিকন্তু হযরত ঈসা (আ:)-এর আগমনী ভবিষ্যৎবাণীতে রাসূল (সা:) শপথ বাক্যসহ সংবাদ দেয়ার প্রমাণও রয়েছে। ফলে দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হল যে, আগত ঈসা (আ:) রূপক কোনো ঈসা নন এবং এতদ-সংক্রান্ত হাদীসগুলোর ‘নুযূল’ শব্দটিও প্রকৃত অর্থের বাহিরে রূপক অর্থে উদ্দেশ্য নয়!

এবার জবাবের খোলাসা :

বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! এই পর্যায় ‘মিনাস সামায়ি’ (من السماء অর্থাৎ আকাশ থেকে) শীর্ষক অনেকগুলো হাদীসের মধ্য হতে শুধুমাত্র একটি সহীহ হাদীস পেশ করছি, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন,

كيف انتم إذا نزل ابن مريم من السماء فيكم و امامكم منكم

অর্থাৎ তখন তোমাদের কেমন (আনন্দের) হবে যখন ইবনে মরিয়ম (ঈসা) মিনাস সামায়ি তথা আকাশ থেকে তোমাদের মাঝে নাযিল হবেন আর তখন তোমাদের ইমাম (মাহদী) তোমাদের মধ্য হতে হবেন। [দেখুন, সুনানে বায়হাক্বীর সংকলক কর্তৃক সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত’ ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫, বাবু ক্বওলিল্লাহি আজ্জা ওয়া জাল্লা লি-ঈসা ইন্নী মুতাওয়াফ্ফীকা ওয়া রাফিউকা ইলাইয়্যা; হাদীসের মান : সহীহ]।

স্ক্রিনশট :

তাওয়াতূর পর্যায়ের অসংখ্য হাদীস দ্বারা ঈসা (আ:) এর নাযিল হওয়া মানে আকাশ থেকে-ই নাযিল হওয়া উদ্দেশ্য। ক্লিক করুন >> 235

এখন প্রশ্ন হল, ঈসা (আ:)-এর আগমনী ভবিষ্যৎবাণীতে তাঁর (আ:) আগমন সম্পর্কে হাদীসে ‘রুজূ’ (رجوع) শব্দ থাকলে তাতে কিজন্য ঈসা (আ:) প্রকৃতপক্ষেই আকাশ থেকে ফিরে আসা সঠিক সাব্যস্ত হবে? মির্যা কাদিয়ানী সাহেব থেকে কি এধরণের কোনো কথার প্রমাণ আছে?

এর উত্তর হল, জ্বী হ্যাঁ। আপনি ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ২৩ নং খন্ডের ২২৯ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখুন, মির্যা সাহেব লিখেছেন, ঈসা (আ:) এর আগমন সম্পর্কে হাদীসে ‘রুজূ’ (رجوع) শব্দ থাকলে তখনি তাঁর (আ:) ফিরে আসার ঘটনা প্রকৃতপক্ষে “আকাশ থেকেই” ঘটবে বলে সাব্যস্ত হবে। যেজন্য মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত বিগত তেরশত শতাব্দির সমস্ত মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমাম সবাই ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, আগত ঈসা ইবনে মরিয়ম মানে বনী ইসরাইলী ঈসা ভিন্ন কেউ নন এবং তিনি এখনো আকাশে জীবিত আছেন।

তাহলে ঈসা (আ:)-এর দুনিয়ায় ফিরে আসা শীর্ষক ‘রুজূ’ (رجوع) শব্দ সম্বলিত হাদীসটি কী?

জ্বী জনাব! হাদীসটি এই যে, (ক) রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন,

و ان الله رفعه بجسده و أنه حى الآن و سيرجع إلى الدنيا فيها ملكا ثم يموت

অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহতালা তাঁকে (ঈসা) সশরীরে উঠিয়ে নেন এবং তিনি এখনো জীবিত। অতিসত্বর তিনি পৃথিবীতে রুজূ করবেন তথা ফিরে আসবেন। তখন তিনি পৃথিবীতে একজন বাদশাহ হবেন। তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন।” (দেখুন হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত, ইবনে সা’আদ [মৃত: ২৩০হিজরী] সংকলিত ‘আত-তবকাতুল কাবীর‘ : খন্ড ১ পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬; প্রকাশনায়, মাকতাবাতুল খানজী, কায়রো মিশর)।

() রাসূল (সা:) জনৈক ইহুদীকে লক্ষ্য করে বলেছেন,

ان عيسى لم يمت و أنه راجع إليكم قبل يوم القيامة

অর্থাৎ নিশ্চয়ই ঈসা (আ:) মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি নিশ্চয়ই কেয়ামতের আগে তোমাদের নিকট ফিরে আসবেন। (তাফসীরে তাবারী ৫/৪৪৮)।

তারপর জানার বিষয় হল, হাদীসে শপথ বাক্যসহ কোনো সংবাদ বর্ণিত থাকার দরুন সংবাদটি প্রকৃত অর্থের বাহিরে রূপক অর্থে উদ্দেশ্য হবে না, এমন কোনো কথাও কি মির্যা কাদিয়ানীর রচনায় উল্লেখ আছে?

এর জবাব হল, আপনি মির্যা কাদিয়ানীর রচনাবলীর সমষ্টি ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ৭ নং খন্ডের ১৯২ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখুন। মির্যা সাহেব স্পষ্টতই লিখে গেছেন, ‘শপথ করে কোনো কথা বলা একথারই প্রমাণ বহন করে যে, নিশ্চয়ই খবর তথা হাদীসটি আক্ষরিক অর্থেই ধর্তব্য হবে। সেখানে রূপক অর্থ করা চলবেনা। নতুবা শপথ করে লাভ কী হল?’ (আরো দেখুন, হামামাতুল বুশরা, বাংলা অনূদিত পৃষ্ঠা নং ২৭)।

আর আমরা জানি, সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়ার ৩২৬৪ নং হাদীসে হযরত ঈসা (আ:) এর নাযিল সম্পর্কিত বর্ণনা শুরুতে রাসূল (সা:)-এর দ্ব্যর্থহীনভাবে শপথবাক্য ‘ওয়াল্লাযী নাফসি বিয়াদিহি (والذي نفسى بيده) …’ উল্লেখ রয়েছে। এতে একদম পরিস্কার হয়ে গেল যে, ঈসা (আঃ) এর নাযিল হওয়া মানে প্রকৃতপক্ষেই আকাশ থেকে তাঁর অবতীর্ণ হওয়া-ই উদ্দেশ্য! নতুবা ‘শপথ’ ব্যক্ত করে লাভ কী হল? প্রায় দেড়’শ সহীহ হাদীস রয়েছে যদ্দ্বারা ঈসা (আ:) এর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। উপরের লিংক থেকে দেখে নিন। সুতরাং ঈসা (আ:) এর “নাযিল” শব্দের সাথে অন্যান্য গুলোর “নাযিল” শব্দকে বিশেষ কোনো ক্বারীনা ছাড়া এক ও অভিন্ন মনে করার কোনো কারণ নেই। সংক্ষেপে।

  • এবার জানার বিষয় হল, হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) ভিন্ন অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘নাযিল’ শব্দের প্রকৃত অর্থ পরিত্যাজ্য হয়ে কাছাকাছি ভিন্ন অর্থ নেয়ার কারণ কী?

এর জবাব হল, বরেণ্য তাফসীরবিদগণের তাফসীরে ঈসা (আ:) ভিন্ন অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘নাযিল’ শব্দের প্রকৃত অর্থ ত্যাগ করে তার কাছাকাছি ভিন্ন অর্থ নেয়ার প্রধান কারণ হল, সেসব আয়াতে উল্লিখিত ‘নাযিল’ শব্দের প্রকৃত অর্থ ইসলামের আদিম ও তিন স্বর্ণযুগ থেকেই পরিত্যাজ্য এবং তার কাছাকাছি ভিন্ন অর্থ গ্রাহ্য। যেহেতু সেসব আয়াতের ‘নাযিল’ শব্দের বিশ্লেষণে রাসূল (সা:) কিংবা কোনো একজন সাহাবী বা তাবেয়ীর তাফসীরেও ‘মিনাস সামায়ি’ তথা আকাশ থেকে শব্দ উল্লেখ পাওয়া যায়না। অথচ এর বিপরীতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর “নাযিল” শব্দের প্রকৃত অর্থ নেয়ার পক্ষে বহু ক্বারীনা (قرينة) তথা নিদর্শন এবং উপযুক্ত দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান।

শেষকথা: তাফসীরশাস্ত্রে যাদের সামান্যতম হলেও ধারণা আছে তারা জানেন যে, পবিত্র কুরআনের অনুবাদ নেয়ার ক্ষেত্রে কুরআনের অপরাপর আয়াত আর সুন্নাহ উভয়ের সামঞ্জস্যতার বিধান মানা আবশ্যক। যার যেভাবেই খুশি অর্থ নেয়া সুস্পষ্ট বিকৃতি আর মুলহিদানা চরিত্রের শামিল! তাই সালফে সালেহীনগণ এই নিয়মের ভিত্তিতেই পবিত্র কুরআনের অনুবাদ করে গেছেন। মজার ব্যাপার হল, এরূপ স্বতঃসিদ্ধ ও সুপ্রতিষ্ঠিত নিয়মের সমর্থনে খোদ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও লিখে গেছেন। ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ১০ নং খন্ডের ৮৬ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখুন! পরিষ্কার লিখা আছে,

  • “প্রথম হল কুরআন শরীফ। কিন্তু স্মরণ রাখা চাই যে, কুরআনের কোনো আয়াতের সেই মর্মার্থই আমাদের নিকট (সঠিক বলে) বিবেচিত যার পক্ষে কুরআনের অপরাপর আয়াত সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। কেননা কুরআনের কোনো কোনো আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাকারী। এমনকি কুরআনের পরিপূর্ণ ও অকাট্য মর্মের উদঘাটন যদি কুরআনের অপরাপর স্থানগুলো দ্বারাও সহজলভ্য না হয়ে থাকে তখন তার জন্যও শর্ত হচ্ছে কোনো সহীহ, মারফূ ও মুত্তাসিল হাদীসও তার (আয়াতের) ব্যাখ্যাকারী হবে।”

এখন যেসব কাদিয়ানী-উম্মত ‘কুরআন থাকতে হাদীসে যেতে হবে কেন?’ এরূপ চটকদার ও মূর্খতাপূর্ণ যুক্তির আড়ালে নিজেদের ঈমানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঢেলে দিচ্ছেন তারা এবার মির্যা গোলাম আহমদকে কী বলবেন? কেননা সে নিজেও কুরআনের সঠিক মর্মার্থ উদঘাটন করতে মারফূ ও মুত্তাসিল স্তরের সহীহ হাদীসকে আয়াতের ব্যাখ্যাকারী বলে লিখে গেছেন! তাই তাওয়াতূর পর্যায়ের অসংখ্য হাদীস দ্বারা যেখানে ঈসা (আ:)-এর “নাযিল” হওয়া মানে আকাশ থেকে অবতীর্ণ হওয়াই উদ্দেশ্য, সেখানে লোহা, লেবাস, গবাদিপশু ইত্যাদি “নাযিল” এর কুরআনিক শব্দকে হযরত ঈসা (আ:)-এর “নাযিল” এর অ-কুরআনিক শব্দের মুকাবিলায় দাঁড় করতে চাওয়া কতটা গণ্ডমূর্খতা তা নিজেরাই একবার চিন্তা করে দেখুন! আশাকরি জবাব পেয়েছেন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
তাং ০১/১২/২০

কাদিয়ানীরা বর্তমানে কত দলে বিভক্ত জেনে নিন

কাদিয়ানীরা কম-বেশী বর্তমানে ১৪ দলে বিভক্ত এবং তাদের প্রত্যেকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলোও ভিন্ন ভিন্ন :

  • উল্লেখ্য কাদিয়ানীরা মুসলমানদের তাচ্ছিল্য করে বলে, আরে আরে তোমরা মুসলিমরা ৭৩ ভাগে বিভক্ত আর অপরদিকে আমরা (অর্থাৎ কাদিয়ানীরা) শুধুই এক দল, অথচ তাদের এই দাবী শতাব্দীর জঘন্য মিথ্যা।

কাদিয়ানীদের কয়েকটি দলের নাম হল,

১. জামাতে আহমদীয়া ইন্দোনেশিয়া গ্রুপ। এদের আকীদা হল, এরা মির্যা কাদিয়ানীকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষক মানেন। নবী রাসূল মানেন না।

২. জামাতে আহমদীয়া লাহোরী মুভমেন্ট। এই দলের বর্তমান প্রধান প্রফেসর আব্দুল করীম সাঈদ (www.aaiil.org). এই দল দুটি হেকিম নূরুদ্দীন এর মৃত্যুর পরপরই সৃষ্টি হয়েছিল। এরাও তাকে নবী রাসূল মানে না।

৩. জামাতে আহমদীয়া ইসলাহ পছন্দ। এই দলের বর্তমান প্রধান আব্দুল গাফফার জম্বাহ (www.alghulam.com). এদের অন্যতম বিশ্বাস, আব্দুল গাফফার জম্বাহ-ই কথিত মুসলেহ মওউদ।

৪. গ্রীন আহমদীয়া। এই দলের প্রধান, মির্যা রফি আহমদ (www.greenahmadiyyat.org). এরাও মির্যাকে নবী রাসূল মানেনা। উল্লেখ্য ইনি কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলিফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ আহমদের ছেলেদের একজন। কাদিয়ানী চতুর্থ খলিফা নির্বাচনের সময়ে সে খলিফা নির্বাচিত হয়েছে বলে শোনা যায়। (এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই -লিখক) কিন্তু মির্যা তাহির আহমদ পরবর্তীতে খলিফা হওয়ায় তিনি নিজেও ‘গ্রীন আহমদীয়া‘ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সে যে খলিফা হতে চেয়েছিল এটা নিশ্চিত। যতদূর জানা যায়, মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ আহমদ এর দুই সংসার ছিল। দুই সংসারে মোট ২৮ জন সন্তান ছিলো। ‌ফলে ১৯৬৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর এদের মধ্যে ক্ষমতার মসনদ নিয়ে গন্ডগোল হয়, হওয়াটাই স্বাভাবিক।

৫. জামাতে আহমদীয়া আল-মুসলিমীন। এই দলের প্রধান জাফর উল্লাহ ডায়মন্ড (www.jaam-international.org).

৬. জামাতে আহমদীয়া হাকীকী। এই দলের প্রধান, নাসির আহমদ সুলতানী (www.ahmadiyyah.org).

৭. জামাতে আহমদী কাদিয়ানী (মাহমূদী) গ্রুপ। এই দলের বর্তমান প্রধান মির্যা মাসরূর আহমদ কাদিয়ানী (www.alislam.org).

৮. আনওয়ারুল ইসলাম মুভমেন্ট অফ আফ্রিকা। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান আলহাজ্ব জিব্রিল মার্টিন (https://wiki.qern.org/ahmadiyya/organisations/qadiani/anwar-ul-islam-movement-of-nigeria). দলটি নাইজেরিয়াতে (আফ্রিকা) খুব তৎপর। আলহাজ্ব জিব্রিল মার্টিন (২০ নভেম্বর ১৮৮৮ – ১৩ জুন ১৯৫৯) সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি একজন নাইজেরিয়ান আইনজীবী এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন যিনি নাইজেরিয়ান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। নাইজেরিয়ার স্বাধীনতার পর তিনি নাইজেরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের হজ পিলগ্রিমস বোর্ডের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি নাইজেরিয়ার আহমদীয়া জামাতের একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। তিনি মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের সময়টিতেই কাদিয়ানী জামাত থেকে আলাদা হয়ে যান এবং নিজেই নতুন দল গঠন করেন। বর্তমানে নাইজেরিয়ার অধিকাংশ এলিট শ্রেণীর কাদিয়ানী তারই অনুসারী। (উইকিপিডিয়া)।

৯. আহমদীয়া সহীহ ইসলাম। এই দলের বর্তমান প্রধান মুনীর আহমদ আজিম (www.jamaat-ul-sahih-al-islam.com).

১০. আহমদীয়া জায়েদখান গ্রুপ। এই দলের প্রধান, জায়েদখান। দলটির কিছু তৎপরতা জার্মানিতে চোখে পড়ার মত।

১১. আহমদীয়া তাহের নাসিম গ্রুপ। এই দলের প্রধান তাহের নাসিম। তিনি ৩০ই জুলাই ২০২০ইং পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি আদালতে শুনানিকালে গাজি খালেদখান নামক এক যুবকের গুলিতে নিহত হন।

১২. তিমাহপুরী গ্রুপ। এই দলের প্রধান আব্দুল্লাহ তিমাহপুরী। সে মির্যা কাদিয়ানীর মুরিদ ছিল এবং মির্যা কাদিয়ানীর জীবদ্দশাতেই নবুওয়তের দাবী করেছিল।

১৩. আহমদীয়া আসাদশাহ গ্রুপ। এই দলের প্রধান, আসাদশাহ। সেও কয়েক বছর পূর্বে আমেরিকায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়।

১৪. লাহোরী ইন্দোনেশিয়ান গ্রুপ। এরা মির্যা কাদিয়ানীর মুরিদ মুহাম্মদ আলী লাহোরীর চিন্তাধারায় প্রভাবিত ও তার গ্রুপ থেকেই ছিটকে পড়া হলেও মূলত কাদিয়ানী জামাতেরই একটি ফেরকা। এই হল বর্তমান কাদিয়ানী জামাতের বিভক্তির সংক্ষিপ্ত তালিকা। আস্তে আস্তে এ তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। সুতরাং কাদিয়ানীদের দাবী, তারা একটিমাত্র দল; তাদের এই কথা জঘন্য মিথ্যা। বাকি দলগুলোর প্রধানদের ছবি এবং অবশিষ্ট দলীয় অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ঠিকানা আস্তে আস্তে যুক্ত করে দেব, ইনশাআল্লাহ।

সহজে কাদিয়ানী চেনার উপায়

কাদিয়ানীদের রচনাবলীতে মুসলমানদের কাফের-হারামজাদাহ, বেশ্যার পোলা, মুশরিক, জাহান্নামি আখ্যা দেয়া (প্রমাণসহ)

পবিত্র কুরআন দ্বারাও ঈসা (আ.) এখনো জীবিত থাকা ও দুনিয়ায় দ্বিতীয়বার আগমন করা সুস্পষ্ট ইংগিতে প্রমাণিত

সূরা তওবাহ আয়াত ৩৩ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত

তথ্য সংগ্রহে : প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

শাহ কাশ্মীরী রহ. এর কবরের নেম প্লেটে ‘খাতামুল ফুক্বাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন’ লিখার জবাব

হযরত আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) এর কবরের নেম-প্লেটে “খাতামুল বা খাতিমুল ফুক্বাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন” উল্লেখ থাকা এবং কাদিয়ানিদের ওয়াস-ওয়াসাপূর্ণ আপত্তির জবাবে আজকের এই লিখা,

  • তাদের আপত্তি :
  • তাদের বক্তব্য হল, ‘খাতাম’ অর্থ শ্রেষ্ঠ, কিন্তু ‘শেষ’ নয়। সে হিসেবে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ অর্থ শেষনবী নয় বরং শ্রেষ্ঠ নবী। অতএব মুহাম্মদ (সা:) এর পর আর কোনো নবী নেই বলা ঠিক নয়, বরং নবী আছে তবে নতুন শরীয়তবাহক নবী নেই। মুহাম্মদ (সা:) এই হিসেবেই ‘শেষনবী’। কারণ, খাতাম অর্থ ‘শেষ’ হলে তখন প্রশ্ন আসবে, শাহ কাশ্মীরী রহ. কিভাবে খাতামুল মুহাদ্দিসীন হলেন? তবে কি তাঁর পরে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো মুহাদ্দিস হবেনা? এখন যারা মুহাদ্দিস আছেন তারা কি মুহাদ্দিস নন?

আপত্তির জবাব :

১. আগে বলুন, কাদিয়ানী প্রথম খলিফা হেকিম নূরুদ্দীন এর এই বক্তব্য সম্পর্কে আপনারা কী বলবেন?

হেকিম নূরুদ্দীন সাহেব নিজেই কিন্তু বলে গেছেন যে, মুহাম্মদ (সা.) এর পর আর কোনো নবী নেই। (সূত্র : হযরত মৌলভি নুরউদ্দীন (রা.) খলীফাতুল মসীহ আউয়াল, পৃষ্ঠা নং ৯১ দ্রষ্টব্য)।

২. আমাদের পূর্ববর্তী কোনো বুযূর্গের কবরের উপর কোনো মাকতুবাতের ভেতর “খাতামাল মুহাদ্দিসীন” অথবা এ জাতীয় যে সমস্ত লিখা রয়েছে তা সমসাময়িক অবস্থার সাথেই খাস বা নির্দিষ্ট। ভবিষ্যতের সাথে সেটির কোনো সম্পর্কই নেই। কেননা মানুষ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত নয়। কাজেই ঐ সমস্ত লিখা হতে শুধুমাত্র এ অর্থই উদ্দেশ্য হতে পারে যে, পূর্বে যত জন হাদীসের পন্ডিত অতীত হয়েছেন তাদের যোগ্যতা ও তাকওয়ার বিচারে শাহ আনওয়ার কাশ্মীরী (রহ.) এই সময়ের সেই সিলসিলার সর্বশেষ একজন মুহাদ্দিস। সুতরাং এ অর্থ গ্রহণ করার মধ্যে কোনো দোষ থাকার কথা নয়।

যদি তর্কের খাতিরে কাদিয়ানীদের উক্ত আপত্তি তেমনই মেনে নিই তাহলেও কোনো অসুবিধা থাকেনা। কেননা, কোনো ওলী বুযূর্গ, পীর মাশায়েখের নিজেস্ব কোনো খেয়াল বা রায় শরীয়তের মধ্যে দলীল হিসেবে ধর্তব্য হবেনা।

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ তিনি তার লেখিত “কালিমাতুল ফছল” বইটির ৯৩ নং পৃষ্ঠায় কাদিয়ানী লাহোরী গ্রুপের প্রধান মুহাম্মদ আলী লাহোরীর একটি বক্তব্যকে খন্ডন করতে গিয়ে কাদিয়ানিদের প্রথম খলিফা(?) হাকিম নূরুদ্দিন সম্পর্কে লিখেছেন,

اگر بفرض محال مان بہی لیا جاوئے کہ حضرت خلیفہ اول کا یہی خیال تہا جو مولوی محمد علی صاحب نے ظاہر کیا ہے تو تب بہی کوی حرج واقع نہیں ہوتا کیونکہ حضرت خلیفہ اول مامور نہیں تہے کہ عقائد میں ان کا فیصلہ ہمارے لئے حجت ہو۔

অর্থাৎ “যদি মেনেও নিই যে, মৌলভি মুহাম্মদ আলী লাহোরীর যেই আকীদা সেটি খলিফা-এ আউয়াল (হাকিম নূরুদ্দিন)’রও আকীদা, তবুও কোনো সমস্যা নেই। কেননা হযরত খলিফা-এ আউয়াল মামূর (প্রত্যাদিষ্ট) ব্যক্তি ছিলেন না যে, আক্বায়েদের (ধর্মমত) ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য দলিল হতে পারে!”

কাদিয়ানিদের জিজ্ঞেস করা চাই :

হাকিম নূরুদ্দিন সাহেব যিনি কাদিয়ানী জামাতের প্রথম খলিফা(?), তার সম্পর্কে মির্যা বশির আহমদ এম.এ লিখেছেন সে মামূর তথা প্রত্যাদিষ্ট ছিলেন না; তাই আক্বায়েদের ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত নাকি আপনাদের জন্য কোনো দলিল নয়! এমতাবস্থায় শাহ আনওয়ার কাশ্মীরী (রহ:) এর কবরের উপর স্থাপিত নেম-প্লেটটিতে “খাতিমুল বা খাতামুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন” শব্দটি যিনি লিখলেন তিনি যদি এই অর্থেই লিখেন যে, সত্যি-ই শাহ আনওয়ার কাশ্মীরী (রহ:) এর পর আর কোনো ফকিহ কিবা মুহাদ্দিস নেই, তার এই সিদ্ধান্তটাও আমাদের মুসলিম উম্মাহার ইজমার বিপরীতে ধর্তব্য হবে কেন? সেও কি মামূর মিনাল্লাহ?

এখন যদি তিনি প্রকৃতপক্ষেই “মামূর মিনাল্লাহ” হয়ে থাকেন তাহলে সেটি প্রমাণ করার দায়িত্ব নিশ্চয়ই আপনাদের, তাই নয় কি? যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি অনুরূপ কেউ, তখনি কেবল আপনাদের উক্ত আপত্তি আমাদের পক্ষে আমলে নেয়ার মত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে! তার আগে নয়!

আপনারা যেখানে হাকিম নূরুদ্দিন এর মত একজন কথিত খলিফা-এ আউয়ালের সিদ্ধান্তকে দলিল মানতে নারাজ সেখানে কোথায়কার কে কী লিখল তাতে আল্লাহর কালাম, রাসূল (সা.) এর অসংখ্য হাদীস, ইজমায়ে সাহাবা এবং যুগ ইমামদের অগনিত বক্তব্য সবগুলো কি মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে যাবে? আপনাদের এই কেমন ইনসাফ!!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

খতমে নবুওয়ত সম্পর্কিত সনদ সহ তিনটি সহীহ হাদীস

খতমে নবুওয়ত সম্পর্কিত সনদ সহ তিনটি সহীহ হাদীস

১। নবী করীম (ﷺ) এর শেষ নবী হওয়ার বিবরণ (باب ذِكْرِ كَوْنِهِ صلى الله عليه وسلم خَاتَمَ النَّبِيِّينَ) :

সনদ সহ হাদীসের আরবী অংশ :

‏‏ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا سَلِيمُ بْنُ حَيَّانَ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ، بْنُ مِينَاءَ عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ مَثَلِي وَمَثَلُ الأَنْبِيَاءِ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا فَأَتَمَّهَا وَأَكْمَلَهَا إِلاَّ مَوْضِعَ لَبِنَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَدْخُلُونَهَا وَيَتَعَجَّبُونَ مِنْهَا وَيَقُولُونَ لَوْلاَ مَوْضِعُ اللَّبِنَةِ‏”‏ ‏.‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَأَنَا مَوْضِعُ اللَّبِنَةِ جِئْتُ فَخَتَمْتُ الأَنْبِيَاءَ”‏ ‏.‏ وَحَدَّثَنِيهِ مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سَلِيمٌ، بِهَذَا الإِسْنَادِ مِثْلَهُ وَقَالَ بَدَلَ أَتَمَّهَا أَحْسَنَهَا ‏.‏

অর্থ হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার দৃষ্টান্ত এবং নবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি গৃহ নির্মাণ করল এবং সে তা সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করল কিন্তু একখানি ইটের জায়গা ব্যতীত। লোকেরা তাতে প্রবেশ করতে লাগল এবং তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবং বলাবলি করতে লাগল, যদি এ একখানি ইটের জায়গা খালি না থাকত (তবে কতই না ভাল হতো)! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি হলাম সে ইটের জায়গা। আমি আগমন করলাম এবং নবীগণের ধারাক্রম সমাপ্ত করলাম

রেফারেন্স : সহীহ মুসলিম (ইফা) অধ্যায়ঃ ৪৫/ ফযীলত (كتاب الفضائل) হাদিস নম্বরঃ ৫৭৬৪।

জ্ঞাতব্য : মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহ.) … সালীম ইবনু হাইয়ান (রহ.) সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি أَتَمَّهَا (পরিপূর্ণ)-এর স্থলে أَحْسَنَهَا (সুন্দর করেছে) বলেছেন।

হাদীসের ইংলিশ ভার্সন :

  • Jabir reported Allah’s Messenger (ﷺ) as saying: The similitude of mine and that of the Apostles is like that of a person who built a house and he completed it and made it perfect but for the space of a brick. People entered therein and they were surprised at it and said: Had there been a brick (it would have been complete in all respects). Allah’s Messenger (ﷺ) said: I am that place where the brick (completing the building is to be placed), and I have come to finalise the chain of Apostles. This hadith has been narrated through another chain of transmitters but with a slight variation of wording.

২। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নামসমূহ (باب فِي أَسْمَائِهِ صلى الله عليه وسلم) :

হাদীসটির সনদ সহ আরবী অংশ :

حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، – وَاللَّفْظُ لِزُهَيْرٍ – قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَمِعَ مُحَمَّدَ، بْنَ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا أَحْمَدُ وَأَنَا الْمَاحِي الَّذِي يُمْحَى بِيَ الْكُفْرُ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِي يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى عَقِبِي وَأَنَا الْعَاقِبُ‏.‏ وَالْعَاقِبُ الَّذِي لَيْسَ بَعْدَهُ نَبِيُّ .‏

অর্থ : হযরত জুবায়ের ইবনু মুত’ঈম (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি মুহাম্মদ (প্রশংসিত), আমি আহমদ (অত্যধিক প্রশংসাকারী), আমি আল-মাহী (বিলুপ্তকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার মাধ্যমে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি আল-হাশির (একত্রকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকদের সমবেত করা হবে। আমি আল-আকিব (সর্বশেষ), আর আল-আকীব ঐ ব্যক্তি যার পর কোনো নবী নেই।

রেফারেন্স : সহীহ মুসলিম (ইফা) অধ্যায়ঃ ৪৫/ ফযীলত (كتاب الفضائل) হাদীস নম্বরঃ ৫৮৯৪।

হাদীসটির ইংলিশ ভার্সন :

  • Jubair b. Mut’im reported on the authority of his father that he heard Allah’s Messenger (ﷺ) as saying: I am Muhammad and I am Ahmad, and I am al-Mahi (the obliterator) by whom unbelief would be obliterated, and I am Hashir (the gatherer) at whose feet mankind will be gathered, and I am ‘Aqib (the last to come) after whom there will be no Prophet ‏.‏

৩। কতিপয় মিথ্যুক বের না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না (بَابُ مَا جَاءَ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ كَذَّابُونَ ):

হাদীসের সনদ সহ আরবী অংশ :

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَبِي أَسْمَاءَ الرَّحَبِيِّ، عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي ثَلاَثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

অর্থ : হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে শামিল না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। এমনকি এরা মূর্তিপূজা পর্যন্তও করবে। অচিরেই আমার উম্মতে ত্রিশজন অতি মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। তারা প্রত্যেকেই দাবী করবে যে, তারা নবী, অথচ আমিই শেষ নবী, আমার পরে কোন নবী নাই। সহীহ, মিশকাত ৫৪০৬, সহীহাহ ১৬৮৩, তিরমিজী হাদীস নম্বরঃ ২২১৯ (আল মাদানী প্রকাশনী)। আবু ঈসা আত-তিরমিজী রহঃ বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

রেফারেন্স : সূনান তিরমিজী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৩৬/ ফিতনা (كتاب الفتن عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ২২২২।

ফুটনোট : ‘আমার উম্মতে ত্রিশজন অতি মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে’ হাদীসের এই কথার ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিশ্ববিখ্যাত ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (৭৭৩-৮৫২ হিজরী কায়রো, মিশর) লিখেছেন,

و انما ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﻣﻦ ﻗﺎﻣﺖ ﻟﻪ ﺷﻮﻛﺔ ﻭﺑﺪﺕ ﻟﻪ ﺷﺒﻬﺔ

(উচ্চারণ, ওয়া ইন্নামাল মুরাদু মান ক্বামাত লাহু শাওকাতুন ওয়া বাদাত লাহু শুবহাতুন)।

অর্থাৎ এই ত্রিশজন মিথ্যাবাদী বলতে বিশেষভাবে ওরাই উদ্দেশ্য যাদের দাপট প্রতিষ্ঠা পাবে এবং (সাধারণ মানুষের ভেতর) তাদের তৎপরতার কারণে মারাত্মক সন্দেহ সৃষ্টি হবে। (ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী : খন্ড ১২ পৃষ্ঠা ৩৪৩)। অর্থাৎ এর মানে এই নয় যে, ত্রিশের পরের নবুওয়ত দাবীদারগণ “সত্য” বলে গণ্য হবে!

এবার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন, (উইকিপিডিয়া, বাংলা)

হাদীসটির ইংলিশ ভার্সন :

  • Thawban narrated that the Messenger of Allah(s.a.w) said: “The Hour shall not be established until tribes of my Ummah unite with the idolaters, and until they worship idols. And indeed there shall be thirty imposters in my Ummah,each of them claiming that he is a Prophet. And I am the last of the Prophets, there is no Prophet after me.”

উৎস : বাংলা হাদীস অ্যাপস (Apps) থেকে কপিকৃত।

ইসলামের এই শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবী :

মির্যা গোলাম কাদিয়ানী লিখেছেন,

‘মোটকথা আমি মুহাম্মদ ও আহমদ (সঃ) হওয়ার কারণে আমার নবুওয়ত ও রেসালত লাভ হয়েছে, স্বকীয়তায় নয়, ‘ফানাফির রসূল’ হয়ে অর্থাৎ রসূলের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে পেয়েছি। সুতরাং এতে ‘খাতামান্নাবীঈনের’ অর্থে কোন ব্যতিক্রম ঘটলো না। পক্ষান্তরে ঈসা আলায়হেসসালাম আবার (এ পৃথিবীতে) আসলে (খাতামান্নাবীঈনের অর্থে) নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম ঘটবে।’

(দেখুন ‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৫; [বাংলায় অনূদিত], দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ২০০১ ইং; অনুবাদক মৌলভী মোহাম্মদ; মূল লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; রচনাকাল ১৯০১ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ)।

  • কাদিয়ানীদের বই পুস্তক এবং পত্র পত্রিকায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে যেসব মর্মার্থে “শেষনবী” মান্য করার দাবী করে তা জানতে এখানে ক্লিক করুন

অতএব, খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর পর নবুওয়ত দাবী করায় মির্যা কাদিয়ানী একজন মিথ্যাবাদী ও ইসলাম থেকে খারিজ এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রমাণিত। ফলে তার অনুসারী কাদিয়ানী সম্প্রদায়ও কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই গণ্য হবে। যদিও তারা আমাদের মতই কলেমা পড়ে, নামাজ রোজা ইত্যাদি করেনা কেন! সংক্ষেপে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

তাহলে সেই ‘বহু রাসূল’ কারা যারা এখনো জীবিত

কাদিয়ানীদের একটি প্রশ্ন ও আমার জবাব :

প্রিয় কাদিয়ানীবন্ধুরা! আমি চাই আমার এই লিখা আপনাদের কারো বদ-হজমের কারণ না হয়। কাজেই যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা দূরত্ব বজায় রাখবেন!

  • কথায় আছে, আগের দিন বাঘে খাইছে। সবারই জানা, এখন সময় বদলে গেছে। সে সাথে শুধু জাগতিক শিক্ষাদীক্ষা আর প্রযুক্তির উন্নতি-ই হয়নি বরং দ্বীনি শিক্ষাদীক্ষারও খুবই উন্নতি হয়েছে। এখন প্রায় ঘরে ঘরে মওলানা মুফতি মুহাদ্দিস কিংবা দাওয়াত ও তাবলীগের দাঈ খুঁজে পাবেন। একদম সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষও আগের মত এখন আর যাই বলবেন তাই মুখবুজে শুনে হজম করেনা, প্রশ্নও করে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এখন এরাও দ্বীনি শিক্ষায় আগের মত পিছিয়ে নেই, মোটামুটি অগ্রসরমান। আর তাই অন্তত এটুকু হলেও বলতে শিখেছে, শায়খ বা হুজুর! হাদীসটি কি সহীহ না দ্বয়িফ? যদিও সে সহীহ আর দ্বয়িফের সংজ্ঞা ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারবেনা, ধারণা একটু হলেও আছে তা মানতে হবে। এটি খুবই ভালো দিক। আর এমনটি কেনই বা হবেনা, তথ্যপ্রযুক্তির এই বিশ্বায়নের যুগেও কেউ কি স্বেচ্ছায় পিছিয়ে থাকতে পারে? পারেনা! তাই বলেছি, আগের দিন বাঘে খাইছে।

একথা বলার উদ্দেশ্য?

তাহলে শুনুন, সেই ১৯৯৪ কি ৯৫ সালের কথা। তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের আন্দোলন তখন গোটা দেশব্যাপী সাড়া জাগানিয়া ছিল। কিন্তু সেসব আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা সচেতন জনতাই ভালো বলতে পারেন। আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। কিন্তু এখন দীর্ঘ চিন্তাভাবনা শেষে আমি যা বুঝলাম তা এককথায় প্রকাশ করলে ওই সব আন্দোলনের সুফল ‘সামান্যই’ ছিল। যেহেতু তখন স্যোসাল মিড়িয়া ছিলনা, ছিলনা যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি। আর সে ‘সামান্যই’ হচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ মানুষের কানে এটুকু পৌছানো যে, কাদিয়ানীরা কাফের! আসলে এইটুকুও বা কম কিসের?

কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ! খুশির খবর হল, বর্তমানে রদ্দে কাদিয়ানীয়তের উপর খতমে নবুওয়ত আন্দোলন এর নামে ভুঁইফোঁড় ব্যানারগুলো সমষ্টিগতভাবে যতটা খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন নাম-ঠিকানা ও ব্যানার বিহীন অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যাদের প্রায় সকলেই এই বিষয়ে পরিপূর্ণ অবিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত। আর তা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র ইখলাস আর সুশৃঙ্খল মেহনতের মাধ্যমে। এককথায়, বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমেই তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছে। ফলে আমার হিসেবে গোটা বাংলাদেশে গত ২০১৬ সালের পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ এর বেশি কাদিয়ানী মির্যার ধোকা আর প্রতারণা বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় তাওবা পড়ে ইসলামে ফিরে এসেছে! এইজন্য মাঠ পর্যায়ে ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অবিজ্ঞ মু’আল্লিমদের অনেক বেশি দাওয়াতি কাজ করতে হয়েছে। আর তাই কাদিয়ানীদের ভাবা উচিত, আজকের সময়টা আর সেই ‘৯৪ এবং ‘৯৫ এক না। আরে আমি তো নিশ্চিত, আগামী আর কয়েকটা বছর পর বাংলাদেশের তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের ব্যানার বিহীন সংগ্রামীরা বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে খুব দ্রুতই একটা ইতিহাস সৃষ্টি করবে, ইনশাআল্লাহ। আর সেজন্যই বলেছি আগের দিন বাঘে খাইছে!

আসি মূলকথায়,

কাদিয়ানীদের কথিত খলীফাতুল মসীহ আউয়াল হেকিম নূরুদ্দীন এর ‘ফসলূল খেতাব’ (রচনাকাল ১৮৮৭ইং) পুস্তকের ২৮ নং পৃষ্ঠার স্ক্রিনশট সহ উদ্ধৃতি দিয়ে গত লিখায় তাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম যে, দেখ দেখ সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতের ‘ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল’ এর অর্থে সেখানেও “বহু রাসূল গত হইয়াছে” লিখা আছে। বিস্তারিত আগের পোস্টে দেখুন। আগের পোস্ট এখানে

এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা একদম লা-জওয়াব ছিল। কিন্তু ইজ্জত বাঁচাতে শেষমেশ প্রসঙ্গ পাল্টে আমাকে প্রশ্ন করল, তাহলে মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বে আরো বহু রাসূল যারা জীবিত তারা আর কে কে আছেন? আসুন তাদের এই প্রশ্নটিরও জবাব দিই!

আরও জীবিত “বহু রাসূল” কে কে আছেন?

প্রথমত, “বহু” এর প্রয়োগ এবং ব্যবহারিক তাৎপর্য বুঝতে হবে। সমস্ত আর বহু—এই দুইয়ের মাঝে আদৌ কোনো পার্থক্য আছে কি নেই! যদি কোনো পার্থক্য না থাকে তখন তো প্রশ্ন আসবে যে, তাহলে কাদিয়ানীদের অনুবাদকৃত কুরআনে তারা “বহু রাসূল” এর স্থলে “সমস্ত রাসূল” এইরূপ অর্থ কেন করল? অতএব পার্থক্য নিশ্চয়ই রয়েছে এটাই অনস্বীকার্য। তাহলে সে পার্থক্যটা কী? সেই পার্থক্যটা বুঝার আগে আমি এখানে ইংরেজি দুটো শব্দ দিচ্ছি। many আর All এই দুইয়ের পার্থক্য যাদের বুঝে আসবে তাদের জন্য ওই দুটোর পার্থক্য বুঝাও সহজ হবে।

এখানে বলে রাখতে চাই, হেকিম নূরুদ্দীন সাহেব উক্ত বইটি কাদিয়ানী মতাদর্শে দীক্ষিত হওয়ারও আরো প্রায় চার বছর পর ১৮৮৭ সালে স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানীর নির্দেশে ও তারই তত্ত্বাবধানে লিখেছিলেন। একথাগুলো উক্ত বইয়ের (উর্দু) ১নং পৃষ্ঠাতেও রয়েছে।

(স্ক্রিনশট-১)

তিনি বইটি খ্রিস্টানদের খন্ডন করতেই মোট চার খন্ডে লিখেছেন। জম্মুর মহারাজা তিনি হেকিম নূরুদ্দীনকে পুঞ্চের রাজপুত্রের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পুঞ্চে পাঠালে তিনি সেখানে প্রায় একবছর সময়ব্যাপী বইটি লিখেন এবং লিখার সময় তিনি পত্র ও লেখনীর মাধ্যমে মির্যার কাছ থেকে অব্যাহত নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা লাভ করেন। সকল বিষয়ে তিনি মির্যার পরামর্শ চাইতেন। এ সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন ‘হযরত মৌলভী নূরউদ্দীন (রা.) খলীফাতুল মসীহ আউয়াল’ পৃষ্ঠা নং ৭৪-৭৫; প্রথম সংস্করণ বাংলা ২৭ মে ২০০৮ইং।

(স্ক্রিনশট-২)

দ্বিতীয়ত, উদাহরণ দিচ্ছি,

মনে করুন, প্রিন্সিপাল সাহেব ক্লাস নাইনের ছাত্রদের তার অফিসে আসতে নির্দেশ দিল। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ছাত্ররা এসে উপস্থিত হল। কিন্তু একজন ছাত্র যে কোনো কারণে তখনো এসে উপস্থিত হতে পারেনি। প্রিন্সিপাল সাহেব এমতাবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, সকলে বা সবাই কি এসেছো?

এখানে ওই যে একজন এখনো এসে উপস্থিত হলনা তজ্জন্য প্রিন্সিপালের উক্ত প্রশ্নের উত্তরটা এই পর্যায় কী হবে বলুন!

সকলে এসেছে—উত্তর কি কখনোই এটা হতে পারে? একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তির নিরপেক্ষ মন কী বলে?

এখানে প্রিন্সিপালের প্রশ্নের উত্তরে নিচের যে কোনোটাই সদুত্তর হতে পারে।

অনেকে এসেছে” কিংবা “বহু সংখ্যক এসেছে“।

অতএব যেহেতু বহু মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস বলছে যে, ঈসা (আ:) এখনো মৃত্যুবরণ করেননি সেহেতু সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতের “আর-রসুল” এর যেই অর্থ (বহু রাসূল) খোদ হেকিম নূরুদ্দীন সাহেবও নিয়েছেন সেটাই সঠিক এবং ব্যাকরণ সিদ্ধও বটে। আর সেজন্য বিপরীতে আরও “বহু রাসূল” জীবিত থাকা দাবী করবেনা। বরং “বহু রাসূল” অর্থ নেয়ার জন্য যে কোনো একজন রাসূলই জীবিত থাকা যথেষ্ট। অতএব কাদিয়ানীদের উপরিউক্ত যুক্তি পুরোটা অবান্তর। তবুও তাদের শান্তনার জন্য আমার কাছে একটা জবাব অবশ্যই রয়েছে। তা হল,

আগের সেই বহু রাসূল তারা কারা?

(১) এর উত্তরে আমার জবাব হল, মির্যা কাদিয়ানী হযরত মূসা (আ.) সম্পর্কে লিখেছে ‘লাম ইয়ামুত’ (لم يمت) অর্থাৎ তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৮ পৃষ্ঠা নং ৬৮-৬৯। আরো দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা) পৃষ্ঠা ৬২। অতএব আপনাদের বিচারে মূসা (আ.) এখনো জীবিত বুঝা গেল।

(২) পবিত্র কুরআনে (১৯:১৯) আল্লাহতালা হযরত জিবরাইল (আ.)-কেও ‘রাসূল‘ শব্দে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন হযরত মরিয়ম (আ.)-এর নিকট জিবরাইল (আ.)-কে পাঠানো হলে তিনি তাঁকে সম্বোধন করে যে কথা বলেছিলেন আল্লাহ তায়ালা সেটি পবিত্র কুরআনে হুবহু সেভাবেই উল্লেখ করে দিয়েছেন। জিবরাইল (আ.) বলেছেন, إنما انا رسول ربك অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রভুর একজন রাসূল বা বার্তাবাহক। এখানে জিবরাইল (আ.) “রাসূল” শব্দে আখ্যায়িত হয়েছেন। আর তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মেরও পূর্ব থেকেই ছিলেন এখনো জীবিতই আছেন। সূরা হাজ্জ আয়াত নং ৭৫ দেখুন, আল্লাহ বলেছেন, الله يصطفى من الملائكة رسلا و من الناس অর্থ তিনি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন এবং মানুষের মধ্য থেকেও। এতেও বুঝা যাচ্ছে যে, من قبله الرسل এর মধ্যে ‘সমস্ত রাসূল’ অর্থ নেয়া ঠিক হবেনা। অন্যথা জিবরাইল (আ.) সহ অনেক ফেরেশতাকেও বর্তমানে মৃত্যুবরণকারী বিশ্বাস করতে হবে। অথচ বহু হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত রয়েছে যে, ফেরেশতাদের মৃত্যু কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেই হবে, আগে নয়।

(৩) আমাদের মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মতিক্রমে “ঈসা” (আ.) এখনো জীবিত আছেন।

তাহলে কাদিয়ানীর মতে মূসা (আ.), পবিত্র কুরআনের কতেক আয়াত অনুযায়ী জিবরাইল এবং আরও বেশ কয়জন ফেরেশতা। কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈসা আলাইহিমুস সালাম। অন্ততপক্ষে তিন বা ততোধিক ‘আল্লাহ’র রসুল‘ জীবিত সাব্যস্ত হলো কিনা? কাদিয়ানীদের জন্য আফসোস! তারা এর পরেও তোতাপাখির মত সে একই কথা বলে বেড়াবে যে, তাহলে আরও জীবিত বহু রাসূল তারা কারা? সংক্ষেপে লিখলাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীর ডজন প্লাস রেফারেন্স

কাদিয়ানীরা মুসলমানদের ব্যাপারে কেমন ধারণা রাখে? এখানে ক্লিক করুন।

এক নজরে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের “নবী রাসূল” দাবীর রেফারেন্স তার এবং তার পুত্র আর আহমদী জামাতের নেতাদের কতেক বইপুস্তক থেকে :

  • মির্যা কাদিয়ানী সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে জানুন
  • এবার ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করছি-
  • (এক) কাদিয়ানীদের প্রকাশিত “নবুওয়ত ও খিলাফত” বইয়ের ৭৬ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ঘোষণা : “আল্লাহ’র নির্দেশ মুতাবেক আমি একজন নবী।” প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

(দুই) নবুওয়তি প্রাসাদের “সর্বশেষ ইট” হবার দাবী। যেমন, মির্যা সাহেব লিখেছেন, ‘নেয়ামতপ্রাপ্তদের প্রাসাদের একখানা ইটের জায়গা শূন্য ছিল। আল্লাহ ইচ্ছা করলেন যে, তিনি ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ করতে সর্বশেষ ইটের জায়গাটি পরিপূর্ণ করে প্রাসাদটি সম্পন্ন করবেন। আর আমিই হলাম সেই শূন্য জায়গার অবশিষ্ট ইট।’ (অনুবাদ শেষ হল)। দেখুন, খোতবায়ে ইলহামিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৬/১৭৭-৭৮ ; উল্লেখ্য মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি হল ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন।

(তিন) শেষনবীর দ্বিতীয় প্রকাশ ও প্রতিবিম্ব নবী হবার দাবী। রূহানী খাযায়েন ১৮/২১২।

(চার) শরীয়তি নবী হওয়ার দাবী। রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৩২; ১৭/৪৩৫-৩৬।

(পাঁচ) মুহাম্মদী ধারাবাহিকতায় শেষনবী হবার দাবী। রূহানী খাযায়েন ২০/৬৯-৭০; ১৯/৬১।

উল্লিখিত দাবীটি অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে ‘সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ’ বলে পরিষ্কার কুফুরী মতবাদটি কাদিয়ানী জামাতের এদেশীয় প্রকাশনী থেকেও বিভিন্ন বইপুস্তকে আমরা দেখতে পাই। (দেখুন, ইসলাম ও এ দেশের অন্যান্য ধর্মমত পৃষ্ঠা নং ৪২ এবং ৪৯, অনুবাদক: কাদিয়ানী ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল)।

(ছয়) সুস্পষ্টভাবে নবী এবং রাসূল হওয়ার দাবী। মির্যা কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে, আমার দাবী- আমি একজন নবী ও রাসূল। মালফূজাত ৫/৪৪৭; নতুন উর্দূ এডিশন অনলাইন ভার্সন।

(সাত) হযরত মূসা (আ:)-এর মত একজন রাসূল দাবী। মালফূজাত ৫/২৭; নতুন এডিশন।

(আট) মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন লিখেছেন, “আমাদের জন্য ফরজ হচ্ছে, আমরা যেন অ-আহমদীদের মুসলমান স্বীকার না করি এবং তাদের পেছনে সালাত না পড়ি। কেননা তারা (অ-আহমদীরা) আমাদের দৃষ্টিতে খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী।” মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর রচনাবলীর সমষ্টি আনওয়ারুল উলূম ৩/১৪৮, ৬/১৫১; অনলাইন এডিশন।

(নয়) তিনি আরও লিখেছেন যে, নবুওয়তের মাসয়ালার জট মির্যা কাদিয়ানীর উপর ১৯০১ সালের পরেই খুলেছে। তার মানে, তিনি ইতিপূর্বে যেসব শব্দের (উম্মতি/বুরুজী) আশ্রয় নিয়ে নবী দাবী করেছিলেন সেটি এখন (১৯০১ সালের পর থেকে) রহিত, সেসব দ্বারা এখন আর কেউ দলিল দিতে পারবেনা। এতে সাব্যস্ত হল যে, তিনি ১৯০১ সালের পর থেকে আপনা নবী দাবী সংক্রান্ত বিশ্বাসের ভেতর পরিবর্তন এনেছেন। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

(দশ) মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ লিখেছেন, میں نے حضرت مسیح موعود کی متعلق یہ خیال پہلا یا ہے کہ آپ فی الواقع نبی ہیں অর্থাৎ “আমি হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা কাদিয়ানী) সম্পর্কে এ বিশ্বাস প্রচার করেছি যে, তিনি এই সময়ের একজন নবী।” – (আয়ানায়ে সাদাক্বাত ১১০)। মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর রচনাবলীর সমষ্টি আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; অনলাইন এডিশন। (মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর ২৬ খন্ডে প্রকাশিত উর্দূ রচনাবলীর সমষ্টি انوار العلوم ডাউনলোড করুন এখান থেকে)।

(এগার) মির্যা কাদিয়ানীর “রাসূল” হওয়ার দাবী। আল্লাহতালা নাকি কাদিয়ানে তাঁর রাসূল পাঠিয়েছেন। দাফেউল বালা (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ১২।

(বারো) নবী এবং রাসূল হওয়ার দাবী। দেখুন, একটি ভুল সংশোধন (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৩,৫,৮,১০।

(তের) রাসূল হওয়ার দাবী। আল ওসীয়্যত (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ২০, ষষ্ঠ প্রকাশ, মে ২০২৩ ইং।

(চৌদ্দ) আল্লাহতালা নাকি মির্যাকেই “নবী” নামে খাস করেছেন। হাকীকাতুল ওহী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৩৩০।

(পনের) মুহাম্মদী ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী এই অধম (মির্যা কাদিয়ানী) । তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৮২।

(ষোল) আল্লাহ তায়ালার নাকি ওয়াদা ছিল উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে একজন “রাসূল” পাঠানোর। যে কিনা মাহদী ও মসীহ হবেন। দেখুন, ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুতে ইসলামের জীবন, লিখক শাহ মুস্তাফিজুর রহমান পৃষ্ঠা নং ৩৭ (১১তম পুনঃমুদ্রণ, জানুয়ারী ২০১৮ ইং)। স্ক্রিনশট এই যে,

(সতের) কাদিয়ানীদের প্রকাশিত ‘উম্মতিনবী‘ বইয়ের ৯ নং পৃষ্ঠাটি থেকে দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীকে একই সাথে নবী এবং উম্মতী দুটোই বলে মেনে নেয়া হয়েছে। স্ক্রিনশট এই যে,

উল্লিখিত দাবীটি মির্যা কাদিয়ানীর রচিত উর্দূ ভাষার রচিত ‘মালফুযাত‘ গ্রন্থের খন্ড নং ৫ এবং পৃষ্ঠা নং ৩৫৩ থেকেও দেখা যেতে পারে। স্ক্রিনশট এই যে,

কাদিয়ানী জামাতের অথেনটিক অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা যা ‘ভারতের কাদিয়ান’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে, নাম দৈনিক ‘আল ফজল‘ তাং ২৬-০৬-১৯২২ইং। পত্রিকাটির পাতা নং ৬ থেকে মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর উদ্ধৃতিটি নিচে বাংলায় অনুবাদ করছি, তিনি লিখেছেন-

“আমরা যেহেতু হযরত মির্যা সাহেবকে ‘নবী‘ মেনে থাকি আর গয়ের আহমদীরা (অ-কাদিয়ানীরা) তাঁকে ‘নবী’ মানেনা, সেজন্য কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী যে কোনো একজন নবীর অস্বীকারকারীও কাফের হওয়ায় গয়ের আহমদীরা কাফের।” (সম্পূর্ণ বক্তব্যটি কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফার বয়ান থেকেই উদ্ধৃত করা হল)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি এই-

এখন প্রশ্ন হল, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবের তো কথিত তৃতীয় শ্রেণীর নবী (জিল্লি, বুরুজি) দাবী ছিল। আর মির্যা বশির আহমদ এম.এ সাহেবের বক্তব্য অনুসারে, ‘খোদা আপনা বাণীতে (কুরআনে) কখনোই জিল্লি, বুরুজি শব্দ ব্যবহার করেননি।’ (কালিমাতুল ফছল ২৮)।

এমতাবস্থায় মির্যা গোলাম আহমদকে অস্বীকার করলে সেটি কুরআনের শিক্ষার বিরুদ্ধে গেল কিভাবে? কুরআনে উল্লিখিত কোনো নবী কি তৃতীয় শ্রেণীর (কথিত বুরুজি জিল্লি) নবী? অবশ্যই না।

সুতরাং সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানীর কথিত বুরুজি আর জিল্লি শব্দের আশ্রয় নিয়ে নবী দাবীটা শুধুই একটি প্রতারণাই ছিল। মূলত সে মুক্ত অর্থেই একজন নবী দাবীদার ছিল। যা তার কথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য হতেও সুস্পষ্ট। নতুবা উপরের প্রশ্নটির কী জবাব?

শেষকথা

  • উপরের রেফারেন্সগুলোর একটিও কোনো কাদিয়ানী স্থানীয় জনপ্রশাসনের উপস্থিতিতে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে আমি তাকে নগদে ১ লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দেব; আর প্রমাণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে তাকে অবশ্যই তাওবা পড়ে ইসলাম কবুল করতে হবে এবং প্রকাশ্যে কাদিয়ানীয়ত ছাড়ার ঘোষণা দিতে হবে। যোগাযোগ 01629941773 (ইমু & ওয়ার্ডশপ)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

আদম (আ:) কি প্রথম মানুষ নন? কাদিয়ানী মতবাদের খন্ডন

হযরত আদম (আ:) কি একই সাথে প্রথম নবী এবং প্রথম মানুষ নন? কাদিয়ানীদের একটি ইসলাম পরিপন্থী কুফুরী আকীদার দাঁতভাঙা জবাব :

কাদিয়ানীদের বইগুলো অসম্ভব রকমের স্ববিরোধ কথাবার্তায় ভরা! এদের মু’আল্লিমদের যদি প্রশ্ন করেন যে, হযরত আদম (আ:)-ই আমাদের আদি-পিতা ছিলেন, তোমরা কি এটা মানো? তারা জবাবে বলবে, না আমরা এটা মানিনা! তারা তাদের মতের পক্ষে অনেক যুক্তি এবং পবিত্র কুরআন থেকে আয়াত উল্লেখ করে অপব্যাখ্যাও দিতে চাইবে!

কিন্তু এই যে একখানা বইয়ের স্ক্রিনশট দেখতে পাচ্ছেন, এটিও কিন্তু তাদেরই বই। মির্যা কাদিয়ানীর ১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বরে লাহোরে একটি জনসমাবেশে তারই একটি লেকচারের বঙ্গানুবাদ। এই বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় দেখুন পরিষ্কারভাবে আগের মতবাদেরই বিপরীতে লিখা আছে,

  • “পূর্ববর্তী সকল সভ্যতার পর যে আদম (আ:) আগমন করেন, যিনি আমাদের সবার আদি পিতা, পৃথিবীতে তাঁর আগমনের যুগ থেকে বর্তমান মানব সভ্যতা সূচিত হয়েছে। আর এই (সমস্ত) সভ্যতার পূর্ণ চক্রের আয়ু সাত হাজার বছর পর্যন্ত প্রসারিত।”

উল্লিখিত লেখনী হতে বুঝা গেল, মানব সভ্যতার পূর্ণ চক্রের আয়ু ‘সাত হাজার বছর’ বলে মির্যা কাদিয়ানী আরও যা বললেন অর্থাৎ মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও তাঁর যুগ থেকেই মানবসভ্যতা সূচিত হয়। আর সাত হাজার বছর পরপরই উক্ত সভ্যতার পরিসমাপ্তি ঘটবে তথা কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।

  • মির্যা সাহেবের রচনাবলীতে স্ববিরোধ কথার পরিষ্কার চাপ বিদ্যমান। তার কোনো কোনো লিখনীতে আদম (আ.)-কে প্রথম মানব বলে অস্বীকার করার কথা থাকলেও তিনি তার উক্ত বক্তব্যে প্রথম মানব বলে হযরত আদম (আ.)-কেই উল্লেখ করে গেছেন। কিন্তু অধিকাংশ কাদিয়ানীর এসবে কোনো ধারণা নেই।

অপ্রিয় হলেও সত্য তাদের বইগুলো পড়লে যে কেউই এভাবে অসংখ্য স্ববিরোধ কথাবার্তার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবেন।

যাইহোক, এবার সামনে চলুন!

কাদিয়ানীধর্ম এর অনুসারীরা ডারউইন এর বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কুরআনের সাথে মিশিয়ে বলতে চায় প্রথম মানব আদমের পূর্বেও বহু বন্য মানুষ ছিল । নাউযুবিল্লাহ। এর মানে এদের বিশ্বাস হল, হযরত আদম (আ:) প্রথম মানব ছিলেন না, বরং তাঁর পূর্বেও মানব গোষ্ঠী ছিল! তাই এদের উদ্দেশ্যে এখানে আমি কিছু দলিল ও যুক্তি-নির্ভর প্রশ্ন উত্থাপন করছি। আমি তাদের বিবেকের নিকট প্রশ্নগুলোর উত্তর চাইব! তাই প্রথমেই একটি আয়াত দিয়েই শুরু করছি,

আল্লাহতালা ইরশাদ করেন :

إن مثل عيسى عند الله كمثل آدم خلقه من تراب ثم قال له كن فيكون অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আল্লাহ’র নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তিনি তাঁকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন তারপর তাঁকে বলেছিলেন, হয়ে যাও! সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন (সূরা আল ইমরান – ৫৯)।

সম্পর্কিত আলোচনা : মহান আল্লাহ পিতা বিহীন ঈসা (আ:)-কে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন যেভাবে প্রথম মানব আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন। আদমের সাথে ঈসার দৃষ্টান্ত এটাই। উক্ত আয়াতে আবার বলা হল, আদমকে মাটি দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হয়ে যাও বলতেই পূর্ণাঙ্গ রক্তে মাংসে পরিণত হয়ে গেছে, এই আয়াতে ইহা একেবারেই সুস্পষ্ট। অতএব, আদমের পূর্বে কোনো মানুষ ছিল না বলেই অকাট্যরূপে প্রমাণিত। ডারউইনের ভ্রান্ত মতবাদকে বিজ্ঞান আখ্যা দিয়ে মহাগ্রন্থে আল কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করে ব্যতিক্রম কিছু সাব্যস্ত করার আর কোনো সুযোগই থাকেনি।

হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, হযরত আদম (আ:)ই যদি প্রথম মানুষ হন তাহলে তখন তো আর কোনো মানুষই জগতে ছিলো না। এমতাবস্থায় তিনি কাদের জন্য নবী হয়ে আসলেন কিংবা কোন সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হলেন? এতেই বুঝা যায়, মূলত যিনি প্রথম আদম তিনি নবুওয়তের অধিকারী হযরত আদম নন, বরং ভিন্ন একজন। (কাদিয়ানীদের দাবী ও যুক্তি শেষ হল)।

  • তাদের উক্ত দাবী এবং যুক্তির জবাব একদম শেষেই দেয়া হবে। তার আগে তাদেরই উক্ত দাবী এবং যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের উদ্দেশ্যে পালটা কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

১। পবিত্র কুরআনে কয়জন আদম এর উল্লেখ আছে? কয়েকজন আদমের নাকি শুধুই একজন আদমের? এর জবাব আগে দিন! যদি বলেন, কয়েকজন আদমের কথাই উল্লেখ আছে। তাহলে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ উল্লেখ করুন।

২। এই প্রশ্নটি বুঝার সুবিধার্থে প্রথমে হাদীসটি পড়ুন। সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া পর্বের অধ্যায় নং ৫০ এবং হাদীস নং ৩১০০ দেখুন, হাদীসের আরবী,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ

অর্থ, আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো ব্যাক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের একাংশ আদম (আ.)-এর প্রথম ছেলের (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন করেছে।” এবার প্রশ্নটি এই,

এই হাদীসটিও কাদিয়ানী মতবাদের অসারতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয় কি? কেননা, আদম যদি কয়েকজনই হত তাহলে অন্তত এই হাদীসে সেদিকে ইংগিত নেই কেন? যেজন্য এখানে আদম (আ.)-এর সন্তান ‘কাবিল‘ এর যে ব্যাপারটি আলোচিত হল, এর পরিপ্রেক্ষিতে কাদিয়ানীদের প্রতি যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হল, তবে কি তাদের (কাদিয়ানীদের) কনসেপ্ট অনুসারে আরও যত আদম ছিলেন তাদের সন্তানদের মধ্য হতে কেউই কখনো খুন-খারাবি করেনি? যদি করে থাকে তাদের আলোচনা কোথায়?

৩। আর যদি বলেন, শুধুই একজন আদমের কথাই উল্লেখ আছে, তাহলে আমার নিচের এই প্রশ্নটির কী জবাব?

আমার প্রশ্নটি হল :

আল্লাহতালা সূরা আল বাক্বারা এর ৩০ নং আয়াতে আদম (আ:) সম্পর্কে ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বলেছিলেন, “ইন্নী জা’ইলুন ফিল আরদ্বি খলীফা” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি (খলীফা) মনোনীত করব। এখানে আদমকে ভবিষ্যতের একজন “খলীফা” তথা আল্লাহর প্রতিনিধি বা একজন নবী হওয়ার সংবাদ দেয়া হয়েছে। তারপর একই সূরার ৩৫ নং আয়াতে আদম হাওয়া দুইজনের ব্যাপারে এসেছে, “উসকুন আন্তা ওয়া ঝাউজুকাল জান্নাতা” অর্থাৎ তুমি এবং তোমার স্ত্রী দুইজনই জান্নাতে অবস্থান কর।

উপরের দুইটি আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট হল যে, আদম এবং হাওয়া দুইজনই পৃথিবীতে আসার আগে জান্নাতে ছিলেন এবং আদম (আ:) পরবর্তীতে নবুওয়তের অধিকারী হয়েছেন। বর্তমান দুনিয়ার সমস্ত মানুষ তারই বংশধর, ফলে তাদেরকে বলা হয় বনি-আদম বা আদমের সন্তান-সন্ততি।

একই সূরার ৩৬ নং আয়াতে এসেছে, “ওয়া কুলনাহবিতূ বা’দ্বুকুম লি-বা’দ্বিন আদ্বু-উ ওয়ালাকুম ফিল আরদ্বি মুস্তাতাক্বাররুন ওয়া মাতা-‘উন ইলা-হীন।” অর্থাৎ আমি তাদের বললাম, তোমরা একজন আরেকজনের দুশমন হিসেবে এখান থেকে নেমে পড়ো, তোমাদের (পরবর্তী) বাসস্থান (হচ্ছে) পৃথিবী, সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্যে জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ থাকবে।”

সহীহ মুসলিম শরীফ এর ৮৫৪ নং হাদীসে উল্লেখ আছে, আদম (আ:)-কে জুমাবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে জুমাবারেই জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সূরা আ’রাফ এর ২৭ নং আয়াতটিও এর পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহতালা বলেন, “ইয়া বানী আদামা লা ইউফতিনান্নাকুমুশ শায়ত্ব-না কামা আখরাজা আবাওয়াইকুম মিনাল জান্নাতি।” অর্থাৎ হে আদম সন্তান! শয়তান তোমাদেরকে যেন ফেতনায় ফেলে না দেয় যেমনিভাবে তোমাদের আদি মাতা-পিতাকে সে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, আদি মাতা-পিতা আদম হাওয়াকে ফাঁদে ফেলতে শয়তানের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার প্রয়োজন ছিলনা। কেননা আল্লাহতালা শয়তানকে অনেক দূর থেকে মানুষকে প্ররোচিত করার সক্ষমতা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আ’রাফ এর ২০ নং আয়াত “ফা ওয়াসওয়াসা লাহুমা” অর্থাৎ সে তাদের দুইজনকে প্ররোচিত করেছিল, পরিষ্কার উল্লেখ আছে। অতএব শয়তান তাদের দুইজনকে জান্নাতের বাহির থেকেই প্ররোচিত করেছিল, ভেতরে প্রবেশ করতে হয়নি; বুঝা গেল।

এই দীর্ঘ আলোচনার পরের অংশ দ্বারা বুঝা গেল, জান্নাত (আকাশ) থেকে যাঁকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হল তিনি একই সাথে পৃথিবীর প্রথম মানুষও। অন্যথা তাঁর সাথে আদি-মাতা হযরত হাওয়া (حواء) এর কী সম্পর্ক?

কিংবা আল্লাহতালা আদম-হাওয়া এবং শয়তান তিনোজনকে “ইহবিতূ” (ا) বহুবচনে কিজন্য বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও’ যদি এই আদমের আগেও মানব মণ্ডলীর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকত?

আরো প্রশ্ন আসে, এই আদমের আগেই যদি মানব গোষ্ঠী পৃথিবীতে বিদ্যমান থাকত তাহলে আল্লাহতালা কিজন্য “ওয়া লাকুম ফিল আরদ্বি মুস্তাকাররুন” অর্থাৎ এখান থেকে নেমে পড়ো, তোমাদের (পরবর্তী) বাসস্থান (হচ্ছে) পৃথিবী, সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্যে জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ থাকবে”-এভাবে বললেন? এতে কি প্রমাণিত হয়না যে, এই আদমই প্রথম মানুষ যিনি পৃথিবীতে আদি-মাতা হাওয়া সহ জান্নাত থেকে নেমে আসার পরবর্তী সময়ে নবুওয়তের অধিকারী হয়েছিলেন!? অন্যথা পবিত্র কুরআন থেকেই আপনাদের তথাকথিত প্রথম মানুষটির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে যিনি উক্ত আয়াতে উল্লিখিত আদম (আ:) ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ!

এবার তাদের বালখিল্য টাইপের উক্ত প্রশ্নের উত্তর :

  • তাদের প্রশ্ন ছিল, হযরত আদম (আ:)ই যদি প্রথম মানুষ হন তাহলে তখন তো আর কোনো মানুষই জগতে ছিলো না। এমতাবস্থায় তিনি কাদের জন্য নবী হয়ে আসলেন কিংবা কোন সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হলেন?

জবাব হল, আচ্ছা প্রশ্নকারী কি আমাকে একথা প্রমাণ করে দিতে পারবেন যে, হযরত আদম (আ:)-কে যখন জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হচ্ছিল তিনি তখনই নবুওয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন? নাকি আদম (আ:) পৃথিবীতে নেমে আসার পরবর্তীতে যথাসময়ে নবুওয়ত লাভ করেছিলেন? প্রশ্নকারীদের প্রতি কেয়ামত পর্যন্ত আমার চ্যালেঞ্জ থাকল, তারা কখনো প্রমাণ করতে পারবেনা যে, হযরত আদম (আ:) যখন পৃথিবীতে নেমে আসেন তাঁকে আল্লাহতালা তখনই নবুওয়ত দান করেছিলেন! বরং আমাদের বিশ্বাস হল, আল্লাহতালা আদম (আ:)-কে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়ার পরবর্তীতে যথাসময়ে নবুওয়ত দান করেছিলেন। অতএব কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লিখিত প্রশ্ন পুরোই অসার সাব্যস্ত হল।

শেষকথা হল, কাদিয়ানীরা মূলত এইধরনের আরো বহু ইসলামপরিপন্থী মতাদর্শ পোষণ করার কারণে তারা ইসলাম থেকে খারিজ এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এদের সমুদয় ঈমান বিধ্বংসী কুফুরী আকীদা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মুসলমান এর সংজ্ঞা কী? কাদিয়ানীদের প্রশ্নের উত্তর

মুসলমান এর সংজ্ঞা

কাদিয়ানিদের একটি কুতর্ক হল, বলুন! মুসলমানের সংজ্ঞা কী? কাদিয়ানীদের মধ্যে অধিকাংশই সিপিবি এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। কেউ কেউ আওয়ামীলীগ, বিএনপি কিংবা জাসদ ইত্যাদি রাজনীতির সাথেও যুক্ত। তবে সেই সংখ্যাটি খুবই কম। সে যাইহোক, আমার জানামতে, সিপিবি বলেন আর আ’লীগ কিংবা বিএনপি যা-ই বলেন, কোনো দলের কোনো নেতৃবৃন্দই কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী নন। এমতাবস্থায় কাদিয়ানী কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমার প্রশ্ন, উক্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে আপনাদের অথেনটিক সিদ্ধান্ত কী? ওরা কি মুসলমান নাকি মুসলমান নন? কেননা কাদিয়ানী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ও তার কথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ পরিষ্কার লিখে গেছে, মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি যে বা যারাই ঈমান আনবেনা তাদের প্রত্যেকে কাট্টা কাফের, জাহান্নামী। (নাউযুবিল্লাহ)।

মূল আলোচনা

কাদিয়ানীদের কথিত দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন এর রচিত “আয়নায়ে সাদাকাত” এর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে,

کل مسلمان جو حضرت مسیح موعود کی بیعت میں شامل نہیں ہوئے خواہ انہوں نے حضرت مسیح موعود کا نام بہی نہیں سنا وہ کافر اور دائرہ اسلام سے خارج ہیں

(উচ্চারণ) কুল মুসলমান জু হযরত মসীহ মওউদ কি বাইয়েত মে শামেল নিহি হোয়ে খাহ উন হোঁ নে হযরত মসীহ মওউদ কা নাম বিহি নিহি চুনা উয়োহ কাফের আওর দায়েরায়ে ইসলাম চে খারেজ হেঁ।

(বাংলা অনুবাদ) যে সমস্ত মুসলমান মসীহ মওউদের (মির্যা কাদিয়ানী) বাইয়েতের মধ্যে শামিল হয়নি, তারা যদিও বা হযরত মসীহ মওউদের নাম পর্যন্ত শুনেনি এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলামের গন্ডি থেকে বহিষ্কৃত। (আরো দেখুন, মির্যা বশির উদ্দিন এর রচনাবলীর সমষ্টি ২৬ খন্ডে প্রকাশিত ‘আনওয়ারুল উলূম’ এর ৬ নং খন্ডের ১১০ নং পৃষ্ঠা, অনলাইন এডিশন [উর্দু])।

কাদিয়ানীদের বইতে যেভাবে মুসলমান এর সংজ্ঞা লিখা আছে,

উপরে তারা “কাফের” এর সংজ্ঞা দিলেন। এবার এর বিপরীতে “মুসলমান” এর সংজ্ঞা কী দাঁড়ায় দেখুন, যারা মির্যা কাদিয়ানীর বাইয়েতের মধ্যে শামিল হবে তথা কাদিয়ানী মতবাদে দীক্ষিত হবে শুধুমাত্র তারাই মুসলমান এবং তারাই ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকবে। এককথায়, যারা কাদিয়ানী নয় তারা মুসলমান নয়।

মুসলমান এর সংজ্ঞা কী, এ ধরনের প্রশ্নের অন্তরালে,

এইরকম প্রশ্ন তুলা তাদের মূলত একটি অপকৌশল! এতে শ্রোতার দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়াও উদ্দেশ্য থাকে এমনকি আলোচনার টপিক পরিবর্তন করার অসৎ উদ্দেশ্যও বলা যেতে পারে। তাই তাদের বই থেকেই তথাকথিত “কাফের” এবং পরোক্ষভাবে “মুসলমান” এর সংজ্ঞা আজ এখানে পোস্ট করতে বাধ্য হলাম। এখানে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হল, কাদিয়ানীদের উক্ত “কাফের” এর সংজ্ঞা মতে মির্যা কাদিয়ানীকে নবী রাসূল স্বীকার না করায় আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ আমরা সবাই তাহলে কী হতে যাচ্ছি? ভাবিয়ে তুলে কিনা?

অতএব, কে মুসলমান আর কে কাফের – এর পুরোটাই যখন নির্ভর করছে মির্যা কাদিয়ানিকে গ্রহণ করার উপর তখন আমাদের প্রাণপ্রিয় এই বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ কোটি কোটি মানুষ কেউ-ই কি আর মুসলমান থাকল? যদিও বা আমরা আল্লাহ ও তাঁর খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বান্তকরণে মেনে চলি না কেন! যদিও বা মুসলমানের ন্যায় সালাত আদায় করি না কেন! যদিও বা কা’বা শরীফকে কেবলা মানি না কেন? যদিও বা মুসলমানের জবেহ কৃত হালাল জন্তুর গোশত আমরা ভক্ষণ করি না কেন? হায় হায়! এখন এর কী হবে!

লিখাটির কোনো রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে নগত ১ লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দেয়া হবে।

লিখক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী। শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কবরের আযাব সম্পর্কে সহীহ হাদীস

কবরে ফেরেশতার সুওয়াল জওয়াব এবং আযাব সম্পর্কিত দলীল প্রমাণ

কবরে ফেরেশতার সুওয়াল জওয়াব এবং আযাব সম্পর্কে সহীহ বুখারী’র কিতাবুল জানায়েজ অংশে বিস্তারিত বহু হাদীস উল্লেখ রয়েছে। এখানে লম্বালম্বি কোনো আলোচনায় যাব না। শুধুমাত্র ‘কবরের আযাব’ সম্পর্কিত একটি সহীহ হাদীস অনুবাদ সহ উল্লেখ করব! কাদিয়ানীদের অন্যতম একটি ধর্মবিশ্বাস হল, কবরে কোনো সুওয়াল জওয়াব কিংবা আযাব এসবের কিছুই হবেনা। অথচ ইমাম বুখারীর দাদা ওস্তাদ (শায়খ) সংকলিত হাদীসের প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘মুসান্নাফে আব্দ রায্যাক‘ কিতাবুল জানায়েজ, বাবু ফিতনাতিল কবরি, হাদীস নং ৬৭৩৭ -তেও সুুুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে : ফিরিশতা জিজ্ঞেস করবেন “তোমার নবী কে?”। এমনকি সহীহ বুখারীর মধ্যেও উল্লেখ আছে। এই দেখুন,

কবরের আযাব সম্পর্কে সহীহ হাদীস :

  • গ্রন্থ : সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন /ইফা:)
  • অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা (كتاب الجنائز)
  • হাদিস নম্বরঃ ১২৯১

৮৬৯. কবর আযাব প্রসংগে।

باب مَا جَاءَ فِي عَذَابِ الْقَبْرِ حَدَّثَنَا عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ، وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم‏.‏ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ‏.‏ فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ، قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ، فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا ‏”‏‏.‏ قَالَ قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ فِي قَبْرِهِ‏.‏ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ ‏”‏ وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي، كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ‏.‏ فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ‏.‏ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً، فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ، غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ ‏”‏‏.‏

অনুবাদ : আইয়াশ ইবনু ওয়ালিদ (রহ:) … আনাস ইবনু মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মৃত) বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথী এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে সে (মৃত ব্যাক্তি) তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফিরিশতা তার কাছে এসে তাকে বসান এবং তাঁরা জিজ্ঞেস করেন,‏ ((مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم)) অর্থাৎ এ ব্যক্তি তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নজর কর! আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে ফেলবে।

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (রহ:) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি (কাতাদা) পুনরায় আনাস (রা:) এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [আনাস (রা:)] বলেন, আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে, তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কি বলতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানিনা। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি (মানব ও জ্বীন) ব্যতিত তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ:)-এর কবর নিয়ে মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধ বক্তব্য

ঈসা (আ:)-এর ‘কবর’ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর চার (৪) ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইসমূহে জীবিত ঈসা (আ:)-এর ‘কবর’-এর স্থান সম্পর্কে চার ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য। যথা :

(১) ‘সিরিয়া’ এর গ্যালীলে। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)।

(২) ‘ফিলিস্তিন’ এর বায়তুল মুকাদ্দাসের আঙ্গিনায়। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৮ পৃষ্ঠা নং ২৯৬-৩০০ [টিকা দ্রষ্টব্য])।

(৩) ‘কাশ্মীর’ অথবা তার আশপাশে [তথা তিব্বতের কোনো শহরে]। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১০ পৃষ্ঠা নং ৩০২)। উল্লেখ্য, এখানে ‘অথবা’ বলে কী বুঝালেন? তবে কি মির্যা সাহেব নিজেও কনফিউজড ছিলেন? এই তথ্যটি ইলহামি হলে আবার কনফিউজড কেন?

(৪) ‘কাশ্মীর’ এর শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’তে। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৪ পৃষ্ঠা নং ১৭২)।

এবার বিস্তারিত আলোচনা :

১. সিরিয়ার গ্যালীল এর কবর :

সিরিয়া এর গ্যালীলের কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “সত্য তো এটাই যে, মসীহ আপনা মাতৃভুমি গ্যালীলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু সেখানে তাঁর যে দেহ দাফন হয়েছিল সেটি আবার জীবিত হয়ে গিয়েছিল একথা কোনোভাবেই সত্য নয় । বরং (লূক এর ইঞ্জিলের) ঐ অধ্যায়ের তৃতীয় আয়াত দ্বারা প্রকাশ রয়েছে যে, মৃত্যুবরণ করার পর কাশফ (দিব্যি দর্শন) অবস্থায় মসীহ চল্লিশ দিন পর্যন্ত আপনা শিষ্যদের দর্শন করেছেন। এখানে কেউ যেন একথা মনে না করে যে, মসীহ শূলিবিদ্ধ হওয়ার কারণেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেননা আমরা প্রমাণ করে আসছি যে, খোদাতায়ালা মসীহকে শূলি হতে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। বরং ‘আমলের প্রথম অধ্যায়’ এর এই তৃতীয় আয়াত সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মসীহ’র স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিল যা গ্যালীলেই সংঘটিত হয়েছে। ঐ মৃত্যুর পরেই মসীহ আপনা শিষ্যদের চল্লিশ দিন পর্যন্ত কাশফ অবস্থায় দর্শন করেছিলেন।”

সতর্কতা : এখানে কোনো ধুর্ত কাদিয়ানী হয়ত একথা বলতে পারে যে, উক্ত কথাগুলো মির্যা সাহেবের নিজেস্ব নয় বরং তিনি অন্য কারো কথাকে উদ্ধৃত করে এখানে উল্লেখ করে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, যে কেউই পড়ে বুঝতে সক্ষম যে কথাগুলো সম্পূর্ণ তারই। পাঠকবৃন্দ! আমার এ লিখাটি কোনো ব্রেইন ওয়াশ কাদিয়ানীর জন্য নয়, বরং সেসব সত্যানুসন্ধানীবন্ধুদের জন্যই যারা আখেরাতে নিজের নাজাতের পূর্ণ আশাবাদী ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতবাসী হতে চান। আমি আশা করব, নিরপেক্ষতার সাথে মির্যা সাহেবের স্ববিরোধ কথাবার্তাগুলো নিয়ে সামান্য একটু চিন্তা করবেন! তবেই মির্যা সাহেব ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করার জন্য এতটা উদগ্রীব কেন ছিলেন তার প্রকৃত রহস্য খুবই তাড়াতাড়ি উন্মোচন হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। অপ্রিয় হলেও সত্য কথা, মির্যা সাহেব মূলত নিজেকে ‘মসীহ’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি ঈসা (আ:)-কে মৃত প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন।

২. ‘ফিলিস্তিন’ এর বায়তুল মুকাদ্দাসের কবর :

বায়তুল মুকাদ্দাসের কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “আর বাস্তবতা এই যে, হযরত ঈসার কবরও শামে বিদ্যমান। আর আমি অত্যধিক সমাধানের জন্য এখানে টিকাতে আমার ভ্রাতা সাইয়েদ মৌলভী মুহাম্মদ সাঈদী তরাবলিসি’র সাক্ষ্য উল্লেখ করে দিয়েছি। তিনি শামের তরাবলিসের অধিবাসী। তথায় হযরত ঈসার কবর বিদ্যমান। যদি বল যে, ঐ কবর একখানা জা’লি (কৃত্রিম) কবর তাহলে সেটি যে কৃত্রিম কবর তার প্রমাণ দিতে হবে এবং সাব্যস্ত করতে হবে যে, এই কৃত্রিম কবর কবে তৈরী করা হয়েছিল! এই অবস্থায় তো অন্যান্য নবীর কবরের ব্যাপারেও কোনো শান্তনা থাকেনা, নিরাপত্তা উঠে যাবে। বলতে পারে যে, সে সকল নবীর কবরগুলোও হয়ত জা’লি (কৃত্রিম) কবরই!” (রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৬-৯৭)।

উল্লেখ্য, প্রাচীন ভৌগলিক সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাসও শাম এর অন্তর্ভুক্ত। মির্যা সাহেব এখানে শামের কবর বলতে বায়তুল মুকাদ্দাসের কবরকেই বুঝিয়েছেন। তার প্রমাণ তারই মুরিদের উক্ত পত্র। যেখানে উল্লেখ আছে “হযরত ঈসা (আ:) বেথেলহামে জন্মগ্রহণ করেন। বেথেলহাম আর কুদ্স এই দুয়ের মধ্যবর্তী তিন কোছ তথা ছয় মাইল দূরত্ব এবং হযরত ঈসা (আ:) এর কবর কুদ্স শহরেই রয়েছে এবং তা এখনো বিদ্যমান। তথায় একটি গির্জা তৈরী করা হয়েছে যেটি সমস্ত গির্জা অপেক্ষা বড়। তার অভ্যন্তরে ঈসা (আ:) এর কবর রয়েছে এবং হযরত মরিয়ম সিদ্দিকার কবরও রয়েছে। দু’নো কবর পৃথক পৃথক। বনী ইসরাঈলী যুগে ‘কুদ্স’ এর নাম ছিল ইউরোসলম, তাকে উরসলমও বলা হত। ঈসা (আ:)-এর মৃত্যুর পর ঐ শহরের নাম ‘ইলিয়া’ রাখা হয়েছিল। অতপর ইসলামী সাফল্যের পরবর্তীতে বর্তমান সময় পর্যন্ত শহরটি ‘কুদ্স’ নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। অনারবীরা সেটিকে ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ বলে।” (রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৯-৩০০)।

সর্তকতা : হয়ত মির্যাকে স্ববিরোধ কথাবার্তার অভিযোগ থেকে বাঁচাতে কোনো কাদিয়ানী বলতে পারে যে, এটি মির্যা সাহেবের নিজের কোনো কথা নয়, বরং তিনি তার জনৈক মুরিদের কথা উদ্ধৃত করেছেন মাত্র। এমন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আমার জিজ্ঞাসা হল, মির্যা সাহেব তো তার মুরিদের কথার উদ্ধৃতি দেয়ার আগেই লিখেছেন : ‘আর বাস্তবতা এই যে, হযরত ঈসার কবরও শামে বিদ্যমান’। মির্যা সাহেব তার উক্ত দাবীকে সঠিক প্রমাণ করতে আপনা মুরিদের পাঠানো পত্রের বিবরণকে সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাহলে এটি কিভাবে মির্যার নিজের কোনো কথা নয়, বলতে পারলেন? আর শামের তথা বায়তুল মুকাদ্দাসের ঐ কবরটি কৃত্রিম কোনো কবরই নয় বরং এটি ঈসা (আ:) এর প্রকৃত কবরই ছিল বলে দাবী করেন মির্যা সাহেব। তারই ভাষ্য : “যদি বল যে, ঐ কবর একখানা জা’লি (কৃত্রিম) কবর তাহলে সেটি যে কৃত্রিম কবর তার প্রমাণ দিতে হবে এবং সাব্যস্ত করতে হবে যে, এই কৃত্রিম কবর কবে তৈরী করা হয়েছিল!” সুতরাং বুদ্ধিমানদের জন্য গভীর চিন্তা করা দরকার যে, মির্যা সাহেব একজন মুলহাম দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও ঈসা (আ:) এর কবর সম্পর্কে বরাবরই স্ববিরোধ বক্তব্য দিয়ে গেছেন। তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য কি এইটুকুই যথেষ্ট নয়?

৩. ‘কাশ্মীর’ এর আশপাশে তথা তিব্বত এর কবর :

‘তিব্বত’ এর কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “কোনো আশ্চর্যের ব্যাপার নয় যে, তিনি (ঈসা) সেই পর্যটন যুগে তিব্বতেও আগমন করেছিলেন যেমনটি আজকাল কোনো কোনো ইংরেজ লিটারেচারদের রচনা দ্বারা বুঝা যায়। ডক্টর বার্নায়ার এবং কতিপয় ইউরোপীয় বিদ্যানদের মত হল, কোনো আশ্চার্যের বিষয় নয় যে, কাশ্মীরের অধিবাসীরা প্রকৃতই ইহুদীজাত। সুতরাং এই মতটিও একদমই আশ্চার্যের নয় যে, হযরত মসীহ সেসব (ইহুদীজাত) লোকদের নিকট আগমন করেছেন অতপর তিনি তিব্বত অভিমুখে যাত্রা করেছেন। তো আশ্চার্যের কি আছে যে, মসীহ এর কবর কাশ্মীর অথবা তার আশপাশে (যেমন তিব্বত ইত্যাদী এলাকায়) রয়েছে। ইহুদী রাষ্ট্রগুলো থেকে তাদের বেরিয়ে আসাই ইংগিত করে যে, নবুওয়তেরধারা তাদের বংশ থেকে বেরিয়ে গেছে।” (রূহানী খাযায়েন ১০/৩০২)।

সতর্কতা : হয়ত এখানেও কাদিয়ানীরা মির্যাকে তার স্ববিরোধ বক্তব্যের অভিযোগ থেকে বাঁচাতে বলবে যে, না না; এসব মোল্লাদের বানোয়াট আর মিথ্যা। এগুলোর সাথে মির্যা সাহেবের কোনোই সম্পর্ক নেই। আমি সেসব কপাল পোড়া আর ব্রেইন ওয়াশ মানুষগুলোকে বলব, আমার পক্ষ হতে কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ রইল এখানে যা লিখেছি তার একটি বাক্যও মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেনা। পারলে চ্যালেঞ্জ কবুল কর।

৪. ‘কাশ্মীর’ এর শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’ এর কবর :

শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’ এর কথিত কবর সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর বাণী : “খোদা তায়ালার দয়ায় বিরুদ্ধবাদীদের অপদস্থ করার জন্য এবং লিখকের (মির্যা) সত্যতা প্রমাণিত করার জন্য একথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, শ্রীনগরের খান-ইয়ার মহল্লাতে ইউজ আসেফ নামীয় ব্যক্তির যে কবর বিদ্যমান আছে সেটি প্রকৃতপক্ষে ও নিঃসন্দেহে হযরত ঈসা আলাইহে ওয়া সাল্লামের কবর।” তিনি একই পৃষ্ঠায় একদম শেষ দুই লাইনে লিখেছেন : “বরং আমরা প্রমাণ করেছি যে, ইউজ আসেফ এটি হযরত ঈসা আলাইহে ওয়া সাল্লামেরই নাম। ভাষাগত বিবর্তনের ফলেই শব্দের এই পরিবর্তন সাধিত হয়। এখনো কোনো কোনো কাশ্মীরী ইউজ আসেফ এর স্থলে ঈসা ছাহেব’ই বলে থাকে।” (রূহানী খাযায়েন ১৪/১৭২ [উর্দূ]; মূল গ্রন্থ ‘রাজে হাকীকত’ দ্রষ্টব্য)।

অথচ মির্যা সাহেবের দাবী হল,

“আমি জমিনের কথা বলিনা। কেননা আমি জমিন থেকে নই বরং আমি সেটাই বলে থাকি যা খোদা আমার মুখে ঢেলে দেন।” (পয়গামে ছুলহি, রূহানী খাযায়েন ২৩/৪৮৫)।

এমতাবস্থায় কাদিয়ানীরা মির্যার উক্ত স্ববিরোধ বক্তব্যের কী জবাব দেবে? তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য কি এইটুকুই যথেষ্ট নয়?

মন্তব্য, আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। পাঠকবৃন্দ! এবার নিজেরাই ভাবুন! এই ধরণের কেউ নিজেকে ইমাম মাহদী, মসীহ ইত্যাদি দাবী করলে তা কতটুকু নির্ভরযোগ্য হতে পারে! পরন্তু মির্যা সাহেব নিজেই নিজের কথায় একজন জঘন্য মিথ্যাবাদীও প্রমাণিত হলেন কিনা?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক