যিনি ঈসা তিনিই মাহদী, মহা বিভ্রান্তি ও ভয়ংকর অপব্যাখ্যা!!
তোমরা এই কাদিয়ানী মতের অনুসারী ভদ্রলোকটাকে এগুলো জিজ্ঞেস করে দেখ, জবাব দিতে পারবেনা!
একটি প্রশ্নোত্তরে এই সুলায়মান নামের সোনার ছেলেটা একদম সিলেক্টিভ ভাবে ঈসা (আ.) আর ইমাম মাহদী, দুইজনকে একই সত্তা বানিয়ে দেয়। এমনকি সে দলিলও দেয়! আহা! এই কোন দুনিয়ায় এলাম!! অথচ তার পাশেই বসা ছিল তাদের আহমদীয়া (কাদিয়ানী) জামাতের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেব। কিন্তু তিনিও তার এই সুস্পষ্ট বিকৃত ব্যাখ্যাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, থামিয়ে দেননি। আফসোস! সিফাত মওসূফের ব্যবহারিক নিয়ম কেমন, সে সম্পর্কেও যার বিন্দুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান নেই সে কিনা اماما مهديا (ইমামান মাহদীয়্যান)-এর অর্থ করতে আসছে ‘ইমাম মাহদীরূপে’! অথচ সিফাত মওসূফ হিসেবে এখানে ‘মাহদীয়্যান’ এর অর্থ আগে তারপর ‘ইমামান’ এর অর্থ। ফলে সঠিক অর্থ হল ‘একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম‘। অতএব স্পষ্টত বুঝা গেল যে, মসনাদে আহমদ এর এই হাদীস দ্বারাও ঈসা আর ইমাম মাহদী দুইজনকে একজন বুঝায়না।
হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন,
يوشك من عاش منكم ان يلقى عيسى بن مريم إماما مهديا وحكما عدلا فيكسر الصليب ويقتل الخنزير ويضع الجزية وتضع الحرب أوزارها
অর্থ: তোমাদের মধ্য হতে যারা বেঁচে থাকবে তারা অচিরেই ঈসা (আ.)-কে একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে দেখতে পাবে। তিনি ক্রুশ ভাঙবেন এবং শূয়োর হত্যা করবেন। জিজিয়া (কর) তুলে দেবেন তখন যুদ্ধ আপনা সরাঞ্জামগুলোকে ভারমুক্ত করবে (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯১১৭)।
একজন ব্যাকরণের ছাত্র হিসেবে অবশ্যই জানার কথা যে, আরবী থেকে বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে সিফাত (বিশেষণপদ)’র অর্থ আগে হয় আর মওসূফ (বিশেষিতপদ)’র অর্থ পরে হয়। যেমন ১. আজরান কারীমা [اجرا كريماً] অর্থাৎ উত্তম প্রতিদান। এখানে প্রথমে ‘কারীমা’ এর অর্থ নিতে হয়েছে। কেননা এটি সিফাত (বিশেষণপদ)। তারপর ‘আজরা’ এর অর্থ নিতে হয়েছে। একই নিয়মে ২. ফাদ্বলান কাবীরা [فضلاً كبيراً] অর্থাৎ মহা অনুগ্রহ। ৩. আযাবান মুহীনা [عذابا مهينا] অর্থাৎ লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি। (সূরা আহযাব : ৪৪, ৪৭, ৫৭)। সংক্ষেপে।
জনাব সুলায়মান পঞ্চগড়ী! যদি লজ্জাশরম কিছু থাকে তবে এধরণের ছাগলামি আর কখনো করতে আসবেননা। আল্লাহকে ভয় করুন আর তওবা করুন।
যাইহোক আমি তখনি ঐ ভিডিও ক্লিপের নিচে কমেন্টে তার/তাদের ইচ্ছাকৃত ইসলামী শিক্ষার সুস্পষ্ট বিকৃতির স্বরূপ তুলে ধরি। আমি লিখলাম,
জনাব সুলায়মান পঞ্চগড়ী! আপনি হাদীসের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন কেন? কোনো ব্যক্তি গুণগত কারণে ‘মাহদী’ তথা সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার মানে কি সেই লোকটি আর ‘প্রকৃত ইমাম মাহদী’ দুইজন একই সত্তা হয়ে যাওয়া?
যেমন ধরুন, কেউ বলল; যায়েদ বাঘেররূপে আবির্ভূত হয়েছে!! এখানে যায়েদ আর বাঘ কি একই সত্তা? চাঁদেররূপে সুন্দরী মেয়ে। এখন মেয়েটি আর চাঁদ কি একই সত্তা? মির্যা গোলাম আহমদ তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, সে দুই বছর পর্যন্ত মরিয়মিরূপে লালিতপালিত হয়েছে। (হাকীকাতুল ওহী, বাংলা অনূদিত কপি দেখুন)। এখন মরিয়ম আর মির্যা কাদিয়ানী কি একই সত্তা?
কাদিয়ানীদের কী হল যে, তারা মির্যা কাদিয়ানীকে একই সাথে ইমাম মাহদী আর ঈসা সাব্যস্ত করার জন্য অসংখ্য সহীহ হাদীসকে পর্যন্ত চোখবুঁজে এড়িয়ে যাচ্ছে! তাদের কলিজায় কি মরণের ভয় নেই? অথচ সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাবুল ফিতান অংশে আছে, ঈসা (আ.) দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর হাত রেখে দামেস্কে অবতরণ করবেন (واضعا كفيه على اجنحة ملكين)।
আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী অংশে আছে, ইমাম মাহদী রাসূল (সা.)-এর বংশে বিবি ফাতেমার সন্তানদের মধ্য থেকে হবেন (المهدي من عترتي من ولد فاطمة)।
স্পষ্টত বুঝা যায় যে, দুইজন ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি। এরপরেও ইবনে মাজাহ শরীফের হাদীসের,
ولا المهدى الا عيسى ابن مريم
অংশটি হতে আপনারা কিভাবে এমন অর্থ নিতে পারেন যে অর্থ অগণিত সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে যায়!? আপনারা কি ইবনে মাজাহ’র এই খণ্ডিতাংশের শুরুতেই ‘ওয়াও’ (و) বর্ণ দেখেন না, যেটিকে আরবী ব্যকরণের ভাষায় ‘ওয়ায়ে হালিয়া (الواو )’ তথা সময়-নির্দেশক-ওয়াও বলা হয়? যদ্দরুন এই বাক্যাংশের শুধুমাত্র এই অর্থই দাঁড়ায় যে,
أنه لا مهدي كاملاً معصوماً إلا عيسى عليه السلام
অর্থাৎ “তখন ঈসা ইবনে মরিয়মই নিষ্পাপ ও পরিপূর্ণ সুপথপ্রাপ্ত ব্যক্তি।” (ইমাম কুরতুবী, শায়খ ইবনুল কাইয়ুম এবং ইমাম ইবনে কাসীর প্রমুখ সকলে এভাবেই এর অর্থ করেছেন—লিখক)।
এ কথা বলে শেষ যুগের সেই সময়টির প্রতি ইংগিত করা উদ্দেশ্য; যে সময়টিতে সমগ্র দুনিয়ায় শুধুমাত্র ঈসা ইবনে মরিয়মই পরিপূর্ণ একজন সুপথপ্রাপ্তির মর্যাদা লাভ করবেন। যেহেতু ঈসা (আ.)-এর আগমনের কয়েক বছরের মাথায় হযরত ইমাম মাহদীও ইন্তেকাল করবেন।
মোটকথা, হাদীসের ঐ অংশটি সমস্ত মুহাদ্দেসীনের মতানুসারে খুবই জঈফ বা দুর্বল এবং মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য হলেও (দেখুন, মীযানুল ই’তিদাল ৩/৫৩৫; ইমাম যাহাবী/حديثه: ولا المهدى إلا عيسى بن مريم وهو خبر منكر، أخرجه ابن ماجه) সেটি দ্বারা মূলত ঈসা (আ.)-এর অন্যতম একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য বুঝানোই উদ্দেশ্য, ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তিকে একই ব্যক্তি বুঝানো মোটেও উদ্দেশ্য নয়; যা একটু আগেই আমি উপমা দিয়ে বলে এসেছি।
নির্বোধরা কি মির্যা কাদিয়ানীর বইপুস্তক পড়েনা? যদি পড়ে থাকে তাহলে তারা কিজন্য মির্যার ১৯০২ সালের দিকে রচিত ‘তুহফায়ে গোলড়বিয়া’ নামীয় বইটিতে খেয়াল করেনা যে, সে নিজেই ঈসা (আ.) এবং ইমাম মাহদী দুইজনকে ভিন্ন ভিন্ন সত্তা হওয়া লিখে গেছেন। তার ভাষ্যমতে,
اور ہم ثابت کر چکے ہیں کہ وہی رجل فارسی مہدی ہے اس لئے ماننا پڑا کہ مسیح موعود اور مہدی اور دجال تینوں مشرق میں ہی ظاہر ہوں گے اور وہ ملک ہند ہے۔
অর্থাৎ এবং আমি প্রমাণ করেছি যে, সেই পারস্যের পুরুষটি-ই মাহদী। যেজন্য মানতে হবে যে, মসীহ মওঊদ, মাহদী এবং দাজ্জাল তিনোজন পূর্বদিকেই প্রকাশিত হবে আর সেই রাষ্ট্রটি হচ্ছে হিন্দুস্থান। (রূহানী খাযায়েন ১৭/১৬৭)।
স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে যে, ঈসা আর ইমাম মাহদী কখনোই একই সত্তা হবেন না। আর এটি মির্যা কাদিয়ানীরও কলম থেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবেই হোক, বেরিয়ে গেছে। কথায় আছে না, চোর যতই চালাক হোক; সে কোনো না কোনো আলামত নিশ্চয়ই ছেড়ে যায়। যার ফলে দেরিতে হলেও তাকে পাকড়াও হতেই হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়তি। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি
এবার যে কথাটি বলে প্রাসঙ্গিক বিতর্কের ইতি টানতে চাই তা হচ্ছে, আক্ষরিক অর্থে ইসলামের প্রথম চারো খলীফাও خلفاء الراشدين المهديين তথা ‘আল মাহদিয়্যীন’ তথা সুপথপ্রাপ্তগণ। [তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম হা/২৬৭৬]। এই দিক থেকে নবীগণ সবাই ‘মাহদী’। এমনকি হযরত মুহাম্মদ (সা:)-ও ‘মাহদী’। মজার ব্যাপার হল, এই কথাগুলো মির্যা কাদিয়ানী নিজেই লিখে গেছে। (রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪)।
সুতরাং বুঝা গেল, আক্ষরিক অর্থে ঈসা (আ:)-কে ‘মাহদী’ সম্বোধন করা হলেও সমস্যা নেই। তাতে দুইজনকে একই ব্যক্তি বুঝাবেনা।
এরপরেও যার বুঝে আসবেনা তার জন্য জাহান্নামের আগুনই যথেষ্ট। তাকে আল্লাহর সোপর্দ। আল্লাহর সাথে সে বুঝাপড়া করুক। আল্লাহ হাফেজ!
চেপে রাখা ইতিহাস | কাদিয়ানী তথা আহমদীদের জন্য মহা সুসংবাদ! কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ইউজে আসেফ এর আসল পরিচয় প্রকাশিত হল। এবার কাদিয়ানী জামাতে অস্থিরতা শুরু | মহা ভাঙ্গনের মুখোমুখি ‘আহমদী-জামাত’ | মির্যায়ীয়ত তথা আহমদীয়ত মিথ্যা ও বাতিল সাব্যস্ত!
ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তির সঠিক পরিচয় সম্পর্কে কাশ্মীরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাক্ষ্য দেয়ার দলিলপত্র এখানে। ডাউনলোড করুন।
প্রাক-কথন : আমি যখন মির্যা কাদিয়ানীর পরামর্শ মাফিক হাজার বছর পূর্বে লেখিত শায়খ আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনুল হুসাইন বাবওয়াইহি আল-কিম্মি (মৃত. ৩৮১ হিজরী)-এর কিতাব ‘কামালুদ্দীন’ এর পৃষ্ঠা নং ৩৬১ হতে ৪০৩ পর্যন্ত ইউজে আসেফ এর পুরো কাহিনী পড়লাম তখন আমার মুখ দিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেই বেরিয়ে গেল ‘শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যুক মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী’। কেননা আমি দেখেছি সেখানে ইউজে আসেফকে ষাট (৬০) বারেরও অধিক জায়গায় ابن الملك তথা বাদশাহ’র পুত্র (Son of a King) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ বিষয়টি অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে এড়িয়ে গেছেন। কেননা মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব খুব ভালো করেই জানতেন যে, ইউজে আসেফের পিতা থাকা সাব্যস্ত হয়ে গেলে তখন আর তার পক্ষে ইউজে আসেফ আর ঈসা মসীহ দুইজনকে একই ব্যক্তি বলিয়া সাব্যস্ত করা সম্ভব হবেনা।
১৯৯৬ সালে কাদিয়ানীদের চতুর্থ খলীফা মির্যা তাহের আহমদ জনৈক এক আহমদী প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, even if this grave is not that of Eisa (as), it makes no difference. অর্থাৎ এই কবরটি ঈসা (আ.)-এর না হলেও তাতে কোনো পার্থক্য নেই।
আমি ২৭ মার্চ ২০১০ ইং তারিখের বিবিসি (ইংলিশ) আরেকটি নিউজ পোর্টালে দেখলাম, সেখানে কাশ্মীরে ঈসা (আ.) এর আগমনের আহমদীদের প্রচলিত ধারণাকে হাসিরছলে উড়িয়ে দিয়েছে। লিখা আছে, Professional historians tend to laugh out loud when you mention the notion that Jesus might have lived in Kashmir. অর্থাৎ পেশাদার ইতিহাসবিদরা উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন যখন আপনি এই ধারণাটি উল্লেখ করেন যে, যীশু (ঈসা) হয়তো কাশ্মীরে থাকতেন! বিবিসি ইংলিশ নিউজ পোর্টাল দেখুন।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে দুইটি বিষয় সুস্পষ্ট করব, ইনশাআল্লাহ।
(ক) কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ‘ইউজে আসেফ’ নামীয় ব্যক্তিটি আসলে কে? (খ) এই বিষয়ে কেন জানা দরকার?
একটি মতভিন্নতা :
হযরত ঈসা (আ.) বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ আর কাদিয়ানী সম্প্রদায় উভয়ের ধর্মবিশ্বাস সংক্ষেপে বলতে গেলে, মুসলিম উম্মাহ বিশ্বাস করে যে, ঈসা (আ.)-কে আল্লাহতালা দ্বিতীয় আসমানে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন (কুরআন ০৪:১৫৮ তাফসীরে ইবনে কাসীর)। তিনি এখনো জীবিত, শেষ যুগে পৃথিবীতে যথাসময়ে আবার আগমন করবেন। তবে নবুওয়তের দায়িত্বে থাকবেন না, শুধুমাত্র একজন উম্মতী হবেন। ‘সহীহ বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়া’ পর্বে এসেছে حكما عدلا অর্থাৎ মরিয়ম পুত্র (ঈসা) একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হবেন। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অত:পর মৃত্যুবরণ করবেন। সেই সময়টিতে ইমাম মাহদীও থাকবেন। তবে ইমাম মাহদী সাত বা নয় বছর বেঁচে থাকবেন। ঈসা (আ.)-এর জীবদ্দশাতেই তিনি মারা যাবেন। কিন্তু কাদিয়ানীদের বিশ্বাস হচ্ছে, হাদীসে ভবিষ্যৎবাণীকৃত ঈসা আর ইমাম মাহদী দুইজনের কেউই আসল হবেন না, বরং দুইজনই রূপক। আর এ দুইজনই মূলত একজন। আর তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮), যিনি আজ থেকে শত বছর আগেই চলে এসেছেন ভারতের পাঞ্জাবে। আহমদীয়া (অ)মুসলিম জামাত তারই প্রতিষ্ঠিত। এই দলে যারা অন্তর্ভুক্ত হবেনা তারা অমুসলিম এবং জাহান্নামী। কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে, ইহুদীদের পাকড়াও থেকে আল্লাহ ঈসাকে রক্ষা করেননি, বরং তিনি তাকে তাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফলে ইহুদীরা তাঁকে ক্রুসে উঠাতে সক্ষম হয়। তবে ক্রুসে তিনি মারা যাননি, বরং প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। শিষ্যদের সহযোগিতায় তিনি পালিয়ে ভারতের কাশ্মীরে চলে যান। সেখানে অনেক বছর জীবনযাপন করেন অত:পর ১২০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটির কবরই মূলত ঈসা (আ.)-এর কবর। নাউযুবিল্লাহ। (এ হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহার বিশ্বাসের পরিপন্থী কাদিয়ানীদের বিশ্বাস)। (পবিত্র কুরআন সাক্ষী, ঈসা (আ.) জীবিত এবং তিনি পুনরায় আগমন করবেন)।
প্রথমে বলে রাখি, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী থেকে হযরত ঈসা (আ.)-এর কথিত কবর সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী দুই রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। তার কোনো কোনো বক্তব্য হতে বুঝা যায় যে, ঈসা (আ.)-এর কবর সম্পর্কে তার প্রদত্ত তথ্যটি শুধুমাত্র গবেষণাধর্মী। যেমন তার ভাষ্যমতে,
کشمیر میں مسیح کی قبر کا معلوم ہونے سے بہت قریب ہی فیصلہ ہو جاتا ہے
অর্থাৎ কাশ্মীরে মসীহ’র কবরের অনুসন্ধান দ্বারা অতিসত্বরই বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যাবে। (মালফুযাত ২/৫২৭, নতুন এডিশন)। আবার কোনো কোনো বক্তব্য হতে বুঝা যায়, এটি ইলহামী। যেমন তার শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী লিখেছেন,
اور جیسے کہ اللہ تعالی نے انہیں بتایا کہ محلہ خانیار سرینگر کشمیر میں ان کی قبر موجود ہے۔
অর্থাৎ আল্লাহতালা তাঁকে (মির্যাকে) জানিয়ে দিয়েছেন যে, কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় তাঁর (ঈসা) কবর বিদ্যমান। (আছলে মুসাফফা ২/২; লিখক মির্যায়ী মুরিদ মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী, প্রকাশকাল ১৯০১ ইং)।
দ্বিতীয়ত, ঈসা (আ.)-এর কথিত কবরের স্থান নিয়েও তার পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। যথা-
১। ঈসা (আ.)-এর কবর ‘সিরিয়া’ এর গালীলে বিদ্যমান। (দেখুন রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)। বলে রাখা দরকার, গালীল হচ্ছে সিরিয়ার (শাম) একটি জনপদ এলাকা। মির্যা কাদিয়ানী ‘ইতমামুল হুজ্জত’ বইয়ের মধ্যেও এ একই কথা উদ্ধৃত করেছেন। তিনি লিখেন,
اور لطف تو یہ کہ حضرت عیسی کی بھی بلاد شام میں قبر موجود ہے۔
অর্থাৎ সূক্ষ্ম একটি বিষয় এই যে, হযরত ঈসার কবরও শাম দেশে বিদ্যমান। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৬)।
একটি সংশয় নিরসন :
কাদিয়ানী নেতারা জ্ঞান আর শিক্ষার দুর্বলতা হেতু এখানে একটা তাবীল করেন। বলেন, এই কবরটি মূলত সেই কবর যেখানে মসীহ ক্রুশীয় ঘটনা হতে পরিত্রাণ পেয়ে পালিয়ে এসে তিন দিন পর্যন্ত আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা করে সুস্থ্য হন। তিনি পরে সেখান থেকে বেরও হয়ে যান। ফলে এটি রূপকার্থে কবর, প্রকৃত কবর নয়। তাদের জন্য আফসোস একারণে যে, তারা অন্ততঃ মির্যার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ বইটিও ভালো মত পড়েনি, পড়লেও মনে রাখেনি। বইটির ২৩ নং পৃষ্ঠায় (বাংলা অনূদিত – মার্চ, ২০১২ ইং) সুস্পষ্ট লিখা আছে যে, ‘এসব শ্লোক থেকে নিশ্চিত জানা যায়, হযরত মসীহ কখনও আকাশে যান নি, বরং কবর থেকে বের হয়ে গালীলের দিকে যান।‘ স্ক্রিনশট –
তিনি বাইবেলের আলোকেই কথাগুলো লিখেন এবং নিজেও তা বিশ্বাস করতেন। মির্যা সাহেব আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিন’ এর বায়তুল মুকাদ্দাসের আঙ্গিনায় ঈসা (আ.)-এর কবর রয়েছে।’ (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৬-৩০০ ; টিকা দ্রষ্টব্য)।
সুতরাং পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মির্যা সাহেব একজন ‘মামূর মিনাল্লাহ‘ দাবীকরা অবস্থাতেও ঈসা (আ.)-এর কথিত কবরের সন্ধান দেয়ার নামে মারাত্নক স্ববিরোধ তথ্য দিয়েছেন! আর তার অন্ধ অনুসারীরা সেটির উপর পর্দা ফেলার জন্য কাসুন্দির পথ বেছে নেন, যা মির্যারই ‘হযরত মসীহ কবর থেকে বের হয়ে গালীলের দিকে যান’ এইরূপ লিখার কারণে সামনে বাড়তে পারেনা, থেমে যেতে হয়!!
বড়ই আশ্চর্যের বিষয় হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন “আমার কথাবার্তায় কোনো অসঙ্গতি নেই। আমি তো খোদার ওহীরই অনুসরণকারী।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫৪)।
একটু লক্ষ্য করুন!
সত্যানুসন্ধিৎসু বিজ্ঞ ভাই ও বোনেরা! এবার লক্ষ্য করুন মির্যা সাহেব গ্যালীলের উক্ত কবর সম্পর্কে আরও কী লিখেছেন,
اور اگر کہو کہ وہ قبر جعلی ہے تو اس جعلی کا ثبوت دینا چاہیے اور ثابت کرنا چاہئے کہ کس وقت یہ جعلی بنایا گیا ہے اور اس صورت میں دوسرے انبیاء کی قبروں کی نسبت بھی تسلی نہیں رہے گی اور امان اٹھ جائے گا اور کہنا پڑے گا کہ شاید وہ تمام قبریں جعلی ہی ہوں۔
অর্থাৎ আর যদি বলতে চাও যে, এই কবর কৃত্রিম, তাহলে এই কৃত্রিমতার প্রমাণ দেয়া চাই এবং সাব্যস্ত করা চাই যে, কখন এই কৃত্রিম কবর তৈরি করা হয়েছিল! আর এই কৃত্রিমতার দাবীর ক্ষেত্রে অন্যান্য নবীর কবরগুলো ক্ষেত্রেও কোনো শান্তনা থাকেনা, দৃঢ়তা হ্রাস পাবে এবং বলতেই হবে যে, হতে পারে এই সমস্ত কবর কৃত্রিমই। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৮/২৯৭)।
২। ঈসা (আ.)-এর কবর ‘কাশ্মীর’ অথবা তার আশপাশে (তথা তিব্বতে)। দেখুন রূহানী খাযায়েন ১০/৩০২। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ঈসা (আ.)-এর কবর কাশ্মীরে কিনা সে ক্ষেত্রেও খুবই কনফিউজড তথা দ্বিধান্বিত। নইলে ‘অথবা‘ বলার কী অর্থ?
৩। ঈসা (আ.)-এর কবর ‘কাশ্মীর’ এর শ্রীনগরের ‘খান-ইয়ার মহল্লা’তে। (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৪/১৭২)। এত বৈপরীত্য হলে কেমনে কী? খুবই মজার ব্যাপার হল, মির্যা সাহেবের দাবী হল, তিনি নাকি কাশফীভাবে কয়েকবার হযরত মসীহ (আ.)-কে দেখেছেনও। (স্ক্রিনশট দেখুন)। এখন প্রশ্ন হল, তার এই দাবী সত্য হলে তিনি মসীহ (আ.) হিন্দুস্তানে সত্যিই এসেছিলেন কিনা, মৃত্যু কাশ্মীরেই হয়েছিল কিনা; তা তো মসীহ (আ.) থেকেই জেনে নিলে হয়ে যেত, তাই নয় কি? এত এত গবেষণা আর কাসুন্দি করার দরকার কী ছিল?
ছোট্ট একটি প্রশ্ন :
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন, ‘ইঞ্জিলে হযরত মসীহ’র আগমন সম্পর্কে দু’ধরণের ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে। (এক) শেষ যুগে তাঁর আগমনের যে ওয়াদা তা হচ্ছে রূহানীভাবে আগমনের ওয়াদা।’ (দেখুন, মসীহ হিন্দুস্তান মে, বাংলা ৩৬; পুনর্মুদ্রণ মার্চ, ২০১২ খ্রিস্টাব্দ)। কিন্তু আমি বাইবেল পড়তে গিয়ে দেখলাম সেখানে লিখা আছে, “যীশু যখন জৈতুন পর্বতমালার ওপর বসেছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যরা একান্তে তাঁর কাছে এসে তাঁকে বললেন, ‘আমাদের বলুন, কখন এসব ঘটবে, আর আপনার আসার এবং এযুগের শেষ পরিণতির সময় জানার চিহ্নই বা কি হবে?’ এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, ‘দেখো! কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়৷ আমি তোমাদের একথা বলছি কারণ অনেকে আমার নামে আসবে আর তারা বলবে, ‘আমি খ্রীষ্ট৷’ আর তারা অনেক লোককে ঠকাবে৷” (বাইবেল, মথি ২৪:৩-৫)।
এখন প্রশ্ন হল, ‘অনেকে আমার নামে আসবে আর বলবে, ‘আমি খ্রিষ্ট’ আর তারা অনেক লোককে ঠকাবে’ এত পরিষ্কার করে উল্লেখ থাকার পরেও শেষ যুগে আগমনকারী মসীহ সম্পর্কে ‘রূপক’ বা রূহানী মসীহ এর কনসেপ্ট কিভাবে সত্য হতে পারে? মির্যা সাহেব কি এখানেও মিথ্যার আশ্রয় নিলেন না?
(ক) এবার কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ‘ইউজে আসেফ’ নামীয় ব্যক্তিটি আসলে কে? এ সম্পর্কে জানুন!
আপনি নিশ্চয়ই কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নাম শুনে থাকবেন। এরা অমুসলিম, এতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। বাহায়ীরা যেমন অমুসলিম, ঠিক এরাও। এদের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে, হযরত ঈসা (আ.) মারা গিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)।
কোথায় মারা গেছেন?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলবে, কাশ্মীরে। কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায়। সেখানে যে দুই ব্যক্তির কবর রয়েছে তাদের একজন হলেন, পীর নাসিরুদ্দীন শাহ সাহেব। দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন, ইউজে আসেফ। পুরো নাম, শাহজাদা ইউজে আসেফ। কেউবা বলেন, ইউজে ইস্পাহান নাবীরায়ে ইরান।
কাশ্মীরে এটি কার কবর?
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঈসা (আ.)-কে মৃত দাবী করে গ্যাঁড়াকলে আটকে যান। কারণ তিনি যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তো তাঁর কবরও থাকবে, তাই নয় কি? কিন্তু জীবিত মানুষের কি কখনো কবর থাকতে পারে! পারেনা। আল্লাহতালা ঈসা (আ.)-কে তাঁরই তেত্রিশ বছর বয়সে জীবিত সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইংগিতে আর বহু সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এর প্রমাণ রয়েছে। বিপরীতে মির্যা কাদিয়ানীর দাবী হল, ঈসা আর তাঁর মা মরিয়ম দুইজনই কাশ্মীরে এসেছিলেন (কিশতিয়ে নূহ ২৯; টিকা – বাংলা অনূদিত) এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আর বর্তমানে কাশ্মীরে ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তির কবরই প্রকৃতপক্ষে হযরত ঈসা (আ.)-এর কবর।
পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ‘রাবওয়া‘ (ربوة) হতে উদ্দেশ্য কী? ঈসা (আ.)-এর কাশ্মীরে আগমন করার কোনো ইংগিত কি কুরআনে আছে? ক্লিক করুন।
ঈসা (আ.)-কে বাইবেলে ‘আসেফ’ নামে আখ্যা দেয়া কি সত্য?
এখন একটা তথ্য দেব যা শুনে একজন কট্টর কাদিয়ানীও অবাক হবেন। মির্যা সাহেব ‘মসীহ হিন্দুস্তান মেঁ’ বইটির কোথাও ‘শাহজাদা ইউজে আসেফ’ নামটিও উল্লেখ করেননি বা উল্লেখ করার মত গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ পাননি। অথচ তিনি বইটি রচনাই করেছিলেন হযরত ঈসা (আ.)-এর হিন্দুস্তানে আসা এবং কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় তাঁর কবরের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণে। শুনে নিশ্চয়ই হবাক হচ্ছেন, তাই তো! জ্বী জনাব, এবার আপনি আরও বেশি অবাক হবেন যখন জানতে পারবেন যে, তিনি নিজ দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে বাইবেলের নামেও কত জঘন্য মিথ্যা উদ্ধৃতি দিলেন! স্ক্রিনশট দুটি ভালোভাবে দেখুন। যেমন তিনি লিখেছেন “এখন উল্লিখিত গ্রন্থের উক্ত বর্ণনা এ দৃঢ়বিশ্বাস সৃষ্টি করে যে, আল্লাহতালা এ লোকদের হেদায়েতের উদ্দেশ্যে দু’দিক থেকে উপকরণ সৃষ্টি করেছিলেন। প্রথমত হযরত মসীহর সেই নামের কারণে, যা ‘আদিপুস্তক‘ ৩:১০ (অর্থাৎ অধ্যায় নং ৩ শ্লোক নং ১০) থেকে প্রতীয়মান হয় অর্থাৎ ‘আসেফ‘ (নাম) যার অর্থ জাতিকে একত্রকারী। এ কারণে সেই দেশে তাঁর আগমন জরুরী ছিল যেখানে ইহুদীরা এসে বসবাস করছিল।” আহা! এ কেমন ইমাম মাহদী আর বুরুজী মুহাম্মদ!! কিভাবে সম্ভব হল এত জঘন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়া!!! এখন প্রশ্ন হল, যে মানুষটি আড়াই শত কোটি মানুষের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের নামেও প্রতারণা করতে ভয় করেনি, সে মানুষটির অন্যান্য উদ্ধৃত রেফারেন্স আর তথ্য-উপাত্ত ইত্যাদির উপর আপনি-আমি আস্থা রাখতে পারি কিভাবে? এমন ব্যক্তিকে তো সর্বাগ্রে সত্যতার মানদণ্ডেই উঠানো জরুরি, তাই নয় কি? বিচারের ভার আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।
ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্য?
মির্যা গোলাম আহমদ নিজেকে ‘প্রতিশ্রুত ঈসা’ হবার দাবী করেন। তখন প্রয়োজন দেখা দিল, যে কোনো মূল্যে হোক মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.)-এর কবর আবিষ্কার করতে হবে। যেই প্ল্যান সেই কাজ। তিনি দাবী করলেন, কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটিই মূলত ঈসা (আ.)। তাঁর কবরই ঈসা (আ.)-এর কবর।
তাহলে প্রমাণ?
তিনি তার উক্ত দাবী কিভাবে প্রমাণ করলেন সে সম্পর্কে স্বীয় রচিত ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ বইয়ের ভুমিকায় লিখে গেছেন। অর্থাৎ তিনি হিন্দুস্তানের ঐতিহাসিক প্রাচীনতম নানা পত্র-পুস্তক, পণ্ডিতদের বিভিন্ন রচনাবলী আর কাশ্মীরের স্থানীয়দের সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করেছেন যে, ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তির কবরই ঈসা (আ.)-এর কবর। আর এটি তার মতে অকাট্য প্রমাণ। অথচ ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তি আর হযরত ঈসা (আ.) দুইজন যে আলাদা দুই ব্যক্তি, তা একদমই পরিষ্কার ও ঐতিহাসিকভাবেও প্রমাণিত। তার কারণ, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটির বিস্তারিত পরিচয় জানতে যে কিতাব দুটির রেফারেন্স দিয়ে গেলেন তন্মধ্যে ফার্সি ভাষার ‘আ’ইনুল হায়াত‘ কিতাবটি অন্যতম। সেটির এক স্থানে উল্লেখ আছে যে,
اسی زمانہ میں بادشاہ کے فرزند نرینہ تولد ہوا اور اتنی مسرت ہوئی کہ قریب مرگ ہوگیا۔ اور یقین ہوگیا کہ بت پرستی کا عطا کردہ یہ انعام ہے – ملک کا تمام خزانہ زینت و آرائش میں ختم کردیا – لوگوں کو ایک سال تک خوشی٫ شادی عیش و نشاط کا حکم عام ہو گیا – فرزند ارجمند کا نام یوز آسف رکھا۔
অর্থাৎ এমন সময় রাজার একটি নাদুসনুদুস পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এতে তিনি এতই খুশি হন যে, যেন মারা যাবেন! তার বিশ্বাস এই যে, এটি তার মূর্তিপূজার জন্য প্রদত্ত পুরস্কার। তিনি রাজ্যের সমস্ত ধন-সম্পদ ভোগ বিলাসে উজাড় করে দেন। জনগণের জন্য পূর্ণ এক বছর আমোদ ফুর্তি আর খুশি উদযাপনের ফরমান জারি করেন। সেই নাদুসনুদুস সন্তানটির নাম রাখা হয় ইউজে আসেফ। (রূহুল হায়াত উর্দু তরজুমা আ’ইনুল হায়াত, পৃষ্ঠা ৩৬৪, মূল-মোল্লা মুহাম্মদ বাকের মজলিসি)।
ইউজে আসেফ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করতে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের পরামর্শটা কেমন?
ইউজে আসেফ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করতে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত প্রাচীনকালের একখানা কিতাব ‘কামালুদ্দীন ওয়া তামামুন নি’মাহ‘ পড়তে পরামর্শ দেন মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব। যেমন তার বইতে লিখা আছে,
و ان كنت تطلب التفضيل فاقرأ كتابا سمى بإكمال الدين تجد فيه كل ما تسكن الغليل
অর্থাৎ “আর তুমি যদি বিস্তারিত জানতে চাও তাহলে ‘কামালুদ্দীন‘ নামীয় কিতাবটি পড়তে পার! তুমি সেখানে এমন সব (তথ্য) পাবে যা প্রবল তৃষ্ণাকেও শান্ত করে দেবে।” তারই রচনা ‘আল-হুদা’ এবং রূহানী খাযায়েন ১৮/৩৬২ দ্রষ্টব্য।
তিনি তার উক্ত রচনার আগের পৃষ্ঠায় বিষয়টি আরও চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন,
والتواتر على لسان اهلها انه قبر نبي كان ابن ملك وكان من بني اسرائيل وكان اسمه يوذ آسف فليسالهم من يطلب الدليل واشتهر بين عامتهم ان اسمه الاصلي عيسى صاحب وكان من الانبياء و هاجر الى كشمير في زمان مضى عليه من نحو ١٩٠٠ سنة و اتفقوا على هذه الانباء بل عندهم كتب قديمه توجد فيها هذه القصص في العربيه والفارسيه ومنها كتاب سمي كمال الدين وكتب اخرى كثير الشهره
অর্থাৎ তার (কাশ্মীরের) অধিবাসীদের নিকট ক্রমাগতভাবে চালু আছে এই কথা যে, এটি একজন নবীর কবর যিনি রাজপুত্র ছিলেন এবং বনী ইসরাইলি ছিলেন। তার নাম ছিল ইউজে আসেফ। অতএব, যে প্রমাণ চাইতে ইচ্ছুক সে যেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করে। তাদের সাধারণদের মাঝে প্রসিদ্ধ আছে যে, তার প্রকৃত নাম ঈসা সাহেব। তিনি একজন নবী। তিনি প্রায় ১৯’শ বছর বিগত যুগে কাশ্মীরে হিজরত করেছেন। সবাই এই সংবাদের উপর একমত আছেন, বরং তাদের নিকট প্রাচীন গ্রন্থাবলিও আছে যেখানে আরবী এবং ফার্সি ভাষায় এই ঘটনাবলি উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে ‘কামালুদ্দীন’ কিতাবটি অন্যতম এবং আরো বহু সুপ্রসিদ্ধ বইও রয়েছে। (আল হুদা, রূহানী খাযায়েন ১৮/৩৬১)।
মির্যা সাহেব তার ঐ রচনায় ইউজে আসেফ সম্পর্কে ঐতিহাসিক প্রাচীনগ্রন্থটিতে যেসব তথ্য উপাত্ত থাকার দাবী করেছেন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, ইউজে আসেফের একটি কিতাবের নাম ছিল ইঞ্জিল। তিনি সাধারণদের নিকট ‘ঈসা সাহেব’ নামে সম্বোধিত হতেন।তিনি একজন নবী ছিলেন, বনী ইসরাইলি ছিলেন।প্রায় ১৯’শ বছর আগেকার ব্যক্তি ছিলেন।কাশ্মীরের সাধারণ মানুষদের মাঝে এই বিশ্বাস ক্রমাগতভাবে চলে আসছিল। ইত্যাদী। কিন্তু বাস্তব কথা হল, এর সবগুলোই মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যাচার। কারণ প্রাচীন ঐ কিতাবটিতেও এসমস্ত কথা ইংগিতেও উল্লেখ নেই। কেউ চাইলে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। যদি আমি চ্যালেঞ্জে হেরে যাই তাহলে ১০ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেব। আর যদি প্রতিপক্ষ হেরে যায় তাহলে সে শুধুমাত্র তওবা পড়ে মির্যার ন্যায় এই নিকৃষ্ট মিথ্যুককে ত্যাগ করে ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসলেই হবে।
ঈসা (আ.) কি কোনো বাদশাহ’র পুত্র ছিলেন? তাঁর কি পিতা ছিল?
মির্যার অন্যান্য উদ্ধৃতিগুলো আরেকটু পর উল্লেখ করছি। তার আগে ‘কামালুদ্দীন’ কিতাব থেকে ইউজে আসেফ সম্পর্কে জেনে নিন! ক্রমানুসারে নিম্নরূপ :-
১। ‘কামালুদ্দীন’ কিতাবের ৫২৭ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে,
وولد للملك في تلك الايام بعد اياسه من الذكور غلام لم يرى الناس مولودا مثله قط حسنا وجمالا وضياء…وسمي الغلام يوز اسف وجمع العلماء والمنجمين لتقديم ميلاده
অর্থ “এবং সেই দিনগুলোতে বাদশাহ হতাশ হবার একটি সময়ের ব্যবধানে তার এমন একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হল, মানুষ তার মতো সুন্দর এবং দীপ্তিমান শিশু আগে কখনও দেখেনি।… তার নাম রাখা হয় ইউজে আসেফ। তিনি (বাদশাহ) তার জন্মদিন উদযাপনের উদ্দেশ্যে রাজ্যের সকল বিদ্যান এবং জ্যোতিষিকে একত্রিত করেন।”
এতে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটি হিন্দুস্থানের জনৈক মূর্তিপূজক বাদশাহর একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন। মূলত তাঁকে এ কারণেই ‘শাহজাদা বা রাজপুত্র ইউজে আসেফ’ বলা হত। এটি তার উপাধি নয়, বরং বাস্তবেই তিনি তাই ছিলেন।
মির্যা গোলাম আহমদ বিষয়টি একান্ত উদারতার সাথে ১৯০২ সালের তার একটি রচনায় স্বীকারও করেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন,
وانعقد عليه اجماع سكان تلك الناحية وتواتر على لسان اهلها انه قبر نبي كان ابن ملك وكان من بني اسرائيل وكان اسمه يوزآسف
অর্থ- সেই এলাকার (কাশ্মীরের) স্থানীয়রা একমত এবং সেখানকার একই ভাষাভাষী গোষ্ঠীও পরম্পরায় এই বিষয়ে একমত যে, এটি একজন নবীর কবর যিনি বাদশাহ’র পুত্র এবং বনী ইসরাইলী ছিলেন। তার নাম ছিল ইউজে আসেফ। (আল-হুদা, রূহানী খাযায়েন ১৮/৩৬১; মূল মির্যা কাদিয়ানী)।
২। ‘কামালুদ্দীন’ (আরবী) কিতাবের ৫৭১ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে,
فبعث الملك فى الارض يطلب و يلتمس له امرأة فوجدت له امرأة من احسن الناس و اجملهم فزوجها منه.
অর্থাৎ “বাদশাহ (তার পুত্রের বিয়ের জন্য) একজন স্ত্রী খোঁজতে লোক পাঠান। অত:পর পুত্রের জন্য একজন স্ত্রী পাওয়া গেল। যে খুবই সুন্দরী এবং রূপসী। অত:পর তিনি স্ত্রীলোকটিকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।” এখানে ‘কামালুদ্দীন’ কিতাব থেকে আমরা জানতে পারলাম, বাদশাহ তাঁকে এক অনিন্দ্য সুন্দরি স্ত্রীলোকের সাথে বিয়েও দিয়ে ছিলেন। অধিকন্তু আমরা জানি যে, ঈসা (আ.) বিয়ে করেননি। তার আগেই আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। (সূরা নিসা ১৫৮)।
৩। ইউজে আসেফ এর শিষ্যের নাম ছিল আইয়াবেজ। এ সম্পর্কে শায়খ আল কিম্মি লিখেছেন,
ودعا قبل موته تلميذا له اسمه أيابذ الذي كان يخدمه ويقوم عليه
অর্থাৎ তিনি মৃত্যুর পূর্বে তাঁর শিষ্যকে ডাকলেন যার নাম ছিল আইয়াবেজ। সে তাঁর সেবা করত এবং পরিচালনা করত। (কামালুদ্দীন ২/৫৭৯)।
৪। ইউজে আসেফ এর ধর্মগুরু ‘হাকিম বলোহার’ তাঁকে পথপ্রদর্শন করে বলেন, وكن صديقا مقسطا، فانك تكون امام الناس تدعوهم الى الجنه অর্থাৎ এবং তুমি একজন ন্যায়পরায়ণ সত্যবাদী হবে। কেননা তুমি মানুষের ইমামে পরিণত হয়ে তাদেরকে জান্নাতের দিকে দাওয়াত দেবে। (কামালুদ্দীন ২/৫৭৬)।
৫। জনাব ইউজে আসেফ আপনা রাজপ্রাসাদ ছেড়ে কাশ্মীরে আগমন করা সম্পর্কে গ্রন্থকার লিখেছেন,
ثم انتقل من ارض سولابط وسار في بلاد ومدائن كثيرة أتى ارضا تسمى قشمير– فسار فيها واحيا ميتها و مكث حتى اتاه الأجل الذي خلع الجسد وارتفع الى النور
অর্থাৎ অতঃপর তিনি শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশ ছেড়ে স্থানান্তর হন এবং বহু দেশ ও শহর ভ্রমণ করে কাশ্মীর নামক ভূমিতে চলে যান। তিনি এখানে ভ্রমণ করেন এবং আমৃত্যু জীবনযাপন করেন। মৃত্যু পর্যন্ত অবস্থান করেন। (কামালুদ্দীন ৫৭৯; শায়খ বাবওয়াইহি আল কিম্মি)।
বর্ণিত উদ্ধৃতিগুলোর সারাংশ :
শাহজাদা ইউজে আসেফের বাড়ী হিন্দুস্থানে।
তিনি ভূতপূজারী ও প্রতাপশালী জনৈক বাদশাহ’র একমাত্র পুত্র।
বাদশাহ তাকে দেশের এক শীর্ষস্থানীয় জ্যোতিষীর পরামর্শে এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত লোকালয়ের বাহিরে গৃহবন্দী করে রাখেন যাতে সত্য দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে না পারে।
বাদশাহ পরবর্তীতে তাকে মুক্ত করে দেন এবং যথাসময় অনিন্দ্য সুন্দরি একটি মেয়ের সাথে বিয়েও দেন।
তিনি সমসাময়িক একজন শ্রেষ্ঠতম ধার্মীক ও বুযূর্গ ব্যক্তি ছিলেন।
তিনি শ্রান্দিপ অধিবাসী হাকিম বলোহার (حكيم بلوهر) নামীয় একজন বিজ্ঞ ধর্মগুরুর শিষ্য ছিলেন।
তিনি আইয়াবেজ () নামীয় আপনা একজন শিষ্যকে সাথে নিয়ে নিজ শহর ছেড়ে কাশ্মীর চলে যান এবং সেখানকার মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেন।
তিনি কখনো নবী ছিলেন না, বড়জোর একজন ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যবাদী ছিলেন।
কাশ্মীরে জীবনযাপন করেন অত:পর সেখানেই ইন্তেকাল করেন।
খান ইয়ার মহল্লায় তাকে দাফন করা হয়। এখন এরপরেও কিভাবে এমন দাবী করা যেতে পারে যে, ইনি আসলে উনিই!? সুতরাং মির্যা কাদিয়ানীর গবেষণা এবং কথিত ইলহামী দাবী সবই অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রত্যাখ্যাত। সত্যিকারের জ্ঞানী ও সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তির পক্ষে বিষয়টি উপলব্ধি করতে এটুকুই যথেষ্ট।
এবার কাশ্মীরের ইউজে আসেফ এর কবরের তদন্ত সম্পর্কে–
মির্যা গোলাম আহমদ শীয়াদের প্রাচীনতম একটি ফার্সীভাষার কিতাব ‘আ’ইনুল হায়াত’ থেকেও ইউজে আসেফ সম্পর্কে তথ্য উদ্ধৃত করে গেছেন। তিনি লিখেছেন,
شیعوں نے مجھے ایک کتاب بھی دکھلائی جس کا نام عین الحیات ہے اس کتاب میں میں بہت سا قصہ بصفحہ مأة و تسعة عشر ابن بابویہ اور کتاب کمال الدین اور اتمام النعمہ کے حوالہ سے لکھا ہے لیکن وہ تمام بے ہودہ اور لغو قصے ہیں صرف اس کتاب میں اس قدر سچ بات ہے کہ صاحب کتاب قبول کرتا ہے کہ یہ نبی سیاح تھا اور شہزادہ تہا جو کشمیر میں آیا تھا۔
অর্থাৎ “শীয়ারা আমাকে এমন একটা কিতাবও (বই) দেখিয়েছিল যার নাম আ’ইনুল হায়াত’। সেই কিতাবে ১১৯ পৃষ্ঠাব্যাপী ইবনে বাবওয়াইহি এবং ‘কামালুদ্দীন ওয়া তামামুন নি’মাহ’ কিতাবের উদ্ধৃতিতে বহু ঘটনা লিখা আছে। কিন্তু তার সমস্ত ঘটনা অনর্থক এবং বেহুদা। তবে গ্রন্থকারের গৃহীত অনুসারে সেখানে এই কথাগুলোই সত্য যে, সে (ইউজে আসেফ) একজন পর্যটক নবী ছিল, একজন রাজপুত্র ছিল যে কাশ্মীরে এসেছিল।” (রাযে হাকীকত, রূহানী খাযায়েন ১৪/১৭০)।
সারকথা হল, ঐ কিতাবে উল্লিখিত মাত্র তিনখানা কথাই সত্য, এ ছাড়া বাকি সবই অনর্থক। সেই তিনখানা কথা হল, (১) ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটি একজন পর্যটক নবী ছিলেন। (২) একজন শাহজাদা ছিলেন। (৩) তিনি কাশ্মীর এসেছিলেন। কিন্তু সত্য এটাই যে, ‘কামালুদ্দীন’ কিতাবটিতে ইউজে আসেফকে একবারের জন্যও ‘নবী’ শব্দে উল্লেখ করা হয়নি। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কেউ ইউজে আসেফ সম্পর্কে ‘নবী’ শব্দের উল্লেখ থাকা দেখাতে পারবেনা। কোনো কাদিয়ানী নেতার সাহস থাকলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন!
তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই যে, স্থানীয়দের সবাই তাকে ‘নবী’ হিসেবে মনে করত তারপরেও দুটি প্রশ্নের আদৌ কোনো উত্তর থাকেনা।
(এক) তখন আল্লাহর ঐ নবী আর যেই হোন না কেন, অন্ততপক্ষে ঈসা (আ.) হতে পারেন না। কারণ ঈসা (আ.)-এর পিতা ছিলনা এবং তিনি রাজপুত্র বলেও সম্বোধিত হতেন না।
(দুই) মির্যা সাহেব স্থানীয়দের নামে এমন দাবী মূলত আ’ইনুল হায়াত’ কিতাবের উদ্ধৃতিতে করেছেন। এখন সেটির সত্যতা কতটুকু তার খোঁজ মিলবে যদি কিতাবটি খোলে দেখা যায়! কিন্তু কিতাবটির কোথাও একবারের জন্যও লিখা নেই যে, ইউজে আসেফ একজন নবী কিংবা বনী ইসরাইলি ছিলেন! কাজেই মির্যা কাদিয়ানী একজন প্রতারক ছিল বলে আর কোনো সন্দেহ থাকতে পারে কি?
মির্যা সাহেব তার উক্ত রচনায় এও লিখলেন,
اس شہر کے شیعہ لوگ بھی کہتے ہیں کہ یہ کسی نبی کی قبر ہیں جو کسی ملک سے بطور سیاحت آیا تھا اور شہزادہ کے لقب سے موسوم تھا۔
অর্থাৎ “এই শহরের শীয়া লোকজনও বলেছে যে, এটি কোনো এক নবীর কবর যিনি কোনো এক দেশ থেকে ভ্রমণ করে এসেছিলেন এবং শাহজাদা উপাধিতে ভূষিত ছিলেন।” কিন্তু সত্য এটাই যে, এ ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিকে ‘নবী’ বলে মনে করার উক্ত দাবীরও কোনো ভিত্তি নেই। সত্য বলতে মির্যা সাহেব তার প্রতিটি লিখার পরতে পরতে এভাবে মিথ্যা আর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য এটাই যে, তার এ মিথ্যা আর জালিয়াতির কারণেই তার মুরিদ আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী তাকে ত্যাগ করেছিল।
আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর তদন্ত রিপোর্ট :
মির্যায়ী মুরিদ আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীকে ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটির কবর প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আ.)-এরই কবর কিনা, তা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তথ্য সংগ্রহ করতে কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় পাঠানো হয়। তিনি সেখানকার স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে নানা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি সেখানকার কবরটি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালান। অত:পর মির্যার নিকট পত্রের মাধ্যমে রিপোর্ট প্রেরণ করেন।
মির্যা কাদিয়ানী রিপোর্টটিকে তারই রচিত ‘রাযে হাকীকত’ (রচনাকাল, নভেম্বর ১৮৯৮ইং) বইতে ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। বইটি আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর হাতে গিয়ে পৌঁছে। তিনি তার পত্রটি পড়ামাত্রই হতভম্ব হয়ে যান। কারণ পত্রের অনেক জায়গায় মির্যা সাহেব নিজ থেকে পরিবর্তন করে ফেলেন। আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী’র প্রেরিত রিপোর্টে যা ছিলনা তিনি তাও ঐ রিপোর্টের নামে চালিয়ে দেন। এ সম্পর্কে একটু পরেই লিখছি।
প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন :
মির্যা সাহেবের দাবী অনুসারে যদি ‘আ’ইনুল হায়াত’ কিতাবটির ঐ তিনখানা বক্তব্যের বাহিরে বাকি সব কথা অনর্থক আর বেহুদা হয় তাহলে ইউজে আসেফ ‘শাহজাদা’ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন, এটি মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কিভাবে জানলেন?
আরো প্রশ্ন আসে, শুধু ঐ তিনটি কথাই কিজন্য সত্য হবে? বাকিগুলো কেন সত্য নয়?
আরো প্রশ্ন আসে, কাশ্মীরে আগমনকারী যুবকই ইউজে আসেফ, এটি মির্যা সাহেব জানলেন কিভাবে? যেহেতু তার দৃষ্টিতে ইউজে আসেফ নামীয় গল্পের সম্পূর্ণ কনসেপ্ট ঐ তিন জিনিসের বাহিরে।
আরো প্রশ্ন আসে, কাদিয়ানী জামেয়াগুলোতে ইউজে আসেফ নামীয় গল্পের কনসেপ্টের উপর নিয়মিত পাঠদান হয়ে থাকে। ইউজে আসেফ কে ছিল? কাশ্মীর কিভাবে এসেছিল? কিভাবে মারা গিয়েছিল? তিনি কার শিষ্য ছিলেন? তার গুরু মহোদয় হাকিম বলোহর সাহেব থেকে তিনি কী কী তালিম নিয়েছিলেন ইত্যাদী? এখন গল্পের বাকি অংশগুলো অনর্থক আর বেহুদা হলে তারা কিজন্য এমন বেহুদা বিষয়েও পাঠদান করে থাকেন?
জনৈক কাদিয়ানী মুরুব্বীর রচিত একটি কিতাব عيسى در ايں كشمير এর মধ্যে ইউজে আসেফ নামীয় গল্পের প্রায় পুরোটাই আলোকপাত করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত তিনিও সেখানে ইউজে আসেফ যে একজন বাদশাহ’র পুত্র ছিলেন, একথা এড়িয়ে গেছেন। এখন এই এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা ব্যাখ্যা করে দিতে পারবেন এমন কেউ আছেন?
জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই জানা থাকবে যে, ঈসা শব্দটি আরমেনীয় এবং হিব্রু উভয় ভাষাতেই ব্যবহৃত একটি শব্দ। এখন ইউজে আসেফ নামটিও যদি ঈসা (আ.)-এর হয় তবে কেন কিতাব দুটির একটিতেও ইউজে আসেফ নামীয় গল্পে ঈসা, মসীহ, জেসাস কিবা ইসো এই জাতীয় একটি শব্দও তার সুস্পষ্ট পরিচয় বহনের উদ্দেশ্যে উল্লেখ নেই?
এই পর্যায় আরেকটি প্রশ্ন করতে চাই যে, জীবিত আর মৃত এক সাথ হতে পারেনা, কাদিয়ানী মতের অনুসারীদের পক্ষ হতে এধরণের যুক্তি দেখানো হয় যাতে দ্বিতীয় আসমানে হযরত ইয়াহিয়া (আ.)-এর সাথে হযরত ঈসা (আ.)-এর অবস্থানকে শুধুমাত্র রূহানী অবস্থান বলে সাব্যস্ত করা যায়। তাহলে প্রশ্ন আসে যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব জাগ্রত অবস্থায়ও বহু নবী রাসূলের সাক্ষাৎ লাভ করতে পেরেছেন বলে দাবী কিভাবে করতে পারলেন? এই যে তার “মসীহ হিন্দুস্তান মেঁ” (পৃষ্ঠা নং ৩৫) বইতে লিখা আছে। এখন এর কী রূপক ব্যাখ্যা দেবেন? স্ক্যানকপি :-
মির্যার বই থেকে আরও কিছু উদ্ধৃতি নিম্নরূপ :
মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব লিখেছেন, শাহজাদা ইউজে আসেফের কবরকে নবীর কবর বলা হত, কেউ কেউ ঈসা সাহেব নবী’র কবর, এভাবেও বলত। (রূহানী খাযায়েন ১৪/২১২)। আহা! কত নিকৃষ্টতর ধোকা আর মিথ্যা! দুর্ভাগা আর কপালপোড়া কাদিয়ানী সম্প্রদায় এতই ব্রেইন ওয়াশ যে, তারা সত্য-মিথ্যা যাচাই করারও প্রয়োজন মনে করেনা। অথচ যার একটি কথায় মিথ্যা প্রমাণিত হবে তার বাদ-বাকি কোনো কথারই গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা, এটাই প্রকৃত কথা। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ২৩/২৩১)।
মির্যায়ী কতিপয় জালিয়াতি :
মির্যা কাদিয়ানী নিজের কথাকে ঐতিহাসিক প্রাচীন গ্রন্থের নামে চালিয়ে লিখলেন,
بل عندهم كتب قديمه توجد فيها هذه القصص في العربيه والفارسيه ومنها كتاب سمي كمال الدين وكتب اخرى كثيرة الشهرة.
অর্থাৎ বরং তাদের (কাশ্মীরের স্থানীয়দের) নিকট আরবী এবং ফার্সী ভাষায় এমন সব কিতাবও রয়েছে যেখানে এই ঘটনাবলী বিদ্যমান। তন্মধ্যে ‘কামালুদ্দীন’ কিতাব সহ অন্যান্য অনেক প্রসিদ্ধ কিতাব অন্যতম। (আল হুদা, রূহানী খাযায়েন ১৮/৩৬১)।
মির্যা কাদিয়ানী একই বিষয়ে আরও লিখেছেন,
کشمیر کے تمام باشندوں کا اس بات پر اتفاق دیکھ کر کہ یہ نبی جس کی کشمیر میں قبر ہے ہمارے نبی صلی اللہ علیہ وسلم سے چھہ سو برس پہلے گزرا ہے صاف طور پر حضرت عیسی کو متعین کر رہا ہے۔
অর্থাৎ কাশ্মীরে এই নবীর কবরের ব্যাপারে সেখানকার সমস্ত স্থানীয়দের একমত হওয়া যে, তিনি আমাদের নবী (সা.)-এরও ছয় শত বছর পূর্বেই গত হয়ে গেছেন, তা হযরত ঈসাকেই পরিষ্কার নির্দেশ করছে। (কাশফুল গুতা, রূহানী খাযায়েন ১৪/২০২)।
মির্যায়ী মুরিদ আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর নামে মির্যার মিথ্যা ও জালিয়াতির বিষয়ে ‘ফোরকান’ সাময়িকীতে স্বীকারোক্তি : –
اس خاکسار نے حسب الحکم سرینگر میں عین موقع پر یعنی روضہ مزار شریف شہزادہ یوز آصف نبی اللہ علیہ الصلوۃ والسلام پر پہنچ کر جہاں تک ممکن تھا بکوشش تحقیق کئی۔
অর্থাৎ এই অধম অর্থাৎ আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী (মির্যার) আদেশক্রমে শ্রীনগরের নির্দিষ্ট স্থানে তথা মাজার শরীফের ইউজে আসেফ নবীউল্লাহ আলাইহিস সালামের রওজায় এসে পৌঁছে যথাসাধ্য (কবরের প্রকৃত তথ্য) অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছি। (রাযে হাকীকত, রূহানী খাযায়েন ১৪/১৬৭)। অপ্রিয় হলেও সত্য, আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী যা লিখেনি মির্যা তা তার নামে নিজ বইতে চালিয়ে দেন! এ সম্পর্কে তাদেরই ‘ফোরকান’ সাময়িকী থেকে দেখুন,
কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল একখানা উর্দূ সাময়িকীর নাম ‘ফোরকান‘। এটির ১৯৪৬ সালের জুলাই সংখ্যায় মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ নিজেই স্বীকার করে লিখেছেন যে, মির্যার রচিত ‘রাযে হাকীকত’ বইতে (রূহানী খাযায়েন ১৪/১৬৭) মির্যায়ী মুরিদ আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী’র পাঠানো পত্রের নামে যা যা উদ্ধৃত করা হয়েছে—সত্য হল সেটি হুবহু সেরকম ছিলনা। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ইউজে আসেফ সম্পর্কে নিজ দাবীর সমর্থনে যে সকল সাক্ষীর তালিকা দিয়ে রেখেছেন তন্মধ্য হতে ১৯৪৬ সালেও দুইজন জীবিত ছিলেন। মির্যা কাদিয়ানীর রচনা ‘আল হুদা‘ (আরবী) বই থেকে মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সেই দু’জনকে তাদের নামও দেখান; যেখানে তারা ২ আর ৩ নং সিরিয়ালে রয়েছেন। তারা সেই তালিকায় নিজেদের নাম দেখে খুবই অবাক হন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এ সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। তাদের একজন মওলানা সা’আদ উদ্দীন আ’তিক (খান ইয়ার মহল্লার বাসিন্দা), অপরজন মওলভী আহমদ উল্লাহ ওয়ায়েজ কাশ্মীরী। তালিকাটি দেখার জন্য ‘রূহানী খাযায়েন’ ১৮/৩৭৩ দ্রষ্টব্য। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সাক্ষী হিসেবে উক্ত তালিকায় আরও যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে তারাও যদি তখন জীবিত থাকত; তবে বিচিত্র নয় যে, তারা প্রত্যেকে ঐ তালিকা দেখে এই দু’জনের মতই হতবাক হতেন।
আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী মির্যা কাদিয়ানীর জালিয়াতির প্রতিবাদ করে ‘শু’লাতুন নার ফী মাক্ববেরায়ে খানইয়ার’ নাম দিয়ে একটি বইও রচনা করেন। বইটিতে তিনি জোরগলায় প্রতিবাদ করেন এভাবে যে,
پس خان یار کے مقبرے کے متعلق ان باتوں میں سے کوئی بات میرے خط میں موجود نہیں۔ جو خط میں نے حضرت مرزا صاحب کو لکھا اور جس کو انہوں نے شائع کر دیا اور نہ کوئی بات مطابق واقعہ ہے بلکہ یہ تمام باتیں حضرت مرزا صاحب نے اپنی خیال سے ایجاد کر کے بڑے زور کے ساتھ دنیا میں شائع کر دی
অর্থ- “অতএব খান ইয়ার মহল্লার সমাধি সম্পর্কে এ সবের কিছুই আমার চিঠিতে নেই। হজরত মির্যা সাহেবকে আমি যে চিঠি লিখেছিলাম এবং যা তিনি প্রকাশ করেছেন তার কোনোটিই বাস্তব সম্মত নয়, বরং এর সবই হযরত মির্যা সাহেবের মনগড়া সৃষ্টি, যা সারা বিশ্বে প্রবল শক্তির সাথে তিনি প্রচার করেছেন।” (শু’লাতুন নার ফী মাক্ববেরায়ে খানইয়ার, আব্দুল্লাহ উকিল কাশ্মীরী)।
প্রামাণ্য স্ক্যানকপি
উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনার পরপরেই মির্যা কাদিয়ানীর উপর আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী আর আস্থা রাখতে পারলেন না। তিনি বেরিয়ে গেলেন মির্যায়ী বাইয়েত থেকে। যোগ দিলেন অন্য আরেক মসীহ দাবীদার বাহাউল্লাহ ইরানীর (১৮১৭-১৮৯২ইং) ‘বাহায়ী জামাতে’। কিন্তু আফসোস, কাদিয়ানী নেতারা আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর মির্যার বাইয়েত ভঙ্গ করার অন্তর্নিহিত কারণ প্রকাশ করে না।
মির্যা কাদিয়ানী আরও লিখেছেন,
کشمیر کی پرانی تاریخ سے ثابت ہے کہ صاحب قبر ایک اسرائیلی نبی تھا اور شہزادہ کہلا تھا۔
অর্থাৎ কাশ্মীরের পুরনো ইতিহাস দ্বারা সাব্যস্ত আছে যে, কবরের ব্যক্তিটি একজন ইসরাইলী নবী ছিল এবং তাঁকে শাহজাদা বলা হত। (তুহফায়ে গোলডবিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৭/১০১)।
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব আরও লিখেছেন,
اور نبی کا لفظ جو اس صاحب قبر کے نسبت کشمیر کے ہزارہا لوگوں کی زبان پر جاری ہے یہ بھی ہمارے مدعا کے لیے ایک دلیل ہے۔
অর্থাৎ এবং এই কবরের ব্যক্তিটি সম্পর্কে কাশ্মীরের হাজারো মানুষের জবানে ‘নবী’ শব্দ প্রচলন থাকাই আমাদের দাবীর সত্যতার একটি প্রমাণ। (কাশফুল গুতা, রূহানী খাযায়েন ১৪/২১২)।
তিনি আরো লিখেছেন,
شہزادہ یوز آسف نبی کی قبر اور بعض عیسی صاحب نبی کی قبر کہتے ہیں۔
অর্থাৎ শাহজাদা ইউজে আসেফ নবীর কবর এবং কেউ কেউ ঈসা সাহেব নবীর কবরও বলে থাকে। (কাশফুল গুতা, রূহানী খাযায়েন ১৪/২১২)।
আমরা তার বইগুলো থেকে আরও দেখতে পাই, তিনি লিখেছেন,
حال میں جو روسی سیاح نے ایک انجیل لکھی ہے جن کو لندن سے میں نے منگایا ہے وہ بھی اس رائے میں ہم سے متفق ہے کہ ضرور حضرت عیسی علیہ السلام اس ملک میں آئے تھے۔
অর্থাৎ সম্প্রতি একজন রুশ অভিযাত্রী (নটোভিচ) একটি ইঞ্জিল লিপিবদ্ধ করেন, আমি সেটি লণ্ডন থেকে সংগ্রহ করেছি। সেও ঈসা (আ.) এই দেশে (কাশ্মীরে) এসেছিলেন মর্মে আমাদের দাবীর সাথে একমত। (রূহানী খাযায়েন ১৪/১৬৯)।
মির্যার সম্পূর্ণ দাবীর খোলাসা :
ইউজে আসেফ একজন নবী, ইসরাইলী নবী।
কাশ্মীরের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক সুত্র দ্বারাও সাব্যস্ত যে, এই কবর একজন ইসরাইলী নবীর কবর।
স্থানীয়রাও একথার সাক্ষী, বরং হাজার মানুষ এটি মনে করেন।
রুশ সাংবাদিক নটোভিচের একটি ইঞ্জিলও ঈসা (আ.) কাশ্মীর এসেছিলেন বলে সাক্ষী।
এবার আমার বক্তব্য : মির্যা সাহেব ইউজে আসেফ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হিন্দুস্তানের যে ঐতিহাসিক প্রাচীন বইদুটি পড়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন, উপরে সে দুটি বই থেকেই প্রমাণ করা হয়েছে যে, ঈসা (আ.) আর ইউজে আসেফ তারা আলাদা দুই ব্যক্তি। আর কাশ্মীরের স্থানীয়দের সম্পর্কে মির্যা সাহেব যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণের কথা লিখে গেছেন তা ইংগিতেও বই দুটিতে পাওয়া যায় না। কেউ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে করতে পারেন।
এবার বাকি রইল রুশ সাংবাদিক নটোভিচ। পুরো নাম নিকোলাস নটোভিচ (১৮৫৮-১৯৬১ইং)। তার সম্পর্কে একটি পুরনো তিব্বতি পুঁথিকে রুশ ভাষায় অনুবাদ করার কথা জানা যায়। কথিত আছে, তিনি নাকি ঐ তিব্বতি পুঁথি থেকে যীশুর ভারতে আসার ধারণা আবিষ্কার করেন। আমি উইকিপিডিয়া (ইংলিশ) সূত্রে তথ্যটি এভাবে পেলাম যে, নটোভিচ উল্লেখ করেন, ‘উনত্রিশ বছর বয়সে যিশু নিজের দেশে ফিরে তাঁর শিক্ষা প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি জেরুজালেম যান। সেখানে পীলাত তাঁকে নিয়ে ভীত হয়ে পড়েন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং হত্যা করা হয়।’ নটোভিচের দাবী ছিল যিশু হিন্দুস্তানে এসেছিলেন। তবে নবুওয়ত প্রাপ্তির আগে, পরে নয়। তিনি উনত্রিশ বছর বয়সে পুনরায় জেরুজালেমে ফিরেও গিয়েছিলেন। এখন নটোভিচের কথা অনুসারে ঈসা (আ.)-এর হিন্দুস্তানে আসা তাঁর নবুওয়তের পূর্বেকার সময়ে, পরবর্তীতে তিনি ফিরেও যান; কাদিয়ানীরা কি বিশ্বাস করবে? নটোভিচ কিন্তু পরবর্তীতে স্বীকারও করেছেন যে, তার পূর্ব ধারণাটি সত্য নয়।
ঈসা (আ.) আর ইউজে আসেফ দুইজনই আলাদা ছিল বলে স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানীর সাক্ষ্য :
মির্যা গোলাম আহমদ এক দিকে ইউজে আসেফকে ঈসা মসীহ সাব্যস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন আবার আরেক দিকে নিজেই লিখলেন যে, ‘আরও আশ্চর্যের বিষয় ইউয আসফের পুরাতন ধর্ম গ্রন্থের সাথে (যা অধিকাংশ বিজ্ঞ ইংরেজ পণ্ডিতদের মতে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পূর্বেই লিখিত হয়েছিল এবং যা বিভিন্ন ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়ে নানা দেশে প্রচারিত হয়েছে) ইঞ্জিলের অধিকাংশ কথায় এত সামঞ্জস্য আছে যে বহু স্থানে বর্ণনাগুলোতে বাক্যসমূহ এর সাথে সম্পূর্ণ একরূপ। ইঞ্জিলে বর্ণিত উপাখ্যান সমূহ অক্ষরে অক্ষরে উক্ত পুস্তকেও বর্ণিত আছে।” (চশমায়ে মসীহি ১২-১৩; বাংলা চতুর্থ প্রকাশ জুলাই ২০১৮ ইং; মূল মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।
এখান থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটি তারই কথা অনুসারে ঈসা ভিন্ন দ্বিতীয় এমন এক ব্যক্তি যার জীবনকাল ঈসা (আ.)-এরই পূর্বে গত হয়ে গেছে এবং তার কিতাব আর ইঞ্জিল দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমন স্ববিরোধ কথাবার্তায় যে ব্যক্তি অভ্যস্ত তার মিথ্যাবাদী হতে আর কী বাকি?
এবার প্রাচীনতম কিতাব দুটি থেকে আরও কিছু উদ্ধৃতি :
মির্যা গোলাম আহমদ এর দাবী হচ্ছে, ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটি সম্পর্কে নাকি ‘নবী’ হওয়ার কথা কিতাব দুটিতে লিখা আছে! অথচ কিতাব দুটির কোথাও একবারের জন্যও তার সম্পর্কে ‘নবী’ শব্দটি উল্লেখ নেই। বড়জোর তার সম্পর্কে লিখা আছে, তিনি সমসাময়িককালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠতম বুযূর্গ ব্যক্তি, খোদাভীরু ও দুনিয়াবিমুখ ব্যক্তি। শ্রান্দীপ অধিবাসী হাকিম বলোহর নামীয় তার একজন গুরু ছিলেন। তিনি তাঁর কাছ থেকে দ্বীনের সমস্ত তালিম, নসিহত ও হেকমত সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতেন। কিন্তু ধূর্ত মির্যা গোলাম আহমদ এর কোনো একটিও তার বইতে উল্লেখ করেনি। এই তো কয়দিন আগের কথা। ৩০শে এপ্রিল ২০১০ ইং তারিখে প্রকাশিত বিবিসি (আরবী)-এর একটি অনুসন্ধানী নিউজ দেখলাম। সেখানে ইউজে আসেফ এর কবরের ছবি উল্লেখ করে নিচে লিখা হয়েছে,
اما السكان المحليون فيتعبرون ان المزار هو قبر لاثنين من العلماء المسلمين توفيا منذ قرون: يوزا آصف والسيد نصير الدين.
অর্থাৎ, এখানকার স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে, নিশ্চয়ই এই দুটো কবর দুইজন মুসলিম আলেমের, এঁরা কতেক শতাব্দীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন ইউজে আসেফ আর অন্যজন সাইয়েদ নাসির উদ্দীন। বিবিসি (আরবী) নিউজ পোর্টালের লিংক দেখুন।
মির্যা সাহেবের মতে, মোল্লা মুহাম্মদ বাকের মজলিসি বিরচিত ‘আ’ইনুল হায়াত’ (ফার্সি) কিতাবে ইউজে আসেফ এর কিতাবের নাম ‘ইঞ্জিল’ রাখা হয়েছে। হায় হায়, কত জঘন্য মিথ্যা কথা! অথচ সেখানে এমন কোনো কথা ইংগিতেও নেই। এমনকি ইউজে আসেফ সম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনায় ‘ঈসা বা ইবনে মরিয়ম বা মসীহ বা জেসাস’ এই সমস্ত শব্দেরও উল্লেখ নেই।
‘মির্যা কাদিয়ানীর জন্য দুঃসংবাদ :
মির্যা কাদিয়ানীর জন্য দুঃসংবাদ এইজন্য যে, আরবী ভাষায় লেখিত ‘কামালুদ্দীন’ নামীয় কিতাব অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমার পক্ষেও বইটি সংগ্রহে কষ্ট করতে হয়নি। আইনুল হায়াত কিতাবের উর্দূ অনুবাদ ‘রূহুল হায়াত’ কিতাবটিও ডাউনলোড করেছি। মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব হয়ত ভেবেছিলেন, তিনি যাইচ্ছেতাই লিখে গেলেও সেটির সত্যমিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করবে সে আবার কে! কার এত সময় আছে!! তাছাড়া শীয়াদের প্রাচীন যুগেকার রচিত এই সমস্ত দুর্লভ কিতাব সংগ্রহ করবে এমন সাধ্য কার!!! তাই তিনি ভেবেছিলেন, দুনিয়াকে চিরকাল মিথ্যার বেসাতি করে অন্ধকারেই রেখে যেতে পারবেন!
তার জন্য দুঃসংবাদ হল, সে জানত না যে, একটা সময় আসবে যখন তথ্যপ্রযুক্তির সহজ আদানপ্রদান হবে। মানুষ পৃথিবীটাকে পকেটে নিয়ে ঘুরবে। মুহূর্তের মধ্যে যে কেউ গুগল নামক সার্চ-ইঞ্জিল থেকে যে কোনো দুষ্প্রাপ্য কিতাবও ডাউনলোড করে পড়তে পারবে। আর সেই সময় দুনিয়ার সমস্ত মিথ্যাবাদী, প্রতারকরা উপর্যুপরি পাকড়াও হতে থাকবে। আজকে যেমনিভাবে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রতিনিয়ত দুনিয়ার সামনে পাকড়াও হতে চলেছে।
(খ) এই বিষয়ে কেন জানা দরকার?
এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি জানা প্রয়োজন এ কারণেই যে, মির্যা কাদিয়ানীর দাবীগুলোর মূল ভিত্তিই হচ্ছে, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু এবং কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তিটিই প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আ.)। এখন আমি যখন তাঁর উক্ত দাবীর মূল ভিত্তিটাই তারই বাতলানো অথেনটিক সোর্স দ্বারা নড়বড়ে করে দিলাম তখন তো যে কেউই মানতে বাধ্য হবে যে, অন্তত আর যাইহোক ইউজে আসেফ আর ঈসা (আ.) দুইজনই আলাদা দুই ব্যক্তি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মোটকথা, কেবল এই একটি তথ্যবহুল লিখাই তার ইউজে আসেফ নামীয় ব্যক্তির কবর হযরত মসীহ ঈসা (আ.)-এরই কবর হবার বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য যথেষ্ট। পাঠক সমীপে প্রত্যাশা, আপনারা যেন এই লিখাটি গভীর মনোযোগ সহকারে পড়েন। অহেতুক কু-ধারণার বশবর্তী হয়ে এতে পরিবেশিত এই সব সত্যকে দূরে ঠেলে না দেন। স্মরণ রাখবেন, এটি ভাসা-ভাসা তথ্যের উপর লেখিত গতানুগতিক কোনো লিখা নয়, বরং এতে উপস্থাপিত সকল কন্টেন্ট অত্যন্ত গভীর অনুসন্ধান আর আমানতের সাথে গৃহীত। প্রয়োজনে এর যে কোনো তথ্যের উপর আপনারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন। আশাকরি, এই সত্য উদঘাটন হওয়ার মাধ্যমে কাদিয়ানী মতবাদের দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ হতে মাত্র সময়ের অপেক্ষা।
ডঃ বার্নিয়ারের উদ্ধৃতি, ‘মারহামে ঈসা’ বা ঈসার মলম এবং বনী ইসরাইলি হারানো দশটি গোত্রের দিকে গমন ইত্যাদী কিছু প্রসঙ্গ ও তার সংক্ষিপ্ত উত্তর :
এই পর্যায় কয়েকটি বিষয়ের জবাব না দিলে মনে সংশয় থেকে যাবে, তা হচ্ছে মির্যা কাদিয়ানী সাহেব দাবী করে লিখেছেন, ডঃ বার্নিয়ার রচিত ‘সফরবৃত্তান্ত’ বইতে উল্লেখ আছে, কাশ্মিরের বাসিন্দারা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে ইহুদী, যারা এসুর (Assur) সম্রাট কর্তৃক সংঘটিত বিপর্যয়ের সময়ে এ দেশে চলে এসেছিল। (মসীহ হিন্দুস্তান মেঁ ১৯)। আমি উত্তরে বলি, ডঃ বার্নিয়ার এ সমস্ত কথা যদি উল্লেখ করেনও তবে তা কখনো সঠিক হয়ে যাবেনা, যে পর্যন্ত সেটির নির্ভরযোগ্য সনদ ও ভিত্তি পরিষ্কার জানা না যাবে। কেননা ডঃ বার্নিয়ার নিজেও কথাগুলো বিভিন্ন পণ্ডিতের উদ্ধৃতিতে লিখেছেন মর্মে মির্যা নিজেই লিখে গেছেন। ফলে ‘দশ চক্রে ভগবান ভূত’ প্রবাদটি একদমই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
তিনি দাবী করে আরও লিখেছেন, মসীহ (আ.) জেরুজালেমের কবরটিতে তিন দিন অবস্থান করে ক্রুশের ক্ষতগুলো নিরাময় করেন। তিনি বহু চিকিৎসাশাস্ত্রের গ্রন্থে ‘মারহামে ঈসা’ নামের একটি মলমের ব্যবস্থাপত্র উল্লেখ থাকার পুঁতিও তুলে ধরেছেন। এই মলমটির ব্যবহারে নাকি মসীহ (আ.)-এর ক্ষতগুলো কয়েক দিনেই ভালো হয়ে গিয়েছিল। আর এ থেকেও নাকি প্রমাণিত হয় যে, ঈসা (আ.) ক্রুশবিদ্ধ হওয়াটা সত্য, যেমনটি ইঞ্জিলের কোনো কোনো কপিতেও উল্লেখ রয়েছে। আমি এর উত্তরে মির্যা সাহেবের এ কথাটিরই পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, বার্নাবাসের ইঞ্জিলে পরিষ্কার লিখা আছে, মসীহ (আ.) ক্রুশবিদ্ধ হন নি এবং মারাও যাননি। (মসীহ হিন্দুস্তান মেঁ ২২)। তার স্বীকারোক্তি মতেও এটি একখানা প্রাচীন ইঞ্জিলগ্রন্থ, যা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। এখন এই গ্রন্থ পাঠে আমরা কি অন্তত এ কথা বলতে পারিনা যে, পবিত্র কুরআন যেরূপভাবে মসীহ (আ.) সম্পর্কে ক্রুশবিদ্ধ হবার খ্রিস্টীয় বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ মিথ্যা সাব্যস্ত করছে, অনুরূপভাবে বার্নাবাসের ইঞ্জিলও মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাকে।
এতেই সাব্যস্ত হয় যে, মসীহ (আ.) ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে তখনকার সকল মানুষ একমত ছিলেন না। তাই প্রশ্ন আসে, যার ক্রুশবিদ্ধ হওয়াটাও সর্বসম্মত কোনো বিশ্বাসের মধ্যে পড়েনা তার আবার কোন জখমের আরোগ্যলাভ হয়েছিল কথিত ‘মারহামে ঈসা’ নামের মলম দ্বারা? নির্বোধদের মগজে এই প্রশ্নটি কেন জাগেনা যে, মসীহ তো অন্যদের আরোগ্য করতেন, কিন্তু তিনি নিজেকে আরোগ্য করতে অপারগ ছিলেন বলেই কি সামান্য একটি মলম তাঁর আরোগ্য করেছিল! তবে কি জাগতিক সামান্য এই মলম হযরত মসীহ’র চাইতেও অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী ছিল? নাউযুবিল্লাহ।
তারপর মির্যা সাহেব লিখেছেন, মসীহ (আ.) কবর থেকে বের হয়ে বনী ইসরাইলের হারানো দশটি গোত্রের দিকে যান, যারা কাশ্মীর ও তিব্বত ইত্যাদি প্রাচ্য দেশগুলোতে বসবাসরত ছিলো। মির্যার দাবী হল, এই দশটি গোত্রের দিকে গমন করবেন বলে খোদ মসীহ (আ.)ই ইংগিত দিয়েছিলেন। আমি এর উত্তরটিও মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি পালটা একটি প্রশ্নের মাধ্যমে দিতে চাই। গোটা বাইবেলের কোথাও ইংগিতেও একথা উল্লেখ নেই যে, মসীহ (আ.) গালীল থেকে কাশ্মীর বা তিব্বত ইত্যাদি কোনো প্রাচ্য দেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন। বড়জোর এটুকু পাওয়া যায় যে, যীশুর একাদশ শিষ্য গালীলে যীশুর (মসীহর) সাথে শেষ সাক্ষাত করেন। তখন যীশু নিকটে আসিয়া তাহাদের সাথে কথা কহিলেন, আর বলিলেন, স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে। অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর। (বাইবেল, মথি ২৮: ১৬-২০ দ্রষ্টব্য)।
বাইবেলের এই শ্লোক সত্যি হলে, একজন শিক্ষিত খ্রিস্টানও মানতে বাধ্য হবে, যীশু (ঈসা)-কে গ্যালিল থেকেই দ্বিতীয় আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। ইসলামিক কোনো কোনো আন-অথেনটিক ইসরাইলি রেওয়ায়েতেও খ্রিস্টীয় উক্ত শ্লোকের স্বীকারোক্তির চাপ রয়েছে। যেমন বিচ্ছিন্ন একটি সূত্রে ওয়াহাব বিন মুনাব্বেহ বলেন, মসীহ শুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর তিন ঘন্টা পর পুনরুজ্জীবিত হন অত:পর ইশ্বর তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেন (কিন্তু ওয়াহাবের এই বর্ণনা তাফসীরকারকগণ শুধুই সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন, অথেনটিক সোর্স হিসেবে নয় – লিখক)।
পূর্বের বক্তব্যে আবার ফিরে আসছি, আমরা বাইবেল থেকেও জানলাম যে, তিনি (যীশু) শিষ্যদেরকে সমগ্র দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দেন, যাতে সমগ্র জাতিকে শিষ্য বানিয়ে নিতে পারে। এমতাবস্থায় মির্যায়ী দাবী—‘এই দশটি গোত্রের দিকে গমন করবেন বলে খোদ মসীহ (আ.)ই ইংগিত দিয়েছিলেন’ একথা মিথ্যা সাব্যস্ত হল কিনা? উল্লেখ্য, গালীল হচ্ছে প্রাচীন ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে শামের একটি জনপদ, বর্তমানে এটি উত্তর ইসরায়েল ও দক্ষিণ লেবাননে অবস্থিত একটি অঞ্চল। সংক্ষেপে উত্তরগুলো দেয়া হল।
যীশুকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, এর প্রমাণ বাইবেল থেকেও আমরা দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ :
“যীশু আশীর্বাদ করতে করতে তাঁদের ছেড়ে আকাশে উঠে যেতে লাগলেন আর স্বর্গে উন্নীত হলেন৷” (মার্ক ১৬/১৯-২০; লুক ২৪/৫১)।
“যীশু যখন যাচ্ছেন, আর প্রেরিতরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন, ঠিক সেই সময সাদা ধবধবে পোশাক পরা দুই ব্যক্তি তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন৷”
“সেই দুই ব্যক্তি প্রেরিতদের বললেন, ‘হে গালীলের লোকেরা, তোমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছ কেন? এই যে যীশু, যাকে তোমাদের সামনে থেকে স্বর্গে তুলে নেওযা হল, তাঁকে যেভাবে তোমরা স্বর্গে যেতে দেখলে, ঠিক সেই ভাবেই তিনি ফিরে আসবেন৷” (প্রেরিত ১/১০-১১; ২/৩৩)। একজন জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারবেন যে, বাইবেল এ শ্লোক দ্বারাও পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কাদিয়ানীদের রূপক মসীহ’র কনসেপ্টটাই সুস্পষ্ট ধোকা আর প্রতারণা।
ঈসা (আ.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া সংক্রান্ত ইসলামিক অথেনটিক কয়েকটি সোর্স এখানে তুলে ধরেছি। পড়তে ক্লিক করুন।
পরিশেষ, হেদায়েতের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছে হিদায়াত দেবেন। আমি অনেক কষ্ট করে তথ্যগুলো জোগাড় করেছি। যাতে একজন কাদিয়ানীও নিরপেক্ষভাবে সত্যটা বুঝে ঈমানের ঝাণ্ডাতলে ফিরে আসতে পারে। আল্লাহ হাফেজ।
‘বেহেশতি মাকবেরা’ বাক্যটি ফার্সী এবং আরবী মিশ্রিত। অর্থ বেহেশতি কবর। মানে এমন একটি সমাধি যেটির অধিবাসী একজন বেহেশতি হিসেবে পরিগনিত। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার বইতে তার কথিত ইলহামে পাওয়া এই বিশেষ ধরনের কবর সম্পর্কে লিখেছেন, যে ব্যক্তি ইহাতে দাফন হবে সে বেহেশতি হয়ে যাবে।’ (মালফুযাত ৫/৩৬০ উর্দূ এডিশন, ইলহাম ১৮-১১-১৯০২ ইং)।
কাদিয়ানীদের নতুন একটি কনসেপশন হচ্ছে কথিত “বেহেশতি মাকবেরা“। সোজা বাংলায়, দুনিয়াতে বসেই বেহেশত কেনা-বেচা। এই বেহেশত কেনা-বেচা চালু করেন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তাও আল্লাহর নামে ওহী ইলহামের দোহাই দিয়ে, যা অত্যন্ত নির্লজ্জ ও জঘন্য কর্মকাণ্ড বৈ আর কিছু না। তার অন্ধভক্ত সাধারণ মানুষদের প্রায় সবাই সরলমনে এটি বিশ্বাসও করে নিয়েছেন। তারা ঐ বেহেশতী মাকবেরায় দাফন হওয়ার জন্য যেই শর্ত তাও পূরণ করার চেষ্টা করেন। কেউ একত্রে কেউ বা কিস্তিতে পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত রেট আদায় করে থাকেন। রেট বেশিনা, প্রত্যেক মুসী অর্থাৎ ওসীয়্যতকারী নিজ পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১০% সম্পদ বা নগদ অর্থ কাদিয়ানী ফাণ্ডে আদায় করে দেবেন। বিনিময়ে বেহেশত পেয়ে যাবেন। আর কোনো চিন্তা থাকবেনা। কেননা, মির্যা সাহেব পরিষ্কার বলেছেন যে, তার প্রবর্তিত ঐ বেহেশতি মাকবেরায় বেহেশতিরাই কেবল সমাহিত হবেন। মির্যার দাবীমতে, এটাই হল তার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহ’র পবিত্র বাক্যের প্রকৃত মর্মার্থ। (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের কথিত ‘বেহেশতি মাকবেরা’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পড়ুন। ক্লিক করুন।
এই সম্পর্কে আমার পেইজবুক ফেইজে একটি আর্টিকেল পোস্ট দিয়েছি। সেটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হল।
এটি মির্যা কাদিয়ানীর বই “আল ওসীয়্যত” এর পৃষ্ঠা নং ৩৮ এবং ৩৯। এখান থেকে তার এদেশীয় অনুসারীদের উদ্দেশ্যে দুই কলম লিখতে চাই যাতে তাদের জ্ঞানের চক্ষুর উপর অন্ধবিশ্বাসের যেই কালো পর্দাটি ঝুলে আছে তা দ্রুত সরে যায় :-
অধিকাংশ কাদিয়ানী বইটি পড়ে থাকলেও বুঝে পড়েনা, এটা সত্য। নইলে এই বইটিতে পরিষ্কার লিখা আছে, মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক প্রবর্তিত কথিত বেহেশতি মাকবেরা নামীয় কবরস্থান শুধুমাত্র ভারতের পাঞ্জাবে “কাদিয়ান” নামক গ্রামেই সীমাবদ্ধ, প্রত্যেক মুসী (ওসীয়্যতকারী)-কে সেই গ্রামেরই নির্ধারিত কবরস্থানে কবর দিতে হবে, বাহিরের যে কোনো দেশের ওসীয়্যতকারী কাদিয়ানীর লাশ সিন্দুকের মধ্যে রেখে কাদিয়ান পাঠাতে হবে। এই হচ্ছে, তার কথিত বেহেশতি মাকবেরার বৃত্তান্ত। স্ক্রিনশট –
এখন আমার প্রশ্নটি হচ্ছে, তাহলে এদেশের কাদিয়ানী মুসীদের লাশ কেন কাদিয়ানে পাঠানো হয়না? কেন এদেশের ভেতরেও নানা স্থানে “বেহেশতি মাকবেরা” নামে কাদিয়ানীরা বেহেশতখানা খুলে বসেছে? এগুলো কি এক দিকে মির্যা কাদিয়ানীর সাথে দুই নাম্বারি নয়? আরেক দিকে যে এটি কবর বিক্রির বিনাপূজির রমরমা নিকৃষ্ট ব্যবসা তা কি আর বলা লাগে?
আমার চ্যালেঞ্জ :-
এখন কোনো কাদিয়ানী কি মির্যার কাছ থেকে এমন কোনো ইলহাম থাকার প্রমাণ দিতে পারবে যেখানে পরিষ্কার করে একথা বলা হয়েছে যে, কথিত এই “বেহেশতি মাকবেরা” কাদিয়ান ছাড়া বাহিরের যে কোনো দেশেও কেউ বানালে বৈধ হবে বা অনুমতি আছে? নইলে মির্যার কথিত ইলহামী ওয়ালা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার এই দুঃসাহস পরবর্তী যুগের চাঁন্দাখোর কাদিয়ানী নেতারা কোত্থেকে পেল? আমার চ্যালেঞ্জ রইল, কোনো কাদিয়ানী নেতা এইরূপ কার্যাবলীর কোনো অনুমোদন থাকা মির্যার তথাকথিত কোনো ওহী বা ইলহাম দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেনা।
কাজেই খুব চিন্তা করা দরকার যে, তাহলে কাদিয়ানী মুসীদের লাশ জায়গামত দাফন হচ্ছে কিনা? যদি জায়গামত দাফন না হয় তাহলে ওসীয়্যত বাবত তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১০% সম্পদ/সমপরিমাণ অর্থ প্রদান কি ফাউ গেল না?? বেহেশতের লোভনীয় অফার কি তখন লাঠে উঠল না?
এই লিখাটি পোস্ট দেয়ার পর একজন কাদিয়ানী মু’আল্লিম কী কমেন্ট করল পড়ে দেখুন! আমিও তার কমেন্টের প্রতিউত্তর করতে দেরি করিনি। কিন্তু সে আর পালটা প্রতিউত্তর করতে পারেনি। লিখাটি ফেইজবুক থেকে পড়ুন! ক্লিক করুন।
পীর খাজা মেহের আলী শাহ (রহ.) এর সাথে বাহাস থেকে মির্যা কাদিয়ানীর পলায়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
কাদিয়ানী ফেতনা মুকাবিলায় প্রখ্যাত পীর খাজা মেহের আলী শাহ (রহ.) এর কৃতিত্ব :
কাদিয়ানী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মির্যা গোলাম আহমদ। তিনি ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার “কাদিয়ান” গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গোলাম মর্তুজা, মাতা চেরাগ বিবি। মির্যা গোলাম আহমদ পরিণত বয়সে পেশায় একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং জমিদার ছিলেন। একাধিক গৃহ শিক্ষকের মাধ্যমে আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ সহ ফারসী ভাষা ইত্যাদি শিক্ষা লাভ করেন। নিজ পিতার কাছ থেকে হোমিওপ্যাথিকের উপরও জ্ঞান লাভ করেন। ১৮৬৪ সাল থেকে তিনি প্রায় চার বছর শিয়ালকোট জেলা প্রশাসকের অফিসে কেরানির চাকুরী করেন, তারপর তিনি চাকুরী ছেড়ে নিজ গ্রাম “কাদিয়ান” চলে যান। কাদিয়ান গিয়ে তিনি হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ সহ বিভিন্ন ধর্মের উপর ধর্মীয় বইপুস্তক অধ্যয়ন করতে থাকেন এবং ধর্মীয় বিতর্কে অংশ নেয়াও শুরু করেন।
যতদূর জানা যায়, তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন হানাফী ফিকহের মুকাল্লিদ। মির্যা নিজেও তার প্রথম জীবনে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। ততদিন পর্যন্ত মির্যার বিশ্বাস আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত-এর মুসলমানদের মতই ছিল। তিনি মুহাম্মদ (সা.)-কে নবীদের মধ্যে মুক্ত অর্থে “শেষনবী” বলেও বিশ্বাসী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে মির্যা নিজেও ঈসা (আ.)-এর আকাশে উঠিয়ে যাওয়া এবং কেয়ামতের আগে দামেশকে দুইজন ফেরেশতার মাধ্যমে অবতারণের আকীদায় বিশ্বাসী ছিলেন।
১৮৫৭ সালে দখলদার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু যুদ্ধে দেশবাসী জয়লাভ করতে না পারায়, বিশেষকরে মুসলিমরা তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য হারাতে বসেছিল। তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পেতে কখন একজন মহাপুরুষ আসবেন তা দেখার জন্য চারপাশে তাকিয়েছিল। এই দ্বিধা ও অস্থিরতার সময় মুসলমানদের মনে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল মির্যা গোলাম আহমদকে তার উপদেষ্টা হেকিম নূরউদ্দীন তা কাজে লাগাতে পরামর্শ দিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি যদি প্রতিশ্রুত ঈসা (আ.)-এর রূপক সত্তা (অবতার) হিসেবে নিজেকে জাতির সামনে উপস্থাপন করেন তবে সমগ্র জাতি তাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাবে এবং তিনি জাতির পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি মহৎ কাজ করতে সক্ষম হবেন।
অধিকন্তু মির্যার এই আন্দোলনের পিছনে কোন ইসলাম বিরোধীশক্তির ইন্ধন ছিল তা অনুমান করা কঠিন নয়, কারণ ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের ব্যাপারে আগ্রহ হারালেও কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী আর তার প্রতিষ্ঠিত আহমদীয়া দলের প্রতি তাদের সুধারণাই ছিল। মির্যা কাদিয়ানী সেই সময়কার স্বাধীনতাকামী মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিভিন্ন দরখাস্ত ও সমন পাঠিয়েছিল, যা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ ব্যক্তিদের একজন। আর যখন তিনি দেখলেন যে, হিন্দুরা স্বাধীনতার দৌড়ে মুসলমানদের সঙ্গী হয়ে লড়াই করছে এবং ক্ষমতাও লাভ করছে, তখন তিনি তার দলের প্রতি হিন্দুদের নেক দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তার পুস্তকাদিতে হিন্দুধর্মের নানা অবতার এবং ঋষি মুনিদের প্রশংসায় লিখতে এবং বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। তার বই “শাহাদাতুল কুরআন”-এ তিনি ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্যকে ইসলামের অংশ বলেও ঘোষণা করেছেন।
মির্যা কাদিয়ানী তার উপদেষ্টা ও অনুসারী হেকিম নূরউদ্দীনের পরামর্শ অনুসরণ করে নিজেকে ঈসা (আ.)-এর মাসীল (অবতার) হিসেবে দাবি করেন এবং বলেন, “আমি মরিয়মের পুত্র মসীহ হওয়ার দাবি করি না, আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি না, তবে আমি নিজেকে মাছীলে মসীহ (ঈসার অবতার) হবার দাবি করি।”
মির্যা তখন ঈসা (আ.)-এর সাদৃশ্যের এই দাবিকে বেশিদিন ধরে রাখেননি বরং আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সর্বপ্রথম ঈসার (যীশুখ্রিস্টের) জীবিত থাকার বিশ্বাস অস্বীকার করে তার মৃত্যুর ঘোষণা দেন। তারপর তিনি তার প্রতিশ্রুত মসীহ ঘোষণা করেন। যেমন তিনি লিখেছেন, “আমার দাবী হল আমি সেই প্রতিশ্রুত মসীহ, যাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী আছে ঈশ্বরের সমস্ত পবিত্র গ্রন্থে যে, তিনি শেষকালে আবির্ভূত হবেন।” তারপর এই সময়কালটিও অতিবাহিত হয় এবং পরবর্তী পর্যায়টি ছিল প্রতিশ্রুত মসীহ (সা.) হবার দাবী। মির্যা কাদিয়ানী প্রায় ১০ বছর ধরে তাঁর মসীহ হওয়ার দাবি বজায় রাখেন। এরপর তিনি ১৯০১ সালের নভেম্বরে তাঁর নবুওয়ত দাবীর ঘোষণা করেন।
এই দাবির পর মির্যা কিছুকাল নানা শব্দের (আনুগত্য /জিল্লি/বুরুজি/উম্মতি) আশ্রয় নিয়ে নবী হওয়ার ভান করতে থাকেন। ইতিপূর্বে খাতামুন নাবিয়্যীন সম্পর্কে মির্যার ব্যাখ্যা ছিল যে, এর অর্থ হল আপনি নবীদের সীলমোহর এবং আপনার সীল ছাড়া কারো নবী দাবী নিশ্চিত হতে পারে না। আপনি যাকে সীল মেরে নিশ্চিত করবেন তিনিই হবেন নবী। কিছু সময়ের জন্য মিথ্যা নবী হওয়ার পর, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব অবশেষে শরীয়তধারী নবী এবং মুহাম্মদী সিলসিলায় শেষনবী হওয়ার বড় বড় দাবিও করে বসেন। তাঁর রচিত “হাকীকাতুল ওহী” গ্রন্থে তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোকে নিজের সাথে এডজাস্ট করে ফেলেন, যেগুলো মহানবী (সা.)-এর মহিমায় অবতীর্ণ হয়েছিল। আর যারা তার এই সমস্ত দাবীকে ফালতু আর মিথ্যা বলেছিল তাদের সবাইকে তিনি কাফের বলে ঘোষণা করে বললেন “সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমার নিকট প্রকাশ করেছেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তি যে আমার দাওয়াত পাওয়া সত্ত্বেও আমাকে গ্রহণ করেনি সে মুসলমান নয়।” (তাযকিরাহ ৫১৯ নতুন এডিশন)।
অথচ মুসলমানদের অন্যতম একটি চিরন্তন বিশ্বাস যে, মুহাম্মদ (সা.)-ই আল্লাহতালার শেষনবী। তারপর আর কোনো নবীর জন্ম হবেনা। আর মহানবী (সা.)-এর ফরমান মুতাবেক হযরত ঈসা (আ.) দ্বিতীয়বার আসবেন “উম্মতি” হিসেবে, নবী হিসেবে নয়। কেননা পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদা আয়াত নং ৩ এর اليوم اكملت لكم دينكم (আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি) অনুসারে বর্তমানে নবুওয়তি দায়িত্ব সহকারে দ্বিতীয় কারো আসার প্রয়োজন নেই। সুতরাং ঈসা (আ.)-এর আগমনও নবুওয়তি দায়িত্ব সহকারে হবেনা, বড়জোর “উম্মতি” হিসেবে হবেন।
মুসলিম উম্মাহার নিকট ইসলামে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজন যথাক্রমে, ১. আল্লাহ’র কিতাব ২. মহানবীর হাদীস ৩. সালাফের ইজতিহাদ ৪. সাহাবা আজমা’ঈনের ঐকমত্য। এই চারটির দাঁড়িপাল্লায় যা সত্য, তা মুসলমানদের জন্য গৃহীত; আর যা মিথ্যা তা তাদের নিকট প্রত্যাখ্যাত। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর সমুদয় দাবী এই স্কেলে সত্য প্রমাণিত হয়নি। তাই মুসলমানদের পক্ষে এটি বিশ্বাস করা সম্ভব ছিল না। তথাপি তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লিখনীর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। ফলে তার সত্য-মিথ্যায় মিশ্রিত ক্ষুরধার লিখা কতিপয় নির্বোধ ও সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে।
মির্যা কাদিয়ানীর এই সমস্ত লিখালিখির অসারতা উন্মোচন করতে সেই সময়কার প্রসিদ্ধ আলেমেদ্বীন খাজা পীর মেহের আলীশাহ (রহ.) একখানা বই রচনা করেন, যেখানে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেন যে, হযরত মসীহ ইবনে মরিয়ম (আ.)-কে হত্যা করা হয়নি বা ক্রুশবিদ্ধ করাও হয়নি বরং শারীরিকভাবে জীবিত অবস্থায় আকাশে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং কিয়ামতের আগে তিনি দ্বিতীয়বার আবির্ভূত হবেন। হযরত ইমাম মাহদী আসবেন, ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করবেন। তারপর ঈসা (আ.) দামেস্কে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর সাথে এক হয়ে যুদ্ধ করবেন এবং ফিলিস্তিনের “বাব লূদে” ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) “মসীহে দাজ্জাল”-কে হত্যা করবেন। এরপর ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।
খাজা পীর মেহের আলী শাহ (রহ.)-এর রচিত “শামসুল হিদায়া” গ্রন্থটি উপমহাদেশের ইসলামিক পণ্ডিতদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তার প্রতিটি লিখা ছিল অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ। অমৃতসর শহরের একজন আহলে হাদীস মানহাজের আলেম মৌলভী হাবীবুল্লাহ সাহেব লিখেছেন যে, “শামসুল হিদায়া” বইটি পড়ার পর বহু সংখ্যক মির্যায়ী (কাদিয়ানী) তওবা করে এবং সঠিক পথে চলে আসে। মৌলভী হাবীবুল্লাহ সাহেব নিজেও আগে মির্যায়ীদের যাদুময় লিখনী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন কিন্তু খাজা সাহেবের বই তাকে সরল পথে অবিচল থাকতে সাহায্য করে এবং তিনি তার তাবৎ সংশয় খাজা মেহের আলী সাহেবের নিকট উল্লেখ করে সমাধান নিয়ে নিতেন। একই মৌলভী হাবীবুল্লাহ সাহেব পরবর্তীতে কাদিয়ানী মতবাদের খণ্ডনে এমন এমন গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছিলেন যে, বিখ্যাত আলেম আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানী (রহ.)ও তাঁর পাদটীকায় সূরা আল মুমিনুনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
১৯০০ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি, মির্যা কাদিয়ানীর বিশেষ উপদেষ্টা হেকিম নূরউদ্দীন সাহেব খাজা পীর মেহের আলী শাহ (রহ.)-কে একটি চিঠি লেখেন, যাতে তিনি বারোটি প্রশ্নের তালিকা করেন। খাজা সাহেবের উক্ত জবাব পরবর্তীতে দেশের আনাচে কানাচে সমস্ত মানুষের হাতে পৌঁছে যেতে থাকে এবং নামীদামী ইসলামিক স্কলাররা সেই জবাবগুলোর পাদটীকাও সংযোজন করে দেন। খাজা সাহেবের ‘শামসুল হিদায়া’ বইটি বাজারে ছড়িয়ে পড়ার পর মির্যায়ীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে এবং জায়গায় জায়গায় পাকড়াও হতে থাকে। মির্যায়ীয়ত গেল গেল রব পড়তে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে মির্যা কাদিয়ানী সাহেব খাজা পীর মেহের আলী সাহেবকে মুনাজারার (দ্বিপাক্ষিক বিতর্ক) আহবান করেন। খাজা সাহেব তো এটাই চাচ্ছিলেন। তিনি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন। কারণ, এবার সবার সামনে মির্যার ভণ্ডামি উন্মোচন করার সুযোগ পাওয়া গেল। এই বিতর্কের আহবান খাজা পীর মেহের আলী শাহের পক্ষ থেকে ছিল না। তা বরং মির্যা কাদিয়ানীর ইচ্ছানুযায়ীই হয়েছিল। কিন্তু ধূর্ত মির্যা তার বিশ্বাস এবং দাবীকে খণ্ডন করার জন্য এই বিতর্কের আহবান করেননি, বরং খাজা সাহেবকে তার সাথে পাল্লা দিয়ে আরবীতে তাফসীর লিখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যেন দুইজনই তাফসীর লেখার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে।
যাইহোক, খাজা মেহের আলী সাহেব শুধু আমন্ত্রণই গ্রহণ করেননি বরং মির্যা সাহেবকে লিখিত বিতর্কের পাশাপাশি বক্তৃতা বিতর্কের জন্যও আমন্ত্রণ জানান। বিতর্কের স্থান “শাহী মসজিদ লাহোর” হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ৩ জন বিদ্যানকে ফয়সাল (বিচারক) হিসাবে মনোনীত করা হয়। ২২শে জুলাই ১৯০০ তারিখে মির্যা সাহেব সারা ভারতে একটি বিজ্ঞাপন বিতরণ করা হয়, যাতে উপমহাদেশের সকল মাশায়েখ ও উলামা এবং খাজা মেহের আলী শাহ সহ বিশেষভাবে ৮৬ জন বিশিষ্ট উলামাকে উদ্দেশ্য করে মির্যার মুকাবিলায় ২৫শে আগস্ট ১৯০০ তারিখে লাহোরে বিতর্কানুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। খাজা মেহের আলীই প্রথম এই উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং তার পক্ষে ২৫শে জুলাই ১৯০০ সালে তিনি একটি বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করেন এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি ২৫শে আগস্ট ১৯০০ তারিখে লাহোর সফর করেন।
তাই যখন প্রতিশ্রুতির দিন ঘনিয়ে আসছিল, তখন হাজার হাজার মুসলমান লাহোরে উপস্থিত হন। বিভিন্ন মতের প্রায় সবাই (শিয়া, দেওবন্দি, বেরেলি, আহলে হাদীস) এমনকি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অনুসারীসহ সমাজের সর্বস্তরের মুসলমানরা দূর-দূরান্ত থেকে একত্রিত হন। ২৫ শে আগস্ট ১৯০০ ইং পুলিশ নির্ধারিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তখনও মির্যা অবশ্যই আসবেন, এমনি কথা শুনা যাচ্ছিল। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পর মির্যা কাদিয়ানী সাফ জানিয়ে দেন যে, আমি কোনো মূল্যে লাহোরে আসতে প্রস্তুত নই। অজুহাত ছিল, সেখানকার মানুষজন নাকি তাকে তার নবুওয়তের দাবীতে মিথ্যাবাদী প্রমাণের জন্য হত্যা করতে পারে। যদিও মির্যার নিজস্ব অনুরোধেই বিতর্কটি পরিচালিত হয়েছিল এবং মির্যার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ীই উক্ত বিতর্কের উপর ৫০০০ কপি বিজ্ঞাপন ছাপানোও হয়েছিল। (বর্তমানেও কাদিয়ানীরা প্রতিপক্ষকে এমনি প্রতারণা দিয়ে থাকে। তারা তর্জনগর্জন করে প্রথমে চ্যালেঞ্জ দেবে কিন্তু পরবর্তীতে হুবহু মির্যার মতই নানা অজুহাতে পিছটান দিয়ে থাকে – অনুবাদক)।
বলে রাখা দরকার, এই বিজ্ঞাপন তাদের কাছে একটি নিবন্ধিত ডাকযোগে মির্যার কাছে পাঠানো হয়েছিল। ডাকযোগে পাঠানো হয়েছিল পাঞ্জাব এবং ভারত, এনডব্লিউএফপি এবং আফগানিস্তানের আরও অনেক আলেম ও পণ্ডিতদের কাছেও। এভাবেই বিতর্কের আমন্ত্রণ এবং আমন্ত্রণের প্রতিক্রিয়া সম্প্রচার করা হয়েছিল, যা সর্বত্র আগ্রহ জাগিয়েছে। মির্যার পলায়ন যখন জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করে, তখন ২৫ শে আগস্ট লাহোরের শাহী মসজিদে মুসলমানদের একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সমস্ত ইসলামী নেতৃস্থানীয় আলেমগণ মিম্বরে উঠে বয়ান দিয়েছিলেন। তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর শেষনবী এবং তাঁরপরে আর কোনো ধরণের নবীর জন্ম হবেনা এবং যে এই বিশ্বাসকে অস্বীকার করে সে ইসলামের আওতার বাইরে। লাহোরের উক্ত বিতর্ক থেকে মির্যার পলায়ন তার সুনামকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে পড়েন। তিনি তার হারানো সুনাম উদ্ধারের জন্য অনেক চেষ্টা চালান। প্রথমে “ইজাযুল মসীহ/ইজাযে মসীহ (اعجاز المسيح)” নামে একটি বইতে সূরা ফাতিহার আরবি তাফসীর প্রকাশ করেন। তারপর সুযোগ বুঝে এক বছর পরে ১৯০১ সালের নভেম্বরে নিজেকে একজন “নবী” ঘোষণা করেন। তার এক বছর পরে তার বেতনভুক্ত মুরিদ মুহাম্মদ হাসান আমরোহীকে দিয়ে “শামসে বাযেগা (شمس بازغة)” নামে একটি বই লিখান, যা খাজা মেহের আলী শাহ (রহ.)-এর “শামসুল হিদায়া” বইয়ের খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে ছিল। তার জবাবে খাজা মেহের আলী শাহ (রহ.) বিখ্যাত গ্রন্থ “সাইফে চিশতিয়াই (سيف چشتيائى)” রচনা করেন। বইটির যাদুময় লিখনীশক্তি ছিল অতুলনীয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেম উলেমা তাঁকে এখনো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। এই বইটিতে মির্যার “শামসে বাযেগা” বইয়ের দাঁতভাঙা উত্তর দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে। আজ পর্যন্ত মির্যায়ীরা (কাদিয়ানীরা) এর কোনো যুক্তিই খন্ডন করতে পারেনি। কিন্তু আফসোস! সাধারণ কোনো কাদিয়ানীই এ সমস্ত ঐতিহাসিক বিষয়ে কোনো জ্ঞানই রাখেনা। আল্লাহ তাদেরকে সহীহ বুঝদান করুন। আমীন।
হিজরত ভূমি নির্ণয় ক্ষেত্রে কি নবীজীর ইজতিহাদি ভুল হয়েছিল?
উত্তর, কোনো নবী রাসূলের ক্ষেত্রে এধরণের প্রশ্ন তোলাই সঠিক নয়। যেহেতু একে তো নবী রাসূলগণের জন্য দ্বীনি বিষয়ে ইজতিহাদ করার প্রয়োজন পড়েনা, দ্বিতীয়ত উনাদের ইজতিহাদী (গবেষণালব্ধ মতের) ভ্রান্তি মূলত ওহীরই ভ্রান্তি হিসেবে গণ্য হবে। কারণ দ্বীনি বিষয়ে নবী রাসূলগণ কখনো ওহী থেকে কোনো অবস্থাতেই বিরত থাকেন না।” বলে রাখা দরকার, শুধুমাত্র দ্বীনি বিষয়ে শরীয়তের দলিল ও নিয়মনীতির ভিত্তিতে উলামায়ে কেরামের গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্তকেই ‘ইজতিহাদ’ বলা হবে। সেযাইহোক, নবী রাসূলগণের ক্ষেত্রে ‘ইজতিহাদ’ শব্দ কিজন্য বেমানান, জানতে এই লিখাটি পড়ুন।
রাসূল (সা.)-এর প্রতি এইরূপ অভিযোগ কাদের?
উত্তর, এইরূপ অভিযোগ মির্যা কাদিয়ানী ও তার অনুসারীদের। তাদের দাবী হচ্ছে, দো-জাহানের সরদার হযরত মুহাম্মদ (সা.) আপনা ‘হোদায়বিয়ার যাত্রাকালে’ স্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে “ইয়ামামা” আর “হাজর/হিজর” নামক স্থান ভেবে ইজতিহাদি ভুল করেছিলেন’! (দেখুন, হাকীকাতুল ওহী বাংলা অনূদিত পৃষ্ঠা নং ৩২৯)। নাউযুবিল্লাহ।
পাঠকবৃন্দ একটু খেয়াল করুন!
মির্যা গোলাম আহমদ হাদীসের সম্পূর্ণ কনসেপ্ট বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে এবং সারা দুনিয়াকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে। কেননা সঠিক তথ্যটি হচ্ছে, (১) ঐতিহাসিক ‘হোদায়বিয়ার যাত্রা’ ৬ষ্ঠ হিজরীতে হয়েছিল। (২) সেই ‘যাত্রা’ মদীনা থেকে মক্কা অভিমুখে ছিল। (৩) হোদায়বিয়ার যাত্রা সম্পর্কিত বর্ণনায় ‘ইয়ামামা’ (الْيَمَامَةُ) বা হাজর/হিজর (الهجر) নামক স্থানের উল্লেখ-ই নেই। আসুন, হোদায়বিয়ার যাত্রা সম্পর্কেও জেনে নেয়া যাক!
হোদায়বিয়ার সফর বা যাত্রা :
ঐতিহাসিক হোদায়বিয়ার যাত্রা ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গেলে, হিজরী ৬ষ্ঠ সনের জ্বিলকদ মাসে হোদায়বিয়ার অভিযান সংঘটিত হয়। এই সনে নবী করীম (সা.) একদা স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মদীনা থেকে মক্কায় গমন করেন এবং সেখানে উমরাহ পালন করলেন। নবী (সা.)-এর স্বপ্ন নিছক একটি স্বপ্ন নয়, বরং সেটিও একধরনের ওহী। সুতরাং এরপর তিনি চৌদ্দশত সাহাবীসহ উমরাহ পালন করার জন্য মক্কা রওয়ানা হলেন। এখন প্রতারক মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি প্রশ্ন উঠে যে, এমতাবস্থায় নবী করীম (সা.)-এর বিরুদ্ধে কথিত ইজতিহাদি ভুলের অভিযোগের ভিত্তি কী? আহা! কোটি কোটি লানত এমন নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদীর উপর।
নবী রাসূলগণের উপর কথিত ইজতিহাদি ভুলের ট্যাগ লাগানোর কারণ কী?
উত্তরে বলা যায় যে, মির্যা গোলাম আহমদ আল্লাহর নামে যখন তখন বানোয়াট ভবিষ্যৎবাণী প্রচার করত আর ব্যর্থ হত। এটি তার মজ্জাগত স্বভাব ছিল। আর এ সমস্ত ব্যর্থতার দায় এড়ানোর জন্যই নবী রাসূলগণের বিরুদ্ধে সে অবিরাম মিথ্যা অভিযোগ করে যেত। তার অশিক্ষিত মুরিদরা বিনাবাক্যে তা বিশ্বাসও করে নিত। যেমন সে কথিত ওহী ইলহামের কথা বলে কাদিয়ান অধিবাসী জনৈক স্ত্রীলোকের একটি পুত্র সন্তান হবার ভবিষ্যৎবাণী দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কন্যা সন্তান হয়। আর তার কিছুদিন পরেই স্ত্রীলোকটি মারা যান। (এ সম্পর্কে পড়তে এখানে ক্লিক করুন, ৩ নং ভবিষ্যৎবাণী দ্রষ্টব্য)। মির্যা গোলাম আহমদের জন্য এ সমস্ত অহেতুক ভবিষ্যৎবাণীর দায় এড়ানো ছিল খুবই কঠিন। তাই সে নবী রাসূলগণের উপর ওসব অপবাদ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করত। প্রমাণের জন্য দেখুন, হাকীকাতুল ওহী (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ৮০, রূহানী খাযায়েন ২২/৫৭৩। স্ক্রিনশট এই,
এখন যে সমস্ত সহজ সরল কাদিয়ানী (আহমদী) মির্যা কাদিয়ানীর যেনতেন কথাবার্তা অন্ধের মতো এতকাল ধরে বিশ্বাস করে আসছেন এখন তাদের মাথার উপর পুরো আকাশটা কি ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হল না?
হোদায়বিয়ার যাত্রার সাথে ইয়ামামা বা হিজর-এর প্রাসঙ্গিকতা আছে কি?
উত্তরে বলা যায়, কোনো প্রাসঙ্গিকতাই নেই। কেননা ‘ইয়ামামা’ শব্দ শীর্ষক হাদীসটিতে বলা হচ্ছে, রাসূল (সা.) স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি হিজরত করছেন মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখে! অথচ ‘হোদায়বিয়ার যাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘মদীনা থেকে মক্কায়‘; রাসূল (সা.)-এর মদনীযুগে ও ৬ষ্ঠ হিজরীতেই। জ্ঞানীরা এখন কিছু বলুন!
এখন আমরা রাসূল (সা.)-এর হাদীস থেকেই দেখব যে, হিজরত সংশ্লিষ্ট ঐ কথাটিতে “ইয়ামামা” শব্দটি কিভাবে উল্লেখ আছে?
রাসূল (সা.) থেকে যেই হিজরত সম্পর্কে স্বপ্নে দেখার ঘটনা বর্ণিত আছে সেটি ‘হোদায়বিয়ার যাত্রা’ ছিলনা, বরং মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক হিজরতই ছিল, যেই হিজরতে রাসূল (সা.)-এর সফরসঙ্গী মাত্র ২জন ছিলো। এই পর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে সেই হিজরতের ভূমি সম্পর্কে না ইজতিহাদ করেন আর না আগাম কোনো তথ্যই দেন, কিছুই করেননি, প্রয়োজনও ছিল না; যেহেতু একজন ওহীর বাহক কখনো ইজতিহাদের মুখোমুখি হন না। সুতরাং এ জন্যই এখানেও রাসূল (সা.) থেকে কোনো ইজতিহাদি গলতি হয়েছিল বলা নিতান্তই গর্হিত কাজ এবং জঘন্য মিথ্যাচার। এখন আমরা দেখব যে, এই হিজরত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসটি কীরকম? আমি হাদীসটির উদ্দিষ্ট অংশটি এখানে উল্লেখ করছি। (অর্থাৎ) “রাসূল (সা.) স্বপ্নে হিজরত ভূমিকে “খেজুরগাছ” সমৃদ্ধরূপে দেখতে পেয়েছিলেন (إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ)। তিনি এভাবে স্বপ্নে দেখার পরপরই মনে মনে ধারণা করেছিলেন যে, খেজুরগাছ সমৃদ্ধ সেই এলাকাটি হয়ত ইয়ামামা অথবা হাজর/হিজর নামক স্থান হবে (وَهَلِي إِلَى أَنَّهَا الْيَمَامَةُ أَوْ هَجَرُ)। কিন্তু পরবর্তীতে হিজরত মদীনায় হওয়াতে রাসূল (সা.)-এর মনের সংশয় দূর হয়ে যায় এবং নিশ্চিত হন যে, খেজুরগাছ সমৃদ্ধ সেই ভূমিটি ‘ইয়ামামা’ কিংবা ‘হাজর/হিজর’ কোনোটাই নয়, বরং ইয়াসরিব তথা মদীনা-ই। ব্যাস, বিষয়টি এই পর্যন্তই।
এখন এটিকে ইজতিহাদি গলতি বলা কিভাবে বৈধ হতে পারে? কোনো কাদিয়ানী কি বলবেন ‘ইজতিহাদ‘ কাকে বলে আর ইজতিহাদ করা কাদের বৈশিষ্ট্য? নবী রাসূলগণের না সাধারণদের? উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর মতে “নবী’র ইজতিহাদী (গবেষণালব্ধ মত) ভুল মূলত ওহীরই ভুল। কেননা নবী কখনো ওহী থেকে কোনো অবস্থাতেই বিরত থাকেন না।” (রূহানী খাযায়েন: ৫/৩৫৩; রচনাকাল ১৮৯২ইং)। স্ক্রিনশট এই,
(১) ইয়ামামা (يمامة) হল, আধুনিক সৌদি আরবের দক্ষিণ-পূর্ব নজদের একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। যাইহোক, মির্যা কাদিয়ানী কত নিকৃষ্ট মিথ্যুক হলে সে নিজের দুর্বলতা ঢাকতে আল্লাহর সত্য নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্তাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পেছনে দৌঁড়তে পারে, অনর্থক দাবী করে লিখতে পারে যে, রাসূল (সা.) হিজরতের ভূমি ‘ইয়ামামা’ সাব্যস্ত করে ইজতিহাদি ভ্রান্তির শিকার হন! নাউযুবিল্লাহ, ছুম্মা নাউযুবিল্লাহ।
(২) হাজর/হিজর (هجر) হচ্ছে, সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় একটি প্রাচীন শহর, যেটির বর্তমান নাম ‘আল ইহছা‘, (الاحساء) ; শহরটি রাজধানী রিয়াদ থেকে পূর্বে প্রায় ৩২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
হাদীসটি অনুবাদ সহ :
আবু আমির আব্দুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও আবূ কুরায়র মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহ.) … আবু মূসা (রা.) সূত্রে নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
অর্থাৎ আমি স্বপ্লে দেখলাম যে, আমি মক্কা থেকে এমন এক দেশে হিজরত করতে যাচ্ছি যেখানে খেজুর গাছ রয়েছে। তাতে আমার ধারণা এদিকে গেল যে, তা ইয়ামামা কিংবা হাজর/হিজর (এলাকা) হবে। পরে (বাস্তবে) দেখি যে, তা হল মদীনা (যার পূর্ব নাম) ইয়াসরিব। আমি আমার এ স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, আমি একটি তরবারি নাড়াচাড়া করলাম, ফলে তার মধ্যখানে ভেঙ্গে গেল। তা ছিল উহুদের দিনে, যা মুমিনগণের উপর আপতিত হয়েছিল।
পরে আমি আরেকবার সেই তরবারি নাড়া দিলে তা আগের চাইতে উত্তম হয়ে গেল। মুলত তা হল সেই বিজয় ও ঈমানদারদের সম্মিলন, সংহতি যা আল্লাহ সংঘটিত করলেন (তথা মক্কা বিজয়)। আমি তাতে একটি গরুও দেখলাম। আর আল্লাহ তা’আলাই কল্যাণের অধিকারী। মূলত তা হল উহুদের যুদ্ধে (শাহাদাতপ্রাপ্ত) ঈমানদারগণের দলটি। আর কল্যাণ হল সে কল্যাণ, যা পরবর্তীতে আল্লাহতালা দান করেছেন এবং সততা ও নিষ্ঠার সে সাওয়াব ও প্রতিদান যা আল্লাহতালা আমাদের বদর যুদ্ধের পরে দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম (ইফা.) অধ্যায়: ৪৪/ স্বপ্ন (كتاب الرؤيا) হাদিস নম্বরঃ ৫৭৩৫]।
শেষকথা, ভ্রষ্ট কাদিয়ানী জামাত সহ আরো যত অমুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে থাকে তাদের উচিত, নিজেদের হীনস্বার্থে এই জাতীয় সমস্ত অপপ্রচার থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত সত্যটা বুঝার তাওফিক দিন। আমীন।
কাদিয়ানীদের চরম বিকৃত ও ভ্রষ্ট ধর্মবিশ্বাসের সাক্ষী তাদের বইপুস্তক গুলো। অধিকাংশ সাধারণ কাদিয়ানী জানেই না যে, তাদের কাদিয়ানীধর্মের আকীদা কেমন? তাদের অন্যতম একটি ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে, ইসলাম যে ইয়াজুজ-মাজুজের শিক্ষা দেয় তা হতে পরাশক্তি ‘রাশিয়া-আমেরিকা‘ উদ্দেশ্য। অথচ হাদীসে উল্লেখ আছে যে, ইয়াজুজ-মাজুজ এর আবির্ভাব ঘটবে ঈসা (আ.)-এর সময়ে, তাদের কারণে তিনি এবং তাঁর সাথীসঙ্গীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন (وَيُحْصَرُ نَبِيُّ اللَّهُ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ)। (মুসলিম শরিফ, কিতাবুল ফিতান, হাদীস নং ৭১০৬)। এটি মির্যা কাদিয়ানী নিজেও মানতেন!
মির্যা গোলাম আহমদ এর দাবী হচ্ছে, আমিই হলাম সেই ঈসা।
আমেরিকা বিশ্বের বুকে একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৭৭৬ সালে। রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৯১ সালে। (উইকিপিডিয়া)।
এবার প্রশ্ন হল, আমেরিকা মির্যার জন্মেরও ৫৯ বছর আগে আর রাশিয়া মির্যার মৃত্যুর প্রায় ৮৩ বছর পরে দুনিয়ায় একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে অন্ততঃ রূপকভাবেও হাদীসে বর্ণিত সেই ইয়াজুজ-মাজুজ হল কিভাবে? এদের একটাও তো মির্যার সমসাময়িক ছিল না!
ব্রেইনওয়াশ কাদিয়ানীরা কি এরপরেও নিজেদের বিচারবুদ্ধি নিজ হাতে হত্যা করে হলেও এই সমস্ত অযুক্তিযুক্ত রূপক রূপক খেলা খেলে যাবে?
আল্লাহ আর তাঁর রাসূল (সা.) থেকে সর্বসম্মত মুসলিম উম্মাহা গত চৌদ্দশত বছর ধরে ক্রমাগতভাবে যেভাবে ইয়াজুজ-মাজুজ এর কনসেপ্ট ধারণ করে আছেন সেটির বিপরীতে ভিন্ন যে কোনো ব্যাখ্যা থেকে আল্লাহ আমাদের কাদিয়ানীবন্ধুদের রক্ষা করুন এবং হেদায়েত দিন।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল যা ৪ই জুলাই ১৭৭৬ সালে পেনসিলভেনিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সভায় গৃহীত হয়। আর সোভিয়েত যুগ বিংশ শতকের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত সাফল্য পেয়েছিল। যার মধ্যে ছিল বিশ্বের প্রথম মহাকাশযান ও প্রথম নভোচারী। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সোভিয়েতের রুশীয় প্রজাতন্ত্র রুশ ফেডারেশন হিসেবে গঠিত হয় এবং একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হয়। (উইকিপিডিয়া)।
আমার কলিজার টুকরো কাদিয়ানী ভাইবোনকে বলছি, নিচে উল্লিখিত সহীহ হাদীসগুলোর সাথে আপনাদের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মিলিয়ে ‘ইমাম মাহদী‘ প্রমাণ করা যায় কিনা দেখবেন! সম্পূর্ণ লিখাটি মনযোগ সহকারে পড়ার পর দ্বিতীয় এই লিখাটিও পড়ে দেখবেন। তবেই আপনাদের নিকট পানি পানির মত আর দুধ দুধের মত পরিষ্কার হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। Click in here : প্রকৃত ইমাম মাহদী এবং মির্যা কাদিয়ানী এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য গুলো কী কী?
১. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩০ :
المهدى حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، – يَعْنِي ابْنَ أَبِي خَالِدٍ – عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لاَ يَزَالُ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا حَتَّى يَكُونَ عَلَيْكُمُ اثْنَا عَشَرَ خَلِيفَةً كُلُّهُمْ تَجْتَمِعُ عَلَيْهِ الأُمَّةُ ” . فَسَمِعْتُ كَلاَمًا مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَمْ أَفْهَمْهُ قُلْتُ لأَبِي مَا يَقُولُ قَالَ ” كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ .
অনুবাদঃ আমর ইবনে উসমান (রহ.) …. জাবির ইব্ন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, এ দ্বীন ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম থাকবে, যতক্ষণ না তোমাদের উপর সর্ব সম্মতিক্রমে নির্বাচিত বার জন খলীফা (নিযুক্ত) হয়। (রাবী বলেন) এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরো কিছু বলতে শুনি, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেন, এ সমস্ত খলীফা[১] কুরাইশ বংশ থেকে হবে। (হাদীসের মান, সহীহ)।
নোটঃ [১] ইমাম সুয়ূতী (রহ.) হাদীসটির كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ (এ সমস্ত খলীফা কুরাইশ বংশ থেকে হবে)-এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, إن في ذلك إشارة إلى ما قاله العلماء : إن المهدي احد الاثني عشر অর্থাৎ এর ইংগিত সে কথার দিকেই যা বিশেষজ্ঞগণ মত ব্যক্ত করে গেছেন, তা হচ্ছে নিশ্চয়ই ইমাম মাহদী ঐ বারোজনেরই একজন হবেন। (আল আরফুল ওয়ারদী, ইমাম সুয়ূতী দ্রষ্টব্য)। শায়খ আলী আহমদ আব্দুল আ’ল আত তাহতাভী রচিত ‘তাম্বীহুল গাফেলীন শরহু কিতাবি আ’লামাতি ইয়াওমিদ দীন‘-২০৮ দ্রষ্টব্য। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য।
২. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আঃ) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৩ :
অনুবাদঃ মুসাদ্দাদ (রহ.) …. আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি দুনিয়ার মাত্র একদিনও বাকী থাকে, তবুও আল্লাহ্ সেদিনকে এত দীর্ঘ করে দেবেন যে, তাতে আমার থেকে অথবা আমার আহলে-বাইয়েত থেকে এমন এক ব্যক্তিকে পয়দা করবেন, যার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের মত। রাবী ফিত্র (রহ.)-এর হাদীছে এরূপ অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, সে ব্যক্তি যমীনকে আদল ও ইনসাফে পূর্ণ করবে, যেরূপ তা অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ হয়েছিল। রাবী সুফিয়ান (রহ.)-এর হাদিছে আছে যে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) দুনিয়া ততক্ষণ ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে একজন আরবের শাসনকর্তা নিযুক্ত হবে। যার নাম হবে আমার নামের মত। (হাদীসের মান, হাসান)। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) শেষ যুগে আত্মপ্রকাশকারী প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর সম্পূর্ণ নামটি কিরকম হবে তিনি তার ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (البداية والنهاية)’ কিতাবে নিম্নরূপ উল্লেখ করে গেছেন, তিনি লিখেছেন, محمد بن عبد الله العلوي الفاطمي الحسني رضي الله عنهم. الفتن والملاحم অর্থাৎ [ইমাম মাহদীর নাম হবে] মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ যিনি আলী, ফাতেমা এবং হাসানের (আল আলীবিয়্যি আল ফাতেমিয়্যি আল হাসানি) ঔরসজাত হবেন; রাদিআল্লাহু আনহুম। (বিশৃঙ্খলা ও মালহামা অধ্যায় খ-১/পৃ-১৭)।
৩. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৪ :
باب المهدى حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ دُكَيْنٍ، حَدَّثَنَا فِطْرٌ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ أَبِي بَزَّةَ، عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ، عَنْ عَلِيٍّ، – رضى الله تعالى عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : “ لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدَّهْرِ إِلاَّ يَوْمٌ لَبَعَثَ اللَّهُ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يَمْلأُهَا عَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا” .
অনুবাদঃ উসমান ইবনে আবূ শায়বা (রহ.) …. আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আকাশের একটি দিনও অবশিষ্ট থাকে, তবুও মহান আল্লাহ্ আমার আহলে বাইয়েত থেকে এমন এক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করবেন, যিনি পৃথিবীকে ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করবেন, যেমন তা জুল্ম ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ ছিল। (হাদীসের মান, সহীহ)।
৪. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৫।
অনুবাদঃ আহমদ ইব্ন ইবরাহীম (রহ.) …. উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “মাহদী আমার ঔরসজাত ফাতিমার বংশ থেকে হবে।” (হাদীসের মান, সহীহ)।
৫. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৬ :
باب المهدى حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ تَمَّامِ بْنِ بَزِيعٍ، حَدَّثَنَا عِمْرَانُ الْقَطَّانُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الأَنْفِ يَمْلأُ الأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ” .
অনুবাদঃ সাহ্ল ইবনে তাম্মাম (রহ.) …. আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহদী আমার বংশোদ্ভুত হবে, যার ললাট প্রশস্ত ও নাক উঁচু হবে। যিনি পৃথিবীকে আদ্ল-ইনসাফ দ্বারা এরূপ পূর্ণ করবেন, যেরূপ তা অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ ছিল। তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন। (হাদীসের মান, হাসান)।
৬. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৭ :
অনুবাদঃ মুহাম্মদ ইবনে মুছান্না (রহ.) …. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন খলীফার মৃতুর সময় মতানৈক্য দেখা দিলে এবং সে সময় মদীনা থেকে এক ব্যক্তি পালিয়ে মক্কায় আসলে, সেখানকার অধিবাসিগণ তার পাশে সমবেত হবে এবং তাকে ইমামতি করার জন্য সামনে পাঠাবে। কিন্তু সে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে। এরপর লোকেরা তার হাতে ‘হাজরে-আসওয়াদ’ ও ‘মাকামে-ইব্রাহীমের’ মাঝে বাইয়েত গ্রহণ করবে। সে সময় শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরিত হবে, যারা মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ‘বাইদাহ’ নামক স্থানে মাটিতে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। {ইমাম হাকিম (রহ.) ভিন্ন আরেক সনদে তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে এই অংশটি উল্লেখ করে বলেছেন, এর সনদ সহীহ}। লোকেরা যখন এ অবস্থা দেখবে, তখন শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তার নিকট উপস্থিত হয়ে, ‘হাজরে-আসওয়াদ’ ও মাকামে-ইব্রাহীমের’ মাঝে বাইয়েত গ্রহণ করবে। এরপর কুরাইশ বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবে যার মামাগণ হবে ‘কালব’ গোত্রের। যারা তাদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে এবং এ যুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে। এরা ‘কালব’ গোত্রের সেই সৈন্য, যারা মাহ্দীর সৈন্যদের হাতে পরাজিত হবে। এই সময় যারা কালব গোত্রের গনীমতের মালের অংশগ্রহণ করার জন্য উপস্থিত হবেনা, তাদের জন্য আফসোস। এরপর মাহ্দী (আ.) গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত পুনরুজ্জীবিত করবেন। সে সময় যারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবে। (সনদের মান, জঈফ বা দুর্বল)।
৭. গ্রন্থঃ মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ (المصنف ابن أبي شيبة)। খণ্ড নং ১৫ পৃষ্ঠা নং ৪৫, হাদীস নং ১৯০৭০ :
حدثنا عفان قال: حدثنا عمران القطان، عن قتادة، عن أبي الخليل، عن عبد الله بن الحارث، عن أم سلمة قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يبايع لرجل بين الركن والمقام كعدة أهل بدر، فتأتيه عصائب العراق وأبدال الشام، فيغزوهم جيش من أهل الشام، حتى إذا كانوا بالبيداء يخسف بهم، ثم يغزوهم رجل من قريش أخواله كلب فيلتقون فيهزمهم الله، فكان يقال: الخائب من خاب (من) غنيمة كلب. (المصنف ابن أبي شيبة: المجلد الخامس عشر، رقم الصفحة ٤٥ رقم الحديث ١٩٠٧٠)
অনুবাদঃ আফফান থেকে তিনি ইমরান ইবনে কাতান থেকে তিনি ক্বাতাদাহ থেকে তিনি আবু খলীল থেকে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল হারেস থেকে তিনি উম্মে সালমাহ থেকে…. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গযওয়ায়ে বদরের সমপরিমাণ লোকজন একব্যক্তির নিকট ‘হাজরে-আসওয়াদ’ এবং ‘মাকামে-ইব্রাহীমের’ মধ্যভাগে বাইয়েত গ্রহণ করবে। অত:পর শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তার নিকট উপস্থিত হতে থাকবে। (সে সময়) শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হবে, মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ‘বাইদাহ’ নামক স্থানে মাটিতে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। {উপরের একই বর্ণনা ইমাম হাকিম (রহ.)ও সহীহ সনদে তার ‘মুস্তাদরাক লিল হাকিম’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন}। এরপর কুরাইশ বংশীয় এমন একব্যক্তি (ইমাম মাহদীর সাহায্যে) তাদের (অর্থাৎ ‘কালব’ গোত্রের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন যার মামাগণ ‘কালব’ গোত্রীয়। এরা মুখোমুখি লড়াইতে লিপ্ত হবে। আল্লাহতালা এদেরকে (কালব গোত্রীয় শত্রুদের) পরাজিত করবেন। (তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) {আজকের এ দিন} প্রকৃত বঞ্চিত তারাই যারা কালব গোত্র থেকে প্রাপ্ত গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) থেকে বঞ্চিত। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, খণ্ড নং ১৫, পৃষ্ঠা নং ৪৫, হাদীস নং ১৯০৭০, হাদীসের মান : সহীহ)। সিয়াহ সিত্তার অন্যতম ‘সুনানু আবী দাউদ’ কিতাবের ‘কিতাবুল মাহদী’ অধ্যায় কিছুটা দুর্বল সূত্রে শেষাংশে একথাগুলোও এসেছে যে, এরপর ইমাম মাহ্দী (আ.) গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত পুনরুজ্জীবিত করবেন। সে সময় সারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবে।
৮. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৪০ :
باب المهدى حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ ابْنِ الْقِبْطِيَّةِ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِقِصَّةِ جَيْشِ الْخَسْفِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَكَيْفَ بِمَنْ كَانَ كَارِهًا قَالَ “ يُخْسَفُ بِهِمْ وَلَكِنْ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى نِيَّتِهِ ” . الْمُغِيرَةِ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ أَبِي قَيْسٍ، عَنْ شُعَيْبِ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ – رضى الله عنه – وَنَظَرَ إِلَى ابْنِهِ الْحَسَنِ فَقَالَ إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ كَمَا سَمَّاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَسَيَخْرُجُ مِنْ صُلْبِهِ رَجُلٌ يُسَمَّى بِاسْمِ نَبِيِّكُمْ يُشْبِهُهُ فِي الْخُلُقِ وَلاَ يُشْبِهُهُ فِي الْخَلْقِ ثُمَّ ذَكَرَ قِصَّةَ يَمْلأُ الأَرْضَ عَدْلاً . وَقَالَ هَارُونُ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ أَبِي قَيْسٍ عَنْ مُطَرِّفِ بْنِ طَرِيفٍ عَنْ أَبِي الْحَسَنِ عَنْ هِلاَلِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ سَمِعْتُ عَلِيًّا – رضى الله عنه – يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ النَّهْرِ يُقَالُ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ عَلَى مُقَدِّمَتِهِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ مَنْصُورٌ يُوَطِّئُ أَوْ يُمَكِّنُ لآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا مَكَّنَتْ قُرَيْشٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ ” . أَوْ قَالَ ” إِجَابَتُهُ ” .
অনুবাদঃ উসমান ইবনে আবূ শায়বা (রহ.) …. উম্মে সালামা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘যমীন-ধসে যাওয়া’ সম্পর্কিত হাদীছ বর্ণনা প্রসংগে বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তার কী অবস্থা হবে, যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুদ্ধে যোগদান করবে? তিনি বলেন, সেও তাদের সাথে জমিনে ধসে মারা যাবে, কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকে তার নিয়তের উপর উঠানো হবে। (হাদীসের এই অংশটির সনদ সহীহ)। ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) হারূন ইব্ন মুগীরা থেকে, তিনি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা আলী (রা.) তাঁর পুত্র হাসানের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ আমার এ ছেলে জান্নাতের যুবদের সর্দার, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনি আরো বলেন অতি সত্তর তার বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করবে, যার নাম হবে তোমাদের নবীর অনুরূপ। স্বভাব-চরিত্রে তিনি তাঁরই মত হবেন, তবে আকৃতিতে নয়। এরপর আলী (রা.) বলেন, তিনি পৃথিবীকে আদল-ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন। (এই অংশের উল্লিখিত সনদ জঈফ বা দুর্বল)। হারূন (রহ.) …. আমর ইব্ন কায়স (রহ.) থেকে, তিনি হিলাল ইব্ন আমর (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে এরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অরাউন্-নাহার’ (মধ্য এশিয়া) থেকে এমন এক ব্যক্তি বের হবে, যার নাম হবে ‘হারিছ ইব্ন হারবাছ’ এবং তার আগে অপর এক ব্যক্তি বের হবে, যাকে লোকেরা ‘মানসূর’ বলবে। তিনি মুহাম্মাদ (অর্থাৎ ইমাম মাহদী)-এর অনুসারী (সেনা)-দের তেমনিভাবে সাহায্য করবেন, যেমনিভাবে কুরাইশগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাহায্য করেছিল। প্রত্যেক মু’মিনের উচিত হবে তাঁকে সাহায্য করা এবং তাঁর আহবানে সাড়া দেয়া। (এই অংশের উল্লিখিত সনদ জঈফ বা দুর্বল)।
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: « ((مِنَّا الذي يُصلِّي عيسى ابنُ مريمَ خلفَه))» . رواه أبو نعيم في ((كتاب المهدي)) كما في ((كنز العمال)) وقال الألباني : صحيح كما فى السلسلة الصحيحة: الصفحة أو الرقم : 2293
অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমাদের (আহলে বাইয়েত) হতে (আগমনকারী) তার (ইমাম মাহদী) পেছনে ঈসা ইবনে মরিয়ম সালাত পড়বেন।’ রেফারেন্স : কিতাবুল মাহদী হাদীস নং ৪১, আবু নু’আইম। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। (আস-সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস নং ২২৯৩; আল-বুরহান ফী আলামাতি মাহদী আখিরুয যামান (البرهان في علامات مهدي آخر الزمان) পৃষ্ঠা নং ১৫৮, আল-আ’রফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী লিস-সুয়ূতি (العرف الوردي في أخبار المهدي للسيوطي) পৃষ্ঠা নং ১৩৪)।
قال الحارث بن أبى اسامة فى مسنده حدثنا إسماعيل بن عبدالكريم حدثنا ابراهيم بن عقيل عن ابيه عن وهب بن منبة عن جابر قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ينزل عيسى بن مريم فيقول أميرهم المهدي تعال صل بنا ، فيقول : لا إن بعضهم أمير بعض تكرمة الله لهذه الأمة ” و هذا الاسناد جيد
والحديث في صحيح مسلم بلفظ : ” .. فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الأُمَّةَ”. رواه مسلم
অনুবাদঃ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। অতপর মুসলমানদের আমীর ইমাম মাহদী বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন! তারপর তিনি বলবেন, না; নিশ্চয় তাদেরই একে অন্যের ইমাম। এটি আল্লাহতালা প্রদত্ত এই উম্মতের সম্মান। (আরো দেখুন, ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ সংকলিত আখবারুল মাহদী; বিশিষ্ট যুগ ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, এই হাদীসের সনদ জায়্যিদ বা খুবই ভাল; আল-মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা নং ৯৪, মুহাক্কিক আল্লামা আব্দুর রহমান বিন ইয়াহইয়া আল মু’আল্লিমী; শায়খ আলবানী (রহ.) বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ এবং তিনি স্বীয় কিতাব ‘আস-সিলসিলাতুস সহীহা’- তেও এনেছেন। হাদীস নং ২২৩৬)।
সহীহ মুসলিম শরীফে হাদীসটি নিম্নোক্ত শব্দচয়নে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি দল হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। (সেই সময়কার) মুসলমানদের ‘আমীর’ (নেতা) বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন! তারপর তিনি (ঈসা) বলবেন, না; নিশ্চয় আপনারাই একে অন্যের ইমাম। এই হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মতের সম্মান। (রেফারেন্স, সহীহ মুসলিম, খণ্ড নং ১, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং ১৫৬)। এই হাদীসে ঈসা (আ.) অবতরণ করার পরে সেই সময়কার মুসলমানদের আমীরের সাথে তৎক্ষণাৎ সালাতের ইমামতির বিষয়ে দুই পক্ষের কথাবার্তার উল্লেখ রয়েছে। তাদের একজন ঈসা (আ.) আর অন্যজন মুসলমানদের ‘আমীর তথা নেতা’। মূলত, সেই ‘নেতা’—ই ইমাম মাহদী, যা প্রথমোক্ত হাদীসের أميرهم المهدي দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত।
عن عبدالله ابن عباس رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يكون في زمن المهدي ويصلى عيسى خلفه. كما في ((كنز العمال)) وقال السيوطى : هذا من أعجب العجب، فإنّ صلاة عيسى خلف المهدي ثابتة في عدّة أحاديث صحيحة بإخبار رسول اللّه، وهو الصادق المصدّق الذي لا يخلف خبره. كما في ((الحاوى للفتاوى))
অনুবাদঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম মাহদী’র যুগেই ঈসার আগমন হবে এবং তিনি ইমাম মাহদী’র পেছনে সালাত পড়বেন।’ (রেফারেন্স : কাঞ্জুল উম্মাল খণ্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৩৮৩; হাদীস নং ৭৩৮৪; কিতাবুল ফিতান মানাকিবুল মাহদী, সংকলক ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ; মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরিক লিল হাকিম। হাদীসের মান : সহীহ)। বিশিষ্ট যুগ ইমাম আল্লামা সুয়ূতি (রহ.) লিখেছেন, “এটি অতিব বিস্ময়কর ব্যাপার বটে যে, নিশ্চয়ই ইমাম মাহদীর পেছনে হযরত ঈসা (আ.) সালাত আদায় করবেন। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপুল পরিমাণ সংবাদ দ্বারা ও সহীহ হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। আর তিনি এমন একজন পরম সত্যবাদী যার প্রদত্ত সংবাদে ব্যত্যয় হবেনা।” (ইমাম সুয়ূতি রচিত আল হাভী লিল ফাতাওয়া, খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ১৬৭)।
وأخرج ابن أبي شيبة في المصنّف عن ابن سيرين قال: المهدي من هذه الأمّة، وهو الذي يؤمّ عيسى بن مريم
অনুবাদঃ ইমাম বুখারীর শায়খ (উস্তাদ) ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ (রহ.) স্বীয় ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রহ.) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ইমাম মাহদী এই উম্মতের মধ্য হতে আগমন করবেন এবং তিনি ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর (সালাতের) ইমামতি করবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ১৫/১৯৮; হাদীস নং ১৯৪৯৫, হাদীসের মান, হাসান)। এই হাদীসটিও সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, ইমাম মাহদী এবং ঈসা (আ.) দুইজনই ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি। হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মাহদীর পেছনে ঈসা (আ.) সালাত আদায় করবেন মর্মে দীর্ঘ একখানা হাদীসের একটি অংশ এইরূপ, وأنه يؤم هذه الأمة وعيسى يصلي خلفه অর্থাৎ ‘এবং তিনি (ঈসা) নিশ্চয়ই এই উম্মতের নেতৃত্ব দিবেন আর ঈসা তাঁর পেছনে সালাত পড়বেন।’ বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রহ.) লিখেছেন, এর সনদ বা ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র সহীহ তথা বিশুদ্ধ। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাতুল মুখতাছিরাহ [السلسة الصحيحة المختصرة] খণ্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৪৮৬)।
১৩. গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমদ (المسند لامام احمد ابن الحنبل), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) :
وعن عبد الله بن عباس، رضي الله عنهما، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لن تهلك. أمة أنا في أولها، وعيس ابن مريم في آخرها، والمهدي في وسطها . أخرجه الإمام أحمد بن حنبل، في مسنده ورواه الحافظ أبو نعيم، في عواليه
অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘উম্মতে মুহাম্মদীয়া কখনোই ধ্বংস হবেনা। যেহেতু আমি তাদের শুরুতে রয়েছি এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম তাদের শেষাংশে থাকবেন আর তাদের মধ্যখানে থাকবেন ইমাম মাহদী।’ (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল স্বীয় মসনাদগ্রন্থে এই হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাফেযুল হাদীস আবু নু’আইম আল ইস্পাহানী স্বীয় আ’ওয়ালী (عوالي الحارث بن أبي اسامة) কিতাবেও উল্লেখ করেছেন, হাদীসের মান, হাসান)। ইমাম ইবনে হাজার আল হাইতামি আল-মাক্কী (রহ.) হাদীসটির والمهدي في وسطها বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় القول المختصر فى علامات المهدى المنتظر নামক গ্রন্থে লিখেছেন, اريد بالوسط قريب آخرها حتى لا ينافى بقية الروايات المصرحة الخ অর্থাৎ ‘হাদীসে উল্লিখিত الوسط বা মধ্যখানে ইমাম মাহদী আগমন করবেন, একথার উদ্দেশ্য হল, উম্মাহার শেষ মুহূর্তের কাছাকাছি কোনো সময়ে আগমন করা, ফলে এটি সুস্পষ্ট অন্যান্য বর্ণনাগুলোর বিরোধিতা করেনা।’ (আল বুরহান ফী আলামাতিল মাহদী আখিরিয জামান -৫৭)। নিচে ইমাম মুনাভী (রহ.) এর ব্যাখ্যাটিও দিয়ে দেয়া হল।
أخبرني الحسن بن حكيم المروزي ، ثنا أحمد بن إبراهيم الشذوري ، ثنا سعيد بن هبيرة ، ثنا حماد بن زيد ، عن أيوب السختياني ، وعلي بن زيد بن جدعان ، عن أبي نضرة ، قال : فينزل عيسى ابن مريم – عليه الصلاة والسلام – عند صلاة الفجر ، فيقول له إمام الناس : تقدم يا روح الله فصل بنا ، فيقول : إنكم معشر هذه الأمة أمراء بعضكم على بعض ، تقدم أنت فصل بنا ، فيتقدم فيصلي بهم فإذا انصرف أخذ عيسى – صلوات الله عليه – حربته [فينطلق] نحو الدجال فإذا رآه ذاب كما يذوب الرصاص ، فتقع حربته بين ثندوته فيقتله ، ثم ينهزم أصحابه فليس شيء يومئذ يجن منهم أحدا ، حتى إن الحجر يقول : يا مؤمن هذا كافر فاقتله. “هذا حديث صحيح الإسناد على شرط مسلم بذكر أيوب السختياني ، ولم يخرجاه”.
অনুবাদঃ আবী নাদ্বরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,…. অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) ফজরের সময় নাযিল হবেন। তখন ইমামুন্নাস তথা লোকদের ইমাম (ইমাম মাহদী) তাঁকে অনুরোধ করবেন যে, হে রূহুল্লাহ আপনি সামনে বাড়ুন আর আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন। প্রতিউত্তরে তিনি বলবেন, নিশ্চয়ই তোমরা এই উম্মাহ একের অন্যের নেতৃত্বের মর্যাদায় আশীষ প্রাপ্ত। সুতরাং তুমিই সামনে যাও এবং আমাদের সালাত পড়িয়ে দাও। এরপর তিনি (ইমাম মাহদী) সামনে এগিয়ে যাবেন এবং সালাত পড়াবেন। তারপর তিনি যখন সালাম ফিরাবেন তখন (দেখতে পাবেন) ঈসা সালাতুল্লাহি আ’লাই আপনা বর্শা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং দাজ্জালকে বধ করতে মনোযোগ দিচ্ছেন। তিনি যখনই তাকে দেখবেন তখনি সে (তথা প্রাণের ভয়ে মানসিকভাবে) লবণের ন্যায় গলে যেতে থাকবে। অত:পর তিনি তাঁর বর্শা নিজ বাহুতে বহন করবেন এবং তাকে (দাজ্জালকে) হত্যা করবেন। তারপর তিনি (তথা ঈসার নেতৃত্বে) তাঁর বাহিনীকে পরাজিত করবেন এবং সেদিন তাদের মধ্য থেকে কেউই বাঁচতে পারবে না। এমনকি তখন পাথর (পর্যন্ত) বলবে, হে মুমিন! এ হচ্ছে একজন কাফের! তুমি তাকে হত্যা কর। -সহীহ। (এ হাদীসের সনদ ‘সহীহ মুসলিম শরীফের’ শর্তেই সহীহ)।
অনুবাদ সহ সম্পূর্ণ আরবী ইবারত “বাংলা হাদীস” Apps থেকে সংগৃহীত। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহীহ হাদীস এখান থেকে পড়ুন।
সহীহ হাদীস ও মুহাদ্দিসগণের মতে টাকা (মূদ্রা) দ্বারা ‘‘সাদাকাতুল ফিতর’’ আদায়ের শরয়ী হুকুম ও ভ্রান্তি নিরসন :
মাহে রমজানে অনেক ব্যস্ততা। তাই এই বিষয়ে খুব সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে নতুন করে বাজারে একটি কথা খুব শুনা যাচ্ছে যে, টাকা দিয়ে ফেতরা দেয়া নাকি জায়েজ নেই। তাদের যুক্তি হল, ‘সহীহ বুখারীর মাঝে আছে ফিতরা দিতে হবে গম, খেজুর, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে।’ তারা এখান থেকে বলতে চাচ্ছে যে, টাকা দিয়ে আদায় করলে আদায় হবে না! আসুন জেনে নিই তাদের এই সমস্ত কথাবার্তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য!
প্রথমত, গম, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় সম্পর্কে :-
অর্থ : হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা আবশ্যক করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী-২/১৩০, হাদীস-১৫০৫)।
অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ পনির অথবা এক সা’ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (সহীহ বুখারী-২/১৩১, হাদীস-১৫০৬)।
উল্লেখ্য যে, উক্ত দুটি হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্ট যে, কোনো ব্যক্তি চাইলে মাল দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবে। কিন্তু টাকা দ্বারা আদায় করা ভুল এধরণের কোনো আলোচনা এখানে নেই, বরং ইমাম বুখারী (রহ.), ইবনে আবী শায়বা (রহ.) এবং ইমাম বায়হাকী (রহ.) উনারা সকলে অপরাপর সহীহ হাদীস এবং সাহাবীদের আছার সমূহের আলোকে বলেছেন যে, টাকা দিয়ে ফিতরা দিলেও আদায় হয়ে যাবে। নিচে দেখুন বিস্তারিত।
দিনার দিরহাম সম্পর্কে পাঠকের জ্ঞাতার্থে সংক্ষেপে লিখছি, দিরহাম হল রৌপ্যমুদ্রা। সাধারণত ৩ গ্রাম রূপা দিয়ে ১ দিরহাম তৈরি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে রূপার পরিমানে হেরফের হয়েছিল। তাই আমরা এর একাধিক মান পেয়ে থাকি। যেমন উসমানি খিলাফত আমলে ১ দিরহাম ৩.২০৭ গ্রাম রূপা দিয়ে তৈরি করা হত। দিরহামের মান নির্ধারণে ফকিহ ইমামদের মতভেদ রয়েছে। যেমন হানাফি ফকিহগণের গবেষণায় ১ দিরহামের মান ৩.১২৫ গ্রাম রূপা। আর অন্য ইমামগণের মতে ২.৯৬ গ্রাম রূপা। এছাড়াও অনেকের মতে ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা হল সঠিক মান। যাইহোক আমরা ধরব, ১ দিরহাম = ৩ গ্রাম রূপা। আর ১ গ্রাম রূপার বর্তমান বাজার মূল্য হল ৪৬.২৬ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে রূপার মূল্য ১ গ্রাম= ৪৬.২৬ টাকা, কিন্তু দেশীয় বাজারে ১ গ্রাম= ৯০ টাকা, আমরা এখানে আন্তর্জাতিক মূল্যে হিসেব করে পেলাম, ১ দিরহাম = ১৩৯ টাকা।
পাঠকবৃন্দ! দিনার দিরহাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানুন।
দ্বিতীয়ত, ফিতরা টাকা (মুদ্রা) দ্বারা আদায় করা সম্পর্কে :-
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺃُﺳَﺎﻣَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺯُﻫَﻴْﺮٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ، ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺃَﺩْﺭَﻛْﺘُﻬُﻢْ ﻭَﻫُﻢْ ﻳُﻌْﻄُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺻَﺪَﻗَﺔِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟﺪَّﺭَﺍﻫِﻢَ ﺑِﻘِﻴﻤَﺔِ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ অর্থাৎ হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১, এর সনদের মান সহীহ তথা বিশুদ্ধ)। তেমনিভাবে ‘ইবনে আবী শায়বা’-এর হাদীসগ্রন্থে টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে হযরত হাসান বসরী (রহ.)-এর আছার এইভাবে বর্ণিত রয়েছে যে –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ، ﻋَﻦْ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥَ، ﻋَﻦْ ﻫِﺸَﺎﻡٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺃَﻥْ ﺗُﻌْﻄِﻲَ ﺍﻟﺪَّﺭَﺍﻫِﻢَ ﻓِﻲ ﺻَﺪَﻗَﺔِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ অর্থ : ইবনে আবী শায়বা (রহ.) বলেন, ওয়াকী আমাকে সূফিয়ান, হিশাম এবং হাসান বছরী সূত্রে জানিয়েছেন যে, হযরত হাসান বছরী (রহ.) বলেছেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭০, সনদের মান সহীহ)। অনুরূপভাবে হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (রহ.) এর একখানা পত্রও উল্লেখ রয়েছে। যেমন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ، ﻋَﻦْ ﻗُﺮَّﺓَ، ﻗَﺎﻝَ : ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﻛِﺘَﺎﺏُ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﻓِﻲ ﺻَﺪَﻗَﺔِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ : ﻧِﺼْﻒُ ﺻَﺎﻉٍ ﻋَﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﻧْﺴَﺎﻥٍ ﺃَﻭْ ﻗِﻴﻤَﺘُﻪُ ﻧِﺼْﻒُ ﺩِﺭْﻫَﻢٍ অর্থাৎ ইবনে আবী শায়বা বলেন, ওয়াকী (রহ.) কুররাহ সূত্রে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহ.) এর একখানা পত্র আমাদের নিকট এসে পৌঁছে। সেখানে সাদাকাতুল ফিতর মাথাপিছু এক ছা’ অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য অর্ধ-দিরহাম আদায় করার নির্দেশ ছিল। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯, সনদের মান সহীহ)। পূর্বের হিসেব অনুযায়ী অর্ধ-দিরহামের বর্তমান বাজার মূল্য হল, প্রায় ৭০ টাকা। উল্লেখ্য, এই বছর (২০২২ ইং) মাথাপিছু সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৭০ বা ৭৫ টাকা।
এছাড়াও বিখ্যাত ইমাম, ইবনে আবী শায়বা কৃত সংকলিত মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা এর ২/৩৯৮ এর মাঝে অনুচ্ছেদ স্থাপন করা হয় এভাবে যে- ﻓِﻲ ﺇِﻋْﻄَﺎﺀِ ﺍﻟﺪَّﺭَﺍﻫِﻢِ ﻓِﻲ ﺯَﻛَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ অর্থাৎ সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা (বৈধ হওয়া) সম্পর্কে। আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব ‘আস-সুনানুল কুবরা’র ৪/১৮৯ এর মধ্যে এভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করে গেছেন যে- ﺑَﺎﺏُ ﻣَﻦْ ﺃَﺟَﺎﺯَ ﺃَﺧْﺬَ ﺍﻟْﻘِﻴَﻢِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺰَّﻛَﻮَﺍﺕِ অর্থাৎ এই অনুচ্ছেদ হল, টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত। তাছাড়া রাসূল (সা.) এর যুগেও ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ ও ﺯﻛﻮﺓ ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে পেশ করা হল – ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻃَﺎﻭُﺱٌ : ﻗَﺎﻝَ ﻣُﻌَﺎﺫٌ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻟِﺄَﻫْﻞِ ﺍﻟﻴَﻤَﻦِ : « ﺍﺋْﺘُﻮﻧِﻲ ﺑِﻌَﺮْﺽٍ ﺛِﻴَﺎﺏٍ ﺧَﻤِﻴﺺٍ – ﺃَﻭْ ﻟَﺒِﻴﺲ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻣَﻜَﺎﻥَ ﺍﻟﺸَّﻌِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟﺬُّﺭَﺓِ ﺃَﻫْﻮَﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﺄَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺎﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ » ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺧَﺎﻟِﺪٌ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺣْﺘَﺒَﺲَ ﺃَﺩْﺭَﺍﻋَﻪُ ﻭَﺃَﻋْﺘُﺪَﻩُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ” ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺗَﺼَﺪَّﻗْﻦَ ﻭَﻟَﻮْ ﻣِﻦْ ﺣُﻠِﻴِّﻜُﻦَّ » ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﺜْﻦِ ﺻَﺪَﻗَﺔَ ﺍﻟﻔَﺮْﺽِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ، ﻓَﺠَﻌَﻠَﺖِ ﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺗُﻠْﻘِﻲ ﺧُﺮْﺻَﻬَﺎ ﻭَﺳِﺨَﺎﺑَﻬَﺎ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺨُﺺَّ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐَ ﻭَﺍﻟﻔِﻀَّﺔَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌُﺮُﻭﺽِ “
অর্থাৎ তাউস (রহ.) বলেন, মু‘আয (ইবনে জাবাল) (রা.) ইয়ামনবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এসো। ওটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী (সা.) এর সাহাবীগণের জন্যও উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রা.) এর ব্যাপার হল এই যে, সে তাঁর বর্ম ও যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। (মহিলাদের লক্ষ্য করে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের অলংকার থেকে হলেও সাদকা কর । [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণাদ্রব্যের যাকাত সেই পণ্য দ্বারাই আদায় করতে হবে, এমন নির্দিষ্ট করে দেননি। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও গলার হার খুলে দিতে আরম্ভ করলেন। [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] সোনা ও রূপার বিষয়টি পণ্যদ্রব্য থেকে পৃথক করেননি (বরং উভয় প্রকারেই যাকাত স্বরূপ গ্রহণ করা হত)। (দেখুন, সহীহ বুখারী ২/১১৬)। উল্লেখ্য যে, সাদাকাতুল ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি- ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﺑَﺎﺏُ ﺍﻟْﻌَﺮْﺽِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ: ﺃَﻱْ ﺟَﻮَﺍﺯُ ﺃَﺧْﺬِ ﺍﻟْﻌَﺮْﺽِ ﻭَﻫُﻮَ ﺑِﻔَﺘْﺢِ ﺍﻟْﻤُﻬْﻤَﻠَﺔِ ﻭَﺳُﻜُﻮﻥِ ﺍﻟﺮَّﺍﺀِ ﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﻣُﻌْﺠَﻤَﺔٌ ﻭَﺍﻟْﻤُﺮَﺍﺩُ ﺑِﻪِ ﻣَﺎ ﻋَﺪَﺍ ﺍﻟﻨَّﻘْﺪَﻳْﻦِ ﻗَﺎﻝَ ﺑﻦ ﺭَﺷِﻴﺪٍ ﻭَﺍﻓَﻖَ ﺍﻟْﺒُﺨَﺎﺭِﻱُّ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻤَﺴْﺄَﻟَﺔِ ﺍﻟْﺤَﻨَﻔِﻴَّﺔَ ﻣَﻊَ ﻛَﺜْﺮَﺓِ ﻣُﺨَﺎﻟَﻔَﺘِﻪِ ﻟَﻬُﻢْ ﻟَﻜِﻦْ ﻗَﺎﺩَﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﺪَّﻟِﻴﻞُ …… ﺍﻟﺦ আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সাথে সহমত পোষন করেছেন….। (ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার- ৩/৩১২)।
…..এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায় ﺗﺤﻘﻴﻖ ﺍﻻﻣﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﺧﺮﺍﺝ ﺯﻛﻮﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﺑﺎﻟﻤﺎﻝ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক। এ বিষয়ে আরো দেখুন- বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিস-সারাখসী-৩/১১৩ ইত্যাদি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কত বড় জঘন্য মিথ্যাবাদী হলে এই সমস্ত বালখিল্য টাইপের কথাবার্তা নিজ রচনা সমূহে দেদারসে লিখে যেতে পারে!
মির্যা কাদিয়ানীর রচনা থেকে, এক নবজাতক শিশুর মা মারা যাওয়ার পর শিশুটি তার পিতার দুধ খেয়ে লালিতপালিত হয়েছে, একটি পুরুষ ছাগল থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত দুধ পাওয়া গেছে, একদম শুষ্ক ও ঠনঠনে মাটি থেকে একটি ইঁদুর সৃষ্টি হয়েছে যার অর্ধেকটা মাটিই রয়ে গেছে। রেশমের পোকা সে তার পুরুষ পোকার সাথে মিলন ছাড়াই ডিম দিয়েছে এবং ডিম থেকে বাচ্চাও ফুটিয়েছে। (সংক্ষেপে)।
এগুলো মির্যা গোলাম আহমদ নিজ হাতে লিখে গেছেন। তিনি এগুলো লিখার সময় পাঠককে আশ্বস্ত করেছেন। লিখেছেন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে ও বিশ্বস্ত মানুষের উদ্ধৃতিতে’ই নাকি এই কথাগুলো মানুষের মাঝে প্রচলিত রয়েছে।
এগুলো লিখার পেছনে মির্যার উদ্দেশ্য কী?
জ্বী হ্যাঁ, এর পেছনে মির্যা কাদিয়ানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, হযরত ঈসা (আ.)-এর পিতা ছাড়াই জন্মলাভ করার বিষয়টির আলৌকিকতা স্বীকার না করতে উদ্দেশ্যমূলক নানা গালগল্পে বাহানা করা। এসব গল্পের মাধ্যমে তিনি যেন বুঝাতে চাচ্ছেন যে, নবজাতক শিশুটি তার পিতার দুধ খেয়ে লালিতপালিত হওয়া ইত্যাদি এর ন্যায় প্রকৃতি বিরুধী অনেক ঘটনারই দুনিয়া সাক্ষী।
তাহলে পিতা ছাড়াই জন্মলাভ করার ঘটনার অত গুরুত্ব কিসের?
হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মলাভের অলৌকিকতা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে না চাওয়ার আরও একটা সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে। সেটাই এখানে আমার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ঈসা (আ.)-এর জন্মলাভের অলৌকিকতাকে স্বীকার করলে, তখন তাকে তাঁর উর্ধ্বাকাশে ঐশীভ্রমণও মেনে নিতে হয়!
মোটকথা, সে খ্রিস্টান মিশনারীদের ডিফেন্ড করার আড়ালে নিজের উদ্দেশ্যটাও পাকাপোক্ত করে ফেলেন। সেটি হল, ঈসা (আ.) জীবিত সশরীরে উর্ধ্বাকাশে যাওয়া। কারণ মির্যা গোলাম আহমদ খুব ভালো ভাবেই জানত যে, যদি সে ঈসা (আ.)-এর উর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করার বিষয়টি মেনে নেয় তখন তার জন্য নিজেকে প্রতিশ্রুত মসীহ ঈসা দাবী করার আর কোনো সুযোগই থাকেনা। পাঠকবৃন্দ! এবার আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
সূরা ফাতিহায় “নবুওয়ত” জারি থাকার দাবী ও তার প্রতিউত্তরে দাঁতভাঙা জবাব
কাদিয়ানী কাল্টরা পবিত্র কুরআনকে অপব্যাখ্যা দিয়ে নবুওয়ত জারি থাকার দাবী করে বরাবরই পাকড়াও হয়ে থাকে! আজকে তেমনি একটি ঘটনা তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ। জনৈক কাদিয়ানী কাল্ট (ব্রেইন ওয়াশ) বলল, সূরা ফাতিহায় “নবুওয়ত” জারি থাকার ইংগিত রয়েছে! আমি প্রতিউত্তরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
সত্যিই কি সূরা ফাতিহায় তৃতীয় শ্রেণীর (উম্মতী) নবুওয়ত জারি রয়েছে বুঝায়? যদি তাই হয় তাহলে কি মুহাম্মদ (সা.) এর শান ও মান খাটো করা হল না? কেননা, মির্যার দাবী হচ্ছে, সে মুহাম্মদ (সা.) এর বুরুজ ও দ্বিতীয় আগমনী সত্তা। এমতাবস্থায় মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আবার এসে প্রথম শ্রেণীর (শরীয়তবাহক) নবীর মর্যাদা থেকে তৃতীয় শ্রেণীর নবীর স্তরে কেন নেমে যাবেন? তবে কি মুহাম্মদ (সা.) ক্রমাগতভাবে উন্নতি না করে বরং অবনতিই করলেন? নাউযুবিল্লাহ। ব্যাচারা লা জবাব, ভোঁ দৌড়ের উপর…….।
উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট হল, নবুওয়ত তিন প্রকার। শরীয়তবাহক, স্বতন্ত্র ও বুরুজি। প্রথম দুই প্রকারের ক্রমধারা চিরতরে বন্ধ কিন্তু তৃতীয় প্রকারের নবুওয়তের দ্বার উন্মুক্ত। তবে তৃতীয় প্রকারের নবী শুধুমাত্র একজনই। আর তিনি স্বয়ং নিজেই। কেয়ামত পর্যন্ত আর কেউ উক্ত বুরুজী নবীর মাকাম প্রাপ্ত হবেনা। আর বুরুজি নবীর মাকাম প্রাপ্ত হতে হলে তাকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণ আনুগত্যকারী ও তাঁর পরিপূর্ণ গুণাবলী অর্জনকারী হতে হবে। মির্যা কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে, তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর বুরুজ ও অভিন্ন সত্তা; যেমন নাকি তিনি হুবহু মুহাম্মদ (সা.)ই। নাউযুবিল্লাহ।
আবার তাদের কোনো কোনো এভিডেন্স থেকে পাওয়া যায় যে, মির্যা গোলাম আহমদ প্রকৃতপক্ষেই তেমনি একজন ‘নবী’ যেমনটি ছিলেন ইতিপূর্বেকার নবী রাসূলগণ। এ কথা পরিষ্কার লিখা আছে, দৈনিক আল ফজল পত্রিকায় (পৃষ্ঠা নং ১০, তারিখ ৩০.১২.১৯১৬ ইং)।
উপসংহার, খুব মনে রাখতে হবে, যে সমস্ত ব্যাখ্যা ইসলামের প্রথম তিন স্বর্ণযুগীয় (খায়রুল কুরূনের) শিক্ষায় অনুপস্থিত সেটি যতই সুন্দর হোক, বিদয়াত ও প্রত্যাখ্যাত। কাদিয়ানীবাদের সিংহভাগ কনসেপশন ইসলামের প্রাচীন ও তিন সোনালী যুগের শিক্ষার পরিপন্থী। ফলে সেগুলো পুরোপুরি বাতিল ও পরিত্যাজ্য।