মির্যা কাদিয়ানীর এই বক্তব্যটাও ইতিপূর্বে কোনো কাদিয়ানীর জানা ছিল কি?
মির্যা কাদিয়ানী জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে লিখে গেছেন,
“এই অধমের (মির্যা) পক্ষ হতেও এমনটি দাবী করা হয় না যে, মাসীহিয়ত [কথিত রূপক মসীহ্’র আগমনীধারা] আমার সত্তাতেই সমাপ্ত হয়ে গেছে এবং আগামীতে আর কোনো মসীহ্ আগমন করবেনা! বরং আমি তো মানি এবং বারবার বলিও যে, একজন কেন; দশহাজারের চেয়েও অধিক মসীহ্ আগমন করতে পারে এমনকি সম্ভব যে, প্রকাশ্য সম্মান ও সমৃদ্ধিসহকারে আগমন করবে। আরও সম্ভব যে, তিনি সর্বপ্রথম [সিরিয়ার] দামেস্ক নগরীতে অবতরণ করবেন।”
তাই এখন প্রশ্ন আসবে, তাহলে মির্যা সাহেব উক্ত দশ হাজার মসীহ’র মধ্য হতে কত নাম্বার মসীহ? আর হাদীসে বর্ণিত সেই মসীহ যে তিনি-ই, অন্যরা নন; তা আপনারা কিভাবে নিশ্চিত হতে পারলেন?
মির্যা কাদিয়ানী ও তার আবোল তাবোল যতসব ব্যাখ্যার নামে খিস্তিখেউড়!
মির্যা কাদিয়ানীর মুরিদদের কয়জনেই বা এগুলো জানে!
সাধারণ কাদিয়ানীদের নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ এরা মির্যার বইগুলো কখনো পড়েনা বা পড়ার কোনো মুরোদও নেই। এদের শিক্ষা আর তারবিয়ত আগাগোড়াই কাদিয়ানী জামাতের উর্ধতন নেতাদের বক্তৃতা বয়ান-নির্ভর, যেখানে নিজ চিন্তাশক্তির ছিটেফোঁটাও থাকেনা। আমার আঙ্গুল সেসব কাদিয়ানী নেতাদের প্রতি যারা জেনে-বুঝে সত্যটা গোপন রেখে চলেছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, জনাব আব্দুল আউয়াল নিজেও মির্যা গোলাম আহমদকে হাদীসে বর্ণিত ইমাম মাহদী বিশ্বাস করেনা। আর বিশ্বাস করার মত কোনো রসদই তাদের নিকট নেই।
বাংলাদেশের কাদিয়ানী জামাতের চিহ্নিত ১০/১২জন জ্ঞানপাপী এই গোষ্ঠীটাকে আগলে রেখেছে শুধুমাত্র অর্থ কামানের জন্য। কারণ প্রত্যেক কাদিয়ানী নিজ ইনকামের ১৬% অর্থ প্রতিমাসে কাদিয়ানী ফাণ্ডে চাঁদা দিয়ে থাকে। সে সাথে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১০ ভাগের ১ ভাগ দিতে হয় প্রত্যেক কথিত জান্নাতি টিকেটধারী (তাদের পরিভাষায় ‘মছীহ’-)কে। এবার তাহলে হিসেব কষে দেখুন, সারা দেশ থেকে কী পরিমাণে এদের বিনা পুঁজির রমরমা ধর্মব্যবসা।
আমার ভাবতেও অবাক লাগে এত নিকৃত ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী কোন মুখে অন্যকে (মুসলমানদের) ধর্মব্যবসায়ী বলে মুখে ফেনা তুলে! মূলত এই রমরমা ধর্মব্যবসার আড়ালে লালে লাল হওয়ার জন্যই সত্য গোপন করে চলছে আর সাধারণ কাদিয়ানীদের রক্ত শোষণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে ইতিপূর্বে কথিত জ্বীনের বাদশাহ নামের ভণ্ডরা নিয়েছিল এবং সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে সর্বহারা করেছিল!
আজকে লিখব মির্যা কাদিয়ানীর কতিপয় কমেডি ব্যাখ্যা, যা জেনে আপনি নিজেও মনে মনে হাসবেন! আর বলবেন, আহা! এই জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগেও এমন একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকেও ইমাম মাহদী বিশ্বাস করা কিভাবে সম্ভব হয়!!
মির্যা কাদিয়ানীর অভিনব কমেডি ব্যাখ্যা –
মির্যা কাদিয়ানী লিখেন, নিজ থেকে নতুন কোনো অর্থ দাঁড় করাটাও ইলহাদ (নাস্তিকতা) আর তাহরিফ (বিকৃতি) করার শামিল। (রূহানী খাযায়েন ৩/৫০১)।
কিন্তু বাস্তবতা হল, এভাবে যিনি লিখলেন তিনি নিজেই নিজের কথার উপর অবিচল থাকতে পারেননি। যেমন,
রেফারেন্স সহ নিম্নরূপ-
১. বর্ণনায় উল্লিখিত ‘কার’আ’ (كرعة) হতে কাদিয়ান বুঝা হয়েছে। (রূহানী খাযায়েন ১১/৩২৯)। ২. ‘আদনাল আরদ’ (ادنى الارض) দ্বারা কাদিয়ান উদ্দেশ্য। (তাযকিরাহ ৬৪৯)। ৩. শারক্বিয়্যি দামেস্ক হতে কাদিয়ান উদ্দেশ্য। (তাযকিরাহ ১৪১)। ৪. তিনটি শহরের নাম কুরআনে উল্লেখ আছে, মক্কা, মদীন এবং কাদিয়ান। (তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৬০ চতুর্থ এডিশন)। ৫. হামান থেকে উদ্দেশ্য নও মুসলিম সা’দ উল্লাহ উদ্দেশ্য। (রূহানী খাযায়েন ১১/৩৪০)। ৬. ইউরোশলম (يروشلم) থেকে উদ্দেশ্য কাদিয়ান। (রূহানী খাযায়েন ১৮/৪২০)। ৭. হাদীসে উল্লিখিত লুদ গেইট (بباب لد) মানে পাকিস্তানের শহর লুধিয়ানা। (রূহানী খাযায়েন ১৮/৩৪১)। ৮. আল-আকসা মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য কাদিয়ানের মির্যা কর্তৃক নির্মিত মসজিদ। (রূহানী খাযায়েন ১৬/২১)। ৯. জাহান্নাম মানে প্লেগ মহামারি। (রূহানী খাযায়েন ২২/৫৮৩)। ১০. জান্নাত হতে বিভ্রম বা মনোবৃত্তি উদ্দেশ্য (وهم) উদ্দেশ্য। ১১. মুহাদ্দাসীয়ত মানে নবুওয়ত। (রূহানী খাযায়েন ২২/৫০৩)। ১২. দুটি হলুদ কাপড় (مهرودتين) মানেই দু‘টি রোগ (মিরাক/সিজোফ্রেনিয়া এবং বহুমুত্র রোগ) উদ্দেশ্য। (রূহানী খাযায়েন ২২/৩২০, তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন, বাংলা ৪৯)। ১৩. আদম, ঈসা ও মূসা হতে উদ্দেশ্য মির্যা কাদিয়ানী। (তাযকিরাহ)। ১৪. দাজ্জাল মানে খ্রিস্টান মিশনারী (রূহানী খাযায়েন ২২/৪৫৬), দাজ্জাল মানে শয়তান (রূহানী খাযায়েন ১৪/২৯৬)। ১৫. ফেরাউন মানে আহলে হাদীস শায়খ মুহাম্মদ হুসাইন বাটলভী। ১৬. হিন্দু মানে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ। ১৭. মৃত্যু (موت) মানে বিজয় (فتح)। (তাযকিরাহ ৫০৩)। ১৮. কথিত ইলহাম ছায়্যিবুন বা (ثيب) হতে মির্যার স্ত্রী নুসরাত জাহান উদ্দেশ্য (জালালুদ্দিন শামস কৃত ব্যাখ্যা), (তাযকিরাহ ৩১)। ১৯. দাব্বাতুল আরদ (دابة الارض) মানে প্লেগের পোকামাকড় (রূহানী খাযায়েন ১৮/৪১৬), উলামায়ে ছূ, (রূহানি খাযায়েন ৭/৮); নেক মানুষের দল (রূহানী খাযায়েন ৩/৩৭০)। ২০. পাঁচ (৫) মানে পঞ্চাশ (৫০)। ২১. চার (৪) মানে চল্লিশ (৪০)। ২২. ১ দিন মানে ২ বছর। ২৩. ইয়াজুজ মাজুজ দ্বারা উদ্দেশ্য রাশিয়া ব্রিটেন (হামামাতুল বুশরা ৩৮, বাংলা অনূদিত নভেম্বর ২০১১ইং)। ২৪. শয়তান মানে খারাপ চিন্তা। ২৪. ২০০ বছর মানে ১৩০০ বছর। ২৫. ১ম তারিখ মানে ত্রয়োদশ তারিখ। ২৬. রমাযানের অর্ধ-তারিখ হতে আঠাশ (২৮) তারিখ উদ্দেশ্য।
পরিশেষ, যার চোখ আছে দেখবে, আর যার বিবেক আছে চিন্তা করবে। কাদিয়ানী জামাতে থেকে বে-ঈমান অবস্থায় কবরে যাবে নাকি হায়াত থাকতে মির্যা গোলামকে তিন তালাক দিয়ে বের হয়ে ইসলামে ফিরে আসবে।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার কাদিয়ানীবাদের অনুসারীরা সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য হরহামেশা বলে থাকে যে, তাদের আর মুসলমানদের মধ্যকার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অথচ মির্যায়ী মতবাদে খোদাতালার এমন কতগুলো নামও উল্লেখ পাওয়া যায়, ইসলামী শিক্ষার সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই। যেমন মির্যায়ী লিটারেচারগুলোয় খোদাতালার কতগুলো নাম উল্লেখপূর্বক লিখা আছে,
১. কালূ – কালা (كالو، كالا)। (যিকরে হাবীব পৃ-১৮১; নতুন এডিশন, কাদিয়ানী মুরিদ মুফতি(!) মুহাম্মদ সাদেক)।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, কাদিয়ানীবাদ আর ইসলাম আগাগোড়ায় ভিন্ন দুটি সতন্ত্র ধর্ম। কাজেই কাদিয়ানীবাদের অনুসারীদের ইসলামের গণ্ডিভুক্ত মনে করার কোনো সুযোগ নেই। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
অর্থাৎ মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তবে তোমরা কি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিবে? এবং কেহ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিলে সে কখনও আল্লাহ ক্ষতি করিতে পারিবে না; বরং আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করিবেন।” [অনুবাদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন/ইফা]।
কাদিয়ানীদের রচনায় :
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বইপুস্তকে উক্ত আয়াতের অনুবাদের ক্ষেত্রে লিখা আছে,…. তাঁর পূর্বের/পূর্বেকার সব রসূল গত হয়ে গেছেন।’ তারা এর ব্যাখ্যায় দাবী করে যে, এখানে ‘গত হয়ে গেছেন’ বলতে মারা গেছেন, এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। ফলে এই আয়াত ঈসা (আ.) সহ পূর্বেকার সব রাসূলকেই মারা গেছেন, বলে বুঝায়। স্ক্রিনশট-
কিন্তু তাদের ন্যায় অনুরূপ অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা ইসলামের গত ১৪শত বছরেও কোনো বরেণ্য তাফসীরকারক এবং আয়েম্মায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়। খণ্ডনমূলক জবাব নিচে দেয়া হল।
খণ্ডনমূলক জবাব :
উক্ত আয়াতের من قبله الرسل হতে ‘সমস্ত রাসূল’ অথবা ‘সব রাসূল’ এইভাবে যারা অর্থ নিয়ে থাকেন এবং সেই অর্থের উপর ভিত্তি করে যুক্তি দিয়ে দাবী করেন যে, এর দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বেকার সমস্ত রাসূল যেভাবে গত হইয়া গিয়াছেন, মানে মৃত্যুবরণ করেছেনই উদ্দেশ্য, তাদের মধ্যে হযরত ঈসা (আ.)ও শামিল। যেহেতু তিনিও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বেকার নবী রাসূলগণের একজন; তাদের এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই যে, প্রথমত, আয়াতটির من قبله الرسل হতে ‘সমস্ত রাসূল’ বা ‘সব রাসূল’ এইভাবে অর্থ নেয়াটাই ঠিক নয়, বরং এইভাবে অর্থ নেয়া ব্যকরণবিরুদ্ধ। যেহেতু আয়াতটির الرسل এর শুরুতে যুক্ত ال (আলিফ+লাম)-কে ‘আলিফ লাম আহদে খারেজি’ (عهد خارجى) হিসেবে গণ্য করা হবে। ফলে الرسل এর মর্মার্থে শর্তপ্রযোজ্য বুঝাবে। অর্থাৎ শব্দটি বহুবচন হওয়া সত্ত্বেও তার অভ্যন্তরে কিছু সংখ্যক রাসূলকে অন্তর্ভুক্ত করবেনা। অতএব আয়াতটির من قبله الرسل হতে সঠিক অর্থ দাঁড়াবে ‘তাঁঁর পূর্বে অনেক বা বহু রাসূল গত হইয়া গিয়াছে।’
এই পর্যায়ে কয়েকটি প্রশ্ন আসতে পারে। তা হল,
১- الرسل এর মর্মার্থে ‘শর্ত প্রযোজ্য’ থাকার প্রমাণ কী?
২- আয়াতটির الرسل (অনেক বা বহু রাসূল)-এর অর্থে আরও যাদেরকে শামিল করা হবেনা বলে বুঝায় তারা কারা? দলিল প্রমাণ আছে কি?
উল্লিখিত প্রশ্ন দুটির উত্তরে বলতে চাই। পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় পৃথিবীতে শেষ যুগে হযরত ঈসা (আ.)-এর দ্বিতীয়বার আগমন সম্পর্কে ইংগিতে ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে। আল্লাহতালা যাকে ইতিপূর্বে বনী ইসরাইলের নিকট একজন রাসূল করে প্রেরণ করেছিলেন। তন্মধ্যে সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬, সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩, সূরা আল মায়েদা আয়াত নং ১১০ ইত্যাদি অন্যতম।
যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে, বিবি মরিয়মের উদ্দেশ্যে জিবরাঈল (আ.) বলেছিলেন (قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا) ‘ক্বা-লা ইন্নামা আনা রাসূলু রাব্বিকি লিআহাবা লাকি গুলা-মান ঝাকিইইয়া’ অর্থাৎ সে বলল আমি তো কেবল তোমার রবের একজন রাসূল (তথা বার্তাবাহক), তোমাকে একজন পবিত্র পুত্র সন্তান দান করার জন্য এসেছি। (মরিয়াম/১৯:১৯); তাফসীরে কুরতুবীতে এসেছে, সূরা আল হাক্কাহ আয়াত নং ৪০ (إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এই কুরআন একজন সম্মানিত রাসূলের বার্তা”-এর তাফসীরে ইমাম হাসান বছরী, কলবী এবং মুক্বাতিল প্রমুখের মতে ‘রাসূল‘ শব্দ হতে হযরত জিবরাঈল (আ.) উদ্দেশ্য। এমনকি বহু সংখ্যক ফেরেশতাও এমন রয়েছেন যাদেরকে আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে ‘রাসূল‘ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন সূরা হাজ্জ্ব এর ৭৫ নং আয়াতে এসেছে – (اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ) অর্থাৎ ‘আল্লাহতালা ফেরেশতাদের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন এবং মানুষের মধ্য থেকেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ আবার অপরদিকে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখেছেন, সূরা আস-সিজদাহ আয়াত নং ২৩ (وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُن فِي مِرْيَةٍ مِّن لِّقَائِهِ ۖ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ) অর্থাৎ ‘আমি তো মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম, অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ বিষয়ে সন্দেহ করো না। আমি একে (তাওরাত) বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম।’ এই আয়াতের মধ্যে হযরত মূসা (আ.) জীবিত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ৬২। স্ক্রিনশট –
মির্যা সাহেবের রচনাসমগ্র ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ৮ নং খণ্ডের ৬৮-৬৯ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখা আছে যে,
فرض علينا ان نؤمن بانه حى فى السماء و لم يمت و ليس من الميتين.
অর্থাৎ ‘আমাদের জন্য ফরজ হল, তিনি (মূসা) আকাশে জীবিত এবং তিনিমৃত্যুবরণ করেননি, তিনি মৃতদের মধ্যেও শামিল নন বলে বিশ্বাস করা।’
সুতরাং অন্ততপক্ষে এটুকু তো প্রমাণিত হল যে, من قبله الرسل এর الرسل এর মর্মার্থে শর্ত প্রযোজ্য, সমস্ত রাসূল অন্তর্ভুক্ত নন, বরং কিছু রাসূল الرسل-এর মধ্যকার অন্তর্ভুক্তির বাহিরে। তাদের মধ্যে হযরত ঈসা (আ.), রূহুল কুদস হযরত জিবরাঈল (আ.) এবং বহু সংখ্যক ফেরেশতাও রয়েছেন। আর মির্যায়ী বিশ্বাস মতে হযরত মূসা (আ.)-কেও এঁদের মধ্যে গণনা করলে তখন তো একেবারেই সোনায় সোহাগা বলা যায়। যাইহোক, এই সমস্ত ক্বারীনা তথা প্রমাণ বা নিদর্শনের কারণেই আয়াতটির الرسل এর ال-কে আহদে খারেজি বলা হয়। ফলে এর তাৎপর্যে শর্ত প্রযোজ্য বুঝানো হবে। আহা! নির্বোধ কাদিয়ানীদের এ সমস্ত ইলমি বিষয়ে বুঝাতে পারে এমন সাধ্য কার? বহুবচনাত্মক শব্দেও ক্বারীনা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বে ‘শর্ত প্রযোজ্য‘ এর বিধান প্রয়োগ হবার আরেকটি প্রমাণ নিম্নরূপ!
মির্যা কাদিয়ানীর একটি কথিত ইলহাম ও তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জিজ্ঞাসা :
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর একটি কথিত ইলহামে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তালা তাকে নাকি উদ্দেশ্য করে বলেছেন, آسمان سے کئى تخت اترے مگر سب سے اوپر تيرا تخت بچھایا گیا অর্থাৎ আকাশ থেকে কয়েকটি সিংহাসন নাযিল হয়েছে। কিন্তু সবার উপরে তোমার সিংহাসনটি পাতা হয়েছে। (আরবাঈন [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ৯৩, তাযকিরাহ ৩২৩ ইলহাম তাং ১৯০০ ইং, রূহানী খাযায়েন ১৭/৪২৮)। স্ক্রিনশট –
মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব উক্ত কথিত ইলহামের ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নরূপ –
”آسمان سے کئ تخت اترے پر تيرا تخت (رسول ص پاک کے بعد) سب سے اوپر بچھایا گیا”
অর্থাৎ ‘আকাশ থেকে কয়েকটি সিংহাসন নাযিল হয়েছে। কিন্তু তোমার সিংহাসনটি (রাসূলেপাকের পর) সবার উপরে পাতা হয়েছে।’ (আল-ফজল, তারিখ ১৯ই আগস্ট ১৯৬১ ইং রাবওয়া হতে প্রকাশিত)। স্ক্রিনশট –
এখন এখানে মির্যার কথিত ইলহামে পরিষ্কার করে বলা হল যে, মির্যার সিংহাসনটি সবার উপরে (سب سے اوپر) পাতা হয়েছে। কিন্তু মির্যার পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ ‘সবার উপরে’ এই কথার ব্যাখ্যায় লিখলেন ‘রাসূলেপাকের পরে’ সবার উপরে। এতে কি তিনি শর্ত প্রযোজ্যের বিধান প্রয়োগ করলেন না? অবশ্যই করেছেন। তাহলে সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৪৪ এর الرسل এর মধ্যেও অনুরূপ শর্ত প্রযোজ্যের এই অভিন্ন বিধান প্রয়োগ করে যদি অর্থ করা হয় যে, ‘তার পূর্বে (জিবরাঈল, অন্যান্য ফেরেশতা এবং ঈসা মসীহ ব্যতীত) সব রাসূল গত হইয়া গিয়াছেন’—ভুল হবে কেন? কাদিয়ানীদের নিকট এর নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক জবাব চাচ্ছি! এই আর্টিকেলের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মিন কবলিহির রসুল’-এর সঠিক তাৎপর্য কী ও কেন—এ সম্পর্কে। প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ নিয়ে দালিলিক আরও কিছু আর্টিকেল প্রস্তুত করা হয়েছে। উপরে উল্লিখিত আর্টিকেল দুটিও দেখা যেতে পারে। লিখাটি ভালো লাগলে সবাই শেয়ার করবেন। ওয়াসসালাম।
কাদিয়ানীদের জন্য উচিত, পুরো আর্টিকেলটি ভালো মত পড়া এবং নিরপেক্ষ ভাবে কথাগুলোর উপর চিন্তা করে নিজের মনকে প্রশ্ন করা!
সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং ৩৩ : هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡمُشۡرِكُونَ অর্থ— তিনিই মহান আল্লাহ, যিনি (তোমাদের কাছে) সুস্পষ্ট হেদায়াত ও সঠিক জীবনবিধান সহকারে তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন, যেন তিনি এ (বিধান)-কে (দুনিয়ার) সব কয়টি বিধানের উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন, মুশরিকরা (এ বিজয়কে) যত খারাপই মনে করুক না কেন!
পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তওবাহ আয়াত নং ৩৩ এর মধ্যে হযরত ঈসা (আ.) সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পনেই (حكماعدلا তথা ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে – বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া) পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আগমন করার ইংগিতে ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে, লিখে গেছেন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এই কথাগুলো তখন লিখেছিলেন যখন তিনি মামূরমিনাল্লাহ, মুলহাম এবং মুজাদ্দিদ হবার-ও দাবী করতেন। তিনি কিন্তু লিখে গেছেন,
“খোদা ইলহামের মাধ্যমে আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তুমি এই শতাব্দীর মুজাদ্দিদ এবং আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে এই ইলহামও হয়েছে যে, الرحمن علم القرآن… الخ অর্থাৎ খোদা তোমাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং তার সঠিক অর্থ তোমার উপর উন্মোচন করেছেন।” (কিতাবুল বারিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৩/২০১, টিকা; ইলহাম ১৮৮২ ইং, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৩৫, চতুর্থ এডিশন)।
এখন তাহলে কেমনে কী? কেননা, বারাহীনে আহমদীয়া চতুর্থ খণ্ড রচনা করেন ১৮৮৪ ইংরেজিতে। যেখানে তিনি সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩ উল্লেখ করে কুরআন দ্বারা দলিল দিয়ে লিখেন যে, এই আয়াতে ইংগিতে একখানা ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে যে, মসীহ (ঈসা) এই পৃথিবীতে সশরীরে (جسمانى) এবং রাজনৈতিক দর্পনেই (سياست ملكى) পুনরায় আসবেন।
আর আল্লাহর পক্ষ হতে তার পবিত্র ‘কুরআনের সঠিক অর্থ শিক্ষা লাভ করা’র উক্ত কথিত ইলহাম ছিল ১৮৮২ সালের দিককার।
তাই এবার প্রশ্ন হল,
১- মির্যা সাহেব সূরা তওবার ৩৩ নং আয়াত দ্বারা যেখানে মসীহ (আ.)-এর সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পনেই পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আগমনের ইংগিতে ভবিষ্যৎবাণী থাকার কথা লিখলেন সেই আয়াতের বিপরীতে কুরআনের অপরাপর ত্রিশ আয়াত দ্বারা মসীহ’র (ঈসা) মৃত্যু হয়ে যাওয়া কিভাবে সাব্যস্ত হতে পারে? এতে কি পবিত্র কুরআনের ভেতর স্ববিরোধ কথা থাকার জঘন্য অভিযোগ উত্থাপন হল না?
২- আর যদি মির্যা সাহেব কর্তৃক লেখিত “বারাহীনে আহমদীয়া” (খণ্ড নং ৪) এর উক্ত কথাগুলো ভুল বা মিথ্যা হয় তাহলে তো আরও ভীষণ মুসিবত! যার দাবী, আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দিয়েছেন (ইলহাম-১৮৮২ইং) তিনি কিভাবে বারাহীনে আহমদীয়া গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে (রচনাকাল ১৮৮৪ইং) পরবর্তীতে এত জঘন্য ভুল করতে পারেন! অথচ তার মতে মসীহ’র জীবিত থাকার বিশ্বাস নাকি শিরিক! (রূহানী খাযায়েন ২২/৬৬০)!!
মির্যা সাহেব কিন্তু মুজাদ্দিদ, মামূর এবং মুলহাম দাবী করা অবস্থাতেও প্রায় ১০/১২ বছর পর্যন্ত এই কথাই বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, মসীহ আকাশে জীবিত রয়েছেন। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ; আনওয়ারুল উলূম ২/৪৬৩; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ)।
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজের মসীহ দাবীর শখ পূর্ণ করতেই হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত ঘোষণা দিতে চাচ্ছেন এবং এইজন্য পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতকেও যাইচ্ছেতাই অপব্যাখ্যা দিতে মরিয়া ছিলেন তা কিন্তু এখন একদমই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে!
নইলে তিনি যে এও লিখলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তালা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর ছাড়েন না এবং আমাকে রক্ষা করেন প্রত্যেক ভুল ভ্রান্তি থেকে এবং শয়তানি পথসমূহ থেকে তিনি আমাকে হেফাজত করেন।” (নূরুল হক, রূহানী খাযায়েন ২২/১৫৪)।
এবার তো অবস্থা আরও খারাপ! যাকে আল্লাহ এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির রাখেন না তিনি প্রায় ১০/১২ বছর এমন একখানা ভুলের উপর কিভাবে স্থায়ী থাকলেন যেই ভুল সাধারণ কোনো ভুল ছিলনা; বরং তার মতে শিরিক ছিল!
এখন হয়ত মির্যা সাহেবের আগের ইলহাম গুলো মিথ্যা ছিল, না হয় তার পরবর্তী ইলিহাম মিথ্যা ছিল বলে মানতে হবে।
একজন নিরপেক্ষ ও চিন্তাশীল আহমদীর মনে নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো ভাবনার জন্ম দেবে এবং ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসতে সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ।
কে জানি প্রশ্ন করতে চেয়েছিল যে, মির্যা সাহেব প্রথম দিকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে এইভাবে লিখলেও পরবর্তীতে তিনি কি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম পেয়ে ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু সম্পর্কে খুলাখুলিভাবে বলে যাননি?
উত্তরে বলতে চাই যে, পরবর্তীতে মির্যা সাহেব যে ইলহামের নাম ভেঙ্গে আগের সব বয়ান থেকে সরে আসলেন, তিনি কি ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ গ্রন্থে আগের সেসব বয়ানও ইলহামের মাধ্যমে দিয়ে রাখেননি? তাই প্রশ্ন বরাবরের মতই। কোন ইলহাম সত্য? আগেরটা না পরেরটা?
তাছাড়া নিচের প্রশ্নগুলোরও কোনো উত্তর নেই! যেমন-
১৮৮২ সালের ইলহাম মতে, আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দিয়েছেন। এখন তার ফলাফল কি তিনি ১৮৮৪ সালের দিকে লেখিত বারাহীনের মধ্যে ঈসা (আ.) এর দ্বিতীয়বার আসা এবং সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পনে আগমন করার বিশ্বাস ভুল হতে পারে?
মির্যার কথা অনুসারেই সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে যে, আগমনকারী মসীহ ‘রূপক কেউ হবেন না’ একথাই চূড়ান্ত। কেননা দ্বিতীয়বার যিনি আসবেন তিনি তো এমন কেউ-ই হবেন যিনি পূর্বেও একবার এসে গিয়েছিলেন, তাই নয় কি? আর তিনি মসীহে ইসরাইলি ব্যতীত আর কে হতে পারেন?
মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের দাবীমতে আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দিয়েছেন! এরপরেও সে কিভাবে পরবর্তী দুই বছর পর আগের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে বয়ান পালটে ফেলেন? তবে কি আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দেয়ার ঐ ইলহামও মিথ্যা?
মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের মতে, আল্লাহ তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির রাখেন না। (রেফারেন্স উপরে দেয়া হয়েছে)।
এমতাবস্থায় তিনি পরবর্তীতে আরও প্রায় ১০/১২ বছর কিভাবে বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, ঈসা (আ.) জীবিত আকাশে? তবে কি তাকে আল্লাহতালা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির না রাখার দাবীটাই মিথ্যা? নাউযুবিল্লাহ।
মির্যা সাহেবের মতে, মুজাদ্দিদ ব্যক্তি নিজ থেকে বানিয়ে কিছুই বলেন না (রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)। এখন তাহলে তার মুজাদ্দিদ দাবীকালে ঈসা (আ.) সম্পর্কে তিনি যা যা লিখলেন তার সবই ভুল? ইন্না-লিল্লাহ!!! খুব খেয়াল করুন! মির্যা সাহেব নিজের ব্যাপারে একদম পরিষ্কার করে লিখে গেছেন যে, ‘আমি যাই বলেছি সব আল্লাহর নির্দেশেই বলেছি আর আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই করিনি।’ (রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)। এখন তাহলে পরবর্তীতে তার আগের সব বয়ান থেকে সরে আসার কারণ কী? এত ডজন ডজন অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তাও যার পিছু ছাড়েনি তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য আর কী বাকি থাকে? এই সমস্ত অসঙ্গতি তার সিজোফ্রেনিয়া আর হিস্টিরিয়া রোগের উপসর্গ নয় কি? সংক্ষেপে।
সুতরাং বুঝা গেল, কোথাও না কোথাও কোনো ফাঁকফোকর অবশ্যই রয়েছে!
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! ইফতারের আগে এই লিখাটি লিখলাম। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আমি এক বিন্দুও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লেখিনি। মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ। আমীন।
১. ইনজেকশন (Injection): ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙবে না। [ফাতওয়া শামী]।
২. ইনহেলার (Inhaler): শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ওষুধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে। [জাদিদ ফিকহি মাসায়েল, ইমদাদুল ফাতওয়া]।
৩. এনজিও গ্রাম (Angio Gram): হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিও গ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোন ধরনের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরেও রোজা ভাঙ্গবে না। [ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা]।
৪. এন্ডোস কপি (Endos Copy): চিকন একটি পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এ নলে যদি কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি/ঔষধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি কোন ঔষধ লাগানো না থাকে তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। [জাদীদ ফিকহী মাসায়েল]।
৫. নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitro Glycerin): এরোসল জাতীয় ঔষধ, যা হার্টের রোগীরা দুই-তিন ফোঁটা জিহ্বার নীচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে অতঃপর ঔষধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায়। এই ঔষধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অতএব,এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। [জাদীদ ফিকহী মাসায়েল]।
৬. লেপারোস কপি (Laparoscopy): শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র; যা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোন অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে যদি ঔষধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে অন্যথায় রোযা ভাঙ্গবে না। [মাকালাতুল ফিকহীয়া]।
৭. অক্সিজেন (Oxygen): রোজা অবস্থায় ঔষধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। [জাদীদ ফিকহী মাসায়েল]।
৮. মস্তিস্ক অপারেশন (Brain Operation): রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙ্গবে না। [মাকালাতুল ফিকহীয়াহ]।
৯. রক্ত নেয়া বা দেয়া : রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে রোযা ভাঙ্গে না। তাই টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যাবে। তবে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া মাকরুহ যার কারণে শরীর অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই দুর্বল লোকদের জন্য রোযা অবস্থায় অন্য রোগীকে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়। আর এমন সবল ব্যক্তি যে রোযা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দিলে রোযা রাখা তার জন্য কষ্টকর হবে না সে রক্ত দিতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নেই। [আলবাহরুর রায়েক]।
১০. সিস্টোসকপি (cystoscopy): প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। [হেদায়া]।
১১. প্রক্টোসকপি (proctoscopy): পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোন পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভিতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে। [ফাতওয়া শামী]।
১২. কপার-টি (Coper-T): কপার-টি বলা হয়, যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাযা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে। [ফাতওয়া শামী]।
১৩. সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation): সিরোদকার অপারেশন হল, অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশংকা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়।যেহেতু এতে কোন ঔষধ বা বস্তু রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থানে পৌঁছে না তাই এর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না। [ফাতওয়া শামী]।
১৪. ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage): ডি এন্ড সি হল, আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য Dilator এর মাধ্যমে জীবত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। [হেদায়া]।
১৫. এম.আর (M.R): এম, আর হল, গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আঁট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম,আর সিরিঞ্জ প্রবেশ করিয়ে জীবত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যারপর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। এতে মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয় তাহলে দিনের রোজা কাযা করতে হবে না। [ফতহুল কাদীর]।
১৬. আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram): আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোযা ভাঙ্গবে না। [হেদায়া]।
১৭. স্যালাইন (Saline): স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। [ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ]।
১৮. টিকা নেয়া (Vaccine) : টিকা নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। [আপকে মাসায়েল]।
১৯. ঢুস লাগানো (Douche): ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভিতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে এ জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান। [ফাতওয়া শামী]।
২০. ইনসুলিন গ্রহণ করা (Insulin): ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না । [জাদীদ ফিকহী মাসায়েল]।
২১. দাঁত তোলা: রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েয আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশী অথবা সমপরিমান রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। [আহসানুল ফতওয়া]।
২২. পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা : রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। [জাদীদ ফিকহী মাসায়েল]।
২৩. মিসওয়াক করা : শুকনা বা কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। চাই যখনই মিসওয়াক করা হোক না কেন। [ফাতওয়া শামী]।
২৪. মুখে ঔষধ ব্যবহার করা : মুখে ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ঔষধের অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙ্গবে না। [ফাতওয়া শামী]।
২৫. রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দেয়া: রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশী পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ। [ফাতওয়া শামী]।
২৬. ডায়াবেটিসের সুগার মাপা: ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। [ফাতওয়া শামী]।
২৭. নাকে ঔষধ দেয়া : নাকে পানি বা ঔষধ দিলে যদি তা খাদ্য নালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। [ফাতওয়া শামী]।
২৮. চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা : চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। [হেদায়া]।
২৯. কানে ঔষধ প্রদান করা : কানে ঔষধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় যে পানি কানে ঢুকে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানি গলায় চলে না যায়। [মাকালাতুল ফিকহীয়াহ]।
৩০. নকল দাঁত মুখে রাখা: রোজা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। [ইমদাদুল ফতওয়া]।
মির্যা গোলাম আহমদ কৃত অনুবাদ : “আমাদের মাহদীর সত্যায়নের জন্য দুটি নিদর্শন নির্ধারিত আছে। আসমান জমিন যখন থেকে সৃষ্টি হয় তখন থেকে এই দুটি নিদর্শন কোনো দাবীদারের সময় প্রকাশিত হয়নি। আর সেটি হচ্ছে মাহদী দাবীদারের সময় চন্দ্র তার গ্রহণের তিন রাত্রির প্রথম রাত্রিতে অর্থাৎ ১৩তম তারিখে গ্রহণ লাগবে। সূর্য তার গ্রহণের দিনগুলোর মাঝখানের দিনটিতে অর্থাৎ ২৮ তারিখে গ্রহণ লাগবে। যখন থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে কোনো দাবীদারের জন্য মতৈক্য হয়নি যে, তার দাবীর সময় রমাযানের উক্ত তারিখেই চন্দ্রগ্রহণ আর সূর্যগ্রহণ হয়েছেই।” (উর্দূ থেকে বাংলা অনুবাদ-রূহানী খাযায়েন ১১/৩৩০)।
সঠিক অনুবাদ : “নিশ্চয়ই আমাদের মাহদীর জন্য দুইটি নিদর্শন রয়েছে। আসমান জমিন সৃষ্টি হতে অদ্যাবধি এই দুটি নিদর্শন প্রকাশিত হয়নি। একটি হল, রমাযানের প্রথম রাত্রিতে চন্দ্রগ্রহণ লাগবে এবং দ্বিতীয়টি হল, রামাযানের অর্ধ-দিবসে সূর্য গ্রহণ লাগবে। অথচ যখন থেকে আল্লাহতালা আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে (অদ্যাবধি) এই দুটি নিদর্শন প্রকাশিত হয়নি।”
সংক্ষিপ্ত আলোচনা : সুনানু দারে কুতনি গ্রন্থে বর্ণিত এই বর্ণনাটি মারফূ (যার সনদ রাসূল সা. পর্যন্ত পৌঁছেছে এমন) তো নয়, কোনো সাহাবী থেকেও বর্ণিত হবার প্রমাণ নেই। এটি মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন নামক একজন ক্ষুদে তাবেয়ীর বক্তব্য হিসেবে কতেক অগ্রহণযোগ্য ও মিথ্যুক রাবীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন, এটি মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য রেওয়ায়েত। (দারে কুতনি, কিতাবুল ঈদাইন ক্রমিক নং ১৭৭৭)। ডাউনলোড লিংক। রিজাল শাস্ত্রের কিতাব ‘তাকরীবুত তাহযীব’ এবং ‘তাহযীবুত তাহযীব’ এর মধ্যে পরিষ্কার লিখা আছে যে,
قال ابن حبان: رافض يشتم الصحابة ويروي الموضوعات عن الثقات. قال أبو حاتم: منكر الحديث جدا ضعيف الحديث لا يشتغل به تركوه. وكذلك وهاه غير واحد منهم
অর্থাৎ ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) বলেছেন, এর বর্ণনাকারী আমর ইবনে শিমার একজন রাফেজি ছিল। সে সাহাবীদের গালমন্দ করত। সে বহু বিশ্বস্ত রাবীর নামে অনেক বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করত। ইমাম আবু হাতিম (রহ.) বলেছেন, এটি একটি মুনকার হাদীস ও খুবই দুর্বল হাদীস।
শায়খ নাসির উদ্দীন আল বানী (রহ.) কৃত ‘ছিফাতু সালাতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লি সালাতিল কুসুফ’ গ্রন্থেও বর্ণনাটি উল্লেখপূর্ব লিখা আছে যে, এর সনদ খুবই দুর্বল। ডাউনলোড লিংক। (খণ্ড নং ১, পৃষ্ঠা নং ১৮)।
আদম (আ.) এর ইহলৌকিক বয়স ছিল একহাজার বছর কিন্তু সেখান থেকে ষাট অথবা চল্লিশ বছর তিনি হযরত দাউদ (আ.)-কে দিয়ে দেন!
আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, কাদিয়ানীদের একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য-বিকৃত দাবী ও তার দালিলিক ও যুক্তিক খণ্ডন – হযরত আদম (আ.) আর নূহ (আ.) এর ইহলৌকিক দীর্ঘ আয়ুকাল (যথাক্রমে ৯৪০, ৯৫০ বছর) হতে ভিন্ন কোনো অর্থ উদ্দেশ্য কি? এই সম্পর্কে অত্র আর্টিকেল এর শেষে দেখুন!
হযরত আদম (আ.) এর ইহলোকিক আয়ুকাল :
ইবনে আক্বীলাহ আল মক্কী (রহ.) (মৃত. ১১৫০ হিজরী) বিরচিত (الزيادة والإحسان في علوم القرآن – محمد بن أحمد بن سعيد الحنفي المكيّ، شمس الدين، المعروف بابن عقيلة) ‘আয-যিয়াদাহ ওয়াল ইহসান ফী উলূমিল কুরআন‘ (খ-৭) এর মধ্যে লিখা আছে, ইমাম ইবনে কাসীর সংকলিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যে মারফূ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এবং আবূ হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক বয়স এক হাজার বছরের তথ্যটি লাওহে মাহফূজে লিপিবদ্ধ ছিল। কিতাবটির ডাউনলোড স্ক্যান কপি। উপরের স্ক্রিনশটটি দ্রষ্টব্য। এই সম্পর্কে সহীহ ও হাসান পর্যায়ের আরেকটি হাদীস এই রকম,
আবূ হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহতালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর মধ্যে প্রাণ দান করলেন, তখন আদম (আ.) হাঁচি দিলেন এবং আল্লাহতালার অনুমতিক্রমে তাঁর প্রশংসা করে ‘‘আলহামদুলিল্লাহ’’ বললেন। আল্লাহতালা তাঁকে বললেন, হে আদম! আল্লাহ তোমাকে রহম করুন। এখন তুমি ঐ উপবেশনকারী মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাছে যাও, যাঁরা বসে আছে। আর তাঁদেরকে বলো ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম’’ (তোমাদের প্রতি আল্লাহ শান্তি বর্ষণ করুন)। তিনি গিয়ে বললেন, ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম’’। মালায়িকাহ্ জবাবে বললেন, ‘‘আলাইকাস সালামু ওয়া রহমাতুল্লহ’’ (তোমার প্রতি আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে আসলেন। আল্লাহতালা বললেন, এটাই তোমার এবং তোমার সন্তানদের পারস্পরিক অভিবাদন। তখন আল্লাহতালা তাঁকে নিজের দু’হাত দেখিয়ে বললেন, তুমি এ দু’টির যে কোনো একটি পছন্দ কর। তখন তাঁর উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল। আদম (আ.) বললেন, হে প্রভু! আমি তোমার ডান হাতকে পছন্দ করলাম। আল্লাহতালার উভয় হাতই ডান হাত এবং কল্যাণকর। অতঃপর আল্লাহতালা তাঁর হাত খুলতেই দেখা গেল, তাতে আদম (আ.)-এর সন্তানগণ রয়েছে।
তখন আদম (আ.) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এরা কারা? আল্লাহতালা বললেন, এরা তোমার সন্তান। তখন দেখা গেল, প্রত্যেক ব্যক্তির আয়ুষ্কাল তাঁর দু’চোখের মাঝে অর্থাৎ- কপালে লিপিবদ্ধ আছে। তন্মধ্যে উজ্জ্বলতর এক ব্যক্তি রয়েছে। আদম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রভু! এ ব্যক্তি কে? আল্লাহতালা বললেন, এ ব্যক্তি তোমার অন্যতম সন্তান ‘‘দাউদ’’। তাঁর আয়ু আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। আদম (আ.) বললেন, ‘‘হে প্রভু! তাঁর আয়ু বাড়িয়ে দিন’’। আল্লাহতালা বললেন, আমি তো তাঁর এতটুকু আয়ুষ্কাল লিখে রেখেছি। আদম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! আমি আমার আয়ু হতে ষাট বছর দান করলাম। আল্লাহতালা বললেন, ‘‘ঠিক আছে, তুমি আর তোমার সন্তান দাউদ জানে’’ অর্থাৎ এটা তোমার ব্যাপার। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহতালার ইচ্ছানুযায়ী আদম (আ.) জান্নাতে বসবাস করেন। অতঃপর তাঁকে জান্নাত হতে বের করে দেয়া হল। আদম (আ.) নিজের বয়সের বছরগুলো গণনা করতে লাগলেন, (যখন তাঁর আয়ুষ্কাল নয়শ’ চল্লিশ বছর শেষ হয়ে গেল) তখন তাঁর কাছে মৃত্যুর মালাক (ফেরেশতা) আসলেন। আদম (আ.) তাঁকে বললেন, তুমি তো আগে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর আয়ুষ্কাল লেখা রয়েছে। মৃত্যুর মালাক বললেন, জ্বি-হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আপনার সন্তান দাঊদ (আ.)-কে ষাট বছর আয়ু দান করেছেন। তখন আদম (আ.) অস্বীকার করলেন। এ কারণে তাঁর সন্তানগণও অস্বীকার করে থাকেন এবং আদম (আ.) ভুলে গেছেন, তাই তাঁর সন্তানগণও ভুলে যায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেদিন হতে লিখে রাখতে এবং সাক্ষী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সুনানু তিরমিযী)[1]
এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, হযরত আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক বয়স ৪০ বা ৬০ বছর কম এক হাজার বছর। হাদীসের ভাষ্যমতে (وَقَدْ كَتَبْتُ لَهٗ عُمْرَهٗ) অর্থাৎ আমি তাকে আমার বয়স থেকে দিলাম। এর আসল অর্থ হল, বয়স বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকটে আবেদন করা। কারণ আল্লাহতালা ব্যতীত এটা কেউ করতে পারে না। এ হাদীসে ষাট বছর প্রদানের কথা উল্লেখ থাকলেও অন্য বর্ণনায় চল্লিশ বছর দেয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। ভিন্ন এ হাদীসের সমাধানে কোনো হাদীস বিশারদ বলেন যে, প্রথমে তিনি চল্লিশ বছর দিতে চেয়েছিলেন। পরে আরো বিশ বছর দিয়ে ষাট বছর হয়েছে। যেমন আল্লাহতালা মূসা (আ.)-কে প্রথমে ত্রিশ দিনের ওয়া‘দা দিয়ে আবার চল্লিশ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ১৪২)।
অথবা এটা বর্ণনাকারীর পক্ষ থেকে সন্দেহ হয়ে গেছে। তাই তিনি একবার চল্লিশ বছর বলেছেন এবং অন্যবার ষাট বছর বলেছেন। অথবা কখনো চল্লিশ বছরকে আসল বয়স এবং ষাট বছরকে দান বলেছেন। অথবা কখনো ষাট বছরকে আসল বয়স এবং চল্লিশ বছরকে দান বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহ.)।
হযরত আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক জীবন সম্পর্কে তো বললাম, এবার হযরত নূহ (আ.)-এর ইহলৌকিক জীবন সম্পর্কে আসি। ছানী আদম খ্যাত হযরত নূহ (আ.) ছিলেন আদমপুত্র হযরত শীষ (আ.)-এর বংশধর। যিনি সাড়ে নয়শত বছর জীবিত ছিলেন। পবিত্র কুরআন নিজেই এই সম্পর্কে বলছে যে,
অর্থাৎ “আর আমি (আল্লাহ) অবশ্যই নূহকে তাঁর কওমের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম একহাজার বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপর মহা-প্লাবন তাদের গ্রাস করল, এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল জালিম।” (সূরা আনকাবূত ২৯:১৪)।
কাদিয়ানীদের বর্তমান (বাংলাদেশী) ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল আউয়ালকে এই অকাট্য ও সার্বজনীন স্বীকৃত বিষয়গুলো সরাসরি অস্বীকার করতে দেখা গেছে। সে বলেছে, এ থেকে আক্ষরিক অর্থে দীর্ঘ কোনো আয়ুষ্কাল বুঝানো হয়নি, বরং এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, উনাদের (আদম, নূহ) শিক্ষা ও দাওয়াত পৃথিবীতে যথাক্রমে চল্লিশ বা ষাট বছর কম প্রায় এক হাজার বছরব্যাপী আর সাড়ে নয়শত বছরব্যাপী টিকে থাকা। এই ক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের অকাট্য দলিল-প্রমাণের মুকাবিলায় কাদিয়ানী আমীরকে মস্তিষ্কপ্রসূত বেশ কিছু দুর্বল যুক্তির অবতারণা করতেও দেখা গেছে, যা মূলত তাদের মির্যা তাহের আহমদের নানা তাবিল-কাসুন্দিরই চর্বিতচর্বন বৈ নয়।
আর এতে তাদের উদ্দেশ্য একটাই, ঈসা (আ.)-এর দ্বিতীয় আগমনী বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, তাদের ঐ সমস্ত রূপকের কাসুন্দি বিশেষকরে হযরত নূহ (আ.)-এর ক্ষেত্রে কিছুতেই হালে পানি পায় না। কেননা পবিত্র কুরআনের আয়াতটিতে স্পষ্টতই বলা হচ্ছে যে হযরত নূহ (আ.) নিজ গোত্রের মাঝে অবস্থান করেছিলেন পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর, মানে সাড়ে নয়শত বছর। পক্ষান্তরে নির্বোধ এই কাদিয়ানী আমীর এখানে ধরে নিলেন যে, নিজ গোত্রের মাঝে নূহ (আ.) অবস্থান করার অর্থ তাঁর দাওয়াত ও শিক্ষার প্রভাব সাড়ে নয়শত বছরব্যাপী পৃথিবীতে টিকে থাকা! হায় কত যে নিকৃষ্ট তাবিল!
আর যদি কাদিয়ানী নেতার ঐ যুক্তির সাথে তর্কের খাতিরে আমি একমত হই তাহলেও প্রশ্ন আসবে যে, তবে কি পৃথিবীতে ইবরাহীম (আ.)-কে নতুন শরীয়ত সহকারে হযরত নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের প্রভাব বর্তমান থাকাকালেই পাঠানো হল? অবশ্যই না। কারণ হযরত নূহ (আ.)-এর জন্ম হয়েছিল হযরত আদম (আ.)-এর ইন্তেকালের ১২৬ অথবা ১৪৬ বছর পরে। ইমাম আবু হাতিম ইবনে হাব্বান স্বীয় ‘সহীহ ইবনে হাব্বান’ গ্রন্থে একথা লিখেছেন। আর সহীহ বুখারীতে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে একটি বর্ণনায় রয়েছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন كان بين آدم ونوح، عشرة قرون অর্থাৎ আদমের ইহকালে পদার্পণ আর নূহ-এর জন্মগ্রহণ এই দুইয়ের মধ্যভাগে এক হাজার বছরের দীর্ঘবিরতি ছিল। এখন কাদিয়ানী আমীরের অহেতুক প্রশ্ন ‘আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক জীবন ৯৬০ বছরকে আক্ষরিক অর্থে নেয়া হলে তারই জীবদ্দশায় নূহ (আ.)-কেও তাঁর নিকট বাইয়েত নিতে হয়েছে মানতে হয়’– পুরাই হটকারিতা বৈ নয়!
আরো প্রশ্ন আসে, হযরত আদম (আ.)-এর উক্ত ৯৬০ বছরের দীর্ঘ আয়ুকাল হতে তাঁর শিক্ষা বা দাওয়াতের প্রভাবকাল সময় উদ্দেশ্য হলে তখন তিনি যে হযরত দাউদ (আ.)-কে নিজের আয়ু থেকেই চল্লিশ কিংবা ষাট বছর প্রদান করলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হল সেটিরও বা কী ব্যাখ্যা?
অধিকন্তু হযরত নূহ (আ.) সংক্রান্ত আয়াতটির প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে একজন সাধারণ মানুষও সহজে বুঝতে পারবে যে, সেখানে নূহ (আ.)-এর ইহলৌকিক আয়ুকাল নিয়ে কথা শেষ করেই বলা হচ্ছে যে, তারপর প্লাবন তাদের গ্রাস করলো। এখন যদি কাদিয়ানী আমীরের সস্তা যুক্তিগুলো কয়েক সেকেণ্ডের জন্য মেনে নিই তাহলেও ঐ হিসেব অনুযায়ী হযরত নূহ (আ.)-এর ইন্তেকালের ৭০০ বা ৮০০ বছর পরেই মহা প্লাবন সংঘটিত হয়েছিল বলে মানতে হয়! কিন্তু কোনো কাদিয়ানী কি মানবে এটা? কস্মিনকালেও নয়। মজার ব্যাপার হল, ইবলিশ শয়তানের ইহলৌকিক জীবনকে আল্লাহতালা কেয়ামত দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন দ্বারা এটিও সুস্পষ্ট প্রমাণিত। দেখুন, সূরা আ’রাফ আয়াত ১৫, সূরা হিজর আয়াত ৩৮। তাই কাদিয়ানী আমীর কি এখানেও উক্ত কাসুন্দি নিয়ে হাজির হয়ে বলবেন যে, এর দ্বারাও আক্ষরিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং ইবলিশ শয়তানের শিক্ষা এবং দাওয়াতের প্রভাবই বুঝানো উদ্দেশ্য! জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে!!
কাদিয়ানীদের মতে ঈসা (আ.)-এর ইহলৌকিক বয়স ১২০ বছর ছিল, এটি সঠিক নয় কেন?
কাদিয়ানীদের মতে ঈসা (আ.)-এর বয়স হয়েছিল ১২০ বছর! আর একথার প্রমাণ হিসেবে তারা একখানা হাদীসও উল্লেখ করে থাকে। তাদের জন্য আফসোস হল, তারা কখনো যাচাইও করে দেখেনি যে, তাদের উল্লিখিত হাদীসটি সূত্র এবং মতনের দিক থেকেও অথেনটিক কিনা? ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.)-এর উদ্ধৃতিতে কাদিয়ানীরা নানা সময় নানা কিছু পেশ করে থাকে। সেই হিসেবে উক্ত প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর (রহ.)-এর নিজেস্ব একটি বক্তব্য এখানে পেশ করতে চাই, তিনি (রহ.) তাঁর রচিত ‘আল জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান‘ (جامع المسانيد والسنن) গ্রন্থে (৩২৭০) লিখেছেন,
أن يكون عيسى بن مريم – عليه السلام – قد عُمر قبل رفعه مائة وستًّا وعشرين سنة، وهذا خلاف المشهور من أنه رفع وله ثلاث وثلاثون سنة،
অর্থাৎ ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর বয়স তাঁকে উঠিয়ে নেয়ার পূর্বে ১২৬ বছর ছিল মর্মে কথাটি সুপ্রসিদ্ধ মতের বিরোধী। কারণ প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, তাঁকে উঠিয়ে নেয়ার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল তেত্রিশ বছর। তাছাড়া শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহ.)ও পরিষ্কার করে লিখে গেছেন যে, এই ধরনের বর্ণনা সূত্রের বিচারে খুবই দুর্বল।
ইমাম বুখারী তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, لا يكاد يتابع فى حديثه অর্থাৎ ‘এর সনদে উল্লিখিত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উসমান নামীয় বর্ণনাকারীর হাদীসটির অনুসরণ করার মত কোনো গ্রহণযোগ্যতাই তার নেই।’ (আস-সিলসিলাতুয য’য়ীফাহ ৯/৪২৫; ক্রমিক নং ৪৪৩৪; শায়খ আলবানী রহ.)।
অনুরূপ আরও যারা উক্ত রাবী তথা বর্ণনাকারীর উপর জরাহ (আপত্তি) করেছেন, তাদের মধ্যে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (ফাতহুল বারী ৬/৩৮৪), ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে আসাকির, ইমাম যাহাবী ও ইমাম বাজ্জার প্রমুখ অন্যতম। স্ক্রিনশট দেখুন!
বলে রাখতে চাই, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে, যে হাদীস ইমাম বুখারীর কৃত শর্তের বিপরীত সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন খণ্ড ১৭ পৃষ্ঠা নং ১১৯-২০)।
এখন কি তারপরও ঐ ১২০ বছর ওয়ালা বর্ণনাটির চর্বিতচর্বণ করতে থাকবেন? নিজের উপর একটু তো ইনসাফ করবেন!
মজার ব্যাপার হল, উল্লিখিত স্কলারদের সবাই বলেছেন, ঈসা (আ.)-কে যখন উঠিয়ে নেয়া হয় তখন তার বয়স ছিল ৩৩ বছর। উল্লিখিত ১২০ বছর ওয়ালা বর্ণনা হেতু ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) লিখেছেন, যখন তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে তখন তাঁর বয়স কত ছিল তা নিয়ে মতবিরোধ হয়ে গেল। কারো মতে তেত্রিশ বছর আবার কারো মতে (এই বর্ণনার কারণে তাঁর ইহলৌকিক বয়স) ১২০ বছর। হাফেজুল হাদীস ইমাম ইবনে আসাকির (রহ.) লিখেছেন, বিশুদ্ধ কথা হল,
ان عيسى لم يبلغ هذا العمر
অর্থাৎ নিশ্চয়ই ঈসা এই বয়সে পৌঁছেননি। কিন্তু এরপরেও কাদিয়ানী সম্প্রদায় বলতেই থাকবে যে, না না; ঈসা (আ.)-এর ইহলৌকিক বয়স ১২০ বছরই হয়েছিল!
যেমন জনৈক কাদিয়ানী মতের অনুসারী জনাব Nasim Ahmed তাদের মধ্যে অন্যতম। যেজন্য আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, আপনি যদি ১২০ বছরের ঐ দুর্বল সূত্রের বর্ণনাটিকে চেপে ধরে বসে থাকতে চান, তাহলে নিচের প্রশ্নটির কী উত্তর?
প্রশ্ন হচ্ছে, ঐ ১২০ বছর ওয়ালা বর্ণনার শুরুতে কিন্তু এও উল্লেখ আছে, “লাম ইয়াকুন নাবিয়্যুন কানা বা’দাহু নাবিয়্যুন ইল্লা আ’শা নিছফা উমরিন আল্লাজী কানা ক্ববলাহু” (لم يكن نبى كان بعده نبى الا عاش نصف عمر الذى كان قبله) । অর্থাৎ ‘প্রত্যেক নবী তাঁর পূর্বের নবীর অর্ধেক আয়ুষ্কাল অবশ্যই পেয়েছেন (অনুবাদ, হামামাতুল বুশরা [বাংলা] ৩৬)।’
সে হিসেবে আমার প্রশ্ন হল, হযরত ইদরীস (আ:) এর পরেই হযরত নূহ (আ:)-এর আগমন হয়। আর হযরত ইদরীস (আ.)-এর বয়স হয়েছিল মাত্র ৮২ বছর। অপরদিকে নূহ (আ:)-এর বয়স ছিল ৯৫০ বছর। এখন ঐ ১২০ বছর ওয়ালা বর্ণনাটি যদি গ্রহণযোগ্যই হয় তাহলে সে হিসেবে হযরত নূহ (আ.)-এর বয়স কেন হযরত ইদরীস (আ.)-এর বয়সের অর্ধেক মাত্র ৪১ বছর হল না?
এভাবে প্রশ্ন করা শুরু করলে শেষ হবেনা। কারণ হযরত আদম (আ.) ১০৬০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন। এখন প্রত্যেক নবী তাঁর পূর্ববর্তী নবীর বয়সের অর্ধেক পেয়ে থাকার বর্ণনা সঠিক হলে তখন আদম (আ.)-এর বয়স লক্ষ নয়, বরং কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিচ্ছি, আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। সে হিসেবে উনার পূর্ববর্তী নবীর বয়স তাঁর দ্বিগুণ হতে গেলে তা কোনোভাবেই ১২৬ বছরের কম হতে পারবেনা। একই ভাবে তাঁরও পূর্ববর্তী নবীর বয়স তাঁর অপেক্ষা দ্বিগুণ ধরলে হবে ২৫২ বছর। এভাবে উপর দিকে যথাক্রমে ৫০৪ বছর, ১০০৮ বছর, ২০১৬ বছর, ৪০৩১ বছর, ৮০৬২ বছর দাঁড়াবে। একটা পর্যায়ে ১ লক্ষ বা ২ লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রাসূলগণের বয়স সীমা পেরিয়ে আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-এর বয়স কয়েক কোটি হয়ে যাবে কিনা? আফসোস! কাদিয়ানীরা কখনো এই সমস্ত অসঙ্গতি চিন্তাও করেনা!
ওহে কাদিয়ানীবন্ধু! এরপরেও কি নিজের সুস্থ মস্তিষ্কের সাথে বুঝাপড়া করবেনা?
মজার ব্যাপার হল, ঐ হাদীসটিকে যদি মির্যা সাহেবের মতে সহীহ ধরা হয় তাহলে কিন্তু মির্যা সাহেব আরো একবার মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হবেন। কেননা তখন একই প্রশ্ন মির্যা ক্ষেত্রেও আসবে। আর তা হল, এই জ্যামিতিক হিসাবে নবী দাবীদার খোদ মির্যার বয়সটিও হওয়া উচিত ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ৬৩ বছরের অর্ধেক অর্থাৎ ন্যূনতম ৩১ বছর। কিন্ত আফসোস এটাও সম্ভবপর হয়নি! বরং মির্যা কাদিয়ানী (১৮৩৯/৪০-১৯০৮) মারা যান ৬৮/৬৯ বছর বয়সে! তো সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন? মির্যা কাদিয়ানীর জন্ম তারিখ তারই রচনাতে দেখুন।
সত্য বলতে, কাদিয়ানীরা এর সঠিক উত্তর কখনো দেবেনা। কেননা এতে তাদের ১২০ বছর ওয়ালা অগ্রহণযোগ্য বিশ্বাসের কবর রচিত হবে! যাইহোক, এই ধরণের অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো কথা অন্তত আল্লাহর প্রেরিত পুরুষগণ কখনো বলবেন না, এমনটাই স্বাভাবিক। তাই বলা যায় যে, এটি প্রকৃতপক্ষে ঐ বর্ণনারই একজন রাবী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উসমানেরই নিজেস্ব ও বানোয়াটি ছিল। মূলত এর অসঙ্গতির কারণ এটাই।
কাদিয়ানী – মোল্লারা(!) নবুওয়ত শেষ বুঝাতে ‘খতমে নবুওয়ত’ কথাটি খুব বলে থাকে; তাহলে ‘খতমে কুরআন’ এর কী অর্থ? অথচ প্রতি রমাযানে হাজারো হাফেজে কুরআন ‘খতমে কুরআন’ করছেন!
মুসলমান – জবাবটা কি কাদিয়ানীদের প্রধান গুরু মির্যা গোলাম আহমদ এর রচনা থেকে দেব?
কাদিয়ানী – হুম, আচ্ছা দিন!
মুসলমান – মির্যা গোলাম আহমদ নিজেও প্রকাশ্যে নবুওয়তের দাবী করার পূর্বে (আনুমানিক ১৮৯৭ সালে) লিখেছে,
ان سب باتوں کو مانتا ہوں جو قرآن اور حديث کی رو سے مسلم الثبوت ہیں. اور سیدنا مولانا حصرت محمد مصطفیٰ صلى الله عليه وسلم ختم المرسلين کے بعد کسی دوسرے مدعی نبوت اور رسالت کو کازب اور کافر جانتا ہوں. میرا یقین ہے کہ وحی رسالت حضرت آدم صفی اللہ سے شروع ہوئی اور جناب رسول اللہ محمد مصطفیٰ صلی اللہ علیہ و سلم پر ختم ہو گئی
(উচ্চারণ) “উন সব বাতূ কো মানতা হোঁ যূ কুরআন অওর হাদীস কি রো ছে মুসাল্লামুছ ছবূত হেঁ অওর সাইয়েদানা ওয়া মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতমুল মুরসালীন কে বা’দ কেসি দোসরে মুদ্দায়ীয়ে নবুওয়ত অওর রেসালত কো কাজিব অওর কাফের জানতা হোঁ। মেয়েরা একীন হে, কে ওহীয়ে রেসালত হযরত আদম ছফিউল্লাহ চে শুরু হুয়ি অওর জনাবে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফর খতম হো গি।”
অনুবাদ, কুরআন হাদীস দ্বারা যেসব বিষয় দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত আমি সেসব বিষয় মান্য করি। সায়্যেদিনা মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতমুল মুরসালিন)’র পরে কেউ নবুওয়ত আর রিসালতের দাবি করলে সে মিথ্যাবাদী ও কাফের। আমার ইয়াক্বিন (বিশ্বাস), ওহী এবং রেসালত ছফিউল্লাহ হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়ে জনাব রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপর সমাপ্ত হয়ে গেছে। (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩০-৩১; উর্দূ এডিশন ও অনলাইন ভার্সন)।
মুসলমান – মির্যার উপরিউক্ত রচনায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, ওহী-রেসালাত হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু এবং মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) পর্যন্ত এসে শেষ বা সমাপ্ত।
আর এটাকেই এককথায় ‘খতমে নবুওয়ত’ বলা হয়। অর্থাৎ নবুওয়তের ধারাক্রম মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) পর্যন্ত এসে শেষ বা সমাপ্ত। এবার আসি ‘খতমে কুরআন’ নিয়ে।
‘খতমে কুরআন’ এর সাধারণ অর্থ হচ্ছে কুরআন পাঠের সমাপ্তি। আরেকটু সহজ করে বলছি, যখন কেউ পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সূরার মধ্য হতে সূরা ফাতেহা থেকে শুরু করে সর্বশেষ সূরা—সূরা আন নাস পর্যন্ত এসে পৌঁছে তখন তাকে ‘খতমে কুরআন’ বা কুরআন পাঠের শেষ বা সমাপ্তি বলা হয়।
এখন প্রশ্ন হল, ‘খতমে কুরআন’ এর পরেও কি ভিন্ন ধরণের কথিত জিল্লি বুরুজি খতমের নতুন কোনো ধারণা থাকতে পারে? অবশ্যই না। তাহলে ‘খতমে নবুওয়ত’ অর্থাৎ ওহীয়ে নবুওয়তের ক্রমধারা শেষ বা সমাপ্তির পরেও মির্যায়ী উম্মতেরা ভিন্ন ধরণের কথিত জিল্লি বুরুজি নবুওয়তের নতুন কোনো ধারণা কোত্থেকে আমদানি করে?
আমি জানিনা, কাদিয়ানীরা খতমে কুরআন এর কনসেপ্ট দিয়ে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর বুনিয়াদি শিক্ষার বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে কোন যুক্তিতে?
বলাবাহুল্য, প্রতি রমাযানে হাজারো হাফেজে কুরআন ‘খতমে কুরআন’ করার সাথে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর সম্পর্ক ঠিক সেভাবেই যেভাবে উপরে পেশ করা হয়েছে। কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ এইজন্য যে, ‘খতমে কুরআন”-কে তারা যে আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর মুখোমুখি করে দাঁড় করতে চাচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ হাস্যকর। কেননা ‘খতমে কুরআন’-এর সম্পর্ক উম্মাহার আমলের সাথে, যার ধারাক্রম চিরতরে রুদ্ধ—এভাবে কোথাও বলা নেই। অপরদিকে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর বিষয়টির সম্পর্ক ঈমানীয়তের সাথে। আর সেটি রাসূল (সা.)-এর পবিত্র বাণী لا نبى بعدى (আমার পরে আর কোনো নবী নেই) থেকেই চয়িত। অসংখ্য হাদীস দ্বারা সেটির ধারাক্রম চিরতরে রুদ্ধ—এভাবেই বলা আছে। সুতরাং দুটি দুই জিনিস। খতমে নবুওয়ত এর উপর ২০টি সহীহ বর্ণনা – পড়া যেতে পারে।
আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন।
জনৈক কাদিয়ানীর প্রশ্ন, আপনি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দিন, সব সমস্যার সমাধান হবে। শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ.) নবী হয়ে আসবেন কি না? উত্তর এখানে