আমি একজন সাধারণ শিক্ষিত হয়ে কাদিয়ানীদের সাথে ডিবেট করব কিভাবে?

0
আমি একজন সাধারণ শিক্ষিত হয়ে কাদিয়ানীদের সাথে ডিবেট করব কিভাবে?

একজন জেনারেল শিক্ষিত ও দ্বীনি ভাইকে তাঁর আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আমার ব্যক্তিগত গাইড লাইন :

তিনি :

আমি পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক (ডেন্টিস্ট)। ইসলাম নিয়ে জানার ও পড়ার আগ্রহ প্রবল। অবসর সময় যেটুকু পাই তাতে কিছুটা দেওয়ার চেষ্টা করি। গতকাল আমার চেম্বারে একজন পেশেন্ট পাই যার সাথে আমার ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক প্রায় ৫-৬ বছর। আগে কখনো এটা অনুভব করিনি বা বুঝিনি যে ওনি কাদিয়ানী বা ভিন্ন আকিদার। যাহোক, হঠাৎ ওনি নিজ থেকে আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন ঈসা (আ) জীবিত নাকি মৃত? সরাসরি উত্তরে যা বলেছি তা হলো এই যে, ঈসা (আ) পৃথিবীতে আসবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন এটাই সত্য এবং পবিত্র কোরআন তাই ইঙ্গিত করে। ওরা তো তা বরাবরই অস্বীকার করে বলে, ঈসা (আ) মৃত। কাজেই আসবার প্রশ্নই উঠেনা। পরে আমি বির্তক এড়িয়ে রোগী দেখায় মনোযোগী হই। রোগী শেষ করে দেখি আমার চেম্বারে ওয়েটিং রুমে ওনি ফোন করে ওনাদের ঈমামকে নিয়ে এলেন এই বিষয়ে ডিবেট করতে যা ওই মুহুর্তে আমি মোটেও তা করতে প্রস্তুত নয়, কারণ তাদের বিষয়ে আমার জানাশোনা কম। পরে আমার কাছ থেকে ব্যক্তিটি আগামী শুক্রবার রাত ১০ টা বসবেন বলে সময় চান। আর আমি পড়াশোনা করে এই বিষয়ে দলিল পেশ করবো বলে সময় দি। এখন এই বিষয়ে আপনার জানাশোনা কোনো বির্তাকিক কি আছেন যে কিনা চট্টগ্রামে ২ নং গেইটের আশেপাশে থাকেন বা দাওয়াত করে আনা যাবে। জাযাকাল্লাহ খাইরান।

আমি :

আমার সাথেও একবার ওদের ৪ জন মু’আল্লিম ডিবেটে বসেছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, তর্কের খাতিরে ধরুন যে, ঈসা (আ.) জীবিত নেই। এখন তাই বলে কি মির্যা কাদিয়ানী হাদীসে বর্ণিত সেই ঈসা (আ.) হয়ে যাবেন? এভাবে ঈসা মসীহ হওয়ার দাবী তো বাহায়ী জামাতের বাহাউল্লাহও ১৮৬৩ সালের দিকে করে ছিল। সেও মির্যা কাদিয়ানীর মতই ‘বাহায়ী জামাত’ প্রতিষ্ঠা করে গেছে। বর্তমানে তারা পৃথিবীর প্রায় ২১৮ টি দেশে আছে। তারা সংখ্যায় ৭০ লাখেরও বেশি। অনলাইন থেকে উইকিপিডিয়া (জনপরিসংখ্যান) দেখুন। এখন এরকম ভাবে ঈসা বা ‘রূপক ঈসা’ দাবীর যৌক্তিকতা থাকলে বাহাউল্লাহ ইরানী সম্পর্কে কী বলবেন? বাহাউল্লাহ একই সাথে নবী রাসূল খোদা যেমন দাবী করেছিল, তেমনিভাবে এগুলো মির্যা কাদিয়ানীও করে গেছেন। কাজেই দুইটাই সমানে সমান। আগে এর সমাধান কী হবে বলুন! (এভাবে প্রশ্ন রাখবেন)।

বলে রাখা জরুরি, মসীহ মওউদ দাবীকারী বাহাউল্লাহ ইরানী (১৮১৭-১৮৯২) নবী রাসূল দাবী করার পর আরও প্রায় চল্লিশ বছর বেঁচেছিলেন। নিচে কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ দৈনিক পত্রিকা আল হিকাম (তাং ১৭-১১-১৯০৪, পাতা নং ১৯) স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।

দৈনিক পত্রিকা আল হিকাম

তিনি : জ্বী, আসলে তাদের বিষয়ে আমার জানাশোনা একেবারেই কম। তাই গত রাতে আপনার পেইজ এবং ওয়েবসাইট থেকে অনেক লিখাই পড়ার চেষ্টা করি।

আমি : ওরা আপনার নিকট মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল আর খোদা দাবীর প্রমাণ চাইলে এই লিংকটি ওপেন করে দেখাবেন (ক্লিক)। আর এই ভিডিও ৪টিও (যদি প্রয়োজন হয়) প্লে করে দেখাবেন। যেমন, কাদিয়ানীর নবী দাবী (সিরিজ ১) (ইউটিউব)
কাদিয়ানীর নবী দাবী (সিরিজ ২) (ইউটিউব)
কাদিয়ানীর নবী দাবী (সিরিজ ৩) (ইউটিউব)
কাদিয়ানীর নবী দাবী (সিরিজ ৪) (ইউটিউব)

আর আপনি এই সিরিয়ালে কথা অব্যাহত রাখবেন। আপনি বরাবরই একটা কথা বলবেন, সেটি হচ্ছে আমি একজন সাধারণ মানুষ, আলেম নই (আবার বিজ্ঞ ও গবেষক আলেম ছাড়া সব সময় সব ধর্মীয় বিষয়ে সলিউশন দেয়া সম্ভবও হয়না), সুতরাং আমি আপনাদের সাথে ইলমি (একাডেমিক) আলোচনা করব না। আমি সাধারণ জ্ঞানে যা বুঝি সেই আলোকেই আপনাদেরকে কিছু প্রশ্ন করব। আর হ্যাঁ, দরকার হলে আমি প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী সাহেবকে নিয়ে আপনাদের সাথে বসার ব্যবস্থা করব, যদি আপনারা রাজি থাকেন এবং লিখিতভাবে ডিবেটে বসার প্রতিশ্রুতি দেন। (এভাবে কথা বলে আপনি তাদেরকে নিচের প্রশ্নগুলো করবেন)।

তিনি : ইনশাআল্লাহ, অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা; মুহতারাম!

আমি : প্রশ্নগুলো করবেন এভাবে। এই যে এখানে কতগুলো আকিদার বিষয়ে আপনাদের বললাম, এগুলো কি মুসলমানদের আকিদা (বিশ্বাস) হতে পারে? অথচ আপনারা এসব আকিদা পোষণ করে ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছেন। (নিচে স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)।

আমার রচনাসমগ্র সিলেক্টিভ বই থেকে

ওরা এগুলো প্রমাণ করতে চাইলে বলবেন যে, বইগুলো যদি আপনাদেরই হয় তাহলে আপনারা বইগুলো আমার নিকট নিয়ে আসুন। আমি প্রয়োজনে প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী সাহেবকে সাথে নিয়ে আপনাদের সাথে আবার বসব, ইনশাআল্লাহ। আর যদি বইগুলো নিয়ে না আসেন কিংবা পুনরায় না বসেন তাহলে একদম দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, আপনাদের সম্পর্কে আমি যা যা উত্থাপন করলাম তার সবই সত্য এবং বাস্তব, আপনারা যে সত্য নন; সেটা প্রকারান্তরে আপনারাই প্রমাণ করে দিলেন।

তিনি : অসংখ্য ধন্যবাদ, মুহতারাম। আমি আপনার পেইজ থেকে গত রাতে অনেক গুলো আর্টিকেল পড়েছি। মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধ কথার সিরিজ ১ থেকে ৪২ পর্যন্ত আমি পড়েছি আর আজকে প্রিন্ট করে নেব।

আমি : মাশাআল্লাহ। আপনাকে তারা বরাবরই ঈসা (আ.) জীবিত নাকি মৃত—এই টপিকে টেনে নিতে চাইবে। কারণ এদের শিক্ষার হাতেগড়ি এই কন্টেন্ট পর্যন্তই। এর বাহিরে এদের পুটলিতে আর কোনো জমাজাটি নেই। তাছাড়া এদের বেশিভাগই একদম নিম্নবিত্ত থেকে উঠে আসা ও সাধারণ শিক্ষিত। এদের ইমাম মাহদী, নুযূলে ঈসা, আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত ইত্যাদি কনসেপশন আগাগোড়াই কাদিয়ানী সিলেবাসের মধ্যেই বাক্সবন্দী। ইসলামের মূলধারার কোনো তাফসীর, হাদীস, সাহিত্য বা উসূল সংক্রান্ত কোনো কিতাবই তারা পড়ে দেখেনি। তাই তাদের সাথে ইলমি (একাডেমিক) বিতর্ক মূল্যহীন। যেজন্য এদের সাথে এদেরই প্রকাশনীর বইপুস্তক দেখিয়ে কথা বলতে হবে। আপনি তাদেরকে যুক্তি দিবেন, মনে করুন আমি (তর্কের খাতিরে) মেনে নিলাম যে, ঈসা (আ.) মারা গেছেন, তিনি আর আসবেন না। আপনাদের বিশ্বাস মতে একজন রূপক ঈসাই আসবেন। কিন্তু আমি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মানলাম না, বরং আমি মনে করি যে, সে একজন মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এখন আপনারা কি আমাকে ঈসা (আ.) মারা গেছেন—এমন বিশ্বাসের কারণেই মুসলমান বলে স্বীকৃতি দেবেন?

  • বলে রাখা জরুরি, ঈসা (আ.) জীবিত নাকি মৃত—এমন বিশ্বাস ইসলামের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ই নয়। আর একথা স্বয়ং মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই তার রচনায় লিখে গেছেন। (দেখুন, আহমদী ও গয়ের আহমদীদের মধ্যে পার্থক্য, পৃ-১)। ঢাকা বকশিবাজার (কাদিয়ানী আস্তানা) থেকে আপনারাই বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। নিচে বইটির প্রচ্ছদ এবং সংশ্লিষ্ট পাতাটির স্ক্যানকপি দেখুন!
আর্টিকেল

যাইহোক এখন আপনাদের উত্তর যদি এমন হয় যে, শুধু ঈসা (আ.) মারা গেছেন বলে বিশ্বাস করলে হবেনা, বরং মির্যা সাহেবের দাবীগুলোর প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক; নইলে আপনি অমুসলিম হিসেবে গণ্য হবেন (মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ওহী ইলহামের সংকলন তাযকিরাহ পৃ-৫১৯, স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)! তাহলে তো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ঈসা (আ.)-এর বাঁচা মরার বিষয়টি মূল আলোচ্য বিষয় না, বরং মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে স্বীকৃতি দেয়া! যদি তাই হয় তাহলে সর্বপ্রথম মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কথা বলুন! আমি দেখতে চাই, তিনি ন্যূনতম একজন সত্যবাদীও ছিলেন কিনা? আর তিনি যা যা দাবী করে গেছেন তিনি সেসব কিছু দাবী করার মত যোগ্যতাও রাখতেন কিনা?

তাযকিরাহ পৃ-৫১৯, চতুর্থ এডিশন, মূল মির্যা কাদিয়ানী।

তিনি : মাশাআল্লাহ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা! আল্লাহ এইজন্য আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন!

আমি : শুকরিয়া! তারপর আপনি মির্যার এই মিথ্যাচার গুলো পেশ করবেন। তার আগে দুইপক্ষ যার যার আলোচনার জন্য নির্ধারিত সময় নিয়ে নেবেন, কেউ কারো নির্ধারিত সময় সাইড-টক করবেনা। ত্রিশ মিনিট সময় হাতে নেবেন। আর মিথ্যাচারগুলো সামনে পেশ করতে থাকবেন। নিচের লিংকগুলো ওপেন করবেন।

প্রথমে দেখে নিন আল্লাহ’র প্রতি মিথ্যা আরোপকারী সম্পর্কে মির্যার সুস্পষ্ট ফতুয়া

আল্লাহর নামে মুসলেহ মওউদ স্বরূপ একটি পুত্র সন্তানের মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী (মিথ্যা-১)

মির্যা কাদিয়ানী নিজের বয়স নিয়ে আল্লাহর নামে মিথ্যাচার (মিথ্যা-২)

মির্যার ৫টি মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী (মিথ্যা-৩)

পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যার মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী (মিথ্যা-৪)

হাদীসের নামে মির্যা কাদিয়ানীর ডজনখানেক জঘন্য মিথ্যাচার (মিথ্যা-৫)

বাইবেলের তিনটি পুস্তকের নামে মির্যার মিথ্যা উদ্ধৃতি (মিথ্যা-৬)

শায়খ সারহেন্দী (রহ.) এর নামে একই বক্তব্য দুই জায়গায় দুইরকম (মিথ্য-৭)

মসীহ’র রূহানীভাবে আসার কথা নাকি বাইবেলে এসেছে! (মিথ্যা-৮)

হযরত ইউনুস (আ.)-এর নামে জঘন্য মিথ্যাচার (মিথ্যা-৯)

কাশ্মীরের শ্রীনগরে সমাহিত ইউজে আসেফকে ঈসা (আ.) সাব্যস্ত করতে মির্যার যত ধরনের মিথ্যা আর ধোকাবাজি! (মিথ্যা-১০)

এরপর মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধী কথার বাক্সটি খুলবেন। আমার সংগৃহীত প্রায় ৪২টি স্ববিরোধ কথার প্রমাণ পেশ করবেন। লিংকটি ওপেন করবেন।

তারপর মির্যা কাদিয়ানী একজন সিজোফ্রেনিয়া, হিস্টিরিয়া এবং মৃগী রোগীও ছিল, ব্যাপারটির প্রমাণ পেশ করবেন। লিংকটি ওপেন করবেন।

সর্বশেষে কথার পরিসমাপ্তি করে বলবেন, যে ব্যক্তির জীবন চরিত্র এত নিম্নমানের, মিথ্যা প্রতারণা যার নিত্যনৈমিত্তিক স্বভাবের অংশ, আবার একজন সিজোফ্রেনিয়া (মস্তিষ্ক বিকৃত, পাগল) রোগীও সে আর যাইহোক না কেন, অন্তত আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত কেউ হতে পারেনা। কেননা মিথ্যাবাদীর প্রতি স্বয়ং আল্লাহই লানত দিয়ে রেখেছেন। তাহলে বান্দার সংশোধনের জন্য সেই আল্লাহ একজন মিথ্যাবাদীকে কেন মনোনীত করবেন? আর একজন মিথ্যাবাদীর কথায় আমরাও বা কিভাবে আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারি? সে তো শয়তানের কথাকেও আল্লাহর পক্ষ থেকে বলে চালিয়ে দিতে পারে, তাই নয় কি? এই যে পবিত্র কুরআনও একই কথা বলছে। অর্থাৎ মিথ্যাবাদী আর পাপীষ্ঠ যারা তাদেরকে শয়তানই নানা বিষয়ে প্ররোচনা দিয়ে থাকে, যা তারা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে মনে করে ধোকা খায়। যেমন, আল্লাহতালা আয়াত নাযিল করেছেন, ہَلۡ اُنَبِّئُکُمۡ عَلٰی مَنۡ تَنَزَّلُ الشَّیٰطِیۡنُ অর্থ, আমি তোমাদেরকে জানাব কি, কার নিকট শয়তান অবতীর্ণ হয়? تَنَزَّلُ عَلٰی کُلِّ اَفَّاکٍ اَثِیۡمٍ অর্থ, ওরা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের নিকট। (সূরা আশ-শু’আরা ২৬:২২১-২২)। সংক্ষিপ্ত তাফসীর : কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে শয়তানের কোনো হাত নেই। কারণ শয়তান তো মিথ্যুক এবং পাপিষ্ঠদের (জ্যোতিষী, গণক ও নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার প্রভৃতিদের) নিকট আসে যায়, নবী ও নেককার লোকেদের নিকট আসে না (তাফসীরে আহসানুল বয়ান)।

তারপর অপেক্ষা করতে থাকবেন, মির্যায়ী/কাদিয়ানী মতের অনুসারী ডিবেটাররা আপনার প্রশ্নের কী উত্তর দেন!

(অসমাপ্ত)

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here