Home Blog Page 27

মুসলিমরা উটের প্রস্রাব কেন পান করে? এতে কি শেফা রয়েছে?

0

উত্তরদাতা :

প্রশ্নকর্তার প্রশ্নটাই অমূলক ও বিভ্রান্তিকর। কেননা কোনো সুস্থ্য-সবল মুসলিম জেনে-বুঝে কখনো উটের প্রস্রাব পান করেনা, করতে কাউকে উৎসাহিতও করেনা। বরং ইসলামের উপর এধরণের বেশিরভাগ আপত্তি অগভীর এবং অস্বচ্ছ, বিদ্বেষ মূলক এবং যাচাই-বাছাই বিহীন। আসুন, জবাবটা নিন।

  • রাসূল (সা.)-এর হাদীস সমূহকে সামনে রাখলে নিচের বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে যে,

১। হাদীসের কোথাও মুসলমানদেরকে উটের প্রস্রাব পান করতে বলা হয়নি, বরং উটের প্রস্রাব পান করতে চাওয়ায় নির্দিষ্ট একটি রোগাক্রান্ত সম্প্রদায়কে সাময়িক সময়ের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছিল মাত্র। এই সংক্রান্ত সবগুলো বর্ণনা দেখলে এটাই প্রতীয়মান হবে।

২। সুস্থ্য কাউকে নয়, বরং নির্দিষ্ট একটি অসুস্থ সম্প্রদায়কে রোগমুক্তির জন্য স্রেফ প্রতিষৌধক হিসেবেই তা পান করতে অনুমতি দিয়েছিলেন।

৩। ঐ সম্প্রদায়টি মুসলিম ছিল না, তবে ইসলাম গ্রহণ করার আগ্রহ জানিয়েছিল কিন্তু বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করার পর পরবর্তীতে মুরতাদ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটায় বলা যাচ্ছে যে, ঐ সম্প্রদায়টি মূলত মুনাফিকই ছিল।

৪। অমুসলিম সম্প্রদায়টি ইসলাম গ্রহণের আর্জি নিয়ে মদীনায় রাসূল সা.-এর নিকট এসে নিজেদের অসুস্থতার অভিযোগ করে উটের প্রস্রাব পান করতে আগ্রহ পেশ করায় রাসূল সা. তাদেরকে সেটি দুধের সাথে মিশিয়ে পান করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন শুধুমাত্র রোগের প্রতিষৌধক হিসেবে, সাধারণভাবে ও নিঃশর্তভাবে নয়।

৫। উটের প্রস্রাব পান করার উক্ত পরামর্শ সাধারণ কোনো বিধান বা উদ্বুদ্ধমূলক বিষয় ছিল না, শুধুমাত্র সময়সাপেক্ষ ও নির্দিষ্ট একটি রোগাক্রান্ত সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ভিনদেশী ছিলেন এবং মদীনার আবহাওয়ার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে ব্যর্থ ছিলেন। যেজন্য ফোকাহায়ে কেরামদের প্রায় সকলেই উটের মুত্র বা প্রস্রাব পান করাকে শরীয়তের অন্যান্য বিধিমালার আলোকে নিষিদ্ধ বলেই ফতুয়া (রায়) প্রদান করে গেছেন। যাদের মধ্যে ইমামে আযম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী প্রমুখ অন্যতম।

উপরে কয়েকটি পয়েন্টে কিছু জবাব দিলাম, এবার একটু নাতিদীর্ঘ জবাবে আসি,

প্রথমে রাসূল সা.-এর একটি হাদীস আপনাকে শুনাব। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَهْطًا، مِنْ عُكْلٍ ثَمَانِيَةً قَدِمُوا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَاجْتَوَوُا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، ابْغِنَا رِسْلاً‏.‏ قَالَ ‏ “‏ مَا أَجِدُ لَكُمْ إِلاَّ أَنْ تَلْحَقُوا بِالذَّوْدِ ‏”‏‏.‏ فَانْطَلَقُوا فَشَرِبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا حَتَّى صَحُّوا وَسَمِنُوا، وَقَتَلُوا الرَّاعِيَ، وَاسْتَاقُوا الذَّوْدَ، وَكَفَرُوا بَعْدَ إِسْلاَمِهِمْ

অর্থ, উকল নামক গোত্রে আট ব্যক্তির একটি দল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলো। মদীনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা বরং সাদকার উটের পালের কাছে যাও। তখন তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর প্রস্রাব ও দুধ পান করে সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। তারপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাকিয়ে নিয়ে গেল এবং তারা মুরতাদ হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮০৯; ইফা)।

এই হাদীসের দিকে লক্ষ্য করুন, রাসূল (সা.) তাদেরকে উটনীর প্রস্রাব পান করতে নিজ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই পরামর্শ দেয়ার উল্লেখ নেই। ওরা নিজেরাই বরং স্বেচ্ছায় উটনীর প্রস্রাব এবং দুধ এক সাথে পান করে এবং সেখানেই তাদের প্রতিষৌধক রয়েছে বলে বিশ্বাস করেছিল। এভাবে এই সংক্রান্ত সবগুলো হাদীস একত্রিত করে মোটের উপর চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, রাসূল সা. নিজ থেকে প্রস্রাব পান করতে বলেননি, বরং ওরা পান করতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তিনি (সা.) হয়ত বা তাদেরকে একটি নিয়ম মেনে অনুমতি দিয়েছিলেন মাত্র। নিয়মটি নিম্নরূপ,

  • সদকার উটনীর প্রস্রাব।
  • দুধের সাথে মিশিয়ে।
  • শুধু রোগের আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন মাফিক।

বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? এবং ইসলাম বিরুধীদের অপপ্রচারের জবাবে মুসলিম গবেষকরা কী বলে?

ইসলাম বিরোধী ওরিয়েন্টালিস্টরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বলে থাকে যে, “দেখ দেখ, তোমাদের নবী উটের প্রস্রাব পান করতে বলেছে। তোমাদের নবী কত বাজে আর অবৈজ্ঞানিক কথা বলল!” এবার তাদের এসমস্ত কাটছাঁট ও খন্ডিত বক্তব্যের বিপরীতে আমরা যুক্তি দিয়ে বলতে পারি যে,

রাসূল (সা.) শুধু শুধু উটের প্রস্রাব পান করতে বলেননি, বরং রোগের প্রতিষৌধক হিসেবে দুধের সাথে মিশিয়ে কেউ পান করতে চাইলে তখন হয়ত বা অনুমতি দিয়েছিলেন, ব্যাস এটুকুই। এছাড়া বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনার চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ ‘আল কানুন ফিত-তিব’ (القانون فى الطب) ১৬ শতক পর্যন্ত মুসলিম ও পশ্চিমা বিশ্বের মেডিক্যালগুলোতে পড়ানো হতো। সে গ্রন্থে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্যে উটের প্রস্রাবকে অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে ওষুধ তৈরি করার নিয়মাবলী দেয়া হয়েছে। সে নিয়ম কেবল মুসলিম বিশ্ব নয়, পশ্চিমা বিশ্বেও গত তিন-চার’শ বছর আগে প্রচলিত ছিলো। ইবনে সীনার চিকিৎসা গ্রন্থ ‘আল কানূন‘ এর খন্ড ৩ পৃষ্ঠা নং ১৮০ দেখুন, তিনি লিখেছেন, وقد جُرِّبَ بول الجمل الأعرابي، والمعقود منه ضماداً ومرهماً ومخلوطاً به، فكان نافعاً অর্থ, আরবীয় উটের প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তার মিশ্রণ ঘটিয়ে মলম আর মালিশের মেডিসিন তৈরির কাজ সম্পন্ন করা গিয়াছে। আর তাতে উপকারিতাও রয়েছে।

এমনকি এই আধুনিক যুগে এসেও আমেরিকার নাসা সহ জার্মান, জাপান, চীন, ভারতের মতো বিভিন্ন দেশে মেডিক্যালের একাডেমিক জার্নাল ও বইয়ে উটের প্রস্রাব নিয়ে রিসার্চ হচ্ছে; এবং তারা বলছেন যে, প্রস্রাবকে মেডিসিন হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে ও এতে বহু রোগের প্রতিষৌধক রয়েছে। এ সম্পর্কে এটিও দেখা যেতে পারে, ক্লিক করুন।

সুতরাং, উটের প্রস্রাবকে ওরিয়েন্টালিস্টরা যেভাবে অযৌক্তিক ও বর্বর আকারে উপস্থাপন করে ইসলামের নবীকে আক্রমণ করছে, তা সম্পূর্ণ অবিচার ও অন্যায়। নবী করীম (সা.) নিজ থেকে প্রস্রাব পান করতে যদি বলতেনও তবু এই সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলার কোনোই সুযোগ নেই। দুঃখের বিষয় যে, হাদীস বিশেষজ্ঞ পূর্ববর্তী স্কলারদের ব্যাখ্যাগুলো যাদের পড়াশোনা নেই তারাই মূলত হাদীসগুলোর উপর ভাসা ভাসা কিংবা স্বল্প পরিসরে জ্ঞান রাখার কারণেই বিভ্রান্ত হয়ে থাকে এবং হাদীস অস্বীকারকারীদের চটকদার কথাবার্তায় ধোকা খাচ্ছেন, হাদীসকে অস্বীকার করার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্তেও ভুগছেন! আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

কোরা ব্লগ থেকে

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আল্লাহ’র জন্য হাত পা চেহারা সাব্যস্ত করা প্রসঙ্গে

আল্লাহর জন্য হাত পা চেহারা ইত্যাদি সাব্যস্ত করা নিয়ে স্কলারশিপ ইসলামি বিদ্ধানগণের ফিকহ ও প্রাধান্যযোগ্য মতটি কেমন?

লিখেছেন শায়খ ইজহারুল ইসলাম

প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কনসেপ্ট মনে রাখতে হবে।

১। আল্লাহ তায়ালা সব ধরণের অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে মুক্ত। অঙ্গ-প্রতঙ্গের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র।

২। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি দেহ ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশিষ্ট নন। সৃষ্টি যেমন বিভিন্ন অংশ মিলে গঠিত হয়, আল্লাহ তায়ালা এধরণের অংশ অংশ মিলে গঠিত হওয়ার ধারণা থেকে মুক্ত। ছোট বা বড় কোন ধরণের অংশের ধারণা সম্পূর্ণ তাউহীদ পরিপন্থী ও কুফুরী।

৩। কুরআন ও সুন্নাহের কিছু কিছু শব্দ আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যেগুলো সাধারণত: অংশ বা অঙ্গ বোঝায়। এগুলোর বিষয়ে আহলে সুন্নতের সর্বসম্মত ঐকমত্যপূর্ণ মতামত হল, এগুলো আল্লার ক্ষেত্রে অংশ বা অঙ্গ প্রমাণ করে না। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর জন্য অংশ বা অঙ্গ সাব্যস্ত করা সুস্পষ্ট কুফুরী।

যেমন, আল্লাহর রং (সিবগাতুল্লাহ), আল্লাহর চেহারা(ওয়াজহুল্লাহ), আল্লাহর হাত (ইয়াদুল্লাহ)।

  • প্রশ্ন: এগুলো থেকে আল্লাহর অংশ বা অঙ্গ সাব্যস্ত করা যদি কুফুরী হয়, তাহলে পবিত্র কুরআনে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কেন?

উত্তর: পবিত্র কুরআন যেহেতু আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং আরবী ভাষার অলংকার খুবই উচ্চাঙ্গের, এজন্য পবিত্র কুরআন অলঙ্কারের শাস্ত্রের দিক থেকে সবার উপরে।

ভাষা ও সাহিত্যে অঙ্গ ও অংশের অর্থ নেয়া ছাড়াও এজাতীয় শব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন, কুরআনে আছে দিনের চেহারা (ওয়াজহান নাহার)। অথচ আমরা জানি, রাত-দিনের কোন চেহারা হয় না। এটা সাহিত্যের অলঙ্কার।

কুরআনে আছে, সত্যের পা ( কাদামা সিদক)। আমরা সবাই জানি, সত্য – মিথ্যার কোন হাত-পা হয় না। এরপরও ভাষার অলঙ্কারের হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কুরআনে আছে, পিতা-মাতার জন্য নম্রতার ডানা (জানাহাজ জুল) বিছিয়ে দাও। অথচ আমরা জানি, নম্রতার কোন ডানা হয় না।

সুতরাং আরবী ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চাঙ্গের অলঙ্কারের কারণে এধরণের ব্যবহার থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। এগুলো কোন দোষণীয় বিষয় নয়।

বরং এগুলো কুরআনের সৌন্দর্য্য। কারণ, যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর রঙে রঙীন হও, তখন যে মর্ম ও উদ্দেশ্য বোঝান হয়, স্বাভাবিকভাবে বললে এতো অর্থবোধক হয় না। যদি বলি, তোমরা ভালো গুণে গুণান্বিত হও, তাহলে এটা অতটা আবেদনময় হয় না।

আগের উদাহরণে পিতার জন্য নম্রতার ডানা বিছিয়ে দেয়ার কথাটাই ধরুণ। সরল-স্বাভাবিকভাবে যদি বলা হয়, তোমরা পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ করো, এটা যতটুকু আবেদনময়, এর চেয়ে শতগুণ অর্থবহ হলো, তোমরা পিতা-মাতার সামনে দয়া-মায়া ও নম্রতার ডানা বিছিয়ে দাও।

এজন্য, একথা ভাবা কখনও উচিৎ হবে না যে, যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়, সেসব বিষয় পবিত্র কুরআনে আসলো কেন? নাউজুবিল্লাহ।

পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রে এধরণের আপত্তি বা ধারণা খুবই মারাত্মক। কারণ, যেটা পবিত্র কুরআনের সৌন্দর্য্য সেটাকে কুরআনের ত্রুটি বিবেচনা করা হচ্ছে। অথচ পবিত্র কুরআন সব – ধরণের দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। এজন্য আমরা দেখি যে, এসব আয়াত ও বক্তব্যে সাহাবায়ে কেরাম কোন আপত্তি করেননি। কারণ তারা মাতৃভাষার অলংকার ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন।

  • প্রশ্ন: এসব শব্দের ক্ষেত্রে অংশ বা অঙ্গ বিশ্বাস না করে কি এগুলো আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা যায়?

উত্তর: এসব শব্দের বাহ্যিক, আক্ষরিক বা সরল অর্থ হল দেহের অংশ বা অঙ্গ। এজন্য অংশ বা অঙ্গের অর্থ বাদ দিলে বাহ্যিক বা আক্ষরিক আর কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না।

যেহেতু বাহ্যিক সরল অর্থ তথা অংশ বা অঙ্গ অর্থটা সকলের মতে কুফুরী, এজন্য এই কুফুরী অর্থ বাদ দেয়ার পর এই শব্দগুলোর আর কোন সরল অর্থ অবশিষ্ট থাকে না, যা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা যায়।

এখন আমাদের সামনে দু’টি বিষয় থাকছে,

১। মূল শব্দ, যার বাহ্যিক অর্থকে বাদ দেয়া হয়েছে।

২। শব্দের অনেক রুপক অর্থ ও ব্যবহার।

এই পরিস্থিতিতে আলিমদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। কেউ বলেছেন, বাহ্যিক অর্থ বাদ দেয়ার পর মূল যে শব্দটা অবশিষ্ট থাকছে, এ শব্দকে আল্লাহর সিফাত বা গুণ বলা হবে। তবে এক্ষেত্রে আলাদা কোন অর্থ সাব্যস্ত করা হবে না।

প্রশ্ন হয়, অর্থহীন আবার শব্দ হয় নাকি? তখন তারা বলেন, অর্থটা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ ভালো জানেন। একে পরিভাষায়, ইসবাত মায়াত তানজীহ বলে। অর্থাৎ বাহ্যিক অর্থ পরিত্যাগ করে শুধু শব্দটাকে সিফাত বা গুণ সাব্যস্ত করা।

আরেকদল আলিম বলেন, শব্দকে বাহ্যিক অর্থ থেকে বাদ দেয়ার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। আমরা আগ বেড়ে একে সিফাত বা গুণ বলব না আবার নাকচও করব না। এ বিষয়ে পুরো বিষয়টা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিব। একে পরিভাষায় তাফয়ীদ মায়াত তানজীহ ( বাহ্যিক অর্থ বাদ দিয়ে শব্দকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া) বলে।

প্রথম মতের সাথে দ্বিতীয় মতের পার্থক্যটা স্পষ্ট। প্রথম দল শব্দকে তার সরল অর্থ থেকে বাদ দেয়ার পর নিজেদের পক্ষ থেকে সিফাত বলছেন। তবে অর্থের বিষয়টি তারা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। আর দ্বিতীয় দল সিফাতও বলছেন না। নাকচও করছেন না। বরং পুরো বিষয়টিকেই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। তিনিই ভালো জানেন।

এখানে আরেকদল আছেন। যারা শব্দের সরল অর্থ(অংশ বা অঙ্গ) বাদ দেয়ার পর, শব্দকে পুরোপুরি অর্থহীন বলতে নারাজ। তারা বলেন, কুরআন সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। বাহ্যিক অর্থ যেহেতু নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, সুতরাং আরবী ভাষার নিয়ম মেনে এ শব্দের সবচেয়ে উপযোগী রুপক অর্থটি নিতে হবে। পরিভাষায় যাকে, তা’বীল মায়াত তানজীহ বলে।

তাদের বক্তব্য হল, মূল শব্দের সরল বা বাহ্যিক অর্থ (অংশ বা অঙ্গ) নেয়াটা অসম্ভব হলেও পুরো বাক্যের ব্যবহার থেকে একটি সুস্পষ্ট মর্ম বোঝা যায়। আনুষঙ্গিক মর্ম থেকে বক্তার মূল উদ্দেশ্য বোঝা গেলেই যথেষ্ট।

যেমন কুরআনে এসেছে, নিশ্চয় তোমাদেরকে আল্লাহর চেহারার জন্য আহার করাচ্ছি।

এখানে চেহারা শব্দটি সরল বা বাহ্যিক অর্থ (অংশ বা অঙ্গ) নেয়া সম্ভব নয়। বরং এটি সবার মতে কুফুরী। সুতরাং আল্লাহর চেহারা দ্বারা বাহ্যিক চেহারা উদ্দেশ্য নেয়া যাচ্ছে না। তবে আনুষঙ্গিক বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখানে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য আহার করান হচ্ছে। সুতরাং এখানে চেহারা দ্বারা সন্তষ্টি উদ্দেশ্য। এটাই মূলত: তা’বীল মায়াত তানজীহ।

  • এখন প্রশ্ন হল, আক্বিদায় তো মতবিরোধ হওয়ার কথা না, তাহলে এই মতবিরোধে কে সঠিক?

উত্তর: এখানে অকাট্যভাবে ঐকমত্যের বিষয় আছে। সেটি হল, এসব শব্দের সরল বা বাহ্যিক অর্থে বিশ্বাস করা কুফুরী। এ বিষয়ে উপরের তিনটি দলই একমত। এবং এই ঐকমত্যের বিষয়টিই আহলে সুন্নতের আক্বিদার মূল।

সরল অর্থ বাদ দেয়ার পর শুধু শব্দকে আল্লাহর সিফাত বলা বা কোন কিছু না বলে পুরো বিষয়কে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া অথবা আরবী সাহিত্য ও অলংকারের নিয়ম মেনে আনুষঙ্গিক বক্তব্য থেকে রুপক অর্থ নেয়া, সবগুলোই আহলে সুন্নতের নিকট গ্রহণযোগ্য। কোনটাই বাতিল না। সালাফ থেকে উপরের সবগুলিই পাওয়া যায়। একেকজন তাদের বুঝ ও গবেষণা অনুযায়ী একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

  • প্রশ্ন: তথাকথিত সালাফীদের সাথে পার্থক্য কোথায়?

উত্তর : সালাফীরা এখানে শব্দকে তার বাহ্যিক বা সরল অর্থে বিশ্বাস করতে বলে। যা আহলে সুন্নতের মতে, সুস্পস্ট বাতিল।

তাদেরকে যদি বলা হয়, হাতের বাহ্যিক অর্থ তো অংশ বা অঙ্গ। দেহের অংশ বা অঙ্গের অর্থ ছাড়া হাতের আর তো কোন সরল অর্থ বা উদ্দেশ্য নেই। তখন তারা বলে, না না। আমরা তো অংশ বা অঙ্গের অর্থে বিশ্বাস করি না।

তাহলে হাতের সরল বা বাহ্যিক অর্থটা কী? তখন আর বলতে পারে না।

এজন্য মতবাদ হিসেবে, তথাকথিত সালাফীদের মূলনীতিটা দেহবাদী কুফুরী মূলনীতি। এদের কিছু কিছু আলিম হয়ত অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করে না, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করার কারণে দেহবাদী আক্বিদা রাখে। এজন্য মূলনীতির দিক থেকে সালাফীরা আহলে সুন্নত বহির্ভূত বাতিল আক্বিদার জামাত। তবে এদের মধ্যে যারা আল্লাহর অঙ্গ বা অংশে বিশ্বাস করে না এবং বাহ্যিক বা সরল অর্থ নেয়ার দাওয়াত দেয় না, এদেরকে ভ্রষ্ট না বললেও যারা সাধারণ মানুষকে বাহ্যিক বা সরল অর্থে বিশ্বাস করতে বলে এরা ভ্রষ্ট।

মোটকথা, মূলনীতির দিক থেকে সালাফী মতবাদ আহলে সুন্নত বহির্ভূত। মূলনীতিটা দেহবাদী আক্বিদার অনুরূপ।

সংগৃহীত

খ্রিস্টান পাদ্রী ডেপুটি আথহাম ও মির্যা কাদিয়ানী

0

খ্রিস্টান পাদ্রী ডেপুটি আব্দুল্লাহ আথহাম সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণী প্রসঙ্গে:

ডিপুটি আব্দুল্লাহ আথহাম

প্রশ্নকর্তা : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী খ্রিস্টান পাদ্রী ডেপুটি আব্দুল্লাহ আথহাম সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে, তিনি ১৫ মাস পর মারা গিয়ে হাবিয়া দোজখে নিক্ষিপ্ত হবেন, পরে কি ভবিষ্যৎবাণীটি পূর্ণ হয়েছিল?

উত্তরদাতা : অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আথহাম সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী আপনা অনুসারীদের নিয়ে বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের শেষ দিনটির সারা রাত্রি পর্যন্ত খুবই দোয়া, মোনাজাত ইত্যাদি করেছিলেন। খুব বেশি কান্নাকাটিও করেছিলেন মাবুদের দরবারে। তাহলিল, খতম (অজিফা) ও দানা-ফানা পড়েও আথহামের মৃত্যুর ফরমান জারি করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, মির্যার সেই তাবৎ প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। যার ফলে সুচতুর ও ধুর্ত মির্যা কাদিয়ানী কাসুন্দির পথ বেছে নেন এবং নিজেকে রক্ষা করতে আপনা কৃত ‘শর্ত’-এর ব্যাখ্যা দিয়েও ব্যর্থ হন। কেননা তার বেধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের ভেতর আথহামের মৃত্যু না হওয়ায় তিনি নিজেকে রক্ষা করতে ‘শর্ত’-এর যে বেলুন নিয়ে উড়ো উড়ি করতে চেয়েছিলেন সেখানে ‘সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করা‘র শর্ত জুড়ে দেয়ার পর নিজেই সেই “সত্য” এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন অর্থাৎ ‘সত্য খোদাকে মানা‘ এবং সেটির উপর ‘প্রতিষ্ঠা থাকা‘। এটিকে এক শব্দে প্রকাশ করলে হয় ‘আথহাম ইসলাম গ্রহণ করা‘। কিন্তু আথহাম আমৃত্যু খ্রিস্টান ধর্মের উপরই বহাল ছিলেন, ইসলামে প্রত্যাবর্তন করেননি।

আথহাম সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর সম্পূর্ণ ঘটনাটি আমি এখানে তাদেরই লেখিত লিটারেচার থেকে পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি। একজন বিজ্ঞ ও সচেতন পাঠক মাত্র পুরো লিখাটি পড়ে সহজেই আসল ব্যাপারটা বুঝতে সক্ষম হবেন, তারা সেটিকে মিথ্যার বেসাতি করে যতই সুন্দর ভাবে প্রলেপ দেয় না কেন! এখানে যে বইটির স্ক্রিনশট তুলে ধরছি এটি তাদের বর্তমান কাদিয়ানী খলীফা মির্যা মাসরূর আহমদ এর কথিত খুতবাহ। তাদেরই নিজেস্ব প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত। অনলাইন থেকে পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

  • রেফারেন্স, খুতবাতে মাসরূর (ত্রয়োদশ খন্ড) পৃষ্ঠা ৫৪-৫৭, ২০১৫ ইং

উপরের দীর্ঘ আলোচনা পড়া শেষে এবার প্রাসঙ্গিক আরও কিছু তথ্য জেনে রাখুন:

ডিপুটি আব্দুল্লাহ আথহাম সম্পর্কিত উল্লিখিত ঘটনার সাথে আরো বেশ কিছু কথার সংযোগ রয়েছে যেগুলো ঐ পাতাগুলোয় অনুপস্থিত। যেমন মির্যায়ী রচনাবলীতে উল্লেখ আছে,
১। আমি এই মুহূর্তে স্বীকারোক্তি দিচ্ছি যে, যদি এই ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে আমি সব ধরনের শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। (রূহানী খাযায়েন ৬/২৯২)।
২। আথহামের মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল ১৮৯৩ সালের ৫ই জুন থেকে ১৮৯৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, প্রায় ১৫ মাসের জন্য। উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ আথহাম নির্ধারিত সময়ের আরও প্রায় তিন বছর পর ১৮৯৬ সালের ২৭শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু ঐ নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর আথহাম যখন মারা যায়নি তখন মির্যা আর তার মুরিদদের নানা স্ববিরোধী ও হাস্যকর কাসুন্দি এমনকি মিথ্যার আশ্রয়ও নিতে পিছপা হননি। যেমন, তাদের বিভিন্ন লিটারেচারে উল্লেখ রয়েছে –

(ক) আব্দুল্লাহ আথহাম মনে মনে ইসলাম গ্রহণ করায় সে মরেনি। অথচ অথহাম তার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রত্যাখ্যান করে। (লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘অপাদার‘ পত্রিকায় আব্দুল্লাহ আথহামের প্রেরিত পত্র দ্রষ্টব্য, তাং ৬ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ সাল)। আথহাম সে পত্রে উল্লেখ করেছেন যে, আমার ব্যাপারে এটি মির্যা কাদিয়ানীর জলজ্যান্ত মিথ্যা। কেননা আমি ধর্ম পরিবর্তন করিনি। আগেও খ্রিস্টান ছিলাম, এখনো খ্রিস্টান আছি। এরপর মির্যা কাদিয়ানীকে চুপসে যেতে হয়।

  • (খ) আথহাম মনে প্রাণে খুব ভয় পেয়ে যায়। এটি তার সত্যের দিকে ফিরে আসার নিদর্শন। তাই মৃত্যু হয়নি। কাদিয়ানী নেতাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, নির্ধারিত সময়ের ভেতর আথহামের মৃত্যু না হওয়ায় মির্যাকে রক্ষা করতে ‘শর্ত’-এর বেলুন উড়ানোর আর কোনো সুযোগই থাকেনি। কারণ মির্যা সাহেব ‘সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করা’র শর্ত জুড়ে দেয়ার পর নিজেই সেই “সত্য” এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন অর্থাৎ ‘সত্য খোদাকে মানা’ এবং সেটির উপর ‘প্রতিষ্ঠা থাকা’। এটিকে এক শব্দে প্রকাশ করলে হয়, আথহাম ইসলাম গ্রহণ করা। কিন্তু আথহাম আমৃত্যু খ্রিস্টান ধর্মের উপরই বহাল ছিল, ইসলামে প্রত্যাবর্তন করেনি।

(গ) আব্দুল্লাহ আথহামের তওবাহর কারণে এটি সাময়িকভাবে বিলম্বিত হয় ঠিকই কিন্তু অবশেষে সে ধরা পড়ে। তাদের আরেকটি হাস্যকর বক্তব্য হল, আব্দুল্লাহ আথহাম সে তার তওবাহ পড়ে নেয়ার বিষয়টি গোপন করে দুনিয়াকে ধোকা দিতে চেয়েছিল বলে তাকে শপথ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শপথ করতে রাজি হননি। ফলে তিনি পরবর্তী ২-৩ বছরের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, আথহামকে শপথ করতে হবে এমন কোনো শর্তও কি মির্যার কথিত ইলহামে উল্লেখ ছিল? কোনো কাদিয়ানী কি এর প্রমাণ করতে পারবে?

(ঘ) আব্দুল্লাহ আথহামের মৃত্যুও হয়েছে, ভবিষ্যৎবাণীও পূর্ণ হয়েছে। তবে এই মৃত্যুটা জাগতিক মৃত্যু নয়, বরং আধ্যাত্মিক মৃত্যু। তারা এটিকে কথিত এক পীর খাজা গোলাম ফরীদের নামে ভিত্তিহীন একটি রসালো গল্পের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করে, অথচ ঘটনাটির কোনো ভিত্তিই নেই।

পাঠকবৃন্দ! খেয়াল করুন, মির্যার উক্ত বানোয়াট ভবিষ্যৎবাণীকে বাস্তব করে দেখাতে তারা কত নোংরা খেল খেলেছে। কতটা বেপরোয়া আর খোদাদ্রোহী হলে একটা মিথ্যাকে ঢাকতে কতগুলো মিথ্যা আর কাসুন্দির জন্ম দিতে পারে! এরই নাম কাদিয়ানীয়ত। অথচ মির্যা কাদিয়ানীর ঘনিষ্ঠ সহচর ইয়াকুব আলী ইরফানী সাহেবের বইতেও পরিষ্কার লিখা আছে, ‘আথহামের মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণীর শেষ দিনটি যখন এসে গেল জামাতের লোকদের চেহারা বিবর্ণ ধারণ করল, মন ছোট হয়ে গেল। কেউ কেউ তো অজ্ঞতাবশত বিরুদ্ধবাদীদের জন্য মৃত্যু কামনা করাই শুরু করে দিল। চারো দিকে উদাসীনতা আর বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পেল। লোকজন চেঁচিয়ে কান্না করতে লাগল। কাঁদাকণ্ঠে ফরিয়াদ শুরু করল, ‘আয় খোদা হামে রসোয়া মত করো’। হে খোদা, আমাদের লাঞ্চিত করো না।’ (সীরাতে মসীহ মওউদ পৃষ্ঠা ৭, ইয়াকুব আলী ইরফানী; এডিটর সাপ্তাহিক আল হিকাম পত্রিকা)।

  • মির্যা বশির আহমদ এম.এ লিখেছেন, ‘যখন আব্দুল্লাহ আথহামের নির্ধারিত সময়ের শুধু একদিন বাকি তখন মসীহ মওউদ (মির্যা) তার শিষ্য আব্দুল্লাহ সানূরী আর মিয়া হামেদ আলীকে খতম (অজিফা) পড়ার জন্য কিছু দানা (বিচি) কুড়ে আনতে নির্দেশ দেন। তিনি (আব্দুল্লাহ সানূরী) বলেন, আমরা এই খতম প্রায় সমগ্র রাত্রি পর্যন্ত পড়ে সম্পন্ন করলাম। খতম (অজিফা) শেষ করার পর আমরা সেই দানাগুলো তাঁর নিকট নিয়ে আসি। যেহেতু তিনি বলেছিলেন যে, খতম পড়া শেষ হলে দানাগুলো যেন তার নিকট নিয়ে আসি। এরপর তিনি আমাদের দুইজনকে কাদিয়ানের বাহিরে, সম্ভবত উত্তর দিকে নিয়ে গেলেন আর নির্দেশ দিলেন যে, এই দানাগুলো অন্য কোনো অনাবাদি কূপে ফেলে আসতে হবে। তিনি আরও নির্দেশ দিলেন, এই দানাগুলো যখন ফেলে আসব তখন পেছনে তাকানো ছাড়াই যেন দ্রুতবেগে সেখান থেকে সরে আসি। ঘাড় ঘুরিয়েও যেন পেছন দিকে না দেখি। তারপর হযরত সাহেব দানাগুলো একটি অনাবাদি কূপে নিক্ষেপ করে দ্রুত আমাদেরকে সাথে নিয়ে ফিরে আসেন।’ (সীরাতে মাহদী ১/১৬২-৬৩; বর্ণনা নং ১৬০ নতুন এডিশন)।
সীরাতে মাহদী

দৈনিক আল ফজল (২০-জুলাই-১৯৪০ইং) এর মধ্যে পরিষ্কার লিখা আছে, আথহাম সম্পর্কে কৃত ভবিষ্যৎবাণীর শেষ দিন কাদিয়ানের সমস্ত কাদিয়ানী মুরিদ চিল্লাফাল্লা করে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ করেছিল এই বলে যে, ইয়া আল্লাহ! আথহাম মর যায়ে, ইয়া আল্লাহ! আথহম মর যায়ে। হে আল্লাহ! আথহাম যেন মরে যায়, হে আল্লাহ! আথহাম যেন মরে যায়।

  • আফসোস! একজন নবী দাবীদার নিজ অনুসারীদের দিয়ে অন্যের মৃত্যু কামনা করে দোয়া করাচ্ছে!! আবার সে দোয়া ব্যর্থও হয়েছে। এখানে প্রশ্ন আসে, ঐ নির্দিষ্ট দিনে আথহামের মৃত্যু না হওয়াটা যদি সত্যি সত্যিই মির্যার কথা অনুসারে সে তাওবা করার কারণে বা মনে মনে ইসলাম গ্রহণ করার কারণেই হয় তাহলে মির্যা কাদিয়ানী কিজন্য শেষ দিনটিতে নিজ অনুসারীদের দিয়ে আথহামের বিরুদ্ধে মৃত্যু কামনা করে খতম পড়িয়েছিলেন? কী জন্য খতম (অজিফা)ও পড়িয়ে ছিলেন, দানা পড়িয়ে সেগুলো অনাবাদি কূপে নিজেই ফেলে আসলেন? কেনই বা আপনা অনুসারীদের বুক ফাটা আত্ম-চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি করে তুলে ছিলেন? তিনি তখনই সবার মাঝে আথহামের তাওবা কিংবা সত্যের দিকে ফিরে আসার বাণী দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিলেই তো হত! কেন নিজ অনুসারীদের সাথে এই জঘন্য তামাশা করতে গেলেন? সে সময় দেশে স্বাক্ষরতার হার ৬% এরও নিচে ছিল বলেই সে সুযোগটা কাজে লাগালেন বুঝি! এটি কি প্রকৃত ইমাম মাহদীর চরিত্র হতে পারে?
মির্যা কাদিয়ানীর সুস্পষ্ট নবী রাসূল দাবী।

এখন আরও একটি প্রশ্ন হল, সত্যিই যদি মির্যার উক্ত ভবিষ্যৎবাণী শর্তযুক্ত (অর্থাৎ সে সত্যের দিকে তথা ইসলামে ফিরে আসলে বেঁচেও যাবে, এইরূপ) হয়ে থাকে আর তার মৃত্যু নির্দিষ্ট সময়ে না হওয়াই ঐ শর্তের কারণে হয়, তাহলে ঐ স্ববিরোধপূর্ণ কথাবার্তার কী মানে? যেমন, আধ্যাত্মিকভাবে তার মৃত্যু হয়ে গেছে বলে আখ্যা দেয়া, কিছুদিন পরে হলেও তার মৃত্যু অবধারিত বলে ব্যক্ত করা! আর সত্যিই যদি মির্যার অপর এক বক্তব্য অনুসারে আথহাম সত্যের দিকে ফিরে আসেন, তাহলে জানার বিষয় হল, সেই সত্যটা কী যার সৌভাগ্যক্রমে সে ‘হাবিয়া দোযখে নিক্ষিপ্ত‘ হওয়া থেকে রক্ষা পেল? উল্লেখ্য, কারো জন্য ‘দোযখ’ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল ইসলাম গ্রহণ করা। কেননা, আল্লাহ নিজেই বলেছেন, আল্লাহ কারো কাছ থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য আর কোনো ধর্ম গ্রহণ করবেন না (আলে ইমরান ৮৫)। এখন একথাগুলোর কী জবাব?

  • এবার প্রামাণ্য কিছু সংযুক্তি নিম্নরূপ, রূহানী খাযায়েন খ-৬ পৃ-২৯১-৯৩ দেখুন,

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ.) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?

0

ঈসা (আ.) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন? কাদিয়ানীরা এসমস্ত আজগুবি কথাবার্তা কোত্থেকে আমদানি করে?

খন্ডনমূলক জবাব,

আপনি যদি কোনো কাদিয়ানী নেতাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করেন তখন সে হয়ত উত্তরে বলবে, সূরা মুমিনূন এর ৫০ নং আয়াত و آويناهما الى ربوة ذات قرار و معين দ্বারা মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ‘ঈসা (আ.) কাশ্মীরে এসেছিলেন’ মর্মে উক্ত মতবাদ উদ্ভাবন করে গেছেন! সেযাইহোক কাদিয়ানীদের বিকৃত ব্যাখ্যাটি খুব সহজে বুঝতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনূদিত কুরআনের কপি থেকে অত্র আয়াতের অনুবাদটুকু পড়ে নেয়ার অনুরোধ থাকল।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! পবিত্র কুরআনের সূরা মুমিনূন এর ৫০ নং আয়াতে উল্লিখিত (و آويناهما الى ربوة)-এর “রাবওয়া” শব্দ দ্বারা কাদিয়ানীদের কাশ্মীর উদ্দেশ্য নেয়া ঠিক হয়নি। কেননা হাদীসে রাবওয়া দ্বারা এর ভৌগোলিক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে নির্ণীত। আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর পবিত্র জবানে ‘রাবওয়া’ দ্বারা ফিলিস্তিনের একটি শহর “রামাল্লাহ“ই উদ্দেশ্য নেয়া প্রমাণিত। বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে তাফসীরে ইবনে কাসীর সহ বহু জায়গায়। সহীহ হাদীসে ‘রাবওয়া’ দ্বারা এর ভৌগোলিক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে নির্ণীত হওয়ার প্রমাণ এখানে, (হাদীসের আরবী ইবারতসহ তাফসীরে ইবনে কাসীর গ্রন্থ থেকে) :-

وقال ابن أبي حاتم : حدثنا أبي ، حدثنا إبراهيم بن محمد بن يوسف الفريابي ، حدثنا رواد بن الجراح ، حدثنا عباد بن عباد الخواص أبو عتبة ، حدثنا السيباني ، عن ابن وعلة ، عن كريب السحولي ، عن مرة البهزي قال : سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول لرجل : “ إنك ميت بالربوة ” فمات بالرملة . وهذا حديث غريب جدا .

وأقرب الأقوال في ذلك ما رواه العوفي ، عن ابن عباس في قوله : ( وآويناهما إلى ربوة ذات قرار ومعين ) ، قال : المعين الماء الجاري ، وهو النهر الذي قال الله تعالى : ( قد جعل ربك تحتك سريا ) [ مريم : 24 ] .

وكذا قال الضحاك ، وقتادة : ( إلى ربوة ذات قرار ومعين ) : هو بيت المقدس . فهذا والله أعلم هو الأظهر; لأنه المذكور في الآية الأخرى . والقرآن يفسر بعضه بعضا . وهو أولى ما يفسر به ، ثم الأحاديث الصحيحة ، ثم الآثار .

তাফসীরে ইবনে কাসীর (দশম খন্ড)

এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে রাসূল (সা.)-এর নির্ণীত স্থানের পরিচয় পরিত্যাগ করে কাদিয়ানীদের নিজেস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা মতে রাবওয়া হতে ভারতের “কাশ্মীর” উদ্দেশ্য নিতে পারি? কাদিয়ানীরা এর কী উত্তর দেবেন?

  • উল্লেখ্য, রামাল্লাহ পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনের একটি শহর। এটি জেরুজালেম থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে এবং সমুদ্র সমতল থেকে ৮৮০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আয়াতটিতে রামাল্লাহ শহরকে ‘রাবওয়া’ শব্দে বিশেষিত করার কারণ এটাই। কেননা রাবওয়া বলতে বুঝায় আশপাশের এলাকা হতে তুলনামূলক উচ্চতায় অবস্থিত এমন স্থান।

তারপর আয়াতটির معين শব্দ হতে যে ঝর্ণা বা ছোট নহর-এর উল্লেখ রয়েছে তা হতে ঐ নহরই উদ্দেশ্য যেটি আল্লাহ ঈসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ মুহূর্তে বিবি মরয়মের পদতলে জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। একথা বলেছেন, রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-ও। আর সূরা মরিয়ম আয়াত নং ২৪ এর মধ্যে এর পরিষ্কার ইংগিতও দেয়া হয়েছে। (দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, দশম খন্ড)। ঈসা (আ.)-এর প্রসব হওয়ার পর তিনি সন্তানটিকে সাথে নিয়ে পুনরায় নিজ কওমের নিকট ফিরেও আসেন।

  • কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় :-

১- রাবওয়া তথা রামাল্লাহ-তে বিবি মরিয়ম আর তাঁর সন্তানটি সহ যখন গিয়েছিলেন তখন তাঁর সন্তান তথা ঈসা (আ.) মায়ের গর্ভে ছিলেন, তিনি সেখানেই ভূমিষ্ঠ হন।

২- সেখানে যে ঝর্ণাটি সৃষ্টি হয়েছিল সেটি তখন মরিয়মের পদতলে আল্লাহর কুদরতে সৃষ্টি হয়েছিল, معين অর্থ ছোট নহর বা ঝর্ণা।

৩- ঈসা (আ.)-এর মাতা সেখান থেকে নিজ কওমে ফিরিয়েও যান। উল্লেখ্য, কুরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা অপর আয়াত দ্বারা হয়ে গেলে তখন তার বিপরীত ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তাফসীরে ইবনে কাসীর (রহ.) থেকেও একথা পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে। وَالْقُرْآنُ يُفَسِّرُ بَعْضُهُ بَعْضًا. وَهُوَ أَوْلَى مَا يُفَسَّرُ بِهِ، ثُمَّ الْأَحَادِيثُ الصَّحِيحَةُ، ثُمَّ الْآثَارُ অর্থাৎ সর্বোত্তম তাফসীর সেটাই যে তাফসীর কুরআনের অপরাপর আয়াত দ্বারা হয়ে যাবে, তারপর সেটিই উত্তম তাফসীর যেটা সহীহ হাদীস দ্বারা হয়ে যাবে, এরপর সেটাই যেটা সাহাবায়ে কেরাম এর বিশ্লেষণ দ্বারা হয়ে যাবে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, দশম খন্ড)।

এখন এতে ঈসা (আ.) কাশ্মীর যাওয়ার বিষয়টি কিভাবে সাব্যস্ত হয়? আপনারা যেরকম ঈসা (আ.)-কে আকাশে নিয়ে থাকলে সরাসরি ‘আকাশ’ শব্দটি কুরআনের মধ্যে পরিষ্কার করে নেই কেন, বলেই প্রশ্ন তুলেন ঠিক অনুরূপ “কাশ্মীর” শব্দটাও তো অত্র আয়াতে নেই! এমনকি জেরুজালেম থেকে কাশ্মীরের দুরত্বও প্রায় ৪৬৬০ কিলোমিটার দূরে। ফলে ঈসা (আ.)-এর আম্মা গর্ভবতী অবস্থায় এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার কী অর্থ? আপনার সুস্থ্য বিচারবোধ কী বলে? সুতরাং কাদিয়ানীরা কুরআন থেকে রাবওয়া’র যে ব্যাখ্যা নিয়ে ‘কাশ্মীর’ এর কনসেপ্ট উদ্ভাবন করে থাকে সেটি সুস্পষ্ট বিকৃতি ও বাতিল; সত্যের সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই।

ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হওয়া সম্পর্কে

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হওয়া সম্পর্কে

ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হয়ে যাওয়া শীর্ষক জাল, মুনকার বর্ণনার আশ্রয় নিয়ে ধোকাবাজি করতে গিয়ে আবারও ধরা খেলেন মির্যা কাদিয়ানী!

জাল, মুনকার জাতীয় অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহ দিয়ে কাদিয়ানী নেতারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে। আর সাধারণ মানুষদেরও কি এত বুঝ-ব্যবস্থা বা শিক্ষাদীক্ষা রয়েছে যে তারা জাল, মুনকার জাতীয় বর্ণনা চিহ্নিত করে সহীহ ও বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীস বেছে নিবে? কাদিয়ানের সিজোফ্রেনিয়া রোগীটার ধোকা, প্রতারণা আর মিথ্যাচার নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক লিখা লিখেছি। আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকেও দেখতে পারেন। আজকে এখানে তাদেরই উদ্ধৃত আরেকটা মিথ্যা, মুনকার বর্ণনা যা মির্যার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ বইতেও রয়েছে ; উল্লেখ করে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই যে, এটি সম্পর্কে খোদ ইমাম ইবনে জাওজি (ابن الجوزى), ইমাম ইবনে হিব্বান (ابن الحبان), ইমাম যাহাবী (الذهبى) প্রমুখ সহ বহু হাদীস বিশারদ কারণ উল্লেখপূর্বক লিখে গেছেন,

هذا الحديث لا يصح عن رسول الله صلى الله عليه و سلم. قال ابن حبان : هانئ ابن المتوكل كثرت المناكير فى روايته و لا يجوز الاحتجاج به. অর্থাৎ এই হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ (বিশুদ্ধ) নয়। ইমাম ইবনে হাব্বান বলেছেন, এর সূত্রে উল্লিখিত হানী ইবনে আল মুতাওয়াক্কিল নামীয় বর্ণনাকারীর বর্ণনায় বহু পরিমাণে মুনকার (অগ্রহণযোগ্য/বিশ্বস্ত রাবীর বিপরীতকৃত) বর্ণনা রয়েছে আর তার বর্ণনা দ্বারা দলিল পেশ করা বৈধ হবেনা। (রেফারেন্স, আল ই’লালুল মুতানাহিয়াহ লি-ইবনে জাওজি, পৃষ্ঠা নং ৮০১)। ইবনে জওজি (রহ.) এর কিতাবটির স্ক্রিনশট দেখুন- ক্লিক

  • মুহাদ্দিসগণ এই বর্ণনাটি সম্পর্কে এও লিখেছেন যে, موقوفا من رواية شفي بن ماتع عن كعب الأحبار أو غيره من الإسرائيليين তথা এটি ইসরাইলী বর্ণনা সমূহের অন্তর্ভুক্ত ও সাফি ইবনে মাতে এর সূত্রে (খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হওয়া) কা’ব আহবার রা. ও অন্যান্যদের নামে চালিয়ে দেয়া একটি মওকুফ (রাসূল সা.-এর বক্তব্য নয় এমন) রেওয়ায়েত।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী সম্পূর্ণ বর্ণনা উল্লেখ না করেই পরের অংশটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দিয়ে দেয়। কারণ, পরের অংশটিতে লিখা আছে فوعزتى و جلالى لازوجنك ألفى حوراء و لأولمن عليك اربعمائة عام অর্থ- আমার ইজ্জত ও মহিমার কসম, আমি তোমাকে দুই হাজার হুর-পরীর সাথে বিয়ে করাব এবং চারশত বছর অব্ধি তোমার জন্য ওয়ালিমা (ভোজ সভা) করাব।

  • এবার সম্পূর্ণ বর্ণনাটি দেখুন, أوحى الله تعالى إلى عيسى أن يا عيسى انتقل من مكان إلى مكان لئلا تعرف فتؤذى، فوعزتي وجلالي لأزوجنك ألفى حوراء، ولأولمن عليك أربعمائة عام অর্থাৎ, আল্লাহ ঈসা এর নিকট ওহী করলেন যে, হে ঈসা! তুমি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হও যাতে তোমাকে চিনতে না পারে, ফলে তোমাকে কষ্ট দেয়া হবেনা। আমার ইজ্জত ও মহিমার কসম, আমি তোমাকে দুই হাজার হুর-পরীর সাথে বিয়ে করাব এবং চারশত বছর অব্ধি তোমার জন্য ওয়ালিমা (ভোজ সভা) করাব।

বিজ্ঞ পাঠক, বুঝতেই পেরেছেন যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কতটা খেয়ানতকারী হলে মুরোদ হাসিল করতে একই বর্ণনার পরের অংশটি গায়েব করে দিতে পারে! আর পরের অংশটি তিনি কেনই বা গায়েব করবেন না! কারণ তখন তো তাকে এও মেনে নিতে হবে যে, ঈসা (আ.)-এর ঐ স্থানান্তরিত জায়গাটি তার দাবী অনুসারে ‘কাশ্মীর’ হলে তিনি সেখানে দুই হাজার হুর-পরীকে বিয়েও করেছিলেন! যদিও বা ইসলাম কিংবা খ্রিস্টীয় কোনো তারিখ বা লিটারেচার দ্বারা ঈসা (আ.)-এর তেত্রিশ বছরের পরবর্তী জীবনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। এতদ্ব্যতীত সমস্ত বরেণ্য হাদীস বিশারদ অনেক আগ থেকেই বলে আসছেন যে, এটি মুনকার ও অশুদ্ধ এবং ইসরাইলী বর্ণনা, যদ্দ্বারা দলিল প্রমাণ দেয়া বৈধ নয়।

পরিশেষে কথা হল, হানী ইবনে আল মুতাওয়াক্কিল নামীয় মুনকার রাবীর উক্ত মিথ্যা বর্ণনায় কী কথা বলা আছে সেটি তখনি আলোচনার দাবী রাখবে যদি সেটি বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত হত।

বলে রাখতে চাই যে, ইতিহাসবেত্তা ও বিদগ্ধ আলেমগণের মতে, العلل المتناهية গ্রন্থের লিখক আল্লামা ইবনুল জাওজি (মৃত. ৫৯৭ হিজরী) রহিমাহুল্লাহ ছিলেন সে যুগের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিস। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জাফর ইবনে ইদরিস আল কাত্তানি (মৃত. ১৩৪৫ হিজরী) তাঁর গ্রন্থের নির্বাচিত অধ্যায়ে লেখেন, ইবনুল জাওজি কুরাইশি তামিমি বকরি সিদ্দিকি বাগদাদি হাম্বলি একজন প্রসিদ্ধ বক্তা। তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় আড়াই শত। ‘আর-রিসালাতুল মুসতাতরিফাহ (الرسالة المستطرفة)’ গ্রন্থেও তিনি এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন।

আল্লাহ তুমি এই সহজ সরল কাদিয়ানীদের অন্তত আক্বল/সহীহ সমঝ দান কর। ওরা নিজেদের ইসলামি মৌলিক শিক্ষাদীক্ষার অভাবে নিজেদের নেতাদের জাল, মুনকার আর শাজ জাতীয় সমুদয় বর্ণনাকে সহীহ হাদীস ভেবে গিলে খাচ্ছে আর অজান্তে ইসলাম থেকে বেরিয়ে নতুন অধর্ম মতবাদের শিকার হয়ে জাহান্নামের পথে হাটছে। আল্লাহ তুমি হিদায়াত বখশাও।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ঈসা (আ.)-এর অবমাননা

0

আহমদীবন্ধু! আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছি

ইউরোপের লোকদের মদ যত অনিষ্ট করিয়াছে, তাহার কারণ এই যে, ঈসা (আ.) মদ্যপান করিয়াছেন।” (কিশতিয়ে-নূহ ৮৫, বাংলা নবম মুদ্রণ জুন ২০১৮ইং)। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বই ‘কিশতিয়ে-নূহ’ তে এই কথাটি তার অনুসারীরা যখন পড়ে তখন কি মনে প্রশ্ন জাগেনা যে, আল্লাহর একজন সত্য নবীর শানে মির্যার এইধরনের মন্তব্য শুধু কি জঘন্য? নাকি ঈমান নষ্ট হওয়ার শামিলও! সংশ্লিষ্ট আরো কিছু স্ক্রিনশট দেখানো হল।

হয়ত বলবেন যে, হতে পারে তিনি খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে কোনো বাহাসে প্রতিপক্ষ খ্রিস্টান পাদ্রীদের মুখ বন্ধ করে দিতে এধরণের মন্তব্য ছুড়েছিলেন! অথবা বলবেন যে, এখানে তিনি মূলত খ্রিস্টানদের কল্পিত ইশ্বর মসীহকে বুঝিয়েছেন!

  • এই পর্যায় আমার প্রশ্ন হল, মির্যা সাহেবের এইরকম মন্তব্যের প্রেক্ষিতে খ্রিস্টান ডিবেটার পাদ্রীদের কিছু সময়ের জন্য না হয় মুখ বন্ধ হল কিন্তু তার ঐ মন্তব্যের ফলে হযরত ঈসা (আ.)-এর মান মর্যাদার উপর আঘাত হানা হলো কিনা? যেহেতু এইধরনের কোনো কথারই ইসলামি কোনো অথেনটিক সোর্স দ্বারা প্রমাণিত নয়। মোটাদাগে চিন্তা করলে এই জিনিসটাকে কাদিয়ানী মতাবলম্বীরা কীভাবে গ্রহণ করবেন জানিনা! আরেকটা কথা হল, খ্রিস্টানদের কল্পিত ইশ্বর! আরে জনাব! খ্রিস্টানরা তাদের নবীকে ইশ্বর মানুক কিংবা ইশ্বরের পুত্র মানুক; এটি সম্পূর্ণ তাদের ধর্মীয় ব্যাপার। এর জন্য আল্লাহর নিকট তারা অবশ্যই পাকড়াও হবে। কিন্তু আপনি বা আমি তাদের মুখ বন্ধ করার ঠুনকো ছুতোধরে ও কথার ছলে হযরত ঈসা (আ.)-কে তথাকথিত কল্পিত ইশ্বরের জায়গায় রেখে নির্বিচারে অবমাননা করতে পারিনা। ইসলামের তিন স্বর্ণযুগের কোনো অনুসৃত মুসলিম স্কলারদের কেউই এমন নিয়ম নীতি অবলম্বন করেছিলেন, কেউ এর প্রমাণ দিতে পারবেনা। কেউই প্রমাণ করতে পারেনা যে, খ্রিস্টানদের নবী হযরত ঈসা মসীহ (আ.)-কে আঘাত করতে সালফে সালেহীনগণ কথিত কল্পিত মসীহ’র কনসেপশন দিয়ে গেছেন! যদি এরকম কোনো দৃষ্টান্ত থেকে থাকে তাহলে প্রমাণ করা হোক। আফসোসের বিষয় হল, মির্যা কাদিয়ানী স্বভাবতই হযরত ঈসা (আ.)-এর চরম দুশমন ছিল। তার পুস্তকে এর বহু প্রমাণ এখনো বিদ্যমান। তার পুস্তকের একস্থানে তো একথা পরিষ্কার করে লিখা আছে যে,
  • “মসীহ তো শুধুমাত্র অতি সাধারণ একজন নবী ছিলেন। হ্যাঁ তিনিও নৈকট্য লাভকারী কোটির মধ্যে একজন ছিলেন। তবে তিনি সর্বসাধারণের ঐ শ্রেণীর মধ্যে অতি সাধারণ একজন ছিলেন, এর চেয়ে বেশি ছিলেন না। দেখে নাও ইঞ্জিলে লিখা আছে যে, তিনি (মসীহ) ইয়াহইয়া নবীর মুরিদ ছিলেন এবং শিষ্যদের ন্যায় তিনিও ইস্তেবাগ (খ্রীস্টধর্ম গ্রহণের সূচনাতে বিশেষ একপ্রকার পানি ছিটিয়ে দেওয়ার অনুমোদন) লাভ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি গোত্রের জন্যই এসেছিলেন। হায় আফসোস! তাঁর দ্বারা দুনিয়াতে কারোরই আধ্যাত্মিক উপকারিতা অর্জন হয়নি। তিনি নবুওয়তের এমন একটি দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় রেখে গেলেন যার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। তার আগমনে বেদনা আর বিশৃঙ্খলাই বেড়ে যায় এবং দুনিয়ার বিশাল একটি অংশ ধ্বংসের ভাগ্য বরণ করে।” (ইতমামুল হুজ্জাহ, রূহানী খাযায়েন ৮/৩০৮)। নাউযুবিল্লাহ। এবার জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

কেউ কেউ আবার একথাও বলেন, খ্রিস্টান মিশনারীরা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে গালমন্দ কিবা এটা ওটা বহু ধরনের খারাপ কথা বলত, এখনো বলছে; তাই তাদের নবী ঈসা মসীহকেও অনুরূপ আঘাত করা হবে! আমি জবাবে বলতে চাই, ইসলামের শিক্ষা কি এটাই? খ্রিস্টানরা আমাদের নবীকে সম্মান দেয় না বলে কি আমরাও তাদের মত হয়ে যাব? ঈসা (আ.) আল্লাহর একজন সত্য নবী ও রাসূল ছিলেন, একথার উপর কি আমরা মুসলমানরা ঈমান নিই নি? নিয়েছি। আমরা যদি তাদের মতই হয়ে যাই তাহলে আমাদের আর তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়? আচ্ছা, তাদের ওসব গালমন্দের প্রতিউত্তর কি গাল-মন্দ? অশালীন ভাষায় তিরস্কার? কোনো নবীর চরিত্র হনন? নাকি ইসলাম এগুলোর বিপরীতেই সুন্দর ও উত্তম কোনো পন্থাও শিক্ষা দিয়ে রেখেছেন? রাসূল (সা.)-এর সাথে নাজরানের খ্রিস্টানদের কি ডিবেট হয়নি। রাসূল (সা.) কি পারতেন না মির্যা কাদিয়ানীর ন্যায় এমন নিষ্ঠুর পন্থাও অবলম্বন করতে? না, তিনি বরং মোবাহালার পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। আর পবিত্র কুরআন তো আমাদের শিক্ষাই দিলেন যে, و جادلهم بالتى هى احسن অর্থাৎ সুন্দর পদ্ধতিতে বিতর্ক করো। এখন কোনো নবীকে কল্পিত ঈশ্বরের জায়গায় রেখে তার শানে যাইচ্ছেতাই বলা কি সুন্দর পদ্ধতি? এর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিপক্ষও কি আমাদের নবীর পবিত্র চরিত্রের উপর হামলা করতে উত্তেজিত হবেনা? যেমন মির্যা কাদিয়ানী আর্যদের সম্পর্কে যখন নোংরা মন্তব্য করে বলল যে, “তাদের ঈশ্বর মুসলমানদের নাভীর এক বিঘাত নিচে”। তারই প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সেই সময়কার আর্য সমাজের পণ্ডিত লেখরাম মুহাম্মদ (সা.)-এর শানে চরিত্রহনন-মূলক বই রচনা করতে উৎসাহিত হয়। এখন এর জন্য প্রকৃত দায়ী কে? সুতরাং মির্যায়ীদের ঐ সমস্ত বানোয়াট নীতিমালা প্রকারান্তরে ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড আর ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বোধ অমুসলিমদের ক্ষেপিয়ে দেয়া বৈ কিছুই না।

অন্ততপক্ষে যাদের জ্ঞানটা বিকৃত হয়ে যায়নি, যারা সত্যিকারে সত্যই খোঁজেন তাদের জন্য উচিত অন্ততঃ এই একটি বিষয় নিয়েও নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করা। মনে রাখতে হবে যে, দশ মন দুধের ভেতর এক ফোঁটা প্রস্রাব পড়া দ্বারাই তা নাপাক হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ফালাম্মা তাওয়াফফাইতানী’র অপব্যাখ্যা খণ্ডন

কোনো কাদিয়ানী কি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে?

ত্রিশ আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব

প্রশ্নকর্তা :

আমি মির্যা কাদিয়ানীর বইতে পড়েছি তিনি লিখেছেন, সূরা মায়েদার ১১৭ নং আয়াত মতে হযরত ঈসা (আ.) যতকাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ততকাল ঈসায়ীদের ঈমানও ঠিক ছিল। অর্থাৎ ততকাল পর্যন্ত ঈসায়ীরা তাঁকে না খোদার পুত্র সাব্যস্ত করেছিল আর না ইলাহ তথা উপাস্য বলে গ্রহণ করেছিল, কোনোটাই না। মির্যা কাদিয়ানী তারপর লিখেছেন, হযরত ঈসা (আ.) ১২০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন এর তাৎপর্য দাঁড়াল যে, ত্রিত্ববাদী শিরিক ঈসায়ীধর্মে ১২০ বছর পরেই অনুপ্রবেশ করে। কিন্তু মির্যা সাহেব তারই পুস্তকের অন্য আরেক জায়গায় লিখেছেন, সেন্ট পৌল ঈসা (আ.)-কে খোদা বানিয়ে দেয় (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন ২০/৩৭৫) এবং তিনি ৬৫ ঈসায়ীতে মৃত্যুবরণ করেন। তার অর্থ হল, সেন্ট পৌল হযরত ঈসা (আ.)-এর ৫৫ বছর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন সম্পূর্ণ তাৎপর্য দাঁড়ালো, হযরত ঈসা (আ.) মৃত্যুবরণ করার পূর্বেই খোদা সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তার মানে তিনি কাশ্মিরে যখন জীবিত তিনি তখনো ফিলিস্তিন কিংবা অন্যান্য স্থানে খোদা সাব্যস্ত হয়ে রয়েছেন! সেন্ট পৌল সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে

এখন আমার প্রশ্নটি হল, মির্যা সাহেব যে লিখলেন, যদি ঈসা (আ.) আসমানে জীবিত থাকেন তাহলে দুনিয়ায় ঈসায়ীধর্মে ত্রিত্ববাদী শিরিকের অনুপ্রবেশের সুযোগই নেই। এখন যেহেতু আসমান চেয়েও কাশ্মির আমাদের অনেক নিকটে সেহেতু বর্তমানে তাঁর খোদা সাব্যস্ত হওয়ায় আসমানে জীবিত থাকা গ্রহণযোগ্য না হলে, একই কারণে তিনি কাশ্মিরেও জীবিত থাকতে পারেন কিভাবে? অতএব, ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করে নিজে ‘রূপক ঈসা’ সাজতে  মির্যা সাহেব যে সমস্ত দলিল প্রমাণের আশ্রয় নিয়েছেন তা এখন অযুক্তিক আর মিথ্যা প্রমাণিত হল কিনা?
 
প্রশ্ন-সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতির রেফারেন্স ও ঈসা (আ.) ১২০ বয়সে মৃত্যুবরণ করা :

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ এবং রূহানী খাযায়েন খ-১৫ পৃ-১৪ এবং ৫৫ এর মধ্যে লিখতেছেন: প্রথমে পৃষ্ঠা নং ১৪ দেখুন ‘আমি এই কিতাবে প্রমাণ করব যে, হযরত মসীহ (আ.) শূলিবিদ্ধ হননি, আকাশেও যাননি আর না কখনো আশা রাখা যায় যে, তিনি পৃথিবীতে আকাশ থেকে নাযিল হবেন। বরং তিনি ১২০ বছর বয়সে কাশ্মিরের শ্রীনগরেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং শ্রীনগরের খান ইয়ার মহল্লায় তার কবর রয়েছে।’ তারপর পৃষ্ঠা নং ৫৫ দেখুন ‘এখন পরিষ্কার হল যে, যদি তিনি শুধু কেবল ৩৩ বছর বয়সে আকাশের দিকে উঠে চলে যান তাহলে ঐ অবস্থায় ১২৫ বছরের বর্ণনাটি সহীহ থাকেনা।’

বলে রাখতে চাই যে, হযরত ঈসা (আ.) ১২০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন, একথার অর্থ দাঁড়াল যে, তিনি ১২০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেননা ঈসায়ী ক্যালেন্ডারের সূচনা হয় হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম তারিখ হিসেবে।

সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১৭ সম্পর্কিত মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য :

“হযরত ঈসা (আ.) যদি আকাশে জীবিত থাকেন তাহলে ঈসায়ীরা এখনও পথভ্রষ্ট হয়নি বলে মেনে নিতে বাধ্য।” (রূহানী খাযায়েন ১১/১৩৫)।

“কুরআন শরীফ পরিষ্কার বলছে যে, মসীহ মৃত্যুবরণ করে আকাশে উঠে গেছেন। সুতরাং তাঁর অবতরণ হবে বুরুজিভাবে, হাকিকিভাবে নয় এবং ‘ফালাম্মা তাওয়াফফাইতানী’ (فلما توفيتنى) আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মৃত্যু ঈসার উপর এসে গেছে। কেননা এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঈসায়ীরা পথভ্রষ্ট হবে ঈসার মৃত্যুর পর, জীবিত অবস্থায় নয়। যদি মেনে নেয়া হয় যে, হযরত ঈসা (আ.) এখনো মৃত্যুবরণ করেননি তাহলে এটিও মানতে হবে যে, ঈসায়ীরা এখনো পথভ্রষ্ট হয়নি। অথচ এটি স্পষ্ট বাতিল। অধিকন্তু আয়াত বলছে যে, ঈসায়ীরা শুধু কেবল মসীহ (আ.)-এর জীবদ্দশা পর্যন্ত সত্যের উপর বহাল থাকবে। এতেই বুঝা যায় যে, হাওয়ারীদের যুগেই খারাবি (পথভ্রষ্টতা) শুরু হয়ে গিয়েছিল। যদি হাওয়ারীদের যুগেও ঈসায়ীরা সত্যের উপর থাকতে পারত তাহলে খোদাতালা ঐ আয়াতে মসীহর জীবনের স্পষ্ট শর্ত দিতেন না, বরং হাওয়ারীদের জীবনেরও শর্ত দিতেন। সুতরাং এখান থেকেই একটি অতি উন্নত সূক্ষ্মতা ঈসায়ী যুগের ফাসাদ ও বিশৃংখলার কথা জানা যাচ্ছে। আর সেটি এই যে, প্রকৃতপক্ষে হাওয়ারীদের যুগেই ঈসায়ীধর্মে শিরিকের অনুপ্রবেশ করেছিল।” (রূহানী খাযায়েন ১১/৩২১)।

এই আর্টিকেলের শেষাংশে (খ-১১/পৃ-৩২২) মির্যা সাহেব লিখতেছেন : “মোদ্দাকথা হল, আয়াতটি দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈসায়ীধর্মে সমস্ত ফাসাদ এবং বিভ্রান্তি হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর পরেই শুরু হয়েছিল।”

সম্পূর্ণ আলোচনার সারাংশ :

মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের মতে,
১। ঈসায়ীরা শুধু কেবল হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবদ্দশা পর্যন্ত সত্যের উপর বহাল ছিল। অর্থাৎ তাঁকে খোদা, খোদার পুত্র সাব্যস্ত করার ঘটনা তাঁর জীবদ্দশায় ঘটেনি।
২। যাবতীয় শিরিক, বিশেষভাবে ত্রিত্ববাদী মতবাদের উদ্ভব তাঁর মৃত্যুর পরেই ঈসায়ীধর্মে প্রবেশ করেছিল।
৩। হযরত ঈসা (আ.) যতকাল জীবিত ছিলেন ততকাল পর্যন্ত তাঁর ধর্মে শিরিকের অনুপ্রবেশ করার সুযোগ ছিল না। মির্যা কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে, ‘ফালাম্মা তাওয়াফফাইতানী’ (فلما توفيتنى) আয়াতের মধ্যে শুধু কেবল ঈসা (আ.)-এর জীবিত থাকার শর্তই আরোপিত হয়।
৪। মির্যা কাদিয়ানীর কিতাব ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ অনুযায়ী হযরত ঈসা ১২০ ঈসায়ীতে মৃত্যুবরণ করলে তখনি ১২০ ঈসায়ীর পরবর্তী সময়ে শিরিক প্রবেশ করে, ১২০ ঈসায়ীর পূর্বে শিরিক প্রবেশ করার কোনোই সুযোগ নেই।

এবার সেন্ট পৌল ৬৫ ঈসায়ীতে মৃত্যুবরণ করা :

মির্যা লিখতেছেন, “মোটকথা এই ধর্মে সমস্ত খারাবি পৌলের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত মসীহ তো একজন সরলমনা মানুষ ছিলেন, তিনি কখনো চাননি যে কেউ তাঁকে একজন নেক মানুষও বলুক কিন্তু পৌল তাঁকে খোদা বানিয়ে দেয়।” (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন ২০/৩৭৫)।

“এবং সে (পৌল) সর্বপ্রথম ত্রিত্ববাদের খারাপ বীজ বপন করে দামেস্কে এবং এই পৌলীয় ত্রিত্ববাদ দামেস্ক থেকেই আরম্ভ হয়। সেদিকেই হাদীসে নববীতে ইংগিত করে বলা হয়েছে যে, আগত মসীহ দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে নাযিল হবেন।” (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন ২০/৩৭৭)।

মির্যা সাহেব তার রচিত ‘চশমায়ে মসীহি’ গ্রন্থে পরিষ্কার বলেছেন, হযরত ঈস (আ.)-কে পৌলই খোদা বানিয়েছিল। আর সেই পৌলের মৃত্যু ৬৪ বা ৬৫ ঈসায়ীতে হয়। তার প্রমাণ হিসেবে দেখুন,

  • মাইকেল এইচ হার্ট এর The 100 (দ্য হান্ড্রেড : অ্যা র‍্যাঙ্কিং অব দ্য মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসন্স ইন হিস্ট্রি) গ্রন্থ থেকে নেয়া। ST. PAUL (জন্ম ৪ বা ৫ খ্রিস্টাব্দ) (মৃত্যু ৬৪ খ্রিস্টাব্দ) দ্রষ্টব্য। আরো দেখুন, Brown, Raymond E. (1997) An Introduction to the New Testament, p. 436. Doubleday, Anchor Bible Reference Library, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া সাইটেও ৬৪ বা ৬৭ উল্লেখ আছে। স্ক্রিনশট দেখুন,

এখন যেহেতু মির্যা কাদিয়ানীর ইমাম মাহদী এবং মসীহ দাবী মিথ্যা প্রমাণিত হল সেহেতু তার নবী হওয়ার দাবীটাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেল। কেননা কোনো সত্য নবী কখনই ইমাম মাহদী হওয়ার মিথ্যা দাবী করবেনা, করতে পারেনা।

মূল : আল্লামা ইলিয়াস সাত্তার (হাফিজাহুল্লাহ)
কিতাব : কিয়া কাদিয়ানী/আহমদী জবাব দে ছেকতে হেঁ?
(৩৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৩ কোটি রূপী পুরষ্কার বিষয়ক রচনা)
প্রকাশনায় : ছাওতুল ইসলাম ট্রাস্ট (রেজিঃ), করাচি পাকিস্তান।
পরিচালনায় : বায়তুল মা’মুর রিসার্চ সেন্টার করাচি পাকিস্তান।
অনুবাদক : মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
এডমিন : মারকায উমর ডটকম

ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর দাবীদারদের উদ্দেশ্যে এই কয়টি প্রশ্ন ছুড়ে দিন

ভন্ড মির্যা কাদিয়ানীর অনুসারী কাদিয়ানী নেতাদের কাছ থেকে এই কয়েকটি প্রশ্নের পয়েন্ট টু পয়েন্ট সঠিক উত্তর আদৌ কি পাওয়া সম্ভব?

১। “তাওয়াফফা” (توفى) শব্দটির হাকিকি তথা প্রকৃত অর্থ ‘মৃত্যু’ বা শব্দটি মৃত্যু অর্থের জন্য-ই খাস বা নির্দিষ্ট, এধরণের কোনো প্রমাণ অথেনটিক কোনো সোর্স থেকে (স্ক্রিনশট সহ) দেখাতে পারবেন না। লিখাটি ফেইসবুক থেকে

২। ঈসা (আ.)- এর সাথে প্রাসঙ্গিক উল্লিখিত কোনো আয়াত বা হাদীসে তাঁর সম্পর্কে مات শব্দ বা توفى এই ধরণের অতিতকালবাচক কোনো ক্রিয়াপদ উল্লেখ আছে, দেখাতে পারবেন না।

৩। আপনারা যে সব আয়াতের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত বলে দাবী করে থাকেন সেসব আয়াতের আলোকে ইসলামের প্রথম তিন সোনালী যুগের ইসলামি কোনো একজন স্কলার থেকেও তদ্রূপ প্রমাণ করতে পারবেন না। যদি পারেন প্রমাণ করুন।

৪। অথবা হিজরী গত তেরশত বছরের ইতিহাসে যেসব বরেণ্য ও স্বীকৃত যুগ ইমাম / মুজাদ্দিদ/ মুফাসসির অতিত হয়ে গেছেন তাদের কোনো একজন থেকেও প্রমাণ করতে পারবেন না যে, ঈসা (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আগমনকারী একজন ‘রূপক’ ঈসাই হবেন। যদি পারেন (তাদের কিতাবের স্ক্রিনশট সহ) প্রমাণ করুন।

সাহস থাকলে অনলাইন ডিবেটে এসে দুনিয়ার সামনে প্রমাণ করে দেখান। আমার ১০ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ—কেয়ামতের আগ পর্যন্ত পারবেন না।

হযরত ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন মর্মে “মিনাস সামায়ি” শব্দ-যোগে কয়েকটি ডকুমেন্টারি সহীহ হাদীস

কাদিয়ানী মুরুব্বীর সাথে প্রফেসর মুহাম্মদ আসিফ এবং মাওলানা ফকীরুল্লাহ ওসায়া সাহেবের ‘ইমাম মাহদী’ বিষয়ক ঐতিহাসিক বাহাসের একটি চম্বুকাংশ

আল্লামা ইলিয়াস সাত্তার (হাফিঃ) এর বই থেকে ‘ফা-লাম্মা তাওয়াফফাইতানী’-এর অপব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন মির্যা কাদিয়ানী

মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণীর মধ্যে এই কয়টিও আলোর মুখ দেখেনি

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম এ

মির্যা মাসরূর আহমদ নিদাহ খাতুন কর্তৃক ধর্ষণ মামলায়

0

মুসলমান এবং কাদিয়ানীদের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য থাকার প্রমাণ এখানে

কে এই নিদাহ খাতুন? কেন তিনি আহমদী অর্থাৎ কাদিয়ানী জামাতের অভ্যন্তরীণ সমস্ত নোংরামি ফাঁস করে দিচ্ছেন? কাদিয়ানী জামাতের বর্তমান গদ্দিনিসীন মির্যা মাসরূর আহমদ এর সাথে কোন বিষয়ে তিনি বিতর্ক জড়ান। মাসরূর আহমদ তাকে কী বলেন এবং কী কী ধমক দেন। অত:পর নেট দুনিয়ায় দুইজনের কল রেকর্ড ফাঁস! পরিশেষে নিদাহ খাতুন ব্রিটিশ গভমেন্ট এর পুলিশের শরণাপন্ন হন কিভাবে? মির্যা মাসরূর আহমদ, তার শ্যালক মাহমুদ শাহ এবং মির্যা কাদিয়ানীর প্রপৌত্র নওয়াব আমের নামীয় ব্যক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করার অভিযোগ এনে মামলা ঠুকে দেয়াসহ বিস্তারিত আলোচনা করছি। এই সম্পর্কে (উর্দু ভাষার) সম্প্রতি একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও আপনিও দেখতে পারেন।

মির্যা মাসরূর (বামে), মাহমুদ শাহ [ধর্ষক] (ডানে)।

নিদা আন নাসেরকে গ্রুপ সেক্সকারীগণ : –
১- মির্যা লোকমান আহমদ। ইনি কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফার পুত্র। নিদা নিজেই নিজ পিতার বর্বরোচিত যৌন নির্যাতনের অভিযোগকারী।
২-
ড. মির্যা মুবাশ্বির আহমদ। পিতা মির্যা মুনাওয়ার আহমদ বিন মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ।
৩- মাহমুদ শাহ। ইনি হচ্ছেন বর্তমান কাদিয়ানী খলীফা মির্যা মাসরূর আহমদের শ্যালক ও কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের আহমদের নাতি। তিনি কাদিয়ানী জামাতের বড় মুরুব্বিও।
৪- নওয়াব আমের। তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর প্রপৌত্র। মাতার নাম আমাতুশ শোকর সাহেবা। নানীর নাম নওয়াব আমাতুল হাফিজ সাহেবা। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর এক মেয়ে ছিল নওয়াব মোবারাকাহ, আরেক মেয়া ছিল নওয়াব আমাতুল হাফিজ সাহেবা। যাইহোক, খবরটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া Daily mail থেকেও দেখতে পাবেন। তারিখ ০৯-জানুয়ারি-২০২২ইং। ‘ডেইলি মেইল’ পত্রিকার নিউজের লিংক পেতে আমার এই লিখাটিতে ক্লিক করুন।

নিদা আন নাসের এর টুইটার একাউন্ট

নিদা আপনা নানার সাথে

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কাদিয়ানী জামাতে চেপে থাকা অভ্যন্তরীণ নোংরামি আজকাল ফাঁস হচ্ছেনা বরং সেই ১৯৩৮ সাল থেকেই তাদেরই ভেতরের ঘনিষ্ঠ সূত্রে ও ঘনিষ্ঠ লোকদের মাধ্যমেও দুনিয়ার সামনে আসা শুরু হয়েছে। কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলিফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সম্পর্কে কি আর বলব! এই লোক তো একজন নিয়মিত মাদক সেবনকারীই ছিল। আপন কন্যা আমাতুর রশীদকে ধর্ষণ করে ধরা পড়েছিল। নিজ স্ত্রী আমাতুল হাই এবং তাদেরই গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন বি.কম তারা হাতে নাতে জেনা করা অবস্থায় তাকে পাকড়াও করেছিলেন। এই শুনুন, কয়েকজন সাবেক কাদিয়ানীই এই সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন। ভিডিও

কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলিফা (خليفة المسيح الزانى) মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ

কে এই নিদাহ খাতুন?

নিদাহ খাতুন হচ্ছেন মির্যায়ী রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্য। তার পুরো নাম নিদাহ আন-নাসের। পিতার নাম মিঁয়া লোকমান আহমদ বিন মির্যা নাসের আহমদ। তিনি মির্যায়ী তৃতীয় গদ্দিনিসী (খলীফা) মির্যা নাসির আহমদ এর (ছেলের মেয়ে) নাতনি। তিনি একই সাথে কাদিয়ানী চতুর্থ খলীফা মির্যা তাহের আহমদ এর মেয়ে ফাইজাহ বেগমের মেয়ে-ও। উল্লেখ্য, কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফার পুত্র লোকমান আহমদের সাথে মির্যা তাহের আহমদের মেয়ে ফাইজাহ বেগমের বিবাহ হয়েছিল। বর্তমানে তিনি লণ্ডন প্রবাসী। তিনি কিশোরী বয়স থেকেই ধর্ষিতা হয়ে আসছেন। তাকে মাহমুদ শাহ নামের এক ব্যক্তি তার সেই কিশোরী বয়স থেকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। তার অভিযোগ, প্রায় ৩৬ বছর ধরে তিনি মাহমুদ শাহ নামক ঐ মানবরূপী পশু কর্তৃক সময় সময় ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছেন। তিনি এক পর্যায় প্রেগন্যান্টও হয়ে যান। নিদাহ খাতুন একজন কাদিয়ানী মতের অনুসারী হিসেবে তার খলীফা ও ‘প্রিয় হুজুর’-এর নিকট বিচারপ্রার্থী হন। মির্যায়ী খলীফা মির্যা মাসরূরের সাথে নিদাহ খাতুন কথাগুলো ফোনে বলেন এবং ফোন কল রেকর্ডও হয়। এখন জানার বিষয় হল, কে এই মাহমুদ শাহ?

কে এই মাহমুদ শাহ?

এই মাহমুদ শাহ হলেন কাদিয়ানীদের বর্তমান খলীফা মির্যা মাসরূর আহমদ এর আপন শ্যালক। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এক মুরিদের নাম ছিল সাইয়েদ সালমান শাহ। তার এক পুত্রের নাম সাইয়েদ দাউদ মুজাফফর শাহ যিনি বর্তমান কাদিয়ানী খলীফার শ্বশুর এবং কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের আহমদের জামাতাও। কারণ তিনি মির্যা নাসির আহমদ এর মেয়ে আমাতুল হাকিম বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। আর তার মেয়ে আমাতুল শাবুহ বেগম হলেন মির্যা মাসরূর এর স্ত্রী। যাইহোক, ধর্ষক মাহমুদ শাহ-ই হলেন ঐ দাউদ মুজাফফর শাহের পুত্র। তিনি বর্তমান কাদিয়ানী জামাতের বড়মাপের একজন কেন্দ্রীয় মুরুব্বী এবং জামাতের নাজেরে আ’লা (Chief Executive Director)। মির্যা নাসের আহমদের পুত্র মির্যা লোকমান আহমদের মেয়ে জনাবা নিদাহ খাতুন বলেছেন, তার এই কর্মকাণ্ডের সাথে ‘আমের শাহ’ নামীয় আরও এক ব্যক্তি জড়িত। এখন জানার বিষয় হল, মির্যা মাসরূর আহমদ তাদের জামাতের একজন খলীফা হিসেবে কী ফয়সালা দিলেন?

ধর্ষিতা নিদাহ খাতুনের প্রতিউত্তরে মির্যায়ী খলীফা :

মির্যায়ী খলীফা প্রতিউত্তরে বললেন, যা হবার হয়ে গেছে, তুমি এবার চুপ থাক। তুমি যদি ধর্ষণের শিকার হয়েই থাক তাহলে এতদিন পর্যন্ত কেন অভিযোগ করোনি? আর এখন তুমি যদি ধর্ষণের বিচার পেতে চাও তাহলে তোমাকে চারজন সাক্ষী হাজির করতে হবে। না পারলে চুপ থাক। বেশি বাড়াবাড়ি করতে যেও না আর বকবক করা বন্ধ কর। অন্যথা তোমাকে ‘বাইয়াত’ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং এদেশের (ব্রিটেনের) ন্যাশনালিটিও ছিনিয়ে নেয়া হবে। ইত্যাদী। মির্যা মাসরূর আহমদ আর নিদা নাসের এর অডিও ক্লিপ উর্দু ভাষায় লিখা হয়েছে। পড়তে ক্লিক করুন।

নিদাহ খাতুন প্রতিউত্তরে কী বললেন?

নিদা আন নাসের এর শিশুকালীন দুর্লভ ছবি

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যভিচারিণী নই যে, চারজন সাক্ষী হাজির করতে হবে। আমি তো ধর্ষণের শিকার, একজন ধর্ষিতা। তাহলে আমাকেও কেন বিচার পেতে চারজন সাক্ষী হাজির করার বিধান শুনাচ্ছেন? আর জামাতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তো পরিষ্কার করে লিখা রয়েছে যে, পরন্তু র‍্যাপ (ধর্ষণ) কেস এর বিচারের জন্যও চার জন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। আমি নিজেও ঐ আর্টিকেল পড়েছি। কাজেই আগে তো ওয়েবসাইট ঠিক করবেন! আমি চুপ থাকব কেন? আমি তো একজন মাজলুম এবং ভিকটিম। কুরআন হাদীসের কোথাও কি বলা আছে যে, জালেমের জুলুমের প্রতিবাদ না করে ভিকটিম চুপ থাকবে? আর আমি তো বললামই আমাকে প্রথম থেকেই ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে যাতে আমি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ না উঠাই। আমি ৩৬টি বছর এই জুলুম নিরবে সহ্য করে আসছি, আমি বর্তমানে গর্ভবতীও; আমি এই জুলুম সহ্য করতে না পেরে অবশেষে আওয়াজ উঠাতে বাধ্য হই। এখন আমি যদি খলীফার নিকটেও আমার ন্যায় বিচার পেতে ব্যর্থ হই তাহলে ব্রিটিশ গভমেন্টের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।’ নিদাহ খাতুন এর বক্তব্যের কথাগুলো শুনুন অডিও ক্লিপ থেকে।

এখানে বলে রাখতে চাই যে, র‍্যাপ কেস এর সত্যতা প্রমাণের জন্যও যে চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই সেটি ভিকটিমের ঐ কথার পরপরই কাদিয়ানীরা আর্টিকেলটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলে। আমেরিকার একটি ওয়েবসাইট থেকে আমি এই তথ্যটিও উদ্ধার করি। স্ক্রিনশট দেখুন।

আর্টিকেলটি সরিয়ে ফেলা হয়

উল্লেখ্য, নিদাহ সাহেবা হয়ত বলতে চাচ্ছিলেন যে, আমি তো কারো বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ করছিনা যে, আমাকে আমার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য ইসলামি শরীয়ার বিধি মুতাবেক চারজন সাক্ষী হাজির করতে হবে। অধিকন্তু আমি তো নিজেই একজন ভিকটিম (ধর্ষিতা), কারো ব্যাপারে ব্যভিচারের অভিযোগ উত্থানকারী নই (প্রসঙ্গত, ধর্ষণ আর ব্যভিচার দুটি ভিন্ন জিনিস – লিখক)। এখানে আরেকটি কথা না বললেই নয়, কাদিয়ানী খলীফা ভিকটিমকে বলছে ধর্ষণকারীর ধর্ষণের সত্যতা প্রমাণে চারজন সাক্ষী হাজির করতে! কেমন পক্ষপাতদুষ্ট আর ইসলামি শিক্ষায় চরম পর্যায়ের মূর্খ হলে একজন ভিকটিমকেই বলতে পারে যে, তোমার ধর্ষণের পক্ষে চারজন সাক্ষী হাজির কর!?

নিদাহ আন নাসের বিনতে লোকমান সাহেবা (প্রতীকি)

সম্প্রতি ব্রিটিশ স্থানীয় আলেম উলামা ও সর্বস্তরের মুসলমানরা-ও স্রেফ এজ এ হিউম্যানিটি ভিকটিমকে সাপোর্ট দিচ্ছেন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচারের দাবী জানাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ভিকটিম তার ধর্ষণের নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায় বিচারের দাবী জানিয়ে ব্রিটিশ আদালতে কেস ঠুকে দিয়েছেন। কাদিয়ানী জামাতের ‘মেরে পেয়ারে হুজুর’-ও উক্ত মামলার অন্যতম আসামী। ব্রিটিশ মুসলিম কমিউনিটি স্রেফ একজন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্যাতিতা ও জুলুমের বিচারপার্থী এক বোনের আহাজারি শুনে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে ব্রিটিশ গভমেন্ট এর অন্যতম সদস্য ও বিচারক Toaha Qureshi সাহেবও রয়েছেন। তিনি পাক প্রেসিডেন্ট ইমরানখানের সরকারকেও নিদাহ খাতুনের বিচার দাবীর পক্ষে সরব হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। বিচারক তোহা কুরাইশি এর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য শুনতে ভিডিওটিতে (৪১ মিনিটের পর থেকে শুনুন) ক্লিক করুন।

বিচারক Toaha Qureshi

বেচারি নিদাহ খাতুনের পক্ষে বিচার চাওয়ার বিপরীতে নির্বোধ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পাক বংশোদ্ভূত কতিপয় ব্যক্তির অপ্রীতিকর রিয়েক্ট দেখুন তাদেরই কমেন্ট থেকে।

এখানে তার মন্তব্যের খোলাসা হল, এই ভিকটিম মেয়েটির সাথে তোমাদের কী সম্পর্ক? তোমরা বরং তোমাদের মেয়েদের সাথে ইনসাফ কর, আমাদের কোনো মেয়ের ব্যাপারে নাক গলাবেনা!
এখানে এই মন্তব্যের খোলাসা হল, পাকিস্তানে আমাদের আহমদীদের সাথে তোমাদের লোকেরা কত রকম জুলুম করছে তোমরা সেসব ব্যাপারে নিরব থাক অথচ একটা মেয়ে খলীফার ব্যাপারে কিছু একটা অভিযোগ তুলল আর অমনি তোমরা খলীফার পেছনে লেগে গেলে!?
এখানে এই মন্তব্যের খোলাসা হল, ব্যাপারটা তো খুবই সিম্পল। মেয়েটি অভিযোগ করেছে যে, তার সাথে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে (এটি মেয়েটির নামে জঘন্য মিথ্যাচার, কারণ মেয়ের অভিযোগ হচ্ছে প্রায় ৩৬ বছর ধরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করে আসছে – লিখক) আর অপর পক্ষ বলছে, তাকে ধর্ষণ করার মত এধরণের কোনো চেষ্টাই করা হয়নি!

আমি ছোট্ট একখান মন্তব্য রেখে লিখাটির ইতি টানছি। নিদাহ খাতুন এর মত একজন কাদিয়ানী রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্য হয়েও তিনি যেখানে কাদিয়ানী মুরুব্বীদের লালসার শিকার হয়ে বিচার পাননি, বরং বিচার চেয়ে লাঞ্চিত হলেন ও জামাত থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার হুমকি পেলেন, সেখানে আরও অসংখ্য অজানা অচেনা আহমদী কিশোরীদের কী অবস্থা!? তারাও যে ঐ ভিকটিমের মতই নিরবে সব কিছু সহ্য করছেন তা তো সহজেই অনুমেয়। কারণ কাদিয়ানী জামাত মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীর স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি নানা ধরণের ‘চাঁদাবাজি’-এর মাধ্যমে উদরফূর্তির উদ্দেশ্যেই গঠিত, ইসলামের সাথে এদের আসলেই কোনো সম্পর্ক নেই। দুঃখের বিষয় হল, এই সাধারণ কথাটাই ওরা বুঝতে পারেনা! আল্লাহ এদের সহীহ বুঝ দিন। লিখাটি পড়ার পর যদি ভালো লাগে তাহলে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না।

  • জানতে পড়ুন :

কাদিয়ানীদের জনসংখ্যা সারা দুনিয়ায় কত?

তথ্য সংগ্রহে, লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা ভবিষ্যৎবাণী-৩

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কতিপয় ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে :

প্রশ্নকর্তা – মুহাম্মদ মুহসিন আলী, শিক্ষার্থী : দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রিয় উস্তাদ প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী সাহেব! কয়েক দিন পূর্বের কথা। ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতে ঢুকে পড়ি কাদিয়ানীদের একটি ব্লগে। ব্লগে মির্যা কাদিয়ানীকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করতে তার সম্পর্কে বহু ভবিষ্যৎবাণী এবং নিদর্শন উল্লেখ করা হল। আদ্যোপান্ত পড়েছি। যেহেতু আমি এই বিষয়ে একদম নতুন একজন পাঠক তাই এসবে কোনোরূপ মন্তব্য করার মত আমার জ্ঞান বা যোগ্যতা কোনোটাই ছিলনা। সেখানে দেখলাম, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সত্যতা প্রমাণের জন্য নাকি একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্য্যগ্রহণও ঘটেছিল। যা কিনা হাদীসমতে ইমাম মাহদীর সত্যতার নিদর্শন! ভারতের আরিয়া সমাজের পণ্ডিত লেখরামের মৃত্যুর ভবিষ্যতবাণী, মুহাম্মদী বেগমের বাবার মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণীসহ অনেক কিছু। এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী যদি ভন্ড এবং মিথ্যাবাদী হন তাহলে তার জন্য উল্লিখিত নিদর্শন আর ভবিষ্যৎবাণীগুলো কিজন্য বাস্তবায়িত হল? আমি এই বিষয়ে একদম নতুন পাঠক। তাই আমার ভেতর এইধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমি গঠনমূলক উত্তর চাচ্ছি যাতে আমার সংশয় দূর হয়ে যায়।

উত্তর :

(১) ইমাম মাহদীর জন্য সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্য্যগ্রহণ লাগবে—এইধরণের কোনো কথাই রাসূল (সা:) থেকে প্রমাণিত নয়। বরং হাদীস বিশারদগণের সবাই বলেছেন, এটি জাল ও বানোয়াট হাদীস। এখান থেকে জানুন

(২) আর্য সমাজের জনপ্রিয় পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যার কৃত ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে জানতে পড়ুন।

(৩) মুহাম্মদী বেগমের বাবার মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণীসহ আরো যে সমস্ত বিষয়ে মির্যা কাদিয়ানীর লিটারেচার সমূহে উল্লেখ রয়েছে তা পুরোপুরি না জেনে শুধুই আংশিক কথাবার্তায় এটি মনে করা ঠিক হবেনা যে, সেসমস্ত ঘটনা মির্যারই পক্ষে গিয়েছিল। বরং মির্যা কাদিয়ানীর জীবনের প্রায় সমস্ত ভবিষ্যৎবাণীই তার বিরুদ্ধে গিয়েছে এবং তাকে চরমভাবে লাঞ্চিত ও অপমানিত করেছে। যাইহোক, এখানে মির্যা কাদিয়ানীর মাত্র ৫টি ভবিষ্যৎবাণী উল্লেখ করছি যার বিচারে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন যে, মির্যা কাদিয়ানী কত জঘন্য একজন মিথ্যাবাদী আর প্রতারক ছিল। আর তাই আমরা মুসলমানরা তার বর্তমান অনুসারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখতে চাই যে,

মির্যা কাদিয়ানী নিজ ভবিষ্যৎবাণীর মানদণ্ডে একজন মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে ‘ইমাম মাহদী’ বা ‘নবী’ হন? প্রথমে তার ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে আসি। মির্যা সাহেব ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে লিখেছেন “আমাদের সত্য আর মিথ্যা নিরীক্ষণ করতে আমাদের ভবিষ্যৎবাণী অপেক্ষা আর কোনো নিখুঁত কষ্টিপাথর থাকতে পারেনা।” (রূহানী খাযায়েন ৫/২৮৮)। এবার দেখা যাক, তিনি অন্তত নিজের ভবিষ্যৎবাণীর মানদন্ডেও সত্যবাদী সাব্যস্ত হন কিনা?

ভবিষ্যৎবাণী : ১
মির্যা সাহেবের ঝিয়ারি মুহাম্মদী বেগম নামের একটি মেয়ের অন্যত্রে বিয়ে হয়ে গেলে তারই পরিপ্রেক্ষিতে জনৈক ব্যক্তির একখানা আপত্তির জবাবে তিনি বলেছিলেন, “ওহীয়ে ইলাহীতে একথা নেই যে, তার বিয়ে দ্বিতীয় কোথাও হবে না! বরং একথা অবশ্যই রয়েছে যে, তার বিয়ে অন্য কোথাও হয়ে যাবে। অতএব এটি ভবিষ্যৎবাণীর একখানা অংশ ছিল যা দ্বিতীয় কোথাও বিয়ে হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। ইলহামে ইলাহীর শব্দটি হল, ছা-ইয়াকফীকা হুমুল্লাহু ওয়া ইউরাদ্দূ-হা ইলাইকা (سيكفيكهم الله و يردوها اليك)। অর্থাৎ খোদা তোমার ঐসমস্ত বিরুদ্ধবাদীদের মুকাবিলা করবেন এবং যার দ্বিতীয় কোথাও বিয়ে হয়ে গেছে খোদা তাঁকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেবেন।” (দৈনিক উর্দূ পত্রিকা ‘আল-হিকাম’ ৩০-০৬-১৯০৫ ইং দ্রষ্টব্য)।

এখানে মুহাম্মদী বেগমকে মির্যা কাদিয়ানীর নিকট ফিরে দেয়া মর্মে যে কথা রয়েছে তা কিন্তু তার দাবীমতে ইলহামে ইলাহীর পক্ষ থেকেই। কিন্তু পরের ইতিহাস সবার জানা। মির্যা সাহেব ২৬-০৫-১৯০৮ ইং কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওদিকে মুহাম্মদী বেগম তখনো স্বামীর সংসারেই ছিলেন, এমনকি মির্যার মৃত্যুর পরে আরো প্রায় ৪০ বছর স্বামীর সংসার করেন। তাদের আমৃত্যু সংসার-জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মির্যা কাদিয়ানীকে মিথ্যাবাদী প্রমাণে যথেষ্ট নয় কি? এমতাবস্থায় খোদাতালার নামে তার অন্যান্য কথিত ওহী ইলহামও যে মিথ্যা আর বানোয়াট নয় তা কিভাবে বুঝবো?

ভবিষ্যৎবাণী : ২
মির্যা কাদিয়ানীর ১৪ই জানুয়ারী ১৯০৬ ইং এর একটি ইলহাম হল “হাম মক্কা মে মরেগে ইয়া মদীনা মে” অর্থাৎ আমি মক্কায় অথবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করব। (তাযকিরাহ ৪র্থ এডিশন, পৃষ্ঠা নং ৫০৩)। এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মির্যা সাহেবকে সত্যিই কি তার মৃত্যু মক্কায় অথবা মদীনায় হবে বলে আগাম কোনো সংবাদ দিয়েছিলেন? যদি অনুরূপ কোনো সংবাদ তাকে দিয়েই থাকেন তাহলে তার মৃত্যুটা কিজন্য পাকিস্তানের লাহোরে হয়েছিল? এটি কি মহান আল্লাহর নামে জঘন্যতম মিথ্যাচার নয়? কিন্তু কোনো কাদিয়ানীকে আজ পর্যন্ত এর সদুত্তর দিতে পেলাম না। তবে জনৈক কাদিয়ানী পণ্ডিত মির্যার কথার বিকৃতি করে কোনোরকম জবাব দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলেছিল, এর ব্যাখ্যা নাকি মির্যা সাহেব নিজেই ঐ একই পৃষ্ঠায় দিয়ে গেছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, কী সে ব্যাখ্যা? তিনি বললেন, এর ব্যাখ্যা হল মির্যা সাহেব মৃত্যুর আগে আগে মক্কা মদীনার মত বিজয় লাভ করবেন। তখন আমি বললাম, জনাব! মিথ্যা বলতেও তো একটু বিদ্যা-বুদ্ধি লাগে। আপনার তো দেখছি তাও নেই। আপনি এখানে “মত” কিসের অর্থ করলেন? ছিঃ এত নিকৃষ্ট মিথ্যা কিভাবে বলতে পারলেন! অথচ মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন : ‘উসকি ইয়ে মা’নি হে কে কবল আয মউত মক্কী ফতেহ নসিব হোগি’ অর্থাৎ তার মানে হল, মৃত্যুর আগে আগে ফতেহ মক্কী (মক্কা বিজয়) নসিব হবে। যাইহোক, তো এই ব্যাখ্যাটিও তো হালে পানি পেল না! কেননা আল্লাহতালা মির্যা সাহেবকে তারই মৃত্যুর আগে আগে মক্কা বিজয়ের কোনো সংবাদ সত্যিই যদি দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি আজো পর্যন্ত কিজন্য আলোর মুখ দেখতে পেল না? অন্তত তার মৃত্যুর পরবর্তী শত বছরেও কিজন্য কাদিয়ানীরা মক্কা মদীনার উপর বিজয় লাভ করলো না? সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী একজন নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী ছিল বলেই পরিষ্কার হয়ে গেল। স্ক্রিনশট :-

ভবিষ্যৎবাণী : ৩
একবার যে কোনোভাবে তার নিকট তার এক ভক্তের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর সংবাদ এলে তিনি তৎক্ষণাৎ দেরি না করে ঐ স্ত্রীলোকটির পুত্র সন্তান হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে দিলেন। সময়টি ১৯০৬ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী। আমি আপনাদের ‘সাপ্তাহিক আল বদর’ (উর্দূ) পত্রিকার সেই কলামটি এখানে তুলে ধরছি। মির্যা সাহেব বলেছেন

“আমি স্বপ্নে দেখলাম, (আমার ভক্ত) মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হয়, এ ছেলের নাম কী রাখবে? স্বপ্ন এ পর্যন্তই। সাথে এই ইলহামও হল যে, ছেলেটির নাম ‘বশীরুদ্দৌলাহ্’ রাখবে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ছেলেটি সৌভাগ্যবান হবে। তবে আমি বলতে পারবনা যে, এই ছেলে কবে এবং কখন জন্মিবে।”

উপরের বক্তব্যটি মির্যা কাদিয়ানীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক বদর’ এর জিলদ ২, নাম্বার ৮; ১৯০৬ সালের ২৩ ই ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। মির্যা সাহেবের কথিত ইলহামের সমষ্টি ‘তাযকিরাহ’ নামক বইয়ের ৫১০-১১ নং পৃষ্ঠাতেও দেখা যেতে পারে।

এবার তার কথিত ইলহামী ভবিষ্যৎবাণীর কথাগুলোর দিকে খেয়াল করুন। তিনি প্রথমে পুত্র সন্তানের ভবিষ্যৎবাণী করলেন তারপর ‘বশীরুদ্দৌলাহ্’ নামও রাখলেন। তখন ১৯ শে ফেব্রুয়ারী। এরপর ৭ ই জুন তথা স্বপ্নদেখার ৩ মাস ১৬ দিন পর মির্যা সাহেবের নাকি আবার ইলহাম হল এ মর্মে যে, ছেলেটির নাম হবে দুটি। (১) বশীরুদ্দৌলাহ্ এবং (২) আলম কাবাব। এ তথ্যটি ‘তাযকিরাহ’ পুস্তকের ৫৩৩ নং পৃষ্ঠায়ও রয়েছে। তারপর মির্যা সাহেব থেকে ‘তাযকিরাহ’ পুস্তকের ৫৩৪ নং পৃষ্ঠায় এও লিখা আছে “অতপর আমার আরো ইলহাম হয়েছে যে, এ ছেলেটির নাম দুটো নয়, চারটি। একটি হচ্ছে ‘শাদীখান’ আর অপরটি ‘কলেমাতুল্লাহখান’।” তারপর ‘তাযকিরাহ’ (চতুর্থ এডিশন, ২০০৪ইং) পুস্তকের ৫৩৭ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখা আছে, ‘অতপর ১১ দিন অন্তে (উল্লিখিত স্বপ্নদেখার প্রায় ৩ মাস ২৭ দিন পর) উনি নাকি ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছেন যে, ছেলেটির নাম ৪টি নয়, বরং ৯টি।’ নামগুলো যথাক্রমে, কলেমাতুল আযীয, কালেমাতুল্লাহখান, ওয়ার্ড, বশীরুদ্দৌলাহ্, শাদীখান, আলম কাবাব, নাছিরুদ্দিন, ফাতেহুদ্দিন এবং মুবারকদিন। (বদর, জিলদ-২, নং ২৫, পৃ-৩ তারিখ, ২১ জুন ১৯০৬; আল হিকাম, জিলদ ১০, নং ২২, পৃ-১ তারিখ, ২৪ জুন ১৯০৬ ইং)।

এখন যে কথাটি বলতে চাই তা হল, মির্যা সাহেবের এতগুলো ইলহামী সংবাদ অবশেষে ভুয়া আর মিথ্যা-ই সাব্যস্ত হল কেন? অথচ আল্লাহ’র চেয়ে অধিক সত্যবাদী এবং অঙ্গীকার পূর্ণকারী আর কে হতে পারে? এবার জানা জরুরী যে, মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদ সাহেবের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মুহাম্মদী বেগমের গর্ভ থেকে কখনো কোনো পুত্র সন্তান হয়েছিল কি?

ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ১৭ ই জুলাই মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদ লুধিয়ানভী সাহেব সংবাদ দিলেন যে, তার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। এটি মির্যা সাহেবের চতুর্থবার ইলহামী ভবিষ্যৎবাণীর ২৯ দিন পরের কথা। তিনি তার কথিত ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী দ্বারা ছেলেটির ১/২টি নয়, মোট ৯টি নামই রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভুমিষ্ট হয় একটি কন্যা সন্তান। যে সন্তানটি উপরের ৯টি নামকেই মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়! এখন এর কোনো জবাব কি আপনাদের কাছে আছে কেবলই এটা বলা ছাড়া যে, এই ভবিষ্যৎবাণীর সব কয়টি ইলহাম মিথ্যা ও বানোয়াট। যদি সত্যিই তা আল্লাহ’র পক্ষ থেকে হত তাহলে অবশ্যই সত্য প্রমাণিত হত। পরের ইতিহাস আরো লজ্জাজনক। শেষমেশ মির্যা সাহেব স্বীয় ভবিষ্যৎবাণীর সুষ্ঠু কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পেরে পঞ্চমবারের মত আবার ভবিষ্যৎবাণী দিলেন যে “সদ্যভূমিষ্ট মেয়েটির পরেই ঐ ছেলে জন্ম নেবে।” আপনি মির্যার ‘হাকীকাতুল ওহী’ (বাংলা অনূদিত; প্রথম সংস্করণ নভেম্বর ১৯৯৯ইং) বইটির পৃষ্ঠা নং ৮০ খুলে দেখুন। সেখানেও ঘটনাটির কিয়দাংশ টিকায় উল্লেখ আছে। যেমন “ঐ ছেলে এবার জন্ম হয় নাই। কেননা খোদাতালা বলেন ‘আখখারাহুল্লাহু ইলা ওয়াকতিম মুছাম্মা’ অর্থাৎ ঐ কেয়ামত সদৃশ ভূমিকম্প, যাহার জন্য ঐ ছেলে নিদর্শন হইবে, উহাকে আমরা অন্য একটি সময়ে নির্ধারিত করিয়াছি।” কিন্তু আফসোস! ঐ ছেলে আর কখনো জন্ম নেবেনা। কেননা, কিছু দিন পরে দেখা গেল, মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদের স্ত্রীই আর বেঁচে নেই। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এ হচ্ছে মির্যা সাহেবের বানোয়াট ভবিষ্যৎবাণীর আরেকটি সংক্ষিপ্ত ঘটনা। নতুবা এর তালিকা অনেক দীর্ঘ।

ভবিষ্যৎবাণী : ৪
মির্যা সাহেব লিখেছেন, ‘খোদা আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, আমি তোমার বয়স ২ বা ৩ বছর কম-বেশি ৮০ বছর করে দেব।’ (তোহফায়ে গোলড়বিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪)। কিন্তু তিনি মারা যান মাত্র ৬৮ বা ৬৯ বছর বয়সে। কেননা তার জন্ম সন তারই ভাষ্য অনুসারে ১৮৩৯ বা ১৮৪০ ইং হলে (রূহানী খাযায়েন ১৩/১৭৭) এবং মৃত্যু সন ১৯০৮ইং হলে তখন তার বয়স কোনোভাবেই ৬৮ বা ৬৯ বছরের বেশি হয় না। এখন সত্যিই যদি ঐ রকম কোনো ওয়াদা আল্লাহর পক্ষ হতে হত তাহলে তো মির্যা সাহেবের মৃত্যু (৮০-৩) ৭৭ বা (৮০+৩) ৮৩ বছর বয়সেই হওয়ার ছিল। অথচ তিনি আরো ৮ বা ৯ বছর পূর্বে মারা যান। তাহলে কি আল্লাহতালা মির্যাকে মিথ্যা ওয়াদা দিয়েছিলেন মনে করেন? নাউযুবিল্লাহ। এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ’র নামে যে লোকটি এত জঘন্য মিথ্যাচার করল সে লোকটির ইমাম মাহদী কিংবা নবী হওয়ার দাবী কিভাবে সত্য হতে পারে? আর এরকম একজন ব্যক্তি যখন দাবী করে বলে যে, ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহতালা আমাকে ইলহামযোগে জানান যে, বনী ইসরাইলী নবী হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন, তার ঐ ইলহামও যে মিথ্যা নয় তা কিভাবে বুঝলাম? (আহমদ চরিত পৃ-৮; মূল মির্যা বশির উদ্দীন মাহমূদ)। কী জবাব?

এবার শুনুন মির্যা সাহেব মিথ্যাবাদী সম্পর্কে কী লিখে গেছেন, তিনি লিখেছেন, “প্রকাশ থাকে যে, যখন কেউ একটি কথায় মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে তখন তার অন্য আর কোনো কথায়ও গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা।” (চশমায়ে মা’আরিফত, রূহানী খাযায়েন ২৩/২৩১; লিখক মির্যা কাদিয়ানী)। “মিথ্যা বলা মুরতাদ হওয়ার চেয়ে কম নয়।” (রূহানী খাযায়েন ১৭/৫৬)। “মিথ্যা বলা আর গু খাওয়া এক সমান।” (রূহানী খাযায়েন ২২/২১৫)। বিচারের ভার আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।

ভবিষ্যৎবাণী : ৫
মির্যা কাদিয়ানী ভবিষ্যৎবাণী করে লিখেছেন, “মক্কা মদীনায় রেলের রাস্তা তৈরি হচ্ছে।” (রূহানী খাযায়েন ১৯/১০৮)। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, মক্কা মদীনা আজ পর্যন্ত রেলের মুখও দেখতে পায়নি। হয়ত কোনো কেউ বলতে পারেন, মির্যা সাহেবের এ ভবিষ্যৎবাণী তো অনির্দিষ্টকালীন! এর প্রতিউত্তরে বলতে চাই, মির্যা সাহেব তার লেখনীতে এও লিখে গেছেন যে, “আশা করছি যে, খুব দ্রুত এবং কয়েক বছরে এই কাজটি (রেলপথ নির্মাণ) সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আশ্চার্যের বিষয় নয় যে, তিন বছরের মধ্যেই মক্কা মদীনায় রেলপথ তৈরি হয়ে যাবে। সত্য তো এটাই যে, মক্কা মদীনায় রেলপথ তৈরী হওয়া যেন সমগ্র ইসলামী দুনিয়ায় রেল ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তন করা।” (রূহানী খাযায়েন ১৭/১৯৫; সারাংশ)। অথচ মির্যা সাহেবের ইন্তেকালের পর শতাব্দীর অধিক সময় গত হয়ে গেছে। কিন্তু যে রেলপথ খুব দ্রুত কিংবা তিন বছরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা, দুনিয়া আজ অব্ধি তা বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পায়নি! মির্যা কাদিয়ানীর নির্বোধ অনুসারীদের নিকট তার এই ভবিষ্যৎবাণীরও সঠিক কোনো উত্তর নেই, শুধু এইকথা বলা ছাড়া যে, প্রকৃতপক্ষে তার এই ভবিষ্যৎবাণীটিও আল্লাহ’র নামে মিথ্যাই ছিল।

উত্তরদানে, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী